শহীদ ব্যক্তির মাসায়েল – আল ফিকহ কিতাব
শহীদ ব্যক্তির মাসায়েল – আল ফিকহ কিতাব >> আল হিদায়া ফিকহ এর মুল সুচিপত্র দেখুন
কিতাবঃ আল হিদায়া, দ্বাবিংশ অনুচ্ছেদ : শহীদ
শহীদ ঐ ব্যক্তি, যাকে মুশরিকরা হত্যা করেছে কিংবা যুদ্ধের মাঠে (মৃত) পাওয়া গেছে আর তার দেহে চিহ্ন রহিয়াছে। কিংবা মুসলমানরা তাকে অন্যায়ভাবে হত্যা করেছে এবং তাকে হত্যা করার কারণে দিয়াতে ও্রয়াজিব হয়নি। এমন ব্যক্তিকে কাফন দেওয়া হবে এবং তার উপর জানাযা পড়া হবে কিন্তু গোসল দেওয়া হবে না। কেননা সে উহুদের শহীদের শ্রেণীভূক্ত। আর তাহাদের সম্পর্ক রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেন- তাহাদেরকে তাহাদের জখম ও রক্তসহ আবৃত কর। গোসল দিও না।
সুতরাং যে কেউ লৌহাস্ত্র দ্বারা অন্যায়ভাবে নিহত হয় আর সে পবিত্র ও প্রাপ্তবয়স্ক এবং হত্যার বিনিময়ে কোন আর্থিক ক্ষতিপূরণ হয় না, সে উহুদের শহীদদের শ্রেণীভূক্ত। সুতরাং তাকে তাহাদের সংগে যুক্ত করা হবে।
‘চিহ্ন দ্বারা যখম উদ্দেশ্য। কেননা যখম নিহত হওয়ার পরিচায়ক। তেমনি অস্বাভাবিক স্থান থেকে রক্ত বের হওয়া। যেমন, চোখ বা এরূপ কোন স্থান থেকে।
শাফিঈ (রঃআঃ) জানাযার নামাজের ক্ষেত্রে আমাদের সাথে মতভেদ করেছেন। তিনি বলেন, তরবারির আঘাত গুনাহ্ মুছে ফেলে। সুতরাং (জানাযার নামাযের মাধ্যমে) দুআ –ইসতিগফারের প্রয়োজন নেই।
আমরা এর জবাবে বলি, মাইয়েতের জানাযা পড়া হয় তার প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য। আর শহীদ তো সম্মানের যোগ্য। তাছাড়া পাপ থেকে পবিত্র ব্যক্তিও দু্আর প্রয়োজন থেকে মুক্ত নয়; যেমন নাবী ও শিশু।
হারবী, যুদ্ধাবস্থায় কাফির কিংবা বিদ্রোহী কিংবা ডাকাত যাকে হত্যা করবে তাকে যে জিনিস দ্বারাই হত্যা করুক, গোসল দেওয়া হবে না। কেননা উহুদের শহীদানের সকলেই তরবারি বা লৌহাস্ত্র দ্বারা নিহত ছিলেন না।
জানাবাত অবস্থায় কেউ যদি শহীদ হয়, তাহলে আবূ হানীফা (রঃআঃ) এর মতে তাকে গোসল দেওয়া হবে।
সাহেবাইন বলেন যে, তাকে গোসল দেওয়া হবে না। কেননা, জানাবাত দ্বারা যে গোসল ওয়াজিব হয়েছিল, তা মৃত্যু দ্বারা রহিত হয়ে গিয়েছে। আর মৃত্যুর দরুন দ্বিতীয় গোসলটি শাহাদাতের কারনে ওয়াজিব হয়নি।
ইমাম আবূ হানীফা (রঃআঃ) এর দলিল এই যে, শাহাদাত গোসল রোধকারী হিসাবে স্বীকৃত, লোপকারী নয়। সুতরাং তা জানাবাতকে লোপ করবে না। আর বিশুদ্ধ সনদে প্রমাণিত আছে যে, হানযালা (রাঃআঃ) যখন জানাবাতগ্রস্ত অবস্থায় শহীদ হলেন, তখন ফেরেশতাগণ তাকে গোসল দান করেছিলেন।
হায়িয ও নিফাসগ্রস্ত স্ত্রীলোক যখন পবিত্র হয়ে (শাহাদাত বরণ করে) তখন তার সম্পর্কে একই মতভিন্নতা রহিয়াছে। বিশুদ্ধ বর্ণনা মতে হায়িয বা নিফাস শেষ হওয়ার আগে শাহাদাত বরণ করিলেও তার সম্পর্কে একই মতভিন্নতা রহিয়াছে। অপ্রাপ্ত বয়স্ক শিশু সম্পকেও অনুরূপ মতভেদ।
সাহেবাইনের দলিল এই যে, শিশু তো এই মর্যাদা লাভের অধিকতর উপযুক্ত।
ইমাম আবূ হানীফা (রঃআঃ) এর জবাব এই যে, পবিত্র অবস্থায় থাকা হিসাবে উহুদের শহীদানের ক্ষেত্রে তরবারির আঘাত গোসলের ব্যাপারে যথেষ্ট হইয়াছে। পক্ষান্তরে শিশুর তো গুনাহ নেই। সুতরাং সে উহুদের শহীদানের শ্রেণীভূক্ত হবে না।
শহীদের রক্ত ধোয়া হবে না এবং তার কাপড়-চোপড় খোলা হবে না। এর দলিল আমাদের পূর্ব বর্ণীত হাদিস। তবে চর্মের বা তুলভর্তি পরিধেয় অস্ত্র–শস্ত্র ও মোজা খুলে নেওয়া হবে। কেননা এগুলো কাফন জাতীয় নয়।
আর কাফনের কাপড় পূর্ণ করার উদ্দেশ্যে (প্রয়োজন অনুযায়ী) ইচ্ছামত বাড়াবে কিংবা কমাবে। যে ব্যক্তি জীবনের কিছু সুযোগ-সুবিধা লাভের পর মারা যায়, তাকে গোসল দেওয়া হবে।
অর্থাত্ যে ব্যক্তি জীবনের আরাম ও সুবিধা গ্রহণের কারণে শাহাদাতের হুকুম লাভের ক্ষেত্রে (কিছুটা সময় ক্ষেপন করে) পুরনো হয়ে গেছে। কেননা এ কারণে জুলুমের চিহ্ন কিছুটা লঘু হয়ে গেছে। ফলে সে উহুদের শহীদানের শ্রেণীভূক্ত হল না।
‘সুযোগ সুবিধা গ্রহণের অর্থ খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ করা, নিদ্রা যাওয়া, ঔষধ (ও চিকিত্সা) গ্রহণ করা কিংবা যুদ্ধক্ষেত্র থেকে (নিরাপদ স্থানে) স্থানান্তরিত হওয়া। কেননা এভাবে সে জীবনের কিছু সুবিধা ভোগ করল। আর উহুদের শহীদগণ পানির পেয়ালা তাহাদের সামনে তুলে ধরা সত্ত্বেও পিপাসার্ত অবস্থায় মারা গেছেন। কিন্তু শাহাদাতের মর্যাদা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশংকায় তাহারা (পানিটুকু) গ্রহণ করেননি।
কিন্তু যদি কোন আহত ব্যাক্তি এ কারণে আহত হওয়ার স্থান থেকে তুলে আনা হয়, যাতে ঘোড়ার পায়ে পিষ্ট না হয় (তবে তা সুযোগ গ্রহণ বলে গণ্য হবে না। কেননা সে কোন প্রকার আরাম লাভ করেনি। আর যদি কোন শিবিরে বা তাবুতে এনে রাখা হয় তবে পূর্ব বর্ণীত কারণে সে সুবিধা গ্রহণকারী গণ্য হবে।
আর যদি এক ওয়াক্ত নামাজ অতিক্রান্ত হওয়া পর্যন্ত সজ্ঞানে সে বেচে থাকে তবে সে সুবিধা গ্রহণকারী হল। কেননা উক্ত নামাজ তার যিম্মায় ৠণ হয়ে গেল। আর তা জীবিতদের সাথে সম্পর্কিত হুকুমের অন্তর্ভূক্ত।
হিদায়া গ্রন্থকার বলেন, এটি ইমাম আবূ ইউসুফ (রঃআঃ) হতে বর্ণীত।
যদি আখিরাত সংক্রান্ত কোন বিষয়ে ওসীয়ত করে তবে ইমাম আবূ ইউসুফ (রঃআঃ) এর মতে সেও সুবিধাগ্রহণকারী বলে গণ্য হবে।
কিন্তু ইমাম মুহাম্মাদ (রঃআঃ) এর মতে সে সুবিধা গ্রহণকারী হবে না। কেননা ওসীয়ত করা তো মাইয়েতের আহকামভূক্ত বিষয়।
যাকে নগরে নিহত অবস্থায় পাওয়া যায়, তাকে গোসল দেওয়া হবে। কেননা তার ক্ষেত্রে ওয়াজিব হল কাসামাহ ও দিয়্যত। সুতরাং এতে করে তার জুলুমের প্রতিক্রিয়া হালকা হয়ে যায়।
তবে যদি জানা যায় যে, তাকে লৌহার অস্ত্র দ্বারা অন্যায়ভাবে হত্যা করা হইয়াছে। (এমতাবস্থায় গোসল দেয়া হবে না) কেননা তার ক্ষেত্রে ওয়াজিব হল কিয়াস, যা একটি শাস্তি। আর হত্যাকারী বাহ্যতঃ কোনক্রমেই শাস্তি থেকে রেহাই পেতে পারে না, দুনিয়াতে কিংবা আখিরাতে।
আর ইমাম আবূ ইউসুফ ও মুহাম্মাদ (রঃআঃ) এর মতে যে অস্ত্রে প্রাণ সংহার বিলম্বিত হয় না, তা তলোয়ারের হুকুমভূক্ত। ইনশাল্লাহ্ (অপরাধসমূহ) অধ্যায়ে সম্পর্কে আলোচনা করা হবে।
যাকে হদ বা কিসাস হিসাবে কতল করা হইয়াছে, তাকে গোসল দেওয়া হবে এবং তার উপর জানাযা পড়া হবে । কেননা সে তার উপর সাব্যস্ত হক আদায় করার জন্য আপন প্রাণ ব্যয় করেছে। অথচ উহুদের শহীদগণ আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য নিজেদের জান উত্সর্গ করেছেন। সুতরাং তাকে তাহাদের সংগে যুক্ত করা যাবে না।
সে সকল বিদ্রোহী কিংবা ডাকাত নিহত হয়, তাহাদের উপর জানাযা পড়া হবে না।কেননা আলী (রাঃআঃ) বিদ্রোহীদের উপর জানাযা পড়েননি। – শহীদ ব্যক্তির মাসায়েল
Leave a Reply