জানাজার নামাজের মাসআলা মাসায়েল সমূহ
জানাজার নামাজের মাসআলা মাসায়েল সমূহ >> আল হিদায়া ফিকহ এর মুল সুচিপত্র দেখুন
কিতাবঃ আল হিদায়া, একবিংশ অনুচ্ছেদ : সালাতুল জানাযা
- পরিচ্ছেদ গোসল
- পরিচ্ছেদ কাফন পরান
- পরিচ্ছেদ মাইয়েতের উপর নামাজ আদায়
- পরিচ্ছেদ জানাযা বহন
- পরিচ্ছেদ দাফন
যখন কোন লোকের মৃত্যু উপস্থিত হয় তখন তাকে ডান পার্শ্বের উপর কিবলামূখী করে শোয়াবে।
(এটা করা হবে) তার কবরের অবস্থানের অবস্থা সামঞ্জস্য রেখে। কেননা সে তো কবরের নিকটবর্তী হয়ে গিয়েছে। আমাদের দেশে চিত করে শোয়ানোই প্রচলিত। কেননা, এ হল রুহ বের হওয়ার জন্য অধিকতর সহজ। তবে প্রথম সুরত হল সুন্নাত। এবং তাকে উভয় শাহাদাতের তালকীন করবে। কেননা রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেন- তোমরা তোমাদের মৃতদের লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু এই কালিমার সাক্ষ্য দানের তালকীন কর। মৃত দ্বারা ঐ ব্যক্তিকে বোঝানো হইয়াছে, যার মৃত্যু আসন্ন।
যখন সে মারা যায় তখন তার চোয়াল বেধে দিবে এবং চোখ দুটো বন্ধ করে এরূপ করাই উত্তম ।
পরিচ্ছেদ গোসল
যখন তাকে গোসল দেয়ার ইচ্ছা করবে, তখন তাকে একটি খাটে শোয়াবে।
যাতে পানি তার থেকে নীচের দিকে সরে যায়। আর তার সতরের স্থানে এক খন্ড বস্ত্র রেখে দেবে।
এরূপ করা হবে সতরের ওয়াজিব রক্ষা করার জন্য। তবে বিশুদ্ধ মত অনুযায়ী গোসলের কাজ সহজ করার জন্য মূল লজ্জাস্থান ঢাকাই যথেষ্ট। ( জানাজার নামাজের মাসআলা মাসায়েল )
আর (গোসলদানকারীরা) তার সমস্ত কাপড় খুলে ফেলবে, যাতে তাহাদের পক্ষে তাকে পরিষ্কার করা সহজসাধ্য হয়। এবং তাহারা তাকে কুলি ও নাকে পানি দেয়া ছাড়া উযূ করাবে। কেননা উযূ হল গোসলের সুন্নাত। তবে যেহেতু তার (মুখ ও নাক) থেকে পানি বের করা কঠিন, সেহেতু কুলি ও নাকে পানি দেয়া তরক করবে।
তারপর সারাশরীরে পানি প্রবাহিত করবে। জীবদ্দশার গোসলের কথা অনুসরণে। অতপর তার খাটিয়ায় ধুনী দেওয়া হবে বে-জোড় সংখ্যায়। কেননা এত মৃত ব্যক্তির প্রতি সম্মান প্রদর্শিত হয়। বে-জোড় করার কারণ এই যে, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেন, আল্লাহ বে-জোড়, তাই তিনি বে-জোড় সংখ্যা পসন্দ করেন। আর যদি বড়ই পাতা কিংবা ‘উশনান দ্বারা পানি সিদ্ধ করবে অধিকতর পরিচ্ছন্নতার লক্ষ্যে।
যদি তা না পাওয়া যায়, তবে শুধু পানিই যথেষ্ট। কেননা তা দ্বারা মূল উদ্দেশ্য অর্জিত হয়।
আর তার মাথা ও দাড়ি খিতমী (এক প্রকার তৃণ) দ্বারা ধৌত করবে। যাতে অধিক পরিচ্ছন্নতা অর্জিত হয়।
আর যদি তার মাথা ও দাড়ি খিতমী (এক প্রকার তৃণ) দ্বারা ধৌত করবে। যাতে অধিক পরিচ্ছন্নতা অর্জিত হয়।
এরপর তাকে বামপ্বার্শে শয়ন করবে এবং বড়ই পাতা সিদ্ধ পানি দ্বারা তাকে গোসল দেবে যতক্ষণ না দেখা যায় যে, পানি তার নীচ পর্যন্ত পৌছে গেছে। অতপর তাকে ডান পার্শ্বে শয়ন করাবে এবং ধুইবে যতক্ষণ না দেখা যায় যে, পানি তার নীচ পর্যন্ত পৌছে গেছে। কেননা ডান দিক থেকে শুরু করাই সুন্নাত। এরপর তাকে বসাবে এবং নিজের দিকে তাকে হেলান দিয়ে তার পেট হালকাভাবে মুছবে। যাতে পরে কাফন নষ্ট হওয়া থেকে রক্ষা পায়। যদি তার পেট থেকে কিছু বের হয় তবে তা ধুয়ে ফেলবে। গোসল বা উযূ দোহরাবে না। কেননা, গোসলের দেওয়া আমরা জেনেছি শরীআতের নির্দেশ। আর তা একবার পালিত হয়ে গেছে।
এরপর একটি কাপড় দ্বারা তার শরীরে চুষে ফেলবে। যাতে তার কাফন ভিজে না যায়।
এরপর মাইয়েতকে তার কাফনে রাখবে। এরপর তার মাথায় ও দাড়িতে সুগন্ধি মাখবে এবং সাজদার অংগগুলোতে কর্পুর মাখবে। কেননা, সুগন্ধি ব্যবহার করা সুন্নাত, আর সাজদার অংগগুলো অধিক সম্মানযোগ্য।
মাইয়েতের চুল বা দাড়ী আচড়াবে না এবং তার লম্বা চুল কাটবে না। কেননা ‘আইশা (রাঃআঃ) বলেছেন- কেন তোমরা তোমাদের মুর্দারের মাথার চুল পরিপাটি করছ? কেননা, এই সব কাজ হল সৌন্দর্যের জন্য। আর মাইয়েতের জন্য এগুলোর প্রয়োজন নেই। পক্ষান্তরে জীবিত ব্যক্তির জন্য এগুলো হল পরিচ্ছন্নতার বিষয়। যেহেতু এগুলোর নীচে ময়লা জমে থাকে। সুতরাং তা খাতনার মত হয়ে গেল।
পরিচ্ছেদ কাফন পরান
সুন্ন ত এই যে, পুরুষকে ইযার, কামীছ ও চাদর এই তিন কাপড়ে কাফন দিবে। কেননা বর্ণীত রহিয়াছে যে, নাবী (সাঃআঃ) কে সাহূলিয়ার তৈরী তিনটি সাদা কাপড়ে কাফন দেওয়া হয়েছিল।
তাছাড়া এই হল স্বভাবত তার জীবদ্দশায় সাধারণ পরিধেয় পোশাক। সুতরাং তার মৃত্যুর পরেও একই রকম হবে।
অবশ্য যদি দুই কাপড়ে সীমিত রাখা হয় তবুও তা জাইয আছে। আর এ দুই কাপড় হল ইযার ও চাদর। হল ন্যূনতম কাফন। কেননা আবূ বকর(রাঃআঃ) বলেছেন, আমার এ কাপড় দুটি ধুয়ে দিও এবং তাতেই আমাকে কাফন দিও।
তাছাড়া এটা হল জীবিতদের ন্যূনতম পোশাক। ইযারের পরিমাণ হল মাথা থেকে পা পর্যন্ত। চাদরও অনুরূপ। আর কামীছ হল গলা থেকে পা পর্যন্ত।
যখন কাফন পেচানোর ইচ্ছা করবে তখন মাইয়েতের বাম দিক থেকে শুরু করবে।এবং সেদিক থেকে তার উপর লেপটিয়ে দিবে। অতপর ডান দিক। যেমন জীবিত অবস্থায় করা হয়। কাফন বিছানোর সুরত এই যে, প্রথমে চাদর বিছাবে, তারপর তার উপর ইযার বিছাবে, তারপর মাইয়েতের কুর্তা পরানো হবে। তারপর তাকে ইযারের উপর রাখা হবে। অতপর প্রথমে বাম থেকে এরপর ডান থেকে ইযার পেচানো হবে। অতপর একই ভাবে চাদর পেচানো হবে।
যদি কাফন সরে যাওয়ার আশংকা হয় তবে একটি বস্ত্রখন্ড দ্বারা তা বেধে দিবে, যাতে অনাবৃত হওয়া থেকে রক্ষা পায়।
স্ত্রীলোককে পাচটি কাপড়ে কাফন দিবে। যথা, কোর্তা, ইযার, ওড়না, চাদর ও পট্টি যা দ্বারা তার সিনা বেধে রাখা হবে। কেননা উম্মু আতিয়্যাহ্ (রাঃআঃ) বর্ণীত হাদিসে রহিয়াছে যে, নাবী (সাঃআঃ) তার কন্যাকে গোসলদানকারিণী স্ত্রী লোকদেরকে পাচটি কাপড় দিয়েছিলেন। এবং এ কারণে যে, জীবদ্দশায় সাধারণত এই পাচ কাপড়ে সে বের হয়ে থাকে। সুতরাং মৃত্যুর পরেও অনুরূপ হবে। ( জানাজার নামাজের মাসআলা মাসায়েল )
আর এটা হল সুন্নাত কাফনের বয়ান। যদি তিনটি কাপড়ের মাঝে সীমাবদ্ধ রাখে যথা ইযার চাদর ও ওড়না, তবে জাইয হবে। এটা হল (মেয়েদের জন্য) ন্যূনতম কাফন।
এর চেয়ে কম করা মাকরূহ হবে। আর পুরুষদের ক্ষেত্রে এক কাপড়ের উপর সীমিত করা মাকরূহ হবে- জরুরী অবস্থা ছাড়া। কেননা মুসআব ইব্ন উমায়র (রাঃআঃ) যখন শহীদ হলেন, তখন তাকে এক বস্ত্রে কাফন দেওয়া হয়েছিল। এ হল জরুরী অবস্থার কাফন।
স্ত্রীলোককে প্রথমে কুর্তা পরানো হবে। তারপর তার চুলগুলো দুই ভাগ করে তার বুকে কোর্তার উপর রাখতে হবে। তারপর তার উপরে ওড়ানো পরানো হবে। তারপর ইযার দেয়া হবে –চাদরের নীচে।
ইমাম কুদূরী (রঃআঃ) বলেন, কাফনের কাপড়ের মাঝে মাইয়েতকে স্থাপনের পূর্বে বেজোড় সংখ্যায় ধুনী দেওয়া হবে। কেননা নাবী করীম (সাঃআঃ) তার কন্যার কাফনকে বেজোড় সংখ্যায় ধুপ দিতে আদেশ করেছিলেন। আর ধুনী দেওয়া হল সুরভিত করা। কাফন থেকে ফারেগ হয়ে মাইয়েতের উপর জানাযার নামাজ পড়বে। কেননা এ হল ফরয।
পরিচ্ছেদ মাইয়েতের উপর নামাজ আদায়
সুলতান যদি উপস্থিত থাকেন তবে মাইয়েতের উপর নামাজ আদায়ের ব্যাপারে তিনিই সব চেয়ে বেশী হকদার। কেননা, তার উপর অন্যকে, অগ্রগামী করাতে তার অবমাননা রহিয়াছে।
যদি তিনি উপস্থিত না থাকেন তবে কাযী (অধিক হকদার) কেননা তিনিও কর্তৃত্বের অধিকারী।
আর যদি তিনি উপস্থিত না থাকেন তবে মহল্লার ইমামকে অগ্রাধিকার দান করা মুস্তাহাব। কেননা, মাইয়েত তার জীবদ্দশায় তার ইমামতিতে সন্তুষ্ট ছিল।
ইমাম কুদুরী (রঃআঃ) বলেন- তারপর মাইয়েতের অভিভাবক অধিক হকদার। আর ওয়ালী বা অভিভাবকদের ক্রম সেই অনুসারেই হবে, যা নিকাহ অধ্যায়ে বর্ণীত হইয়াছে। সুতরাং যদি ওয়ালী ও সুলতান ছাড়া অন্য কেউ জানাযা পড়িয়ে থাকে তবে ওয়ালী তা পুনরায় পড়তে পারেন, যদি ইচ্ছা করেন। কেননা আমরা বলে এসেছি যে, অধিকার বা হক হল ওয়ালীদের।
যদি ওয়ালী জানাযা পড়ে থাকেন তাহলে তার পরে অন্য কারো জানাযার নামাজ আদায় করা জা্ইয নয়। কেননা ফরয তো প্রথমবার পড়া দ্বারাই আদায় হয়ে গেছে। আর নফল হিসাবে জানাযা পড়া শরীআত স্বীকৃত নয়। এজন্যই আমরা দেখিতে পাই যে, সকল স্তরের লোকেরা নাবী করিম (সাঃআঃ) এর রওযা শরীফে জানাযা পড়া থেকে বিরত রহিয়াছেন। অথচ যেভাবে কবরে রাখা হইয়াছে, সেভাবেই তার পবিত্র দেহ এখন পর্যন্ত বিদ্যমান আছে।
যদি জানাযা না পড়েই মাইয়েতকে দাফন করা হয়ে থাকে তবে তার কবরেই জানাযা পড়বে। কেননা নাবী করিম (সাঃআঃ) জনৈক আনসারী স্ত্রীলোকের কবরে জানাযা পড়েছিলেন।
তবে লাশ গলিত হওয়ার পূর্বেই তার জানাযা পড়বে। আর তা বোঝার ব্যাপার প্রবল মতের উপর নির্ভরশীল। এ-ই বিশুদ্ধ মত। কেননা, অবস্থা, সময় ও স্থান বিভিন্ন রকম রহিয়াছে। ( জানাজার নামাজের মাসআলা মাসায়েল )
জানাযার নামাজ এই যে, প্রথমে এক তাকবীর বলিবে। অতপর ‘সানা পড়বে। অতপর আরেক তাকবীর বলে নাবী করিম (সাঃআঃ) এর উপর দরূদ পড়বে। অতপর আরেক তাকবীর বলে নিজের জন্য, মাইয়েতের জন্য এবং মুসলমানদের জন্য দুআ করবে। অতপর চতুর্থ তাকবীর বলে সালাম ফেরাবে। কেননা রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) শেষ যে দিয়েছে। ইমাম যদি পঞ্চম তাকবীর বলেন, তবে মুক্তাদী তাকে অনুসরণ করবে না। ইমাম যুফার (রঃআঃ) ভিন্নমত পোষণ করেন।
আমাদের দলিল এই যে, পঞ্চম তাকবীরের হাদিসটি আমাদের পূর্ব বর্ণনার প্রেক্ষিতে রহিত হয়ে গেছে। তবে এক বর্ণনা মতে মুক্তাদী ইমামের সালাম ফেরানোর অপেক্ষা করবে। এ মতই গ্রহণীয়।
আর দুআসমূহ পাঠ করার উদ্দেশ্য হল মাইয়েতের জন্য ইসতিগফার করা। আর প্রথমে সানা এরপর দরূদ পাঠ হল দুআর সুন্নাত। বাচ্চার জন্য ইসতিগফার করবে না, বরং একথা বলিবে- হে আল্লাহ্!তাকে আমাদের জন্য অগ্রবর্তী করুন এবং আমাদের জন্য তাকে দাওয়াত লাভের মাধ্যম এবং আখেরাতের সঞ্চয় বানিয়ে দিন এবং তাকে আমাদের জন্য সুপারিশকারী ও সুপারিশ গ্রহণকৃত বানিয়ে দিন।
ইমাম যদি এক তাকবীর বা দুই তাকবীর দিয়ে সেরে থাকেন, তবে (পরে) আগত ব্যক্তি তার উপস্থিতির পর ইমামের আরেক তাকবীর বলার পূর্বে তাকবীর বলিবে না।
এ হল ইমাম আবূ হানীফা (রঃআঃ) ও মুহাম্মাদ (রঃআঃ) এর মত। ইমাম আবূ ইউসুফ (রঃআঃ) এর মতে উপস্থিতির সময়েই তাকবীর বলিবে। কেননা প্রথম তাকবীর হল নামাজ শুরু করার তাকবীর। আর মাসবূককে এ তাকবীর বলতে হয়।
উভয় ইমামের দলিল হল (জানাযার) প্রতিটি তাকবীর একেক রাকাআতের স্থলবর্তী। আর মাস্বূক, নামাজের যে অংশ ফউত হয়ে যায়, তা দিয়ে নামাজ শুরু করে না। কেননা এরূপ করা রহিত হয়ে গেছে।
পক্ষান্তরে যদি উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও ইমামের সংগে তাকবীর না বলে থাকে, তবে সকলেরই মতে সে দ্বিতীয় তাকবীরের জন্য অপেক্ষা করবে না। কেননা সে মুদরিকের সমপর্যায়ভূক্ত।
যে (ইমাম) পুরুষ বা স্ত্রীলোকের উপর নামাজ পড়বে সে বুক বরাবর দাড়াবে। কেননা, তা কলবের স্থান এবং তাতেই ঈমানের নূর বিদ্যমান থাকে। সুতরাং সেই বরাবর দাড়ানোর অর্থ এই দিকে ইংগিত করা যে, তার ঈমানের কারণে শাফাআতে দুআয়ে মাগফিরাত করা হবে।
ইমাম আবূ হানীফা (রঃআঃ) থেকে আরো বর্ণনায় রহিয়াছে যে, ইমাম পুরূষের মাথা বরাবর এবং স্ত্রীলোকের মাঝামাঝি দাড়াবে। কেননা, আনাস (রাঃআঃ) এরূপ করেছেন এবং বলেছেন যে, এটাই সুন্নাত।
আনাস (রাঃআঃ) সম্পর্কিত হাদিসের ব্যখ্যায় আমরা বলি যে, উক্ত মহিলার জানাযার উপর অতিরিক্ত আবরণ ছিল না। কাজেই তিনি স্ত্রীলোকটির জানাযা এবং লোকদের সাথে আড়াল হয়ে দাড়িয়েছিলেন।
যদি লোকেরা সওয়ার অবস্থায় জানাযা পড়ে তবে তা জাইয হবে-সাধারণ কিয়াস মুতাবিক। কেননা, ইহা মূলত দুআ। কিন্তু সূক্ষ কিয়াস মুতাবিক জাইয হবে না। কেননা তাহরীমা বিদ্যমান থাকার কারণে এক দিক থেকে তা নামাজ। সুতরাং সতর্কতার খাতিরে বিনা ওযরে কিয়াম তরক করা জাইয হবে না।
জানাযার নামাজের ক্ষেত্রে অনুমতি প্রদান অবৈধ নয়। কেননা অগ্রবর্তিতা হল ওয়াজিব হক। সুতরাং অন্যকে অগ্রবর্তী করে নিজের হক বাতিল করার তিনি অধিকার রাখেন। কোন কোন নুসখা বা অনুলিপিতে (অনুমতি) এর পরিবর্তে শব্দটি রহিয়াছে। এর অর্থ হল লোকদের জানিয়ে দেওয়া অর্থাত্ একে অন্যকে অবহিত করবে, যাতে তাহারা মাইয়েতের হক আদায় করিতে পারে।
জামাআত হয় এমন মসজিদের ভিতরে জানাযা পড়বে না। কেননা নাবী করিম (সাঃআঃ) বলেছেন- যে ব্যক্তি মসজিদে জানাযার নামাজ পড়বে তার কোন সাওয়াব নেই।
তাছাড়া, এই জন্যও যে, মসজিদ তো তৈরী হইয়াছে ফরয নামাজ আদায় করার জন্য। তদুপরি মসজিদ নষ্ট হওয়ারও সম্ভাবনা রহিয়াছে। আর মাইয়েত যদি মসজিদের বাইরে রক্ষিত হয় সে ক্ষেত্রে মাশায়েখগণের মধ্যে মত ভিন্নতা রহিয়াছে।
ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর যে শিশু কেদে ওঠে, তার নাম রাখা ও তাকে গোসল দেওয়া হবে এবং তার জানাযা পড়া হবে। কেননা নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন- নবজাতক যদি কেদে ওঠে তবে তার জানাযা পড়া হবে। আর যদি না কাদে তবে তার উপর জানাযা পড়া হবে না। যেহেতু কেদে ওঠা হল প্রাণের অস্তিত্তের প্রমাণ। সুতরাং না কাদলে তার ক্ষেত্রে মৃতদের নিয়ম-কানুন কার্যকর হবে।
যে শিশু যদি তার (অমুসলিম) মা-বাবার কোন একজনের সংগে বন্দী হয় এবং মৃত্যুবরণ করে তবে তার জানাযা পড়া হবে না। কেননা (ধর্মের দিক থেকে) সে পিতা-মাতার অনুবর্তী।
তবে যদি সে ইসলাম স্বীকার করে নেয় এবং তার বোধশক্তি থেকে থাকে কেননা সূক্ষ কিয়াস মতে তার ইসলাম গ্রহণ শুদ্ধ। কিংবা যদি পিতা –মাতার কোন একজন ইসলাম গ্রহণ করে নেয়। কেননা, ধর্ম হিসাবে সে পিতা-মাতার উত্তম জনের অনুগামী হবে।
যদি পিতা-মাতার একজনও তার সংগে বন্দী না হয় তবে জানাযা পড়া হবে। কেননা তখন তার ক্ষেত্রে দারুল ইসলামের অনুবর্তিতা প্রকাশ পাবে। ফলে তাকে মুসলমান বলে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে, যেমন কুড়িয়ে পাওয়া শিশুর ক্ষেত্রে।
যদি কোন কাফির মৃত্যুবরণ করে আর তার কোন মুসলমান অভিভাবক থাকে তবে সে তার গোসল দিবে, কাফন পরাবে এবং তাকে দাফন করবে।
হযরত আলী (রাঃআঃ) কে তার পিতা আবূ তালিব সম্পর্কে এ নির্দেশই দেয়া হয়েছিল। তবে তাকে গোসল দিবে নাপাক কাপড় ধোয়ার মত। আর বস্ত্রখন্ডে পেচানো হবে এবং একটি গর্ত খোড়া হবে। কাফন ও কবরের বেলায় সুন্নাত তরীকা অনুসরণ করা হবে না এবং যত্নের সাথে কবরে নামানো হবে না। বরং তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে।
পরিচ্ছেদ জানাযা বহন
মাইয়েতকে খাটিয়ায় রাখার পর লোকেরা চার পায়া ধরে উঠাবে।
হাদিসে এমনই বর্ণীত হইয়াছে। তাছাড়া এতে হবে জানাযার সহযাত্রীদের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং অধিকতর সম্মান ও হিফাজত।
ইমাম শাফিঈ (রঃআঃ) বলেন, সুন্নাত এই যে, জানাযা দুজন লোক বহন করবে। সামনের জন (খাটিয়ার হাতল) কাধে স্থাপন করবে। দ্বিতীয় জন বুক বরাবর ধারণ করবে। কেননা হযরত সাআদ ইব্ন মুআয (রাঃআঃ) এর জানাযা এভাবে বহন করা হয়েছিল। এর জবাবে আমাদের বক্তব্য এই যে, তা করা হয়েছিল সাআদ (রাঃআঃ) এর জানাযার উপর ফেরেশতাগণের ভিড়ের কারণে।
আর জানাযা নিয়ে দ্রুত গতিতে চলবে। তবে দৌড়ে নয়। কেননা, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) কে যখন এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল তখন তিনি বলেছিলেন- দৌড়ের চেয়ে কম গতিতে। যখন মাইয়েতের কবর পর্যন্ত পৌছে যাবে তখন মাইয়েতকে কাধ থেকে নামানোর পূর্বে উপস্থিত লোকদের বসে পড়া মাকরূহ। কেননা কখনো সহযোগিতার প্রয়োজন হতে পারে। আর দাড়ানো অবস্থায় তা অধিক সম্ভবপর। ( জানাজার নামাজের মাসআলা মাসায়েল )
আর জানাযা বহনের নিয়ম এই যে, প্রথমে জানাযার সামনের অংশ তোমার ডান কাধে রাখবে। অতপর জানাযার পিছনের অংশ তোমার ডান কাধে রাখবে। অতপর জানাযার সামনের অংশ তোমার বাম কাধে রাখবে এরপর পিছনের অংশ তোমার বাম কাধে রাখবে। এটা করা হবে ডান দিককে অগ্রাধিকার প্রদানের জন্য। এ নিয়ম হল পালাক্রমে বহনের ক্ষেত্রে।
পরিচ্ছেদ দাফন
কবরকে লাহদ রূপে খনন করবে। কেননা রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেন, লাহদ হল আমাদের জন্য। আর খাড়া কবর হল অন্য জাতির জন্য। মাইয়েতকে কেবলার দিক থেকে (গ্রহণ করে) দাখিল করা হবে।
ইমাম শাফিঈ (রঃআঃ) ভিন্নমত পোষণ করেন। তার মতে মাইয়েতকে পায়ের দিক থেকে নিয়ে দাখিল করা হবে। কেননা, নাবী করিম (সাঃআঃ) কে পায়ের দিক থেকে নিয়ে দাখিল করা হয়েছিল।
আমাদের দলিল এই যে, কেবলার দিক হল সম্মানিত। সুতরাং সেদিক থেকে প্রবেশ করানোই মুস্তাহাব হবে। আর নাবী করিম (সাঃআঃ) কে কবরে প্রবেশ করানো সম্পর্কিত বর্ণনাগুলো পরস্পর বিরোধী। ( জানাজার নামাজের মাসআলা মাসায়েল )
মাইয়েতকে যখন কবরে রাখা হবে তখন অবতরণকারী আল্লাহ্র নামে রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) এর মিল্লাতের উপর রাখছি। বলিবে । রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) হযরত আবূ দুজানা (রাঃআঃ) কে কবরে নামানোর সময় এ দুআ বলেছিলেন।
আর তাকে কেবলামুখী করবে। রসূলুল্লাহ(সাঃআঃ) এরূপ্ই আদেশ করেছেন।
আর কাফনের গিঠ খুলে দিবে। কেননা এখন আর সরে যাওয়ার ভয় নেই।
আর ‘লাহদ এর মুখে কাচা ইট সমান করে বসিয়ে দিবে। কেননা নাবী করিম (সাঃআঃ) এর কবর শরীফে কাচা ইট বসানো হয়েছিল।
লাহদের মুখে ইট বসানো পর্যন্ত স্ত্রীলোকের কবর কাপড় দ্বারা ঢেকে রাখবে। তবে পুরুষের কবর কাপড় দ্বারা ঢাকতে হবে না। কেননা, স্ত্রীলোকের অবস্থার ভিত্তি হল পর্দার উপর আর পুরূষের অবস্থার ভিত্তি হল উন্মুক্ত থাকার উপর।
পোড়া ইট বা কাঠ ব্যবহার করা মাকরূহ। কেননা এগুলো হল ঘর মজবুত করার জন্য। অথচ কবর হল জীর্ণ হয়ে নিঃশেষ হওয়ার স্থান। তাছাড়া পোড়া ইটে আগুনের আছর রহিয়াছে। সুতরাং কুলক্ষণ গ্রহণ হিসাবে তা মাকরূহ হবে।
আর বাশ ব্যবহারে অসুবিধা নেই। এর ভাষ্য মতে কাচা ইট ও বাশ ব্যবহার করা মুস্তাহাব। কেননা নাবী (সাঃআঃ) এর কবর শরীফে এক আটি বাশ ব্যবহার করা হয়েছিল।
অতঃপর কবরে মাটি ঢেলে দেওয়া হবে। আর কবরকে কুজের মত করা হবে। সমতলও করা হবে না এবং চতুষ্কোণও করা হবে না। কেননা নাবী করীম (সাঃআঃ) কবর চতুষ্কোণ করিতে নিষধ করেছেন। আর যারা নাবী করীম (সাঃআঃ) এর কবর শরীফ দেখেছেন, তাহারা বর্ণনা করেছেন, তা কুজ সদৃশ। ( জানাজার নামাজের মাসআলা মাসায়েল )
Leave a Reply