বিতর নামাজের মাসআলা হিদায়া ফিকহ থেকে

বিতর নামাজের মাসআলা হিদায়া ফিকহ থেকে

বিতর নামাজের মাসআলা হিদায়া ফিকহ থেকে >> আল হিদায়া ফিকহ এর মুল সুচিপত্র দেখুন

কিতাবঃ আল হিদায়া, অষ্টম অনুচ্ছেদ : সালাতুল বিতর

ইমাম আবূ হানীফা (রঃআঃ) এর মতে সালাতুল বিতর হলো ওয়াজিব। পক্ষান্তরে ইমাম আবূ ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মাদ (রঃআঃ) বলেন, এটি সুন্নাত। কেননা,তাতে সুন্নতের আলামতসমূহ সুপ্রকাশিত রহিয়াছে। কারণ, বিতর অস্বীকারকারীকে কাফির আখ্যায়িত করা যায় না। এবং এর জন্য আলাদা আযান দেওয়া হয় না।

আবূ হানীফা (রঃআঃ) এর দলিল হলো হাদিসে-
আল্লাহ তা’আলা তোমাদের একটি নামাজ বৃদ্ধি করেছেন। সেটা হলো বিতর। সুতরাং তা তোমরা ঈশা ও ফজর উভয়ের মধ্যবর্তী সময়ে আদায় কর।
এখানে ‘আমর বা আদেশবাচক শব্দ এসেছে। আর তা দ্বারা ওয়াজিব হওয়া প্রমাণ করে। এজন্যই সর্বসম্মতিক্রমে তা কাযা করা ওয়াজিব।

তবে বিতর অস্বীকারকারীকে কাফির আখ্যায়িত না করার কারণ এই যে, তার ওয়াজিব হওয়া হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। আবূ হানীফা (রঃআঃ) থেকে বিতর সুন্নাত হওয়ার যে বর্ণনা রহিয়াছে, তার অর্থ এই যে, তা সুন্নাহ্ দ্বারা প্রমাণিত। আর যেহেতু তা ‘ঈশার সময় আদায় করা হয়, সেহেতু ‘ঈশার আযান ও ইকামাতকেই যথেষ্ট মনে করা হইয়াছে।
ইমাম কুদূরী (রঃআঃ) বলেন। বিতর হলো তিন রাকাআত, যার মাঝে সালাম দ্বারা ব্যবধান করা হবে না। কেননা, ‘আইশা (রাঃআঃ) বর্ণনা করেন যে, নাবী (সাঃআঃ) তিন রাকাআতের বিতর আদায় করিতেন। তদুপরি হাসান বসরী (রঃআঃ) বিতরের তিন রাকাআতের ব্যাপারে মুসলিমদের ইজমা বর্ণনা করেছেন।

এতে ইমাম শাফিঈ (রঃআঃ) ও এক মত। অন্যমতে বিতর দুই সালামে আদায় করার কথা রহিয়াছে। ইমাম মালিক (রঃআঃ) এর এই মত। আমাদের বর্ণীত হাদিস তাহাদের বিপক্ষে প্রমাণ।
আর তৃতীয় রাকাআতে ‘রুকু এর পূর্বে কুনূত পড়বে।

ইমাম শাফিঈ (রঃআঃ) বলেন, রুকুর পরে পড়বে। কেননা, বর্ণীত হইয়াছে যে রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বিতরের শেষে কুনূত পড়েছেন। আর তা রুকুর পরেই হবে।
আমাদের দলিল হলো বর্ণীত হাদিস যে, নাবী করিম (সাঃআঃ) রুকুর পূর্বে কুনূত পড়েছেন। আর যা অর্ধেকের বেশী, তাকে শেষাংশ বলা যায়।
সারা বছরই কুনূত পড়া হবে। রমযানের শেষার্ধ ছাড়া অন্য সময়ের ব্যাপারে শাফিঈ (রঃআঃ) এর ভিন্নমত রহিয়াছে। কেননা, হাসান ইবন আলী (রাঃআঃ) কে কুনূতের দুআ শিক্ষা দেয়ার সময় রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) সাধারণতঃ বলেছেন-এটা তোমার বিতর-এর মধ্যে পড়ো।

বিতরের প্রত্যেক রাকাআতে সুরাতুল ফাতিহা ও অন্য একটি সুরা পড়বে। কেননা আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেছেন- কুরআনের যে অংশ তোমাদের জন্য সহজ হয় পড়ো।
আর যখন কুনূত পড়ার ইচ্ছা করবে তখন তাকবীর বলিবে। কেননা, অবস্থার পরিবর্তন হইয়াছে।
আর উভয় হাত উঠাবে এবং কুনূত পড়বে। কেননা, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেন, কেবল সাতটি ক্ষেত্র ব্যতীত হাত উঠানো হবে না। তন্মধ্যে কুনূতের কথাও তিনি বলেছেন। এছাড়া অন্য কোন নামাজে কুনূত পড়বে না।
ফজরের ক্ষেত্রে ইমাম শাফিঈ (রঃআঃ) এর ভিন্নমত রহিয়াছে। কেননা ইবন মাসঊদ (রাঃআঃ) হতে বর্ণীত আছে যে, রাসূলু্ল্লাহ্ (সাঃআঃ) ফজরের নামাজে কুনূত পড়েছেন। পরে তা ছেড়ে দিয়েছেন।

ইমাম যদি ফজরের নামাজে কুনূত পড়েন তবে আবূ হানীফা ও মুহাম্মাদ (রঃআঃ) এর মতে তার মুকতাদীরা নীরব থাকবে। আর আবূ ইউসুফ (রঃআঃ) বলেন, মুকতাদী ইমামের অনুসরণ করবে (অর্থাত্ কুনুত পড়বে)। কেননা, সে তার ইমামের অনুগত। আর ফজরে কুনূত পড়ার বিষয় ইজতিহাদ নির্ভর।
ইমাম আবূ হানীফা ও ইমাম আবূ ইউসুফ (রঃআঃ) এর যুক্তি এই যে, ফজরের কুনূত রহিত হয়ে গেছে। আর যা রহিত হয়ে গেছে, তা অনুসরণযোগ্য নয়।

তবে কথিত আছে যে, সে দাড়িয়ে থাকবে। যেন যে বিষয়ে ইমামের অনুসরণ আবশ্যক, সে বিষয়ে যথাসম্ভব ইমামের অনুসরণ বজায় থাকে।
অন্য মতে মতভিন্নতা সাব্যস্ত করার জন্য বসা অবস্থায় থাকবে। কেননা নীরবতা অবলম্বনকারী আহবানকারীর সাথে শরীক বলেই গণ্য হয়ে থাকে। তবে প্রথম মতটি অধিক যুক্তিযুক্ত।
এই মাসআলাটি শাফিঈ মাযহাব অনুসারীদের পিছনে ইকতিদার বৈধতা এবং বিতরে কুনূত পড়ার ক্ষেত্রে অনুসরণের বৈধতা প্রমাণ করে।

মুকতাদী যদি ইমামের পক্ষ থেকে এমন কিছু দেখিতে পায়, যাতে সে ইমামের নামাজ ফাসিদ মনে করে; যেমন, রক্ত যোক্ষণ করানো, ইত্যাদি তাহলে তার পিছনে ইকতিদা করা জাইয নয়।
কুনূতের ক্ষেত্রে পছন্দনীয় হলো নীরবে পড়া, কেননা এটা দুআ। ( বিতর নামাজের মাসআলা )


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply