গবাদি পশুর যাকাতের মাসআলা সমুহের বিবরন
গবাদি পশুর যাকাতের মাসআলা সমুহের বিবরন >> আল হিদায়া ফিকহ এর মুল সুচিপত্র দেখুন
কিতাবঃ আল হিদায়া, প্রথম অনুচ্ছেদ – হেদায়া কিতাব বাংলা – গবাদি পশুর জাকাত
- পরিচ্ছেদ উটের জাকাত
- পরিচ্ছেদ গরুর জাকাত
- পরিচ্ছেদ বকরীর জাকাত
- পরিচ্ছেদ ঘোড়ার জাকাত
- পরিচ্ছেদঃ যে সব পশুর ক্ষেত্রে জাকাত নেই।
পরিচ্ছেদ উটের জাকাত { গবাদি পশুর যাকাতের মাসআলা}ঃ
ইমাম কুদূরী (রঃআঃ) বলেন, পাচটি উটের কমে জাকাত ওয়াজিব নয়। যখন মুক্ত মাঠে বিচরণকারী উটের সংখ্যা পাচটি হয়, এবং তার উপর এক বছর অতিক্রান্ত হয় তখন পর্যন্ত উটের ক্ষেত্রে একটি বকরি ওয়াজিব হবে। যখন উটের সংখ্যা দশ হবে তখন চৌ্দ্দ পর্যন্ত তাতে দুটি বকরী ওয়াজিব হবে। যখন উটের সংখ্যা বিশটি হবে তখন উনিশ পর্যন্ত তাতে তিনটি বকরী ওয়াজিব হবে। যখন উটের সংখ্যা বিশটি হবে তখন চব্বিশটি পর্যন্ত তাতে চারটি বকরী ওয়াজিব হবে। যখন উটের সংখ্যা পচিশে উপনীত হবে তখন পয়ত্রিশ পর্যন্ত তাতে একটি ‘বিনতে মাখায অর্থাত্ দ্বিতীয় বর্ষে পদার্পনকারী উটনী ওয়াজিব হবে। যখন উটের সংখ্যা ছয়ত্রিশ হবে তখন পয়তাল্লিশ পর্যন্ত তাতে একটি ‘বিনতে লাবূন অর্থাত্ তৃতীয় বর্ষে পদার্পণকারী উটনী ওয়াজিব হবে। যখন উটের সংখ্যা ছয়চল্লিশ হবে তখন ষাট পর্যন্ত তাতে একটি হিক্কা অর্থাত্ চতুর্থ বর্ষে পদার্পণকারী উটনী ওয়াজিব হবে। যখন উটের সংখ্যা একষট্টিতে উপনীত হবে তখন পচাত্তর পর্যন্ত তাতে একটি জাযাআ অর্থাত্ পঞ্চম বর্ষে পদার্পণকারী উটনী ওয়াজিব হবে। যখন উটের সংখ্যা ছিয়াত্তরটি হবে তখন নব্বই পর্যন্ত তাতে দুটি ‘বিনতে লাবূন ওয়াজিব হবে। যখন উটের সংখ্যা একানব্বইয়ে উপনীত হবে তখন একশ বিশ পর্যন্ত তাতে দুটি ‘হিক্কা ওয়াজিব হবে। রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) থেকে জাকাত সংক্রান্ত ফরমানসমূহ এভাবেই খ্যাতি লাভ করেছে।
অতঃপর যখন উটের সংখ্যা একশ বিশের অধিক হবে তখন (নিসাবের) ‘বিধান নতুন করে শুরু হবে। অর্থাত পাচটি উটে দুই হিক্কা সহ একটি বকরী ওয়াজিব হবে। এবং দশটিতে দুটি বকরী এবং পনেরটিতে তিনটি বকরী এবং বিশটিতে চারটি বকরী ওয়াজিব হবে। এবং পচিশ থেকে একশ পঞ্চাশ পর্যন্ত একটি ‘বিনতে মাখায ওয়াজিব হবে। একশ পঞ্চাশে গিয়ে তিনটি হিক্কা ওয়াজিব হবে। অতঃপর নিসাবের বিধানের পুনরাবৃত্তি হবে। অর্থাত্ পাচটিতে একটি বকরী এবং দশটিতে দুইটি বকরী এবং পনেরটিতে তিনটি বকরী এবং বিশটিতে চারটি বকরী আর পাচটিতে একটি বিনতে মাখায এবং ছত্রিশটিতে একটি ‘বিনতে লাবূন এবং যখন উট একশ ছিয়ানব্বইটিতে উপনীত হবে তখন দুশ পর্যন্ত চারটি হিক্কা ওয়াজিব হবে। অতঃপর একশ পঞ্চাশের পরবর্তী যেভাবে পুনরাবৃত্তি হয়েছে, অনুরূপ বিধানের পুনরাবৃত্তি হবে।
এ হল আমাদের মাযহাব। আর ইমাম শাফিঈ (রঃআঃ) বলেন, একশ বিশের উপর যখন একটি অতিরিক্ত হবে তখন তাতে তিনটি বিনতে লাবূন ওয়াজিব হবে। যখন উট একশ ত্রিশটি হবে তখন তাতে একটি হিক্কা ও দুইটি বিনতে লাবূন ওয়াজিব হবে। অতঃপর চল্লিশ ও পঞ্চাশের মাঝে হিসাব আবর্তিত হতে থাকবে। অর্থাত্ চল্লিশে একটি বিনতে লাবূন এবং প্রতি পঞ্চাশে একটি হিক্কা ওয়াজিব হতে থাকবে।
কেননা বর্ণীত আছে যে, নাবী (সাঃআঃ) এ মর্মে ফরমান জারি করেছিলেন যে, উটের সংখ্যা যখন একশ বিশেষ অধিক হবে তখন প্রতি পঞ্চাশে একটি হিক্কা এবং প্রতি চল্লিশে একটি বিনতে লাবূন ওয়াজিব হবে।
উক্ত ফরমানে বিনতে লাবূনের নিম্নবর্তী বিধান পুনঃআরোপ করার শর্ত উল্লেখ করা হয়নি।
আমাদের দলিল এই যে, আমর ইব্ন হাযমের পত্রে রাসূলূল্লাহ্ (সাঃআঃ) উপরোক্ত বক্তব্যের শেষে কথাও লিখেছেন- এর চেয়ে কম যা হবে, তাতে প্রতি পাচটিতে একটি বকরী ওয়াজিব হবে। সুতরাং এই অতিরিক্ত অংশ টুকুর উপরও আমল করিতে হবে।
(যাকাতের ক্ষেত্রে) অনারব ও আরব উট একই রকম। কেননা সাধারণ শব্দে উভয় প্রকারই অন্তর্ভূক্ত। বিশুদ্ধ বিষয় আল্লাহ্ই অধিক জ্ঞাত।
পরিচ্ছেদ গরুর জাকাত { গবাদি পশুর যাকাতের মাসআলা}ঃ
গরুর ক্ষেত্রে ত্রিশের নীচে কোন জাকাত নেই। সুতরাং গরুর সংখ্যা যখন মুক্ত মাঠে বিচরণকারী গরু ত্রিশ হবে এবং সেগুলোর উপর এক বছর অতিক্রান্ত হবে, তখন তাতে একটি তাবী বা তাবীআ অর্থাত্ দ্বিতীয় বছরে পদার্পনকারী নর বা মাদী বাছুর ওয়াজিব হবে। এবং চল্লিশটিতে একটি ‘মুসিন বা ‘মুসিন্না অর্থাত্ তৃতীয় বছরে পদার্পনকারী নয় নর বা মাদী বাছুর ওয়াজিব হবে। রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) মুআয (রাঃআঃ) কে এরূপই আদেশ করেছিলেন।
যখন গরুর সংখ্যা চল্লিশের অধিক হবে তখন ষাট পর্যন্ত অতিরিক্ত সংখ্যাগুলোতে সেই পরিমাণ ওয়াজিব হবে।
এটি আবূ হানীফা (রাঃআঃ) এর মত। সুতরাং অতিরিক্ত একটিতে একটি মুসিন্না এর চল্লিশ ভাগের একভাগ এবং দুটিতে চল্লিশ ভাগের দুইভাগ এবং তিনটিতে একটি মুসিন্না এর চল্লিশ ভাগের তিন ভাগ ওয়াজিব হবে। এটা হল (মবসূতের কিতাবের) বর্ণনা।
কেননা (মধ্যবর্তী সংখ্যার ক্ষেত্রে) জাকাত মাফ হওয়া কিয়াসের বিপরীতে নাস (শরীআতের বাণী) দ্বারা সাব্যস্ত হয়েছে। আর এক্ষেত্রে কোন ‘নাস নেই। আর হাসান ইব্ন যিয়াদ (রঃআঃ) ইমাম আবূ হানীফা (রঃআঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, পঞ্চাশে পৌছা পর্যন্ত অতিরিক্ত সংখ্যায় কিছুই ওয়াজিব হবে না। অতঃপর তাতে একটি ‘মুসিন্না এবং এক মুসিন্না এর চতুর্থাংশ কিংবা এক ‘তাবী এর তৃতীয়াংশ ওয়াজিব হবে।
কেননা এই (গরুর যাকাতের) নিসাবের ভিত্তি হল এই যে, প্রতি দুটি দশকের মাঝে ‘ছাড় রহিয়াছে। এবং প্রতিটি দশকে ওয়াজিব আরোপিত। ইমাম আবূ ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মাদ (রঃআঃ) এর মতে ষাট উপনীত হওয়া পর্যন্ত অতিরিক্ত সংখ্যায় কোন কিছু ওয়াজিব নেই। এটাও ইমাম আবূ হানীফা (রঃআঃ) হতে বর্ণীত একটি রিওয়ায়াত।
কেননা রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) মুআয (রাঃআঃ) কে বলেছেন- গরুর ‘মধ্যবর্তী সংখ্যাগুলো থেকে কিছু গ্রহণ করো না। আলিমগণ ‘মধ্যবর্তী সংখ্যার ব্যাখ্যা করেছেন চল্লিশ ও ষাটের মধ্যবর্তী দ্বারা।
আমাদের বক্তব্য এই যে, এমনও বলা হয়েছে যে, অতিরিক্ত সংখ্যা দ্বারা উদ্দেশ্য হলো গরুর বাছুর সমূহ।
অতঃপর ষাটটি গরুর ক্ষেত্রে দুইটি তাবী কিংবা তাবীআ এবং সত্তরের ক্ষেত্রে একপি মুসিন্না ও একটি তাবী, এবং আশিটির ক্ষেত্রে দুটি মুসিন্না এবং নব্বইটির ক্ষেত্রে তিনটি তাবী এবং একশটির ক্ষেত্রে দুটি তাবী ও একটি মুসিন্না ওয়াজিব হবে।
অনুরূপভাবে প্রতি দশে বিধান তাবী থেকে মুসিন্না তে এবং মুসিন্না থেকে তাবী এ রূপান্তরিত হবে। কেননা রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেন- প্রতি ত্রিশটি গরুতে একটি তাবী কিংবা তাবীআ এবং প্রতি চল্লিশটি গরুতে একটি মুসিন কিংবা ওয়াজিব হবে।
মহিষ ও গরু (যাকাতের হুকুমের ক্ষেত্রে) সমান। কেননা শব্দটি উভয়কে অন্তর্ভূক্ত করে। কারণ তা এরই শ্রেণী বিশেষ। তবে আমাদের দেশে সংখ্যাল্পতার কারণে মানুষের চিন্তা শব্দ দ্বারা সেদিকে ধাবিত হয় না। এ কারণেই কেউ যদি কসম করে যে, গরুর গোশত খাবে না তবে মহিষের গোশত খেলে কসম ভংগ হবে না। আল্লাহ্ই অধিক জ্ঞাত।
পরিচ্ছেদ বকরীর জাকাত { গবাদি পশুর যাকাতের মাসআলা }
মুক্ত মাঠে খাদ্য সংগ্রহকারী বকরী চল্লিশের নীচে হলে তার জাকাত নেই। যখন মাঠে বিচরণকারী সংখ্যা চল্লিশ হয় এবং সেগুলোর উপর এক বছর অতিক্রান্ত হয়, তখন তাতে একশ বিশ পর্যন্ত একটি বকরী ওয়াজিব। যখন সংখ্যা একটি বাড়বে তখন দুশ পর্যন্ত দুটি বকরী ওয়াজিব। অতঃপর যখন সংখ্যা একটি বাড়বে তখন তিনশ পর্যন্ত তাতে তিনটি বকরী ওয়াজিব। যখন সংখ্যা চারশ হবে তখন তাতে চারটি বকরী ওয়াজিব। অতঃপর প্রতি একশতে একটি বকরী ওয়াজিব।
রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) এর ফরমানে অতঃপর আবূ বকর (রাঃআঃ) এর ফরমানে এরূপ বিবরণই এসেছে। আর এর উপর উম্মাতের ইজমা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ভেড়া ও ছাগল (নিসাবের ক্ষেত্রে) সমান। কেননা, শব্দটি সবগুলোকে অন্তর্ভূক্ত করে। আর ‘নাস বা শরীআতের বাণীতে শব্দটি এসেছে।
বকরীর যাকাতে ‘ছানী (পূর্ণ এক বছরের) গ্রহণ করা হবে। ভেড়ার ক্ষেত্রে ‘জাযা গ্রহণ করা হবে না। তবে ইমাম আবূ হানীফা (রঃআঃ) হতে হাসান ইব্ন যিয়াদ বর্ণীত রিওয়ায়াত মতে গ্রহণ করা হবে। বকীর মধ্যে ‘ছানী বলা হয়, যার এক বছর পূর্ণ হয়ে গেছে। আর ‘জাযা বলা হয় যার বয়স ছমাসের উপরে হয়েছে।
ইমাম আবূ হানীফা (রঃআঃ) হতে বর্ণীত আছে এবং সাহেবাইনেরও এ মত যে, ‘জাযা গ্রহণ করা হবে। কেননা রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেন- আমাদের হক হল ‘জাযা ও ছানী । তাহা ছাড়া জাযার দ্বারা কুরবানী আদায় হয়ে যায়। সুতরাং জাকাতও আদায় হবে।
জাহেরী বর্ণনার প্রমাণ হল আলী (রাঃআঃ) থেকে মাওকুফ ও মারফূ রূপে বর্ণীত নিম্নোক্ত হাদিস- যাকাতের ক্ষেত্রে এক বছরের এবং তদুর্ধেরই শুধু গ্রহণ করা হবে।
তাছাড়া যাকাতের ক্ষেত্রে ওয়াজিব হল মাঝারি, ‘জাযা তো ছোটর মধ্যেই গণ্য। এ কারণেই তো ‘জাযা ছাগলের মধ্য থেকে জাইয হয় না। তবে ‘জাযা দ্বারা কুরবানী জাইয হওয়ার বিষয়টি ‘নাস দ্বারা জানা গেছে।
আর উপরে বর্ণীত হাদিসে এর যে কথা বলা হয়েছে, সেটা দ্বারা কুরবানী জাইয হওয়ার বিষয়টি ‘নাস দ্বারা জানা গেছে।
আর উপরে বর্ণীত হাদিসে এর যে কথা বলা হয়েছে, সেটা দ্বারা উদ্দেশ্য হল উটের ‘জাযা।
বকরীর যাকাতের ক্ষেত্রে নর ও মাদী উভয় প্রকারই গ্রহণ করা হবে। কেননা শব্দটি উভয়কে অন্তর্ভূক্ত করে। আর রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেন- চল্লিশটি ছাগলে একটি ছাগল। আল্লাহ্ই অধিক জানেন।
পরিচ্ছেদ ঘোড়ার জাকাত { গবাদি পশুর যাকাতের মাসআলা }
ঘোড়া যদি মুক্ত মাঠে বিচরণকারী হয় এবং নর ও মাদী উভয় প্রকার মিশ্রিত থাকে তবে ঘোড়ার মালিকের ইখতিয়ার। তিনি ইচ্ছা করিলে ঘোড়া প্রতি এক দীনার প্রদান করবেন কিংবা ঘোড়াগুলোর মূল্য নির্ধারণ করে প্রতি দুশ দিরহাম থেকে পাচ দিরহাম প্রদান করবেন।
ইহা ইমাম আবূ হানীফা (রঃআঃ) এর মত। যুফার (রঃআঃ) ও এ মত পোষণ করেন।
সাহেবাইন বলেন, ঘোড়ার কোন জাকাত নেই। কেননা রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেন- নিজ গোলামের ক্ষেত্রে এবং নিজ অশ্বের ক্ষেত্রে মুসলমানদের উপর কোন জাকাত নেই।
ইমাম আবূ হানীফা (রঃআঃ) এর দলিল হল রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) এর বাণী- মুক্তভাবে বিচরণকারী প্রতিটি ঘোড়ায় এক দীনার কিংবা দশ দিরহাম ওয়াজিব হবে।
সাহেবাইন যে হাদিস বর্ণনা করেছেন,তার উদ্দেশ্য হল মুজাহিদের ব্যবহৃত ঘোড়া।
যায়দ ইব্ন সাবিত(রাঃআঃ) থেকে এ ব্যাখ্যা বর্ণীত হয়েছে। এক দীনার প্রদান কিংবা মূল্য নির্ধারণ করার মাঝে ইচ্ছা প্রদানের বিষয়টি উমর(রাঃআঃ) হতে বর্ণীত।
আলাদা পুরুষ অশ্বের ক্ষেত্রে জাকাত নেই। কেননা তার বংশ বৃদ্ধি হয় না।
(সেরূপ আলাদা স্ত্রী অশ্বের ক্ষেত্রেও জাকাত নেই) এটা এক বর্ণনা মুতাবিক। ইমাম দ্বারা তার বংশবৃদ্ধিতে হতে পারে। কিন্তু পুরুষ অশ্বের বিষয়টি এর বিপরীত।
ইমাম আবূ হানীফা (রঃআঃ) থেকে অন্য বর্ণনা অনুযায়ী আলাদা পুরুষ অশ্বের ক্ষেত্রেও জাকাত ওয়াজিব।
খচ্চর ও গর্দভের ক্ষেত্রে কোন জাকাত নেই। কেননা রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেন- এ দুটি সম্পর্কে আমার উপর কোন বিধান নাযিল হয়নি।
আর যাকাতের ‘পরিমাণসমূহ সাব্যস্ত হয়। (শারেআ) এর নিকট থেকে) শ্রবণের মাধ্যমে। তবে যদি সেগুলো ব্যবসার জন্য হয় (তখন জাকাত ওয়াজিব হবে)। কেননা, তখন জাকাত সম্পর্কিত হবে মূল্যের দিক থেকে, যেমন অন্যান্য ব্যবসায়ী সম্পদের ক্ষেত্রে।
পরিচ্ছেদঃ যে সব পশুর ক্ষেত্রে জাকাত নেই। { গবাদি পশুর যাকাতের মাসআলা }
উট-শাবক, গো-শাবক ও মেষ-শাবকের ক্ষেত্রে যাকাতে নেই।
ইমাম আবূ হানীফা (রঃআঃ) এর মতে। তবে যদি সেগুলোর সংগে বয়স্কও থাকে (তখন সেগুলো অনুবর্তী হিসাবে শাবকগুলোর উপরও জাকাত ওয়াজিব হবে।) এ ইমাম আবূ হানীফা (রঃআঃ) এর সর্বশেষ মত। এবং এ-ই ইমাম মুহাম্মাদ (রঃআঃ) এর মত।
প্রথমে তিনি বলতেন যে, বয়স্কদের উপর যা ওয়াজিব হয়, ছোটগুলোর উপরও তাই ওয়াজিব হবে। এ-ই হলো ইমাম যুফার ও ইমাম মালিকের মাযহাব। এরপর এ মত প্রত্যাহার করে তিনি বলেছেন যে, শাবকগুলোর মধ্য থেকে তাহাদেরই একটি ওয়াজিব হবে। এটা ইমাম আবূ হানীফা (রঃআঃ) এর সর্বশেষ মত।
আর ইমাম আবূ ইউসুফ ও ইমাম শাফিঈ (রঃআঃ) এরও এ মত।
তার প্রথম মতামতের দলিল এই যে, (শরীআতের) নির্দেশ উল্লেখিত নাম ছোট ও বড় উভয়কে অন্তর্ভূক্ত করে।
দ্বিতীয় মতের দলিল হল উভয় পক্ষের প্রতি সুবিবেচনা নিশ্চিত করা। যেমন শুধু শীর্ণ পশুর ক্ষেত্রে তা থেকে একটি ওয়াজিব হয়।
শেষ মতের দলিল এই যে, পরিমাণসমূহ নির্ধারণের ক্ষেত্রে কিয়াস ব্যবহার হতে পারে না। সুতরাং শরীআত প্রবর্তিত পরিমাণ ওয়াজিব করা যখন সম্ভব নয়, তখন সম্পূর্ণ রহিত হয়ে যাবে। কিন্তু ছোটগুলোর সংগে একটিও যদি বয়স্ক থাকে তবে নিসাব পূর্ণ হওয়ার ক্ষেত্রে সবগুলোকে বয়স্কটির অনুবর্তী ধরা হবে। কিন্তু জাকাত আদায়ের ক্ষেত্রে অনুবর্তী ধরা হবে না(বরং বয়স্কই আদায় করিতে হবে।)
আর ইমাম আবূ ইউসুফ (রঃআঃ) এর মতে মেষ-শাবকের ক্ষেত্রে চল্লিশটির নীচে এবং গো-শাবকের ক্ষেত্রে ত্রিশটির নীচে জাকাত ওয়াজিব হবে না। আর উট-শাবকের ক্ষেত্রে পচিশটির জন্য ওয়াজিব হবে। অতঃপর আর কিছু ওয়াজিব হবে না যতক্ষণ না ঐ সংখ্যায় উপনীত হয়, যেখানে বয়স্ক উটের ক্ষেত্রে ওয়াজিব দুইটি হয়। অতঃপর আর কিছু ওয়াজিব হবে না যতক্ষণ না ঐ সংখ্যায় উপনীত হয় যেখানে বয়স্ক উটের ক্ষে্রে ওয়াজিব তিনটি হয়।
এক বর্ণনা মুতাবিক পচিশের নীচে জাকাত ওয়াজিব হবে না। কিন্তু তার পক্ষ থেকে অন্য একটি বর্ণনা মতে পচিশটিতে একটি শাবকের পঞ্চমাংশ এবং দশটিতে দুই-পঞ্চমাংশ এবং পরবর্তী প্রতি পাচে এই হিসাবে ওয়াজিব হবে।
তার পক্ষ থেকে আরেকটি বর্ণনা এই যে, পাচটি শাবকের ক্ষেত্রে এক শাবকের মূল্যের পঞ্চমাংশ এবং একটি মধ্যম বকরীর মূল্য বিচার করা হবে। এবং উভয়ের মধ্যে নিম্নতর মূল্যটি ওয়াজিব হবে। তদ্রুপ দশটির ক্ষেত্রে দুটি বকরীর মূল্য এবং একটি উট শাবকের দুই-পঞ্চমাংশের মূল্য বিচার করা হবে। পরবর্তী ক্ষেত্রে এই হিসাবে চলবে।
ইমাম কুদূরী বলেন- যার উপর বিশেষ বয়সের কোন উট ওয়াজিব হয়েছে, কিন্তু তা পাওয়া গেল না, তখন জাকাত উশুলকারী তা থেকে বেশী বয়সেরটি গ্রহণ করবে এবং অতিরিক্ত মূল্য ফেরত দিবে। কিংবা তার চেয়ে কম বয়সেরটি গ্রহণ করবে এবং অতিরিক্ত মূল্যও উশুল করে নিবে।
এ মাসআ ভিত্তি এই যে, আমাদের নিকট যাকাতের ক্ষেত্রে মূল্য গ্রহণ জাইয রহিয়াছে। বিষয়টি সামনে ইনশাআল্লাহ্ আলোচনা করবো। তবে প্রথম সূরতে জাকাত সংগ্রহকারীর অধিকার রহিয়াছে উচ্চতর পশু গ্রহণ না করে যে পশু ওয়াজিব হয়েছে, হুবহু সেটা কিংবা তার মূল্য দাবী করার। কেননা এটা মূলতঃ ক্রয়।
আর দ্বিতীয় ক্ষেত্রে জাকাত সংগ্রহকারীকে (নিম্নতর পশু গ্রহণে) বাধ্য করা হবে। কেননা,এখানে (ক্রয় ও) বিক্রয় নেই বরং এটা হল মূল্য দ্বারা জাকাত প্রদান।
আমাদের মতে যাকাতের ক্ষেত্রে মূল্য প্রদান করা জাইয। কাফ্ফারাসমূহ এবং সাদকাতুল ফিতর, উশর ও নযরের ক্ষেত্রে একই হুকুম।
ইমাম শাফিঈ (রঃআঃ) বলেন, ‘নাস এর অনুসরণ কল্পে মূল্য প্রদান জাইয নয়। যেমন হজ্জের হাদিস ও কুরবাণীর পশুর ক্ষেত্রে।
আমাদের দলিল এই যে, জাকাত দরিদ্রকে প্রদানের আদেশ দানের উদ্দেশ্য হল তার নিকট প্রতিশ্রুত রিযিক পৌছানো। সুতরাং এ বিষয়টি (নাস-এ বর্ণীত) বকরীর শর্তকে বাতিল করে দেয়। তাই এটা ‘জিযয়া এর মত।
হাদী (ও কুরবানীর ) বিষয়টি এর বিপরীত। কেননা, সেখানে রক্ত প্রবাহিত করাই হল ইবাদত। আর তা যক্তিনির্ভর নয়। (সুতরাং এ ক্ষেত্রে ‘নাস এর গন্ডিতে আবদ্ধ থাকা অপরিহার্য)। পক্ষান্তরে বিরোধপূর্ণ ক্ষেত্রে ইবাদতের দিক হল অভাবগ্রস্ত ব্যক্তির প্রয়োজন মিটানো। আর এটা হল যুক্তিসঙ্গত।
কাজে নিয়োজিত ভারবহনে নিযুক্ত এবং সংগৃহীত খাদ্যে প্রতিপালিত পশুর উপর জাকাত নেই।
(এ বিষয়ে) ইমাম মালিক (রঃআঃ) এর ভিন্ন মত রহিয়াছে। তার দলিল হল প্রকাশ্য ‘নাসসমূহ।
আমাদের দলিল হল রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) এর বাণী- ভার বহনে এবং কাজে নিযুক্ত পশুর ক্ষেত্রে এবং চাষাবাদে নিযুক্ত গরুর ক্ষেত্রে জাকাত নেই।
তাছাড়া জাকাত ওয়াজিব হওয়ার কারণ হল বর্ধনশীল সম্পদ। আর বর্ধনশীলতার প্রমাণ হল মুক্ত মাঠে চরিয়ে পালিত কিংবা ব্যবসায় খাটানো। এখানে এর কোনটিই পাওয়া যায়নি।
তাছাড়া সংগৃহীত খাদ্যে প্রতিপালনের ক্ষেত্রে ব্যয় বর্ধিত হয়। ফলে প্রকৃতপক্ষে সম্পদের ‘বর্ধনশীলতা লোপ পায়। চরণ শীল অর্থ ঐ সকল পশু, যারা বছরের অধিকাংশ সময় মাঠে চরে খায়। সুতরাং যদি মালিক অর্ধেক বছরে কিংবা তার বেশী সময় পশুপালকে সংগৃহীত খাদ্য খাওয়ায় তা হলে সেটা (সংগৃহীত খাদ্যে প্রতিপালিত) বলে গণ্য হবে। কেননা অল্প অধিকের অনুবর্তী বলে গণ্য হয়।
জাকাত সংগ্রহকারী উত্কৃষ্ট সম্পদ গ্রহণ করবে না আর নিকৃষ্ট সম্পদ গ্রহণ করবে না, বরং মধ্যম মানের গ্রহণ করবে। কেননা রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেন- লোকদের উত্কৃষ্ট মাল থেকে গ্রহণ করো না; বরং তাহাদের মধ্যম মাল থেকে গ্রহণ কর। আর এ জন্য যে, তাতে উভয় পক্ষের প্রতি সুবিবেচনা রহিয়াছে।
ইমাম কুদূরী বলেন, যে ব্যক্তি নিসাবের অধিকারী হয় এবং বছরের মাঝে একই জাতীয় মাল লাভ করে, সে উক্ত পূর্ববর্তী নিসাবের সংগে যুক্ত করবে এবং উহার সাথে তারও জাকাত আদায় করবে।
ইমাম শাফিঈ (রঃআঃ) বলেন, যুক্ত করা হবে না। কেননা, মালিকানা স্বত্বের দিক দিক থেকে তা স্বয়ংসম্পূর্ণ। সুতরাং তত্সম্পৃক্ত বিধানের ক্ষেত্রেও তা স্বতন্ত্র হবে। অর্জিত মুনাফা এবং ভূমিষ্ঠ বাচ্চার বিষয়টি এর বিপরীত, কেননা তা মালিকানার ক্ষেত্রে (পুর্ববর্তী সম্পদের) অনুবর্তী। তাই মূল সম্পদের মালিকানায়ই এর মালিকানা সাব্যস্ত হয়।
আমাদের দলিল এই যে, বাচ্চা ও মুনাফা যুক্ত করার কারণ কম সমজাতি হওয়া। কেননা, এ অবস্থায় পৃথকভাবে চিহ্নিত করা কঠিন। সুতরাং প্রতিটি অর্জিত সম্পদের জন্য আলাদা বর্ষ গণনা করা কষ্টকর হবে। অথচ সহজ করার জন্যই বর্ষপূর্তির শর্ত আরোপ করা হয়েছিল।
গ্রন্থকার বলেন , ইমাম আবূ হানীফা ও ইমাম আবূ ইউসুফ (রঃআঃ) এর মতে জাকাত আরোপিত হয় নিসাবের উপর, (স্তরের পর) বাড়তি অংশের উপর নয়।
আর ইমাম মুহাম্মাদ ও ইমাম যুফার (র) বলেন, নিসাব ও বাড়তি উভয় অংশের উপর জাকাত আরোপিত হয়। সুতরাং যদি স্তরের পর বাড়তি অংশ নষ্ট হয়ে যায় আর নিসাব অক্ষত থেকে যায় তবে ইমাম আবূ হানীফা ও ইমাম ইউসুফ (রঃআঃ) এর মতে ওয়াজিব পুরোপুরি থেকে যাবে। আর ইমাম মুহাম্মাদ ও ইমাম যুফার (রঃআঃ) এর মতে যে পরিমাণ মাল হালাক হয়েছে, ওয়াজিবও সেই অনুপাতে রহিত হয়ে যাবে।
ইমাম মুহাম্মাদ ও ইমাম যুফার (রঃআঃ) এর দলিল এই যে, জাকাত ওয়াজিব হয়েছে সম্পদ রূপ নিয়ামতের শোকর হিসাবে। সমগ্র সম্পদই নিয়ামত।
আর শায়খাইন (রঃআঃ) এর দলিল হল, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেন- পাচটি সায়মা উটের ক্ষেত্রে একটি বকরী ওয়াজিব হবে। বাড়তির উপর কিছুই ওয়াজিব নয় সংখ্যা দশে উপনীত হওয়া পর্যন্ত। প্রতিটি নিসাবের ক্ষেত্রেই তিনি অনুরূপ বলেছেন। তিনি বাড়তির উপর ওয়াজিব হবে না বলেছেন।
তাছাড়া বাড়তি অংশটি হল নিসাবের অনুবর্তী। সুতরাং নষ্ট হওয়ার বিষয়টি প্রথমে বাড়তির উপর প্রযোজ্য হবে। যেমন মুযারাবার মালের মুনাফার উপর প্রযোজ্য নয়।
এ কারণেই ইমাম আবূ হানীফা (রঃআঃ) বলেন, সম্পদের বাড়তি অংশের পর হালাক হওয়ার বিষয়টি শেষ নিসাবের দিকে ফেরানো হবে। এরপর তত্সংলগ্ন নিসাবের প্রতি; এভাবে শেষ পর্যন্ত চলবে। কেননা প্রথম নিসাবই হল মূল। তারপরে যা কিছু বাড়বে, তা উক্ত নিসাবের অনুবর্তী হবে।
আর ইমাম আবূ ইউসুফ (রঃআঃ) এর মতে প্রথমে বাড়তি অংশের দিকে ফেরানো হবে। অতঃপর সামগ্রিকভাবে সম্পূর্ণ নিসাবের দিকে ফেরানো হবে।
বিদ্রোহীর যদি খারাজ ও গবাদিপশুর জাকাত উশুল করে নিয়ে থাকে তবে তাহাদের উপর দ্বিতীয়বার জাকাত ধার্য করা হবে না। কেননা শাসক তাহাদের রক্ষা করেননি। আর রাজস্ব উশুলের অধিকার হয় রক্ষা করার বিনিময়ে।
তবে তাহাদের এই ফাতওয়া দেওয়া হবে যেন তাহারা জাকাত নিজেই পুনঃ আদায় করে, খারাজ নয়। { গবাদি পশুর যাকাতের মাসআলা }
তবে এটা শুধু তাহাদের ও আল্লাহ্র মাঝের বিষয়। কেননা, বিদ্রোহীরা যোদ্ধা হিসাবে বিদ্রোহীদের উপর খারাজ ব্যয় হতে পারে। আর জাকাত ব্যয়ের ক্ষেত্র হল দরিদ্ররা। আর বিদ্রোহীগণ দরিদ্রদের মধ্যে জাকাত প্রদান করবে না।
তবে কারো কারো মতে যদি তাহাদের প্রদানের সময় তাহাদের উপরই সাদকা করার নিয়্যত করে নেয় তাহলে তার উপর থেকে জাকাত রহিত হয়ে যাবে। তদ্রুপ যে কোন যালিম হাকিমকে প্রদত্ত মালের একই হুকুম। কেননা তাহাদের উপর (মানুষের যত (আর্থিক) হক ও দায় দায়িত্ব রহিয়াছে, সেগুলোর প্রেক্ষিতে তাহারা প্রকৃতপক্ষে দরিদ্র। তবে প্রথম হুকুম (অর্থাত পুনঃআদায়) অধিক সতর্কতাপূর্ণ।
বনী তাগলিব গোত্রের শিশুদের ‘সায়মার উপর কিছুই ওয়াজিব নয়। তবে তাহাদের স্ত্রীলোকদের উপর পুরুষদের সমপরিমাণ ওয়াজিব হবে। কেননা (তাহাদের ব্যাপারে) এই সমঝোতা হয়েছে যে, মুসলমানদের থেকে যা গ্রহণ করা হয়, তাহাদের নিকট থেকে তার দ্বিগুণ গ্রহণ করা হবে। আর মুসলমানদের স্ত্রীলোকদের থেকে তো জাকাত গ্রহণ করা হয়, কিন্তু তাহাদের শিশুদের থেকে গ্রহণ করা হয় না।
জাকাত ওয়াজিব হওয়ার পর যদি মাল নষ্ট হয়ে যায় তবে জাকাত রহিত হয়ে যাবে।
ইমাম শাফিঈ (র) বলেন, আদায়ের পর যদি হালাক হয়ে যায় তাহলে তার যিম্মায় জাকাত আদায় করা ওয়াজিব হবে। কেননা জাকাত যিম্মার উপর ওয়াজিব। সুতরাং এটা সাদকাতুল ফিতরের মত হল।
তাছাড়া তলব করার পরও সে আদায় করেনি। সুতরাং তা এমন হয়ে গেল, যেন নিজেই মাল ধ্বংস করেছে।
আমাদের দলিল এই যে, ওয়াজিব হল নিসাবের-ই একটি অংশ, সহজসাধ্য হওয়ার প্রতি বিবেচনা করে। সুতরাং ওয়াজিবের ক্ষেত্রে হওয়ার কারণে ওয়াজিবও বিলুপ্ত হয়ে যাবে। যেমন অপরাধকারী গোলাম মারা গেলে অপরাধের কারণে তাকে সমর্পণ করার দায়িত্ব রহিত হয়ে যায়। { গবাদি পশুর যাকাতের মাসআলা }
আর যাকাতের হকদার হল সেই দরিদ্র, যাকে নিসাবের মালিক নিজে নির্বাচন করবে। সুতরাং এখানে তা নির্বাচিত দরিদ্র থেকে তলব পাওয়া যায়নি।
জাকাত উশুলকারীর তলব করার পরে হালাক হলে কোন কোন মতে যিম্মায় ওয়াজিব হবে। আর কোন মতে যিম্মায় ওয়াজিব থাকবে না, কেননা, সে নিজে হালাক করেনি।
আর স্বেচ্ছায় হালাক করার ক্ষেত্রে তার থেকে সীমালংঘন পাওয়া গেছে। (সুতরাং শাস্তি স্বরূপ ওয়াজিবের ক্ষেত্র বিদ্যমান রহিয়াছে বলে গণ্য করা হবে।)
আংশিক মাল হালাক হলে সেই অনুপাতে জাকাত রহিত হবে। আংশিক-কে সময়ের উপর কিয়াস করে।
যদি নিসাবের মালিক হওয়া অবস্থায় বছর পূর্ণ হওয়ার পূর্বে জাকাত আদায় করে তাহলে তা জাইয হবে। কেননা, ওয়াজিব হওয়ার কারণ তথা নিসাব বিদ্যমান হওয়ার পরে সে জাকাত আদায় করেছে। সুতরাং তা জাইয হবে। যেমন; (ভুলবশতঃ) জখম করার পরই কাফ্ফারা দিয়ে দিলে (আদায় হয়ে যায়)।
এ বিষয়ে ইমাম মালিক (রঃআঃ) এর ভিন্ন মত রহিয়াছে।
একাধিক বছরের জাকাত অগ্রিম প্রদান করা জাইয আছে। কেননা (জাকাত ওয়াজিব হওয়ার) কারণ (তথা নিসাব) বিদ্যমান রহিয়াছে।
যদি তার মালিকানায় একটি নিসাব বিদ্যমান থাকে তবে কয়েকটি নিসাবের জাকাতও প্রদান করিতে পারে।
ইমাম যুফার (রঃআঃ) ভিন্ন মত পোষণ করেন। আমাদের দলিল এই যে, সরব বা কারণ হওয়ার ক্ষেত্রে প্রথম নিসাবই হল আসল। এর উপর অতিরিক্ত হল তার অনুবর্তী। আল্লাহ্ই অধিক অবগত। { গবাদি পশুর যাকাতের মাসআলা }
Leave a Reply