অযুর শুরু ও শেষের দোয়া এবং সকল নিয়মাবলী

অযুর শুরু ও শেষের দোয়া এবং সকল নিয়মাবলী

অযুর শুরু ও শেষের দোয়া এবং সকল নিয়মাবলী >> সুনানে নাসাই শরিফের মুল সুচিপত্র দেখুন

পর্বঃ ১, পবিত্রতা, হাদীস (৭৩-১৫১)

৫৭.পরিচ্ছেদঃ উযূর জন্য একজন পুরুষের জন্য কি পরিমাণ পানি যথেষ্ট
৫৮.পরিচ্ছেদঃ উযূতে নিয়্যত প্রসঙ্গ
৫৯.পরিচ্ছেদঃ পাত্র থেকে উযূ করা
৬০.পরিচ্ছেদঃ উযূ করার সময় বিসমিল্লাহ বলা
৬১.পরিচ্ছেদঃ পুরুষের উযূর জন্য খাদেমের পানি ঢেলে দেয়া
৬২.পরিচ্ছেদঃ উযূর অঙ্গসমূহ একবার করে ধৌত করা
৬৩.পরিচ্ছেদঃ উযূর অঙ্গসমূহ তিনবার ধৌত করা
৬৪.পরিচ্ছেদঃ উযূর বর্ণনাঃ উভয় কব্জি ধৌত করা
৬৫.পরিচ্ছেদঃ কতবার ধৌত করিতে হইবে
৬৬.পরিচ্ছেদঃ কুলি করা ও নাক পরিষ্কার করা
৬৭.পরিচ্ছেদঃ কোন হাত দ্বারা কুলি করিতে হইবে
৬৮.পরিচ্ছেদঃ নাক পরিষ্কার করা
৬৯.পরিচ্ছেদঃ নাক ঝাড়ার নির্দেশ
৭০.পরিচ্ছেদঃ ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার পর নাক ঝেড়ে ফেলার নির্দেশ
৭১.পরিচ্ছেদঃ কোন হাতে নাক ঝাড়তে হইবে
৭২.পরিচ্ছেদ মুখমণ্ডল ধৌত করা
৭৩.পরিচ্ছেদ: মুখমণ্ডল কতবার ধৌত করিতে হইবে
৭৪.পরিচ্ছেদঃ উভয় হাত ধৌত করা
৭৫.পরিচ্ছেদঃ উযূর বর্ণনা
৭৬.পরিচ্ছেদঃ হাত কতবার ধৌত করিবে
৭৭.পরিচ্ছেদঃ ধৌত করার সীমা
৭৮.পরিচ্ছেদঃ মাথা মসেহ করার পদ্ধতি
৭৯.পরিচ্ছেদঃ কতবার মাথা মসেহ করিতে হইবে
৮০.পরিচ্ছেদঃ মহিলাদের মাথা মসেহ করা
৮১.পরিচ্ছেদঃ কান মসেহ করা
৮২.পরিচ্ছেদ ঃ মাথার সাথে কান মসেহ করা এবং যা দ্বারা প্রমান করা হয় উভয় কান মাথার অংশ, তাহাঁর বর্ণনা
৮৩.পরিচ্ছেদঃ পাগড়ির উপর মসেহ করা
৮৪.পরিচ্ছেদঃ মাথার অগ্রভাগসহ পাগড়ির উপর মসেহ করা
৮৫.পরিচ্ছেদঃ পাগড়ির উপর কিভাবে মসেহ করিতে হইবে
৮৬.পরিচ্ছেদঃ পা ধৌত করার প্রমাণ
৮৭.পরিচ্ছেদঃ কোন পা প্রথমে ধৌত করিতে হইবে
৮৮.পরিচ্ছেদঃ উভয় হাত দ্বারা পা ধৌত করা
৮৯.পরিচ্ছেদঃ আঙ্গুল খিলাল করার নির্দেশ
৯০.পরিচ্ছেদঃ পা কতবার ধৌত করিবে
৯১.পরিচ্ছেদঃ হাত ও পায়ের কতটুকু ধৌত করিতে হইবে
৯২.পরিচ্ছেদঃ জুতা পরিহিত অবস্থায় উযূ করা
৯৩.পরিচ্ছেদঃ মোজার উপর মসেহ করা
৯৪.পরিচ্ছেদঃ সফরে মোজার উপর মসেহ করা
৯৫.পরিচ্ছেদঃ মুসাফিরের জন্য মোজার উপর মসেহের মেয়াদ নির্ধারণ
৯৬.পরিচ্ছেদঃ মুকীমের জন্য মোজার উপর মসেহের মেয়াদ নির্ধারণ
৯৭.পরিচ্ছেদঃ উযূ ভঙ্গ হওয়া ব্যতীত উযূ করার বর্ণনা
৯৮.পরিচ্ছেদঃ প্রত্যেক নামাজের জন্য উযূ করা
৯৯.পরিচ্ছেদঃ পানি ছিটানো
১০০.পরিচ্ছেদঃ উযূর উদ্বৃত্ত পানি দ্বারা উপকৃত হওয়া
১০১.পরিচ্ছেদঃ উযূর ফরয হওয়া
১০২.পরিচ্ছেদঃ উযূতে সীমালঙ্ঘন
১০৩.পরিচ্ছেদঃ পূর্ণরূপে উযূ করার আদেশ
১০৪.পরিচ্ছেদঃ পূর্ণরূপে উযূ করার ফযীলত
১০৫.পরিচ্ছেদঃ নির্দেশ মুতাবিক উযূ করার সওয়াব
১০৬.পরিচ্ছেদঃ উযূ শেষে যা বলিতে হয়
১০৭.পরিচ্ছেদঃ উযূর জ্যোতি
১০৮.পরিচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি উত্তমরূপে উযূ করে দুরাকাত নামাজ আদায় করে, তার সওয়াব

৫৭.পরিচ্ছেদঃ  উযূর জন্য একজন পুরুষের জন্য কি পরিমাণ পানি যথেষ্ট

৭৩. আনাস ইবনি মালিক [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এক মাক্কুক {৩} পরিমাণ পানি দ্বারা উযূ করিতেন এবং পাঁচ মাক্কুক পরিমাণ পানি দ্বারা গোসল করিতেন।

৩. মাক্কূক অর্থ এক মুদ্দ। আর ১ মুদ্দ ইরাকের ফকীহগণের মতে ২ রতল বা ১ লিটার [প্রায়] এবং হিজাযের ফকীহগণের মতে ১ রতল ও ১ রতলের তিনভাগের একভাগ বা পৌণে ১ লিটার [প্রায়]। উল্লেখ্য, ১ রতল=৪০ তোলা। -অনুবাদক।নাসায়ী শরীফ বাংলা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৭৪. উম্মু উমারা বিনত কাব [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

তিনি বলেন যে, নাবী [সাঃআঃ] উযূ করেন [এ উযূর জন্য] এমন একটি পাত্রে পানি আনা হয় যাতে এক মুদ-এর দু-তৃতীয়াংশ পানি ছিল। হাবীব থেকে বর্ণনাকারী শুবা বলেনঃ আমার এ কথাও স্মরণ আছে যে, তিনি উভয় হাত মর্দন করে ধৌত করেন এবং উভয় কানের ভেতর দিকে মসেহ করেন। কানের দিকে মসেহ করিয়াছেন কিনা তা আমার খেয়াল নেই।

নাসায়ী শরীফ বাংলা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৫৮.পরিচ্ছেদঃ  উযূতে নিয়্যত প্রসঙ্গ

৭৫. উমর ইবনি খাত্তাব [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ সব কাজই নিয়্যত অনুযায়ী হয়। মানুষ যা নিয়্যত করে, তাই লাভ করে। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাহাঁর রাসূলের জন্য হিজরত করিবে, তার হিজরত আল্লাহ্ ও তাহাঁর রাসূলের জন্যই হইবে। আর যে ব্যক্তির হিজরত হইবে দুনিয়া লাভের জন্য, সে তাই লাভ করিবে। অথবা যার হিজরত হইবে কোন মহিলাকে বিবাহ করার জন্য, তার হিজরত সে জন্যই হইবে যার উদ্দেশ্যে সে হিজরত করেছে।

নাসায়ী শরীফ বাংলা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৫৯.পরিচ্ছেদঃ  পাত্র থেকে উযূ করা

৭৬. আনাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে দেখলাম যে, আসরের নামায নিকটবর্তী [অথচ পানি নেই] লোকেরা পানির অনুসন্ধান করিল কিন্তু পানি পেল না। রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট একটি পাত্র আনা হয়। তিনি পাত্রটির ভেতরে হাত রাখেন এবং লোকদের উযূ করার নির্দেশ দেন। আমি দেখলাম, তাহাঁর হাতের আঙ্গুল থেকে পানি উৎসারিত হচ্ছে। তাঁদের সর্বশেষ ব্যক্তিসহ সকলেই [সে পানি দ্বারা] উযূ করিলেন।

নাসায়ী শরীফ বাংলা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৭৭. আবদুল্লাহ [ইবনি মাসঊদ] [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

তিনি বলেনঃ আমরা [এক সফরে] নাবী [সাঃআঃ]-এর সঙ্গে ছিলাম। লোকেরা পানি পাচ্ছিলেন না। তাহাঁর কাছে একটি [তশতরীর ন্যায়] পাত্র নিয়ে আসা হয় এবং তিনি তাতে হাত ঢোকান। আমি দেখলাম, তাহাঁর হাতের আঙ্গুলের ফাঁক হইতে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। তিনি বলছিলেন, তোমরা আল্লাহ্‌র তরফ থেকে পানি ও বরকত নিতে এসো। আমাশ [রাঃআঃ] বলেনঃ আমাকে হাদিসটি বর্ণনা করিয়াছেন সালিম ইবনি আবুল জাদ। তিনি বলেনঃ আমি জাবির [রাঃআঃ]-কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, আপনারা তখন কতজন লোক ছিলেন? তিনি বলেনঃ আমরা তখন দেড় হাজার লোক ছিলাম।

নাসায়ী শরীফ বাংলা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৬০.পরিচ্ছেদঃ  উযূ করার সময় বিসমিল্লাহ বলা

৭৮. আনাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

তিনি বলেনঃ [কোন এক সফরে] নাবী [সাঃআঃ]-এর কয়েকজন সাহাবী পানি তালাশ করিলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ তোমাদের কারো নিকট পানি আছে কি? [একজন পানি এনে দিলে] তিনি পানিতে হাত রাখলেন এবং বললেনঃ বিসমিল্লাহ্‌ বলে উযূ কর। আমি তাহাঁর আঙ্গুলের ফাঁক থেকে পানি বের হইতে দেখলাম। তাহাদের সর্বশেষ ব্যক্তিসহ সকলেই এই পানিতে উযূ করেন। সাবিত [রহঃ] বলেনঃ আমি আনাস [রাঃআঃ]-কে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনি উপস্থিত লোকের সংখ্যা কত মনে করেন? তিনি বলিলেন, সত্তরজনের মত। {১}

{১} হাদিসদ্বয়ে পৃথক পৃথক দুটি ঘটনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।নাসায়ী শরীফ বাংলা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৬১.পরিচ্ছেদঃ  পুরুষের উযূর জন্য খাদেমের পানি ঢেলে দেয়া

৭৯. উরওয়া ইবনি মুগীরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

তিনি তাহাঁর পিতা {মুগীরা [রাঃআঃ]}-কে বলিতে শুনেছেনঃ তাবূকের যুদ্ধে আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর উযূ করার পানি ঢেলে দিয়েছি। তিনি মোজার উপর মসেহ করেছিলেন।

নাসায়ী শরীফ বাংলা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৬২.পরিচ্ছেদঃ  উযূর অঙ্গসমূহ একবার করে ধৌত করা

৮০. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

তিনি বলেনঃ আমি তোমাদেরকে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর উযূর সংবাদ দেব কি? পরে তিনি [প্রত্যেক অঙ্গ] এক-একবার [ধৌত] করে উযূ করিলেন।

নাসায়ী শরীফ বাংলা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৬৩.পরিচ্ছেদঃ  উযূর অঙ্গসমূহ তিনবার ধৌত করা

৮১. মুত্তালিব ইবনি আবদুল্লাহ ইবনি হানতাব [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

আবদুল্লাহ ইবনি উমর [রাঃআঃ] তিন-তিনবার ধৌত করে উযূ করিয়াছেন এবং বলেছেন নাবী [সাঃআঃ] এরূপ উযূ করিয়াছেন।{১}

{১} উযূর অঙ্গসমূহ তিনবার করে ধৌত করা সুন্নত। একবার করে ধৌত করলে উযূ হয়ে যাবে কিন্তু সুন্নত আদায় হইবে না। একে বলা হয় বয়ানে জাওয়ায। অর্থাৎ একবার করে করে ধৌত করলেও উযূ হয়ে যায়। – অনুবাদক,নাসায়ী শরীফ বাংলা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৬৪.পরিচ্ছেদঃ  উযূর বর্ণনাঃ উভয় কব্জি ধৌত করা

৮২. মুগীরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

তিনি বলেনঃ আমরা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সঙ্গে এক সফরে ছিলাম। তাহাঁর কাছে একটি লাঠি ছিল। [পথের এক স্থানে] তিনি লাঠিটি দিয়ে আমার পিঠে ঠোকা দিলেন। পরে তিনি রাস্তা থেকে সরে গেলেন। আমিও তাহাঁর সঙ্গে সরে গেলাম। [কিছুক্ষণ চলার পর] এক স্থানে এসে উট থামালেন। তারপর তিনি আবার চলতে লাগলেন। রাবী বলেনঃ তিনি এতদূর গেলেন যে, আমার থেকে অদৃশ্য হয়ে গেলেন। [ক্ষণিক পর] ফিরে এসে বলিলেন, তোমার নিকট পানি আছে? আমার সাথে একটি পানির পাত্র ছিল। আমি তা নিয়ে তাহাঁর নিকট আসলাম এবং পানি ঢেলে দিতে লাগলাম। তিনি তাহাঁর হাত মুখ ধুলেন এবং কব্জির উপরিভাগ ধৌত করিতে চাইলেন। তখন তাহাঁর পরিধানে ছিল চিকন হাতার একটি শামী [সিরীয়] জুব্বা। তিনি জুব্বার ভেতর থেকে হাত বের করে আনলেন এবং মুখমণ্ডল ও হাত ধৌত করিলেন। তিনি কপাল ও পাগড়ির কিছু অংশ মসেহ করেছিলেন বলে রাবী উল্লেখ করিয়াছেন। [হাদিসের একজন রাবী] ইবনি আওন [রহঃ] বলেনঃ আমার যেমন ইচ্ছা ছিল হাদিসটি তেমন স্মরণ রাখতে পারিনি। [অতঃপর রাবী বলেন,] এরপর তিনি তাহাঁর মোজার উপর মসেহ করেন এবং বললেনঃ তোমার প্রয়োজন সমাধা করো। আমি বললাম, ইয়া রসূলুল্লাহ ! আমার প্রয়োজন নেই। তারপর আমরা চলে আসলাম। আবদুর রহমান ইবনি আউফ [রাঃআঃ] অগ্রগামী দলে ছিলেন। [এদিকে রাসূল [সাঃআঃ]-এর বিলম্বের কারণে] আবদুর রহমান ইবনি আউফ [রাঃআঃ] লোকদেরকে নিয়ে ফযরের নামাজ এক রাকাআত আদায় করিলেন। আমি আবদুর রহমান ইবনি আউফ [রাঃআঃ]-কে রাসূল [সাঃআঃ] এর আগমন সংবাদ দেয়ার ইচ্ছা করি কিন্তু তিনি আমাকে নিষেধ করেন। অতএব আমরা যতটুকু পেলাম তা [জামাআতে] আদায় করলাম এবং যা আমরা পাইনি তা নিজেরা আদায় করে নিলাম।

নাসায়ী শরীফ বাংলা হাদিসের তাহকিকঃ অন্যান্য

৬৫.পরিচ্ছেদঃ  কতবার ধৌত করিতে হইবে

৮৩. ইবনি আওস [রহঃ] হইতে বর্ণীত

করেন। তিনি বলেনঃ আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে [উযূর সময়] তিনবার করে পানি ঢালতে দেখেছি।

নাসায়ী শরীফ বাংলা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৬৬.পরিচ্ছেদঃ  কুলি করা ও নাক পরিষ্কার করা

৮৪. হুমরান ইবনি আবান [রহঃ] হইতে বর্ণীত

তিনি বলেনঃ আমি উসমান ইবনি আফফান [রাঃআঃ]-কে উযূ করিতে দেখেছি। তিনি তিনবার হাতে পানি ঢেলে হাত ধৌত করেন। এরপর গড়গড়া করে কুলি করেন এবং নাকে পানি দিয়ে পরিষ্কার করেন, তিনবার মুখমণ্ডল ধৌত করেন এবং কনুই পর্যন্ত তিনবার ডান হাত ধৌত করেন। অনুরূপভাবে বাম হাতও। এরপরে মাথা মসেহ করেন এবং ডান পা তিনবার ধৌত করেন। অনুরূপভাবে বাম পাও। এভাবে উযূ শেষ করে তিনি বলেনঃ আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে এরূপ উযূ করিতে দেখেছি এবং বলিতে শুনিয়াছি, যে ব্যক্তি আমার এ উযূর ন্যায় উযূ করিবে এবং তারপরে একাগ্রতার সাথে দুরাকাআত নামাজ আদায় করিবে, তার পূর্ববর্তী সকল গুনাহ মাফ করে দেওয়া হইবে।

নাসায়ী শরীফ বাংলা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৬৭.পরিচ্ছেদঃ  কোন হাত দ্বারা কুলি করিতে হইবে

৮৫. হুমরান [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

তিনি উসমান [রাঃআঃ]-কে উযূর পানি চাইতে দেখলেন। [পানি আনা হলে] তিনি পাত্র হইতে হাতে পানি ঢালেন এবং হস্তদ্বয় তিনবার করে ধৌত করেন। পরে ডান হাত পাত্রে ঢুকান এবং কুলি করেন ও পানি দিয়ে নাক পরিষ্কার করেন। এরপরে মাথা মসেহ করেন ও প্রত্যেক পা তিনবার করে ধৌত করেন ও বলেনঃ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে দেখেছি যে, তিনি আমার ন্যায় উযূ করিয়াছেন এবং বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমার এ উযূর ন্যায় উযূ করিবে এবং একাগ্রতা সহকারে দুরাকাআত নামাজ আদায় করিবে, তার পূর্ববর্তী গুনাহ মাফ করে দেওয়া হইবে।

নাসায়ী শরীফ বাংলা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৬৮.পরিচ্ছেদঃ  নাক পরিষ্কার করা

৮৬. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে কেউ যখন উযূ করিবে, তখন সে যেন তার নাকে পানি দেয় এবং নাক পরিষ্কার করে ফেলে।

নাসায়ী শরীফ বাংলা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

পরিচ্ছেদঃ নাকে ভালভাবে পানি দেয়া

৮৭. লাকীত ইবনি সাবরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

তিনি বলেনঃ আমি বললামঃ ইয়া রসূলুল্লাহ ! আমাকে উযূ সম্পর্কে বলুন। তিনি বললেনঃ পূর্ণরূপে উযূ করিবে, আর তুমি যদি রোজাদার না হও তাহলে উত্তমরূপে নাকে পানি পৌঁছাবে।

নাসায়ী শরীফ বাংলা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৬৯.পরিচ্ছেদঃ  নাক ঝাড়ার নির্দেশ

৮৮. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি উযূ করিবে সে যেন নাক ঝারে এবং যে ব্যক্তি ঢেলা ব্যবহার করিবে সে যেন বেজোড় ব্যবহার করে।

নাসায়ী শরীফ বাংলা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৮৯. সালামা ইবনি কায়স [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যখন উযূ কর তখন নাক ঝেড়ে নাও। যখন কুলুখ ব্যবহার কর, তখন বেজোড় ব্যবহার কর।

নাসায়ী শরীফ বাংলা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৭০.পরিচ্ছেদঃ  ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার পর নাক ঝেড়ে ফেলার নির্দেশ

৯০. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ তোমাদের মধ্যে কেউ যখন ঘুম হইতে জাগ্রত হয়ে উযূ করে, সে যেন তিনবার নাক ঝেড়ে নেয়। কেননা শয়তান নাকের [মস্তক সংলগ্ন] ছিদ্রের উপরিভাগে রাত্রি যাপন করে।

নাসায়ী শরীফ বাংলা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৭১.পরিচ্ছেদঃ  কোন হাতে নাক ঝাড়তে হইবে

৯১. আলী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

তিনি পানি আনতে বলেন, পরে তিনি কুলি করেন এবং নাকে পানি দেন। বাম হাতে নাক ঝাড়েন। তিনবার এরূপ করেন। পরে বলেনঃ এই হলো নাবী [সাঃআঃ]-এর উযূ।

নাসায়ী শরীফ বাংলা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৭২.পরিচ্ছেদ মুখমণ্ডল ধৌত করা

৯২ আবদ খায়র [রহঃ] হইতে বর্ণীত

তিনি বলেনঃ আমরা আলী ইবনি আবু তালিব [রাঃআঃ]-এর নিকট এলাম। এমতাবস্থায় যে, তিনি নামাজ আদায় করে ফেলেছেন। [আমাদেরকে দেখে] তিনি উযূর পানি আনতে বলেন। আমরা বললাম, তিনি তো নামাজ আদায় করিয়াছেন, এখন পানি দিয়ে কি করবেন? [পরে বুঝলাম] তিনি আমাদেরকে উযূ শিক্ষা দেওয়ার জন্যই এরূপ করিয়াছেন। তাহাঁর হুকুম অনুযায়ী পানি ভর্তি একটি পাত্র ও অন্য একটি পাত্র আনা হলো। তিনি পাত্র হইতে হাতে পানি ঢেলে তিনবার হাত ধৌত করিলেন। এরপর ডান হাতে পানি দিয়ে তিনবার কুলি করেন ও নাকে পানি দেন। এরপর তিনবার মুখমণ্ডল ধৌত করেন। আর ডান ও বাম হাত তিনবার করে ধৌত করেন এবং একবার মাথা মসেহ করেন। পরে ডান পা ও বাম পা তিনবার করে ধৌত করেন এবং বলেনঃ যে ব্যক্তি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর উযূ জানতে আগ্রহী, সে জেনে রাখুক এটাই তাহাঁর উযূ।

নাসায়ী শরীফ বাংলা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৭৩.পরিচ্ছেদ: মুখমণ্ডল কতবার ধৌত করিতে হইবে

৯৩. আলী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

তাহাঁর নিকট একটি বসার চৌকি নিয়ে আসা হয় এবং তিনি তাতে বসেন। পরে পানি ভর্তি একটি পাত্র আনতে বলেন। [পানি আনা হলে] তিনি উভয় হাতের উপর পাত্রটি কাত করে তিনবার করে পানি ঢালেন। পরে এক-এক অঞ্জলি পানি দ্বারা তিনবার কুলি করেন ও নাকে পানি দেন এবং তিনবার মুখমণ্ডল ধৌত করেন। আর তিনবার করে কনুই পর্যন্ত উভয় হাত ধৌত করেন এবং হাতে কিছু পানি নিয়ে মাথা মসেহ করেন। শুবা [আলোচ্য হাদিসের রাবী] তাহাঁর মাথার অগ্রভাগ থেকে মাথার শেষভাগ পর্যন্ত একবার ইঙ্গিত করে দেখান এবং বলেনঃ তিনি হাত দুটি সম্মুখের দিকে ফিরিয়ে এনেছিলেন কিনা তা আমার মনে নেই এবং তিনি { হযরত আলী [রাঃআঃ]} তিনবার করে পা ধৌত করেন এবং তিনি বলেনঃ যে ব্যক্তি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর উযূ দেখে খুশি হইতে চায় [সে যেন আমার এ উযূ দেখে], এটাই তাহাঁর উযূ।

নাসায়ী শরীফ বাংলা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৭৪.পরিচ্ছেদঃ উভয় হাত ধৌত করা

৯৪. আবদ খায়র [রহঃ] হইতে বর্ণীত

তিনি বলেনঃ আমি আলী [রাঃআঃ]-এর নিকট উপস্থিত ছিলাম, তিনি একটি চৌকি আনতে বলেন। [চৌকি আনা হলে] তিনি তাতে বসেন এবং একটি পাত্রে পানি আনতে বলেন। [পানি আনা হলে] তিনি তিনবার করে উভয় হাত ধৌত করেন। এক-এক অঞ্জলি পানি দ্বারা তিনবার কুলি করেন ও নাকে পানি দেন। পরে তিনবার মুখমণ্ডল ধৌত করেন ও উভয় হাত তিনবার করে ধৌত করেন। এরপর হাত পানির পাত্রে প্রবিষ্ট করান এবং মাথা মসেহ করেন। পরে উভয় পা তিনবার করে ধৌত করেন এবং বলেনঃ যে ব্যক্তি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর উযূ দেখে খুশি হইতে চায় [সে যেন আমার উযূ দেখে], এরূপই তাহাঁর উযূ।

নাসায়ী শরীফ বাংলা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৭৫.পরিচ্ছেদঃ উযূর বর্ণনা

৯৫. হুসায়ন ইবনি আলী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

তিনি বলেনঃ আমার পিতা আলী [রাঃআঃ] আমাকে উযূর পানি আনতে বলেন। আমি তাহাঁর নিকট পানি এনে দিলাম। তিনি উযূ করিতে আরম্ভ করিলেন। [প্রথমে] উযূর পানিতে হাত ঢুকাবার পূর্বে হাতের কব্জি পর্যন্ত তিনবার ধৌত করিলেন। তারপর তিনবার কুলি করিলেন ও তিনবার নাক ঝাড়লেন। তারপর তিনবার মুখমণ্ডল ধৌত করিলেন এবং ডান হাত তিনবার কনুই পর্যন্ত ধৌত করিলেন। অনুরূপভাবে বাম হাত ধৌত করিলেন এবং একবার মাথা মসেহ করিলেন। তারপর গোড়ালি পর্যন্ত ডান পা তিনবার এবং অনুরূপভাবে বাম পা ধৌত করিলেন। পরে সোজা হয়ে দাঁড়ালেন এবং বলিলেন, পানির পাত্রটা [আমার হাতে] দাও। আমি [তাহাঁর উযূর পর যে পানিটুকু পাত্রে ছিল তা সহ] পাত্রটি তাঁকে দিলাম। তিনি উযূর অবশিষ্ট পানি টুকু দাঁড়িয়ে পান করিলেন। আমি তাঁকে দাঁড়িয়ে পান করিতে দেখে অবাক হলাম। তিনি আমার অবস্থা দেখে বললেনঃ অবাক হয়ো না। তুমি আমাকে যেমন করিতে দেখলে, আমিও তোমার নানা নাবী [সাঃআঃ]-কে এরূপ করিতে দেখেছি। আলি [রাঃআঃ] তাহাঁর এ উযূ এবং অবশিষ্ট পানি দাঁড়িয়ে পান করা সম্পর্কে বলছিলেন।

নাসায়ী শরীফ বাংলা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৭৬.পরিচ্ছেদঃ হাত কতবার ধৌত করিবে

৯৬. আবু হায়্যা ইবনি কায়স [রহঃ] হইতে বর্ণীত

তিনি বলেনঃ আমি আলী [রাঃআঃ]-কে উযূ করিতে দেখেছি। তিনি [সর্বপ্রথম] হাতের কব্জি পর্যন্ত অত্যন্ত পরিষ্কার করে ধৌত করেন। তারপর তিনবার কুলি করেন তিনবার নাকে পানি দেন ও তিনবার মুখমণ্ডল ধৌত করেন এবং উভয় হাত কনুই পর্যন্ত তিনবার ধৌত করেন। পরে মাথা মসেহ করেন এবং উভয় পা গোড়ালি পর্যন্ত ধৌত করেন। তারপর দাঁড়িয়ে উযূর অবশিষ্ট পানি পান করেন এবং বলেনঃ নাবী [সাঃআঃ]-এর উযূর পদ্ধতি কিরূপ ছিল, আমি তা তোমাদেরকে দেখাতে চেয়েছি। [তাই আমি তোমাদের উযূ করে দেখালাম]।

নাসায়ী শরীফ বাংলা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৭৭.পরিচ্ছেদঃ ধৌত করার সীমা

৯৭. ইয়াহইয়া মাযিনী [রহঃ] হইতে বর্ণীত

তিনি বলেনঃ আমি নাবী [সাঃআঃ]-এর সাহাবী আবদুল্লাহ ইবনি যায়দ ইবনি আসিম [রাঃআঃ]-কে জিজ্ঞাসা করলামঃ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কিভাবে উযূ করিতেন, আপনি আমাকে তা দেখাতে পারবেন? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ, দেখাতে পারি। এই বলে তিনি পানি আনতে বলেন। পানি আনা হলে তিনি হাতে পানি ঢালেন এবং উভয় হাত দুদুবার করে ধৌত করেন। তিনবার কুলি করেন ও তিনবার নাকে পানি দেন। পরে মুখমণ্ডল তিনবার ধৌত করেন এবং উভয় হাত দুবার করে কনুই পর্যন্ত ধৌত করেন। তারপর দুহাতে মাথা মসেহ করেন। একবার দুহাত পেছনে নেন, আর একবার মাথার সামনের দিকে আনেন। মাথার সামনের দিক হইতে শুরু করে পেছনে ঘাড় পর্যন্ত নিয়ে যান। আবার হাত ফিরিয়ে আনেন, মাথার যে স্থান থেকে মসেহ শুরু করেছিলেন সে স্থান পর্যন্ত। পরিশেষে উভয় পা ধৌত করেন।

নাসায়ী শরীফ বাংলা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৭৮.পরিচ্ছেদঃ মাথা মসেহ করার পদ্ধতি

৯৮. ইয়াহইয়া মাযিনী [রহঃ] হইতে বর্ণীত

তিনি আবদুল্লাহ ইবনি যায়দ ইবনি আসিম মাযিনী [রাঃআঃ]-কে জিজ্ঞাসা করেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কিভাবে উযূ করিতেন তা আমাকে দেখাতে পারেন? আবদুল্লাহ [রাঃআঃ] বলেনঃ হ্যাঁ, এরপর তিনি পানি আনতে বলেন। পানি আনা হলে তিনি ডান হাতে পানি ঢালেন এবং দুবার করে উভয় হাত ধৌত করেন এবং দুবার উভয় হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত করেন। পরে দুহাতে মাথা মসেহ করেন। একবার সামনে আনেন একবার হাত পেছনে নেন, আর মাথার অগ্রভাগ হইতে শুরু করেন এবং উভয় হাত পেছনে ঘাড় পর্যন্ত নেন। আবার মসেহ যে স্থান থেকে শুরু করেন সে স্থান পর্যন্ত উভয় হাত ফিরিয়ে আনেন। তারপর উভয় পা ধৌত করেন।

নাসায়ী শরীফ বাংলা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৭৯.পরিচ্ছেদঃ কতবার মাথা মসেহ করিতে হইবে

৯৯. আবদুল্লাহ ইবনি যায়দ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

তিনি বলেনঃ আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে উযূ করিতে দেখেছি। তিনি [হাত ধোয়া, কুলি করা ইত্যাদির পর] তিনবার মুখমণ্ডল ধৌত করেন এবং দুবার করে হাত ধৌত করেন এবং দুবার করে পা ধৌত করেন ও মাথা মসেহ করেন। {১}

{১} দুবার মাথা মসেহ করার অর্থ হচ্ছে একবার হাত পেছনে নেওয়া আর একবার মাথার পেছন থেকে সামনে ফিরিয়ে আনা।

নাসায়ী শরীফ বাংলা হাদিসের তাহকিকঃ শায

৮০.পরিচ্ছেদঃ  মহিলাদের মাথা মসেহ করা

১০০. আবু আবদুল্লাহ সালিম সাবলান [রহঃ] হইতে বর্ণীত

তিনি বলেনঃ আয়িশাহ [রাঃআঃ] তাহাঁর আমানতদারীতে অত্যন্ত মুগ্ধ ছিলেন এবং তাঁকে অর্থের বিনিময়ে কাজে নিযুক্ত করিতেন। [সে] সালিম বলেন, আয়িশাহ [রাঃআঃ] আমাকে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কিভাবে উযূ করিতেন তা দেখান। তিনি তিনবার কুলি করেন ও নাক পরিষ্কার করেন। তিনবার মুখমণ্ডল ধৌত করেন। তিনবার করে ডান ও বাম হাত ধৌত করেন এবং হাত মাথার অগ্রভাগে রাখেন ও মাথার পেছন পর্যন্ত একবার মসেহ করেন। পরে তিনি উভয় কান মসেহ করেন। তারপর মুখমণ্ডলে হাত বুলান। সালিম বলেন, আমি যখন মুকাতাব {২} ছিলাম তখন তাহাঁর নিকট আসা-যাওয়া করতাম। তিনি তখন আমার থেকে পর্দা করিতেন না। তিনি তখন আমার সম্মুখে বসতেন এবং আমার সঙ্গে কথাবার্তা বলিতেন। একদিন আমি তাহাঁর নিকট এলাম এবং বললাম, হে উম্মুল মুমিনীন! আপনি আমার জন্য বরকতের দোয়া করুন। তিনি বললেনঃ কিসের জন্য দোয়া করব? বললাম, আল্লাহ্‌ আমাকে আযাদ করে দিয়েছেন। তিনি বলিলেন, আল্লাহ্‌ তোমাকে বরকত দিন। [এই কথা বলে] তিনি আমার সামনে পর্দা ফেলে দিলেন। এরপর আমি তাঁকে কোনদিন দেখিনি।

{২} মুকাতাবঃ যে ক্রীতদাসের সঙ্গে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে মুক্তির চুক্তি হয়েছে, সে ক্রীতদাসকে মুকাতাব বলা হয়।

নাসায়ী শরীফ বাংলা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৮১.পরিচ্ছেদঃ কান মসেহ করা

১০১. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

তিনি বলেনঃ আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে উযূ করিতে দেখেছি। তিনি [প্রথমে] হাত ধৌত করেন এবং এক অঞ্জলি পানি দ্বারা কুলি করেন ও নাকে পানি দেন। মুখমণ্ডল ও উভয় হাত একবার করে ধৌত করেন। একবার মাথা ও উভয় কান মসেহ করেন। আবদুল আযীয [রহঃ] বলেনঃ ইবনি আজলান [রহঃ] হইতে যিনি শুনেছেন, তিনি আমার নিকট বর্ণনা করিয়াছেন যে, ইবনি আজলান এ হাদীসে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর উভয় পা ধৌত করার কথাও বলেছেন।

নাসায়ী শরীফ বাংলা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৮২.পরিচ্ছেদ  ঃ মাথার সাথে কান মসেহ করা এবং যা দ্বারা প্রমান করা হয় উভয় কান মাথার অংশ, তাহাঁর বর্ণনা

১০২. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] উযূ করেন [উভয় হাত ধৌত করেন]। তিনি এক অঞ্জলি পানি দ্বারা কুলি করেন ও নাকে পানি দেন। আবার এক অঞ্জলি পানি নেন এবং মুখমণ্ডল ধৌত করেন। আবার এক অঞ্জলি পানি নিয়ে ডান হাত ধৌত করেন। আবার এক অঞ্জলি পানি নিয়ে বাম হাত ধৌত করেন। তারপর মাথা ও কান মসেহ করেন। কানের ভেতরের দিক শাহাদত আঙ্গুলি ও বাহির দিক বৃদ্ধাঙ্গুলি দ্বারা মসেহ করেন। আবার এক অঞ্জলি পানি নিয়ে ডান পা ধৌত করেন এবং আবার এক অঞ্জলি পানি নিয়ে বাম পা ধৌত করেন।

নাসায়ী শরীফ বাংলা হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহীহ

১০৩. আবদুল্লাহ সুনাবিহী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ মুমিন বান্দা যখন উযূ এবং কুলি করে, তখন তার মুখের গুনাহ বের হয়ে যায়। যখন নাকে পানি দেয়, তখন নাকের গুনাহ বের হয়ে যায়। যখন মুখমণ্ডল ধৌত করে তখন মুখমণ্ডলের গুনাহ বের হয়ে যায়। এমনকি গুনাহ বের হয়ে যায় দু চোখের পাতার নিচ থেকে। যখন হাত ধৌত করে, তখন হাতের গুনাহ বের হয়ে যায়। এমনকি তা বের হয়ে যায় দু হাতের নখের নিচ থেকে। যখন মাথা মসেহ করে, তখন মাথার গুনাহ বের হয়ে যায়, এমনকি তা বের হয়ে যায় তার দুকান থেকে। যখন পা ধৌত করে, তখন পা-এর গুনাহ বের হয়ে যায়। এমনকি তা বের হয়ে যায় নখের নিচ থেকে। তারপর মসজিদে যাওয়া ও নামাজ আদায় করা তার জন্য অতিরিক্ত ইবাদত [অতিরিক্ত সওয়াব] হিসাবে গণ্য হয়। {১}

{১} নফল ইবাদতঃ উযূর দ্বারা মুমিন বান্দার যাবতীয় গুনাহ মাফ হয়ে যায়। তারপর মসজিদে গিয়ে তিনি ফরয, নফল নামাজ ইত্যাদি যা কিছু আদায় করিবে তার সওয়াব তিনি অতিরিক্ত পাবেন।

নাসায়ী শরীফ বাংলা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৮৩.পরিচ্ছেদঃ পাগড়ির উপর মসেহ করা

১০৪. বিলাল [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

তিনি বলেনঃ আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে মোজা ও পাগড়ির উপর মসেহ করিতে দেখেছি।

নাসায়ী শরীফ বাংলা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

১০৫. বিলাল [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

তিনি বলেনঃ আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে উভয় মোজার উপর মসেহ করিতে দেখেছি।

{১} বাগদাদ এবং ওয়াসিতের মাঝখানে অবস্থিত একটি শহরের নাম জারজারায়া। হুসায়ন ইব্ন আবদুর রহমান এখানকার অধিবাসী ছিলেন বলে তাঁকে জারজারায়ী বলা হয়েছে।

নাসায়ী শরীফ বাংলা হাদিসের তাহকিকঃ অন্যান্য

১০৬. বিলাল [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে উভয় পাগড়ি ও মোজার উপর মসেহ করিতে দেখেছি।

নাসায়ী শরীফ বাংলা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৮৪.পরিচ্ছেদঃ মাথার অগ্রভাগসহ পাগড়ির উপর মসেহ করা

১০৭. মুগীরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

বর্ণিত। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] উযূ করেন। তাতে মাথার অগ্রভাগ {২}, পাগড়ি ও মোজার উপর মসেহ করেন।

{২} অর্থাৎ মাথার সম্মুখ দিকের কপাল-সংলগ্ন অংশ।

নাসায়ী শরীফ বাংলা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

১০৮. মুগীরা ইবনি শুবা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] [এক সফরে কাফেলা হইতে] পেছনে থেকে যান। আমিও তাহাঁর সঙ্গে পেছনে থেকে যাই। তিনি পায়খানা-পেশাবের কাজ সমাধা করিলেন। তারপর আমাকে জিজ্ঞাসা করলেনঃ তোমার নিকট কি পানি আছে? আমি তাহাঁর নিকট একটি পানির পাত্র নিয়ে উপস্থিত হলাম। তিনি হাত ও মুখমণ্ডল ধৌত করিলেন। তারপর কনুই থেকে আস্তিন উপরে উঠাতে চাইলেন। কিন্তু জামার হাতা সংকীর্ণ হওয়াতে তা পারলেন না। তাই জামার হাতা খুলে কাঁধের উপর রেখে দেন এবং কনুই পর্যন্ত হাত ধৌত করেন এবং মাথার অগ্রভাগ ও পাগড়ির উপর মসেহ করেন এবং মোজার উপর মসেহ করেন।

নাসায়ী শরীফ বাংলা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৮৫.পরিচ্ছেদঃ পাগড়ির উপর কিভাবে মসেহ করিতে হইবে

১০৯. ইব্ন ওহাব সাকাফী [রহঃ] হইতে বর্ণীত

তিনি বলেনঃ আমি মুগীরা ইব্ন শুবা [রাঃআঃ]-কে বলিতে শুনিয়াছি যে, দুটি বিষয়ে আমি কারো নিকট কিছু জিজ্ঞাসা করব না। কেননা এ দুটি কাজের সময় আমি স্বয়ং রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর নিকট উপস্থিত ছিলাম৷ [একটি হলো মসেহ্] তিনি বলেনঃ আমরা এক সফরে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাথে ছিলাম৷ তিনি পায়খানা-পেশাবের প্রয়োজনে বাইরে গেলেন৷ সেখান থেকে এসে উযূ করেন এবং মাথার অগ্রভাগ ও পাগড়ির দুপার্শ্ব এবং মোজার উপর মসেহ করেন৷ আর [দ্বিতীয়টি হলো] অধঃস্তনের পেছনে ইমামের [নেতার] নামাজ আদায় করা। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এক সফরে গিয়েছিলেন। আমিও তাহাঁর সঙ্গে ছিলাম৷ [তিনি প্রাকৃতিক প্রয়োজন সমাধার জন্য] দূরে চলে গিয়েছিলেন। এদিকে নামাজের সময় হয়ে যায়৷ [নামাজের সময় শেষ হচ্ছে দেখে] লোকেরা নামাজ শুরু করে দিল। আবদুর রহমান ইব্ন আউফ [রাঃআঃ]-কে তারা ঈমাম নিযুক্ত করেন। তিনি তাহাদেরকে নিয়ে নামাজ আদায় করেন। [এমন সময় ] রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ফিরে আসেন এবং ইব্ন আউফের পেছনে অবশিষ্ট নামাজ আদায় করেন। ইব্ন আউফ সালাম ফিরালে নাবী [সাঃআঃ] দাঁড়িয়ে যান এবং যতটুকু নামাজ ছুটে গিয়েছিল তিনি তা আদায় করেন।

নাসায়ী শরীফ বাংলা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৮৬.পরিচ্ছেদঃ পা ধৌত করার প্রমাণ

১১০. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

তিনি বলেনঃ আবুল কাসেম [রসূলুল্লাহ] [সাঃআঃ] বলেছেনঃ [উযূর সময়] যার পায়ের গোড়ালী শুষ্ক থাকিবে তার জন্য রয়েছে জাহান্নামের দুর্ভোগ।

নাসায়ী শরীফ বাংলা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

১১১. আবদুল্লাহ্‌ ইবনি আমর [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এক দল লোককে উযূ করিতে দেখেন। তাহাদের পায়ের গোড়ালীর প্রতি লক্ষ্য করে দেখেন যে তা শুষ্ক রয়েছে। তখন তিনি তাহাদের উদ্দেশ্যে বলেনঃ যাদের পায়ের গোড়ালী শুষ্ক থাকিবে, তাহাদের জন্য জাহান্নামের দুর্ভোগ। তোমরা পরিপূর্ণরূপে উযূ কর।

নাসায়ী শরীফ বাংলা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৮৭.পরিচ্ছেদঃ কোন পা প্রথমে ধৌত করিতে হইবে

১১২. আয়িশাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

তিনি উল্লেখ করেন যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] উযূ করা, জুতা পরিধান করা ও চুল আঁচড়াতে যথাসম্ভব ডানদিক থেকে আরম্ভ করা পছন্দ করিতেন। হাদিসের অন্যতম রাবী শুবা বলেনঃ ওয়াসিত শহরে আমি আশআছ [রাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছিঃ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ডানদিক হইতে আরম্ভ করা পছন্দ করিতেন তাহাঁর সকল কাজ। তারপর কূফাতে আমি তাঁকে বলিতে শুনিয়াছি, তিনি {রাসূল [সাঃআঃ]} যথাসাধ্য ডানদিক হইতে আরম্ভ করা পছন্দ করিতেন।

নাসায়ী শরীফ বাংলা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৮৮.পরিচ্ছেদঃ উভয় হাত দ্বারা পা ধৌত করা

১১৩. কায়সী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

এক সফরে তিনি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]–এর সঙ্গে ছিলেন, এমতাবস্থায় রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]–এর জন্য পানি আনা হলে তিনি পাত্র হইতে পানি ঢালেন এবং উভয় হাত একবার ধৌত করেন। এক-একবার করে মুখমণ্ডল ও দুহাত কনুই পর্যন্ত ধৌত করেন। পরে উভয় হাত দ্বারা পদদ্বয় ধৌত করেন।

নাসায়ী শরীফ বাংলা হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৮৯.পরিচ্ছেদঃ আঙ্গুল খিলাল করার নির্দেশ

১১৪. লাকীত [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তুমি যখন উযূ করিবে পরিপূর্ণরূপে উযূ করিবে এবং খিলাল করিবে।

নাসায়ী শরীফ বাংলা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৯০.পরিচ্ছেদঃ  পা কতবার ধৌত করিবে

১১৫. আবু হাইয়াহ্‌ ওয়াদায়ী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

তিনি বলেনঃ আমি আলী [রাঃআঃ]-কে উযূ করিতে দেখেছি। তিনি তিনবার উভয় হাতের কব্জি পর্যন্ত ধৌত করেন, তিনবার কুলি করেন, তিনবার নাক পরিষ্কার করেন, তিনবার মুখমণ্ডল ধৌত করেন এবং তিনবার করে উভয় হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত করেন। পরে মাথা মসেহ করেন এবং উভয় পা তিনবার করে ধৌত করেন এবং বলেনঃ এটাই রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]–এর উযূ।

নাসায়ী শরীফ বাংলা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৯১.পরিচ্ছেদঃ হাত ও পায়ের কতটুকু ধৌত করিতে হইবে

১১৬. হুমরান [রহঃ] হইতে বর্ণীত

উসমান [রাঃআঃ] উযূর পানি আনতে বলেন। প্রথমে তিনি তিনবার উভয় হাতের কব্জি পর্যন্ত ধৌত করেন। পরে কুলি করেন ও নাকে পানি দেন। তারপর তিনবার মুখমণ্ডল ধৌত করেন। এরপর তিন-তিনবার ডান ও বাম হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত করেন। এরপর মাথা মসেহ করেন এবং তিন-তিনবার ডান ও বাম পা গোড়ালী পর্যন্ত ধৌত করেন। পরে বলেনঃ আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে এরূপ উযূ করিতে দেখেছি; তিনি বলেন যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমার এই উযূর ন্যায় উযূ করিবে এবং দাঁড়িয়ে দুরাকাত নামাজ [তাহিয়্যাতুল উযূ] একাগ্রচিত্তে আদায় করিবে, তার পেছনের গুনাহ্‌ মাফ করে দেওয়া হইবে।

নাসায়ী শরীফ বাংলা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৯২.পরিচ্ছেদঃ জুতা পরিহিত অবস্থায় উযূ করা

১১৭. উবায়দ ইবনি জুরায়জ [রহঃ] হইতে বর্ণীত

তিনি বলেনঃ আমি আবদুল্লাহ ইবনি উমর [রাঃআঃ]-কে বললামঃ আমি দেখেছি আপনি এই সিবতী {১} জুতা পরিধান করেন এবং এগুলো পরিধান করেই উযূ করেন [এর কারণ কি]? আবদুল্লাহ বলেনঃ আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]–কে এ সিবতী জুতা পরিধান করিতে এবং তা রেখে উযূ করিতে দেখেছি।

{১} গরুর চামড়া দ্বারা তৈরী এক প্রকার জুতা, যার লোম উঠিয়ে ফেলা হয়েছে।

নাসায়ী শরীফ বাংলা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৯৩.পরিচ্ছেদঃ মোজার উপর মসেহ করা

১১৮. জারীর ইবনি আবদুল্লাহ [রহঃ] হইতে বর্ণীত

তিনি উযূ করেন এবং মোজার উপর মসেহ করেন। তাঁকে বলা হল, কি ব্যাপার! আপনি মোজার উপর মসেহ করেন? তিনি উত্তরে বলেনঃ আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]–কে মসেহ করিতে দেখেছি। আবদুল্লাহর শাগরিদগণ জারীরের এই কথা পছন্দ করিতেন। আর জারীর [রাঃআঃ] নাবী [সাঃআঃ]–এর ইন্তিকালের সামান্য কিছুকাল পূর্বে ইসলাম কবূল করেন।

নাসায়ী শরীফ বাংলা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

১১৯. আমর ইবনি উমাইয়া যামরী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

তিনি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] –কে উযূ করিতে এবং [উযূতে] মোজার উপর মসেহ করিতে দেখেছেন।

নাসায়ী শরীফ বাংলা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

১২০. উসামা ইবনি যায়দ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এবং বিলাল [রাঃআঃ] হারামে মদীনায় [আসওয়াক] প্রবেশ করেন। রাসূল [সাঃআঃ] তাহাঁর পায়খানা-পেশাবের প্রয়োজনে বাইরে যান এবং কিছুক্ষন পর ফিরে আসেন। উসামা [রাঃআঃ] বলেনঃ আমি বিলাল [রাঃআঃ]-কে জিজ্ঞাসা করলাম, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] সেখানে কি করিয়াছেন? বিলাল [রাঃআঃ] বলেনঃ নাবী [সাঃআঃ] তাহাঁর প্রয়োজনে বাইরে গিয়েছিলেন এবং ফিরে এসে উযূ করেন। তাহাঁর মুখমণ্ডল ও হাত ধৌত করেন, মাথা এবং মোজার উপর মসেহ করেন। তারপর নামাজ আদায় করেন।

নাসায়ী শরীফ বাংলা হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

১২১. সাদ ইবনি আবু ওয়াক্কাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] থেকে বর্ণিত যে, তিনি মোজার উপর মসেহ করিয়াছেন।

নাসায়ী শরীফ বাংলা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

১২২. সাদ ইবনি আবু ওয়াক্কাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] থেকে বর্ণিত যে, মোজার উপর মসেহ করাতে কোন অসুবিধা নেই।

নাসায়ী শরীফ বাংলা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

১২৩. মুগীরা ইবনি শুবা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

তিনি বলেনঃ নাবী [সাঃআঃ] [একদা] পায়খানা-পেশাবের প্রয়োজনে বাইরে গিয়েছিলেন। তিনি যখন প্রত্যাবর্তন করেন তখন আমি পানির পাত্র নিয়ে উপস্থিত হই৷ আমি তাঁকে পানি ঢেলে দেই, তিনি উযূ করেন। [প্রথমে] হাতের কব্জি পর্যন্ত ধৌত করেন। পরে মুখমণ্ডল ধৌত করেন। তারপর কনুই পর্যন্ত হাত ধুতে চান। কিন্তু জামার হাতা চিকন হওয়াতে তা পারেননি। তাই জুব্বার [জামার] নিচের দিক দিয়ে হাত বের করেন এবং কনুই পর্যন্ত ধৌত করেন এবং মোজার উপর মসেহ করেন। এরপর আমাদের সঙ্গে নিয়ে নামাজ আদায় করেন।

নাসায়ী শরীফ বাংলা হাদিসের তাহকিকঃ অন্যান্য

১২৪. রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাঁর প্রয়োজন সমাধার জন্য বের হলেন। মুগীরা [রাঃআঃ] পানির পাত্র নিয়ে তাহাঁর অনুগমন করিলেন। নাবী [সাঃআঃ] তাহাঁর প্রয়োজন সমাধার পর উযূ করেন এবং মোজার উপর মসেহ করেন। উযূ করার সময় মুগীরা [রাঃআঃ] তাঁকে পানি ঢেলে দেন।

নাসায়ী শরীফ বাংলা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৯৪.পরিচ্ছেদঃ সফরে মোজার উপর মসেহ করা

১২৫. মুগীরা ইবনি শুবা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

তিনি বলেনঃ আমি এক সফরে নাবী [সাঃআঃ]–এর সঙ্গে ছিলাম। তিনি আমাকে বলেনঃ হে মুগীরা! তুমি পেছনে থাক এবং [লোকদের বলিলেন,] হে লোক সকল! তোমরা চলতে থাক। আমি [কাফেলার] পেছনে থাকলাম, আমার সঙ্গে পানির একটি পাত্র ছিল। লোকেরা চলে গেলেন। তারপর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাঁর প্রয়োজন সমাধার জন্য গেলেন। তিনি যখন ফিরে আসেন তখন আমি তাঁকে [উযূর জন্য] পানি ঢেলে দিতে থাকি। তাহাঁর পরনে চিকন হাতওয়ালা একটি রুমী জুব্বা ছিল। তিনি তাহাঁর হাত বের করিতে চাইলেন কিন্তু জামার হাতা চিকন হওয়ার কারণে পারলেন না ৷ ফলে জুব্বার নিচের দিক দিয়ে হাত বের করেন। তারপর মুখমণ্ডল ও হাত ধৌত করেন এবং মাথা ও মোজার উপর মসেহ করেন।

নাসায়ী শরীফ বাংলা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৯৫.পরিচ্ছেদঃ মুসাফিরের জন্য মোজার উপর মসেহের মেয়াদ নির্ধারণ

১২৬. সাফওয়ান ইবনি আস্‌সাল [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

তিনি বলেনঃ নাবী [সাঃআঃ] আমাদেরকে, আমরা যখন সফরে থাকি তখন আমাদের মোজা তিন দিন তিন রাত না খোলার অনুমতি দিয়েছেন।

নাসায়ী শরীফ বাংলা হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

১২৭. যির[রহঃ] হইতে বর্ণীত

তিনি বলেনঃ আমি সাফ্ওয়ান ইবনি আসসাল [রাঃআঃ]-কে মোজার উপর মসেহ সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। তিনি বলেছিলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাদেরকে আদেশ করিতেন, আমরা যখন সফররত অবস্থায় থাকি তখন যেন মোজার উপর মসেহ করি এবং জানাবাতের অবস্থা ব্যতীত, পায়খানা-পেশাব অথবা নিদ্রার কারনে তিন দিন তা না খুলি।

নাসায়ী শরীফ বাংলা হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

৯৬.পরিচ্ছেদঃ মুকীমের জন্য মোজার উপর মসেহের মেয়াদ নির্ধারণ

১২৮. আলী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

তিনি বলেছেনঃ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] মসেহর ব্যাপারে মুসাফিরের জন্য তিন দিন তিন রাত এবং মুকীমের জন্য এক দিন এক রাত সময় নির্ধারণ করিয়াছেন।

নাসায়ী শরীফ বাংলা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

১২৯. শুরাইহ ইবনি হানী [রহঃ] হইতে বর্ণীত

তিনি বলেনঃ আমি আয়শা [রাঃআঃ]-কে মোজার উপর মসেহ সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেনঃ আলী [রাঃআঃ]-এর নিকট যাও, তিনি এ ব্যাপারে আমার থেকে অধিক জ্ঞাত। তারপর আমি আলী [রাঃআঃ]-এর নিকট গেলাম এবং তাঁকে মসেহর ব্যাপারে প্রশ্ন করলাম। তিনি বললেনঃ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাদের আদেশ করিতেন যে, মুকীম এক দিন এক রাত এবং মুসাফির তিন দিন তিন রাত মসেহ করিবে।

নাসায়ী শরীফ বাংলা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৯৭.পরিচ্ছেদঃ উযূ ভঙ্গ হওয়া ব্যতীত উযূ করার বর্ণনা

১৩০. আবদুল মালিক ইবনি মাসায়রা [রহঃ] হইতে বর্ণীত

তিনি বলেনঃ আমি নাযযাল ইবনি সাবরাহকে বলিতে শুনিয়াছি যে, আমি আলী [রাঃআঃ]-কে দেখলাম যে, তিনি যোহরের নামাজ আদায় করিলেন এবং জনসাধারণের প্রয়োজন পূরণার্থে বসলেন। যখন আসরের সময় উপস্থিত হল তখন তাহাঁর নিকট একটি পানির পাত্র আনা হল। তিনি তা হইতে এককোষ পানি নিলেন এবং তা দ্বারা মুখমণ্ডল, হস্তদ্বয়, মাথা এবং উভয় পা মসেহ করিলেন। পরে দাড়িয়ে উদ্বৃত্ত পানি পান করিলেন এবং বললেনঃ অনেক লোক এরূপ পান করাকে খারাপ মনে করে। অথচ আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে এরূপ করিতে দেখেছি। আর এটা হলো ঐ ব্যক্তির উযূ, যার উযূ ভঙ্গ হয়নি।

নাসায়ী শরীফ বাংলা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৯৮.পরিচ্ছেদঃ প্রত্যেক নামাজের জন্য উযূ করা

১৩১. আনাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট পানির একটা ছোট পাত্র আনা হলো এবং রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] উযূ করিলেন। আমি [আমর] বললাম, নাবী [সাঃআঃ] কি প্রত্যেক নামাজের জন্য উযূ করিতেন? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। আমর বললেনঃ আর আপনারা [সাহাবীগণ]? তিনি বলিলেন, আমরা উযূ ভঙ্গ না হওয়া পর্যন্ত নামাজ আদায় করতাম। তিনি [আমর] বলেনঃ আমরা একই উযূ দ্বারা একাধিক নামাজ আদায় করতাম।

নাসায়ী শরীফ বাংলা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

১৩২ঃ ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] শৌচাগার হইতে বের হলে তাহাঁর নিকট কিছু খাদ্য আনা হলো। উপস্থিত লোকেরা বললেনঃ আপনার জন্য উযূর পানি আনবো কি ? তিনি বলিলেন, আমাকে তো উযূ করার আদেশ করা হয়েছে যখন আমি নামাজের জন্য প্রস্তুত হই।

নাসায়ী শরীফ বাংলা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

১৩৩. বুরায়দা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] প্রত্যেক নামাজের জন্য উযূ করিতেন। কিন্তু মক্কা বিজয়ের দিন তিনি একই উযূ দ্বারা কয়েক ওয়াক্তের নামাজ আদায় করিলেন। তখন উমর [রাঃআঃ] তাঁকে বললেনঃ [ইয়া রাসূলুল্লাহ!] আজ আপনি এমন কাজ করিলেন যা এর পূর্বে করেননি। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ হে উমর! ইচ্ছা করেই আমি এরূপ করেছি।

নাসায়ী শরীফ বাংলা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৯৯.পরিচ্ছেদঃ পানি ছিটানো

১৩৪. সুফয়ান [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যখন উযূ করিতেন তখন এককোষ পানি নিতেন এবং তা এরূপ ছিটাতেন। শুবা [বিশিষ্ট রাবী] তা স্বীয় পুরুষাঙ্গের উপর ছিটিয়ে দেখালেন। আমি এটা ইবরাহিমের নিকট উল্লেখ করলে তিনি আশ্চর্যান্বিত হলেন। শায়েক ইবনি সুন্নী বলেনঃ হাকাম সুফয়ান সাকাফীর পুত্র।

নাসায়ী শরীফ বাংলা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

১৩৫. হাকাম ইবনি সুফয়ান [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

তিনি বলেনঃ আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]–কে দেখেছি, তিনি উযূ করিলেন এবং তাহাঁর লজ্জাস্থানের উপর পানি ছিটালেন। আহমদ বলেছেন, পরে তাহাঁর লজ্জাস্থানের উপর পানি ছিটালেন।

নাসায়ী শরীফ বাংলা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

১০০.পরিচ্ছেদঃ উযূর উদ্বৃত্ত পানি দ্বারা উপকৃত হওয়া

১৩৬. আবু হায়্যা [রহঃ] হইতে বর্ণীত

তিনি বলেনঃ আমি আলী [রাঃআঃ]–কে দেখলাম, তিনি তিন-তিনবার করে [উযূর অঙ্গগুলো ধৌত করে] উযূ করিলেন, পরে দাঁড়ালেন এবং উযূর উদ্বৃত্ত পানি পান করিলেন, আর বললেনঃ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যেরূপ করেছিলেন আমি সেরূপ করেছি।

নাসায়ী শরীফ বাংলা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

১৩৭. আবু জুহায়ফা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

তিনি বলেনঃ আমি বাতহা নামক স্থানে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। তখন দেখলাম বিলাল [রাঃআঃ] তাহাঁর উযূর অবশিষ্ট পানি বের করিলেন, আর লোক সেদিকে দৌঁড়াচ্ছে। আমি-ও তার কিছু পেলাম। তারপর তাহাঁর সম্মুখে একটি লাঠি স্থাপন করা হলো। তিনি লোকদের ঈমাম হয়ে নামাজ আদায় করিলেন। আর গাধা, কুকুর এবং স্ত্রীলোক তাহাঁর সম্মুখ দিয়ে চলাচল করছিল।

নাসায়ী শরীফ বাংলা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

১৩৮. সুফয়ান [রহঃ] হইতে বর্ণীত

তিনি ইবনিল মুনকাদির [রহঃ]–কে বলিতে শুনেছেনঃ আমি জাবির [রাঃআঃ] কে বলিতে শুনিয়াছি, আমি একবার অসুস্থ হলাম। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এবং আবু বকর [রাঃআঃ] আমাকে দেখিতে আসলেন। তাঁরা দেখলেন, আমি জ্ঞানশুন্য হয়ে পড়েছি। এরূপ দেখে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] উযূ করিলেন এবং আমার উপর তাহাঁর উযূর পানি ছিটিয়ে দিলেন।

নাসায়ী শরীফ বাংলা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

১০১.পরিচ্ছেদঃ উযূর ফরয হওয়া

১৩৯. উসামা ইবনি উমায়র [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আল্লাহ্‌ তাআলা পবিত্রতা ব্যতীত কোন নামাজ কবুল করেন না এবং অবৈধভাবে অর্জিত মালের সদকা গ্রহণ করেন না।

নাসায়ী শরীফ বাংলা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

১০২.পরিচ্ছেদঃ উযূতে সীমালঙ্ঘন

১৪০. আবদুল্লাহ ইবনি আমর ইবনি আস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

তিনি বলেনঃ একজন বেদুঈন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]–এর নিকট এসে তাঁকে উযূ সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করলো। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাঁকে উযূর অঙ্গ তিন-তিনবার ধৌত করে দেখালেন। আর বলিলেন, উযূ এরূপেই করিতে হয়। যে ব্যক্তি এর উপর বাড়ালো সে অন্যায় করিল, সীমালঙ্ঘন ও যুলুম করিল।

নাসায়ী শরীফ বাংলা হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহীহ

১০৩.পরিচ্ছেদঃ পূর্ণরূপে উযূ করার আদেশ

১৪১. আবদুল্লাহ ইবনি উবায়দুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

তিনি বলেন যে, আমরা আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ]–এর নিকট উপবিষ্ট ছিলাম, তিনি বললেনঃ আল্লাহ্‌র শপথ, অন্য লোকদের বাদ দিয়ে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাদের বিশেষভাবে কোন বিষয়ে বলেনি, তিনটি বিষয় ব্যতীতঃ [১] তিনি আমাদেরকে পূর্ণরূপে উযূ করার নির্দেশ দিয়েছেন; [২] আমাদেরকে সাদকা খেতে নিষেধ করিয়াছেন এবং [৩] নিষেধ করিয়াছেন গাধাকে ঘোড়ার উপর পাল দিতে।

নাসায়ী শরীফ বাংলা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

১৪২. আবদুল্লাহ ইবনি আমর [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমরা পূর্ণরূপে উযূ করিবে।

নাসায়ী শরীফ বাংলা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

১০৪.পরিচ্ছেদঃ পূর্ণরূপে উযূ করার ফযীলত

১৪৩. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আমি কি তোমাদের এমন বস্তুর সন্ধান দিব না, যা দ্বারা আল্লাহ্‌ তাআলা গুনাহসমূহ দুর করে দেবেন এবং মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন ? তা হলো, কষ্ট অবস্থায়ও পূর্ণরূপে উযূ করা, মসজিদের দিকে অধিক পদচালনা করা, আর এক নামাজের পর অন্য নামাজের অপেক্ষায় থাকা। এটাই রিবাত, এটাই রিবাত, এটাই রিবাত। {১}

{১} রিবাতের মূল অর্থ হচ্ছে শত্রুকে প্রতিরোধ করার জন্য সীমান্তে সর্বদা প্রহরারত অবস্থায় থাকা। আর মন ও শয়তানের শত্রুতা ও কুমন্ত্রণা সম্পর্কে সর্বদা সজাগ থাকাকেও রিবাত বলা হয়। – অনুবাদক

নাসায়ী শরীফ বাংলা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

১০৫.পরিচ্ছেদঃ নির্দেশ মুতাবিক উযূ করার সওয়াব

১৪৪. আসিম ইবনি সুফয়ান সাকাফী [রহঃ] হইতে বর্ণীত

তাঁরা সুলাসিল যুদ্ধে যোগদান করেছিলেন কিন্তু যুদ্ধ করার সুযোগ পান নি। পরে তাঁরা শত্রুর মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত রইলেন এবং মুআবিয়া [রাঃআঃ]–এর নিকট প্রত্যাবর্তন করিলেন। তখন তাহাঁর নিকট আবু আইয়ুব এবং উকবা ইবনি আমির ছিলেন। তখন আসিম বলিলেন, হে আবু আইয়ুব ! এ বৎসর আমরা যুদ্ধের সুযোগ পেলাম না। আর আমাদের সংবাদ দেয়া হয়েছে যে, যে ব্যক্তি চারটি মসজিদে নামাজ আদায় করিবে, তার পাপ মার্জনা করা হইবে। তিনি বলিলেন, হে ভাতিজা! আমি কি তোমাকে এর চেয়ে সহজতর পন্থা বলে দেব না ? আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]–কে বলিতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি নির্দেশ মুতাবিক উযূ করিবে আর নির্দেশ মুতাবিক নামাজ আদায় করিবে, তার পূর্বেকার পাপ ক্ষমা করা হইবে। সত্যি কি তাই হে উকবা ? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, তাই।

নাসায়ী শরীফ বাংলা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

১৪৫. হুমরান ইবনি আবান [রহঃ] হইতে বর্ণীত

তিনি আবু বুরদা [রহঃ]–কে মসজিদে এ মর্মে সংবাদ দিয়েছেন যে, তিনি উসমান [রাঃআঃ]–কে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] থেকে বর্ণনা করিতে শুনেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র নির্দেশ মুতাবিক উযূ সম্পন্ন করিবে, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ তার মধ্যবর্তী সময়ের পাপসমূহের জন্য কাফফারা স্বরূপ গণ্য হইবে।

নাসায়ী শরীফ বাংলা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

১৪৬. হুমরান [রহঃ] হইতে বর্ণীত

উসমান [রাঃআঃ] বলেনঃ আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]–কে বলিতে শুনিয়াছি, যে ব্যক্তি সুন্দরভাবে উযূ করে এবং পরে নামাজ আদায় করে, তার এ নামাজ ও পরবর্তী নামাজ আদায়ের মধ্যবর্তী সময়ের পাপ মাফ করে দেয়া হইবে।

নাসায়ী শরীফ বাংলা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

১৪৭. মুআবিয়া ইবনি সালেহ [রহঃ] হইতে বর্ণীত

তিনি বলেন,আবু ইয়াহয়া সুলায়ম ইবনি আমির, যামরাহ ইবনি হাবীব এবং আবু তালহা নুয়ায়ম ইবনি যিয়াদ [রহঃ] আমাকে সংবাদ দিয়েছেন যে, আমরা আবু উমামা বাহিলী [রাঃআঃ]-কে বলিতে শুনিয়াছি, আমি আমর ইবনি আবাসা [রাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছিঃ আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! উযূ কিরূপ করিতে হয়? তিনি বলিলেন, উযূ! তুমি যখন উযূ কর এবং তোমার হস্ত তালুদ্বয় ধৌত কর এবং পরিস্কার করে ধৌত কর তখন তোমার পাপসমূহ তোমার নখের ভেতর হইতে এবং তোমার অঙ্গুলির অগ্রভাগ হইতে বের হয়ে যায়।আর যখন তুমি কুলি কর এবং নাকের ভেতরকার অংশ ধৌত কর এবং তোমার মুখমন্ডল ধৌত কর এবং কনুই পর্যন্ত হাত ধৌত কর এবং মাথা মসেহ কর এবং গোড়ালী পর্যন্ত পা ধৌত কর, তখন তুমি তোমার সাধারণ পাপসমূহ ধুয়ে ফেললে। আর যখন তুমি তোমার মুখমন্ডল আল্লাহ তাআলার জন্য স্থাপন কর, তখন তুমি পাপ হইতে ঐ দিনের মত মুক্ত হয়ে যাও, যেদিন তোমার জননী তোমাকে জন্ম দিয়েছিল। আবু উমামা বলেনঃ আমি বললাম, হে আমর ইবনি আবাসা! দেখ তুমি কি বলছ। একই মজলিসে কি এসব কিছু দান করা হয়? তিনি বলিলেন, আল্লাহর কসম! আমি বৃদ্ধাবস্থায় উপনীত হয়েছি আর আমার মৃত্যু নিকটবর্তী। আর আমার কোন অভাবও নেই,এমতাবস্থায় কি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সম্পর্কে মিথ্যা বলবো? রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] থেকে আমার উভয় কান তা শ্রবণ করেছে আর আমার অন্তর তা স্মরণ রেখেছে।

নাসায়ী শরীফ বাংলা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

১০৬.পরিচ্ছেদঃ উযূ শেষে যা বলিতে হয়

১৪৮. উমর ইবনি খাত্তাব [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি উত্তমরূপে উযূ করে আর বলে,

 أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ

আশহাদু আল্লা-ইলা-হা ইল্লাল্লহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রসূলুহ

“আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদ [সাঃআঃ] তার বান্দা ও রাসূল”

তার জন্য বেহেশতের আটটি দরজাই খুলে দেয়া হইবে। সে যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা করে প্রবেশ করিবে।

নাসায়ী শরীফ বাংলা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

১০৭.পরিচ্ছেদঃ উযূর জ্যোতি

১৪৯. আবু হাযিম [রহঃ] হইতে বর্ণীত

তিনি বলেনঃ আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] নামাজের জন্য উযূ করছিলেন। আর আমি তাহাঁর পিছনে ছিলাম,তিনি তাহাঁর হস্তদ্বয় ধৌত করছিলেন তাহাঁর বগল পর্যন্ত, তখন আমি তাঁকে বললাম,হে আবু হুরাইরা! এ কোন ধরনের ঊযূ?? তিনি আমাকে বললেনঃ হে ফর্‌রুখের বংশধর! তোমরা এখানে? যদি আমি পূর্বে জানতাম যে, তোমরা এখানে আছ তাহলে আমি এরূপ উযূ করতাম না।আমি আমার বন্ধু রাসূল [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনিয়াছি যে,মুমিনের জ্যোতি ঐ পর্যন্ত পৌঁছবে, যে পর্যন্ত পানি পৌঁছে।

নাসায়ী শরীফ বাংলা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

১৫০. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] একবার কবরস্থানের দিকে গেলেন।[তথায় উপস্থিত হয়ে] তিনি বললেনঃ হে মুমিন সম্প্রদায়ের ঘরের অধিবাসী! তোমাদেরকে সালাম, আমরাও ইনশাল্লাহ তোমাদের সাথে মিলিত হবো।আমি আশা করি আমার ভ্রাতৃবৃন্দকে দেখিতে পাব। উপস্থিত সাহাবায়ে কিরাম জিজ্ঞাসা করলেনঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমরা কি আপনার ভ্রাতা নই? তিনি বললেনঃ বরং তোমরা আমার আসহাব। আর আমার ভ্রাতৃবৃন্দ হল যারা পরবর্তীকালে আসবে,আর আমি হাউযে কাউসারে তাহাদের সাথে মিলিত হবো। তাঁরা বললেনঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনার যে সকল উম্মত পরবর্তীকালে আগমন করিবে,আপনি তাঁদের কিভাবে চিনবেন? তিনি বললেনঃ তোমরা বল তো, যদি কোন ব্যক্তির একদল কালো ঘোড়ার মধ্যে সাদা চেহারা ও সাদা পদবিশিষ্ট ঘোড়া থাকে,তবে কি সে ব্যক্তি তার ঘোড়া চিনে নিতে পারবে না ? তাঁরা বলেনঃ নিশ্চয়ই। তিনি বললেনঃ কিয়ামতের দিন উযূর দরূন তাহাদের হস্তপদ উজ্জ্বল হইবে।আর আমি হাউযে কাউসারে তাহাদের আগে গিয়ে অপেক্ষা করব।

নাসায়ী শরীফ বাংলা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

১০৮.পরিচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি উত্তমরূপে উযূ করে দুরাকাত নামাজ আদায় করে, তার সওয়াব

১৫১. উক্‌বা ইবনি আমির জুহানী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি উত্তমরূপে উযূ করে তারপর দুরাকাত নামাজ নিষ্ঠার সাথে আদায় করে, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়।

নাসায়ী শরীফ বাংলা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply