আমালে ভারসাম্য বজায় রাখা
আমালে ভারসাম্য বজায় রাখা >> মিশকাতুল মাসাবীহ এর মুল সুচিপত্র দেখুন
পর্বঃ ৪, অধ্যায়ঃ ৩৪
- অধ্যায়ঃ ৩৪. প্রথম অনুচ্ছেদ
- অধ্যায়ঃ ৩৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
- অধ্যায়ঃ ৩৪. তৃতীয় অনুচ্ছেদ
অধ্যায়ঃ ৩৪. প্রথম অনুচ্ছেদ
১২৪১. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কোন কোন মাসে রোযাহীন কাটাতেন। এমনকি আমরা মনে করতাম, তিনি হয়ত এ মাসে সওম পালন করিবেন না। আবার তিনি সওম পালন করিতে থাকতেন। আমরা ধারণা করতাম, তিনি বুঝি এ মাসে সওম পালন করা ছাড়বেন না। তুমি যদি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে রাত্রে সলাত আদায়ে করা অবস্থায় দেখিতে চাও, তাহলে দেখিতে পাবে তিনি সলাত আদায়ে করছেন। আবার তুমি যদি ঘুম অবস্থায়ে দেখিতে চাও তাহলে দেখিতে পাবে তিনি ঘুমাছছেন। {১}
{১} সহীহ : বোখারী ১১৪১। আমালে ভারসাম্য বজায় রাখা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১২৪২. আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ইরশাদ করিয়াছেন : আল্লাহর নিকট বান্দার সবচেয়ে প্রিয় আমাল হল সর্বদা তা করা যদি [পরিমাণে] কমও হয়। {১}
{১} সহীহ : বোখারী ৬৪৬৪, মুসলিম ৭৮২।n আমালে ভারসাম্য বজায় রাখা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১২৪৩. আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেন : যত পরিমাণ তোমরা সামর্থ্য রাখো তত পরিমাণ আমাল করো। এ জন্য আল্লাহ্ তাআলা সওয়াব দিতে ক্লান্ত হন না, যতক্ষণ তোমরা ক্লান্ত না হবে। {১}
{১} সহীহ : বোখারী ১৯৭০, মুসলিম ৭৮২। আমালে ভারসাম্য বজায় রাখা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১২৪৪. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ইরশাদ করিয়াছেন : তোমাদের কারো উচিত ততক্ষণ পর্যন্ত সলাত আদায় করা যতক্ষণ সে প্রফুল্ল বা সতেজ থাকে। ক্লান্ত হয়ে গেলে সে যেন বসে যায় [অর্থাৎ সলাত আদায় না করে]। {১}
{১} সহীহ : বোখারী ১১৫০, মুসলিম ৭৮৪। আমালে ভারসাম্য বজায় রাখা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১২৪৫. আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ইরশাদ করিয়াছেন : তোমাদের কেউ যদি সলাত আদায় করা অবস্থায় ঝিমাতে শুরু করে তবে সে যেন ঘুমিয়ে পড়ে, ঘুম দূর না হওয়া পর্যন্ত। কারণ তোমাদের কেউ যখন ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে সলাত আদায় করে [ঘুমের কারণে] সে জানতে পারে না [সে কি পড়ছে]। হইতে পারে সে আল্লাহর কাছে মাগফিরাত কামনা করিতে গিয়ে [ঝিমানীর কারণে নিজে] নিজেকে গালি দিচ্ছে। {১}
{১} সহীহ : বোখারী ২১২, মুসলিম ৭৮৬। আমালে ভারসাম্য বজায় রাখা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১২৪৬. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ইরশাদ করিয়াছেন : নিশ্চয়ই দ্বীন সহজ। কিন্তু যে লোক দীনকে কঠিন করে তুলে, দ্বীন তাকে পরাভূত করে দেয়। অতএব দ্বীনের ব্যাপারে মধ্যম পন্থা অবলম্বন ও সাধ্য অনুযায়ী আমাল কর [নিজেকে ও অন্যকে] শুভ সংবাদ দাও, আর সকাল-সন্ধ্যা এবং রাতের শেষ ভাগে আল্লাহ তাআলার কাছে সাহায্য প্রার্থনা কর। {১}
{১} সহীহ : বোখারী ৩৯। আমালে ভারসাম্য বজায় রাখা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১২৪৭. উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ইরশাদ করিয়াছেন : কোন লোক রাতের বেলা তার নিয়মিত ইবাদাত অথবা তার আংশিক না করে শুয়ে গেল। তারপর সে ফাজ্র ও যুহরের মধ্যবর্তী সময়ে তা করে নিলে যেন সে রাতেই তা পড়েছে বলে লিখে নেয়া হয়। {১}
{১} সহীহ : মুসলিম ৭৪৭। আমালে ভারসাম্য বজায় রাখা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১২৪৮. ইমরান ইবনি হুসায়ন [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ইরশাদ করিয়াছেন : সলাত দাঁড়িয়ে আদায় করিবে। যদি তাতে সক্ষম না হও তাহলে বসে আদায় করিবে। যদি তাতেও সক্ষম না হও তাহলে [শুয়ে] কাত হয়ে আদায় করিবে। {১}
{১} সহীহ : বোখারী ১১১৭। আমালে ভারসাম্য বজায় রাখা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১২৪৯. ইমরান ইবনি হুসায়ন [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি কোন লোকের বসে বসে [নাফ্ল] সলাত আদায় করার ব্যাপারে নবী [সাঃআঃ]-কে প্রশ্ন করিলেন। তিনি [সাঃআঃ] বললেন, যদি দাঁড়িয়ে পড়ত ভাল হতো। যে লোক বসে বসে নাফ্ল সলাত আদায় করিবে সে দাঁড়িয়ে পড়া লোকের অর্ধেক সাওয়াব পাবে। আর যে লোক শুয়ে সলাত আদায় করিবে সে বসে পড়া ব্যক্তির অর্ধেক সাওয়াব পাবে। {১}
{১} সহীহ : বোখারী ১১১৫। আমালে ভারসাম্য বজায় রাখা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
অধ্যায়ঃ ৩৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
১২৫০. আবু উমামাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি নবী [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনিয়াছি : যে লোক পাক-পবিত্র হয়ে নিজের বিছানায় শুয়ে ঘুম না আসা পর্যন্ত আল্লাহর যিক্রে লিপ্ত থাকে, রাতে যতবার সে পাশ বদলাবে এবং আল্লাহর নিকট দুনিয়া ও আখিরাতে কোন কল্যাণ কামনা করিবে, আল্লাহ তাআলা তাকে সে কল্যাণ অবশ্যই দান করিবেন। {১}
{১} সহীহ : তবে ذَكَرَ اللّهَ حَتّى يُدْرِكَهُ النُّعَاسُ এ অংশটুকু ব্যতীত; আল কালিমুত্ব ত্বইয়্যিব ৪৪। আমালে ভারসাম্য বজায় রাখা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১২৫১. আবদুল্লাহ ইবনি মাস্ঊদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ.
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ইরশাদ করিয়াছেন : দু লোকের ওপর আল্লাহ তাআলা খুব সন্তুষ্ট হন। এক লোক, যে নিজের নরম তুলতুলে বিছানা ও প্রিয় স্ত্রী হইতে আলাদা হয়ে তাহাজ্জুদ সলাতের জন্যে উঠে যায়। আল্লাহ এ সময় তার মালায়িকাহ্ [ফেরেশতাদের]-কে বলেন, আমার বান্দার দিকে তাকাও। সে আমার নিকট থাকা জিনিস পাওয়ার আগ্রহে [সাওয়াব, জান্নাত] এবং আমার নিকট থাকা জিনিসকে ভয় করে [জাহান্নাম ও আযাব] নিজের নরম তুলতুলে বিছানা ও স্ত্রীর মধুর নৈকট্য ত্যাগ করে সলাত [তাহাজ্জুদ] আদায়ের জন্যে উঠে পড়েছে। আর দ্বিতীয় হলো ঐ লোক, যে আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ করেছে। [কোন ওযর ছাড়া] যুদ্ধের ময়দান হইতে সঙ্গী-সাথী নিয়ে ভেগে এসেছে। কিন্তু এভাবে ভেগে আসায় আল্লাহর শাস্তি ও ফেরত আসায় গুনাহর কথা মনে পড়ায় আবার যুদ্ধের মাঠে ফিরে আসছে। আল্লাহর শত্রুদের সাথে যুদ্ধ করিতে করিতে শাহাদাত বরণ করেছে। আল্লাহ তার মালায়িকাহ্-কে বলেন, আমার বান্দার দিকে লক্ষ্য করে দেখো, যারা আমার কাছে থাকা জিনিস [জান্নাত] পাওয়র জন্যে ও আমার কাছে থাকা জিনিস [জাহান্নাম] থেকে বাঁচার জন্যে যুদ্ধের মাঠে ফিরে এসেছে, জীবনও দিয়ে দিয়েছে। {১}
{১} হাসান লিগায়রিহী : ইবনি হিব্বান ২৫৫৮, সহীহ আত তারগীব ৬৩০, সুনান আল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১৮৫২৪, সহীহাহ্ ৩৪৭৮। এই হাদিসটির তাহকীকঃ হাসান লিগাইরিহি
অধ্যায়ঃ ৩৪. তৃতীয় অনুচ্ছেদ
১২৫২. আবদুল্লাহ ইবনি আমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমার নিকট বর্ণনা করা হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ইরশাদ করিয়াছেন : বসে [নাফ্ল] সলাত আদায় করলে, দাঁড়িয়ে সলাত আদায়ের অর্ধেক সাওয়াব পাওয়া যায়। তিনি [আবদুল্লাহ ইবনি আম্র] বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর দরবারে হাযির হলাম। সে সময় রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বসে বসে সলাত আদায় করছিলেন। [সলাত শেষ হবার পর] আমি রসূলের মাথায় হাত রাখলাম। তিনি বললেন, আবদুল্লাহ ইবনি আম্র! কি হয়েছে? আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমাকে তো বলা হয়েছে যে, তিনি [সাঃআঃ] ইরশাদ করিয়াছেন : বসে সলাত আদায়কারীর সলাতে অর্ধেক সাওয়াব হয়। অথচ আপনি বসে বসে সলাত আদায় করছেন। জবাবে তিনি বললেন, হ্যাঁ তা-ই। কিন্তু আমি তো তোমাদের মতো নই। {১}
{১} সহীহ : মুসলিম ৭৩৫। আমালে ভারসাম্য বজায় রাখা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১২৫৩. সালিম ইবনুল আবী জাদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, খুযাআহ্ গোত্রের এক লোক বলিল, হায় আমি যদি সলাত আদায় করতাম, আরাম পেতাম। লোকেরা তার কথা শুনে মন খারাপ করিল। তখন লোকটি বলিল, আমি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]–কে বলিতে শুনিয়াছি : হে বিলাল! সলাতের জন্যে ইক্বামাত দাও। এর দ্বারা আমাকে আরাম দাও। {১}
{১} সহীহ : আবু দাউদ ৪৯৮৫। আমালে ভারসাম্য বজায় রাখা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
Leave a Reply