তাওয়াফ করার মাসআলা – তাহারাত ব্যতীত ও সংশ্লিষ্ট বিষয়
তাওয়াফ করার মাসআলা – তাহারাত ব্যতীত ও সংশ্লিষ্ট বিষয় >> আল হিদায়া ফিকহ এর মুল সুচিপত্র দেখুন
কিতাবঃ আল হিদায়া, পরিচ্ছেদ: তাহারাত ব্যতীত তাওয়াফ সংশ্লিষ্ট বিষয়।
যে ব্যক্তি হাদাছ অবস্থায় তাওয়াফে কুদূম করে, তার উপর সাদাকা ওয়াজিব।
ইমাম শাফিঈ(রঃআঃ) বলেন, উক্ত তাওয়াফ গ্রহণযোগ্য হবে না। কেননা রসূলুল্লাহ্ (সাঃআঃ) বলেছেন- তাওয়াফ হলো নামায, কিন্তু (পার্থক্য এই যে,) আল্লাহ্ তা’আলা তাতে কথা বলা বৈধ করেছেন। সুতরাং তাহারাত তাওয়াফের শর্ত হবে।
আমাদের দলিল এই যে, আল্লাহ্ তা’আলার বাণী- তোমরা প্রাচীন ঘরের তাওয়াফ করো। এখানে তাহারাতের শর্ত আরোপ করা হয়নি। সুতরাং তা ফরয হবে না। তবে কেউ কেউ তাহারাতকে সুন্নাত বলেছেন। আর বিশুদ্ধতম মত এই যে, তা ওয়াজিব। কেননা তা তরক করলে ক্ষতিপূরণ ওয়াজিব হয়।
তাছাড়া এই কারণে যে, ওয়াহিতদ পর্যায়ের হাদীস আমল ওয়াজিব করে। সুতরাং এ দ্বারা ওয়াজিব হওয়া প্রমাণিত হবে।
সুতরাং যখন তাওয়াফে কুদূম শুরু করবে, তখন সুন্নাত হওয়া সত্ত্বেও শুরু করার কারণে তা ওয়াজিব হয়ে যাবে এবং তাহারাতে তরক করার কারণে তাতে ত্রুটি আসবে। সুতরাং সাদাকা দ্বারা তা পূরণ করিতে হবে । (দমের পরিবর্তে সাদাকা ধার্য করার কারণ হলো) আল্লাহর পক্ষ থেকে যা ওয়াজিবকৃত অর্থাত্ তাওয়াফে যিয়ারত, তার চেয়ে এর মর্যাদার নিম্নতা প্রকাশ করা। অনুরূপ হুকুম যে কোন নফল তাওয়াফের বেলায়ও।
যদি হাদাছ অবস্থায় তাওয়াফে যিয়ারত করে তাহলে তার উপর একটি বকরী ওয়াজিব হবে। কেননা সে রুকনের মধ্যে ত্রুটি সৃষ্টি করেছে; সুতরাং তা প্রথমটির চেয়ে গুরুতর হবে। সুতরাং দম দ্বারা এর ক্ষতিপূরণ করিতে হবে।
আর যদি সে জুনুবী অবস্থায় তাওয়াফ করে, তবে তার উপর উট ওয়াজিব হবে। ইব্ন আব্বাস (রাঃআঃ) থেকে এরূপই বর্ণীত হইয়াছে। তাছাড়া এ কারণে যে, জানাবাত হলো হাদাছের চেয়ে গুরুতর। সুতরাং পার্থক্য প্রকাশ করার জন্য উট দ্বারা ক্ষতিপূরন ওয়াজিব হবে।
অনুরূপ হুকুম যখন তাওয়াফের অধিকাংশ চক্কর জানাবাতের অবস্থায় কিংবা হাদাছের অবস্থায় করে। কেননা কোন কিছুর অধিকাংশটুকু তার সম্পূর্ণের হুকুম দ্বারা ধারণ করে।
তবে যতক্ষণ মক্কায় থাকে ততক্ষণ তাওয়াফ পুনরায় করে নেওয়াই উত্তম। তখন তার উপর দম ওয়াজিব নয়। কোন কোন অনুলিপিতে রহিয়াছে যে, পুনরায় তাওয়াফ করা তার উপর ওয়াজিব।
তবে বিশুদ্ধতম মত এই যে, হাদাছের ক্ষেত্রে মুস্তাহাব পর্যায়ে তাকে পুনরায় তাওয়াফ করার নির্দেশ দেয়া হবে। আর জানাবাতের ক্ষেত্রে ওয়াজিব পর্যায়ে আদেশ করা হবে। কেননা জানাবাতের কারণে ত্রুটি গুরুতর এবং হাদাছের কারণে ত্রুটি লঘু।
যাহোক যদি পূর্বে হাদাছ অবস্থায় তাওয়াফ করার পর পুনরায় তাওয়াফ করে তাহলে তার উপর যবাহ্ করা ওয়াজিব হবে না। যদিও সে কুরবানীর পর পুনঃতাওয়াফ করে থাকে। কেননা পুনরায় সম্পন্ন করার ত্রুটির সন্দেহ ছাড়া আর কিছুই বিদ্যমান থাকে না।
আর যদি জানাবাতের অবস্থায় তাওয়াফ করার পর কুরবানীর দিনগুলোতে পুনরায় তাওয়াফ করে ফেলে, তাহলে তার উপর কিছুই ওয়াজিব হবে না। কেননা নির্ধারিত সময়ের ভিতরেই সে পুনঃতাওয়াফ করেছে। যদি কুরবানীর দিনগুলোর পর সে পুনঃতাওয়াফ করে তাহলে ইমাম আবূ হানীফা(রঃআঃ) এর প্রসিদ্ধ মত অনুযায়ী বিলম্বের কারণে তার উপর দম ওয়াজিব হবে।
আর যদি কেউ জানাবাতের অবস্থায় তাওয়াফ করার পর বাড়িতে ফিরে যায়, তাহলে তার ফিরে আসা আবশ্যক। কেননা ত্রুটি অনেক বেশী। সুতরাং এর ক্ষতি পূরণের জন্য তাকে ফিরে আসার আদেশ করা হবে। আর নতুন ইহরাম বেধে ফিরবে।
আর যদি ফিরে না গিয়ে উট পাঠিয়ে দেয়, তাহলে তার জন্য তা যথেষ্ট হবে। কেননা আমরা বর্ণনা করে এসেছি যে, এটা উক্ত তাওয়াফের জন্য ক্ষতিপূরণকারী। তবে ফিরে এসে তাওয়াফ করাই উত্তম।
যদি হাদাছের অবস্থায় তাওয়াফের পর বাড়ীতে ফিরে এসে আবার গিয়ে পুনঃতাওয়াফ করে নিলে জাইয হয়ে যাবে। আর যদি দম (দম হিসাবে) বকরী প্রেরণ করে তাহলে তা উত্তম। কেননা ত্রুটির দিকটি লঘু। আর বকরী প্রেরণে ফকীরদের উপকার রহিয়াছে।
যদি তাওয়াফে যিয়ারত মোটেই না করে বাড়িতে ফিরে এসে থাকে তাহলে তাকে ঐ ইহরাম নিয়েই (মক্কায়) ফিরে যেতে হবে। কেননা পূর্ব ইহরাম থেকে হালাল হওয়া পাওয়া যায়নি। সুতরাং তাওয়াফ করা পর্যন্ত স্ত্রী সহবাস থেকে মুহরিম অবস্থায়ই থেকে যাবে।
যে ব্যক্তি হাদাছ অবস্থায় (বিদায়ী তাওয়াফ) করল, তার উপর সাদাকা ওয়াজিব হবে। কেননা এ তাওয়াফ ওয়াজিব হলেও তার স্থান তাওয়াফে যিয়ারতের নিম্নে। সুতরাং উভয়ের মধ্যে পার্থক্য থাকা জরুরী।
ইমাম আবূ হানীফা(রঃআঃ) থেকে আরেক মতে রহিয়াছে যে, এক বর্ণীত বকরী ওয়াজিব হবে। তবে প্রথমোক্ত মতটি অধিক বিশুদ্ধ। যদি বিদায়ী তাওয়াফ জানাবাতের অবস্থায় করে থাকে তাহলে বকরী ওয়াজিব হবে। কেননা এটি গুরুতর ত্রুটি। তার বিদায়ী তাওয়াফ তাওয়াফে যিয়ারতের চাইতে নিম্নতর। তাই বকরীই যথেষ্ট হবে।
যে ব্যক্তি তাওয়াফে যিয়ারতের তিন চক্কর বা এর চাইতে কম চক্কর ছেড়ে দেয় তার উপর বকরী ওয়াজিব । কেননা কম পরিমাণ তরক করার ত্রুটি সামান্য। সুতরাং তা হাদাছের কারণে সৃষ্ট ত্রুটির সদৃশ হবে। সুতরাং তার উপর বকরী ওয়াজিব।
যদি বাড়িতে ফিরে আসে তাহলে আবার না গিয়ে বকরী প্রেরণ করা যথেষ্ট হবে। আমরা পূর্বে এর বর্ণনা করেছি।
আর যে ব্যক্তি তাওয়াফের চার চক্কর তরক করলো; সে থেকে যাবে। যতক্ষণ না পুনরায় তাওয়াফ করবে। কেননা অধিকাংশ পরিমাণই বর্জিত হইয়াছে। কাজেই সে যেন তাওয়াফ করেই নি।
যে ব্যক্তি বিদায়ী তাওয়াফ তরক করলো কিংবা তার চার চক্কর তরক করলো, তার উপর একটি বকরী ওয়াজিব হবে। কেননা সে ওয়াজিব তরক করেছে কিংবা ওয়াজিবের অধিকাংশ তরক করেছে। আর যতক্ষণ সে মক্কায় থাকবে, ততক্ষণ সে পুনরায় তাওয়াফ করার জন্য আদিষ্ট। যাতে ওয়াজিব তার সময় মত আদায় হয়ে যাবে।
যে ব্যক্তি বিদায়ী তাওয়াফের তিন চক্কর তরক করলো, তার উপর সাদাকা ওয়াজিব হবে। যে ব্যক্তি হাতীমের ভিতরে দিয়ে ওয়াজিব তাওয়াফ আদায় করলো, সে যদি মক্কায় অবস্থানরত থাকে, তাহলে পুনরায় তাওয়াফ করে নেবে। কেননা আগেই আমরা উল্লেখ করে এসেছি যে, হাতীমের বাহির দিয়ে তাওয়াফ করা ওয়াজিব।
হাতীমের ভিতর দিয়ে তাওয়াফ করার অর্থ হলো কাবা শরীফের পার্শ্ব দিয়ে তাওয়াফ করার সময় কাবা শরীফ ও হাতীমের মধ্যবর্তী উভয় করিডোরে দিয়ে প্রবেশ করে। এরূপ করলে সে তার তাওয়াফে ত্রুটি সৃষ্টি করলো। সুতরাং সে যতক্ষণ মক্কায় থাকবে ততক্ষণ সম্পূর্ণ তাওয়াফ পুনরায় করে নেবে, যাতে তার তাওয়াফ শরীআত সম্মতভাবে আদায় হয়ে যায়।
যদি শুধু হাতীমের অংশটিতে পুনঃতাওয়াফ করে তাহলেও যথেষ্ট হবে। কেননা সে বর্জিত অংশটি আদায় করে ফেলেছে। এর সুরত এই যে, হাতীমের বাইরে ডান থেকে আরম্ভ করে হাতীমের শেষ মাথায় যাবে। অতঃপর করিডোর দিয়ে হাতীমের ভিতরে প্রবেশ করে, অন্য দিক দিয়ে বের হয়ে যাবে। এভাবে সাতবার করবে।
যদি পুনঃতাওয়াফ তনা করে বাড়িতে ফিরে আসে, তাহলে তার উপর দম ওয়াজিব হবে। কেননা প্রায় চতুর্থাংশ আমল তরক করার কারণে তার তাওয়াফ ত্রুটিপূর্ণ রয়ে গেছে। সুতারাং সাদাকা তার জন্য যথেষ্ট হবে না।
যে ব্যক্তি উযু ছাড়া তাওয়াফে যিয়ারত করলো এবং আইয়ামে তাশরীকের শেষ দিকে তাহারাতের অবস্থা, বিদায়ী তাওয়াফ করে, তার উ্পর একটি দম ওয়াজিব। আর যদি জুনুবী অবস্থায় তাওয়াফে যিয়ারত করে থাকে, তাহলে তার উপর দুটি দম ওয়াজিব।
এটা হলো ইমাম আবূ হানীফা(রঃআঃ) এর মত। সাহেবাইন বলেন, তার উপর একটি দম ওয়াজিব হবে।
উভয় অবস্থার মাঝে পার্থক্যের কারণ এই যে, প্রথম সুরতে তার বিদায়ী তাওয়াফ তাওয়াফে যিয়ারতে রূপান্তরিত হয়নি। কেননা বিদায়ী তাওয়াফ হলো ওয়াজিব। আর হাদাছের কারণে তাওয়াফ যিয়ারত পুনরায় করা ওয়াজিব নয়, বরং তা মুস্তাহাব। সুতরাং বিদায়ী তাওয়াফে যিয়ারতের রূপান্তরিত করা হবে না।
পক্ষান্তরে দ্বিতীয় সুরতে বিদায়ী তাওয়াফকে তাওয়াফে যিয়ারতে রূপান্তরিত করা হবে। কেননা এ অবস্থায় তাওয়াফে যিয়ারত দোহরানো ওয়াজিব। সুতরাং সে বিদায়ী তাওয়াফ তরক করল এবং তাওয়াফে যিয়ারতকে কুরবানীর দিকগুলো থেকে বিলম্ব করল। এমতাবস্থায় বিদায়ী তাওয়াফ তরক করার কারণে সর্বসম্মতিক্রমে দম ওয়াজিব হবে। আর তাওয়াফে যিয়ারত বিলম্ব করার কারণে দম ওয়াজিব হওয়ার সম্পর্কে মত পার্থক্য রহিয়াছে। তবে যতদিন মক্কায় অবস্থান করবে, ততদিন পুনরায় তার উপর বিদায়ী তাওয়াফ করার হুকুম রহিয়াছে। কিন্ত বাড়িতে প্রত্যাবর্তনের পর সে হুকুম আর থাকবে না। যেমন আমরা বয়ান করে এসেছি।
যে ব্যক্তি উযূ ছাড়া উমরার তাওয়াফ ও সাঈ করলো এবং ইহারামমুক্ত হয়ে গেলো সে মক্কায় অবস্থান কালে উভয়টি পুনরায় আদায় করে নিবে। আর তার উপর কোন কিছু ওয়াজিব হবে না।
তাওয়াফ পুনরায় করার কারণ এই যে, হাদাছের কারনে তাতে ত্রুটি এসেছে। আর সাঈ পুনরায় করার কারণ এই যে, তা তাওয়াফের অনুগত। যখন উভয়টি পুনরায় আদায় করবে, তখন ত্রুটি রহিত হওয়ার কারণে তার উপর কোন কিছুই ওয়াজিব হবে না।
আর যদি পুনরায় ফিরে আসার আদেশ দেওয়া হবে না। কেননা তার হালাল হওয়া সংঘটিত হয়ে ছে উমরার রুকন আদায়ের পরে। আর যে ত্রুটি হইয়াছে, তা সামান্য।
আর সাঈর ক্ষেত্রেও তার উপর কিছু ওয়াজিব হবে না। কেননা সে একটি গ্রহণযোগ্য তাওয়াফের পর সাঈ করেছে।
তদ্রুপ (কোন দন্ড আসবে না) যদি তাওয়াফ পুনরায় করে, কিন্তু সাঈ পুনরায় না করে। এটাই বিশুদ্ধ মত।
যে ব্যক্তি সাফা ও মারওয়ার মাঝে সাঈ তরক করে, তার উপর দম ওয়াজিব হবে আর তার হজ্জ পূর্ণ হয়ে যাবে। কেননা আমাদের মতে সাঈ হলো ওয়াজিব আমলসমূহের অন্তর্ভূক্ত। সুতরাং এটা তরক করার কারণে দম ওয়াজিব হবে, কিন্ত হজ্জ ফাসিদ হবে না।
যে ব্যক্তি (হজ্জের) ইমামের পূর্বে (সূর্য অস্ত যাওয়ার আগে) আরাফাত থেকে ফিরে আসে, তার উপর দম ওয়াজিব হবে ।
ইমাম শাফিঈ(রঃআঃ) বলেন, তার উপর কিছুই ওয়াজিব হবে না। কেননা রুকন হলো আরাফার মূল অবস্থান। সুতরাং অবস্থান দীর্ঘায়িত না করার কারণে তার উপর কোন কিছু ওয়াজিব হবে না।
আমাদের দলিল এই যে, সূর্যাস্ত পর্যন্ত অবস্থান অব্যাহত রাখা ওয়াজিব । কেননা রসূলুল্লাহ্ (সাঃআঃ) বলেছেন- তোমরা সূর্যাস্তের পর রওয়ানা হবে। সুতরাং তা তরক করার কারণে দম ওয়াজিব হবে। আর কেউ যদি রাত্রে উকুফ করে, তার অবস্থা এর বিপরীত। কেননা উকুফ অব্যাহত রাখা ঐ ব্যাক্তির জন্য ওয়াজিব, যে ব্যক্তি দিনে অবস্থান করে, রাত্রে নয়।
যদি সূর্যস্তের পর আরাফায় ফিরে আসে, তাহলে তার উপর থেকে দম রহিত হবে না। এ হলো জাহিরে রিওয়াত অনুযায়ী। কেননা যা ছুটে গেছে, তার পুনঃপ্রাপ্তি হবে না। আর যদি সূর্যাস্তের পূর্বে ফিরে আসে, তবে এতে মত ভিন্নতা রহিয়াছে।
যে ব্যক্তি মুযদালিফায় অবস্থান তরক করবে, তার উপর দম ওয়াজিব হবে। কেননা এ হল ওয়াজিব আমলসমূহের অন্তর্ভূক্ত।
যে ব্যক্তি সবকটি দিনের কংকর নিক্ষেপ তরক করলো, তার উপর দম ওয়াজিব হবে। কেননা ওয়াজিব তরক করা সংঘটিত হইয়াছে। তবে একটি দমই তার জন্য যথেষ্ট হবে। কেননা প্রতি দিনের কংকর নিক্ষেপ একই শ্রেণীভূক্ত, যেমন চুল মুন্ডণের ব্যাপারে। সমস্ত শরীরের চুল মুন্ডনের কারণে একই দম ওয়াজিব হয়।
কংকর নিক্ষেপ তরক করা সাব্যস্ত হবে শেষ দিন (তের তারিখে) সূর্যাস্ত দ্বারা। কেননা শুধু ঐ দিনগুলোতেই কংকর নিক্ষেপ ইবাদত হিসাবে গৃহীত। সুতরাং উক্ত দিনগুলো যতক্ষণ অবশিষ্ট রহিয়াছে, ততক্ষণ রামী পুনরায় করা সম্ভব। সুতরাং সে ধারাবাহিকভাবে কংকর পুনঃনিক্ষেপ করে নিবে।
তবে বিলম্বের কারণে দম ওয়াজিব হবে। ইমাম আবূ হানীফা(রঃআঃ) এর মতে। সাহেবাইন ভিন্নমত পোষণ করেন।
যদি একদিনের রামী তরক করে, তাহলে তার উপর দম ওয়াজিব হবে। কেননা এটা একটা হজ্জের সমান।
আর যে ব্যক্তি (এক দিনের) তিনটি জামরার কোন একটি রামী তরক করে,তবে তার উপর সাদাকা ওয়াজিব হবে। কেননা, প্রতি দিনের সবকটি মিলে হলো হজ্জের একটি পূর্ণ আমল। সুতরাং যা ছেড়ে দিয়েছে,তাহলো এক আমল থেকে কম। তবে যদি অর্ধেকের বেশী ছেড়ে দেয় তবে তার উপর দম ওয়াজিব হবে। যেহেতু অধিকাংশ ছেড়ে দেওয়া হইয়াছে।
আর যদি কুরবানীর দিনের (দশ তারিখের) জামরাতুল আকাবার রামী ছেড়ে দেয় তাহলে তার উপর দম ওয়াজিব হবে। কেননা রামীর ক্ষেত্রে সে এই দিনের পূর্ণ আমল তরক করেছে। একই হুকুম হবে যদি সে উক্ত রামীর অধিকাংশ ছেড়ে দেয়।
যদি একটি দুটি বা তিনটি কংকর তরক করে, তাহলে প্রতিটি কংকরের জন্য অর্ধ সাআ গম সাদাকা করবে। তবে যদি তা একটি দমের পরিমাণে পৌছে যায়, তাহলে নিজ বিবেচনায় কিছু কম করে দেবে। কেননা ছেড়ে দেওয়া অংশ হলো কম। সুতরাং তার জন্য সাদাকা যথেষ্ট হবে।
যে ব্যক্তি মাথা মুড়ানো বিলম্বিত করলো, এমন কি কুরবানীর দিনগুলো অতিক্রান্ত হয়ে গেলো তার উপর দম ওয়াজিব হবে। এ হল ইমাম আবূ হানীফা(রঃআঃ) এর মত। একই হুকুম হবে যদি তাওয়াফ যিয়ারত বিলম্বিত করে।
সাহেবাইন বলেন, উভয় ক্ষেত্রেই তার উপর কিছু ওয়াজিব হবে না। এরূপ মতভিন্নতা রহিয়াছে রামী বিলম্বিত করার ক্ষেত্রে এবং একটি আমলকে আরেকটি আমলের উপর অগ্রবর্তী করার ব্যাপারে। যেমন, রামীর পূর্বে হলক করা, হজ্জে কিরানকারীর রামীর পূর্বে কুরবানী করা এবং যবাহ্ করার পূর্বে হলক করার ক্ষেত্রেও।
সাহেবাইনের দলিল এই যে, যা ফউত হইয়াছে (সর্বসম্মতিক্রমে) তা কাযা করার মাধ্যমে তার ক্ষতিপূরণ হয়ে গেছে। আর কাযা এর সাথে অন্য কোন দন্ড ওয়াজিব হয় না। আর ইমাম আবূ হানীফা(রঃআঃ) এর দলিল হলো হযরত ইব্ন মাসঊদ (রাঃআঃ) এর হাদীস। তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি হজ্জের কোন একটি আমলের উপর অন্য কোন আমলকে অগ্রবর্তী করবে তার উপর দম ওয়াজিব হবে।
তাছাড়া এ কারণে যে, যে আমল স্থানের সাথে নির্দিষ্ট, যেমন ইহরাম, তা উক্ত স্থান থেকে বিলিম্বত করলে দম ওয়াজিব হয়। তেমনি সময়ের সাথে নির্ধারিত যে আমলে, তা উক্ত সময় থেকে বিলম্বিত করলে অনুরূপ হুকুম হবে।
যদি কুরবানীর দিনগুলোতে হারামের বাইরে হলক করে, তাহলে তার উপর দম ওয়াজিব হবে। আর যে ব্যক্তি উমরা হারাম থেকে বের হয়ে গেলো, অতঃপর চুল ছাটলো, তার উপর দম ওয়াজিব হবে।
এটা ইমাম আবূ হানীফা(রঃআঃ) ও ইমাম মুহাম্মাদ(রঃআঃ) এর মত। ইমাম আবূ ইউসুফ(রঃআঃ) বলেন, তার উপর কিছুই ওয়াজিব হবে না।
গ্রন্থকার বলেন, ইমাম মুহাম্মাদ(রঃআঃ) জামেউস সাগীর কিতাবে উমরাকারীর ক্ষেত্রে আবূ ই্উসূফ(রঃআঃ) এর মতে উল্লেখ করেছেন আর হজ্জকারীর প্রসঙ্গে উল্লেখ করেননি।
কোন কোন মতে (দম ওয়াজিব হওয়ার বিষয়টি) সর্বসম্মত। কেননা হজ্জের ক্ষেত্রে মিনায় হলক করার সুন্নাত ধারাবাহিকভাবে চলে আসছে। আর মীনা হল হারামের অন্তর্ভূক্ত।
তবে বিশুদ্ধতম মত এই যে, এতে মতপার্থক্য রহিয়াছে। আবূ ইউসুফ(রঃআঃ) এর দলিল এই যে, হলক করার হুকুম হারামের সাথে খাস নয়। কেননা নাবী (সাঃআঃ) ও তার সাহাবায়ে কিরাম হুদায়বিয়াতে বাধাপ্রাপ্ত হন এবং হারামের বাইরেই হলক করেন।
সাহেবাইনের দলিল এই যে, হলককে যখন (ইহরাম থেকে) হালালকারী রূপে সাব্যস্ত করা হইয়াছে, তখন তা নামাজের শেষে সালামের ন্যায় হয়ে গেলো। কেননা সালাম (নামাজ থেকে) হালালকারী হওয়া সত্ত্বেও নামাজের ওয়াজিবসমূহরে অন্তর্ভূক্ত। সুতরাং ইহরাম যখন হজ্জের আমল রূপে সাব্যস্ত হলো, তখন যবাহ্র মত তা হারামের সাথেই বিশিষ্ট হবে । ইমাম আবূ ইউসুফ(রঃআঃ) এর দলীলের জবাব এই যে, হুদায়বিয়ার কিছু অংশ তো হারামে অবস্থিত। সুতরাং হয়ত তারা হারাম ভুক্ত অংশে হলক করেছেন।
মোট কথা, ইমাম আবূ হানীফা(রঃআঃ) এর মতে হলক হলো কাল (কুরবানীর দিন-সমূহ) ও স্থান (হারাম) এর সাথে সীমাবদ্ধ। কিন্তু ইমাম আবূ ইউসুফ(রঃআঃ) এর মতে তা কোনটির সাথেই সীমাবদ্ধ নয়। আর ইমাম মুহাম্মাদ(রঃআঃ) এর মতে স্থানের সাথে সীমাবদ্ধ, কিন্তু কালের সাথে নয়। আর ইমাম যুফার(রঃআঃ) এর মতে কালের সাথে সীমাবদ্ধ, স্থানের সাথে নয়। (স্থান বা কালের সাথে) সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে এই মতবিরোধ দম দ্বারা ক্ষতিপূরণ ওয়াজিব হওয়ার ক্ষেত্রে। পক্ষান্তরে হালাল হওয়ার ক্ষেত্রে সর্বসম্মতিক্রমেই তা স্থান বা কাল কোনটির সাথেই বিশিষ্ট নয়।
উমরার ক্ষেত্রে চুল ছাটা বা চাছা সর্বসম্মতিক্রমে কোন সময়ের সাথে আবদ্ধ নয়। কেননা মূল উমরাই তো কোন সময়ের সাথে আবদ্ধ নয়। স্থানের বিষয়টি এর বিপরীত। কেননা উমরার পুরো আমলই নির্ধারিত স্থানের সাথে সীমাবদ্ধ।
ইমাম মুহাম্মাদ(রঃআঃ) বলেন, যদি চুল না ছেটে চলে যায়, অতঃপর ফিরে আসে এবং ছাটে তাহলে সকলের মতেই তার উপর কোন কিছুই ওয়াজিব হবে না। অর্থাত্ উমরাকারী যদি হরমের বাইরে চলে যায় অতঃপর ফিরে আসে। কেননা সে তো চাছা বা ছাটার কাজটি যথাস্থানেই করেছে। সুতরাং তার উপর ক্ষতিপূরণ আরোপিত হবে না। হজ্জে কিরানকারী যদি যবাহ করার পূর্বে হলক করে, তাহলে তার উপর দুটি দম ওয়াজিব হবে। এটা ইমাম আবূ হানীফা(রঃআঃ) এর মত। একটি দম হলো অসময়ে হলক করার কারণে। কেননা হলকের যথা সময় হলো যবাহ এর পরে। আরেকটি দম হলো যবাহ্কে হলক থেকে বিলম্বিত করার কারণে।
সাহেবাইনের মতে তার উপর একটি দম ওয়াজিব হবে। আর তা প্রথমটি বিলম্বের কারণে কিছুই ওয়াজিব হবে না। এর কারণ ইতোপূর্বে আমরা বলে এসেছি।
Leave a Reply