তাসবিহ তাহলিল ও তাকবীর (সুবহানাল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহু আকবর)

তাসবিহ তাহলিল ও তাকবীর (সুবহানাল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহু আকবর)

তাসবিহ তাহলিল ও তাকবীর (সুবহানাল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহু আকবর) >> মিশকাতুল মাসাবীহ এর মুল সুচিপত্র দেখুন

পর্বঃ ১০, অধ্যায়ঃ ১

  • অধ্যায়ঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ
  • অধ্যায়ঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
  • অধ্যায়ঃ ১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ

অধ্যায়ঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ

২২৯৫. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ

سُبْحَانَ اللّٰهِ وَالْحَمْدُ لِلّٰهِ وَلَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ وَاللّٰهُ أَكْبَرُ

সুবহা-নাল্ল-হ {আল্লাহ পবিত্র], ওয়াল হাম্‌দুলিল্লা-হ {আল্লাহর জন্য প্রশংসা], ওয়ালা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ {আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন মাবূদ নেই], ওয়াল্ল-হু আকবার {আল্লাহ সর্বাপেক্ষা মহান] বলা, আমার কাছে সমগ্র বিশ্ব অপেক্ষাও বেশি প্রিয়।

[বোখারী, মুসলিম]{১}, {১} সহীহ : মুসলিম ২৬৯৫, তিরমিজি ৩৫৯৭, ইবনি আবী শায়বাহ্ ২৯৪১২, আদ্ দাওয়াতুল কাবীর ১৪২, শুআবুল ঈমান ৫৯২, ইবনি হিববান ৮৩৪, আল কালিমুত্ব ত্বইয়্যিব ৯, সহীহ আত তারগীব ১৫৪৫, সহীহ আল জামি ৫০৩৭। তাসবিহ তাহলিল ও তাকবীর -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

২২৯৬. {আবু হুরাইরাহ [রাদি.]] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি দৈনিক একশবার পড়বে

سُبْحَانَ اللّٰهِ وَبِحَمْدِه

সুবহা-নাল্ল-হি ওয়াবিহামদিহী [অর্থাৎ- আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করি তাহাঁর প্রশংসার সাথে]- তার গুনাহসমূহ যদি সমুদ্রের ফেনার মতো বেশি হয় তবুও তা মাফ করে দেয়া হবে।

[বোখারী, মুসলিম]{১}, {১} সহীহ : বোখারী ৬৪০৫, মুসলিম ২৬৯১, মুয়াত্ত্বা মালিক ৭১৩, ইবনি হিববান ৮২৯, সহীহ আল জামি ৬৪৩১, তিরমিজি ৩৪৬৬, ইবনি আবী শায়বাহ্ ২৯৪১৭, ইবনি মাজাহ ৩৮১২, আহমাদ ৮০০৯, সহীহ আত তারগীব ১৫৯০। তাসবিহ তাহলিল ও তাকবীর -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

২২৯৭. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যায় একশবার পড়বে

سُبْحَانَ اللّٰهِ وَبِحَمْدِه

সুবহা-নাল্ল-হি ওয়াবিহামদিহী [অর্থাৎ- আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করি তাহাঁর প্রশংসার সাথে]- কিয়ামাতের দিন তার চেয়ে শ্রেষ্ঠ বাক্য নিয়ে কেউ উপস্থিত হইতে পারবে না, সে ব্যক্তি ব্যতীত যে এর সমপরিমাণ বা এর চেয়ে বেশি পড়বে।

[বোখারী, মুসলিম]{১}, {১} সহীহ : মুসলিম ২৬৯২, তিরমিজি ৩৪৬৯, আহমাদ ৮৮৫৫, আল কালিমুত্ব ত্বইয়্যিব ১৭, সহীহ আত তারগীব ৬৫৩, সহীহ আল জামি ৬৪২৫। তাসবিহ তাহলিল ও তাকবীর -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

২২৯৮. {আবু হুরাইরাহ [রাদি.]] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দুটি খুব সংক্ষিপ্ত বাক্য যা বলিতে সহজ অথচ [সাওয়াবের] পাল্লায় ভারী এবং আল্লাহর নিকট পছন্দনীয়, তা হলো

سُبْحَانَ اللهِ وَبِحَمْدِه سُبْحَانَ اللهِ الْعَظِيْمِ

সুবহা-নাল্ল-হি ওয়া বিহামদিহী, সুবহা-নাল্ল-হিল আযীম।

[বোখারী, মুসলিম]{১}, {১} সহীহ : বোখারী ৬৬৮২, মুসলিম ২৬৯৪, তিরমিজি ৩৪৬৭, ইবনি মাজাহ ৩৮০৬, ইবনি আবী শায়বাহ্ ২৯৪১৩, আহমাদ ৭১৬৭, শুআবুল ঈমান ৫৮৫, ইবনি হিববান ৮৪১, আল কালিমুত্ব ত্বইয়্যিব ৮, সহীহ আত তারগীব ১৫৩৭, সহীহ আল জামি ৪৫৭২। তাসবিহ তাহলিল ও তাকবীর -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

২২২৯. সাদ ইবনি আবু ওয়াককাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, একদিন আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে ছিলাম। এ সময় তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বললেন, তোমাদের কেউ কি একদিনে এক হাজার নেকী অর্জন করিতে সক্ষম? তার সাথে বসা লোকদের কেউ বললেন, আমাদের কেউ কিভাবে একদিনে এক হাজার নেকী আদায় করিতে সক্ষম হবেন? তখন তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বললেন, কেউ যদি একদিনে একশবার

সুবহা-নাল্ল-হ পড়ে তাহলে এতে তার জন্য এক হাজার নেকী লেখা হবে অথবা তার এক হাজার গুনাহ মাফ করা হবে।

[মুসলিম]{১}, {১} সহীহ : মুসলিম ২৬৯৮, তিরমিজি ৩৪৬৩, ইনু হিববান ৮২৫, আদ্ দাওয়াতুল কাবীর ১৪৯, শুআবুল ঈমান ৫৯৩, আল কালিমুত্ব ত্বইয়্যিব ১১, সহীহাহ্ ৩৬০২, সহীহ আত তারগীব ১৫৪৪, সহীহ আল জামি ২৬৬৫। তাসবিহ তাহলিল ও তাকবীর -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

২৩০০. আবু যার গিফারী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করা হলো, কোন্ কালাম [বাক্য] সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ? এ কথা শুনে তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বললেন, যে কালাম আল্লাহ তাআলা তাহাঁর মালায়িকাহর [ফেরেশতাগণের] জন্য পছন্দ করিয়াছেন তা হলো,

سُبْحَانَ اللّٰهِ وَبِحَمْدِه

সুবহা-নাল্ল-হি ওয়াবিহামদিহী।

[মুসলিম]{১}, {১} সহীহ : মুসলিম ২৭৩১, তিরমিজি ৩৫৯৩, সহীহ আত তারগীব ১৫৩৮। তাসবিহ তাহলিল ও তাকবীর -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

২৩০১. উম্মুল মুমিনীন জুওয়াইরিয়্যাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, একদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের সলাতের পর খুব ভোরে তাহাঁর নিকট হইতে বের হলেন। তখন জুওয়াইরিয়্যাহ্ নিজ সলাতের জায়গায় বসা। তারপর তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] যখন ফিরে আসলেন তখন সূর্য বেশ উপরে উঠে এসেছে। আর জুওয়াইরিয়্যাহ্ তখনো সলাতের জায়গায় বসে আছেন। তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] তাঁকে বললেন, আমি তোমার কাছ থেকে চলে যাওয়ার সময় যে অবস্থায় তুমি ছিলে, এখনো কি সে অবস্থায় আছ? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার কাছ থেকে যাওয়ার পর আমি মাত্র চারটি কালিমাহ্ তিনবার পড়েছি, যদি তুমি এ পর্যন্ত যা পড়েছ তার সাথে আমার পড়া কালাম ওযন দেয়া হয় তাহলে এর ওযনই বেশি হবে। [বাক্যগুলো হলো]

سُبْحَانَ اللّٰهِ وَبِحَمْدِه عَدَدَ خَلْقِه وَرِضَاءَ نَفْسِه وَزِنَةَ عَرْشِه وَمِدَادَ كَلِمَاتِه

সুবহা-নাল্ল-হি ওয়া বিহামদিহী, আদাদা খলকিহী, ওয়া রিযা- নাফসিহী, ওয়া যিনাতা আরশিহী, ওয়া মিদা-দা কালিমা-তিহী [অর্থাৎ- আল্লাহ তাআলার পূত-পবিত্রতা বর্ণনা করি তাহাঁর প্রশংসার সাথে, তাহাঁর সৃষ্টির সংখ্যা পরিমাণ, তাহাঁর সন্তুষ্টি পরিমাণ, তার আরশের ওযন পরিমাণ ও তাহাঁর বাক্যসমূহের সংখ্যা পরিমাণ।]। [মুসলিম]{১}

{১} সহীহ : মুসলিম ২৭২৬, আদ্ দাওয়াতুল কাবীর ১২৭, শুআবুল ঈমান ৫৯৬, সহীহ আদাবুল মুফরাদ ৫০৪/৬৪৭, আল কালিমুত্ব ত্বইয়্যিব ১২, সহীহাহ্ ২১৫৬, সহীহ আত তারগীব ১৫৭৪, সহীহ আল জামি ৫১৩৯, ইবনি খুযায়মাহ্ ৭৫৩। তাসবিহ তাহলিল ও তাকবীর -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

২৩০২. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি দিনে একশবার পড়বে

لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ وَحْدَه لَا شَرِيْكَ لَه لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيرٌ

লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়াহদাহূ লা- শারীকা লাহূ লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুওয়া আলা- কুল্লি শাইয়িন কদীর, [অর্থাৎ- আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন মাবূদ নেই, তিনি একক, তাহাঁর কোন শারীক নেই, তাহাঁরই রাজত্ব, তাহাঁরই প্রশংসা এবং তিনি হচ্ছেন সকল বিষয়ের উপর ক্ষমতাবান]

তার দশটি গোলাম মুক্ত করে দেয়ার সমপরিমাণ সাওয়াব হবে। তার জন্য একশ নেকী লেখা হবে, তার একশটি গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে, তার জন্য এ দুআ ঐ দিনের সন্ধ্যা পর্যন্ত শয়তান হইতে বেঁচে থাকার জন্য রক্ষাকবচ হবে এবং সে যে কাজ করেছে তার চেয়ে উত্তম কাজ অন্য কেউ করিতে পারবে না, কেবল ঐ ব্যক্তি ছাড়া যে এর চেয়ে বেশী পড়বে। [বোখারী, মুসলিম]{১}

{১} সহীহ : বোখারী ৩২৯৩, মুসলিম ২৬৯১, মুয়াত্ত্বা মালিক ৭১২, তিরমিজি ৩৪৬৮, ইবনি মাজাহ ৩৭৯৮, আহমাদ ৮০০৮, আল কালিমুত্ব ত্বইয়্যিব ৬, সহীহ আত তারগীব ৬৫৪, সহীহ আল জামি ৬৪৩৭। তাসবিহ তাহলিল ও তাকবীর -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

২৩০৩. আবু মূসা আল আশ্আরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, এক সফরে আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে ছিলাম। লোকেরা তখন উচ্চৈঃস্বরে তাকবীর বলছিল। [তাকবীর শুনে] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে লোকেরা! তোমরা তোমাদের নাফসের উপর রহম করো। কেননা তোমরা তাকবীরের মাধ্যমে কোন বধিরকে বা কোন অনুপস্থিত সত্তাকে ডাকছ না, তোমরা ডাকছ এমন সত্তাকে যিনি তোমাদের সব কথা শুনেন ও দেখেন। তিনি তোমাদের সাথেই আছেন। তোমরা যাঁকে ডাকছ তিনি তোমাদের প্রত্যেকের বাহনের গর্দান থেকেও বেশি নিকটে। আবু মূসা আল আশ্আরী বলেন, আমি তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পিছনে চুপে চুপে বলছিলাম

 لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللّٰهِ

লা- হাওলা ওয়ালা- ক্যুওয়াতা ইল্লা- বিল্লা-হ [অর্থাৎ- আল্লাহর সাহায্য ছাড়া আমার কোন উপায় নেই]। তখন তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বললেন, আবদুল্লাহ ইবনি কায়স! [আবু মূসার ডাক নাম] আমি কি তোমাকে জান্নাতের ভাণ্ডারগুলোর একটি ভাণ্ডারের সন্ধান দেব না? আমি বললাম, অবশ্যই দেবেন, হে আল্লাহর রসূল! তখন তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বললেন, সেটা হলো

لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللّٰ

লা- হাওলা ওয়ালা- ক্যুওয়াতা ইল্লা- বিল্লা-হ।

[বোখারী, মুসলিম]{১}, {১} সহীহ : বোখারী ৪২০৫, মুসলিম ২৭০৪। তাসবিহ তাহলিল ও তাকবীর -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

অধ্যায়ঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

২৩০৪. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি

 سُبْحَانَ اللّٰهِ الْعَظِيمِ وَبِحَمْدِه 

সুবহা-নাল্ল-হিল আযীম ওয়া বিহামদিহী [অর্থাৎ- মহান আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করি তাহাঁর প্রশংসার সাথে] পড়বে, তার জন্য জান্নাতে একটি খেজুর গাছ রোপণ করা হবে।

[তিরমিজি]{১}, {১} সহীহ লিগয়রিহী : তিরমিজি ৩৪৬৪, মুজামুস সগীর লিত্ব ত্ববারানী ২৮৭, মুসতাদারাক লিল হাকিম ১৮৪৭, সহীহাহ্ ৬৪, সহীহ আত তারগীব ১৫৪০। এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ লিগাইরিহি

২৩০৫. যুবায়র [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রত্যেক প্রভাত যাতে আল্লাহর বান্দারা উঠেন, তাতে একজন মালাক [ফেরেশতা] এরূপ আহবান করেন যে, পবিত্র বাদশাহকে পবিত্রতার সাথে স্মরণ করো।

[তিরমিজি]{১}, {১} জইফ : তিরমিজি ৩৫৬৯, জইফ আল জামি ৫২২৫। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

২৩০৬. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সর্বোত্তম জিকির হলো,

 لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ

লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ আর সর্বোত্তম দুআ হলো,

الْحَمْدُ لِلّٰهِ

আলহামদুলিল্লা-হ।

[তিরমিজি, ইবনি মাজাহ]{১}, {১} হাসান : তিরমিজি ৩৩৮৩, ইবনি মাজাহ ৩৮০০, মুসতাদারাক লিল হাকিম ১৮৩৪, আদ্ দাওয়াতুল কাবীর ১৩৭, শুআবুল ঈমান ৪০৬১, ইবনি হিববান ৮৪৬, সহীহাহ্ ১৪৯৭, সহীহ আত তারগীব ১৫২৬, সহীহ আল জামি ১১০৫ . এই হাদিসটির তাহকীকঃ হাসান হাদিস

২৩০৭. আবদুল্লাহ ইবনি আমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আলহামদুলিল্লা-হ বা প্রশংসা করা হলো সর্বোত্তম কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। যে বান্দা আল্লাহর প্রশংসা করিল না, সে তাহাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করিল না।{১}

{১} জইফ : শুআবুল ঈমান ৪০৮৫, যঈফাহ্ ১৩৭২, জইফ আল জামি ২৭৯০। কারণ এ সানাদে বিচ্ছিন্নতা রয়েছে কাতাদাহ্ ইবনি আমর হইতে শ্রবণ করেননি। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

২৩০৮. আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামাতের দিন যাদেরকে প্রথমে জান্নাতের দিকে ডাকা হবে, তারা হলেন ঐসব ব্যক্তি যারা সুখে-দুঃখে সব সময় আল্লাহর প্রশংসা করেন।

[এ হাদিস দুটি বায়হাক্বী শুআবুল ঈমানে বর্ণনা করেছে]{১}, {১} জইফ : মুজামুল আওসাত লিত্ব ত্ববারানী ৩০৩৩, মুসতাদারাক লিল হাকিম ১৮৫১, শুআবুল ঈমান ৪১৬৬, যঈফাহ্ ৬০২। কারণ এর সানাদে আসিম ইবনি আলী এবং কায়স ইবনি রাফি উভয়েই দুর্বল রাবী।এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

২৩০৯. আবু সাঈদ আল খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ একদিন মূসা [আঃ] বললেন, হে রব! আমাকে এমন একটি কালাম বা বাক্য শিখিয়ে দাও, যা দিয়ে আমি তোমার জিকির করিতে পারি। অথবা তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন, তোমার কাছে দুআ করিতে পারি। তখন আল্লাহ তাআলা বললেনঃ হে মূসা! তুমি বলো,

 لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ

লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ। তখন তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বললেন, হে রব! তোমার প্রত্যেক বান্দাই তো এটা [কালিমা] বলে থাকে। আমি তো তোমার কাছে আমার জন্য একটি বিশেষ কালিমা চাচ্ছি। আল্লাহ তাআলা তখন বললেন, হে মূসা! সাত আকাশ ও আমি ছাড়া এর সকল অধিবাসী এবং সাত জমিন যদি এক পাল্লায় রাখা হয়, আর লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ অন্য পাল্লায় রাখা হয়, তবে অবশ্যই লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ-এর পাল্লা ভারী হবে।

[শারহুস্ সুন্নাহ্]{১}, {১} জইফ : শারহুস্ সুন্নাহ ১২৭৩, মুসতাদারাক লিল হাকিম ১৯৩৬, জইফ আত তারগীব ৯২৩। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

২৩১০. আবু সাঈদ আল খুদরী [রাদি.] ও আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তাঁরা উভয়ে বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি

لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ وَاللّٰهُ أَكْبَرُ

লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়াল্ল-হু আকবার [অর্থাৎ- আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন মাবূদ নেই এবং আল্লাহ সুমহান] বলেন, আল্লাহ তাআলা তার কথা সমর্থন করে বলেন, হ্যাঁ,

لَا إِلٰهَ إِلَّا أَنَا وَأَنَا أَكْبَرُ

লা- ইলা-হা ইল্লা- আনা-, ওয়া আনা- আকবার [অর্থাৎ- আমি ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন মাবূদ নেই এবং আমি অতি মহান]। আর যখন বলেন,

لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ وَحْدَه لَا شَرِيكَ لَه

লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়াহদাহূ লা- শারীকা লাহূ [অর্থাৎ- আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন মাবূদ নেই, তিনি একক, তাহাঁর কোন শারীক নেই]। তখন আল্লাহ তাআলা বলেন,

لَا إِلٰهَ إِلَّا أَنَا وَحْدِىْ لَا شَرِيْكَ لِىْ

লা- ইলা-হা ইল্লা- আনা- ওয়াহদী, লা- শারীকা লী [অর্থাৎ- হ্যাঁ, আমি একক, আমার কোন শারীক নেই]। আর যখন কোন বান্দা বলেন,

لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ

লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু [অর্থাৎ- আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন মাবূদ নেই, তাহাঁরই রাজ্য ও তাহাঁরই প্রশংসা]। তখন আল্লাহ তাআলা বলেন,

لَا إِلٰهَ إِلَّا أَنَا لِىَ الْمُلْكُ وَلِيَ الْحَمْدُ

লা- ইলা-হা ইল্লা- আনা- লিয়াল মুলকু ওয়া লিয়াল হামদু [অর্থাৎ- হ্যাঁ, আমি ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন মাবূদ নেই, আমারই রাজ্য এবং আমারই প্রশংসা]।

কোন বান্দা যখন বলেন,

لَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ وَلَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللّٰ

লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়ালা- হাওলা ওয়ালা- ক্যুওয়াতা ইল্লা- বিল্লা-হি [অর্থাৎ- আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন মাবূদ নেই এবং আল্লাহর সাহায্য ছাড়া কারো কোন উপায় ও শক্তি নেই]। তখন আল্লাহ তাআলা বলেন,

لَا إِلٰهَ إِلَّا أَنَا لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِىْ

লা- ইলা-হা ইল্লা- আনা- লা- হাওলা ওয়ালা- ক্যুওয়াতা ইল্লা- বী [অর্থাৎ- আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন মাবূদ নেই এবং আমার সাহায্য ছাড়া কারো কোন উপায় ও শক্তি নেই]। আর তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] আরো বলিতেন, যে ব্যক্তি এসব কালিমাগুলো নিজের অসুস্থতার সময়ে পড়ে, তারপর মৃত্যুবরণ করিবে, সে জাহান্নামের আগুন হইতে রক্ষা পাবে।

[তিরমিজি, ইবনি মাজাহ]{১}, {১} সহীহ লিগয়রিহী : তিরমিজি ৩৪৩০, সহীহ আত তারগীব ৩৪৮১। এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ লিগাইরিহি

২৩১১. সাদ ইবনি আবু ওয়াককাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে জনৈকা মহিলার কাছে গেলেন। তখন মহিলার সামনে কিছু খেজুরের বিচি; অথবা তিনি বলেছেন, কিছু কাঁকর ছিল, যা দিয়ে মহিলা গুণে গুণে তাসবীহ পড়ছিল। এটা দেখে তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] তাকে বললেন, আমি কি এর চেয়ে তোমার পক্ষে সহজ তাসবীহ; অথবা বলেছেন, উত্তম তাসবীহ তোমাকে বলে দিব না? আর তা হচ্ছে,

 سُبْحَانَ اللّٰهِ عَدَدَ مَا خَلَقَ فِى السَّمَاءِ وَسُبْحَانَ اللّٰهِ عَدَدَ مَا خَلَقَ فِى الْأَرْضِ وَسُبْحَانَ اللّٰهِ عَدَدَ مَا بَيْنَ ذٰلِكَ وَسُبْحَانَ اللّٰهِ عَدَدَ مَا هُوَ خَالِقٌ وَاللّٰهُ أَكْبَرُ مِثْلَ ذٰلِكَ وَالْحَمْدُ لِلّٰهِ مِثْلَ ذٰلِكَ وَلَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ مِثْلَ ذٰلِكَ وَلَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللّٰهِ مِثْلَ ذٰلِكَ

সুবহা-নাল্ল-হি আদাদা মা- খলাকা ফিস্ সামা-য়ি, ওয়া সুবহা-নাল্ল-হি আদাদা মা- খলাকা ফিল আরযি, ওয়া সুবহা-নাল্ল-হি আদাদা মা- বায়না যা-লিকা ওয়া সুবহা-নাল্ল-হি আদাদা মা-হুওয়া খ-লিকুন ওয়াল্ল-হু আকবার মিসলা যা-লিকা ওয়াল হামদুলিল্লা-হি মিসলা যা-লিকা ওয়ালা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু মিসলা যা-লিকা ওয়ালা- হাওলা ওয়ালা- ক্যুওয়াতা ইল্লা- বিল্লা-হি মিসলা যা-লিকা

[অর্থাৎ- আল্লাহর জন্য পাক-পবিত্রতা, যে পরিমাণ তিনি আসমানে সৃষ্টিজগত করিয়াছেন। আল্লাহর জন্য পাক-পবিত্রতা তাহাঁর ওই সৃষ্টিজগতের অনুরূপ যা আসমান ও জমিনের মধ্যে আছে। আর আল্লাহর জন্য সব পাক-পবিত্রতা যে পরিমাণ তিনি ভবিষ্যতে সৃষ্টি করিবেন। আর অনুরূপভাবে আল্ল-হু আকবার ও আলহামদুলিল্লা-হি লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ এবং লা- হাওলা ওয়ালা- ক্যুওয়াতা ইল্লা- বিল্লা-হিও পড়বে। [তিরমিজি, আবু দাউদ; তিরমিজি হাদিসটিকে গরীব বলেছেন]{১}

{১} জইফ : আবু দাউদ ১৫০০, তিরমিজি ৩৫৬৫, শারহুস্ সুন্নাহ ১২৭৯, ইবনি হিববান ৮৩৭, আল কালিমুত্ব ত্বইয়্যিব ১৩, জইফ আল জামি ২১৫৫, মুসতাদারাক লিল হাকিম ২০০৯, আদ্ দাওয়াতুল কাবীর ৩২৩, শুআবুল ঈমান ৫৯৫, যঈফাহ্ ৮৩, জইফ আত তারগীব ৯৫৯। কারণ খুযায়মাহ্ একজন মাজহূল রাবী। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

২৩১২.আমর ইবনি শুআয়ব হইতে বর্ণীতঃ

তাহাঁর পিতার মাধ্যমে তাহাঁর দাদা হইতে বর্ণনা করেন। তাহাঁর দাদা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সকালে ও বিকালে একশবার করে সুবহা-নাল্ল-হ পড়বে, সে তাহাঁর মতো হবে [সাওয়াবের দিক দিয়ে] যে একশবার হজ করিবে। যে ব্যক্তি সকালে ও বিকালে একশবার করে আলহামদুলিল্লা-হ পড়বে, সে আল্লাহর পথে একশ ঘোড়ায় একশ মুজাহিদ রওনা করে দেয়া ব্যক্তির মতো হবে। যে সকালে ও বিকালে একশবার করে লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ পড়বে, সে নবী ইসমাঈল [আঃ]-এর বংশের একশ লোক মুক্ত করে দেয়া ব্যক্তির সমতুল্য হবে। আর যে ব্যক্তি সকালে ও বিকালে একশবার করে আল্ল-হু আকবার পড়বে, সেদিন তার চেয়ে বেশি সাওয়াবের কাজ আর কেউ করিতে পারবে না। অবশ্য যে ব্যক্তি ব্যতিক্রম, যে অনুরূপ আমাল করেছে অথবা এর চেয়ে বেশি করেছে-

[তিরমিজি; তিনি বলেন, হাদিসটি হাসান গরীব]{১}, {১} জইফ : তিরমিজি ৩৪৭০, যঈফাহ্ ১৩১৫, জইফ আত তারগীব ৩৮৭, জইফ আল জামি ৫৬১৯। কারণ যহ্হাক ইবনি হুমরাহ্ একজন দুর্বল রাবী। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

২৩১৩. আবদুল্লাহ ইবনি আমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সুবহা-নাল্ল-হ হলো পাল্লার অর্ধেক, আলহামদুলিল্লা-হ একে পূর্ণ করে, আর লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ-এর সামনে কোন পর্দা নেই, যে পর্যন্ত না তা আল্লাহর কাছে গিয়ে না পৌঁছে।

[তিরমিজি; তিনি বলেছেন, হাদিসটি গরীব, এর সানাদ সবল নয়]{১}, {১} জইফ : তিরমিজি ৩৫১৮, মুজামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ৭৩, জইফ আত তারগীব ৯৩০, জইফ আল জামি ২৫১০। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

২৩১৪. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে কোন বান্দা খালেস মনে

لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ

লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ বলবে, অবশ্যই তার জন্য জান্নাতের দরজাগুলো খোলা হবে, যতক্ষণ না তা আল্লাহর আরশে না পৌঁছে, তবে যদি সে কাবীরাহ্ গুনাহ হইতে বিরত থাকে।

[তিরমিজি; তিনি বলেন, হাদিসটি গরীব]{১}, {১} হাসান : তিরমিজি ৩৫৯০, সহীহ আস সগীর ৫৬৪৮, সহীহ আত তারগীব ১৫২৪। এই হাদিসটির তাহকীকঃ হাসান হাদিস

২৩১৫. আবদুল্লাহ ইবনি মাস্ঊদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মিরাজের রাতে ইব্রাহীম [আঃ]-এর সাথে আমার দেখা হলে তিনি আমাকে বললেন, হে মুহাম্মাদ! আপনি আপনার উম্মাতকে আমার সালাম বলবেন এবং খবর দিবেন যে, জান্নাত হলো সুগন্ধ মাটি ও সুপেয় পানিবিশিষ্ট। কিন্তু এতে কোন গাছপালা নেই [অর্থাৎ- জান্নাত হলো সমতল ভূমি]। এর গাছপালা হলো

 سُبْحَانَ اللّٰهِ وَالْحَمْدُ لِلّٰهِ وَلَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ وَاللّٰهُ أَكْبَرُ

সুবহা-নাল্ল-হি, ওয়ালহামদুলিল্লা-হি, ওয়ালা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়াল্ল-হু আকবার। [তিরমিজি; তিনি বলেন, সানাদগত দিক থেকে হাদিসটি হাসান গরীব]{১}

{১} হাসান লিগয়রিহী : তিরমিজি ৩৪৬২, মুজামুস্ সগীর ৫৩৯, আল কালিমুত্ব ত্বইয়্যিব ১৫, সহীহাহ্ ১০৫, সহীহ আত তারগীব ১৫৫০, সহীহ আল জামি ৫১৫২। এই হাদিসটির তাহকীকঃ হাসান লিগাইরিহি

২৩১৬. ইউসায়রাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি মুহাজির রমণীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে বললেন, তোমরা তাসবীহ [সুবহা-নাল্ল-হ], তাহলীল [লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ], তাকদীস [সুবহা-নাল মালিকিল কুদ্দূস] নিজের আঙ্গুলে গুণে গুণে পড়বে। কারণ আঙ্গুলকে কথা বলার শক্তি দিয়ে কিয়ামাতের দিন জিজ্ঞেস করা হবে এবং আল্লাহর জিকির করা হইতে গাফিল হয়ো না, যাতে তোমরা আল্লাহর রহমাতকে ভুলে না যাও।

[তিরমিজি ও আবু দাউদ]{১}, {১} হাসান : তিরমিজি ৩৫৮৩, ইবনি আবী শায়বাহ্ ৭৬৫৬, মুজামুল কাবীর ১৮০, মুসতাদারাক লিল হাকিম ২০০৭, ইবনি হিব্বান ৮৪২, আবু দাউদ ১৩৪৫, সহীহ আল জামি ৪০৮৭। এই হাদিসটির তাহকীকঃ হাসান হাদিস

অধ্যায়ঃ ১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ

২৩১৭. সাদ ইবনি আবু ওয়াক্কাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, একদিন এক বেদুঈন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে বলিল, হে আল্লাহর রসূল! আমাকে এমন কিছু দুআ-কালাম শিখিয়ে দিন যা আমি পড়তে পারি। তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বললেন, তুমি পড়বে

 لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ وَحْدَه لَا شَرِيكَ لَهُ اللّٰهُ أَكْبَرُ كَبِيرًا وَالْحَمْدُ لِلّٰهِ كَثِيرًا وَسُبْحَانَ اللّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللّٰهِ الْعَزِيزِ الْحَكِيمِ

লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়াহদাহূ লা- শারীকা লাহূ, আল্ল-হু আকবার কাবীরা- ওয়াল হামদুলিল্লা-হি কাসীরা-, ওয়া সুবহা-নাল্ল-হি রব্বিল আ-লামীন, লা- হাওলা ওয়ালা- ক্যুওয়াতা ইল্লা- বিল্লা-হিল আযীযিল হাকীম

[অর্থাৎ- আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন মাবূদ নেই, তিনি একক, তাহাঁর কোন শারীক নেই, আল্লাহ অনেক বড়, আল্লাহর জন্য অনেক প্রশংসা, আমি পবিত্রতা ঘোষণা করি সে আল্লাহর যিনি সৃষ্টিজগতের প্রতিপালক, কারো কোন উপায় বা শক্তি নেই আল্লাহ ছাড়া, যিনি প্রতাপান্বিত ও প্রজ্ঞাবান]।

[রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শেখানো দুআ শুনে] সে বেদুঈন বলিল, হে আল্লাহর রসূল! এটা তো আমার রবের জন্য [তাহাঁর প্রশংসা], আমার জন্য কী? তখন তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বললেন, তুমি পড়বে

اللّٰهُمَّ اغْفِرْ لِىْ وَارْحَمْنِىْ وَاهْدِنِىْ وَارْزُقْنِىْ وَعَافِنِىْ

আল্ল-হুম্মাগফিরলী, ওয়ার হামনী, ওয়াহদিনী, ওয়ারযুকনী, ওয়া আ-ফিনী [অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তুমি আমাকে মাফ কর, দয়া কর, হিদায়াত দান কর, আমাকে রিযক দাও ও আমাকে সুখে-শান্তিতে রাখ]।

শেষ শব্দ عَافِنِىْ [আ-ফিনী] {অর্থাৎ- আমাকে সুখে-শান্তিতে রাখ] সম্বন্ধে বর্ণনাকারী সন্দেহ রয়েছে যে, এ শব্দটি রসূলের কথার মধ্যে আছে কিনা?

[মুসলিম]{১}, {১} সহীহ : মুসলিম ২৬৯৬, আদ্ দাওয়াতুল কাবীর ২৩৯, ইবনি হিববান ৯৪৬, সহীহ আত তারগীব ১৫৬২। তাসবিহ তাহলিল ও তাকবীর -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

২৩১৮. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি শুকনা পাতাবিশিষ্ট গাছের কাছে গেলেন এবং নিজের হাতের লাঠি দিয়ে এতে আঘাত করিলেন। এতে গাছের পাতা ঝরতে লাগল। তখন তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বললেন,

 الْحَمْدُ لِلّٰهِ وَسُبْحَانَ اللّٰهِ وَلَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ وَاللّٰهُ أَكْبَرُ

আলহামদুলিল্লা-হ, ওয়া সুবহা-নাল্ল-হ, ওয়ালা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়াল্ল-হু আকবার-এ বাক্যগুলো বান্দার গুনাহ এভাবে ঝরিয়ে দেয় যে, যেভাবে ঐ গাছের পাতা ঝরছে।

[তিরমিজি; তিনি বলেন, হাদিসটি গরীব]{১}, {১} হাসান : তিরমিজি ৩৫৩৩, সহীহ আত তারগীব ১৫৭০। এই হাদিসটির তাহকীকঃ হাসান হাদিস

২৩১৯. মাকহূল [রাহিমাহুল্লাহ] আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, লা- হাওলা ওয়ালা- ক্যুওয়াতা ইল্লা- বিল্লা-হ বেশি বেশি করে পড়তে। কেননা এ বাক্যটি জান্নাতের ভাণ্ডারসমূহের বিশেষ বাক্য।

لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللّٰهِ وَلَا مَنْجَأَ مِنَ اللّٰهِ إِلَّا إِلَيْهِ

মাকহূল [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, যে ব্যক্তি পড়বে লা- হাওলা ওয়ালা- ক্যুওয়াতা ইল্লা- বিল্লা-হি ওয়ালা- মানজাআ মিনাল্ল-হি ইল্লা- ইলায়হি– আল্লাহ তার সত্তরটি কষ্ট দূর করে দিবেন, যার সর্বনিমণ হলো দারিদ্র্যতা। [তিরমিজি। তিনি বলেন, হাদিসের সানাদ মুত্তাসিল নয়।

মাকহূল [রাহিমাহুল্লাহ] আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে হাদিসটি শুনেননি।]{১} {১} সহীহ : তবে মাকহূলের উক্তিটি দুর্বল, কারণ তা মাকতু। তিরমিজি ৩৬০১, সহীহ আত তারগীব ১৫৮০। তাসবিহ তাহলিল ও তাকবীর -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

২৩২০. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ

لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللّٰ

লা- হাওলা ক্যুওয়াতা ইল্লা- বিল্লা-হ হলো নিরানব্বইটি রোগের ঔষধ, তন্মধ্যে সহজটা হলো চিন্তা।{১}

{১} জইফ : মুজামুল আওসাত লিত্ব ত্ববারানী ৫০২৮, মুসতাদারাক লিল হাকিম ১৯৯০, আদ্ দাওয়াতুল কাবীর ১৯১, জইফ আত তারগীব ৯৭০, জইফ আল জামি ৬২৮৬। কারণ এর সানাদে বিশর ইবনি রাফি একজন দুর্বল রাবী। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

২৩২১. {আবু হুরাইরাহ [রাদি.]] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেনঃ আমি কী তোমাকে আরশের নীচের ও জান্নাতের ভাণ্ডারসমূহের একটি কালিমাহ্ বলে দেবো না? [সেটি হলো]

لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللّٰهِ

লা- হাওলা ওয়ালা- ক্যুওয়াতা ইল্লা- বিল্লা-হ। [যখন এ কালিমাটি কেউ পড়ে] আল্লাহ তাআলা বলেন, আমার বান্দা সর্বাত্মকভাবে আমার কাছে আত্মসমর্পণ করিল

।[উক্ত হাদিস দুটি বায়হাক্বী দাওয়াতুল কাবীর-এ বর্ণনা করিয়াছেন]।{১}, {১} জইফ : আদ্ দাওয়াতুল কাবীর ১৫৫, বায়হাক্বী : শুআবুল ঈমান ১৯০, জইফ আত তারগীব ৯৫৪। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

২৩২২. আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ.

তিনি বলেন, সুবহা-নাল্ল-হ হলো আল্লাহর সৃষ্টিজগতের নামাজ। আলহামদুলিল্লা-হ হলো কালিমাতুশ্ শুক্‌র, অর্থাৎ- কৃতজ্ঞতা প্রকাশের বাক্য।

لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللّٰهِ

লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ হলো তাওহীদের কালিমাহ্, আর আল্ল-হু আকবার আকাশ ও জমিনের মধ্যে যা কিছু আছে তাকে পূর্ণ করে দেয়। যখন বান্দা বলে, লা- হাওলা ওয়ালা- ক্যুওয়াতা ইল্লা- বিল্লা-হ, তখন আল্লাহ তাআলা বলেন, এ বান্দা সম্পূর্ণরূপে আমার কাছে আত্মসমর্পণ করিল।

[রযীন], এই হাদিসটির তাহকীকঃ নির্ণীত নয়


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply