জামায়াত নামাজ পড়ার মাসালা সমূহ

জামায়াত নামাজ পড়ার মাসালা সমূহ

জামায়াত নামাজ পড়ার মাসালা সমূহ >> আল হিদায়া ফিকহ এর মুল সুচিপত্র দেখুন

কিতাবঃ আল হিদায়া, দশম অনুচ্ছেদ : জামাআত পাওয়া

যে ব্যক্তি যুহরের এক রাকাআত পড়ার পর ইকামাত হলো সে আরেক রাকাআত পড়ে নেবে। আদায়কৃত অংশকে বাতিল হয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করার জন্য।
এরপর লোকদের সাথে (জামাআতে) শামিল হবে। জামাআতের ফযীলত হাসিল করার জন্য।
যদি প্রথম রাকাআতের সাজদা না দিয়ে থাকে তবে নামাজ ছেড়ে দিয়ে ইমামের সাথে শূরু করবে। এটাই বিশুদ্ধ মত। কেননা সে ছেড়ে দেয়ার স্থান রহিয়াছে। আর আমল ভংগ করার উদ্দেশ্য হচ্ছে পূর্ণাংগ রূপে আদায় করা। নফলের ক্ষেত্রে বিষয়টি ভিন্নরূপ। কেননা তা ভংগ করা পূর্ণাংগ রূপে আদায় করার জন্য নয়।

যদি যুহর বা জুমুআ পূর্ববর্তী সুন্নাত নামাযে রত থাকে আর এমন সময় ইকামত বা খুতবা শূরু হয়, তাহলে (জামাআতের ফযীলত হাছিল করার জন্য) দুই রাকাআতের মাথায় নামায শেষ করে দেবে। এটা ইমাম আবূ ইউসুফ (রঃআঃ) হতে বর্ণীত। কোন কোন চার রাকাআত পূর্ণ করবে।

আর যদি যুহরের তিন রাকাআত পড়ে থাকে তাহলে তা পূর্ণ করবে। কেননা অধিকাংশের প্রতি সকলের হুকুম আরোপিত হয়। সুতরাং তা ভংগ করার অবকাশ রাখে না। পক্ষান্তরে যদি সে তৃতীয় রাকাআতে রত থাকে এবং এখনও এর সাথে সাজদা মিলিত করে নেই, তবে এক্ষেত্রে তা ভংগ করে ফেলবে। কেননা সে ভংগ করার অবস্থানে আছে।
এমতাবস্থায় তার অধিকার রহিয়াছে। ইচ্ছা করিলে সে ফিরে এসে বসবে এবং সালাম ফিরাবে আর ইচ্ছা করিলে দাড়ানো অবস্থায় ইমামের নামাজে শরীক হওয়ার নিয়্যতে তাকবীর বলিবে। আর যখন যুহরের নামায পূর্ণ করে ফেলবে তখন জামাআতে শামিল হয়ে যাবে।

আর জামাআতের সাথে যা পড়বে তা নফল হবে। কেননা নামাযের ওয়াক্ত ফরযের পুনরাবৃত্তি হয় না।
যদি ফজরের এক রাকাআত পড়ার পর ইকামাত হয় তবে তা ভংগ করে জামা্আতে শামিল হয়ে যাবে। কেননা যদি তার সাথে আরেক রাকাআত যুক্ত করে, তবে তার জামাআত ফউত হয়ে যাবে। তেমনি যদি দ্বিতীয় রাকাআতের জন্য দাড়িয়ে যায় তবে তার সাথে সাজদা মিলানোর পূর্ব পর্যন্ত এই হুকুম হবে। আর (ফজরের) নামায পূর্ণ করার পর ইমামের নামাযে মাগরিবের পরও একই হুকুম, কেননা তিন রাকাআত নফল পড়া মাকরূহ। জাহিরে বিওয়ায়াত অনুযায়ী চার রাকাআতে রূপান্তরিত করিলে ইমামের বিরোধিতা হয়।

‘আযান হয়ে গেছে এমন সময় মসজিদে যে ব্যক্তি প্রবেশ করল, তার জন্য নামাজ না পড়ে সেখান থেকে বের হয়ে যাওয়া মাকরূহ। কেননা রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেন-
আযান হয়ে যাওয়ার পর মসজিদ থেকে ঐ ব্যক্তি ছাড়া কেউ বের হয় না, যে মুনাফিক কিংবা ঐ ব্যক্তি, যে ফিরে আসার ইচ্ছা নিয়ে মসজিদ থেকে বের হল।

ইমাম কুদূরী বলেন, তবে যদি তার উপর কোন জামাআতের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব থাকে। কেননা এটা বাহ্যতঃ বর্জন হলেও প্রকৃত পক্ষে তা পূর্ণাংগতা দানের শামিল।
আর যুহর ও ‘ঈশার ক্ষেত্রে যদি কেউ নামায পড়ে ফেলে থাকে তবে (আযানের পরও মসজিদ থেকে) বের হওয়াতে দোষ নেই। কেননা আল্লাহর আহবানকারীর বিরোধিতার কারণে।
আর আসর, মাগরিব ও ফজরের সময় মুআযযিম ইকামাত শূরু করে দিলেও বের হয়ে যাবে। কেননা এ সকল নামাজের পরে নফল মাকরূহ।

যে ব্যক্তি ফজরের নামাযে এমন সময় পৌছল যে, ইমাম নামাজ শুরু করেছেন, কিন্তু সে ফজরের দুরাকাআত সুন্নাত পড়েনি। এমতাবস্থায় যদি তার আশংকা হয় যে এক রাকাআত ফউত হয়ে যাবে এবং এক রাকাআত পাবে, তাহলে মসজিদের দরজার সামনে ফজরের দুরাকাআত সুন্নাত পড়ে নেবে, তারপর ইমামের সাথে শরীক হবে। কেননা এভাবে তার জন্য সুন্নাত ও জামাআতের উভয় ফযীলত হাসিল করা সম্ভব।

যদি দ্বিতীয় রাকাআতও ফউত হওয়ার আশংকা থাকে, তাহলে ইমামের সাথে শরীক হয়ে যাবে। কেননা জামাআতের সাওয়াব অতিবেশী এবং জামাআত তরকের ব্যাপারে কঠোর সতর্কবাণী রহিয়াছে।
যুহরের সুন্নতের হুকুম হল ভিন্ন। অর্থাত্ উভয় অবস্থায়ই তা ছেড়ে দিবে। কেননা ওয়াক্তের ভিতরে ফরযের পরে তা আদায় করা সম্ভব। এটাই বিশূদ্ধ মত। অবশ্য আবূ ইউসুফ ও মুহাম্মাদ (রঃআঃ) এরা মাঝে মতপার্থক্য শূধূ এই যে, উক্ত চার রাকাআতে সুন্নাতকে দুই রাকাআতের আগে পড়বে, না পরে পড়বে। কিন্তু ফজরের সুন্নতের বেলায় এ সুযোগ নেই। ইনশাল্লাহ্ পরবর্তীতে তা আলোচনা করা হবে।

মসজিদের দরজার সামনে আদায় করার শর্তারোপ দ্বারা বোঝা যায় যে, ইমাম নামাযরত থাকা অবস্থায় মসজিদের ভিতরে (সুন্নাত আদায় করা) মাকরূহ।
সাধারণ সুন্নাত ও নফলসমূহ ঘরে আদায় করাই উত্তম। এটাই নাবী (সাঃআঃ) হতে বর্ণীত হইয়াছে।
যদি ফজরের দুই রাকাআত ফউত হয়ে যায়, তবে সূর্যোদয়ের পূর্বে তা কাযা করবে না। কেননা তা কেবল নফল হয়ে যায়। আর ফজরের পর নফল পড়া মাকরূহ।

ইমাম আবূ হানীফা ও আবূ ইউসুফ (রঃআঃ) এর মতে সূর্য উপরে উঠে যাওয়ার পরেও তা আদায় করবেনা। কিন্তু ইমাম মুহাম্মাদ (রঃআঃ) বলেন, আমার কাছে পসন্দনীয় হলো সূর্য হেলে পড়া পর্যন্ত তা কাযা করে নিবে। কেননা রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) শেষ রাত্রে যাত্রা বিরতির ঘটনায় পরবর্তী সকালে সূর্য উপরে উঠার পরে ফজরের দুরাকাআত সুন্নাত কাযা করেছেন।

ইমাম আবূ হানীফা ও আবূ ইউসুফ ইমামদ্বয়ের দলিল এই যে, সুন্নতের ক্ষেত্রে কাযা না করাই হলো আসল হুকুম। কেননা কাযার বিষয়টি ওয়াজিব এর সাথে সম্পৃক্ত। আর হাদিসের ঘটনায় এ দুরাকাআত কাযা করার কথা এসেছে ফরযের অনুসরণে। সুতরাং অন্য ক্ষেত্রে হুকুম মূলনীতি হিসাবে বহাল থাকবে। ফরয জামাআতের সাথে আদায় করা হোক কিংবা একা, সুন্নাতকে ফরযের অনুসরণে কাযা করা হবে সূর্য ঢলে পড়া পর্যন্ত। আর সূর্য ঢলে যাওয়ার পর কাযা করা সম্পর্কে মাশায়েখগণের মধ্যে মতভেদ রহিয়াছে। ফজর ছাড়া অন্য সকল সুন্নাত ওয়াক্তের পরে এককভাবে করা হবে না। আর ফরযের অনুসরণে কাযা করা হবে কিনা, সে সম্পর্কে মাশায়েখগণের মতভেদ রহিয়াছে।

যে ব্যক্তি যুহরের সালাতো এক রাকাআতে পেল তিন রাকাআত পায়নি, সে যুহরের নামাজ জামাআতের সাথে আদায় করেনি। কিন্তু ইমাম মুহাম্মাদ (রঃআঃ) এর মতে জামাআতের ফযীলত সে লাভ করবে। কেননা কোন কিছুর শেষাংশ যে পায়, সে যেন ঐ বস্তুটি পেয়ে গেছে। সুতরাং সে জামাআতের সাওয়াব অর্জনকারী হবে। তবে প্রকৃতপক্ষে সে জামাআতের সাথে নামাজ আদায় করেনি। কিন্তু ইমাম মুহাম্মাদ (রঃআঃ) এর মতে জামাআতের ফযীলত সে লাভ করবে। কেননা কোন কিছুর শেষাংশ যে পায়, সে যেন ঐ বস্তুটি পেয়ে গেছে। সুতরাং সে জামাআতের সাওয়াব অর্জনকারী হবে। প্রকৃতপক্ষে সে জামাআতের সাথে আদায় করেনি। একারণেই যদি কেউ কসম খায় যে, সে কখনো
জামাআত ধরবে না, তবে শেষ রাকাআতে জামাআতে শরীক হওয়া দ্বারা সে কসমভংগকারী হবে। কিন্তু যুহরের নামাজ জামাআতের সাথে পড়বে না, এই কসম করিলে সে কসমভংগকারী হবে না।

যে ব্যক্তি জামাআতে হয়ে গেছে এমন সময় মসজিদে উপস্থিত হলো, সে ফরয আদায় করার পূর্বে ওয়াক্তের ভিতরে যতক্ষণ ইচ্ছা নফল পড়তে পারে।
ইমাম কুদূরীর এ বক্তব্য হল ঐ ক্ষেত্রে, যখন সময়ের মধ্যে অবকাশ থাকে। পক্ষান্তরে সময় সংকীর্ণ হয়ে পড়লে নফল ও সুন্নাত পড়া ছেড়ে দিবে।
আর কেউ কেউ বলেছেন (নফল ছেড়ে দেয়ার) এ হুকুম হলো যুহর ও ফজরের সুন্নাত ছাড়া অন্য ক্ষেত্রে। কেননা এ দুটি সুন্নতের অতিরিক্ত মর্যাদা রহিয়াছে। সুন্নাত সম্পর্কে রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেন- ‘অশদ্বল তোমাকে তাড়া করিলেও তোমরা তা পড়ো। অপর সুন্নাতটি সম্পর্কে তিনি বলেছেন- যুহরের পূর্ববর্তী চার রাকাআত যে ছেড়ে দেবে, সে আমার শাফাআত লাভ করবে না।

আর কেউ কেউ বলেছেন এটা সকল সুন্নতের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কেননা রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) জামাআতের সাথে ফরয আদায় করার সময় নির্ধারিত সুন্নাতগুলো নিয়মিত আদায় করেছেন। আরে ‘নিয়মিত ছাড়া সুন্নাত হওয়া সাব্যস্ত হয় না। তবে সর্বাবস্থাতেই তা তরক না করাই উত্তম। কেননা সুন্নাতগুলো হচ্ছে ফরযসমূহের সম্পূরক। তবে ওয়াক্ত ফউত হওয়ার আশংকা থাকলে ছেড়ে দেবে।
কেউ যদি এসে ইমামকে রুকুতে পায় তবে তাকবীর বলে দাড়িয়ে থাকা অবস্থায় ইমাম মাথা তুলে ফেললেন, তাহলে সে ঐ রাকাআত পেয়েছে বলে গণ্য হবে না।

এ বিষয়ে ইমাম যুফার (রঃআঃ) এর মত ভিন্ন রহিয়াছে। তিনি বলেন ইমামকে সে এমন অবস্থায় পেয়েছে, যা কিয়ামের হুকুমভূক্ত।
আমাদের দলিল এই যে, নামাযের কার্যসমূহ (ইমামের সাথে) অংশ গ্রহণ করা হলো শর্ত। আর তা এখানে পাওয়া যায়নি, কিয়ামের অবস্থায়ও না এবং রুকুর অবস্থায়ও না।
মুক্তাদী যদি ইমামের আগে রুকুতে চলে যায় আর ইমাম তাকে রুকুতে গিয়ে পান, তবে নামাজ জাইয হয়ে যাবে।
ইমাম যুফার (রঃআঃ) বলেন, এটা তার জন্য জাইয হবে না। কেননা ইমামের আগে যা সে করেছে, তা গ্রহণযোগ্য নয়। সুতরাং এর উপর যা বিনা করা হইয়াছে, তাও শুদ্ধ হবে না।
আমাদের দলিল এই যে, শর্ত হলো কোন এক অংশে (ইমামের সাথে) শরীক হয়ে যাওয়া। যেমন প্রথমাংশে (শরীক হলে তা গণ্য হয়)। আল্লাহ‌‌ই উত্তম জানেন। – জামায়াত নামাজ পড়ার মাসালা সমূহ


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply