দানের মর্যাদা এবং কৃপণ তার পরিনাম
দানের মর্যাদা এবং কৃপণ তার পরিনাম >> মিশকাতুল মাসাবীহ এর মুল সুচিপত্র দেখুন
পর্বঃ ৬, অধ্যায়ঃ ৫
- অধ্যায়ঃ ৫. প্রথম অনুচ্ছেদ
- অধ্যায়ঃ ৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
- অধ্যায়ঃ ৫. তৃতীয় অনুচ্ছেদ
অধ্যায়ঃ ৫. প্রথম অনুচ্ছেদ
১৮৫৯. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আমার কাছে যদি উহুদ পাহাড় সমান সোনাও থাকে, ঋণের অংশ বাদে তা তিনদিন আমার কাছে জমা না থাকলেই আমি খুশি হব
[বোখারী] {১}, {১} সহীহ : বোখারী ৬৪৪৫, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১০৯৫৬, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ১১৩৯, সহীহ আল জামি আস্ সগীর ৫২৯০। দানের মর্যাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১৮৬০. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ প্রতিদিন ভোরে [আকাশ থেকে] দুজন মালাক [ফেরেশতা] নেমে আসে। এদের একজন দুআ করে হে আল্লাহ! দানশীলকে তুমি বিনিময় দাও। আর দ্বিতীয় মালাক এ বদদুআ করে, হে আল্লাহ! কৃপণকে ক্ষতিগ্রস্ত করো
। [বোখারী, মুসলিম] {১}, {১} সহীহ : বোখারী ১৪৪২, মুসলিম ১০১৩, সুনানুল কুবরা লিন নাসায়ী ৯১৩৪, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৭৮১৬, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৬৫৮, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ৯২০, সহীহ আত তারগীব ৯১৪, সহীহ আল জামি আস্ সগীর ৫৭৯৭। দানের মর্যাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১৮৬১. আসমা [বিনতু আবু বাকর] [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ [আল্লাহর রাস্তায়] খরচ করো। কিন্ত গুনে গুনে খরচ করো না। তাহলে আল্লাহ তোমাকে গুনে গুনে [নেকি] দিবেন। তোমরা জমা করে রেখ না। তাহলে আল্লাহ তাআলা জমা করে রাখবেন। সামর্থ্য অনুযায়ী আল্লাহর পথে খরচ করো।
[বোখারী, মুসলিম] {১}, {১} সহীহ : বোখারী ২৫৯১, মুসলিম ১০২৯, ইবনি হিব্বান ৩২০৯, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৬৫৫, সহীহ আল জামি আস্ সগীর ১৫১৩। দানের মর্যাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১৮৬২. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আল্লাহ তাআলা বলেন, হে আদম সন্তান! ধন-সম্পদ দান করো, তোমাকেও দান করা হবে।
[বোখারী, মুসলিম] {১}, {১} সহীহ : বোখারী ৫৩৫২, মুসলিম ৯৯৩। দানের মর্যাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১৮৬৩. আবু উমামাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ [মহান আল্লাহ বলেনঃ] হে আদম সন্তান! প্রয়োজনের অতিরিক্ত যে সম্পদ তোমার কাছে আছে তা খরচ করা তোমার জন্য [দুনিয়া ও আখিরাতে] কল্যাণকর। আর তা খরচ না করা হবে অকল্যাণকর। প্রয়োজন পরিমাণ ধন-সম্পদ [জমা করায়] দোষ নেই। তোমার প্রয়োজনের অতিরিক্ত ধন-সম্পদ ব্যয়ের কাজ নিজ পরিবার-পরিজন থেকে শুরু করো
[মুসলিম] {১}, {১} সহীহ : মুসলিম ১০৩৬, আত তিরমিজি ২৩৪৩, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৭৭৪১, সহীহ আত তারগীব ৮৩১, সুবীহ আল জামি আস্ সগীর ৭৮৩৪। দানের মর্যাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১৮৬৪. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কৃপণ ও দানশীল ব্যক্তির দৃষ্টান্ত এমন দুব্যক্তির মতো যাদের শরীরে দুটি লোহার পোশাক রয়েছে। আর [এটার কারণে] এ দুজনের হাত তাদের সিনা হইতে গর্দান পর্যন্ত লটকে আছে। এ অবস্থায় দানশীল ব্যক্তি যখন দান করিতে চায় তখন তার বেড়ি সম্প্রসারিত হয়। এমনকি তাহাঁর হাতের আঙ্গুল পর্যন্ত আবৃত করে ফেলে এবং তার চিহ্ন মিটে যায়। কৃপণ ব্যক্তি দান করিতে চাইলে তার বেড়ি সংকুচিত হয়ে এর প্রত্যেকটি কড়া নিজ নিজ স্থানে একটা আরেকটার সাথে আটকে যায়।
