হজ্জে তামাত্তু বিষয়ক মাসালা ও মাসায়েল
হজ্জে তামাত্তু বিষয়ক মাসালা ও মাসায়েল >> আল হিদায়া ফিকহ এর মুল সুচিপত্র দেখুন
কিতাবঃ আল হিদায়া, তৃতীয় অনুচ্ছেদ – হজ্জে তামাত্তু
হজ্জে তামাত্তু হজ্জে ইফরাদ থেকে উত্তম।
ইমাম আবূ হানীফা(রঃআঃ) থেকে একটি বর্ণনা রহিয়াছে যে, হজ্জে ইফরাদ উত্তম। কেননা তামাত্তুকারীর সফর তো হয় তার উমরার জন্য। আর হজ্জে ইফরাদকারীদের সফর হয় হজ্জের জন্য।
যাহেরি রিওয়ায়াতের দলিল এই যে, তামাত্তু এর মধ্যে দুই ইবাদত একত্র করার বৈশিষ্ট্য রহিয়াছে। সুতরাং তা কিরানের সদৃশ। তদুপরি তাতে অতিরিক্ত একটি আমল রহিয়াছে। আর তা হলো রক্ত প্রবাহিত করা। আর তার সফর মূলতঃ হজ্জের জন্যই হচ্ছে, যদিও মাঝখানে উমরা আদায় করা হচ্ছে। কেননা, এই উমরা তো হজ্জের অনুবর্তী। যেমন জুমুআ এবং জুমুআ অভিমুখে যাত্রার মাঝখানে সুন্নাত নামাজ আদায় করা হয়।
তামাত্তুকারী দুই প্রকার। প্রথমতঃ যে কুরবানীর পশু সংগে হাকিয়ে নেয়, দ্বিতীয়তঃ যে কুরবানীর পশু নেয় না। আর তামাত্তুর অর্থ হলো একই সফরে দুটি ইবাদত এমনভাবে আদায় করার সুবিধা গ্রহণ করা যে, এ উভয় ইবাদতের মধ্যবর্তী সময়ে পুরোপুরিভাবে পরিবারের মধ্যে দিয়ে অবস্থান না করা। ( হজ্জে তামাত্তু )
এ বিষয়ে বেশ কিছু মত পার্থক্য রহিয়াছে। যা আমরা পূর্ববর্তীতে ইনসাল্লাহ্ বর্ণনা করবো।
তামাত্তু-এর নিয়মে এই যে, হজ্জের মাসগুলোতে মীকাত থেকে কাজ শুরু করবে। অর্থাত্ প্রথমে উমরার ইহরাম করবে, এবং মক্কায় প্রবেশ করবে, এবং উমরার জন্য তাওয়াফ ও সাঈ করবে এবং মাথা-মুড়াবে কিংবা চুল ছাটবে। তখন সে তার উমরা থেকে হালাল হয়ে যাবে। এই হলো উমরার বিবরণ।
তদ্রুপ যদি কেউ আলাহিদাভাবে উমরা করিতে চায় তাহলে আমাদের উল্লেখিত নিয়মগুলো পালন করবে।
রসূলুল্লাহ(সাঃআঃ) উমরাতুল কাযা আদায় করার সময় এরূপই করেছেন। ইমাম মালিক (রঃআঃ) বলেন, তার উপর মাথা মুড়ানো নেই। উমরা অর্থ শুধু তাওয়াফে সাঈ। তার বিপক্ষে আমাদের দলিল হলো আমাদের উল্লেখিত হাদীস।
আর আল্লাহ্ তা’আলার বাণী- (এমন অবস্থায় যে, তোমরা তোমাদের মস্তক মুন্ডনকারী হবে) উমরাতুল কাযা প্রসংগেই নাযিল হইয়াছে।
তাছাড়া যেহেতু উমরাতে তালবিয়ার মাধ্যমে ইহরাম বেধেছে সেহেতু হলকের মাধ্যমে হালাল হওয়া সাব্যস্ত হবে। যেমন হজ্জে রহিয়াছে।
তাওয়াফ শুরু করার সংগে সংগে তালবিয়া বন্ধ করে দেবে। ইমাম মালিক(রঃআঃ) বলেন, বায়তুল্লাহ্র প্রতি নযর পড়া মাত্র তালবিয়া বন্ধ করে দিবে। কেননা উমরা অর্থ বায়তুল্লাহ্র যিয়ারত। এবং তা দ্বারাই উমরা সম্পূর্ণ হয়।
আমাদের দলিল এই যে, নাবী (সাঃআঃ) উমরাতুল কাযা আদায় করার সময় যখন হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করেছিলেন তখন তালবিয়া বন্ধ করেছিলেন।
তাছাড়া কারণ এই যে, আসল উদ্দেশ্য হলো তাওয়াফ। সুতরাং তাওয়াফ শুরু হওয়ার সংগে সংগে তালবিয়া বন্ধ করে দিবে। এ কারণেই হজ্জ আদায়কারী রামী শুরু করার সংগে সংগে তালবিয়া বন্ধ করে দেয়।
ইমাম কুদূরী(রঃআঃ) বলেন, এরপর সে মক্কায় হালাল অবস্থায় অবস্থান করবে। কেননা সে তো উমরা থেকে হালাল হয়ে গেছে। অতঃপর যেদিন ইয়াওমুত্তারবিয়া(আট তারিখ) হবে সেদিন মাসজিদুল হারাম থেকে ইহরাম বাধবে।
আসল শর্ত হলো হরম শরীফ থেকে ইহরাম বাধা। মসজিদ থেকে জরুরী নয়। তবে উত্তম। এর কারণ এই যে, সে মক্কাবাসীদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে গেছে। আর আমরা এর পূর্বে বর্ণনা করে এসেছি যে, মক্কার অধিবাসীদের মীকাত হলো হরম শরীফ।
অতঃপর হজ্জে ইফরাদকারী যা যা করে, সেও তা করবে। কেননা সে তো এখন হজ্জ আদায় করছে। তবে তাওয়াফ যিয়ারতের সময় সে রামাল করবে। এরপর সাঈ করবে। কেননা হজ্জের ক্ষেত্রে এটা তার প্রথম তাওয়াফ। হজ্জে ইফরাদ-কারীর বিষয়টি এর বিপরীত। কেননা একবার সে সাঈ করে ফেলেছে।
এই তামাত্তুকারী যদি হজ্জেরর ইহরাম বাধার পর মীনার উদ্দেশ্যে যাত্রা করার পূর্বেই তাওয়াফ ও সাঈ করে থাকে, তাহলে তাওয়াফে যিয়ারতের মাঝে রামাল করবে না। এবং তার পরে সাঈ করবে না। কেননা তা সে একবার করছে। তবে আমাদের উদ্বৃত আয়াতের প্রেক্ষিতে তার উপর তামাত্তু এর দম ওয়াজিব হবে।
যদি কোন হাদী না পায় তাহলে সে হজ্জের সময় তিন দিন পালন করবে এবং প্রত্যাবর্তনের পর সাতদিন সিয়াম পালন করবে। কিরান প্রসংগে যেভাবে আমরা বর্ণনা করেছি, সেভাবে।
যদি শাওয়াল তিনটি সাওম পালন করে, এরপর উমরা আদায় করে তবে ঐ সাওম এই তিন সাওমের জন্য যথেষ্ট হবে না। কেননা এই রোযা ওয়াজিব হওয়ার কারণ হলো তামাত্তু। আর এটা সে দমের স্থলবর্তী। আর এই অবস্থায় তো সে তামাত্তুকারী নয়। সুতরাং সবব বা কারণ সাব্যস্ত হওয়ার পূর্বে সিয়াম পালন করা তার জন্য বৈধ হবে না।
আর যদি সিয়ামগুলো উমরায় ইহরাম বাধার পর তাওয়াফ করার পূর্বে আদায় করে তবে জাইয হবে। এ হল আমাদের মাযহাব।
ইমাম শাফিঈ(রঃআঃ) ভিন্নমত পোষণ করেন। তার দলিল হলো আল্লাহ্ তা’আলার বানী- হজ্জের সময় তিন সিয়াম পালন করবে। (অর্থাত্ হজ্জের ইহরামের পর)। ( হজ্জে তামাত্তু )
আমাদের দলিল এই যে, সে রোযায় সবব বা কারণ সাব্যস্ত হওয়ার পর তা আদায় করেছে।
আর আয়াতে উল্লেখিত হজ্জ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো হজ্জের সময়(তা হজ্জের ইহরামরে পূর্বে হোক বা পরে) যেমন ইতোপূর্বে আমরা বয়ান করে এসেছি।
তবে সাওমকে শেষ সময় পর্যন্ত বিলম্বিত করা উত্তম। আর শেষ সময় হলো আরাফার দিবস। আমরা কিরান প্রসংগে এর কারণ বর্ণনা করে এসেছি।
আর তামাত্তুকারী যদি নিজের সাথে হাদী নিতে চায় তাহলে (উমরায়) ইহরাম বাধবে এবং হাদী সাথে নিয়ে যাবে। এটা উত্তম। কেননা নাবী করীম(সাঃআঃ) হাদীসমূহ নিজের সাথে নিয়ে গিয়েছিলেন। তাছাড়া এতে (নেক কাজের প্রতি) প্রস্তুতি ও তরান্বিত করার আগ্রহ প্রকাশ পায়।
হাদী যদি উট বা গরু হয় তাহলে চামড়ার টুকরা কিংবা ছেড়া জুতা তার গলায় ঝুলিয়ে দিবে। এর দলিল হলো ইতোপূর্বে আমাদের বর্ণীত হযরত আইশা (রাঃআঃ) এর হাদীস। কালাদা ঝুলিয়ে দেওয়া চট বা কাপড় দ্বারা আবৃত করা থেকে উত্তম। কেননা কালাদা পরানোর কথা কিতাবুল্লায় উল্লেখিত রহিয়াছে।
তাছাড়া কালাদা পরানো হয় ঘোষণার জন্য আর চট বা কাপড় দ্বারা আবৃত করা হয় সাজ-সজ্জার জন্য।
আগে তালবিয়া পড়বে তারপর কালাদা ঝুলাবে। কেননা পূর্বে বর্ণীত হইয়াছে যে, হাদীকে কালাদা পরানো এবং তা সংগে করে রওয়ানা দেয়ার মাধ্যমে ইহরাম শুরু হয়ে যায়। আর তালবিয়ার মাধ্যমে ইহরাম বাধা হলো উত্তম।
হাদীকে পিছন থেকে হাকিয়ে নিয়ে যাবে। এটা হাদীছে সামনে থেকে টেনে নিয়ে যাওয়া থেকে উত্তম। কেনন রসূলুল্লাহ্ (সাঃআঃ) যিল হুলায়ফাতে ইহরাম বেধে ছিলেন, আর তার হাদীগুলোকে তার সামনে হাকিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। ( হজ্জে তামাত্তু )
তাছাড়া এতে অধিক ঘোষণা ও প্রচার হয়। তবে যদি পশু অবাধ্য হয়,তাহলে সামনে থেকেই টেনে নেবে।
ইমাম কুদূরী(রঃআঃ) বলেন, ইমাম আবূ ইউসুফ ও মুহাম্মাদ(র) এর মতে করবে। কিন্তু ইমাম আবূ হানীফা(রঃআঃ) এর মতে করবে না। করা মাকরূহ। আভিধানিক অর্থে জখম করে রক্ত প্রবাহিত করা।
আর তার বিবরণ এই যে, উটনীর কুজ চিরে দিবে। অর্থাত্ বর্শাদ্বারা কুজের ডান দিকে নীচের অংশে জখম করে দেবে। তবে রিওয়ায়াত হিসাবে বাম দিকে জখম করার বিষয়টি অধিক বিশুদ্ধ। কেননা নাবী(সাঃআঃ) বাম দিকে জখম করেছিলেন ইচ্ছাকৃতভাবে, এবং ডান দিকে জখম করেছিলেন ঘটনাক্রমে। আর অবহিত করার জন্য উটনীর কুজে রক্ত মেখে দেবে।
ইমাম আবূ হানীফা(রঃআঃ) এর মতে এরূপ করা মাকরূহ। সাহেবাইনের মতে এরূপ করা ভাল।
আর ইমাম শাফিঈ(রঃআঃ) এর মতে এরূপ করা সুন্নাত। কেননা তা নাবী (সাঃআঃ) এবং খুলাফায়ে রাশিদীন থেকে এরূপ বর্ণীত রহিয়াছে।
সাহেবাইেনর যুক্তি এই যে, কালাদা ঝুলানোর উদ্দেশ্যে তো হলো এই যে, পানি খেতে নামলে কিংবা ঘাস খেতে গেলে যেন তাকে উত্যক্ত না করা হয়। কিংবা পথ হারিয়ে ফেললে যেন ফিরিয়ে দেয়া হয়। আর এটা দ্বারা অধিক অর্জিত হয়, যেহেুত চিহ্নটি স্থায়ী থাকে। এ দিক থেকে এটা সুন্নাত হওয়ার কথা, কিন্তু বিকৃত ঘটার দিকটি তার পরিপন্থী। তাই আমরা বলেছি যে, এটা ভালো।
ইমাম আবূ হানীফা (রঃআঃ) এর দলিল এই যে, এ হল বিকৃতি স্বরূপ। আর তা নিষিদ্ধ।
আর যদি (বিকৃতি সাধন ও সুন্নাত হওয়ার মাঝে) বিরোধ দেখা দেয় তাহলে নিষেধাজ্ঞাই অগ্রাধিকার পায়।
আর নাবী(সাঃআঃ) করেছিলেন, হাদীর হিফাজতের জন্য। কেননা মুশরিকরা এটা ছাড়া হাদীকে উত্যক্ত করা হতে বিরত হতো না।
কোন কোন মতে ইমাম আবূ হানীফা (রঃআঃ) সমকালীন লোকেদের কে মাকরূহ বলতেন। কেননা তারা বেশী মাত্রায় জখম করে ফেলতো; এমনভাবে যে, জখম ছড়িয়ে পড়ার আশংকা হতো।
আর কোন কোন মতে কালাদা ঝুলানোর উপর কে অগ্রাধিকার প্রদান করাকে তিনি মাকরূহ মনে করিতেন।
ইমাম কুদূরী(রঃআঃ) বলেন, যখন মক্কায় প্রবেশ করবে তখন তাওয়াফ ও সাঈ করবে। এটা হলো উমরার জন্য যেমন আমরা ঐ তামাত্তুকারী সম্পর্কে বর্ণনা করেছি, যে হাদী সংগে নেয় না।
তবে সে হালাল হবে না ।বরং তালবিয়া দিবসে (আট তারিখে) হজ্জের ইহরাম বেধে নিবে। কেননা রসূলুল্লাহ(সাঃআঃ) বলেছেন-
আমি আমার বিষয় যা পরে অনুধাবন করেছি, তা যদি আগে অনুধাবন করতাম তাহলে হাদী সংগে আনতাম না। আর এটাকে উমরা গণ্য করে তা থেকে হালাল হয়ে যেতাম। এই হাদীস দ্বারা হাদী সংগে আনা অবস্থায় হালাল হওয়া নিষিদ্ধ হয়ে যায়।
আর তালবিয়া দিবসে হজ্জের ইহরাম বাধবে, যেভাবে মক্কাবাসীদের ইহরাম বাধে, যা আমরা বর্ণনা করে এসেছি।
যদি উক্ত সময়ের আগে ইহরাম বাধে তাহলে তা জাইয হবে। বরং তামাত্তুকারী হজ্জের ইহরাম যত তাড়াতাড়ি করবে ততই তা উত্তম। কেননা্ এতে সে কাজের দিকে অগ্রগামিতা ও অতিরিক্ত কষ্ট রহিয়াছে।
আর এই উত্তমতা যেমন ঐ ব্যক্তির জন্য, যে হাদী সংগে এনেছে, তেমনি ঐ ব্যক্তির জন্য যে হাদী সংগে আনেনি। আর তার উপর একটি দম ওয়াজিব। তা হলো তামাত্তু এর দম, যেমন ইতোপূর্বে আমরা বর্ণনা করে এসেছি।
ইয়াওমুন-নহরে (দশ তারিখে) যখন হলক করবে তখন উভয় ইহরাম থেকে সে হালাল হয়ে যাবে। কেননা যেমন নামাজের ক্ষেত্রে সালাম তেমনি হজ্জের ক্ষেত্রে হলক হল হালালকারী। সুতরাং হলক দ্বারা উভয় ইহরাম থেকে হালাল হয়ে যাবে।
মক্কাবাসীদের জন্য তামাত্তু ও কিরান নেই। তাদের জন্য শুধু হজ্জে ইফরাদ রহিয়াছে। ইমাম শাফিঈ(রঃআঃ) ভিন্নমত পোষণ করেন। তার বিপক্ষে প্রমাণ হলো আল্লাহ্ তা’আলার বাণী- আর তা (তামাত্তু) ঐ ব্যক্তির জন্য, যার পরিবার-পরিজন মাসজিদুল হারামেরে বাসিন্দা নয়।
তাছাড়া তামাত্তু ও কিরান শরীআতে অনুমোদিত হইয়াছে, দুই সফরের একেটিকে রহিত করে সুবিধা গ্রহণ করার জন্য। আর তা বহিরাগতদের জন্যই প্রযুক্ত।
আর যে ব্যক্তি মীকাতের অভ্যন্তরে বসবাসকারী, তার হুকুম মক্কাবাসীদের মত। ফলে তার ক্ষেত্র্রেও হজ্জে তামাত্তু ও হজ্জে কিরান হবে না।
পক্ষান্তরে মক্কী যদি কুফায় গিয়ে (অর্থাত্ মীকাতের বাইরে) হজ্জে কিরান করে তাহলে তা শুদ্ধ হবে। কেননা তার উমরা ও হজ্জ দুটোই মীকাতের সংগে সম্পৃক্ত। সুতরাং সে বহিরাগতের ন্যায় হবে।
আর তামাত্তুকারী যদি উমরা থেকে ফারিগ হয়ে নিজে বাড়িতে ফিরে যায়, অথচ সে হাদী সংগে নেয়নি, তখন তার তামাত্তু বাতিল হয়ে যাবে। কেননা সে দুই ইবাদতের মাঝে তার পরিবারের কাছে বৈধভাবে ফিরে গেছে, আর দ্বারা তামাত্তু বাতিল হয়ে যায়। কয়েকজন তাবিঈ থেকে তা বর্ণীত হইয়াছে।
আর যদি হাদী সংগে এনে থাকে তাহলে পরিবারের কাছে আসা তার জন্য বৈধ নয়। এবং তার তামাত্তু বাতিল হবে না।
এটা ইমাম আবূ হানীফা (রঃআঃ) ও আবূ ইউসুফ (রঃআঃ) এর মত।
ইমাম মুহাম্মাদ (রঃআঃ) বলেন, তামাত্তু বাতিল হয়ে যাবে। কেননা সে দুই সফরে উমরা ও হজ্জ আদায় করেছে।
শায়খাইনের দলিল এই যে, প্রত্যাবর্তন তার পক্ষে ওয়াজিব, যতক্ষণ সে তামাত্তু এর নিয়্যত বজায় রাখে। কেননা হাদী সংগে আনা তার হালাল হওয়ার পথে প্রতিবন্ধক। সুতরাং তার বাড়িতে ফিরে আসা বৈধ হবে না। পক্ষান্তরে মক্কী যদি কুফায় গিয়ে উমরার ইহরাম করে এবং হাদী সংগে আনে, তাহলে সে তামাত্তুকারী হবে না। কেননা প্রত্যাবর্তন তার উপর ওয়াজিব নয়। সুতরাং তার পরিবার উপস্থিত হওয়া বৈধ গণ্য হবে।
যে ব্যক্তি হজ্জের মাসগুলোর পূর্বে উমরার ইহরাম বেধে নেয় এবং উক্ত উমরার জন্য চার চক্করের কম তাওয়াফ করে, এরপর হজ্জের মাস শুরু হলে উমরার তাওয়াফ পূর্ণ করে এবং হজ্জের ইহরাম বেধে নেয়, সে তামাত্তুকারী রূপে গণ্য হবে। কেননা আমাদের মতে ইহরাম হলো উমরার শর্ত। সুতরাং এটাকে হজ্জের মাসগুলোর উপর অগ্রবর্তী করা যায়। শুধু উমরার আমলগুলো হজ্জের মাসে আদায় করাটা হলো বিবেচ্য।
আর তাওয়াফের অধিকাংশটুকুই হজ্জের মাসের মধ্যে পাওয়া গেছে। আর অধিকাংশের উপর সমগ্রের হুকুম আরোপ করা হয়ে থাকে।
যদি হজ্জের মাস শুরু হওয়ার পূর্বে তাওয়াফ চার চক্কর কিংবা তার বেশী করে ফেলে অতঃপর সেই বছরই হজ্জ আদায় করে, তাহলে সে তামাত্তুকারী হবে না। কেননা হজ্জের মাসের পূর্বেই সে অধিকাংশটুকু আদায় করে ফেলেছে।
এ হুকুম এজন্য যে, (তাওয়াফের অধিকাংশটুকু আদায় করার মাধ্যমে) উমরাকারী এমন অবস্থায় পৌছে গেছে যে, স্ত্রী সহবাসের কারণেও তার উমরা বাতিল হবে না। (বরং শুধু দম ওয়াজিব হবে)। সুতরাং সে ঐ ব্যক্তির ন্যায় হয়ে গেলো যে, হজ্জের মাসের পূর্বে উমরা থেকে হালাল হয়ে গেলো।
ইমাম মালিক(রঃআঃ) হজ্জের মাসে পূর্ণ হওয়ার বিষয় বিবেচনা করেন। তার বিপক্ষে দলিল হলো যা আমরা ইতোপূর্বে উল্লেখ করেছি।
আর এজন্য যে, সুযোগ লাভ সাব্যস্ত হয় কর্মসূহের আদায়ের মাধ্যমে। সুতরাং হজ্জের মাসে এক সফরে দুই ইবাদতের কর্মসমূহ আদায় করার সুযোগ লাভকারীই তামাত্তুকারী হবে।
ইমাম কুদুরী(রঃআঃ) বলেন, হজ্জের মাসগুলো হলো শাওয়াল, যিলকাদ ও যিলহাজ্জের দশদিন।
আব্দুল্লাহ্ ইব্নে মাসঊদ, আব্দুল্লাহ্ ইব্নে উমর ও আব্দুল্লাহ্ ইব্নে আব্বাস (রাঃআঃ) এবং আব্দুল্লাহ্ ইব্নে যুবায়র (রাঃআঃ) প্রমুখ থেকে এরূপই বর্ণীত হইয়াছে।
তাছাড়া এই জন্য যে, যিলহজ্জের দশ তারিখ অতিক্রান্ত হলে হজ্জ ফউত হয়ে যায়। অথচ সময় বাকি অবস্থায় ফউত হওয়া সাব্যস্ত হয় না।
আর এটা একথা প্রমাণ করে যে, আল্লাহ্ তা’আলার বাণী- (হজ্জের সময় হলো নির্ধারিত কয়েক মাস) দ্বারা উদ্দেশ্য হলো দুই মাস এবং তৃতীয় মাসের অংশ বিশেষ। সমগ্র তৃতীয় মাস নয়।
যদি হজ্জের ইহরামকে হজ্জের মাসগুলোর উপর অগ্রবর্তী করে তাহলে তার ইহরাম জাইয হয়ে যাবে এবং হজ্জের ইহরাম হিসাবে তা গৃহীত হবে। ইমাম শাফিঈ(রঃআঃ) ভিন্নমত পোষণ করেন। তার মতে তা উমরার ইহরাম হবে। কেননা তার মতে ইহরাম হলো রুকন আর আমাদের মতে শর্ত। সুতরাং সময়ের উপর অগ্রবর্তী করার বৈধতার ক্ষেত্রে তা তাহারাতের সদৃশ হবে।
তাহা ছাড়া এ জন্য যে, ইহরাম অর্থ কিছু বিষয় (নিজের উপর) হারাম করা। আর কিছু বিষয় নিজের উপর ওয়াজিব করা আর তা সকল সময়ে হতে পারে। সুতরাং অগ্রবর্তী মীকাত থেকে ইহরাম বাধার অগ্রবর্তী হলো।
ইমাম মুহাম্মাদ(রঃআঃ) বলেছেন, কুফার অধিবাসী (অর্থাত্ বহিরাগত) যদি হজ্জের মাসগুলোতে উমরার ইহরাম বেধে আসে এবং তা থেকে ফারিগ হয়ে হলক করে বা চুল ছাটে অতঃপর মক্কা কিংবা বসরা শহরে অবস্থান গ্রহণ করে এবং সে বছরেই সে হজ্জ করে, তাহলে সে তামাত্তুকারী হবে।
প্রথম সুরতে কারণ এই যে, সে হজ্জের মাসগুলোর মধ্যে একই সফরে দুটি ইবাদতের সুযোগ লাভ করেছে। দ্বিতীয় সুরত সম্পর্কে কেউ কেউ বলেছেন যে, এটা সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত। আবার কারো কারো মতে এটা শুধু ইমাম আবূ হানীফা(রঃআঃ) এর মত। সাহেবাইনের মতে সে তামাত্তুকারী হবে না। কেননা তামাত্তুকারী হলো সেই ব্যক্তি, যার উমরার ইহরাম হবে মীকাত থেকে। এবং হজ্জের ইহরাম হবে মক্কা থেকে অথচ তার উভয়টির ইবাদতের দুটি ইহরামই হচ্ছে মীকাত থেকে।
ইমাম আবূ হানীফা(রঃআঃ) এর দলিল এই যে, যতক্ষণ না সে নিজের বাড়িতে প্রত্যাবর্তন করবে, ততক্ষণ প্রথম সফরই অব্যাহত থাকবে। সুতরাং তার উভয় ইবাদতই প্রথম সফরে সংঘটিত। ফলে তামাত্তু এর দম ওয়াজিব হবে।
আর যদি উমরার ইহরাম বেধে আগমন করে তা নষ্ট করে ফেলে, তারপর তা থেকে ফারিগ হয়ে চুল ছেটে নেয় পরে বসরায় বসবাস শুরু করে অতঃপর হজ্জের আগে উমরা করে এবং সেই বছরেই হজ্জ আদায় করে, তাহলে সে তামাত্তুকারী হবে না। এটি ইমাম আবূ হানীফা(রঃআঃ) এর মত।
সাহেবাইন বলেন, সে তামাত্তুকারী হবে। কেননা সে (বসরা থেকে যাত্রার মাধ্যমে) নতুন সফর করল। আর এই সফরে সে দুটি ইবাদতের সুযোগ লাভ করেছে।
ইমাম আবূ হানীফা(রঃআঃ) এর দলিল এই যে, নিজ বাড়িতে প্রত্যাবর্তন না করা পর্যন্ত সে তার পূর্ব সফর নিরত রহিয়াছে।
আর যদি সে আপন পরিবারের নিকট ফিরে যায় এবং হজ্জের মাসে উমরা করে এবং সেই মাসেই হজ্জ করে, তাহলে সকলেরই মতে সে তামাত্তুকারী হবে। কেননা এটি হলো নতুন সফর। যেহেতু (বাড়িতে যাওয়ার কারণে) প্রথম সফর সমাপ্ত হয়ে গেছে। আর নতুন সফরে দুটি সহীহ্ ইবাদত সে সম্পন্ন করেছে।
সে যদি বসরায় গমন না করে মক্কাতেই অবস্থান করে এবং হজ্জের মাসে উমরা করে আর সে বছরই হজ্জ করে, তাহলে সকলের মতেই সে তামাত্তুকারী হবে না। কেননা তার উমরার ইহরাম হইয়াছে মক্কা থেকে। এবং ফাসিদ উমরা দ্বারা তা প্রথম সফর সমাপ্ত হয়ে গেছে। আর মক্কাবাসীদের জন্য তামাত্তু নেই।
যে ব্যক্তি হজ্জের মাসে উমরা করে এবং সে বছর হজ্জও করে, সে দুটোর যে কোনটি ফাসিদ করলে সেটির কর্মসমূহ পূর্ণ করবে। কেননা যাবতীয় আমল সম্পন্ন করা ছাড়া তো ইহরামের দায় থেকে সে মুক্ত হতে পারে না।
তবে তামাত্তু এর দম রহিত হয়ে যাবে। কেননা এক সফরের দুটি সহীহ্ ইবাদত আদায় করার সুযোগ সে লাভ করেনি।
কোন স্ত্রী লোক যদি তামাত্তু করে, এরপর বকরী কুরবানী দেয়, তাহলে তামাত্তু এর দমের ব্যাপারে তা যথেষ্ট হবে না ।কেননা যা ওয়াজিব নয়, তা সে আদায় করেছে। পুরুষের ক্ষেত্রেও এ হুকুম রহিয়াছে।
ইহরামের সময় যদি স্ত্রী লোক ঋতুগ্রস্ত হয়ে পড়ে, তাহলে গোসল করে ইহরাম বেধে নিবে এবং একজন হাজীর ন্যায় যাবতীয় কাজ করে যাবে। তবে পবিত্র হওয়ার আগে বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করবে না।
এর দলিল আইশা (রাঃআঃ) এর হাদীস, যিনি সারিফ নামক স্থানে ঋতুগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন। তাছাড়া এজন্য যে, তাওয়াফের স্থান হল মসজিদ আর উকুফের স্থান হল খোলা মাঠ। আর এ গোসল হল ইহরামের জন্য, নামাজের জন্য নয়। সুতরাং গোসলের উদ্দেশ্য সফল হবে।
যদি উকুফের পরে এবং তাওয়াফ যিয়ারতের পরে ঋতুগ্রস্ত হয়ে পড়ে তাহলে মক্কা থেকে প্রত্যাবর্তন করিতে পারে। বিদায়ী তাওয়াফ না করার কারণে তার উপর কোন কিছু ওয়াজিব হবে না। কেননা নাবী (সাঃআঃ) ঋতুগ্রস্ত নারীদের বিদায়ী হজ্জ তরক করার অনুমতি দান করেছেন।
যে ব্যক্তি মক্কাকে বাসস্থান রূপে গ্রহণ করে নেয়, তার উপর বিদায়ী তাওয়াফ নেই। কেননা বিদায়ী তাওয়াফ ঐ ব্যক্তির উপর ওয়াজিব, যে মক্কা থেকে প্রত্যাবর্তন করে। তবে ইমাম আবূ হানীফা(রঃআঃ) থেকে একটি বর্ণনা আছে যে, কুরবানীর তৃতীয় দিন এসে যাওয়ার পর যদি বাসস্থান রূপে গ্রহণ করার নিয়্যত করে,তা হলে বিদায়ী তাওয়াফ রহিত হবে না।
কেউ কেউ ইমাম মুহাম্মাদ(রঃআঃ) থেকেও এটি বর্ণনা করেছেন। কেননা বিদায়ী তাওয়াফের ওয়াক্ত হয়ে যাওয়ার কারণে তা তার উপর ওয়াজিব হয়ে গেছে। সুতরাং এরপর ইকামতের নিয়্যত করার কারণে তা রহিত হবে না। সঠিক বিষয় আল্লাহ্ই অধিক জানেন। ( হজ্জে তামাত্তু )
Leave a Reply