ইমামতির মাসায়েল আল হিদায়া ফিকাহ থেকে

ইমামতির মাসায়েল আল হিদায়া ফিকাহ থেকে

ইমামতির মাসায়েল আল হিদায়া ফিকাহ থেকে >> আল হিদায়া ফিকহ এর মুল সুচিপত্র দেখুন

কিতাবঃ আল হিদায়া, পঞ্চম অনুচ্ছেদ : ইমামত

জামাআত সুন্নাতে মুআক্কাদা। কেননা রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেন- জামাআত হিদায়াতের পরিচায়ক সুন্নাত, মুনাফিক ছাড়া কেউ তা থেকে পিছিয়ে থাকে না।

ইমামতির জন্য সর্বাধিক যোগ্য ব্যক্তি হলেন যিনি নামাজের মাসাইল সম্পর্কে অধিকতর জ্ঞানী। ইমাম আবূ ইউসুফ (রঃআঃ) হতে বর্ণীত, যিনি কিরাত সর্বোত্তম। কেননা নামাজে কিরাত অপরিহার্য। আর ইলমের প্রয়োজন হয় কোন ঘটনা দেখা দিলে। ( ইমামতির মাসায়েল )

এর উত্তরে আমরা বলি, একটি রুকন আদায়ে আমরা কিরাতের মুখাপেক্ষী আর সকল রুকন আদায়ে আমরা ইলমের মুখাপেক্ষী।
ইলমের (ক্ষেত্রে উপস্থিত) সকলে সমান হলে যিনি কিরাতে সর্বোত্তম। কেননা রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেন- আল্লাহর কিতাব পাঠে সর্বোত্তম ব্যক্তি কাওমের ইমাম হবে। যদি এতে সকলে বরাবর হয় তাহলে সুন্নাত সম্পর্কে সর্বাধিক জ্ঞানী ব্যক্তি (ইমাম হবে)।

উল্লেখ্য যে, সে যুগে কিতাবুল্লাহ্ পাঠে উত্তম ব্যক্তিই সর্বাধিক জ্ঞানীও হতেন। কেননা, তাঁরা আহকাম ও মাসায়েলসহ কুরআন শিক্ষা করিতেন। তাই হাদিসে কিতাবুল্লাহ্ পাঠে সর্বোত্তম ব্যক্তিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হইয়াছে। কিন্তু আমাদের যুগে অবস্থা সেরূপ নয়, তাই আমরা (দীনী ইলমে) সর্বাধিক জ্ঞানী ব্যক্তিকে অগ্রাধিকার দিয়েছি।
এ ক্ষেত্রে সকলে সমান হলে যিনি অধিকতর বয়োজ্যেষ্ঠ। কেননা নাবী (সাঃআঃ) আবূ মুলায়কার পুত্রদ্বয়কে বলেছিলেন- তোমাদের দুজনের মধ্যে যে বয়োজ্যেষ্ঠ সে-ই ইমামতি করে। তাছাড়া বয়োজ্যেষ্ঠকে আগে বাড়ালে জামাআতের সমাগম বর্ধিত হবে।

দাসকে (ইমামতির জন্য) আগে বাড়ানো মাকরূহ। কেননা শিক্ষালাভের জন্য (সাধারণতঃ) সে অবসর পায় না। এবং বেদুঈন (ও গ্রাম্য) কে। কেননা, মূর্খতাই তাহাদের মাঝে প্রবল এবং ফাসিককে। কেননা, সে দীনী বিষয়ে যত্নবান নয়। এবং অন্ধকে কেননা, সে পূর্ণরূপে নাপাকি থেকে বেচে থাকতে পারে না।
আর জারজ সন্তানকে। কেননা, তার পিতা (ও অভিভাবক)নেই, যে তার শিক্ষা-দীক্ষার ব্যবস্থা করবে। সুতরাং অজ্ঞতাই তার উপর প্রভাবিত হয়।

তাছাড়া এদের আগে বাড়ানোর কারণে জনগণের মধ্যে ঘৃণা সৃষ্টি হয়। সুতরাং তা মাকরূহ। তবে যদি তাহারা আগে বেড়ে যায় তাহলে নামাজ দুরুস্ত হবে। কেননা রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেন- তোমরা নামাজ আদায় কর যে কোন নেককার ও বদকারের পিছনে।

ইমাম মুক্তাদীদের নিয়ে নামাজ আদায় করিতে দীর্ঘ করবে না। কেননা রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেন-
যে ব্যক্তি কোন জামাআতের ইমামতি করে, সে যেন তাহাদের দুর্বলতম ব্যক্তির অবস্থা অনুযায়ী নামাজ আদায় করে। কেননা, তাহাদের মধ্যে রোগী, বৃদ্ধ ও প্রয়োজনগ্রস্ত ব্যক্তি থাকতে পারে।

স্ত্রী লোকদের এককভাবে জামাআত করা মাকরূহ। কেননা, তা একটি নিষিদ্ধ কাজে লিপ্ত হওয়া থেকে মুক্ত নয়। আর সেটা হলো কাতারের মাঝে ইমামের দাঁড়ানো। সুতরাং মাকরূহ হবে, যেমন উলঙ্গদের জামাআতের হুকুম।
তবে যদি তাহারা তা করে তাহলে ইমাম তাহাদের মাঝে দাড়াবে। কেননা, ‘আইশা (রাঃআঃ) অনুরূপ করেছেন।আর তার এই জামাআত অনুষ্ঠান ইসলামের প্রাথমিক অবস্থার সাথে সম্পর্কিত।
তাছাড়া এজন্য যে, আগে বেড়ে দাড়ানোতে অতিরিক্ত প্রকাশ ঘটে।

যে ব্যক্তি এক মুকতাদী নিয়ে নামাজ আদায় করবে, সে তাকে নিজের ডানপাশে দাঁড় করাবে। কেননা, ইবন ‘আব্বাস (রাঃআঃ) বর্ণীত হাদিসে আছে যে, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) তাকেঁ মুক্তাদী করে নামাজ আদায় করেছেন এবং তাকে নিজের ডান পাশে দাড় করিয়েছেন।
আর সে ইমামের পিছনে দাড়াবে না।

ইমাম মুহাম্মাদ (রঃআঃ) হতে বর্ণীত আছে যে, মু্ক্তাদী তার পায়ের আংগুল ইমামের গোড়ালি বরাবর রাখবে। তবে প্রথম মতই যাহিরে রিওয়ায়াতের।
অবশ্য যদি ইমামের পিছনে বা বামে দাড়িয়ে নামাজ আদায় করে তাহলে জাইয হবে।
তবে সুন্নাতের বিরোধিতার কারণে সে গুনাহগার হবে।

আর যদি দুই ব্যক্তির ইমামতি করেন, তাহলে তিনি তাহাদের আগে দাড়াবেন।
আর ইমাম আবূ ইউসুফ (রঃআঃ) হতে বর্ণীত যে, উভয়ের মধ্যখানে দাড়াবে। আর আবদুল্লাহ্ ইবন মাসঊদ (রাঃআঃ) এরূপ করেছেন বলে বর্ণীত আছে।
আমাদের দলিল এই যে, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) আনাস (রাঃআঃ) ও তার ইয়াতীম ভাইকে নিয়ে নামাজ আদায়ের সময় উভয়ের আগে দাড়িয়েছিলেন।

সুতরাং এ হাদিসের দ্বারা উত্তম প্রমাণিত হয়, আর সাহাবীর আমল দ্বারা এরূপ দাড়ানো মুবাহ প্রমাণিত হয়।
পুরুষদের জন্য কোন নারী বা নাবালেগের পিছনে ইকতিদা করা জাইয নয়। স্ত্রী লোকের পিছনে জাইয না হওয়ার কারণ এই যে, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন- আল্লাহ যেমন তাহাদের পিছনে রেখেছেন, তেমনি তোমরাও তাহাদের পিছনে রাখ।
সুতরাং তাহাদের (ইমামতির জন্য) আগে বাড়ানো জাইয নয়। আর নাবালেগের পিছনে জাইয না হওয়ার কারণ এই যে, সে নফল আদায়কারী। সুতরাং তার পিছনে ফরয আদায়কারীর ইকতিদা জাইয হবে না। তবে তাহারাবীহ ও ‘নিয়মিত সুন্নাত এর ক্ষেত্রে বালখ এর মাশায়েখগণ জাইয রেখেছেন আর আমাদের মাশায়েখগণ তা অনুমোদন করেননি।
আবার কারো কারো তাহকীক অনুযায়ী সাধারণ নফলের ক্ষেত্রে ইমাম আবূ ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মাদ (সাঃআঃ) এর মধ্যে মতপার্থক্য রহিয়াছে।

তবে গ্রহণযোগ্য মত এই যে, কোন নামাজেই তাহাদের (ইমামতি) জাইয নয়। কেননা, নাবালেগের নফল বালেগের নফলের চেয়ে নিম্নমানের। কেননা, ইজমায়ী মতানুসারে নামাজ ভংগ করার কারণে নাবালেগের উপর কাযা ধর্তব্য। আর দুর্বলের উপর প্রবলের ভিত্তি হতে পারে না। ‘ধারণা-ভিত্তিক নামাজ এর ব্যতিক্রম। কেননা, (ভঙ্গ হলে কাযা করিতে হবে কিনা) এতে মতভেদ রহিয়াছে। সুতরাং উদ্ভূত ধারণা (মুকতাদীর বেলায়) অস্তিত্বহীন বলে বিবেচিত। অবশ্য নাবালেগের পিছনে নাবালেগের ইকতিদার হুকুম ভিন্ন (অর্থাত্ জাইয) কেননা, উভয়ের নামাজ সমমানের।
প্রথমে পুরুষে কাতার করবে। তারপর নাবালেগ ও তারপর স্ত্রী লোকেরা। কেননা রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেন- তোমাদের প্রাপ্ত-বয়স্ক এবং জ্ঞানবানরা যেন আমার কাছাকাছি থাকে। আর যেহেতু নারী-পুরুষ এক সমানে দাড়ানো নামাজ ভংগকারী; সুতরাং তাহাদের পশ্চাদবর্তিণী রাখা হবে।

যদি স্ত্রীলোক পুরুষের পার্শে দাড়ায় আর উভয়ে একই নামাজে শরীক হয়, তাহলে পুরুষের নামাজ ফাসিদ হয়ে যাবে, যদি ইমাম স্ত্রী লোকের ইমামতির নিয়্যত করে থাকেন।
আর সাধারণ কিয়াসের চাহিদা হল নামাজ ফাসিদ না হওয়া। এবং এ-ই হল ইমাম শাফিঈ (রঃআঃ) এর মত। স্ত্রীলোকটির নামাজের উপর কিয়াস অনুযায়ী; যেহেতু তার নামাজ ফাসিদ হয় না।

আর সূক্ষ কিয়াসের কারণ হলো আমাদের বর্ণীত হাদিস, মশহূর শ্রেণীভূক্ত।
আর সেই হাদিসে পুরুষকেই সম্বোধন করা হইয়াছে, স্ত্রীলোককে নয়। সুতরাং পুরুষই হচ্ছে স্থানগত ফরয বর্জনকারী। সুতরাং তার নামাজই ফাসিদ হবে, স্ত্রী লোকটির নামাজ নয়। যেমন মুক্তাদী (এর নামাজ ফাসিদ হয়) ইমামের আগে দাড়ালে।

আর যদি ইমাম স্ত্রীলোকের ইমামতির নিয়্যত না করে থাকেন, তাহলে পুরুষটির নামাজের ক্ষতি হবে না; স্ত্রীলোকটির নামাজ দুরস্ত হবে না।
কেননা আমাদের মতে ইমামের নিয়্যত ছাড়া সে নামাজে শামিল হওয়া সাব্যস্ত হবে না। ইমাম যুফার (রঃআঃ) ভিন্নমত পোষণ করেন।
তুমি কি লক্ষ্য করছ না যে, স্থানের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা ইমামের কর্তব্য। সুতরাং তার দায়িত্ব গ্রহণের উপর বিষয়টি নির্ভর করবে। যেমন ইকতিদার ক্ষেত্রে (মুকতাদির জন্য ইমামের নিয়্যত করা জরুরী)। ( ইমামতির মাসায়েল )

তবে ইমামের নিয়্যত তখনই শর্ত হবে, যখন সে কোন পুরুষের পার্শ্বে ইকতিদা করে। পক্ষান্তরে যদি তার পাশে কোন পুরুষ না থাকে, তবে সে ক্ষেত্রে দুটি মত রহিয়াছে। উক্ত দুটি মতের একটির ক্ষেত্রে পার্থক্যের কারণ এই যে, প্রথম সুরতে তো নামাজ ফাসিদ হওয়া অনিবার্য। আর দ্বিতীয় সুরতে সম্ভাবনা যুক্ত।
নামাজ নষ্টকারী ‘এক সমানে দাড়ানো এর জন্য শর্ত হলো (উভয়ের) নামাজ অভিন্ন হওয়া এবং (রুকু-সাজদা বিশিষ্ট) সাধারণ নামাজ হওয়া। আর স্ত্রীলোকটি কামোত্তেজনাযোগ্য হওয়া এবং উভয়ের মাঝে কোন আড়াল না থাকা। কেননা, কিয়াস ও যুক্তির বিপরীতে শরীআতের বাণী দ্বারা নামাজ ফাসাদকারিণী প্রমাণিত হইয়াছে। সুতরাং বাণী সংশ্লিষ্ট সকল উপস্থিত থাকতে হবে।

স্ত্রী লোকদের জামাআতে হাযির হওয়া মাকরূহ। অর্থাত্ তাহাদের মধ্যে যারা যুবতী (তাহাদের জন্য এ হুকুম) কেননা তাতে ফতনার আশংকা রহিয়াছে। ( ইমামতির মাসায়েল )
বৃদ্ধাদের জন্য ফরয, মাগরিব ও ঈশার জামাআতের উদ্দেশ্য বের হওয়াতে অসুবিধা নেই।
এ হল ইমাম আবূ হানীফা (রঃআঃ) এর মত।

ইমাম আবূ ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মাদ (রঃআঃ) বলেন, সকল নামাজেই তাহারা বের হতে পারে। কেননা, আকর্ষণ না থাকায় ফিতনার আশংকা নেই। তাই মাকরূহ হবে না, যেমন ঈদের জামাআতে।
ইমাম আবূ হানীফা (রঃআঃ) এর দলিল হলো; প্রবৃত্তির (দুষ্কর্মে) উদ্বুদ্ধ করে থাকা। সুতরাং ফিতনা ঘটতে পারে। তবে যুহর, আসর ও জুমুআর সময় ফাসিকদের উপদ্রব থাকে। আর ফজর ও ‘ঈশার সময় (সাধারণতঃ) তাহারা ঘুমিয়ে থাকে এবং মাগরিবে পানাহারে মশগুল থাকে। আর (ঈদের) মাঠ প্রশস্ত হওয়ার কারণে পুরুষদের থেকে পাশ কেটে থাকা তাহাদের পক্ষে সম্ভব। তাই মাকরূহ হয় না।

ইমাম কুদূরী (রঃআঃ) বলেন, পবিত্র ব্যক্তি ‘মুস্তাহাযা এর শ্রেণীভুক্ত ব্যক্তির পিছনে নামাজ আদায় করবে না। সেরূপ পবিত্র স্ত্রীলোকও মুস্তাহাযা এর পিছনে নামাজ আদায় করবে না। কেননা সুস্থ ব্যক্তির (তাহারাতের) অবস্থা মাযূর ব্যক্তির চেয়ে উন্নততর। আর কোন কিছু তার চেয়ে উন্নত কিছুর দায়িত্ব বহন করিতে পারে না। আর ইমাম হচ্ছেন দায়িত্ব বহনকারী। অর্থাত্ মুক্তাদির নামাজ তার নামাজের আওতাভূক্ত।
কুরআন পাঠে সক্ষম ব্যক্তি উম্মী লোকের পিছনে এবং বস্ত্রধারী ব্যক্তি উলংগ ব্যক্তির পিছনে নামাজ আদায় করবে না। কেননা, তাহাদের দুজনের অবস্থা উন্নততর।

আর জাইয রহিয়াছে তায়াম্মুমকারীর জন্য উযূকারীদের ইমামতী করা। এ হল ইমাম আবূ হানীফা ও ইমাম আবূ ইউসুফ (রঃআঃ) এর মত। আর ইমাম মুহাম্মাদ (রঃআঃ) বলেন, জাইয হবে না। কেননা, তায়াম্মুম জরুরী অবস্থায় তাহারাত। আর পানি হল তাহারাতের মূল উপাদান। ( ইমামতির মাসায়েল )
ইমাম আবূ হানীফা ও আবূ ইউসুফ (রঃআঃ) এর দলিল এই যে, এটা (সাময়িক তাহারাত নয় বরং) সাধারণ তাহারাত। সুতরাং এ কারণেই তা প্রয়োজনের সাথে সীমিত থাকে না।

(মোজায়) মাসহকারী পা ধৌতকারীর ইমামতি করিতে পারে। কেননা, মোজা পায়ের পাতায় ‘হাদাছ এর অনুপ্রবেশে বাধা দেয়। আর মোজায় যে হাদাছ যুক্ত হয়, সেটাকে মাসহ দূর করে দেয়। মুস্তাহাযার বিষয়টি এর ব্যতিক্রম। কেননা বাস্তবে হাদাছ বিদ্যমান থাকা অবস্থায় শরীআত তা বিদূরিত হয়ে গেছে বলে গণ্য করে।
দাড়িয়ে নামাজ আদায়কারী বসে নামাজ আদায়কারীর পিছনে (ইকতিদা করে) নামাজ আদায় করিতে পারে।
ইমাম মুহাম্মাদ (রঃআঃ) বলেন, তা জাইয হবে না। কিয়াসের দাবী এ-ই। কেননা, দাড়িয়ে নামাজ আদায়কারীর অবস্থা উন্নততর।

আমরা হাদিসের কারণে কিয়াস বর্জন করেছি। কেননা, বর্ণীত আছে যে, নাবী (সাঃআঃ) তার শেষ নামাজ আদায় করেছেন আর লোকজন তার পিছনে দাড়িয়ে ছিলেন।
ইশারায় নামাজ আদায়কারী অনুরূপ ব্যক্তির পিছনে নামাজ আদায় করিতে পারে। কেননা, উভয়ের অবস্থা সমান। তবে যদি মুকতাদী বসে এবং ইমাম শুয়ে ইশার করে তবে তার পিছনে জাইয হবে না। কেননা, বসা শরীআতে স্বীকৃত। সুতরাং এর দ্বারা তা উন্নত হওয়া প্রমাণিত হয়।

রুকু-সাজদাকারী ব্যক্তি ইশারাকারী ব্যক্তির পিছনে নামাজ আদায় করবে না। কেননা, মুকতাদীর অবস্থা উন্নততর। এ সম্পর্কে ইমাম যুফার (রঃআঃ) ভিন্নমত পোষণ করেন।
ফরয আদায়কারী নফল আদায়কারী ভিন্ন ফরয আদায়কারী ব্যক্তির পিছনে নামাজ আদায় করবে না। কেননা, ইকতিদা অর্থ ভিত্তি করা, আর এখানে ইমামের ক্ষেত্রে ‘ফরয গুণটি নেই। সুতরাং যে গুণ নেই, তার উপর ভিত্তি স্থাপিত হবে না।
ইমাম কুদূরী বলেন এক ফরয আদায়কারী ভিন্ন ফরয আদায়কারী ব্যক্তির পিছনে নামাজ আদায় করবে না। কেননা, ইকতিদা হলো (একই তাহরীমায়) শামিল হওয়া এবং সামঞ্জস্য রক্ষা করা। সুতরাং (নামাজে) অভিন্নতা অপরিহার্য।
ইমাম শাফিঈ (রঃআঃ) এর মতে উপরোক্ত সকল ক্ষেত্রে ইকতিদা সহিহ। কেননা, তার মতে ইকতিদা হল সমন্বিত রূপে আদায় করা। আর আমাদের মতে দায়িত্বের অন্তর্ভুক্তির অর্থ বিবেচ্য।

নফল আদায়কারী ফরয আদায়কারীর পিছনে নামাজ আদায় করিতে পারে। কেননা, নফল আদায়কারীর জন্য শুধু মূল নামাজ থাকাই হল প্রয়োজন। আর ইমামের ক্ষেত্রে মূল নামাজ বিদ্যমান রহিয়াছে। সুতরাং এর উপর ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত হবে।
যে ব্যক্তি কোন ইমামের পিছনে ইকতিদা করলো তারপর জানতে পারলো যে, তার ইমাম হাদাছগ্রস্ত; তখন তাকে নামাজ দোহরাতে হবে। কেননা, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেন-
যে ব্যক্তি কোন জামাআতের ইমামতি করলো, তারপর প্রকাশ পেল যে, সে হাদাসগ্রস্ত অথবা জুনুবী, তখন সে নিজেও নামাজ দোহরাবে এবং মুকতাদিরাও দোহরাবে।

এ বিষয়ে ইমাম শাফিঈ (রঃআঃ) ভিন্নমত পোষণ করেন। পূর্ব বর্ণীত যুক্তির ভিত্তিতে। আর আমরা অন্তর্ভূক্তির মর্ম বিবেচনা করি। আর তা জাইয হওয়া ও ফাসিদ হওয়া উভয় ক্ষেত্রেই প্রয়োজ্য হবে।
কোন উম্মী ব্যক্তি যখন কুরআন পাঠে সক্ষম একদল লোক এবং উম্মী একদল লোকের ইমামতি করে, তখন ইমাম আবূ হানীফা (রঃআঃ)এর মতে সকলের ফাসিদ হয়ে যাবে। ( ইমামতির মাসায়েল )

ইমাম আবূ ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মাদ (রঃআঃ) বলেন, ইমামের নামাজ এবং যারা কুরআন পাঠে সক্ষম নয়, তাহাদের নামাজ পূর্ণাংগ হইয়াছে। কেননা, ইমাম নিজে মাযূর এবং তিনি একদল মাযূর লোকের ইমামতি করেছেন। সুতরাং এটি ঐ অবস্থার সদৃশ, যখন কোন উলংগ ব্যক্তি একদল উলংগ ও একদল বস্ত্রধারীর ইমামতি করেন।
ইমাম আবূ হানীফা (রঃআঃ) এর দলিল এই যে, ইমাম কিরাতের উপর সক্ষমতা সত্ত্বেও কিরাতের ফরয তরক করেছে। সুতরাং তার নামাজ ফাসিদ হবে। সক্ষমতার কারণ এই যে, সে যদি কারীর পিছনে ইকতিদা করতো তাহলে কারীর কিরাত তার কিরাত হতো। আর ঐ মাসআলাটি এবং এর অনুরূপ মাসআলার হুকুম ভিন্ন। কেননা, ইমামের ক্ষেত্রে যা বিদ্যমান, তা মুকতাদীর ক্ষেত্রে বিদ্যমান রূপে গণ্য হবে না।

যদি উম্মী ও কারী একা একা নামাজ আদায় করে, তাহলে তা জাইয হবে।
এই বিশুদ্ধমত। কেননা,তাহাদের উভয় থেকে জামাআতের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ পায়নি।
ইমাম যদি প্রথম দুই রাকাআতে কিরাত পাঠ করে, অতঃপর শেষ দুই রাকাআতে কোন উম্মীকে (নায়িব হিসাবে) আগে বাড়িয়ে দেয়, তাহলে সকলের নামাজ ফাসিদ হয়ে যাবে।

ইমাম যুফার (রঃআঃ) বলেন, নামাজ ফাসিদ হবে না। কেননা, কিরাতের ফরয আদায় হয়ে গেছে।
আমাদের দলিল এই যে, প্রতিটি রাকাআতই নামাজ। সুতরাং তা কিরাত থেকে খালি হতে পারে না। বাস্তবে হোক কিংবা গণ্য করা হিসাবে হোক। আর উম্মীর ক্ষেত্রে যোগ্যতা না থাকার কারণে কিরাতকে বিদ্যমান গণ্য করার অবকাশ নেই। উক্ত দলীলের ভিত্তিতে অনুরূপ মতপার্থক্য রহিয়াছে। তাশাহুদের সময় তাকে আগে বাড়ালেও। সঠিক বিষয় আল্লাহই অধিক জানেন। ( ইমামতির মাসায়েল )


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply