মোজা, গণক, অশুভ লক্ষণ ও সাধ্যাতীত কর্ম করা নিষেধ
স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে সাধ্যাতীত কর্ম করা নিষেধ >> রিয়াদুস সালেহীন হাদিস শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন >> নিম্নে রিয়াদুস সালেহীন হাদিস শরীফ এর কয়েকটি পরিচ্ছেদের হাদিস পড়ুন
মোজা, গণক, অশুভ লক্ষণ ও সাধ্যাতীত কর্ম করা নিষেধ
পরিচ্ছেদ – ২৯৮ঃ ডান হাত দিয়ে ইস্তিঞ্জা করা এবং বিনা কারণে ডান হাত দিয়ে গুপ্তাঙ্গ ক্টপর্শ করা মাকরূহ
পরিচ্ছেদ – ২৯৯ঃ বিনা ওজরে এক পায়ে জুতা বা মোজা পরে হাঁটা ও দাঁড়িয়ে জুতা বা মোজা পরা অপছন্দনীয়
পরিচ্ছেদ – ৩০০ঃ ঘুমন্ত, [অনুপস্থিত] ইত্যাদি অবস্থায় ঘরের মধ্যে জক্ষলন্ত আগুন বা প্রদীপ না নিভিয়ে ছেড়ে রাখা নিষেধ
পরিচ্ছেদ – ৩০১ঃ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে সাধ্যাতীত কর্ম করা নিষেধ
পরিচ্ছেদ – ৩০২ঃ মৃত্যের জন্য মাতম করে কাঁদা, গাল চাপড়ানো, বুকের কাপড় ছিঁড়া, চুল ছেঁড়া, মাথা নেড়া করা ও সর্বনাশ ও ধক্ষংস ডাকা নিষিদ্ধ
পরিচ্ছেদ – ৩০৩ঃ গণক, জ্যোতিষী ইত্যাদি ভবিষ্যদ্বক্তার নিকট গমন নিষেধ
পরিচ্ছেদ – ৩০৪ঃ অশুভ লক্ষণ মানা নিষেধ
পরিচ্ছেদ – ২৯৮: ডান হাত দিয়ে ইস্তিঞ্জা করা এবং বিনা কারণে ডান হাত দিয়ে গুপ্তাঙ্গ স্পর্শ করা মাকরূহ
১৬৫৭. আবু কাতাদা রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘যখন তোমাদের কেউ পেশাব করিবে তখন সে যেন তার পুরুষাঙ্গ ডান হাত দিয়ে না ধরে, ডান হাত দ্বারা ইস্তিঞ্জা না করে। আর (পান করার সময়) পানির পাত্রের মধ্যে যেন নিঃশ্বাস না ফেলে।’’
(সহীহুল বুখারী শরীফ ১৫৩, ১৫৪, ৫৬৫৩০, মুসলিম ২৬৭, তিরমিজী ১৫, ১৮৮৯, নাসাঈ ২৪, ২৫, ৪৭, আবু দাঊদ ৩১, ইবনু মাজাহ ৩১০, আহমাদ ১৮৯২৭, ২২০১৬, ২২০৫৯, ২২১২৮, ২২১৪১, দারেমী ৬৭৩) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
পরিচ্ছেদ – ২৯৯: বিনা ওজরে এক পায়ে জুতা বা মোজা পরে হাঁটা ও দাঁড়িয়ে জুতা বা মোজা পরা অপছন্দনীয়
১৬৫৮. আবু হুরাইরা রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘তোমাদের কেউ যেন এক পায়ে জুতা পরে না হাঁটে। হয় উভয় জুতা পরবে, নচেৎ উভয় জুতা খুলে রাখবে।’’
অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘‘নচেৎ উভয় পা খালি রাখবে।’’
(সহীহুল বুখারী শরীফ ৫৮৫৫, মুসলিম ২০৯৭, তিরমিজী ১৭৭৪, আবু দাঊদ ৪১৩৬, ইবনু মাজাহ ৩৬১৭, আহমাদ ৭৩০২, ৯২৭৩, ৯৪২২, ৯৮৩২, ৯৮৬৪, ১০৪৫৭, মুওয়াত্তা মালিক ১৭০১) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৬৫৯. উক্ত রাবী রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ সাঃআঃ-কে বলতে শুনেছি যে, ‘‘যখন তোমাদের কারো জুতার ফিতা ছিঁড়ে যাবে, তখন সে যেন তা না সারা পর্যন্ত অন্য জুতাটি পরে না হাঁটে।’’
(মুসলিম ২০৯৮, নাসাঈ ৫৩৬৯, ৫৩৭০, আবু দাঊদ ৪১৩৬, আহমাদ ৭৩০০, ৭৩৯৮, ৯১৯৯, ৯৪২২, ৯৮৩২, ৯৮৬৪, ১০৪৫৭, ২৭৩৬৫) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৬৬০. জাবের রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ সাঃআঃ মানুষকে দাঁড়িয়ে জুতা পরতে নিষেধ করিয়াছেন।
হাদীসটির মানঃ হাসান হাদীস
পরিচ্ছেদ – ৩০০: (অনুপস্থিত) ইত্যাদি অবস্থায় ঘরের মধ্যে জ্বলন্ত আগুন বা প্রদীপ না নিভিয়ে ছেড়ে রাখা নিষেধ
১৬৬১. ইবনে উমার রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
নবী সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘যখন তোমরা ঘুমবে, তখন তোমাদের ঘরগুলোতে আগুন জ্বালিয়ে রেখো না।’’
(সহীহুল বুখারী শরীফ ৬২৯৩, মুসলিম ২০১৫, তিরমিজী ১৮১৩, আবু দাঊদ ৫২৪৬, ইবনু মাজাহ ৩৭৬৯, আহমাদ ৪৫০১, ৪৫৩২, ৫০০৮, ৫৩৭৩) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৬৬২. আবু মুসা আশআরী রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একবার রাতের বেলায় মদিনার এক ঘরে আগুন লেগে ঘরের লোকজনসহ পুড়ে গেল। এদের অবস্থা নবী সাঃআঃ-এর নিকট জানানো হলে তিনি বললেন, ‘‘এ আগুন নিঃসন্দেহে তোমাদের জন্য চরম শত্রু। সুতরাং যখন তোমরা ঘুমাতে যাবে, তখন (তোমাদের নিরাপত্তার খাতিরে) তা নিভিয়ে দাও।’’
(সহীহুল বুখারী শরীফ ৬২৯৪, মুসলিম ২০১৬, ইবনু মাজাহ ৩৭৭০, আহমাদ ১৯০৭৬) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৬৬৩. জাবের রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘(রাত্রে ঘুমাবার আগে) তোমরা পাত্র ঢেকে দাও, পানির মশকের মুখ বেঁধে দাও, দরজাসমূহ বন্ধ ক’রে দাও, প্রদীপ নিভিয়ে দাও। কেননা, শয়তান মুখ বাঁধা মশক খুলে না, বন্ধ দরজাও খুলে না এবং পাত্রের ঢাকনাও উন্মুক্ত করে না। সুতরাং তোমাদের কেউ যদি পাত্রের মুখে ‘বিসমিল্লাহ’ বলে আড় ক’রে রাখার জন্য কেবল একটি কাষ্ঠখণ্ড ছাড়া অন্য কিছু না পায়, তাহলে সে যেন তাই করে। কারণ ইঁদুর ঘরের লোকজনসহ ঘর পুড়িয়ে ছারখার ক’রে দেয়।’’
(সহীহুল বুখারী শরীফ ৩২৮০, মুসলিম ২০১২, ২০১৩, ২০১৪, তিরমিজী ১৮১২, ২৮৫৭, আবু দাঊদ ৩৭৩১, ৩৭৩৩, ইবনু মাজাহ ৩৪১০, আহমাদ ১৩৮১৬, ১৩৮৭১, ১৪০২৫, ১৪৫৯৭, ১৪৭১৭, ১৪৭৪৭, মুওয়াত্তা মালিক ১৭২৭) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
পরিচ্ছেদ – ৩০১: স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে সাধ্যাতীত কর্ম করা নিষেধ
[লৌকিকতার বশবর্তী হয়ে অথবা সুনাম ও প্রশংসার লোভে সাধ্যাতীত বা কষ্টসাধ্য] এমন কাজ করা বা কথা বলা নিষিদ্ধ, যাতে কোনো মঙ্গল নেই।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ قُلۡ مَآ أَسَۡٔلُكُمۡ عَلَيۡهِ مِنۡ أَجۡرٖ وَمَآ أَنَا۠ مِنَ ٱلۡمُتَكَلِّفِينَ ٨٦ ﴾ [ص : ٨٦]
অর্থাৎ বল, আমি উপদেশের জন্য তোমাদের নিকট কোন প্রতিদান চাই না এবং যারা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে সাধ্যাতীত কর্ম করে আমি তাহাদের অন্তর্ভুক্ত নই। [সূরা স্বাদ ৮৬ আয়াত]
১৬৬৪. উমার রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, ‘স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে সাধ্যাতীত কর্ম করতে আমাদেরকে নিষেধ করা হয়েছে।’
(সহীহুল বুখারী শরীফ ৭২৯৩) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৬৬৫. মাসরূক্ব (রহঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদা আমরা আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রাঃআঃ এর নিকট প্রবেশ করলাম। তিনি বললেন ‘হে লোক সকল! যে ব্যক্তির কিছু জানা থাকে, সে যেন তা বলে। আর যার জানা নেই, সে যেন বলে, ‘আল্লাহই ভালো জানেন।’ কারণ তোমার অজানা বিষয়ে ‘আল্লাহই ভালো জানেন’ বলাও এক প্রকার ইলম (জ্ঞান)। মহান আল্লাহ তাঁর নবী সাঃআঃ-কে সম্বোধন ক’রে বলেছেন, ‘‘বল, আমি উপদেশের জন্য তোমাদের নিকট কোন প্রতিদান চাই না এবং যারা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে সাধ্যাতীত কর্ম করে, আমি তাদের অন্তর্ভুক্ত নই।’’
[সূরা স্বাদ ৮৬ আয়াত, বুখারী] (সহীহুল বুখারী শরীফ ১০০৭, ১০২০, ৪৬৯৩, ৪৭৬৮, ৪৭৭৪, ৪৮০৯, ৪৮২০, ৪৮২১-৪৮২৫, মুসলিম ২৭৯৮, তিরমিজী ৩২৫৪, আহমাদ ৩৬০২, ৪৯৩, ৪১৯৪)
হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
পরিচ্ছেদ – ৩০২:মৃত্যের জন্য মাতম করে কাঁদা, গাল চাপড়ানো, বুকের কাপড় ছিঁড়া, চুল ছেঁড়া, মাথা নেড়া করা ও সর্বনাশ ও ধ্বংস ডাকা নিষিদ্ধ
১৬৬৬. উমার ইবনে খাত্তাব রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘মৃত ব্যক্তিকে তার কবরের মধ্যে তার জন্য মাতম ক’রে কান্না করার দরুন শাস্তি দেওয়া হয়।’’ (বুখারী ও মুসলিম) অন্য এক বর্ণনায় আছে, যতক্ষণ তার জন্য মাতম ক’রে কান্না করা হয়, (ততক্ষণ মৃত-ব্যক্তির আযাব হয়।)
(সহীহুল বুখারী শরীফ ১২৮৮, ১২৯০, ১২৯২, মুসলিম ৯২৭, তিরমিজী ১০০২, নাসাঈ ১৮৫৩, ১৮৫৮, ইবনু মাজাহ ১৫৯৩, আহমাদ ২৯০৩৮৮, ৪৮৫০, ৪৯৩৯, ৫২৪০, ৬১৪৭) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৬৬৭. ইবনে মাসঊদ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘সে আমাদের দলভুক্ত নয়, যে (শোকের সময়) গালে আঘাত করে, বুকের কাপড় ছিঁড়ে এবং জাহেলিয়াতের ডাকের ন্যায় ডাক ছাড়ে।’’
(সহীহুল বুখারী শরীফ ১২৯৪, ১২৯৭, ১২৯৮, ৩৫১৯, মুসলিম ১০৩, তিরমিজী ৯৯৯, নাসাঈ ১৮৬২, ১৮৬৪, ১৫৮৪, আহমাদ ৩৬৫০, ৪১০০, ৪১০৩, ৪৩৪৮, ৪৪১৬) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৬৬৮. আবু বুরদাহ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, (তাঁর পিতা) আবু মুসা আশআরী রাঃআঃ যন্ত্রণায় কাতর হয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়েন। আর (ঐ সময়) তাঁর মাথা তাঁর এক স্ত্রীর কোলে রাখা ছিল এবং সে চিৎকার ক’রে কান্না করতে লাগল। তিনি (অজ্ঞান থাকার কারণে) তাকে বাধা দিতে পারলেন না। সুতরাং যখন তিনি চেতনা ফিরে পেলেন, তখন বলে উঠলেন, ‘আমি সেই মহিলা থেকে সম্পর্কমুক্ত, যে মহিলা থেকে আল্লাহর রসূল সাঃআঃ সম্পর্কমুক্ত হয়েছেন। নিঃসন্দেহে আল্লাহর রসূল সাঃআঃ সেই মহিলা থেকে সম্পর্কমুক্ত হয়েছেন, যে শোকে উচ্চ স্বরে মাতম ক’রে কান্না করে, মাথা মুণ্ডন করে এবং কাপড় ছিঁড়ে ফেলে।’
(মুসলিম ১০৪, নাসাঈ ১৮৬১, ১৮৬৩, ১৮৬৫-১৮৬৭, আবু দাঊদ ৩১৩০, ইবনু মাজাহ ১৫৮৬, আহমাদ ১৯০৪১, ১৯০৫৩, ১৯১১৯, ১৯১২৯, ১৯১৯১, ১৯২৩০) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৬৬৯ . মুগীরাহ ইবনে শু‘বাহ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাঃআঃ-কে আমি বলতে শুনেছি যে, ‘‘যার জন্য মাতম ক’রে কান্না করা হয়, তাকে কিয়ামতের দিনে তার জন্য মাতম করার দরুন শাস্তি দেওয়া হবে।’’
(সহীহুল বুখারী শরীফ ১২৯১, মুসলিম ৪, ৯৩৩, তিরমিজী ১০০০, আহমাদ ১৭৬৭৪, ১৭৭১৯, ১৭৭৩৭, ১৭৭৭৩) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৬৭০ উম্মে আত্বিআহ নুসাইবাহ রাদিয়াল্লাহু আনহা হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, ‘বায়আতের সময় নবী সাঃআঃ আমাদের কাছে এই অঙ্গীকার গ্রহণ করিয়াছেন যে, আমরা মৃত ব্যক্তির জন্য মাতম করব না।’
(সহীহুল বুখারী শরীফ ১৩০৬, ৪৮৯২, ৭২১৫, মুসলিম ৯৩৬, নাসাঈ ৪১৭৯, ৪১৮০, আবু দাঊদ ৩১২৭, আহমাদ ২০২৬৭, ২৬৭৫৩, ২৬৭৬০) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৬৭১. নু’মান ইবন বাশীর রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহাহ রাঃআঃ (একবার) অজ্ঞান হয়ে পড়লে তাঁর বোন কান্না করতে লাগলেন এবং বলতে লাগলেন, ‘ও (আমার) পাহাড় গো! ও আমার এই গো! ও আমার ওই গো!’ এভাবে তাঁর একাধিক গুণ বর্ণনা করতে লাগলেন। সুতরাং যখন তিনি জ্ঞান ফিরে পেলেন, তখন বললেন, ‘তুমি যা কিছু বলেছ, সে সম্পর্কে আমাকে প্রশ্ন করা হচ্ছিল যে, তুমি ঐরূপ ছিলে নাকি?’
(সহীহুল বুখারী শরীফ ৪২৬৮) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৬৭২. আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, সা’দ ইবনে উবাদাহ রাঃআঃ একবার পীড়িত হলে আব্দুর রহমান ইবনে আওফ, সা’দ ইবনে আবী অক্কাস এবং আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদদের সাথে রসুলুল্লাহ সাঃআঃ তাঁর নিকট কুশল জিজ্ঞাসার জন্য গেলেন। যখন তিনি তাঁর নিকট উপস্থিত হলেন, তখন তাঁকে অজ্ঞান অবস্থায় পেলেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, ‘‘ও কি মারা গেছে?’’ লোকেরা জবাব দিল, ‘হে আল্লাহর রসূল! না (মারা যায়নি)।’ তখন রসুলুল্লাহ সাঃআঃ কেঁদে ফেললেন। সুতরাং লোকেরা যখন রসুলুল্লাহ সাঃআঃ-কে কান্না করতে দেখল, তখন তারাও কাঁদতে লাগল। তিনি বললেন, ‘‘তোমরা কি শুনতে পাও না? নিঃসন্দেহে আল্লাহ চোখের অশ্রু ঝরাবার জন্য শাস্তি দেন না এবং আন্তরিক দুঃখ প্রকাশের জন্য ও শাস্তি দেন না। কিন্তু তিনি তো এটার কারণে শাস্তি দেন অথবা দয়া করেন।’’ এই বলে তিনি নিজ জিভের প্রতি ইঙ্গিত করলেন।
(সহীহুল বুখারী শরীফ ১৩০৪, মুসলিম ৯২৪) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৬৭৩. আবু মালেক আশআরী রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘মাতম-কারিণী মহিলা যদি মরণের পূর্বে তাওবাহ না করে, তাহলে আল-কাতরার পায়জামা এবং পাঁচড়ার জামা পরিহিতা অবস্থায় তাকে কিয়ামতের দিনে দাঁড় করানো হবে।’’
(মুসলিম ৯৩৪, ইবনু মাজাহ ১৫৮১, আহমাদ ২২৩৮৬, ২২৩৯৭, ২২৪০৫) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৬৭৪. উসাইদ ইবনে আবু উসাইদ তাবেয়ী হইতে বর্ণিতঃ
এমন এক মহিলা থেকে বর্ণনা করেন, যিনি নবী সাঃআঃ-এর নিকট বায়আত-কারিণী মহিলাদের একজন ছিলেন। তিনি বলেন, ‘আল্লাহর রসূল সাঃআঃ যে সব সৎকর্ম করতে ও তাতে তাঁর অবাধ্যতা না করতে আমাদের কাছে অঙ্গীকার নিয়েছিলেন, সে সবের মধ্যে এটিও ছিল যে, (শোকাহত হয়ে) আমরা চেহারা খামচাব না, ধ্বংস ও সর্বনাশ কামনা করব না, বুকের কাপড় ছিঁড়ব না এবং মাথার চুল আলুথালু করব না।’
[আবু দাঊদ হাসান সূত্রে] (আবু দাঊদ ৩১৩১ ) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৬৭৫.আবু মুসা আশ‘আরী রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘যখনই কোনো মৃত্যুগামী ব্যক্তি মৃত্যু বরণ করে। আর তার পাশে দাঁড়িয়ে রোদন-কারিণী রোদন করে এবং বলে, ‘ও আমার পাহাড় গো! ও আমার সর্দার গো!’ অথবা অনুরূপ আরও কিছু বলে, তখনই সেই মৃতের জন্য দু’জন ফিরিশতা নিযুক্ত করা হয়, যারা তার বুকে ঘুষি মেরে বলতে থাকেন, ‘তুই কি ঐ রকম ছিলি নাকি?’
(তিরমিজী ১০০৩, ইবনু মাজাহ ১৫৯৪). হাদীসটির মানঃ হাসান হাদীস
১৬৭৬. আবু হুরাইরা রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘মানুষের মধ্যে দুটো আচরণ এমন পাওয়া যায়, যা তাদের ক্ষেত্রে কুফরীমূলক কর্ম; বংশে খোঁটা দেওয়া ও মৃতের জন্য মাতম ক’রে কান্না করা।’’
(মুসলিম ৬৭, তিরমিজী ১০০১, আহমাদ ৭৮৪৮, ৮৬৮৮, ৯১০১, ৯২৯১, ৯৩৯৭, ৯৫৬২, ১০০৫৭, ১০৪২৮, ১০৪৯০) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
পরিচ্ছেদ – ৩০৩: গণক, জ্যোতিষী ইত্যাদি ভবিষ্যদ্বক্তার নিকট গমন নিষেধ
১৬৭৭. আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, কিছু লোক রসুলুল্লাহ সাঃআঃ-কে গণকদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, ‘‘ওরা অপদার্থ।’’ (অর্থাৎ ওদের কথার কোন মূল্য নেই)। তারা নিবেদন করল, ‘হে আল্লাহর রসূল! ওরা তো কখনো কখনো আমাদেরকে কোন জিনিস সম্পর্কে বলে, আর তা সত্য ঘটে যায়।’ রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বললেন, ‘‘এই সত্য কথাটি জ্বিন (ফেরেশতার নিকট থেকে) ছোঁ মেরে নিয়ে তার ভক্তের কানে পৌঁছে দেয়। তারপর সে ঐ (একটি সত্য) কথার সাথে একশ’টি মিথ্যা মিশিয়ে দেয়।’’
(সহীহুল বুখারী শরীফ ৩২১০, ৫৭৬২, ৬২১৩, ৭৫৬১, মুসলিম ২২২৮, আহমাদ ২৪০৪৯) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৬৭৮. স্বাফিয়্যাহ বিন্তে আবু উবাইদ নবী সাঃআঃ-এর কোন স্ত্রী (হাফসাহ রাদিয়াল্লাহু আনহা) হইতে বর্ণিতঃ
নবী সাঃআঃ বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি গণকের নিকট এসে কোন (গায়বী) বিষয়ে প্রশ্ন করে, তার চল্লিশ দিনের নামায কবুল করা হয় না।’
(মুসলিম ২২৩০, আহমাদ ১৬২০২, ২২৭১১) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৬৭৯. কাবীসাহ্ ইবনুল মুখারিক্ব রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাঃআঃ কে আমি বলতে শুনেছিঃ ‘ইয়াফাহ’ অর্থাৎ রেখা টেনে, ‘তিয়ারাহ’ অর্থাৎ কোন কিছু দর্শন করে এবং ‘তারক’ অর্থাৎ পাখি দিয়ে মঙ্গল-অমঙ্গল নির্ণয় আল্লাহর সাথে বিদ্রোহিতামূলক কাজ।
(আমি [আলবানী] বলছিঃ তিনি এরূপই বলেছেন অথচ এর সনদে হাইয়্যান ইবনু আলা রয়েছেন তিনি মাজহূল। দেখুন ‘‘গায়াতুল মারাম’’ ২৯৯।) হাদীসটির মানঃ দুর্বল হাদীস
১৬৮০. ইবনে আব্বাস রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি জ্যোতিষ বিদ্যার কিছু অংশ শিক্ষা করল, সে আসলে যাদু বিদ্যার একটি অংশ শিক্ষা করল। বিধায় জ্যোতিষ বিদ্যা যত বেশী পরিমাণে শিক্ষা করিবে, অত বেশী পরিমাণে তার যাদু বিদ্যা বেড়ে যাবে।’’
[আবু দাঊদ বিশুদ্ধ সূত্রে] (আবু দাঊদ ৩৯০৫, ইবনু মাজাহ ৩৭২৬, আহমাদ ২০০১, ২৮৩৬) হাদীসটির মানঃ হাসান হাদীস
১৬৮১.মুআবিয়াহ ইবনে হাকাম রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি নিবেদন করলাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমি জাহেলী যুগের অত্যন্ত নিকটবর্তী (অর্থাৎ আমি অল্পদিন হল অন্ধ-যুগ থেকে নিষ্কৃতি পেয়েছি) এবং বর্তমানে আল্লাহ আমাকে ইসলামে দীক্ষিত করিয়াছেন। আমাদের কিছু লোক গণকদের নিকট (ভাগ্য-ভবিষ্যৎ জানতে) যায়।’ তিনি বললেন, ‘‘তুমি তাদের কাছে যেও না।’’ আমি বললাম, ‘আমাদের কিছু লোক অশুভ লক্ষণ মেনে চলে।’ তিনি বললেন, ‘‘এ এমন জিনিস, যা তারা নিজেদের অন্তরে অনুভব করে। সুতরাং এ (সব ধারণা) যেন তাদেরকে (বাঞ্চিত কর্মে) বাধা না দেয়।’’ আমি নিবেদন করলাম, ‘আমাদের মধ্যে কিছু লোক দাগ টেনে শুভাশুভ নিরূপণ করে।’ তিনি বললেন, ‘‘(প্রাচীনযুগে) এক পয়গম্বর দাগ টানতেন। সুতরাং যার দাগ টানার পদ্ধতি উক্ত পয়গম্বরের পদ্ধতি অনুসারে হবে, তা সঠিক বলে বিবেচিত হবে (নচেৎ না)।’’
(মুসলিম ৫৩৭, নাসাঈ ১২১৮, আবু দাঊদ ৯৩০, ৯৩১, ৩২৮২, ৩৯০৯, আহমাদ ২৩২৫০, ২৩২৫৬, দারেমী ১৫০২) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৬৮২. আবু মাসঊদ বাদরী রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ সাঃআঃ কুকুরের মূল্য, ব্যভিচারের বিনিময় এবং গণকের পারিতোষিক গ্রহণ করতে নিষেধ করিয়াছেন।
(সহীহুল বুখারী শরীফ ২২৩৭, ২২৮২, ৫৩৪৬, ৫৭৬১) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
পরিচ্ছেদ – ৩০৪: অশুভ লক্ষণ মানা নিষেধ
১৬৮৩. আনাস রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘রোগের সংক্রমণ ও অশুভ লক্ষণ বলতে কিছুই নেই। শুভ লক্ষণ মানা আমার নিকট পছন্দনীয়। আর তা হল, উত্তম বাক্য।’’
(সহীহুল বুখারী শরীফ ৫৭৫৬, ৫৭৭৬, মুসলিম ২২২৪, তিরমিজী ১৬১৫, আবু দাঊদ ৩৯১৬, ইবনু মাজাহ ৩৫৩৭, আহমাদ ১১৭৬৯, ১১৯১৪, ১২১৫৪, ১২৩৬৭, ১২৪১১, ১৩২২১, ১৩৫০৮, ১৩৫৩৭) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৬৮৪. ইবনে উমার রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘ছোঁয়াচে ও অশুভ বলে কিছু নেই। অশুভ বলতে যদি কিছু থাকে, তাহলে তা ঘর, স্ত্রী ও ঘোড়ার মধ্যে আছে।’’
(সহীহুল বুখারী শরীফ ৫৭৫৩, ২০৯৯, ২৮৫৮, ৫০৯৩, ৫০৯৪, ৫৭৭২, মুসলিম ২২৫, তিরমিজী ২৮২৪, নাসাঈ ৩৫৬৮, ৩৫৬৯, আবু দাঊদ ৩৯২২, ইবনু মাজাহ ১৯৯৫, ৩৫৪০, মুওয়াত্তা মালিক ১৮১৭) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৬৮৫. বুরাইদাহ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
নবী সাঃআঃ (কোন কিছুকে) অশুভ লক্ষণ মানতেন না।
(আবু দাঊদ ৩৯২০, আহমাদ ২২৪৩৭ ) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৬৮৬. উরওয়াহ ইবনু আমির রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাঃআঃ-এর সম্মুখে অশুভ বা কুলক্ষণ সম্পর্কে কথা হচ্ছিল। তিনি বললেন: এর মধ্যে ভাল হল ফাল। কিন্তু কোন মুসলিমকে অশুভ লক্ষণ তার কর্ম থেকে বিরত রাখতে পারে না। তোমাদের মধ্যে কেউ অপছন্দীয় কোন বিষয় দেখলে সে যেন বলে, ‘‘হে আল্লাহ! তুমি ব্যতীত কেউ কল্যাণ দিতে পারে না এবং তুমি ব্যতীত কেউ অকল্যাণ দূর করতে পারে না। অবস্থার পরিবর্তন করা বা মঙ্গল ও অমঙ্গল বিধান করার ক্ষমতা শুধুমাত্র তোমারই’’।
[আবু দাঊদ] (আমি [আলবানী] বলছিঃ এ সহীহ্ আখ্যা দেয়ার ব্যাপারে সুস্পষ্ট বিরূপ মন্তব্য রয়েছে। কারণ উরওয়া ইবনু আমেরের রসূল সাঃআঃ-এর সাথে সাক্ষাৎ ঘটার ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। এ ছাড়াও এর সনদে আনআনাহ মুদাল্লিস বর্ণনাকারী। দেখুন ‘‘আলকালিমুত তাইয়্যিব টীকা নং ১৯৩)।
হাদীসটির মানঃ দুর্বল হাদীস
Leave a Reply