তায়াম্মুম করা সম্পর্কে হাদিস
তায়াম্মুম করা সম্পর্কে হাদিস >> মিশকাতুল মাসাবীহ এর মুল সুচিপত্র দেখুন
পর্বঃ ৩, অধ্যায়ঃ ১০
অধ্যায়ঃ ১০. প্রথম অনুচ্ছেদ
অধ্যায়ঃ ১০. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
অধ্যায়ঃ ১০. তৃতীয় অনুচ্ছেদ
অধ্যায়ঃ ১০. প্রথম অনুচ্ছেদ
৫২৬. হুযায়ফাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ সকল মানুষের উপর তিনটি বিষয়ে আমাদের শ্রেষ্ঠত্ব দেয়া হয়েছে। [১] আমাদের [সলাতের] কাতারকে মালায়িকার সারির মত মর্যাদা দেয়া হয়েছে। [২] সমস্ত পৃথিবীকে বানানো হয়েছে আমাদের সলাতের স্থান এবং [৩] মাটিকে করা হয়েছে আমাদের জন্য পবিত্রকারী, যখন আমরা পানি পাবো না। {১}
{১} সহীহ : মুসলিম ৫২২, সহীহ আল জামি ৪২২৩, ইরওয়া ২৮৫, সহীহ ইবনি খুযাইমাহ্ ২৬৪, সহীহ ইবনি হিব্বান ১৬৯৭। তায়াম্মুম করা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
৫২৭. ইমরান [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমরা নবী [সাঃআঃ] -এর সাথে সফরে ছিলাম। তিনি আমাদেরকে সালাত আদায় করালেন। সালাত শেষ করার পর তিনি দ্বখলেন এক ব্যাক্তি পৃথক হয়ে বসে আছে, অথচ সে মানুষের সাথে জামাআতে সালাত আদায় করেনি। তিনি [সাঃআঃ] জিজ্ঞেস করিলেন, হে অমুক! মানুষের সাথে জামাআতে সালাত আদায় করিতে তোমাকে কিসে বাধা দিয়েছে? লোকটি বলিল, আমি নাপাক ছিলাম, অথচ তখন পানি পাচ্ছিলাম না। তিনি [সাঃআঃ] বললেন, তোমার মাটি [তায়াম্মুম মাধ্যমে] ব্যবহার করা উচিত ছিল। আর [পবিত্রতা অর্জনে] এটাই তোমার জন্য যথেষ্ট ছিল। {১}
{১} সহীহ : বোখারী ৩৪৪, মুসলিম ৬৮২, নাসায়ী ৩২১, আহমাদ ১৯৮৯৮, দারিমি ৭৭০, সহীহ ইবনি হিব্বান ১৩০১, ইরওয়া ১৫৬, সহীহ আল জামি ৪০৪৩। তায়াম্মুম করা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
৫২৮. আম্মার [ইবনি ইয়াসির] [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, উমার ইবনুল খাত্তাব- এর নিকট এক ব্যাক্তি এসে বলিল, আমি নাপাক হয়েছি, পানি পেলাম না। আম্মার [রাদি.] উমারকে বললেন, আপনার কি মনে নেই যে, এক সময় আমি ও আপনি উভয়ে [নাপাক] ছিলাম? আপনি [পানি না পাওয়ায়] সালাত আদায় করিলেন না, আর আমি মাটিতে গড়াগড়ি দিয়ে সালাত আদায় করলাম। এরপর ব্যাপারটি নবী [সাঃআঃ] -কে বললাম। তিনি [সাঃআঃ] বললেন, এটাই তোমার জন্য যথেষ্ট ছিল। এ কথা বলার পর নবী [সাঃআঃ] তাহাঁর দুই হাত তালু মাটিতে মারলেন এবং দুহাত [উঠিয়ে] ফুঁ দিলেন।তারপর উভয় হাত দিয়ে নিজের মুখমণ্ডল ও দুই হাত কব্জি পর্যন্ত মাসাহ করিলেন। এভাবে ঈমাম মুসলিমও বর্ণনা করিয়াছেন, যার শেষে শব্দ গুলি হল [নবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমাদের জন্য এটাই যথেস্ট, যে তোমরা হাত মাটিতে মারবে, তারপর হাতে ফুঁ দিবে, অতঃপর মুখমণ্ডল ও হাতের কব্জি পর্যন্ত মাসাহ করিবে। {১}
{১} সহীহ : বোখারী ৩৩৮, মুসলিম ৩৬৮, আবু দাউদ ৩২২, নাসায়ী ৩১২, ইবনি মাজাহ ৫৬৯, আহমাদ ১৮৩৩২, সহীহ ইবনি হিব্বান ১৩০৬, সহীহ ইবনি খুযাইমাহ্ ২৬৮।তায়াম্মুম করা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
৫২৯. আবু জুহায়ম ইবনুল হারিস ইবনুস্ সিম্মাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন , আমি নবী [সাঃআঃ] এর কাছ দিয়ে যাচ্ছিলাম। তখন তিনি প্রসাব করছিলেন। আমি তাঁকে সালাম দিলাম, কিন্তু তিনি আমার সালামের উত্তর দিলেন না। পরে তিনি একটি দেয়ালের নিকট গিয়ে দাঁড়ালেন এবং তাকে নিজের লাঠি দিয়ে খোঁচা মাড়লেন। এর পর দেয়ালের উপর হাত মেরে নিজের চেহারা ও দু হাত মাসাহ করিলেন। অতঃপর আমার সালামের উত্তর নিলেন। মিশকাত সংকলন বলেন, আমি এই হাদিস বুখারি , মুসলিমে এবং হুমায়দীর গ্রন্থেও পাইনি। তবে তিনি এটি শারহুস সুন্নাহ্ গ্রন্থে উল্লেখ করিয়াছেন এবং বলেছেন, এ হাদিসটি হাসান। {১}
{১} আমি [মুহাক্কিক্ব] এ শব্দে হাদিসটি পাইনি, এর মূলটি রয়েছে বোখারী [৩৩৭], মুসলিম [৩৬৯]। এই হাদিসটির তাহকীকঃ নির্ণীত নয়
অধ্যায়ঃ ১০. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৫৩০. আবু যার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ পাক-পবিত্র মাটি মুসলমানকে পবিত্রতার বন্ধনে আবদ্ধ করে, যদি দশ বছরও সে পানি না পায়। পানি যখন পাবে তখন সে যেন তাহাঁর গায়ে পানি লাগায়। এটাই তার জন্য উত্তম। {১} নাসায়ীতে যদি দশ বছরও যদি পানি না পায় পর্যন্ত উনুরুপ বর্ণনা করিয়াছেন।
{১} সহীহ : আবু দাউদ ৩৩২, তিরমিজি ১২৪, ইরওয়া ১৫৩। তায়াম্মুম করা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
৫৩১. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একবার আমরা [কিছু লোক] সফরে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ আমাদের একজন [মাথায়] পাথরের আঘাত পেল এবং তার মাথায় ক্ষত হল। তারপর তার স্বপ্নদোষ হলে সে তার সাথী ভাইদেরকে জিজ্ঞাস করিল, এ অবস্থায় কি আমার জন্য তায়াম্মুম করার সুযোগ আছে? তারা বললেন, এ অবস্থায় [যেহেতু পানি ব্যবিহার করিতে পারছ] তোমার তায়াম্মুম ব্যবহার করার কোন সুযোগ আছে বলে মনে করি না। অতঃপর সে গোসল করিল, আর আতে সে মারা গেলো। আমরা সফর হইতে ফিরে এসে নবী [সাঃআঃ] এর নিকট গেলাম। তাহাঁর নিকট সব ঘটনা বলা হল। তিনি [সাঃআঃ] বললেন, লোকেরা তাকে মেরে ফেলেছে, আল্লাহ্ তাদের কে হত্যা করূন। তারা যখন জানে না তখন অন্যদের কেন জিজ্ঞাস করিল না ? কারণ, না জানার চিকিৎসাই হল জানতে চাওয়া। অথচ তার জন্য তায়াম্মুম করা এবং আহত স্থানে ব্যান্ডেজ বেঁধে তার উপর মাসাহ করাই যথেষ্ট ছিল। অতঃপর নিজের সমস্ত শরীর ধুয়ে নিতে পারতো। {১}
{১} হাসান : اِنَّمَا كَانَ يَكْفِيْهِ অংশটুকু ব্যতীত। আবু দাউদ ৩৩৬। এই হাদিসটির তাহকীকঃ হাসান হাদিস
৫৩২. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
ইবনি মাজাহ এ বর্ণনাটিকে আতা ইবনি আবী রাবাহ হইতে, তিনি ইবনি আব্বাস [রা] হইতে বর্ণনা করিয়াছেন।
এই হাদিসটির তাহকীকঃ নির্ণীত নয়
৫৩৩. আবু সাঈদ আল খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, দুই লোক সফরে বের হল। পথিমধ্যে সালাতের সময় হল, অথচ তাদের পানি ছিল না । তাই তারা দুজনেই পাক মাটিতে তায়ম্মুম করে সালাত আদায় করে নিল। অতঃপর সালাতের সময়ের মধ্যেই তারা পানি পেয়ে গেল। তাই তাদের একজন উযু করে আবার সালাত আদায় করা নিল এবং দ্বিতীয়জন তা করিল না। এরপর তারা ফিরে এসে রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর কাছে তা বর্ণনা করিল। যে ব্যক্তি সালাত আদায় করেনি তাকে তিনি [সাঃআঃ] বললেন তুমি সুন্নতের উপরেই ছিলে। এ সালাতই তোমার জন্য যথেষ্ট। আর যে ব্যক্তি উযূ করে পুনরায় সালাত আদায় করেছে তাকে বললেন, তোমার জন্য দিগুন সাওয়ব রয়েছে। {৫৪৭]
আবু দাউদ ও দারিমী, আর নাসায়ীও অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন।{১},{১} সহীহ : আবু দাউদ ৩৩৮, দারিমী ৭৭১, নাসায়ী ৪৩৩। তায়াম্মুম করা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
৫৩৪. ঈমাম নাসায়ী ও ঈমাম আবু দাউদ হইতে বর্ণীতঃ
আবু দাউদ ও ঈমাম নাসায়ী এ হাদিস আতা ইবনি ইবনি ইয়াসার [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে মুরসাল হিসাবে বর্ণনা করিয়াছেন।
এই হাদিসটির তাহকীকঃ নির্ণীত নয়
অধ্যায়ঃ ১০. তৃতীয় অনুচ্ছেদ
৫৩৫. আবুল জুহায়ম ইবনুল হারিস ইবনুস্ সিম্মাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একবার নবী [সাঃআঃ] জামাল নামক কুয়ার দিক হইতে আসলেন, তখন জনৈক লোক তাহাঁর সাথে দেখা করে তাঁকে সালাম দিল। কিন্তু নবী [সাঃআঃ] তার সালামের উত্তর দিলেন না। তিনি [সাঃআঃ] এগিয়ে একটি দেয়ালের কাছে এসে চেহারা ও হাত মাসাহ করিলেন, তারপর লোকটার সালামের জবাব দিলেন। {১}
{১} সহীহ : বোখারী ৩৩৭, মুসলিম ৩৬৯, নাসায়ী ৩১১, সহীহ ইবনি খুযাইমাহ্ ২৭৪, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৯৯০, সহীহ ইবনি হিব্বান ৮০৫। তায়াম্মুম করা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
৫৩৬. আম্মার ইবনি ইয়াসির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একবার তারা রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর সাথে অবস্থানকালে পানি না থাকার কারণে ফাজরের সালাতের জন্য মাটি দিয়ে মাসাহ করেন । তারা তাদের হাতকে মাটিতে মারলেন, তারপর একবার তাদের চেহারা মাসাহ করিলেন। আবার মাটিতে হাত মারলেন এবং সম্পূর্ণ হাত বাহুমুল পর্যন্ত এবং হাতের ভিতর দিকে বগল পর্যন্ত মাসাহ করিলেন। {১}
{১} সহীহ : আবু দাউদ ৩১৮। যদিও মুনযিরী হাদিসটি মুনক্বাতি বলেছেন। কিন্তু নাসায়ী, আবু দাউদ হাদিসটি মাওসূল সূত্রে বর্ণনা করিয়াছেন। তায়াম্মুম করা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
Leave a Reply