ইহরামের স্থান ও মাসআলা মাসায়েল – হিদায়া ফিকহ

ইহরামের স্থান ও মাসআলা মাসায়েল – হিদায়া ফিকহ

ইহরামের স্থান ও মাসআলা মাসায়েল – হিদায়া ফিকহ >> আল হিদায়া ফিকহ এর মুল সুচিপত্র দেখুন

কিতাবঃ আল হিদায়া, পরিচ্ছেদ- ইহরামের স্থানসমূহ

প্রথম অনু্চ্ছেদঃ ইহরাম

ইহরাম অবস্থা ছাড়া যে সকল স্থান অতিক্রম করা কারো জন্য জাইয নেই সেগুলো মোট পাচটি। মদীনাবাসীদের জন্য হলো যুল হুলায়ফা এবং ইরাকবাসীদের জন্য হলো যাতু ইরক এবং সিরিয়াবাসীদের জন্য হলো জুহফা এবং নাজদবাসীদের জন্য হলো কারন এবং ইয়ামানবাসীদের জন্য হলো ইয়ালামলাম।

এভাবেই রাসূলুল্লা্হ্‌ (সাঃআঃ) এই সকল এলাকার লোকদের জন্য এই সকল স্থানকে মীকাত রূপে নির্ধারণ করেছেন।

এই নির্ধারণের ফলাফল হলো ইহরাম বাধার কাজটি এ সকল স্থান থেকে পিছানো নিষিদ্ধ। কেননা এসকল স্থান হতে অগ্রবর্তী করা তো সকলের মতেই জাইয। ( ইহরামের স্থান ও মাসআলা মাসায়েল )

বহিরাগত লোকেরা যখন মক্কায় প্রবেশের উদ্দেশ্যে ঐ সকল মীকাত পর্যন্ত উপনীত হয়, তখন আমাদের মতে ইহরাম বেধে নেয়া তার জন্য জরুরী। হজ্জ বা উমরার উদ্দেশ্য থাকুক কিংবা অন্য উদ্দেশ্য থাকুক। কেননা রসূলুল্লাহ্‌  (সাঃআঃ) বলেছেন- ইহরাম অবস্থা ছাড়া কেউ যেন মীকাত অতিক্রম না করে।

তাছাড়া এই জন্য যে, ইহরাম ওয়াজিব হওয়ার উদ্দেশ্য হলো এই পবিত্র অঞ্চলের প্রতি সম্মান প্রদর্শন। সুতরাং এ বিষয়ে হজ্জকারী, উমরাকারী ও অন্যান্যরা সমান হবে। ( ইহরামের স্থান ও মাসআলা মাসায়েল )

যারা মীকাতের অভ্যন্তরে বসবাসকারী, তাদের জন্য নিজস্ব প্রয়োজনে ইহরাম ছাড়া মক্কায় প্রবেশ করা বৈধ। কেননা তাকে তো সচরাচর মক্কায় প্রবেশ করিতেই হয়। আর প্রতিবার ইহরাম বাধ্যতামূলক করাতে সুস্পষ্ট অসুবিধা রহিয়াছে। সুতরাং তারা মক্কাবাসীদের মতই হবে। আর মক্কাবাসীদের জন্য প্রয়োজনে ইহরাম ছাড়া মক্কা হতে বের হওয়া এবং মক্কায় প্রবেশ করার অনুমতি রহিয়াছে।

আর হজ্জ বা উমরা আমাদের নিয়্যত করার বিষয়টি ভিন্ন। কেননা, তা বিশেষ সময়ে হয়ে থাকে সুতরাং এতে কোন অসুবিধা নেই।

যদি এ সকল মীকাতে পৌছার আগেই ইহরাম বেধে নেয়, তাহলে তা জাইয। কেননা আল্লাহ্‌ তা’আলা বলেছেন- তোমরা আল্লাহ্‌র উদ্দেশ্য হজ্জ ও উমরা পূর্ণ কর। আর পূর্ণতা হলো এ দুটি ইহরাম বাধা স্বীয় পরিবারের গৃহ থেকে। আলী ইব্‌ন মাসঊদ  (রাঃআঃ) এ রূপই বলেছেন। সুতরাং ইহরাম মীকাতের আগে বাধাই উত্তম। কেননা হজ্জের পূর্ণতা এ ধারায়ই ব্যাখ্যা করা হইয়াছে; আর এতে কষ্টও অধিক এবং ভক্তির প্রকাশও অধিক।

ইমাম আবূ হানীফা (রঃআঃ) হতে বর্ণীত আছে যে, আগে থেকে ইহরাম বাধা তখনই উত্তম হবে, যখন কোন অন্যায় কাজে লিপ্ত না হওয়ার ব্যাপারে নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ থাকে।

যে ব্যক্তি মীকাতের ভিতরে বাস করে, তার জন্য মীকাত হলো হিল্লু (অর্থাত্‌ হারামের বাইরের এলাকা) । অর্থাত্‌ হারাম ও মীকাতের মধ্যবর্তী অঞ্চল। কেননা আপন পরিবারের নিকট হতে ইহরাম বেধে যাওয়া তার জন্য জাইয রহিয়াছে। আর মীকাতের পর থেকে হারাম পর্যন্ত অঞ্চলটি অভিন্ন স্থান রূপে বিবেচিত।

যে ব্যক্তি মক্কায় বাস করে, তার মীকাত হলো হজ্জের ক্ষেত্রে হরম এবং উমরার ক্ষেত্রে হিল্লু। কেননা নাবী করীম (সাঃআঃ) তার সাহাবায়ে কিরামকে হজ্জের জন্য মক্কার অভ্যান্তর থেকে ইহরাম  বাধার নির্দেশ দিয়েছেন। পক্ষান্তরে আইশা  (রাঃআঃ) এর ভাই আবদুর রহমান  (রাঃআঃ) কে তানঈম থেকে তাকে উমরা করানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। আর তানঈম হিল্লু এ অবস্থিত। ( ইহরামের স্থান ও মাসআলা মাসায়েল )

তাছাড়া এই জন্য যে, হজ্জ আদায় করা হয়  আরাফাতে। আর তা হিল্লু এর মধ্যে রহিয়াছে। সুতরাং ইহরাম হরম থেকে হওয়া উচিত, যাতে এক ধরনের সফর হয়ে যায়। পক্ষান্তরে উমরা আদায় করা হয় হরমের অভ্যন্তরে। সুতরাং উক্ত কারণে হিল্লু থেকে ইহরাম হওয়া উচিত। তবে হাদীছে তানঈম এর কথা উল্লেখিত হওয়ার কারণে তানঈম থেকে ইহরাম করাই উত্তম আল্লাহ্‌-ই অধিক অবগত।

প্রথম অনু্চ্ছেদঃ ইহরাম ( ইহরামের স্থান ও মাসআলা মাসায়েল )

যখন ইহরাম বাধতে, মনস্থ করবে তখন গোসল কিংবা উযূ করে নিবে। তবে গোসল করাই উত্তম। কেননা বর্ণীত আছে, নাবী করিম (সাঃআঃ) তার ইহরামের জন্য গোসল করেছিলেন। তবে এ গোসল হলো পরিচ্ছন্নতার জন্য(পবিত্রতা অর্জনের জন্য নয়)। তাই ঋতুগ্রস্ত স্ত্রীলোককেও গোসল করিতে বলা হবে। যদিও তাতে তার গোসলের ফরয আদায় হবে না। সুতরাং উযূ গোসলের স্থলবর্তী হবে, যেমন জুমুআর ক্ষেত্রে হয়ে থাকে। তবে গোসলই উত্তম। কেনন, গোসলের মাঝে পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি পূর্ণতর। তাছাড়া নাবী করীম (সাঃআঃ) এর সময় তহবন্দ ও চাদর পরিধান করেছেন। তাছাড়া এই জন্য যে, সেলাই করা কাপড় পরা থেকে তাকে নিষেধ করা হইয়াছে। অথচ সতর ঢাকা এবং গরম ও শীত নিবারণ জরুরী, আর তা আমাদের নির্ধারিত কাপড়েই সম্ভব। তবে নতুন কাপড়ই উত্তম। কেননা তা পবিত্রতার অধিক নিকটবর্তী। ( ইহরামের স্থান ও মাসআলা মাসায়েল )

ইমাম কুদূরী (রঃআঃ) বলেন, তার কাছে আতর থাকলে তা ব্যবহার করবে।

ইমাম মুহাম্মাদ (রঃআঃ) হতে বর্ণীত আছে যে, এমন আতর ব্যবহার করা মাকরুহ হবে, যার অস্তিত্ব ইহরামের পরও অবশিষ্ট থেকে যায়। মালিক ও শাফিঈ (রঃআঃ) এর ও এ মত। কেননা সে ইহরামের পর আতর থেকে উপকৃত হচ্ছে।

প্রসিদ্ধ মতামতে দলিল হলো  আইশা  (রাঃআঃ) এর হাদীস। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ্‌  (সাঃআঃ) কে ইহরামের পূর্বে ইহরামের জন্য সুগন্ধি লাগিয়ে দিতাম।

তাছাড়া এই জন্য যে, নিষিদ্ধ বিষয় হলো ইহরামের পরে খুশবু ব্যবহার করা। আর যা অবশিষ্ট থেকে যায়, তা তার সংগে সংযুক্তির কারণে যেন তার আনুষঙ্গিক। কাপড়ের বিষয়টি এর বিপরীত। কেননা তা তার থেকে বিচ্ছিন্ন।

ইমাম কুদূরী (রঃআঃ) বলেন, দুরাকাআত নামাজ আদায় করবে। কেননা জাবির  (রাঃআঃ) বর্ণনা করেছেন যে, নাবী করীম (সাঃআঃ) তার ইহরামের সময় যুলহুলায়ফায় দুরাকাআত নামাজ আদায় করেছেন।

ইমাম কুদূরী (রঃআঃ) বলেন, আর দুআ পড়বে- হে আল্লাহ্‌, আমি হজ্জের নিয়্যত করছি; সুতরাং আপনি আমরা জন্য তা সহজ করে দিন এবং আমার পক্ষ থেকে তা কবূল রুকন। কেননা, হজ্জ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন স্থানে আদায় করা হয়। সুতরাং সাধারণতঃ তা কষ্টমুক্ত হয় না, তাই সহজ তা প্রার্থনা করবে।

আর ফরয নামাজ আদায়ের বেলায় এ ধরনের দুবার কথা বলা হয়নি। কেননা নামাজের সময় সংক্ষিপ্ত এবং সাধারণতঃ তা আদায় করা সহজ।

ইমাম কুদূরী (রঃআঃ) বলেন, অতঃপর নামাজের পরে তালবিয়া পাঠ করবে। কেননা বর্ণীত আছে যে, নাবী (সাঃআঃ) নামাজের পরে তালবিয়া পড়েছিলেন। তবে বাহন তাকে নিয়ে সোজা দাড়িয়ে যাওয়ার পরে তালবিয়া পড়ে তাহলেও জাইয হবে। কিন্তু আমাদের বর্ণীত হাদীসটির কারণে প্রথমটিই উত্তম। যদি সে শুধু হজ্জ আদায়কারী হয় তাহলে তালবিয়া দ্বারা শুধু হজ্জের নিয়্যত করবে। কেননা এটা ইবাদত। আর আমল নিয়্যতের উপরই নির্ভরশীল।

আর তালবিয়া হল এ বাক্য বলা- আমি হাযির, হে আল্লাহ্‌, আমি হাযির। আমি হাযির, আপনার কোন শরীক নেই। আমি হাযির, সমস্ত প্রশংসা আপনারই জন্য এবং নিয়ামত ও রাজত্ব আপনারই এবং আপনার কোন শরীক নেই।

এর হামযাটি জের যুক্ত, জবরযুক্ত নয়, যাতে বক্তব্যটি স্বতন্ত্র হয়, পূর্বসম্পর্কিত না হয়। কেননা জবরযুক্ত হলে (ব্যকরনের দৃষ্টিতে) তা পূর্ববর্তী (বাক্যের বিশেষণ হবে।

এই তালবিয়া হলো হযরত ইবরাহীম (আঃ) এর আহবানের সাড়াদান, যেমন সংশ্লিষ্ট ঘটনায় সুবিদিত।

উল্লেখিত শব্দগুলোর কোন কিছুই বাদ দেওয়া উচিত নয়। কেননা বর্ণনাকারী সর্বসম্মতিক্রমেই তা বর্ণীত হইয়াছে। সুতরাং তা থেকে কিছুই বাদ দেয়া যাবে না। তবে যদি কিছু বৃদ্ধি করে তাহলে তা জাইয হবে। আর এতে ভিন্ন মত রহিয়াছে ইমাম শাফিঈ (রঃআঃ) এর এবং তার নিকট থেকে রাবীর বর্ণনা অনুযায়ী।

তিনি একে আযান ও তাশাহুদের উপর কিয়াস করেন, এদিক থেকে যে, তা বিধিবদ্ধ যিকির।

আমাদের দলিল এই যে, ইব্‌ন মাসঊদ, ইব্‌ন উমর ও আবূ হুরায়রা  (রাঃআঃ) প্রমুখ বিশিষ্ট সাহাবাগণ হাদীছে বর্ণীত শব্দের সংগে অতিরিক্ত যোগ করেছেন।

তাছাড়া এই জন্য যে, তালবিয়ার উদ্দেশ্য হলো প্রশংসা ও বন্দেগীর প্রকাশ। সুতরাং তার সংগে অতিরিক্ত যোগ করা নিষিদ্ধ হবে না।

ইমাম কুদূরী (রঃআঃ) বলেন, যখন তালবিয়া পড়বে, তখন ইহরাম বাধা হয়ে যাবে। অর্থাত্‌ যদি নিয়্যত করে থাকে। কেননা ইবাদত নিয়্যত ছাড়া আদায় হয় না। কিন্তু  গ্রন্থকার তা উল্লেখ করেননি। কেননা এ দুআর মধ্যে নিয়্যতের দিকে ইংগিত রহিয়াছে।

যতক্ষণ তালবিয়া না বলিবে ততক্ষণ শুধু নিয়্যত দ্বারা সে ইহরাম আরম্ভকারী রূপে বিবেচিত হবে না।

ইমাম শাফিঈ (রঃআঃ) ভিন্ন মত পোষণ করেন।

(আমাদের দলিল) কেননা এ হলো একটি আমল আদায় করার সংকল্প। সুতরাং কোন যিকির জরুরী হবে, যেমন নামাজের তাহরীমার ক্ষেত্রে। তবে জনুবিয়া ছাড়া এমন যিকির যা দ্বারা তাযীম উদ্দেশ্য হয়, ইহরাম শুরুকারী গণ্য হবে। সেটা ফারসীতে হোক কিংবা আরবীতে। আমাদের ইমামদের পক্ষ থেকে এটাই হলো প্রসিদ্ধ রিওয়ায়াত।

সাহেবাইনের নীতি অনুযায়ী হজ্জ ও নামাযের মাঝে পার্থক্যের কারণ এই যে, হজ্জের মধ্যে নামাজের তুলনায় অধিক অবকাশ রহিয়াছে। এ কারণেই হজ্জের ক্ষেত্রে গায়র যিকিরকে যিকিরের স্থলবর্তী করা হয়। যেমন উটকে হার পরিয়ে দেয়া। সুতরাং অন্য যিকিরকে তালবিয়ার স্থলবর্তী এবং আরবী ছাড়া অন্য ভাষাকে (আরবীর) স্থলবর্তী করা যেতে পারে।

সহবাস, পাপাচার ও ঝগড়া-বিবাদ ইত্যাদি যে সকল বিষয় আল্লাহ্‌ নিষেধ করেছেন, তা পরিহার করে চলবে। এ বিষয়ে আল্লাহ্‌ তা’আলার নিম্নোক্ত বানীই হলো মুলঃ হজ্জে সহবাস, পাপাচার ও ঝগড়া-বিবাদ নেই। এখানে না-বাচক শব্দে নিষেধ বোঝানো হইয়াছে। আয়াতে বর্ণীত অর্থ সহবাস কিংবা অশ্লীল কথা। কিংবা নারীদের উপস্থিতিতে যৌন বিষয়ক আলোচনা। আয়াতে বর্ণীত অর্থ নাফরমানি।

ইহরামের অবস্থায় এগুলো কঠোরতর হারাম। বিবাদ অর্থ সংগীদের সাথে বিবাদে লিপ্ত হওয়া। কেউ কেউ বলেছেন, ঝগড়া না করার অর্থ হলো হজ্জের সময় অগ্রপশ্চাত্‌ করা নিয়ে মুশরিকদের সংগে বিবাদ না করা।

কোন শিকার হত্যা করবে না। কেননা আল্লাহ্‌ তা’আলা বলেছেন, মুহরিম অবস্থায় তোমরা শিকার হত্যা করো না।

শিকারের প্রতি ইংগিত করবে না এবং শিকার সম্পর্কে অবহিত করবে না। কেননা, আবূ কাতাদা  (রাঃআঃ) বর্ণীত হাদীছে আছে যে, তিনি হালাল অবস্থায় একটি বণ্য-গাধা শিকার করেছিলেন। আর তার সংগীরা মুহরিম অবস্থায় ছিলেন। তখন নাবী করীম (সাঃআঃ) তার সাথীদের জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে, তোমরা কি ইংগিত করেছিলে? তোমরা কি বাতলিয়ে দিয়েছিলে? তোমরা কি সাহায্য করেছিলে? তারা সকলে বললেন, না। তখন তিনি বললেন, তাহলে তোমরা যেতে পারো।

তাছাড়া এই জন্য যে, এগুলোর দ্বারা শিকারের নিরাপত্তা বিনষ্ট করা হয়। কেননা, শিকার তার বন্যতা ও চক্ষুর আড়ালে থাকার কারণে নিরাপড় ছিলো। ( ইহরামের স্থান ও মাসআলা মাসায়েল )

ইমাম কুদূরী (রঃআঃ) বলেন, জামা, পাজামা, পাগড়ী ও মোজা পরবে না। তবে যদি জুতা না পায় তাহলে থেকে নীচের দিকে মোজা কেটে নিবে। কেননা, বর্ণীত আছে যে, নাবী করিম (সাঃআঃ) মুহরিমকে এ সকল জিনিস পরিধান করিতে নিষেধ করেছেন এবং শেষে বলেছেন- এবং মোজা পরবে না। তবে যদি জুতা না পাওয়া যায় তাহলে মোজা দুটোকে থেকে নীচের দিকে কেটে ফেলবে।

এখানে এর অর্থ হলো পায়ের পাতার মধ্যস্থলের জোড় (গ্রন্থি), যেখানে ফিতা বাধা হয়। ইমাম মুহাম্মাদ (রঃআঃ) থেকে হিশাম তা বর্ণনা করেছেন।

চেহারা এবং মাথা ঢাকবে না।

ইমাম শাফিঈ (রঃআঃ) বলেন, পুরুষের জন্য চেহারা ঢাকা জাইয আছে। কেননা রসূলুল্লাহ্‌  (সাঃআঃ) বলেছেন- পুরুষের ইহরাম হলো তার মাথায় এবং স্ত্রীলোকের ইহরাম হলো তার চেহারায়।

আমাদের দলিল এই যে, নাবী (সাঃআঃ) এর বাণী- তার চেহারা এবং মাথা (কাফনের কাপড়ে) ঢাকবে না। কেননা কিয়ামতের দিন তাকে তালবিয়া বলা অবস্থায় উত্থিত করা হবে। এ কথা তিনি বলেছেন ঐ মুহরিম সম্পর্কে, যে মারা গিয়েছিলো।

তাছাড়া এই জন্য যে, স্ত্রীলোকের চেহারা ঢাকা হয় না। অথচ তা খুলে রাখাতে ফিতনার আশংকা রহিয়াছে। সুতরাং পুরুষের চেহারা তো খুলে রাখা অধিক সংগত।

ইমাম শাফিঈ(রঃআঃ) বলেন, আর সুগন্ধি ব্যবহার করবে না। কেননা নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন- তদ্রুপ তেল ব্যবহার করবে না। আমাদের বর্ণীত এ হাদীছের প্রেক্ষিতে।

আর মাথা মুড়াবে না এবং শরীরের পশমও না। কেননা আল্লাহ্‌ তা’আলা বলেছেন- তোমরা তোমাদের মাথা মুড়াবে না।

আর দাড়ি ছাটবে না। কেননা এটা মুড়ানোর সমার্থক। তাছাড়া এতে ধুলিমলিনতা এবং ময়লা দূর করা হয়।

ইমাম কুদূরী (রঃআঃ) বলেন, জাফরান ও উসফোর রজিত কাপড় পরিধান করবে না। কেননা নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন- মুহরিম এমন কোন কাপড় পরিধান করবে না, যাকে জাফরান বা কুসুম দ্বারা রঞ্জিত করা হইয়াছে।

তবে যদি তা এমনভাবে ধোয়া হয় যে, আর সুগন্ধ বেরোয় না। (তাহলে পরা যাবে)। কেননা, নিষেধ করা হয় সুগন্ধের কারণে রংয়ের কারণে, নয়।

ইমাম শাফিঈ (রঃআঃ) বলেন, কুসুম রঞ্জিত কাপড় পরিধানে কোন অসুবিধা নেই। কেননা এটা শুধু রং, তাতে কোন সুগন্ধ নেই। আমাদের দলিল এই যে, তাতে সুঘ্রাণ রহিয়াছে।

ইমাম কুদূরী (রঃআঃ) বলেন, গোসল করা এবং হাম্মামখানায় প্রবেশ করাতে অসুবিধা নেই।

ইমাম মালিক(রঃআঃ) বলেন, শামিয়ানা বা এ ধরনের কিছুর ছায়া গ্রহণ করা মাকরুহ হবে। কেননা এটা মাথার ঢাকার সদৃশ।

আমাদের দলিল এই যে, উছমান  (রাঃআঃ) এর জন্য ইহরামের অবস্থায় শামিয়ানা ঢাংগানো হতো।

তাছাড়া এই জন্যে যে, এটা শরীরকে স্পর্শ করে না। সুতরাং তা গৃহের সদৃশ হলো।

যদি কাবা শরীফের গিলাফের ভিতরে ঢুকে যায় আর তা তাকে ঢেকে ফেলে তবে যদি তার মাথা বা চেহারায় কাপড় না লাগে তাহলে কোন দোষ নেই। কেননা, এটা হলো ছায়া গ্রহণেরই মত।

কোমরে টাকার থলে বাধায় কোন দোষ নেই।

ইমাম মালিক(রঃআঃ) বলেন, যদি তাতে অন্য কারো খরচের টাকা থাকে তাহলে মাকরূহ হবে। কেননা এর কোন প্রয়োজন নেই।

আমাদের দলিল এই যে, এটা সেলাইকৃত কাপড় পরার সমার্থক নয়। সুতরাং এ ক্ষেত্রে উভয় অবস্থাই সমান হবে।

মাথা ও দাড়ি খিতমি দ্বারা ধুবে না। কেননা এটা এক ধরনের সুগন্ধি। তাছাড়া এটা মাথার উকুন ধ্বংস করে। ( ইহরামের স্থান ও মাসআলা মাসায়েল )

ইমাম কুদূরী (রঃআঃ) বলেন, সকল নামাজের পরে এবং যখনই কোন উচু স্থানে আরোহণ করবে কিংবা উপত্যকায় অবতরণ করবে কিংবা সওয়ারদের দেখা পাবে তখনই বেশী বেশী তালবিয়া পড়বে এবং শেষ রাতের দিকেও। কেননা রসূলুল্লাহ্‌  (সাঃআঃ) এর সাহাবাগণ এ সকল অবস্থায় তালবিয়া পড়তেন।

ইহরামের তালবিয়া হলো সালামের তাকবীরের অনুরূপ। সুতরাং এক অবস্থা থেকে অন্য অবস্থায় পরিবর্তনের সময় তা বলিবে।

উচ্চৈস্বরে তালবিয়া পড়বে। কেননা, রসূলুল্লাহ্‌ (সাঃআঃ) বলেছেন- শ্রেষ্ঠ হজ্জ হলো আজ্জ ও ছাজ্জ। আজ্জের অর্থ উচ্চস্বরে তালবিয়া পড়া আর ছাজ্জ হল রক্ত প্রবাহিত করা (কুরবানী করা)।

ইমাম কুদূরী (রঃআঃ) বলেন, যখন মক্কায় প্রবেশ করবে তখন প্রথমে মাসজিদুল হারামে যাবে। কেননা, বর্ণীত আছে যে, নাবী (সাঃআঃ) যখন মক্কায় প্রবেশ করেছিলেন তখন প্রথমে মাসজিদুল হারামে গিয়েছিলেন।

তাছাড়া আসল উদ্দেশ্য তো হলো বায়তুল্লাহ্‌ যিয়ারত করা। আর তা হলো মাসজিদুল হারামের মধ্যে। আর মাসজিদুল হারামে রাত্রে বা দিনে প্রবেশ করাতে কোন দোষ নেই। কেননা তা হলো একটি শহরে প্রবেশ। সুতরাং রাত্র বা দিবস কোন একটির বিশেষত্ব নেই।

যখন বায়তুল্লাহ্‌ দৃষ্টিগোচর হয়,তখন আল্লাহু আকবার ও লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ পড়বে। আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌ন উমর  (রাঃআঃ) বায়তুল্লাহর সাক্ষাত্ লাভ কালে বিসমিল্লাহি ওয়াল্লাহু আকবার বলতেন।

মাবছূত গ্রন্থে ইমাম মুহাম্মাদ (রঃআঃ) হজ্জের স্থানগুলোর জন্য কোন দুআ নির্ধারণ করেন নি। কেননা, দুআর নির্ধারণে হৃদয়ের বিগলিত ভাব দূরীভুত করে দেয়। তবে কেউ যদি হাদীছে বর্ণীত দুআ বরকত লাভের উদ্দেশ্যে পাঠ করে তবে তা উত্তম।

ইমাম কুদূরী (রঃআঃ) বলেন, অতঃপর হাজরে আসওয়াদ থেকে(তাওয়াফ) শুরু করবে। অর্থাত্‌ হাজরে আসওয়াদের মুখোমুখি হয়ে আল্লাহু আকবার ও লাইলাহা ইল্লাল্লাহু বলিবে। কেননা বর্ণীত আছে যে, নাবী (সাঃআঃ) মাসজিদুল হারামে প্রবেশ করে হাজরে আসওয়াদ থেকে আমল (তাওয়াফ) শুরু করেছিলেন, অর্থাত্‌ হাজরে আসওয়াদের মুখোমুখি হয়ে আল্লাহু আকবার ও লাইলাহা ইল্লাল্লাহু পড়েছিলেন।

ইমাম কুদূরী(রঃআঃ) বলেন, উভয় হাত উপরে তোলবে। কেননা নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, সাত স্থান ব্যতীত হস্ত উত্তোলন করবে না। সেগুলোর মধ্যে হাজরে আসওয়াদ স্পর্শ করার কথা উল্লেখ করেছেন।

কোন মুসলমানকে কষ্ট না দিয়ে যদি সম্ভব হয় তাহলে হাজরে আসওয়াদ (চুম্বন) করবে। কেননা বর্ণীত আছে যে, নাবী (সাঃআঃ) আপন পবিত্র ওষ্ঠদ্বয় স্থাপন করে হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করেছিলেন। এবং উমর (রাঃআঃ) কে বলেছিলেন, তুমি শক্তিশালী মানুষ, দুর্বলকে কষ্ট দিবে। সুতরাং তুমি হাজরে আসওয়াদের সামনে মানুষের প্রতি চাপ সৃষ্টি করো না। তবে কখনো ফাক পেয়ে গেলে তখন তা স্পর্শ করে নিও। অন্যথায় তার মুখোমুখি হয়ে আল্লাহু আকবার ও লাইলাহা ইল্লাল্লাহ পড়ে নিও।

তাছাড়া এই জন্য যে, হাজরে আসওয়াদ স্পর্শ করা হলো সুন্নাত আর মুসলমানকে কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকা ওয়াজিব।

ইমাম কুদূরী(রঃআঃ) বলেন, যদি হাতের কোন জিনিস দ্বারা হাজরে আসওয়াদ স্পর্শ করা সম্ভব হয়, যেমন খেজুরের ডাল ইত্যাদি দ্বারা, অতঃপর সেটাকে চুম্বন করে তাহলে তাই করে নিবে। কেননা বর্ণীত আছে যে, নাবী(সাঃআঃ) সওয়ারিতে আরোহণ করা অবস্থায় বায়তুল্লাহ্ তাওয়াফ করেছিলেন এবং হাতের লাঠি দ্বারা রুকন সমুহ স্পর্শ করেছিলেন।

যদি তার কিছুই করা সম্ভব না হয়, তাহলে শুধু হাজারে আসওয়াদের মুখোমুখি দাড়াবে এবং আল্লাহু আকবার ও লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু বলিবে আর আল্লাহ্‌র প্রশংসা করবে এবং নাবী(সাঃআঃ) এর উপর দরুদ পাঠ করবে।

ইমাম কদুরী(রঃআঃ) বলেন, অতঃপর বায়তুল্লাহর দরজা সংলগ্ন দিকটি নিজের ডান দিকে রাখবে এবং চাদরকে করবে। অতঃপর বায়তুল্লাহর সাত চক্কর তাওয়াফ করবে। কেননা বর্ণীত আছে যে, নাবী করিম(সাঃআঃ) হাজরে আসওয়াদ স্পর্শ করেছেন এবং দরজার সংলগ্ন দিকটি ডান দিকে রেখেছেন অতঃপর সাতবার বায়তুল্লাহ্‌র তাওয়াফ করেছেন।

অর্থ চাদরকে ডান বগলের নীচে দিয়ে নিয়ে বাম কাধের উপর ফেলবে। এ হল সুন্নাত। রসূলুল্লাহ(সাঃআঃ) থেকে এ আমল বর্ণীত হইয়াছে।

ইমাম কুদূরী(রঃআঃ) বলেন, হাতীমের বাইরে দিয়ে তাওয়াফ করবে। হাতীম হলো বায়তুল্লার ঐ স্থানটি, য়েখানে মীযাবে রহমত রহিয়াছে। (হাতীম অর্থ ভাংগা অংশ) এ অংশটাকে হাতীম বলা হয় এই জন্য যে, সেটাকে বায়তুল্লাহ্‌ থেকে ভেংগে আলাদা করে রাখা হইয়াছে।

আবার এ অংশটাকে হিজরও বলা হয়। কেননা এ অংশটাকে বায়তুল্লাহ্‌র অন্তর্ভূক্ত হতে বিচ্ছিন্ন রাখা হইয়াছে।

বস্তুতঃ তা বায়তুল্লাহ্‌র অংশ। কেননা আইশা (রাঃআঃ) বর্ণীত হাদীছে রসূলুল্লাহ্‌ (সাঃআঃ) বলেছেন- (হাতীম বায়তুল্লাহ্‌র অংশ বিশেষ)। এজন্য হাতীমের বাইরে দিয়ে তাওয়াফ করবে। এমন কি যদি কেউ হাতীম ও বায়তুল্লাহ্‌র মধ্যবর্তী ফাকে প্রবেশ করে তাওয়াফ করে, তাহলে জাইয হবে না।

অবশ্য যদি কেউ শুধু হাতীমকে কিবলা বানিয়ে নামাজ আদায় করে, তাহলে তার নামাজ শুদ্ধ হবে না। কেননা নামাজে কাবা অভিমুখী হওয়া যে ফরয, তা কুরআনের বাণী দ্বারা সাব্যস্ত হইয়াছে।

সুতরাং সতর্কতার প্রেক্ষিতে যা শুধু খবরে ওয়াহিদ দ্বারা সাব্যস্ত, তাতে ফরয আদায় হবে না। আর তাওয়াফের ক্ষেত্রে সতর্কতা হলো হাতীমের বাইরে দিয়ে তাওয়াফ করা। ইমাম কুদূরী(রঃআঃ) বলেন, প্রথম তিন চক্করে রমল করবে। ( ইহরামের স্থান ও মাসআলা মাসায়েল )

রমল অর্থ হাটার সময় কাধ ঝাকি দিয়ে চলা, যুদ্ধমুখী দুই সারীর মাঝখানে দম্ভকারী প্রতিদ্বন্দ্বীর মত। আর তা করবে চাদর ডান বগলের নীচে দিয়ে বাম কাধের উপর ফেলে। রমলের কারণ ছিলো মুশরিকদের সামনে বীরত্ব প্রকাশ করা। কেননা মুশরিকরা বলাবলি করেছিলো, ইয়াসরিবের জয় তাদের কাহিল করে ফেলেছে।

অতঃপর কারণ দূরীভূত হওয়ার পরও নাবী(সাঃআঃ) এর  যামানায় এবং পরবর্তীতেও (রমলের) বিধান বহাল থাকে।

ইমাম কুদূরী(রঃআঃ) বলেন, অবশিষ্ট চক্করগুলোতে নিজ স্বাভাবিক অবস্থায় চলবে। রসূলুল্লাহ্‌ (সাঃআঃ) এর হজ্জের বিবরণ বর্ণনাকারী সবাই এ বিষয়ে একমত। আর রমল অব্যাহত থাকবে হাজরে আসওয়াদ থেকে হাজরে আসওয়াদে পর্যন্ত। রসূলুল্লাহ্‌ (সাঃআঃ) এর রমল সম্পর্কে এরূপই বর্ণীত।

রমলের  সময় যদি সে মানুষের ভীড়ের চাপে পড়ে তাহলে দাড়িয়ে যাবে। আবার যখন ফাক পাবে তখন রমল করবে। কেননা রমলের স্থলবর্তী কিছু নেই। তাই সে থেমে থাকবে যেন সুন্নাত মুতাবিক তা আদায় করিতে পারে। হাজরে আসওয়াদ স্পর্শ করার বিষয়টি এর বিপরীত। কেননা মুখোমুখি হওয়াই তার স্থলবর্তী।

ইমাম কুদূরী(রঃআঃ) বলেন, যখনই হাজরে আসওয়াদের পাশ দিয়ে যাবে, সম্ভব হলে তা স্পর্শ করবে। কেননা তাওয়াফের চক্করগুলো নামাজের রাকাআতের মতো। সুতরাং প্রত্যেক রাকাআত যেমন তাকবীর দিয়ে শুরু করা হয়, তেমনি প্রতিটি চক্কর হাজরে আসওয়াদ স্পর্শ করে শুরু করবে।

যদি স্পর্শ করা সম্ভব না হয়, তাহলে তার দিকে মুখ করে আল্লাহু আকবার এবং লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্‌ বলিবে। যেমন আমরা্ পূর্বে উল্লেখ করেছি।

আর রুকনে ইয়ামানী স্পর্শ করবে। যাহিরে রিওয়ায়াতের মতে তা মুস্তাহাব। ইমাম মুহাম্মাদ(রঃআঃ) থেকে একটি বর্ণনায় এটি সুন্নাত।

এ দুটি ছাড়া অন্য কোন রোকন স্পর্শ করবে না। কেননা্ নাবী(সাঃআঃ) এ দুটি রোকন স্পর্শ করিতেন। অন্যকোন রুকন স্পর্শ করিতেন না।

আর তাওয়াফ শেষ করবে চুম্বনের মাধ্যমে অর্থাত্‌ হাজরে আসওয়াদের চুম্বন করে।

ইমাম কুদূরী(রঃআঃ) বলেন, অতঃপর মাকামে (ইবরাহীমে) এসে সেখানে দুরাকাআত নামাজ আদায় করবে। কিংবা ওয়াজিব যে কোন স্থানে সহজে সম্ভব হয়। আমাদের মতে এ নামাজ ওয়াজিব।

ইমাম শাফিঈ(রঃআঃ) বলেন, তা সুন্নাত। কেননা, ওয়াজিব হওয়ার কোন দলিল নেই।

আমাদের দলিল হলো রসূলুল্লাহ্‌ (সাঃআঃ) এর বাণী- তাওয়াফকারী যেন প্রতি সাত চক্করের পর দুরাকাআত নামাজ আদায় করে। আর নির্দেশ ওয়াজিব প্রমাণ করে।

অতঃপর হাজরে আসওয়াদের নিকট এসে আবার তা চুম্বন করবে। কেননা বর্ণীত আছে, নাবী(সাঃআঃ) দুরাকাআত পড়ার পর হাজরে আসওয়াদের নিকট ফিরে এসেছিলেন। মূলনীতি এই যে, যে তাওয়াফের পর সাঈ রহিয়াছে, সে ক্ষেত্রে হাজরে আসওয়াদের নিকট ফিরে আসবে। কেননা, তাওয়াফ যেমন হাজরে আসওয়াদ চুম্বন দ্বারা শুরু করা হয়, তেমনি সাঈ-ও তা দ্বারা শুরু করবে। এর বিপরীত যে তাওয়াফ, যার পর সাঈ নেই।

ইমাম কুদূরী (রঃআঃ) বলেন, এ তাওয়াফের নাম তাওয়াফে কুদূম। এটাকে তাওয়াফুত্তাহিয়্যাতিও বলে। এটা সুন্নাত, ওয়াজিব নয়।

ইমাম মালিক(রঃআঃ) বলেন, তা ওয়াজিব। কেননা রসূলুল্লাহ্‌ (সাঃআঃ) বলেছেন- যে ব্যক্তি বায়তুল্লাহ্‌ শরীফে উপস্থিত হবে, সে যেন তাওয়াফের মাধ্যমে বায়তুল্লাহ্‌কে তাহিয়্যা পেশ (সম্মান প্রদর্শন) করে।

আমাদের দলিল এই যে, আল্লাহ্‌ তা’আলা তাওয়াফের আদেশ করেছেন। আর নিঃশর্ত আদেশে পুনরাবৃত্তি দাবী করে না। এদিকে ইজমা এর মাধ্যমে  আদেশের ক্ষেত্র রূপে তাওয়াফে যিয়ারত নির্ধারিত হয়ে গেছে।

আর ইমাম মালিক(রঃআঃ) যে হাদীস বর্ণনা করেছেন, তাতে তাওয়াফের তাওয়াফে তাহিয়্যা বলা হইয়াছে। তার তা মুস্তাহাব হওয়া প্রমাণ করে।

মক্কাবাসীদের জন্য তাওয়াফে কুদূম নেই। কেননা তাদের ক্ষেত্রে তো আগমন অবিদ্যমান।

ইমাম কুদূরী(রঃআঃ) বলেন, অতঃপর সাফা পাহাড়ের দিকে গমন করবে এবং তাতে আরোহণ করবে। বায়তুল্লাহ্‌র দিকে মুখ করবে এবং আল্লাহু আকবার বলিবে, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্‌ বলিবে, নাবী করীম(সাঃআঃ) এর উপর দরুদ পড়বে এবং উভয় হাত উপরে তোলে আপন প্রয়োজনের জন্য আল্লাহ্‌র নিকট দুআ করবে। কেননা বর্ণীত আছে যে, নাবী করীম(সাঃআঃ) সাফা পাহাড়ে আরোহণ করিলেন, এমনকি যখন বায়তুল্লাহ্‌ শরীফ তার দৃষ্টিগোচর হয়, তখন বায়তুল্লাহ্‌ মুখী হয়ে দাড়িয়ে তিনি আল্লাহ্‌র দরবারে দুআ করিলেন।

তাছাড়া এই জন্য যে, ছানা ও দুরুদকে দুআর উপর অগ্রবর্তী করা হয় যাতে কবুলিয়াতের নিকটবর্তী হয়, যেমন অন্যান্য দুআর ক্ষেত্রে।

আর হাত তোলা হলো দুআর সুন্নাত।

পাহাড়ে এতটুকু উপরে আরোহণ করবে, যাতে বায়তুল্লাহ্‌ তার দৃষ্টিগোচর হয়। কেননা বায়তুল্লাহর দিকে মুখ করাই আরোহণের উদ্দেশ্য। আর যে কোন দরজা দিয়ে ইচ্ছা সাফা পাহাড়ের দিকে যেতে পারে। নাবী করীম(সাঃআঃ) বাবে বনী মাখযূম তথা বাবে সাফা দিয়ে শুধু এজন্য বের হয়েছিলেন যে, সেটা সাফার দিকে যাওয়ার নিকটতম দরজা ছিলো, এজন্য নয় যে, তা সুন্নাত।

ইমাম কুদূরী(রঃআঃ) বলেন, অতঃপর মারওয়ার উদ্দেশ্যে অবতরণ করবে এবং ধীর-স্থিরভাবে হেটে যাবে। যখন বায়তুল ওয়াদি পর্যন্ত পৌছবে, তখন সবুজ নিশানদ্বয়ের মাঝে সাধারণভাবে দৌড়াবে। অতঃপর মারওয়া পর্যন্ত ধীর-স্থিরভাবে হেটে যাবে ও তাতে আরোহণ করবে, এবং সাফায় যা করেছে, এখানেও তা করবে। কেননা বর্ণীত আছে যে, নাবী করীম(সাঃআঃ) সাফা থেকে অবতরণ করে মারওয়ার উদ্দেশ্যে হেটে যান এবং বাতনুল ওয়াদিতে দৌড়েছেন। বাতনুল ওয়াদি থেকে বের হয়ে হেটে চলেন এবং মারওয়ায় আরোহণ করেন। এখানে যে উভয়ের মাঝে সাত চক্কর তাওয়াফ করেন। এ হলো এক চক্কর।

এভাবে সাত চক্কর দিবে। সাফা চক্কর দিবে। সাফা থেকে শুরু করবে এবং মারওয়ায় গিয়ে শেষ করবে। আর প্রতি চক্করের সময় বাতনুল ওয়াদিতে দৌড়বে। দলিল হল আমাদের পূর্ব বর্ণীত হাদীস।

আর সাফা থেকে শুরু করার কারণ, এ সম্পর্কে নাবী(সাঃআঃ) এর এ বাণী- আল্লাহ্‌ তা’আলা প্রথমে যেটি (অর্থাত্‌ সাফা) দিয়ে শুরু করেছেন, তোমরাও তা থেকে শুরু কর।

আর সাফা ও মারওয়ার মধ্যবর্তী সাঈ হলো ওয়াজিব। ( ইহরামের স্থান ও মাসআলা মাসায়েল )

এটি রুকন নয়। তবে ইমাম শাফিঈ(রঃআঃ) বলেন, এটি রুকন। কেননা নাবী করীম(সাঃআঃ) বলেছেন- আল্লাহ্‌ তা’আলা তোমাদের উপর সাঈ নির্ধারণ করছেন। সুতরাং তোমরা সাঈ করো।

আমাদের দলিল আল্লাহ্‌ তা(আলার বাণী- ঐ দুটির ওয়াজিব উভয়টিকে নফি করে। তবে আমরা রকনের পরিবর্তে ওয়াজিব হওয়ার দিকে প্রত্যাবর্তন করেছি। আর এ জন্য যে, আকাট্য দলিল ছাড়া রুকন সাব্যস্ত হয় না। আর এখানে তা পাওয়া যায়নি।

আর ইমাম শাফিঈ(রঃআঃ) বর্ণীত হাদীছে শব্দ মুস্তাহাব অর্থে ব্যবহৃত হইয়াছে। যেমন আল্লাহ্‌ তা’আলা মৃত্যুর সময় ওসীয়ত করা প্রসংগে বলেছেন- তোমাদের কারো যখন মৃত্যু উপস্থিত হয় আর সে কিছু সম্পদ রেখে যায় তাহলে তার উপর ওসীয়ত করার বিধান নির্ধারণ করা হইয়াছে(অথচ ওসীয়ত ওয়াজিব নয়)।

অতঃপর মক্কা শরীফে ইহরাম অবস্থায় অবস্থান করবে। কেননা সে হজ্জের ইহরা বেধেছে। সুতরাং হজ্জের ক্রিয়াকর্ম আদায় করার পূর্বে সে ইহরাম মুক্ত হতে পারবে না। ( ইহরামের স্থান ও মাসআলা মাসায়েল )

যখনই তার ইচ্ছা হবে সে বায়তুল্লাহ্‌র তাওয়াফ করবে। কেননা তাওয়াফ হলো নামাজ সদৃশ। রসূলুল্লাহ্‌ (সাঃআঃ) বলেছেন- (বায়তুল্লাহ্‌ তাওয়াফ হলো নামাজ) আর নামাজ হলো নির্ধারিত ইবাদতের মধ্যে উত্তম। সুতরাং তাওয়াফও অনুরূপ। তবে এই সময়ের মধ্যে এ সকল তাওয়াফের পরে সাঈ করবে না। কেননা সাঈ একবারই শুধু ওয়াজিব হয়। আর নফল সাঈ শরীআত অনুমোদিত নয়। আর প্রতি সাত চক্করের জন্য দুই রাকাআত নামাজ আদায় করবে। এ দুরাকাআত হলো তাওয়াফের নামাজ। যেমন ইতোপূর্বে আমরা বর্ণনা করে এসেছি।

ইমাম কুদূরী(রঃআঃ) বলেন, ইয়াওমুত্তারবিয়ার (৮ই যিলহাজ্জের) পূর্বের দিন ইমাম একটি খুতবা বা ভাষণ দান করবেন, যাতে মানুষকে মিনায় যাওয়া আরাফায় নামাজ আদায় করা, উকুফ করা এবং আরাফা থেকে ফিরে আসার নিয়ামাবলী শিক্ষা দিবেন।

মোট কথা হজ্জে তিনটি খুতবা রহিয়াছে। প্রথমটি যা আমরা উল্লেখ করেছি। দ্বিতীয়টি হলো আরাফার দিবসে আরাফাতে আর তৃতীয়টি হলো এগার তারিখে মিনায়। অতএব প্রতি দুই খুতবার মাঝে এক দিনের ব্যবধান রহিয়াছে।

ইমাম যুফার(রঃআঃ) বলেন, লাগাতার তিনদিন খুতবা প্রদান করা হবে। তন্মধ্যে প্রথমটি হলো ইয়াওমুত্তারবিয়া (৮ই যিলহাজ্জ)। কেননা এই দিনগুলো হজ্জ মৌসুমের দিন এবং হাজীদের একত্র হওয়ার সময়।

আমাদের দলিল এই যে, খুতবাগুলোর উদ্দেশ্য হলো শিক্ষাদান। অথচ ইয়াওমুত্তারবিয়া ও ইয়াওমুন নহর হলো ব্যস্ততার দিন। সুতরাং আমরা যা বলেছি সেটাই হবে অধিকতর উপকারী এবং অন্তরে অধিক ক্রিয়াশীল। ( ইহরামের স্থান ও মাসআলা মাসায়েল )

আট তারিখে মক্কায় ফজরের নামাজ আদায় করে মিনার উদ্দেশ্যে বের হবে এবং আরাফা-দিবসের ফজরের নামাজ আদায় করা পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করবে। কেননা বর্ণীত আছে যে, নাবী করীম(সাঃআঃ) আট তারিখে মক্কায় ফজরের নামাজ আদায় করেন আর সূর্যোদয়ের পর মিনার উদ্দেশ্যে যান এবং সেখানে যুহর, আসর, মাগরিব, ঈশা ও ফজর আদায় করেন। অতঃপর আরাফার উদ্দেশ্য রওয়ানা হন।

যদি হাজী আরাফার রাত্র মক্কায় যাপন করে আর সেখানেই ফজর পড়ে অতঃপর আরাফার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয় এবং মিনা দিয়ে অতিক্রম করে, তাহলে যথেষ্ট হবে। কেননা এই দিনে মিনায় হজ্জের কোন ক্রিয়াকর্ম নেই। তবে রসূলুল্লাহ(সাঃআঃ) এর সুন্নাত অনুসরণ না করার কারণে সে মন্দ কাজ করল। ( ইহরামের স্থান ও মাসআলা মাসায়েল )

ইমাম কুদূরী(রঃআঃ) বলেন, অতঃপর  আরাফা অভিমুখে রওয়ানা হবে এবং সেখানে অবস্থান করবে। এর দলিল হলো আমাদের পূর্ব বর্নিত হাদীস।

এ হলো উত্তমতার বিবরণ। তবে কেউ যদি মীনা থেকে সূর্যোদয়ের পূর্বেই চলে যায় তাহলে তা জাইয। কেননা এই স্থানের সংগে তার পালনীয় আর কোন হুকুম নেই।  

ইমাম মুহাম্মাদ (রঃআঃ) মাব্‌সূত কিতাবে বলেছেন, আরাফা মাঠে লোকদের সাথে অবস্থান করবে। কেননা, আলাদা অবস্থানে অহংকার প্রকাশ পায়। অথচ অবস্থা হলো বিনয় প্রকাশের। আর সমাবেশের মাঝে দুআ কবুলের আশা অধিক। কোন কোন মতে লোকদের সাথে বসার উদ্দেশ্য চলাচলের পথে অবতরণ না করা, যাতে চলাচলকারীদের অসুবিধা না হয়।

ইমাম কুদূরী(রঃআঃ) বলেন, সূর্য যখনই হেলে পড়বে তখন ইমাম লোকদের নিয়ে যুহর ও আসর পড়বেন। তিনি প্রথমে খুতবা পাঠ করবেন। আর খুতবায় লোকদের আরাফা ও মুযদালিফায় অবস্থান, কংকর নিক্ষেপ, কুরবাণী, মাথা মুড়ানো এবং তাওয়াফে যিয়ারত করার নিয়মাবলী শিক্ষা দান করবেন। দুটি খুতবা দিবেন। উভয় খুতবার মধ্যে একটি বৈঠকের দ্বারা পার্থক্য করবেন। রসূলুল্লাহ্‌ (সাঃআঃ) এরূপ কথা করেছেন। ( ইহরামের স্থান ও মাসআলা মাসায়েল )

আর ইমাম মালিক(রঃআঃ) বলেন, নামাজের পর খুতবা প্রদান করবেন। কেননা, এটা ওয়ায ও উপদেশের খুতবা। সুতরাং তা ঈদের খুতবার সদৃশ।

আমাদের দলিল হল রসূলুল্লাহ্‌ (সাঃআঃ) এর যে আমল আমরা বর্ণনা করেছি।

তাহা ছাড়া এই জন্য যে, এ খুতবার উদ্দেশ্য হলো হজ্জের কার্যাবলী শিক্ষা দেওয়া। আর এ দুই নামাজ একত্রে আদায় করা উক্ত আমলসমূহের অন্তর্ভূক্ত।

যাহিরী মাযহাব অনুযায়ী ইমাম যখন মিম্বরে আরোহণ করেন এবং উপবেশন করেন তখন মুআয্‌যিনগণ আযান দিবেন। যেমন জুমুআর জন্য দেওয়া হয়।

ইমাম আবূ ইউসুফ(রঃআঃ) হতে বর্ণীত আছে যে, ইমাম বের হওয়ার পূর্বে আযান দেওয়া হবে। তার পক্ষ থেকে বর্নিত আরেকটি মতে খুতবার পরে আযান দিবে। আ বিশুদ্ধ হলো আমরা যা উল্লেখ করেছি। কেননা নাবী করীম(সাঃআঃ) যখন বের হলেন এবং নিজ উটনীর উপর আরোহণ করিলেন তখন মুআয্‌যিনগণ তার সামনে আযান দিয়েছিলেন।

ইমাম খুতবা থেকে ফারিগ হওয়ার পর মুআয্‌যিন ইকামত বলিবেন। কেননা এই হলো নামাজ শুরু করার সময়। সুতরাং তা জুমুআর সদৃশ।

ইমাম কুদূরী(রঃআঃ) বলেন, আর ইমাম লোকদের নিয়ে যুহরের ওয়াকতের মধ্যে এক আযান ও দুই ইকামাতসহ যুহর ও আসরের নামাজ আদায় করবেন।

হাদীস বর্ণনাকারিগণ ঐকমত্য অনুযায়ী দুই নামাজ একত্র করা সম্পর্কিত বহু হাদীস বর্ণীত রহিয়াছে।

জাবির (রাঃআঃ) হতে বর্ণীত হাদীছে আছে যে, নাবী করীম(সাঃআঃ) উক্ত দুই নামাজ এক আযান ও দুই ইকামাত দ্বারা আদায় করেছেন। ( ইহরামের স্থান ও মাসআলা মাসায়েল )

আবার বর্ণনা দিয়েছেন যে, প্রথমে যুহরের জন্য আযান দিবে এবং যুহরের জন্য ইকামাত বলিবে, অতঃপর আসরের জন্য ইকামাত বলিবে। কেননা আসরের নামাজ কে তার নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বে আদায় করা হচ্ছে। সুতরাং মানুষের অবগতির জন্য আলাদা ইকামাত বলিবে।

উভয় নামাজের মাঝে কোন নফল পড়বে না। ঊকুফের উদ্দেশ্য অর্জন করার জন্য। এ কারণেই আসরকে তার নির্ধারিত সময় থেকে এগিয়ে আনা হইয়াছে।

যদি কেউ নফল আদায় করে, তাহলে সে মাকরূহ কাজ করল এবং যাহিরী রিওয়ায়াত অনুযায়ী আসরের নামাজের জন্য দ্বিতীয় আযান দিতে হবে।

ইমাম মুহাম্মাদ(রঃআঃ) থেকে অবশ্য ভিন্নমত বর্ণীত হইয়াছে। কেননা নফল বা্ অন্য কোন আমলে নিয়োজিত হওয়া প্রথম আযানের সংযুক্তি নষ্ট করে দেয়। সুতরাং আসরের জন্য পুনরায় আযান দিতে হবে।

যদি খুতবা ছাড়া নামাজ আদায় করে তাহলে নামাজ আদায় হয়ে যাবে। কেননা এ খুতবা ফরয নয়।

ইমাম কুদূরী(রঃআঃ) বলেন, যে ব্যক্তি নিজের অবস্থান থেকে একা যুহর পড়বে, সে আসরের নামাজ আসরের ওয়াকতেই আদায় করবে।

এটি হলো আবূ হানীফা(রঃআঃ) এর মত। আর সাহেবাইন বলেন, মুনফারিদও উভয় নামাজ একত্রে আদায় করবেন। কেননা উকুফকে প্রলম্বিত করার প্রয়োজনে একত্র করার বৈধতা এসেছে। আর মুনফারিদেরও সে প্রয়োজন রহিয়াছে।

ইমাম আবূ হানীফা(রঃআঃ) এর দলিল এই যে, কুরআনের বাণী দ্বারা নামাজের ওয়াক্তের হিফাজত করা ফরয। সুতরাং যে ব্যাপারে শরীআতের বিধান এসেছে, এ ছাড়া অন্য ক্ষেত্রে এ ফরয তরক করা জাইয হবে না। আর তা হলো ইমাম ও জামাআতের সংগে উভয় নামাজকে একত্র করা।

আসরকে অগ্রবর্তী করার কারণ হলো জামাআত সংরক্ষণ করা। কেননা সকলে যার যার উকুফের স্থানে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার পর আসরের জন্য পুনরায় একত্র হওয়া কঠিন হবে। সাহেবাইন একত্র করার যে কারণ উল্লেখ করেছেন, তা নয়। কেননা (নামায ও উকুফের মাঝে তো) বিরোধ নেই। ইমাম আবূ হানীফা (রঃআঃ) এর মতে উভয় নামাজের জন্যই ইমামের উপস্থিতির শর্ত রহিয়াছে। ( ইহরামের স্থান ও মাসআলা মাসায়েল )

ইমাম যুফার (রঃআঃ) বলেন, শুধু আসরের জন্য এ শর্ত। কেননা আসরকেই তার নির্ধারিত সময় থেকে পরিবর্তন করা হইয়াছে। হজ্জের ইহরাম সম্পর্কেও একই মত ভিন্নতা রহিয়াছে।

তবে এক বর্ণনা মতে হজ্জের ইহরাম যাওয়ালের পূর্বে হওয়া জরুরী। যাতে(উভয় নামাজ) একত্র করার ওয়াক্‌ত আসার পূর্বে ইহরাম বিদ্যমান থাকে। অন্য বর্ণনা মতে নামাজের উপর অগ্রবর্তী করাই যথেষ্ট। কেননা নামাজ হলো উদ্দেশ্য।

ইমাম কুদূরী(রঃআঃ) বলেন, অতঃপর ইমাম উকুফের স্থানের অভিমুখী হবেন এবং জাবালের নিকটে অবস্থান করবেন। আর লোকেরাও নামাজ থেকে ফারিগ হওয়ার পরই ইমামের সংগে অবস্থান করবে। কেননা নাবী করীম(সাঃআঃ) নামাজ থেকে ফারিগ হওয়ার পর উকুফের স্থানের অভিমুখে গমন করেছেন। উক্ত পাহাড়কে জাবালে রাহমাত বলে। আর উকুফের এ স্থান হল উকুফের প্রধান স্থান।

ইমাম কুদূরী (রঃআঃ) বলেন, বাতনে উরানাহ ছাড়া সমগ্র আরাফাত হলো উকুফের স্থান। কেননা রসূলুল্লাহ্‌ (সাঃআঃ) বলেছেন- সমগ্র আরাফা উকুফের স্থান। তবে বাতনে উরানাহ থেকে দূরে থাকবে। তদ্রুপ সমগ্র মুহাসসার থেকে দূরে থাকবে।

ইমাম কুদূরী(রঃআঃ) বলেন, ইমামের কর্তব্য হলো আরাফার সওয়ারির উপর অবস্থান করা। কেননা নাবী(সাঃআঃ) তার উস্ট্রী উপর অবস্থান করেছিলেন। ( ইহরামের স্থান ও মাসআলা মাসায়েল )

তবে পায়ের উপর দাড়িয়ে অবস্থান করলেও জাইয হবে। কিন্তু আমাদের বর্ণীত হাদীসটির কারণে প্রথম সুরতটি উত্তম।

কেবলামুখী হয়ে অবস্থান করা উচিত। কেননা, নাবী করীম (সাঃআঃ) এরূ্পই উকুফ করেছিলেন এবং তিনি বলেছেন- উত্তম উকুফ হলো যা কিবলা মুখী হয়ে করা হয়।

আর তিনি দুআ করবেন এবং মানুষকে হজ্জের আহকাম শিক্ষা দিবেন। কেননা বর্ণীত আছে যে, নাবী করীম(সাঃআঃ) আরাফা দিবসে হস্ত প্রসারিত করে দুআ করিতেন যেন এক মিসকীন আহার প্রার্থনা করছেন।

আর ইচ্ছা অনুযায়ী দুআ করবেন।

যদিও কিছু কিছু দুআ হাদীছে বর্ণীত হইয়াছে। এবং সেগুলোর বিশদ বিবরণ আমি  কিতাবে আল্লাহ্‌ প্রদত্ত তাওফীক বলে বর্ণনা করেছি।

ইমাম কুদূরী(রঃআঃ) বলেন, মানুষের কর্তব্য হলো ইমামের কাছাকাছি অবস্থান করা। কেননা তিনি তো দু্আ করবেন এবং শিক্ষা দান করবেন। ফলে লোকেরা তা শুনতে ও অনুধাবন করিতে সক্ষম হবে।

আর এ-ও তাদের উচিত যে, ইমামের পিছনে অবস্থান গ্রহণ করবে। যাতে তারা কেবলামূখী হতে পারে। এটা হলো উত্তমতার বিবরণ। কেননা আগেই আমরা উল্লেখ করেছি যে, সমগ্র আরাফা হলো উকূফের স্থান। ইমাম কুদূরী(রঃআঃ) বলেন-

আরাফায় অবস্থানের পূর্বে গোসল করা এবং খুব মনোযোগ সহকারে দুআ করা মুস্তাহাব। ( ইহরামের স্থান ও মাসআলা মাসায়েল )

গোসল করা সুন্নাত। ওয়াজিব নয়। সুতরাং যদি শুধু উযূই করে তাহলেও জাইয হবে, যেমন জুমুআ, দুই ঈদ, ও ইহরামের সময়। আর খুব মনোযোগ দিয়ে দুআ করা এ কারণে যে, রসূলুল্লাহ্‌ (সাঃআঃ) এই অবস্থান ক্ষেত্রে আপন উম্মতের জন্য অতি মনোযোগ দিয়ে দুআ করেছিলেন। তখন খুন-খারাবী ও যুলুমের অপরাধ ছাড়া অন্য সকল বিষয়ে তার দুআ কবুল করা হইয়াছে।

আর উকুফের স্থানে মুহূর্তের পর মুর্হুতে তালবিয়া পড়তে থাকবে।

ইমাম মালিক(রঃআঃ) বলেন, আরাফায় উকুফের সাথে সাথেই তালবিয়া পাঠ বন্ধ করে দিবে। কেননা মৌখিক সাড়াদানের সময় হলো রুকনসমূহের ব্যস্ত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত। আর আমাদের দলিল হলো এই মর্মে বর্ণীত হাদীস যে, নাবী করীম(সাঃআঃ) জামরাতুল আকাবায় উপস্থিত হওয়া পর্যন্ত লাগাতার তালবিয়া পড়েছেন।

তাছাড়া হজ্জের তালবিয়া হলো নামাজের তাকবীরের ন্যায়। সুতরাং ইহরামের শেষ ভাগ পর্যন্ত তা বলিবে।

ইমাম কুদূরী(রঃআঃ) বলেন- সূর্য অস্ত যাওয়ার পর ইমাম এবং তার সংগে অন্যান্য লোকের ধীর-স্থির যাত্রা করে মুযদালিফায় আগমন করবে। কেননা নাবী করীম(সাঃআঃ) সূর্যাস্তের পর রওয়ানা হয়েছিলেন। তাছাড়া এতে মুশরিকদের প্রতি বিরোধিতা প্রকাশ করা হয়। আর নাবী করীম(সাঃআঃ) পথে তার সওয়ারিতে ধীর-স্থিরভাবে চলতেন।

আর যদি ভিড়ের আশংকায় ইমামের পূর্বে সে যাত্রা করে কিন্তু আরাফার সীমানা অতিক্রম না করে তাহলে তার জন্য যথেষ্ট হবে। কেননা সে তো আরাফা ত্যাগ করেনি। তবে উত্তম এই জন্য যে, নিজের স্থানেই সে অবস্থান করবে, যদি সে যথাসময়ের পূর্বে যাত্রা শুরুকারী না হয়।

আর যদি সূর্য অস্ত যাওয়ার এবং ইমামের যাত্রা করার পর ভিড়ের আশংকায় সে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে তাহলে কোন দোষ নেই। কেননা বর্ণীত আছে যে, হযরত আইশা  (রাঃআঃ) ইমামের যাত্রা করার পর পানীয় চেয়ে পাঠালেন এবং ইফতার করিলেন এরপর রওয়ানা হলেন।

ইমাম কুদূরী(রঃআঃ) বলেন- মুযদালিফায় আসার পর মুস্তাহাব হলো ঐ পাহাড়ের কাছাকাছি অবস্থান গ্রহণ করা, যার উপর অগ্নি প্রজ্বলিত করা হতো। ঐ পাহাড়ের নাম কুযাহ। কেননা নাবী করীম(সাঃআঃ) এই পাহাড়ের নিকট অবস্থান করেছিলেন। তদ্রুপ উমর (রাঃআঃ) ও (অবস্থান করেছিলেন)। চলাচলের পথে অবস্থান করা পরিহার করবে, যাতে চলাচলকারীদের কষ্ট না হয়। সুতরাং পথের ডানে কিংবা বামে অবস্থান করবে।

আরাফায় অবস্থান প্রসংগে যে কথা আমরা বলেছি, সেই একই কারণে (মুযদালিফায়ও) ইমামের কাছাকাছি অবস্থান করবে। ( ইহরামের স্থান ও মাসআলা মাসায়েল )

ইমাম কুদূরী বলেন- ইমাম এক আযান ও এক ইকামতে লোকদের নিয়ে মাগরিব ও ঈশার নামাজ আদায় করবেন।

ইমাম যুফার (রঃআঃ) এক আযান ও দুই ইকামতের কথা বলেছেন, আরাফায় দুই নামাজ একত্র করা উপর কিয়াস করে।

আমাদের দলিল হলো জাবির (রাঃআঃ) এর বর্ণনা যে, নাবী করীম (সাঃআঃ) এক আযান ও এক ইকামাতে উভয় নামাজ একত্রে আদায় করেছিলেন।

তাছাড়া এই জন্য যে, ঈশার নামাজ তার নিজ ওয়াক্‌তে আদায় করা হচ্ছে। সুতরাং অবহিত করার জন্য আলাদা ইকামতের প্রয়োজন নেই। আরাফায় আসরের নামাজ এর বিপরীত। কেননা সেটাকে তার নিজ ওয়াক্ত থেকে অগ্রবর্তী করা হইয়াছে। সুতরাং অতিরিক্ত ঘোষণার জন্য আলাদা ইকামতের ব্যবস্থা করা হইয়াছে।

আর উভয় নামাজের মাঝে নফল পড়বে না। কেননা তা উভয় নামাজের একত্রতায় ত্রুটি সৃষ্টি করবে।

আর যদি নফল পড়ে কিংবা অন্য কোন কাজে ব্যস্ত হয় তাহলে ব্যবধান সৃষ্টি হওয়ার কারণে পুনরায় ইকামতে দিবে। আযানও পুনরায় দেওয়া উচিত ছিল, যেমন প্রথম একত্রীভূত নামাজের বেলায় (অর্থাত্‌ আরাফায়) তবে আমরা শুধু ইকামাত পুনরায় দেওয়াকে যথেষ্ট মনে করেছি, এই জন্য যে, নাবী করীম(সাঃআঃ) হতে বর্ণীত আছে- মুযদালিফায় মাগরিবের নামাজ পড়েছেন এরপর রাতের খাবার খেয়েছেন এরপর ঈশার নামাজের জন্য (শুধু) আলাদা ইকামাত দিয়েছেন।

ইমাম আবূ হানীফা (রঃআঃ) এর মতে এই একত্রীকরণের জন্য জামাআতের শর্ত নেই। কেননা মাগরিবকে তার নিজ ওয়াকত থেকে বিলম্বিত করা হইয়াছে। আরাফায় একত্রীকরণের বিষয়টি এর বিপরীত। কেননা তথায় আদায়কে তার নিজ ওয়াক্‌ত থেকে অগ্রবর্তী করা হইয়াছে।

যে ব্যক্তি পথে মাগরিবের নামাজ আদায় করবে, সে নামাজ তার জন্য যথেষ্ট হবে না।

এটি ইমাম আবূ হানীফা (রঃআঃ) ও ইমাম মুহাম্মাদ (রঃআঃ) এর মত। ফজর উদিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তাকে তা পুনরায় আদায় করিতে হবে।

আর ইমাম  আবূ ইউসুফ(রঃআঃ) বলেন, এ নামাজই তার জন্য যথেষ্ট হবে। তবে সে মন্দ কাজ করল। একই মতভিন্নতা রহিয়াছে যদি মাগরিবের নামাজ আরাফায় পড়ে থাকে। ( ইহরামের স্থান ও মাসআলা মাসায়েল )

ইমাম আবূ ইউসুফ(রঃআঃ) এর দলিল এই যে, সে তো উক্ত নামাজ তার ওয়াকতেই আদায় করেছে। সুতরাং পুনরায় তা আদায় করা ওয়াজিব হবে না। যেমন ফজর উদিত হওয়ার পরে আদায় করলে। তবে যেহেতু বিলম্ব করা সুন্নাত ছিল, সেহেতু তা তরক করার কারণে গুনাহগার হবে।

ইমাম আবূ হানীফা ও মুহাম্মাদ(রঃআঃ) এর দলিল হলো নাবী (সাঃআঃ) হতে বর্ণীত হাদীস।  তিনি উসাম  (রাঃআঃ) কে মুযদালিফার পথে বলেছেন- (নামাজ তোমার সম্মুখে) এর অর্থ নামাজের ওয়াক্‌ত। এ কথা এদিকেই ইংগিত প্রদান করে যে, বিলম্ব করা ওয়াজিব। আর ওয়াজিব হওয়ার কারণ এই যে, যাতে মুযদালিফায় দুই নামাজ একত্র করা সম্ভব হয়। সুতরাং যতক্ষণ না ফজর উদিত হয়, ততক্ষণ পুনরায় আদায় করা তার উপর ওয়াজিব হবে, যাতে সে উভয় নামাজের মাঝে একত্রকারী হতে পারে। পক্ষান্তরে ফজর উদিত হয় পুনরায় আদায় করা তার উপর ওয়াজিব হবে যাতে সে উভয় নামাজের মাঝে একত্রকারী হতে পারে। পক্ষান্তরে ফজর উদিত হয়ে গেলে তো একত্র করা সম্ভব নয়। সেহেতু পুনরায় আদায় করার হুকুম রহিত হয়ে যায়।

ইমাম কুদূরী(রঃআঃ) বলেন, যখন ফজর উদিত হবে তখন ইমাম অন্ধকারেই লোকদের নিয়ে ফজরের নামাজ আদায় করবে।  কেননা ইব্‌ন মাসঊদ (রাঃআঃ) হতে বর্ণীত আছে যে, নাবী করীম(সাঃআঃ) সে দিন ফজর অন্ধকারে পড়েছিলন। ( ইহরামের স্থান ও মাসআলা মাসায়েল )

তাছাড়া এই জন্য যে, অন্ধকারে ফজর পড়ার মাঝে উকুফের (মুযদালিফায় অবস্থানের) প্রয়োজন পূর্ণ  হয়। (কেননা ফজরের পরই হলো মুযদালিফায় অবস্থানের সময়)। সুতরাং তা জাইয হবে। যেমন আরাফায় আসার অগ্রবর্তী করা হয়।

অতঃপর ইমাম উকুফ করবেন এবং লোকেরা তার সংগে উকুফ করবে। তারপর তিনি দুআ করবেন। কেননা নাবী (সাঃআঃ) এই স্থানে উকুফ করে দুআ করেছিলেন। কেননা ইব্‌ন আব্বাস (রাঃআঃ) এর হাদীছে বর্ণীত আছে যে, এখানে উম্মতের জন্য তার দুআ কবূল করা হয়। এমনকি হত্যা করা এবং যুলুম করার অপরাধের ব্যাপারেও।

আমাদের মতে এ উকুফ হলো ওয়াজিব, রুকন নয়। তাই কোন ওযর ছাড়া তা তরক করলে কম ওয়াজিব হবে। ইমাম শাফিঈ(রঃআঃ) একে রকুন বলেন, কেননা আল্লাহ্‌ তা’আলা ইরশাদ করেছেন- মাশআরুল হারামের নিকট আল্লাহ্‌র স্মরণ কর); এই ধরনের আদেশ দ্বারা রুকন সাব্যস্ত হয়।

আমাদের দলিল এই যে, নাবী(সাঃআঃ) হতে বর্ণীত আছে যে, তিনি তার পরিবারের দুর্বল লোকদের আগেভাগে রাত্রেই পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। যদি তা রুকন হতো তাহলে তিনি তা করিতেন না।

আর ইমাম শাফিঈ(রঃআঃ) যে আয়াত পেশ করেছেন, তাতে যিকির শব্দটি রহিয়াছে। আর ইজমা প্রতিষ্ঠিত রহিয়াছে যে, যিকির রুকন নয়।

আমরা ওয়াজিব হওয়ার বিষয়টি জেনেছি রসূলুল্লাহ্‌  (সাঃআঃ) এর নিম্নোক্ত বাণী থেকে- আমাদের সংগে এই অবস্থান ক্ষেত্রে অবস্থান করল এবং সে ইতোপূর্বে আরাফা থেকে উকুফ করে এসেছে, তার হজ্জ পূর্ণ হয়ে গেল।

রসূলুল্লাহ্‌ (সাঃআঃ) হজ্জের পূর্ণতাকে এই উকুফের সাথে সম্পৃক্ত করেছেন। এবার তা ওয়াজিবের আলামত হওয়ার যোগ্য। তবে যদি ওযর , যেমন দুর্বলতা বা অসুস্থতা অথবা স্ত্রী লোক ভীড়ের কারণে তাকে তরক করে থাকে, তাহলে তার উপর কিছু ওয়াজিব হবে না। দলিল আমাদের পূর্ব বর্ণীত হাদীস।

ইমাম কুদূরী(রঃআঃ) বলেন, ওয়াদি মুহাস্‌সার ছাড়া সমগ্র মুযদালিফাই উকুফের স্থান।

দলিল হলো ইতোপূর্বে আমাদের বর্ণীত হাদীস। ইমাম কুদূরী(রঃআঃ) বলেন, যখন সূর্য উদিত হবে, তখন ইমাম ও অন্যান্য লোকেরা রওয়ানা হয়ে মিনায় আগমন করবে। ( ইহরামের স্থান ও মাসআলা মাসায়েল )

নগণ্য বান্দা (অর্থাত্‌  গ্রন্থকার স্বয়ং) বলে- আল্লাহ তাকে রক্ষা করুন- মুখতা ছারুল কুদুরীর বিভিন্ন নুসখায় এরূপই রহিয়াছে। কিন্তু এটা ভুল। সঠিক এই যে, যখন ইসফার অর্থাত্ ফর্সা হয়ে যাবে, তখনই ইমাম ও অন্যান্য লোকেরা রওয়ানা দিবে। কেননা নাবী করীম(সাঃআঃ) সূর্যোদয়ের পূর্বে রওয়ানা দিয়েছিলেন।

ইমাম কুদুরী (রঃআঃ) বলেন, অতঃপর জামরাতুল আকাবা থেকে শুরু করবে। অর্থাত্‌ বাতনুল ওয়াদির দিক থেকে উক্ত জামরাহ্‌র প্রতি আংগুলের মাথায় রেখে ছুড়ে মারার মত ছোট ছোট সাতটি কংকর নিক্ষেপ করবে। কেননা নাবী করীম (সাঃআঃ) যখন মিনার আগমন করিলেন, তখন জামরায় কংকর নিক্ষেপ করা পর্যন্ত কোথাও নামেননি। এবং তিনি বলেছেন- তোমরা আংগুলের মাথায় রেখে ছুড়ে মারার মত ছোট ছোট কংকর নাও, যাতে তোমাদের একে অপরকে আঘাত না দেয়।

যদি এর চাইতে বড় কংকর নিক্ষেপ করে তা হলেও জাইয হবে। কেননা রামীর (নিক্ষেপের) উদ্দেশ্য তো হাসিল হয়ে যায়। তবে বড় পাথর মোটেও নিক্ষেপ করবে না, যাতে অন্য কেউ তা দ্বারা কষ্ট না পায়।

যদি আকাবার উপরে দিক থেকে নিক্ষেপ করে তাহলেও যথেষ্ট হবে। কেননা তার চারিপার্শ্বই সংশ্লিষ্ট আমল আদায় করার স্থান। আমাদের বর্ণীত হাদীছের আলোকে বাতনুল ওয়াদি থেকে হওয়াই উত্তম।

প্রতিটি কংকর নিক্ষেপের সাথে তাকবীর বলিবে। ইব্‌ন মাসঊদ (রাঃআঃ) ও ইব্‌ন উমর  (রাঃআঃ) এরূপ বর্ণনা করেছেন।

যদি তাকবীরের স্থলে তাসবীহ পড়ে তবুও যথেষ্ট হবে। কেননা, এতে যিকির হাসিল হয়ে যায়। আর যিকিরই হলো কংকর নিক্ষেপের আদব।

আর এ স্থানে বিলম্ব করবে না। কেননা নাবী করীম(সাঃআঃ) এখানে বিলম্ব করেন নি। ( ইহরামের স্থান ও মাসআলা মাসায়েল )

প্রথম কংকর নিক্ষেপের সাথে সাথে তালবিয়া বন্ধ করে দেবে।

আমাদের দলিল, ইতোপূর্বে উল্লেখিত ইব্‌ন মাসঊদ (রাঃআঃ) বর্ণীত হাদীছে একথা রহিয়াছে।

আর জাবির  (রাঃআঃ) বর্ণনা করেছেন যে, নাবী করীম(সাঃআঃ) জামরাতুল আকাবায় প্রথম কংকরটি নিক্ষেপের সময় তালবিয়া বন্ধ করে দিয়েছিলেন।

কংকর নিক্ষেপের নিয়ম এই যে, ডান হাতের বৃদ্ধাংগুলির পৃষ্ঠে কংকর স্থাপন করবে এবং শাহাদাত আংগুলির সাহায্যে নিক্ষেপ করবে। নিক্ষেপের দূরত্বের পরিমাণ এই যে, নিক্ষেপের স্থান এবং কংকর পড়ার স্থানের মাঝে পাচ হাত দূরত্ব হবে। হাসান(রঃআঃ) ইমাম আবূ হানীফা (রঃআঃ) থেকে এরূপ বর্ণনা করেছেন। কেননা এর কম পরিমাণে নিক্ষেপ হবে না, (বরং) ফেলে দেয়া হবে।

আর যদি ইচ্ছাকৃতভাবে ফেলে দেয়, তাহলেও যথেষ্ট হবে। কেননা এটা পায়ের দিকে নিক্ষেপ করা হলো। তবে সুন্নাতের বিরুদ্ধাচরণের কারণে সে গুনাহ্‌গার হবে।

আর যদি জামরার উপর কংকর রেখে দেয়, তবে যথেষ্ট হবে না। কেননা তা-তো রামী হলো না।

যদি কংকর নিক্ষেপ করে আর তা জামরাহ্‌র নিকট গিয়ে পড়ে, তাহলেও জাইয হবে। কেননা এই পরিমাণ থেকে বেচে থাকা সম্ভবপর নয়।

যদি জামরাহ্‌ থেকে দূরে গিয়ে পড়ে, তাহলে তা যথেষ্ট হবে না। কেননা কংকর নিক্ষেপ নির্দিষ্টস্থান ছাড়া ইবাদত রূপ গণ্য নয়।

যদি সাতটি কংকর একত্রে নিক্ষেপ করে, তাহলে তা একবার গণ্য হবে। কেননা শরীআতের স্পষ্ট নির্দেশ হলো কাজটি পৃথক ভাবে করা। ( ইহরামের স্থান ও মাসআলা মাসায়েল )

কংকর যে কোন স্থান থেকে ইচ্ছা সংগ্রহ করবে। তবে জামরাহ্‌র নিকট থেকে নয়। কেননা, তা মাকরূহ হবে। কারণ জামরাহর নিকটে পতিত কংকরগুলো হল প্রত্যাখ্যাত। হাদীছে এরূপই এসেছে। সুতরাং এগুলো কুলক্ষণ রূপে বিবেচিত । তা সত্ত্বেও যদি তা করে তবে যথেষ্ট হবে। রামীর কর্ম বিদ্যমান থাকার কারণে।

মৃত্তিকার যে কোন আংশ বিশেষের দ্বারা রামী জাইয।

ইমাম শাফিঈ (রঃআঃ) ভিন্নমত পোষণ করেন। (তার মতে কংকর ছাড়া অন্য কিছু দ্বারা জাইয হবে না) কেননা রামী ক্রিয়াই হলো উদ্দেশ্য। আর তা মাটির দ্বারাও হাছিল হয়, যেমন পাথর দ্বারা হাছিল হয়।

আর সোনা বা রূপার টুকরা দ্বারা রামীর হুকুম এর বিপরীত। কেননা একে ছিটানো বলা হয়, রামী নয়।

ইমাম কুদূরী(রঃআঃ) বলেন,তারপর আগ্রহ থাকলে কুরবানী করবে। তারপর মাথা মুড়াবে কিংবা ছাটাবে। কেননা রসূলুল্লাহ্‌ (সাঃআঃ) হতে বর্ণীত আছে যে, তিনি বলেছেন- আমাদের আজকের দিনে প্রথম কাজ হলো রামী করা, তারপর কুরবানী করা তারপর মাথা মুড়ানো।

তাছাড়া মাথা মুড়ানো হলো হালাল হওয়ার (অর্থাত্‌ ইহরামমুক্ত হওয়ার) অন্যতম উপায়। তদ্রুপ যাব্‌হ করাও একটি উপায়। তাইতো অবরুদ্ধ ব্যক্তি যাবহ্‌ এর মাধ্যমে হালাল হয়ে যায়। সুতরাং কংকর মারাকে উভয়ের উপর অগ্রবর্তী করা হবে। আর মাথা মুড়ানো হলো ইহরামের নিষিদ্ধ কার্যসমূহের অন্তর্ভূক্ত। সুতরাং কুরবানীকে তার উপর অগ্রবর্তী করা হবে।

কুরবানীকে তার আগ্রহের সাথে সম্পৃক্ত করার কারণ এই যে, হজ্জে ইফরাদকারী যে, কুরবানী করে, তা হল নফল; আর আমাদের আলোচনা হচ্ছে ইফরাদকারী সম্পর্কে।

আর মাথা মুড়ানো উত্তম। কেননা রসূলুল্লাহ্‌  (সাঃআঃ) তিন বার বলেছেন- (আল্লাহ্‌ হলককারীদের প্রতি রহম করুন) হাদীসটিতে অধিক বার হলককারীদের প্রতি রহমের দুআ করা হইয়াছে।

তাছাড়া হলক হলো ময়লা পরিষ্কার করার ক্ষেত্রে অধিকতর কার্যকর। আর তা-ই হলো উদ্দেশ্য। পক্ষান্তরে চুল ছাটার মধ্যে কিছুটা ত্রুটি রহিয়াছে। সুতরাং তা (ছাটার তুলনায় মুড়ানো) উযূর তুলনায় গোসলের সদৃশ হলো। হলকের ক্ষেত্রে মাথার চার ভাগের এক ভাগই যথেষ্ট হবে।

মাথা মাস্‌হ এর উপর কিয়াস করে একথা বলা হয়। তবে পুরো মাথা মুড়ানোই উত্তম রাসূলু্ল্লাহ্(সাঃআঃ) এর অনুসরণে।

চুল ছাটার নিয়ম হলো চুলের অগ্রভাগ থেকে এক আংগুল পরিমাণ ছেটে ফেলা। এরপর তার জন্য স্ত্রী সহবাস ছাড়া আর সব কিছু হালাল হয়ে গেছে। ( ইহরামের স্থান ও মাসআলা মাসায়েল )

ইমাম মালিক (রঃআঃ) বলেন, তবে খুশবু ও ছাড়া। কেননা তা সহবাসের প্রতি আকর্ষণকারী।

আমাদের দলিল হলো এ প্রসংগে রসূলুল্লাহ্‌  (সাঃআঃ) এর বাণী- স্ত্রী সহবাস ছাড়া আর সব কিছু তার জন্য হালাল হয়ে গেছে। আর হাদীস কিয়াসের উপর অগ্রগণ্য।

আমাদের মতে লজ্জাস্থান ছাড়া অন্যভাবে সহবাস করা তার জন্য হালাল নয়।

ইমাম শাফিঈ (রঃআঃ) ভিন্নমত পোষণ করেন। আমাদের দলিল হল, এটাও তো স্ত্রী দ্বারা শাহওয়াত পুরা করার অন্তর্ভূক্ত। সুতরাং পূর্ণ হালাল হওয়া পর্যন্ত তা বিলম্বিত করা হবে।

আমাদের মতে হালাল হওয়ার জন্য কংকর নিক্ষেপ কোন উপায় নয়। ইমাম শাফিঈ(রঃআঃ) ভিন্ন মত পোষণ করেন। তিনি বলেন, হলকের ন্যায় এটাও কুরবানীর দিনের সাথে সম্পৃক্ত। সুতরাং ইহরামমুক্ত করার ক্ষেত্রে এটা হলকের সমপর্যায়ের।

আমাদের দলিল এই যে, যেটা ইহরাম মুক্তকারী হবে, সেটা নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বে অপরাধ বলে বিবেচিত হয়। যেমন মাথা মুড়ানোর বিষয়টি।  অথচ রামী তো অপরাধ রূপে বিবেচিত নয়। তাওয়াফের বিষয়টি এর বিপরীত। কেননা পূর্ববর্তী হলফ দ্বারা হালা হয়ে গেছে, তাওয়াফ দ্বারা নয়।

ইমাম কুদুরী(রঃআঃ) বলেন, অতঃপর সেই দিন কিংবা তার পরের দিন কিংবা তার পরবর্তী দিন মক্কায় গমন করবে; এবং সাত চক্কর বায়তুল্লাহ শরীফের তাওয়াফে যিয়ারত করবে। কেননা বর্ণীত আছে যে, নাবী করীম(সাঃআঃ) যখন মাথা মুড়ালেন, তখন মক্কা অভিমুখে রওয়ানা হলেন এবং বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করিলেন। অতঃপর মিনায় ফিরে এসে সেখানে যুহরের নামাজ আদায় করিলেন। আর তাওয়াফ যিয়ারতের সময় হলো কুরবানীর দিনগুলো। (দশ, এগার ও বার তারিখ)।

কেননা আল্লাহ তা’আলা তাওয়াফকে যবাহ্‌ এর উপর সংযুক্ত করেছেন। তিনি ইরশাদ করেছেন- (অনন্তর তোমরা তা থেকে আহার কর)। অতঃপর তিনি ইরশাদ করেছেন- (আর তারা যেন তাওয়াফ করে)। সুতরাং উভয়টির সময় একই হবে।

আর তাওয়াফের প্রথম সময় হলো ইয়াওমুন্‌-নহরের ফজর উদিত হওয়ার সময় থেকে। কেননা এর পূর্বে রাত্রের যে সময় রহিয়াছে, তা হলো আরাফায় অবস্থানের সময়। আর তাওয়াফ হলো তার পরবর্তী পর্যায়ে।

আর এ দিনগুলোর মাঝে (তাওয়াফের জন্য) সবোত্তম হলো প্রথম দিন, যেমন কুরবানীর বেলায়। এবং হাদীস শরীফে রহিয়াছে তন্মেধ্যে সর্বোত্তম হলো প্রথম দিনটি।)

যদি তাওয়াফুল কুদুমের পর সাফা ও মারওয়ার মাঝে সাঈ করে থাকে, তাহলে এই তাওয়াফে রামাল করবে না।  এবং তার উপর সাঈও নেই। আর যদি পূর্বে সাঈ না করে থাকে তাহলে এই তাওয়াফ রামাল করবে এবং তারপরে সাঈ করবে। কেননা হজ্জের মধ্যে সাঈ শুধু একবার ব্যতীত শরীআত প্রমণিত নয়। আর রামাল শুধু ঐ তাওয়াফ একবার প্রমাণিত, যার পরে সাঈ রহিয়াছে।

আর এই তাওয়াফের পরও দুই রাকাআত নামাজ আদায় করবে। কেননা আমাদের পূর্ব বর্ণীত হাদীস অনুযায়ী প্রতিটি তাওয়াফের সমাপ্তি হবে দুই রাকাআত নামাজের দ্বারা। তাওয়াফ ফরয হোক বা নফল। ( ইহরামের স্থান ও মাসআলা মাসায়েল )

ইমাম কুদূরী(রঃআঃ) বলেন, আর এ তাওয়াফই হজ্জের ফরয তাওয়াফ এবং তা হজ্জের রুকন। কেননা এ তাওয়াফই হলো নির্দেশিতত আল্লাহ্‌ তা’আলার এ বাণীতে- (তারা যেন প্রাচীন ঘরের তাওয়াফ করে) । আর একে এবং ও বলা হয়।

আর তাওয়াফে যিয়ারাতকে এই দিনগুলো থেকে বিলম্বিত করা মাকরূহ। কেননা আমরা বলে এসেছি যে, এই তাওয়াফ এই দিনগুলোর সময়ের সাথে সীমিত। যদি এই দিনগুলো থেকে বিলম্বিত করে, তাহলে ইমাম আবূ হানীফা(রঃআঃ) এর মতে তার উপর দম ওয়াজিব হবে। জিনায়াত (হজ্জের ত্রুটি বিষয়ক) অধ্যায়ে ইনশাল্লাহ্‌ আমরা তা আলোচনা করবো।

ইমাম কুদূরী(রঃআঃ) বলেন, অতঃপর মিনায় ফিরে এসে সেখানেই অবস্থান করবে। কেননা আমরা বর্ণনা করে এসেছি যে, নাবী করীম(সাঃআঃ) মিনায় ফিরে এসেছিলেন। তাছাড়া এই জন্য যে, তার যিম্মায় রামী রয়ে গেছে, আর রামীর স্থান হলো মিনা।

কুরবানীর তিনদিনের দ্বিতীয় দিনে যখন সূর্য হেলে পড়বে, তখন তিনটি জামারায় রামী করবে। মসজিদে খায়ফের নিকটবর্তী জামরাহ থেকে শুরু করবে। সে জামরায় সাতটি কংকর নিক্ষেপ করবে। প্রতিটি কংকরের সাথে তাকবীর বলিবে। এবং সেখানে একটু থামবে। এবং সেখানেও একটু থামবে। অতঃপর জামরাতুল আকাবায় রামী করবে। একইভাবে রামী করবে। কিন্তু সেখানে থামবে না।

রসূলুল্লাহ্‌ (সাঃআঃ) এর হজ্জের আমলসমূহ বিশদভাবে বর্ণনা করার সময় জাবির  (রাঃআঃ) এভাবেই বর্ণনা করেছেন।

উভয় জামরাহ্‌র নিকট ঐ স্থানে দাড়াবে, যেখানে লোকেরা দাড়ায় এবং আল্লাহ্‌ তা’আলার হাম্‌দ-সানা করবে। তাহলীল তাকবীর বলিবে, এবং নাবী করীম (সাঃআঃ) এর উপর দরুদ পড়বে। আর নিজের যাবতীয় প্রয়োজনের জন্য দুআ করবে। (দুআয় উভয় হাত কাধ পর্যন্ত উঠাবে) কেননা রসূলুল্লাহ্‌  (সাঃআঃ) বলেছেন- সাতটি স্থান ব্যতীত যেন হাত তোলা না হয়। তন্মেধ্যে দুই জামরাহ্‌র নিকটের কথাও উল্লেখ করা হইয়াছে। আর হাত তোলার মানে দুআর জন্য হাত তোলা।

এই অবস্থান ক্ষেত্রসমূহে ইমামের কর্তব্য হলো দুআর সময় সকল মুমিনের জন্য ইস্তিগফার করা। কেননা নাবী করিম (সাঃআঃ) বলেছেন-

হে আল্লাহ্‌, হাজীকে ক্ষমা করুন এবং হাজী যার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে, তাকে ক্ষমা করুন।

মূলনীতি এই যে, যে রামীর পরে আরেকটি রামী রহিয়াছে, সে রামীর পরে থামবে। কেননা এটা হলো ইবাদতের মধ্যবর্তী সময়। সুতরাং এসময় দুআ করাই সমীচীন আর যে রামীর পরে আর কোন রামী নেই, তার পরে থামবে না, কেননা ইবাদত শেষ হয়ে গেছে। এ জন্যই ইয়াওমুন্‌-নহরেও জামরাতুল আকাবার পরে থামবে না।

ইমাম কুদুরী(রঃআঃ) বলেন, এর পরবর্তী দিন সূর্য হেলে পড়ার পর একই ভাবে তিনটি রামী করবে। অতঃপর যদি মীনা থেকে জলদী চলে যেতে চায়, তাহলে মক্কা অভিমুখে যাত্রা করবে। আর যদি মিনায় থেকে জলদী চলে যেতে চায়, তাহলে মক্কা অভিমুখে যাত্রা করবে। আর যদি মিনায় অবস্থান করিতে চায়, তাহলে চুতর্থ দিন সূর্য হেলে পড়ার পর তিনটি রামী করবে। কেননা আল্লাহ্‌ তা’আলা ইরশাদ করেছেন- যে ব্যক্তি দুদিনের মাথায় জলদী চলে যেতে চায়, তার কোন গুনাহ নেই। আবার যে বিলম্ব করিতে চায়, তারও কোন গুনাহ নেই। এ বিধান ঐ ব্যক্তির জন্য, যে তাকওয়া অবলম্বন করে।

তবে উত্তম হলো মিনায় অবস্থান করা। কেননা বর্ণীত আছে যে, নাবী করীম(সাঃআঃ) চতুর্থ দিনও অপেক্ষা করেছেন, তিনটি জামরাহ্‌র রামী করা পর্যন্ত।

চতুর্থ দিনের ফজর উদিত হওয়ার আগ পর্যন্ত তার জন্য যাত্রা করার অবকাশ রহিয়াছে। কিন্তু ফজর উদিত হওয়ার পর যাত্রা করার অবকাশ নেই। কেননা রামী করার ওয়াকত এসে যাওয়ার কারণে। তবে এ বিষয়ে ইমাম শাফিঈ(রঃআঃ) ভিন্নমত পোষণ করেন।

যদি এই দিনে (অর্থাত্‌ চতুর্থ দিনে) ফজর উদিত হওয়ার পর যাওয়ালের পূর্বে রামী করে ফেলে তাহলে ইমাম আবূ হানীফা (রঃআঃ)- এর মতে তা জাইয হবে। এ হলো সূক্ষ্ম কিয়াসের কথা।

অন্যান্য দিনের উপর কিয়াস করে সাহেবাইন বলেন, তা জাইয হবে না। কেননা অন্যান্য দিনের সাথে পার্থক্য ছিলো শুধু (মক্কা অভিমুখে) যাত্রার নিয়মের সংগে যুক্ত হবে। ( ইহরামের স্থান ও মাসআলা মাসায়েল )

ইমাম আবূ হানীফা (রঃআঃ) এর মাযহাব ইব্‌ন আব্বাস  (রাঃআঃ) থেকেও বর্ণীত হইয়াছে।

তাছাড়া এই জন্য যে, রামী না করার ক্ষেত্রেই যখন শিথিলতার ক্রিয়া প্রকাশ পাওয়া আরো স্বাভাবিক। প্রথম ও দ্বিতীয় দিনের বিষয়টি এর বিপরীত। কেননা প্রসিদ্ধ বর্ণনা মতে ঐ দুটি দিনে যাওয়ালের পরে ছাড়া রামী জাইয নয়। কেননা দিন দুটিতে রামী ত্যাগ করা বৈধ নয়। সুতরাং তা বর্ণীত মূল অবস্থার উপর বহাল থাকবে।

কুরবানীর দিন রামীর প্রথম ওয়াক্ত হলো ফজর উদিত হওয়ার সময় থেকে।

ইমাম শাফিঈ(রঃআঃ) বলেন, রামীর প্রথম ওয়াক্ত হলো মধ্যরাতের পর থেকে। কেননা বর্ণীত আছে যে, নাবী করিম(সাঃআঃ) রাখালদের রাতে রামী করার অনুমতি দিয়েছিলেন।

আমাদের দলিল হলো নাবী করীম(সাঃআঃ) এর বাণী- তোমরা ভোরে উপনীত হওয়া ছাড়া জামরাতুল আকাবার রামী করবে না। অন্য রিওয়ায়াত রহিয়াছে সূর্য উদিত হওয়ার পূর্বে রামী করবে না।

সুতরাং প্রথম বর্ণনা দ্বারা মূল ওয়াক্ত সাব্যস্ত হবে, আর দ্বিতীয় বর্ণনা দ্বারা উত্তম হওয়া সাব্যস্ত হবে।

ইমাম শাফিঈ(র) যে হাদীস বর্ণনা করেছেন, তার ব্যাখ্যা হলো দ্বিতীয় ও তৃতীয় রাত্র। তাছাড়া এই জন্য যে, ইয়াওমুন-নহরের রাত্র হলো মুযদালিফায় অবস্থানের রাত্র। আর রামী তো উকুফের পরবর্তী পর্যায়ে। সুতরাং অনিবার্যভাবেই রামীর ওয়াক্ত উকুফের পরেই হবে। ( ইহরামের স্থান ও মাসআলা মাসায়েল )

আর ইমাম আবূ হানীফা (রঃআঃ) এর মতে (রামীর) এই সময় সূর্যাস্ত প্রলম্বিত হবে। কেননা রাসূলু্ল্লাহ্‌(সাঃআঃ) বলেছেন- নিশ্চয়! এই দিনে আমাদের প্রথম আমল হলো রামী।

এখানে পূর্ণ দিবসকেই রামীর সাব্যস্ত করা হইয়াছে। আর দিবস শেষ হয় সূর্যাস্তের মাধ্যমে।

ইমাম আবূ ইউসুফ(রঃআঃ) হতে বর্ণীত আছে যে, যাওয়ালের সময় পর্যন্ত তা প্রলম্বিত হবে। আমাদের বর্ণীত হাদীসটি হলো তার বিপক্ষে প্রমাণ।

যদি রাত্র পর্যন্ত বিলম্ব করে তবে রাত্রেই রামী করবে। এজন্য তার উপর কোন দম নেই।

প্রমাণ হলো (ইতোপূর্বে বর্ণীত) রাখালদের অনুমতি সংক্রান্ত হাদীস।

যদি আগামী দিন পর্যন্ত বিলম্ব করে তাহলে আগামী দিনেই রামী করবে। কেননা তা মৌলিকভাবে রামীর সময় ।

তবে তার উপর দম ওয়াজিব হবে। ইমাম আবূ হানীফা(রঃআঃ) এর মতে রামীকে তার নির্ধারিত সময় থেকে বিলম্বিত করার কারণে। আর এ-ই হলো তার মাযহাব।

ইমাম কুদূরী(রঃআঃ) বলেন, যদি সওয়ার অবস্থায় রামী করে, তাহলে যথেষ্ট হবে। কেননা, কংকর নিক্ষেপের আমল তো হাছিল হইয়াছে।

আর যে রামীর পর আরেকটি রামী রহিয়াছে, সেক্ষেত্রে উত্তম হলো পায়ে হেটে রামী করা। আর যে রামীর পরে রামী নেই, সেক্ষেত্রে সওয়ার অবস্থায় রামী করিতে পারে। কেননা, প্রথমোক্ত ক্ষেত্রে রামীর পরে অবস্থান ও দুআ রহিয়াছে, যেমন আমরা পূর্বে উল্লেখ করে এসেছি। সুতরাং পায়ে হেটে রামী করবে, যাতে তা বিনয় প্রকাশের অধিকতর নিকটবর্তী হয়।

উত্তমতার বিষয়টি ইমাম আবূ ইউসুফ(রঃআঃ) হতে বর্ণীত হইয়াছে। কংকর নিক্ষেপের রাত্রগুলো মিনায় অবস্থান না করা মাকরূহ। কেননা, নাবী(সাঃআঃ) মিনাতেই রাত্রি যাপন করেছেন। আর উমর (রাঃআঃ) মিনাতে না থাকার কারণে শাস্তি দিতেন।

যদি স্বেচ্ছায় (বিনা ওযররে) অন্যত্র রাত্রি যাপন করে, তাহলে আমাদের মতে তার উপর কোন দন্ড আসবে না।

ইমাম শাফিঈ(রঃআঃ) ভিন্নমত পোষণ করেন।

আমাদের যুক্তি এই যে, কেননা রাত্রগুলো মিনায় অবস্থান সাব্যস্ত হইয়াছে, যাতে দিনগুলোতে রামী করা সহজ হয়। সুতরাং এই অবস্থান হজ্জের অন্তর্ভূক্ত আমল নয়। সুতরাং তা তরক ক্ষতিপূরণ ওয়াজিব করবে না।

আর এটা মাকরূহ যে, কেউ তার সামা-পাত্র আগেভাগে মক্কায় পাঠিয়ে দেয় এবং মীনায় অবস্থান করে রামী করা পর্যন্ত। কেননা বর্ণীত আছে যে, উমর (রাঃআঃ) এরূপ করিতে নিষেধ করিতেন এবং এজন্য শাস্তি দিতেন।

আর এ জন্য যে, তার মন  সে দিকে আকৃষ্ট হয়ে থাকবে। যখন মক্কার দিকে যাত্রা করবে, তখন মুহাছ্‌ছাব অর্থাত্ আবতাহ নামক স্থানে অবতরণ করবে। ( ইহরামের স্থান ও মাসআলা মাসায়েল )

এটা একটা জায়গার নাম, যেখানে রসূলুল্লাহ্‌ (সাঃআঃ)অবতরণ করেছিলেন। আর তার অবতরণ ছিলো ইচ্ছাকৃত। এ-ই বিশুদ্ধ মত। তাই এখানে অবস্থান করা সুন্নাত হবে। যেমন বর্ণীত আছে যে, নাবী করীম(সাঃআঃ) সাহাবায়ে কিরামকে বলেছিলেন, আগামীকাল আমরা খায়ফে বনী কানানা-তে অবতরণ করবো, যেখানে মুশরিকরা তাদের শিরকের উপর থাকার পরস্পর শপথ নিয়েছিল।

তিনি একথা বলে বনূ হাশিমকে বর্জনের ব্যাপারে তাদের চরম তত্পরতার প্রতি ইংগিত করেছিলেন। সুতরাং আমরা জানলাম যে, তিনি তার প্রতি আল্লাহ্‌র বিশেষ অনুগ্রহ মুশরিকদের দেখানোর ইচ্ছা করেছিলেন। সুতরাং তাওয়াফের রামালের ন্যায় এটিও সুন্নাত হবে।

ইমাম কুদূরী(রঃআঃ) বলেন, অতঃপর মক্কায় প্রবেশ করবে এবং বায়তুল্লাহ্‌ সাত চক্কর তাওয়াফ করবে, তাতে রামাল করবে না।

এটা হলো  প্রত্যাবর্তনের তাওয়াফ এটাকে বিদায়ী তাওয়াফও বলা হয়। এবং বায়তুল্লাহ্‌র সংগে শেষ সাক্ষাতের তাওয়াফও বলা হয়। কেননা এই তাওয়াফের মাধ্যমে সে বায়তুল্লাকে বিদায় জানাচ্ছে এবং বায়তুল্লাহ্ থেকে প্রত্যাবর্তন করছে। তাওয়াফের মাধ্যমে সে বায়তুল্লাহ্‌কে বিদায় জানাচ্ছে এবং বায়ুতুল্লাহ্‌ থেকে প্রত্যাবর্তন করছে।

আমাদের মতে এটি ওয়াজিব।

ইমাম শাফিঈ(রঃআঃ) ভিন্নমত পোষণ করেন।

আমাদের দলিল হল, রসূলুল্লাহ(সাঃআঃ) এ বাণী- যে ব্যক্তি বায়তুল্লাহ্‌র হজ্জ করবে, বায়তুল্লাহ্‌র সংগে তার শেষ সাক্ষাত্ যেন হয় তাওয়াফের মাধ্যমে। ঋতুগ্রস্ত নারীদের তিনি (এই তাওয়াফ না করার) রখসত দিয়েছেন।

তবে মক্কাবাসীদের উপর এ তাওয়াফ ওয়াজিব নয়। কেননা, তারা তো প্রত্যাবর্তন করছেন না এবং বিদায়ও জানাচ্ছেন না।

এই তাওয়াফে রামাল নেই। কেননা আমরা বর্ণনা করে এসেছি যে, রামাল শুধু একবারই অনুমোদিত হইয়াছে।

এরপর অবশ্য তাওয়াফের দুই রাকাআত নামাজ আদায় করবে। এর কারণ পূর্বে আমরা বর্ণনা করেছি।

অতঃপর যমযমের নিকট এসে যমযমের পানি পান করবে। কেননা বর্ণীত আছে যে, নাবী করীম(সাঃআঃ) নিজ হাতে বালতি করে পানি তুলেছেন এবং পান করেছেন। অতঃপর বালতির অবশিষ্ট পানি কুয়ায় ফেলে দিয়েছেন।

আর মুস্তাহাব হলো বায়তুল্লাহর দরজায় আসবে এবং চৌকাঠে চুম্বন করবে। এরপরে আসবে মুলতাযামে আার তাহলো দরজা। আসওয়াদের মধ্যবর্তী স্থান সে স্থানে বুক ও চেহারা লাগাবে এবং কিছু সময় বায়তুল্লাহর গিলাফ জড়িয়ে ধরবে। অতঃপর তার বাড়ির দিকে ফিরবে।

এভাবেই বর্ণীত হইয়াছে, নাবী করীম(সাঃআঃ) মুলতাযিমের সংগে এরূপ করেছেন।

আমাদের মাশায়েখগণ বলেছেন, এ-ও উচিত যে, বায়তুল্লাহ্‌র দিকে মুখ করে পিছনের দিকে হেটে ফিরবে। বায়তুল্লাহর বিচ্ছেদে ক্রন্দনরত শোকাভিভূত অবস্থায়। এভাবে বায়তুল্লাহ্‌ শরীফ থেকে বের হয়ে আসবে। এই হলো হজ্জের পূর্ণ বিবরণ। ( ইহরামের স্থান ও মাসআলা মাসায়েল )


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply