মহামারী শহরে প্রবেশ ও সেখান থেকে অন্যত্র পলায়ন নিষেধ
মহামারী শহরে প্রবেশ ও সেখান থেকে অন্যত্র পলায়ন নিষেধ >> রিয়াদুস সালেহীন হাদিস শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন >> নিম্নে রিয়াদুস সালেহীন হাদিস শরীফ এর একটি পরিচ্ছেদের হাদিস পড়ুন
পরিচ্ছেদ – ৩৬১ : মহামারী পীড়িত গ্রাম-শহরে প্রবেশ ও সেখান থেকে অন্যত্র পলায়ন করা নিষেধ
মহান আল্লাহ বলেছেন,
﴿ أَيۡنَمَا تَكُونُواْ يُدۡرِككُّمُ ٱلۡمَوۡتُ وَلَوۡ كُنتُمۡ فِي بُرُوجٖ مُّشَيَّدَةٖۗ ٧٨ ﴾ [النساء : ٧٨]
অর্থাৎ তোমরা যেখানেই থাক না কেন, মৃত্যু তোমাদের নাগাল পাবেই; যদিও তোমরা সুউচ্চ সুদৃঢ় দুর্গে অবস্থান কর। [সূরা নিসা ৭৮ আয়াত]
তিনি অন্যত্র বলেছেন, ﴿ وَلَا تُلۡقُواْ بِأَيۡدِيكُمۡ إِلَى ٱلتَّهۡلُكَةِ ١٩٥ ﴾ [البقرة: ١٩٥]
অর্থাৎ তোমরা নিজেদেরকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়ো না। [সূরা বাকারাহ ১৯৫ আয়াত]
1/1800 وَعَنِ ابنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا : أَنَّ عُمَرَ بنَ الخَطَّابِ رضي الله عنه خَرَجَ إلَى الشَّامِ حَتَّى إِذَا كَانَ بِسَرْغَ لَقِيَهُ أُمَرَاءُ الأَجْنَادِ ـ أَبُو عُبَيْدَةَ بنُ الجَرَّاحِ وَأَصْحَابُهُ ـ فَأَخْبَرُوهُ أَنَّ الوَبَاءَ قَدْ وَقَعَ بِالشَّامِ . قَالَ ابنُ عَبَّاسٍ : فَقَالَ لِي عُمَرُ : ادْعُ لِي المُهَاجِرِينَ الأَوَّلِينَ، فَدَعَوْتُهُمْ فَاسْتَشَارَهُمْ وَأَخْبَرَهُمْ أَنَّ الوَبَاءَ قَدْ وَقَعَ بِالشَّامِ، فَاخْتَلَفُوا، فَقَالَ بَعْضُهُمْ : خَرَجْتَ لأَمْرٍ، وَلاَ نَرَى أَنْ تَرْجِعَ عَنْهُ . وَقَالَ بَعضُهُم : مَعَكَ بَقِيَّةُ النَّاسِ وَأَصْحَابُ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم، وَلاَ نَرَى أَنْ تُقْدِمَهُمْ عَلَى هَذَا الوَبَاءِ . فَقَالَ: ارْتَفِعُوا عَنِّي . ثُمَّ قَالَ: ادْعُ لِي الأَنْصَارَ، فَدَعَوْتُهُمْ، فَاسْتَشَارَهُمْ، فَسَلَكُوا سَبيلَ المُهَاجِرينَ، وَاخْتَلَفُوا كَاخْتِلاَفِهِمْ، فَقَالَ: ارْتَفِعُوا عَنِّي . ثُمَّ قَالَ: ادْعُ لِي مَنْ كَانَ هَاهُنَا مِنْ مَشْيَخَةِ قُريشٍ مِنْ مُهَاجِرَةِ الفَتْحِ، فَدَعَوْتُهُمْ، فَلَمْ يَخْتَلِفْ عَلَيْهِ مِنْهُمْ رَجُلاَنِ، فَقَالُوا : نَرَى أَنْ تَرْجِعَ بِالنَّاسِ، وَلاَ تُقْدِمَهُمْ عَلَى هَذَا الوَبَاءِ، فَنَادَى عُمَرُ رضي الله عنه فِي النَّاسِ : إِنِّي مُصْبِحٌ عَلَى ظَهْرٍ، فَأَصْبِحُوا عَليْهِ، فَقَالَ أَبُو عُبَيدَةَ بنِ الجَرَّاحِ رضي الله عنه : أَفِرَاراً مِنْ قَدَرِ اللهِ ؟ فَقَالَ عُمَرُ رضي الله عنه : لَوْ غَيْرُكَ قَالَهَا يَا أَبَا عُبَيدَةَ ! – وَكَانَ عُمَرُ يَكْرَهُ خِلاَفَهُ – نَعَمْ، نَفِرُّ مِنْ قَدَرِ اللهِ إِلَى قَدَرِ اللهِ، أَرَأيْتَ لَو كَانَ لَكَ إِبِلٌ، فَهَبَطَتْ وَادِياً لَهُ عُدْوَتَانِ، إِحْدَاهُمَا خَصْبَةٌ، وَالأُخْرَى جَدْبَةٌ، أَلَيسَ إِنْ رَعَيْتَ الخَصْبَةَ رَعَيْتَهَا بِقَدَرِ اللهِ، وَإِنْ رَعَيْتَ الجَدْبَةَ رَعَيْتَهَا بِقَدَرِ اللهِ ؟ قَالَ: فَجَاءَ عَبدُ الرَّحمانِ بنُ عَوفٍ رضي الله عنه وَكَانَ مُتَغَيِّباً فِي بَعْضِ حَاجَتِهِ، فَقَالَ: إِنَّ عِنْدِي مِنْ هَذَا عِلْماً، سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقُوْلُ : «إِذَا سَمِعْتُمْ بِهِ بِأَرْضٍ فَلاَ تَقْدِمُوا عَلَيْهِ، وَإِذَا وَقَعَ بِأَرْضٍ وَأَنْتُمْ بِهَا فَلاَ تَخْرُجُوا فِرَاراً مِنْهُ» فَحَمِدَ اللهَ تَعَالَى عُمَرُ رضي الله عنه وَانصَرَفَ . متفق عَلَيْهِ
১/১৮০০। ইবনি আব্বাস রাঃআঃ কর্তৃক বর্ণিত, একদা উমার ইবনুল খাত্তাব রাঃআঃ সিরিয়ার দিকে যাত্রা করিলেন। অতঃপর যখন তিনি ‘সার্গ্’ [সউদিয়া ও সিরিয়ার সীমান্ত] এলাকায় গেলেন, তখন তাহাঁর সাথে সৈন্যবাহিনীর প্রধানগণ – আবূ উবাইদাহ ইবনুল জার্রাহ ও তাহাঁর সাথীগণ – সাক্ষাৎ করেন। তাঁরা তাঁকে জানান যে, সিরিয়া এলাকায় [প্লেগ] মহামারীর প্রাদুর্ভাব ঘটেছে। ইবনি আব্বাস রাঃআঃ বলেন, তখন উমার আমাকে বলিলেন, ‘আমার কাছে প্রাথমিক পর্যায়ে যারা হিজরত করেছিলেন সেই মুহাজিরদেরকে ডেকে আনো।’ আমি তাঁদেরকে ডেকে আনলাম। উমার রাঃআঃ তাঁদেরকে শাম দেশে প্রাদুর্ভূত মহামারীর কথা জানিয়ে তাঁদের কাছে সুপরামর্শ চাইলেন। তখন তাঁদের মধ্যে মতভেদ সৃষ্টি হল। কেউ বলিলেন, ‘আপনি একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারে বের হয়েছেন। তাই তা থেকে ফিরে যাওয়াকে আমরা পছন্দ করি না।’ আবার কেউ কেউ বলিলেন, ‘আপনার সাথে রয়েছেন অবশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও নবী সাঃআঃ-এর সাহাবীগণ। কাজেই আমাদের কাছে ভাল মনে হয় না যে, আপনি তাঁদেরকে এই মহামারীর মধ্যে ঠেলে দেবেন।’ উমার রাঃআঃ বলিলেন, ‘তোমরা আমার নিকট থেকে উঠে যাও।’ তারপর তিনি বলিলেন, ‘আমার নিকট আনসারদেরকে ডেকে আনো।’ সুতরাং আমি তাঁদেরকে ডেকে আনলাম এবং তিনি তাঁদের কাছে পরামর্শ চাইলেন। কিন্তু তাঁরাও মুহাজিরদের পথ অবলম্বন করিলেন এবং তাঁদের মতই তাঁরাও মতভেদ করিলেন। সুতরাং উমার রাঃআঃ বলিলেন, ‘তোমরা আমার নিকট থেকে উঠে যাও।’ তারপর আমাকে বলিলেন, ‘এখানে যে সকল বয়োজ্যেষ্ঠ কুরাইশী আছেন, যারা মক্কা বিজয়ের বছর হিজরত করেছিলেন তাঁদেরকে ডেকে আনো।’ আমি তাঁদেরকে ডেকে আনলাম। তখন তাঁরা পরস্পরে কোন মতবিরোধ করিলেন না। তাঁরা বলিলেন, ‘আমাদের রায় হল, আপনি লোকজনকে নিয়ে ফিরে যান এবং তাহাদেরকে এই মহামারীর কবলে ঠেলে দেবেন না।’ তখন উমার রাঃআঃ লোকজনের মধ্যে ঘোষণা দিলেন যে, ‘আমি ভোরে সওয়ারীর পিঠে [ফিরে যাওয়ার জন্য] আরওহণ করব। অতএব তোমরাও তাই কর।’ আবু উবাইদাহ ইবনুল জার্রাহ রাঃআঃ বলিলেন, ‘আপনি কি আল্লাহর নির্ধারিত তকদীর থেকে পলায়ন করার জন্য ফিরে যাচ্ছেন?’ উমার রাঃআঃ বলিলেন, ‘হে আবূ উবাইদাহ! যদি তুমি ছাড়া অন্য কেউ কথাটি বলত।’ আসলে উমার তাহাঁর বিরোধিতা করিতে অপছন্দ করিতেন। বলিলেন, ‘হ্যাঁ। আমরা আল্লাহর তকদীর থেকে আল্লাহর তকদীরের দিকেই ফিরে যাচ্ছি। তুমি বল তো, তুমি কিছু উঁটকে যদি এমন কোন উপত্যকায় দিয়ে এস, যেখানে আছে দু’টি প্রান্ত। তার মধ্যে একটি হল সবুজ-শ্যামল, আর অন্যটি হল বৃক্ষহীন। এবার ব্যাপারটি কি এমন নয় যে, যদি তুমি সবুজ প্রান্তে চরাও, তাহলে তা আল্লাহর তকদীর অনুযায়ীই চরাবে। আর যদি তুমি বৃক্ষহীন প্রান্তে চরাও তাহলেও তা আল্লাহর তকদীর অনুযায়ীই চরাবে?’ বর্ণনাকারী [ইবনি আব্বাস রাঃআঃ] বলেন, এমন সময় আব্দুর রহমান ইবনি আউফ রাঃআঃ এলেন। তিনি এতক্ষণ যাবত তাহাঁর কোন প্রয়োজনে অনুপস্থিত ছিলেন। তিনি বলিলেন, ‘এ ব্যাপারে আমার নিকট একটি তথ্য আছে, আমি আল্লাহর রসূল সাঃআঃ-কে বলিতে শুনিয়াছি যে, ‘‘তোমরা যখন কোন এলাকায় [প্লেগের] প্রাদুর্ভাবের কথা শুনবে, তখন সেখানে যেয়ো না। আর যদি এলাকায় প্লেগের প্রাদুর্ভাব নেমে আসে আর তোমরা সেখানে থাক, তাহলে পলায়ন করে সেখান থেকে বেরিয়ে যেয়ো না।’’ সুতরাং [এ হাদিস শুনে] উমার রাঃআঃ আল্লাহর প্রশংসা করিলেন এবং [মদিনা] ফিরে গেলেন। [বুখারী, মুসলিম] [1]
2/1801 وَعَنْ أُسَامَةَ بنِ زَيدٍ رضي الله عنه عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «إِذَا سَمِعْتُمُ الطَّاعُونَ بِأَرْضٍ، فَلاَ تَدْخُلُوهَا، وَإِذَا وَقَعَ بِأَرْضٍ، وَأنْتُمْ فِيهَا، فَلاَ تَخْرُجُوا مِنْهَا» . متفق عَلَيْهِ
২/১৮০১। উসামা ইবনি যায়েদ রাঃআঃ হইতে বর্ণিত, নবী সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘যখন তোমরা কোন ভূখণ্ডে প্লেগ মহামারী ছড়িয়ে পড়তে শুনবে, তখন সেখানে প্রবেশ করো না। আর তা ছড়িয়ে পড়েছে এমন ভূখণ্ডে তোমরা যদি থাক, তাহলে সেখান থেকে বের হয়ো না।’’ [বুখারী-মুসলিম] [2]
[1] সহীহুল বুখারী ৫৭২৯, ৫৭৩০, ৬৯৭৩, মুসলিম ২২১৯, আবূ দাউদ ৩১০৩, আহমাদ ১৬৬৯, ১৬১৮, ১৬৮৫, মুওয়াত্তা মালিক ১৬৫৫, ১৬৫৭
[2] সহীহুল বুখারী ৩৪৭৩, ৫৭২৮, ৬৯০৪, মুসলিম ২২১৮, তিরমিযী ১০৬৫, আহমাদ ২১২৪৪, ২১২৫৬, ২১২৯১, ২১২৯৯, ২১৩০৪, ২১৩১১, ২১৩২০, ২১৩৫০, মুওয়াত্তা মালিক ১৬৫৬
Leave a Reply