কবর সম্পর্কে হাদিস পাকা, প্রশস্থ, যিয়ারত, জিজ্ঞাসাবাদ, আযাব
কবর সম্পর্কে হাদিস পাকা, প্রশস্থ, যিয়ারত, জিজ্ঞাসাবাদ, আযাব >> সুনানে নাসাই শরিফের মুল সুচিপত্র দেখুন
পর্বঃ ২১ঃ জানাযা, হাদীস (২০০৭-২০৮৯)
১.পরিচ্ছেদঃ লাহদ এবং শাক্ক
২.পরিচ্ছেদঃ কবরের মুস্তাহাব গভীরতা
৩.পরিচ্ছেদঃ কবরকে প্রশস্থ করা মুস্তাহাব
৪.পরিচ্ছেদঃ কবরে কাপড় রাখা
৫.পরিচ্ছেদঃ যে সময় মৃত ব্যক্তিকে কবর দেওয়া নিষেধ
৬.পরিচ্ছেদঃ অনেক ব্যক্তিকে এক কবরে দাফন করা
৭.পরিচ্ছেদঃ কাকে অগ্রে দাফন করা হইবে?
৮.পরিচ্ছেদঃ কবরে রাখার পর মৃত ব্যক্তিকে বাহির করা
৯.পরিচ্ছেদঃ মৃত ব্যক্তিকে দাফন করার পর কবর থেকে বের করা
১০.পরিচ্ছেদঃ কবরের উপর জানাযার নামাজ আদায় করা
১১.পরিচ্ছেদঃ জানাযা শেষে আরোহণ করা
১২.পরিচ্ছেদঃ কবরকে বর্ধিত করা
১৩.পরিচ্ছেদঃ কবর পাকা করা
১৪.পরিচ্ছেদঃ কবরে চুনকাম করা
১৫.পরিচ্ছেদঃ কবর উঁচু করা হলে তা সমতল করে দেওয়া
১৬.পরিচ্ছেদঃ কবর যিয়ারত করা
১৭.পরিচ্ছেদঃ মুশরিকদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করার নিষেধাজ্ঞা
১৮.পরিচ্ছেদঃ মুমীনদের জন্য ইস্তিগফারের নির্দেশ
১৯.পরিচ্ছেদঃ কবরে বাতি জ্বালানোর ব্যাপারে কঠোরতা
২০.পরিচ্ছেদঃ কবরের উপবেশন করার ব্যাপারে কঠোরতা
২১.পরিচ্ছেদঃ কবরকে মসজিদ বানানো
২২.পরিচ্ছেদঃ পাকা চামড়ার জুতা পরিধান করে কবরে হাঁটা গর্হিত
২৩.পরিচ্ছেদঃ পাকা জুতা ব্যতীত অন্য জুতা পরিধানের ব্যাপারে নমনীয়তা
২৪.পরিচ্ছেদঃ কবরে জিজ্ঞাসাবাদ
২৫.পরিচ্ছেদঃ কাফিরের জিজ্ঞাসাবাদ
২৬.পরিচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি পেটের পীড়ায় মারা যায়
২৭.পরিচ্ছেদঃ কবর মিলিয়ে যাওয়া
২৮.পরিচ্ছেদঃ কবরের আযাব
২৯.পরিচ্ছেদঃ কবরের আযাব থেকে আল্লাহ্র আশ্রয় প্রার্থণা করা
৩০.পরিচ্ছেদঃ কবরের উপর খেজুরের ডাল রাখা
৩১.পরিচ্ছেদঃ প্রথমে যাকে কাপড় পরিধান করানো হইবে
৩২.পরিচ্ছেদঃ শোকে সমবেদনা প্রকাশ
৩৩.পরিচ্ছেদঃ অন্য প্রকার
১.পরিচ্ছেদঃ লাহদ এবং শাক্ক
২০০৭. সাদ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, তোমরা আমার জন্য লাহদ কবর খনন করিবে এবং আমার কবরের উপরে কিছু গেড়ে দেবে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর কবরের উপর যে রকম গেড়ে দেওয়া হয়েছিল।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২০০৮. আমির ইবনি সাদ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
সাদ [রাঃআঃ] এর মৃত্যুর সময় যখন উপস্থিত হল তখন তিনি বলিলেন, তোমরা আমার জন্য লাহদ কবর খনন করিবে এবং আমার কবরের উপরে কিছু গেড়ে দিবে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর কবরের উপরে যে রকম গেড়ে দেয়া হয়েছিল।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২০০৯. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, লাহদ কবর আমাদের জন্য আর শাক্ক কবর অন্যদের জন্য। ১
{১} কবর দুপ্রকারঃ লাহদ ও শাক্ক। প্রথমত, কবর খনন করার পর পশ্চিম পার্শ্বে কবর পরিমাণ দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট একতলা ঘরের ন্যায় গর্ত করাকে লাহদ কবর বলে। মাটি শক্ত হলে লাহদ কবর করা সুন্নাত। যদি মাটি নরম হয় এবং ভেঙ্গে পড়ার আশঙ্কা থাকে তবে কবর খনন শেষ করে লাশকে ডান কাত করে সমস্ত শরীর কেবলামুখী করে রাখা হয়। এরুপ কবরকে শাক্ক কবর বলে।হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২.পরিচ্ছেদঃ কবরের মুস্তাহাব গভীরতা
২০১০. হিশাম ইবনি আমির [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন। আমরা উহুদের দিন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর কাছে অভিযোগ করে বললাম, ইয়া রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]! আমাদের পক্ষে প্রত্যেক মানুষের জন্য কবর খনন করা কষ্টসাধ্য ব্যাপার। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, তোমরা কবর খনন কর এবং কবরকে গভীর কর আর মৃতদের উত্তমরূপে দাফন কর এবং দুইজন, তিনজনকে এক এক কবরে দাফন কর। সাহাবীগণ বলিলেন। ইয়া রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]! কাকে প্রথমে রাখব? তিনি বলিলেন, যে কুরআন বেশী জানে তাকে প্রথমে রাখ। রাবী বলেন, এভাবে আমার পিতা একই কবরের তিনজনের অন্যতম ছিলেন।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৩.পরিচ্ছেদঃ কবরকে প্রশস্থ করা মুস্তাহাব
২০১১. সা’দ এর পিতা [রহঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, যখন উহুদের দিন অনেক মুসলমানের উপর বিপদ আসল আর সাহাবীগণ ক্ষত-বিক্ষত হলেন। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, তোমরা কবর খনন কর এবং তা প্রশস্থ কর। আর দুই দুইজন তিন তিনজন ব্যক্তিকে এক এক কবরে দাফন কর এবং যে ব্যক্তি কুরআন বেশী জানে তাকে প্রথমে রাখ।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৪.পরিচ্ছেদঃ কবরে কাপড় রাখা
২০১২. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে যখন দাফন করা হয়েছিল তখন তাহাঁর নিচে একটি লাল চাদরের টুকরা রাখা হয়েছিল।১
{১} এটা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] – এর জন্য খাস ছিল।হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৫.পরিচ্ছেদঃ যে সময় মৃত ব্যক্তিকে কবর দেওয়া নিষেধ
২০১৩. উকবা ইবনি আমির জুহানী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, তিনটি সময়ে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাদের নামাজ আদায় করিতে এবং মৃতদের কবরস্থ করিতে নিষেধ করিয়াছেন। সূর্য উদয় হওয়া থেকে তা উপরে উঠা পর্যন্ত। ঠিক দ্বি-প্রহর থেকে সূর্য হেলে পড়া পর্যন্ত এবং সূর্য যখন অস্ত যাওয়ার জন্য হেলে পড়ে।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২০১৪. জাবির [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] একবার ভাষণ প্রসঙ্গে তাহাঁর এমন এক সাহাবীর কথা উল্লেখ করিলেন, যে মৃত্যুবরণ করেছিলেন এবং তাঁকে রাত্রেই কবরস্থ করা হয়েছিল। আর তাঁকে নিম্নমানের কাপড়ের কাফন দেওয়া হয়েছিল। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কাউকে রাত্রে বিশেষ প্রয়োজন ব্যতীত কবরস্থ করা থেকে সতর্ক করে দিলেন।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৬.পরিচ্ছেদঃ অনেক ব্যক্তিকে এক কবরে দাফন করা
২০১৫. হিশাম ইবনি আমির [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, যখন উহুদের দিন সাহাবীগণ ভীষণভাবে বিপদগ্রস্ত হলেন তখন নাবী [সাঃআঃ] বলিলেন, তোমরা কবর খনন কর ও কবরকে প্রশস্ত কর এবং এক এক কবরে দুই দুইজন, তিন তিনজন দাফন কর। সাহাবীগণ বললেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আমরা কাকে প্রথমে রাখব? তিনি বলিলেন, যে কুরআন বেশী জানে তাকে প্রথমে রাখবে।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২০১৬. হিশাম [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, উহুদের দিন আঘাত ছিল মারাত্মক। রাসুলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-এর কাছে তার অভিযোগ করা হলে তিনি বলিলেন, তোমরা কবর খনন কর এবং কবরকে প্রশস্ত ও সুন্দর কর আর এক এক কবরে দুই দুইজন তিন তিনজন করে দাফন কর আর যে কুরআন বেশী জানে তাকে অগ্রে রাখ।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২০১৭. হিশাম ইবনি আমির [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, তোমরা কবর খনন কর ও তা সুন্দর কর এবং [এক এক কবরে] দুই দুইজন তিন তিনজনকে দাফন কর আর যে কুরআন বেশী জানে তাকে অগ্রে দাফন কর।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৭.পরিচ্ছেদঃ কাকে অগ্রে দাফন করা হইবে?
২০১৮. হিশাম ইবনি আমির [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেনঃ আমার পিতা উহুদের দিন শহীদ হয়ে গিয়েছিলেন। তখন নাবী [সাঃআঃ] বললেনঃ তোমরা কবর খনন কর ও তা প্রশস্ত কর এবং সুন্দর কর আর এক এক কবরে দুই দুইজন তিন তিনজন করে দাফন কর এবং যে কুরআন বেশী জানে তাকে অগ্রে দাফন কর। রাবী বলেন, আমার পিতা এক কবরে দাফনকৃত তিনজনের একজন ছিলেন এবং তিনি তাহাদের মধ্যে কুরআন বেশী জানতেন বলে তাঁকে প্রথমে রাখা হয়েছিল।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৮.পরিচ্ছেদঃ কবরে রাখার পর মৃত ব্যক্তিকে বাহির করা
২০১৯. সুফইয়ান [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, আমর ও জাবির [রাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছেন যে, নাবী [সাঃআঃ] আব্দুল্লাহ ইবনি উবাই এর কবরের নিকট তাকে দাফন করার পর আসলেন। নাবী [সাঃআঃ]-এর নির্দেশে তাকে কবর থেকে বের করা হল। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাকে স্বীয় উরুদ্বয়ে রেখে তার মুখে নিজ থুথু দিলেন এবং নিজ কুর্তা তাকে পরিধান করালেন। আল্লাহ অধিক জ্ঞাত।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২০২০. আমর ইবনি দীনার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, আমি জাবির [রাঃআঃ]-কে বলিতে শুনিয়াছি যে, নাবী [সাঃআঃ] আব্দুল্লাহ ইবনি উবাইকে কবর থেকে বের করার নির্দেশ দিলেন। বের করার পর রসূলুল্লাহ তার মাথা স্বীয় উরুদ্বয়ে রেখে মুখে থুথু দিলেন এবং নিজ কুর্তা পরিধান করালেন। জাবির [রাঃআঃ] বলেন, তিনি তার জানাযার নামাজ আদায় করিলেন। আল্লাহ অধিক জ্ঞাত।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৯.পরিচ্ছেদঃ মৃত ব্যক্তিকে দাফন করার পর কবর থেকে বের করা
২০২১. জাবির [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, আমার পিতার সাথে অন্য এক ব্যক্তি {আমর ইবন জামুহ [রাঃআঃ]}-কে দাফন করা হয়েছিল, তা আমার মনোপূত না হওয়ায় আমার পিতাকে আমি কবর থেকে বের করে এনে একটি স্বতন্ত্র কবরে দাফন করলাম।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১০.পরিচ্ছেদঃ কবরের উপর জানাযার নামাজ আদায় করা
২০২২. ইয়াযীদ ইবনি সাবিত [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তাঁরা একদিন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাথে বের হলেন এবং একটি নতুন কবর দেখলেন। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] জিজ্ঞাসা করিলেন, এটি কার কবর? সাহাবীগণ বলিলেন, এটা অমুক গোত্রের অমুক বাঁদীর কবর। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাকে চিনতে পারলেন। [সাহাবীগণ বলিলেন] সে দ্বি-প্রহরের সময় মৃত্যুবরণ করেছিল। আপনি [রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]] তখন দুপুরের নিদ্রায় ছিলেন। সেজন্য আমরা উক্ত মহিলার জানাযার নামাজের জন্য জাগানো সমীচীন মনে করিনি। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তার কবরের নিকট দাঁড়িয়ে গেলেন। আর সাহাবীগণকে তাহাঁর পেছনে কাতারবন্দী করে দাঁড় করালেন এবং তাহাঁর উপর চারটি তাকবীর বলিলেন। অতঃপর বলিলেন, আমার উপস্থিতকালীন সময়ে তোমাদের কেউ যদি মৃত্যুবরণ করে তাহলে তোমরা আমাকে তাহাঁর ব্যাপারে অবগত করাবে। কেননা আমার জানাযার নামাজ আদায় করা তাহাঁর জন্য রহমত স্বরূপ।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২০২৩. শাবী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাথে যে ব্যক্তি একটি বিচ্ছিন্ন কবরের পাশ দিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি আমাকে সংবাদ দিয়েছেন যে, তিনি তাহাদের ঈমামতী করিলেন আর তিনি তাহাদের তাহাঁর পেছনে কাতারবন্দী করে দাঁড় করালেন। রাবী বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করলাম, হে আবু আমর! সেই ব্যক্তিটি কে ছিলেন? তিনি বলিলেন, ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ]।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২০২৪. শাবী [রহঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, যে ব্যক্তি নাবী [সাঃআঃ]-কে একটি বিচ্ছিন্ন কবরের পাশ দিয়ে যেতে দেখেছিলেন তিনি আমাকে সংবাদ দিয়েছেন যে, নাবী [সাঃআঃ] তার জানাযার নামাজ আদায় করেছিলেন আর তাহাঁর সাহাবীগণকে তাহাঁর পেছনে কাতারবন্দী করে দাঁড় করালেন। বলা হল যে, কে তোমার কাছে বর্ণনা করিয়াছেন? তিনি বললেনঃ ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ]।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২০২৫. জাবির [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] এক মহিলার কবরে জানাযার নামাজ আদায় করেছিলেন তাকে দাফন করার পর।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ লিগাইরিহি
১১.পরিচ্ছেদঃ জানাযা শেষে আরোহণ করা
২০২৬. জাবির ইবনি সামুরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আবু দাহদাহ [রাঃআঃ]-এর জানাযায় বের হলেন। যখন তিনি ফিরছিলেন তখন তাহাঁর জন্য একটি ঘোড়া আনা হলো যার পিঠে গদি ছিলো না। তিনি তাতে সাওয়ার হলেন আর আমরা তাহাঁর সাথে পদব্রজে চললাম।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১২.পরিচ্ছেদঃ কবরকে বর্ধিত করা
২০২৭. জাবির [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কবরে পাকা ঘর নির্মাণ, কবরকে বর্ধিতকরণ এবং চুনকাম করা থেকে নিষেধ করিয়াছেন। সুলায়মান ইবনি মূসা [রহঃ]-এর বর্ণনায় একথাটি অতিরিক্ত রয়েছে, “তিনি কবরের উপর লেখা থেকেও নিষেধ করিয়াছেন।”
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৩.পরিচ্ছেদঃ কবর পাকা করা
২০২৮. হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কবরে চুনকাম করা, কবরকে পাকা করা এবং তাতে কারো উপবেশন করা থেকে নিষেধ করিয়াছেন।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৪.পরিচ্ছেদঃ কবরে চুনকাম করা
২০২৯. জাবির [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কবরে চুনকাম করা থেকে নিষেধ করিয়াছেন।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৫.পরিচ্ছেদঃ কবর উঁচু করা হলে তা সমতল করে দেওয়া
২০৩০. ছুমামা ইবন শুফাই [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন যে, আমরা ফাদালা ইবনি উবায়দ [রাঃআঃ]-এর সাথে রোমে ছিলাম। সেখানে আমাদের এক সাথী মৃত্যুবরণ করিল, তখন ফাদালা [রাঃআঃ] নির্দেশ দিলে আমরা তাহাঁর কবরকে সমতল করে দিলাম। অতঃপর তিনি বলিলেন যে, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]- কে কবর সমতল করার নির্দেশ দিতে শুনিয়াছি।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২০৩১. আবুল হায়য়াজ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
আলী [রাঃআঃ] বলেছিলেন, আমি কি তোমাকে সে কাজে পাঠাব না যে কাজে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাকে পাঠিয়েছিলেন। তুমি উঁচু কবরকে সমতল না করে ছাড়বে না এবং ঘরের কোন [প্রাণীর] ছবিকে বিনষ্ট না করে ছাড়বে না।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৬.পরিচ্ছেদঃ কবর যিয়ারত করা
২০৩২. আব্দুল্লাহ এর পিতা বুয়ায়দা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, আমি তোমাদের কবর যিয়ারত করিতে নিষেধ করেছিলাম। এখন তোমরা কবর যিয়ারত কর। আর আমি তোমাদের তিন দিনের অধিক কুরবানীর গোশত সংরক্ষন করিতে বারণ করেছিলাম। এখন তোমরা যতদিন ইচ্ছা সংরক্ষণ করিতে পার। আর আমি তোমাদের মশক্ ভিন্ন অন্য কোন পাত্রে নাবীয [খুরমা ভিজানো পানি] রাখতে নিষেধ করেছিলাম। এখন তোমরা যে কোন পাত্রে রেখে তা পান করিতে পার। হ্যাঁ নেশাদায়ক হলে পান করিবে না।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২০৩৩. আব্দুল্লাহ এর পিতা বুয়ায়দা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি এমন এক বৈঠকে ছিলেন যেখানে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-ও ছিলেন। তিনি বলিলেন যে, আমি তোমাদের কুরবানীর গোশত তিন দিনের অধিক খেতে নিষেধ করেছিলাম, এখন তোমরা যতদিন ইচ্ছা নিজেরা খাও অপরকে খাওয়াও এবং জমা করে রাখ। আর আমি তোমাদের বলেছিলাম যে, তোমরা কদুর পাত্র, তৈলাক্ত পাত্র, কাঠের পাত্র এবং হানতাম [আল কাতরার প্রলেপযুক্ত পাত্র] জাতীয় পাত্রে নাবীয বানাবে না। এখন তোমরা যাতে ইচ্ছা তাতেই বানাতে পার, হ্যাঁ প্রত্যেক নেশাদায়ক বস্তু থেকে বেঁচে থাকিবে। আর তোমাদের কবর যিয়ারত করিতে নিষেধ করেছিলাম। এখন যাদের ইচ্ছা তাঁরা যিয়ারত করিতে পার, তবে অপ্রয়োজনীয় কথা বলবে না।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২০৩৪. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাঁর মাতার কবর যিয়ারত করার সময় ক্রন্দন করিলেন, তাহাঁর আশ পাশের সবাইও ক্রন্দন করিলেন। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন যে, আমি স্বীয় প্রভুর কাছে আমার মাতার মাগফিরাতের অনুমতি চাইলাম কিন্তু আমাকে তার অনুমতি দেওয়া হয়নি। অতঃপর আমি তাহাঁর কবর যিয়ারতের অনুমতি চাইলে তার অনুমতি দেওয়া হয়। তাই তোমরা কবর যিয়ারত কর। কেননা, তা তোমাদের মৃত্যুর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৭.পরিচ্ছেদঃ মুশরিকদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করার নিষেধাজ্ঞা
২০৩৫. সাঈদ এর পিতা মুসায়্যাব [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, যখন আবু তালিবের মৃত্যু সমুপস্থিত হল তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাঁর কাছে আসলেন এবং সে সময় তাহাঁর সামনে আবু জাহ্ল এবং আব্দুল্লাহ ইবনি আবু উমাইয়াও ছিল। তিনি বলিলেন, হে চাচাজান। আপনি একবার বলুন
لَا إِلٰهَ إِلَّا الله
আমি আপনার জন্য তাই নিয়ে আল্লাহর দরবারে যথাসাধ্য চেষ্টা চালাব [সুপারিশ করব]। তখন আবু জাহল এবং আব্দুল্লাহ ইবনি উমাইয়্যা বলিল, হে আবু তালিব, আপনি কি আব্দুল মুত্তালিবের ধর্ম থেকে ফিরে যাবেন? তাঁরা সর্বক্ষণই এ বলিতে থাকল। শেষ পর্যন্ত তাহাঁর মুখ দিয়ে শেষ শব্দ যা বের হয়েছিল তাহল আমি আব্দুল মুত্তালিবের ধর্মে থেকেই মৃত্যুবরণ করছি। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তার জন্য বলিলেন, আমি আপনার জন্য অবশ্যই মাগফিরাত চাইবো যতক্ষণ না আমাকে নিষেধ করা হয়। তখন এ আয়াত অবতীর্ণ হলঃ
مَا كَانَ لِلنَّبِيِّ وَالَّذِينَ آمَنُوا أَنْ يَسْتَغْفِرُوا لِلْمُشْرِكِينَ [التوبة: 113]
আর এ আয়াতও অবতীর্ণ হলঃ
إِنَّكَ لَا تَهْدِي مَنْ أَحْبَبْتَ [القصص: 56]
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২০৩৬. আলী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, আমি এক ব্যক্তিকে শুনলাম যে, সে তার পিতা মাতার জন্য মাগফিরাত চাচ্ছে অথচ তাঁরা উভয়ই মুশরিক। তখন আমি তাকে বললাম, তুমি তাহাদের জন্য মাগফিরাত চাচ্ছ অথচ তারা মুশরিক। তখন সে বললো, ইবরাহীম [আ] কি স্বীয় পিতার জন্য মাগফিরাত চাননি? এরপর আমি নাবী রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর কাছে আসলাম এবং ঘটনা তাহাঁর কাছে উল্লেখ করলাম। তখন এ আয়াত অবতীর্ণ হলঃ
وَمَا كَانَ اسْتِغْفَارُ إِبْرَاهِيمَ لِأَبِيهِ إِلَّا عَنْ مَوْعِدَةٍ وَعَدَهَا إِيَّاهُ [التوبة: 114]
হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
১৮.পরিচ্ছেদঃ মুমীনদের জন্য ইস্তিগফারের নির্দেশ
২০৩৭. মুহাম্মাদ ইবনি কায়স ইবনি মাখরামা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, আমি আয়িশাহ [রাঃআঃ]-কে বলিতে শুনিয়াছি যে, তিনি বলেছেন, আমি কি তোমাদের আমার এবং নাবী [সাঃআঃ] এর একটি ঘটনার কথা বলব না? আমরা বললাম, হ্যাঁ অবশ্যই বলবেন। তিনি বলিলেন, একরাত্রে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমার কাছে ছিলেন। তিনি এশার নামাজের পর বিছানায় আসলেন, স্বীয় পাদুকাদ্বয় নিজ পায়ের কাছে রাখলেন এবং পরিধেয় কাপড়ের একাংশ বিছানার উপর বিছালেন। কিছুক্ষণ পরেই যখন তিনি মনে করিলেন যে, আমি ঘুমিয়ে পড়েছি, তখন তিনি অতি সন্তপর্ণে জুতা পরিধান করিলেন, আস্তে আস্তে স্বীয় চাদরখানা উঠিয়ে নিলেন এবং অতি নিঃশব্দে দরজা খুলে বের হয়ে গেলেন। তখন আমি স্বীয় চাদরখানা নিজ মাথায় রাখলাম ওড়না ও কাপর পরিধান করে তাহাঁর পিছু পিছু চললাম। তিনি জান্নাতুল বাকী নামক কবরস্থানে আসলেন এবং তিনবার স্বীয় হস্তদ্বয় লম্বা করে উত্তোলন করিলেন। অতঃপর তিনি ফিরে চললে আমিও ফিরে চললাম। তিনি দ্রুত হাঁটতে লাগলে আমিও দ্রুত হাঁটতে লাগলাম। তিনি আরও দ্রুতগতিতে চললে আমিও আরও একটু দ্রুত গতিতে চলতে লাগলাম। তিনি দৌড়াতে লাগলে আমিও দৌড়াতে লাগলাম। আমি তাহাঁর পূর্বেই ঘরে প্রবেশ করে গেলাম এবং তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়লাম। অতঃপর তিনি প্রবেশ করিলেন এবং বলিলেন, হে আয়িশাহ [রাঃআঃ] তোমার কি হল যে, তোমার নিঃশ্বাস এত জোরে জোরে বের হচ্ছে, পেট ফুলে উঠছে? আমি বললাম, ও কিছু নয়। তিনি বলিলেন, হয় তুমি আমাকে এ ব্যাপারে অবগত করিবে না হয় আল্লাহ তাআলা যিনি সর্ববিষয়ে জ্ঞাত তিনি আমাকে অবগত করিয়ে দেবেন। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ্ ! আপনার উপর আমার মাতা-পিতা কুরবান হোক। অতঃপর আমি তাঁকে পূর্ণ ঘটনা ব্যক্ত করলাম।। তিনি বলিলেন, আমার সম্মুখে যাকে আমি দেখেছিলাম সে কি তুমিই ছিলে? আমি বললাম, হ্যাঁ। তখন তিনি আমার বক্ষে এমনভাবে আঘাত করিলেন যে, আমি ব্যাথা অনুভব করলাম। অতঃপর তিনি বললেনঃ তুমি কি মনে কর যে, আল্লাহ ও তাহাঁর রাসূল তোমার উপর অন্যায় আচরণ করিবে? আমি বললাম, মানুষ যখন কিছু গোপন করে তা আল্লাহ নিশ্চয় জানেন। তিনি বলিলেন, যখন তুমি দেখেছিলে তখন জিবরাঈল [আ] আমার কাছে এসেছিলেন। তোমার গায়ে কাপড় ঠিক ছিল না। বিধায় তিনি আমার কাছে আসেন নি বরং তোমা হইতে আড়ালে থেকে আমাকে ডাক দিয়েছিলেন। আমি তাহাঁর ডাকে সাড়া দিলাম এবং তোমা থেকে তা গোপন রাখলাম। আমি মনে করেছিলাম যে, তুমি ঘুমিয়ে ছিলে। আমি তোমার নিদ্রা ভঙ্গ করা অপছন্দনীয় মনে করলাম। আমি আশংকাও করলাম যে, হয়ত তুমি ভয় পাবে। তিনি আমাকে জান্নাতুল বাকী নামক কবরস্থানে গিয়ে কবরবাসীদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করিতে বলিলেন। [আয়িশাহ বলেন,] আমি বললাম, ইয়া রসূলুল্লাহ! আমি কিরূপ বলব? তিনি বলিলেন তুমি বলবেঃ [আরবী]
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২০৩৮. আলকামার মাতা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, আমি আয়িশাহ [রাঃআঃ]-কে বলিতে শুনিয়াছি যে, এক রাত্রে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] দাঁড়িয়ে তাহাঁর কাপড় পরিধান করিলেন তৎপর বের হয়ে গেলেন। আয়িশাহ [রাঃআঃ] বলেন যে, তখন আমি আমার বাঁদী বারীরাকে তাহাঁর পেছনে পেছনে যেতে আদেশ দিলাম। সে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর পেছনে পেছনে বাকী পর্যন্ত গেল এবং তাহাঁর আড়ালে দাঁড়িয়ে রইল। যতক্ষণ আল্লাহ তাআলার ইচ্ছা ছিল ততক্ষণ পর্যন্ত। অতঃপত রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ফিরে আসলেন। বারীরা পূর্বেই ফিরে এসে আমাকে সব অবগত করিল। সকাল পর্যন্ত আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে এ ব্যাপারে কিছুই জিজ্ঞাসা করলাম না। অতঃপর আমি তাঁকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলিলেন যে, আমি জান্নাতুল বাকী নামক কবরস্থানে অবস্থানরতদের প্রতি প্রেরিত হয়েছিলাম, তাহাদের জন্য দোয়া করার উদ্দেশ্যে।
হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
২০৩৯. আয়িশাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাথে তাহাঁর যে রাত্রির পালা আসত সেই রাত্রির শেষ ভাগে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] জান্নাতুল বাকী নামক কবরস্থানে যেতেন। এবং বলিতেনঃ
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِأَهْلِ بَقِيعِ الْغَرْقَدِ
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২০৪০. সুলায়মান এর পিতা বুরায়দা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যখন কবরস্থানে আগমন করিতেন তখন বলিতেনঃ [আরবী]
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, যখন নাজাশী [রহঃ] মৃত্যুবরণ করিলেন তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, তোমরা তাহাঁর জন্য ইস্তিগফার কর [ক্ষমা প্রার্থনা কর]।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২০৪২. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] হাবশার অধিপতি নাজাশী [রহঃ] যেদিন মৃত্যুবরণ করেছিলেন সেদিনই তাহাঁর মৃত্যু সংবাদ আমাদের দিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন, তোমরা তোমাদের ভাই এর জন্য ইস্তিগফার কর।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৯.পরিচ্ছেদঃ কবরে বাতি জ্বালানোর ব্যাপারে কঠোরতা
২০৪৩. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কবর যিয়ারতকারিণীদের, কবরের উপর মসজিদ নির্মাণকারীদের এবং বাতি প্রজ্জ্বলনকারীদের উপর অভিসম্পাৎ করিয়াছেন।
হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
২০.পরিচ্ছেদঃ কবরের উপবেশন করার ব্যাপারে কঠোরতা
২০৪৪. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, তোমাদের কারো কবরের উপর বসা অপেক্ষা স্বীয় বস্ত্র জ্বালিয়ে দেওয়া পর্যন্ত আগুনের ফুলকির উপর বসে থাকা উত্তম।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২০৪৫. আবর ইবনি হাযম [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, তোমরা কবরের উপর উপবেশন করো না।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ লিগাইরিহি
২১.পরিচ্ছেদঃ কবরকে মসজিদ বানানো
২০৪৬. আয়িশাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] ঐ লোকদের উপর আল্লাহ অভিসম্পাৎ দিয়েছেন, যারা তাহাদের নাবীদের কবরসমূহকে মসজিদরূপে বানিয়ে নিয়েছে।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২০৪৭. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ঐ ইয়াহূদ এবং খ্রীষ্টানদের আল্লাহর অভিসম্পাৎ দিয়েছেন, যারা স্বীয় নাবীদের কবরসমূহকে মসজিদ বানিয়ে নিয়েছে।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২২.পরিচ্ছেদঃ পাকা চামড়ার জুতা পরিধান করে কবরে হাঁটা গর্হিত
২০৪৮. বশীর ইবনি খাছাছিয়াহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, আমি একবার রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর সাথে চলতে ছিলাম। তিনি মুসলমানদের একটি কবরস্থানে গিয়ে বলিলেন যে, এরা বহু মন্দ কাজ পরিত্যাগে অগ্রগামী হয়েছে। অত:পর তিনি মুশরিকদের একটি কবরস্থানে গিয়ে বলিলেন যে, এরা বহু মঙ্গলময় কাজ পরিত্যাগে অগ্রগামী হয়েছে। অত:পর তিনি অন্যদিকে লক্ষ্য করে দেখলেন যে, এক ব্যক্তি জুতা পায়ে কবরস্থানে মাঝখান দিয়ে হাঁটাহাঁটি করছে। তখন তিনি বলিলেন, “হে পাকা জুতা পরিধানকারী, জুতা ফেলে দাও [খুলে নাও]।
হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
২৩.পরিচ্ছেদঃ পাকা জুতা ব্যতীত অন্য জুতা পরিধানের ব্যাপারে নমনীয়তা
২০৪৯. আনাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, যখন কোন বান্দাকে কবরে রাখা হয় এবং তার সঙ্গী সাথীরা প্রস্থান করে তখন সে তাহাদের জুতার শব্দ শুনতে পায়।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২৪.পরিচ্ছেদঃ কবরে জিজ্ঞাসাবাদ
২০৫০. আনাস ইবনি মালিক [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] বলেছেন যে, কোন বান্দাকে যখন তার কবরে রাখা হয় এবং তার সাথীগণ ফিরে যায় আর সে তাহাদের জুতার আওয়াজ শুনতে পায়। নাবী [সাঃআঃ] বলেন, এমনি মুহূর্তে তার কাছে দুজন ফিরিশতা আসেন এবং তাকে বসিয়ে জিজ্ঞাসা করেন {নাবী [সাঃআঃ]-কে দেখিয়ে} এ ব্যক্তি সম্পর্কে তুমি কি বলিতে? যদি সে মুমিন হয় তবে বলবে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তিনি আল্লাহ্র বান্দা ও তাহাঁর রাসূল। তখন তাকে বলা হইবে যে, তুমি জাহান্নামের নিজের স্থান দেখে নাও। আল্লাহ্ তাআলা তোমাকে এর পরিবর্তে জান্নাতে স্থান দিয়েছেন। নাবী [সাঃআঃ] বলেন, তাকে উভয় স্থান দেখানো হইবে।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২৫.পরিচ্ছেদঃ কাফিরের জিজ্ঞাসাবাদ
২০৫১. আনাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] বলেছেন, যখন কোন বান্দাকে কবরে রাখা হয় এবং তার সাথীগণ তার নিকট থেকে ফিরে যায়। আর সে তাহাদের জুতার আওয়াজ শুনতে পায় তখন তার কাছে দুজন ফিরিশতা আসেন এবং তাকে বসিয়ে জিজ্ঞাসা করেন {নাবী [সাঃআঃ]-কে দেখিয়ে} তুমি এ ব্যক্তি যিনি মুহাম্মাদ [সাঃআঃ] তুমি কি বলিতে? তখন ঐ ব্যক্তি মুমিন হলে বলবে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তিনি আল্লাহর বান্দা ও তাহাঁর রাসূল। তখন তাকে বলা হইবে, তুমি তোমার জাহান্নামের স্থানের দিকে লক্ষ্য কর; আল্লাহ্ তাআলা তোমাকে তার পরিবর্তে তার চেয়ে উত্তম স্থান দান করিয়াছেন। তখন ঐ ব্যক্তি উভয় স্থান দেখবে। কিন্তু ঐ ব্যক্তি কাফির বা মুনাফিক হলে তাকে বলা হইবে যে, তুমি এ ব্যক্তি সম্পর্কে কি বলিতে? তখন সে বলবে, আমি কিছুই জানি না; অন্যান্যরা যেরূপ বলত আমিও তদ্রুপ বলতাম। তখন তাকে বলা হইবে, তুমি কিছু বুঝতেও পারনি এবং তুমি [শরীয়তের সঠিক জ্ঞানের অধিকারীদের] অনুসরণও করনি। অত:পর তার কর্ণদ্বয়ের মাঝখানে এক আঘাত করা হইবে, তখন সে বিকট চিৎকার করে যা মানুষ এবং জিন ব্যতীত অন্য যারা তার আশে পাশে থাকিবে তারা তা শুনতে পাবে।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২৬.পরিচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি পেটের পীড়ায় মারা যায়
২০৫২. আব্দুল্লাহ ইবনি ইয়াসার [রহঃ] হইতে বর্ণীত
আমি এবং সুলায়মান ইবনি সুরাদ ও খালিদ ইবনি উরফাতা [রহঃ] একস্থানে বসা ছিলাম। এমন সময় লোকজন উল্লেখ করিল যে, এক ব্যক্তি পেটের পীড়ায় মৃত্যুবরণ করেছে। তখন তাঁরা উভয়ে তার নামাজে জানাযায় উপস্থিত হইতে ইচ্ছা করিল। একজন অন্যজনকে বলিল যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কি বলেননি যে, যে ব্যক্তি পেটের পীড়ায় মারা যায় কবরে তাকে অবশ্যই শাস্তি দেওয়া হইবে না? তখন অন্য ব্যক্তি বলিল, হ্যাঁ [বলেছেন]।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২০৫৩. নাবী [সাঃআঃ] এর এক সাহাবী হইতে বর্ণীত
এক সাহাবী জিজ্ঞাসা করিলেন, ইয়া রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]! শহীদ ব্যতীত অন্যান্য মুমিনগণ কবরের ফিৎনার সম্মুখীন হইবে, এর কারণ কি? তিনি বলিলেন, তার মাথার উপর উজ্জল তরবারি তাকে কবরের ফিৎনা থেকে নিরাপদ রাখবে।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২০৫৪. সাফ্ওয়ান ইবনি উমাইয়া [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, মহামারী, পেটের পীড়া, পানিতে ডুবে মৃত্যু বরণকারী এবং নেফাসের অবস্থায় মৃত্যুবরণকারী শহীদ। তিনি বলেন যে, আবু উছমান [রাঃআঃ] বহুবার আমাদের নিকট বর্ণনা করিয়াছেন। একবার তিনি অত্র হাদিস রসূলুল্লাহ [রাঃআঃ] থেকে মরফূ বর্ণনা করিয়াছেন।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২৭.পরিচ্ছেদঃ কবর মিলিয়ে যাওয়া
২০৫৫. ইবনি উমর [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সেই ব্যক্তি যাঁর জন্য আরশ কেঁপে উঠেছিল এবং যাঁর জন্য আকাশের দ্বারসমূহ খুলে গিয়েছিল এবং যাঁর জানাযায় সত্তর হাজার ফিরিশতা উপস্থিত হয়েছিল তাহাঁর কবরও মিলিয়ে গিয়েছিল। অত:পর তা প্রশস্ত হয়ে গিয়েছিল।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২৮.পরিচ্ছেদঃ কবরের আযাব
২০৫৬. বারা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন,
يُثَبِّتُ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا بِالْقَوْلِ الثَّابِتِ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَفِي الْآخِرَةِ [إبراهيم: 27]
অত্র আয়াতটি কবরের আযাব সম্বন্ধে অবতীর্ণ হয়েছিল।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২০৫৭. বারা ইবনি আযিব [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
يُثَبِّتُ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا بِالْقَوْلِ الثَّابِتِ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَفِي الْآخِرَةِ [إبراهيم: 27]
আয়াতটি কবরের আযাব সম্বন্ধে অবতীর্ণ হয়েছে। কবরস্থিত ব্যক্তিকে প্রশ্ন করা হইবে যে, তোমার রব কে? সে বলবে, আমার রব হলেন, আল্লাহ এবং আমার দ্বীন হচ্ছে মুহাম্মদ [সাঃআঃ] এর দ্বীন। ইহা আল্লাহর বাণীঃ
يُثَبِّتُ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا بِالْقَوْلِ الثَّابِتِ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَفِي الْآخِرَةِ [إبراهيم: 27]
এর জ্বলন্ত প্রমাণ।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২০৫৮. আনাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] একটি কবর থেকে আওয়াজ শুনতে পেয়ে বলিলেন, এ ব্যক্তি কখন মৃত্যুবরণ করেছে? সাহাবীগণ বলিলেন, সে জাহিলিয়্যাত যুগে মৃত্যুবরণ করেছে। তাতে তিনি খুশী হয়ে বলিলেন, যদি আমি আশংকা না করতাম যে, তোমরা ভয়ে একে অপরকে দাফন করা ছেড়ে দিবে তাহলে আমি তোমাদের কবরের আযাব [আযাবের আওয়াজ] শুনানোর জন্য আল্লাহ তাআলার কাছে দোয়া করতাম।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২০৫৯. আবু আইয়ূব [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] সূর্যাস্তের পর বের হলেন, তখন এক শব্দ শুনে বলিলেন যে, ইয়াহূদীদেরকে কবরে আযাব দেওয়া হচ্ছে।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২৯.পরিচ্ছেদঃ কবরের আযাব থেকে আল্লাহ্র আশ্রয় প্রার্থণা করা
২০৬০. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] থেকে বর্ণিত। তিনি বলিতেন, [আরবী]
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২০৬১. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, এরপর থেকে আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে কবরের আযাব থেকে আশ্রয় প্রার্থণা করিতে শুনিয়াছি।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২০৬২. আসমা বিন্ত আবু বকর [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কবরে লোকজন যে পরীক্ষার সম্মুখীন হইবে দাঁড়িয়ে তার উল্লেখ করিতে থাকলে মুসলমানগণ এমন উচ্চস্বরে কাঁদতে লাগলেন যে, আমার জন্য রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর কথা শুনতে বাধা সৃষ্টি হইতে লাগল। যখন কান্নাকাটি থেমে গেল তখন আমি আমার নিকটবর্তী এক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনাকে আল্লাহ তাআলা রহম করুন। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাঁর কথার শেষে কি বলেছিলেন? তিনি বলিলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, আমার নিকট ওহী এসেছে যে, তোমরা দাজ্জালের ফিৎনার ন্যায় কবরে ফিৎনার সম্মুখীন হইবে।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২০৬৩. আব্দুল্লাহ ইবনি আব্বাস[রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] সাহাবায়ে কিরামকে এই দোয়া শিক্ষা দিতেন যেভাবে তিনি তাহাদের কুরআনের সুরা শিক্ষা দিতেনঃ
اللَّهُمَّ إِنَّا نَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ جَهَنَّمَ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২০৬৪. আয়িশাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] একবার আমার কাছে আসলেন তখন আমার কাছে একজন ইয়াহূদী রমণী ছিল। সে বলছিল যে, তোমরা কবরের ফিৎনার সম্মুখীন হইবে। তখন রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] অস্থিরতার সাথে বলিলেন, ইয়াহূদীরাই ফিৎনার সম্মুখীন হইবে। আয়িশাহ [রাঃআঃ] বলেন, কয়েক রাত্রি এভাবে যাওয়ার পর রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, আমার নিকট ওহী এসেছে যে, তোমরা কবরের ফিৎনার সম্মুখীন হইবে। আয়িশাহ [রাঃআঃ] বলেন, এরপর আমি রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে কবরের আযাব থেকে আশ্রয় চাইতে শুনিয়াছি।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২০৬৫. আয়িশাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] দাজ্জালের ফিতনা এবং কবরের আযাব থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করিতেন এবং তিনি বলিতেন, তোমরা নিজ নিজ কবরের আযাবের সম্মুখীন হইবে।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২০৬৬. আয়িশাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, এক ইয়াহূদী রমণী তার কাছে এসে কিছু ভিক্ষা চাইল। তখন আয়িশাহ [রাঃআঃ] তাকে ভিক্ষা দিলে সে বললোঃ আল্লাহ্ তাআলা তোমাকে কবরের আযাব থেকে রক্ষা করুন। আয়িশাহ [রাঃআঃ] বলেন, এতে আমি চিন্তান্বিত হলাম। রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আসলে তার কাছে আমি তা বললাম। তিনি বলিলেন, তারা নিজ নিজ কবরে এমন আযাবের সম্মুখীন হইবে যা চতুষ্পদ জন্তুসমূহ শুনতে পাবে।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২০৬৭. আয়িশাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, মদিনার ইয়াহূদী বৃদ্ধাদের থেকে দুইজন বৃদ্ধা আমার কাছে আসল। তারা বলিল যে, কবরবাসীরা নিজ নিজ কবরে আযাবের সম্মুখীন হইবে। তখন আমি তাহাদের মিথ্যাবাদী মনে করলাম; সত্যবাদী মনে করিতে চাইলাম না। তাই তারা বের হয়ে গেল। অতঃপর রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমার কাছে আসলে আমি বললামঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] মদিনার ইয়াহূদী বৃদ্ধাদের থেকে দুইজন বৃদ্ধা বলিল যে, কবরবাসীগণ তাহাদের কবরে আযাবের সম্মুখীন হইবে। তিনি বলিলেন যে, তারা সত্যই বলেছে; তারা কবরে এমন আযাবের সম্মুখীন হইবে যে, তা সকল চতুষ্পদ জন্তু শুনতে পাবে। তারপর আমি তাঁকে এমন কোন নামাজ আদায় করিতে দেখিনি যাতে তিনি কবরের আযাব থেকে আশ্রয় প্রার্থনা না করিতেন।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৩০.পরিচ্ছেদঃ কবরের উপর খেজুরের ডাল রাখা
২০৬৮. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] মক্কা অথবা মদিনার বাগান সমূহের কোনও এক বাগানে গেলে দুই ব্যক্তির শব্দ শুনতে পেলেন, যারা নিজ নিজ কবরে আযাবের সম্মুখীন হচ্ছিল। তখন রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, তাহাদের কবরে আযাব দেওয়া হচ্ছে। আর তারা কোন বড় অপরাধে শাস্তি পাচ্ছে না। তারপর তিনি বলিলেন, তবে তাহাদের একজন নিজ পেশাব থেকে পবিত্র থাকত না আর অন্যজন চোগলখুরী করে বেড়াত। অতঃপর তিনি একটি খেজুরের ডাল চাইলেন এবং তা দ্বিখণ্ডিত করে প্রত্যেক কবরে তার একটা খণ্ড গেড়ে দিলেন। তখন তাঁকে বলা হলঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]! আপনি এরূপ কেন করিলেন? তিনি বলিলেন, হয়ত এগুলো না শুকানো পর্যন্ত তাহাদের থেকে আযাব লাঘব করা হইতে পারে।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২০৬৯. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] দুইটি কবরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তিনি বলিলেন যে, এই দুইজন ব্যক্তিকে আযাব দেওয়া হচ্ছে কোন বড় অপরাধের জন্য নয় বরং তাহাদের একজন নিজ পেশাব থেকে পবিত্র থাকত না আর অন্যজন চোগলখুরী করে বেড়াত। অতঃপর তিনি একটি তাজা খেজুরের ডাল নিয়ে তা দ্বিখণ্ডিত করে প্রত্যেক কবরে একটি করে গেড়ে দিলেন। সাহাবীগন জিজ্ঞাসা করলেনঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]! আপনি এরূপ কেন করিলেন? তখন তিনি বলিলেন, হয়ত এগুলো শুষ্ক না হওয়া পর্যন্ত এদের আযাব লাঘব করা হইবে।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২০৭০. ইবনি উমর [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, শুনো, যখন তোমাদের কেউ মৃত্যুবরণ করে তখন তাকে সকাল সন্ধ্যা তার স্থান দেখানো হয়। যদি সে বেহেশতী হয় তবে বেহেশতীদের স্থান। আর যদি দোযখী হয় দোযখীদের স্থান দেখানো হয়। আল্লাহ্ তাআলা তাকে কিয়ামতের দিন উঠানোর পূর্ব পর্যন্ত [তাকে এরূপ দেখানো হইবে]।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২০৭১. ইবনি উমর [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন মৃত্যুবরণ করে তখন সকাল সন্ধ্যা তাকে তার স্থান দেখানো হয়। যদি সে জান্নাতী হয় তবে তাকে জান্নাতীদের স্থান এবং যদি জাহান্নামী হয় তবে তাকে জাহান্নামীদের স্থান দেখিয়ে বলা হয় যে, এটাই তোমার স্থান। কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তাআলা তাকে উঠানো পর্যন্ত [তাকে এরূপ দেখানো হইবে]।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২০৭২. ইবনি উমর [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমাদের কারো যখন মৃত্যু হয় তখন সকাল সন্ধ্যা তার স্থান তাকে দেখানো হয়। যদি সে জান্নাতী হয় তবে জান্নাতীদের স্থান। আর জাহান্নামী হলে জাহান্নামীদের স্থান দেখিয়ে বলা হয় যে, এটা তোমার স্থান। কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তাআলা তাকে উঠানো পর্যন্ত [তাকে এরূপ দেখানো হইবে]।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২০৭৩. কাব ইবনি মালিক [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ মুমিনদের রুহ জান্নাতের গাছের পাখীর রুপ ধারন করে থাকিবে, কিয়ামতের দিন তাহাদের স্বীয় শরীরে পুনঃ স্থাপন করা পর্যন্ত। ১
{১} অধিকাংশ আলেমগনের অভিমতঃ ইহা শহীদগণের রুহের বৈশিষ্ট্য।হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২০৭৪. আনাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, একদা আমরা মক্কা এবং মদিনার মাঝপথে উমর [রাঃআঃ]-এর সাথে ছিলাম। তখন তিনি আমাদের নিকট বদরের জিহাদে অংশ গ্রহণকারী মুশরিকদের সম্পর্কে বলিতে লাগলেন। তিনি বলিলেন যে, রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] [সেদিন] আমাদেরকে আগামীকাল তাহাদের পড়ে যাওয়ার স্থান [মৃত্যুর স্থান] সমূহ দেখিয়ে বলেছিলেন, ইনশাআল্লাহ্ ইহা আগামীকাল অমুকের পড়ে যাওয়ার স্থান। উমর [রাঃআঃ] বলেন, আল্লাহ্র কসম যিনি তাঁকে সত্য সহকারে প্রেরণ করিয়াছেন, তারা ঐ সমস্থ স্থান সমূহ ভুল করেনি [দেখানো স্থানেই তারা নিহত হয়েছে]। অতঃপর তাহাদের একটি কুয়ায় [গর্তে] ফেলা হল। তারপর রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাদের ডেকে ডেকে বলিলেন, হে অমুকের পুত্র অমুক! হে অমুকের পুত্র অমুক! তোমাদের রব তোমাদের সাথে যে ওয়াদা করেছিলেন তা কি তোমরা সত্যরূপে পেয়েছ? আল্লাহ্ তাআলা আমার সাথে যে ওয়াদা করেছিলেন তা আমি সত্যরূপে পেয়েছি। তখন উমর [রাঃআঃ] বলিলেন, আপনি এমন দেহের সাথে কথা বলছেন যাদের মধ্যে রূহ নেই। তিনি বলিলেন, আমি যা বলছি তা তোমরা তাহাদের থেকে অধিক শ্রবন করছ না।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২০৭৫. আনাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, মুসলমানগণ এক রাতে বদরের কুপের পাশে আওয়াজ শুনলেনঃ রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] দাড়িয়ে ডাকছিলেন, হে আবু জাহল ইবনি হিশাম, হে শাইবা ইবনি রবীআ, হে উতবা ইবনি রবীআ, হে উমাইয়া ইবনি খালফ! তোমাদের প্রভু তোমাদের সাথে যে অঙ্গীকার করেছিলেন তা কি তোমরা সত্যরূপে পেয়েছ? আমার প্রভু আমার সাথে যে ওয়াদা করেছিলেন তা আমি সত্যরূপে পেয়েছি। সাহাবীগণ বলিলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ [সাঃআঃ]! আপনি তো এমন লোকদের ডাকছেন যারা পচে গিয়েছে। তিনি বলিলেন, আমি যা বলছি তা তাহাদের অপেক্ষা তোমরা অধিক শুনতে পাচ্ছ না কিন্তু তারা উত্তর দানের ক্ষমতা রাখে না।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২০৭৬. ইবনি উমর [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বদরে কূপের কাছে দাঁড়িয়ে বলিলেন, তোমাদের প্রভু তোমাদের সাথে যে ওয়াদা করেছিলেন তা যথার্থ রূপে পেয়েছ কি? তিনি বলিলেন, আমি এখন তাহাদের যা বলছি তা তারা শুনতে পাচ্ছে। এ কথা আয়িশাহ [রাঃআঃ]-কে বলা হলে তিনি বলিলেন, এটা ইবনি উমর [রাঃআঃ]-এর ধারনা। প্রকৃত পক্ষে রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছিলেন, তারা এখন বুঝতে পারছে যে আমি তাহাদের যা বলেছিলাম তা ছিল সত্য। অতঃপর আয়িশাহ [রাঃআঃ]
إِنَّكَ لَا تُسْمِعُ الْمَوْتَى [النمل: 80]
[মৃতকে তো তুমি কথা শুনাতে পারবে না, বধিরকেও পারবেনা আহবান শুনাতে, যখন তারা পিঠ ফিরিয়ে চলে যায়] এই আয়াত পাঠ করিলেন।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২০৭৭. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, প্রত্যেক আদম সন্তানকে মাটি খেয়ে ফেলবে মেরুদণ্ডের হাড়টুকু ব্যতীত; এথেকেই তাঁকে সৃষ্টি করা হয়েছে এ থেকেই তাকে আবার জোড়া দেয়া হইবে। আবু হুরাইরা [রাঃআঃ]- এর রেওয়ায়তে
كُلُّ بَنِي آدَمَ
এবং মুগিরা [রাঃআঃ]-এর রেওয়ায়তে
كُلُّ ابْنِ آدَمَ يَأْكُلُهُ التُّرَابُ إِلَّا عَجْبَ الذَّنَبِ مِنْهُ خُلِقَ، وَفِيهِ يُرَكَّبُ
আছে।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২০৭৮. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আল্লাহ্ তাআলা বলেন, আদম সন্তান আমাকে অস্বীকার করে অথচ তার জন্য উচিত ছিল না আমাকে অস্বীকার করা। আদম সন্তান আমাকে গালি দেয় অথচ তার জন্য উচিত ছিল না আমাকে গালি দেয়া। আমাকে তার অস্বীকার করার অর্থ হল তার একথা বলা যে, আমি তাকে পুনরায় সৃষ্টি করব না যেরূপ প্রথমে সৃষ্টি করেছিলাম অথচ দ্বিতীয়বার সৃষ্টি করা প্রথমবার সৃষ্টি করা অপেক্ষা আমার জন্য কোন কঠিন ব্যাপারই নয়। আর আমাকে তার গালি দেওয়ার অর্থ হলঃ সে বলে যে, আল্লাহ্ তাআলা সন্তান গ্রহন করিয়াছেন অথচ আমি আল্লাহ্ একক ও অদ্বিতীয়, কারো মুখাপেক্ষী নই। আমি কাউকে জন্মও দেইনি আর আমি কারও জাতও নই আর আমার সমকক্ষও কেহ নেই।
হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহীহ
২০৭৯. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে বলিতে শুনিয়াছি যে, এক বান্দা নিজের উপর অত্যাচার করছিল। এমতাবস্থায় তার কাছে মৃত্যু উপস্থিত হলে সে তার পরিবার পরিজন কে বললঃ যখন আমি মৃত্যুবরণ করি তখন তোমরা আমাকে পুড়ে ফেলবে এবং ছাই করে ফেলবে। তারপর আমাকে বাতাসে সাগরে ফেলে দেবে। আল্লাহ্র কসম, যদি আল্লাহ্ তাআলা আমার উপর ক্ষমতা পান তাহলে তিনি আমাকে এমন শাস্তি দিবেন যা তাহাঁর সৃষ্টির কাউকেও দেননি। রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ তার পরিবার পরিজন তাই করিল। [আল্লাহ্ তাআলা কেয়ামতের দিন] ঐ ব্যক্তিকে বলবেন, যে নিজের কিছু অংশ বিনষ্ট করে দিয়েছিলে “তুমি তা ফিরিয়ে দাও।” তখন সে দাঁড়িয়ে যাবে। তখন আল্লাহ্ তাআলা জিজ্ঞেস করিবেনঃ “তুমি কেন এরূপ করেছিলে?” সে বলবে, “তোমার ভয়ে! অতঃপর আল্লাহ্ তাআলা তাকে ক্ষমা করে দিবেন।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২০৮০. হুযায়ফা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, তোমাদের পূর্বেকার এক ব্যক্তি তার আমল সম্পর্কে মন্দ ধারনা করেছিল। যখন তার মৃত্যু উপস্থিত হল সে তার পরিবারের লোকজনকে বললো যে, আমি মৃত্যুবরণ করলে তোমরা আমাকে পুড়ে ফেলবে এবং আমাকে নিশ্চিহ্ন করে সাগরে ফেলে দেবে। কেননা আল্লাহ্ তাআলা যদি আমার উপর ক্ষমতাবান হন তাহলে আমাকে ক্ষমা করবেন না। রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেন, তখন আল্লাহ্ তাআলা ফিরিশতাগনকে আদেশ করলে তারা তার আত্মা কে উপস্থিত করিবে। আল্লাহ্ তাআলা তাকে তখন জিজ্ঞাসা করবেন, “তুমি যা করেছিলে তা করিতে তোমাকে কোন জিনিস উদ্বুদ্ধ করেছিল?” সে বলবে, “হে আমার প্রভু! আমি একমাত্র তোমার ভয়ে ঐরূপ করেছিলাম।” তখন আল্লাহ্ তাআলা তাকে ক্ষমা করে দিবেন।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২০৮১. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে মিম্বারের উপর ওয়াজ করার সময় বলিতে শুনেছিঃ নিশ্চয়ই তোমরা নগ্ন পায়ে, বস্ত্রহীন ও খাৎনাবিহীন অবস্থায় আল্লাহ্র সাথে সাক্ষাৎ করিবে।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২০৮২. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, লোকদের কিয়ামতের দিন উলঙ্গ শরীরে খাৎনাবিহীন অবস্থায় উঠানো হইবে। প্রথম যে ব্যক্তিকে কাপড় পরিধান করানো হইবে তিনি হলেন হযরত ইবরাহীম [আঃ]। অতঃপর তিনি পাঠ করলেনঃ
كَمَا بَدَأْنَا أَوَّلَ خَلْقٍ نُعِيدُهُ [الأنبياء: 104]
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২০৮৩. আয়িশাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন যে, কিয়ামতের দিন লোকদের উঠানো হইবে নগ্ন পায়ে উলঙ্গ শরীরে খাৎনাবিহীন অবস্থায়। তখন আয়িশাহ [রাঃআঃ] বলিলেন যে, লজ্জাস্থানের অবস্থা কিরূপ হইবে? তিনি বললেনঃ সে দিন তাহাদের প্রত্যেকের অবস্থা এমন হইবে যে, তারা প্রত্যেকেই অন্য থেকে বিমুখ থাকিবে।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২০৮৪. আয়িশাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, অবশ্যই তোমাদেরকে [কিয়ামতের দিন] নগ্ন পায়ে উলঙ্গ শরীরে একত্রিত করা হইবে। আমি বললাম যে, পুরুষ এবং রমণীগণ একে অন্যের প্রতি তাকাবে না? তিনি বললেনঃ তাহাদের একে অন্যের প্রতি তাকাবার খেয়াল আসা অপেক্ষা তখন অবস্থা আরো ভয়াবহ হইবে।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২০৮৫. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন লোকজন তিন দল হয়ে হাশরের মাঠে উপস্থিত হইবে। একদল তারা বেহেশতের আশা রাখবে, আর একদল তারা দোযখের ভয়ে ভীত থাকিবে তারা দুই দুইজন, তিন তিনজন, চার চারজন, দশ দশজন এক এক উটে আরোহণ করে আসবে। আর অবশিষ্ট লোকদের অগ্নি তাড়িয়ে আনবে। অগ্নি তাহাদের সাথে দ্বি-প্রহরে অবস্থান করিবে যেখানে তারা দ্বি-প্রহরের সময় অবস্থান করিবে। তাহাদের সাথে রাত্রে অবস্থান করিবে যেখানে তারা রাত্রে অবস্থান করিবে। তাহাদের সাথে সকালে অবস্থান করিবে যেখানে তারা সকালে অবস্থান করিবে। তাহাদের সাথে সন্ধ্যায় অবস্থান করিবে যেখানে তারা সন্ধ্যায় অবস্থান করিবে।
জানাযা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২০৮৬. আবু যর [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, পরম সত্যবাদী রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমার কাছে বর্ণনা করিয়াছেন যে, হাশরের দিন লোকজন তিন দলে বিভক্ত হয়ে উপস্থিত হইবে। একদল হইবে পরিতৃপ্ত ও পোশাক পরিহিত আরোহী, আর একদল হইবে ফিরিশতাগণ তাহাদেরকে সামনা-সামনি টেনে আনবে। আর অগ্নি তাহাদের তাড়িয়ে আনবে। আর একদল হইবে তারা হেটে আসবে দ্রুতগতিতে। তাহাদের পিঠের উপর আল্লাহ্ তাআলা মুসীবত ঢেলে দেবেন। অতএব তাহাদের শক্তি আর অবশিষ্ট থাকিবে না। এমনকি এক ব্যক্তির একটি বাগান হইবে, সে একটি উটের বিনিময়ে তা দিয়ে দিতে চাইবে কিন্তু তা তার সাধ্যের বাইরে হইবে।
জানাযা হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
৩১.পরিচ্ছেদঃ প্রথমে যাকে কাপড় পরিধান করানো হইবে
২০৮৭. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] ওয়াজ করিতে দাঁড়িয়ে বললেনঃ হে লোক সকল! তোমরা আল্লাহ্ তাআলার নিকট একত্রিত হইবে উলঙ্গ অবস্থায়। [আবু দাউদ [রহঃ]-এর বর্ণনায় আছে খালি পায়ে, খাৎনা বিহীন অবস্থায়। এবং ওকী [রহঃ] ও ওয়াহব [রহঃ]-এর বর্ণনায় আছে উলঙ্গ এবং খাৎনাবিহীন অবস্থায়] যে রকম তোমাদের প্রথম সৃষ্টি করা হয়েছিল ঐ রকমই তোমাদের পুনরুত্থান করা হইবে। তিনি বলিলেন, প্রথম যে ব্যক্তিকে কিয়ামতের দিন কাপড় পরিধান করানো হইবে তিনি ইবরাহীম [আঃ] এবং তাকে আনা হইবে। ওয়াহব এবং ওকী [রহঃ]-এর বর্ণনায় আছে, আমার উম্মতের কিছু লোককে বাম পার্শ্বে অবস্থানকারীদের মধ্যে আনা হইবে। তখন আমি বলব, হে আল্লাহ্! এরা তো আমার উম্মত! বলা হইবে যে আপনি জানেননা এরা আপনার পরে ধর্মে কি নতুন নতুন জিনিষ আবিষ্কার করেছিল। তখন আমি এক নেক্কার বান্দা যেভাবে বলেছিলেন তদ্রূপ বলবঃ
كَمَا بَدَأْنَا أَوَّلَ خَلْقٍ نُعِيدُهُ [الأنبياء: 104]
তখন বলা হইবে যে, এরা সর্বদা পেছনে থাকত। আবু দাউদ [রহঃ]-এর বর্ণনায় আছে তারা মুরতাদ হয়ে গিয়েছিল আপনি তাহাদের ছেড়ে আসার পর।
জানাযা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৩২.পরিচ্ছেদঃ শোকে সমবেদনা প্রকাশ
২০৮৮. ইবনি আবু যারকা মুআবিয়ার পিতা কুররা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] যখন বসতেন তখন সাহাবীদের অনেকে তাহাঁর কাছে এসে বসতেন। তাঁদের মধ্যে একজনের অল্প বয়স্ক একটি ছেলে ছিল। তিনি তাহাঁর ছেলেটিকে পেছনের দিক থেকে নিজের সামনে এনে বসাতেন। অতঃপর ছেলেটি মৃত্যুবরণ করিল। তিনি বিষণ্ণ হয়ে পড়লেন। তাহাঁর ছেলের কথা মনে করে তিনি মজলিসে উপস্থিত হইতে পারতেন না। রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাকে না দেখে জিজ্ঞেস করিলেন যে, আমি অমুক ব্যক্তিকে কেন দেখছি না? সাহাবীগণ বলিলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]! আপনি তাহাঁর ছোট ছেলেটিকে দেখেছিলেন সে মৃত্যুবরণ করেছে। পরে তাহাঁর সাথে সাক্ষাৎ করে রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমার ছোট ছেলেটির কি হয়েছে? সে ব্যক্তি বললো, ছেলেটির মৃত্যু হয়েছে। তখন তিনি তাঁকে সান্তনা দিয়ে ধৈর্য ধারন করিতে বলিলেন। তারপর তিনি বলিলেন যে, হে অমুক! তোমার কাছে কোনটি পছন্দনীয় – তাহাঁর দ্বারা তোমার পার্থিব জীবন সুখময় করা; না কাল কিয়ামতে তুমি জান্নাতের যে দরজা দিয়েই প্রবেশ করিবে তাকে তথায়ই পাওয়া, তোমার পূর্বেই সেখানে পৌঁছে তোমার জন্য দরজা খুলে দেওয়া? সে বলিল, হে আল্লাহ্র রাসুল বরং সে আমার পূর্বে জান্নাতের দরজায় গিয়ে আমার জন্য খুলে দেবে এটাই আমার কাছে অধিক পছন্দনীয়। তিনি বলিলেন, তাহলে তা-ই তোমার জন্য হইবে।
জানাযা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৩৩.পরিচ্ছেদঃ অন্য প্রকার
২০৮৯. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, মুসা [আ]-এর কাছে মালাকুল মউতকে প্রেরণ করা হল। যখন মালাকুল মউত তাহাঁর কাছে পৌঁছলেন তিনি তাঁকে এক চড় মারলেন যাতে তাহাঁর একটি চক্ষু বের হয়ে গেল।১ তিনি তাহাঁর প্রভুর কাছে গিয়ে বললেনঃ আপনি আমাকে এমন এক বান্দার কাছে প্রেরণ করিয়াছেন যিনি মৃত্যুর ইচ্ছা পোষণ করেন না। আল্লাহ্ তাআলা তাহাঁর চক্ষু ফিরিয়ে দিয়ে বলিলেন যে, এবার তাহাঁর কাছে ফিরে গিয়ে বলবে, তিনি যেন একটি গরুর পিঠে তাহাঁর হাত রাখে। তাহাঁর হাতের নীচে যতগুলো পশম পড়বে প্রত্যেক পশমের পরিবর্তে এক বৎসর করে তাহাঁর আয়ু বাড়িয়ে দেওয়া হইবে। তিনি {মুসা[আ]} বলিলেন, হে পরওয়ারদিগার! তারপর কি হইবে? তিনি বলিলেন, মৃত্যু। তখন মুসা [আ] বলিলেন, তাহলে এখনই মৃত্যু হয়ে যাক। তিনি আল্লাহ্র কাছে প্রার্থনা করিলেন, তাঁকে যেন পবিত্রভুমি [বায়তুল মুকাদ্দাস] হইতে একখানা প্রস্তর নিক্ষেপের দূরত্ব পরিমান নিকটবর্তী স্থানে রাখা হয়। রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেন, যদি আমি তথায় থাকতাম তাহলে তোমাদেরকে তাহাঁর কবর দেখিয়ে দিতাম। যা পথের এক পার্শ্বে লাল বালুকা স্তূপের নীচে রয়েছে।
জানাযা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
Leave a Reply