[বোখারী, মুসলিম] {১}, {১} সহীহ : বোখারী ৫৭৯৭, মুসলিম ১০২১, নাসায়ী ২৫৪৮, আহমাদ ৯০৫৭, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৬৫৯, সহীহ আত তারগীব ৮৭০, সহীহ আল জামি আস্ সগীর ৫৮২৬।দানের মর্যাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১৮৬৫. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যুলম থেকে বেঁচে থাকিবে, কারণ ক্বিয়ামাতের দিন যুলম অন্ধকারের ন্যায় গ্রাস করিবে। আর কৃপণতা হইতে বেঁচে থাকিবে, কারণ কৃপণতা তোমাদের পূর্ববর্তীদেরকে ধ্বংস করেছে। এ কৃপণতাই তাদেরকে প্ররোচিত করেছে রক্তপাতের জন্য এবং হারাম কাজকে হালাল করার দিকে।
[মুসলিম] {১},{১} সহীহ : মুসলিম ২৫৭৮, আহমাদ ১৪৪৬১, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১১৫০১, শারহুস্ সুন্নাহ্ ৪১৬১, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ৮৫৮, সহীহ আত তারগীব ২২১৫, সহীহ আল জামি ১০২।দানের মর্যাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১৮৬৬. হারিসাহ্ ইবনি ওয়াহ্ব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমরা সদাক্বাহ্ কর, কেননা এমন সময় আসবে যখন একলোক তার সদাক্বার মাল নিয়ে বের হবে কিন্ত তা গ্রহণ করার লোক পাওয়া যাবে না। বরং প্রত্যেক ব্যক্তিই বলবে, গতকাল তুমি যদি এ মাল নিয়ে আসতে, আমি গ্রহন করতাম। আজ এ সদাক্বার আমার কোনই প্রয়োজন নেই।
[বোখারী, মুসলিম] {১}, {১} সহীহ : বোখারী ১৪১১, মুসলিম ১০১১। দানের মর্যাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১৮৬. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, এক ব্যক্তি আরয করিল, হে আল্লাহর রসূল! কোন দান মর্যাদার দিক দিয়ে সবচেয়ে বড়। তিনি বললেন, তুমি যখন সুস্থ-সবল থাকো এবং সম্পদের প্রতি আগ্রহ পোষণ করো, দারিদ্র্যের ভয় কর, ধন-সম্পদের মালিক হইতে চাও, তখনকার দান সবচেয়ে বড়। তাই প্রাণ ওষ্ঠাগত হবার সময় পর্যন্ত দান করার অপেক্ষা করিবে না। কারণ তখন তুমি বলিতে থাকিবে, এ মাল অমুকের, এ মাল অমুকের এবং এ মাল অমুকের। অথচ ততক্ষণে মালের মালিক অমুক হয়েই গেছে।
[বোখারী মুসলিম] {১}, {১} সহীহ : বোখারী ১৪১৯, মুসলিম ১০৩২, নাসায়ী ৩৬১১, আহমাদ ৭১৫৯, ইবনি হিব্বান ৩৩১২, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৭৮৩২, ইরওয়া ১৬০২, সহীহ আত তারগীব ৩৪৮৩, সহীহ আল জামি আস্ সগীর ১১১১। দানের মর্যাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১৮৬৮. আবু যার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একবার আমি নবী [সাঃআঃ]-এর নিকট গেলাম। এ সময় তিনি কাবার ছায়ায় বসেছিলেন। আমাকে দেখে তিনি বললেন, খানায়ে কাবার রবের কসম! ঐসব লোক ক্ষতিগ্রস্থ। আমি আরয করলাম, আমার মাতা-পিতা আপনার জন্য কুরবান হোক, এসব লোক কারা? তিনি বললেন, যাদের ধন-সম্পদ বেশী তারা। তবে তারা এর মধ্যে গণ্য নয়, যারা এরূপ করে, এরূপ করে, এরূপ করে-অর্থাৎ নিজের আগে পিছে, ডানে-বামে নিজের মাল খরচ করে। এমন লোকের সংখ্যা কম।
[বোখারী,মুসলিম] {১}, {১} সহীহ : বোখারী ৬৬৩৮, মুসলিম ৯৯০, আত তিরমিজি ৬১৭, নাসায়ী ২৪৪০, আহমাদ ২১৩৫১, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১৯৮১২, সহীহ আত তারগীব ৩২৬০, সহীহ আল জামি আস্ সগীর ৭০৪৬। দানের মর্যাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
অধ্যায়ঃ ৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
১৮৬৯. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ দানশীল ব্যক্তি আল্লাহর নিকটবর্তী, জান্নাতের নিকটবর্তী, জনগনের নিকটবর্তী [সকলের কাছেই দানশীল ব্যক্তি প্রিয়] এবং জাহান্নাম থেকে দূরবর্তী। কিন্ত কৃপণ ব্যক্তি [যে অর্জিত ধনের হাক্ব আদায় করে না] সে আল্লাহর থেকে দূরে, জান্নাত থেকে দূরে, জনগণ থেকে দূরে এবং জাহান্নামের নিকটবর্তী। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলার নিকট আবিদ কৃপণ অপেক্ষা জাহিল দাতা অধিক প্রিয়।
[তিরমিজি] {১},{১} জইফ : আত তিরমিজি ১৯৬১, শুআবুল ঈমান ১০৩৫২, সিলসিলাহ্ আয্ যঈফাহ্ ১৫৪, জইফ আত তারগীব ১৬৫৫, জইফ আল জামি আস্ সগীর ৩৩৪১। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
১৮৭০. আবু সাঈদ আল খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ সুস্থ অবস্থায় আল্লাহর পথে কোন ব্যক্তির এক দিরহাম ব্যয় মৃত্যুর সময়ে একশত দিরহাম ব্যয় অপেক্ষা উত্তম।
[আবু দাউদ] {১}, {১} জইফ : আবু দাউদ ২৮৬৬, জইফ আল জামি আস্ সগীর ৪৬৪৩। কেননা এর সানাদে শুরাহবিল একজন দুর্বল রাবী। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
১৮৭১. আবুদ্ দারদা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি মৃত্যুর দুয়ারে এসে দান সদাক্বাহ্ অথবা গোলাম আযাদ করে তার দৃষ্টান্ত ঐ ব্যক্তির মতো, যে কাউকে পেট ভরা অবস্থায় [তুহফা, হাদিয়্যাহ্, খাবার] দান করে।
[তিরমিজি, নাসায়ী, দারিমী; ঈমাম তিরমিজি এ হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন।] {১}, {১} জইফ : নাসায়ী ৩৬১৪, আত তিরমিজি ২১২৩, আহমাদ ২১৭১৮, দারিমী ৩২৬৯, জইফ আত তারগীব ২০৪২। কারণ এর সানাদে আবু হাবীব আত্বত্বয়ী একজন মাজহূল রাবী। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
১৮৭২. আবু সাঈদ আল খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ মুমিনের মধ্যে দুটি স্বভাব একত্রে জমা হইতে পারে না, কৃপণতা এবং অসদাচরণ
। [তিরমিজি] {১}, {১} সহীহ লিগায়রিহী : তিরমিজি ১৯৬২, সহীহ আত তারগীব ২৬০৮, শুআবুল ঈমান ১০৩৩৬। এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ লিগাইরিহি
১৮৭৩. আবু বাকর সিদ্দীক্ব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ ধোঁকাবাজ, কৃপণ এবং দান করে খোঁটা দানকারী জান্নাতে প্রবেশ করিতে পারবে না।
[তিরমিজি] {১}, {১} জইফ : আত তিরমিজি ১৯৬৩, জইফ আত তারগীব ১৫৫১, জইফ আল জামি আস্ সগীর ৬৩৩৯। কারণ এর সানাদে ফারক্বদ আস সাবাখী একজন দুর্বল রাবী। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
১৮৭৪. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ মানুষের মধ্যে যেসব স্বভাব পাওয়া যায় তার মধ্যে দুটো স্বভাব সবচেয়ে গর্হিত। একটি হলো চিত্ত অস্থিরকারী কৃপণতা, আর দ্বিতীয়টা হলো ভীতিকর কাপুরুষতা
। [আবু দাউদ] {১}, আর আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] কর্তৃক বর্ণিত হাদিসটি {আরবী] জিহাদ অধ্যায়ে আমরা বর্ণনা করব। {১} সহীহ : আবু দাউদ ২৫১১, ইবনি আবী শায়বাহ্ ২৬৬০৯, আহমাদ ৮২৬৩, ইবনি হিব্বান ৩২৫০, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ৫৬০, সহীহ আত তারগীব ২৬০৫, সহীহ আল জামি আস্ সগীর ৩৭০৯। দানের মর্যাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
অধ্যায়ঃ ৫. তৃতীয় অনুচ্ছেদ
১৮৭৫. আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-এর স্ত্রীদের কেউ কেউ তাঁকে জিজ্ঞেস করিলেন, আমাদের মধ্যে কে আপনার সাথে প্রথমে মিলিত হবেন [অর্থাৎ আপনার মৃত্যুর পর কে প্রথম মৃত্যুবরণ করিবে]? তিনি বললেন, যার হাত সবচেয়ে বেশী লম্বা। {আয়িশাহ্ [রাদি.] বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর কথা শুনার পর] তাহাঁর স্ত্রীগণ বাঁশ অথবা কঞ্চির টুকরা দিয়ে নিজেদের হাত মাপতে লাগলেন। রসূল [সাঃআঃ]-এর স্ত্রী সাওদা [রাদি.]-এর হাত সবচেয়ে লম্বা ছিল। কিন্ত এরপর আমরা জানতে পারলাম, হাত লম্বা অর্থ দান সদাক্বাহ্ বেশী করে করা। আর আমাদের মধ্যে যিনি সবার আগে তাহাঁর সাথে মিলিত হলেন তিনি যায়নাব। দান সদাক্বাহ তিনি খুবই ভালবাসতেন। বোখারী, মুসলিমের এক বর্ণনায় আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি [স্ত্রীদের প্রশ্নের জবাবে] বলেন, তোমাদের মধ্যে যার হাত লম্বা সে আমার সাথে সকলের আগে মিলিত হবে। আয়িশাহ্ [রাদি.] বলেন, [এ কথা শুনে] স্ত্রীগণ মেপে দেখিতে লাগলেন, কার হাত বেশী লম্বা। প্রকৃতপক্ষে আমাদের মধ্যে সবচেয়ে লম্বা হাত ছিল যায়নাব-এর। কেননা তিনি নিজ হাতে সব কাজ করিতেন এবং বেশী বেশী দান সদাক্বাহ্ করিতেন। {১}
{১} সহীহ : বোখারী ১৪২০, মুসলিম ২৪৫২। দানের মর্যাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১৮৭৬. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ [বানী ইসরাঈলের] এক ব্যক্তি বলিল, আমি [আজ রাতে] আল্লাহর পথে কিছু মাল খরচ করব। তাই সে কিছু মাল নিয়ে বের হলো এবং সে মাল [তার অজান্তে] এক চোরকে দিয়ে দিল। [কোনভাবে এ কথা জানতে পেরে] ভোরে লোকেরা বলাবলি করিতে লাগল, আজ রাতে একজন চোরকে সদাক্বার মাল দেয়া হয়েছে। [সদাক্বাহ্ দানকারী এ কথা জানতে পেরে] বলিতে লাগল, হে আল্লাহ! সদাক্বার মাল একজন চোরকে [দেয়া সত্ত্বেও] সব প্রশংসা তোমার। তারপর সে বলিল, [আজ রাতেও] আবার সদাক্বাহ্ দেব। তাই সে সদাক্বাহ্ দেবার উদ্দেশে আবারও সদাক্বার মাল নিয়ে বের হলো। [এবার এ সদাক্বাহ্ ভুলবশতঃ] একজন ব্যভিচারিণীকে দিয়ে দিলো। সকালে লোকেরা বলাবলি করিতে লাগল, আজও তো সদাক্বার মাল একজন ব্যভিচারিণীকে দেয়া হয়েছে। [এ কথা জানতে পেরে] লোকটি বলিল, হে আল্লাহ! একজন ব্যভিচারিণীকে সদাক্বাহ্ দিবার জন্য সব প্রশংসা তোমার। এরপর সে বলিল,[আজ রাতেও] আমি সদাক্বাহ্ দিব। সে আবারও কিছু মাল নিয়ে বের হলো। [এবারও ভুলবশতঃ] সে সদাক্বাহ্ সে একজন ধনীকে দিয়ে দিলো। সকালে লোকেরা [এ নিয়ে] বলাবলি করিতে লাগল, আজ রাতে একজন ধনী ব্যক্তিকে সদাক্বার মাল দেয়া হয়েছে। এ কথা শুনে সে ব্যক্তি বলিতে লাগল, হে আল্লাহ! সব প্রশংসাই তোমার যদিও সদাক্বার মাল চোর, ব্যভিচারিণী ও ধনী ব্যক্তি পেয়ে গেছে। স্বপ্নে তাকে বলা হলো। সদাক্বার যে মাল তুমি চোরকে দিয়েছো, তা দিয়ে সম্ভবতঃ সে চুরি করা হইতে বিরত থাকিবে। তুমি ব্যভিচারিণীকে যা দিয়েছো তা দিয়ে সম্ভবত সে ব্যভিচার হইতে ফিরবে। যে মাল তুমি ধনীকে দিয়েছ, সম্ভবত সে এ দান হইতে শিক্ষাগ্রহণ করিবে এবং আল্লাহ তাকে যা দিয়েছেন তা থেকে খরচ করিবে।
[বোখারী, মুসলিম; এ হাদিসের ভাষা হলো বোখারীর] {১}, {১} সহীহ : বোখারী ১৪২১, মুসলিম ১০২২, নাসায়ী ২৫২৩, ইবনি হিব্বান ৩৩৫৬, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১৩২৫২, সহীহ আত তারগীব ২০, সহীহ আল জামি আস্ সগীর ৪৩৪৬। দানের মর্যাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১৮৭৭। আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি নবী [সাঃআঃ] হইতে বর্ণনা করিয়াছেন। রাসুল [সাঃআঃ] বলেছেনঃ এক ব্যক্তি এক বিরাণ মাঠে দাঁড়িয়ে ছিল। এমন সময় মেঘমালার মধ্যে সে একটি আওয়াজ শুনতে পেলো। কেউ মেঘমালাকে বলছে, অমুক ব্যক্তির বাগানে পানি বর্ষণ করো। মেঘমালাটি সেদিকে সরে গিয়ে কংকরময় ভূমিতে পানি বর্ষণ করিতে লাগলো। তখন দেখা গেল, ওখানকার নালাগুলোর একটি সব পানি নিজের মধ্যে পুরে নিচ্ছে। তারপর ও ব্যক্তি ওই পানির পিছনে চলতে লাগলো [যেন দেখিতে পায় এসব পানি জার বাগানে গিয়ে পৌঁছে সেই ব্যক্তি কে?]। হঠাৎ করে সে এক লোককে দেখিতে পেলো, যে নিজের ক্ষেতে দাঁড়িয়ে ব্যক্তি সেচনী দিয়ে [বাগানে] পানি দিচ্ছে। সে লোকটিকে জিজ্ঞেস করলো, হে আল্লাহর বান্দা! তোমার নাম কি? সে ব্যক্তি বলিল, আমার নাম অমুক। এ ব্যক্তি ওই নামই বলিল যে নাম সে মেঘমালা থেকে শুনিয়াছিলো। তারপর বাগানের লোকটি জিজ্ঞেস করলো, হে আল্লাহ্র বান্দা! তুমি আমাকে নাম জিজ্ঞেস করছ কেন? এ জন্য জিজ্ঞেস করছি যে, এ পানি যে মেঘমালার সে মেঘমালা থেকে আমি একটি আওয়াজ শুনিয়াছি। কেউ বলছিল, অমুকের বাগানে পানি বর্ষণ করো। আর সেটি তোমার নাম। [এখন বল], তুমি এ বাগানে দিয়ে কি করেছ [যার দরুন তুমি এতো বড় মর্যাদায় অভিসিক্ত হয়েছ]। বাগানওয়ালা লোকটি বলিল, “ যেহেতু তুমি জিজ্ঞেস করেছ, তাই আমি বলছি, এ বাগানে যা উৎপাদিত হয় আমি তার প্রতি লক্ষ্য রাখি। তারপর তা হইতে এক-তৃতীয়াংশ আল্লাহ্র পথে খরচ করি, এক তৃতীয়াংশ আমি ও আমার পরিবার খাই, অবশিষ্ট এক তৃতীয়াংশ এ বাগানে লাগাই।”
[মুসলিম] {১}, {১} সহীহ : মুসলিম ২৯৮৪, সহীহ আল জামি আস্ সগীর ২৮৬৪। দানের মর্যাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১৮৭৮। আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি নবী [সাঃআঃ] হইতে বর্ণনা করিয়াছেন। বানী ইসরাঈলের তিন ব্যক্তির একজন কুষ্ঠরোগী, একজন টাকমাথা ও তৃতীয়জন অন্ধ ছিল। আল্লাহ তাআলা এ তিন ব্যক্তিকে পরীক্ষা করিতে চাইলেন। তিনি তাদের কাছে একজন মালাক [ফেরেশতা] পাঠালেন। মালাক [প্রথমে] কুষ্ঠ রোগীর কাছে এলেন। তাকে জিজ্ঞেস করিলেন, কোন জিনিস তোমার কাছে বেশি প্রিয়? সে বলিল, সুন্দর রং ও সুন্দর ত্বক। আর এ কুষ্ঠ রোগ থেকে আরোগ্য যার জন্য লোকেরা আমাকে ঘৃণা করে। [এ কথা শুনে] তিনি [সাঃআঃ]বলেন, ফেরেশতা কুষ্ঠ রোগীর গায়ে হাত বুলালেন। তার রোগ ভালো হয়ে গেলো। তাকে উত্তম রং ও উত্তম ত্বক দান করা হলো। তারপর মালাক তাকে জিজ্ঞেস করিলেন, এখন কোন সম্পদ তোমার কাছে বেশি প্রিয়? সে ব্যক্তি জবাবে উট অথবা গরুর কথা বলিল। [হাদিস বর্ণনাকারী এক ব্যক্তি] ইসহাক্বের সন্দেহ করিয়াছেন গরুর কথা কুষ্ঠ রোগী বলেছিল অথবা টাকমাথাওয়ালা। [মোটকথা] এদের একজন উট চেয়েছিল। আর দ্বিতীয়জন চেয়েছিল গরু। তিনি [সাঃআঃ] বললেনঃ এ লোকটিকে একটি দশ মাসের গর্ভবতী উট দান করা হলো। তারপর মালাক দুআ করিলেন, আল্লাহ্ তোমার ধন-সম্পদে প্রবৃদ্ধি দিন। তিনি [সাঃআঃ] বলেন, এরপর মালাক গেলেন টাকওয়ালার কাছে। জিজ্ঞেস করিলেন, কোন জিনিস তোমার কাছে প্রিয়তর? সে বলিল, সুন্দর চুল। সেই সাথে এই টাক থেকে মুক্তি, যার জন্য লোকেরা আমায় ঘৃণা করে। তিনি [সাঃআঃ] বলেন, মালাক তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলে তার টাক ভালো হয়ে গেলো । তাকে সুন্দর চুল দান করা হলো। তারপর মালাক তাকে জিজ্ঞেস করিলেন, এখন তোমার কাছে কোন ধনসম্পদ অধিক প্রিয়? সে বলিল, গরু। তাকে একটি গর্ভবতী গাভী দেয়া হলো। মালাক বললেন, আল্লাহ্ তোমার ধন-সম্পদে বারাকাত দিন।
রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]বলেন, এরপর মালাক অন্ধের কাছে এলেন। জিজ্ঞেস করিলেন, তোমার কাছে কোন জিনিস খুব প্রিয়? আল্লাহ্ তাআলা আমার দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিলে আমি তা দিয়ে লোকজনকে দেখিতে পাব। রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেন, [তখন] মালাক তার চোখের উপর হাত বুলিয়ে দিলে আল্লাহ্ তাকে দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিলেন। তারপর মালাক জানতে চাইলেন, এখন তার কাছে কোন্ ধন-সম্পদ অত্যন্ত প্রিয়? সে বলিল, ভেড়া-ছাগল। তাকে গর্ভবতী বকরী দান করা হল।
রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]বললেন কিছুদিন পর কুষ্ঠ রোগী ও টাক ওয়ালা অনেক উট ও গাভী আর অন্ধ লোকটি অনেক ছাগলের মালিক হয়ে গেলো ।এমনকি উটে একটি ময়দান,গরুতে একটি ময়দান ও ছাগলে একটি ময়দান ভরে গেলো ।
রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেন, [এরপর ওই] মালাক আবার ওই কুষ্ঠ রোগীকে পরীক্ষা করার জন্য আগের রূপ ধরে এলেন। বললেন, আমি একজন মিসকীন লোক। সফরে আমার সব সম্পদ শেষ হয়ে গেছে। তাই আজ [আমার গন্তব্যে] পৌঁছা সম্ভব হচ্ছে না। আলাহর রহমাতে আমি তোমার কাছে সে আল্লাহর কসম দিয়ে একটি উট চাইছি, যিনি তোমার গায়ের রং ও চামড়া সুন্দর করে দিয়েছেন। তুমি আমাকে একটি উট দিলে আমি সফর শেষে গন্তব্যে পৌঁছতে পারি । কুষ্ঠ রোগীটি বলিল, আমার অনেক দায়-দায়িত্ব মিসকীনরূপী, অর্থাৎ সে বাহানা করে মিসকিনকে [ফেরেশতাকে] এড়িয়ে যেতে চাইল। বলিল, তুমি কোন উট পাবে না। মালাক বললেন, আমি তোমাকে যেন চিনেছি, তুমি কি সেই কুষ্ঠ রোগী নও, যাকে মানুষ ঘৃণা করত? তুমি মুখাপেক্ষী ও গরীব ছিলে। আল্লাহ তোমাকে [উত্তম রং ও রূপ দিয়ে] সুস্থতা দান করিয়াছেন, মাল দিয়েছেন। কুষ্ঠরোগী বলিল, তোমার কথা ঠিক নয়। এসব অর্থ-সম্পদ আমি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি। মালাক বলেলন, যদি তুমি মিথ্যা বলে থাক তাহলে আল্লাহ তোমাকে তোমার সে অবস্থায় ফিরিয়ে দিন যে অবস্থায় তুমি প্রথমে ছিলে।
রাসূলল্লাহ্ [সাঃআঃ] বললেনঃ তারপর মালাক টাকওয়ালার কাছে স্বরূপে আবির্ভূত হলেন। আগের লোকটিকে যা বলেছিলেন তাকে তেমনটি বললেন। টাকওয়ালাও ওই জবাবই দিল যে জবাব কুষ্ঠ রোগীটি দিয়েছিল। তারপর মালাক বললেন, তুমি মিথ্যা বলে থাকলে আল্লাহ তোমাকে যেন পূর্ব অবস্থায় ফিরিয়ে দেন। রাসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেন, [এরপর] মালাক অন্ধ লোকটির কাছে আবির্ভূত হলেন। তাকে বললেন, আমি একজন মিসকিন ও পথিক। আমার সফরের সব মালসামান শেষ। গন্তব্যে পৌঁছার জন্য আল্লাহর সাহায্য ছাড়া কিছুই নেই। আমি তোমার কাছে ওই আল্লাহর দোহাই দিয়ে একটি বকরী চাই যিনি তোমাকে দৃষ্টি শক্তি ফিরিয়ে দিয়েছেন এবং অনেক বকরীর মালিক করিয়াছেন। তাহলে আমি গন্তব্যে পৌঁছাতে পারি। মালাকের কথা শুনেই লোকটি বলিল, আমি অন্ধ ছিলাম, আল্লাহ আমাকে দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিয়েছেন। তুমি যত চাও নিয়ে যাও, আর যা ইচ্ছা রেখে যাও। আল্লাহ্র কসম![তুমি যা নিবে] তা ফেরত দেয়ার মত কষ্ট আমি তোমাকে দেব না। [অন্ধের এ জবাব শুনে] মালাক বললেন, তোমার মাল তোমার কাছে থাকুক। তাতে আমার কোন প্রয়োজন নেই। তোমাকে শুধু পরীক্ষা করা হচ্ছিল [তুমি কামিয়াব হয়েছ]। আল্লাহ্ তোমার উপর সন্তুষ্ট। আর তোমার অপর দু সাথীর উপর অসন্তুষ্ট হয়েছেন
।[বুখারি],{১} সহীহ : বোখারী ৩৪৬৪, মুসলিম ২৯২৪, সহীহ ইবনি হিব্বান ৩১৪, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ৩৫২৩। দানের মর্যাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১৮৭৯. উম্মু বুজায়দ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] এর নিকট নিবেদন করলাম, হে আল্লাহ্র রসূল! মিসকীন আমার দরজায় এসে দাঁড়ালে [এবং আমার কাছে কিছু চায়] তখন আমি খুবই লজ্জা পাই, কারণ তাকে দেবার মত আমার ঘরে কিছু পাই না। রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বললেন, তার হাতে কিছু দিও, যদি তা আগুনে ঝলসানো একটি খুরও হয়।
[আহমাদ, আবু দাউদ, তিরমিজী] {১}, {১} সহীহ : আবু দাউদ ১৬৬৭, আত তিরমিজি ৬৬৫, নাসায়ী ২৫৭৪, আহমাদ ২৭১৪৮, সহীহ আত তারগীব ৮৮৪। দানের মর্যাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১৮৮০. উসমান [রাদি.] এর আযাদকৃত গোলাম হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, [একবার] উম্মুল মুমিনীন উম্মু সালামাহ্ [রাদি.] এর কাছে [রান্না করা] কিছু গোশতের টুকরা তুহফা হিসেবে এলো। এর গোশত নবী [সাঃআঃ] এর খুব প্রিয় [খাবার] ছিল ।উম্মু সালামাহ্ তাহাঁর সেবিকাকে বললেন, এ গোশত ঘরে রেখে দাও। নবী [সাঃআঃ] তা হয়ত খাবেন। সেবিকা তা রেখে দিল। এ সময়ে একজন ভিক্ষুক দরজায় দাঁড়িয়ে উচ্চঃস্বরে বলিল, হে অন্তঃপুরবাসিনী! আল্লাহ্র পথে কিছু খরচ করো, আল্লাহ তোমাদের ধন-সম্পদে বারাকাত দেবেন। ঘরের লোকেরা বলিল, আল্লাহ্ তোমাকে বারাকাত দান করুন [অর্থাৎ মাফ করো]। রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] ঘরে এসে বললেন, হে উম্মু সালামাহ্! তোমার কাছে খাবার আছে? উম্মু সালামাহ্ [রাদি.] জবাব দিলেন, হ্যাঁ আছে। [এরপর] তিনি সেবিকাকে বললেন, যাও রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-এর জন্য গোশত নিয়ে এসো। সেবিকা আনতে গেল। কিন্তু সে তাদের কাছে গিয়ে হতবাক। [সে দেখল], তাদের মধ্য একটি সাদা হাড় ছাড়া কিছু নেই। [এ অবস্থা দেখে] নবী [সাঃআঃ] বললেনঃ তোমরা ভিক্ষুককে কিছুই দাওনি। তাই এ গোশত খণ্ডই সাদা হাড় হয়ে গেছে।
[বায়হাক্বী; এ বর্ণনাটি দালায়িলুন নুবূওয়্যাত গ্রন্থে উদ্ধৃত করিয়াছেন।] .এই হাদিসটির তাহকীকঃ নির্ণীত নয়
১৮৮১. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ মর্যাদার দিক দিয়ে নিকৃষ্টতম ব্যক্তিকে আমি কি তোমাদের চিনাব? সাহাবীগণ নিবেদন করিলেন, জি হ্যাঁ, আল্লাহ্র রসূল! অবশ্যই। রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বললেনঃ যে ব্যক্তির কাছে আল্লাহর কসম দিয়ে কেউ কিছু চায়, আর সে তাকে কিছু দেয় না। [সে সবচেয়ে নিকৃষ্ট]।
[আহমাদ] {১}, {১} সহীহ : আহমাদ ২৯২৭। দানের মর্যাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১৮৮২. আবু যার গিফারী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
[একবার] তিনি উসমানের কাছে আসার অনুমতি চাইলেন। তিনি তাঁকে অনুমতি দিলেন। তাহাঁর হাতে ছিল একটি লাঠি। উসমান [রাদি.] [ওখানে উপস্থিত] কাবকে বললেন, কাব! আবদুর রহমান ইবনি আওফ [রাদি.] অনেক ধন-সম্পদ রেখে ইন্তিকাল করিয়াছেন। এ ব্যাপারে তোমার কী অভিমত? কাব [রাদি.] বললেন, তিনি যদি এসবে আল্লাহর হক্ব [যাকাত] আদায় করে থাকেন তাহলে অসুবিধা নেই। [এ কথা শুনেই] আবু যার [রাদি.] হাতের লাঠি কাব-এর দিকে উঠিয়ে মারলেন এবং বললেন, আমি রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনিয়াছি, [উহুদের] পাহাড় পরিমাণ সোনাও যদি আমার কাছে থাকে, আর আমি তা আল্লাহর পথে খরচ করি এবং তা কবূলও হয়, তারপর আমি পছন্দ করব না আমার পরে ছয় উক্বিয়্যাহ্ [অর্থাৎ দুশত চল্লিশ দিরহাম] আমার ঘরে সঞ্চিত থাকুক। এবার আবু যার [উসমানকে উদ্দেশ্য করে বললেন,] আল্লাহর কসম দিয়ে বলছি, হে উসমান! আপনি কী রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-এর এ কথা শুনেননি? এ কথা তিনি তিনবার বললেন। উসমান [রাদি.] বললেন, হ্যাঁ শুনিয়াছি।
[আহমদ ] {১}, {১} সহীহ : আহমাদ ৪৫৩। আলবানী [রাহিমাহুল্লাহ] হাদিসটি সহীহ বলেছেন। কিন্তু মুসনাদে আহমাদের মুহাক্কিক্ব শুআয়ব আল আরনাউত্ব জইফ বলেছেন। দানের মর্যাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১৮৮৩. উক্ববাহ্ ইবনি হারিস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, [একদিন] আমরা নবী [সাঃআঃ]-এর পিছনে আসরের সালাত আদায় করলাম। সালাম ফিরার মাত্রই তিনি উঠে দাঁড়ালেন এবং মানুষের ঘাড় টপকিয়ে নিজের কোন স্ত্রীর হুজরার দিকে চলে গেলেন। তাহাঁর এ ব্যস্ততা দেখে সাহাবীগণ ঘাবড়ে গেলেন। তিনি [সাঃআঃ] হুজরা হইতে বেরিয়ে এলেন এবং সাহাবীগণকে তাহাঁর এ তারাহুড়ার জন্য বিস্মিত দেখে বললেন, আমার মনে পড়ল ঘরে কিছু সোনা রয়ে গেছে। এগুলো আমাকে [আল্লাহর নৈকট্য থেকে] দূরে রাখুক আমি পছন্দ করিনি। তাই তা বিলি-বণ্টন করে দিতে আমি বলে এসেছি। [বোখারী; বোখারীর অপর বর্ণনায় এসেছে, তিনি [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আমি যাকাত হিসেবে পাওয়া একটি সোনার পোটলা ঘরে রেখে এসেছি। আমি চাইনি তা একরাত আমার কাছে থাকুক।] {১}
{১} সহীহ : বোখারী ৮৫১। দানের মর্যাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১৮৮৪. আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] হইতে আমার কাছে [আরবে তখনকার প্রচলিত] ছয় কি সাতটি দীনার রক্ষিত ছিল।[মৃত্যু শয্যায় থাকাকালে] তিনি আমাকে তা বণ্টন করে দেবার নির্দেশ দিলেন। কিন্তু তাহাঁর রোগের তীব্রতা কারণে আমি ব্যস্ত থাকাতে ভুলে গিয়েছিলাম। তিনি আমাকে পুনরায় জিজ্ঞেস করিলেন, ঐ ছয় কি সাতটি দীনার তুমি কি করেছ? আমি বললাম, এখনো বণ্টন করা হয়নি। আল্লাহ্র কসম! আপনার রোগযন্ত্রণা আমাকে ব্যস্ত রেখেছে। রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] তখন দীনারগুলো চেয়ে নিজের হাতে রেখে বললেন, এ কথা কি ভাবা যায় যে, আল্লাহর নবী আল্লাহর সাথে মিলিত হবেন অথচ সে সময় তাহাঁর হাতে এ দীনারগুলো থেকে যাবে!
[আহমদ] {১}, {১} সহীহ : আহমাদ ২৪৭৩৩, ইবনি হিব্বান ৩২১৩, সুনানুল বায়হাক্বী লিল কুবরা ১৩০২৯, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ১০১৪। দানের মর্যাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১৮৮৫. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একদিন নবী [সাঃআঃ] বিলাল-এর নিকট এলেন। তখন তাহাঁর কাছে খেজুরের বড় স্তুপ। তিনি বিলালকে জিজ্ঞেস করিলেন, বিলাল এসব কী? তিনি বললেন, এসব আমি [ভবিষ্যতের জন্য] জমা করে রেখেছি। [এ কথা শুনে] তিনি [সাঃআঃ] বললেনঃ কাল ক্বিয়ামাতের দিন এতে তুমি জাহান্নামের তাপ অনুভবকে কী ভয় করছ না? বিলাল! এসব তুমি দান করে দাও। আরশের মালিকের-এর কাছে ভূখা নাঙা থাকার ভয় করো না। {১}
{১} সহীহ লিগায়রিহী : শুআবুল ঈমান ৩০৬৭, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ২৬৬১। এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ লিগাইরিহি
১৮৮৬. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ জান্নাতে সাখাওয়াত [দানশীলতা নামে] একটি বৃক্ষ আছে। [দুনিয়াতে] যে ব্যক্তি দানশীল হবে, সে [আখিরাতে] এ বৃক্ষের ডাল আঁকড়ে ধরবে। আর সে ডাল তাকে জান্নাতে প্রবেশ না করানো পর্যন্ত ছাড়বে না। জাহান্নামেও বুখালাত [কৃপণতা নামে] একটি গাছ আছে। যে ব্যক্তি [দুনিয়াতে] কৃপণ হবে, সে [আখিরাতে] সে গাছের ডাল আঁকড়ে ধরবে। এ ডাল তাকে জাহান্নামে পৌঁছানো না পর্যন্ত ছেড়ে দেবে না।
[এ দুটি বর্ণনা ঈমাম বায়হাক্বী শুআবুল ঈমানে উদ্ধৃত করিয়াছেন] {১},{১} জইফ : শুআবুল ঈমান ১০৩৭৭, সিলসিলাহ্ আয্ যঈফাহ্ ৩৮৯২। কারণ এর সানাদে আবদুল আযীয ইবনি ইমরান একজন মাতরূক রাবী এবং তার শায়খ ইব্রাহীম একজন দুর্বল রাবী। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
১৮৮৭. আলী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আল্লাহর পথে খরচ করার ব্যাপারে তাড়াতাড়ি করিবে [অর্থাৎ মৃত্যু অথবা রোগ-শোক হবার আগে]। কারন দান সদাক্বাহ্ করলে বালা-মুসীবাত বৃদ্ধি পায় না [অর্থাৎ দান সদাক্বায় বালা-মুসীবাদ দূর হয়]।
[রযীন] {১}, {১} খুবই দুর্বল : রযীন, জইফ আত তারগীব ৫২৪। এই হাদিসটির তাহকীকঃ খুবই দুর্বল
Leave a Reply