আযানের মাসায়েল সমূহ- ইকামাত আযানের মতো

আযানের মাসায়েল সমূহ- ইকামাত আযানের মতো

আযানের মাসায়েল সমূহ- ইকামাত আযানের মতো >> আল হিদায়া ফিকহ এর মুল সুচিপত্র দেখুন

কিতাবঃ আল হিদায়া, দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ : আযান ( আযানের মাসায়েল )

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ও জুমুআর জন্য আযান সুন্নাত, অন্য কোন নামাজের জন্য নয়। এ বিধান মুতাওয়াতির (অর্থাত্ সুপ্রচুর সংখ্যক ধারাবাহিক ও নিশ্চিত সূত্রে প্রাপ্ত) হাদিসের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত।
আযানের বিবরণ সুপরিচিত। অর্থাত্ আসমান থেকে অবতরণকারী ফেরেশতা যেভাবে আযান দিয়েছিলেন এবং তাতে (কালিমা-ই-শাহাদাতের পুনঃ উচ্চারণ নেই) অর্থ উভয় কালিমা-ই-শাহাদাতকে (প্রথমে দুবার করে) অপেক্ষাকৃত মৃদুস্বরে উচ্চারণ করার পর উচ্চস্বরে (দুবার করে) পুনঃ উচ্চারণ করা।

ইমাম শাফিঈ (রঃআঃ) বলেন, আযান রহিয়াছে। আমাদের যক্তি এই যে, মশহূর হাদিসগুলোতে নেই।
ইমাম শাফিঈ (রঃআঃ) যে হাদিস বর্ণনা করেন, তা ছিলো (কালিমা-ই-শাহাদাত) শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে। সেটাকেই তিনি ধারণা করেছেন।

ফজরের আযানে এর পরে দুবার যোগ করবে। কেননা (রাঃআঃ) একবার যখন রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) কে ঘুমন্ত অবস্থায় পেয়েছিলেন, তখন বলেছিলেন। তখন নাবী করীম (সাঃআঃ) বলেছিলেন- হে বিল্লাল, কতনা সুন্দর কথা এটা! একে তোমার আযানের অন্তর্ভূক্ত করে নাও। এর সাথে ফজরের আযানকে বিশিষ্ট করার কারণ এই যে, এটা ঘুম ও গাফলতের সময়।
ইকামাত আযানের মতো। তবে তাতে এর পরে দুবার যোগ করবে। আসমান থেকে অবতীর্ণ ফেরেশতা এমনই করেছিলেন, এবং এ-ই মশহূর বর্ণনা (আবূ দাউদ)।

এ হাদিস ইমাম শাফিঈ (রঃআঃ) এর বিপক্ষে দলিল। কেননা, তিনি বলেন, ইকামাত হচ্ছে এক এক শব্দবিশিষ্ট।
আযান ধীর লয়ে থেমে থেমে উচ্চারণ করবে। আর ইকামাত না থেমে দ্রুতলয়ে উচ্চারণ করবে। কেননা রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেন- যখন আযান দেবে, তখন ধীরলয়ে দেবে। আর যখন ইকামাত বলিবে, তখন দ্রুতলয়ে বলিবে। এ হলো মুস্তাহাবের বর্ণনা। আযান ও ইকামাত উভয়ই কেবলামুখী হয়ে দেবে। কেননা, আসমান থেকে অবতীর্ণ ফেরেশতা কিবলামুখী হয়ে আযান দিয়েছিলেন। তবে কেবলামুখী না হয়ে আযান দিলেও মূল উদ্দেশ্য হাছিল হওয়ার কারণে তা জাইয হবে; তবে সুন্নতের বিরোধিতা করার কারণে তা মাকরূহ হবে।

এবং হাইয়া আলাহ্ সালাহ্, হাইয়া আলাহ্ সালাহ্ বলার সময় মুখমণ্ডল যথাক্রমে ডানে ও বামে ফেরাবে। কেননা তা লোকদের উদ্দেশ্য সম্বোধন। সুতরাং তাহাদের দিকে মুখ করেই তাহাদের সম্বোধন করবে।
আর যদি আযানখানায় প্রদক্ষিণ করে, তবে তা উত্তম। একথার উদ্দেশ্য হলো মিনারা প্রশস্ত হওয়ার কারণে যদি সুন্নাত মুতাবিক পদদ্বয় স্বস্থানে রেখে মুখমণ্ডল ডানে ও বামে ফেরাতে না পারে। কিন্তু বিনা প্রয়োজনে তা করবে না।
মুআযযিনের জন্য উত্তম হলো তার উভয়কানের দুই আংগুল স্থাপন করা। রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বিলাল (রাঃআঃ) কে এমনই নির্দেশ দিয়েছিলেন। তাছাড়া ঘোষণা প্রচারের ক্ষেত্রে এটা অধিক কার্যকর। আর যদি তা না করে তাহলেও ভালো। কেননা এটা মূলত, সুন্নাত নয়।

ফজরে আযান ও ইকামাতের মধ্যবর্তী সময়ে দুবার হাইয়া আলাস সালাহ্ হাইয়া আলাস সালাহ্ বলে তাসবীব (বা পুনঃ ঘোষনা দান) উত্তম। কেননা এটা ঘুম ও গাফলাতের সময়। অন্যান্য নামাযে তা মাকরূহ।
পুনঃ ঘোষনা দান। এবং তা লোকদের মধ্যে প্রচলিত পন্থায় করিতে হবে। এই তাছবীবের প্রথাটি কূফার আলিমগণ মানুষের অবস্থার পরিবর্তনের কারণে সাহাবা যুগের পর আবিষ্কার করেছেন। এবং উপরোল্লেখিত কারণে এটাকে ফজরের সাথেই খাস করেছেন। তবে পরবর্তী আলিমগণ দীনের সকল বিষয়ে শৈথিল্য দেখা দেওয়ায় সকল নামাজেই তাছবীব উত্তম মনে করেছেন। ইমাম আবূ ইউসুফ বলেন, মুআযযিন প্রত্যেক নামাজের সময় আমীর ও শাসককে উদ্দেশ্য করে একথা বলায় কোন দোষ নেই- হে আমীর! আসসালামু আলায়কুম নামাজে আসুন, আল্লাহ আপনাকে রহম করুন।

ইমাম মুহাম্মাদ (রঃআঃ) এ মত গ্রহণযোগ্য মনে করেননি। কেননা জামাআতের ব্যাপারে সকল মানুষ সমাণ। অবশ্য ইমাম আবূ ইউসুফ (রঃআঃ) মুসলমানদের বিষয়াদিতে অধিক ব্যস্ততার কারণে তাহাদের এ ব্যাপারে বিশিষ্ট করেছেন, যেন তাহাদের জামাআত ফউত না হয়ে যায়। এ ব্যাপারে কাযীদের জন্য একই হুকুম।

মাগরিব ছাড়া অন্য সময় আযান ও ইকামাতের মাঝে কিছু সময় অপেক্ষা করবে। এ হল ইমাম আবূ হানীফা (রঃআঃ) এর মত। ইমামদ্বয় বলেন, মাগরিবের সময়ও স্বল্পক্ষণ অপেক্ষা করবে। কেননা আযান ও ইকামাতে ব্যবধান করা আবশ্যক আর উভয়কে মিলিয়ে দেওয়া মাকরূহ। আর স্বর-বিরতি ব্যবধান বলে গণ্য হবে না। কেননা তা তো আযানের বাক্যগুলোর মাঝেও বিদ্যমান। সুতরাং স্বল্পক্ষণ বসা দ্বারা ব্যবধান করিতে হবে। যেমন দুই খুতবার মাঝে হয়ে থাকে।

ইমাম আবূ হানীফা (রঃআঃ) এর দলিল হলো; (মাগরিবে) বিলম্ব মাকরূহ। সুতরাং তা পরিহার করার জন্য নূন্যতম ব্যবধানই যথেষ্ট হবে। আর আামাদের আলোচ্য মাসআলাতে স্থানও ভিন্ন এবং স্বরও ভিন্ন। সুতরাং স্বল্প বিরতি দ্বারাই ব্যবধান গণ্য হবে। পক্ষান্তরে খুতবা সেরূপ নয়।

ইমাম শাফিঈ (রঃআঃ) অন্যান্য নামাজের উপর কিয়াস করে বলেন, দুই রাকাআতে নফলের মাধ্যমে ব্যবধান করবে। (অন্য নামাজ থেকে মাগরিবের পার্থক্য আামরা পূর্বে উল্লেখ করেছি)।
ইমাম ইয়াকুব (আবূ ইউসুফ (রঃআঃ)) বলেন, ইমাম আবূ হানীফা (রঃআঃ)কে আযান ও ইকামাত দিতে দেখেছি। তিনি আযান ও ইকামাতের মাঝে বসতেন না। আমরা যা বলেছি এটি তার সমর্থন করে। আর এতে এ-ও প্রমাণিত হয় যে, মুআযযিনের শরীআত সংক্রান্ত বিষয়ে আলিম হওয়া মুস্তাহাব। কেননা রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেন- তোমাদের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি তোমাদের জন্য আযান দিবে।

কাযা নামাজের জন্য আযান ও ইকামাত দিবে। কেননা রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) সফর শেষে রাত্রে ঘুমিয়ে পড়ার কারণে পরবর্তী সকাল আযান ও ইকামাত দিয়ে ফজরের নামাজ কাযা করেছেন।
শুধু ইকামতকে যথেষ্ট মনে করার ব্যাপারে এ হাদিস ইমাম শাফিঈ (রঃআঃ) এর বিপক্ষে দলিল।

যদি কয়েক ওয়াক্ত নামাজ কাযা হয়ে থাকে, তাহলে প্রথম নামাজের জন্য আযান দিবে ও ইকামাত বলিবে। আমাদের পূর্ব বর্ণীত হাদিসটির কারণে অবশিষ্টগুলোর ক্ষেত্রে তার ইখতিয়ার রহিয়াছে। ইচ্ছা করিলে আযান ও ইকামাত দিবে, যাতে কাযা নামাজ আদায় নামাজের অনুরূপ হয়। আর ইচ্ছা করিলে শুধু করিলে ইকামাতের উপর নির্ভর করবে। কেননা আযান দেয়া হয় উপস্থিত করার জন্য। আর তাহারা তো উপস্থিত আছেই।

হিদায়া গ্রন্থকার বলেন, ইমাম মুহাম্মাদ (রঃআঃ) হতে বর্ণীত আছে যে, পরবর্তী নামাজসমূহের জন্য শুধু ইকামাতই দেওয়া হবে। মাশায়েখগণও বলেন, হতে পারে যে এটি তাদেঁর (ইমাম আবূ হানীফা, আবূ ইউসুফ ও মুহাম্মাদ র.) এর সর্বসম্মত মত।
পবিত্র অবস্থায় আযান ও ইকামাত দেয়া উচিত। তবে উযূ ছাড়া আযান দিলে জাইয। কেননা এটা (আল্লাহর) যিকির, নামায নয়। সুতরাং তাতে উযূ মুস্তাহাব মাত্র। যেমন কুরআন তিলাওয়াতের ক্ষেত্রে।

উযূ ছাড়া ইকামাত বলা মাকরূহ। কেননা তাতে ইকামাত ও নামাজের মাঝে ব্যবধান সৃষ্টি হয়। অবশ্য বর্ণীত আছে যে, ইকামাতও মাকরূহ হবে না। কেননা এটা তো দুই আযানের অন্যতম। আরেক বর্ণনা মতে আযানও (উযূ ছাড়া) মাকরূহ হবে। কেননা সে এমন বিষয়ের প্রতি আহবান জানাচ্ছে, যার প্রতি সে নিজেই সাড়া দেয়নি।

জুনুবী অবস্থায় আযান দেওয়া মাকরূহ। এ সম্পর্কে একটি মাত্র বর্ণনাই আছে। মুহদিছের আযান সম্পর্কীয় দুইটি রিওয়ায়াতের মধ্যে মাকরূহ না হওয়ার রিওয়ায়াতটির মাসআলার সাথে পার্থক্য এই যে, নামাজের সাথে আযানের সাদৃশ্য রহিয়াছে। সুতরাং উভয় সাদৃশ্যের উপর আমল হিসাবে দুই হাদিসের যেটি সবচাইতে কঠোর, তা থেকে পবিত্রতা অর্জনের শর্ত আরোপ করা হবে, জুনুবীর জন্য নয়।

গ্রন্থে রহিয়াছে, উযূ ছাড়া আযান এবং একামাত দিলে তা দোহরাতের হবে না। আর জানাবাতের বেলায় দোহরানোই আমার কাছে অধিক প্রিয়। তবে না দোহরালেও চলে। প্রথমটির কারন হাদাছের লঘুতা, আর দ্বিতীয়টির অর্থাত্ জানাবাতের কারণে দোহরানোর ব্যাপারে দুটি বর্ণনা রহিয়াছে। তবে অধিকতর যুক্তিপূর্ণ এটি যে, আযান দোহরানো উচিত, কিন্তু ইকামাত দোহরাতে হবে না। কেননা পুনঃ আযান শরীআত অনুমোদিত; পুনঃ ইকামাত অনুমোদিত নয়। ( আযানের মাসায়েল )

ইমাম মুহাম্মাদ(রঃআঃ) এর বক্তব্যের অর্থ হল নামাজ হয়ে যাবে। কেননা, নামাজ তো আযান-ইকামাত ছাড়াও জাইয হয়।
গ্রন্থকার বলেন- স্ত্রীলোক যদি আযান দিয়ে থাকে তবে এরূপ হুকুম। অর্থাত্ দোহরানো মুসতাহাব, যাতে আযান সুন্নাত মুতাবিক হয়ে যায়।
সময় হওয়ার পূর্বে কোন নামাজের আযান দেওয়া বৈধ নয়। ওয়াকত হওয়ার পর আবার দিতে হয়। কেননা, আযান দেওয়া হয় মানুষের অবগতির জন্য। অথচ সময়ের পূর্বে হলে সেটা হবে মানুষকে অজ্ঞতায় ফেলার মধ্যে শামিল।
ইমাম আবূ ইউসুফ(রঃআঃ) বলেন, আর ইমাম শাফিঈ (রঃআঃ) এর অভিমতও তাই-ফজরের ক্ষেত্রে রাত্রের শেষার্ধে (আযান দেওয়া) বৈধ। কেননা, হারামাইন শরীফের অধিবাসীদের যুগ পরস্পরায় তা চলে আসছে।

এ সকলের বিপক্ষে দলিল হল বিলালের উদ্দেশ্য রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) এর নির্দেশ – ফজর এরূপ ফরসা হওয়ার পূর্বে আযান দিও না। একথা বলে তিনি উভয় হাত চওড়াভাবে প্রসারিত করিলেন।
মুসাফির আযান ও ইকামত দেবে। কেননা, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) আবূ মুলায়কার দুই পুত্রকে বলেছিলেন- যখন তোমরা সফর করবে তখন (তোমাদের একজন) আযান দিবে এবংইকামাত বলিবে।

যদি আযান ও ইকামাত দুটোই তরক করে তাহলে তা মাকরূহ হবে। আর যদি শুধু ইকামাতের উপরই ক্ষান্ত হয়, তাহলে তা জাইয হবে। কেননা, আযান(মূলতঃ) অনুপস্থিতদের উপস্থিত করার জন্য; অথচ সফর সংগীরা তো উপস্থিতই আছে। পক্ষান্তরে ইকামাত হলো (নামাযের) আরম্ভের ঘোষণার জন্য, আর উপস্থিতদের জন্য তার প্রয়োজন রহিয়াছে।

যদি নগরীতে নিজের ঘরে নামাজ আদায় করে, তাহলে আযান-ইকামাত দিয়েই নামাজ আদায় করবে, যাতে জামাআত অনুযায়ী নামাজ আদায় হয়। আর তা তরক করাও জাইয আছে। কেননা ইবন মাসউদ (রাঃআঃ) বলেছেন, মহল্লার আযান আমাদের জন্য যথেষ্ট হবে। আযানের মাসায়েল


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply