হজ্জে অপরাধ ও ত্রুটি বিষয়ক মাসালা ও মাসায়েল
হজ্জে অপরাধ ও ত্রুটি বিষয়ক মাসালা ও মাসায়েল >> আল হিদায়া ফিকহ এর মুল সুচিপত্র দেখুন
কিতাবঃ আল হিদায়া, চতুর্থ অনুচ্ছেদ – অপরাধ ও ত্রুটি
মুহরিম যদি খুশবু ব্যবহার করে তাহলে তার উপর কাফ্ফারা ওয়াজিব হবে। যদি পূর্ণ একটি অংগ কিংবা তার অধিক স্থানে খুশবু ব্যবহার করে, তাহলে তার উপর দম ওয়াজিব হবে।
আর পূর্ণ অংগ হল যেমন মাথা,গোছা, উরু কিংবা এ ধরনের কোন অংগ। কেননা অপরাধ পূর্ণ গণ্য হয় সুযোগের গ্রহনের পূর্ণতার মাধ্যমে। আর তা হয় পূর্ণ এক অংগের মধ্যে ব্যবহারে। অতএব এর উপরই পূর্ণ প্রায়শ্চিত (দম) ওয়াজিব হবে।
যদি এক অংগ থেকেও কম পরিমাণে খুশবু ব্যবহার করে তাহলে তার উপর সাদকা ওয়াজিব হবে। ত্রুটি কম হওয়ার কারণে।
ইমাম মুহাম্মাদ(র) বলেন, অংগের পরিমাণ অনুপাতে দম ওয়াজেব হবে: অংশকে সমগ্রের তুলনা করে।
মুন্তাকা গ্রন্থে রহিয়াছে যে, একটি অংগের চতুর্থাংশ খুশবু ব্যবহার করলে তার উপর পূর্ণ দম ওয়াজিব হবে, মাথার চতুর্থাংশ হলক করার উপর কিয়াস করে। আমরা পরবর্তীতে উভয়ের মাঝে পার্থক্য বর্ণনা করবো, ইনশাল্লাহ্।
দুটি ক্ষেত্রে ছাড়া সকল ক্ষেত্রে ওয়াজিব দম বকরী দ্বারা আদায় হয়ে যাবে। আমরা ক্ষেত্র দুটির উল্লেখ করব, হাদী অধ্যায়ে , ইনশাল্লাহ্।
ইহরামের ক্ষেত্রে যে কোন অনির্ধারিত সাদাকা হল অর্ধ সাআ গম। তবে উকূন বা টিড্ডি জাতীয় কিছু হত্যা করলে যা ওয়াজিব হয়(তা অর্ধ সাআ নয়)।
ইমাম আবূ ইউসুফ (রঃআঃ) থেকে এরূপই বর্ণীত হইয়াছে।
ইমাম মুহাম্মাদ(রঃআঃ) বলেন, যদি কেউ মেহেদি দ্বারা মাথার চুল রঞ্জিত করে তাহলে তার উপর দম ওয়াজিব হবে। কেননা এটা খুশবু। রসূলুল্লাহ্ (সাঃআঃ) বলেছেন- মেহেদি হলো খুশবু।
আর যদি তাতে মাথা প্রলিপ্ত হয়ে যায় তাহলে তার উপর দুটি দম ওয়াজিব হবে। একটি হলো খুশবু ব্যবহার করার দম, অন্যটি হলো মাথা আবৃত করার দম।
আর যদি ওয়াসামাহ দ্বারা চুল রঞ্জিত করে, তাহলে তার উপর কোন দম ওয়াজিব হবে না। কেননা তা সুগন্ধি নয়। তবে ইমাম আবূ ইউসুফ(রঃআঃ) হতে বর্ণীত আছে যে, যদি মাথা ব্যাথায় চিকিত্সার জন্য ওয়াসামহর খেযাব লাগায়, তাহলে তার উপর দন্ড (দম) ওয়াজিব এ বিবেচনায় যে, তা মাথা আবৃত করে ফেলে। এ-ই বিশুদ্ধ মত।
মাবসূত কিতাবে এ প্রসংগে মাথা ও দাড়ির কথা একত্রে উল্লেখ করা হইয়াছে। আর জামেউস সাগীর কিতাবে শুধু মাথার কথা বলা হইয়াছে। এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, উভয়ের প্রত্যেকটির উপর ভিন্ন দম ওয়াজিব হবে।
যদি কেউ যয়তুন তেল ব্যবহার করে, তাহলে তার উপর দম ওয়াজিব হবে। এ হল ইমাম আবূ হানীফা(রঃআঃ) এর মত। সাহেবাইন বলেন, তার উপর সাদাকা ওয়াজিব হবে। ( হজ্জে অপরাধ ও ত্রুটি )
আর ইমাম শাফিঈ(রঃআঃ) বলেন, যদি চুলের মধ্যে ব্যবহার করে, তাহলে তার উপর দম ওয়াজিব হবে। কেননা তা উষ্কখুষ্কতা দূর করে। আর যদি চুল ছাড়া অন্যত্র ব্যবহার করে তাহলে তার উপর কোন কিছু ওয়াজিব হবে না। কেননা এ ক্ষেত্রে তা অনুপস্থিত।
সাহেবাইনের দলিল এই যে, এটি ভোগ্য দ্রব্যের অন্তর্ভূক্ত। তবে তাতে কিছুটা উপকার লাভ রহিয়াছে। যেমন কীট ধ্বংস করা ও খুষ্কতা দূর করা। সুতরাং তা লঘু ত্রুটির মধ্যে গণ্য। (সুতরাং দমের পরিবর্তে সাদাকা ওয়াজিব হবে)।
ইমাম আবূ হানীফা(রঃআঃ) এর দলিল এই যে, যয়তুন তৈল হলো খুশবুর মূল। আর তাতেও কিছু না কিছু সুঘ্রাণ থাকে। তাছাড়া কীট ধ্বংস করে, চুল নরম করে, ময়লা ও ঊষ্ক-খুষ্কতা দূর করে। সুতরাং এই সব মিলে অপরাধের পূর্ণতা সাধিত হয়, কাজেই দম ওয়াজিব হবে। আর ভোগ্যদ্রব্যা হওয়া খুশবু হওয়ার বিপরীত নয়। যেমন জাফরান।
আর এই মতভিন্নতা হলো অবিমিশ্র যয়তুনের তেল এবং অবিমিশ্র তিলের তেল সম্পর্কে। আর এর মধ্যে খুশবু মিশ্রিত হলে তা ব্যবহারে সর্বসম্মত ভাবেই তার উপর দম ওয়াজিব হবে। যেমন, বনস্পতি, ইয়াসমীন ও অন্যান্য সুগন্ধি জাতীয় তেল। কেননা এটি খুশবু। এই হুকুম তখন হবে, যখন খুশবু হিসাবে তা ব্যবহার করা হবে।
আর যদি তা দ্বারা জখম কিংবা পায়ের কাটার চিকিত্সা করা হয়, তাহলে তার উপর কোন কাফ্ফারা ওয়াজিব হবে না। কেননা এগুলো স্বয়ং সুগন্ধি নয়, বরং সুগন্ধির মূল। কিংবা এক প্রেক্ষিতে সুগন্ধি। সুতরাং সুগন্ধি হিসাবে ব্যবহার করা শর্ত হবে। পক্ষান্তরে মিশক ও এই জাতীয় জিনিস দ্বারা চিকিত্সা গ্রহণের বিষয়টি এর বিপরীত। (এখানে সর্বাবস্থায় দম ওয়াজিব হবে।)
যদি পূর্ণ একদিন সেলাই করা কাপড় পরিধান করে কিংবা মাথা ঢেকে রাখে তাহলে তার উপর দম ওয়াজিব হবে। কিন্তু যদি এর চেয়ে কম সময় হয় তাহলে তার উপর সাদাকা ওয়াজিব হবে।
ইমাম আবূ ইউসুফ(রঃআঃ) হতে বর্ণীত আছে যে, যদি অর্ধদিনের বেশী সময় পরিধান করে তাহলে তার উপর দম ওয়াজিব হবে। এটি ছিল ইমাম আবূ হানীফা(রঃআঃ) এর প্রথম দিকের মত।
ইমাম শাফিঈ(রঃআঃ) বলেন যে, শুধু পরিধান করলেই দম ওয়াজিব হবে। কেননা বস্ত্র শরীরের সংগে জড়িত হওয়া মাত্রই উপকারিতা পূর্ণ হয়ে যায়।
আমাদের দলিল এই যে, বস্ত্র পরিধানের উদ্দেশ্য হলো (ঠান্ডা বা গরম দূর করার) উপকার লাভ। সুতরাং একটা নির্দিষ্ট সময় বা মিয়াদ বিবেচনা করিতে হবে, যাতে তা পূর্ণমাত্রায় হাসিল হয়। এবং তাতে দম ওয়াজিব হয়। সুতরাং সেই মিয়াদ একদিন দ্বারা ধার্য করা হইয়াছে। কেননা সাধারণতঃ একদিনের জন্য বস্ত্র পরিধান করা হয়, এরপর খুলে দেওয়া হয়। পক্ষান্তরে একদিনের কমে অপরাধ লঘু হয়ে যায়। তাই সাদাকা ওয়াজিব হবে।
তবে ইমাম আবূ ইউসুফ(রঃআঃ) অধিকাংশ সময়কে স্থলবর্তী বিবেচনা করেছেন।
যদি জামা চাদর রূপে ব্যবহার করে কিংবা বগল তলায় দিয়ে অপর কাধের উপর ফেলে রাখে কিংবা পায়জামাকে তহবন্দরূপে ব্যবহার করে, তাহলে কোন দোষ নেই। কেননা সে তা সেলাই করা কাপড় রূপে পরিধান করে নি। তদ্রুপ যদি দুই কাধ আবার ভিতরে ঢুকিয়ে দেয় এবং উভয় হাত আস্তিনে প্রবেশ না করায়। ( হজ্জে অপরাধ ও ত্রুটি )
ইমাম যুফার(রঃআঃ) ভিন্নমত পোষণ করেন।
আমাদের দলিল এই যে, সে এটাকে আবা রূপে ব্যবহার করেনি। এ কারণেই এটি রক্ষা করিতে কষ্ট স্বীকার করত হয়।
আর মাথা ঢাকার ব্যাপারেও সময়ের পরিমাণ তাই হবে, যা আমরা বর্ণনা করেছি। এ বিষয়ে কোন দ্বিমত নেই যে, যদি সম্পূর্ণ মাথা পূর্ণ একদিন ঢেকে রাখে তাহলে তার উপর দম ওয়াজিব হবে। কেননা, এটা নিষিদ্ধ। আর যদি মাথার অংশ বিশেষ ঢেকে রাখে, তাহলে ইমাম আবূ হানীফা(রঃআঃ) হতে বর্ণীত আছে যে, তিনি এক-চতুর্থাংশকে অপরাধ গণ্য করেছেন, মাথা মুড়ানো ও সতরের উপর কিয়াস করে। কেননা আংশিক আবরিত করা এমন উপকার ভোগ যা উদিষ্ট হয়ে থাকে। কোন কোন মানুষ এরূপ করায়ই অভ্যস্তও হয়।
ইমাম আবূ ইউসুফ(রঃআঃ) হতে বর্ণীত আছে যে, তিনি আধিকের প্রকৃত অর্থ লক্ষ্য করে মাথার অধিকাংশও বিবেচনা করেন।
যদি মাথার চতুর্থাংশ কিংবা দাড়ির চতুর্থাংশ বা তার বেশী হলক করে তাহলে তার উপর দম ওয়াজিব হবে ।আর যদি চতুর্থাংশের কম হয় তাহলে তার উপর সাদাকা ওয়াজিব হবে।
ইমাম মালিক(রঃআঃ) বলেন, সবটুকু হলক না করলে দম ওয়াজিব হবে না।
ইমাম শাফিঈ(রঃআঃ) বলেন, সামান্য পরিমাণ হলক করলেও দম ওয়াজিব হবে। তিনি একে হারাম শরীফের ঘাস-বৃক্ষের উপর কিয়াস করেছেন।
আমাদের দলিল এই যে, মাথার চতুর্থাংশ হলক করা পূর্ণ উপকার লাভের শামিল। কেননা এটি প্রচলিত রহিয়াছে। সুতরাং এতে পূর্ণ অপরাধ গণ্য হবে। কিন্তু চতুর্থাংশের কম হলে অপরাধ লঘু হবে। অংগের চতুর্থাংশে খুশবু মাখার ব্যাপারটি এর বিপরীত। কেননা (সচরাচর) তা উদ্দেশ্য হয় না। তদ্রুপ ইরাকে ও আর ব দেশেও দাড়ির অংশ বিশেষ হলক করার প্রচলন রহিয়াছে।
যদি সম্পূর্ণ ঘাড় হলক করে তাহলে তার উপর দম ওয়াজিব হবে। কেননা এটি আলাদা অংগ, যা উদ্দেশ্যমূলকভাবে হলক করা হয়।
যদি উভয় বগল কিংবা একটি বগল হলক করা হয় তাহলে তার উপর দম ওয়াজিব হবে। কেননা ময়লা দূর করা এবং স্বস্তি লাভের জন্য উভয়ের প্রত্যেকটিই হলকের উদ্দেশ্য হয়ে যাবে। সুতরাং(দম ওয়াজিব হওয়ার ক্ষেত্রে) নাভির নীচের চুলোর হুকুমের অনুরূপ হবে।
ইমাম মুহাম্মাদ(রঃআঃ) এখানে (অর্থাত্ জামে সাগীরের বর্ণনায়) বগলদ্বয়ের ক্ষেত্রে মুড়ানোর কথা বলেছেন। কিন্তু মাবসূতের বর্ণনায় উপড়ানোর কথা রহিয়াছে আর সেটিই হলো সুন্নাত।
ইমাম আবূ ইউসুফ ও মুহাম্মাদ(রঃআঃ) বলেন, যদি পূর্ণ একটি অংগ হলক করে তাহল তার উপর দম ওয়াজিব হবে। তার চেয়ে কম হলে খাদ্য সামগ্রী সাদাকা করবে।
ইমাম মুহাম্মাদ(রঃআঃ) পূর্ণ অংগ দ্বারা বুক, পায়ের গোছা ইত্যাদি বুঝিয়েছেন। কেননা এ সকল অংগে উদ্দেশ্যমূলকভাবেই লোমনাশক ব্যবহার করা হয়। সুতরাং পূর্ণ অংগ হলক করলে অপরাধ পূর্ণ হবে আর আংশিক হলক করলে অপরাধ লঘু হবে।
যদি মোচ ছাটে তাহলে একজন ন্যায়পরায়ণ মানুষের বিচার অনুসারে খাদ্যশস্য সাদাকা করা ওয়াজিব ।অর্থাত্ তিনি বিবেচনা করে দেখবেন যে, দাড়ির চতুর্থাংশের তুলনায় ছাটা মোচ কী পরিমাণ হচ্ছে; সেই অনুপাতে খাদ্যশস্য ওয়াজিব হবে। এমনকি যদি ছাটা মোট চতুর্থাংশের এক-চতুর্থাংশও হয় তাহলে একটি বকরীর চতুর্থাংশের মূল্য ওয়াজিব হবে। ছাটা শব্দটি প্রমাণ করে যে, মোচের ক্ষেত্রে এটাই সুন্নাত। হলক সুন্নাত নয়। বস্তুতঃ উপরের ঠোটের সীমা বরাবর ছাটা সুন্নাত।
ইমাম কুদূরী(রঃআঃ) বলেন, যদি কেউ শিংগা লাগাবার স্থান হলক করে, তাহলে ইমাম আবূ হানীফা(রঃআঃ) এর মতে তার উপর দম ওয়াজিব হবে। সাহেবাইন বলেন, তার উপর সাদাকা ওয়াজিব। কেননা, হলক তো করা হয় শিংগা লাগানোর উদ্দেশ্যে। আর তা ইহরামের নিষিদ্ধ কাজ নয়। সুতরাং শিংগা লাগানোর সহায়কেরও একই হুকুম হবে। তবে যেহেতু এতে কিছুটা ময়লা দূর করা হয়, তাই সাদাকা ওয়াজিব হবে।
ইমাম আবূ হানীফা(রঃআঃ) এর দলিল এই যে, এ স্থানের হলকও উদ্দীষ্ট। কেননা তাহা ছাড়া মূল উদ্দেশ্যে উপনীত হওয়া সম্ভব নয়। অতএব একটি পূর্ণ অংগ থেকে ময়লা দূর করার বিষয় সংঘটিত হইয়াছে। তাই দম ওয়াজিব হবে।
যদি কোন মুহরিমের মাথা সে তার আদেশে কিংবা বিনা আদেশে মুড়িয়ে দেয় তবে তার উপর সাদাকা ওয়াজিব হবে। আর যার মাথা মুড়ানো হলো তার উপর দম ওয়াজিব হবে।
ইমাম শাফিঈ(রঃআঃ) বলেন, যদি তার আদেশ ছাড়া হয়ে থাকে, যেমন ঘুমন্ত অবস্থায়, তাহলে দম ওয়াজিব হবে না। কেননা ইমাম শাফিঈ(রঃআঃ) এর মূলনীতি হলো বল প্রয়োগ, ঐ ব্যক্তিকে, যার উপর বল প্রয়োগ করা হইয়াছে, উক্ত কাজের দায়-দায়িত্বের পাকড়াও থেকে মুক্ত রাখে। আর ঘুম (অনিচ্ছার বিবেচনায়) বল প্রয়োগের চাইতেও অধিক।
আমাদের মতে ঘুম এবং বল প্রয়োগ গুনাহ্ রহিত করে, কিন্তু ফলাফল রহিত করে না। তাছাড়া দম ওয়াজিব হওয়ার কারণ তো সংঘটিত হইয়াছে। আর তা হলো আরাম ও সৌন্দর্য লাভ। সুতরাং তার উপর দম ওয়াজিবই হবে নির্ধারিত।
অসহায় ব্যক্তির অবস্থা এর বিপরীত। এক্ষেত্রে সে ইচ্ছাধীন। কেননা এক্ষেত্রে বিপদ আসমানী। আর বল প্রয়োগের ক্ষেত্রে তো এসেছ বান্দার পক্ষ থেকে। ( হজ্জে অপরাধ ও ত্রুটি )
আর যার মাথা মুড়ানো হইয়াছে, সে মুন্ডনকারীর নিকট থেকে ক্ষতিপূরণ নিতে পারবে না। কেননা দম তো ওয়াজিব হইয়াছে, সে যে আরাম লাভ করেছে, এ কারণে। সুতরাং সে ঐ ব্যক্তির ন্যায়, যে সংগম জনিত অর্থদন্ড এর ক্ষেত্রে ধোকার সম্মুখীন হয়। তদ্রুপ মুন্ডনকারী যদি হালাল অবস্থায় থাকে তবু যে মুহরিমের মাথা মুড়ানো হইয়াছে, তার ক্ষেত্রে বিধান ভিন্ন হবে না। পক্ষান্তরে আমাদের বর্ণীত মাসআলায় উভয় অবস্থায় মুন্ডনকারী উপর সাদাকা ওয়াজিব হবে।
ইমাম শাফিঈ(রঃআঃ) বলেন, তার উপর কিছু ওয়াজিব হবে না। এরূপ মতভিন্নতা রহিয়াছে যখন মুহরিম কোন হালাল ব্যক্তির মাথা মুড়িয়ে থাকে।
ইমাম শাফিঈ(রঃআঃ) বলেন, তার উপর কিছু ওয়াজিব হবে না। এরূপ মত ভিন্নতা রহিয়াছে যখন মুহরিম কোন হালাল ব্যাক্তির মাথা মুড়িয়ে থাকে।
ইমাম শাফিঈ(রঃআঃ) এর দলিল এই যে, অণ্যের চুল মুড়ানো দ্বারা উপকার লাভ সাব্যস্ত হয় না। আর সেটাই হলো দম ওয়াজিবের কারণ।
আমদের দলিল এই যে, মানুষের শরীরে যা কিছু বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়,তা দূর করা ইহরামের নিষিদ্ধ বিষয়সমূহের অন্তর্ভূক্ত। কেননা ঐ বৃদ্ধিপ্রাপ্ত অংশগুলো নিরাপত্তা লাভের অধিকারী। যেমন হারাম শরীফের উদ্ভিদের ক্ষেত্রে। সুতরাং তার ও অন্যের চুলের ব্যাপারে হুকুমের কোন পার্থক্য হবে না। তবে নিজের চুলের ব্যাপারে অপরাধ হয় পূর্ণমাত্রায়।
যদি কোন হালাল ব্যক্তির মোচ ছেটে দেয় কিংবা তার নখ কেটে দেয় তাহলে যে পরিমাণ ইচ্ছা খাদ্যশস্য দান করে দেবে। কারণ ইতোপূর্বে আমরা বর্ণনা করেছি। আর এটাও এক ধরনের উপকার লাভ থেকে মুক্ত নয়। কেননা অন্যের ময়লা অবস্থা থেকেও মানুষ কষ্ট পায়, যদিও তা নিজের শরীরের ময়লা দ্বারা কষ্ট পাওয়ার তুলনায় কম। সুতরাং তাকে খাদ্যশস্য সাদাকা করিতে হবে।
যদি তার দুহাত ও দুপায়ের নখ কাটে তাহলে তার উপর দম ওয়াজিব হবে। কেননা এটা নিষিদ্ধ বিষয়সমূহের অন্তর্ভূক্ত। এতে ময়লা দূর করা এবং শরীরে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত জিনিস দূর করা হচ্ছে। সুতরাং যদি সবগুলো নখ কাটে তাহলে পূর্ণ উপকার লাভ সাব্যস্ত হয়। কাজেই দম ওয়াজিব হবে।
যদি একই মজলিশে হয় তাহলে একটি দমের অতিরিক্ত হবে না। কেননা অপরাধটি একই ধরনের। যদি কয়েকটি মজলিসে হয়ে থাকে তাহলে ইমাম মুহা্ম্মদ(রঃআঃ)এর মতে একই হুকুম। কেননা এ অপরাধগুলোর ভিত্তি হলো একীভূত করার উপর। সুতরাং তা সাওম ভঙ্গের কাফ্ফারার সদৃশ হলো। তবে যদি কাফ্ফারা মাঝখানে আদায় করে দেয়। (তখন পরবর্তীটির জন্য আলাদা কাফ্ফার দিতে হবে) কেননা কাফ্ফারা আদায়ে প্রথম অপরাধের নিরসন হয়।
ইমাম আবূ হানীফা ও আবূ ইউসুফ(রঃআঃ) এর মতে যদি প্রত্যেক মজলিসে একটি হাত বা একটি পায়ের নখ কেটে থাকে তাহলে চারটি দম ওয়াজিব হবে। কেননা এক্ষেত্রে ইবাদতের অর্থ প্রবল। সুতরাং একীভূত করার বিষয়টি অভিন্ন মজলিসের সাথে শর্তযুক্ত। যেমন সাজদার আয়াতের ক্ষেত্রে হয়ে থাকে।
যদি এক হাত বা এক পায়ের নখ কেটে থাকে তাহলে একটি দম ওয়াজিব হবে।
এ হুকুমের ভিত্তি হলো চতুর্থাংশকে সমগ্রের স্থলবর্তী করার উপর। যেমন মাথা মুড়ানোর ক্ষেত্রে হয়ে থাকে।
যদি পাচ আংগুলের কম নখ কেটে থাকে তাহলে তার উপর সাদাকা ওয়াজিব হবে। অর্থাত্ প্রতিটি নখের পরিবর্তে একটি করে সাদাকা ওয়াজিব হবে।
ইমাম যুফার(রঃআঃ) বলেন, তিনটির নখ কেটে থাকলেও একটি দম ওয়াজিব হবে। এটা ইমাম আবূ হানীফা(রঃআঃ) এর প্রথম দিকের মত। কেননা হাতের পাচটি আংগুলের জন্য একটি দম ওয়াজিব হয়। আর তিনটি পাচটির অধিকাংশ।
আর কিতাবে যে হুকুম উল্লেখ করা হইয়াছে, তার কারণ এই যে, এক হাতের পাচটি আংগুলের নখ কর্তন, যার উপর দম ওয়াজিব হয়-এর সর্বনিম্ন পরিমাণ। আর সেটাকে আমরা সমগ্র নখের স্থলবর্তী করেছি। সুতরাং এক হাতের অধিকাংশকে আবার তার সমগ্রের স্থলবর্তী করা যাবে না। কেননা তাহলে এ ধারা অনিঃশ্বেষিত ভাবে চলতে থাকবে।
যদি দুই হাত-পায়ের বিভিন্ন আংগুলের পাচটি নখ কাটে তাহলে তার উপর সাদাকা ওয়াজিব হবে। এটা ইমাম আবূ হানীফা(রঃআঃ) ও আবূ ইউসুফ(রঃআঃ) এর মত।
ইমাম মুহাম্মাদ(রঃআঃ) বলেন, দম ওয়াজিব হবে এক হাতের পাচটি নখ কাটলে আর মাথার বিভিন্ন স্থান থেকে এক চতুর্থাংশ পরিমাণ চুল মুড়ালে যেমন একটি দম ওয়াজিব হয়।
ইমাম আবূ হানীফা(রঃআঃ) ও আবূ ইউসূফের (রঃআঃ) দলিল এই যে, অপরাধের পূর্ণতা সাব্যস্ত হয় আরাম ও সৌন্দর্য লাভের মাধ্যমে। অথচ এভাবে কাটা দ্বারা অস্বস্তি ও অসৌন্দর্য সৃষ্টি হয়। মাথার বিভিন্ন স্থান থেকে হলক করার বিষয়টি এর বিপরীত, কেননা এটি প্রচলিত, যেমন পূর্বে বলা হইয়াছে। আর অপরাধ যখন লঘু হয় তখন তাতে সাদাকা ওয়াজিব হবে। সুতরাং প্রতিটি নখের পরিবর্তে একজন মিসকীনকে আহার করাবে।
একই হুকুম হবে যদি বিক্ষিপ্তভাবে পাচটি নখের বেশী কেটে থাকে। তবে যদি সব কটি সাদাকা একটি দমের পরিমাণ হয়ে যায়, তখন যতটুকু ইচ্ছা সামান্য কম করে দিবে।
ইমাম কুদূরী(রঃআঃ) বলেন, যদি মুহরিমের নখ ভেংগে ঝুলে যায়, আর সে তা কেটে ফেলে দেয় তাহলে তার উপর দন্ড আসবে না। কেননা ভেংগে যা্ওয়ার পর আর তার বৃদ্ধি পায় না। সুতরাং তা হারামের শুষ্ক বৃক্ষের সদৃশ হলো।
যদি কোন ওযরের কারণে খুশবু ব্যবহার করে কিংবা সেলাই করা বস্ত্র পরিধান করে থাকে কিংবা মাথা মুড়ায়, তাহলে তার ইখতিয়ার রহিয়াছে। ইচ্ছা করলে সে একটি বকরী যবাহ করবে কিংবা ইচ্ছা করলে ছয়জন মিসকীনকে তিন সাআ গম দান করবে। কিংবা ইচ্ছা করলে তিনদিন রোযা রাখবে।
কেননা আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন- তাহলে ফিদাঈয়া দিতে হবে রোযা দ্বারা কিংবা সাদাকা দ্বারা কিংবা যবাহ দ্বারা । অব্যয়টি ইচ্ছা প্রদানের জন্য ব্যবহৃত। আর রসূলুল্লাহ(সাঃআঃ) আয়াতটির ব্যাখ্যা এরূপই করেছেন, যেভাবে আমরা উল্লেখ করেছি। আয়াতটি মাযূর সম্পর্কে নাযিল হইয়াছে।
সাওম যে কোন স্থানেই আদায় করা যেতে পারে। কেননা সাওম হলো সর্বস্থানের ইবাদত। আমাদের মতে সাদাকারও একেই কারণে একই হুকুম। কিন্তু যবাহ করার বিষয়টি সকলের মতেই হরমের সাথে বিশিষ্ট। কেননা রক্ত প্রবাহিত করাকে নির্দিষ্ট সময়ে কিংবা নির্দিষ্ট স্থানেই শুধু ইবাদতের রূপে গন্য করা হইয়াছে। আর এই দম কোন সময়ের সাথে বিশিষ্ট নয়। সুতরাং স্থানের সাথে বিশিষ্ট হওয়া অবধারিত হয়ে গেলো।
যদি খাদ্য সাদাকা করার ইচ্ছা থাকে তাহলে ইমাম আবূ ইউসুফ(রঃআঃ) এর মতে দুপুর ও রাত্রে দুবেলা খাইয়ে দেয়া যথেষ্ট হবে। তিনি এটাকে কসমের কাফ্ফারার উপর কিয়াস করেন।
ইমাম মুহাম্মাদ(রঃআঃ) এর মতে তা জাইয হবে না। কেননা সাদাকা শব্দটি মালিকানার ইংগিত বহন করে। আর আয়াতে সেটাই উল্লেখিত হইয়াছে। ( হজ্জে অপরাধ ও ত্রুটি )
Leave a Reply