সালাতের কিরাতের বর্ণনা

সালাতের কিরাতের বর্ণনা

সালাতের কিরাতের বর্ণনা >> মিশকাতুল মাসাবীহ এর মুল সুচিপত্র দেখুন

পর্বঃ ৪, অধ্যায়ঃ ১২

  • অধ্যায়ঃ ১২. প্রথম অনুচ্ছেদ
  • অধ্যায়ঃ ১২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
  • অধ্যায়ঃ ১২. তৃতীয় অনুচ্ছেদ

অধ্যায়ঃ ১২. প্রথম অনুচ্ছেদ

৮২২. উবাদাহ্ ইবনুস্ সামিত [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সলাতে সূরাহ্‌ ফাতিহা পাঠ করেনি তার সলাত হল না। {১}

{১} সহীহ : বোখারী ৭৫৬, মুসলিম ৩৯৪, আবু দাউদ ৮২২, নাসায়ী ৯১০, তিরমিজি ২৪৭, ইবনি মাজাহ ৮৩৭, আহমাদ ২২৬৭৭, সহীহ ইবনি হিব্বান ১৭৮৬, ইরওয়া ৩০২, সহীহ ইবনি হিব্বান ৭৫১৩, সালাতের কিরাতের বর্ণনা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

৮২৩. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সলাত আদায় করিল কিন্তু এতে উম্মুল কুরআন অর্থাৎ সুরাহ্‌ ফাতিহাহ্‌ পাঠ করিল না তাতে তার সলাত “অসম্পূর্ণ” রয়ে গেল। এ কথা তিনি তিনবার বললেন। এ কথা শুনে কেউ আবু হুরায়রাহ্‌ [রাদি.]-কে জিজ্ঞেস করিলেন, আমরা যখন ইমামের পিছনে সলাত আদায় করব তখনও কি তা পাঠ করব? উত্তরে তিনি বললেন, হাঁ তখনও তা পাঠ করিবে নিজের মনে মনে। কারণ আমি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনিয়াছি, “আল্লাহ বলেছেন, আমি সলাত অর্থাৎ, সূরাহ্‌ ফাতিহাকে আমার ও আমার বান্দার মধ্যে অর্ধেক অর্ধেক ভাগ করেছি, [এভাবে যে, হামদ ও ছানা আমার জন্য আর দুআ বান্দার জন্য]। আর বান্দা যা চায় তা তাকে দেয়া হয়। বান্দা বলে, সব প্রশংসা আল্লাহর যিনি সমস্ত জাহানের প্রতিপালক। তখন আল্লাহ তাআলা বলেন, আমার বান্দা আমার প্রশংসা করিল। যখন বান্দা বলে, আল্লাহ বড় মেহেরবান ও পরম দয়ালু, আল্লাহ তখন বলেন, আমার বান্দা আমার গুণগান করিল। বান্দা যখন বলে, আল্লাহ ক্বিয়ামাতের দিনের হাকীম, তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা আমাকে সম্মান প্রদর্শন করিল। বান্দা যখন বলে, [হে আল্লাহ!] আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদাত করি এবং তোমার কাছেই সাহায্য কামনা করি, তখন আল্লাহ বলেন, এটা আমার ও আমার বান্দার মধ্যকার ব্যাপার [ইবাদাত আল্লাহর জন্য আর দুআ বান্দার জন্য]। আর আমার বান্দা যা চাইবে তা সে পাবে। বান্দা যখন বলে, [হে আল্লাহ]! তুমি আমাদেরকে সহজ ও সরল পথে পরিচালিত কর। সে সমস্ত লোকের পথে, যাদেরকে তুমি নিআমাত দান করেছ। তাদের পথে নয়, যাদের প্রতি তোমার গযব নাযিল হয়েছে এবং যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে। তখন আল্লাহ তাআলা বলেন, এটা আমার বান্দার জন্য, আর বান্দা যা চাইবে, সে তাই পাবে। {১}

{১} সহীহ : মুসলিম ৩৯৫, তিরমিজি ২৯৫৩, ইবনি মাজাহ ৮৩৮, আহমাদ ৭২৯১, সহীহ ইবনি হিব্বান ৭৭৬। সালাতের কিরাতের বর্ণনা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

৮২৪. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, নবী [সাঃআঃ] এবং আবু বাক্‌র ও উমার [রাদি.] সলাত

الْحَمْدُ للهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ

আলহাম্‌দু লিল্লা-হি রব্বিল আ-লামীন” দিয়ে শুরু করিতেন। {১}

{১} সহীহ : বোখারী ৭৪৩, মুসলিম ৩৯৯। সালাতের কিরাতের বর্ণনা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

৮২৫. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, ঈমাম যখন آمِينَ আমীন বলবে, তোমরাও آمِينَ আমীন বলবে। কারণ যে ব্যক্তির আমীন মালাকগণের আমীনের সাথে মিলে যায়, আল্লাহ তার অতীতের সব গুনাহগুলো মাফ করে দেন। {১} আর এক বর্ণনায় আছে, নবী [সাঃআঃ] বলেছেন, যখন ঈমাম বলে,

غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّيْنَ

“গয়রিল মাগযূবি আলায়হিম ওয়ালায্‌ যোয়াল্লীন”, তখন তোমরা آمِينَ আমীন বলবে। কারণ যার آمِينَ আমীন শব্দ মালাকগণের আমীন শব্দের সাথে মিলে যায় তার আগের গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়। এ শব্দগুলো সহীহুল বোখারীর। {2] সহীহ মুসলিমের হাদিসের শব্দগুলোও এর মতই। আর সহীহুল বোখারীর অন্য একটি বর্ণনার শব্দ হল, নবী [সাঃআঃ] বলেছেন, যখন কুরআন তিলাওয়াতকারী অর্থাৎ ঈমাম বা অন্য কেউ আমীন বলবে, তোমরাও সাথে সাথে আমীন বল। আর যে ব্যক্তির আমীন শব্দ মালাকগণের আমীন শব্দের সাথে মিলে যাবে, তার আগের সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়। {3]

{১} সহীহ : বোখারী ৭৮০, মুসলিম ৪১০, আবু দাউদ ৯৩৬, নাসায়ী ৯৩৮, তিরমিজি ২৫০, ইরওয়া ৩৪৪, সহীহ আল জামি ৩৯৫। {2] সহীহ : বোখারী ৭৮২। {3] সহীহ : বোখারী ৬৪০২। সালাতের কিরাতের বর্ণনা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

৮২৬. আবু মূসা আল আশ্আরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমরা যখন জামাআতে সলাত আদায় করিবে, তোমাদের কাতারগুলোকে সোজা করিবে। এরপর তোমাদের কেউ তোমাদের ঈমাম হবে। ঈমাম তাকবীর তাহরীমা আল্ল-হু আকবার বললে, তোমরাও আল্ল-হু আকবার বলবে। ঈমাম

غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّينَ

গাইরিল মাগযূবি আলায়হিম ওয়ালায্‌ যোয়াল্‌লীন” বললে, তোমরা آمِينَ আমীন বলবে। আল্লাহ তাআলা তোমাদের দুআ ক্ববুল করিবেন। ঈমাম রুকূতে যাবার সময় আল্ল-হু আকবার বলবে ও রুকূতে যাবে। তখন তোমরাও আল্ল-হু আকবার বলে রুকূতে যাবে। ঈমাম তোমাদের আগে রুকু করিবে। তোমাদের আগে রুকূ হইতে মাথা উঠাবে। এরপর নবী [সাঃআঃ] বললেন, এটা ওটার পরিবর্তে [অর্থাৎ তোমরা পরে রুকূতে গেলে, আর পরে মাথা উঠালে ও ঈমাম আগে রুকূতে গেলে আর আগে মাথা উঠালে, উভয়ের সময় এক সমান হয়ে গেল]। এরপর নবী [সাঃআঃ] বললেন, ঈমাম

سَمِعَ اللّهُ لِمَنْ حَمِدَه 

“সামিআল্ল-হু লিমান হামিদাহ” বলবে, তোমরা বলবে

اللّهُمَّ رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ

“আল্ল-হুম্মা রব্বানা- লাকাল হাম্‌দ” আল্লাহ তোমাদের প্রশংসা শুনেন। {১}

{১} সহীহ : মুসলিম ৪০৪, আবু দাউদ ৯৭২, নাসায়ী ১২৮০, আহমাদ ১৯৫০৫, সহীহ ইবনি হিব্বান ২১৬৭, সহীহ আল জামি ৬৭৩। فَتِلْكَ بِتِلْكَ -এর অর্থ বর্ণনায় ঈমাম নাবাবী [রাহিমাহুল্লাহ] বলেনঃ ঈমাম যে সময়টুকু তোমাদের আগে রুকূতে গিয়ে অতিবাহিত করছে। ঈমাম রুকূ থেকে উঠার পর তোমরা সে সময়টুকু রুকূতে অবস্থান করো তা দ্বারা ইমামের আগে যাওয়ার সময়টুকু পূরণ হয়ে যায়। ফলে তোমাদের এ মুহূর্তটি তার যে সময়ের সমান হয় এবং তোমাদের রুকূর স্থায়িত্বটা তার রুকূর স্থায়িত্বের সমান হয়। সালাতের কিরাতের বর্ণনা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

৮২৭. মুসলিমের হইতে বর্ণীতঃ

মুসলিমের আর এক বর্ননায় এ শব্দগুলো আছে, নবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ ইমামের ক্বিরাআত তিলাওয়াত করার সময় তোমরা চুপ থাকিবে। {১}

{১} আল মাসদিরুস্ সা-বিক্ব [প্রাগুক্ত], আবু দাউদ ৬০৪, নাসায়ী ৯২১, ইবনি মাজাহ ৮৪৬।এই হাদিসটির তাহকীকঃ নির্ণীত নয়

৮২৮. আবু ক্বাতাদাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন নবী [সাঃআঃ] যুহরের সলাতে প্রথম দুরাকাআতে সুরা ফাতেহা এবং আরও দুটি সুরাহ্‌ পাঠ করিতেন। পরের দুরাকাআতে শুধু সুরাহ্‌ ফাতিহা পাঠ করিতেন। আর কখনও কখনও তিনি আমাদেরকে আয়াত শুনিয়ে পাঠ করিতেন। তিনি প্রথম রাক্‌আতকে দ্বিতীয় রাক্‌আত অপেক্ষা লম্বা করে পাঠ করিতেন। এভাবে তিনি আসরের সলাতও আদায় করিতেন। {১}

{১} সহীহ : বোখারী ৭৫৯, মুসলিম ৪৫১, আবু দাউদ ৭৯৮, নাসায়ী ৯৭৮, আহমাদ ২২৫২০, দারিমি ১৩২৮। সালাতের কিরাতের বর্ণনা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

৮২৯. আবু সাঈদ আল খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যুহর ও আসরের সলাতে কত সময় দাঁড়ান তা আমরা অনুমান করতাম। আমরা অনুমান করলাম যে, তিনি যুহরের প্রথম দু রাকআতে সুরাহ্‌ আলিফ লাম মীম তানযিলুস সাজদাহ্ পাঠ করিতে যত সময় লাগে তত সময় দাঁড়াতেন। অন্য এক বর্ণনায়, প্রত্যেক রাকআতে ত্রিশ আয়াত পড়ার সমপরিমাণ সময় দাঁড়াতেন। আর পরবর্তী দু রাকআতে অর্ধেক সময় দাঁড়াতেন বলে অনুমান করেছিলাম। আসরের সলাতের প্রথম দু রাকআতে, যুহরের সলাতের শেষ দু রাকআতের সমপরিমাণ এবং আস্‌রে সলাতের শেষ দু রাকআতে যুহরের শেষ দু রাকআতের অর্ধেক সময় বলে অনুমান করেছিলাম। {১}

{১} সহীহ : মুসলিম ৪৫২, আবু দাউদ ৮০৪, সহীহ ইবনি হিব্বান ১৮৫৮, নাসায়ী ৪৭৫, আহমাদ ১০৯৮৭। সালাতের কিরাতের বর্ণনা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

৮৩০. জাবির ইবনি সামুরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যুহরের সলাতে সূরাহ্‌ “ওয়াল্লায়লি ইযা-ইয়াগ্‌শা-” এবং অপর বর্ণনা মতে “সাব্বিহিসমা রব্বিকাল আলা” পাঠ করিতেন। আস্‌রের সলাতও একইভাবে আদায় করিতেন। কিন্তু ফাজ্‌রের সলাতে এর চেয়ে লম্বা সূরাহ্‌ তিলওয়াত করিতেন। {১}

{১} সহীহ : মুসলিম ৪৫৯, নাসায়ী ৯৮০, আহমাদ ২০৯৬৩। সালাতের কিরাতের বর্ণনা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

৮৩১. জুবায়র ইবনি মুত্বইম [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে মাগরিবের সলাতে সূরাহ্‌ “তূর” পাঠ করিতে শুনিয়াছি। {১}

{১} সহীহ : বোখারী ৭৬৫, মুসলিম ৪৬৩, নাসায়ী ৯৮৭, ইবনি মাজাহ ৮৩২, আহমাদ ১৬৭৩৫, দারিমি ১৩৩২। সালাতের কিরাতের বর্ণনা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

৮৩২. উম্মুল ফাযল বিনতু হারিস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে মাগরিবের সলাতে সূরাহ্‌ মুরসলাত পাঠ করিতে শুনিয়াছি। {১}

{১} সহীহ : বোখারী ৪৪২৯, মুসলিম ৪৬২, দারিমি ১৩৩১। সালাতের কিরাতের বর্ণনা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

৮৩৩. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, মুআয ইবনি জাবাল [রাদি.] নবী [সাঃআঃ]-এর সাথে জামায়াতে সলাত আদায় করিতেন, তারপর নিজ এলাকায় যেতেন ও এলাকাবাসীর ঈমামতি করিতেন। এক রাতে রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাথে ইশার সলাত আদায় করিলেন, তারপর নিজ এলাকায় গিয়ে ঈমামতি করিলেন। তিনি সলাতে সূরাহ্‌ বাক্বারাহ্‌ পাঠ করিতে লাগলেন। এতে বিরক্ত হয়ে এক লোক সালাম ফিরিয়ে সলাত থেকে পৃথক হয়ে গেল। একা একা সলাত আদায় করে চলে গেল। তার এ অবস্থা দেখে লোকজন বিস্মিত হয়ে বলিল। হে অমুক! তুমি কি মুনাফিক্ব হয়ে গেলে? উত্তরে সে বলিল, আল্লাহর কসম! আমি কখনো মুনাফ্বিক হয়নি। নিশ্চয়ই আমি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট যাব। এ বিষয়টি সম্পর্কে তাঁকে জানাব। এর পর সে ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর কাছে এলো। বলিল, হে আল্লাহর রাসূল! আমি পানি সেচকারী [শ্রমিক], সারাদিন সেচের কাজ করি। মুআয আপানার সাথে ইশার সলাত আদায় করে নিজের গোত্রের ঈমামতি করিতে এসে সূরাহ্‌ বাক্বারাহ্‌ দিয়ে সলাত শুরু করে দিলেন। এ কথা শুনে নবী [সাঃআঃ] মুআয-এর দিকে তাকালেন এবং বললেন, হে মুয়ায! তুমি কি ফিতনা সৃষ্টিকারী? তুমি ইশার সলাতে সূরাহ্‌ ওয়াশ্‌ শাম্‌সি ওয়ায যুহা-হা-, সূরাহ্‌ ওয়ায্‌ যুহা-, সূরাহ্‌ ওয়াল লায়লী ইযা-ইয়াগ্‌শা-, সূরাহ্‌ সাব্বিহিসমা রব্বিকাল আলা-তিলওয়াত করিবে। {১}

{১} সহীহ : বোখারী ৭০৫, মুসলিম ৪৬৫, নাসায়ী ৮৩১, আহমাদ ১৪১৯০; শব্দবিন্যাস মুসলিমের। اَلنَّوَاضِجُ [আন্ নাওয়া-যিজ] অর্থ সে সব উট যার মাধ্যমে কুয়া থেকে পানি উত্তোলন করে বাগানে সরবরাহ করা যায়। সালাতের কিরাতের বর্ণনা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

৮৩৪. বারা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি রাসূল [সাঃআঃ]-কে ইশার সলাতে সূরাহ্‌ “ওয়াত্‌তীন ওয়ায যায়তূন” পাঠ করিতে শুনিয়াছি। তার চেয়ে মধুর স্বর আমি আর কারো শুনিনি। {১}

{১} সহীহ : বোখারী ৭৬৯, মুসলিম ৪৬৪। সালাতের কিরাতের বর্ণনা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

৮৩৫. জাবির ইবনি সামুরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন নবী [সাঃআঃ] ফাজ্‌রের সলাতে সূরাহ্ কাফ ওয়াল কুরআনিল মাজীদ ও এরূপ সূরাগুলো তিলাওয়াত করিতেন। অন্যান্য সলাত ফাজ্‌রের চেয়ে কম দীর্ঘ হত। {১}

{১} সহীহ : মুসলিম ৪৫৮, আহমাদ ২০৯৭১। ফাজর [ফজর] সলাতের পরবর্তী সলাতগুলো হালকা হত। অর্থাৎ- রসূল সাঃআঃ-এর ক্বিরাআত [কিরআত] ফজরের তুলনায় অন্যান্য সলাতে অধিক হালকা ছিল। সালাতের কিরাতের বর্ণনা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

৮৩৬. আমর ইবনি হুবায়স [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে ফাজ্‌রের সলাতে “ওয়াল লায়লি ইযা- আস্‌আস্‌” সূরাহ্ তিলওয়াত করিতে শুনেছেন। {১}

{১} সহীহ : মুসলিম ৪৫৬, আহমাদ ১৮৭৩৩, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৪০০৯। সালাতের কিরাতের বর্ণনা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

৮৩৭. আবদুল্লাহ ইবনুস্ সায়িব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] মাক্কায় আমাদের ফাজ্‌রের সলাত আদায় করিয়েছেন। তিনি সূরাহ্ মুমিন তিলাওয়াত করা শুরু করিলেন। তিনি যখন মূসা ও হারুন অথবা ঈসা [আলাইহিস সালাম]-এর আলোচনা পর্যন্ত এসে পৌঁছলেন তাহাঁর কাশি এসে গেলে [সূরাহ্‌ শেষ না করেই] তিনি রুকূতে চলে গেলেন। {১}

{১} সহীহ : মুসলিম ৪৫৫, নাসায়ী ১০০৭, ইরওয়া ৩৯৭। সালাতের কিরাতের বর্ণনা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

৮৩৮. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, নবী [সাঃআঃ] জুমুআর দিন ফাজ্‌রের সলাতের প্রথম রাকআতে “আলিফ লা-ম মীম তানযীল” [ সূরাহ্ আস্‌ সাজদাহ্‌] ও দ্বিতীয় রাকআতে “হাল আতা-আলাল ইনসা-নি”[অর্থাৎ সূরাহ্ আদ দাহ্‌র] তিলাওয়াত করিতেন। {১}

{১} সহীহ : বোখারী ৮৯১, মুসলিম ৮৮০, আহমাদ ১০১০২। সালাতের কিরাতের বর্ণনা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

৮৩৯. উবায়দুল্লাহ ইবনি আবু রাফি [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, মারওয়ান আবু হুরায়রাহ্‌ [রাদি.]-কে মাদীনায় তাহাঁর স্থলাভিষিক্ত করে মাক্কায় গেলেন। এ সময় আবু হুরায়রাহ্‌ [রাদি.] জুমুআর সলাতে আমাদের ঈমামতি করিলেন। তিনি সলাতে সূরাহ্ আল জুমুআহ প্রথম রাক্আতে ও সূরাহ্ “ইযা জা-আকাল মুনাফিকূন [সূরাহ্‌ আল মুনা-ফিকূন] দ্বিতীয় রাক্আতে তিলাওয়াত করিলেন। তিনি বলেন আমি রাসূল [সাঃআঃ]-কে জুমুআর সলাতে এ দুটি সূরাহ্ তিলাওয়াত করিতে শুনিয়াছি। {১}

{১} সহীহ : মুসলিম ৮৭৭, তিরমিজি ৫১৯, ইবনি মাজাহ ১১১৮। সালাতের কিরাতের বর্ণনা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

৮৪০. নুমান ইবনি বাশীর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] দুঈদে ও জুমুআর সলাতে সূরাহ্ “সাব্বিহিস্মা রব্বিকাল আলা” [সূরাহ্ আলা] ও “হাল আতাকা হাদীসুল গা-শিয়াহ্‌” [সূরাহ্ গা-শীয়াহ্‌] তিলাওয়াত করিতেন। আর ঈদ ও জুমুআহ একদিনে হলে এ দুটি সূরাহ্ তিনি দু সলাতেই পড়তেন। {১}

{১} সহীহ : মুসলিম ৮৭৮, আবু দাউদ ১১২২, নাসায়ী ১৪২৪, তিরমিজি ৫৩৩, ইবনি মাজাহ ১২৮১। সালাতের কিরাতের বর্ণনা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

৮৪১. উবায়দুল্লাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

উমার ইবনুল খাত্ত্বাব [রাদি.] আবু ওয়াকিদ আল লায়সীকে জিজ্ঞেস করিলেন যে রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] দুঈদেরর সলাতে কি পাঠ করিতেন? রাবী বলেন, তিনি উভয় ঈদের সলাতে “ক্বাফ ওয়াল কুরা-আনিল মাজীদ” [সূরাহ্ ক্বাফ] ও “ইক্বতারাবাতিস সা-আহ” [সূরাহ্ আল ক্বামার] তিলাওয়াত করিতেন। {১}

{১} সহীহ : মুসলিম ৮৯১, আবু দাউদ ১১৫৪, তিরমিজি ৫৩৪, সহীহ ইবনি হিব্বান ২৮২০। হাদিসের রাবী উবায়দুল্লাহ হলেন ইবনি আবদুল্লাহ ইবনি উত্ববাহ্ আল হুজালী আল মাদানী, সাতজন ফকীহদের মধ্যে অন্যতম যিনি ৯৯ হিঃ মৃত্যুবরণ করেন। তিনি উমার [রাদি.] হইতে এ হাদিসটি মুরসাল সূত্রে বর্ণনা করিয়াছেন। কারণ তিনি উমার [রাদি.]-এর সাক্ষাৎ লাভ করেননি। তবে মুসলিম-এর অপর একটি বর্ণনায় হাদিসটি উবায়দুল্লাহ [রাদি.] আবু ওয়াক্বিদ আল লায়সী [রাদি.]-এর থেকে বর্ণনা করিয়াছেন। অতএব হাদিসটি এ দৃষ্টিকোণ থেকে মুত্তাসিল এবং সহীহ। সালাতের কিরাতের বর্ণনা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

৮৪২. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ফাজ্‌রের দু রাক্আত সলাতে “কুল ইয়া –আয়্যুহাল কা-ফিরুন” ও “ কুল হুওয়াল্লা-হু আহাদ” তিলাওায়াত করিয়াছেন। {১}

{১} সহীহ : মুসলিম ৭২৬, আবু দাউদ ১২৫৬, নাসায়ী ৯৪৫। সালাতের কিরাতের বর্ণনা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

৮৪৩. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ফাজ্‌রের দু রাক্আত সলাতে যথাক্রমে সূরাহ্ বাক্বারার এ আয়াত “কূলূ আ-মান্না বিল্লা-হি ওয়ামা-উনযিলা ইলায়না-“ এবং সূরাহ্ আ-লি ইমরান-এর এ আয়াত কুল ইয়া –আহলাল কিতাবে “তাআলাও ইলা- কালিমাতিন সাওয়া-য়িন বায়নানা- ওয়া বায়নাকুম” পাঠ করিতেন। {১}

{১} সহীহ : মুসলিম ৭২৭, নাসায়ী ৯৪৪। সালাতের কিরাতের বর্ণনা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

অধ্যায়ঃ ১২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

৮৪৪. [আবদুল্লাহ] ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেছেন রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]

 بِسْمِ اللهِ

বিসমিল্লা-হ” –এর সাথে সলাত শুরু করিতেন। [ঈমাম তিরমিজি এ হাদিস বর্ণনা করেন এবং বলেন, এ হাদিসের সানাদ শক্তিশালী নয়]। {১}

{১} সানাদ দুর্বল : তিরমিজি ২৪৫। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

৮৪৫. ওয়ায়িল ইবনি হূজর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনিয়াছি, তিনি সলাতে

غَيْرِ الْمَغْضُوْبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّيْنَ

গয়রিল মাগযূবি আলাইহিম ওয়ালায্ যোয়াল্‌লীন” পড়ার পর সশব্দে আমীন বলেছেন। {১}

{১} সহীহ : আবু দাউদ ৯৩২, তিরমিজি ২৪৮, ইবনি মাজাহ ৮৫৫, দারিমী ১২৮৩; শব্দবিন্যাস তিরমিজির। সালাতের কিরাতের বর্ণনা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

৮৪৬. আবু যুহায়র আন্ নুমায়রী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমরা এক রাতে রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাথে বের হলাম। আমরা এমন এক ব্যক্তির নিকট এলাম যিনি [সলাতের মধ্যে] আল্লাহর কাছে আকুতি- মিনতির সাথে দুআ করছিলেন। নবী [সাঃআঃ] বললেন, লোকটি তার জন্য জান্নাত ঠিক করে নিল, যদি সে এতে মোহর লাগায়। এক ব্যক্তি বলিল, হে আল্লাহর রাসূল! কি দিয়ে মোহর লাগাবে ? নবী [সাঃআঃ] বললেন, আমীন দিয়ে। {১}

{১} জইফ : আবু দাউদ ৯৩৮, জইফ আত তারগীব ২৭১। কারণ এর সানাদে সবীহ ইবনি মুহাররায রয়েছে যার সম্পর্কে ঈমাম যাহাবী [রাহিমাহুল্লাহ] তার থেকে হাদিস বর্ণনা করিতে গিয়ে মুহাম্মাদ ইবনি ইউসুফ আল শুরইয়াযী একাকী হয়েছে। আলবানী [রাহিমাহুল্লাহ] বলেনঃ এর মাধ্যমে ঈমাম যাহাবী তাকে মাজহূল বলিতে চেয়েছেন। আর ইবনি হিব্বান [রাহিমাহুল্লাহ]-এর তাকে বিশ্বস্ত বলাটা গ্রহণযোগ্য নয়। ইবনি আবদুল বার [রাহিমাহুল্লাহ]-ও হাদিসটির সানাদকে দুর্বল বলেছেন। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

৮৪৭. আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] সূরাহ্ আরাফ দুভাগে ভাগ করে মাগরিবের সলাতের দু রাক্‌আতে তিলাওয়াত করিলেন। {১}

{১} সহীহ : বোখারী ১/১৯৭, নাসায়ী ৯৯১, আবু দাউদ ৮১২। সালাতের কিরাতের বর্ণনা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

৮৪৮. উক্ববাহ্ ইবনি আমির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি সফরে নবী [সাঃআঃ]–এর উটের নাকশী ধরে ধরে সামনের দিকে চলতাম। নবী [সাঃআঃ] আমাকে বললেন, হে উক্ববাহ্‌! আমি কি তোমাকে পাঠ করার মত দুটি উত্তম সূরাহ্ শিক্ষা দেব? তারপর তিনি আমাকে “কুল আঊযু বিরব্বিল ফালাক্ব” [সূরাহ্ ফালাক্ব] ও “কুল আঊযু বিরব্বিন্না-স” [সূরাহ্ আন্‌ না-স] শিখালেন। কিন্তু এতে আমি খুব খুশী হয়েছি বলে মনে করিলেন না। পরে তিনি ফাজ্‌রের সলাতের জন্য উট হইতে নামলেন। এ দুটি সূরাহ্ দিয়েই আমাদেরকে সলাত আদায় করালেন। সলাত শেষ করে তিনি আমার প্রতি লক্ষ্য করে বললেন, কি দেখলে হে উক্ববাহ্‌। {১}

{১} সহীহ : আবু দাউদ ১৪৬২, নাসায়ী ৪৫৩৬, আহমাদ ৪/১৪৯, ১৫০, ১৫৩, হাকিম ১/৫৬৭। যদিও আবু দাউদ-এর সানাদে দুর্বলতা রয়েছে কিন্তু নাসায়ী ও আহমাদ-এর সানাদটি সহীহ। সালাতের কিরাতের বর্ণনা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

৮৪৯. জাবির [রাদি.] ইবনি সামুরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] জুমুআর দিন রাতে [অর্থাৎ বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে] মাগরিবের সলাতে “কুল ইয়া-আইউহাল কা-ফিরুন” [সূরাহ্ আল কা-ফিরুন] ও “কুল হুওয়াল্ল-হু আহাদ” [সূরাহ্ ইখলাস] পাঠ করিতেন। এ হাদিসটি শারহে সুন্নায় বর্ণিত হয়েছে। {১}

{১} খুবই দুর্বল : ইবনি হিব্বান ১৮৪১, যঈফাহ্ ৫৫৯। ঈমাম বায়হাক্বী [রাহিমাহুল্লাহ] হাদিসটি সাঈদ ইবনি সিমাল ইবনি হারব তার পিতা হইতে এ সূত্রে বর্ণনা করে বলেনঃ আমি হাদিসটি জাবির [রাদি.] ইবনি সামুরাহ্ থেকে বর্ণিত বলেই জানি। অতঃপর তিনি হাদিসটি উল্লেখ করেন। ইবনি হিব্বান বলেনঃ মাহফূজ হলো যেমাক থেকে অর্থাৎ- সঠিক হলো হাদিসটি মুরসাল যাতে জাবির [রাদি.]-এর উল্লেখ নেই। আর তিনি [ইবনি হিব্বান] যার কথা উল্লেখ করিয়াছেন তিনি এ সাঈদ। আর ইবনি হিব্বান যদিও তাকে বিশ্বস্ত বলেছেন কিন্তু আবু হাতিম তাকে মাতরূকুল হাদিস বলেছেন। আর হাফিয ইবনি হাজার আবু হাতিম-এর কথার উপর নির্ভর করিয়াছেন বা তার কথা সমর্থন করিয়াছেন এবং তিনি ফাতহুল বারীতে বলেছেনঃ মাহফূজ হলো রসূল সাঃআঃ এ দুটি সূরাহ্ মাগরিবের সুন্নাতে পড়েছেন। আলবানী [রাহিমাহুল্লাহ] বলেনঃ আবু দাউদ ও অন্যান্যরা হাদিসটি ইবনি উমার থেকে সহীহ সানাদে বর্ণনা করিয়াছেন। এই হাদিসটির তাহকীকঃ খুবই দুর্বল

৮৫০. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

ইবনি মাজাহ্‌ এ হাদিসটি ইবনি উমার [রাদি.] হইতে নকল করিয়াছেন। কিন্তু এতে “লায়লাতুল জুমুআহ্‌” [অর্থাৎ- জুমুআর রাত] উল্লেখ নেই। {১}

{১} জইফ : ইবনি মাজাহ ৮৩৩। ইবনি মাজাহ হাদিসটি তাহাঁর সুনানে বর্ণনা করিয়াছেন। তার শিক্ষক আহমাদ ইবনি বুদায়ল ব্যতীত বাকী সকল রাবীগণ বিশ্বস্ত, বোখারীর রাবী। তার [আহমাদ ইবনি বুদায়ল] মধ্যে স্মৃতিশক্তিজনিত ত্রুটি রয়েছে। ঈমাম নাসায়ী বলেনঃ তার কোন সমস্যা নেই। আর ইবনি আদী বলেনঃ তিনি [আহমাদ ইবনি বুদায়ল] হাফস্ ইবনি গিয়াস এবং আরো অনেকের থেকে কতগুলো হাদিস বর্ণনা করেছে যেগুলো আমার মতে মুনকার। আলবানী [রাহিমাহুল্লাহ] বলেনঃ তার [আহমাদ] এ হাদিসটি হাফস্ ইবনি গিয়াস থেকে। ইবনি হাজার ফাতহুল বারীতে বলেনঃ যদিও সানাদটি বাহ্যিকভাবে সহীহ কিন্তু মূলত তা মালুল [দোষযুক্ত]। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

৮৫১. আবদুল্লাহ ইবনি মাস্ঊদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি গুনে শেষ করিতে পারবো না যে, আমি কত বার রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে মাগরিবের সলাতের পরের ও ফাজ্‌রের সলাতের আগের দু [রাকআতে] সুন্নাতে “কুল ইয়া-আইউহাল কা-ফিরুন” [সূরাহ্ আল কা-ফিরূন] ও “কুল হুওয়াল্ল-হু আহাদ” [সূরাহ্ ইখলাস] তিলাওয়াত করিতে শুনিয়াছি। {১}

{১} হাসান সহীহ : তিরমিজি ৪৩১, ইবনি মাজাহ ৮৩৩। দারাকুত্বনী বলেনঃ এর সানাদে কতিপয় রাবী ভুল করিয়াছেন।এই হাদিসটির তাহকীকঃ হাসান সহীহ

৮৫২. ইবনি মাজাহ হইতে বর্ণীতঃ

এ হাদিসটি ইবনি মাজাহ্‌ আবু হুরায়রাহ্‌ [রাদি.] হইতে বর্ণনা করিয়াছেন, কিন্তু তার বর্ণনায় “মাগরিবের পর” শব্দ নেই। {১}

{১} সহীহ : ইবনি মাজাহ ১১৪৮। সালাতের কিরাতের বর্ণনা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

৮৫৩. সুলায়মান ইবনি ইয়াসার [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আবু হুরায়রাহ্‌ [রাদি.] বলেছেন, আমি অমুক লোক ছাড়া আর কোন লোকের পিছনে রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সলাতের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ সলাত আদায় করিনি। সুলায়মান বলেন, আমিও ওই লোকের পিছনে সলাত আদায় করেছি। তিনি যুহরের প্রথম দু রাক্আত অনেক লম্বা করে পড়তেন। আর শেষ দু রাক্আতকে ছোট করে পড়তেন। আসরের সলাত ছোট করিতেন। মাগরিবের সলাতে কিসারে মুফাস্‌সাল সূরাহ্ পাঠ করিতেন। ইশার সলাতে আওসাতে মুফাস্‌সাল পাঠ করিতেন আর ফাজ্‌রের সলাতে তিওয়ালে মুফাস্‌সাল সূরাহ্ পাঠ করিতেন। {৮৭২] নাসায়ী ও ইবনি মাজাহ্‌ও এ বর্ণনাটি নকল করিয়াছেন। কিন্তু তার বর্ণনা আসরের সলাত ছোট করিতেন পর্যন্ত। {১}

{১} সহীহ : নাসায়ী ৯৮৩। সালাতের কিরাতের বর্ণনা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

৮৫৪. উবাদাহ্ ইবনুস্ সামিত [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমরা রাসূল [সাঃআঃ]–এর পিছনে ফাজ্‌রের সলাতে ছিলাম। তিনি যখন ক্বিরাআত শুরু করিলেন, তখন তাহাঁর তিলাওয়াত করা কষ্টকর ঠেকল। তিনি সলাত শেষ করে বললেন, তোমরা মনে হয় ইমামের পিছনে ক্বিরাআত পড়। আমরা আরজ করলাম, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা ক্বিরাআত পাঠ করি। তিনি বললেন, সূরাহ্ ফাতিহা ছাড়া আর কিছু পাঠ করিবে না। কারণ যে ব্যক্তি এ সূরাহ্ পাঠ করিবে না তার সলাত হবে না। {১}নাসায়ী এ অর্থে বর্ণনা করিয়াছেন, কিন্তু আবু দাঊদের আর এক বর্ণনায় আছেঃ নবী [সাঃআঃ] বললেন, কি হল কুরআন আমার সাথে এভাবে টানাটানি করছে কেন? আমি যখন সশব্দে ক্বিরাআত পাঠ করি তখন তোমরা সূরাহ্‌ ফাতিহাহ্‌ ছাড়া আর কিছু পাঠ করিবে না। {2]

{১} জইফ : আবু দাউদ ৮২৩, ৮২৪; নাসায়ী ৯১১। আলবানী বলেনঃ لَا تَفْعَلُوا اِلَّا بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ আন্ওয়ার শাহ কাশ্মীর-এর ধারণা মতে এ ইবারতের মাধ্যমে ইমামের পিছনে সূরাহ্ আল ফাতিহাহ্ পড়া ওয়াজিব সাব্যস্ত হয় না, বরং জায়িয সাব্যস্ত হয়। কারণ নাসির পরে ইযতিযনা বৈধতার উপকারিতা দেয় কুরআনে যার অনেক দৃষ্টান্ত রয়েছে। যে আরো বিস্তারিত জানতে চায় সে যেন আন্ওয়ার শাহ কাশ্মীরীর রচিত গ্রন্থ فَيْضُ الْقَدِيْرِ দেখে নেই। আর একটি সহীহ হাদিসের বর্ণনা لَا تَفْعَلُوا اِلَّا أَنْ يَقْرَأَ أَحَدُكُمْ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ টি তার সে কথাকেই প্রমাণ করা। অতএব এটি যেন ইমামের পিছনে সূরাহ্ আল ফাতিহাহ্ পড়া ওয়াজিব না হওয়ার দলীল। হাদিসটি ঈমাম তিরমিজি হাসান বলেছেন। তবে আবু দাউদ-এর সানাদটি দুর্বল। কারণ তার সানাদে নাফি ইবনি মাহমূদ ইবনি রাবি রয়েছে যাকে ঈমাম যাহাবী অপরিচিত হিসেবে উল্লেখ করিয়াছেন। {2] জইফ : আবু দাউদ ৮২৪। কারণ মাকহূল মুদাল্লিস রাবী সে عنعن দিয়ে হাদিস বর্ণনা করে থাকে। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

৮৫৫. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] জেহরী সলাত অর্থাৎ শব্দ করে ক্বিরাআত পড়া সলাত শেষ করে সলাত আদায়কারীদের দিকে ফিরে বললেন, তোমাদের কেউ কি এখন আমার সাথে ক্বিরাআত তিলাওয়াত করেছ? এক ব্যক্তি বলিল, হাঁ, হে আল্লাহর রাসূল [আমি পড়েছি]। রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেন, তাই তো, আমি সলাতে মনে মনে বলছিলাম, কি হল, আমি ক্বিরাআত পাঠ করিতে আটকিয়ে যাচ্ছি কেন? আবু হুরায়রাহ্‌ [রাদি.] বলেন, রসূলের এ কথা শুনার পর লোকেরা রসূলের পেছনে জেহরী সলাতে ক্বিরাআত পাঠ বন্ধ করে দিয়েছিল। {১}

{১} সহীহ : আবু দাউদ ৮২৬, তিরমিজি ৩১২, নাসায়ী ৯১৯, মালিক ২৮৬, আহমাদ ৮০০৭, ইবনি মাজাহ ৮৪৮। হাদিসটি আবু হাতিম আর্ রযী, ইবনি হিব্বান এবং ইবনুল ক্বইয়্যিম আল জাওযী [রাহিমাহুল্লাহ] সহীহ বলেছেন। কেউ কেউ দাবী করিয়াছেন যে, فَانْتَهَى النَّاسُ… إلى أخره অংশটুকু সাহাবী আবু হুরাইরাহ [রাদি.]-এর উক্তি যা হাদীসে প্রবেশ করানো হয়েছে। তবে এ দাবীর স্বপক্ষে কোন শক্তিশালী দলীল নেই। এমনকি ইবনুল ক্বইয়্যিম [রাহিমাহুল্লাহ] এ কথাটি প্রত্যাখ্যান করিয়াছেন। আর বায়হাক্বীতে শাহিদ বর্ণনাও রয়েছে যা ঈমাম সুয়ূত্বী [রাহিমাহুল্লাহ]-ও বর্ণনা করিয়াছেন। সালাতের কিরাতের বর্ণনা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

৮৫৬. ইবনি উমার [রাদি.] এবং আবদুল্লাহ ইবনি আনাস আল-বায়াযী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তারা বলেন, নবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ সলাত আদায়কারী সলাতরত অবস্থায় তার পরওয়ারদিগারের সাথে একান্তে আলাপ করে। তাই তার উচিত সে কি আলাপ করে তার প্রতি লক্ষ্য রাখা। অতএব একজনের কুরআন তিলাওয়াতের শব্দ অন্যজনের কানে যেন না পৌঁছে। {১}

{১} সহীহ : আহমাদ ৬০৯২, সহীহাহ্ ১০৬৩। সালাতের কিরাতের বর্ণনা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

৮৫৭. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ ঈমাম এজন্য নিয়োগ করা হয় যে, তাকে অনুসরণ করা হবে। তাই ঈমাম আল্লা-হু আকবার বললে তোমরাও আল্লা-হু আকবার বলবে। ঈমাম যখন ক্বিরাআত তিলাওয়াত করিবে, তোমরা চুপ থাকিবে। {১}

{১} সহীহ : আবু দাউদ ৯৭৩, নাসায়ী ৯২১, ইবনি মাজাহ ৮৪৬, সহীহুল জামি ২৩৫৮। সালাতের কিরাতের বর্ণনা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

৮৫৮. আবদুল্লাহ ইবনি আবু আওফা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী [সাঃআঃ]-এর দরবারে হাজির হয়ে আরয করিলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি কুরআনের কোন অংশ শিখে নিতে সক্ষম নই। তাই আপনি আমাকে এমন কিছু শিখিয়ে দিন যা আমার জন্য যথেষ্ট হবে। উত্তরে নবী [সাঃআঃ] বললেন, তুমি এই [দুআ] পড়ে নিবেঃ

سُبْحَانَ اللهِ وَالْحَمْدُ لِلّهِ وَلَا إِلهَ اِلَّا اللّهُ اللّهُ أَكْبَرُ وَلَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ اِلَّا بِاللهِ

“আল্লাহ্‌ তাআলা পবিত্র। সব প্রশংসা তাহাঁর। আল্লাহ্‌ ছাড়া প্রকৃত কোন মাবুদ নেই। আল্লাহ্‌ অতি বড় ও মহান। গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার শক্তি ও ইবাদাত করার তাওফীক আল্লাহরই কাছে”। ঐ ব্যক্তি আরয করিল, হে আল্লাহর রাসূল! এসব তো আল্লাহর জন্য। আমার জন্য কি? উত্তরে নবী [সাঃআঃ] বললেন, তোমার জন্য পড়বেঃ

اللّهُمَّ ارْحَمْنِىْ وَعَافِنِىْ وَاهْدِنِىْ وَارْزُقْنِىْ

“হে আল্লাহ্‌! আমার উপর রহম কর। আমাকে নিরাপদে রাখ। আমাকে হিদায়াত দান কর। আমাকে রিয্ক দাও”। তারপর লোকটি নিজের দুহাত দিয়ে এভাবে ইশারা করিল আবার বন্ধ করিল যেন সে পেয়েছে বলে বুঝাল। এটা দেখে নবী [সাঃআঃ] বললেনঃ এ ব্যক্তি তার দুহাত কল্যান দিয়ে ভরে নিল। {১} কিন্তু নাসায়ীর রাবীগন এই বর্ণনা শেষ করিয়াছেন “ইল্লা-বিল্লা-হ” পর্যন্ত।

{১} হাসান : আবু দাউদ ৮৩২। এ হাদিসের আরো শাহিদমূলক হাদিস রয়েছে।এই হাদিসটির তাহকীকঃ হাসান হাদিস

৮৫৯. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, নবী [সাঃআঃ] যখন “সাব্বিহিস্মা রব্বিকাল আলা [সুরাহ আলা]পড়তেন তখন বলিতেন, “সুবহানা রাব্বিয়াল আলা” [আমি আমার উচ্চ মর্যাদাবান রব্বুল আলামীনের পবিত্রতা বর্ণনা করছি]।{১}

{১} সহীহ : আবু দাউদ ৮৮৬, আহমাদ ২০৬৬। তবে আবু দাউদ হাদিসটি ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে মাওকুফ সূত্রে বর্ণিত বলে মালুল বলেছেন। এর সানাদে আবু ইসহক আস্ সাবিয়ী যিনি মুখতালাত্ব [স্মৃতিশক্তি গড়পড়] ছিলেন। কিন্তু ঈমাম হাকিম এটিকে বোখারী মুসলিমের শর্তানুযায়ী সহীহ বলেছেন এবং ঈমাম যাহাবী তা সমর্থন করিয়াছেন। সালাতের কিরাতের বর্ণনা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

৮৬০. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমাদের যে ব্যক্তি আর-বি সুরাহ ওয়াত তীনি ওয়াযযাইতুন পড়তে পড়তে “আলায়সাল্ল-হু বিআহকামিল হা-কিমীন” [আল্লাহ্‌ কি সবচেয়ে বড় হাকীম নন?] পর্যন্ত পৌছবে সে যেন বলে, “বালা- ওয়াআনা- আলা- যা-লিকা মিনাশ শাহিদীন” {সুরাহ আততীন] [হাঁ, আমি এ কথার সাক্ষ্যদানকারীদের একজন]। আর যে ব্যক্তি সুরাহ ক্বিয়ামাহ পড়তে “আলায়সা যা-লিকা বিক্বা-দিরীন আলা- আন্ ইউহয়িয়াল মাওতা-” [সে আল্লাহর কি এ শক্তি নেই যে, তিনি মৃতদেরকে জীবিত করে উঠাবেন], তখন সে যেন বলে, “বালা” [হাঁ, তিনি তা করিতে সমর্থ]। আর যে ব্যক্তি সুরাহ ওয়াল মুরসালা-ত পড়তে পড়তে “ফাবি আইয়ী হাদিসিন বাদাহু ইউমিনুন” [এরপর এরা কোন কথার উপর ঈমান আনবে?”] এ পর্যন্ত পৌঁছে সে যেন বলে, “আ-মান্না বিল্লাহ” [আমরা আল্লাহর উপর ঈমান এনেছি] । আবু দাউদ, তিরমিজি এ হাদিসটিকে “শাহিদীন” পর্যন্ত বর্ণনা করিয়াছেন।{১}

{১} জইফ : আবু দাউদ ৮৮৭, তিরমিজি ৩৩৪৭, জইফ আল জামি ৫৭৮৪। কারণ এর সানাদে একজন বেনামী দিহাতী [গ্রাম্যব্যক্তি] রয়েছে।এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

৮৬১. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাঁর কিছু সাহাবীগনের কাছে এলেন। তাদেরকে তিনি সুরাহ আর রাহমানের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তিলাওয়াত করে শুনালেন। সাহাবীগন চুপ হয়ে শুনলেন। তারপর রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেন, এই সুরাটি আমি লায়লাতুল জিন্নি [জিনদের সাথে দেখা হবার রাতে] জিনদের পড়ে শুনিয়েছি। জিনেরা তোমাদের চেয়ে এর উত্তর ভালো দিয়েছে। আমি যখনই “তোমাদের রবের কোন নিয়ামাতকে তোমরা অস্বীকার করিতে পারবে” পর্যন্ত পৌঁছেছি তখনই তারা বলে উঠেছে, আর-বি “হে আমাদের রব! আমরা তোমার কোন নিআমাতকে অস্বীকার করিনা। তোমারই সব প্রশংসা। তিরমিজি বলেছেন, এ হাদিসটি গরীব। {১}

{১} হাসান : তিরমিজি ৩২৯১, সহীহ আল জামি ৫১৩৮। ঈমাম তিরমিজি বলেনঃ আমরা হাদিসটি যুহায়র ইবনি মুহাম্মাদ -এর সূত্রে আল ওয়ালীদ ইবনি মুসলিম থেকেই পেয়েছি। আহমাদ ইবনি হাম্বাল বলেনঃ শামের [সিরিয়ার] অধিবাসী যুহায়র ইবনি মুহাম্মাদ থেকে ইরাক্বের অধিবাসী ওয়ালীদ ইবনি মুসলিম হাদিস বর্ণনা করেননি। যেন তিনি অপর একজন ব্যক্তি যার নাম তারা তার থেকে বর্ণিত মুনকার হাদিসসমূহ ত্রুটিমুক্ত করার জন্য তার নাম পরিবর্তন করেছে। {ঈমাম তিরমিজি [রাহিমাহুল্লাহ]] বলেনঃ আমি ঈমাম বোখারী [রাহিমাহুল্লাহ]-কে বলিতে শুনিয়াছি, তিনি বলেন, শামবাসীগণ ও ইরাক্ববাসী যুহায়র ইবনি মুহাম্মাদ থেকে অনেক মুনকার হাদিস বর্ণনা করেছে। আলবানী [রাহিমাহুল্লাহ] বলেনঃ এ হাদিসটি আল ওয়ালীদ ইবনি মুসলিম যুহায়র ইবনি মুহাম্মাদ আশ্ শামী থেকে বর্ণনা করিয়াছেন। অতএব, হাদিসটি এ সানাদে মুনকার। তাই ঈমাম হাকিম-এর মুস্তাদরাকে হাকিমে বোখারী মুসলিমের শর্তানুযায়ী হাদিসটিকে সহীহ বলা সঠিক তা থেকে অনেক দূরবর্তী বিষয়। কারণটি উপরেই বিবৃত হয়েছে। তবে হাদিসটির ইবনি উমার থেকে বর্ণিত একটি শাহিদ হাদিস রয়েছে যেটি ইবনি জারীর আত ত্ববারী তার তাযামীরে এবং খত্বীব বাগদাদী তার تَارِيْخُ بَغْدَادِ [তা-রীখু বাগদা-দ]-এ এবং বাযযার সহ আরো অনেকে বর্ণনা করিয়াছেন। আর তাদের রাবীগণ সকলেই বিশ্বস্ত তবে ইয়াহ্ইয়া ইবনি সুলায়ম আত্ব ত্বয়িফী ব্যতীত যার স্মৃতিশক্তিতে দুর্বলতা রয়েছে। যদিও বোখারী মুসলিম তার হাদিস দ্বারা দলীল পেশ করিয়াছেন। অতএব সার্বিক দিক বিবেচনায় হাদিসটি হাসান যদি আল্লাহ চায়। আর ঈমাম সুয়ূত্বী [রাহিমাহুল্লাহ] اَلدَّرُّ الْمَنْسُوْرُ [আদ্ দাররুল মানসূর] গ্রন্থে হাদিসের সানাদটি সহীহ আখ্যায়িত করায় শিথিলতা রয়েছে। এই হাদিসটির তাহকীকঃ হাসান হাদিস

অধ্যায়ঃ ১২. তৃতীয় অনুচ্ছেদ

৮৬২. মুআয ইবনি আবদুল্লাহ আল জুহানী [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, জুহাইনা বংশের এক ব্যক্তি তাকে বলেছেন, তিনি রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে ফাজরের সলাতের দুরাকাতেই সুরাহ ইযা যুলযিলাত তিলাওয়াত করিতে শুনেছেন। আমি বলিতে পারি না, রসুল [সাঃআঃ] ভুলে গিয়েছিলেন না ইচ্ছা করেই পড়েছিলেন। {১}

{১} হাসান সহীহ : আবু দাউদ ৮১৬। আলবানী [রাহিমাহুল্লাহ] বলেনঃ আমাদের নিকট স্পষ্ট যে, রসূল সাঃআঃ ফাজরের [ফজরের] সলাতে সূরাহ্ যিলযাল ইচ্ছাকৃতভাবেই তিলাওয়াত করিয়াছেন ভুলবশত নয় বরং এটি শারীআতে বৈধকরণ এবং শিক্ষা দানের জন্য করিয়াছেন।এই হাদিসটির তাহকীকঃ হাসান সহীহ

৮৬৩. উরওয়াহ ইবনি যুবায়র [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আবুবকর [রাদি.] ফাজরের সলাত আদায় করিলেন। উভয় রাকাতেই সুরাহ বাকারাহ তিলাওয়াত করিলেন।{১}

{১} জইফ : মুয়াত্ত্বা মালিক ১৮২। কারণ উরওয়াহ্ আবু বকর [রাদি.]-এর সাক্ষাৎ পাননি বিধায় মুনকাতির যা হাদিস দুর্বল হওয়ার অন্যতম একটি কারণ।এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

৮৬৪. ফুরাফিসাহ্ ইবনি উমায়র আল হানাফী [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীতঃ

আমি সুরাহ ইউসুফ উসমান ইবনি আফফান [রাদি.] থেকে শুনে শুনে মুখস্ত করেছি। কেননা তিনি এ সূরাকে বিশেষ করে ফাজরের সালাতে প্রায়ই তিলাওয়াত করিতেন। {১}

{১} সহীহ : মালিক ২৭২। হাদিসের রাবী ফারাফিমাহ্ থেকে অনেকেই হাদিস বর্ণনা করিয়াছেন। ঈমাম আজালী ও ইবনি হিব্বান [রাহিমাহুল্লাহ] তাকে বিশ্বস্ত বলেছেন। আর [تَعْجِيْلُ الْمَنْفَعَةِ] তাজীলুল মানফায়াহ্ গ্রন্থের ৩৩২ নং পৃঃ তার জীবনী বিবৃত হয়েছে। সালাতের কিরাতের বর্ণনা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

৮৬৫. আমির ইবনি রবীআহ্ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমরা আমীরুল মুমিনীন খলীফা উমার ফারুক [রাদি.] এর পিছনে ফাজরের সলাত আদায় করলাম। তিনি এর দুরাকাতেই সুরাহ ইউসুফ ও সুরাহ হাজ্জকে থেমে থেমে তিলাওয়াত করিয়াছেন। কেউ আমিরকে জিজ্ঞেস করিল যে, খলীফাহ উমার [রাদি.] ফাজরের ওয়াক্ত শুরু হবার সাথে সাথেই কি সলাত আদায়ে দাঁড়িয়ে যেতেন? উত্তরে আমির বলেন, হাঁ। {১}

{১} সহীহ : মুয়াত্ত্বা মালিক ৩৪, বায়হাক্বী ২/৩৮৯। হাদিসের রাবী আবদুল্লাহ ইবনি আমির ইবনি রবীআহ্ রসূল সাঃআঃ-এর যুগে জন্মগ্রহণ করে ৮৩ হিঃতে মৃত্যুবরণ করেন। আবু যুরআহ্ সহ আরো অনেকে তাকে বিশ্বস্ত বলেছেন। বোখারী মুসলিম [রাহিমাহুল্লাহ] তার হাদিস দ্বারা দলিল পেশ করিয়াছেন। তবে তার পিতা আমির ইবনি রবীআহ্ একজন প্রসিদ্ধ সাহাবী। সালাতের কিরাতের বর্ণনা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

৮৬৬. আমর ইবনি শুআয়ব [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি তাহাঁর পিতার মাধ্যমে তাহাঁর দাদা হইতে বর্ণনা করিয়াছেন। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে মুফাসসাল সুরার [হুজুরাত থেকে নাস পর্যন্ত] ছোট-বড় সকল সুরাহ দিয়েই ফারয সলাতের ঈমামতি করিতে শুনিয়াছি। {১}

{১} জইফ : আবু দাউদ ৪১৮, বায়হাক্বী ২/৩৮৮। সবগুলো পাণ্ডুলিপিতেই মুয়াত্ত্বা মালিক-এর উদ্ধৃতি রয়েছে। আর মুল্লা আলী ক্বারীও তাহাঁর মিরকাতে এটিই নিয়ে এসেছেন যা মূলত ভুল। কেননা ঈমাম মালিক এটি আদৌ বর্ণনা করেননি। বরং এটি আবু দাউদ তাহাঁর সুনানে বর্ণনা করিয়াছেন এবং তাহাঁর সানাদের রাবীগণও বিশ্বস্ত ইবনি ইসহক ব্যতীত যিনি একজন মুদাল্লিস রাবী।এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

৮৬৭. আবদুল্লাহ ইবনি উতবাহ্ ইবনি মাস্ঊদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] মাগরিবের সালাতে সূরাহ হা-মীম আদ দুখান তিলাওয়াত করিলেন। {১}

{১} সানাদটি জইফ : নাসায়ী ৯৯৮।এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply