কাবা ঘরের তাওয়াফ সালাত তাকবীর ও যমযমের পানি পান করা
কাবা ঘরের তাওয়াফ সালাত তাকবীর ও যমযমের পানি পান করা >> সুনানে নাসাই শরিফের মুল সুচিপত্র দেখুন
পর্বঃ ২৪ঃ হজ্জের বিধি-বিধানসমূহ (২৮৯৫-২৯৬৫)
১.পরিচ্ছেদঃ বায়তুল্লাহ দর্শনকালে দুই হাত উত্তোলন না করা
২.পরিচ্ছেদঃ বায়তুল্লাহ দর্শনকালে দুই হাত উত্তোলন না করা
৩.পরিচ্ছেদঃ বায়তুল্লাহ দর্শনকালে দুই হাত উত্তোলন না করা
৪.পরিচ্ছেদঃ কাবা ঘরের [পুনঃ] নির্মাণ
৫.পরিচ্ছেদঃ কাবা ঘরে প্রবেশ করা
৬.পরিচ্ছেদঃ কাবার ভিতর সালাতের স্থান
৭.পরিচ্ছেদঃ হিজর বা [হাতীম]
৮.পরিচ্ছেদঃ হিজরে নামাজ আদায় করা
৯.পরিচ্ছেদঃ কাবার চারপাশে তাকবীর বলা
১০.পরিচ্ছেদঃ কাবা শরীফের ভিতর জিকির এবং দুআ করা
১১.পরিচ্ছেদঃ কাবার ভেতরে পেছনের দিকের সম্মুখবর্তী মুখমণ্ডল ও বুক মিলানো
১২.পরিচ্ছেদঃ কাবায় সালাতের স্থান
১৩.পরিচ্ছেদঃ বাইতুল্লাহয় তাওয়াফ করার ফজীলতের আলোচনা
১৪.পরিচ্ছেদঃ তাওয়াফ করার সময় কথা বলা
১৫.পরিচ্ছেদঃ তাওয়াফে কথা বলার বৈধতা
১৬.পরিচ্ছেদঃ সব সময় তাওয়াফ করার বৈধতা
১৭.পরিচ্ছেদঃ রুগ্ন ব্যক্তি কিরূপে তাওয়াফ করিবে?
১৮.পরিচ্ছেদঃ নারীদের সাথে পুরুষদের তাওয়াফ
১৯.পরিচ্ছেদঃ সওয়ারির উপর থেকে বাইতুল্লাহয় তাওয়াফ
২০.পরিচ্ছেদঃ ইফরাদ হজ্জ পালনকারীর তাওয়াফ
২১.পরিচ্ছেদঃ উমরার ইহরামকারীর তাওয়াফ করা
২২.পরিচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি হাজ্জ ও উমরার ইহরাম করেছে অথচ কুরবানীর পশু সাথে আনেনি তার করণীয়
২৩.পরিচ্ছেদঃ কিরান হজ্জ পালনকারীর তাওয়াফ
২৪.পরিচ্ছেদঃ হাজরে আসওয়াদ [কাল পাথর] প্রসংগে।
২৫.পরিচ্ছেদঃ হাজরে আসওয়াদকে চুম্বন করা
২৬.পরিচ্ছেদঃ হাজরে আসওয়াদের চুম্বন করা।
২৭.পরিচ্ছেদঃ কিরূপে চুম্বন করিবে?
২৮.পরিচ্ছেদঃ [কাবা শরীফে] প্রথম এসেই কিরূপে তাওয়াফ করিবে এবং হাজরে আসওয়াদকে চুম্বন করিতে তার কোন দিক থেকে আরম্ভ করিবে?
২৯.পরিচ্ছেদঃ কতবার সাঈ করিবে?
৩০.পরিচ্ছেদঃ স্বাভাবিকভাবে কতবার হেঁটে তাওয়াফ করিবে?
৩১.পরিচ্ছেদঃ সাতবারের মধ্যে তিনবার শরীর দুলিয়ে চলা [রমল করা]
৩২.পরিচ্ছেদঃ হজ্জ এবং উমরার রমল করা বা শরীর দুলিয়ে [দ্রুত চলা]
৩৩.পরিচ্ছেদঃ হাজরে আসওয়াদ হইতে হাজরে আসওয়াদ পর্যন্ত রমল করা
৩৪.পরিচ্ছেদঃ যে কারণে নাবী [সাঃআঃ] বায়তুল্লাহইতে সাঈ [রমল] করেন।
৩৫.পরিচ্ছেদঃ প্রত্যেক তাওয়াফে দুই রুকন স্পর্শ করা
৩৬.পরিচ্ছেদঃ দুই ইয়ামানী রুকন স্পর্শ করা
৩৭.পরিচ্ছেদঃ দুই ইয়ামানী রুকন স্পর্শ করা
৩৮.পরিচ্ছেদঃ অন্য দুই রুকনকে১ স্পর্শ না করা
৩৯.পরিচ্ছেদঃ রুকন [হাজরে আসওয়াদকে] লাঠি দ্বারা স্পর্শ করা।
৪০.পরিচ্ছেদঃ রুকনের [হাজরে আসওয়াদের] প্রতি ইঙ্গিত করা
৪১.পরিচ্ছেদঃ তাওয়াফের পর দুরাকআত নামাজ কোথায় আদায় করিবে?
৪২.পরিচ্ছেদঃ তাওয়াফ শেষে দুরাকআত নামাজ আদায়ের পরের বক্তব্য
৪৩.পরিচ্ছেদঃ তাওয়াফের পর দু রাকআত সালাতের কিরাআত
৪৪.পরিচ্ছেদঃ যমযমের পানি পান করা
৪৫.পরিচ্ছেদঃ দাঁড়িয়ে যমযমের পানি পান করা
১.পরিচ্ছেদঃ বায়তুল্লাহ দর্শনকালে দুই হাত উত্তোলন না করা
২৮৯৫. মুহাজির মক্কী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাঃআঃ] -কে জিজ্ঞাসা করা হলঃ কোন লোক বায়তুল্লাহ দর্শন করলে সেকি তার দুহাত উত্তোলন করিবে? তিনি বললেনঃ আমার মনে হয় না যে, ইয়াহূদী ব্যতীত কেউ এরূপ করে। আমরা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাথে হজ্জ করেছি, কিন্তু আমরা তা করি নি।
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ জইফ হাদীস
২.পরিচ্ছেদঃ বায়তুল্লাহ দর্শনকালে দুআ করা
২৮৯৬. উবায়দুল্লাহ ইবনি আবু ইয়াযীদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
আবদুর রহমান ইবনি তারিক ইবনি আলকামা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] তাঁকে তার মাতার সূত্রে বর্ণনা করেন যে, নাবী [সাঃআঃ] যখন ইয়ালা [রাঃআঃ]-এর বাড়ির কোন স্থানে আগমন করিতেন, তখন কিবলার দিকে মুখ করে দুআ করিতেন।
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ জইফ হাদীস
৩.পরিচ্ছেদঃ মাসজিদুল হারামে নামাজ আদায় করার ফজীলত
২৮৯৭. আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -কে বলিতে শুনেছিঃ আমার মসজিদে নামাজ আদায় করা আন্য মসজিদের এক হাজার নামাজ হইতে উত্তম, মাসজিদুল হারাম ব্যতীত। আবু আবদুর রহমান [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেনঃ মুসা জুহানী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] ব্যতীত অন্য কেউ নাফি [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] সূত্রে আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাঃআঃ] থেকে এই হাদীস রিওয়ায়ত করিয়াছেন বলে আমার জানা নেই। ইবনি জুরায়জ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] ও অন্যান্য বর্ণনাকারীরা এ রিওয়ায়ত ভিন্ন সনদে বর্ণনা করিয়াছেন।
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৮৯৮. নাবী [সাঃআঃ]-এর স্ত্রী মায়মুনা [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিত হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -কে বলিতে শুনেছিঃ আমার মসজিদে নামাজ আদায় করা অন্যান্য মসজিদের নামাজ থেকে এক হাজার গুণ উত্তম, কাবার মসজিদ ব্যতীত।
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৮৯৯. সাদ ইবনি ইবরাহীম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আবু সালামা[রাঃআঃ] বলেছেনঃ আমি এই হাদীস সম্পর্কে আমর [রাঃআঃ] -কে জিজ্ঞাস করেছি, তিনি বলেছেন যে, আমি আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] -কে বলিতে শুনিয়াছি যে, নাবী করীম [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আমার এ মসজিদে নামাজ আদায় করা কাবা শরীফের মসজিদ ব্যতীত অন্যান্য মসজিদের তুলনায় এক হাজার গুণ বেশী মর্যাদা রাখে।
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪.পরিচ্ছেদঃ কাবা ঘরের [পুনঃ] নির্মাণ
২৯০০. আয়েশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, তুমি কি জান না যে, তোমার সম্প্রদায় যখন কাবার [পুনঃ] নির্মাণ করেছিল তারা তখন ইবরাহীম [আঃ]-এর মূল ভিত্তি [নির্মাণ] হইতে তাকে ছোট করে নির্মাণ করেছিল। আমি বললামঃ ইয়া রসূলুল্লাহ! আপনি কি তাকে ইবরাহীমী ভিত্তি মুতাবিক পুনঃস্থাপন করবেন না? তিনি বললেনঃ [তা করতাম] যদি তোমার সম্প্রদায় কুফরি অবস্থার নিকটবর্তী না হতো। এ প্রসঙ্গে আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাঃআঃ] বললেনঃ যেহেতু আয়েশা [রাঃআঃ] রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] থেকে তা শুনেছেন, সুতরাং আমি মনে করি, তিনি হাজরে আসওয়াদের সাথে সংযুক্ত দুই রুকনকে [কোন] চুম্বন করা ছেড়ে দেন নি। কারণ বায়তুল্লাহ-এর নির্মাণ ইবরাহীম [আঃ]-এর ভিত্তির উপর সম্পন্ন হয় নি।
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৯০১. আয়েশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, যদি তোমার সম্প্রদায়ের সময় কুফরের নিকটবর্তী [নওমুসলিম] না হতো তা হলে আমি কাবা-এর বর্তমান নির্মাণ কাঠামো ভেঙ্গে ইবরাহীম [আঃ]-এর ভিত্তির উপর পুনঃনির্মাণ করতাম এবং এর পিছন দিকে একটি দরজা রাখতাম। কুরায়শরা যখন কাবা নির্মাণ করেছে তখন তাকে ছোট করে নির্মাণ করেছে।
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৯০২. উম্মুল মুমিনীন আয়েশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ইরশাদ করেছেনঃ যদি আমার সম্প্রদায় আর রাবী মুহাম্মদের বর্ণনায় রয়েছে “তোমার সম্প্রদায়” জাহিলী যুগের নিকটবর্তী না হতো, তা হলে আমি কাবা-এর নির্মাণ কাঠামো ভেঙ্গে তাতে দুটি দরজা করতাম। পরবর্তীকালে ইবনি যুবায়র [রাঃআঃ] ক্ষমতাপ্রাপ্ত হলে তিনি তাতে দুটি দরজা স্থাপন করিলেন।
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৯০৩. আয়েশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাঁকে বলেছেনঃ হে আয়েশা! যদি তোমার সম্প্রদায় জাহিলী যুগের নিকটবর্তী না হতো, তা হলে বায়তুল্লাহ [কাবা] সম্পর্কে আমি আদেশ করতাম এবং তা [সাবেক নির্মাণ কাঠামো] ভেঙ্গে দেওয়া হতো এবং তা হইতে যা বাদ দেয়া হইয়াছে, আমি তা পুনঃস্থাপন করতাম এবং তাকে ভূমির সাথে মিলাতাম [মেঝে নিচু করতাম]। আর তার দুটি দরজা করতাম; একটি পূর্ব দিকের দরজা আর অপরটি পশ্চিম দিকের দরজা। তারা এর সঠিক নির্মাণে অসমর্থ হইয়াছে। আমি তাকে ইবরাহীম [আঃ]-এর নির্মাণ কাঠামোর উপর বসাতাম। রাবী বলেন, এ কারণটিই ইবনি যুবায়র [রাঃআঃ] -কে তার সাবেক কাঠামো ভেঙ্গে পুনঃনির্মাণ করিতে উদ্বুদ্ধ করেছিল। ইয়াযীদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, ইবনি যুবায়র [রাঃআঃ] যখন তা ভেঙ্গে পুনঃনির্মাণ করেন এবং তাতে হাজরে আসওয়াদ ঢুকালেন তখন আমি তথায় উপস্থিত ছিলাম। আমি ইবরাহীমী ভিতের পাথর দেখেছি উটের কুঁজের মত পরস্পর মিলিত।
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৯০৪. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ইরশাদ করেনঃ পায়ে ছোট ছোট গোছা বিশিষ্ট দুজন হাবশী লোক কাবা ধ্বংস করিবে।
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৫.পরিচ্ছেদঃ কাবা ঘরে প্রবেশ করা
২৯০৫. আব্দুল্লাহ ইবনি উমার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি কাবা শরীফের নিকট পৌঁছালেন। নাবী [সাঃআঃ], বিলাল এবং উসামা ইবনি জায়িদ [রাঃআঃ] কাবা ঘরে প্রবেশ করিলেন। [তাঁদের প্রবেশের পর] উসমান ইবনি তালহা দরজা বন্ধ করে দিলেন। তাঁরা কিছুক্ষণ সেখানে অতিবাহিত করিলেন। তারপর দরজা খোলা হলো এবং নাবী [সাঃআঃ] বের হলেন, আর আমি সিঁড়িতে চড়ে কাবা ঘরে প্রবেশ করলাম এবং জিজ্ঞাসা করলামঃ নাবী [সাঃআঃ] কোথায় নামাজ আদায় করিলেন? তারা বললেনঃ এ স্থানে। আমি তাঁদেরকে একথা জিজ্ঞাসা করিতে ভুলে গিয়েছিলাম যে, নাবী [সাঃআঃ] কয় রাকআত নামাজ আদায় করেছিলেন?
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৯০৬. ইবনি উমার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কাবায় প্রবেশ করিলেন আর তাহাঁর সঙ্গে ছিলেন ফযল ইবনি আব্বাস, উসামা ইবনি জায়িদ, উসমান ইবনি তালহা এবং বিলাল [রাঃআঃ]। তাঁরা প্রবেশ করে দরজা বন্ধ করে দিলেন। তারপর তাতে অবস্থান করিলেন যতক্ষণ আল্লাহর ইচ্ছা ছিল। এরপর বের হলেন। ইবনি উমার [রাঃআঃ] বলেনঃ আমি সর্বপ্রথম যাহার সাক্ষাত পেলাম, তিনি ছিলেন বিলাল। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, নাবী [সাঃআঃ] কোন স্থানে নামাজ আদায় করিয়াছেন? তিনি বললেনঃ এই দুই স্তম্ভের মধ্যস্থলে।
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৬.পরিচ্ছেদঃ কাবার ভিতর সালাতের স্থান
২৯০৭. ইবনি উমার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেছেনঃ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কাবা ঘরে প্রবেশ করিলেন এবং তার বের হওয়ার সময় নিকটবর্তী হলে আমি সংবাদ পেয়ে তথায় তাড়াতাড়ি গমন করলাম। আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -কে এমন অবস্থায় পেলাম যে, তিনি তখন কাবা ঘর থেকে বের হচ্ছেন। আমি বিলালকে জিজ্ঞাসা করলামঃ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কি কাবায় নামাজ আদায় করিয়াছেন? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, তিনি দুরাকআত নামাজ আদায় করিয়াছেন, দুই স্তম্ভের মধ্যস্থলে।
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৯০৮. সাইফ ইবনি সুলাইমান [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
আমি মুজাহিদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] কে বলিতে শুনিয়াছি যে, ইবনি উমার [রাঃআঃ]-এর অবস্থান ক্ষেত্রে এসে তাঁকে বলা হলো যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কাবায় প্রবেশ করিয়াছেন। ইবনি উমার [রাঃআঃ] বলেন, আমি এসে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -কে পেলাম, তিনি তখন বের হইয়া গিয়েছেন। আর আমি বিলালকে দরজায় দাঁড়ানো অবস্থায় পেলাম। আমি বললামঃ হে বিলাল। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কি কাবায় নামাজ আদায় করিয়াছেন? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। আমি বললামঃ কোথায়? তিনি বললেনঃ এই দুই স্তম্ভের মধ্যস্থলে তিনি দুই রাকআত নামাজ আদায় করিয়াছেন। তারপর তিনি বের হইয়া কাবার সামনে দুই রাকআত নামাজ আদায় করিয়াছেন।
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৯০৯. উসামা ইবনি জায়িদ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কাবায় প্রবেশ করিয়াছেন এবং এর চারপাশে তাসবীহ পাঠ করিয়াছেন এবং তাকবীর বলেছেন, তিনি নামাজ আদায় করেননি।১ তারপর বের হইয়া মাকামে ইবরাহীমের পিছনে দুই রাকআত নামাজ আদায় করিয়াছেন। এরপর বলেছেনঃ এ-ই কিবলা।
{১} সম্ভবতঃ কোন এক সফরের [মক্কা বিজয়ের] ঘটনা হইবে; যখন তিনি [সাঃআঃ] কাবা অভ্যন্তরে নামাজ আদায় করেননি। অন্য সফরে [বিদায় হাজ্জে] নামাজ আদায় করিয়াছেন।
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ অন্যান্য
৭.পরিচ্ছেদঃ হিজর বা [হাতীম]
২৯১০. ইবনি জুবাইর [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
আমি আইশা [রাঃআঃ] -কে বলিতে শুনিয়াছি, নাবী [সাঃআঃ] ইরশাদ করেছেনঃ যদি কুফরের সাথে মানুষের যুগ নিকটবর্তী না হতো, আর আমার কাছে এমন সম্পদও নেই যা আমাকে শক্তি যোগায়, [আর তা যদি থাকতো,] তাহলে আমি হিজরের২ আরও পাঁচ হাত এতে মিলাতাম এবং এর একটি দরজা রাখতাম, যা দিয়ে লোক প্রবেশ করতো। আর একটি দরজা রাখতাম, যা দিয়ে লোক বের হতো।
{২} হিজর শব্দের অর্থ পরিত্যক্ত। কাবা শরীফের উত্তরাংশে পাঁচ/ ছয় হাত পরিমাণ স্থান যা কুরাইশরা কাবা নির্মাণের সময়ে তাহাদের [বৈধ] অর্থাভাবের কারণে নির্মাণ করিতে পারেনি বিধায় তা দেয়াল ও ছাদবিহীনরূপে উন্মুক্ত রয়েছে। মূলতঃ এ স্থানটুকুও কাবা শরীফের অংশ। সুতরাং এ স্থানে প্রবেশ করলে ও নামাজ আদায় করলে তা কাবা শরীফে প্রবেশ করা ও নামাজ আদায় করা বিবেচিত হইবে।
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৯১১. আব্দুল হামীদ ইবনি যুবাইর [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
ফুফু সাফিয়্যা বিনত শাইবা [রাঃআঃ] সূত্রে বলেছেন, আমআদের কাছে আয়েশা [রাঃআঃ] বলেছেন যে, আমি বললামঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি কি কাবায় প্রবেশ করবো না? তিনি ইরশাদ করলেনঃ তুমি হিজরে প্রবেশ কর। কেননা, তা কাবারই অংশ।
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৮.পরিচ্ছেদঃ হিজরে নামাজ আদায় করা
২৯১২. আয়েশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আমার বাসনা হতো কাবায় প্রবেশ করে তাতে নামাজ আদায় করিতে। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমার হাত ধরে আমাকে হিজরে প্রবেশ করিয়ে বললেনঃ যখন তুমি কাবায় প্রবেশ করিতে ইচ্ছা করিবে, তখন এখানে নামাজ আদায় করিবে; কেননা এটি কাবারই এক অংশ। কিন্তু তোমার গোত্র যখন একে নির্মাণ করে, তখন তাকে সংক্ষিপ্ত করে।
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহীহ
৯.পরিচ্ছেদঃ কাবার চারপাশে তাকবীর বলা
২৯১৩. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন; রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] [মক্কা বিজয়কালে] কাবায় নামাজ আদায় করেননি, বরং তিনি [কাবার ভিতরে] চারপাশে তাকবীর বলেছেন।
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১০.পরিচ্ছেদঃ কাবা শরীফের ভিতর জিকির এবং দুআ করা
২৯১৪. উসামা ইবনি জায়িদ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি এবং রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কাবা গৃহে প্রবেশ করিলেন। বিলাল [রাঃআঃ] -কে আদেশ করলে তিনি দরজা বন্ধ করে দিলেন। সে সময় কাবা ঘর ছয়টি স্তম্ভের উপর ছিল। তিনি যেতে যেতে যখন কাবা ঘরের দরজা সংলগ্ন দুই স্তম্ভের মধ্যে পোঁছালেন, তখন বসে আল্লাহর হামদ ও সানা বর্ণনা করিলেন। তাহাঁর নিকট প্রার্থনা করিলেন এবং ক্ষমা চাইলেন। এরপর কাবার পিছনের দিকে এসে সামনে মুখ করে দাঁড়ালেন, সেখানে ললাট ও গাল রাখলেন এবং আল্লাহর হামদ ও সানা বর্ণনা করিলেন এবং মুনাজাত ও ক্ষমা প্রার্থনা করিলেন। তারপর কাবার কোণসমূহের প্রতি কোণের কাছে গেলেন এবং সে সবের সামনে তাকবীর, তাহলীল, তাসবিহ এবং সানা পাঠ করিলেন। এরপর তিনি বের হইয়া কাবার দিকে মুখ করে দুই রাকআত নামাজ আদায় করিলেন। এরপর মুখ ঘুরিয়ে বললেনঃ এ-ই কিবলা, এ-ই কিবলা।
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১১.পরিচ্ছেদঃ কাবার ভেতরে পেছনের দিকের সম্মুখবর্তী মুখমণ্ডল ও বুক মিলানো
২৯১৫. উসামা ইবনি জায়িদ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আমি রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর সাথে কাবায় প্রবেশ করলাম। তিনি বসে পরলেন, আল্লাহর হামদ আদায় করিলেন,তাঁ র প্রশংসা করিলেন, তাকবীর বলিলেন এবং “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” বলিলেন। তারপর কাবার সামনের দিকে গেলেন এবং তাহাঁর মুখমণ্ডল ও বক্ষস্থল এর উপর রাখলেন এবং উভয় হাত এর উপর রেখে তাকবীর ও তাহলীল পাঠ করে দুআ করিলেন। তিনি কাবার প্রত্যেক কোণে এরূপ করিলেন। এরপর বের হলেন এবং কিবলামুখী হইয়া দরজায় এসে বললেনঃ এ-ই কিবলা, এ-ই কিবলা।
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১২.পরিচ্ছেদঃ কাবায় সালাতের স্থান
২৯১৬. উসামা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কাবা হইতে বের হলেন এবং কাবার সামনে দুই রাকআত নামাজ আদায় করিলেন। এরপর বললেনঃ এ-ই কিবলা।
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৯১৭. আতা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আমি ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] -কে বলিতে শুনিয়াছি যে, উসামা ইবনি জায়িদ [রাঃআঃ] আমার কাছে বর্ণনা করিয়াছেন যে, নাবী [সাঃআঃ] কাবায় প্রবেশ করিলেন এবং এর চারদিকে দুআ করিলেন এবং এর ভিতরে নামাজ আদায় না করে বের হলেন। যখন তিনি বাইরে আসলেন, তখন কাবার সামনে দুই রাকআত নামাজ আদায় করিলেন।
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৯১৮. মুহাম্মাদ ইবনি আব্দুল্লাহ ইবনি সাইব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] -কে নিয়ে হাজরে আসওয়াদের সাথে মিলিত স্তম্ভের পাশের তৃতীয় অংশে, যে স্থানটি দরজার নিকটবর্তী সেখানে দাঁড় করালেন। তখন ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] বললেনঃ তোমাকে কি অবহিত করা হয়নি যে, রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এই স্থানে নামাজ আদায় করিয়াছেন? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। তারপর তিনি এগিয়ে গিয়ে সেখানে নামাজ আদায় করিতেন।
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ জইফ হাদীস
১৩.পরিচ্ছেদঃ বাইতুল্লাহয় তাওয়াফ করার ফজীলতের আলোচনা
২৯১৯. আব্দুল্লাহ ইবনি উবাইদ ইবনি উমাইর [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
এক ব্যক্তি ইবনি উমার [রাঃআঃ] কে বললঃ হে আবু আব্দুর রাহমান! আমি আপনাকে এই দুই রুকনে [ইয়ামানী] ব্যতীত অন্য কোন কোণে চুম্বন করিতে দেখিনা। তিনি বলেনঃ আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -কে বলিতে শুনেছিঃ এদের স্পর্শ করা গুনাহ দূর করে দেয় এবং তাঁকে এও বলিতে শুনিয়াছি যে, যে ব্যক্তি সাতবার তাওয়াফ করে, সে একটি গোলাম আজাদ করার সমতুল্য [সাওয়াব পাবে]।
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৪.পরিচ্ছেদঃ তাওয়াফ করার সময় কথা বলা
২৯২০. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
কাবার তাওয়াফ করার সময় রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এমন একজন লোকের নিকট দিয়ে গমন করছিলেন, যাকে অন্য একজন লোক তার নাকের ভিতরে ঢুকানো রশি ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছিলেন। নাবী [সাঃআঃ] নিজ হাতে তা কেটে ফেললেন, তারপর সেই ব্যক্তিকে হাত ধরে টেনে নিতে আদেশ করিলেন।
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৯২১. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এমন এক ব্যক্তির কাছ দিয়ে যান, যাকে অন্য একজন লোক কোন কিছুর [রশির] সাহায্যে টানছিল, যা সে মানত করেছিলো। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তা নিয়ে কেটে ফেললেন এবং বললেনঃ এটাই মানত।
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ অন্যান্য
১৫.পরিচ্ছেদঃ তাওয়াফে কথা বলার বৈধতা
২৯২২. তাউস [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
এমন এক ব্যক্তির সূত্রে বর্ণনা করেন যে, যিনি নাবী [সাঃআঃ]-এর সাক্ষাত লাভ করিয়াছেন, তিনি বলেনঃ বাইতুল্লাহর তাওয়াফ করাও সালাতের ন্যায়। অতএব কথা কমই বলবে। হানজালা ইবনি আবু সুফইয়ান [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর বর্ণনায় আব্দুল্লাহ ইবনি উমার [রাঃআঃ]-এর উল্লেখ করিয়াছেন। [যেখানে অপর রাবী হাসান ইবনি মুসলিম-এর নাম উল্লেখ করেননি]।
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৯২৩. তাউস [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আব্দুল্লাহ ইবনি উমার [রাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমরা তাওয়াফে কথা কম বলবে।কেননা তোমরা সালাতে রয়েছ।
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ মাওকুফ
১৬.পরিচ্ছেদঃ সব সময় তাওয়াফ করার বৈধতা
২৯২৪. জুবাইর ইবনি মুতইম [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ হে বনূ আবদ মানাফ! দিন ও রাতের যে কোন সময় এই ঘরের তাওয়াফ করিতে এবং নামাজ আদায় করিতে কাউকে নিষেধ করিবেনা।
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৭.পরিচ্ছেদঃ রুগ্ন ব্যক্তি কিরূপে তাওয়াফ করিবে?
২৯২৫. উম্মু সালামা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আমি রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট অনুযোগ করলামঃ আমি অসুস্থ। তিনি বলিলেন; তুমি লোকের পেছনে সওয়ার অবস্থায় তাওয়াফ করিবে। তারপর আমি তাওয়াফ করলাম আর রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] তখন কাবার পাশে নামাজ আদায় করছিলেন। সালাতে তিনি [আর-বী] সুরা তূর পাঠ করছিলেন।
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৮.পরিচ্ছেদঃ নারীদের সাথে পুরুষদের তাওয়াফ
২৯২৬. উম্মু সালামা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ ইয়া রাসুলাল্লাহ! আল্লাহর শপথ! আমি বিদায় তাওয়াফ করিনি। তখন নাবী [সাঃআঃ] বললেনঃ যখন নামাজ আরম্ভ হইবে তখন তুমি তোমার উটের উপর থেকে লোকের পেছনে তাওয়াফ করিবে। এ হাদীস উরওয়া [রাঃআঃ] উম্মূ সালামা [রাঃআঃ] থেকে শুনেননি।
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ লিগাইরিহি
২৯২৭. উম্মু সালামা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি মক্কায় আগমন করিলেন, তখন তিনি ছিলেন অসুস্থ। তিনি তা রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] –এর নিকট বললে- তিনি বললেনঃ তুমি মুসল্লিদের পেছনে সওয়ার অবস্থায় তাওয়াফ করিবে। তিনি বললেনঃ আমি শুনিয়াছি, রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] কাবার নিকট সুরা [তূর] পড়ছিলেন।
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৯.পরিচ্ছেদঃ সওয়ারির উপর থেকে বাইতুল্লাহয় তাওয়াফ
২৯২৮. আয়েশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বিদায় হাজ্জে কাবার চারপাশে উটের উপর আরোহণ অবস্থায় তাওয়াফ করেন। এ সময় তিনি তাহাঁর হাতের লাঠি দ্বারা রোকন [হাজরে আসওয়াদ স্পর্শ করিয়ে তা] চুম্বন করেন।
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২০.পরিচ্ছেদঃ ইফরাদ হজ্জ পালনকারীর তাওয়াফ
২৯২৯. জুহাইর [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ বয়ান আমাদের নিকট বর্ণনা করিয়াছেন যে, ওয়াবরাহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] তাহাঁর নিকট বর্ণনা করিয়াছেন যে, আমি আব্দুল্লাহ ইবনি উমার [রাঃআঃ] -কে বলিতে শুনিয়াছি, তাঁকে এক ব্যক্তি প্রশ্ন করিল, আমি হাজ্জের ইহরাম বেঁধেছি। এখন আমি কি তাওয়াফ করবো? তিনি বললেনঃ কি তোমাকে বাঁধা প্রদান করেছে? তিনি বললেনঃ আমি আব্দুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] -কে তা নিষেধ করিতে দেখেছি। আর আপনি আমাদের নিকট তাহাঁর চাইতে অধিক গ্রহণযোগ্য। তিনি বললেনঃ আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -কে হাজ্জের ইহরাম করে বাইতুল্লাহর তাওয়াফ করিতে এবং সাফা ও মারওয়ার মধ্যে সাঈ করিতে দেখেছি।
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২১.পরিচ্ছেদঃ উমরার ইহরামকারীর তাওয়াফ করা
২৯৩০. আমর [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
আমি ইবনি উমার [রাঃআঃ] -কে বলিতে শুনিয়াছি। আমরা তাঁকে এমন এক ব্যক্তি সম্বন্ধে প্রশ্ন করছিলাম, যে উমরা করিতে এসে কাবার তাওয়াফ করে, কিন্তু সাফা ও মারওয়ার সাঈ করেনি। সে কি তার পরিবারের কাছে গমন [সহবাস] করিবে? তিনি বললেনঃ যখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] মক্কায় আগমন করেন, তখন তিনি সাতবার তাওয়াফ করেন এবং মাকামে ইবরাহীমের পেছনে দুই রাকআত নামাজ আদায় করেন এবং সাফা ও মারওয়া সাঈ করেন। “আর তোমাদের জন্য রসূলুল্লাহর মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে”।
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২২.পরিচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি হাজ্জ ও উমরার ইহরাম করেছে অথচ কুরবানীর পশু সাথে আনেনি তার করণীয়
২৯৩১. আনাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] [হাজ্জের উদ্দেশ্যে] বের হলেন আর তাহাঁর সঙ্গে আমরাও বের হলাম। তিনি জুলহুলাইফায় পৌঁছার পর জুহরের নামাজ আদায় করিলেন। তারপর তিনি তাহাঁর সওয়ারীতে আরোহণ করেন। যখন তিনি বাইদায় নামক স্থানে পৌঁছলেন তখন তিনি হাজ্জ ও উমরা উভয়ের তালবিয়া পড়লেন। তাহাঁর সঙ্গে আমরাও তালবিয়া পড়লাম। আর যখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] মক্কায় পদার্পণ করেন, আর আমরা তাওয়াফ করলাম, তখন তিনি লোকদের হালাল হইতে আদেশ করিলেন। এতে তারা সন্ত্রস্ত হলেন। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাঁদের বললেনঃ যদি আমার সাথে হাদী [কুরবানীর জন্তু] না থাকতো, তা হলে আমিও হালাল হতাম। এরপর লোকেরা হালাল হইয়া গেলেন, এমনকি তাঁরা স্ত্রীদের সঙ্গে সঙ্গত হলেন আর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] [ইহরাম থেকে] হালাল হলেন না এবং তিনি কুরবানীর দিন পর্যন্ত চুলও কাটান নি।
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ জইফ হাদীস
২৩.পরিচ্ছেদঃ কিরান হজ্জ পালনকারীর তাওয়াফ
২৯৩২. ইবনি উমার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি হাজ্জ ও উমরার একত্রে নিয়ত করিলেন এবং উভয়ের জন্য এক তাওয়াফ করিলেন। তারপর বললেনঃ আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -কে এরূপই করিতে দেখেছি।
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৯৩৩. নাফী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
আব্দুল্লাহ ইবনি উমার [রাঃআঃ] বের হলেন, যখন জুলহুলায়ফায় আগমন করিলেন, তখন উমরার তালবিয়া পড়লেন। তিনি কিছুক্ষণ চললেন। এরপর তিনি আশংকা করিলেন, কেউ হয়ত তাকে বাইতুল্লাহয় পৌঁছতে বাঁধা দিতে পারে। তখন তিনি বললেনঃ যদি আমি বাধাপ্রাপ্ত হই, তাহলে আমি তাই করবো, যা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] করিয়াছেন। তিনি বললেনঃ আল্লাহর শপথ! [পথে বাধাপ্রাপ্ত হলে যা করণীয় সে ব্যাপারে] উমরা ও হজ্জের একই নিয়ম, আমি তোমাদেরকে সাক্ষী রাখছি যে, আমি উমরার সাথে হাজ্জের ও ইহরাম [নিয়্যত] করেছি। এরপর তিনি সামনে অগ্রসর হলেন এবং কুদায়দ নামক স্থানে পৌঁছলেন এবং সেখান থেকে কুরবানীর জন্তু খরিদ করিলেন। তারপর মক্কায় আগমন করিলেন এবং সাতবার বাইতুল্লাহর তাওয়াফ করেন এবং সাফা ও মারওয়ার সাঈ করিলেন এবং বললেনঃ আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে এরূপ করিতে দেখেছি।
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৯৩৪. জাবির ইবনি আব্দুল্লাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
নাবী [সাঃআঃ] একবার [সাত চক্কর] তাওয়াফ করেন।
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৪.পরিচ্ছেদঃ হাজরে আসওয়াদ [কাল পাথর] প্রসংগে।
২৯৩৫. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
নাবী [সাঃআঃ] বলেছেন, “হাজরে আসওয়াদ জান্নাত থেকে [আগত]।
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৫.পরিচ্ছেদঃ হাজরে আসওয়াদকে চুম্বন করা
২৯৩৬. সুওয়ায়দ ইবনি গাফলাহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, উমার [রাঃআঃ] হাজরে আসওয়াদকে চুম্বন করিলেন এবং তাঁকে জড়িয়ে ধরে বলিলেন, আমি আবুল কাসেম [সাঃআঃ]-কে তোমার প্রতি অতিশয় আকৃষ্ট ও অতিশয় সন্মান প্রদর্শন করিতে দেখেছি [চুমা দিয়ে এবং স্পর্শ করে]।
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৬.পরিচ্ছেদঃ হাজরে আসওয়াদের চুম্বন করা।
২৯৩৭. আবিস ইবনি রবীআ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি উমার [রাঃআঃ] -কে দেখেছি, তিনি হাজরে আসওয়াদের কাছে এসে বলিলেন, আমি নিশ্চিতরূপে জানি তুমি একখন্ড পাথর, যদি আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -কে তোমাকে চম্বন করিতে না দেখতাম, তাহলে আমি তোমাকে চুম্বন করতাম না। তারপর তিনি এর নিকটবর্তী হইয়া তাকে চুম্বন করিলেন।
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৭.পরিচ্ছেদঃ কিরূপে চুম্বন করিবে?
২৯৩৮. হানযালা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
আমি তাউসকে দেখেছি, তিনি রোকনের [হাজরে আসওয়াদের] কাছ দিয়ে যেতেন, যদি উক্ত স্থানে লোকের ভিড় লক্ষ করিতেন, তবে চলে যেতেন, ঠেলাঠেলি করিতেন না। আর যদি ভিড়শূন্য পেতেন, তখন তাকে চুম্বন করিতেন- তিনবার। তারপর বলিতেন, আমি ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] -কে এরূপ করিতে দেখেছি। আর ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] বলিতেন, আমি উমার ইবনি খাত্তাব [রাঃআঃ] -কে এরূপ করিতে দেখেছি। তিনি [উমার [রাঃআঃ]] বলিতেন, তুমি একখন্ড পাথর মাত্র, তুমি কারও উপকার করিতেও পারনা, কোন ক্ষতি করিতেও পার না। যদি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -কে তোমাকে চুম্বন করিতে না দেখতাম, তাহলে আমি তোমাকে চুম্বন করতাম না। তারপর উমার [রাঃআঃ] বলিলেন, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -কে এরূপ করিতে দেখেছি।
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ অন্যান্য
২৮.পরিচ্ছেদঃ [কাবা শরীফে] প্রথম এসেই কিরূপে তাওয়াফ করিবে এবং হাজরে আসওয়াদকে চুম্বন করিতে তার কোন দিক থেকে আরম্ভ করিবে?
২৯৩৯. জাবির [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যখন মক্কায় শুভাগমন করিলেন, তখন তিনি প্রথমে মসজিদে [হারামে] প্রবেশ করে হাজরে আসওয়াদকে চুম্বন করিলেন। এরপর এর ডান দিকে গেলেন এবং তিনবার রমল করিলেন এবং চারবার স্বাভাবিকভাবে হেঁটে তাওয়াফ করিলেন। পরে মাকামে ইবরাহীমে গমন করে বলিলেন, “তোমরা মাকামে ইবরাহীমকে সালাতের স্থানরূপে গ্রহন কর।” [২ঃ১২৫] এরপর তিনি দুই রাকআত নামাজ আদায় করিলেন। এ সময় মাকামে ইবরাহীম তাহাঁর ও বায়তুল্লাহর মধ্যস্থলে ছিল। তারপর তিনি দুই রাকআত নামাজ আদায়ের পর বায়তুল্লাহয় গিয়ে হাজরে আসওয়াদকে চুম্বন করেন, তারপর তিনি সাফার দিকে গমন করেন।
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৯.পরিচ্ছেদঃ কতবার সাঈ করিবে?
২৯৪০. নাফি [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাঃআঃ] তিনবার রমল করিতেন এবং চারবার হাঁটতেন, আর তিনি বলিতেন যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এরূপ করিতেন।
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩০.পরিচ্ছেদঃ স্বাভাবিকভাবে কতবার হেঁটে তাওয়াফ করিবে?
২৯৪১. ইবনি উমার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] হজ্জ ও উমরায় প্রথমে এসে যে তাওয়াফ করিতেন, তাতে তিনি তিনবার সাঈ [রামাল] করিতেন, আর চারবার হাঁটতেন। তারপর দুই রাকাআত নামাজ আদায় করিতেন। এরপর সাফা ও মারওয়া তাওয়াফ [সাঈ] করিতেন।
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩১.পরিচ্ছেদঃ সাতবারের মধ্যে তিনবার শরীর দুলিয়ে চলা [রমল করা]
২৯৪২. আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যখন মক্কায় যান। তখন তিনি প্রথমে হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করেন, এবং সাতবার তাওয়াফের মধ্যে প্রথম তিনবার হালকা দৌড়ে চলেন [রমল করেন]।
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ অন্যান্য
৩২.পরিচ্ছেদঃ হজ্জ এবং উমরার রমল করা বা শরীর দুলিয়ে [দ্রুত চলা]
২৯৪৩. নাফি [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
আবদুল্লহ্ ইবনি উমার [রাঃআঃ] [মক্কায়] হজ্জ বা উমরায় আগমন করলে, তাহাঁর তাওয়াফে তিনবার রমল করিতেন এবং চারবার সাধারনভাবে চলতেন। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এরূপ করিতেন।
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩৩.পরিচ্ছেদঃ হাজরে আসওয়াদ হইতে হাজরে আসওয়াদ পর্যন্ত রমল করা
২৯৪৪. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -কে হাজরে আসওয়াদ হইতে হাজরে আসওয়াদ পর্যন্ত রমল করিতে দেখেছি, এমনকি এভাবে তিনি তিন তাওয়াফ পূর্ণ করেন।১
{১} রমল বা শরীর দুলিয়ে [মার্চ করার ন্যায়] দ্রুত চলার বিধান কাবা শরীফের সম্মুখভাগের জন্য -হাজরে আসওয়াদ হইতে হিজর বা হাতীমের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত। পরবর্তী হাদীস দ্রষ্টব্য।
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩৪.পরিচ্ছেদঃ যে কারণে নাবী [সাঃআঃ] বায়তুল্লাহইতে সাঈ [রমল] করেন।
২৯৪৫. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] এবং তাহাঁর সাহাবীগণ যখন মক্কায় আগমন করেন, তখন মুশরিকরা বলিতে লাগলো, মদীনার জ্বর তাহাদেরকে দুর্বল করে দিয়েছে, আর সেখানে তাহাদের অনেক মন্দের সম্মুখীন হইতে হইয়াছে। আল্লাহ তাআলা তাহাঁর নাবীকে এ সংবাদ পৌছালে তিনি সাহাবীগণকে রমল করিতে আদেশ করিয়াছেন এবং দুই রুকনে [ইয়ামানী]র মধ্যস্থলে স্বাভাবিকভাবে চলতে বলেন। মুশরিকরা তখন হিজর-এর দিকে ছিল। তারা বলিতে লাগলেন, এরা তো অমুক হইতে শক্তিশালী।
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৯৪৬. যুবায়র ইবনি আদী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, এক ব্যক্তি ইবনি উমার [রাঃআঃ] -কে হাজরে আসওয়াদ চুম্বন সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করলে, তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -কে তা চুম্বন করিতে দেখেছি এবং স্পর্শ করিতে দেখেছি। সে লোকটি বললো, “বলুন, তো যদি আমি অত্যাধিক ভিড়ের দরুন বা লোকের মধ্যে সে পর্যন্ত পৌছতে সক্ষম না হলে কি করবো? তখন ইবনি উমার [রাঃআঃ] বলেন, তোমরা বল আপনি এসব ইয়ামানে রেখে আসবেন [সুতরাং এখানে যদি-র কোন অবকাশ নেই]। আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -কে তা স্পর্শ করিতে এবং চুম্বন করিতে দেখেছি।
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩৫.পরিচ্ছেদঃ প্রত্যেক তাওয়াফে দুই রুকন স্পর্শ করা
২৯৪৭. ইবনি উমার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
নাবী [সাঃআঃ] প্রত্যেক তাওয়াফেই রুকনে ইয়ামানী এবং হাজরে আসওয়াদ ব্যতীত অন্য কিছু স্পর্শ করিতেন না।
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদীস
২৯৪৮. ইবনি উমার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
বর্ণিত। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] হাজরে আসওয়াদ এবং রুকনে ইয়ামানী ব্যতীত অন্য কিছু স্পর্শ করিতেন না।
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩৬.পরিচ্ছেদঃ দুই ইয়ামানী রুকন স্পর্শ করা
২৯৪৯. আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -কে বায়তুল্লাহর দুই রুকনে ইয়ামানী ব্যতীত অন্য কিছু স্পর্শ করিতে দেখিনি।
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদীস
৩৭.পরিচ্ছেদঃ অন্য দুই রুকনকে১ স্পর্শ না করা
২৯৫০. উবায়দ ইবনি জুরায়জ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
আমি ইবনি উমার [রাঃআঃ] -কে বললাম, আমি দেখেছি, আপনি দুই রুকনে ইয়ামানী ব্যতীত অন্য কোন রুকনকে স্পর্শ করেন না। তিনি বলিলেন, “আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -কে উক্ত দু রুকন ব্যতীত অন্য কিছুকে স্পর্শ করিতে দেখেনি। [সংক্ষিপ্ত]
{১} রুকন অর্থ পার্শ্ব- দুই প্রাচীরের সংযোগ স্থল বা কোনকে রুকন বলা হয়। কাবা ঘরে চারটি রুকন রয়েছে। [১] রুকন-ই [হাজরে] আসওয়াদ [২] রুকন-ই ইয়ামানী [৩] রুকন-ই শামী ও [৪] রুকন-ই ইরাকী। রুকন-ই আসওয়াদকে স্পর্শ করা হয় ও চুম্বন করা হয়। দ্বিতীয় রুকনে স্পর্শ করা হয় চুমা দেওয়া হয় না, তৃতীয় ও চতুর্থ রুকনকে স্পর্শও করা হয় না চুমাও দেওয়া হয় না। উল্লেখ্য যে, প্রথম ও দ্বিতীয় রুকনকে একত্রে ইয়ামানী রুকন, তৃতীয় ও চতুর্থকে একত্রে শামী রুকন বলা হয়।
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৯৫১. আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] হাজরে আসওয়াদ এবং এর নিকটবর্তী রুকন, যা জুমাহীদের মহল্লার দিকে অবস্থিত; তাছাড়া বায়তুল্লাহর অন্য কোন রুকন স্পর্শ করিতেন না।
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৯৫২. নাফি [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আবদুল্লাহ [রাঃআঃ] বলেছেন, আমি যখন থেকে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -কে রুকনে ইয়ামানী ও হাজরে আসওয়াদকে স্পর্শ করিতে দেখেছি, তখন হইতে আমি অনুকূল ও প্রতিকূল যে কোন অবস্থায় উক্ত রুকনদ্বয় স্পর্শ করা ছেড়ে দেইনি।
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৯৫৩. ইবনি উমার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, যখন থেকে আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -কে হাজরে আসওয়াদকে স্পর্শ [চুম্বন] করিতে দেখেছি, তখন হইতে আমি তাকে স্পর্শ [ও চুম্বন] করা ছাড়িনি, অনুকূল ও প্রতিকূল যে কোন অবস্থায়।
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩৮.পরিচ্ছেদঃ রুকন [হাজরে আসওয়াদকে] লাঠি দ্বারা স্পর্শ করা।
২৯৫৪. আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বিদায় হজ্জে উটের উপর সওয়ার হইয়া তাওয়াফ করেন এবং হাজরে আসওয়াদ লাঠি দ্বারা স্পর্শ করেন।
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৯৫৫. আব্দুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাঁর সওয়ারীর উপর থেকে বাইতুল্লাহ্র তাওয়াফ করিয়াছেন, যখন তিনি হাজরে আসওয়াদের নিকট পৌঁছতেন, তখন তার দিকে [লাঠি দিয়ে] ইঙ্গিত করিতেন।
[আরবী]
মহান মহিয়ান আল্লাহ তাআলার বাণীঃ “প্রত্যেক সালাতের সময় তোমাদের সুন্দর পরিচ্ছদ পরিধান করিবে” [৭ঃ৩১]।
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩৯.পরিচ্ছেদঃ রুকনের [হাজরে আসওয়াদের] প্রতি ইঙ্গিত করা
২৯৫৬. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন ঃ মহিলারা উলঙ্গ অবস্থায় কাবার তাওয়াফ করতো এবং তারা বলতোঃ
“আজ তার [লজ্জাস্থানের] সব কিংবা অংশ বিশেষ খোলা থাকিবে [তাওয়াফের প্রয়োজনে]। এর যা উন্মুক্ত থাকিবে তা আমি কারো জন্য হালাল [বৈধ] করছি না।” তিনি বলেনঃ তখন আল্লাহর বাণী অবতীর্ণ হলেনঃ “হে আদম সন্তানগণ! তোমরা প্রত্যেক সালাতের সময় সুন্দর পরিচ্ছেদঃ পরিধান করিবে।” [৭ ঃ ৩১]।
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৯৫৭. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
বিদায় হজ্জের পূর্বে যে হজ্জে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আবু বকর [রাঃআঃ] কে হজ্জের আমীরররূপে পাঠিয়েছিলেন, সে হজ্জে আবু বকর [রাঃআঃ] -কে একটি দলে পাঠিয়েছিলেন, যেন তিনি লোকের মধ্যে একথা প্রচার করেন যে, শুন, এ বছরের পর কোন মুশ্রিক হজ্জ করিতে পারবে না। আর কোন উলঙ্গ ব্যক্তি বায়তুল্লাহ্র তাওয়াফ করিবে না।
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৯৫৮. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আমি আলী ইবনি আবু তালিব [রাঃআঃ]-এর সঙ্গে গিয়েছিলাম। যখন রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাঁকে মক্কাবাসীদের কাছে দায় মুক্তির [বারাআত] ঘোষণা প্রচারের জন্য পাঠিয়েছিলেন। তিনি বলেনঃ আপনারা কিসের ঘোষণা দেন? তাঁরা বলেনঃ আমরা এ কথা ঘোষণা দেই যে, মুমিন ব্যক্তি ব্যতীত কেউ জান্নাতে প্রবেশ করিবে না, আর কোন উলঙ্গ ব্যক্তি বায়তুল্লাহ্র তাওয়াফ করিবে না, আর রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] ও যাদের মধ্যে চুক্তি রয়েছে এর সময় বা তাহাঁর মেয়াদ চার মাস পর্যন্ত [বহাল থাকিবে]। যখন চার মাস অতিবাহিত হইবে, তখন আল্লাহ এবং তাহাঁর রাসুল মুশরিকদের ব্যাপারে দায়মুক্ত থাকিবেন। আর এ বছরের পর কোন মুশরিক হজ্জ করিবে না। আমি এই ঘোষণা দিচ্ছিলাম। এমনকি [ঘোষণা প্রচার করিতে করিতে] আমার আওয়াজ বসে [অস্পষ্ট হইয়া] যায়।
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪০.পরিচ্ছেদঃ তাওয়াফের পর দুরাকআত নামাজ কোথায় আদায় করিবে?
২৯৫৯. মুত্তালিব ইবনি আবু ওয়াদাআহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] যখন তাওয়াফের সাত চক্কর সমাপ্ত করিলেন, তখন তিনি তাওয়াফ করার স্থানের এক পাশে গমন করিলেন এবং সেখানে দু রাকআত নামাজ আদায় করিলেন। তখন তাহাঁর মধ্যে এবং তাওয়াফকারীদের মধ্যে কেউ ছিল না।
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ জইফ হাদীস
২৯৬০. আমর [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিত হইতে বর্ণিতঃ
ইবনি উমার [রাঃআঃ] বলেছেনঃ রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] মক্কায় এলেন এবং সাতবার কাবার তাওয়াফ করিলেন, এবং মাকামে ইবরাহীমের পেছনে দুরাকআত নামাজ আদায় করিলেন এবং সাফা ও মারওয়ায় সাঈ করিলেন। আর বলিলেন ঃ তোমাদের জন্য রসুলুল্লাহর মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে।
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪১.পরিচ্ছেদঃ তাওয়াফ শেষে দুরাকআত নামাজ আদায়ের পরের বক্তব্য
২৯৬১. জাবির [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] সাতবার বায়তুল্লাহ্র তাওয়াফ করেন, তার মধ্যে তিনি তিনবার রমল করেন, আর চারবার সাধারনভাবে হেঁটে চলেন। তারপর মাকামে ইবরাহীমের নিকট দাঁড়িয়ে দুরাকআত নামাজ আদায় করেন এবং তিনি তিলাওয়াত করেন ঃ
وَاتَّخِذُوا مِنْ مَقَامِ إِبْرَاهِيمَ مُصَلًّى} [البقرة: 125]
অর্থঃ “তোমরা মাকামে ইবরাহীমকে সালাতের স্থান হিসেবে গ্রহণ কর।”]
লোকদের শুনাবার জন্য তিনি উচ্চস্বরে এরূপ পাঠ করেন। তারপর তিনি ফিরে এসে হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করেন। এরপর [সাফা-এর দিকে] গেলেন এবং বলিলেন ঃ আল্লাহ যা হইতে আরম্ভ করিয়াছেন আমরাও তা থেকে আরম্ভ করবো। এরপর তিনি সাফা হইতে আরম্ভ করেন এবং এর উপর আরোহণ করেন। এ সময় কাবা তাহাঁর দৃষ্টিগোচর হলে তিনি তিনবার বলেন ঃ
لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ، يُحْيِي وَيُمِيتُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
অর্থঃ “আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই, নেই তাহাঁর কোন শরীক, রাজত্ব তাহাঁরই, প্রশংসা তাহাঁরই, তিনি জীবন দান করেন ও মৃত্যু ঘটান, তিনি সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান।]
এরপর তিনি আল্লাহু আকবার বলেন এবং আল্লাহর প্রশংসা করেন এবং যা তাহাঁর জন্য নির্ধারিত ছিল সে সব দুআ করেন। এরপর তিনি পায়ে হেঁটে নেমে আসেন। এমন কি তাহাঁর দুই পা নিম্ন সমতলে স্থির হলো। তারপর তিনি দ্রুত হেঁটে চলেন, যাতে তাহাঁর দুই পা উপরে উঠতে লাগল। পরে তিনি স্বাভাবিকভাবে হেঁটে মারওয়া পাহাড়ে পৌঁছে তাতে আরোহণ করেন। এবারও বায়তুল্লাহ্ তাহাঁর দৃষ্টিগোচর হলো, তিনি তিনবার বলেন ঃ
لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
দুআর পর তিনি আল্লাহকে স্মরণ করিলেন এবং হামদ ও সানা আদায় করিলেন। এখানেও তিনি আল্লাহ যা নির্ধারিত করিয়াছেন সেভাবে দুআ করেন। এভাবে তিনি তাওয়াফ সমাপ্ত করেন।
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৯৬২. জাবির [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] সাতবার তাওয়াফ করেন, তিনবার রমল করেন এবং চারবার স্বাভাবিকভাবে হেঁটে তাওয়াফ করেন। এরপর তিনি পড়েন ঃ
وَاتَّخِذُوا مِنْ مَقَامِ إِبْرَاهِيمَ مُصَلًّى} [البقرة: 125]
অর্থ ঃ “তোমরা মাকামে ইবরাহীমকে সালাতের স্থান হিসেবে গ্রহণ কর।” [২ঃ১২৫]]
পরে দুরাকআত নামাজ আদায় করেন। এ সময় তিনি মাকামে ইবরাহীমকে তাহাঁর ও কাবার মধ্যে রাখেন। পরে হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করেন। তা হইতে বের হইয়া বলিলেন ঃ
إِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِنْ شَعَائِرِ اللَّهِ
“নিশ্চয় সাফা ও মারওয়া আল্লাহর নিদর্শনসমুহের মধ্যে অন্যতম।” তোমরা আরম্ভ কর ঐ স্থান থেকে যাহার কথা আল্লাহ প্রথমে উল্লেখ করিয়াছেন।
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪২.পরিচ্ছেদঃ তাওয়াফের পর দু রাকআত সালাতের কিরাআত
২৯৬৩. জাবির ইবনি আব্দুল্লাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] মাকামে ইবরাহীমে পৌঁছে তিলাওয়াত করিলেন ঃ
وَاتَّخِذُوا مِنْ مَقَامِ إِبْرَاهِيمَ مُصَلًّى [البقرة: 125]
রপর দুরাকআত নামাজ আদায় করেন। তিনি সূরা ফাতিহা সূরা কাফিরুন ও সূরা ইখলাস পাঠ করেন। পরে আবার হাজরে আসওয়াদের কাছে এসে তাঁকে চুম্বন করেন। তারপর সাফা [পাহাড়ে]-র দিকে যান।
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৩.পরিচ্ছেদঃ যমযমের পানি পান করা
২৯৬৪. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] দাঁড়িয়ে যমযমের পানি পান করেন।
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৪.পরিচ্ছেদঃ দাঁড়িয়ে যমযমের পানি পান করা
২৯৬৫. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন ঃ আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] -কে যমযমের পানি পান করিয়েছি। তিনি দাঁড়ানো অবস্থায় তা পান করেন।
হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
Leave a Reply