তাকদির এর প্রতি ঈমান বিষয়ক হাদীস সমূহ
তাকদির এর প্রতি ঈমান বিষয়ক হাদীস সমূহ >> মিশকাতুল মাসাবীহ এর মুল সুচিপত্র দেখুন
পর্বঃ ১, অধ্যায়ঃ ৩
- অধ্যায়ঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ
- অধ্যায়ঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
- অধ্যায়ঃ ৩. তৃতীয় অনুচ্ছেদ
অধ্যায়ঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ
৭৯. আবদুল্লাহ ইবনি আমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন : আল্লাহ তাআলা আসমানসমূহ ও জমিন সৃষ্টির পঞ্চাশ হাজার বছর পূর্বে মাখলূক্বের তাক্বদীর লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন। তিনি [সাঃআঃ] আরো বলেছেন, [তখন আল্লাহ্র আরশ [সিংহাসন] পানির উপর ছিল। {১}
{১} সহীহ : মুসলিম ২৬৫৩। তাকদির এর প্রতি ঈমান -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
৮০. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন : প্রত্যেকটি জিনিসই আল্লাহর ক্বাদ্র [তাক্বদীর] অনুযায়ী রয়েছে, এমনকি নির্বুদ্ধিতা ও বিচক্ষণতাও। {১}
{১} সহীহ : মুসলিম ২৬৫৫, আহমাদ ৫৮৯৩, সহীহ ইবনি হিব্বান ৬১৪৯, সহীহাহ্ ৮৬১, সহীহ আল জামি ৪৫৩১। ঈমাম বোখারী [রাহিমাহুল্লাহ] ও সহীহ বোখারীর خَلْقُ أَفْعَالِ الْعِبَادً [বান্দাদের কর্মসমূহ সৃষ্টিকরণ] নামক অধ্যায়ে হাদিসটি বর্ণনা করিয়াছেন। কিছু সমসাময়িক মুহাদ্দিস ভুলবশত হাদিসটি ঈমাম মুসলিমের সাথে মুত্বলাক্বভাবে যুক্ত করিয়াছেন। ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ]-ও হাদিসটি তার মুয়াত্ত্বায় বর্ণনা সংকলন করিয়াছেন। আর ঈমাম মালিক-এর সানাদে ঈমাম বোখারী মুসলিম-এর হাদিসটি নিয়ে এসেছেন। তাকদির এর প্রতি ঈমান -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
৮১. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন : [আলমে আরওয়াহ্ বা রুহ জগতে] আদাম ও মূসা [আঃ] পরস্পর তর্ক-বিতর্কে লিপ্ত হলেন। এ তর্কে আদাম [আঃ] মূসার উপর জয়ী হলেন। মূসা [আঃ] বললেন, আপনি তো সে আদাম, যাঁকে আল্লাহ [বিনা পিতা-মাতায়] তাহাঁর নিজ হাতে সৃষ্টি করিয়াছেন এবং আপনার মধ্যে তাহাঁর রূহ ফুঁকে দিয়েছেন। মালায়িকার দ্বারা আপনাকে সাজদাহ করিয়েছেন এবং আপনাকে তাহাঁর চিরস্থায়ী জান্নাতে স্থান করে দিয়েছিলেন। অতঃপর আপনি আপনার স্বীয় ত্রুটির কারণে মানবজাতিকে জমিনে নামিয়ে দিয়েছেন। আদাম [আঃ] [প্রত্যুত্তরে] বললেন, তুমি তো সে মূসা যাঁকে আল্লাহ তাআলা নবূওয়াতের পদমর্যাদায় অধিষ্ঠিত করিয়াছেন। তোমাকে তাওরাত দান করিয়াছেন, যাতে সমস্ত বিষয়ের বর্ণনা রয়েছে। অধিকন্তু তিনি তোমাকে গোপন কথা দ্বারাও নৈকট্য দান করিয়াছেন। আল্লাহ আমার সৃষ্টির কত বছর পূর্বে তাওরাত লিখে রেখেছিলেন তুমি কি জান? মূসা [আঃ] বললেন, চল্লিশ বছর পূর্বে। তখন আদাম [আঃ] বললেন,
وَعَصى ادَمُ رَبَّهٗ فَغَوى
তুমি কি তাওরাতে [এ শব্দগুলো লিখিত] পাওনি যে, আদাম তাহাঁর প্রতিপালকের নাফরমানী করেছে এরং পথভ্রষ্ট হয়েছে? [সূরাহ্ ত্ব-হা ২০ : ১২১] মূসা [আঃ] [উত্তর] দিলেন, হাঁ, পেয়েছি। তখন আদাম [আঃ] বললেন, তারপর তুমি আমাকে আমার আমালের জন্য তিরস্কার করছ কেন, যা আমার সৃষ্টিরও চল্লিশ বছর পূর্বে আল্লাহ আমার জন্য লিপিবদ্ধ করে রেখেছিলেন। রসূল [সাঃআঃ] বললেন, সুতরাং আদাম [আঃ] মূসা [আঃ]-এর উপর জয়ী হলেন। {১}
{১} সহীহ : মুসলিম ২৬৫২, বোখারী ৬৬১৪-তে সংক্ষিপ্তভাবে, আবু দাউদ ৪৭০১, তিরমিজি ২১৩৪, ইবনি মাজাহ ৮০, আহমাদ ৭৩৮৭, সহীহ ইবনি হিব্বান ৬১৮০, সহীহ আল জামি ১৮৪।হাদিসটি ঈমাম বোখারী [রাহিমাহুল্লাহ] ও তার সহীহুল বোখারীর পাঁচটি স্থানে কিছুটা সংক্ষিপ্ততা সহকারে বর্ণনা করিয়াছেন। সম্ভবত এজন্যই লেখক হাদিসটিকে ঈমাম মুসলিম [রাহিমাহুল্লাহ]-এর দিকে সম্বন্ধযুক্ত বা সম্পৃক্ত করিয়াছেন। যদিও সতর্কীকরণসহ সম্পৃক্ত করাই উত্তম। তাকদির এর প্রতি ঈমান -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
৮২. ইবনি মাস্ঊদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, সত্যবাদী ও সত্যবাদী বলে স্বীকৃত আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] বলেছেন: তোমাদের প্রত্যেকেরই জন্ম হয় এভাবে যে, তার মায়ের পেটে [প্রথমে তার মূল উপাদান] শুক্ররূপে চল্লিশ দিন পর্যন্ত থাকে। অতঃপর তা চল্লিশ দিন পর্যন্ত লাল জমাট রক্তপিণ্ডরূপ ধারণ করে। তারপর পরবর্তী চল্লিশ দিনে মাংসপিণ্ডের রূপ ধারণ করে। অতঃপর আল্লাহ তাআলা একজন মালাককে চারটি বিষয় লিখে দেয়ার জন্য পাঠান। সে মালাক লিখেন তার- [১] আমাল {সে কি কি আমাল করিবে], [২] তার মৃত্যু, [৩] তার রিয্ক ও [৪] তার নেককার বা দুর্ভাগা হওয়ার বিষয় আল্লাহ্র হুকুমে তার তাক্বদীরে লিখে দেন, তারপর তন্মধ্যে রূহ্ প্রবেশ করান। অতঃপর সে সত্তার কসম, যিনি ব্যতীত প্রকৃত আর কোন ইলাহ নেই! তোমাদের মধ্যে কেউ জান্নাতবাসীদের আমাল করিতে থাকে, এমনকি তার ও জান্নাতের মধ্যে মাত্র এক হাত দূরত্ব থাকে, এমন সময় তার প্রতি তাক্বদীরের লিখা তার সামনে আসে। আর তখন সে জাহান্নামীদের কাজ করিতে থাকে এবং জাহান্নামে প্রবেশ করে। তোমাদের কোন ব্যক্তি জাহান্নামীদের মত আমাল করিতে শুরু করে, এমনকি তার ও জাহান্নামের মধ্যে এক হাত দূরত্ব অবশিষ্ট থাকে। এমন সময় তার প্রতি সে লেখা [তাক্বদীর] সামনে আসে, তখন সে জান্নাতীদের কাজ করিতে শুরু করে, ফলে সে জান্নাতে প্রবেশ করে। {১}
{১} সহীহ : বোখারী ৩২০৮, মুসলিম ২৬৪৩, আবু দাউদ ৪৭০৮, ইবনি মাজাহ ৭৬, তিরমিজি ২১৩৭, সহীহ ইবনি হিব্বান ৬১৭৪, আহমাদ ৩৯৩৪। তাকদির এর প্রতি ঈমান -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
৮৩. সাহল ইবনি সাদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন: কোন বান্দা জাহান্নামীদের আমাল করিতে থাকিবে, অথচ সে জান্নাতী। এভাবে কোন জান্নাতীদের আমাল করিবে অথচ করিবে অথচ সে জাহান্নামী। কেননা মানুষের আমাল নির্ভর করে খাওয়া-তীম বা সর্বশেষ আমালের উপর। {১}
{১} সহীহ : বোখারী ৬৬০৭, মুসলিম ১১২, আহমাদ ২২৮৩৫, মুজামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ৫৭৯৮। বোখারী মুসলিমে فِيْمَا يَرَى النَّاسُ অংশটুকু অতিরিক্ত রয়েছে। অর্থাৎ- হে আয়িশাহ্! তুমি কি তোমার বিশ্বাসানুপাতে এ কথা বলেছ। অথচ বাস্তবতা এর বিপরীত। কারণ নিশ্চিতভাবে বলা যাবে না যে, সে শিশুটি জান্নাতী। তাকদির এর প্রতি ঈমান -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
৮৪. আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একদা একজন আনসারীর বাচ্চার জানাযার নামাজ আদায়ের জন্য রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে ডাকা হল। আমি [আয়িশাহ্] বললাম, হে আল্লাহর রসূল! এ বাচ্চার কি সৌভাগ্য, সে তো জান্নাতের চড়ুই পাখিদের মধ্যে একটি চড়ুই। সে তো কোন গুনাহ করেনি বা গুনাহ করার বয়সও পায়নি। তখন রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেন, এছাড়া অন্য কিছু কি হইতে পারে না হে আয়িশাহ্! আল্লাহ তাআলা একদল লোককে জান্নাতের জন্য সৃষ্টি করে রেখেছেন, যখন তারা তাদের পিতার মেরুদণ্ডে ছিল। এভাবে জাহান্নামের জন্যও একদল লোক সৃষ্টি করে রেখেছেন অথচ তখন তারা তাদের পিতার মেরুদণ্ডে ছিল। {১}
{১} সহীহ : মুসলিম ২৬৬২, নাসায়ী ১৯৪৭, ইবনি মাজাহ ৮২, আহমাদ ২৫৭৪২, সহীহ ইবনি হিব্বান ৬১৭৩। তাকদির এর প্রতি ঈমান -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
৮৫. আলী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন : তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই যার অবস্থান জান্নাতে কিংবা জাহান্নামে লিখে রাখেননি। সহাবীগণ জিজ্ঞেস করিলেন, হে আল্লাহর রসূল! তাহলে আমরা কি আমাদের তাক্বদীরের লেখার উপর নির্ভর করে আমল ছেড়ে দিব না ? নাৰী [সাঃআঃ] বললেন, [না, বরং] আমল করে যেতে থাক। কেননা প্রত্যেক ব্যক্তিকে যে জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে, সে কাজ তার জন্য সহজ করে দেয়া হবে। সুতরাং যে ব্যক্তি সৌভাগ্যবান তাকে আল্লাহ সৌভাগ্যের কাজ করার জন্য সহজ ব্যবস্থা করে দিবেন। আর সে ব্যক্তি দুর্ভাগা হবে যার জন্য দুর্ভাগ্যের কাজ সহজ করে দেয়া হবে। অতঃপর রসূল [সাঃআঃ] [কুরআনের এ আয়াতটি] পাঠ করিলেন:
فَأَمَّا مَنْ أَعْطى وَاتَّقى – وَصَدَّقَ بِالْحُسْنى
“যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে [সময় ও অর্থ] ব্যয় করেছে, আল্লাহকে ভয় করেছে, হাক্ব কথাকে [দ্বীনকে] সমর্থন জানিয়েছে”- সূরাহ্ আল লায়ল ৫-৬ নং আয়াতের শেষ পর্যন্ত। {১}
{১} সহীহ : বোখারী ৪৯৪৯, মুসলিম ২৬৪৭, তিরমিজি ৩৩৪৪। তাকদির এর প্রতি ঈমান -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
৮৬. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন: মহান আল্লাহ তাআলা আদাম সন্তানের জন্য তার ব্যভিচারের অংশ লিখে রেখেছেন, সে তা নিশ্চয়ই করিবে। চোখের ব্যভিচার হল দেখা, জিহবার ব্যভিচার কথা বলা [যৌন উদ্দীপ্ত কথা বলা]। আর মন চায় ও আকাঙ্ক্ষা করে এবং গুপ্তাঙ্গ তাকে সত্য বা মিথ্যায় প্রতিপন্ন করে। {১}
কিন্তু সহীহ মুসলিমের অপর এক বর্ণনায় আছে, আদাম সস্তানের জন্য তাকদীরে যিনার অংশ যতটুকু নির্ধারণ করা হয়েছে, সে ততটুকু অবশ্যই পাবে। দুই চোখের যিনা তাকানো, কানের যিনা যৌন উদ্দীপ্ত কথা শোনা, মুখের যিনা আবেগ উদ্দীপ্ত কথা বলা, হাতের যিনা [বেগানা নারীকে খারাপ উদ্দেশ্যে] স্পর্শ করা আর পায়ের যিনা ব্যভিচারের উদ্দেশে অগ্রসর হওয়া এবং মনের যিনা হল চাওয়া ও প্রত্যাশা করা। আর গুপ্তাঙ্গ তা সত্য বা মিথ্যায় প্রতিপন্ন করে।{2]
{১} সহীহ : বোখারী ৬২৪৩, মুসলিম ২৬৫৭, আবু দাউদ ২১৫২, আহমাদ ৭৭১৯, সহীহ ইবনি হিব্বান ৪৪২০, ইরওয়া ১৭৮৭, সহীহ আল জামি ১৭৯৭। {2] সহীহ : মুসলিম ২৬৫৭। তাকদির এর প্রতি ঈমান -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
৮৭. ইমরান ইবনি হুসায়ন [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
মুযায়নাহ গোত্রের দুই লোক রসূল [সাঃআঃ]-এর দরবারে উপস্থিত হয়ে বলিল, হে আল্লাহর রসূল! আপনি কি মনে করেন, মানুষ এখন [দুনিয়াতে] যা আমাল [ভাল-মন্দ] করছে এবং আমাল করার চেষ্টায় রত আছে, তা আগেই তাদের জন্য তাকদীরে লিখে রাখা হয়েছিল ? নাকি পরে যখন তাদের নিকট তাদের নবী শারীআহ [দলীল-প্রমাণ] নিয়ে এসেছেন এবং তাদের নিকট তার দলীল-প্রমাণ প্রকটিত হয়েছে, তখন তারা তা করছে ? উত্তরে রসূল [সাঃআঃ] বললেন: না, বরং পূর্বেই তাদের জন্য তাক্বদীরে এসব নির্দিষ্ট করা হয়েছে ও ঠিক হয়ে রহিয়াছে। এ কথার সমর্থনে তিনি [সাঃআঃ] কুরআনের এ আয়াত পাঠ করিলেন
وَنَفْسٍ وَمَا سَوَّاهَا فَأَلْهَمَهَا فُجُورَهَا وَتَقْوَاهَا
: “প্রাণের কসম [মানুষের]! এবং যিনি তাকে সুন্দরভাবে গঠন করিয়াছেন এবং তাকে [পূর্বেই] ভাল ও মন্দের জ্ঞান দিয়েছেন”- [সূরাহ আল লায়ল ৯২ঃ ৭-৮]।” {১}
{১} সহীহ : মুসলিম ২৬৫০, আহমাদ ১৯৯৩৬, সহীহ ইবনি হিব্বান ৬১৮২। তাকদির এর প্রতি ঈমান -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
৮৮. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একদা আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমি একজন যুবক মানুষ। তাই আমি আমার সম্পর্কে ব্যভিচারের জড়িয়ে পড়ার আশংকা করছি। অথচ কোন নারীকে বিবাহ করার [আর্থিক] সঙ্গতিও আমার নেই। আবু হুরায়রাহ [রাদি.] যেন খাসী হবার অনুমতিই প্রার্থনা করছিলেন। আবু হুরায়রাহ বলেন, এ কথা শুনে তিনি [সাঃআঃ] প্রত্যুত্তর না দিয়ে নীরব থাকলেন। আমি আবারও অনুরূপ প্রশ্ন করলাম। এবারও তিনি নীরব থাকলেন। সুতরাং আমি ঐরূপ প্রশ্ন করলাম, এবারও তিনি নীরব থাকলেন। আমি চতুর্থবার সেরূপ প্রশ্ন করলে নবী [সাঃআঃ] বললেন, হে আবু হুরায়রাহ! তোমার জন্য যা ঘটবার আছে তা আগে থেকেই তোমার ভাগ্যে নির্ধারিত হওয়ার মাধ্যমে কলম শুকিয়ে গেছে। এখন তুমি এটা জেনে খাসীও হইতে পার বা এমন ইচ্ছা পরিত্যাগও করিতে পার। {১}
{১} সহীহ : বোখারী ৪৬৮৬ [সানাদ ছাড়া বর্ণনা করিয়াছেন], নাসায়ী ৩২১৫, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১৩৪৬৫, সহীহ আল জামি ৭৮৩২। اَلْعَنَتُ [আল আনাত] এ হাদিসের দ্বারা যিনা, ব্যভিচার উদ্দেশ্য। আল্লামা মুয্হির বলেন : যা কিছু ঘটেছে এবং যা কিছু ঘটছে বা ভবিষ্যতে ঘটবে সবকিছুই অনন্তকালে নির্ধারিত। অতএব, খাসীকরণ বা খোজাকরণে কোন উপকার নেই। চাইলে তুমি করিতে পারো বা নাও করিতে পারো। এ কথাটি খাসীকরণ বা খোজাকরণের ব্যাপারে অনুমতি নেই এবং অনর্থক একটি অঙ্গহানীর কারণে অনুমতি প্রার্থনায় এটি তিরস্কার বা ভৎর্সনা। [মিরকাত]’, তাকদির এর প্রতি ঈমান -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
৮৯. আবদুল্লাহ ইবনি আমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেনঃ সমস্ত অন্তর আল্লাহ্র আঙ্গুলসমূহের দুই আঙ্গুলের মধ্যে একটি অন্তরের ন্যায় অবস্থিত। তিনি নিজের আঙ্গুলগুলোর দ্বারা তা যেভাবে ইচ্ছা ঘুরিয়ে থাকেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেন, “হে অন্তরসমূহের পরিবর্তনকারী আল্লাহ্! আমাদের অন্তরকে তোমার ইবাদাত ও আনুগত্যের দিকে ঘুরিয়ে দাও।” ১}
{১} সহীহ : মুসলিম ৪৭৯৮, আহমাদ ৬৫৬৯, সহীহাহ্ ১৬৮৯, সহীহ আল জামি ২১৪২। তাকদির এর প্রতি ঈমান -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
৯০. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেনঃ প্রত্যেক সন্তানই ইসলামী ফিতরাতের উপর জন্মগ্রহণ করে থাকে। অতঃপর তার মাতা-পিতা তাকে ইয়াহূদী, নাসারা অথবা অগ্নিপূজক বানিয়ে ফেলে। যেরূপে চতুষ্পদ জন্তু পূর্ণাঙ্গ জন্তুই জন্ম দিয়ে থাকে, এতে তোমরা কোন বাচ্চার কানকাটা দেখিতে পাও কি? এরপর তিনি তিলাওয়াত করলেনঃ
فِطْرَةَ اللهِ الَّتِي فَطَرَ النَّاسَ عَلَيْهَا لَا تَبْدِيلَ لِخَلْقِ اللهِ ذلِكَ الدِّيْنُ الْقَيِّمُ
“আল্লাহ্র ফিতরাত, যার উপর তিনি মানবজাতিকে সৃষ্টি করিয়াছেন। আল্লাহ্ তাআলার সৃষ্টি রহস্যে কোন পরিবর্তন নেই। এটাই সরল প্রতিষ্ঠিত দীন।” [সূরা আর রূম ৩০ : ৩০]; {১}
{১} সহীহ : বোখারী ১৩৫৮, মুসলিম ২৬৫৮, আহমাদ ৭১৮১, ইরওয়া ১২২০, সহীহ আল জামি ৫৭৮৪, সহীহ ইবনি হিব্বান ১২৯। তাকদির এর প্রতি ঈমান -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
৯১. আবু মূসা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] পাঁচটি বিষয়সহ আমাদের মাঝে দাঁড়ালেন এবং তিনি বললেন, [১] আল্লাহ্ তাআলা কক্ষনো ঘুমান না। [২] ঘুমানো তাহাঁর পক্ষে সাজেও না। [৩] তিনি দাঁড়িপাল্লা উঁচু-নিচু করেন [সৃষ্টির রিয্ক ও আমাল প্রভৃতি নির্ধারিত করে থাকেন]। [৪] রাতের আমাল দিনের আমালের পূর্বে, আর দিনের আমাল রাতের আমলের পূর্বেই তাহাঁর নিকটে পৌঁছানো হয় এবং [৫] তাহাঁর [এবং সৃষ্টিজগতের মধ্যে] পর্দা হচ্ছে নূর [জ্যোতি]। যদি তিনি এ পর্দা সরিয়ে দিতেন, তবে তাহাঁর চেহারার নূর সৃষ্টিজগতের দৃষ্টির শেষ সীমা পর্যন্ত সব কিছুকেই জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করে দিত। {১}
{১} সহীহ : মুসলিম ১৭৯, ইবনি মাজাহ ১৯৬, আহমাদ ১৯৫৩০, সহীহ ইবনি হিব্বান ২৬৬, সহীহ আল জামি ১৮৬০। তাকদির এর প্রতি ঈমান -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
৯২. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেনঃ আল্লাহ্ তাআলার হাত সদাসর্বদা পূর্ণ। অবিরাম মুষলধারে বর্ষণকারীর মতো দান কখনও তা কমাতে পারে না। তোমরা কি দেখছো না, তিনি যখন থেকে এ আসমান-জমিন সৃষ্টি করিয়াছেন তখন থেকে কতই না দান করে আসছেন। অথচ তাহাঁর হাতে যা ছিল তার থেকে কিছুই কমায়নি। তাহাঁর আর্শ [প্রথমে] পানির উপর ছিল। তাহাঁর হাতেই রহিয়াছে দাঁড়িপাল্লা। তিনি এ দাঁড়িপাল্লাকে উঁচু বা নিচু করে থাকেন। {১}
সহীহ্ মুসলিমের অপর এক বর্ণনায় রহিয়াছে, আল্লাহ্ দক্ষিণ [ডান] হাত সদা পরিপূর্ণ। আর ইবনি নুমায়র [রাহিমাহুল্লাহ]-এর বর্ণনায় আছে, আল্লাহ্র হাত পরিপূর্ণ, দিন-রাতের মধ্যে সর্বদা দানকারী কোন কিছুই এতে কমাতে পারে না। {১} সহীহ : বোখারী ৭৪১১, মুসলিম ৯৩৩, সহীহাহ্ ৩৫৫০, সহীহ আল জামি ৮০৬৬। তাকদির এর প্রতি ঈমান -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
৯৩.আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-কে কাফির-মুশরিকদের শিশু-সস্তানদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল [মৃত্যুর পর তাদের স্থান কোথায় জান্নাতে, না জাহান্নামে]? জবাবে রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বললেন, আল্লাহ্ই সবচেয়ে ভাল জানেন, তারা [জীবিত থাকলে] কি আমাল করত। {১}
{১} সহীহ : বোখারী ১৩৮৪, মুসলিম ২৬৫৯, সহীহ ইবনি হিব্বান ১৩১, নাসায়ী ১৯৫২, আহমাদ ১৮৪৫; তবে নাসায়ী ও আহমাদ-এর বর্ণনাটি ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে। তাকদির এর প্রতি ঈমান -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
অধ্যায়ঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৯৪. উবাদাহ্ ইবনুস্ সামিত [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেনঃ আল্লাহ্ সর্বপ্রথম যে বস্তুটি সৃষ্টি করেছিলেন তা হচ্ছে কলম। অতঃপর তিনি কলমকে বললেন, লিখ। কলম বলিল, কী লিখব? আল্লাহ্ বললেন, কদ্র [তাক্বদীর] সম্পর্কে লিখ । সুতরাং কলম- যা ছিল ও ভবিষ্যতে যা হবে, সবকিছুই লিখে ফেলল। তিরমিজি হাদিসটি বর্ণনা করিয়াছেন এবং বলেছেন, হাদিসটি সানাদ হিসেবে গারীব। {১}
{১} সহীহ: তিরমিজি ২০৮১, সহীহহুল জামি ২০১৭, আহমাদ ৫/৩১৭। এটি ঈমাম তিরমিজি [রাহিমাহুল্লাহ]-এর উক্তির অর্থ উক্তি নয়। আর তিনি ক্বদর [কদর] অধ্যায়ের ২০/২৩ নং হাদীসে এর হুকুম সম্পর্কে বলেছেনঃ حَدِيْثٌ غَرِيْبٌ مِنْ هذَا الْوَجْهِ [হাদিসটি এই সানাদে গরীব]। আর তাফসীর অধ্যায়ের ২/২৩২ নং পৃষ্ঠায় এ সানাদেই হাদিসটি সংকলন করে বলেছেনঃ حَدِيْثٌ حَسَنٌ غَرِيْبٌ [হাদিসটি হাসান গরীব]। আপাতদৃষ্টিতে ঈমাম তিরমিজির উভয় উক্তির মাঝে অসঙ্গতি মনে হলেও মূলত তা নেই। গরীব হওয়ার কারণ আবদুল ওয়াহিদ ইবনি সুলায়ম যিনি একজন দুর্বল রাবী। আর হাসান হওয়ার কারণ তিনি হাদিসটি বর্ণনায় কোন স্তরে একাকী হয়ে যাননি। তিনি [ওয়াহিদ ইবনি সুলায়ম] হাদিসটি আত্বা ইবনি রিবাহ থেকে, তিনি [আত্বা ইবনি রিবাহ] ওয়ালীদ ইবনি উবাদাহ্ ইবনুস্ সামিত [রাদি.]থেকে, আর ওয়ালীদ তার পিতা উবাদাহ্ ইবনুস্ সামিত [রাদি.]থেকে বর্ণনা করিয়াছেন। ঈমাম আহমাদ [রাহিমাহুল্লাহ]-ও হাদিসটি তার মুসনাদের ৫/৩১৭ নং পৃঃ, উবাদাহ্ ইবনি ওয়ালীদ ইবনি উবাদাহ্ এবং ইয়াযীদ ইবনি আবী হাবীব উভয়ে ওয়ালীদ ইবনি উবাদাহ্ ইবনি সামিত থেকে এ সূত্রে সংকলন করিয়াছেন। ঈমাম আবু দাউদ কর্তৃক উবাদাহ্ ইবনুস্ সামিত [রাদি.]থেকে বর্ণিত এ হাদিসের আরও একটি সানাদ রয়েছে। অতএব, এ শাহিদ বর্ণনাগুলোর ভিত্তিতে হাদিসটি নিশ্চিতভাবে সহীহ। এ হাদিসটিই আল্লাহ তাআলা সর্বপ্রথম তোমার নবীর নূর সৃষ্টি করিয়াছেন। হে জাবির মর্মে বর্ণিত হাদিসটি মিথ্যা হওয়ার ব্যাপারে সুস্পষ্ট প্রমাণ। আলবানী [রাহিমাহুল্লাহ] বলেনঃ আমি উক্ত মিথ্যা হাদিসটির সানাদ জানার চেষ্টা করেছি, কিন্তু পাইনি। তাকদির এর প্রতি ঈমান -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
৯৫. মুসলিম ইবনি ইয়াসার [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, উমার ইবনুল খাত্ত্বাব [রাদি.]-কে কুরআনের এ আয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলঃ “[হে মুহাম্মাদ!] আপনার রব যখন আদাম সস্তানদের পিঠ থেকে তাদের সব সস্তানদেরকে বের করিলেন” [সূরাহ্ আল আরাফ ৭: ১৭২] […আয়াতের শেষ পর্যন্ত]। উমার [রাদি.] বললেন, আমি শুনিয়াছি রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-কে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হয় এবং তিনি জবাবে বলেন, আল্লাহ্ তাআলা আদাম [আঃ] কে সৃষ্টি করিলেন। অতঃপর আপন ডান হাত তাহাঁর পিঠ বুলালেন। আর সেখান থেকে তাহাঁর [ভবিষ্যতের] একদল সন্তান বের করিলেন। অতঃপর বললেন, এসবকে আমি জান্নাতের জন্য সৃষ্টি করেছি, তারা জান্নাতীদের কাজই করিবে। আবার আদামের পিঠে হাত বুললেন এবং সেখান থেকে [অপর] একদল সস্তান বের করিলেন এবং বললেন, এদেরকে আমি জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করেছি এবং তারা জাহান্নামীদেরই আমাল করিবে। একজন সহাবী জিজ্ঞেস করিলেন, হে আল্লাহ্র রসূল! তাহলে আমালের আর আবশ্যকতা কি? উত্তরে রসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বললেন, যখন আল্লাহ্ কোন বান্দাকে জান্নাতের জন্য সৃষ্টি করেন, তার দ্বারা জান্নাতীদের কাজই করিয়ে নেন। শেষ পর্যন্ত সে জান্নাতীদের কাজ করেই মৃত্যুবরণ করে এবং আল্লাহ্ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করান। এভাবে আল্লাহ্ তাহাঁর কোন বান্দাকে জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করেন, তার দ্বারা জাহান্নামীদের কাজই করিয়ে নেন। পরিশেষে সে জাহান্নামীদের কাজ করেই মৃত্যুবরণ করে, আর এ কারণে আল্লাহ্ তাকে জাহান্নামে দাখিল করেন। {১}
তাকদির এর প্রতি ঈমান -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
৯৬. আবদুল্লাহ ইবনি আমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] দুই হাতে দুটি কিতাব নিয়ে বের হলেন এবং [সাহাবীগণের উদ্দেশ্যে] বললেন, তোমরা কি জান এ কিতাব দুটি কি? আমরা বললাম, না, হে আল্লাহ্র রসূল! কিন্তু আপনি যদি আমাদের অবহিত করিতেন। তিনি তাহাঁর ডান হাতের কিতাবের প্রতি ইশারা করে বললেন, আমার ডান হাতে কিতাবটি হচ্ছে আল্লাহ্ রব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে একটি কিতাব। এতে সকল জান্নাতীদের নাম, তাদের পিতাদের নাম ও বংশ-পরম্পরার নাম রহিয়াছে এবং এদের সর্বশেষ ব্যক্তির নামের পর সর্বমোট যোগ করা হয়েছে। অতঃপর এতে আর কক্ষনো [কোন নাম] বৃদ্ধিও হবে না কমতিও করা হবে না। তারপর তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] তাহাঁর বাম হাতের কিতাবের দিকে ইঙ্গিত করে বললেন, এটাও আল্লাহ্ রব্বুল আলামীনের পক্ষ হইতে একটি কিতাব। এ কিতাবে জাহান্নামীদের নাম আছে, তাদের বাপ-দাদাদের নাম আছে এবং তাদের বংশ-পরম্পরার নামও রহিয়াছে। অতঃপর তাদের সর্বশেষ ব্যক্তির নাম লিখে মোট যোগ করা হয়েছে। তাই এতে [আর কোন নাম কখনো] বৃদ্ধিও করা যাবে না কমানোও যাবে না। তাহাঁর এ বর্ণনা শুনার পর সহাবীগণ জিজ্ঞেস করিলেন, হে আল্লাহ্র রসূল! এসব ব্যপার যদি আগে থেকে চূড়ান্ত হয়েই থাকে [অর্থাৎ জান্নাত ও জাহান্নামের বিষয়টি তাকদীরের উপর নির্ভর করে লিপিবদ্ধ হয়েছে] তবে আমাল করার প্রয়োজন কী? উত্তরে তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বললেন, হাক্ব পথে থেকে দৃঢ়ভাবে আমাল করিতে থাক এবং আল্লাহ্র নৈকট্যার্জনের চেষ্টা কর। কেননা জান্নাতবাসীদের শেষ আমাল [জান্নাত প্রাপ্তির ন্যায়] জান্নাতীদেরই কাজ হবে। [পূর্বে] দুনিয়ার জীবনে সে যা-ই করুক। আর জাহান্নামবাসীদের পরিসমাপ্তি জাহান্নামে যাবার ন্যায় আমালের দ্বারা শেষ হবে। তার [জীবনের] আমাল যাই হোক। অতঃপর রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] তাহাঁর দুই হাতে ইশারা করে কিতাব দুটিকে পেছনের দিকে ফেলে দিয়ে বললেন, তোমাদের রব বান্দাদের ব্যাপারে পূর্ব থেকেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে রেখেছেন। একদল জান্নাতে যাবে আর অপর একদল জাহান্নামে যাবে- [সূরাহ্ আশ শুরা ৪২ : ৭]। {১}
{১} হাসান : তিরমিজি ২০৬৭, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ৮৪৮। [قَوْلٌ মাসদারের সেলা যখন بَاء আসে তখন তার অর্থ হয় ইশারা, ইঙ্গিত করা]। ঈমাম তিরমিজি ২/২১ নং পৃঃ হাদিসটির হুকুম সম্পর্কে বলেছেন : هذَا حَدِيْثٌ حَسَنْ غَرِيْبٌ صَحِيْحٌ।; আলবানী [রহ] বলেন : হাদিসটি ঈমাম আহমাদ [রাহিমাহুল্লাহ] ও তার মুসনাদের ২/১৬৬ নং পৃঃ বর্ণনা করিয়াছেন যার সানাদ সহীহ। আর শায়খ শান্ক্বীত্বী [রাহিমাহুল্লাহ] তার যাদুল মুসলিম নামক গ্রন্থের ১/৭ নং পৃঃ ভুলবশত হাদিসটিকে বোখারী ও মুসলিম [রাহিমাহুল্লাহ]-এর সাথে সম্বন্ধযুক্ত বা সম্পৃক্ত করিয়াছেন। এই হাদিসটির তাহকীকঃ হাসান হাদিস
৯৭. আবু খুযামাহ্ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-কে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহ্র রসূল! আমরা [রোগমুক্তির জন্য] যেসব তন্ত্রমন্ত্র পাঠ করি বা ঔষধ ব্যবহার করে থাকি কিংবা আমরা আত্নরক্ষা করিতে যে কোন উপায়ে চেষ্টা করি- এ সকল কি তাক্বদীরকে কিছু পরিবর্তন করিতে পারে? রসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বললেন, এ সকল কাজও আল্লাহ্র [পূর্বে নির্ধারিত] তাক্বদীরের অন্তর্ভুক্ত। {১}
{১} জইফ : আহমাদ ১৪৯২৭, তিরমিজি ১৯৯১, ইবনি মাজাহ ৩৪২৮ [জইফ সুনানুত্ তিরমিজি]। ঈমাম তিরমিজি [রাহিমাহুল্লাহ] তাহাঁর জামি আত তিরমিজির ২/৭ নং পৃষ্ঠায় এ হাদিসের হুকুম সম্পর্কে বলেছেনঃ হাদিসটি হাসান সহীহ। আলবানী [রাহিমাহুল্লাহ] বলেনঃ এ হাদিসের একজন রাবী আবু খুযামাহ্ সম্পর্কে ঈমাম ইবনি আবদুল বার [রাহিমাহুল্লাহ] বলেনঃ তিনি একজন তাবিঈ কিন্তু তার হাদিস مُضْطَرِبٌ [মুযত্বরিব] তথা যা হাদিস দুর্বল হওযার একটি অন্যতম কারণ। শায়খ আলবানী [রাহিমাহুল্লাহ] হাদিসটি জইফ আত তিরমিজিতে দুর্বল বলেছেন। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
৯৮. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একদা আমরা তাক্বদীর সম্পর্কে বিতর্কে লিপ্ত ছিলাম। এমন সময় রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] আমাদের নিকট এসে উপস্থিত হন। তিনি এটা দেখে এতো রাগ করিলেন যে, রাগে তাহাঁর চেহারা মুবারক লাল হয়ে গেল, মনে হচ্ছিল যেন তাহাঁর চেহারা মুবারকে আনারের [ডালিমের] রস নিংড়িয়ে দেয়া হয়েছে। অতঃপর তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বললেন, তোমাদের কি [তর্কে লিপ্ত হওয়ার জন্য] নির্দেশ দেয়া হয়েছে অথবা এজন্য কি রসূল বানিয়ে তোমাদের নিকট আমাকে পাঠানো হয়েছে? [জেনে রাখ!] তোমাদের পূর্বে অনেক লোকেরা বিতর্কে লিপ্ত হয়ে তখনই ধ্বংস হয়েছে, যখনই তারা এ বিষয় নিয়ে বাক-বিতন্ডা করেছে। আমি তোমাদেরকে কসম করে বলছি, আবারও কসম করে বলছি- সাবধান! এ বিষয় নিয়ে তোমরা কক্ষনো তর্কে জড়িয়ে যেয়ো না। {১}
{১} হাসান : তিরমিজি ২০৫৯ [সহীহ সুনানুত্ তিরমিজি]। ঈমাম তিরমিজি [রাহিমাহুল্লাহ] তাহাঁর জামি আত তিরমিজির ২/১৯ নং পৃঃ এ হাদিসের মান সম্পর্কে বলেছেনঃ حَدِيْثٌ غَرِيْبٌ، لَا نَعْرِفُهٗ اِلَّا مِنْ هذَا الْوَجْهِ مِنْ حَدِيْثِ صَالِحٍ الْمَرْيِ [হাদিসটি গরীব যা আমরা সালিহ আল মার্য়ি ব্যতীত অন্য কারো সানাদে পাইনি। আর সালিহ আল মার্য়ি-এর অনেকগুলো এক সানাদ বিশিষ্ট বর্ণনা রয়েছে যেগুলোর কোন সমর্থনযোগ্য বর্ণনা নেই।] শায়খ আলবানী [রাহিমাহুল্লাহ] বলেনঃ কিন্তু এ হাদিসের অনেক শাহিদে বর্ণনা রয়েছে যার কারণে হাদিসটি হাসান স্তরের। এই হাদিসটির তাহকীকঃ হাসান হাদিস
৯৯. আমর ইবনি শুআয়ব [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীতঃ
ইবনি মাজাহও এ অর্থের একটি হাদিস আম্র ইবনি শুআয়ব হইতে বর্ণনা করিয়াছেন, যা তিনি তার পিতা, তার পিতা তার দাদার মাধ্যমে বর্ণনা করিয়াছেন। {১}
{১} হাসান: ইবনি মাজাহ ৮২। এই হাদিসটির তাহকীকঃ হাসান হাদিস
১০০. আবু মূসা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-কে বলিতে শুনিয়াছি, “আল্লাহ্ তাআলা আদাম [আঃ]-কে এক মুঠো মাটি দিয়ে সৃষ্টি করিয়াছেন, যা তিনি সমগ্র ভূপৃষ্ঠ হইতে নিয়েছিলেন। তাই আদাম সন্তানগণ [বিভিন্ন মাটির রং অনুযায়ী বিভিন্ন আকৃতিতে] কেউ লাল বর্ণের, কেউ সাদা, কেউ কালো, কেউ মধ্যবর্তী বর্ণের হয়েছে। এরূপে কেউ কোমল মেজাজের, কেউ কঠোর হয়, কেউ সৎ ও কেউ অসৎ প্রকৃতির হয়ে থাকে। {১}
{১} সহীহ : আহমাদ ১৮৭৬১, আবু দাউদ ৪০৭৩, তিরমিজি ২৮৭৯, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ১৬৩০। ঈমাম তিরমিজি [রাহিমাহুল্লাহ] হাদিসটির স্তর বা মান সম্পর্কে বলেছেন হাসান সহীহ। যেমনটি শায়খ আবুল ফারাজ আস্ সাক্বাফী [রাদি.] তার আল ফাওয়া-য়িদ গ্রন্থের ১/৯৭ নং পৃঃ হাদিসটি বর্ণনা করে সহীহ বলেছেন। আর মুসনাদে আহমাদের ৪/৪০৬ নং পৃঃ হাদিসটি রয়েছে। অতএব হাদিসটি সহীহ। তাকদির এর প্রতি ঈমান -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১০১. আবদুল্লাহ ইবনি আমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-কে বলিতে শুনিয়াছি, আল্লাহ্ তাআলা তাহাঁর সৃষ্ট জীবকে অন্ধকারে সৃষ্টি করেন। তারপর তিনি তাদের প্রতি স্বীয় নূর [জ্যোতি] নিক্ষেপ করেন। সুতরাং যার কাছে তাহাঁর এ নূর পৌঁছেছে, সে সৎপথপ্রাপ্ত হয়েছে। আর যার কাছে তাহাঁর এ নূর পৌঁছেনি, সে বিভ্রান্তিতে পতিত হয়েছে। তাই আমি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলি: আল্লাহ্র জ্ঞান ও ইচ্ছা অনুযায়ী যা হওয়ার তা-ই হয়ে কলম শুকিয়ে গেছে। {১}
{১} সহীহ : আহমাদ ৬৩৫৬, তিরমিজি ২৫৬৬ [সহীহ সুনানুত্ তিরমিজি]। মুসনাদে আহমাদের ৪/১৭৬, ১৯৭ এবং আত তিরমিজির ২/১০৭ ঈমান অধ্যায়ের রয়েছে। হাদিসের সানাদটি সহীহ। তাকদির এর প্রতি ঈমান -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১০২. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] প্রায় সময়ই এ দুআ করিতেন: “হে অন্তর পরিবর্তনকারী আল্লাহ্! আমার হৃদয়কে তোমার দ্বীনের উপর দৃঢ রাখ”। আমি বললাম, হে আল্লাহ্র নবী! আমরা আপনার উপর এবং আপনি যে দ্বীন নিয়ে এসেছেন তার উপর ঈমান এনেছি। এরপরও কি আপনি আমাদের সম্পর্কে আশংকা করেন? জবাবে তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বললেন, কেননা ক্বলব আল্লাহ্র দুই আঙ্গুলের মধ্যে রয়েছে [অর্থাৎ তাহাঁর নিয়ন্ত্রণ ও অধিকারে রয়েছে]। তিনি যেভাবে চান সেভাবে অন্তরকে [ঘুরিয়ে] থাকেন। {১}
{১} সহীহ : তিরমিজি ২০৬৬, ইবনি মাজাহ ৩৮২৪ [সহীহ সুনানুত্ তিরমিজি]। ঈমাম তিরমিজি জামি আত তিরমিজির ২/২০ নং এ হাদিসটির হুকুম সম্বন্ধে বলেছেন : হাদিসটি হাসান। আলবানী [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন : হাদিসটি মুসলিমের শর্তসাপেক্ষে নিয়ে আসা হয়েছে। তাকদির এর প্রতি ঈমান -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১০৩. আবু মূসা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেন: আল্লাহ্র হাতে [মানুষের] ক্বলব বা মন, যেমন কোন তৃণশূণ্য মাঠে একটি পালক, যাকে বাতাসের গতি বুকে-পিঠে [এদিক-সেদিক] ঘুরিয়ে থাকে। {১}
{১} সহীহ : আহমাদ ১৮৮৩০, ইবনি মাজাহ ৮৫, সহীহুল জামি ২৩৬৫, শারহুস্ সুন্নাহ ১৪। ঈমাম আহমাদ তাহাঁর মুসনাদে ৪/৪০৮ ও ৪১৯ নং এ ভিন্ন শব্দে দুটি সহীহ সানাদে হাদিসটি বর্ণনা করিয়াছেন। আর এ শব্দে হাদিসটি আল বাগাবী প্রণেতা শারহুস সুন্নাহ গ্রন্থের ১৪ নং পৃষ্ঠায় বর্ণনা করিয়াছেন। তাকদির এর প্রতি ঈমান -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১০৪. আলী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেন: কোন বান্দা মুমিন হইতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত এ চারটি বিষয়ের উপর ঈমান না আনে: [১] সে সাক্ষী দিবে আল্লাহ্ ছাড়া প্রকৃত কোন মাবুদ নেই, [২] নিঃসন্দেহে আমি আল্লাহ্র রসূল, আল্লাহ্ আমাকে দীনে হাক্ব সহকারে পাঠিয়েছেন, [৩] মৃত্যু ও মৃত্যুর পরে হাশরের মাঠে পুনরুত্থান দিবসে বিশ্বাস রাখবে এবং [৪] তাক্বদীরের উপর বিশ্বাস রাখবে। {১}
{১} সহীহ : তিরমিজি ২০৭১, ইবনি মাজাহ ৭৮, তবে তাতে وَيُؤْمِنُ بِالْقَدَرِ অংশটুকু নেই, সহীহুল জামি ৭৫৮৪। হাদিসের শব্দগুলো তিরমিজির। হাদিসের সানাদটি সহীহ। ঈমাম হাকিম [রাহিমাহুল্লাহ] হাদিসটিকে বোখারী মুসলিমের শর্তানুযায়ী সহীহ বলেছেন আর এটিকে ঈমাম যাহাবী [রাহিমাহুল্লাহ] সমর্থন করিয়াছেন। ইবনি মাজাহ্তে হাদিসটি وَيُؤْمِنُ بِالْقَدَرِ অংশটুকু ব্যতীত রয়েছে। তাকদির এর প্রতি ঈমান -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১০৫. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেন: আমার উম্মাতের মধ্যে দুরকমের লোক রয়েছে, তাদের জন্য ইসলামে কোন অংশ নেই। তারা হলো: [১] মুর্জিয়াহ্ ও [২] ক্বদারিয়্যাহ্। তিরমিজি বলেছেন: হাদিসটি হাসান গরীব। {১}
{১} জইফ : তিরমিজি ২০৭৫, যঈফুল জামি ৩৪৯৮। এ হাদিসটি ইবনি আব্বাস [রাদি.]থেকে ইকরিমাহ্ কর্তৃক দুটি দুর্বল সানাদে বর্ণনা করিয়াছেন। এর কতগুলো শাহিদমূলক বর্ণনা রয়েছে, তবে সবগুলো ত্রুটিযুক্ত; ফলে কেউ কেউ এটিকে মাওযূ বা বানায়োট হাদিসটি হিসেবে গণ্য করিয়াছেন। আর আল্লামা আলাঈ বলেন : হাদিসটি প্রকৃতপক্ষে দুর্বল বানায়োট নয়। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
১০৬. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-কে বলিতে শুনিয়াছি, আমার উম্মাতের মধ্যেও খাস্ফ [জমিন ধ্বসিয়ে বা অদৃশ্য করে দেয়া] এবং মাস্খ [চেহারা বা আকার পরিবর্তন করে দেয়ার] মত শাস্তি হবে। তবে এ শাস্তি তাক্বদীরের প্রতি অবিশ্বাসকারীদের মধ্যেই হবে। আবু দাউদ, ঈমাম তিরমিজিও অনুরূপ হাদিস বর্ণনা করিয়াছেন। {১}
{১} হাসান : তিরমিজি ২০৭৯, আবু দাউদ ৩৯৯৭, ইবনি মাজাহ ৪০৬১, আহমাদ ২/১০৮ ও ১৬৩। সমস্ত অনুলিপিতে رَوَاهُ أَبُوْ دَاؤُدَ وَرَوَى التِّرْمِذِىُّ نَحْوَهٗ এভাবে রয়েছে যা মূলত ভুল। সঠিক হলো এর সম্পূর্ণ বিপরীত অর্থাৎ- رَوَاهُ أَبُوْ دَاؤُدَ وَرَوَى التِّرْمِذِىُّ نَحْوَهٗ। ঈমাম তিরমিজি ২/২২ নং পৃষ্ঠায় এ শব্দেই হাদিসটি সংকলন করিয়াছেন। আবু দাউদ ৪২১৬ নং, ইবনি মাজাহ ৪০৬১ নং এবং আহমাদ ২/১০৮ এবং ১৩৭ নং পৃষ্ঠায় হাদিসটি সংকলন করিয়াছেন। হাদিসের সানাদটি হাসান স্তরের। এই হাদিসটির তাহকীকঃ হাসান হাদিস
১০৭. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেনঃ ক্বদারিয়্যাগণ হচ্ছে এ উম্মাতের মাজুসী। অতঃপর তারা যদি অসুস্থ হয়, তাদেরকে দেখিতে যাবে না, আর যদি মারা যায়, তবে তাদের জানাযায় উপস্থিত হয়ো না। {১}
{১} হাসান : আহমাদ ৫৩২৭, আবু দাউদ ৪০৭১, সহীহুল জামি ৪৪৪২। আবু দাউদ-এর সানাদের রাবীগণ সবই বিশ্বস্ত কিন্তু সানাদে বিচ্ছিন্নতা রয়েছে তবে আহমাদ-এর সানাদটি মাওসূল সূত্রে বর্ণিত কিন্তু তাতে একজন দুর্বল রাবী রয়েছে। এ হাদিসের আরো একটি সানাদ রয়েছে যেটি আল্লামা আজিরী তার আশ্ শারীআহ্ নামক গ্রন্থের ১৯০ নং পৃষ্ঠায় বর্ণনা করিয়াছেন। তবে তাতেও দুর্বলতা রয়েছে। আর এ সবগুলো সানাদের সমন্বয়ে হাদিসটি হাসান স্তরে পৌঁছেছে। এই হাদিসটির তাহকীকঃ হাসান হাদিস
১০৮. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেন: তোমরা ক্বদারিয়্যাদের সাথে উঠা-বসা করো না এবং তাদেরকে হাকিম বা বিচারক নিযুক্ত করো না। {১}
{১} জইফ : আবু দাউদ ৪০৮৭, যঈফুল জামি ৬১৯৩। কারণ এর সানাদে হাকীম বিন শরীক নামক অপরিচিত রাবী রয়েছে। ঈমাম আবু দাউদ [রাহিমাহুল্লাহ] হাদিসটি দুর্বল সূত্রে বর্ণনা করিয়াছেন। এ সানাদেই হাদিসটি ঈমাম আহমাদ তার মুসনাদে এবং আস্ সুন্নাহ্ নামক গ্রন্থে এবং ঈমাম হাকিম তা মুস্তাদ্রাক গ্রন্থে বর্ণনা করে সহীহ বলেনি। ঈমাম হাকিম পূর্ববর্তী হাদিসের শাহিদ হিসেবে হাদিসটি বর্ণনা করিয়াছেন।এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
১০৯. আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেন: ছয় রকম মানুষের প্রতি আমি লানাত [অভিশাপ] করি এবং আল্লাহ্ তাআলাও তাদের প্রতি অভিশপ্ত করিয়াছেন। আর প্রত্যেক নবীর দুআই কবুল হয়ে থাকে। [১] যারা আল্লাহ্র কিতাবের মধ্যে সংযোজন; [২] যে ব্যক্তি তাক্বদীরকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে; [৩] যে ব্যক্তি এ উদ্দেশ্যে জোর-জবরে ক্ষমতা দখল করে, আল্লাহ্ যাদেরকে অপমানিত লাঞ্ছিত করিয়াছেন [কাফির-মুশরিক-ফাসিক্ব] তাদের যেন সে মর্যাদা দান করিতে পারে এবং আল্লাহ্ যাকে সম্মানিত করিয়াছেন [মুমিন দীনদার] তাদের যেন অপমানিত ও লাঞ্ছিত করিতে পারে; [৪] যে ব্যক্তি আল্লাহ্র হারামে [মাক্কায়] এমন সীমালঙ্ঘন করে, যা আল্লাহ্ নিষিদ্ধ করে দিয়েছেন; [৫] যে ব্যক্তি আমার আহলে বায়ত-এর [অসম্মান করা এবং তাদের কষ্ট দেয়া] আল্লাহ্ যা হারাম করিয়াছেন তা হালাল মনে করে এবং [৬] যে ব্যক্তি আমার সুন্নাত [নিয়ম-কানুন] পরিত্যাগ করে। {১}
{১} জইফ : তিরমিজি ২০৮০, যঈফুল জামি ৩২৪৮, হাকিম ১/৩৬। কারণ হাদিসটি মুরসাল সূত্রে বর্ণিত। লেখকের শেষের কথা ধারণা দেয় যে, হাদিসটি ঈমাম বায়হাক্বী ও রযীন-এর চেয়ে প্রসিদ্ধ, উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন কেউ রিওয়ায়াত করেননি। কিন্তু এটি ভুল ধারণা। কারণ হাদিসটি ঈমাম তিরমিজি জামি আত তিরমিজির ২/২২, ২৩ পৃঃ ক্বদ্র [কদর] অধ্যায়ে, ঈমাম ত্ববারানী তার আল মুজামুল কাবীর গ্রন্থের ১/২৯১ পৃঃ এবং ঈমাম হাকিম ১/৩৬ পৃঃ বর্ণনা করিয়াছেন। ঈমাম হাকিম [রাহিমাহুল্লাহ] একে দোষমুক্ত সহীহ হাদিস হিসেবে আখ্যায়িত করিয়াছেন আর ঈমাম যাহাবী তার এ মতকে সমর্থন করিয়াছেন। তবে ঈমাম তিরমিজি এর মুরসাল হওয়াকে অধিক সঠিক বলেছেন। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
১১০. মাত্বার ইবনি উকামিস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেন: আল্লাহ্ তাআলা যখন তাহাঁর কোন বান্দার নির্ধারিত কোন জায়গায় মৃত্যুর ফায়সালা করেন, তখন সে জায়গায় তার যাওয়ার জন্য একটি প্রয়োজনও তৈরি করে দেন। {১}
{১} সহীহ : আহমাদ ২০৯৮০, তিরমিজি ২০৭২, সহীহুল জামি ৭৩৫০। তাকদির এর প্রতি ঈমান -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১১১. আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-কে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহ্র রসূল! মুমিনদের [নাবালেগ] বাচ্চাদের [জান্নাত-জাহান্নাম সংক্রান্ত ব্যাপারে] কী হুকুম? তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] উত্তরে বললেন, তারা বাপ-দাদার অনুসারী হবে। আমি বললাম, কোন [নেক] আমাল ছাড়াই? তিনি বললেন, আল্লাহ্ অনেক ভাল জানেন, তারা জীবিত থাকলে কী আমাল করত। আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম, আচ্ছা মুশরিকদের [নাবালেগ] বাচ্চাদের কী হুকুম? রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বললেন, তারাও তাদের বাপদাদার অনুসারী হবে। [অবাক দৃষ্টিতে] আমি জিজ্ঞেস করলাম, কোন [বদ] আমাল ছাড়াই? উত্তরে রসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বললেন, সে বাচ্চাগুলো বেঁচে থাকলে কী আমাল করত, আল্লাহ্ খুব ভাল জানেন। {১}
{১} সহীহ : আবু দাউদ ৪০৮৯। শায়খ আলবানী [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন : হাদিসটি দুটি সানাদে বর্ণিত যার একটি সহীহ। তাকদির এর প্রতি ঈমান -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১১২. ইবনি মাস্ঊদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেন: যে ব্যক্তি নিজের কন্যা সন্তানকে জীবন্ত ক্ববর দেয় এবং যে মেয়েকে ক্ববর দেয়া হয়, উভয়ই জাহান্নামী। {১}
{১} সহীহ : আবু দাউদ ৪০৯৪, সহীহুল জামি ৭১৪২। হাদিসটির অনেকগুলো সানাদ রয়েছে যার কয়েকটি দুর্বল হলেও বাকীগুলো সহীহ। অতএব নিঃসন্দেহে হাদিসটি সহীহ। তাকদির এর প্রতি ঈমান -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিসঅধ্যায়ঃ ৩. তৃতীয় অনুচ্ছেদ
১১৩. আবুদ্ দারদা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেন: আল্লাহ্ তাআলা পাঁচটি বিষয়ে তাহাঁর সৃষ্টজীবের জন্য চূড়ান্তভাবে [তাক্বদীরে] লিখে দিয়ে নির্ধারিত করে রেখেছেন: [১] তার আয়ুষ্কাল [জীবনকাল], [২] তার আমাল [কর্ম], [৩] তার অবস্থান বা মৃত্যুস্থান, [৪] তার চলাফেরা [গতিবিধি] এবং [৫] এবং তার রিয্ক্ব [জীবিকা]। {১}
{১} সহীহ : আহমাদ ২০৭২৯, ইবনি আবুল আস্-এর তাহ্ক্বীকুস্ সুন্নাহ, ৩০৩। তাকদির এর প্রতি ঈমান -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১১৪. আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেন: যে ব্যক্তি তাক্বদীর বিষয়ে আলোচনা করিবে, ক্বিয়ামাতের দিন তাকে সে সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। অপরদিকে যে ব্যক্তি এ ব্যাপারে কোন আলোচনা করিবে না, তাকে সে বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হবে না। {১}
{১} জইফ : ইবনি মাজাহ ৮১, যঈফুল জামি ৫৫৩২। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
১১৫. ইবনি আদ্ দায়লামী [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, সহাবী উবাই ইবনি কাব [রাদি.]-এর নিকট পৌছে আমি তাকে বললাম, তাক্বদীর সম্পর্কে আমার মনে একটি সন্দেহ তৈরি হচ্ছে। তাই আপনি আমাকে কিছু হাদিস শুনান যাতে আল্লাহ্র মেহেরবানীতে আমার মন থেকে [তাক্বদীর সম্পর্কে] এসব সন্দেহ-সংশয় দূরিভূত হয়। তিনি বললেন, আল্লাহ্ তাআলা যদি সমস্ত আকাশবাসী ও দুনিয়াবাসীকে শাস্তি দিতে ইচ্ছা করেন, তবে তা দিতে পারেন। এতে আল্লাহ্ যালিম বলে সাব্যস্ত হবেন না। পক্ষান্তরে তিনি যদি তাহাঁর সৃষ্টজীবের সকলের প্রতিই রহমাত করেন, তবে তাহাঁর এ রাহমাত তাদের জন্য সকল আমাল হইতে উত্তম হবে। সুতরাং তুমি যদি উহুদ পাহাড়সম স্বর্ণও আল্লাহ্র পথে দান কর, তোমার থেকে তিনি তা গ্রহণ করিবেন না, যে পর্যন্ত তুমি তাক্বদীরে বিশ্বাস না করিবে এবং যা তোমার ভাগ্যে ঘটেছে তা তোমার কাছ থেকে কক্ষনো দূরে চলে যাবে না- এ কথাও তুমি বিশ্বাস না করিবে, আর যা এড়িয়ে গেছে তা কক্ষনো তোমার নিকট আর আসবে না- এ বিশ্বাস স্থাপন করা ব্যতীত যদি তোমার মৃত্যু হয় তবে অবশ্যই তুমি জাহান্নামে প্রবেশ করিবে।
ইবনি আদ্ দায়লামী বলেন, উবাই ইবনি কাব [রাদি.]-এর এ বর্ণনা শুনে আমি সহাবী আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ [রাদি.]-এর নিকট গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম। তিনিও আমাকে এ কথাই প্রত্যুত্তর করিলেন। তারপর সহাবী হুযায়ফাহ ইবনি ইয়ামান [রাদি.]-এর নিকট যেয়েও জিজ্ঞেস করলাম। তিনিও আমাকে একই প্রত্যুত্তর করিলেন। এরপর যায়দ ইবনি সবিত [রাদি.]-এর কাছে আসলাম। তিনি স্বয়ং নবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর নাম করেই আমাকে একই ধরনের কথা বললেন।{১}
{১} সহীহ : আহমাদ ২১১৪৪, আবু দাউদ ৪৬৯৯, ইবনি মাজাহ ৭৭।তাকদির এর প্রতি ঈমান -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১১৬. নাফি [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, এক লোক সহাবী ইবনি উমার [রাদি.]-এর নিকট এসে বলিল, অমুক লোক আপনাকে সালাম দিয়েছে। উত্তরে ইবনি উমার বললেন, আমি শুনিয়াছি, সে নাকি দ্বীনের মধ্যে নতুন মত তৈরি করেছে [অর্থাৎ তাক্বদীরের প্রতি অবিশ্বাস করছে]। যদি প্রকৃতপক্ষে সে দ্বীনের মধ্যে নতুন কিছু তৈরি করে থাকে, তাহলে আমার পক্ষ হইতে তাকে কোন সালাম পৌছাবে না। কেননা আমি রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-কে বলিতে শুনিয়াছি, তিনি বলেছেন, আমার উম্মাতের অথবা এ উম্মাতের মধ্যে জমিনে ধ্বসে যাওয়া, চেহারা বিকৃত রূপ ধারণ করা, শিলা পাথর বর্ষণের মতো আল্লাহ্র কঠিন আযাব পতিত হবে, তাদের উপর যারা তাক্বদীরের প্রতি অস্বীকারকারী হবে। ঈমাম তিরমিজি বলেন, এ হাদিসটি হাসান সহীহ ও গরীব। {১}
{১} হাসান : তিরমিজি ২১৫২, ইবনি মাজাহ ৪০৬১, আবু দাউদ ৪৬১৩। এই হাদিসটির তাহকীকঃ হাসান হাদিস
১১৭. আলী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, নবী [সাঃআঃ]-এর নিকট খাদীজাহ্ [রাদি.] তাহাঁর [পূর্ব স্বামীর] দুটি সন্তান সম্পর্কে জিজ্ঞেস করিলেন, যারা জাহিলিয়্যাতের যুগে মারা গেছে [তারা কোথায় জান্নাতী, না জাহান্নামী]। উত্তরে রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেন, তারা উভয়ে জাহান্নামী। আলী [রাদি.] বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] [যখন সন্তানদের জাহান্নামী হওয়ার ব্যাপারে বর্ণনা দেন তখন] খাদীজাহ্ [রাদি.]-এর চেহারায় বিষন্ন ও অসন্তোষের ভাব লক্ষ্য করে বললেন, তুমি যদি তাদের অবস্থান বা অবস্থা দেখিতে, তবে তুমি নিশ্চয়ই তাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করিতে। অতঃপর খাদীজাহ্ [রাদি.] জিজ্ঞেস করিলেন, তাহলে আপনার ঔরসে আমার যেসব সন্তান জন্মগ্রহণ করে মারা গেছে [কাসিম ও আবদুল্লাহ, তাদের কী হবে]? রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেন, তারা জান্নাতে অবস্থান করছে। অতঃপর রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেন, মুমিনগণ ও তাদের সন্তান-সন্ততিরা জান্নাতে এবং মুশরিক ও তাদের সন্তানাদিরা জাহান্নামে যাবে। তারপর রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কুরআনের আয়াত পাঠ করিলেন [অনুবাদ]: “যারা ঈমান এনেছে আর তাদের সন্তানরা যারা তাদের অনুসরণ করেছে, { আমি তাদের সন্তানদেরকে [জান্নাতে] ওদের সাথে রাখবো ]”- [সূরাহ্ আত তূর ৫২: ২১]। {১}
{১} জইফ : যাওয়ায়িদুল মুসনাদ ১১৩৪। কারণ এর সানাদে মুহাম্মাদ ইবনি উসমান নামক একজন অপরিচিত রাবী রয়েছে। আর সে অনেক মুনকার হাদিস বর্ণনা করেছে। হাদিসটির বর্ণনার নিসবাত আহমাদের দিকে ভুলবশত করা হয়েছে, প্রকৃতপক্ষে হাদিসটি আহমাদের ছেলে আবদুল্লাহ তাহাঁর যাওয়ায়িদুল মুসনাদ গ্রন্থের ১/১৩৪-৩৫ নং এ বর্ণনা করিয়াছেন হায়সামী হাদিসটি তাহাঁর মাজ্মাউয্ যাওয়া-য়িদ গ্রন্থের ৭/২১৭ নং পৃঃ আবদুল্লাহর দিকে নিসবাত করেছে বলেছেন, এর সানাদে মুহাম্মাদ ইবনি উসমান নামক একজন অপরিচিত রাবী রয়েছে, তবে অবশিষ্ট রাবীগণ নির্ভরযোগ্য বা বিশ্বস্ত। শায়খ আলবানী [রাহিমাহুল্লাহ] বলেনঃ ঈমাম যাহাবী মুহাম্মাদ ইবনি উসমান [রাদি.] সম্পর্কে বলেন যে, তিনি অপরিচিত তার মুনকার হাদিস রয়েছে। ঈমাম আবদী তাকে [মুহাম্মাদ ইবনি উসমান] দুর্বল রাবীদের অন্তর্ভুক্ত করিয়াছেন। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
১১৮. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আল্লাহ্ তাআলা যখন আদাম [আঃ] –কে সৃষ্টি করিলেন, তখন তাহাঁর পিঠের উপর হাত বুলালেন। এতে তাহাঁর পিঠ হইতে তাহাঁর সমস্ত সন্তান জীবন্ত বেড়িয়ে পড়ল যা ক্বিয়ামাত অবধি তিনি সৃষ্টি করিবেন। তন্মধ্যে প্রত্যেকের দুই চোখের মধ্যস্থলে নূরের চমক ছিল। অতঃপর সকলকে আদাম [আঃ]-এর সামনে পেশ করিলেন। [এদেরকে দেখে] আদাম [আঃ] জিজ্ঞেস করিলেন, হে রব! এরা কারা ? [প্রত্যুত্তরে] রব বললেন, এরা সব তোমার সন্তান। এমন সময় আদাম [আঃ] তাঁদের একজনকে দেখলেন, তাকে তার খুব ভাল লাগল। তাহাঁর দুই চোখের মধ্যস্থলে নূরের চমক ছিল। তিনি জিজ্ঞেস করিলেন, হে রব! এ ব্যক্তি কে? তিনি বলেন, [তোমার সন্তান] দাউদ [আঃ]। তিনি [আদাম] বললেন, হে প্রভু! তার বয়স কত নির্ধারণ করিয়াছেন? তিনি বললেন, ষাট বছর। তিনি [আদাম] বলেন, হে প্রভু! [অনুগ্রহ করে] আমার বয়স থেকে তাঁকে আরো চল্লিশ বছর দান করুন। রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেন, আদাম [আঃ]-এর বয়স ফুরিয়ে গেলে এবং ঐ চল্লিশ বছর বাকী থাকতে মালাকুল মাওত এসে তাহাঁর কাছে উপস্থিত হলেন। আদাম [আঃ] তাঁকে বললেন, এখনো তো আমার বয়স চল্লিশ বছর বাকী আছে। মালাকুল মাওত বললেন, আপনি কি আপনার বয়সের চল্লিশ বছর আপনার সন্তান দাউদ [আঃ]-কে দান করেননি? আদাম [আঃ] তা অস্বীকার করেন। তাই তাহাঁর সন্তানরাও অস্বীকার করেন। অতঃপর আদাম [আঃ] [তার ওয়াদা] ভুলে গিয়েছিলেন। তিনি [নিষিদ্ধ] গাছের ফল খেয়ে ফেললেন। তাই তাহাঁর সন্তানরাও ভুলে যায়। আদাম [আঃ]-এর ত্রুটি-বিচ্যুতি হয়েছিল, আর এ কারণেই এই ত্রুটি-বিচ্যুতি সন্তানদের দ্বারাও হয়ে থাকে। {১}
{১} হাসান সহীহ : তিরমিজি ৩০৭৬ [সহীহ সুনানুত্ তিরমিজি], হাকিম ২/৫৮৫-৮৬। আলবানী [রাহিমাহুল্লাহ] বলেনঃ হাদিসের সানাদটি হাসান/হাসান স্তরের। ঈমাম হাকিম হাদিসটিকে তাহাঁর মুসনাদে হাকিম এর ২/৫৮৫-৮৬ নং এ সহীহ বলেছেন। এই হাদিসটির তাহকীকঃ হাসান সহীহ
১১৯. আবুদ্ দারদা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নবী [সাঃআঃ] বলেনঃ সৃষ্টির প্রাক্কালে আল্লাহ্ তাআলা যখন আদাম [আঃ]-কে সৃষ্টি করিলেন তখন তাহাঁর কাঁধের উপর তাহাঁর হাত মারলেন। এতে ক্ষুদ্র পিঁপড়ার দলের ন্যায় সুন্দর ঝকঝকে একদল আদাম সন্তান বেরিয়ে আসল। তিনি আবার তাহাঁর বাম কাঁধের উপর হাত মারলেন এবং কয়লার ন্যায় কালো অপর একদল আদাম সন্তান বেরিয়ে আসল। তারপর আল্লাহ্ তাআলা আদাম [আঃ]-এর ডান দিকের সন্তানদের ইঙ্গিত করে বললেন, এ দল জান্নাতী। এতে আমি কারো পরোয়া করি না। অতঃপর আবার তিনি বাম দিকের আদাম সন্তানদের দিকে ইঙ্গিত করে বললেন, এ দল জাহান্নামী। এ সম্পর্কেও আমি কারো পরোয়া করি না। {১}
{১} সহীহ : আহমাদ ২৬৯৪২, সহীহুল জামি ৩২৩৪। ঈমাম আহমাদ ইবনি হাম্বাল [রাহিমাহুল্লাহ] তাহাঁর মুসনাদের ৬/৪৪১ নং এ এবং তার ছেলে আবদুল্লাহ আয্ যাওয়া-য়িদ গ্রন্থে বর্ণনা করিয়াছেন। হাদিসের সানাদটি সহীহ। হায়সামী তার আল মাজ্মা গ্রন্থের ৭/১৮৫ নং এ বলেছেন, হাদিসটি ঈমাম আহমাদ, বায্যার, ত্ববারানী [রাহিমাহুল্লাহ] বর্ণনা করিয়াছেন আর তার রাবীগণ সহীহুর রাবী। শায়খ আলবানী [রাহিমাহুল্লাহ] বলেনঃ যদি তিনি [হায়সামী]-এর দ্বারা আহমাদ ব্যতীত অন্যদের রাবীর উদ্দেশ্য নিয়ে থাকে তাহলে ঠিক আছে অন্যথায় আহমাদের রাবীগণ সহীহুর রাবী বরং তারা সিক্বাহ্ বা বিশ্বস্ত। তাকদির এর প্রতি ঈমান -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১২০., [তাবিঈ] আবু নাযরাহ্ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, নবী [সাঃআঃ]-এর সহাবীগণের মধ্যে আবু আবদুল্লাহ [রাদি.]-কে তাহাঁর সঙ্গী-সাথীগণ [মৃত্যুশয্যায়] দেখিতে আসলেন। তিনি তখন ক্রন্দনরত অবস্থায় ছিলেন। তাঁরা তাঁকে জিজ্ঞেস করিলেন, আপনি কান্নাকাটি করছেন কেন? আপনাকে কি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এ কথা বলেননি যে, তোমার গোঁফ খাটো করিবে। আর সব সময় এভাবে গোঁফকে খাটো রাখবে, যে পর্যন্ত আমার সাথে [জান্নাতে] দেখা না হবে। তিনি বললেন, হ্যাঁ। তবে আমি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে এ কথাও বলিতে শুনিয়াছি, মহান আল্লাহ্ তাআলা স্বীয় ডান হাতে এক মুঠি [লোক] নিয়ে বলেছেন, এরা এর [জান্নাতের] জন্য এবং অপর [এক বাম] হাতের তালুতে এক মুঠি [লোক] নিয়ে বলেছেন, এরা এর [জাহান্নামের] জন্য। আর এ ব্যাপারে আমি কারো পরোয়া করি না। এ কথা বলে তিনি {আবদুল্লাহ [রাদি.]] বললেন, আমি জানি না, কোন হাতের মুঠির মধ্যে আমি আছি। {১}
{১} সহীহ : আহমাদ ১৭০৮৭। ঈমাম আহমাদ মুসনাদে আহমাদের ৪/১৭৬-৭৭, ৫/৬৮ নং এ বর্ণনা করিয়াছেন। তার সানাদটি সহীহ। আর আল মাজ্মা গ্রন্থে এর শাহিদ বর্ণনা রয়েছে। তাকদির এর প্রতি ঈমান -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১২১. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেছেনঃ আল্লাহ্ তাআলা আরাফার মাঠের সন্নিকটে নামান নামে এক জায়গায় আদাম [আঃ]-এর মেরুদণ্ড হইতে তাহাঁর সন্তানদের বের করে শপথ করিয়ে ছিলেন। তিনি আদাম [আঃ]-এর মেরুদন্ড হইতে তাহাঁর প্রত্যেক সন্তানকে বের করেছিলেন। এ সকলকে পিঁপড়ার মত আদাম [আঃ]-এর সামনে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছিল। অতঃপর আল্লাহ্ তাদের সম্মুখপানে কথা বলেছিলেন, “আমি কি তোমাদের প্রভু নই? আদাম সন্তানরা উত্তর দিয়েছিল, হ্যাঁ, অবশ্যই আপনি আমাদের প্রতিপালক। এতে আমি সাক্ষী থাকলাম যাতে তোমরা কিয়ামাতের দিন এ কথা বলিতে না পার, আমরা জানতাম না কিংবা তোমরা এ কথাও বলিতে না পার, আমাদের পিতৃ-পুরুষগণ আমাদের পূর্বে মুশরিক হয়ে গিয়েছিল। আর আমরা তাদের পরবর্তী বংশধর। তুমি কি বাতিলধর্মী [পিতৃ-পুরুষ]-গণ যা করেছে সে আমালের কারণে আমাদেরকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে দিবে”- [সূরাহ্ আরাফ ১৭২-১৭৩]। {১}
{১} সহীহ : আহমাদ ২৪৫১, সহীহুল জামি ১৭০১, মুসনাদে আহমাদ ১/২৭২। হাদিসের সানাদটি সহীহ। তাকদির এর প্রতি ঈমান -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১২২
উবাই ইবনি কাব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি এ আয়াতের “তোমাদের রব যখন বাণী আদামের মেরুদণ্ড থেকে তাদের সন্তানদের বের করিলেন”- [সুরাহ্ আরাফ ৭: ১৭২-১৭৩] এর তাফসীরে বলেন, আল্লাহ্ তাআলা আদাম সন্তানদের একত্রিত করিলেন। তাদেরকে বিভিন্ন রকম করে গড়ার মনস্থ করিলেন,এরপর তাদের আকার-আকৃতি দান করিলেন। তারপর কথা বলার শক্তি দিলেন। এবার তারা কথা বলিতে লাগল। অতঃপর তাদের কাছ থেকে ওয়াদা-অঙ্গীকার গ্রহণ করিলেন এবং তাদের নিজের সাক্ষ্য গ্রহণ করিলেন, আমি কি তোমাদের রব নই ? আদাম সন্তানগণ বলিল, হ্যাঁ, [নিশ্চয়ই আপনি আমাদের রব]। তারপর আল্লাহ্ তাআলা বললেন, আমি তোমাদের এ কথার উপর সাত আসমান ও সাত জমিনকে তোমাদের সম্মুখে সাক্ষী করছি এবং তোমাদের পিতা আদামকেও সাক্ষী বানাচ্ছি। তোমরা যেন ক্বিয়ামাতের দিন এ কথা বলার সুযোগ না পাও যে, আমরা তো এ ব্যাপারে কিছুই জানি না। তাই এখন তোমরা ভাল করে জেনে নাও, আমি ছাড়া তোমাদের কোন মাবূদ নেই এবং আমি ছাড়া তোমাদের কোন প্রতিপালকও নেই। সুতরাং [সাবধান] আমার সাথে কাউকে শরীক করো না। আমি শীঘ্রই তোমাদের কাছে আমার রসূলগণকে প্রেরণ করব, যারা তোমাদেরকে আমার ওয়াদা-অঙ্গীকার স্মরণ করিয়ে দিবেন। অতঃপর তোমাদের উপর আমি আমার কিতাবসমূহ নাযিল করব। তখন এ কথা শুনে আদাম সন্তান বলিল, আমরা এ কথার সাক্ষ্য দিচ্ছি, নিশ্চয়ই তুমি আমাদের রব ও আমাদের ইলাহ। তুমি ছাড়া আমাদের কোন রব নেই এবং তুমি ছাড়া আমাদের কোন ইলাহ নেই। বস্তুত আদাম সন্তানদের সকলে এ কথা স্বীকার করে নিল। আদাম [আঃ]-কে তাদের উপর উঠিয়ে ধরা হল। তিনি সকলকে প্রত্যক্ষ করিলেন। তিনি দেখলেন, তাহাঁর সন্তানদের মধ্যে ধনী-দরিদ্রও আছে, সুন্দর-অসুন্দরও আছে, [এটা দেখে] তিনি বললেন, হে রব! তুমি তোমার বান্দাদের সকলকে যদি এক সমান করে বানাতে? আল্লাহ্ তাআলা বললেন, আমি চাই আমার বান্দারা আমার প্রতি কৃতজ্ঞতার মধ্যে থাকুক। এরপর আদাম [আঃ] নবীদেরকে দেখলেন, তারা সকলেই যেন চেরাগের ন্যায়-তাদের উপর আলো ঝলমল করছিল। তাদের কাছ থেকে বিশেষ করে নাবূওয়াতের ও রিসালাতের দায়িত্ব পালনের বিশেষ শপথও নেয়া হয়েছে। আল্লাহ্ তাআলা বলছেন [অনুবাদ]: “আমি নবীদের নিকট হইতে যখন তাদের ওয়াদা অঙ্গীকার গ্রহণ করলাম এবং আপনি মুহাম্মাদ [সাঃআঃ], নূহ [আঃ], ইবরাহীম [আঃ], মূসা [আঃ], ঈসা ইবনি মারইয়াম [আঃ] হইতেও [অঙ্গীকার ও ওয়াদা] নেয়া হয়েছে”- [সূরাহ্ আহযাব ৩৩: ৭]। তিনি {উবাই [রাদি.]] বলেন, এ রূহ্দের মধ্যে ঈসা ইবনি মারইয়াম-এর রূহ্ [আত্না]-ও ছিল। অতঃপর আল্লাহ্ তাআলা এ রূহ্কেই মারইয়াম [আঃ]-এর প্রতি প্রেরণ করিয়াছেন। উবাই বলেছেন, এ রূহ্ মারইয়াম [আঃ]-এর মুখ দিয়ে [তাহাঁর পেটে] প্রবেশ করেছে। {১} [আহ্মাদ]
{১} হাসান : যাওয়ায়িদুল মুসনাদ ৫/১৩৫। ঈমাম আহমাদ হাদিসটি রিওয়ায়াত করেননি বরং তার ছেলে আবদুল্লাহ [রাদি.] যাওয়া-য়িদুল মুসনাদ নামক গ্রন্থেরে ৫/১৩৫ নং এ বর্ণনা করিয়াছেন। তার সানাদটি হাসান মাওফূফ। এই হাদিসটির তাহকীকঃ হাসান হাদিস
১২৩. আবুদ্ দারদা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমরা একদা রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট বসেছিলাম এবং দুনিয়াতে যা কিছু সংঘটিত হচ্ছে এ ব্যাপারে আলাপ-আলোচনা করিতেছিলাম। তখন রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেন, তোমরা যখন শুনবে যে, কোন পাহাড় তার নিজের জায়গা থেকে সরে গেছে তাতে তোমরা বিশ্বাস করিতে পার। কিন্তু যখন শুনবে যে, কোন মানুষের [সৃষ্টিগত] স্বভাব-চরিত্রের পরিবর্তন ঘটেছে তাতে বিশ্বাস স্থাপন করিবে না। কেননা মানুষ সেদিকে প্রত্যাবর্তন করিবে যার উপর তার সৃষ্টি হয়েছে। {১}
{১} জইফ : আহমাদ ২৬৯৫৩, সিলসিলাহ্ আয্ যঈফাহ্ ১৩৫। কারণ যুহরী আবুদ্ দারদা [রাদি.]-এর সাক্ষাৎ না পাওয়ায় হাদিসটির সানাদে বিচ্ছিন্নতা রয়েছে। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
১২৪. উম্মু সালামাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একদা আমি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বললাম হে, আল্লাহ্র রসূল! আপনি যে বিষ মিশানো ছাগলের গোশ্ত খেয়েছিলেন, তার বিষক্রিয়ার কারণে প্রতি বছরই আপনি এত কষ্ট অনুভব করছেন। রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেন, প্রতি বছরই আমার যে যন্ত্রনা বা অসুখ হয়, এটা আমার [নির্ধারিত] তাক্বদীরে লিপিবদ্ধ হয়েছিল, অথচ তখন আদাম [আঃ] ভূগর্ভেই ছিলেন। {১}
এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
Leave a Reply