তাসাহুদ
তাসাহুদ >> মিশকাতুল মাসাবীহ এর মুল সুচিপত্র দেখুন
পর্বঃ ৪, অধ্যায়ঃ ১৫
- অধ্যায়ঃ ১৫. প্রথম অনুচ্ছেদ
- অধ্যায়ঃ ১৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
- অধ্যায়ঃ ১৫. তৃতীয় অনুচ্ছেদ
অধ্যায়ঃ ১৫. প্রথম অনুচ্ছেদ
৯০৬
ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাসাহুদ পড়ার জন্য বসলে তাহাঁর বাম হাত বাম পায়ের হাঁটুর উপর এবং ডান হাত ডান হাঁটুর উপর রাখতেন। এ সময় তিনি তিপ্পান্নের মত করার জন্য আঙ্গুল বন্ধ করে রাখতেন, তর্জনী দিয়ে [শাহাদাত] ইশারা করিতেন। {১}
{১} সহীহ : মুসলিম ৫৮০, আহমাদ ৬১৫৩, দারিমি ১৩৭৮।
এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
৯০৭
আর এক বর্ণনায় আছে, হইতে বর্ণীতঃ
যখন সলাতের মধ্যে বসতেন দুহাত দুহাটুর উপর রাখতেন এবং ডান হাতের বৃদ্ধার নিকট যে আঙ্গুল রয়েছে [তর্জনী] তা উঠাতেন। তা দিয়ে দুআ [ইশারা] করিতেন। আর তাহাঁর বাম হাত বাম হাটুর উপর বিছানো থাকত। {১}
{১} সহীহ : মুসলিম ৫৮০, নাসায়ী ১২৬৯, ইবনি মাজাহ ৯১৩, আহমাদ ৬৩৪৯, ইরওয়া ৩৬৬।
এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
৯০৮
আবদুল্লাহ ইবনুয্ যুবায়র [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাসাহুদ অর্থাৎ আত্তাহিয়্যাতু পড়ার জন্য বসলে নিজের ডান হাত ডান রানের উপর এবং বাম হাত বাম রানের উপর রাখতেন। শাহাদাত আঙ্গুল উঠিয়ে ইশারা করিতেন। এ সময় তিনি বৃদ্ধা আঙ্গুল মধ্যমা আঙ্গুলের নিকটে রাখতেন। বাম হাতের তালু দিয়ে বাম হাঁটু জড়িয়ে ধরতেন। {১}
{১} সহীহ : মুসলিম ৮৭৯।
এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
৯০৯
আবদুল্লাহ ইবনি মাস্ঊদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমরা যখন রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর সাথে সলাত আদায় করতাম তখন এ দুআ পাঠ করতাম, “আসসালা-মু আলাল্ল-হি ক্বাবলা ইবাদিহী, আসসালা-মু আলা-জিবরীলা, আসসালা-মু আলা- মীকায়ীলা, আসসালা-মু আলা- ফুলা-নিন” – [অর্থাৎ- আল্লাহর উপর সালাম তাহাঁর বান্দাদের উপর পাঠাবার আগে, জিবরাঈলের উপর সালাম, মীকায়ীল-এর উপর সালাম। সালাম অমুকের উপর]। রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যখন সলাত শেষ করিলেন, আমাদের দিকে ফিরে বললেন, “আল্লাহর উপর সালাম” বল না। কারণ আল্লাহ তো নিজেই সালাম [শান্তিদাতা]। অতএব তোমাদের কেউ সলাতে বসে বলবে, “আত্তাহিয়্যাতু লিল্লা-হি ওয়াসসালাওয়া-তু ওয়াততায়্যিবা-তু আসসালা-মু আলায়কা আইয়্যুহান নাবিইয়্যু ওয়ারাহমাতুল্ল-হি ওয়াবারাকা-তুহু আসসালা-মু আলায়না ওয়াআলা- ইবা-দিল্লা-হিস স-লিহীন” [অর্থাৎ সব সম্মান, ইবাদাত, উপসানা ও পবিত্রতা আল্লাহর জন্য। হে নবী! আপনার উপর আল্লাহর সব নেক বান্দাদের উপর সালাম]। নবী [সাঃআঃ] বললেন, কোন ব্যক্তি এ কথাগুলো বললে এর বারাকাত আকাশ ও মাটির প্রত্যেক নেক বান্দার কাছে পৌছবে। এরপর নবী [সাঃআঃ] বললেন, “আশহাদু আল্লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রসূলুহু”- [অর্থাৎ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া কোন মাবূদ নেই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি, মুহাম্মদ আল্লাহর বান্দা ও রসূল]। নবী [সাঃআঃ] বললেন, এরপর আল্লাহর বান্দার কাছে যে দুআ ভাল লাগে সে দুআ পাঠ করে আল্লাহর মহান দরবারে আকুতি মিনতি জানাবে। {১}
{১} সহীহ : বোখারী ৮৩৫, ৬২৩০, মুসলিম ৪০২, আবু দাউদ ৯৬৮, নাসায়ী ১২৯৮, ইবনি মাজাহ ৮৯৯, আহমাদ ৪১০১।
এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
৯১০
আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাদেরকে আত্তাহিয়্যাতু শিক্ষা দিতেন, যেভাবে তিনি আমাদেরকে কুরআন মাজীদের সূরাহ শিক্ষা দিতেন। তিনি বলিতেন, “আত্তাহিয়্যাতুল মুবা-রাকা-তুস সলাওয়া-তু ওয়াত্তাইয়্যিবা-তু লিল্লা-হি। আসসালা-মু আলায়কা আইয়্যুহান নাবিয়্যু ওয়া রাহমাতুল্ল-হি ওয়া বারাকা-তুহু। আসসালা-মু আলায়না- ওয়া আলা- ইবা-দিল্লা-হিস স-লিহীন। আশহাদু আল্লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদন আবদুহু ওয়ারসূলুহু”। {১}
মিশকাত সংকলক বলেন, সালা-মুন আলায়কা ও সালা-মুন আলায়না আলিফ, লাম ছাড়া বোখারী, মুসলিম ও এদের সংকলন হুমায়দীর কিতাবে কোথাও নেই। কিন্তু জামিঊল উসূল প্রণেতা তিরমিজি হইতে এভাবে বর্ণনা করিয়াছেন। {2]
1] সহীহ : মুসলিম ৪০৩। অপর একটি বর্ণনায় রয়েছে যা মুসলিমে রয়েছে وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُه وَرَسُوْلُه।
{2] সহীহ : তিরমিজি ২৯০, নাসায়ী ১১৭৪, ১২৭৮, ইবনি মাজাহ ৯০০, আহমাদ ২৮৯২, সহীহ ইবনি হিব্বান ১৯৫২।
এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
অধ্যায়ঃ ১৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৯১১
ওয়ায়িল ইবনি হূজর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি [তাশাহহুদের বৈঠক সম্পর্কে] নবী [সাঃআঃ] হইতে বর্ণনা করেন। অতঃপর তিনি বাম পা বিছিয়ে দিলেন। বাম হাতকে বাম রানের উপর রাখলেন। এভাবে তিনি ডান কনুইকে ডান রানের উপর বিছিয়ে রাখলেন। এরপর [নব্বইয়ের বন্ধনের ন্যায়] ডান হাতের কনিষ্ঠা ও অনামিকা বন্ধ করিলেন। [মধ্যমা ও বৃদ্ধার দ্বারা] একটি বৃত্ত বানালেন এবং শাহাদাত আঙ্গুল উঠালেন। এ সময় আমি তাঁকে খলাম, তিনি তাসাহুদ পাঠ করিতে করিতে ইশারা করার জন্য শাহাদাত আঙ্গুল নাড়ছেন। {১}
{১} সহীহ : নাসায়ী ৮৮৯, ইরওয়া ৩৬৭, আবু দাউদ ৭২৬। তবে আবু দাঊদে আঙ্গুল নাড়ানোর কথা নেই।
এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
৯১২
আবদুল্লাহ ইবনুয্ যুবায়র [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলূল্লাহ [সাঃআঃ] যখন সলাতে বসা অবস্থায় “কালিমায়ে শাহাদাত” দুআ পাঠ করিতেন, নিজের শাহাদাত আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করিতেন, কিন্তু তা নাড়াচড়া করিতেন না। {১} আবু দাউদ এ শব্দগুলোও নকল করিয়াছেন যে, তাহাঁর দৃষ্টি ইশারা করার বাইরে অতিক্রম করত না।{2]
1] শা-য : আবু দাউদ ৯৮৯, নাসায়ী ১২৭০। সানাদের সকল রাবী বিশ্বস্ত হলেও মুহাম্মাদ ইবনি আজলান-এর মধ্যে স্মৃতিশক্তিজনিত দুর্বলতা রয়েছে। তবে তাহাঁর হাদিস হাসানের স্তর থেকে নিচে নেমে যাবে না। এজন্য হাকিম [রাহিমাহুল্লাহ] বলেছেনঃ ঈমাম মুসলিম [রাহিমাহুল্লাহ] সহীহ মুসলিমে তাহাঁর ১৩টি হাদিস শাহিদ হিসেবে বর্ণনা করিয়াছেন। তবে পরবর্তী আলিমগণ তার মুখস্থশক্তির ব্যাপারে সমালোচনা করিয়াছেন। ঈমাম যাহাবী [রাহিমাহুল্লাহ] বলেনঃ সে মুখস্থশক্তির ক্ষেত্রে মধ্যম শ্রেণীভুক্ত। এসব মতামতের ভিত্তিতে হাদিসের সানাদটি যে সহীহ তা সুস্পষ্ট। তবে لَا يُحَرِّكُهَا অংশটুকু শাহ বা মুনকার। কেননা মুহাম্মাদ ইবনি আজ্লান এর উপর স্থির থাকতে পারেনি। তিনি কখনোও তা উল্লেখ করিয়াছেন আবার কখনও করেননি। আর এ অংশটুকু না হওয়ার সঠিক কারণ মুহাম্মাদ ইবনি আজলান ছাড়া অন্য কেউ এ অতিরিক্তাংশটুকু উল্লেখ করেননি। অতিরিক্তাংশটুকু ছাড়াই ঈমাম মুসলিম ও অন্যান্যরা তা বর্ণনা করিয়াছেন।
{2] হাসান সহীহ : আবু দাউদ ৯৯০, নাসায়ী ১২৭০।
এই হাদিসটির তাহকীকঃ হাসান সহীহ
৯১৩
আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, এক ব্যক্তি সলাতে তাসাহুদ পড়ার সময় শাহাদাতের দু আঙ্গুল উঠিয়ে ইশারা করিতে লাগল। নবী [সাঃআঃ] তাকে বললেন, এক আঙ্গুল দিয়েই ইশারা কর, এক আঙ্গুল দিয়েই ইশারা কর। {১}
{১} হাসান সহীহ : তিরমিজি ৩৫৫৭, নাসায়ী ১২৭২, দাওয়াতুল কাবীর ৩১৬।
এই হাদিসটির তাহকীকঃ হাসান সহীহ
৯১৪
ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কোন লোক যেন সলাতে হাতের উপর ঠেস দিয়ে না বসে। {১} আবু দাঊদের এক বর্ণনায় এ শব্দগুলোও আছে যে, নবী [সাঃআঃ] নিষেধ করেছেনঃ সলাতে উঠার সময় কোন ব্যক্তি যেন তার দুহাতের উপর ভর দিয়ে না উঠে। {2]
{১} সহীহ : আবু দাউদ ৯৯২, আহমাদ ৬৩৪৭।
{2] মুনকার : মাসদুরুস্ সা-বিক্ব [প্রাগুক্ত]।
এই হাদিসটির তাহকীকঃ অন্যান্য
৯১৫
আবদুল্লাহ ইবনি মাস্ঊদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] প্রথম দু রাকআতের পরের বৈঠক হইতে এত তাড়াতাড়ি উঠে দাঁড়াতেন, মনে হত যেন কোন উত্তপ্ত পাথরের উপর বসেছেন। {১}
{১} জইফ : আবু দাউদ ৯৯৫, তিরমিজি ৩৩৬, নাসায়ী ১১৭৬। কারণ আবু উবায়দাহ্ তার পিতা ইবনি মাস্ঊদ [রাদি.] থেকে শ্রবণ করেননি। তবে আলবানী [রাহিমাহুল্লাহ] বলেনঃ তার রাবীগণ বিশ্বস্ত। অতএব হাদিসের সানাদটি সহীহ যদি মুনক্বতি না হয়।
এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
অধ্যায়ঃ ১৫.পরিচ্ছ
তৃতীয় অনুচ্ছেদ
৯১৬
জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যেভাবে আমাদেরকে কুরআনের কোন সূরাহ শিক্ষা দিতেন, ঠিক সেভাবে তিনি আমাদেরকে তাসাহুদও শিখাতেন। তিনি বলিতেন, “বিসমিল্লা-হি ওয়া বিল্লা-হি, আততাহিয়্যাতু লিল্লা-হি ওয়াসসালাওয়া-তু ওয়াত ত্বইয়্যিবা-তু আসসালা-মু আলাইকা আইয়্যুহান্নাবীয়্যু, ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওবারাকা-তুহু, আসসালা-ম আলাইনা- ওয়াআলা- ইবা-দিল্লা-হিস সলিহীন। আশহাদু আল্লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহূ ওয়া রসূলুহু। আসআলুল্লা-হাল জান্নাতা ওয়া আউযু বিল্লা-হি মিনান্না-র”। {১}
{১} জইফ : নাসায়ী ১১৭৫। কারণ সানাদে আয়মান ইবনি নাবিল রয়েছে যার মধ্যে দুর্বলতা রয়েছে। আর মুহাদ্দিসগণ এ হাদীসে তার তাসমিয়্যাহ্ [বিসমিল্লা-হ]-এর বর্ণনাটির ব্যাপারে সমালোচনা করিয়াছেন। ঈমাম নাসায়ী হাদিসের শেষে বলেনঃ এ বর্ণনাটিতে তার সাথে আর কেউ আছে বলে আমরা জানি না। তবে সে ত্রুটিমুক্ত রাবী বরং হাদিসটি ভুল। আর ঈমাম তিরমিজি একে শায বলেছেন।
এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
৯১৭
নাফি [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, ইবনি উমার [রাদি.] যখন সলাতে বসতেন, নিজের দু হাত নিজের দু রানের উপর রাখতেন। আর শাহাদাত আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করিতেন এবং তার চোখের দৃষ্টি থাকত আঙ্গুলের প্রতি।। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লা, আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেনঃ এ শাহাদাত আঙ্গুল শায়ত্বনের কাছে লোহার চেয়ে বেশী শক্ত। অর্থাৎ শাহাদাত আঙ্গুল দিয়ে তাওহীদের ইশারা করা শায়ত্বনের উপর নেযা নিক্ষেপ করার চেয়েও কঠিন। {১}
{১} হাসান : আহমাদ ৫৯৬৪।
এই হাদিসটির তাহকীকঃ হাসান হাদিস
৯১৮
ইবনি মাস্ঊদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলিতেন, সলাতে তাসাহুদ চুপে চুপে পড়াই সুন্নাত। আবু দাউদ ও তিরমিজি, ঈমাম তিরমিজি হাদিসটিকে হাসান গারীব বলেছেন। {১}
{১} সহীহ : আবু দাউদ ৯৮৬, তিরমিজি ২৯১। যদিও আবু দাউদ-এর সানাদে মুহাম্মাদ ইবনি ইসহক মুদাল্লিস রাবী রয়েছে কিন্তু হাকিম হাদিসটি অন্য একটি সহীহ সানাদে বর্ণনা করিয়াছেন।
এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
Leave a Reply