মৃত ব্যক্তির কাফন কস্তুরী গোসল ও করনীয় বর্জনীয়

মৃত ব্যক্তির কাফন কস্তুরী গোসল ও করনীয় বর্জনীয়

মৃত ব্যক্তির কাফন কস্তুরী গোসল ও করনীয় বর্জনীয় >> সুনানে নাসাই শরিফের মুল সুচিপত্র দেখুন

পর্বঃ ২১ঃ জানাযা, হাদীস (১৮৩৯-১৯০৬)

১.পরিচ্ছেদঃ মৃত ব্যক্তিকে চুমু দেয়া
২.পরিচ্ছেদঃ মৃত ব্যক্তিকে ঢেকে দেয়া
৩.পরিচ্ছেদঃ মৃত ব্যক্তির জন্য ক্রন্দন করা
৪.পরিচ্ছেদঃ মৃতের জন্য ক্রন্দনের নিষেধাজ্ঞা
৫.পরিচ্ছেদঃ মৃতের জন্য বিলাপ করা
৬.পরিচ্ছেদঃ মৃত ব্যক্তির জন্য ক্রন্দন করার অনুমতি
৭..পরিচ্ছেদঃ জাহেলী যুগের দোয়া
৮.পরিচ্ছেদঃ বিপদের সময় চিৎকার করা
৯.পরিচ্ছেদঃ গন্ডদেশে আঘাত করা
১০.পরিচ্ছেদঃ দাড়ি বা মাথার চুল উপড়ে ফেলা
১১.পরিচ্ছেদঃ আঁচল ছিঁড়ে ফেলা
১২.পরিচ্ছেদঃ বিপদের সময় সওয়াবের নিয়তে ধৈর্যধারণ করার আদেশ
১৩.পরিচ্ছেদঃ ধৈর্যধারণ এবং সওয়াবের নিয়ত করার প্রতিদান
১৪.পরিচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি তার তিন সন্তানের মৃত্যুতে ধৈর্যধারণ করেছে তার প্রতিদান
১৫.পরিচ্ছেদঃ যে ব্যক্তির তিন সন্তান মৃত্যুবরণ করে
১৬.পরিচ্ছেদঃ যে ব্যক্তির জীবদ্দশায় তিন সন্তানের মৃত্যু হয়
১৭.পরিচ্ছেদঃ মৃত্যু সংবাদ দেওয়া
১৮.পরিচ্ছেদঃ পানি ও কুল পাতা দিয়ে মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেওয়া
১৯.পরিচ্ছেদঃ গরম পানি দিয়ে মৃত ব্যক্তির গোসল দেওয়া
২০.পরিচ্ছেদঃ মৃতের মাথার চুল খুলে দেওয়া
২১.পরিচ্ছেদঃ মৃতের ডান দিক ও ওযুর স্থান
২২.পরিচ্ছেদঃ মৃতকে বেজোড় গোসল দেওয়া
২৩.পরিচ্ছেদঃ মৃত ব্যক্তিকে পাঁচবারের অধিক গোসল দেওয়াঃ
২৪.পরিচ্ছেদঃ মৃত ব্যক্তিকে সাতবারের অধিক গোসল দেওয়াঃ
২৫.পরিচ্ছেদঃ মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেওয়ার সময় কর্পূর ব্যবহার করাঃআঃ
২৬.পরিচ্ছেদঃ শরীরের সংগে মিলিয়ে পোশাক দেওয়াঃ
২৭.পরিচ্ছেদঃ উত্তম কাফন পরিধান করানোর আদেশঃ
২৮.পরিচ্ছেদঃ কোন ধরনের কাফন উত্তম?
২৯.পরিচ্ছেদঃ নাবী [সাঃআঃ] এর কাফন
৩০.পরিচ্ছেদঃ কাফনে কুর্তা ব্যবহার করা
৩১.পরিচ্ছেদঃ মুহরিম মৃত্যুবরণ করলে তাকে কিভাবে কাফন পরানো হইবে?
৩২.পরিচ্ছেদঃ কস্তুরী

১.পরিচ্ছেদঃ মৃত ব্যক্তিকে চুমু দেয়া

১৮৩৯. আয়িশাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

যে, আবু বক্‌র [রাঃআঃ] নাবী [সাঃআঃ]-এর চক্ষুদ্বয়ের মাঝখানে চুমু দিয়েছিলেন, তখন তিনি ছিলেন মৃত।

জানাযা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

১৮৪০. ইবনি আব্বাস এবং আয়িশাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

আবু বক্‌র [রাঃআঃ] নাবী [সাঃআঃ] –কে চুমু দিয়েছিলেন, তখন তিনি ছিলেন মৃত।

জানাযা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

১৮৪১. আবু সালামা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

আয়িশাহ [রাঃআঃ] তাঁকে অবহিত করিয়াছেন যে, আবু বক্‌র [রাঃআঃ] তাহাঁর “সুনহা” নামক স্থানের বাসস্থান থেকে একটি ঘোড়ার আরোহণ করে এসে অবতরণ করিলেন এবং মসজিদে প্রবেশ করিলেন, তিনি কারো সাথে কোন কথাবার্তা না বলে আয়িশাহ [রাঃআঃ]-এর কাছে গেলেন। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ইয়ামানী চাদরে ঢাকা ছিলেন। তিনি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর মুখমণ্ডল থেকে তা খুলে ফেলে ঝুঁকে পড়ে তাঁকে চুমু খেলেন এবং কাঁদতে কাঁদতে বলিতে লাগলেনঃ আপনার উপর আমার মাতা-পিতা কুরবান হোক, আল্লাহ্‌র শপথ! আল্লাহ্‌ তাআলা আপনাকে কখনো দুবার মৃত্যু দান করবেন না। যে মৃত্যু আপনার জন্য নির্ধারিত ছিল তা আপনি বরণ করে নিয়েছেন।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

২.পরিচ্ছেদঃ মৃত ব্যক্তিকে ঢেকে দেয়া

১৮৪২. ইবনি মুনকাদির [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

তিনি বলেনঃ আমি জাবির [রাঃআঃ] –কে বলিতে শুনিয়াছি যে, উহুদের জিহাদের দিন আমার পিতাকে আনা হল, তখন তাহাঁর দেহ ছিল বিকৃত অবস্থায়। তাঁকে চাদর দ্বারা ঢাকা অবস্থায় রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] –এর সামনে রাখা হল। আমি তাহাঁর চাদর খুলতে চাইলে আমার গোত্রের লোকেরা আমাকে বারন করিল। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আদেশ করিলেন তা খোলা হল, যখন খোলা হল তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কোন ক্রন্দনকারী মহিলার আওয়াজ শুনে জিজ্ঞাসা করিলেন, এ কে? লোকেরা বলিল, এ আমরের মেয়ে বা বোন হইবে তিনি বলিলেন, তুমি ক্রন্দন করো না অথবা [তিনি বলিলেন] তুমি ক্রন্দন কেন করছ? ফেরেশতারা তাঁকে উঠিয়ে নেয়া পর্যন্ত সর্বক্ষন স্বীয় পাখা দ্বারা ছায়া প্রদান করছিল।

জানাযা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৩.পরিচ্ছেদঃ মৃত ব্যক্তির জন্য ক্রন্দন করা

১৮৪৩. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

তিনি বলেন, যখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]–এর ছোট মেয়ের মৃত্যুর সময় উপস্থিত হল, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাকে উঠিয়ে নিয়ে বক্ষের সাথে মিলালেন। তারপর নিজের হাত উপর রাখলেন। এরপর তার মৃত্যু হয়ে গেল আর সে তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]–এর সামনে ছিল। উম্মে আয়মান কেঁদে উঠলে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাঁকে বলিলেন “হে উম্মে আয়মান, তুমি কাঁদছো অথচ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তোমার সামনে উপস্থিত রয়েছেন?” তিনি বলিলেন, “আমি কেন কাঁদব না যখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] স্বয়ং কাঁদছেন? রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, আমি সেচ্ছায় কাঁদছি না বরং যে অশ্রু তুমি দেখছ তা হল আল্লাহ্‌ তাআলার রহমত বিশেষ। অতঃপর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, মুমিন সর্বাবস্থায় ভাল থাকে, তার পার্শ্বদ্বয় থেকে আত্মা বের করা হয় অথচ তখনও সে আল্লাহ্‌ তাআলার প্রশংসা করিতে থাকে।

জানাযা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

১৮৪৪. আনাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

ফাতিমা [রাঃআঃ] রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর ইন্তিকালে এরূপ ক্রন্দন করেছিলেন এবং বলেছিলেনঃ “হে আমার পিতা! কোন্ বস্তু তাঁকে তাহাঁর পরওয়ারদিগারের অতি নিকটবর্তী করেছে? হে আমার পিতা! আমরা জিবরাঈল [আ]-এর নিকট তাহাঁর মৃত্যু শোক প্রকাশ করছি। হে আমার পিতা! জান্নাতুল ফিরদাউস যাঁর বাসস্থান।”

জানাযা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

১৮৪৫. জাবির [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

যে তাহাঁর পিতা উহুদের জিহাদের দিনে শহীদ হয়ে গিয়েছিলেন, আমি তাহাঁর মুখমণ্ডল থেকে কাপড় সরিয়ে ফেলছিলাম এবং ক্রন্দন করছিলাম, আর লোকেরা আমাকে বারণ করছিল কিন্তু রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাকে বারণ করছিলেন না, আমার ফুফুও তাহাঁর জন্য ক্রন্দন করছিলেন। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, তুমি তাহাঁর জন্য ক্রন্দন করো না, যেহেতু তোমরা তাঁকে উঠিয়ে নেওয়া অবধি ফেরেশতারা তাঁকে স্বীয় ডানা দ্বারা ছায়া দিচ্ছিল।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৪.পরিচ্ছেদঃ মৃতের জন্য ক্রন্দনের নিষেধাজ্ঞা

১৮৪৬. জাবির ইবনি আতীক [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

নাবী [সাঃআঃ] আব্দুল্লাহ ইবনি সাবিত [রাঃআঃ]-এর শুশ্রুষার জন্য জন্য গিয়ে দেখিতে পেলেন যে, তাহাঁর মৃত্যু আসন্ন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাঁকে উচ্চ স্বরে ডেকেও তাহাঁর কোন সাড়া শব্দ না পেয়ে [আরবী] পড়লেন এবং বলিলেন, হে আবু রবী! আমাদের সম্মুখে তোমার উপর আল্লাহ্ তাআলার হুকুম বিজয়ী হইতে যাচ্ছে [তুমি মৃত্যু বরণ করেছ]। একথা শুনে কিছু মহিলা উচ্চ স্বরে ক্রন্দন শুরু করে দিলে ইবনি আতীক [রাঃআঃ] [জাবির] তাহাদের শান্ত করাতে লাগলেন। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, তাহাদের ছেড়ে দাও। যখন মৃত্যু হয়ে যাবে তখন কোনই ক্রন্দনকারিণী ক্রন্দন করিবে না। সাহাবীরা জিজ্ঞাসা করিলেন, “উজুব” শব্দের অর্থ কি ইয়া রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]? তিনি বলিলেন, “মৃত্যু”। তাহাঁর কন্যা বলিল, যে আমি তো এ আশাই করতাম যে, আপনি শহীদ হইবেন। আপনি তো শাহাদাতের যাবতীয় পাথেয় সংগ্রহ করেই রেখেছিলেন। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, আল্লাহ্ তাআলা তাহাঁর নিয়্যত অনুযায়ী তাঁকে শাহাদাতের সওয়াব দিয়ে দিয়েছেন। আচ্ছা, তোমরা শাহাদাত কাকে মনে কর? তাঁরা বলিলেন, আল্লাহ্‌র রাস্তায় মৃত্যুবরণ করাকে। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, আল্লাহ্‌র রাস্তায় মৃত্যুবরণ করা ব্যতীতও আরো সাত প্রকারের শাহাদাত আছেঃ ১। প্লেগ রোগে মৃত ব্যক্তি শহীদ ২। পেটের পীড়ায় মৃত ব্যক্তি শহীদ ৩। পানিতে ডুবে মৃত ব্যক্তি শহীদ, ৪। প্রাচীর বা ঘর চাপা পড়ে মৃত ব্যক্তি শহীদ ৫। আভ্যন্তরীণ বিষ ফোঁড়ায় মৃত ব্যক্তি শহীদ ৬। অগ্নিদাহে মৃত ব্যক্তি শহীদ ৭। প্রসবকালে মৃত রমণী শহীদ।

জানাযা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

১৮৪৭. আয়িশাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

তিনি বলেন, যখন যায়দ ইবনি হারিসা, জাফর ইবনি আবু তালিব এবং আব্দুল্লাহ ইবনি রাওয়াহা [রাঃআঃ]-এর শাহাদাত প্রাপ্তির সংবাদ এসে পৌঁছলো, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] [মসজিদে] বসে পড়লেন এবং তাহাঁর মুখমণ্ডলে বিষণ্নতার রেখা ফুটে উঠল, আমি দরজার ছিদ্রপথ দিয়ে তাঁকে দেখছিলাম। এক ব্যক্তি এসে বলিল, জাফর [রাঃআঃ]-এর পরিবারবর্গ ক্রন্দন করছে। তিনি বলিলেন, তুমি গিয়ে তাহাদের নিষেধ কর। সে চলে গেল এবং আবার এসে বললো, আমি তাহাদের নিষেধ করেছিলাম কিন্তু তারা ক্রন্দন করছেই। তিনি বলিলেন, তুমি গিয়ে তাহাদের নিষেধ কর। সে চলে গেল এবং পুনরায় এসে বললো, আমি তাহাদের নিষেধ করেছিলাম কিন্তু তারা ক্রন্দন করছেই। তিনি বলিলেন, তুমি গিয়ে তাহাদের মুখে মাটি ভরে দাও। আয়িশাহ [রাঃআঃ] বলেন; আমি বললাম, আল্লাহ তাআলা অভাগার নাসিকা ধূলা ধুসরিত করে দিক, আল্লাহর শপথ! তুমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে কষ্ট না দিয়ে ছাড়লে না, তোমাকে যা বলা হয়েছিল, তুমি তা করিতে পারলে না।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

১৮৪৮. উমর [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

নাবী [সাঃআঃ] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মৃতকে তার পরিবারবর্গের তার উপর ক্রন্দনের কারণে শাস্তি দেওয়া হয়।

জানাযা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

১৮৪৯. আব্দুল্লাহ ইবনি সুবায়হ [রহঃ] হইতে বর্ণীত

নাবী [সাঃআঃ] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি মুহাম্মদ ইবনি সীরীন [রহঃ]-কে বলিতে শুনেছিঃ একদা ইমরান ইবনি হুসায়ন [রাঃআঃ]-এর কাছে উল্লেখ করা হল যে, মৃতকে জীবিতদের ক্রন্দনের কারণে শাস্তি দেওয়া হয়। ইমরান [রাঃআঃ] বলিলেন, তা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন।

জানাযা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

১৮৫০. উমর [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

নাবী [সাঃআঃ] থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, মৃত ব্যক্তিকে তার পরিবারবর্গের তার জন্য ক্রন্দনের কারণে শাস্তি দেওয়া হয়।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৫.পরিচ্ছেদঃ মৃতের জন্য বিলাপ করা

১৮৫১. হাকীম ইবনি কায়স [রহঃ] হইতে বর্ণীত

কায়স ইবনি আসিম [রাঃআঃ] বলেছেন, তোমরা আমার জন্য বিলাপ করিবে না। কেননা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর জন্য বিলাপ করা হয়নি। [সংক্ষিপ্ত]

জানাযা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

১৮৫২. আনাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] মহিলাদের বায়আত করার সময়ে অঙ্গীকার নিয়েছিলেন যে, তারা মৃতের জন্য বিলাপ করিবে না। তখন তারা বললো, ইয়া রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] মহিলারা জাহিলী যুগে মৃতের জন্য বিলাপে আমাদের সহযোগিত করত। এখন আমরা কি মৃতের জন্য বিলাপে তাহাদের সহযোগিতা করব না? রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, ইসলামে মৃতের জন্য বিলাপ কোন সহযোগিতা নেই।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

১৮৫৩. উমর [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনিয়াছি যে, মৃতকে তার জন্য বিলাপের কারণে কবরে শাস্তি দেওয়া হয়।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

১৮৫৪. ইমরান ইবনি হুসায়ন [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

তিনি বলেন, মৃতকে তার পরিবারবর্গের তার জন্য বিলাপের কারণে শাস্তি দেওয়া হয়। তখন তাকে এক ব্যক্তি বলিল, ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে আপনি কি বলেন, যে খোরাসান নামক স্থানে মারা গেল আর তার পরিবারবর্গ তার জন্য এখানে বিলাপ করিল। তাকেও কি তার পরিবারবর্গের তার জন্য বিলাপের কারণে শাস্তি দেওয়া হইবে? তিনি বলিলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] সত্য বলেছেন আর তুমি মিথ্যা বলছ।

হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

১৮৫৫. ইবনি উমর [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন যে, মৃত ব্যক্তিকে তার জন্য তার পরিবারবর্গের ক্রন্দনের কারণে শাস্তি দেওয়া হয়। অত্র হাদিস আয়িশাহ [রাঃআঃ]-এর সামনে উল্লেখ করা হলে তিনি বলিলেন, ইবনি উমর ভুল করিয়াছেন। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] একবার এক কবরের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বলেছিলেন, এ কবরবাসীকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে আর তার পরিবারবর্গ তার জন্য ক্রন্দন করছে। অতঃপর আয়িশাহ [রাঃআঃ] পাঠ করিলেন

وَلَا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِزْرَ أُخْرَى [الأنعام: 164]

কোন বহনকারী অন্যের পাপের বোঝা বহন করিবে না]।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

১৮৫৬. আমর [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

তিনি আবু বকর [রাঃআঃ]-কে খবর দিয়েছেনঃ যখন আয়িশাহ [রাঃআঃ]-এর কাছে উল্লেখ করা হল যে, আব্দুল্লাহ ইবনি উমর [রাঃআঃ] বলছেনঃ মৃত ব্যক্তিকে তার জন্য জীবিতদের ক্রন্দনের কারণে শাস্তি দেওয়া হয়। তখন তিনি বলিলেন, আল্লাহ তাআলা আবু আব্দুর রহমান [আব্দুল্লাহ ইবনি উমর] [রাঃআঃ]-কে ক্ষমা করুন! তিনি মিথ্যা বলেন নি কিন্তু তিনি ভুলে গেছেন বা ভুল করে ফেলেছেন। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] একবার এক ইহূদী মহিলার কবরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন যার জন্য ক্রন্দন করা হচ্ছিল। তখন তিনি বলেছিলেন, তারা ঐ মৃতার জন্য ক্রন্দন করছে আর ঐ মৃতাকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

১৮৫৭. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

তিনি বলেন, আয়িশাহ [রাঃআঃ] বলেছেনঃ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তো বলেছিলেন যে, আল্লাহ্ তাআলা কাফিরের শাস্তি বৃদ্ধি করে থাকেন তার কোন কোন আত্মীয়-স্বজনের ক্রন্দনের কারণে।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

১৮৫৮. আব্দুল জব্বার ইবনি ওয়ারদ [রহঃ] হইতে বর্ণীত

তিনি ইবনি আবু মুলায়কা [রহঃ]-কে বলিতে শুনেছেনঃ যখন উম্মে আবান মৃত্যুবরণ করিল, আমি লোকজনসহ তথায় উপস্থিত হয়ে আব্দুল্লাহ ইবনি উমর [রাঃআঃ] ও ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ]-এর সামনে বসলাম। তখন মহিলারা ক্রন্দন করলে ইবনি উমর [রাঃআঃ] বলিলেন, এদের ক্রন্দন থেকে কি নিষেধ করা হয়নি? কেননা, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে বলিতে শুনিয়াছি যে, মৃত ব্যক্তিকে তার জন্য তার আত্মীয়-স্বজনের কোন কোন ক্রন্দনের কারণে শাস্তি দেওয়া হয়। তখন ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] বলিলেন, উমর [রাঃআঃ] এরূপও বলেছিলেন। আমি উমর [রাঃআঃ]-এর সংগে বের হলাম। আমরা যখন “বায়দা নামক প্রান্তরে ছিলাম তখন উমর [রাঃআঃ] বৃক্ষের নীচে একদল আরোহীকে দেখে বলিলেন, দেখতো আরোহী কারা? আমি গিয়ে দেখলাম যে, সুহায়ব [রাঃআঃ] এবং তাহাঁর পরিবারবর্গ। তখন আমি তাহাঁর কাছে এসে বললাম, হে আমীরুল মুমিনীন, সুহায়ব এবং তাহাঁর পরিবারবর্গ। তখন তিনি বলিলেন, তুমি আমার সামনে সুহায়বকে উপস্থিত কর। যখন আমরা মদীনায় প্রবেশ করলাম এবং উমর [রাঃআঃ] আঘাতপ্রাপ্ত হলেন, তখন সুহায়ব [রাঃআঃ] তাহাঁর সামনে বসে ক্রন্দন করছিলেন এবং বলছিলেন, হে আমার প্রিয় ভ্রাতা! হে আমার প্রিয় ভ্রাতা! তখন উমর [রাঃআঃ] বলিলেন, হে সুহায়ব [রাঃআঃ]! তুমি ক্রন্দন করো না, যেহেতু আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনিয়াছি যে, মৃত ব্যক্তিকে তার জন্য তার আত্মীয়-স্বজনের কোন কোন ক্রন্দনের কারণে শাস্তি দেওয়া হয়। সুহায়ব [রাঃআঃ] বলেন, আমি এ ঘটনা আয়িশাহ [রাঃআঃ]-এর সামনে উল্লেখ করলে তিনি বলিলেন, আল্লাহ্‌র কসম! তোমরা এ রকম হাদিস বর্ণনা করছ না দুজন মিথ্যাবাদীর থেকে। তবে হাঁ শ্রবনেন্দ্রিয় কখনো ভুল করে। নিশ্চয় তোমাদের জন্য কুরআনে এমন আয়াত আছে যা তোমাদের আশ্বস্ত করে দেবে ঃ

أَلَّا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِزْرَ أُخْرَى [النجم: 38]

[কোন বহনকারী অন্যের পাপের বোঝা বহন করিবে না]। হ্যাঁ, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন যে, কাফিরের জন্য তার আত্মীয়-স্বজনের ক্রন্দনের কারণে আল্লাহ্ তাআলা তার শাস্তি বৃদ্ধি করে থাকেন।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৬.পরিচ্ছেদঃ মৃত ব্যক্তির জন্য ক্রন্দন করার অনুমতি

১৮৫৯. সালাম ইবনি আযরাক [রহঃ] হইতে বর্ণীত

তিনি বলেন, আমি আবু হুরাইরা [রাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছিঃ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর পরিবারবর্গ থেকে একব্যক্তি মৃত্যুবরণ করলে মহিলাগণ একত্রিত হয়ে তার জন্য অশ্রুবর্ষণ করিতে শুরু করিল। উমর [রাঃআঃ] দাঁড়িয়ে তাহাদের নিষেধ করিতে এবং সরায়ে দিতে উদ্যত হলে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, হে উমর, তাহাদের ছেড়ে দাও। কেননা চক্ষু অশ্রুবিসর্জনকারী, হৃদয় ব্যথাতুর আর বিয়োগ মুহূর্তও নিকটবর্তী।

হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৭.পরিচ্ছেদঃ জাহেলী যুগের দোয়া

১৮৬০. আব্দুল্লাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, ঐ ব্যক্তি আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়, যে গণ্ডদেশে আঘাত করে, আঁচল ছিঁড়ে এবং জাহিলী যুগের দোয়ার ন্যায় দোয়া করে।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৮.পরিচ্ছেদঃ বিপদের সময় চিৎকার করা

১৮৬১. সাফওয়ান ইবনি মুহরিয [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

তিনি বলেন, আবু মূসা [রাঃআঃ] বেহুঁশ হয়ে গেলে তাহাঁর জন্য সবাই ক্রন্দন করিতে লাগলেন। তখন তিনি বলিলেন, আমি তোমাদের সাথে সম্পর্কে ছিন্ন করে ফেলছি, যেরূপভাবে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাদের কাছে থেকে সম্পর্কে ছিন্ন করে ফেলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ঐ ব্যক্তি আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়, যে বিপদে চুল বা দাড়ি উপড়ে ফেলে, আঁচল ছিঁড়ে ফেলে এবং সজোরে ক্রন্দন করিতে থাকে।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৯.পরিচ্ছেদঃ গন্ডদেশে আঘাত করা

১৮৬২. আব্দুল্লাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

নাবী [সাঃআঃ] বলেছেন, ঐ ব্যক্তি আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয় যে [কারো মৃত্যুর কারণে] গণ্ডদেশে আঘাত করে, আঁচল ছিঁড়ে ফেলে এবং সে জাহিলী যুগের দোয়ার ন্যায় দোয়া করে।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

১০.পরিচ্ছেদঃ দাড়ি বা মাথার চুল উপড়ে ফেলা

১৮৬৩. আবু বুরদা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

তাঁরা বলেন, যখন আবু মূসা [রাঃআঃ]-এর অসুখ বেড়ে গেল এবং তিনি বেহুঁশ হয়ে পড়লেন। তাহাঁর স্ত্রী সজোরে চিৎকার করিতে করিতে আসলেন। তাঁরা বলেন, তাহাঁর চেতনা ফিরে আসলে তিনি বলিলেন, আমি কি তোমাকে সংবাদ দেইনি যে, আমি ঐ ব্যক্তির সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করছি, যার সাথে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] সম্পর্কচ্ছেদ করিয়াছেন। তাঁরা বলেন, তিনি তাহাঁর স্ত্রীর সামনে বর্ণনা করিলেন যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন যে, আমি ঐ ব্যক্তির সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করছি যে, দাড়ি বা মাথার চুল উপড়ে ফেলে, আঁচল ছিঁড়ে ফেলে এবং সজোরে চিৎকার করে।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

১১.পরিচ্ছেদঃ আঁচল ছিঁড়ে ফেলা

১৮৬৪. আব্দুল্লাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

নাবী [সাঃআঃ] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ঐ ব্যক্তি আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়, যে গণ্ডদশে আঘাত করে, আঁচল ছিড়ে ফেলে এবং জাহিলী যুগের দোয়ার ন্যায় দোয়া করে।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

১৮৬৫. আবু মূসা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

তিনি একবার বেহুঁশ হয়ে গেলে তাহাঁর এক বাঁদী ক্রন্দন করিলেন। যখন তাহাঁর চেতনা ফিরে আসল তখন তিনি তাকে বলিলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যা বলেছেন তার সংবাদ কি তোমার কাছে পৌঁছেনি? আমরা তাহাঁর কাছে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলিলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, ঐ ব্যক্তি আমার উম্মাতের অন্তর্ভুক্ত নয়, যে সজোরে চিৎকার করে, দাড়ি বা মাথার চুল উপড়ে ফেলে এবং আঁচল ছিঁড়ে ফেলে।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

১৮৬৬. আবু মূসা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, ঐ ব্যক্তি আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়, যে মাথার চুল বা দাড়ি উপড়ে ফেলে সজোরে চিৎকার করে এবং আঁচল ছিঁড়ে ফেলে।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

১৮৬৭. কারছা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

তিনি বলেন, যখন আবু মূসা [রাঃআঃ]- এর অসুখ বেড়ে গেল, তাহাঁর স্ত্রী সজোরে চিৎকার করিতে লাগলেন। তিনি বলিলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যা বলেছেন, কি তোমার জানা নেই? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ জানা আছে। অতঃপর চুপ হয়ে গেলে তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হল, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কি বলেছিলেন, তিনি বলিলেন যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] অভিশাপ দিয়েছেন ঐ ব্যক্তিকে যে মাথার চুল বা দাড়ি উপড়ে ফেলে, সজোরে চিৎকার অথবা আঁচল ছিঁড়ে ফেলে।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

১২.পরিচ্ছেদঃ বিপদের সময় সওয়াবের নিয়তে ধৈর্যধারণ করার আদেশ

১৮৬৮. উসামা ইবনি যায়দ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ]-এর কন্যা তাহাঁর কাছে সংবাদ পৌঁছালেন যে, আমার এক ছেলে মৃত্যু শয্যায় শায়িত। অতএব আপনি আমাদের এখানে আসুন। তখন তিনি সালাম পাঠিয়ে বলিলেন, আল্লাহ তাআলা যা নিয়ে যান তা তাহাঁরই এবং যা দান করেন তাও তাহাঁরই। আর প্রতিটি বস্তু নির্দিষ্ট সময়ে আল্লাহর কাছে পৌঁছে যায়। অতএব, তুমি ধৈর্যধারণ কর এবং সওয়াবের আশা রাখ। অতঃপর তিনি কসম দিয়ে তাহাঁর কাছে পাঠালেন, যেন তিনি তাহাঁর কাছে অবশ্যই আসেন। তখন তিনি দাঁড়ালেন; তাহাঁর সাথে সাদ ইবনি উবাদাহ [রাঃআঃ] মুআয ইবনি জাবাল [রাঃআঃ] উবায় ইবনি কাব [রাঃআঃ] যায়দ ইবনি সাবিত [রাঃআঃ] এবং আরো কিছু লোক ছিলেন। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সামনে ছেলেকে উঠালেন তখন তার হৃদস্পন্দন বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল। এতদদর্শনে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর আঁখিদ্বয় অশ্রুপাত করিতে লাগল। তখন সাদ [রাঃআঃ] বলিলেন, ইয়া রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]! এ কি? তিনি বলিলেন, এ হল রহমত বিশেষ যা আল্লাহ তাআলা তাহাঁর বান্দাদের হৃদয়ে রেখে থাকেন। আর আল্লাহ তাআলা তাহাঁর বান্দাদের মধ্যে দয়াবানদের উপর দয়া করে থাকেন।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

১৮৬৯. সাবিত [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

তিনি বলেন, আমি আনাস [রাঃআঃ]-কে বলিতে শুনিয়াছি, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, ধৈর্যধারণ করা হল প্রথম বিপদের সময়ে।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

১৮৭০. বুরারা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

এক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর কাছে আসল। তার সাথে তার এক পুত্রও ছিল। তিনি তাকে বলিলেন, তুমি কি একে মহব্বত কর? ঐ ব্যক্তি বলিল, আল্লাহ আপনাকে এরূপ মহব্বত করুন, যেরূপ আমি তাকে মহব্বত করি। অতঃপর সে ছেলে মারা গেল। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ছেলেকে দেখিতে না পেয়ে তার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করিলেন এবং বলিলেন, তুমি কি আনন্দিত হইবে না যে, তুমি জান্নাতের সে দরজা দিয়েই প্রবেশ করিবে যে দরজার সামনে তোমার ছেলেকে পাবে, তোমার জন্য দরজা খোলার চেষ্টা করিতে।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

১৩.পরিচ্ছেদঃ ধৈর্যধারণ এবং সওয়াবের নিয়ত করার প্রতিদান

১৮৭১. আমর ইবনি সাঈদ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

আমর ইবনি শুআয়ব [রাঃআঃ] আব্দুল্লাহ ইবনি আব্দুর রহমানের এক ছেলের মৃত্যুতে ধৈর্যধারণ করার জন্য তার কাছে একখানা চিঠি লিখেন। চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন যে, তিনি তাহাঁর পিতাকে তাহাঁর দাদা আব্দুল্লাহ ইবনি আমর ইবনি আস [রাঃআঃ] থেকে বর্ণনা করিতে শুনেছেন। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন যে, পৃথিবীর কোন প্রিয়জন মারা যাওয়ার পর যখন মুমিন ব্যক্তি ধৈর্যধারণ করে এবং সওয়াবের আশা রাখে, তখন আল্লাহ তাআলা তার জন্য জান্নাত ছাড়া অন্য কোন সওয়াব দিয়ে সন্তুষ্ট হন না। তিনি আরো বলেছেন, জান্নাত ছাড়া অন্য কোন সওয়াবের নির্দেশ দেওয়া হয়না।

হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

১৪.পরিচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি তার তিন সন্তানের মৃত্যুতে ধৈর্যধারণ করেছে তার প্রতিদান

১৮৭২. আনাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি তার তিন সন্তানের মৃত্যুতে ধৈর্যসহ সওয়াবের আশা করিবে সে জান্নাতে প্রবেশ করিবে। তখন এক মহিলা দাঁড়িয়ে বলিল, যদি দুই সন্তানের উপর ধৈর্যধারণ করে থাকে? তিনি বলিলেন, দুইজন হলেও। তখন সেই মহিলা বলিল, হায়! আমি যদি একজনের কথা বলতাম।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

১৫.পরিচ্ছেদঃ যে ব্যক্তির তিন সন্তান মৃত্যুবরণ করে

১৮৭৩. আনাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, যে ব্যক্তির তিন সন্তান অপ্রাপ্ত বয়স্ক অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে, আল্লাহ তাআলা সন্তানদের উপর স্বীয় রহমতের কারণে তাকে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

১৮৭৪. সাসাআ ইবনি মুআবিয়া [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

তিনি বলেন, আমি আবু যর [রাঃআঃ]- এর সাথে সাক্ষাত করে বললাম, আপনি আমার কাছে হাদিস বর্ণনা করুন। তিনি বলিলেন, আচ্ছা, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, যে মুসলমান মাতা পিতার সম্মুখে তাহাদের তিন অপ্রাপ্ত বয়স্ক সন্তান মৃত্যুবরণ করিবে আল্লাহ্‌ তাআলা সন্তানদের উপর নিজ রহমতের কারণে তাহাদের অবশ্যই ক্ষমা করে দেবেন।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

১৮৭৫. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, কোন মুসলমান মাতা-পিতার তিনটি সন্তান মৃত্যুবরণ করলে তাহাদের কখনো দোযখের আগুন স্পর্শ করিবে না। অবশ্য তাহাদেরকে তা অতিক্রম করিতে হইবে।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

১৮৭৬. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

নাবী [সাঃআঃ] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, কোন মুসলমান মাতা-পিতার সামনে তিনটি অপ্রাপ্ত বয়স্ক সন্তান মৃত্যুবরণ করলে সন্তানদের উপরে আল্লাহ্‌র রহমতের কারণে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। তিনি বলেন, সন্তানদের বলা হইবে, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ কর। তখন তারা বলবে, আমাদের মাতা-পিতা জান্নাতে প্রবেশ না করা পর্যন্ত আমরা জান্নাতে প্রবেশ করব না। তখন তাহাদের বলা হইবে, তোমরা এবং তোমাদের মাতা-পিতা জান্নাতে প্রবেশ কর।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

১৬.পরিচ্ছেদঃ যে ব্যক্তির জীবদ্দশায় তিন সন্তানের মৃত্যু হয়

১৮৭৭. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

তিনি বলেন, এক মহিলা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর কাছে তার অসুস্থ ছেলেকে নিয়ে আসল এবং বলিল ইয়া রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]! আমি এর উপরে আশংকা করছি। ইতিপূর্বে আরও তিনজন মৃত্যুবরণ করেছে, তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, তুমি তো এক কঠিন প্রাচীর দ্বারা জাহান্নাম থেকে নিজেকে রক্ষা করেছো।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

১৭.পরিচ্ছেদঃ মৃত্যু সংবাদ দেওয়া

১৮৭৮. আনাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যায়দ এবং জাফরের মৃত্যু সংবাদ দিলেন। তাঁদের মৃত্যু সংবাদ আসার পূর্বেই তখন তিনি তাঁদের জন্য ক্রন্দন করিলেন এবং তার চক্ষুদ্বয় থেকে অশ্রু প্রবাহিত হচ্ছিল।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

১৮৭৯. ইবনি মুসায়্যাব [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] তাঁদের কাছে বর্ণনা করিয়াছেন যে, হাবশার বাদশাহ্ নাজাশী যেদিন মৃত্যুবরণ করেন সেদিন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] সাহাবীদেরকে তাহাঁর মৃত্যু সংবাদ দিয়ে বলেছিলেন, তোমরা তোমাদের ভাইয়ের গুনাহ মার্জনার প্রার্থনা কর।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

১৮৮০. আব্দুল্লাহ ইবনি আমর [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর সাথে সফর করছিলাম। এমতাবস্থায় এক মহিলাকে দেখা গেল। আমরা ধারণা করিতে পারিনি যে, তিনি তাঁকে চিনতে পেরেছেন। যখন তিনি রাস্তার মাঝামাঝি আসলেন, তখন তিনি থেমে গেলেন এবং ঐ মহিলা তাহাঁর কাছে পৌঁছলেন, তখন আমরা দেখিতে পেলাম যে, তিনি ফাতিমা বিন্‌ত রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]! তিনি তাঁকে বলিলেন, হে ফাতিমা, তোমার ঘর থেকে তোমাকে কিসে বের করিল? তিনি বলিলেন, আমি এ মৃত ব্যক্তির পরিজনদের কাছে গিয়ে তাহাদের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ জ্ঞাপন করলাম এবং মৃত ব্যক্তির ব্যাপারে ধৈর্যধারণ করার জন্য তাহাদের উদ্বুদ্ধ করলাম। তিনি বলিলেন, সম্ভবত তুমি তাহাদের সাথে কুদা [কবরস্থান] পর্যন্ত গিয়েছিলে। ফাতিমা [রাঃআঃ] বলিলেন, আমি সেখানে যাওয়া থেকে আল্লাহ্‌র আশ্রয় প্রার্থনা করছি। কেননা এ বিষয়ে আপনি যা বলেছেন তা আমি শুনিয়াছি। তিনি বলিলেন, যদি তুমি তাহাদের সাথে সেখানে যেতে তবে তোমার পিতার দাদা জান্নাত না দেখা পর্যন্ত তুমি জান্নাত পেতে না।

হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

১৮.পরিচ্ছেদঃ পানি ও কুল পাতা দিয়ে মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেওয়া

১৮৮১. উম্মে আতিয়া আনাসারিয়াহ্ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] –এর কন্যা ইন্তিকাল করলে তিনি আমাদের কাছে এলেন এবং বলিলেন, তোমরা তাকে পানি ও কুলপাতা দিয়ে গোসল দাও। তিন বা পাঁচবার কিংবা তোমরা ভাল মনে করলে আরো অধিকবার। আর শেষের বার তোমরা কর্পূর মিশ্রিত করিবে। রাবী বলেন, কিংবা তিনি বলেছেন, কিছু কর্পূর মিশাবে। তোমরা গোসল সমাপ্ত করলে আমাকে জানাবে। আমরা গোসল সারার পর তাঁকে অবহিত করলাম। তিনি তাহাঁর একটি চাদর আমাদের দিলেন এবং বলিলেন, এটি তাহাঁর শরীরের সাথে জড়িয়ে দাও।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

১৯.পরিচ্ছেদঃ গরম পানি দিয়ে মৃত ব্যক্তির গোসল দেওয়া

১৮৮২. উম্মে কায়স [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

তিনি বলেন, আমার পুত্র ইন্তিকাল করিল। আমি তাতে মর্মাহত হলাম। আর যে গোসল দিচ্ছিল আমি তাকে বললাম, আমার পুত্রকে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে গোসল দিয়ে মেরে ফেল না। উসামা ইবনি মিহসান রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] –এর কাছে গিয়ে মহিলার কথা তাঁকে অবহিত করিলেন, তিনি মুচকি হাসলেন, এরপর বলিলেন, কী বলেছে সে? তার আয়ু দীর্ঘ হোক। ফলে এ মহিলার মত অন্য কোন মহিলা এত দীর্ঘ আয়ু পেয়েছেন বলে আমরা জানি না।

হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

২০.পরিচ্ছেদঃ মৃতের মাথার চুল খুলে দেওয়া

১৮৮৩. হাফসা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

উম্মে আতিয়্যা [রাঃআঃ] আমাদের কাছে বর্ণনা করেন যে, তাঁরা নাবী [সাঃআঃ]- এর কন্যার চুলকে তিন অংশে বিভক্ত করেছিলেন। আমি বললাম, তাঁরা কি তা খুলে তিন ভাগ করেছিলেন? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

২১.পরিচ্ছেদঃ মৃতের ডান দিক ও ওযুর স্থান

১৮৮৪. উম্মে আতিয়্যা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] তার কন্যার গোসলের ব্যাপারে বলেছিলেন, তোমরা তার ডান দিক থেকে এবং অযূর স্থান থেকে আরম্ভ কর।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

২২.পরিচ্ছেদঃ মৃতকে বেজোড় গোসল দেওয়া

১৮৮৫. উম্মে আতিয়্যা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর এক কন্যার মৃত্যু হলে তিনি আমাদের ডেকে পাঠালেন এবং বলিলেন, তাকে কুল পাতা ও পানি দিয়ে গোসল দাও। আর তাকে তিন-পাঁচ অথবা সাতবার বেজোড় গোসল দিবে, যদি তোমরা তা ভাল মনে কর। আর শেষ বার কিছু কর্পূর দিবে। তোমরা কাজ সমাপ্ত করলে আমাকে সংবাদ দিও। আমরা কাজ সমাপ্ত করে তাকে সংবাদ দিলাম। তখন তিনি আমাদের দিকে তাহাঁর ইযার দিয়ে বলিলেন, এটি তার দেহের সঙ্গে জড়িয়ে দাও। আমরা তার চুল তিন ভাগে ভাগ করে আঁচড়িয়ে দিলাম এবং তা পেছনে করে দিলাম।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

২৩.পরিচ্ছেদঃ মৃত ব্যক্তিকে পাঁচবারের অধিক গোসল দেওয়াঃ

১৮৮৬. উম্মে আতিয়্যা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর কন্যার গোসল দেওয়ার সময়ে তিনি আমাদের নিকট এসে বলিলেন, তাকে পানি ও কুল পাতা দিয়ে তিন বার, পাঁচ বার অথবা তোমরা ভাল মনে করলে আরো অধিক বার গোসল দিবে। শেষ বার কর্পূর দিবে। রাবী বলেন, কিংবা তিনি বলেছেন, কিছু কর্পূর দিবে। যখন তোমরা গোসল দেওয়া শেষ করিবে তখন আমাকে সংবাদ দিবে। আমরা কাজ সমাপ্ত করে তাঁকে সংবাদ দিলাম। তিনি আমাদের দিকে তাহাঁর চাদর ছুঁড়ে দিয়ে বলিলেন, এটি তার দেহের সাথে জড়িয়ে দাও।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

২৪.পরিচ্ছেদঃ মৃত ব্যক্তিকে সাতবারের অধিক গোসল দেওয়াঃ

১৮৮৭. উম্মে আতিয়্যা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর এক মেয়ের মৃত্যু হলে তিনি আমাদের ডেকে পাঠালেন এবং নির্দেশ দিলেন যে, তাঁকে তিনবার, পাচবার বা ততোধিক যতবার ভাল মনে হয় গোসল দিও পানি এবং বরই পাতা দ্বারা, আর শেষবার কর্পূরের কিছু অংশ দিয়ে দিও। আর যখন তোমরা অবসর হইবে আমাকে সংবাদ দেবে। আমরা যখন অবসর হলাম তাঁকে সংবাদ দিলাম। তিনি আমাদের স্বীয় জুব্বা দিয়ে দিলেন এবং বলিলেন যে, এটা তার কাফনের নীচে দিয়ে দিও।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

১৮৮৮. উম্মে আতিয়্যা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

হ্যাঁ; এতটুকু পার্থক্য যে, তিনি বলেছেন তিনবার, পাচবার, সাতবার বা ততোধিক, যদি তোমরা ভাল মনে কর।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

১৮৮৯. উম্মে আতিয়্যা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর এক মেয়ের মৃত্যু হলে আমাদের তাকে গোসল করানোর নির্দেশ দিলেন এবং বলিলেন, তাকে তিনবার, পাচবার, সাতবার বা ততোধিক বার গোসল করাবে, যদি তোমরা ভাল মনে কর। তিনি বলেন, আমি বললাম, তাও কি বেজোড় সংখ্যায় করিতে হইবে? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ। এবং শেষের বারে কর্পূর বা কর্পূরের কিছু অংশ দিবে। আর যখন তোমরা অবসর হইবে আমাকে সংবাদ দেবে। যখন আমরা অবসর হলাম তাঁকে সংবাদ দিলাম। তিনি আমাদের স্বীয় জুব্বা দিয়ে দিলেন এবং বলিলেন যে, এটা তার কাফনের নীচে দিয়ে দিও।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

২৫.পরিচ্ছেদঃ মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেওয়ার সময় কর্পূর ব্যবহার করাঃআঃ

১৮৯০. উম্মে আতিয়্যা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাদের কাছে আসলেন, তখন আমরা তাহাঁর মেয়েকে গোসল করাচ্ছিলাম। তিনি বলিলেন, তাঁকে তিনবার, পাঁচবার, বা ততোধিক বার গোসল করাবে। যদি তোমরা ভাল মনে কর পানি এবং বরই পাতা দ্বারা। আর শেষ বারে কর্পূর বা কর্পুরের অংশ দেবে। আর তোমরা অবসর হলে আমাকে সংবাদ দেবে। আমরা অবসর হলে তাঁকে সংবাদ দিলাম। তিনি আমাদের স্বীয় জুব্বা দিয়ে দিলেন এবং বলিলেন, এটা তাহাঁর কাফনের নীচে দিয়ে দিও। বর্ণনাকারী বলেন, হাফসা [রাঃআঃ] বলেছেন, তাঁকে তিনবার, পাঁচবার গোসল করাবে। উম্মে আতিয়্যা [রাঃআঃ] বলেন, আমরা তাহাঁর চুল আঁচড়িয়ে তিন ভাগে বিভক্ত করে দিলাম।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

১৮৯১. উম্মে আতিয়্যা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

তিনি বলেন, [মাথার চুল] আমরা তিন ভাগে বিভক্ত করে দিলাম।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

১৮৯২. উম্মে আতিয়্যা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

আমরা তাহাঁর মাথা [মাথার চুল] তিন ভাগে বিভক্ত করে দিলাম।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

২৬.পরিচ্ছেদঃ শরীরের সংগে মিলিয়ে পোশাক দেওয়াঃ

১৮৯৩. উম্মে আতিয়্যা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

তিনি [বসরায়] এসে তাড়াতাড়ি তাহাঁর ছেলের কাছে গেলেন। কিন্তু তাঁকে পেলেন না। [কারণ, সে ইতিপূর্বে মারা গিয়েছিল] তিনি বর্ণনা করিতে গিয়ে বলেন, নাবী [সাঃআঃ] আমাদের কাছে আসলেন, আমরা তখন তাহাঁর মেয়েকে গোসল করাচ্ছিলাম। তিনি বলেন, তাঁকে তিনবার, পাঁচবার বা ততোধিকবার গোসল করাবে যদি তোমরা ভাল মনে কর পানি এবং বরই পাতা দ্বারা এবং শেষবার কর্পূর বা কর্পূরের কিছু অংশ দেবে। আর যখন তোমরা অবসর হইবে আমাকে সংবাদ দিবে। যখন আমরা অবসর হলাম তাঁকে সংবাদ দিলাম। তিনি আমাদের স্বীয় জুব্বা দিয়ে দিলেন এবং বলিলেন, এটা তাহাঁর কাফনের নীচে দিয়ে দিও। রাবী মুহাম্মাদ ইবনি সীরীন এর চেয়ে কিছু বলেন নি। রাবী আইয়ূব ইবনি তামীম বলেন যে, আমি জানি না সে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর কোন্ মেয়ে ছিল। বর্ণনাকারী বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করলাম, “তাহাঁর কাফনের নীচে দিয়ে দাও” এর অর্থ কি? এটা কি তাঁকে পায়জামা হিসেবে পরিধান করানো হইবে? তিনি বলিলেন, তা আমার মনে হয় না, তবে তিনি হয়তো বলেছিলেন তা দিয়ে পেঁচিয়ে দাও।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

১৮৯৪. উম্মে আতিয়্যা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর এক মেয়ের মৃত্যু হলে তিনি বলেলেন, তাঁকে তিনবার, পাঁচবার বা ততোধিক বার গোসল করাও যদি তোমরা ভাল মনে কর। আর তাঁকে পানি এবং বরই পাতা দ্বারা গোসল করাও আর শেষ বারে কর্পূর বা কর্পূরের কিছু অংশ দিও। তোমরা অবসর হলে আমাকে সংবাদ দিও। তিনি বলেন, আমরা তাঁকে সংবাদ দিলে তিনি আমাদের স্বীয় জুব্বা দিয়ে দিলেন এবং বলিলেন যে, এটা তাহাঁর কাফনের নীচে দিয়ে দাও।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

২৭.পরিচ্ছেদঃ উত্তম কাফন পরিধান করানোর আদেশঃ

৮৯৫. জাবির [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

তিনি বলিলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] একবার খুতবা দিলেন এবং সাহাবীদের মধ্য থেকে এই ব্যক্তির কথা উল্লেখ করিলেন যিনি মৃত্যুবরণ করেছিলেন এবং তাঁকে রাত্রে কবর দেওয়া হয়েছিল এবং তাঁকে উত্তম কাপড়ে কাফন দেওয়া হয়েছিল না। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বিনা প্রয়োজনে রাত্রে কবর দিতে নিষেধ করিলেন এবং বলিলেন, যখন তোমাদের কেউ কারো অভিভাবক হইবে তাকে উত্তম কাফন পরিধান করাবে।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

২৮.পরিচ্ছেদঃ কোন ধরনের কাফন উত্তম?

১৮৯৬. সামুরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

নাবী [সাঃআঃ] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, তোমরা সাদা কাপড় পরিধান কর। কেননা তা সর্বোত্তম এবং পবিত্রতম এবং তা দ্বারা তোমাদের মৃতদের কাফন দাও।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

২৯.পরিচ্ছেদঃ নাবী [সাঃআঃ] এর কাফন

১৮৯৭. আয়িশাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে সাহূল নামক স্থানের তিনটি সাদা কাপড় দ্বারা কাফন দেওয়া হয়েছিল।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

১৮৯৮. আয়িশাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে সাহূল নামক স্থানের তিনটি সাদা কাপড় দ্বারা কাফন দেওয়া হয়েছিল; তাতে কুর্তা এবং পাগড়ি ছিল না।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

১৮৯৯. আয়িশাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে তিনটি ইয়ামানী সাদা সুতী কাপড় দ্বারা কাফন দেওয়া হয়েছিল; তাতে কুর্তা এবং পাগড়ি ছিল না। যখন আয়িশাহ [রাঃআঃ] এর কাছে লোকদের দুই কাপড়ে এবং একটি নকশা করা চাদরে কাফন দেওয়ার কথা উল্লেখ করা হল, তখন তিনি বলেন, তা আনা হয়েছিল কিন্তু উপস্থিত সাহাবীগন তা ফিরিয়ে দিয়েছিলেন এবং তাতে তাঁকে কাফন দিয়েছিলেন না।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৩০.পরিচ্ছেদঃ কাফনে কুর্তা ব্যবহার করা

১৯০০. আব্দুল্লাহ ইব্ন উমর [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

তিনি বলেন, যখন আব্দুল্লাহ ইব্ন উবাই-এর মৃত্যু হল তাহাঁর ছেলে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর কাছে এসে বলিলেন, আপনি আমাকে স্বীয় কুর্তাটা দিয়ে দিন যাতে আমি তা দিয়ে তাঁকে দিতে পারি এবং তাহাঁর জানাযা পড়িয়ে দিন এবং তাহাঁর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাঁকে স্বীয় কুর্তা দিয়ে দিলেন। তারপর বলিলেন, যখন তোমরা অবসর হও আমাকে সংবাদ দিও আমি তাহাঁর জানাজা পড়াব। উমর [রাঃআঃ] তাঁকে টেনে নিয়ে বলিলেন, আপনাকে তো আল্লাহ্‌ তায়ালা মুনাফিকদের জানাযা পড়াতে নিষেধ করিয়াছেন। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, মুনাফিকদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা বা না করার ব্যাপারে আমাকে এখতিয়ার দেওয়া হয়েছে। তারপর তিনি তাহাঁর জানাজা পড়ালেন। তারপর আল্লাহ তায়ালা অবতীর্ণ করিলেন [তাহাদের মধ্যে কারো মৃত্যু হলে তুমি কখনো তাহাঁর জন্য জানাজা নামাজ পড়বে না এবং তাহাঁর কবরের পার্শ্বে দাঁড়াবে না।] এরপর তিনি মুনাফিকের জন্য জানাজা পড়া ছেড়ে দিলেন।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

১৯০১. জাবির [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আব্দুল্লাহ ইবনি উবাইর কবরের কাছে আসলেন, ইতিপূর্বে তাঁকে দাফন করা হয়েছিল। তিনি সেখানে দাঁড়ালেন এবং তাঁকে কবর থেকে বের করার নির্দেশ দিলেন। তাঁকে বের করা হল। তিনি তাঁকে স্বীয় হাঁটু দ্বয়ের উপর রাখলেন এবং তাঁকে নিজ কুর্তা পরিয়ে দিলেন এবং স্বীয় থুথু তাহাঁর শরীরের উপর ছিটিয়ে দিলেন। আল্লাহ তায়ালাই সর্বজ্ঞ।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

১৯০২. জাবির [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

তিনি বলেন, আব্বাস [রাঃআঃ] মদীনাতে ছিলেন। আনসারগণ তাঁকে পরিধান করানোর জন্য একটি কাপড় তালাশ করে এমন কোন কুর্তা সংস্থান করিতে পারলেন না যা তাহাঁর গায়ে লাগে আব্দুল্লাহ ইবনি উবাইর কুর্তা ব্যতীত। অগত্যা সেটাই তাঁকে পরিধান করালেন।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

১৯০৩. খাব্বাব [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর সাথে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি কল্পে হিজরত করলাম। অতএব আমাদের প্রতিদান আল্লাহ্‌ তাআলার যিম্মায় গেল। তাই আমাদের মধ্যে যারা মৃত্যুবরণ করিল তারা স্বীয় প্রতিদান [গণীমতের সম্পদ] কিছুই ভোগ করিতে পারল না যেমন মুসআব ইবনি উমায়র [রাঃআঃ], যিনি উহুদের জিহাদে শাহাদাতবরণ করেছিলেন। আমরা তাহাঁর কাফন উপযোগী কোন কাপড়ের সংস্থান রাতে পেরেছিলাম না। শুধুমাত্র একটি চাদর ছাড়া যা দিয়ে তাহাঁর মাথা কাফনে ঢাকলে পা বের হয়ে যেত আর পা ঢাকলে মাথা বের হয়ে যেত। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] চাদর দিয়ে তাহাঁর মাথা ঢেকে দিয়ে পাদ্বয়ে ঘাস দিয়ে দেওয়ার জন্য আমাদের নির্দেশ দিলেন। আর আমাদের মধ্যে কতেক এমনও আছে যারা স্বীয় প্রতিদান পেয়েছে এবং তা ভোগও করেছে।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৩১.পরিচ্ছেদঃ মুহরিম মৃত্যুবরণ করলে তাকে কিভাবে কাফন পরানো হইবে?

১৯০৪. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, তোমরা ইহরাম পরিহিত ব্যক্তিকে তার পরিধানের কাপড়দ্বয়ে গোসল দেবে পানি এবং বরই পাতা দ্বারা আর তাকে তার কাপড়দ্বয় দ্বারা কাফন দেবে এবং তার শরীরে সুগন্ধি লাগাবে না আর তার জন্য মাথা ঢেকে দেবে না। কেননা, সে কিয়ামতের দিন ইহরাম পরিহিত অবস্থায় উত্থিত হইবে।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৩২.পরিচ্ছেদঃ কস্তুরী

১৯০৫. আবু সাঈদ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, সর্বোৎকৃষ্ট সুগন্ধির মধ্যে কস্তুরী অন্যতম।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

১৯০৬. আবু সাঈদ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, তোমাদের সর্বোৎকৃষ্ট সুগন্ধির মধ্যে কস্তুরী অন্যতম।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

Comments

Leave a Reply