তাকবিরে তাহরিমার পর দোয়া এবং যা পড়তে হয়

তাকবিরে তাহরিমার পর দোয়া এবং যা পড়তে হয়

তাকবিরে তাহরিমার পর দোয়া এবং যা পড়তে হয় >> মিশকাতুল মাসাবীহ এর মুল সুচিপত্র দেখুন

পর্বঃ ৪, অধ্যায়ঃ ১১

  • অধ্যায়ঃ ১১. প্রথম অনুচ্ছেদ
  • অধ্যায়ঃ ১১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
  • অধ্যায়ঃ ১১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ

অধ্যায়ঃ ১১. প্রথম অনুচ্ছেদ

৮১২. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাকবীরে তাহরীমার পরে ক্বিরাআত শুরু করার আগে কিছু সময় চুপ থাকতেন। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল। আমার পিতা-মাতা আপনার প্রতি কুরবান হোন। আপনি তাকবীর ও ক্বিরাআতের মধ্যবর্তী সময় চুপ থাকেন তাতে কি বলেন? উত্তরে রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেন, আমি বলি,

اللّهُمَّ بَاعِدْ بَيْنِي وَبَيْنَ خَطَايَايَ كَمَا بَاعَدْتَ بَيْنَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ اللّهُمَّ نَقِّنِي مِنْ الْخَطَايَا كَمَا يُنَقَّى الثَّوْبُ الْأَبْيَضُ مِنْ الدَّنَسِ اللّهُمَّ اغْسِلْ خَطَايَايَ بِالْمَاءِ وَالثَّلْجِ وَالْبَرَدِ

“হে আল্লাহ! আমি ও আমার গুনাহসমুহের মধ্যে দূরত্ব করে দাও, যেভাবে তুমি দূরত্ব করে দিয়েছ মাশরিক ও মাগরিবের মধ্যে। হে আল্লাহ! তুমি আমাকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কর গুনাহ হইতে, যেভাবে পরিষ্কার করা হয় সাদা কাপড়কে ময়লা হইতে। হে আল্লাহ্‌! তুমি পানি, বরফ ও মুষলধারে বৃষ্টি দিয়ে আমার গুনাহসমূহকে ধুয়ে ফেল।” {১}

{১} সহীহ : বোখারী ৭৪৪, মুসলিম ৫৯৮, আবু দাউদ ৭৮১, নাসায়ী ৬০, ইবনি মাজাহ ৮০৫, আহমাদ ৭১৬৪, দারিমি ১২৮০, সহীহ ইবনি হিব্বান ১৭৭৫। তাকবিরে তাহরিমার পর দোয়া -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

৮১৩. আলী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, নবী [সাঃআঃ] সলাত আদায় করার জন্য দাঁড়াতেন, আর এক বর্ণনায় আছে সলাত শুরু করার সময়, সর্বপ্রথম তাকবীরে তাহরীমা বলিতেন। তারপর তিনি এই দুআ পাঠ করিতেনঃ

 وَجَّهْتُ وَجْهِىَ لِلَّذِىْ فَطَرَ السَّموتِ وَالاَرْضَ حَنِيْفًا وَّمَا اَنَا مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ اِنَّ صَلَاتِىْ وَنُسُكِىْ وَمَحْيَاىَ وَمَمَاتِىْ لِلّهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ- لَا شَرِيْكَ لَه وَبِذلِكَ اُمِرْتُ وَاَنَا مِنَ الْمُسْلِمِيْنَ. اللّهُمَّ اَنْتَ الْمَلِكُ لَا إِلهَ اِلَّا اَنْتَ رَبِّىْ وَاَنَا عَبْدُكَ ظَلَمْتُ نَفْسِىْ وَاعْتَرَفْتُ بِذَنْبِىْ فَاغْفِرْلِىْ ذُنْوْبِىْ جَمِيْعًا اِنَّه لَا يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ اِلَّا اَنْتَ. وَاهْدِنِىْ لاَحْسَنِ الاَخْلَاقِ لَا يَهْدِىْ لَاحْسَنِهَا اِلَّا اَنْتَ. وَاصْرِفْ عَنِّىْ سَيُّئَهَا لَا يَصْرِفُ عَنِّىْ سَيِّئَهَا اِلَّا اَنْتَ لَبَّيْكَ وَسَعْدَيْكَ وَالْخَيْرَ كُلُّه فِىْ يَدَيْكَ وَالشَّرُّ لَيْسَ اِلَيْكَ اَنَا بِكَ وَاِلَيْكَ تَبَارَكْتَ وَتَعَالَيْتَ. اَسْتَغْفِرُكَ وَاَتُوْبُ اِلَيْكَ 

“ওয়াজ্‌জাহতু ওয়াজহিয়া লিল্লাজী ফাত্বারাস সামাওয়া-তি ওয়াল আর্‌যা হানীফাওঁ ওয়ামা-আনা মিনাল মুশ্‌রিকীন, ইন্না সলা-তি ওয়ানুসুকী ওয়া মাহ্‌ইয়া-ইয়া ওয়ামামা-তী লিল্লা-হি রব্বিল আ-লামীন – লা- শারীকা লাহু, ওয়াবিযা-লিকা উমিরতু, ওয়াআনা- মিনাল মুসলিমীন, আল্ল-হুম্মা আনতাল মালিকু, লা- ইলা-হা ইল্লা – আন্‌তা রব্বী, ওয়াআনা- আব্‌দুকা যলাম্‌তু নাফ্‌সী ওয়াতারাফ্‌তু, বিযাম্বী, ফাগ্‌ফিরলী যুনূবী জামীআ-, ইন্নাহু লা- ইয়াগ্‌ফিরুয যুনূবা ইল্লা- আন্‌তা, ওয়াহ্‌দিনী লিআহ্‌সানিল আখলাক্বি লা- ইয়াহ্‌দী লিয়াহ্‌সানিহা- ইল্লা- আন্‌তা, ওয়াস্‌রিফ আন্নী সায়ইউয়াহা- লা- ইয়াস্‌রিফু আন্নী সায়য়্যইয়াহা- ইল্লা- আন্‌তা লাব্বায়কা ওয়া সাদায়কা, ওয়াল খায়রা কুলুহু ফী ইয়াদায়কা, ওয়াশ্‌ শাররু লায়সা ইলায়কা, আনা- বিকা ওয়া ইলায়কা, তাবা-রাক্‌তা ওয়াতাআ-লায়তা, আস্‌তাগফিরুকা ওয়াআতূবু ইলায়কা” –[অর্থাৎ -“আমি একনিষ্ঠভাবে আমার মুখ ফিরিয়েছি তাহাঁর দিকে, যিনি আসমান ও জমিন সৃষ্টি করিয়াছেন। আমি মুশরিকদের মধ্যে শামিল নই। নিশ্চয় আমার সলাত, আমার কুরবানী, আমার জীবন, আমার মৃত্যু আল্লাহ্‌ রব্বুল আলামীনের জন্য। তার কোন শারীক নেই। আর এ জন্যই আমি আদিষ্ট হয়েছি। আমি মুসলমানের অন্তর্ভূক্ত। হে আল্লাহ্‌! তুমিই বাদশাহ, তুমি ছাড়া আর কোন মাবূদ নেই। তুমি আমার রব। আমি তোমার গোলাম। আমি আমার নিজের উপর যুল্‌ম [অত্যাচার] করেছি। আমি স্বীকার করছি আমার অপরাধ। তুমি আমার সব অপরাধ ক্ষমা কর। তুমি ছাড়া নিশ্চয় আর কেউ অপরাধ ক্ষমা করিতে পারে না। আমাকে পরিচালিত করে না। তুমি দূরে রাখ আমার নিকট হইতে মন্দ কাজ। তুমি ছাড়া মন্দ কাজ থেকে আর কেউ দূরে রাখতে পারে না। হে আল্লাহ্‌ আমি তোমার দরবারে তোমার আদেশ পালনে হাযির। সকল কল্যাণই তোমার হাতে। কোন অকল্যাণই তোমার উপর আরোপিত হয় না। আমি তোমার সাহায্যেই টিকে আছি। তোমার দিকেই ফিরে আছি। তুমি কল্যাণের আধার। আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাই। তোমার দিকেই আমি প্রতাবর্তন করছি।”]

এরপর নবী [সাঃআঃ] যখন রুকূ করিতেন, তখন বলিতেন,

اللّهُمَّ لَكَ رَكَعْتُ وَبِكَ آمَنْتُ وَلَكَ اَسْلَمْتُ خَشَعَ لَكَ سَمْعِىْ وَبَصَرِىْ وَمُخِّىْ وَعَظْمِىْ وَعَصَبِىْ

“আল্ল-হুম্মা লাকা রাকাতু ওয়াবিকা আ-মান্‌তু, ওয়ালাকা আস্‌লাম্‌তু, খাশাআ লাকা সাম্‌ঈ ওয়া বাসারী ওয়া মুখ্‌খী ওয়া আয্‌মী ওয়া আসাবী” – [অর্থাৎ – হে আল্লাহ্‌! আমি তোমারই জন্য রুকূ করলাম। তোমাকেই বিশ্বাস করলাম। তোমার কাছেই নিজেকে সমর্পণ করলাম। তোমার ভয়ে ভীত আমার শ্রবণশক্তি, আমার দৃষ্টিশক্তি, আমার মজ্জা, মগজ আমার অস্থি ও আমার শিরা-উপশিরা।]

এরপর নবী [সাঃআঃ] রুকূ থেকে মাথা উঠাতেন, বলিতেনঃ

اللّهُمَّ رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ مِلْأَ السَّموتِ وَالاَرْضِ وَمَا بَيْنَهُمَا وَمِلْأَ مَا شِئْتَ مِنْ شَىْءٍ بَعْدُ

“আল্ল-হুম্মা রব্বানা- লাকাল হামদু, মিল্‌য়াস সামা-ওয়া-তি ওয়াল আর্‌যি ওয়ামা- বায়নাহুমা- ওয়ামিল্‌য়া মা- শিতা মিন শাইয়্যিন বাদু”-[অর্থাৎ হে আল্লাহ্‌! হে আমাদের প্রতিপালক! আসমান ও জমিন ও এতদুভয়ের ভিতর যা কিছু আছে, সবই তোমার প্রশংসা করছে। এরপরে যা কিছু সৃষ্টি করিবে তারাও তোমার প্রশংসা করিবে।]

এরপর তিনি সাজদায় গিয়ে পড়তেন,

اللّهُمَّ لَكَ سَجَدْتُّ وَبِكَ آمَنْتُ وَلَكَ اَسْلَمْتُ سَجَدَ وَجْهِىَ لِلَّذِىْ خَلَقَه وَصَوَّرَه وَشَقَّ سَمْعَه وَبَصَرَه، تَبَارَكَ اللهُ اَحْسَنُ الْخَالِقِيْنَ

“আল্ল-হুম্মা লাকা সাজাত্তু ওয়াবিকা আমান্‌তু ওয়ালাকা আস্‌লামতু, সাজাদা ওয়াজ্‌হিয়া লিল্লাযী খালাক্বাহু ওয়াসাও্‌ ওয়ারাহু ওয়াশাক্কা সামআহু ওয়া বাসারাহু, তাবারাকাল্ল-হু আহ্‌সানুল খা-লিক্বীন ”– [অর্থাৎ- “হে আল্লাহ্‌! আমি তোমার জন্য সাজদাহ্‌ করছি। তোমার উপর ঈমান এনেছি। তোমার জন্য ইসলাম গ্রহণ করেছি। আমার মুখমন্ডল তার জন্য সাজদাহ্‌ করছে যিনি তাকে সৃষ্টি করিয়াছেন। তাকে আকার আকৃতি দিয়েছেন। তার কান ও চোখ খুলে দিয়েছেন। আল্লাহ্‌ খুবই বারাকাতপূর্ণ উত্তম সৃস্টিকারী।”]

এরপর সর্বশেষ দুআ যা আত্তাহিয়্যাতুর পর ও সালাম ফিরাবার আগে পড়তেন তা হল,

اللّهُمَّ اغْفِرْلِىْ مَا قَدَّمْتُ وَمَا اَخَّرْتُ وَمَا اَسْرَرْتُ وَمَا اَعْلَنْتُ وَمَا اَسْرَفْتُ وَمَا اَنْتَ اَعْلَمُ بِه مِنِّىْ. اَنْتَا لْمُقَدِّمُ وَاَنْتَ الْمُؤَخِّرُ لَا إِلهَ اِلَّا اَنْتَ

“আল্ল-হুম্মাগফিরলী মা- ক্বদ্দাম্‌তু ওয়ামা- আখ্‌খারতু ওয়ামা-আস্‌রারতু ওয়ামা- আলান্‌তু ওয়ামা– আস্‌রাফতু ওয়ামা- আন্‌তা আলামু বিহী মিন্নী, আন্‌তাল মুক্বদ্দিমু ওয়া আন্‌তাল মুআখ্‌খিরু, লা- ইলা-হা ইল্লা- আন্‌তা”- [অর্থাৎ- “হে আল্লাহ্‌! তুমি ক্ষমা করে দাও যা আমি করেছি। আমার সেসব গুনাহও তুমি ক্ষমা করে দাও যা আমি পূর্বে করেছি এবং যা আমি পরে করেছি। আমার ওইসব বাড়াবাড়িও ক্ষমা করে দাও যা আমি আমলে ও সম্পদ খরচে করেছি। আমার ওইসব গুনাহও তুমি ক্ষমা করে দাও যা আমার চেয়ে তুমি ভাল জান। তুমি তোমার বান্দাদের যাকে চাও মান সম্মানে এগিয়ে নাও। আর যাকে চাও পিছে হটিয়ে দাও। তুমি ছাড়া কোন মাবুদ নেই।”] {১}

ঈমাম শাফিঈর এক বর্ণনায় প্রথম দুআয় ফী ইয়াদায়কা– এর পরে আছে,

وَالشَّرُّ لَيْسَ اِلَيْكَ وَالْمَهْدِىُّ مَنْ هَدَيْتَ اَنَا بِكَ وَاِلَيْكَ لَا مَنْجَاءَ مِنْكَ وَلَا مَلْجَاءَ اِلَّا اِلَيْكَ تَبَارَكْتَ

“ওয়াশ্‌ শার্‌রু লায়সা ইলায়কা ওয়াল মাহ্‌দীইউ মান হাদায়তা, আনা- বিকা ওয়া ইলায়কা, লা- মান্‌জা-আ মিন্‌কা ওয়ালা- মাল্‌জা-আ ইল্লা- ইলায়কা তাবা-রাক্‌তা” – [অর্থাৎ- মন্দ তোমার জন্য নয়। সে-ই পথ পেয়েছে যাকে তুমি পথ দেখিয়েছ। আমি তোমার সাহায্যে টিকে আছি। তোমার দিকেই প্রত্যাবর্তন করছি। তোমার পাকড়াও হইতে বাচাঁর কোন জায়গা নেই। তুমি ছাড়া আশ্রয়ের কোন স্থল নেই। তুমি বারাকাতময়।]। ঈমাম শাফিঈ [রহ.]- এর এ রিওয়ায়াতটিও সহীহ।

{১} সহীহ : মুসলিম ৭৭১, মুসনাদে শাফিঈ ২০১, আবু দাউদ ৭৬০, তিরমিজি ৩৪২১, ইবনি মাজাহ ১০৫৪, আহমাদ ৭২৯, সহীহ ইবনি হিব্বান ১৯৭৮।তাকবিরে তাহরিমার পর দোয়া -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

৮১৪. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, এক লোক [তাড়াহুড়া করে] এসে সলাতের কাতারে শামিল হয়ে গেল। তার শ্বাস উঠানামা করছিল। সে বলিল,

اللهُ اَكْبَرُ الْحَمْدُ لِلّهِ حَمْدًا كَثِيرًا طَيِّبًا مُبَارَكًا فِيهِ

আল্লা-হু আকবার, আলহাম্‌দু লিল্লা-হি হামদান কাসীরান তাইয়্যিবাম্‌ মুবা-রাকান ফিহী ”, অর্থাৎ – “ আল্লাহ্‌ মহান। সব প্রশংসা আল্লাহর জন্য, এমন প্রশংসা যা অনেক বেশী পাক-পবিত্র ও বরকতময়।” সলাত শেষে রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেন, তোমাদের মধ্যে কে এ কথা বলেছে? সকলে চুপ হয়ে বসে আছে। তিনি আবার বললেন, তোমাদের মধ্যে কে এ কথাগুলো বলেছে? এবারও কেউ উত্তর দিল না। তিনি তৃতীয়বার জিজ্ঞেস করিলেন, তোমাদের মধ্যে কে বাক্যগুলো উচ্চারণ করেছে? যে ব্যক্তি এ কথাগুলো বলেছে সে আপত্তিকর কিছু বলেনি। এক ব্যক্তি আরয করিল, আমি যখন এসেছি, আমার শ্বাস উঠানামা করছিল। আমিই একথা বলেছি। এবার নবী [সাঃআঃ] বললেন, আমি দেখলাম বারজন মালাক কার আগে কে আল্লাহর কাছে এই কথাগুলো নিয়ে যাবে এ প্রতিযোগিতা করছে। {১}

{১} সহীহ : মুসলিম ৬০০, নাসায়ী ৯০১, আবু দাউদ ৭৬৩, আহমাদ ১২৭১৩, সহীহ ইবনি হিব্বান ১৭৬১, নাসায়ী ৯০১। তাকবিরে তাহরিমার পর দোয়া -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

অধ্যায়ঃ ১১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

৮১৫. আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] সলাত শুরু করার [তাকবীর তাহরীমার] পর এ দুআ পাঠ করিতেন,

 سُبْحَانَكَ اللّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ وَتَبَارَكَ اسْمُكَ وَتَعَالى جَدُّكَ وَلَا إِلهَ غَيْرُكَ

“সুবহা-নাকা আল্ল-হুমা ওয়া বিহাম্‌দিকা ওয়া তাবা-রাকাস্‌মুকা ওয়া তাআলা- যাদ্দুকা ওয়ালা- ইলা-হা গায়রুকা” – [অর্থাৎ- হে আল্লাহ্‌! তুমি পূত পবিত্র। তোমার পূত পবিত্রতা ও প্রশংসা বর্ণনা করার সাথে সাথে আমরা আরও বলছি, তুমি খুবই বারাকাতপূর্ণ। তোমার শান অনেক ঊর্ধ্বে। তুমি ছাড়া কোন মাবূদ নেই।] {১}

{১} সহীহ : আবু দাউদ ৭৭৬, তিরমিজি ২৪৩, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ২৯৯৬। তাকবিরে তাহরিমার পর দোয়া -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

৮১৬. আবু সাঈদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

আর ইবনি মাজাহও এ হাদিসটি আবু সাঈদ [রাদি.] হইতে বর্ণনা করিয়াছেন। ঈমাম তিরমিজি বলেছেন, এ হাদিসটি আমি হারিসাহ্‌ ছাড়া অন্য কারও সূত্রে শুনিনি। তার স্মরণশক্তি সমালোচিত। {১}

{১} সহীহ : ইবনি মাজাহ ৮০৪। আলবানী [রাহিমাহুল্লাহ] বলেনঃ ঈমাম তিরমিজি ছাড়া অন্যরা হারিসাহ্ ছাড়াও অন্যদের সূত্রে হাদিসটি বর্ণনা করিয়াছেন। যেমন- ঈমাম আবু দাউদ ও দারাকুত্বনী আয়িশাহ্ [রাদি.] থেকে অন্য সূত্রে হাদিসটি বর্ণনা করিয়াছেন যার রাবীগণ বিশ্বস্ত। আর এ উভয় সানাদে হাদিসটি শক্তিশালী হয়েছে। যেহেতু আবু সাঈদ [রাদি.] হইতে বর্ণিত এর একটি সহীহ শাহিদ রয়েছে। আবু দাউদ ও অন্যগুলোতে অতিরিক্ত রয়েছেঃ ثُمَّ يَقُوْلُ : لَا اِلهَ اِلَّا اللهُ ثَلَاثًا، ثُمَّ يَقُوْلُ اللهُ اَكْبَرُ ثَلَاثًا، اَعُوْذُ بِاللهِ السَّمِيْعِ الْعَلِيْمِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ مِنْ حَمْزِه وَنَفْخِه وَنَفْثِه، ثُمَّ يَقْرأ; তাকবিরে তাহরিমার পর দোয়া -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

৮১৭. জুবায়র ইবনি মুত্বইম [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে সলাত আদায় করিতে দেখেছেন। তিনি তাকবীর তাহরীমার পর বললেনঃ

اللّهُ أَكْبَرُ كَبِيرًا اللّهُ أَكْبَرُ كَبِيرًا اللّهُ أَكْبَرُ كَبِيرًا وَالْحَمْدُ لِلّهِ كَثِيرًا وَالْحَمْدُ لِلّهِ كَثِيرًا وَالْحَمْدُ لِلّهِ كَثِيرًا وَسُبْحَانَ اللهِ بُكْرَةً وَأَصِيلًا

“আল্ল-হু আকবার কাবীরা-, আল্ল-হু আকবার কাবীরা-, আল্ল-হু আকবার কাবীরা-, ওয়ালহাম্‌দু লিল্লা-হি কাসীরা-, ওয়ালহাম্‌দু লিল্লা-হি কাসীরা-, ওয়ালহাম্‌দু লিল্লা-হি কাসীরা-, ওয়া সুবহা-নাল্ল-হি বুক্‌রাতাওঁ ওয়াআসীলা-” তিনবার বললেন। তারপর বলেছেন,

اَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشَّيْطَانِ، مِنْ نَفْخِه وَنَفْثِه وَهَمْزِه

“আঊযু বিল্লা-হি মিনাশ্‌ শাইত্ব-নির রজীম মিন নাফ্‌খিহী ওয়া নাফ্‌সিহী ওয়া হাম্‌যিহী”। {৮৩৪] কিন্তু তিনি “ওয়ালহাম্‌দু লিল্লা-হি কাসীরা-” উল্লেখ করেননি। তাছাড়া তিনি শেষ দিকে শুধু “মিনাশ্‌ শাইত্ব-নির রজীম” বর্ণনা করিয়াছেন। উমার [রাদি.] বলেছেন, [আরবি] [নাফ্‌খ] অর্থ অহমিকা, [আরবি] [নাফ্‌স] অর্থ কবিতা, আর [আরবি] [হাম্‌য] অর্থ পাগলামী। {১}

{১} জইফ : আবু দাউদ ৭৬৪, ইবনি মাজাহ ৮০৮। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

৮১৮. সামুরাহ্ ইবনি জুনদুব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] থেকে দুটি নীরবতার স্থান স্মরণ রেখেছেন। একটি নীরবতা তাহাঁর তাকবীরে তাহরীমা বাঁধার পর, আর একটি নীরবতা হল,

غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّينَ

“গয়রিল মাগ্‌যূবি আলায়হিম ওয়ালায্‌ যোয়াল্লীন” পাঠ করার পর। উবাই ইবনি কাব [রাদি.]-ও তার বক্তব্য সমর্থন করেন। {১}

{১} জইফ : আবু দাউদ ৭৭৯, ইরওয়া ৫০৫, দারিমী ১২৭৯। কারণ এটি সামুরাহ্ [রাদি.] হইতে হাসান বসরীর বর্ণনা। আর এটি সামুরাহ্ [রাদি.] হইতে হাসান আল বসরীর হাদিস শ্রবণ বিষয়ক কোন প্রসিদ্ধ মতবিরোধ নয় কারণ তিনি সামুরাহ্ [রাদি.] হইতে কিছু হাদিস শ্রবণ করিয়াছেন। বরং এটি এই কারণে যে, হাসান আল বসরী [রাহিমাহুল্লাহ] যদিও একজন মর্যাদাবান ব্যক্তি কিন্তু মুদাল্লিস আন্আনাহ্ সূত্রে হাদিস বর্ণনা করেন। অতএব তার শায়খ থেকে কেবলমাত্র শ্রবণটা এক্ষেত্রে উপকারে আসবে না বরং শ্রবণের বিষয়টি স্পষ্ট করা আবশ্যক। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

৮১৯. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] দ্বিতীয় রাক্‌আত আদায় করার পর উঠে সাথে সাথে সূরাহ্‌ ফাতিহাহ্‌ দ্বারা ক্বিরাআত শুরু করে দিতেন এবং চুপ করে থাকতেন না। {১}

{১} সহীহ : মুসলিম ৫৯৯; তাকবিরে তাহরিমার পর দোয়া -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

অধ্যায়ঃ ১১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ

৮২০. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, নবী [সাঃআঃ] তাকবীর তাহরীমা [আল্ল-হু আকবার] দ্বারা সলাত শুরু করিতেন। তারপর পাঠ করিতেন,

إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِيْ وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ لَا شَرِيكَ لَه وَبِذلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا اَوَّلُ الْمُسْلِمِينَ اللّهُمَّ اهْدِنِي لِأَحْسَنِ الْأَعْمَالِ وَأَحْسَنِ الْأَخْلَاقِ لَا يَهْدِي لِأَحْسَنِهَا اِلَّا أَنْتَ وَقِنِي سَيِّئَ الْأَعْمَالِ وَسَيِّئَ الْأَخْلَاقِ لَا يَقِي سَيِّئَهَا اِلَّا أَنْتَ

“ইন্না সলা-তী ওয়ানুসুকী ওয়া মাহ্‌ইয়া-ইয়া ওয়ামামা-তী লিল্লা-হি রব্বিল আ-লামীন, লা- শারীকা লাহূ ওয়াবিযা-লিকা উমিরতু ওয়াআনা- আও্‌ওয়ালুল মুসলিমীন, আল্ল-হুম্মাহ্‌দিনী লিআহ্‌সানিল আমা-লি এবং আহ্‌সানিল আখলা-ক্বি লা- ইয়াহ্‌দী লিআহ্‌সানিহা- ইল্লা- আন্‌তা ওয়াক্বিনী সায়য়্যিয়াল আমা-লি ওয়া সায়য়্যিয়াল আখলা-ক্বি লা- ইয়াক্বী সায়য়্যিয়াহা- ইল্লা- আন্‌তা”– [অর্থাৎ- আমার সলাত, আমার কুরবানী, আমার জীবন, আমার মৃত্যু আল্লাহ তাআলার জন্য। তাহাঁর কোন শারীক নেই। আর এর জন্যই আমি আদিষ্ট হয়েছি। আমিই হলাম এর প্রতি প্রথম আনুগত্যশীল। হে আল্লাহ! তুমি আমাকে পরিচালিত কর উত্তম কাজ ও উত্তম চরিত্রের পথে। তুমি ছাড়া উত্তম পথে আর কেউ পরিচালিত করিতে পারবে না। আমাকে খারাপ কাজ ও বদ চরিত্র হইতে রক্ষা কর। তুমি ছাড়া এর খারাবি থেকে কেউ আমাকে বাঁচাতে পারবে না।]। {১}

{১} সহীহ : নাসায়ী ৮৯৬। এখানে নাসায়ীতে أَنَا اَوَّلُ الْمُسْلِمِينَ-এর পরিবর্তে وَأَنَا مِنَ الْمُسْلِمِينَ রয়েছে তবে প্রথমটিই সঠিক। দারাকুত্বনীর হাদিসের শেষাংশে রয়েছে শুআয়ব বলেনঃ মুহাম্মাদ ইবনুল মুনকাদির সহ মাদীনার অন্যান্য ফকীহগণ আমাকে বলেছেন, যদি তুমি সেটি পরিবর্তন করে وَأَنَا اَوَّلُ الْمُسْلِمِينَ বলিতে চাও তাহলে আমার মতে এ পরিবর্তনের কোন প্রয়োজনীয়তা নেই। বরং মুসল্লীদের وَأَنَا مِنَ الْمُسْلِمِينَ বলা আবশ্যক। হয় আয়াতের দৃষ্টিকোণ থেকে অথবা আল্লাহর আদিষ্ট বিষয় দ্রুত পালনার্থে। তাকবিরে তাহরিমার পর দোয়া -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

৮২১. মুহাম্মাদ ইবনি মাসলামাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] নাফল সলাত আদায় করিতে দাঁড়ালে বলিতেন,

اللّهُ أَكْبَرُ وَجَّهْتُ وَجْهِيَ لِلَّذِي فَطَرَ السَّموتِ وَالْأَرْضَ حَنِيفًا وَمَا أَنَا مِنْ الْمُشْرِكِيْنَ

“আল্ল-হু আকবার, ওয়াজ্জাহ্‌তু ওয়াজ্‌হিয়া লিল্লাযী ফাত্বারাস্‌ সামা-ওয়া-তি ওয়াল আর্‌যা হানীফাওঁ ওয়ামা আনা- মিনাল মুশ্‌রিকীন”– [অর্থাৎ- আল্লাহ বড় মহামহিম। আমি সে সত্তার দিকেই আমার মুখ ফিরিয়েছি যিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করিয়াছেন। আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই”। ঈমাম নাসায়ী বলেন, অবশিষ্ট হাদিস তিনি [উল্লেখিত] জাবির-এর হাদিসের মতই বর্ণনা করিয়াছেন। তবে তিনি পরিবর্তে বলেছেন, “আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত”। এরপর নবী [সাঃআঃ] বলিতেন,

اللّهُمَّ أَنْتَ الْمَلِكُ لَا إِلهَ اِلَّا أَنْتَ سُبْحَانَكَ وَبِحَمْدِكَ

“আল্ল-হুম্মা আনতাল মালিকু, লা-ইলা-হা ইল্লা- আন্‌তা সুবহা-নাকা ওয়া বিহাম্‌দিকা”– [অর্থাৎ হে আল্লাহ! তুমিই বাদশাহ। তুমি ছাড়া সত্যিকার কোন মাবূদ নেই। তুমি পবিত্র। সব প্রশংসা তোমার জন্য।]। এরপর নবী [সাঃআঃ] ক্বিরাআত শুরু করিতেন। {১}

{১} সহীহ : নাসায়ী ৮৯৮। তাকবিরে তাহরিমার পর দোয়া -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply