মৃত ব্যক্তির জন্য কাদা

মৃত ব্যক্তির জন্য কাদা

মৃত ব্যক্তির জন্য কাদা >> মিশকাতুল মাসাবীহ এর মুল সুচিপত্র দেখুন

পর্বঃ ৫, অধ্যায়ঃ ৭

  • অধ্যায়ঃ ৭. প্রথম অনুচ্ছেদ
  • অধ্যায়ঃ ৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
  • অধ্যায়ঃ ৭. তৃতীয় অনুচ্ছেদ

অদ্ধায়ঃ ৭. প্রথম অনুচ্ছেদ

১৭২২. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর সাথে আবু সায়ফ কর্মকারের ঘরে প্রবেশ করলাম। তিনি ছিলেন রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর পুত্র ইব্‌রাহীমের ধাত্রীর স্বামী। রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ইব্‌রাহীমকে কোলে তুলে নিলেন, চুমু খেলেন ও শুঁকলেন। এরপর আমরা আবার একদিন আবু সায়ফ-এর ঘরে গেলাম। এ সময় নবীতনয় মৃত্যু শয্যায়। [তার এ অবস্থা দেখে] রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর দুচোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়তে লাগল। এ অবস্থা দেখে আবদুর রাহমান ইবনি আওফ আরয করিলেন, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আপনি কাঁদছেন! তিনি [সাঃআঃ] বললেনঃ হে ইবনি আওফ! এটা আল্লাহ্‌র রহ্‌মাত। তারপরও তাহাঁর দুচোখ বেয়ে পানি পড়তে লাগল। তিনি [সাঃআঃ] বললেনঃ চোখ পানি বহাচ্ছে, হৃদয় শোকাহত। কিন্তু এরপরও আমাদের মুখ দিয়ে এমন শব্দ বেরুচ্ছে যার জন্য আমাদের পরওয়ারদিগার আমদের উপর সন্তুষ্ট। হে ইব্‌রাহীম! আমরা তোমার বিচ্ছেদে খুবই শোকাহত।

[বোখারী, মুসলীম] {১}, {১} সহীহ : বোখারী ১৩০৩, মুসলিম ২৩১৫, শুআবুল ঈমান ৯৬৮৮। মৃত ব্যক্তির জন্য কাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

১৭২৩. উসামাহ্ ইবনি যায়দ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর কন্যা [যায়নাব] কাউকে দিয়ে তাহাঁর কাছে খবর পাঠালেন যে, তাহাঁর ছেলে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করছে, তাই তিনি যেন তাড়াতাড়ি তাহাঁর কাছে আসেন। [এ কথা শুনে] রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাঁকে সালাম পাঠালেন আর বললেন, যে জিনিস [অর্থাৎ সন্তান] আল্লাহ নিয়ে নেন তা তাহাঁরই। আর যে জিনিস তিনি দিয়ে রেখেছেন তাও তাহাঁরই। প্রতিটি জিনিসই তার কাছে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য। অতএব অপরিসীম ধৈর্য ও ইহ্‌তিসাবের সাথে থাকতে হবে [শোকে দুঃখে বিহ্বল না হওয়া উচিত]। নবী কন্যা আবার তাঁকে কসম দিয়ে তাড়াতাড়ি তাহাঁর কাছে যাবার জন্য খবর পাঠালেন। এবার রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] সাদ ইবনি উবাদাহ্‌, মাআয ইবনি জাবাল, উবাই ইবনি কাব, যায়দ ইবনি সাবিত সহ কিছু লোককে সাথে নিয়ে ওখানে গেলেন। বাচ্চাটিকে রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর কোলে তুলে দেয়া হলো। তখন তার শ্বাস ওঠানামা করছে। বাচ্চার এ অবস্থা দেখে রসূলের চোখ বেয়ে পানি পড়তে লাগল। সাদ রসূলের চোখে পানি দেখে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! এটা কি? রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ এটা রহমাত, যা আল্লাহ বান্দার মনে সৃষ্টি করে দেন আর আল্লাহ তাহাঁর দয়াশীল বান্দাগণের প্রতি দয়া করেন।

[বোখারী, মুসলিম] {১}, {১} সহীহ : বোখারী ১২৮৪, মুসলিম ৯২৩, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ২০০৭। মৃত ব্যক্তির জন্য কাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

১৭২৪. আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, সাদ ইবনি উবাদাহ্ খুব অসুস্থ হয়ে পড়লে নবী [সাঃআঃ] তাঁকে দেখিতে গেলেন। তাহাঁর সাথে ছিলেন আবদুর রহ্মান ইবনি আওফ, সাদ ইবনি আবু ওয়াক্বক্বাস ও আবদুল্লাহ ইবনি মাসউদ। তিনি ওখানে প্রবেশ করে সাদ ইবনি উবাদাহকে বেহুঁশ অবস্থায় পেলেন। জিজ্ঞেস করিলেন, সে কি মারা গেছে? সাহাবী জবাব দিলেন, জ্বী না, হে আল্লাহর রাসূল! তখন নবী [সাঃআঃ] কাঁদতে লাগলেন। নবী [সাঃআঃ]-কে কাঁদতে দেখে সাহাবীগণও কাঁদতে লাগলেন। এসময় নবী [সাঃআঃ] বললেনঃ সাবধান তোমরা শুনে রাখ অশ্রু বিসর্জন ও মনের শোকের কারণে আল্লাহ তাআলা কাউকে শাস্তি দেবেন না। তিনি তার মুখের দিকে ইশারা করে বললেন, অবশ্য আল্লাহ এজন্য আযাবও দেন আবার রহ্মাতও করেন। আর মৃতকে তার পরিবার-পরিজনের বিলাপের কারণে আযাব দেয়া হয়।

[বোখারী, মুসলিম] {১}, {১} সহীহ : বোখারী ১৩০৪, মুসলিম ৯২৪, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৫২৯, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৭১৫২, সহীহ আল জামি আস্ সগীর ২৬৪৭।মৃত ব্যক্তির জন্য কাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

১৭২৫. আবদুল্লাহ ইবনি মাস্ঊদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি [মৃত ব্যক্তির শোকে] নিজের মুখাবয়বে আঘাত করে, জামার গলা ছিঁড়ে ফেলে ও জাহিলিয়্যাতের যুগের মত হা-হুতাশ করে বিলাপ করে, সে আমাদের দলের মধ্যে গণ্য নয়।

[বোখারী, মুসলিম] {১}, {১} সহীহ : বোখারী ১২৯৭, ১২৯৮, মুসলিম ১০৩, নাসায়ী ১৮৬০, ইবনি মাজাহ ১৫৮৪, আহমাদ ৪২১৫, ইবনি হিব্বান ৩১৪৯, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৭১১৫, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৫৩৩, ইরওয়া ৩/৭৭০, সহীহ আত তারগীব ৩৫৩৩। মৃত ব্যক্তির জন্য কাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

১৭২৬. আবু বুরদাহ্ ইবনি আবু মূসা [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীতঃ

একবার আমার পিতা আবু মূসা অজ্ঞান হয়ে গেলেন। এতে [আমার বিমাতা] তাহাঁর স্ত্রী আবদুল্লাহর মা বিলাপ করিতে লাগল। অতঃপর তিনি সংজ্ঞা লাভ করিলেন এবং আবদুল্লাহর মাকে বললেন, তুমি কি জানো না? তারপর তিনি একটি হাদিস বর্ণনা করিলেন। রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আমি তার সাথে সম্পর্কহীন যে মাথার চুল ছিঁড়ে, উচ্চৈঃস্বরে বিলাপ করে এবং জামার গলা ফাঁড়ে।

[বোখারী ও মুসলিম; কিন্তু পাঠ মুসলিমের] {১},{১} সহীহ : বোখারী তালীক সূত্রে ১/৪৩৬, মুসলিম ১০৪, নাসায়ী ১৮৬৩, ইবনি মাজাহ ১৫৮৬।মৃত ব্যক্তির জন্য কাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

১৭২৭. আবু মালিক আল আশ্আরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আমার উম্মাতের মধ্যে জাহিলিয়্যাত যুগের চারটি বিষয় রয়ে গেছে যা তারা ছাড়ছে না, [১] নিজের গুনের গর্ব, [২] কারো বংশের নিন্দা, [৩] গ্রহ-নক্ষত্র যোগে বৃষ্টি চাওয়া এবং [৪] বিলাপ করা। অতঃপর তিনি বলেন, বিলাপকারিণী যদি তার মৃত্যুর পূর্বে তাওবাহ্‌ না করে, ক্বিয়ামাতের দিন তাকে উঠানো হবে-তখন তার গায়ে থাকিবে আলকাতরার জামা ও ক্ষতের পিরান।

[মুসলিম ] {১}, {১} সহীহ : মুসলিম ৯৩৪, আহমাদ ২২৯০৩, ইবনি হিব্বান ৩১৪৩, মুসতাদরাক লিল হাকিম ১৪১৩, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ৭৩৪, সহীহ আত তারগীব ৩৫২৮, সহীহ আল জামি আস্ সগীর ৮৮৩। মৃত ব্যক্তির জন্য কাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

১৭২৮. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নবী [সাঃআঃ] একদিন একজন মহিলার কাছ দিয়ে যাচ্ছিলেন। সে একটি ক্ববরের পাশে দাঁড়িয়ে কাঁদছিল। তিনি তাকে বললেন, আল্লাহকে ভয় করো এবং ধৈর্যধারণ করো। মহিলাটি বলিল, আপনি আমার কাছ থেকে চলে যান, আমার উপর পতিত বিপদ আপনাকে স্পর্শ করেনি। মহিলাটি তাঁকে চিনতে পারেনি। পরে মহিলাটিকে বলা হলো, ইনি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]। তখন মহিলাটি নবী [সাঃআঃ]-এর বাড়ীর দরজায় এলো। সেখানে কোন দারোয়ান বা পাহারাদার মোতায়েন ছিল না। সে বলিল, হে আল্লাহর রসূল! আমি আপনাকে চিনতে পারিনি। নবী [সাঃআঃ] তাকে বললেন, সবরতো তাকেই বলা হয় যা বিপদের প্রথম অবস্থায় ধারণ করা হয়।

[বোখারী, মুসলিম] {১}, {১} সহীহ : বোখারী ১২৮৩, মুসলিম ৯২৬, আবু দাউদ ৩১২৪, আত তিরমিজি ৯৮৮, নাসায়ী ১৮৬৯, ইবনি মাজাহ ১৫৯৬, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৭১২৭, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৫৩৯। মৃত ব্যক্তির জন্য কাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

১৭২৯. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কোন মুসলিমের তিনটি সন্তান মারা গেলে সে জাহান্নামে প্রবেশ করিবে না। তবে কসম পুরা করার জন্য [ক্ষণিকের জন্য হলেও] প্রবেশ করানো হবে।

[বোখারী, মুসলিম] {১}, {১} সহীহ : বোখারী ১২৫১, মুসলিম ২৬৩২, আত তিরমিজি ১০৬০, নাসায়ী ১৮৭৫, ইবনি মাজাহ ১৬০৩, মুয়াত্ত্বা মালিক ৮০৫, আহমাদ ৭২৬৫, ইবনি হিব্বান ২৯৪২, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৭১৩৪, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৫৪১, সহীহ আত তারগীব ১৯৯৪। মৃত ব্যক্তির জন্য কাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

১৭৩০.আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আনসারদের কিছু সংখ্যক মহিলাকে উদ্দেশ করে বলেন, তোমাদের যে কারো তিনটি সন্তান মৃত্যুবরণ করিবে, আর সে [এজন্য] ধৈর্যধারণ করে সাওয়াবের প্রত্যাশা করিবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করিবে। [এ কথা শুনে] তাদের একজন বলিল, যদি দু সন্তান মৃত্যুবরণ করে, হে আল্লাহর রসূল! তিনি বললেন, হ্যাঁ। দুজন করলেও।

[মুসলিম; মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে, এমন তিন সন্তান মারা গেলে যারা প্রাপ্তবয়স্ক হয়নি {তাদের জন্য এ সুসংবাদ]] {১},{১} সহীহ : বোখারী ১০২, মুসলিম ২৬৩৪, ২৬৩২, আহমাদ ৭৭২১, সহীহ আত তারগীব ১৯৯২। মৃত ব্যক্তির জন্য কাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

১৭৩১.আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আল্লাহ তাআলা বলেন, আমি যখন আমার কোন মুমিন বান্দার প্রিয় জিনিসকে দুনিয়া হইতে উঠিয়ে নেই আর বান্দা এজন্য সবর অবলম্বন করে সাওয়াবের প্রত্যাশী হয়, তাহলে আমার কাছে তার জন্য জান্নাতের চেয়ে উত্তম কোন পুরস্কার নেই।

[বোখারী] {১}.{১} সহীহ : বোখারী ৬৪২৪, আহমাদ ৯৩৯৩, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৫৪৭, সহীহ আল জামি আস্ সগীর ৮১৩৯। মৃত ব্যক্তির জন্য কাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

অদ্ধায়ঃ ৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

১৭৩২. আবু সাঈদ আল খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] শোকে মাতমকারিণী ও তা শ্রবণকারিণীদের অভিসম্পাত করিয়াছেন।

[আবু দাউদ] {১}, {১} জইফ : আবু দাউদ ৩১২৮, আহমাদ ১১৬২২, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৭১১৩, ইরওয়া ৩/৭৬৯, জইফ আত তারগীব ২০৬৮, জইফ আল জামি আস্ সগীর ৪৬৯০। কারণ এর সানাদে পরস্পর তিনজন রাবী জইফ। প্রথমতঃ আত্বিয়্যাহ্ আল আওফী, দ্বিতীয়তঃ তার ছেলে হাসান, তৃতীয়তঃ তার নাতী মুহাম্মাদ।এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

১৭৩৩.সাদ ইবনি আবী ওয়াক্কাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ মুমিনের কাজ বড় বিস্ময়কর। সে সুখের সময় যেমন আল্লাহর প্রশংসা ও শুকর করে, আবার বিপদেরও তেমনি আল্লাহর প্রশংসা ও ধৈর্যধারণ করে। মুমিনকে প্রতিটি কাজের জন্যই প্রতিদান দেয়া হয়। এমনকি তার স্ত্রীর মুখে খাবারের লোকমা তুলে দেয়ার সময়ও।

[বায়হাক্বীর শুআবুল ঈমান] {১},{১} সহীহ : আহমাদ ১৪৮৭, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬৫৫৫, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৫৪০। মৃত ব্যক্তির জন্য কাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

১৭৩৪. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ প্রত্যেক মুমিনের জন্য দুটি দরজা রয়েছে। একটি দরজা দিয়ে তার নেক আমাল উপরের দিকে উঠে। আর দ্বিতীয়টি দিয়ে তার রিয্‌ক্ব নীচে নেমে আসে। যখন সে মৃত্যুবরণ করে, এ দুটি দরজা তার জন্য কাঁদে। এ বিষয়ে আল্লাহ তাআলার এ বাণীটি। তিনি বলেছেন,

فَمَا بَكَتْ عَلَيْهِمُ السَّمَآءُ وَالْأَرْضُ

“এ কাফিদের জন্য না আকাশ কাঁদে আর না জমিন”-[সূরাহ আদ দুখান ৪৪ :২৯]।

[তিরমিজি] {১}, {১} জইফ : আত তিরমিজি ৩২৫৫, জইফ আল জামি আস্ সগীর ৫২১৪। কারণ এর সানাদে মূসা ইবনি উবায়দাহ্ এবং ইয়াযীদ ইবনি আবান আর্ রুক্বাশী দুজনই জইফ রাবী।এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

১৭৩৫. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আমার উম্মাতের মধ্যে যে ব্যক্তির দুটি সন্তান শৈশবে মারা যাবে, আল্লাহ তাআলা এ কারণে তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। [এ কথা শুনে] আয়িশাহ [রাদি.] বললেন, আপনার উম্মাতের যে ব্যক্তির একটি মারা যাবে? তিনি বললেন, যার একটি শিশু সন্তান মারা যাবে তার জন্যও, হে যথাযোগ্য প্রশ্নকারিণী! আয়িশাহ্‌ [রাদি.] এবার বললেন, যার একটি বাচ্চাও মরেনি, তার জন্য কি শুভ সংবাদ? তিনি বললেন, আমিই আমার উম্মাতের জন্য এ অবস্থানে। কারণ আমার মুসীবাত বা মৃত্যুর চেয়ে আর বড় কোন সুসীবত তাদের স্পর্শ করিতে পারে না।

[তিরমিজি; তিনি বলেছেন, এ হাদিস গরীব] {১}, {১} জইফ : আত তিরমিজি ১০৬২, আহমাদ ৩০৯৮, শামায়েল ৩৩৫, জইফ আত তারগীব ১২৩৭, জইফ আল জামি আস্ সগীর ৫৮০১। কারণ এর সানাদে আবদুল্লাহ ইবনি বারিক্ব আল হানাফী যাকে ঈমাম নাসায়ীসহ আরও অনেকে জইফ বলেছেন। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

১৭৩৬. আবু মূসা আল আশ্আরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কোন বান্দার সন্তান মারা গেলে আল্লাহ তাআলা মালাকগণকে [ফেরেশ্‌তাদেরকে] বলেন, তোমরা আমার বান্দার রূহ কবয করেছ? তারা বলেন, জ্বি হ্যাঁ, করেছি। তারপর তিনি বলেন, তোমরা আমার বান্দার হৃদয়ের ফলকে কবয করেছ? তারা বলেন, জ্বি হ্যাঁ, করেছি। তারপর আল্লাহ বলেন, [এ ঘটনায়] আমার বান্দা কি বলেছে? তারা বলেন, সে তোমার প্রশংসা করেছে এবং ইস্‌তিরজা

[ইন্না লিল্লা-হি ওয়া ইন্না ইলাইহি রা-জিউন] পড়েছে। এবার আল্লাহ তাআলা বলেন, আমার বান্দার জন্য জান্নাতে একটি ঘর তৈরি করো এবং এ ঘরটির নাম রাখো বায়তুল হাম্‌দ।

[আহ্‌মাদ ও তিরমিজি] {১}. {১} হাসান লিগায়রিহী : তিরমিজির ১০২১, ইবনি হিব্বান ২৯৪৮, রিয়াযুস সলেহীন ৯২৭, সহীহ আত তারগীব ২০১২, সহীহ আল জামি আস্ সগীর ৭৯৫। এই হাদিসটির তাহকীকঃ হাসান লিগাইরিহি

১৭৩৭. আবদুল্লাহ ইবনি মাস্ঊদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন বিপদাপন্নকে সান্ত্বনা দেবে, তাকেও বিপদগ্রস্তের সমান সওয়াব দেয়া হবে।

[তিরমিজি, ইবনি মাজাহ; ঈমাম তিরমিজি বলেন, এ হাদিসটি গরীব। আমি এ হাদিসটিকে আলি ইবনি আসিম ছাড়া আর কোন ব্যক্তি হইতে মারফু হিসেবে পাইনি। ঈমাম তিরমিজি এ কথাও বলেন যে, কোন কোন মুহাদ্দিস এ বর্ণনাটিকে মুহাম্মদ ইবনি সূকা হইতে এ সানাদে মাওকুফ” হিসেবে উদ্ধৃত করিয়াছেন।] {১};{১} জইফ : আত তিরমিজি ১০৭৩, ইবনি মাজাহ ১৬০২, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৭০৮৮, ইরওয়া ৩/৭৬৫, জইফ আত তারগীব ২০৫৯, জইফ আল জামি আস্ সগীর ৫৬৯৬। শায়খ আলবানী [রাহিমাহুল্লাহ] বলেছেন, এর সানাদে রাবী আলী ইবনি আসিম তার ভুলের উপর অটল থাকার কারণে জইফ।এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

১৭৩৮. আবু বারযাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন সন্তানহারা নারীকে সান্ত্বনা যোগাবে তাকে জান্নাতে খুবই উত্তম পোশাক পরানো হবে।

[তিরমিজি, তিনি এ হাদিসটিকে গরীব বলেছেন] {১};{১} জইফ : আত তিরমিজি ১০৭৬, শুআবুল ঈমান ৮৮৪২, জইফ আত তারগীব ২০৬০, জইফ আল জামি আস্ সগীর ৫৬৯৫। কারণ এর সানাদে মুন্ইয়াহ্ বিনতু উবায়দ ইবনি আবী বারযাহ্ একজন অপরিচিত রাবী যেমনটি হাফিয ইবনি হাজার [রাহিমাহুল্লাহ] বলেছেন।এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

১৭৩৯.আবদুল্লাহ ইবনি জাফার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, জাফার-এর ইন্তিকালের খবর আসার পর নবী [সাঃআঃ] [আহলে বায়াতকে] বললেন, তোমরা জাফারের পরিবার-পরিজনের জন্য খাবার তৈরি করো। কেননা তাদের ওপর এমন এক বিপদ এসে পড়েছে, যা তাদেরকে রান্নাবান্না করে খেতে বাধা সৃষ্টি করিবে।

[তিরমিজি, আবু দাউদ, ইবনি মাজাহ] {১}, {১} হাসান : আবু দাউদ ৩১৩২, আত তিরমিজি ৯৯৮, ইবনি মাজাহ ১৬১০, সহীহ আল জামি আস্ সগীর ১০১৫।এই হাদিসটির তাহকীকঃ হাসান হাদিস

অদ্ধায়ঃ ৭. তৃতীয় অনুচ্ছেদ

১৭৪০. মুগীরাহ্ ইবনি শুবাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনিয়াছি যে, মৃত ব্যক্তির জন্য মাতম করা হয় ক্বিয়ামতের দিন সে মৃতকে এ মাতমের জন্য শাস্তি দেয়া হবে

[বোখারী, মুসলিম] {১};{১} সহীহ : বোখারী ১২৯১, মুসলিম ৯৩৩, আত তিরমিজি ১০০০, আহমাদ ১৮২৩৭, ইবনি আবী শায়বাহ্ ১২০৯৮, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৭১৬৯, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১১৫, সহীহ আত তারগীব ৩৫২০। মৃত ব্যক্তির জন্য কাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

১৭৪১. আমরাহ্ বিনতু আবদুর রহমান [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি উম্মুল মুমিনীন আয়িশাহ [রাদি.] কে বলিতে শুনিয়াছি, তাকে বলা হল যে, আব্দুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] বলেছেন, জীবিতদের কান্নাকাটির কারণে মৃত ব্যক্তিকে শাস্তি দেয়া হয়। আয়িশাহ [রাদি.] বলেছেন, আল্লাহ আবু আব্দুর রাহমানকে [ইবনি উমারের উপনাম] মাফ করুন। তিনি মিথ্যা কথা বলেননি। কিন্তু তিনি ভুলে গেছেন অথবা ইজতিহাদী ভুল করিয়াছেন [ব্যাপার হলো] একবার রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] একজন ইয়াহুদী মহিলার ক্ববরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, দেখলেন তাহাঁর কবরের পাশে লোকজন কাঁদছে। এ দৃশ্য দেখে রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ এর আত্মীয়-স্বজনরা তার জন্য কাঁদছে, আর এ মহিলাকে তার কবরে আযাব দেয়া হচ্ছে।

[বোখারী, মুসলিম] {১},{১} সহীহ : বোখারী ১২৮৯, মুসলিম ৯৩২, আত তিরমিজি ১০০৬, মুয়াত্ত্বা মালিক ৮০৩, আহমাদ ২৪৭৫৮, ইবনি হিব্বান ৩১২৩, সুনানুল কুবরা লিন্ নাসায়ী ১৯৯৫; শব্দ বিন্যাস মুসলিমের। মৃত ব্যক্তির জন্য কাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

১৭৪২. আবদুল্লাহ ইবনি আবু মুলায়কাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, উসমান ইবনি আফফান–এর কন্যা মাক্কায় মৃত্যুবরণ করিলেন। আমরা তাহাঁর জানাযাহ্‌ ও দাফনের কাজে যোগ দিতে মাক্কায় এলাম। ইবনি উমার ও ইবনি আব্বাসও এখানে আসলেন। আমি এ দুজনের মধ্যে বসেছিলাম। এমন সময় আব্দুল্লাহ ইবনি উমার, আম্‌র ইবনি উসমানকে বললেন, আর তিনি তখন তাহাঁর মুখোমুখি বসেছিলেন। তুমি [পরিবারের লোকজনকে আওয়াজ করে] কান্নাকাটি করিতে কেন নিষেধ করছ না? অথচ রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ মৃত ব্যক্তিকে তার পরিবার-পরিজনের কান্নাকাটির জন্য আযাব দেয়া হয়। তখন ইবনি আব্বাস [রাদি.] বললেন, উমার [রাদি.] এ ধরনের কথা বলিতেন। তারপর তিনি ঘটনা বর্ণনা করিলেন, “আমি যখন উমার [রাদি.]-এর সাথে মাক্কাহ্‌ হইতে ফেরার পথে বায়দা নামক স্থানে পৌছালাম, হঠাৎ করে উমার একটি কাঁকর গাছের ছায়ার নিচে এক কাফেলা দেখিতে পেলেন। তিনি আমাকে বললেন, তুমি ওখানে গিয়ে দেখো কাফেলায় কে কে আছে। আমি সুহায়বকে দেখিতে পাই। ইবনি আব্বাস বলেন, আমি ফিরে এসে উমারকে জানালাম। তিনি বললেন, তাকে ডেকে আনো। আমি আবার সুহায়াব-এর নিকট গেলাম। তাকে বললাম, চলুন, আমীরুল মুমিনীন উমারের সাথে দেখা করুন। এরপর যখন মাদীনায় উমারকে আহত করা হলো সুহায়াব কাঁদতে কাঁদতে তাহাঁর কাছে এলেন এবং বলিতে থাকলেন, হায় আমার ভাই, হায় আমার বন্ধু! [এটা কি হলো!] সে অবস্থায়ই উমার বললেন, সুহায়ব! তুমি আমার জন্য কাঁদছ অথচ রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ মৃত ব্যক্তিকে তার পরিবার-পরিজনের কান্নাকাটির দরুন আযাব দেয়া হয়। আব্দুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাদি.] বলেন, যখন উমার [রাদি.] ইন্তিকাল করিলেন, আমি এ কথা আয়িশাহ [রাদি.] এর কাছে বললাম। তিনি শুনে বলিতে লাগলেন, আল্লাহ তাআলা উমারের উপর দয়া করুন। কথা এটা নয়। রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এ কথা বলেননি যে, পরিবার-পরিজনের কান্নাকাটির জন্য মৃত ব্যক্তিকে আযাব দেয়া হয়। বরং আল্লাহ তাআলা পরিবার-পরিজনের কান্নাকাটির জন্য কাফিরের আযাব বাড়িয়ে দেন। তারপর আয়িশাহ [রাদি.] বললেন, কুরআনের এ আয়াতই দলীল হিসেবে তোমাদের জন্য যথেষ্ট, অর্থাৎ “কোন ব্যক্তি অন্য কারো বোঝা বহন করিবে না”- [সুরা ইসরা ১৭:১৫] ইবনি আব্বাস বলেন, এ আয়াতের মর্মবাণীও প্রায় এ রকমই, অর্থাৎ আল্লাহ তাআলাই হাসান ও কাঁদান। ইবনি আবু মুলায়কাহ্‌ বলেন, আব্দুল্লাহ ইবনি উমার এসব কথা শুনার পর কিছুই বললেন না।

[বোখারী, মুসলিম] {১}, {১} সহীহ : বোখারী ১২৮৬, ১২৮৭, ১২৮৮, মুসলিম ৯২৮, ৯২৯, ৯৩০, মুসনাদুশ্ শাফিঈ ৫৫৮। মৃত ব্যক্তির জন্য কাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

১৭৪৩.আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, [মূতার যুদ্ধে] ইবনি হারিসাহ্‌, ও জাফার ও ইবনি রাওয়াহার শাহাদাতের খবর নবী [সাঃআঃ]-এর কাছে এসে পৌছালে তিনি [মাসজিদে নাবাবীতে] বসে পড়লেন। তাহাঁর চেহারায় শোক-দুঃখের ছায়া পরিস্ফুট হয়ে উঠল। আমি দরজার ফোকর দিয়ে তাহাঁর অবস্থা দেখছিলাম। এ সময় এক ব্যক্তি তাহাঁর খিদমাতে বলিতে লাগল, জাফারের পরিবারের মেয়েরা এরূপ এরূপ করছে [অর্থাৎ তাদের কান্নাকাটির কথা উল্লেখ করিল]। রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাকে ওদের কাছে গিয়ে কাঁদতে নিষেধ করার হুকুম দিলেন। লোকটি চলে গেল। [কিছুক্ষন পর] দ্বিতীয়বার এসে বলিল, মহিলারা কোন কথা মানছে না। আবারও তিনি তাদেরকে কাঁদতে নিষেধ করে তাকে পাঠালেন। লোকটি চলে গেল। তাদেরকে নিষেধ করিল। [কিছুক্ষণ পর] সে তৃতীয়বার ফিরে এসে বলিল, হে রসূল! তারা আমার উপর বিজয়ী হয়ে গেছে। অর্থাৎ আমার কথা মানছে না। আয়িশাহ [রাদি.] বলেন, আমার ধারনা হলো, এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলবেনঃ তাদের মুখে মাটি ঢেলে দাও। আয়িশাহ [রাদি.] বলেন, আমি মনে মনে [ঐ ব্যক্তিকে] বললাম, তোমার মুখে ছাই পড়ুক, তুমি কেন রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] যে হুকুম দিচ্ছেন তা পালন করলে না? আর তুমি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে দুঃখ দেয়া হইতে বিরত হচ্ছ না।

[বোখারী, মুসলিম] {১}, {১} সহীহ : বোখারী ১২৯৯, মুসলিম ৯৩৫, ইবনি হিব্বান ৩১৪৭, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৭০৮৫, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৫৩১। মৃত ব্যক্তির জন্য কাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

১৭৪৪. উম্মু সালামাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, [আমার প্রথম স্বামী] আবু সালামাহ্‌ মৃত্যুবরণ করলে আমি বললাম, আবু সালামাহ্‌ মুসাফির ছিলেন, মুসাফির অবস্থায় মৃত্যুবরণ করিলেন। অর্থাৎ মাক্কার লোক মাদীনায় মৃত্যুবরণ করিলেন। আমি তাহাঁর জন্য এমনভাবে কাঁদব যে, আমার কান্নাকাটি সম্পর্কে লোকেরা আলোচনা করিবে। আমি কান্নাকাটি করার প্রস্তুতিতে ব্যস্ত ছিলাম। হঠাৎ একজন মহিলা এসে আমার সাথে কাঁদতে চাইল। এমন সময় রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর আগমন। তিনি বললেন, এই ঘর হইতে আল্লাহ দুবার শয়তানকে বহিষ্কার করিয়াছেন। তোমরা তাকে পুনরায় এখানে আনতে চাও? উম্মু সালামাহ্‌ [রাদি.] বলেন, তাহাঁর এ হুশিয়ারী শুনে আমি [কান্নাকাটি] করা হইতে চুপ হয়ে গেলাম। অতঃপর আমি আর কাঁদিনি।

[মুসলিম] {১}, {১} সহীহ : মুসলিম ৯২২, সহীহ আত তারগীব ৩৫২৯। মৃত ব্যক্তির জন্য কাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

১৭৪৫. নুমান ইবনি বাশীর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, একবার আবদুল্লাহ ইবনি রওয়াহাহ্‌ [কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে] জ্ঞান হারালেন। তাহাঁর বোন আমরাহ্‌ কেঁদে কেটে বলিতে লাগলেন হে আমার পর্বতসম ভাই! হে আমার এমন ভাই! তেমন ভাই! অর্থাৎ এভাবে তাহাঁর ভাইয়ের খ্যাতির বর্ণনা করিতে লাগল। আবদুল্লাহ ইবনি রওয়াহার জ্ঞান ফিরলে বোনকে বললেন, তুমি আমাকে নিয়ে যখন যা বলেছ, আমাকে তখনই জিজ্ঞেস করা হয়েছে, এসব গুনে গুণী আমি কিনা? অন্য এক বর্ণনায় অতিরিক্ত বর্ণনা এসেছে, যখন আবদুল্লাহ [মূতার যুদ্ধে] তখন তাহাঁর বোন আম্‌রাহ্‌ আর তাহাঁর জন্য কাঁদেননি।

[বোখারী] {১},{১} সহীহ : বোখারী ৪২৬৭, ইবনি আবী শায়বাহ্ ৩৪৭২৬, মুসতাদরাক লিল হাকিম ৪৩৫৩। মৃত ব্যক্তির জন্য কাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

১৭৪৬. আবু মূসা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনিয়াছি। তিনি বলেন, যখন কোন ব্যক্তি মারা যায় এবং তার আপন ক্রন্দনকারীরা এ কথা বলে কাঁদে, হে আমার পাহাড়তুল্য অমুক। হে সরদার! ইত্যাদি ইত্যাদি, তখন আল্লাহ তাআলা ঐ মৃত ব্যক্তির নিকট দুজন মালাক [ফেরেশ্‌তা] প্রেরণ করেন, যারা তার বুকে হাত দিয়ে ধাক্কা মারে আর জিজ্ঞেস করে, তুমি কি এমনই ছিলে?

[তিরমিজি; এবং তিনি বলেন, এ হাদিসটি গরীব ও হাসান] {১}.{১} হাসান লিগায়রিহী : আত তিরমিজি ১০০৩, সহীহ আত তারগীব ৩৫২২, সহীহ আল জামি আস্ সগীর ৫৭৮৮।এই হাদিসটির তাহকীকঃ হাসান লিগাইরিহি

১৭৪৭.আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর পরিবারের কোন একজন [যায়নাব] মারা গেলেন। তখন কয়েকজন মহিলা একত্রিত হয়ে তাহাঁর জন্য কাঁদতে লাগল। এ অবস্থায় উমার [রাদি.] দাঁড়িয়ে গেলেন। তিনি তাদেরকে কাঁদতে নিষেধ করিলেন, আর ভাগিয়ে দিতে লাগলেন। রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] এ অবস্থা দেখে বললেন, উমার! এদেরকে নিজ অবস্থায় ছেড়ে দাও। কারণ এদের চোখ কাঁদছে, হৃদয় ক্ষত-বিক্ষত, আর মৃত্যুর সময়ও নিকটবর্তী!

[আহ্‌মাদ, নাসায়ী] {১};{১} জইফ : নাসায়ী ১৮৫৯, জইফ আল জামি আস্ সগীর ২৯৪৭, আহমাদ ৫৮৮৯। কারণ এর সানাদে রাবী সালামাহ্ ইবনি আল আরযাক্ব একজন দুর্বল রাবী। হাফিয যাহাবী তাকে মাজহূল বলেছেন। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

১৭৪৮. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]–এর কন্যা যায়নাব [রাদি.] মারা গেলে মহিলারা কাঁদতে লাগল। উমার [রাদি.] হাতের কোড়া দিয়ে তাদেরকে আঘাত করিলেন। এ অবস্থায় রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] উমারকে সরিয়ে দিলেন এবং বললেন, উমার! কোমল হও। আর মহিলাদের বললেন, তোমরা তোমাদের গলার আওয়াজ শয়তান থেকে দূরে রাখো [অর্থাৎ চিৎকার করে ইনিয়ে বিনিয়ে কেঁদ না]। তারপর বললেন, যা কিছু চোখ [অশ্রু] ও হৃদয় [দুঃখ বেদনা ও শোক-তাপ] বের হয় তা আল্লাহর তরফ থেকেই বের হয়। এটা হয় রহ্‌মাতের কারণে। আর যা কিছু হাত ও মুখ হইতে বের হয় তা হয় শায়ত্বনের তরফ থেকে।

[আহ্‌মাদ] {১};{১} জইফ : আহমাদ ২১২৭, মুসতাদরাক লিল হাকিম ৪৮৬৯, সিলসিলাহ্ আয্ যঈফাহ্ ৩৩৬১, জইফ আল জামি আস্ সগীর ২২১৫। আলবানী [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, এর সানাদে আলী ইবনি যায়দ ইবনে জাদ্আন একজন দুর্বল রাবী এবং ইউসুফ ইবনি মিহরান হাদিস বর্ণনায় দুর্বল। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

১৭৪৯. ঈমাম বোখারী হইতে বর্ণীতঃ

ঈমাম বোখারী সানাদবিহীন তালীক্ব পদ্ধতিতে উল্লেখ করেন যে, যখন হাসান ইবনি আলী [রাদি.]-এর ছেলে [ঈমাম] হাসান মারা যান, তখন তাহাঁর স্ত্রী তাহাঁর ক্ববরের উপর এক বছর পর্যন্ত তাঁবু খাটিয়ে রেখেছিলেন। তাঁবু ভাঙ্গার পর অদৃশ্য হইতে শুনতে পেলেন, “এ তাঁবু খাটিয়ে কি তারা হারানো ধন ফিরে পেলো?” এ কথার জবাবে আবার [অদৃশ্য হইতেই] অন্য একজন বলিল, না! বরং নিরাশ হয়ে ফিরে গিয়েছে। {১}

{১} ঈমাম বোখারী [রাহিমাহুল্লাহ] [بَابُ هَا يُكْرَهُ مِنْ اِتِّخَازِ مَسَاجِدِ قُبُوْرًا] অধ্যায়ে সানাদ ছাড়াই এটি বর্ণনা করিয়াছেন।এই হাদিসটির তাহকীকঃ নির্ণীত নয়

১৭৫০.ইমরান ইবনি হুসায়ন ও আবু বারযাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তাঁরা বলেন, আমরা একবার রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর সাথে এক জানাযায় গিয়েছিলাম। ওখানে এমন কিছু লোককে দেখা গেল, যারা শোকের চিহ্নের জন্য তাদের গায়ের চাদর খুলে রেখে শুধু জামা পরে হাঁটছে। [এ অবস্থা দেখে] রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বললেনঃ তোমরা কি জাহিলিয়্যাতের কার্যক্রমের [মূর্খতা ও অজ্ঞতার] উপর আমাল করছ অথবা জাহিলিয়্যাতের কার্যক্রমের মত কার্যক্রম অবলম্বন করছ? তারপর তিনি বললেন, আমার ইচ্ছা হচ্ছে এমন বদ্‌দুআ করিতে যাতে তোমরা ভিন্ন আকৃতি নিয়ে [অর্থাৎ বানর বা শুয়োরের আকৃতিতে ] ঘরে ফিরে যাও। বর্ণনাকারী বলেন, এ কথা শুনে তারা চাদরগুলো গায়ে পড়ল। এরপর কখনো তারা এমনটি করেনি। [ইবনি মাজাহ] {১}

{১} মাওযূ : ইবনি মাজাহ ১৪৮৫। কারণ এর সানাদে রাবী নুফাই ইবনুল হারিস সম্পর্কে ঈমাম বোখারী [রাহিমাহুল্লাহ] বলেছেন, সে মুনকারুল হাদিস। আর ইয়াহ্ইয়া ইবনুল মাঈনসহ আরো অনেকে তাকে কাযযাব বলেছেন। এই হাদিসটির তাহকীকঃ জাল হাদিস

১৭৫১. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, সে জানাযায় শারীক হইতে রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] নিষেধ করিয়াছেন যে জানাযার সাথে মাতমকারী মহিলা থাকে।

[আহ্‌মাদ ও ইবনি মাজাহ] {১};{১} হাসান : ইবনি মাজাহ ১৫৮৩, সহীহ আল জামি আস্ সগীর ৬৮১০। এই হাদিসটির তাহকীকঃ হাসান হাদিস

১৭৫২.আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, একদা এক ব্যক্তি তাঁকে বলিল, আমার একটি পুত্র সন্তান মারা গেছে, যার জন্য আমি শোকাহত। আপনি কি আপনার বন্ধু {মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]] থেকে এমন কোন কথা শুনেছেন যা আমাদের হৃদয়কে খুশী করিতে পারে? আবু হুরাইরাহ্‌ [রাদি.] বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-কে বলিতে শুনিয়াছি, মুসলিমদের শিশুরা জান্নাতে সাগরের মাছের মতো সাঁতার কাটতে থাকিবে। যখন তারা তাদের পিতাকে পাবে তখন পিতার কাপড়ের কোণা টেনে ধরবে। পিতাকে জান্নাতে না পৌছানো পর্যন্ত ছাড়বে না।

[মুসলিম, আহ্‌মাদ; ভাষা ঈমাম আহ্‌মাদের] {১};{১} সহীহ : মুসলিম ২৬৩৫, আহমাদ ১০৩৩২, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৭১৪৩, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ৪৩১, সহীহ আত তারগীব ১৯৯৮। মৃত ব্যক্তির জন্য কাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

১৭৫৩. আবু সাঈদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর কাছে একজন মহিলা এসে বলিল, হে আল্লাহর রসূল! পুরুষ আপনার বানী শুনে উপকৃত হচ্ছে, [এ অবস্থায়] আপনি আমাদের জন্য একটি দিন নির্দিষ্ট করে দিন, যেদিন আমরা আপনার খিদমাতে উপস্থিত হব। আপনি আমাদেরকে ওসব কথা শুনাবেন, যা আল্লাহ্‌ আপনাকে বলেছেন। [এ কথা শুনে] রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] তাদেরকে দিন ও স্থান নির্ধারণ করে উপস্থিত থাকতে বললেন। সে মতে মহিলাগণ সেখানে একত্রিত হলো। রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] তাদেরকে ওসব কথাই শিক্ষা দিলেন, যা আল্লাহ্‌ তাঁকে শিক্ষা দিয়েছেন। অতঃপর তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যে যার তিনটি সন্তান তার আগে মৃত্যুবরণ করেছে, সে তার ও জাহান্নামের মধ্যে আড়াল হবে। এ কথা শুনে তাদের একজন জিজ্ঞেস করিল, হে আল্লাহর রসূল! যদি আগে দু সন্তান মৃত্যুবরণ করে এবং সে কথাটি দুবার পুনরাবৃত্তি করিল। তখন রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলিইহি ওয়া সাল্লাম] বললেন- যদি দুজনও হয়, দুজন হয়, দুজন হয়।

[বোখারী] {১}, {১} সহীহ : বোখারী ৭৩১০, শুআবুল ঈমান ৯২৮৭, সহীহ আল জামি আস্ সগীর ৫৮০৫। মৃত ব্যক্তির জন্য কাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

১৭৫৪. মুআয ইবনি জাবাল [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেনঃ যে দুজন মুসলিম ব্যক্তির অর্থাৎ মাতা-পিতার তিনটি সন্তান [তাদের আগে] মারা যাবে, আল্লাহ্‌ তাদেরকে তাহাঁর বিশেষ রহ্‌মাতে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। সাহাবীগণ আরয করিলেন, হে আল্লাহ্‌র রসূল! দুজন মারা গেলেও কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ দুজন মারা গেলেও। সাহাবীগণ আবারো বললেন, একজন মারা গেলেও? তিনি বললেন, হ্যাঁ, একজন মারা গেলেও। অতঃপর রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেন, যাঁর হাতের মুঠোয় আমার জীবন তাহাঁর শপথ করে বলছি, যদি কোন মহিলার গর্ভপাত হয়ে যায় সেই মা ধৈর্য ধরে সাওয়াবের আশা করে, তাহলে সে সন্তানও তাহাঁর নাড়ী ধরে টেনে তাকে জান্নাতে নিয়ে যাবে

। [আহ্‌মাদ, আর ইবনি মাজাহ এ বর্ণনা “আল্লাহর কসম” থেকে শুরু করে শেষ পর্যন্ত উদ্ধৃত করিয়াছেন।] {১},{১} প্রথমাংশটুকু জইফ আর শেষাংশটুকু সহীহ : ইবনি মাজাহ ১৬০৯, সহীহ আত তারগীব ২০০৮, আহমাদ ২২০৯০, জইফ আত তারগীব ১২৩৬, সহীহ আল জামি আস্ সগীর ২৩৯৩।এই হাদিসটির তাহকীকঃ অন্যান্য

১৭৫৫.আবদুল্লাহ ইবনি মাস্ঊদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম] বলেছেনঃ যে ব্যক্তির জীবদ্দশায় তার তিনটি অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তান মারা যাবে, তারা তাকে জাহান্নাম থেকে বাঁচাবার জন্য অত্যন্ত মজবুত আশ্রয়স্থল হয়ে যাবে। [এ কথা শুনে] আবু যার [রাদি.] বললেন, আমি তো দুটি শিশু সন্তান হারিয়েছি। তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম] বললেনঃ দুটি হলেও হবে। কারীদের ঈমাম উবাই ইবনি কাব, যার ডাকনাম ছিল আবুল মুনযির, তিনি বললেন। আমিও তো একজন পাঠিয়েছি। অর্থাৎ আমার একটি সন্তান মারা গেছে। তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম] বললেনঃ একটি হলেও এমন অবস্থা।

[তিরমিজি, ইবনি মাজাহ; ঈমাম তিরমিজি বলেন, হাদিসটি গরীব] {১},{১} জইফ : আত তিরমিজি ১০৬১, ইবনি মাজাহ ১৬০৬, আহমাদ ৪০৭৭, জইফ আল জামি আস্ সগীর ৫৭৫৪। ঈমাম আত তিরমিজি [রাহিমাহুল্লাহ] বলেছেন, আবু উবায়দাহ্ তার পিতা থেকে শ্রবণ করেননি। আর শায়খ আলবানী [রাহিমাহুল্লাহ] বলেছেন, আবু মুহাম্মাদ [যিনি উমার-এর আযাদকৃত দাস] মাজহূল।এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

১৭৫৬. কুররাহ্ আল মুযানী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, এক ব্যক্তি তার ছেলেকে সঙ্গে করে নবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর নিকট আসতেন। তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] তাকে বললেন, তুমি কি তোমার ছেলেকে বেশী ভালবাসো? সে ব্যক্তি বলিল, হে আল্লাহর রসূল! আল্লাহ্‌ তাআলা আপনাকে ভালবাসেন যেমনভাবে আমি তাকে ভালবাসি। [কিছুদিন পর একদিন নবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] ছেলেটিকে তার পিতার সাথে দেখিতে পেলেন না।] তিনি জিজ্ঞেস করিলেন, অমুক ব্যক্তির সন্তানের কি হলো? সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রসূল? তার ছেলেটি মারা গেছে। [এরপর ঐ ব্যক্তি উপস্থিত হলে] রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বললেন, তুমি কি এ কথা পছন্দ করো না যে, তুমি [ক্বিয়ামাতের দিন] জান্নাতের যে দরজাতেই যাবে, সেখানেই তোমার সন্তানকে তোমার জন্য অপেক্ষারত দেখবে? এক ব্যক্তি আরয করিল, হে আল্লাহর রসূল! এ শুভসংবাদ কি শুধু এ ব্যক্তির জন্য নির্দিষ্ট, না সকলের জন্য? তিনি বললেন, সকলের জন্য।

[আহ্‌মাদ] {১},{১} সহীহ : নাসায়ী ১৮৭০, আহমাদ ১৫৫৯৫, সহীহ আত তারগীব ২০০৭।মৃত ব্যক্তির জন্য কাদা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

১৭৫৭. আলী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সা.] বলেছেনঃ গর্ভপাতে নষ্ট হওয়া সন্তানও তার পিতা-মাতাকে জাহান্নামে প্রবেশ করানোর সময় তার রবের সাথে বিতর্ক করিবে। এর ফলে তখন বলা হবে, হে গর্ভপাতে নষ্ট হওয়া সন্তান! তোমার পিতা-মাতাকে জান্নাতে নিয়ে যাও। তখন সে অপূর্ণাজ্ঞ সন্তান তার পিতা-মাতাকে নিজের নাড়ী দিয়ে টেনে জান্নাতে নিয়ে যাবে।

[ইবনি মাজাহ] {১}.{১} জইফ : ইবনি মাজাহ ১৬০৮, ইবনি আবী শায়বাহ্ ১১৮৮৭, জইফ আল জামি আস্ সগীর ১৪৬৭। কারণ এর সানাদে মানদিল ইবনি আলী [রাদি.]সর্বসম্মতক্রমে একজন দুর্বল রাবী।এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

১৭৫৮. আবু উমামাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নবী [সাঃআঃ] হইতে বর্ণনা করেন, আল্লাহ তায়ালা [মানুষকে উদ্দেশ্য করে] বলেন, হে আদম সন্তান! তুমি যদি বিপদের প্রথম সময়ে ধৈর্যধারণ করো এবং আল্লাহর কাছে সাওয়াবের আশা পোষণ করো, তাহলে আমি তোমার জন্য জান্নাত ছাড়া অন্য কোন সাওয়াবে সন্তুষ্ট হব না।

[ইবনি মাজাহ] {১}, {১} হাসান : ইবনি মাজাহ ১৫৯৭। এই হাদিসটির তাহকীকঃ হাসান হাদিস

১৭৫৯. হুসায়ন ইবনি আলী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নবী [সাঃআঃ] হইতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেন যে, কোন মুসলিম নর-নারী কোন বিপদাপদে পড়ার যত দীর্ঘ সময় পর মনে জেগে ওঠে আর সে নতুনভাবে “ইন্না-লিল্লা-হি ওয়া ইন্না-ইলাইহি রা-জিউন পড়ে তাহলে আল্লাহ তাকে নতুনভাবে সে সওয়াবই দিবেন যে সাওয়াব সে বিপদে পতিত হওয়ার প্রথম দিনই পেয়েছে।

[আহমাদ, বায়হাক্বীর শুআবুল ঈমান] {১}, {১} খুবই দুর্বল : আহমাদ ১৭৩৪। কারণ এর সানাদে হিশাম ইবনি আবী হিশাম একজন মাতরূক রাবী এবং তার মায়ের অবস্থা জানা যায় না।এই হাদিসটির তাহকীকঃ খুবই দুর্বল

১৭৬০. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমাদের কারো জুতার ফিতা ছিঁড়ে গেলেও সে যেন ইস্‌তিরজা [ইন্না-লিল্লা-হি ওয়া ইন্না-ইলাইহি রা-জিউন] পড়ে। কারন এটা একটা বিপদই।

[বায়হাক্বীর শুআবুল ঈমান] {১}; {১} জইফ : শুআবুল ঈমান ৯২৪৪। কারণ ইয়াহ্ইয়া ইবনি উবায়দুল্লাহ [রাদি.] মাজহূল রাবী।এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

১৭৬১. উম্মুদ্ দারদা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি আবুদ্ দারদা [রাদি.] কে বলিতে শুনিয়াছি, তিনি আবুল ক্বাসিমকে {রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে] বলিতে শুনেছেন যে, আল্লাহ তায়ালা বলেছেনঃ হে ঈসা! আমি তোমার পরে এমন এক উম্মত পাঠাব, যারা তাদের পছন্দনীয় জিনিস পেলে আল্লাহর প্রশংসা করিবে, আর বিপদে পড়লে সাওয়াবের আশা করিবে ও ধৈর্যধারণ করিবে। অথচ এই সময় তাদের কোন জ্ঞান ও ধৈর্যশক্তি থাকিবে না। এ সময় তিনি {ঈসা [আলাইহিস সালাম]] নিবেদন করিবেন, হে আমার রব! তাদের জ্ঞান ও ধৈর্য না থাকলে এটা এটা কেমন করে হবে? তখন আল্লাহ বললেন, আমি আমার সহিষ্ণুতা ও জ্ঞান হইতে তাদেরকে কিছু দান করব।

[উপরের দুটি হাদিসই বায়হাক্বীর শুআবিল ঈমানে বর্ণিত হয়েছে] {১}; {১} জইফ : আহমাদ ২৭৫৪৫, শুআবুল ঈমান ৯৪৮০, সিলসিলাহ্ আয্ যঈফাহ্ ৪০৩৮, জইফ আত তারগীব ১৯৮৩, জইফ আল জামি আস্ সগীর ৪০৫২। কারণ এর সানাদে ইয়াযীদ ইবনি মায়সারাহ্ একজন মাজহূল রাবী।এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply