তিলাওয়াত সিজদার মাসালা – Al Hidaya Fikh

তিলাওয়াত সিজদার মাসালা – Al Hidaya Fikh

তিলাওয়াত সিজদার মাসালা – Al Hidaya Fikh >> আল হিদায়া ফিকহ এর মুল সুচিপত্র দেখুন

কিতাবঃ আল হিদায়া, চতুর্দশ অনুচ্ছেদ : তিলাওয়াতের সাজদা

ইমাম কুদূরী (রঃআঃ) বলেন, কুরআন শরীফে মো্ট চৌদ্দটি সাজদায়ে তিলাওয়াত রহিয়াছে। (১) সুরাতুল ‘আরাফের শেষে, (২) সুরাতুল রাদ, (৩) সুরাতুন-নাহল, (৪) সুরা বনী ইসরাইল, (৫) সুরা মারয়াম, (৬) সুরাতুল হাজ্জ-এর প্রথমটি, (৭) সুরাতুল ফুরকান, (৮) সুরা আন্‌-নামল, (৯) আলিফ-লাম-মীম তানযীল, (১০) সুরা সাদ, (১১) সুরা হামীম সাজদা, (১২) সুরাতুন-নাজম, (১৩) সুরা ইযাস-সামাউন শাক্কাত ও (১৪) সুরা ইকরা। মাসহাবে উছমানে এভাবেই লিখিত হইয়াছে এবং এ-ই নির্ভরযোগ্য। সুরাতুল হাজ্জ-এর সাজদার দ্বিতীয় আয়াতটি আমাদের মতে নামাজের সাজদা সংক্রান্ত। আর হামীম আস-সাজদা এর সাজদাস্থল হল আয়াতটি। এটা উমর (রাঃআঃ) এর মত। এবং সতর্কতা অবলম্বনে এই গ্রহণীয়।

এ সকল স্থানে পাঠকারী ও শ্রোতা উভয়ের উপর সাজদা ওয়াজিব। কুরআন শ্রবণের ইচ্ছা থাকুক কিংবা ইচ্ছা না থাকুক। কেননা রাসূলুল্লাহ্‌(সাঃআঃ) বলেছেন- সাজদার আয়াত যে শ্রবণ করেছে এবং যে তিলাওয়াত করেছে উভয়ের উপর সাজদা ওয়াজিব। ( তিলাওয়াত সিজদার মাসালা )

ইমাম যখন সাজদার আয়াত তিলাওয়াত করেন তখন তিনি সাজদা করবেন এবং মুক্তাদীও তার সঙ্গে সাজদা করবে। কেননা সে ইমামের অনুসরণ নিজ কর্তব্যরূপে গ্রহণ করেছে।
মুক্তাদী তিলাওয়াত করিলে ইমাম ও মুক্তাদী কেউ সাজদা করবে না। নামাজের মধ্যেও না, নামাজের পরেও না। এটা আবূ হানীফা ও আবূ ই্উসূফ (রঃআঃ) এর মত। মুহাম্মাদ (রঃআঃ) বলেছেন, নামাজ শেষ করার পর সকলেই সাজদা করবে। কেননা সাজদা ওয়াজিব হওয়ার কারণ সাব্যস্ত হইয়াছে এবং কোন প্রতিবন্ধকতাও নেই। নামাজের অবস্থা অবশ্য এর বিপরীত। কেননা নামাজের ভিতরে সাজদা করা ইমামতির অথবা তিলাওয়াতের অবস্থার বৈপরীত্যের দিকে নিয়ে যায়। শায়খাইনের যুক্তি এই যে, মু্ক্তাদীর উপর ইমামের কর্মকাণ্ড আরোপিত হওয়ার কারণে সে কিরাত পড়া থেকে বাধাপ্রাপ্ত। বাধাপ্রাপ্ত ব্যক্তির কর্মের উপর কোন হুকুম আরোপিত হয় না। ( তিলাওয়াত সিজদার মাসালা )

জুনুবী ও হায়যগ্রস্ত নারীর অবস্থা এর বিপরীত। কেননা তাহাদের কিরাত পড়তে নিষেধ করা হইয়াছে। তবে হায়যগ্রস্ত নারীর উপর তিলাওয়াতের কারণে সাজদা ওয়াজিব হবে না। তদ্রুপ শ্রবণের কারণেও ওয়াজিব হবে না। কেননা তার নামাজ আদায়ের যোগ্যতাই নাই। জুনুবী ব্যক্তির বিষয়টি এর বিপরীত।
যদি উক্ত নামাজ বহির্ভূত কোন ব্যক্তি উক্ত আয়াত শ্রবণ করে তবে সে সাজদা করবে। এ-ই বিশুদ্ধ মত। কেননা (শরীআত কর্তৃক) প্রতিবন্ধকতা মুক্তাদীর ক্ষেত্রে সাব্যস্ত ছিল। সুতরাং তাহাদের অতিক্রম করে অন্যদের উপর তা আরোপিত হবে না।

যদি নামাজের ভিতরে থেকে তাহারা এমন লোকের তিলাওয়াত শ্রবণ করে, যে নামাজে তাহাদের সাথে (শরীক) নেই, তাহলে তাহারা নামাজে ঐ তিলাওয়াতের সাজদা করবে না। কেননা, এটি নামাজভূক্ত সাজদায়ে তিলাওয়াত নয়। কারণ তাহাদের এই সাজদার আয়াত শ্রবণ নামাজের কোন আমল নয়। তবে নামাজের পরে এর জন্য তাহারা সাজদা করবে। কেননা, সাজদার কারণ পাওয়া গেছে।

যদি তাহারা নামাজের মাঝেই সাজদা করে, তবে তা যথেষ্ট হবে না। কেননা, নিষিদ্ধ হওয়ার কারণে তা নিম্নমানের সাজদা। সুতরাং তা দ্বারা পূর্ণমানের সাজদা আদায় হতে পারে না।
গ্রন্থকার বলেন, পুনরায় তাহারা এ সাজদা করবে। কেননা সাজদার কারণ পাওয়া গেছে। তবে নামাজ দোহরাতে হবে না। কেননা, কেবলমা্ত্র সাজদা নামাজের তাহরীমার পরিপন্থী নয়। ( তিলাওয়াত সিজদার মাসালা )

‘নাওয়াদির এর বর্ণনা মতে নামাজ ফাসিদ হয়ে যাবে। কেননা নামাজে তাহারা এমন ‘কাজ বৃদ্ধি করেছে যা নামাজের অন্তর্ভূক্ত নয়। কেউ কেউ বলেছেন যে, এটা মুহাম্মাদ (রঃআঃ) এর মত।
ইমাম যদি সাজদার আয়াত তিলাওয়াত করেন আর তা এমন কোন ব্যক্তি শুনতে পায়, যে নামাজে ইমামের সাথে শরীক নয়। এরপর ইমাম সাজদা করার পর সে ইমামের সাথে নামাজে শরীক হল, তাহলে ঐ সাজদা করা তার জন্য জরুরী নয়। কেননা ঐ রাকাআতে শরীক হওয়ার দ্বারা ঐ সাজদাতেও সে শরীক বলে গণ্য হইয়াছে।
আর যদি ঐ সাজদা করার আগেই সে ইমামের সঙ্গে শরীক হয়ে যায়, তাহলে ইমামের সঙ্গে সেও ঐ সাজদা করবে। কেননা, ঐ আয়াতটি যদি সে শ্রবণ নাও করতো, তবু ইমামের সঙ্গে তাকে সাজদা করিতে হত। সুতরাং এ ক্ষেত্রে সাজদা করা অধিকতর সংগত হবে।

আর যদি ইমামের সঙ্গে নামাজে মোটেই শরীক না হয়, তাহলে সে সাজদা করে নেবে। কেননা, সাজদার কারণ পাওয়া গেছে।
যে সাজদা নামাজের মধ্যে ওয়াজিব হল কিন্তু সে নামাজের মধ্যে আদায় করল না, তবে নামাজের বাইরে আর কাযা করবে না। কেননা, এ হল নামাজের মধ্যকার সাজদা। তার নামাজভিত্তিক অতিরিক্ত মর্যাদা রহিয়াছে। সুতরাং নিম্নমানের সাজদা দ্বারা তা আদায় হবে না। ( তিলাওয়াত সিজদার মাসালা )

যে ব্যক্তি সাজদার আয়াত তিলাওয়াত করল, এরপর সাজদা না করেই নামাজ শুরু করে উক্ত আয়াত পুনঃপাঠ করল এবং সাজদা করল, তার দুই বারের তিলাওয়াতের জন্য এ সাজদাই যথেষ্ট হবে। কেননা, দ্বিতীয় সাজদাটি নামাজভূক্ত হওয়ার কারণে অধিকতর শক্তিশালী। সুতরাং তা প্রথম সাজাদাকে অন্তর্ভূক্ত করে নিবে।
তবে ‘নাওয়াদির এর বর্ণনা মতে নামাজ থেকে ফারিগ হওয়ার পার আর এক সাজদা করে নিবে। কেননা, প্রথম সাজদাটির অগ্রগামিতার প্রাধান্য রাখে। সুতরাং উভয়টি সমমানের হয়ে গেল।

আমাদের বক্তব্য এই যে, উদ্দেশ্যের সাথে (আদায় নিজে সংযুক্ত হওয়ার কারণে) এর অতিরিক্ত মর্যাদা রহিয়াছে, সুতরাং এদিক থেকে তা অগ্রগণ্য হবে।
আর যদি সাজদার আয়াত তিলাওয়াতের পর সাজদা করে, এরপর নামাজে দাখিল হয়ে পুনরায় উক্ত আয়াত তিলাওয়াত করে, তবে এর জন্য আবার সাজদা করবে। কেননা দ্বিতীয় বার আয়াতে সাজদা তার পশ্চাতে এসেছে। অতএব এটিকে প্রথমটির সাথে যুক্ত করার কোন যুক্তি নেই। কেননা, এমতাবস্থায় ‘কারণ এর উপর কার্য অগ্রবর্তী হয়ে পড়বে।
যদি কোন ব্যক্তি একই মজলিসে একটিমাত্র সাজদার আয়াত পুনরাবৃত্তি করল তাহলে একই সাজদা তার জন্য যথেষ্ট হবে। কিন্তু যদি নিজ স্থানে আয়াত তিলাওয়াত পূর্বক সাজদা করে এরপর অন্যত্র গিয়ে (পূর্ববর্তী স্থানে ফিরে এসে) উক্ত আয়াত আবার তিলাওয়াত করল, তবে দ্বিতীয়বার সাজদা করিতে হবে। আর প্রথম তিলাওয়াতের জন্যা সাজদা না করে থাকলে তার উপর দুটি সাজদাই ওয়াজিব হবে।

মূল নিয়ম এই যে, কষ্ট লাঘবের উদ্দেশ্যে তিলাওয়াতি সাজদার ভিত্তি হল একত্রীকরণের উপর আর এ একত্রীকরণ ও সাধিত হবে (সাজদার) কারণ (অর্থাত্ তিলাওয়াত) এর ক্ষেত্রে, হুকুম বা বিধানের ক্ষেত্রে নয়। ইবাদতে ব্যাপারে এটাই মুনাসিব। পক্ষান্তরে দ্বিতীয়টি শাস্তি বিষয়ক ক্ষেত্রে অধিক যুক্তিযুক্ত।

আর একত্রীকরণ তখনই সম্ভব, যখন মজলিস অভিন্ন হবে। কেননা মজলিসই হল বিক্ষিপ্তগুলোকে একত্রীকারী। সুতরাং মজলিস যখন বিভিন্ন হবে তখন হুকুম বা বিধান মূল অবস্থায় ফিরে যাবে। শূধু দাড়ানো দ্বারা মজলিস ভিন্ন হয় না। তালাকের ইখতিয়ারপ্রাপ্ত নারীর বিষয়টি এ থেকে ভিন্ন। কেননা এক্ষেত্রে দাড়ানো গ্রহণ না করার ইঙ্গিত বহন করে। আর তা ইখতিয়ারকে বাতিল করে দেয়। ( তিলাওয়াত সিজদার মাসালা )

কাপড়ের সূতা তানা করার সময় আসা-যাওয়াতে ওয়াজিব পুনরাবৃত্ত হতে থাকবে। বিশুদ্ধতম মত অনুসারে গাছের এক ডাল থেকে আরেক ডালে যাতায়াতের ক্ষেত্রেও এই বিধান। তেমনি শস্য মাড়াইয়ের ক্ষেত্রেও সতর্কতার খাতিরে একই বিধান হবে।
যদি পাঠকারীর মজলিস অভিন্ন থেকে শ্রোতার মজলিসে ভিন্ন হয় তাহলে শ্রোতার উপর ওয়াজিব সাজদা পুনরাবৃত্ত হবে। কেননা তার ক্ষেত্রে শ্রবণই হল সাজদা ওয়াজিব হওয়ার কারণ।
তদ্রুপ যদি শ্রোতার মজলিস অপরিবর্তিত থাকে আর পাঠকারীর মজলিস পরিবর্তিত হয়। এরূপই বলা হইয়াছে। তবে বিশুদ্ধতম মত এই যে, শ্রোতার উপর ওয়াজিব সাজদার হুকুম পুনরায় বর্তিবে না। কারণ আমরা (আগে) বলেছি।
যে ব্যক্তি সাজদা করার ইচ্ছা করবে, সে উভয় হাত না তুলে তাকবীর বলিবে এবং সাজদায় যাবে। এরপর তাকবীর বলে মাথা উঠাবে।

নামাজের সাজদার অনুসরণে ইব্‌ন মাসউদ (রাঃআঃ) থেকে এমনই বর্ণীত হইয়াছে। আর তার উপর তাশাহুদ বা সালাম ওয়াজিব নয়, কেননা তাতো করা হয় হালাল হওয়ার জন্য আর তার চাহিদা হল পূর্ববর্তী তাহরীমার উপস্থিতি, যা এখানে নেই।

ইমাম মুহাম্মাদ (রঃআঃ) বলেন, আমার কাছে পসন্দনীয় সাজদার আয়াতের পূর্বে এক বা দুআয়াতে পড়ে নেওয়া। যাতে ভূল ধারণা না হয় যে, আয়াতে সাজদার ফযীলত অধিক রহিয়াছে।
শ্রোতাহাদের প্রতি লক্ষ্য রেখে ফকীহ্‌গণ সাজদার আয়াত চুপি চুপি পড়া উত্তম মনে করেছেন। ( তিলাওয়াত সিজদার মাসালা )


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply