আল্লাহ তাআলার জিকির ও তার নৈকট্য লাভ

আল্লাহ তাআলার জিকির ও তার নৈকট্য লাভ

আল্লাহ তাআলার জিকির ও তার নৈকট্য লাভ >> মিশকাতুল মাসাবীহ এর মুল সুচিপত্র দেখুন

পর্বঃ ৯, অধ্যায়ঃ ১

  • অধ্যায়ঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ
  • অধ্যায়ঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
  • অধ্যায়ঃ ১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ

অধ্যায়ঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ

২২৬১. আবু হুরাইরাহ ও আবু সাঈদ আল খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তাঁরা উভয়ে বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন মনুষ্য দল আল্লাহর জিকির করিতে বসলে, আল্লাহর মালায়িকাহ্ [ফেরেশতাগণ] নিশ্চয় তাদেরকে ঘিরে নেন, তাহাঁর রহমত তাদেরকে ঢেকে ফেলে এবং তাদের ওপর [মনের] প্রশান্তি বর্ষিত হয়। [অধিকাংশ সময়] আল্লাহ তাহাঁর নিকটবর্তীদের সাথে তাদেরকে স্মরণ করেন।

[মুসলিম]{১}, {১} সহীহ : মুসলিম ২৭০০, আবু দাউদ ১৪৫৫, তিরমিজি ৩৩৭৮, ইবনি মাজাহ ৩৭৯১, ইবনি আবী শায়বাহ্ ২৯৪৭৫, আহমাদ ১১৪৬৩, মুজামুল আওসাত লিত্ব ত্ববারানী ১৫০০, আদ্ দাওয়াতুল কাবীর ৫, শুআবুল ঈমান ৫২৭, ইবনি হিববান ৭৬৮, সহীহাহ্ ৭৫, সহীহ আত তারগীব ১৪১৭, সহীহ আল জামি ৫৫০৯। আল্লাহ তাআলার জিকির -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

২২৬২. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার সফর হইতে মক্কার পথ ধরে এক পাহাড়ে পৌঁছলেন, জায়গাটির নাম ছিল জুমদান। তখন তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বললেন, তোমরা চলো এটা হলো জুমদান। আগে আগে চলল মুফাররিদরা। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করিলেন, হে আল্লাহর রসূল! মুফাররিদ কারা? তখন তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বললেন, যে পুরুষ বা নারী আল্লাহর অধিক জিকির করে।

[মুসলিম]{১}, {১} সহীহ : মুসলিম ২৬৭৬, তিরমিজি ৩৫৯৬, মুজামুল আওসাত ২৭৭৩, আদ্ দাওয়াতুল কাবীর ১৮, শুআবুল ঈমান ৫০২, আল কালিমুত্ব ত্বইয়্যিব ২, সহীহ আত তারগীব ১৫০১। আল্লাহ তাআলার জিকির -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

২২৬৩. আবু মূসা আল আশ্আরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে লোক তার রবকে স্মরণ করে আর যে করে না, তাদের উদাহরণ হলো জীবিত ও মৃত ব্যক্তির মতো।

[বোখারী, মুসলিম]{১}, {১} সহীহ : বোখারী ৬৪০৭, মুসলিম ৭৭৯, আল কালিমুত্ব ত্বইয়্যিব ৪, সহীহ আত তারগীব ১৫০০। আল্লাহ তাআলার জিকির -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

২২৬৪. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তাআলা বলেন, আমি আমার বান্দার নিকট সেরূপ, যেরূপ সে আমাকে স্মরণ করে। আমি তার সাথে থাকি, যখন সে আমাকে স্মরণ করে। যদি সে আমাকে স্মরণ করে তার মনে, আমি তাকে স্মরণ করি আমার মনে। আর সে যদি স্মরণ করে আমাকে মানুষের দলে, আমি তাকে [অনুরূপ] স্মরণ করি তাদের চেয়েও সর্বোত্তম দলে।

[বোখারী, মুসলিম]{১}, {১} সহীহ : বোখারী ৭৪০৫, মুসলিম ২৬৭৬, তিরমিজি ৩৬০৩, ইবনি মাজাহ ৩৮২২, আহমাদ ৯৩৫১, শুআবুল ঈমান ৫৪৬, সহীহ আত তারগীব ১৪৮৭। আল্লাহ তাআলার জিকির -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

২২৬৫. আবু যার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তাআলা বলেনঃ যে ব্যক্তি আমার কাছে একটি কল্যাণকর [ভালো] কাজ নিয়ে উপস্থিত হবে, তার জন্য ঐ কাজের দশগুণ বেশি কল্যাণ [সাওয়াব] রয়েছে। আর আমি এর চেয়েও বেশি দিতে পারি। আর যে ব্যক্তি একটি অকল্যাণকর [মন্দ] কাজ নিয়ে উপস্থিত হবে তার প্রতিফল স্বরূপ এক গুণই অকল্যাণ [গুনাহ] হবে অথবা আমি তাকে মাফও করে দিতে পারি। আর যে ব্যক্তি এক বিঘত পরিমাণ আমার দিকে এগিয়ে আসবে; আমি তার দিকে এক হাত এগিয়ে আসব। যে আমার দিকে হেঁটে আসে, আমি তার দিকে দৌড়ে যাই। আর যে কোন শির্ক না করে আমার কাছে পৃথিবী সমান গুনাহ করে আসে, আমি ওই পরিমাণ ক্ষমা নিয়ে তার সাথে সাক্ষাৎ করি

। [মুসলিম]{১}, {১} সহীহ : মুসলিম ২৬৮৭, ইবনি মাজাহ ৩৮২১, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬৬৪৬। আল্লাহ তাআলার জিকির -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

২২৬৬. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তাআলা বলেনঃ যে ব্যক্তি আমার কোন বন্ধুকে শত্রু ভাবে আমি তার সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করি। আমি আমার বান্দার ওপর যা কিছু [আমাল] ফরয করেছি; তা দ্বারা আমার সান্নিধ্য অর্জন করা আমার নিকট বেশী প্রিয় অন্য কিছু [আমাল] দিয়ে সান্নিধ্য অর্জনের চাইতে। আর আমার বান্দা সর্বদা নফল ইবাদাতের মাধ্যমে আমার নৈকট্য হাসিল করে। পরিশেষে আমি তাকে ভালবাসি এবং আমি যখন তাকে ভালবাসি- আমি হয়ে যাই তার কান, যা দিয়ে সে শুনে। আমি হয়ে যাই তার চোখ, যা দিয়ে সে দেখে। আমি হয়ে যাই তার হাত, যা দিয়ে সে ধরে [কাজ করে]। আমি হয়ে যাই তার পা, যা দিয়ে চলাফেরা করে। সে যদি আমার কাছে চায়, আমি তাকে দান করি। সে যদি আমার কাছে আশ্রয় চায়, আমি তাকে আশ্রয় দেই। আর আমি যা করিতে চাই, তা করিতে আমি মুমিন বান্দার রূহ কবয করার মতো ইতস্তত করি না। কেননা মুমিন [স্বাভাবিকভাবে] মৃত্যুকে অপছন্দ করে, আর আমি অপছন্দ করি তাকে অসন্তুষ্ট করিতে। কিন্তু মৃত্যু তার জন্য অত্যাবশ্যকীয়।

[বোখারী]{১}, {১} সহীহ : বোখারী ৬৫০২, সহীহাহ্ ১৬৪০, সহীহ আস্ সগীর ১৭৮২। আল্লাহ তাআলার জিকির -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

২২৬৭. {আবু হুরাইরাহ [রাদি.]] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহর একদল মালাক [ফেরেশতা] রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে ঘুরে আল্লাহর জিকিরকারীদেরকে সন্ধান করেন। যখন তাঁরা কোন দলকে আল্লাহর জিকির করিতে দেখে, তখন একে অপরকে বলেন, এসো! তোমাদের কামনার বিষয় এখানেই। তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেন, এরপর তারা জিকিরকারী দলকে নিজেদের ডানা দিয়ে নিকটতম আসমান পর্যন্ত ঘিরে নেন। তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেন, তাদেরকে তখন তাদের প্রতিপালক জিজ্ঞেস করেন, আমার বান্দারা কি বলছে? অথচ ব্যাপারটা তিনিই সবচেয়ে বেশি ভাল জানেন। তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেন, তখন মালায়িকাহ্ [ফেরেশতা] [ফেরেশতাগণ] বলেন, তোমার বান্দারা তোমার পবিত্রতা বর্ণনা, মহত্ব ঘোষণা, প্রশংসা ও মর্যাদার বর্ণনা দিচ্ছে। তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেন, তখন আল্লাহ তাআলা বলেন, তারা কি আমাকে দেখেছে? তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেন, তখন মালায়িকাহ্ [ফেরেশতা] বলেন, তোমার কসম! তারা কক্ষনো তোমাকে দেখেনি।

তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেন, তখন আল্লাহ জিজ্ঞেস করেন। তারা যদি আমাকে দেখিতে পেত, তাহলে অবস্থাটা কেমন হত? তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেন, তখন মালায়িকাহ্ [ফেরেশতা] বলেন, হে রব! যদি তারা তোমাকে দেখিতে পেত, তাহলে তারা তোমার আরও বেশি ইবাদাত করত, আরও বেশি তোমার গুণগান ও পবিত্রতা বর্ণনা করত। তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেন, তখন আল্লাহ জিজ্ঞেস করেন, [প্রকৃতপক্ষে] তারা কি চায়? মালায়িকাহ্ [ফেরেশতা] বলেন, তারা তোমার কাছে জান্নাত চায়। তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেন, তখন আল্লাহ তাআলা বলেন, তারা কি জান্নাত দেখেছে? মালায়িকাহ্ [ফেরেশতা] বলেন, হে রব! তোমার কসম! তারা কখনো জান্নাত দেখেনি। তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেন, তখন আল্লাহ বলেন, তারা যদি জান্নাত দেখিতে পেত, তাহলে কেমন হত? তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেন, মালায়িকাহ্ [ফেরেশতা] তখন বলেন, যদি তারা জান্নাত দেখিতে পেত, অবশ্যই তারা তার জন্য খুবই লোভী হত, এর জন্য অনেক দোআ করত, তা পাওয়ার আগ্রহ বেশি দেখাত।

তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেন, তখন আল্লাহ জিজ্ঞেস করেন, তারা কোন্ জিনিস হইতে আশ্রয় চায়? তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেন, মালায়িকাহ্ [ফেরেশতা] তখন বলেন, তারা জাহান্নাম থেকে আশ্রয় চায়। তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেন, তখন আল্লাহ জিজ্ঞেস করেন, তারা কি জাহান্নাম দেখেছে। তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেন, মালায়িকাহ্ [ফেরেশতা] তখন বলেন, হে রব! তোমার কসম! তারা জাহান্নাম কক্ষনো দেখেনি। তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেন, তখন আল্লাহ জিজ্ঞেস করেন, যদি তারা জাহান্নাম দেখিতে পেত, কেমন হত? তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেন, মালায়িকাহ্ [ফেরেশতা] তখন উত্তরে বলেন, যদি তারা জাহান্নাম দেখিতে পেত, তাহলে তারা জাহান্নাম থেকে অনেক দূরে পালিয়ে থাকত, একে বেশি ভয় করত। তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেন, তখন আল্লাহ বলেন, তোমাদেরকে আমি সাক্ষী রেখে ঘোষণা করছি, আমি তাদেরকে ক্ষমা করে দিলাম। তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেন, তখন মালায়িকাহ্র [ফেরেশতা] একজন বলে ওঠেন, তাদের অমুক ব্যক্তি তাদের মধ্যে গণ্য নয়। সে তো শুধু তার কোন কাজেই এখানে এসেছে। তখন আল্লাহ বলেন, তাদের সাথে বসা কোন ব্যক্তিই তা থেকে বঞ্চিত হবে না। [বোখারী]

সহীহ মুসলিম-এর এক বর্ণনায় আছে, আল্লাহ তাআলার অতিরিক্ত একদল পর্যটক মালাক রয়েছেন। তারা আল্লাহর জিকিরকারীদের মাজলিস খুঁজে বেড়ান। কোন মাজলিস পেয়ে গেলে তাদের সাথে বসে পড়েন। একে অন্যের সাথে পাখা মিলিয়ে জিকিরকারীদের হইতে নিকটতম আসমান পর্যন্ত সব জায়গাকে ঘিরে নেন। মাজলিস ছেড়ে জিকিরকারীগণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লে মালায়িকাহ্ [ফেরেশতা] [ফেরেশতাগণ] আকাশের দিকে ও আরো উপরের দিকে উঠে যান। তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেন, তখন আল্লাহ তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন, অথচ ব্যাপারটি তিনি জানেন, তোমরা কোথা হইতে এলে? তারা উত্তরে বলেন, আমরা তোমার এমন বান্দাদের কাছ থেকে এসেছি যারা জমিনে তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছে, মহত্ব ও একত্বের ঘোষণা দিচ্ছে, তোমার প্রশংসা করছে, তোমার কাছে দোআ করছে। তখন আল্লাহ জিজ্ঞেস করেন, তারা আমার কাছে কি চায়? মালায়িকাহ্ [ফেরেশতা] বলেন, তোমার জান্নাত চায়। তখন আল্লাহ বলেন, তারা কি আমার জান্নাত দেখেছে? তারা বলেন না, দেখেনি হে রব! তখন আল্লাহ বলেন, কেমন হত, যদি তারা আমার জান্নাত দেখিতে পেত।

তারপর মালায়িকাহ্ [ফেরেশতা] বলেন, তারা তোমার কাছে মুক্তিও চায়। তখন আল্লাহ জিজ্ঞেস করছেন, তারা কোন্ জিনিস হইতে মুক্তি চায়? তারা বলেন, তোমার জাহান্নাম থেকে। তখন তিনি জিজ্ঞেস করেন, তারা কি আমার জাহান্নাম দেখেছে? তারা বলেন, না, হে আল্লাহ! তখন তিনি বলেন, কেমন হত যদি তারা আমার জাহান্নাম দেখিতে পেত। তারপর তারা বলেন, তারা তোমার কাছে ক্ষমাও চায়। তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেন, তখন আল্লাহ বলেন, আমি তাদেরকে ক্ষমা করে দিলাম। তাদেরকে আমি দান করলাম যা তারা আমার কাছে চায়। আর যে জিনিস হইতে তারা মুক্তি চায় তার থেকে আমি তাদেরকে মুক্ত করে দিলাম। তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেন, মালায়িকাহ্ [ফেরেশতা] তখন বলেন, হে রব! তাদের অমুক ব্যক্তি তো খুবই পাপী। সে তো পথ দিয়ে যাবার সময় [তাদেরকে দেখে] তাদের সাথে বসে গেছে। তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেন, তখন আল্লাহ বলেন, তাকেও আমি ক্ষমা করে দিলাম। তারা এমন একদল যাদের সঙ্গী-সাথীরাও বঞ্চিত হয় না।{১}

{১} সহীহ : বোখারী ৬৪০৮, সহীহ আত তারগীব ১৫০২। আল্লাহ তাআলার জিকির -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

২২৬৮. হানযালাহ্ ইবনুর্ রুবাইয়্যি আল উসায়দী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

বলেন, আমার সাথে আবু বাকর -এর একবার সাক্ষাৎ হলে তিনি বলেন, কেমন আছো হানযালাহ্? আমি বললাম, হানযালাহ্ মুনাফিক হয়ে গেছে। তিনি বললেন, সুবহানাল্লাহ, এটা কি বলছ হানযালাহ্! আমি বললাম, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে থাকি। তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] আমাদেরকে জান্নাত-জাহান্নাম স্মরণ করিয়ে দেন, [মনে হয়] আমরা যেন তা চোখে দেখি। কিন্তু আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছ থেকে বের হয়ে আসি, কিন্তু [পরকক্ষণেই] স্ত্রী-সন্তানাদি, ক্ষেত-খামার নিয়ে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ি। তা অনেকটাই ভুলে যাই। তখন আবু বাকর বললেন, আমরাও এরূপই অনুভব করি। এরপর আমি ও আবু বাকর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে গেলাম। তাঁকে বললাম, হে আল্লাহর রসূল! হানযালাহ্ মুনাফিক হয়ে গেছে। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে আবার কেমন কথা?

আমি বললাম, হে আল্লাহ রসূল! আমরা আপনার কাছে থাকলে আপনি আমাদেরকে জান্নাত-জাহান্নামের কথা স্মরণ করিয়ে দেন। তখন মনে হয় তা যেন আমাদের চোখের দেখা। কিন্তু আপনার কাছ থেকে সরে গিয়ে স্ত্রী সন্তান-সন্ততি ও ক্ষেত-খামারের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ি তখন জান্নাত-জাহান্নামের কথা অনেকটাই ভুলে যাই। এসব কথা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যাঁর হাতে আমার জীবন রয়েছে, তাহাঁর কসম, যদি তোমরা সবসময় ঐরূপ থাকতে যেরূপ আমার কাছে থাকো। সবসময় জিকির-আযকার করো, তাহলে অবশ্যই মালায়িকাহ্ [ফেরেশতা] [ফেরেশতাগণ] তোমাদের বিছানায় ও তোমাদের চলাচলের পথে তোমাদের সাথে মুসাফাহা [হাত মিলাতেন] করিতেন। কিন্তু হে হানযালাহ্! কখনো ঐরূপ কখনো এরূপই [এ অবস্থা] হবেই। এ বাক্যটি তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] তিনবার বললেন।

[মুসলিম]{১}, {১} সহীহ : মুসলিম ২৭৫০, তিরমিজি ২৫১৪, আহমাদ ১৯০৪৫, শুআবুল ঈমান ১০২৮, সহীহাহ্ ১৯৪৮। আল্লাহ তাআলার জিকির -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

অধ্যায়ঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

২২৬৯. আবু দারদা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমি কি তোমাদেরকে বলে দিব না, তোমাদের কাজ-কর্মের মধ্যে কোন্ কাজটি তোমাদের মালিকের কাছে অধিক পবিত্র এবং তোমাদের মর্যাদা বৃদ্ধির ব্যাপারে অধিক কার্যকর। তাছাড়া তোমাদের জন্য সোনা-রূপা দান করার চেয়েও শ্রেষ্ঠ এবং এ কথার চেয়েও শ্রেষ্ঠ যে, তোমরা শত্রুর মুকাবিলা করিবে, তাদের গলা কাটবে, আর তারা তোমাদের গলা কাটবে [যুদ্ধ করিবে]। তাঁরা উত্তরে বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আপনি বলুন। তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বললেন, তা হলো আল্লাহর জিকির বা স্মরণ করা।

[মালিক, আহমদ, তিরমিজি, ইবনি মাজাহ। কিন্তু ঈমাম মালিক এ হাদিসটিকে মাওকূফ হাদিস অর্থাৎ- আবু দারদা [রাদি.]-এর কথা বলে মনে করেন।]{১} {১} সহীহ : তিরমিজি ৩৩৭৭, ইবনি মাজাহ ৩৭৯০, আহমাদ ২১৭০২, মুসতাদারাক লিল হাকিম ১৮২৫, আল কালিমুত্ব ত্বইয়্যিব ১, সহীহ আত তারগীব ১৪৯৩, সহীহ আল জামি ২৬২৯। আল্লাহ তাআলার জিকির -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

২২৭০. আবদুল্লাহ ইবনি বুসর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, একবার এক বিদুঈন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে জিজ্ঞেস করিল, সর্বোত্তম ব্যক্তি কে? তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বললেনঃ সৌভাগ্যবান সে ব্যক্তি, যে দীর্ঘ হায়াত পেয়েছে এবং যার আমাল নেক হয়েছে। সে ব্যক্তি আবার জিজ্ঞেস করিল, হে আল্লাহর রসূল! কোন আমাল সর্বোত্তম? তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বললেন, তুমি যখন দুনিয়া ছেড়ে চলে যাবে তখন তোমার মুখে আল্লাহর জিকিররত থাকিবে।

[তিরমিজি; আহমদ]{১}, {১} সহীহ : তিরমিজি ২৩২৯, ইবনি আবী শায়বাহ্ ৩৪৪২০, আহমাদ ১৭৬৯৯, ইবনি মাজাহ ৩৭৯৩, মুজামুল আওসাত লিত্ব ত্ববারানী ১৪৪১। আল্লাহ তাআলার জিকির -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

২২৭১. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা যখন জান্নাতের বাগানে যাবে, তখন তোমরা বাগানের ফল খাবে। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করিলেন, হে আল্লাহর রসূল! জান্নাতের বাগান কি? তিনি বললেন, যিকিরের মাজলিস

। [তিরমিজি]{১}, {১} হাসান লিগয়রিহী : তিরমিজি ৩৫১০, আহমাদ ১২৫২৩, শুআবুল ঈমান ৫২৬, সহীহাহ্ ২৫৬২, সহীহ আত তারগীব ১৫১১। এই হাদিসটির তাহকীকঃ হাসান লিগাইরিহি

২২৭২. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন জায়গায় বসেছে, আর সেখানে আল্লাহর জিকির করেনি, আল্লাহর হুকুম অনুযায়ী সে বৈঠক তার জন্য ক্ষতির কারণ হয়েছে। অনুরূপভাবে যে ব্যক্তি বিছানায় শুয়েছে অথচ আল্লাহর জিকির করেনি, আল্লাহর হুকুম অনুযায়ী তা তার জন্য ক্ষতির কারণ হবে।

[আবু দাউদ]{১}, {১} হাসান সহীহ : আবু দাউদ ৪৮৫৬, সহীহাহ্ ৭৮, সহীহ আল জামি ৬৪৭৭। এই হাদিসটির তাহকীকঃ হাসান সহীহ

২২৭৩. {আবু হুরাইরাহ [রাদি.]] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে কোন দল কোন মাজলিস হইতে আল্লাহর জিকির না করে উঠলে নিশ্চয় তারা মরা গাধা [র গোশত] খেয়ে উঠল। এ মাজলিস তাদের জন্য আক্ষেপের কারণ হয়ে দাঁড়াবে।

[আহমদ, আবু দাউদ]{১}, {১} সহীহ : আবু দাউদ ৪৮৫৫, আল কালিমুত্ব ত্বইয়্যিব ২২৫, সহীহ আত তারগীব ১৫১৪, সহীহ আল জামি ৫৭৫০। আল্লাহ তাআলার জিকির -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

২২৭৪. {আবু হুরাইরাহ [রাদি.]] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন দল কোন মাজলিসে বসল অথচ আল্লাহ তাআলাকে স্মরণ করিল না এবং তাদের নবীর প্রতিও দরূদ সালাম পাঠাল না। নিশ্চয়ই তাদের জন্য এটা ক্ষতির কারণ হলো। আল্লাহ ইচ্ছা করলে তাদেরকে শাস্তিও দিতে পারেন, আবার ইচ্ছা করলে ক্ষমাও করে দিতে পারেন।

[তিরমিজি]{১},{১} সহীহ লিগয়রিহী : তিরমিজি ৩৩৮০, আহমাদ ৯৮৪৩, সহীহাহ্ ৭৪, সহীহ আত তারগীব ১৫১২, সহীহ আল জামি ৫৬০৭। এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ লিগাইরিহি

২২৭৫. হাবীবাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বানী আদামের প্রতিটি কথাই [কাজই] তার জন্য অকল্যাণকর [ক্ষতিকারক], তবে যদি এসব কাজ মানুষকে সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজ হইতে নিষেধ এবং আল্লাহর যিকিরের উদ্দেশে হয়।

[তিরমিজি, ইবনি মাজাহ; ঈমাম আত তিরমিজি বলেন, হাদিসটি গরীব]{১} {১} জইফ : তিরমিজি ২৪১২, ইবনি মাজাহ ৩৯৭৪, সহীহাহ্ ১৩৬৬, জইফ আত তারগীব ১৭২০। কারণ ইবনি খুনায়স একজন দুর্বল রাবী। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

২২৭৬. আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহর জিকির ছাড়া বেশি কথা বলো না। কেননা আল্লাহর জিকির ছাড়া অন্য কথা বেশি বলা হৃদয় কঠিন হয়ে যাওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আর শক্ত হৃদয়সম্পন্ন ব্যক্তিই হচ্ছে আল্লাহ তাআলা হইতে সবচেয়ে বেশি দূরে।

[তিরমিজি]{১}, {১} জইফ : তিরমিজি ২৪১১, শুআবুল ঈমান ৪৬০০, রিয়াযুস্ সলিহীন ১৫২৬, জইফ আত তারগীব ১৭১৮, জইফ আত জামি ৬২৬৫। কারণ এর সানাদে ইব্রাহীম ইবনি আবদুল্লাহ ইবনি হাতিব একজন মাজহূলুল হাল রাবী। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

২২৭৭. সাওবান [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, যখন

وَالَّذِيْنَ يَكْنِزُوْنَ الذَّهَبَ وَالْفِضَّةَ

অর্থাৎ- আর যারা [অতি লোভের বশবর্তী হয়ে] সোনা-রূপা জমা করে- [সূরা আত তাওবাহ্ ৯ : ৩৪] এ আয়াতটি নাযিল হলো, তখন আমরা কোন এক সফরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে ছিলাম। এমন সময় জনৈক সাহাবী বললেন, এ কথা সোনা-রূপা সম্পর্কে নাযিল হলো। যদি আমরা জানতাম কোন্ সম্পদ উত্তম, তাহলে তবে জমা করে রাখতাম। তখন তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বললেন, তোমাদের কারো শ্রেষ্ঠ সম্পদ হলো আল্লাহর জিকিরকারী জিহবা, কৃতজ্ঞতা স্বীকারকারী অন্তর ও মুমিনাহ্ স্ত্রী; যে তার [স্বামীর] ঈমানের [দ্বীনের] ব্যাপারে সহযোগিতা করে।

[আহমদ, তিরমিজি, ইবনি মাজাহ]{১}, {১} সহীহ লিগয়রিহী : তিরমিজি ৩০৯৪, সহীহ আত তারগীব ১৪৯৯, ইবনি মাজাহ ১৮৫৬, আহমাদ ২২৩৯২, মুজামুল আওসাত লিত্ব ত্ববারানী ২৩৭০। এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ লিগাইরিহি

২২৭৮. আবু সাঈদ আল খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, একবার আমীরে মুআবিয়াহ্ [রাদি.] মাসজিদে গোল হয়ে বসা এক মাজলিসে পৌঁছলেন এবং মাজলিসের লোকদেরকে জিজ্ঞেস করিলেন, আপনারা কি কাজে এখানে বসে আছেন? জবাবে তারা বললেন, আমরা এখানে আল্লাহর জিকির করছি। তিনি বললেন, আল্লাহর কসম করে বলুন, আপনারা এখানে আর অন্য কোন কাজের জন্য তো বসেননি? তারা বললেন, আল্লাহর শপথ করে বলছি, আমরা এখানে এছাড়া আর অন্য কোন কাজে বসিনি। অতঃপর মুআবিয়াহ্ [রাদি.] বললেন, জেনে রাখুন! আমি আপনাদের কথা অবিশ্বাস করে আপনাদেরকে শপথ করাইনি। আমার মতো মর্যাদাবান সাহাবীগণের মধ্যে আমার মতো এত কম হাদিস রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট হইতে বর্ণনা করেননি। [তাহলে শুনুন!] একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘর হইতে বের হয়ে তাহাঁর সাহাবীগণের এক মাজলিসে পৌঁছলেন এবং বললেন, তোমরা এখানে কি কাজে বসে আছো? উত্তরে তাঁরা বললেন, আমরা এখানে আল্লাহর জিকির করিতে বসে আছি। তিনি আমাদেরকে ইসলামে হিদায়াত করিয়াছেন এজন্য তাহাঁর প্রশংসা করছি। তখন তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বললেন, তোমরা আল্লাহর কসম করে বলিতে পার কি যে, তোমরা এছাড়া অন্য কোন কাজে এখানে বসনি। তাঁরা বললেন, আমরা শপথ করে বলছি, আমরা এছাড়া অন্য কোন কাজে এখানে বসিনি। তখন তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বললেন, শোন, তোমাদের কথাকে অবিশ্বাস করে আমি তোমাদেরকে শপথ করাইনি। বরং প্রকৃত ব্যাপার হলো এখন জিবরীল [আঃ] এসে আমাকে খবর দিলেন যে, আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে নিয়ে তাহাঁর মালায়িকাহর [ফেরেশতাগণের] কাছে গর্ববোধ করছেন।

[মুসলিম]{১}, {১} সহীহ : মুসলিম ২৭০১, তিরমিজি ৩৩৭৯, নাসায়ী ৫৪২৬, ইবনি আবী শায়বাহ্ ২৯৪৬৯, আহমাদ ১৬৮৩৫, মুজামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ৭০১, শুআবুল ঈমান ৫২৯, সহীহ আত তারগীব ১৫০৩। আল্লাহ তাআলার জিকির -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

অধ্যায়ঃ ১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ

২২৭৯. আবদুল্লাহ ইবনি বুসর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, একদিন জনৈক ব্যক্তি এসে বলিল, হে আল্লাহর রসূল! আমার ওপর ইসলামের [নাফ্‌লী] নির্ধারিত বিধি-বিধান অনেক। তাই আমাকে সংক্ষেপে কিছু বলে দিন যা আমি সব সময় করিতে পারি। তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বললেন, তুমি সব সময় তোমার জিহবাকে আল্লাহর জিকিররত রাখবে।

[তিরমিজি, ইবনি মাজাহ; ঈমাম তিরমিজি বলেন, হাদিসটি হাসান গরীব]{১}, {১} সহীহ : তিরমিজি ৩৩৭৫, ইবনি মাজাহ ৩৭৯৩, ইবনি আবী শায়বাহ্ ২৯৪৫৩, আহমাদ ১৭৬৯৮, মুসতাদরাক লিল হাকিম ১৮২২, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬৫২৬, আল কালিমাতুত্ব ত্বইয়্যিব ৩। আল্লাহ তাআলার জিকির -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

২২৮০. আবু সাঈদ আল খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করা হলো, কিয়ামাতের দিন আল্লাহর কাছে কে সর্বশ্রেষ্ঠ ও মর্যাদাবান হবে? তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বললেন, আল্লাহর জিকিরকারী পুরুষ ও নারী। আবার তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রসূল! আল্লাহর পথে জিহাদকারীদের চেয়েও কি তারা মর্যাদাবান ও শ্রেষ্ঠ? তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বললেন, হ্যাঁ, সে যদি নিজের তরবারি দিয়ে কাফির ও মুশরিকদেরকে আঘাত করে, এমনকি তার তরবারি ভেঙে যায়, আর সে নিজেও হয়ে পড়ে রক্তাক্ত, তাহলেও তার থেকে আল্লাহর জিকিরকারী শ্রেষ্ঠ ও মর্যাদাবান।

[আহমদ, তিরমিজি; তিরমিজি বলেন, হাদিসটি গরীব]{১}, {১} জইফ : তিরমিজি ৩৩৭, আহমাদ ১১৭২০, যঈফাহ্ ৭০২৭, জইফ আত তারগীব ৮৯৮। কারণ এর সানাদে ইবনি লাহ্ইআহ্ দুর্বল রাবী। আর আবুল হায়সাম থেকে দার্রাজ-এর বর্ণনা দুবল। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

২২৮১. আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ শয়তান আদম সন্তানের কলবের বা অন্তরের উপর জেঁকে বসে থাকে। যখন সে আল্লাহর জিকির করে তখন সরে যায় আর যখন গাফিল বা অমনোযোগী হয় তখন শয়তান তার দিলে ওয়াস্ওয়াসা দিতে থাকে।

[বোখারী তালীক হিসেবে]{১}, {১} মুসান্নাফ ইবনি আবী শায়বাহ্ ৩৪৭৭৪। এই হাদিসটির তাহকীকঃ নির্ণীত নয়

২২৮২. ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমার কাছে বিশ্বস্ততার সাথে সংবাদ এসেছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিতেন, অলস অমনোযোগীদের মধ্যে জিকিরকারী এমন, যেমন যুদ্ধের ময়দান হইতে পলায়নকারীদের মধ্যে যুদ্ধকারী। আর গাফিলদের মধ্যে জিকিরকারী এমন, যেমন শুকনো গাছের মধ্যে কাঁচা ডাল।{১}

{১} জইফ : শুআবুল ঈমান ৫৬১, যঈফাহ্ ৬৭১, জইফ আত তারগীব ১০৫১, জইফ আল জামি ৩০৩৭। কারণ এর সানাদে রাবী ইমরান বিন মুসলিম-কে ঈমাম বোখারী [রাহিমাহুল্লাহ] মুনকারুল হাদিস বলেছেন। আর আব্বাদ ইবনি কাসীর একজন দুর্বল রাবী। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

২২৮৩. অন্য এক বর্ণনায় হইতে বর্ণীতঃ

শুকনো গাছ-গাছড়ার মধ্যে সতেজ সবুজ গাছ যেমন, তেমনি গাফিলদের মধ্যে জিকিরকারী এমন, যেমন অন্ধকার ঘরে আলো। গাফিলদের মধ্যে জিকিরকারীকে তার জীবদ্দশায়ই তার জান্নাতের স্থান দেখানো হবে এবং গাফিলদের মধ্যে জিকিরকারীর গুনাহ মানুষ ও পশুর সংখ্যা পরিমাণ ক্ষমা করে দেয়া হবে

। [রযীন]{১}, 1] জইফ : শুআবুল ঈমান ৫৬২, জইফ আল জামি ৩০৩৭, জইফ আত তারগীব ১০৫১। কারণ এর সানাদে আল হাসান ইবনি আরাফাহ্ একজন খুবই দুর্বল রাবী। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

২২৮৪.মুআয ইবনি জাবাল [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর যিকিরের চেয়ে আল্লাহর আযাব হইতে রক্ষা করিতে পারার মতো কোন আমাল আল্লাহর কোন বান্দা করিতে পারে না।

[মালিক, তিরমিজি, ইবনি মাজাহ]{১},{১} সহীহ : ইবনি মাজাহ ৩৭৯০, মালিক ৭১৭, আহমাদ ২২০৭৯, শুআবুল ঈমান ৫১৬, সহীহ আল জামি ৫৬৪৪, তিরমিজি ৩৩৭৭। আল্লাহ তাআলার জিকির -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

২২৮৫. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তাআলা বলেন, আমার বান্দা যখন আমার জিকির করে আমার জন্যে তার দুই ঠোঁট নড়ে তখন আমি তার কাছে থাকি। [বোখারী]{১}

{১} সহীহ লিগয়রিহী : বোখারী সানাদবিহীন অবস্থায় باب قول الله لا تحرك به لسانك-এ অধ্যায়ের অধীনে। ইবনি মাজাহ ৩৭৯২, আহমাদ ১০৯৬৮, ইবনি হিব্বান ৮১৫, সহীহ আত তারগীব ১৪৯০, সহীহ আল জামি ১৯০৬। এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ লিগাইরিহি

২২৮৬. আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রত্যেকটা জিনিসের [পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নের জন্য] একটা ব্রাশ বা মাজন আছে। আর কলব বা মন পরিষ্কার করার জন্য ব্রাশ বা মাজন হলো আল্লাহর জিকির। আল্লাহর আযাব হইতে মুক্তি দেয়ার জন্য আল্লাহর যিকিরের চেয়ে অধিক কার্যকর আর কোন জিনিসই নেই। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করিলেন, আল্লাহর পথে জিহাদ করাও কি নয়? তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বললেন, সে মুজাহিদ আল্লাহর পথে প্রচন্ড বেগে তরবারির আঘাতে তা [যদি] ভেঙেও ফেলে। [বায়হাক্বী- দাওয়াতুল কাবীর]{১}

{১} মাওযূ : আদ্ দাওয়াতুল কাবীর ১৯, জইফ আত তারগীব ৮৯৭। তবে [مَا مِنْ شَىْءٍ أَنْجٰى مِنْ عَذَابِ اللّٰهِ مِنْ ذِكْرِ اللّٰهِ] -এ অংশটুকু সহীহ। এই হাদিসটির তাহকীকঃ জাল হাদিস


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply