অসুস্থ ব্যক্তির নামাজের মাসালা হিদায়া কিতাব থেকে
অসুস্থ ব্যক্তির নামাজের মাসালা হিদায়া কিতাব থেকে >> আল হিদায়া ফিকহ এর মুল সুচিপত্র দেখুন
কিতাবঃ আল হিদায়া, ত্রয়োদশ অনুচ্ছেদ : অসুস্থ ব্যক্তির নামাজ
অসুস্থ ব্যক্তি যখন দাঁড়াতে অক্ষম হয় তখন সে বসে রুকু-সাজদা করবে। কেননা রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) ইমরান ইবন হাসীণ (রাঃআঃ) কে বলেছেন
তুমি দাড়িয়ে নামাজ আদায় কর। যদি তা না পার তবে বসে (পড়)। যদি তা না পায় তবে পার্শ্বে শয়ন করে ইংগিতের মাধ্যমে। ( অসুস্থ ব্যক্তির নামাজের মাসালা )
তাছাড়া কুদূরী (রঃআঃ) বলেন, যদি রুকু-সাজদা করিতে না পারে তাহলে ইশারায় তা আদায় করবে। অর্থাত্ বসা অবস্থায় (ইশারায় রুকু-সাজদা করবে) কেননা এতটুকু করার সামর্থ্য তার রহিয়াছে। তবে সাজদার ইশারাকে রুকুর ইশারার তুলনায় অধিক অবনমিত করবে। কেননা ইশারা হল রুকু-সাজদার স্থলবর্তীতা রুকু-সাজদার হুকুম গ্রহণ করবে।
কপালের কাছে কোন কিছু উঁচু করে তার উপর সাজদা করবে না। সাজদা করার জন্য কিছু তার কপালের সামনে উঁচু করে ধরা হবে না। কেননা রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেন-
যদি তুমি ভূমিতে সাজদা করিতে পার তবে সাজদা কর। অন্যথায় মাথা দিয়ে ইশারা কর।
আর যদি কিছু তুলে ধরা হয় এবং সেই সাথে আপন মাথাও কিণ্চিত অবনত করে, তবে ইশারা পাওয়া যাওয়ার কারণে তা যথেষ্ট হবে। আর যদি উক্ত উত্তোলিত বস্তুকে কপালের উপর শুধু স্থাপন করে তবে ইশারা না হওয়ার কারণে তা যথেষ্ট হবে না।
আর যদি বসতে না পারে তবে পিঠের উপর চিত হয়ে শোবে এবং দুপা কেবলামুখী করবে। এবং ইশারায় রুকু-সাজদা করবে। কেননা রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেন- অসুস্থ ব্যক্তি দাড়িয়েঁ নামাজ আদায় করবে। যদি তা না পারে তাহলে বসে (আদায় করবে)। যদি তা না পারে তাহলে চিত হয়ে ইশারায় আদায় করবে। যদি তাও না পারে তাহলে আল্লাহ তা’আলাই তার ওযর কবূল করার অধিক হকদার। ( অসুস্থ ব্যক্তির নামাজের মাসালা )
যদি পার্শ্বে শয়ন করে আর তার চেহারা কেবলামুখী থাকে তবে তা জাইয হবে। প্রমাণ হল ইতোপূর্বে আমাদের বর্ণীত (ইমরান ইব্ন হাসীনের) হাদিস। কিন্তু আমাদের মতে প্রথম সুরতটি উত্তম। ইমাম শাফিঈ (রঃআঃ) ভিন্নমত পোষণ করেন।
কেননা চিত হয়ে শয়নকারী ব্যক্তিরা ইশারা কাবা শরীফের অভিমুখী হয়। পক্ষান্তরে পার্শ্ব শয়নকারী ব্যক্তির ইশারা তার পদদ্বয় অভিমুখী হয়। অবশ্য তা দ্বারা নামাজ আদায় হয়ে যাবে।
যদি মাথা দিয়ে ইশারা করিতে সক্ষম না হয় তবে তার নামাজ বিলম্বিত হবে। কিন্তু চোখ দ্বারা, অন্তর দ্বারা বা চোখের দ্বারা ইশারা করা যাবে না।
ইমাম যুফার (এবং আহমদ, শাফিঈ ও মালিক (রঃআঃ) এর ভিন্নমত রহিয়াছে। আমাদের প্রমাণ হলো ইতোপূর্বে আমাদের বর্ণীত হাদিস। তাছাড়া যুক্তি এই যে, নিজস্ব মত দ্বারা স্থলবর্তী নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। আর মাথা দিয়ে ইশারা এর উপর কিয়াস করা সংগত নয়। কেননা মাথা দ্বারা নামাজের রুকন আদায় করা হয় অথচ চোখ বা অপর দুটি দ্বারা তা করা হয় না।
যদি নামাজ বিলম্বিত করা হবে-ইমাম কুদূরীর এ বক্তব্যে ইংগিত রহিয়াছে যে, নামাজের ফরয তার থেকে রহিত হবে না। যদিও অক্ষমতা একদিন এক রাত্রের বেশী হয় আর সে সজ্ঞানে থাকে। এ-ই বিশুদ্ধ মত। কেননা সে শরীআতের সম্বোধন উপলদ্ধি করিতে পারে। অজ্ঞান লোকের বিষয়টি এর বিপরীত।
যদি দাঁড়াতে সক্ষম হয় কিন্তু রুকু-সাজদা করিতে সক্ষম না হয়, তাহলে কিয়াম করা জরুরী নয়, বরং বসে ইশারায় (রুকু-সাজদা করে) নামাজ আদায় করবে। কেননা, কিয়াম রুকন হইয়াছে সাজদায় যাওয়ার মাধ্যম হিসাবে। কারণ, কিয়াম থেকে সাজদায় যাওয়ার মধ্যে চূড়ান্ত তাযীম প্রকাশ পায়, সুতরাং কিয়ামের পরে সাজদা না হলে তা রুকন রূপে গণ্য হবে না। সুতরাং অসুস্থ ব্যক্তিকে ইখতিয়ার দেওয়া হবে। তবে উত্তম হল বসা অবস্থায় ইশারা করা। কেননা তা সাজদার সাথে অধিকতর সাদৃশ্যপূর্ণ।
সুস্থ ব্যক্তি দাড়িয়েঁ আংশিক নামাজ আদায় করার পর যদি অসুস্থতা দেখা দেয় তাহলে বসে রুকু-সাজদা করে নামাজ পূর্ণ করবে। আর সক্ষম না হলে ইশারা দ্বারা আদায় করবে। আর (বসতে) সক্ষম না হলে চিত হয়ে শোয়ে আদায় করবে। কেননা, নিম্নস্তরকে উচ্চস্তরের উপর ‘বিনা করেছে। সুতরাং এটা ইকতিদার মত।
কোন ব্যক্তি অসুস্থতাবশতঃ বসে রুকু-সাজদা করে নামাজ শূরু করল। এরপর (সা্লাতের মাঝেই) সুস্থ হয়ে গেল, তাহলে ইমাম আবূ হানীফা ও আবূ ইউসুফ (রঃআঃ) এর মতে সে তার পূর্ববর্তী নামাজের উপরই বিনা করে দাড়িয়ে আদায় করবে। আর মুহাম্মাদ (রঃআঃ) এর মতে নতুন করে নামাজ শুরু করবে।
এ মতপার্থক্যের ভিত্তি হল তাহাদের ইকতিদা সংক্রান্ত মতপার্থক্য। পূর্বে এর বিবরণ (ইমামাত অনুচ্ছেদ) বর্ণীত হইয়াছে।
আর যদি আংশিক নামাজ ইশারা দ্বারা আদায় করার পর রুকু-সাজদা করিতে সক্ষম হয়, তাহলে সকলের মতেই নতুন করে নামাজ শুরু করিতে হবে। কেননা, ইশারা দ্বারা আদায়কারীর পিছনে রুকু-সাজদাকারীর ইকতিদা করা জাইয নয়। সুতরাং ‘বিনা ও জাইয হবে না। ( অসুস্থ ব্যক্তির নামাজের মাসালা )
যে ব্যক্তি দাড়ানো অবস্থায় নফল নামাজ শুরু করে পরবর্তীতে ক্লান্ত হয়ে পড়ে, সে লাঠিতে বা দেয়ালে হেলান দিয়ে দাড়াতে পরে কিংবা বসেও আদায় করিতে পারে। কেননা, এটা ওযর। বিনা ওযরে হেলান দেওয়া অবশ্যা মাকরূহ। কারণ তা আদবের খেলাফ। কেউ কেউ বলেন ইমাম আবূ হানীফা (রঃআঃ)এর নিকট তা মাকরূহ। কেননা তার মতে বিনা ওযরে বসা জাইয আছে। সুতরাং হেলান দেয়া মাকরূহ হতে পারে না। ইমাম আবূ হানীফা ও ইমাম মুহাম্মাদ (রঃআঃ) এর মতে যেহেতু (বিনা ওযরে) বসা জা্ইয নেই, সেহেতু হেলান দেয়াও মাকরূহ হবে।
যদি (দাড়িয়ে নামাজ শুরু করার পর) বিনা ওযরে বসে পড়ে, তাহলে সর্বসম্মতিক্রমেই তা মাকরূহ হবে। তবে আবূ হানীফা (রঃআঃ) এর মতে নামাজ দুরস্ত হবে। কিন্তু সাহেবাইনের মতে দুরস্ত হবে না। নফল অনুচ্ছেদ এ আলোচনা বিগত হইয়াছে।
কোন ব্যক্তি ‘জলযানে ‘বিনা ওযরে বসে নামাজ পড়লে ইমাম আবূ হানীফা (রঃআঃ) এর মতে তা জাইয হবে। তবে দাড়িয়ে আদায় করা উত্তম। আর সাহেবাইন বলেন যে, ওযর ছাড়া তা জা্ইয হবে না। কেননা সামর্থ্য তার আছে। সুতরাং তা পরিত্যাগ করা যাবে না।
ইমাম আবূ হানীফা (রঃআঃ) এর যুক্তি এই যে, সেখানে মাথা ঘুরানোর সম্ভাবনাই প্রবল সুতরাং সেটা বাস্তবতূল্য। তবে দাড়িয়ে পড়া হল উত্তম। কেননা তা মতপার্থক্যের সংশয় মুক্ত। আর যতটা সম্ভব মতপার্থক্য থেকে দূরে থাকাই উত্তম। কেননা তা অন্তরের জন্য অধিক প্রশান্তিকর। এ মতপার্থক্য নোংগরহীন নৌকার ক্ষেত্রে। পক্ষান্তরে বাধা নৌকা নদীর তীরের (ভূমির) মতই। এটাই বিশুদ্ধ মত।
যে ব্যক্তি পাচ ওয়াক্ত নামাজ কিংবা তার কম সময় বেহুশ ছিল, সে কাযা আদায় করবে। আর যদি পাচ ওয়াক্তের বেশী বেহুশ থাকে, তাহলে কাযা আদায় করবে না। এটা সূক্ষ কিয়াসের সিদ্ধান্ত, সাধারণ কিয়াস অনুযায়ী অজ্ঞনতা যদি একপূর্ণ নামাজের ওয়াক্ত স্থায়ী হয়, তাহলে কাযা ওয়াজিব হবে না। কেননা অক্ষমতা সাব্যস্ত হইয়াছে। সুতরাং তা পাগল হওয়ার সমতুল্য।
সূক্ষ কিয়াসের ব্যাখ্যা এই যে, সময় দীর্ঘ হলে কাযা নামাজের সংখ্যা বেড়ে যায় ফলে আদায় করা কষ্টকর হয়ে পড়ে। পক্ষান্তরে সময় সংক্ষিপ্ত হলে কাযা নামাজের সংখ্যা কম হয়; ফলে তাতে কোন কষ্ট হবে না। আর বেশীর পরিমাণ হল কাযা নামাজ একদিন ও একরাত্র দাড়িয়ে যাওয়া। কেননা তখন তা পুনরাবৃত্তির গণ্ডিতে প্রবেশ করে যায়। আর পাগল হওয়ার হুকুম অজ্ঞান হওয়ার মত। আবূ সুলায়মান (রঃআঃ) এরূপই উল্লেখ করেছেন।
ঘুমের বিষয়টি ভিন্ন। কেননা ঘূম এত দীর্ঘ হওয়া বিরল। সুতরাং সেটা সংক্ষিপ্ত ঘুমের পর্যায়ভূক্ত বলেই গণ্য হবে।
ইমাম মুহাম্মাদ (রঃআঃ) এর মতে বেশীর পরিমাণ হিসাব করা হবে নামাজের ওয়াক্ত হিসাবে। কেননা সেটা দ্বারাই পুনরাবৃত্তি সাব্যস্ত হয়। আর ইমাম আবূ মালিক ও ইমাম মুহাম্মাদ (রঃআঃ) এর মতে সময় হিসাবে। ‘আলী (রাঃআঃ) ও ইবন উমর (রাঃআঃ) থেকে এটাই বর্ণীত হইয়াছে। নির্ভূল সম্পর্কে আল্লাহ্ই উত্তম জানেন। ( অসুস্থ ব্যক্তির নামাজের মাসালা )
Leave a Reply