মৃত ব্যক্তির দাফনের নিয়ম এবং বর্ণনা
মৃত ব্যক্তির দাফনের নিয়ম এবং বর্ণনা >> মিশকাতুল মাসাবীহ এর মুল সুচিপত্র দেখুন
পর্বঃ ৫, অধ্যায়ঃ ৬
অধ্যায়ঃ ৬. প্রথম অনুচ্ছেদ
অধ্যায়ঃ ৬. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
অধ্যায়ঃ ৬. তৃতীয় অনুচ্ছেদ
অদ্ধায়ঃ ৬. প্রথম অনুচ্ছেদ
১৬৯৩.আমির ইবনি সাদ ইবনি আবু ওয়াক্বক্বাস [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, তার পিতা সাদ ইবনি আবী ওয়াক্বক্বাস [রাদি.] মৃত্যুশয্যায় রোগাক্রান্ত অবস্থায় বলেন, আমাকে দাফন করার জন্য লাহ্দ [বগলী] ক্ববর তৈরী করিবে। রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে দাফন করার জন্য যেভাবে ক্ববর খোঁড়া হয়েছিল, সেভাবে আমার উপরেও কাঁচা ইট দাঁড় করিয়ে দেবে।
[মুসলিম] {১}, {১} সহীহ : মুসলিম ৯৬৬, নাসায়ী ২০০৭, ইবনি মাজাহ ১৫৫৬, আহমাদ ১৪৫০, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬৬১৫। মৃত ব্যক্তির দাফনের নিয়ম -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১৬৯৪. আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর ক্ববরে একটি লাল চাদর বিছিয়ে দেয়া হয়েছিল।
[মুসলিম] {১},{১} সহীহ : মুসলিম ৯৬৭, আত তিরমিজি ১০৪৮, নাসায়ী ২০১২, ইবনি আবী শায়বাহ্ ১১৭৫৪, আহমাদ ৩৩৪১, ইবনি হিব্বান ৬৬৩১।মৃত ব্যক্তির দাফনের নিয়ম -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১৬৯৫. সুফ্ইয়ান তাম্মার [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি নবী [সাঃআঃ] এর ক্ববরকে উটের পিঠের মত [মুসান্নাম] উঁচু দেখেছেন।
[বুখারি] {১}, {১} সহীহ : বোখারী ১৩৯০, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬৭৬০। মৃত ব্যক্তির দাফনের নিয়ম -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১৬৯. আবুল হাইয়্যাজ আল আসাদী [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, “আলী [রাদি.] আমাকে বলেছেন, “আমি কি তোমাকে এমন একটি কাজের জন্য পাঠাব না, যে কাজের জন্য রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাকে পাঠিয়েছিলেন? তা হলো, যখন তোমার চোখে কোন মূর্তি পড়বে, তা একেবারে নিশ্চিহ্ন না করে ছাড়বে না। আর উঁচু কোন ক্ববর দেখলে তাকে সমতল না করে রাখবে না।
[মুসলিম] {১}, {১} সহীহ : মুসলিম ৯৬৯, আহমাদ ৭৪১, ইরওয়া ৭৫৯, সহীহ আত তারগীব ৩০৫৭, সহীহ আল জামি আস্ সগীর ৭২৬৪। মৃত ব্যক্তির দাফনের নিয়ম -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১৬৯৭. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ক্ববরে চুনকাম করিতে, এর উপর ঘর বানাতে এবং বসতে নিষেধ করিয়াছেন
[মুসলিম] {১}, {১} সহীহ : মুসলিম ৯৭০, ইবনি আবী শায়বাহ্ ১১৭৬৪, ইরওয়া ৭৫৭, মুসান্নাফ ইবনি আবদুর রায্যাক্ব ৬৪৮৮। মৃত ব্যক্তির দাফনের নিয়ম -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১৬৯৮. আবু মারসাদ আল গানবী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমরা ক্ববরের উপর বসবে না এবং ক্ববরের দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করিবে না।
[মুসলিম] {১},{১} সহীহ : মুসলিম ৯৭২। মৃত ব্যক্তির দাফনের নিয়ম -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১৬৯৯. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমাদের কারো অঙ্গারের উপর বসা, আর এ অঙ্গারে [পরনের] কাপড়-চোপড় পুড়ে শরীরে পৌছে যাওয়া তার জন্য উত্তম হবে ক্ববরের উপর বসা হইতে।
[মুসলিম] {১}.{১} সহীহ : মুসলিম ৯৭১, আবু দাউদ ৩২২৮, নাসায়ী ২০৪৪, ইবনি মাজাহ ১৫৬৬, আহমাদ ৮১০৮, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৭২১৪, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৫১৯, সহীহ আত তারগীব ৩৫৬৩, সহীহ আল জামি আস্ সগীর ৫০৪২। মৃত ব্যক্তির দাফনের নিয়ম -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
অদ্ধায়ঃ ৬. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
১৭০০. উরওয়াহ্ ইবনুয্ যুবায়র [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, মাদীনায় দু ব্যক্তি ছিলেন [তারা ক্ববর খুঁড়তেন]। তাদের একজন [আবু ত্বলহাহ্ আল আনসারী] লাহ্দী [বুগলী] ক্ববর খুঁড়তেন আর দ্বিতীয়জন [আবু উবায়দাহ্ ইবনুল জাররাহ্] লাহ্দী ক্ববর খুঁড়তেন না [বরং সিন্ধুকী ক্ববর খুঁড়তেন]। রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর ইন্তিকাল হলে সাহাবীগণ [সম্মিলিতভাবে বললেন], এ দু ব্যক্তির যিনি আগে আসবেন তিনিই তার মতো করে ক্ববর খনন করিবেন। পরিশেষে তিনিই আগে আসলেন যিনি লাহ্দী ক্ববর খুঁড়তেন [অর্থাৎ আবু ত্বলহাহ্ আল আনসারী]। তিনি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর জন্য লাহ্দী ক্ববর খুঁড়লেন।
[শারহুস্ সুন্নাহ্] {১}, {১} হাসান সহীহ : হাদিসটি মুরসালা হলেও ইবনি মাজাহ্তে এর একটি শাহিদ রয়েছে যার ফলে আলবানী [রাহিমাহুল্লাহ] হাদিসটি হাসান সহীহ বলেছেন। মুয়াত্ত্বা মালিক ২৬০, মুসান্নাফ আবদুর রায্যাক্ব ৬৩৮৪, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৫১০। এই হাদিসটির তাহকীকঃ হাসান সহীহ
১৭০১. আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, লাহ্দী ক্ববর আমাদের জন্য। আর শাক্ক্ [সিন্ধুকী] ক্ববর আমাদের অপরদের জন্য।
[তিরমিজি, আবু দাউদ, নাসায়ী, ইবনি মাজাহ] {১}, {১} সহীহ : আবু দাউদ ৩২০৪, আত তিরমিজি ১০৪৫, নাসায়ী ২০০৯, ইবনি মাজাহ ১৫৫৪, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬৭১৮, সহীহ আল জামি আস্ সগীর ৫৪৮৯। মৃত ব্যক্তির দাফনের নিয়ম -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১৭০২. আর ঈমাম আহমাদ হইতে বর্ণীতঃ
আর ঈমাম আহমাদ এ হাদিসটি বর্ণনা করিয়াছেন জারীর ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে। {১}
{১} সহীহ : আহমাদ ১৯১৫৭, ইবনি মাজাহ ১৫৫৫, সহীহ আল জামি আস্ সগীর ১১৫৫। মৃত ব্যক্তির দাফনের নিয়ম -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১৭০৩. হিশাম ইবনি আমির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নবী [সাঃআঃ] উহুদের যুদ্ধের দিন বলেছেন, ক্ববর খনন কর, ক্ববরকে প্রশস্ত কর, বেশ গভীর করে খনন কর এবং এগুলোকে ভালো করে কর, অর্থাৎ মাটি এবং ধূলিকণা থেকে পরিষ্কার কর। এক-একটি ক্ববরে দু দু, তিন তিন জন করে দাফন করো। আর তাদের মধ্যে যার বেশী করে কুরআন হিফ্জ আছে তাকে ক্ববরে আগে রাখো।
[আহ্মাদ, তিরমিজি, আবু দাউদ, নাসায়ী এবং ঈমাম ইবনি মাজাহ ওয়া আহসিনূ পর্যন্ত বর্ণনা করিয়াছেন।] {১}, {১} সহীহ : আবু দাউদ ৩২১৫, আত তিরমিজি ১৭১৩, নাসায়ী ২০১৫, ইবনি মাজাহ ১৫৬০, মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক্ব ৬৫০১, আহমাদ ১৬২৫৯, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬৯২৯, ইরওয়া ৭৪৩। মৃত ব্যক্তির দাফনের নিয়ম -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১৭০৪. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, উহুদের যুদ্ধের দিন আমার ফুফু আমার পিতার [আবদুল্লাহর] লাশ আমাদের ক্ববরস্থানে দাফন করার জন্য নিয়ে আসলেন। কিন্তু রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর তরফ থেকে একজন আহবানকারী জানালেন, শাহীদদেরকে তাঁদের শাহাদাতের জায়গায় পৌছিয়ে দাও।
[আহ্মাদ, তিরমিজি, আবু দাউদ, নাসায়ী, দারিমী; হাদিসের শব্দগুলো হলো তিরমিজির]। {১}; {১} সহীহ : আবু দাউদ ৩১৬৫, আত তিরমিজি ১৭১৭, ইবনি মাজাহ ১৫১৬, আহমাদ ১৪১৬৯, ইবনি হিব্বান ৩১৮৩, সহীহ আল জামি আস্ সগীর ৩৫০৩। মৃত ব্যক্তির দাফনের নিয়ম -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১৭০৫. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে ক্ববরে নামানোর সময় মাথার দিক দিয়ে নামানো হয়েছে।
[শাফিঈ] {১}, {১} জইফ : মুসনাদ আশ্ শাফিঈ ৫৯৮, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৭০৫৪, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৫১৪। কারণ এর সানাদে উমার ইবনুল আত্বা একজন দুর্বল রাবী। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
১৭০৬. আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] একবার রাতের বেলা মৃতকে রাখার জন্য ক্ববরে নামলেন। তার জন্য চেরাগ জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছিল। তিনি মাইয়্যিতকে ক্বিবলার দিক থেকে ধরলেন [তাকে ক্ববরে রাখলেন] এবং এ দুআ পড়লেন,
رَحِمَكَ اللّهُ إِنْ كُنْتَ لَأَوَّاهًا تَلَّاءً لِلْقُرْانِ
“রহিমাকাল্ল-হু ইন্ কুন্তা লাআও্ওয়া-হান তাল্লা-আন লিল কুরআ-ন”
{অর্থাৎ আল্লাহ তোমার ওপর রহম করুন।
[তুমি আল্লাহর ভয়ে] কাঁদতে, আর কুরআনে কারীম বেশী বেশী পড়তে [এ দুটি কারণে তুমি রহ্মাত ও মাগফিরাতের উপযোগী]], [ তিরমিজি; শারহুস্ সুন্নাহ্য় বলা হয়েছে এ বর্ণনার সনদ দুর্বল]। {১}. {১} জইফ : আত তিরমিজি ১০৫৭, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৫১৪। দুটি কারণে, প্রথমতঃ এর সানাদে রাবী ইয়াহ্ইয়া ইবনি আল ইয়ামান স্মৃতিশক্তিজনিত ত্রুটির কারণে একজন দুর্বল রাবী। দ্বিতীয়তঃ হাজ্জাজ ইবনি আরত্বত একজন মুদ্দালিস রাবী।এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
১৭০৭. আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, নবী [সাঃআঃ] যখন কোন মৃত ব্যক্তিকে ক্ববরে রাখতেন, বলিতেন,
بِسْمِ اللهِ وَبِاللّهِ وعَلى مِلَّةِ رَسُولِ اللّهِ
“বিসমিল্লা-হ, ওয়াবিল্লা-হি ওয়া আলা- মিল্লাতি রসূলিল্লা-হ”।
অন্য এক বর্ণনায় আছে, “ওয়া আলা- সুন্না-তি রসূলিল্লা-হ” [অর্থাৎ আল্লাহর নামে ও আল্লাহর হুকুম মুতাবিক রাসূলুল্লাহর মিল্লাতের উপর ক্ববরে নামাচ্ছি]। অন্য বর্ণনায় মিল্লাতি রসূলিল্লা-হ-এর জায়গায় সুন্নাতি রসূলিল্লা-হ বর্ণিত হয়েছে।
[আহমাদ, তিরমিজি, ইবনি মাজাহ; আবু দাউদ দ্বিতীয়াংশটি] {১},{১} সহীহ : আবু দাউদ ৩২১৩, আত তিরমিজি ১০৪৬, ইবনি মাজাহ ১৫৫০, আহকামুল জানায়েয ১৫২ নং পৃঃ, ইবনি আবী শায়বাহ্ ১১৬৯৬, আহমাদ ৪৮১২, ইবনি হিব্বান ৩১১০, আমালুল ইয়াম ওয়াল লা- ইলা-হা ১০৮৯, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৭০৫৮, ইরওয়া ৩য় খন্ড, হাঃ ৭৪৭, সহীহ আল জামি আস্ সগীর ৮৩২। মৃত ব্যক্তির দাফনের নিয়ম -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১৭০৮. ঈমাম জাফার ইবনি মুহাম্মাদ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি তাহাঁর পিতা হইতে মুরসাল সূত্রে বর্ণনা করিয়াছেন। তিনি বলেন, নবী [সাঃআঃ] নিজের দু হাতের মুষ্টি ভরে মাটি নিয়ে মাইয়্যিতের ক্ববরের উপর তিনবার দিয়েছেন। তিনি তার পুত্র ইব্রাহীমের ক্ববরে পানি ছিটিয়েছেন এবং [চিহ্ন রাখার জন্য] ক্ববরের উপর কংকর দিয়েছেন।
[শারহুস্ সুন্নাহ্; ঈমাম শাফিঈ “পানি ছিটিয়েছেন” থেকে {শেষ পর্যন্ত] বর্ণনা করিয়াছেন] {১; {১} জইফ : মুসনাদ আশ্ শাফিঈ ৬০১, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৫১৫, ইরওয়া ৭৫৫। কারণ এর সানাদে ইব্রাহীম একজন খুবই দুর্বল রাবী। তবে وَأَنَّه رَشَّ… অংশটুকু সহীহ যেমনটি সহীহাতে আলবানী [রাহিমাহুল্লাহ] বলেছেন ৭/৩০৪৫।এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
১৭০৯. জাবির [রাদি.] ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ক্ববরে সিমেন্ট চুন দিয়ে কোন কাজ করিতে, তার উপর কিছু লিখতে অথবা খোদাই করে কিছু করিতে নিষেধ করিয়াছেন।
[তিরমিজি] {১}, {১} সহীহ : আত তিরমিজি ১০৫২, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৫১৭। মৃত ব্যক্তির দাফনের নিয়ম -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১৭১০. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, নবী [সাঃআঃ]-এর ক্ববরের উপর পানি ছিটিয়ে দেয়া হয়েছিল। তাহাঁর ক্ববরে বিলাল ইবনি রাবাহ [রাদি.] পানি ছিটিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি মশক দিয়ে তাহাঁর মাথা থেকে আরম্ভ করে পা পর্যন্ত পানি ছিটিয়ে দেন।
[বায়হাক্বী- দালায়িলুল নিবুওয়াহ্] {১}, {১} মাওযূ : বায়হাক্বী ৬৫৩৪, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬৭৪৩, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৫১৫। শায়খ আলবানী [রাহিমাহুল্লাহ] ইরওয়াতে বলেছেন, এর সানাদে ওয়াক্বিদী একজন মিথ্যার অপবাদপ্রাপ্ত রাবী। এই হাদিসটির তাহকীকঃ জাল হাদিস
১৭১১. মুত্ত্বালিব ইবনি আবী ওয়াদাআহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ.
তিনি বলেন, যখন উসমান ইবনি মায্ঊন [রাদি.]-এর মৃত্যুবরণ করেন, তখন তার লাশ বের করা হয় এবং তা দাফন করা হয়। অতঃপর রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] [ক্ববরের চিহ্ন রাখার জন্য এক ব্যক্তিকে হুকুম দিলেন একটি বড়] পাথর আনার জন্য। লোকটি পাথর উঠিয়ে আনতে পারলেন না। রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তা উঠিয়ে আনার জন্য উঠে দাঁড়ালেন এবং নিজের দু হাতের আস্তিন গুটিয়ে নিলেন। হাদিসের রাবী বলেন, যে ব্যক্তি আমার কাছে রসূলের এ হাদিস শুনিয়েছেন, তিনি বলিতেন, যখন তিনি হাতা গুটাচ্ছিলেন- মনে হচ্ছে এখনো আমি রসূলের পবিত্র বাহুদ্বয়ের শুভ্রতার চমক অনুভব করছি। রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] সে পাথরটি উঠিয়ে এনে উসমানের ক্ববরের মাথার দিকে রেখে দিলেন এবং বললেন, আমি এ পাথর দেখে আমার ভাইয়ের ক্ববর চিনতে পারব। এখন আমার পরিবারের যে মারা যাবে তাকে এর পাশে দাফন করব।“
[আবু দাউদ] {১}, {১} হাসান : আবু দাউদ ৩২০৬, আহকামুল জানায়িয পৃঃ ৬৫। এই হাদিসটির তাহকীকঃ হাসান হাদিস
১৭১২. ক্বাসিম ইবনি মুহাম্মাদ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি একবার উম্মুল মুমিনীন আয়িশাহ্ [রাদি.]-এর কাছে গেলাম। আরয করলাম, হে আমার মা! যিয়ারত করার জন্য আমাকে নবী [সাঃআঃ] ও তাহাঁর দু সাথী [আবু বাক্র ও উমারের] ক্ববর খুলে দিন। তিনি তিনটি ক্ববরই খুলে দিলেন। আমি দেখলাম, তিনটি ক্ববরই না খুব উঁচু না মাটির সাথে একেবারে সমতল। বরং মাটি হইতে এক বিঘত উঁচু ছিল। আর এ ক্ববরগুলোর উপর [মাদীনার পাশের] আরসা ময়দানের লাল কংকর বিছানো ছিল।
[আবু দাউদ] {১}, {১} জইফ : আবু দাউদ ৩২২৩, মুসতাদরাক লিল হাকিম ১৩৬৮, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬৭৫৮। কারণ এর সানাদে রাবী আমর ইবনি উসমান ইবনি হানী মাজহূনুল রানী যেমনটি হাফিয ইবনি হাজার [রাহিমাহুল্লাহ] বলেছেন। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
১৭১৩. বারা ইবনি আযিব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাথে আনসারদের এক ব্যক্তির জানাযার জন্য বের হলাম। আমরা ক্ববরস্থানে পৌঁছে দেখলাম [এখনো ক্ববর তৈরি না হওয়ার কারণে] দাফনের কাজ শুরু হয়নি। তখন নবী [সাঃআঃ] ক্বিবলার দিকে মুখ করে বসে গেলেন, আমরাও তাহাঁর সাথে বসে গেলাম।
[আবু দাউদ, নাসায়ী, ইবনি মাজাহ; ইবনি মাজাহ হাদিসের শেষে বাড়িয়েছেন, অর্থাৎ মনে হচ্ছিল আমাদের মাথার উপর পাখি বসেছে ।] {১};{১} সহীহ : আবু দাউদ ৩২১২, নাসায়ী ২০০১, ইবনি আবী শায়বাহ্ ১১৫২৩, সহীহ আত তারগীব ৩৫৫৮, মুসতাদরাক লিল হাকিম ৪১৪। মৃত ব্যক্তির দাফনের নিয়ম -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১৭১৪. আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ মৃত ব্যক্তির হাড় ভাঙ্গা, জীবিতকালে তার হাড় ভাঙ্গারই মতো।
[মালিক, আবু দাউদ, ইবনি মাজাহ] {১}. {১} সহীহ : আবু দাউদ ৩২০৭, ইবনি মাজাহ ১৬১৬, সহীহ আত তারগীব ৩৫৬৭, সহীহ আল জামি আস্ সগীর ৪৪৭৮, ইরওয়া ৩/৭৬৩, ইবনি হিব্বান ৩১৬৭। মৃত ব্যক্তির দাফনের নিয়ম -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
অদ্ধায়ঃ ৬. তৃতীয় অনুচ্ছেদ
১৭১৫. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ.
তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর কন্যা [উম্মু কুলসুমের] দাফনের সময় উপস্থিত ছিলাম। আর যখন রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ক্ববরের পাশে বসেছিলেন। এমতাবস্থায় আমি দেখলাম, তাহাঁর দুচোখ বেয়ে পানি পড়ছে। রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেন, তোমাদের মধ্যে কি কেউ এমন আছে, যে গত রাতে স্ত্রীর সাথে মিলিত হয়নি? আবু ত্বলহাহ্ [রাদি.] বললেন, হ্যাঁ আছি, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমি। তিনি বললেন, [মাইয়্যিতকে ক্ববরে রাখার জন্য] তুমিই ক্ববরে নামো। তখন তিনি ক্ববরে নামলেন।
[বোখারী] {১}. {১} সহীহ : বোখারী ১৩৪২। মৃত ব্যক্তির দাফনের নিয়ম -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১৭১৬. আমর ইবনুল আস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
আম্র ইবনুল আস [রাদি.] মৃত্যুর সময় তাহাঁর ছেলে আবদুল্লাহকে ওয়াসিয়্যাত করেছিলেন যে, যখন আমি মারা যাব তখন আমার জানাযার সাথে যেন মাতম করার জন্য কোন রমণী না থাকে। আর না থাকে কোন আগুন। আমাকে দাফন করার সময় আমার উপর আস্তে আস্তে মাটি ঢালবে। দাফনের পরে দুআ ও মাগফিরাতের জন্য এতটা সময় [আমার ক্ববরের কাছে] অপেক্ষা করিবে, যতটা সময় একটি উট যবেহ করে তার গোশ্ত বণ্টন করিতে লাগে। তাহলে আমি তোমাদের সাথে একটু পরিচিত থাকবো এবং [নির্ভয়ে] জেনে নেব, আমি আমার রবের মালায়িকার [ফেরেশতাগণের] নিকট কি জবাব দিবো।
[মুসলিম] {১}, {১} সহীহ : মুসলিম ১২১। মৃত ব্যক্তির দাফনের নিয়ম -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১৭১৭. আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি নবী [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনিয়াছি, তোমাদের কেউ মারা গেলে তাকে আটকিয়ে রেখ না। বরং তাকে তার ক্ববরে তাড়াতাড়ি পৌঁছে দাও। তার [ক্ববরে দাঁড়িয়ে] মাথার কাছে সূরাহ্ আল বাক্বারাহ্-র প্রথমাংশ এবং তার দুই পায়ের কাছে সূরাহ্ আল বাক্বারাহ্-র শেষাংশের আয়াতগুলো পড়বে।
[বায়হাক্বী; এ বর্ণনাটিকে শুআবুল ঈমানে উদ্ধৃত করিয়াছেন এবং বলেছেন, এটি মাওকুফ হাদিস] {১}. 1] খুবই দুর্বল : শুআবুল ঈমান ৮৮৫৪, সিলসিলাহ্ আয্ যঈফাহ্ ৪১৪০। কারণ এর সানাদে ইয়াহ্ইয়া ইবনি আবদুল্লাহ আল বাবিলতী এবং আইয়ূব ইবনি নাহীক উভয়েই দুর্বল রাবী। এই হাদিসটির তাহকীকঃ খুবই দুর্বল
১৭১৮. ইবনি আবু মুলায়কাহ্ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন হুবশী [মক্কার নিকটবর্তী একটি জায়গার নাম] নামক স্থানে আবদুর রহ্মান ইবনি আবু বাক্রের মৃত্যু হলে তাহাঁর লাশ মক্কায় নিয়ে এসে দাফন করা হয়। উম্মুল মুমিনীন আয়িশাহ্ [রাদি.] [মক্কায় হজ্জ করিতে] এলে তিনি আবদুর রহ্মানের [ভাইয়ের] ক্ববরের কাছে এলেন। ওখানে তিনি [কবি তামীম ইবনি নুওয়াইরার কবিতার এ দুটি পংক্তি আবৃত্তি করেন যাতে কবি তার ভাই মালিকের জন্য শোক প্রকাশ করেছিলেন]-
وَكُنَّا كَنَدْمَانَيْ جَذِيمَةَ حِقْبَةً مِنَ الدَّهْرِ حَتّى قِيلَ لَنْ يَّتَصَدَّعَا
فَلَمَّا تَفَرَّقْنَا كَأَنِّي وَمَالِكًا لِطُولِ اجْتِمَاعٍ لَمْ نَبِتْ لَيْلَةً مَعَا
ওয়া কুন্না- কানাদ্ মা-নী জাযীমাতা হিক্ববাতান মিনাদ্ দাহরি হাত্তা-ক্বীলা লাই ইয়াতা সাদ্দাআ
ফালাম্মা- তাফার্রাক্বনা- কাআন্নী ওয়ামা-লিকান লিতূলিজ্ তিমা-ইন লাম নাবিত লাইলাতাম্ মাআ।
অর্থাৎ আমরা দু ভাই বোন, জাযিমার সে দু বন্ধুর মতো অনেক দিন পর্যন্ত একত্রে কালযাপন করছিলাম। তাদের এ অবস্থা দেখে লোকেরা বলাবলি করিতে লাগল, এরা তো কখনো [একে অপর থেকে] পৃথক হবে না। কিন্তু যখন আমরা দুজন অর্থাৎ আমি ও তুমি একে অপর থেকে বিচ্ছিন্ন হলাম, তখন দীর্ঘ সময় পর্যন্ত এক সাথে থাকার পরও মনে হলো, আমরা একটি রাতের জন্যও একত্রে এক জায়গায় ছিলাম না।
এরপর আয়িশাহ্ [রাদি.] বললেন, আল্লাহর কসম! আমি যদি তোমার ইন্তিকালের সময় তোমার কাছে থাকতাম, তাহলে আমি তোমাকে সেখানেই দাফন করতাম, যেখানে তুমি মৃত্যুবরণ করেছিলে। আর আমি যদি তোমার মৃত্যুর সময় তোমার কাছে থাকতাম তাহলে আজ তোমার ক্ববরের পাশে আমি আসতাম না।
[তিরমিজি]{১},{১} জইফ : আত তিরমিজি ১০৫৫, ইবনি আবী শায়বাহ্ ১১৮১১। আলবানী [রাহিমাহুল্লাহ] ইরওয়াতে বলেছেন, হাদিসের সকল রাবীগণ বিশ্বস্ত। তবে ইবনি জুরায়জ একজন মুদাল্লিস রাবী। যে عنعن সূত্রে বর্ণনা করেন।এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
১৭১৯. আবু রাফি [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] সাদ এর লাশকে মাথার দিক থেকে ধরে কবরে নামিয়েছেন। তারপর তিনি তাহাঁর কবরে পানি ছিটিয়ে দিয়েছেন।
[ইবনি মাজাহ] {১}{১} জইফ : ইবনি মাজাহ ১৫৫১।। কারণ এর সানাদে মানদিল ইবনি আলী [রাদি.]একজন দুর্বল রাবী। আর মুহাম্মাদ ইবনি উবায়দুল্লাহ ইবনি আবু রাফি একজন মাতরূক রাবী।এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
১৭২০. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] একবার একটি জানাযার নামাজ আদায় করালেন। তারপর তিনি ক্ববরের কাছে এলেন এবং ক্ববরে তার মাথা বরাবর তিন মুষ্টি মাটি রাখলেন
। [ইবনি মাজাহ] {১}{১} সহীহ : ইবনি মাজাহ ১৫৬৫, ইরওয়া ৩/৭৫০।মৃত ব্যক্তির দাফনের নিয়ম -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১৭২১. আমর ইবনি হাযম [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, নবী [সাঃআঃ] একদিন আমাকে ক্ববরে হেলান দিয়ে বসে থাকতে দেখে বললেন, তুমি এ ক্ববরবাসীকে কষ্ট দিও না। অথবা বললেন, তুমি একে কষ্ট দিওনা।
[আহমাদ] {১},{১} হাসান : আহমাদ ২৪০০৯/৩৯, সহীহ আত তারগীব ৩৫৬৬।এই হাদিসটির তাহকীকঃ হাসান হাদিস
Leave a Reply