নামাজ ভঙ্গের কারণ ও মাকরুহ হবার মাসায়েল
নামাজ ভঙ্গের কারণ ও মাকরুহ হবার মাসায়েল >> আল হিদায়া ফিকহ এর মুল সুচিপত্র দেখুন
কিতাবঃ আল হিদায়া, সপ্তম অনুচ্ছেদ : যা নামাজকে ভংগ করে এবং যা নামাজকে মাকরুহ করে
যে ব্যক্তি ইচ্ছা করে বা ভুলে নামাজের মধ্যে কথা বলে, তার নামাজ বাতিল হয়ে যাবে। বিচ্যুতি বা ভুলবশতঃ কথা বলার ক্ষেত্রে ইমাম শাফিঈ (রঃআঃ) ভিন্নমত পোষণ করেন। তার দলিল হলো সেই প্রসিদ্ধ হাদিসটি।
আমাদের দলিল এই যে, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেন,
আমাদের এ নামাজ কোন মানুষের কথাবার্তার উপযোগী নয়। নামাজতো তাসবীহ, তাহলীল ও কুরআন পাঠ ছাড়া অন্য কিছু নয়। ( নামাজ ভঙ্গের কারণ )
ইমাম শাফিঈ (রঃআঃ) বর্ণীত হাদিসটি গুনাহ্ রহিত হওয়ার উপর প্রযোজ্য। ভুলে সালাম করার বিষয়টি ব্যতিক্রম। কেননা, এটা ‘যিকির এর মধ্যে গণ্য। সুতরাং ভুলের অবস্থায় একে যিকির ধরা হবে এবং স্বেচ্ছায় বললে কথা ধরা হবে। কেননা এতে সম্বোধনের কাপ সর্বনা্ম রহিয়াছে।
যদি নামাজের মধ্যে কাতরায় কিংবা উহ্-আহ শব্দ করে বা শব্দ করে কাদে, এগুলো যদি জান্নাত-জাহান্নামের স্মরণের কারণে হয়ে থাকে তবে নামাজ নষ্ট হবে না। কেননা, এতে অধিক ‘খুশুখুযু প্রমাণিত হয়।
আর যদি ব্যাথা বা কোন বিপদের কারণে হয়, তবে নামাজ ভংগ হয়ে যাবে। কেননা তাতে অস্থিরতা ও আক্ষেপ প্রকাশ পায়। সুতরাং তা মানুষের কথার অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাবে।
আবূ ইউসুফ (রঃআঃ) হতে বর্ণীত আছে যে, আহ্ শব্দটি উভয় অবস্থায় নামাজ নষ্ট করবে না। আর ‘আওয়াহ শব্দটি নষ্ট করবে।
কেউ কেউ বলেছেন, আবূ ইউসুফ (রঃআঃ) এর মূল বক্তব্য এই যে, উচ্চারিত শব্দ যদি দুই হরফ বিশিষ্ট হয় আর উভয় হরফ কিংবা একটি যদি (আরবী ব্যকরণ মতে) অতিরিক্ত হরফ সমষ্টির অন্তর্ভূক্ত হয় তাহলে নামাজ ফাসিদ হবে না। আর উভয়টি যদি মূল হরফ সমষ্টির অন্তর্ভূক্ত হয় তবে ফাসিদ হয়ে যাবে। আর অতিরিক্ত হরফ সমষ্টির অন্তর্ভূক্ত ফকীহগণ বাক্যে একত্র করেছেন। এ বক্তব্য সবল নয়। কেননা প্রচলিত অর্থে মানুষের কথা বর্ণোচ্চারণ ও অর্থ বুঝানোর অনুগামী। আর তা এমন ধ্বনির ক্ষেত্রেও সাব্যস্ত হতে পারে, যার সব কটি বর্ণ ‘অতিরিক্ত বর্ণসমষ্টির অন্তর্ভূক্ত।
যদি বিনা ওযরে গলা খাকারি দেয়, অর্থাত্ অনন্যোপায় অবস্থায় হয়নি, আর তার ফলে বর্ণসমূহ সৃষ্টি হয়, তাহলে ইমাম আবূ হানীফা ও মুহাম্মাদ (রঃআঃ) এর মতে নামাজ ফাসিদ হওয়াই যুক্তিযুক্ত। আর যদি ওযরের কারণে হয় তবে তা মাফ। যেমন হাচিঁ ও ঢেকুর; যখন এতে হরফ প্রকাশিত হয়।
কেউ হাচি দিলো আর অন্যজন নামাজের মধ্যেই তাকে ইয়ার হামুকাল্লাহ্ বলে ফেললো তবে তার নামাজ ফাসিদ হয়ে যাবে। কেননা, এটি ব্যবহৃত হয় মানুষের পরস্পর সম্বোধনের ক্ষেত্রে। সুতরাং কাজের কথার মধ্যে গণ্য হবে। পক্ষান্তরে হাচিদাতা অথবা শ্রোতা যদি আল হামদুলিল্লাহ্ বলে তবে নামাজ ফাসিদ হবে বলেই ফকীহদের মত। কেননা, এটা জবাব হিসাবে প্রচলিত নয়। ( নামাজ ভঙ্গের কারণ )
আর যদি কিরাত পাঠকারী ব্যক্তি আটকা পড়ে লোকমা চায় আর অন্য ব্যক্তি নামাজে থেকেই তাকে লোকমা দিয়ে তবে তার নামাজ ফাসিদ হয়ে যাবে।
এর মূল অর্থ হল মুসল্লি নিজে ইমাম ছাড়া অন্য কাউকে বলে দেয়। কেননা, এরূপ করা শিক্ষাদান ও শিক্ষা গ্রহণের অন্তর্ভূক্ত। তা মানুষের কথার মধ্যে গণ্য হবে। তবে মাবসূত কিতাবে একাধিকবার করার শর্ত আরোপ করা হইয়াছে। কেননা এটা নামাজের আমলসমূহের অন্তর্ভূক্ত নয়। কাজেই অল্প মাফ হবে। কিন্তু ‘জামেউস সাগীর কিতাবে এ শর্ত আরোপ করা হয়নি। কেননা, স্বয়ং মানুষের কথা অল্প হলেও্র তা নামাজ ভঙ্গকারী।
আর যদি নিজের ইমামের কিরাত বলে দেয় তবে তা ‘কথা রূপে গণ্য হবে না, সূক্ষ কিয়াসের দৃষ্টিতে। কেননা মুক্তাদী নিজের নামাজ সংশোধন করিতে বাধ্য। সুতরাং এরূপ বলে দেয়া প্রকৃতপক্ষে তার নামাজের আমল হিসাবে গণ্য হবে। অবশ্য ইমামের কিরাত বলে দেওয়ারই নিয়্যত করবে। নিজে পাঠ করার নিয়্যত করবে না। এটাই বিশুদ্ধ মত। কেননা, তাকে বলে দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হইয়াছে, কিরাত পাঠের অনুমতি দেওয়া হয়নি।
আর যদি ইমাম অন্য আয়াতের দিকে প্রত্যাবর্তন করে, তবে লোকমাদাতার নামাজ ফাসিদ হয়ে যাবে। এবং ইমামের নামাজও ফাসিদ হয়ে যাবে, যদি সে তার লোকমা গ্রহণ করে। কেননা, এখানে বিনা প্রয়োজনে পাঠদান ও পাঠ গ্রহণ সংঘটিত হলো। আর মুক্তাদীর উচিত নয় বলে দেওয়ার ব্যাপারে জলদি করা। আবার ইমামেরও উচিত নয় মুক্তাদীদের বলে দেওয়ার জন্য বাধ্য করা। বরং তার কর্তব্য রুকুর সময় হয়ে গেলে রুকুতে চলে যাবেন কিংবা অন্য আয়াতের দিকে প্রত্যাবর্তন করবেন।
যদি নামাজের মধ্যে কারো উত্তরে লা ইলাহা ইলল্লালাহ বলে, তবে ইমাম আবূ হানীফা ও মুহাম্মাদ (রঃআঃ) এর মতে তা নামাজ ফাসিদকারী কালাম বলে গণ্য হবে। কিন্তু আবূ ইউসুফ (রঃআঃ) বলেন, এটা নামাজ ফাসিদকারী হবে না।
এই মতভিন্নতা তখনই, যখন এই বাক্য দ্বারা উত্তর দেয়ার নিয়্যত করবে।
ইমাম আবূ ইউসূফের দলিল এই যে, এ বাক্যটি আল্লাহর প্রশংসা অর্থেই গঠিত। সুতরাং তার নিয়্যতের কারণে তা পরিবর্তিত হবে না। ইমাম আবূ হানীফা ও ইমাম মুহাম্মাদ (রঃআঃ) এর দলিল এই যে, বাক্যটি উত্তরের ক্ষেত্রে প্রয়োগ হইয়াছে। আর উত্তর হওয়ার উপযোগিতা বাক্যটির মধ্যে আছে। সুতরাং একে উত্তর রূপেই গ্রহণ করা হবে। যেমন, হাচির উত্তর (ইয়ারহামুকাল্লাহ)। আর ইন্না লিল্লাহির বিষয়টিও বিশুদ্ধ মতে বিরোধপূর্ণ। ( নামাজ ভঙ্গের কারণ )
যদি সে এ দ্বারা একথা জানানোর ইচ্ছা করে থাকে যে, সে নামাজ রহিয়াছে তাহলে সর্বসম্মতিক্রমেই তার নামাজ ফাসিদ হবে না।
কেননা রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেন- তোমাদের কেউ যদি নামাজে কোন ঘটনার সম্মুখীন হয়, তবে সে যেন তাসবীহ পড়ে।
যে ব্যক্তি যুহরের এক রাকাআত আদায় করল, তারপর আসর বা সাধারণ নফল শুরু করে দিলো, তাহলে তার যুহর ভংগ হয়ে গেলো। কেননা অন্য নামাজ শুরু করা সহিহ হইয়াছে। সুতরাং সে (বর্তমান নামাজে) যুহর থেকে বের হয়ে যাবে।
যদি যুহরের এক রাকাআত আদায়ের পর আবার যুহরই শুরু করে, তাহলে সেটা যুহরই হবে এবং ঐ রাকাআতই যথেষ্ট হবে। কেননা, যে নামাজে সে বিদ্যমান আছে, হুবহু সেটাকেই শুরু করার নিয়্যত করেছে। সুতরাং তার নিয়্যত বাতিল হবে এবং নিয়্যতকৃত নামাজ বহাল থাকবে।
ইমাম যদি কুরআন শরীফ দেখে পাঠ করে তবে ইমাম আবূ হানীফা (রঃআঃ) এর মতে তার নামাজ ফাসিদ হয়ে যাবে। আর ইমাম আবূ ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মাদ (রঃআঃ) এর মতে নামাজ পূর্ণ হয়ে গেছে। কেননা এখানে এক ইবাদতের সঙ্গে অন্য ইবাদত যুক্ত হইয়াছে মাত্র।
তবে তা মাকরূহ হবে। কেননা এটা কিতাবীদের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ কাজ।
ইমাম আবূ হানীফা (রঃআঃ) এর দলিল এই যে, কুরআন শরীফ বহন করা দেখা এবং পাতা উল্টানো, এগুলো আমলে কাছীর (বা বেশী মাত্রার কাজ)।
তাছাড়া এটা হচ্ছে কুরআন শরীফ থেকে পাঠ গ্রহণ। সুতরাং অন্য কারো কাছ থেকে পাঠ গ্রহণের মতো এটাও নামাজ ফাসিদকারী হবে।
দ্বিতীয় দলীলের আলোকে হাতে বহনকৃত ও কো
স্থানে রক্ষিত কুরআনের মাঝে কোন পার্থক্য নেই। কিন্তু প্রথম দলীলের আলোকে উভয়ের মাঝে পার্থক্য হবে।
যদি কোন লেখার দিকে দৃষ্টি দেয় আর বিষয়বস্তু (মুখে না পড়ে) বুঝে ফেলে, তবে বিশুদ্ধ বর্ণনা মতে সর্বসম্মতিক্রমেই তার নামাজ ফাসিদ হবে না।
পক্ষান্তরে যদি কসম করে থাকে যে, অমুকের চিঠি পড়বে না, তাহলে ইমাম মুহাম্মাদ (রঃআঃ) এর মতে শুধু বুঝার দ্বারাই কসম ভংগ হয়ে যাবে। কেননা সেখানে (উচ্চারণ পড়াটা নয় বরং) বুঝাই হলো উদ্দেশ্য। আর নামাজ ফাসিদ হয় আমলে কাছীর দ্বারা। আর তা এখানে পাওয়া যায়নি। ( নামাজ ভঙ্গের কারণ )
আর যদি মুসল্লীর সামনে দিয়ে কোন স্ত্রীলোক অতিক্রম করে,তবে নামাজ ভংগ হবে না। কেননা হুযূর (সাঃআঃ) বলেছেন- কোন কিছুর অতিক্রম নামাজ ভংগ করে না। তবে অতিক্রমকারী গুনাহগার হবে। কেননা রাস্রলুল্লাহ্ (সাঃআঃ) বলেছেন-
যদি মুসল্লীর সামনে দিয়ে অতিক্রমকারী জানতো যে, তার কত গুনাহ হবে, তাহলে সে চল্লিশ (দিন বা মাস বা বছর) পর্যন্ত দাড়িয়ে থাকতো।
কথিত মতে যদি সে মুসল্লীর সাজদার স্থান দিয়ে অতিক্রম করে এবং উভয়ের মাঝে কোন আড়ালে না থাকে, তদ্রুপ দোকানে (বা অন্য কোন উচু স্থানে) যদি নামাজ আদায় করে এবং অতিক্রমকারীর অংগসমূহ তার অংগের সোজাসুজি হয় তবে গুনাহগার হবে।
আর যে ব্যক্তি মরুভুমিতে (বা খোলা স্থানে) নামাজ আদায় করে তার জন্য উচিত নিজের সামনে একটি সুতরাহ্ গ্রহণ করা। কেননা রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেন- তোমাদের কেউ যখন মরুভুমিতে নামাজ আদায় করে, তখন সে যেন নিজের সামনে সুতরাহ্ গ্রহণ করে।
‘সুতরাহ্ এর পরিমাণ হলো একগজ বা তার বেশী। কেননা রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেন- তোমাদের কেউ যখন মরুভূমিতে নামাজ আদায় করে তখন সে কি নিজের সামনে হাউদার পিছনের কাঠের মতো কিছু একটা ধারণ করিতে পারে না?
বলা হইয়াছে যে, তা আংগুলের মত মোটা হওয়া দরকার। কেননা এর চাইতে সরু হলে দূর থেকে দৃষ্টিগোচর হবে না। ফলে উদ্দেশ্যও হাসিল হবে না।
‘সুতরাহ এর কাছাকাঠি দাড়াবে। কেননা রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেন- যে ব্যক্তি ‘সুতরাহ এর সামনে নামাজ আদায় করে, সে যেন ‘সুতরাহর নিকটবর্তী দাড়ায়।
‘সুতরাহ্ ডান ভ্রূ বা বাম ভ্রূ বরাবর স্থাপন করবে। হাদিসে এরূপই বর্ণীত হইয়াছে। ( নামাজ ভঙ্গের কারণ )
যদি অতিক্রমণের আশংকা না থাকে এবং রাস্তা সামনে রেখে না দাড়ায়, তবে সুতরাহ্ বাদ দেওয়ার কোন অসুবিধা নেই।
ইমামের সুতরাহ্ জামাআতের সুতরাহ্ বলে গণ্য হবে। কেননা, রাসূলু্ল্লাহ (সাঃআঃ) মক্কার ‘সমতল ভুমিতে লাঠি সামনে রেখে নামাজ আদায় করেছে; কিন্তু জামাআতের সামনে কোন সুতরাহ্ ছিল না।
(সুতরাহ্) মাটিতে গেড়ে রাখাই গ্রহণীয়, ফেলে রাখা বা মাটিতে দাগ টানা নয়। কেননা তা দ্বারা উদ্দেশ্য হাসিল হয় না।
যদি সামনে সুতরাহ্ না থাকে অথবা তার ও ‘সুতরাহ্র মাঝখান দিয়ে অতিক্রম করিতে চায়, তবে অতিক্রমকারীকে বাধা দিবে। কেননা, রাসূলুল্লা্হ্ (সাঃআঃ) বলেছেন- যতটা পারো বাধা দাও।
আর ইশারার মাধ্যমে বাধা দিবে। উম্মু সালামা (রাঃআঃ) এর দুই ‘সন্তান সম্পর্কে রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) এমনই করেছেন।
কিংবা তাসবীহ পড়ে রোধ করবে। প্রথম হলো ঐ হাদিস, যা ইতোপূর্বে আমরা বর্ণনা করেছি।
(ইশারা ও তাসবীহ) উভয়টি একত্র করা মাকরূহ হবে। কেননা (উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য) একটিই যথেষ্ট।
পরিচ্ছেদঃ নামাজের মাকরূহ
মুসল্লী নিজের কাপড় নিয়ে বা শরীর (এর কোন অংগ) নিয়ে (নামাজরত অবস্থায়) খেলা করা মাকরূহ। কেননা, রাসুলুল্লাহ্ (সাঃআঃ) বলেছেন- আল্লাহ তোমাদের জন্য তিনটি জিনিস মাকরূহ করেছেন, তন্মধ্যে তিনি নামাজরত অবস্থায় ক্রীড়া করার কথা উল্লেখ করেছেন।
নামাজের বাইরেও ক্রীড়া হারাম। সুতরাং নামাজের ভিতরে (তা হারাম হওয়া সম্পর্কে) তোমার ধারণা কি? আর পাথর কণা-সরাবে না। কেননা, এও এক ধরণের ক্রীড়া; অবশ্য যদি সাজদা দেওয়া সম্ভব না হয় তবে একবার মাত্র সমান করে নিবে। কেননা রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেন- হে আবূ যার! কেবল একবার (পরিষ্কার করিতে পারো) অন্যথায় ছেড়ে দাও।
তাছাড়া যেহেতু তাতে তার নামাজের সংশোধন রহিয়াছে।
আর আংগুল মটকাবে না। কেননা, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেন- নামাজরত অবস্থায় তুমি তোমার আংগুল মটকিয়ো না।
আর কোমরে হাত রাখবে না। কেননা, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) নামাজের মধ্যে কোমরে হাত রাখা নিষেধ করেছেন। এতে সুন্নাতসম্মত অবস্থা তরক করা হয়।
আর অন্যদিকে দৃষ্টিপাত করবে না। কেননা, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেন- মুসল্লী যদি জানত যে, কার সংগে কথোপকথন করছে, তাহলে সে অন্যদিকে দৃষ্টিপাত করতো না।
যদি মুসল্লি ঘাড় বাকা না করে চোখের কোণ দিয়ে ডানে, বামে তাকায়, তবে তা মাকরূহ হবে না। কেননা, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) নামাজে থেকে চোখের কোণ দিয়ে তার সাহাবীদের দিকে তাকাতেন। আর হাটু তুলে বসবে না এবং (সাজদার সময়) ডানা ভুমিতে বিছিয়ে রাখবে না। কেননা আবূ যার (রাঃআঃ) বলেছেন-
আমার হাবীব আমাকে তিনটি কাজ নিষেধ করেছেন। মোরগের মত ঠোকর দেওয়া, কুকুরের মত বসা এবং শৃগালের মত ডানা বিছিয়ে দেওয়া।
আবূ যার (রাঃআঃ) বর্ণীত এর অর্থ উভয় নিতম্ব মাটিতে রেখে উভয় হাটু খাড়া করে রাখা। এ-ই বিশুদ্ধ ব্যাখ্যা।
আর মুখে সালামের জবাব দিবে না। কেননা তা কথা বলা; এবং হাতেও না। কেননা, এ-ও পরোক্ষভাবে সালাম। এমন কি কেউ যদি সালামের নিয়্যতে মুছাফাহা করে, তবে তার নামাজ ফাসিদ হয়ে যাবে।
কোন ওযর ছাড়া আসন করে বসবে না। কেননা, তাতে বসার সুন্নাত তরক হয়।
আর চুল ঝুটি করবে না। ঝুটি করা মানে চুলগুলো মাথার উপরে একত্র করে সুতা দিয়ে কিংবা রাবার দিয়ে বাধা, যাতে চুল স্থির থাকে। কেননা,রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) চুল ঝুটি করা অবস্থায় নামাজ আদায় করিতে নিষেধ করেছেন।
আর কাপড় গুটাবে না। কেননা, এটা এক ধরনের অহংকার।
আর কাপড় ঝুলিয়ে দেবে না। কেননা, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) কাপড় ঝুলিয়ে রাখতে নিষেধ করেছেন। সাদল অর্থ মাথায় ও কাধে কাপড় রেখে প্রান্তগুলো দুদিকে ঝুলিয়ে দেওয়া।
আর পানাহার করবে না। কেননা এটা নামাজভূক্ত কাজ নয়।
যদি ইচ্ছাকৃতভাবে বা ভুলে পানাহার করে তবে তার নামাজ ফাসিদ হয়ে যাবে। কেননা এটা আমলে কাছীর (বা অতিমাত্রার কাজ) আর নামাজের অবস্থা হলো স্মরণ করিয়ে দেওয়ার অবস্থা।
ইমামের দাড়ানোর স্থান মসজিদে আর সাজদার স্থান মেহরাবে হওয়াতে অসুবিধা নেই। তবে মেহরাবে দাড়ানো মাকরূহ। কেননা, এটা ইমামের জন্য আলাদা স্থান নির্ধারণের দিক থেকে আহলে কিতাবের আচরণ সদৃশ। তবে (পদদ্বয় মসজিদে থাকে অবস্থায়) মেহরাবে সাজদা দেওয়ার বিষয়টি আলাদা।
ইমামের একা উচু স্থানে দাড়ানো মাকরূহ। কারণ হলো, যা আমরা বলে এসেছি।
তদ্রুপ জাহিরী বর্ণনা মুতাবিক (বিপরীত অবস্থাটিও) মাকরূহ হবে। কেননা, এতে ইমামের প্রতি অবজ্ঞা করা হয়।
বসা, আলাপরত কোন মানুষের পিঠ সামনে রেখে নামাজ আদায়ে কোন অসুবিধা নেই। কেননা, ইবন উমর (রাঃআঃ) কোন কোন সফরে (আপন আযাদকৃত দাস) ‘নাফিকে সুতরাহ বানিয়ে নামাজ আদায় করিতেন।
সামনে ঝুলন্ত কুরআন শরীফ বা ঝুলন্ত তলোয়ার রেখে নামাজ আদায়ে কোন অসুবিধা নেই। কেননা, এ দুটো ইবাদতযোগ্য বস্তু নয়। আর সে হিসাবেই মাকরূহ হওয়া সাব্যস্ত হয়।
ছবি সম্বলিত বিছানায় নামাজ আদায়ে অসুবিধা নেই। কেননা, এতে ছবিকে তুচ্ছই করা হয়।
আর ছবিগুলোর উপর সাজদা করবে না। কেননা, এটা ছবি পূজার সদৃশ। মাবসূত কিতাবে (মাকরূহ হওয়ার বিষয়টি) নিঃশর্ত করা হইয়াছে। কেননা, অন্যান্য বিছানার মুকাবিলায় মুছল্লাকে সম্মানের দৃষ্টিতে দেখা হয়।
মাথার উপরে ছাদে কিংবা সামনে কিংবা বরাবরে ছবি থাকা কিংবা ঝুলন্ত ছবি রাখা মাকরূহ। কেননা (হযরত) জিবরাঈল কথিত হাদিসে রহিয়াছে- যে ঘরে কুকুর বা ছবি থাকে, সে ঘরে আমরা প্রবেশ করি না। ছবি যদি এতো ছোট হয়, মানুষের চোখে পড়ে না তবে মাকরূহ হবে না। কেননা খুব ছোট ছবি পূজ্য নয়।
আর মূর্তি যদি কর্তিত মস্তক হয়। অর্থাত্ যদি মাথা ফেলে দেওয়া হয় তবে তা মূর্তি নয়। কেননা, মস্তকহীন অবস্থায় মূর্তিপুজা করা হয় না। সুতরাং তা প্রদীপ বা মোমবাতি সামনে রেখে নামাজ আদায় করার মত হলো। যেমন, উলামায়ে কিরাম বলেছেন।
যদি মাটিতে পড়ে থাকা বালিশ কিংবা বিছিয়ে রাখা বিছানায় ছবি থাকে তবে তা মাকরূহ হবে না। কেননা এ অবস্থায় তো তা পায়ে মাড়ানো হয়। পক্ষান্তরে বালিশ খাড়া করে রাখা অবস্থায় কিংবা ঝুলন্ত পর্দায় ছবি থাকলে ভিন্ন হুকুম হবে। কেননা, এতে ছবির সম্মান প্রকাশ পায়। কঠিততম মাকরূহ হলো ছবি মুসল্লীর সামনে থাকা, অতঃপর মাথার উপরে থাকা এরপর ডান দিকে থাকা, এরপর বাম দিকে থাকা অতঃপর পিছন থাকা । আর যদি ছবিযুক্ত কাপড় পরিধান করে তবে মাকরূহ হবে।
কেননা, সে মূর্তি বহনকারীর সদৃশ হবে। তবে এ অবস্থার নামাজ শুদ্ধ হয়ে যাবে। কেননা, নামাজের যাবতীয় শর্ত পাওয়া গিয়েছে। তবে মাকরূহমুক্ত অবস্থায় তা দোহরাতে হবে। মাকরূহসহ আদায়কৃত সমস্ত নামাজের একই হুকুম।
তবে অপ্রাণীর ছবি মাকরূহ হবে না। কেননা সেগুলোর পূজা করা হয় না।
নামাজের মধ্যে সাপ ও বিচ্ছু হত্যা করায় কোন অসুবিধা নেই। কেননা রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেন- তোমরা দুই ‘কালো (সাপ ও বিচ্ছু) মেরে ফেলবে, এমন কি তোমরা যদি নামাজের মধ্যেও থাক।
তাছাড়া এদ্বারা নামাজে বিঘ্নকারী দূর করা হয়। সুতরাং তা সম্মুখ দিয়ে অতিক্রমকারীকে রোধ করার সমতুল্য।
সবরকম সাপেরই সমান হুকুম। এটাই সহিহ মত। কেননা বর্ণীত হাদিসটি নিঃশর্ত।
আর নামাজের মধ্যে যাতে আয়াত ও তসবীহ সংখ্যা তদ্রুপ সুরা গণনা করাও মাকরূহ হবে। কেননা তা নামাজের কার্যভুক্ত নয়।
ইমাম আবূ ইউসুফ ও মুহাম্মাদ (রঃআঃ) হতে বর্ণীত আছে যে, কিরাতের সুন্নাত পরিমাণ রক্ষা করার জন্য এবং হাদিসে যে সংখ্যা বর্ণীত আছে, তা রক্ষা করার জন্য গণনা করা মাকরূহ হবে না।
(উত্তরে) আমরা বলি, নামাজ শুরু করার আগেই তো তা গণনা করে নিতে পারে যাতে পরে গণনা করার প্রয়োজন না হয়। আল্লাহই উত্তম জানেন।
পরিচ্ছেদঃ পায়খানায় কিবলামুখী বসা
পায়খানায় লজ্জাস্থান কিবলামুখী করে বসা মাকরূহ। কেননা, নাবী করিম (সাঃআঃ) তা নিষেধ করেছেন। এক বর্ণনা মতে কিবলার দিকে পিছন দিয়ে বসা মাকরূহ। কেননা তাতে সম্মান তরক করা হয়। অন্য বর্ণনা মতে তা মাকরূহ হয় না। কেননা, যে ব্যক্তি (কিবলার দিকে) পিছন দিয়ে বসেছে, তার লজ্জাস্থান কেবলার দিকে নয়।
আর যে নাজাসাত তার থেকে বের হয়, তা ভূমির দিকে পড়ে। আর যে কিবলামূখী হয়ে বসে, তার লজ্জাস্থান কেবলামুখী হয়ে থাকে। আর তা থেকে যা নির্গত হয়, তা সে মুখী হয়ে মাটিতে পড়ে। ( নামাজ ভঙ্গের কারণ )
মসজিদের উপরে স্ত্রী সহবাস করা, পেশাব করা এবং নির্জনে মিলিত হওয়া মাকরূহ। কেননা মসজিদের ছাদ মসজিদের হুকুমভূক্ত। এইজন্য মসজিদে ছাদ থেকে ছাদের নীচে দাড়ানো ইমামের পিছনে ইকতিদা করা বৈধ। এবং ছাদে আরোহণের কারণে ইতিকাফ বাতিল হয় নি। এবং জানাবাতের অবস্থায় সেখানে অবস্থান করা জাইয নয়।
ঐ ঘরের উপরে পেশাব করায় কোন অসুবিধা নেই, যার নীচে মসজিদ রহিয়াছে।
মসজিদ দ্বারা বাড়ীর ঐ অংশকে বোঝানো হইয়াছে, যা নামাজের জন্য নির্ধারণ করা হইয়াছে। কেননা তা মসজিদের হুকুমের আওতায় পড়েনি। যদিও আমাদেরকে বাড়ীতে নামাজের জন্য নির্ধারিত স্থান রাখার আহবান জানানো হইয়াছে।
আর মসজিদের চুনকাম করা, শালকাঠ দ্বারা এবং স্বর্ণের পানি দ্বারা কারুকার্য করাতে কোন অসুবিধা নেই।
‘অসুবিধা নেই দ্বারা বোঝানো হইয়াছে যে, একাজে কোন সাওয়াব হবে না। তবে গুনাহও হবে না। কোন কোন মতে অবশ্য এটি সাওয়াবের কাজ। তবে এটি নিজস্ব তহবিল থেকে খরচ করার ক্ষেত্রে। পক্ষান্তরে মুতাওয়াল্লী ওয়াকফের মাল হতে ঐ সমস্ত কাজই শুধু করিতে পারেন, যা নির্মাণ সংশ্লিষ্ট; কারুকার্য সংশ্লিষ্ট নয়। যদি কিছু করেন তবে ব্যয়কৃত অর্থের দায় তাকেই বহন করিতে হবে। আল্লাহই উত্তম জানেন। ( নামাজ ভঙ্গের কারণ )
Leave a Reply