নবীর জীবনী মর্যাদা নবুওয়াত দেহের গঠন হাসি মুখ, চোখ ও পা

নবীর জীবনী মর্যাদা নবুওয়াত দেহের গঠন হাসি মুখ, চোখ ও পা

নবীর জীবনী মর্যাদা নবুওয়াত দেহের গঠন হাসি মুখ, চোখ ও পা >> সুনান তিরমিজি শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন

অধ্যায়ঃ ৪৬, অনুচ্ছেদঃ (১-১৩)=১৩টি

১. অনুচ্ছেদঃ রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] এর মর্যাদা
২. অনুচ্ছেদঃ রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের] জন্ম হওয়া প্রসঙ্গে
৩. অনুচ্ছেদঃ নবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর নবুওয়াতের আবির্ভাব
৪. অনুচ্ছেদঃ রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] -এর নবুওয়াত লাভ এবং নবুওয়াত লাভকালে তাহাঁর বয়স কত ছিল?
৫. অনুচ্ছেদঃ রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর নবূওয়াতের নিদর্শনাবলী এবং যে বিশেষ গুণে আল্লাহ তাআলা তাঁকে বৈশিষ্ট্যমন্ডিত করিয়াছেন
৬. অনুচ্ছেদঃ [মহানবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]] যে খুঁটিতে ঠেস দিয়ে খুতবাহ্‌ দিতেন]
৭. অনুচ্ছেদঃ নবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর উপর কিরূপে ওয়াহী অবতীর্ণ হত
৮. অনুচ্ছেদঃ রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর দেহের গঠন
৯. অনুচ্ছেদঃ নবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর কথার ধরন
১০. অনুচ্ছেদঃ নবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর মুচকি হাসি প্রসঙ্গে
১১. অনুচ্ছেদঃ মোহরে নবূওয়াত
১২. অনুচ্ছেদঃ রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর মুখ, চোখ ও পায়ের আকৃতি
১৩. অনুচ্ছেদঃ রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর মৃত্যুর সময়কালীন বয়স

১. অনুচ্ছেদঃ রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] এর মর্যাদা

৩৬০৫. ওয়াসিলাহ্‌ ইবনিল আসক্বা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেনঃ আল্লাহ তাআলা ইব্‌রাহীম [আঃ]-এর সন্তানদের মধ্য হইতে ইসমাঈল [আঃ]-কে বেছে নিয়েছেন এবং ইসমাঈল-এর বংশে কিনানাহ্‌ গোত্রকে বংশ বেছে নিয়েছেন, কিনানাহ্‌ গোত্র হইতে কুরাইশ বংশকে বেছে নিয়েছেন, কুরাইশ বংশ থেকে হাশিম উপগোত্রকে বেছে নিয়েছেন এবং বানী হাশিম হইতে আমাকে বেছে নিয়েছেন।

ইবরাহীম [আঃ]-এর সন্তানদের মধ্যে হইতে ইসমাঈল [আঃ]-কে বেছে নিয়েছেন” অংশটুকু ব্যতীত হাদীসটি সহীহ। সহীহাহ্‌ [৩০২] । আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

৩৬০৬. ওয়াসিলাহ্‌ ইবনিল আস্‌ক্বা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেনঃ আল্লাহ তাআলা ইসমাঈল [আঃ]এর বংশধর হইতে কিনানাহ্‌ গোত্রকে বাছাই করিয়াছেন, কিনানাহ্‌ গোত্র হইতে কুরাইশকে বাছাই করিয়াছেন, আবার কুরাইশদের মধ্য হইতে হাশিমকে বাছাই করিয়াছেন এবং বনূ হাশিম হইতে আমাকে বাছাই করিয়াছেন।

সহীহঃ সহীহাহ্‌ [৩০২], মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ গারীব। নবীর জীবনী – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৬০৭. আল-আব্বাস ইবনি আবদুল মুত্তালিব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল [সাঃআঃ]! কুরাইশগণ এক সাথে বসে একে অপরে তাহাদের বংশমর্যাদা প্রসঙ্গে আলোচনা করে এবং মাটিতে আবর্জনার স্তুপের উপরকার খেজুর গাছের সাথে আপনাকে তুলনা করে। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ আল্লাহ তাআলা সকল জীব সৃষ্টি করিয়াছেন এবং আমাকে তাহাদের সব চাইতে ভাল গোত্রে সৃষ্টি করিয়াছেন এবং দুই দলকে তিনি বেছে নেন [ইসহাক ও ইসমাঈল বংশ], তারপর গোত্র ও বংশগুলোকে তিনি বাছাই করেন এবং আমাকে সবচাইতে ভাল বংশে সৃষ্টি করিয়াছেন। তারপর তিনি ঘরসমূহ বাছাই করিয়াছেন এবং আমাকে সেই ঘরগুলোর মধ্যে সবচাইতে ভাল ঘরে সৃষ্টি করিয়াছেন। অতএব আমি ব্যক্তিসত্তায় তাহাদের সবচাইতে উত্তম বংশ-খান্দানেও সবার চাইতে উত্তম।

যঈফ, নাকদুল কাত্তানী [৩১-৩২], যঈফা [৩০৭৩]আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান। আবদুল্লাহ ইবনিল হারিস হলেন ইবনি নাওফাল। এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

৩৬০৮. আল-মুত্তালিব ইবনি আবু ওয়াদাআ [রাহঃ] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেনঃ আল-আব্বাস [রাদি.] রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের] নিকটে এলেন। মনে হয় তিনি কিছু [কুরাইশদের মন্তব্য] শুনে এসেছেন। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] মিয়ারে উঠে দাড়িয়ে বললেনঃ আমি কে? সাহাবীগণ বলিলেন, আপনি আল্লাহর রাসূল, আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক। তিনি বললেনঃ আমি মুহাম্মাদ ইবনি আবদুল্লাহ ইবনি আবদুল মুত্তালিব। আল্লাহ তাআলা সৃষ্টিকুলকে সৃষ্টি করিয়াছেন এবং তাহাদের মধ্যে সবচাইতে ভাল লোকদের অন্তর্ভুক্ত করিয়াছেন। তারপর তিনি তার সৃষ্টিকে দুই ভাগে ভাগ করিয়াছেন এবং আমাকে তাহাদের মধ্যকার উত্তম দল হইতে সৃষ্টি করিয়াছেন। তারপর তিনি তাহাদেরকে কিছু গোত্রে ভাগ করিয়াছেন এবং আমাকে তাহাদের মধ্যকার ভাল গোত্র হইতে সৃষ্টি করিয়াছেন। তারপর তিনি তাহাদেরকে কিছু পরিবারে ভাগ করিয়াছেন এবং আমাকে তাহাদের মধ্যকার সবচাইতে ভাল পরিবারে ও ভাল ব্যক্তি হইতে সৃষ্টি করিয়াছেন।

যঈফ, যঈফা [৩০৭৩] আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান। এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

৩৬০৯. আবু হুরাইরাহ্‌ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, লোকেরা প্রশ্ন করিল, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! আপনার নবূওয়াত কখন অবধারিত হয়েছে? তিনি বললেনঃ যখন আদম [আঃ] তাহাঁর শরীর ও রুহের মধ্যে ছিল।

সহীহঃ সহীহাহ্‌ [১৮৫৬], মিশকাত [৫৭৫৮] ।আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ, আবু হুরাইরাহ্‌ [রাদি.]-এর বর্ণনার পরিপ্রেক্ষিতে গারীব। উপর্যুক্ত সনদেই আমরা শুধুমাত্র হাদীসটি অবগত হয়েছি। মাইসারাহ্‌ আল-ফাজ্‌র হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। নবীর জীবনী – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৬১০. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে দিন লোকদেরকে উঠানো হইবে [কবর হইতে কিয়ামাতের মাঠে] সেদিন আমিই সর্বপ্রথম আত্মপ্রকাশকারী হব। যখন সকল মানুষ আল্লাহ্ তাআলার আদালতে একত্র হইবে, তখন আমি তাহাদের ব্যাপারে বক্তব্য উত্থাপন করব। তারা যখন নিরাশ ও হতাশাগ্রস্ত হইবে তখন আমিই তাহাদের সুখবর প্রদানকারী হব। সে দিন প্রশংসার পতাকা আমার হাতেই থাকিবে। আমার প্রতিপালকের নিকট আদম-সন্তানদের মধ্যে আমিই সবচাইতে সম্মানিত, এতে গর্বের কিছু নেই।

যঈফ, মিশকাত [৫৭৬৫] আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান গরীব সহীহ। এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

৩৬১১. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আমিই সর্বপ্রথম ব্যক্তি যার জন্য যমিন ফাক করা হইবে [সবার আগে আমিই কবর হইতে উঠবো]। তারপর আমাকে জান্নাতের [একজোড়া] পোশাক পরানো হইবে। তারপর আমি আরশের ডান পাশে গিয়ে দাড়াব। আমি ছাড়া সৃষ্টিকুলের কেউই সেই জায়গায় দাড়াতে পারবে না।

যঈফ, মিশকাত [৫৭৬৬] আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান গরীব সহীহ। এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

৩৬১২. আবু হুরাইরাহ্‌ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেনঃ আমার জন্য তোমরা আল্লাহ তাআলার কাছে ওয়াসীলাহ্‌ কামনা কর। সাহাবীগণ বলিলেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! ওয়াসীলাহ্‌ কি? তিনি বললেনঃ জান্নাতের সবচাইতে উঁচু স্তর। শুধুমাত্র এক লোকই তা অর্জন করিবে। আশা করি আমিই হব সেই ব্যক্তি।

সহীহঃ মিশকাত [৫৭৬৭], মুসলিম [২/৪] ।আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি গারীব এবং এর সনদ খুব একটা মাজবুত নয়। কাব সুপরিচিত ব্যক্তি নন। লাইস ইবনি আবী সুলাইম ছাড়া আর কেউ তার হইতে হাদীস রিওয়ায়াত করিয়াছেন বলে আমাদের জানা নেই। নবীর জীবনী – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৬১৩. উবাই ইবনি কাব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেনঃ [পূর্ববর্তী] নবীগণের মাঝে আমার উপমা সেই লোকের মত যে একটি সুরম্য, সম্পূর্ণ ও সুশোভিত প্রাসাদ নির্মাণ করিল, কিন্তু একটি ইটের জায়গা অসম্পূর্ণ রেখে দিল। জনগণ প্রাসাদটি প্রদক্ষিণ করত এবং তাতে অবাক হয়ে বলত, যদি তার নির্মাণকারী ঐ ইটের জায়গাটি পূর্ণ করত! অতএব আমি নবীগণের মাঝে সেই ইটের জায়গার সমতুল্য।

সহীহঃ তাখরীজু ফিক্‌সিহ সীরাহ্‌ [১৪১], বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ জাবিরও আবু হুরাইরাহ্‌ [রাদি.] হইতে বর্ণনা করিয়াছেন।একই সনদে নবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] হইতে বর্ণিত, তিনি বলেছেনঃ ক্বিয়ামতের দিন আমিই হব নবীগণের ঈমাম [নেতা], তাঁদের মুখপাত্র এবং তাহাদের সুপারিশকারী, এতে কোন গর্ব নেই। হাসানঃ মিশকাত [৫৭৬৮] । আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ গারীব। এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

৩৬১৪. আবদুল্লাহ ইবনি আম্‌র [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি নবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] কে বলিতে শুনেছেনঃ তোমরা মুআযযিনের আযান যখন শুনবে সে সময় তোমরা তার মতো বলবে, তারপর আমার উপর দরূদ পড়বে। কেননা যে লোক আমার প্রতি একবার দরূদ পড়ে আল্লাহ তাআলা তার প্রতি এর বিনিময়ে দশবার দয়া বর্ষণ করেন। তারপর আমার জন্য তোমরা আল্লাহ তাআলার নিকটে ওয়াসীলাহ্‌ প্রার্থণা কর। কেননা ওয়াসীলাহ্‌ হল জান্নাতের এমন একটি মর্যাদাপূর্ণ জায়গা যা আল্লাহ তাআলার বান্দাদের মাঝে শুধুমাত্র একজনই অর্জন করিবে। আশা করি আমিই হব সেই বান্দা। আমার জন্য যে লোক উসীলা প্রার্থণা করিল তার জন্য [আমার] সুপারিশ অবধারিত হল।

সহীহঃ ইরওয়া [২৪২], তালীক্ব আলা বিদাইয়াতিস্‌ সূল [২০/৫২], মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। ঈমাম মুহাম্মদ {বুখারী [রঃ]} বলেন, এই আব্দুর রহমান ইবনি জুবাইর হলেন কুরাশী ও মিসররিয্‌ মাদীনাবাসী এবং আব্দুর রহমান ইবনি জুবাইর ইবনি নুফাইর হলেন সিরিয়ার অধিবাসী। নবীর জীবনী – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৬১৫. আবু সাঈদ আল-খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেনঃ ক্বিয়ামাতের দিন আমি আদম-সন্তানদের ঈমাম [নেতা] হব, এতে অহংকার নেই। হামদের [আল্লাহ তাআলার প্রশংসার] পতাকা আমার হাতেই থাকিবে, এতেও গর্ব নেই। সে দিন আল্লাহ তাআলার নবী আদম [আঃ] এবং নবীগণের সকলেই আমার পতাকার নীচে থাকিবেন। সর্বপ্রথম আমার জন্য মাটিকে বিদীর্ণ করা হইবে, এতে কোন অহংকার নেই।

সহীহঃ ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[৪৩০৮] এর কিছু অংশ মুসলিমেও আছে। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসে একটি ঘটনা আছে। এ হাদীসটি হাসান সহীহ। এই সানাদে বর্ণিত আছে যে, আবু নাজরাহ্‌ ইবনি আব্বাস হইতে, তিনি নবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] হইতে বর্ণনা করিয়াছেন। নবীর জীবনী – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৬১৬. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের] কিছু সাহাবী তাহাঁর প্রতীক্ষায় বসে ছিলেন। রাবী বলেন, তিনি বের হয়ে তাহাদের নিকট এসে তাহাদের কথাবার্তা শুনলেন। তাহাদের কেউ বলিলেন, বিস্ময়ের বিষয়। আল্লাহ তাআলা তার সৃষ্টিকুলের মধ্য হইতে [একজনকে] নিজের ঘনিষ্ঠ বন্ধু বানিয়েছেন। তিনি ইবরাহীম [আঃ]-কে নিজের ঘনিষ্ঠ বন্ধু বানিয়েছেন। আরেকজন বলিলেন, এর চেয়ে বিস্ময়ের ব্যাপার হলঃ মূসা আলাইহিস সালাম-এর সাথে তাহাঁর  কথাবার্তা। আরেকজন বলিলেন, ঈসা আলাইহিস সালাম আল্লাহর কালিমা [“কুন” [হও] দ্বারা সৃষ্ট] এবং তাহাঁর দেয়া রূহ। আরেকজন বলিলেন, আদম আলাইহিস সালাম-কে আল্লাহ তাআলা পছন্দ করিয়াছেন। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাদের নিকটে বের হয়ে তাহাদেরকে সালাম করে বললেনঃ আমি তোমাদের কথাবার্তা ও তোমাদের বিস্ময়ের ব্যাপারটা শুনিয়াছি। নিশ্চয় ইবরাহীম আলাইহিস সালাম আল্লাহ তাআলার ঘনিষ্ঠ বন্ধু, সত্যিই তিনি তাই। মূসা আলাইহিস সালাম আল্লাহ তাআলার সাথে বাক্যালাপকারী, সত্যিই তিনি তাই। ঈসা আলাইহিস সালাম তার রূহ ও কালিমা, সত্যিই তিনি তাই। আর আদম আলাইহিস সালাম-কে আল্লাহ তাআলা পছন্দ করিয়াছেন, সত্যিই তিনিও তাই। কিন্তু আমি আল্লাহ্ তাআলার হাবীব [প্রিয় বন্ধু], তাতে কোন গর্ব নেই। কিয়ামাত দিবসে আমিই হব প্রশংসার পতাকা বহনকারী তাতে কোন গর্ব নেই। কিয়ামাতের দিন আমিই সর্বপ্রথম শাফাআতকারী এবং সর্ব প্রথমে আমার শাফাআতই ক্ববূল হইবে, তাতেও কোন গর্ব নেই। সর্ব প্রথমে আমিই জান্নাতের [দরজার] কড়া নাড়ব। সুতরাং আল্লাহ তাআলা আমার জন্য তার দরজা খুলে দিবেন, আমাকেই সর্বপ্রথম জান্নাতে পাঠাবেন এবং আমার সাথে থাকিবে গরীব মুমিনগণও, এতেও গর্বের কিছু নেই। আমি আগে ও পরের সকল লোকের মধ্যে বেশি মর্যাদাসম্পন্ন ও সম্মানিত, এতেও গর্বের কিছু নেই।

যঈফ, মিশকাত [৫৭৬২] আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি গারীব। এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

৩৬১৭. মুহাম্মাদ ইবনি ইউসুফ ইবনি আব্দিল্লাহ ইবনি সালাম তার পিতা হইতে তার দাদা হইতে বর্ণীতঃ

[তার দাদা] বলেছেন তাওরাতে মুহাম্মাদ [সাঃআঃ] এবং ঈসা আলাইহিস সালাম-এর গুনাবলী লিখা আছে এবং তাকে [ঈসা আলাইহিস সালাম-কে] তার সাথে দাফন করা হইবে। আবু মাওদুদ বলেন [আইশা [রাদি.] ঘরে কবরের জন্য জায়গা অবশিষ্ট আছে।

যঈফ, মিশকাত [৫৭৭২]আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গরীব। রাবী আবু মাওদূদ উসমান ইবনি আয-যাহ্‌হাক এরূপ বলেছেন। অবশ্য তিনি আযযাহহাক ইবনি উসমান আল-মাদীনী হিসেবেই পরিচিত।এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

৩৬১৮. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] যে দিন হিজরত করে মাদীনায় প্রবেশ করেন সেদিন সেখানকার প্রতিটি জিনিস জ্যোতির্ময় হয়ে যায়। তারপর যে দিন তিনি মৃত্যুবরণ করেন সেদিন আবার সেখানকার প্রত্যেকটি বস্তু অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে যায়। তাহাঁর দাফনকার্য আমরা সমাপ্ত করে হাত থেকে ধূলা না ঝাড়তেই আমাদের মনে পরিবর্তন এসে গেল [ঈমানের জোর কমে গেল] ।

সহীহঃ ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[১৬৩১] ।আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি সহীহ গারীব। নবীর জীবনী – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২. অনুচ্ছেদঃ রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের] জন্ম হওয়া প্রসঙ্গে

৩৬১৯. কাইস ইবনি মাখরামা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি ও রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হস্তী বছরে [আবরাহার বাহিনী ধ্বংসের বছর] জন্মগ্রহণ করি। তিনি বলেন, ইয়াসার ইবনি লাইস গোত্রীয় কুবাস ইবনি আশইয়ামকে উসমান ইবনি আফফান [রাদি.] প্রশ্ন করেন, আপনি বড় নাকি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]? তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমার চাইতে অনেক বড়, তবে আমি তাহাঁর আগে জন্মগ্রহণ করি। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হাতীর বছর জন্ম গ্রহণ করিয়াছেন। আমার মা আমাকে এমন জায়গায় নিয়ে গেলেন যেখানে গিয়ে আমি পাখিগুলোর [হাতিগুলোর] মলের রং সবুজে বদল হয়ে যেতে দেখেছি।

আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান গারীব। আমরা শুধু মুহাম্মাদ ইবনি ইসহাকের সূত্রেই এ হাদীস জেনেছি। এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

৩. অনুচ্ছেদঃ নবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর নবুওয়াতের আবির্ভাব

৩৬২০. আবু মূসা আল–আশআরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

আবু মূসা আল–আশআরী [রাদি.] বলেনঃ কিছু প্রবীণ কুরাইশসহ আবু তালিব [ব্যবসার উদ্দেশ্যে] সিরিয়ার দিকে রওয়ানা হলে নবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] তার সাথে রওয়ানা হন। তারা [বুহাইরাহ্‌] পাদ্রীর নিকট পৌঁছে তাহাদের নিজেদের সওয়ারী থেকে মালপত্র নামাতে থাকে, তখন উক্ত পাদ্রী [গীর্জা থেকে বেরিয়ে] তাহাদের নিকটে এলেন। অথচ এ কাফিলা এর আগে অনেকবার এখান দিয়ে চলাচল করেছে কিন্তু তিনি কখনও তাহাদের নিকট [গীর্জা] বেরিয়ে আসেননি বা তাহাদের প্রতি ভ্রুক্ষেপও করেননি। রাবী বলেন, লোকেরা তাহাদের বাহন থেকে সামানপত্র নামাতে ব্যস্ত থাকাবস্থায় উক্ত পাদ্রী তাহাদের ভেতরে ঢোকেন এবং রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] এর হাত ধরে বলেন, ইনি “সাইয়্যিদুল আলামীন” [বিশ্ববাসীর নেতা], ইনি রাসূল রাব্বিল আলামীন [বিশ্ববাসীর প্রতিপালকের রাসূল] এবং আল্লাহ তাআলা তাঁকে রহমাতুল্লিল আলামীন করে [বিশ্ববাসীর জন্য করুণা স্বরূপ] পাঠাবেন। তখন কুরাইশদের বৃদ্ধ লোকেরা তাকে প্রশ্ন করে, কে আপনাকে জানিয়েছে? তিনি বলেন, যখন তোমরা এ উপত্যকা হইতে নামছিলে, [তখন আমি লক্ষ্য করেছি যে,] প্রতিটি গাছ ও পাথর সিজদায় লুটিয়ে পড়ছে। এই দুটি নবী ব্যতীত অন্য কোন সৃষ্টিকে সাজদাহ্‌ করে না। এতদভিন্ন তাহাঁর ঘারের নীচে আপেল সদৃশ গোলাকার মোহরে নবুওয়াতের সাহায্যে আমি তাঁকে চিনেছি। পাদ্রী তার খানকায় ফিরে গিয়ে তাহাদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করেন। তিনি খাদ্যদ্রব্যসহ যখন তাহাদের নিকটে এলেন তখন রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] উটের পাল চরাতে গিয়েছিলেন। পাদ্রী বলেন, তোমরা তাকে ডেকে আনার ব্যবস্থা কর। অতএব রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] ফিরে এলেন, তখন একখন্ড মেঘ তাহাঁর উপর ছায়া বিস্তার করেছিল এবং কাফিলার লোকেরা যারা তাহাঁর পূর্বেই এসেছিল তাহাদেরকে তিনি গাছে ছায়ায় বসা অবস্থায় পেলেন। তিনি বসলে গাছের ছায়া তাহাঁর দিকে ঝুঁকে পড়ে। পাদ্রী বলেন, তোমরা গাছের ছায়ার দিকে লক্ষ্য কর, ছায়াটি তাহাঁর দিকে ঝুঁকে পড়েছে। রাবী বলেন, ইত্যবসরে পাদ্রী তাহাদের মাঝে দাঁড়িয়ে তাহাদেরকে শপথ দিয়ে বলেছিলেন, তোমরা তাঁকে নিয়ে রোম সাম্রাজ্যে যেও না। কেননা রূমীয়রা যদি তাঁকে দেখে তাহলে তাঁকে চিহ্নগুলোর দ্বারা সনাক্ত করে ফেলবে এবং তাঁকে মেরে ফেলবে। এমতাবস্থায় পাদ্রী লক্ষ্য করেন যে, রূমের সাতজন লোক তাহাদের দিকে আসছে। পাদ্রী তাহাদের দিকে অগ্রসর হয়ে প্রশ্ন করেন, তোমরা কেন এসেছ? তারা বলে, এ মাসে আখিরী যামানার নবীর আগমন ঘটবে। তাই চলাচলের প্রতিটি রাস্তায় লোক পাঠানো হয়েছে, তাই আমাদেরকে আপনাদের পথে পাঠানো হয়েছে। পাদ্রী রোমীয় নাগরিকদের প্রশ্ন করেন, তোমাদের পেছনে তোমাদের চেয়েও ভাল কোন ব্যক্তি আছে কি [কোন পাদ্রী তোমাদেরক এই নবীর সংবাদ দিয়েছে কি]? তারা বলিল, আপনার এ রাস্তায়ই আমাদেরকে ঐ নবীর আসার খবর দেয়া হয়েছে। পাদ্রী বলেন, তোমাদের কি মত, আল্লাহ তাআলা যদি কোন কাজ করার ইচ্ছা করেন তবে কোন মানুষের পক্ষে তা প্রতিহত করা কি সম্ভব? তারা বলিল, না [অর্থাৎ শেষ যামানার নবীর আগমন ঘটবেই, কোন মানুষ তা ঠেকাতে পারবে না] । রাবী বলেন, তারপর তারা তাহাঁর নিকট আনুগত্যের শপথ করে এবং তাহাঁর সাহচর্য অবলম্বন করে। তারপর পাদ্রী [কুরাইশ কাফিলাকে] আল্লাহ্‌র নামে শপথ করে প্রশ্ন করেন, তোমাদের মধ্যে কে তাহাঁর অভিভাবক? লোকেরা বলিল, আবু তালিব। পাদ্রী আবু তালিবকে অবিরতভাবে আল্লাহ তাআলার নামে শপথ করে তাঁকে স্বদেশে ফেরত পাঠাতে বলিতে থাকেন। শেষ পর্যন্ত আবু তালিব নবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] কে [মক্কায়] ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করেন এবং আবু বাক্‌র [রাদি.] বিলাল [রাদি.] কে তাহাঁর সাথে দেন। আর পাদ্রী তাঁকে পাথেয় হিসেবে কিছু রুটি ও যাইতূনের তৈল দেন।

সহীহ ফিক্‌হুস সীরাহ, দিফা আনিল হাদীসিন নাবাবী [৬২-৭২], মিশকাত [৫৯১৮], তবে বিলালের উল্লেখটুকু মুনকার বলে কথিত। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব। আমরা শুধু উপরোক্ত সনদসূত্রে এ হাদীস জেনেছি। এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

৪. অনুচ্ছেদঃ রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] -এর নবুওয়াত লাভ এবং নবুওয়াত লাভকালে তাহাঁর বয়স কত ছিল?

৩৬২১. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর উপর চল্লিশ বছর বয়সে ওয়াহী অবতীর্ণ হয়। অতঃপর তিনি মাক্কায় তের বছর ও মাদীনায় দশ বছর বসবাস করেন এবং যখন তিনি মৃত্যুবরণ করেন সে সময় তাহাঁর বয়স ছিল তেষট্টি বছর।

সহীহঃ মুখতাসার শামায়িল [৩১৭], বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। নবীর জীবনী – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৬২২. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর মৃত্যুর সময় তাহাঁর বয়স ছিল পঁয়ষট্টি বছর।

শাজ, প্রাগুক্ত আবু ঈসা বলেনঃ মুহাম্মাদ ইবনি বাশশার আমাদের নিকট এরূপই বর্ণনা করিয়াছেন এবং মুহাম্মদ ইবনি ইসমাঈল [বুখারী]-ও তার হইতে একই রকম বর্ণনা করিয়াছেন।এই হাদীসটির তাহকিকঃ শায

৩৬২৩. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] অধিক লম্বাও ছিলেন না এবং অতি বেঁটেও ছিলেন না। তিনি অতিরিক্ত সাদাও ছিলেন না, আবার বেশী তামাটে বর্ণও ছিলেন না। তাহাঁর মাথার চুল একেবারে ঘন কুকড়ানো ছিল না এবং একেবারে খাড়াও ছিল না। আল্লাহ তাআলা চল্লিশ বছর বয়সে তাঁকে নবূওয়াত দান করেন। তাপর তিনি মাক্কায় দশ বছর ও মাদীনায় দশ বছর বসবাস করেন। আল্লাহ তাআলা ষাট বছরের মাথায় তাঁকে মৃত্যু দান করেন। সে সময় তাহাঁর মাথা ও দাড়ির বিশটি চুলও সাদা হয়নি।

সহীহঃ মুখতাসার শামায়িল [১] ১৭৫৪ নং হাদীসে এর প্রথমাংশ বর্ণিত হয়েছে। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। নবীর জীবনী – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৫. অনুচ্ছেদঃ রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর নবূওয়াতের নিদর্শনাবলী এবং যে বিশেষ গুণে আল্লাহ তাআলা তাঁকে বৈশিষ্ট্যমন্ডিত করিয়াছেন

৩৬২৪. জাবির ইবনি সামুরাহ্‌ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেনঃ অবশ্যই মাক্কায় একখানা পাথর আছে যা আমার নবূয়াত অর্জনের রাতগুলোতে আমাকে সালাম করত। আমি এখনও অবশ্যই পাথরখানাকে চিহ্নিত করিতে পারি।

সহীহঃ মুসলিম [৭/৮৫] । আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব। নবীর জীবনী – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৬২৫. সামুরাহ্‌ ইবনি জুনদাব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমরা রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর সাথে সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি একটি পাত্র হইতে আহার করতাম। দশজন আহার করে চলে যেত এবং আবার দশজন খেতে বসত। আবুল আলা বলেন, আমরা [সামুরাকে] প্রশ্ন করলাম, আপনাদের এ সহযোগিতা কোথা হইতে আসত? সামুরাহ্‌ [রাদি.] বলিলেন, কিসে তুমি আশ্চর্য প্রকাশ করছ। এই দিক দিয়েই সহযোগিতা আসত। এই বলে তিনি আকাশের দিকে হাতের মাধ্যমে ইশারা করেন।

সহীহঃ মিশকাত [৫৯২৮] । আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। আবুল আলার নাম ইয়াযীদ ইবনি আবদুল্লাহ ইবনিশ খখীর। নবীর জীবনী – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৬২৬. আলী ইবনি আবু তালিব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাথে মক্কার কোন এক প্রান্তের উদ্দেশ্যে বের হলাম। তিনি যে কোন পাহাড় বা বৃক্ষের নিকট দিয়ে যেতেন তারা তাঁকে “আস-সালামু আলাইকুম ইয়া রসুলুল্লাহ” বলে অভিবাদন জানাত।

যঈফ, মিশকাত, তাহকীক ছানী [৫৯১৯] আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি গারীব। একাধিক রাবী এ হাদীস ওয়ালীদ ইবনি আবু সাওর-আব্বাদ ইবনি আবু ইয়াযীদ সূত্রে বর্ণনা করিয়াছেন। এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

৬. অনুচ্ছেদঃ [মহানবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]] যে খুঁটিতে ঠেস দিয়ে খুতবাহ্‌ দিতেন]

৩৬২৭. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] [মাসজিদে নাববীতে] একটি খেজুর গাছের কান্ডের সাথে ঠেস দিয়ে খুত্‌বাহ্‌ দিতেন। তারপর তাহাঁর জন্য লোকেরা একখানা মিম্বার স্থাপন করলে তিনি মিম্বারের উপর দাঁড়িয়ে খুত্‌বাহ্‌ দান করেন। সে সময় খুঁটিটি উষ্ট্রীর মতো কাঁদতে লাগল। রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] মিম্বার হইতে অবতরণ করে তাকে স্পর্শ করলে তা কান্না বন্ধ করে [শান্ত হয়] ।

সহীহঃ ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[১৪১৫] । এ অনুচ্ছেদে উবাই ইবনি কাব, জাবির ইবনি আবদুল্লাহ, ইবনি উমার, সাহল ইবনি সাদ, ইবনি আব্বাস ও উম্মু সালামাহ্‌ [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, আনাস [রাদি.]-এর এ হাদীস হাসান সহীহ। নবীর জীবনী – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৬২৮. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] এর নিকট এক বেদুঈন এসে বলিল, আমি কিভাবে অবগত হব যে, আপনি নবী? তিনি বললেনঃ ঐ খেজুর গাছের একটি কাঁদিকে আমি ডাকলে [তা যদি নেমে আসে] তাহলে তুমি কি সাক্ষ্য দিবে যে, আমি আল্লাহ তাআলার রাসূল?রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] উহাকে ডাকলেন, সে সময় কাঁদি খেজুর গাছ থেকে নেমে নবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] এর সম্মুখে এসে গেল। তারপর তিনি বললেনঃ এবার প্রত্যাবর্তন কর এবং তা স্বস্থানে ফিরে গেল। সে সময় বেদুঈনটি ইসলাম গ্রহণ করলো।

“বেদুঈন ইসলাম গ্রহণ করিল” অংশ ব্যতীত হাদীসটি সহীহঃ মিশকাত, তাহক্বীক্ব সানী [৫৯২৬], সহীহাহ্‌ [৩৩১৫] আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব সহীহ। নবীর জীবনী – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৬২৯. আবু যাইদ ইবনি আখত্বাব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] তাহাঁর হাতখানা আমার চেহারায় মর্দন করেন এবং আমার জন্য দুআ করেন। বর্ণনাকারী আযরাহ [রঃ] বলেন, ঐ লোকটি [দুআর বারাকাতে] একশত বিশ বছর জীবিত ছিলেন অথচ তার মাথার মাত্র কয়েকটি চুল সাদা হয়েছিল।

সহীহঃ তালীক্বাতুল হাস্‌সান [৭১২৮] । আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব। আবু যাইদের নাম আম্‌র ইবনি আখতাব। নবীর জীবনী – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৬৩০. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আবু ত্বালহা আনসারী [রাদি.] তাহাঁর সহধর্মিণী উম্মু সুলাইম [রাদি.]-কে বলিলেন, রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর দুর্বল কন্ঠস্বর শুনে আমি বুঝতে পারলাম, তিনি অতি ক্ষুধার্ত। তোমার নিকটে কি [খাবার] কিছু আছে? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ আছে। উম্মু সুলাইম [রাদি.] কয়েকখানা যবের রুটি বের করিলেন, তারপর নিজের একটি ওড়না বের করে তার একাংশে রুটি বাঁধলেন এবং তা আমার হাতে লুকিয়ে দেন এবং আমাকে ওড়নার অপরাংশ দেন, তারপর রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর নিকট আমাকে পাঠান। আনাস [রাদি.] বলেন, আমি ঐসব নিয়ে তাহাঁর লক্ষ্যে রাওয়ানা হলাম এবং রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-কে মাসজিদে বসা অবস্থায় পেলাম। সে সময় তাহাঁর সঙ্গে আরো লোক ছিল। বর্ণনাকারী বলেন, আমি তাহাদের সম্মুখে গিয়ে দাঁড়ালাম। রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] প্রশ্ন করলেনঃ তোমাকে আবু ত্বালহা পাঠিয়েছে কি? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ আহারের দাওয়াত? বর্ণনাকারী বলেন, হ্যাঁ। রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] তাহাঁর সাথীদের বললেনঃ তোমরা উঠে দাঁড়াও। আনাস [রাদি.] বলেন, তারা প্রত্যেকে রওয়ানা হলেন। আর আমি তাঁদের সামনে সামনে চললাম এবং আবু ত্বালহা [রাদি.]-এর নিকট গিয়ে বিষয়টি অবহিত করলাম। আবু ত্বালহা [রাদি.] বলিলেন, হে উম্মু সুলাইম! রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] তো লোকজন নিয়ে এসে পড়েছেন, কিন্তু তাহাদের সকলকে আহার করানোর মত খাবার তো আমাদের নিকটে নেই। উম্মু সুলাইম [রাদি.] বলিলেন, আল্লাহ ও তাহাঁর রাসূল তা ভাল করেই জানেন। আনাস [রাদি.] বলেন, আবু ত্বালহা [রাদি.] এগিয়ে গিয়ে রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর সঙ্গে দেখা করেন। রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] ও আবু ত্বালহা [রাদি.] একসাথে বাড়ির অভ্যন্তরে প্রবেশ করিলেন। রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বললেনঃ হে উম্মু সুলাইম! তোমার নিকট খাবার জিনিস যা কিছু আছে তা এখানে নিয়ে এসো। উম্মু সুলাইম [রাদি.] ঐ রুটিগুলো নিয়ে এলেন। রুটিগুলোকে রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] টুকরা টুকরা করার হুকুম দিলে তা টুকরা টুকরা করা হল। একটি চামড়ার পাত্র হইতে উম্মু সুলাইম [রাদি.] তাতে ঘি ঢেলে দিয়ে তা তরকারীবৎ তৈরী করিলেন। তারপর রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] আল্লাহ তাআলার ইচ্ছানুযায়ী তাতে কিছু দুআ-কালাম পাঠ করিলেন এবং বললেনঃ দশজন করে আসতে বল। সুতরাং দশজনকে আহবান করা হল, তারা পেট ভরে আহার করে বের হয়ে গেলে তিনি পুনরায় বললেনঃ আরো দশজনকে আসতে বল। আবার দশজনকে আহবান করা হল। তারা পেট ভরে আহার করে বের হয়ে গেলে তিনি পুনরায় বললেনঃ আরো দশজনকে আসতে বল। সুতরাং আবার দশজনকে আহবান করা হল। এভাবে দলের প্রত্যেকে পেট ভরে আহার করিলেন। দলে সর্বমোট সত্তর কিংবা আশিজন লোক ছিলেন।

সহীহঃ বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। নবীর জীবনী – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৬৩১. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-কে আমি লক্ষ্য করলাম, আসরের নামাযের ওয়াক্তও হয়ে গেছে এবং লোকেরা উযূর পানি খোঁজ করছে কিন্তু তারা তা পায়নি। রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর কাছে উযূর পানি আনা হল। তিনি নিজের হাত পানির পাত্রে রাখলেন এবং তা হইতে লোকদেরকে উযূ করার হুকুম দিলেন। আনাস [রাদি.] বলেন, আমি লক্ষ্য করলাম তাহাঁর আঙ্গুলের নীচ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে। তারা সকলে উযূ করিলেন, এমনকি তাহাদের শেষ লোকটি পর্যন্ত।

সহীহঃ বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ। এ অনুচ্ছেদে ইমরান ইবনি হুসাইন, ইবনি মাসঊদ জাবির ও যিয়াদ ইবনিল হারিস [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, আনাস [রাদি.] বর্ণিত হাদীসটি হাসান সহীহ। নবীর জীবনী – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৬৩২. আয়িশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর নবূওয়াতের আবির্ভাব এভাবে হল যে, আল্লাহ তাআলা যখন তাহাঁর বান্দাদের সম্মানিত ও তাহাদের প্রতি দয়া করিতে চাইলেন, সে সময় এই পরিস্থিতি হল যে, যে স্বপ্নই তিনি দেখিতেন তা ভোরের আলোর ন্যায় স্পষ্ট হয়ে উদ্ভাসিত হত। তারপর আল্লাহ তাআলা যত দিন চাইলেন তাহাঁর এই অবস্থা অব্যাহত থাকে। এ সময় তাহাঁর কাছে নির্জনতা এত পছন্দনীয় ছিল যার চাইতে অন্য কিছুই তাহাঁর কাছে বেশী পছন্দনীয় ছিল না।

হাসান সহীহঃ বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ এর চেয়ে আরো পূর্ণাঙ্গভাবে অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন।আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ গারীব। এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান সহীহ

৩৬৩৩. আবদুল্লাহ ইবনি মাসঊদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, তোমরা আল্লাহ তাআলার রাহমাতের নিদর্শনগুলোকে [অতি প্রাকৃতিক বিষয়াবলীকে] শাস্তি মনে কর, কিন্তু রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর আমলে আমরা এগুলোকে বারাকাত মনে করতাম। অবশ্যই আমরা নবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর সঙ্গে খাবার খেতাম এবং খাদ্যের তাসবীহ পাঠ শুনতে পেতাম। বর্ণনাকারী বলেন, রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর সম্মুখে একটি পানির পাত্র আনা হলে তিনি তার মাঝে নিজের হাত রাখলেন এবং তাহাঁর আঙ্গুলগুলো দিয়ে পানি উপচে বের হইতে থাকে। নবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বললেনঃ তোমরা অতি মুবারাক ও আকাশের কল্যাণকর পানি দিয়ে উযূ করিতে এদিকে এসো। এমনকি সেই পানিতে আমরা সবাই উযূ করলাম।

সহীহঃ বুখারী, মুসলিম।আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ।নবীর জীবনী – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৭. অনুচ্ছেদঃ নবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর উপর কিরূপে ওয়াহী অবতীর্ণ হত

৩৬৩৪. আয়িশাহ্‌ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

আল–হারিস ইবনি হিশাম [রাদি.] রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-কে প্রশ্ন করেন, আপনার কাছে ওয়াহী কিরূপে আসে? রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বললেনঃ কখনও ঘন্টাধ্বনির মতো তা আমার কাছে আসে এবং এটাই আমার জন্য সবচেয়ে কষ্টসাধ্য ওয়াহী। আবার কখনও ফেরেশতা মানুষের রূপ ধারণ করে আমার কাছে এসে আমার সঙ্গে কথা বলেন এবং তিনি যা বলেন, আমি তা সঙ্গে সঙ্গেই আয়ত্ত করি। আয়িশাহ্‌ [রাদি.] বলেন, আমি অতিরিক্ত শীতের দিনেও রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর উপর ওয়াহী অবতীর্ণ হইতে দেখেছি। তা বন্ধ হওয়ার পরও তাহাঁর কপাল হইতে ঘাম গড়িয়ে পড়ত।

সহীহঃ বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ।আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ।নবীর জীবনী – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৮. অনুচ্ছেদঃ রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর দেহের গঠন

৩৬৩৫. আল-বারাআ ইবনি আযিব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, লাল রং-এর পোশাক পরা অবস্থায় রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর তুলনায় বেশি সুদর্শন আমি আর কোন বাবরি চুলওয়ালা লোক দেখিনি। তার বাবরি কেশ তাহাঁর দুই কাঁধের মাঝখানে পর্যন্ত ঝুলন্ত ছিল। তাহাঁর দুই কাঁধের মধ্যবর্তী জায়গা ছিল দীর্ঘ। তিনি না খর্বাকৃতির ছিলেন আর না দীর্ঘাকৃতির।

সহীহঃ বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ। পূর্বে ১৭২৫ নং হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। নবীর জীবনী – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৬৩৬. আবু ইসহাক্ব [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, এক লোক আল-বারাআ [রাদি.]-কে প্রশ্ন করেন, রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর মুখমণ্ডল কি তলোয়ারের মতো [চকচকে] ছিল? তিনি বলেন, না, বরং চাঁদের মতো উজ্জ্বল ছিল।

সহীহঃ মুখতাসার শামায়িল [৯], বুখারী।আবু ঈসা বলেনঃ হাদীসটি হাসান। নবীর জীবনী – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৬৩৭. আলী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] না অতি লম্বা ছিলেন আর না [অতি] বেঁটে ছিলেন। তাহাঁর দুহাত ও দুপা ছিল মাংসল, মাথা ছিল আকারে বৃহৎ এবং হাড়ের গ্রন্থিসমূহ ছিল স্থূল ও শক্তিশালী। তাহাঁর বুক হইতে নাভি অবধি প্রলম্বিত ফুরফুরে পশমের একটি রেখা ছিল। চলার সময় তিনি সম্মুখের দিকে ঝুঁকে হাঁটতেন, যেন তিনি ঢালবিশিষ্ট জায়গা দিয়ে হেঁটে চলছেন। আমি তাহাঁর পূর্বে কিংবা তাহাঁর পরে আর কাউকে তাহাঁর মতো দেখিনি।

সহীহঃ মুখতাসার শামায়িল [৪০]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। সুফ্ইয়ান ইবনি ওয়াকী-তার বাবা ওয়াকী হইতে, তিনি আল মাসঊদী হইতে এই সনদসূত্রে একই রকম রিওয়ায়াত করিয়াছেন। নবীর জীবনী – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৬৩৮. আলী [রাদি.]-এর নাতি ইব্রাহীম ইবনি মুহাম্মাদ ইবনিল হানাফিয়্যা [রাহঃ] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেনঃ আলী [রাদি.] রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর বৈশিষ্ট বর্ণনা করিতে গিয়ে বলিতেনঃ তিনি বেশি লম্বা ছিলেন না এবং অত্যন্ত বেঁটেও ছিলেন না, বরং লোকদের মাঝে মধ্যম আকৃতির ছিলেন। তাহাঁর মাথার চুল খুব বেশি কোঁকড়ানোও ছিল না এবং একেবারে সোজাও ছিল না, বরং কিছুটা ঢেউ খেলানো ছিল। তিনি স্থুলকায় ছিলেন না, তাহাঁর মুখাবয়ব সম্পূর্ণ গোলাকার ছিল না, বরং কিছুটা গোলাকার ছিল। তিনি ছিলেন সাদা-লাল মিশ্রিত গৌরবর্ণের এবং লম্বা ভ্রুযুক্ত কালো চোখের অধিকারী। তাহাঁর হাড়ের গ্রন্থিগুলো ছিল মজবুত, বাহু ছিল মাংসল। তাহাঁর দেহে অতিরিক্ত লোম ছিল না, বুক হইতে নাভি পর্যন্ত হালকা লোমের একটি রেখা ছিল। তাহাঁর হাতের তালু ও পায়ের পাতা ছিল গোশতে পুরু। তিনি দৃঢ় পদক্ষেপে চলতেন, যেন তিনি ঢালবিশিষ্ট স্থান হইতে [নীচ সমতলে] নামছেন। তিনি কারো দিকে ফিরে তাকালে গোটা দেহ ঘুরিয়ে তাকাতেন। তাহাঁর দুই কাঁধের মধ্যবর্তী স্থানে ছিল নাবূওয়াতের মোহর। তিনি ছিলেন খাতামুন নাবিয়্যীন [নবীগণের মোহর বা তাহাদের আগমন ধারার পরিসমাপ্তিকারী]। তিনি ছিলেন মানুষের মধ্যে প্রশস্ত হৃদয়ের অধিকারী ও দানশীল, বাক্যালাপে সত্যবাদী, কোমল হৃদয়ের অধিকারী এবং বন্ধু-বান্ধব ও সহোচরদের সাথে সম্মানের সাথে বসবাসকারী [অথবা সবচেয়ে সম্ভ্রান্ত বংশোদ্ভূত]। যে কেউ তাঁকে প্রথম বারের মত দেখেই সে প্রভাবান্বিত হত। যে ব্যাক্তি তাহাঁর সাথে মিশত এবং তাহাঁর প্রসঙ্গে জানতো সে তাহাঁর প্রতি বন্ধু ভাবাপন্ন হয়ে যেত। তাহাঁর বর্ণনা প্রদাঙ্কারী বলিতে বাধ্য হত, তাহাঁর আগে বা পরে আমি আর কাউকে তাহাঁর এরকম [সৌন্দর্যময়] দেখিনি।

যঈফ, মুখতাসার শামায়িল, মিশকাত [৫৭৯১]। আবু ঈসা বলেনঃ হাদীসটি হাসান গারীব। এ হাদীসের সনদসূত্র মুত্তাসিল [অবিছিন্ন] নয়। আবু জাফর বলেন, আমি আল-আসমাঈকে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর বৈশিষ্ট্য ও গঠনাকৃতি সম্পর্কিত বর্ণনার ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে বলিতে শুনিয়াছি ঃ “মুম্মাগিত” অর্থ অতিরিক্ত লম্বা। আল-আসমাঈ আরো বলেন, আমি এক বিদুঈনকে কথা প্রসঙ্গে বলিতে শুনিয়াছি, “তামাগ্‌গাতা ফী নুশশাবাতিন” [সে তার তীর খুব টেনেছে]। “মুতারাদ্দিদ” অর্থ স্থুলতার কারণে বেঁটে দেহের একাংশ অপরাংশের মধ্যে প্রবিষ্ট মনে হওয়া। “কাতাত” অর্থ কুঞ্চিত ও কোঁকড়ানো। “রাজিল” যে ব্যাক্তির মাথার চুল কোঁকড়ানো সে। “মুতাহ্‌হাম” অর্থ স্থুল দেহ, মাংসল দেহ।

“মুকালসাম” গোলগাল চেহারা। “মুশরাব” এমন রং যা সাদা-লালে [দুধে আলতায়] মিশ্রিত, গৌর, এটা সবচেয়ে সুন্দর বর্ণ। “আদআজ” অর্থ চোখ ঘোর কালো। “আহ্‌দাব” যার ভ্রু লম্বা। “কাতাদ” দুই কাঁধের সঙ্গমস্থল, একে কাহিলও বলা হয়। “মাসরুবাত” বুকের পশমের সরল রেখা যা বুক হইতে নভী পর্যন্ত প্রলম্বিত। “আশ-শাছ্‌ন” অর্থ যার হাত ও পায়ের আঙ্গুলিসমূহ এবং হাত ও পায়ের পাতা মাংসবহুল। “আত-তাকাল্লাউ” অর্থ দৃঢ় পদক্ষেপ পথ অতিক্রম। “সাবাব” অর্থ [উপর হইতে নীচে] ঢালু স্থান দিয়ে নেমে আসা। যেমন আমরা বলি, আমরা উপর হইতে নীচে নামছি। “জালীলুল মুশাশ” বড় গ্রন্থিযুক্ত অর্থাৎ বাহুর অগ্রভাগ, ঊর্ধ্ববাহু। “ইশরাত” অর্থ সাহচর্য, “আশীরু” অর্থ সঙ্গী-সহচর, “বাদীহাতু” অর্থ দৈবাৎ, হঠাৎ। যেমন আরবরা বলে, বাদাহ্‌তুহু বিআমরিন অর্থাৎ আমি তাকে হঠাৎ কোন বিষয়ে ভীত-বিহব্বল করে দিয়েছি। এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

৯. অনুচ্ছেদঃ নবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর কথার ধরন

৩৬৩৯. আয়িশাহ্‌ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] তোমাদের মতো দ্রুত গতিতে কথা বলিতেন না, বরং তিনি ধীরে সুস্থে প্রতিটি শব্দ পৃথকভাবে উচ্চারণ করে কথা বলিতেন, ফলে তার কাছে বসা লোক খুব সহজেই তা আয়ত্ত করে নিতে পারত।

হাসানঃ আল-মুখতাসার [১৯১], মিশকাত [৫৮২৮], বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ। “তিনি দ্রুত কথা বলিতেন না” এই অংশটুকু বর্ণনা করিয়াছেন। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। এ হাদীস আমরা শুধুমাত্র যুহ্‌রীর বর্ণনার পরিপ্রেক্ষিতে অবগত হয়েছি। উক্ত হাদীস ইউনুস ইবনি ইয়াযীদও যুহরী হইতে রিওয়ায়াত করিয়াছেন। এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান হাদীস

৩৬৪০. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] প্রত্যেকটি বাক্য তিন তিনবার পুনরাবৃত্তি করিতেন, যাতে তার কথা বুঝতে পারা যায়।

হাসান সহীহঃ ২৭২৩ নং হাদীস পূর্বেও অনুরূপ উল্লেখ হয়েছে।আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ গারীব। এ হাদীস আমরা শুধুমাত্র আবদুল্লাহ ইবনিল মুসান্নার বর্ণনার পরিপ্রেক্ষিতে জানতে পেরেছি।এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান সহীহ

১০. অনুচ্ছেদঃ নবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর মুচকি হাসি প্রসঙ্গে

৩৬৪১. আবদুল্লাহ ইবনিল হারিস ইবনি জায্‌য়ি [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর চেয়ে বেশী মুচকি হাসি দিতে আমি আর কাউকে দেখিনি।

সহীহঃ মুখতাসার শামায়িল [১৯৪], মিশকাত, তাহক্বীক্ব সানী [৫৮২৯]।আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব। ইয়াযীদ ইবনি আবী হাবীব হইতে, আবদুল্লাহ ইবনিল হারিস ইবনি জায্‌য়ির বরাতে উপরিউক্ত হাদীসের মতোই বর্ণিত হয়েছে। নবীর জীবনী – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৬৪২. আবদুল্লাহ ইবনিল হারিস ইবনি জায্‌য়ি [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] শুধুমাত্র মুচকি হাসিই দিতেন।

সহীহঃ মুখতাসার শামায়িল [১৯৫], মিশকাত অনুরূপ। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি সহীহ গারীব। এ হাদীস আমরা লাইস ইবনি সাদের বর্ণনার পরিপ্রেক্ষিতে শুধুমাত্র উপর্যুক্ত সনদেই অবগত হয়েছি। এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ লিগাইরিহি

১১. অনুচ্ছেদঃ মোহরে নবূওয়াত

৩৬৪৩. আস্‌-সায়িব ইবনি ইয়াযীদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

আমার খালা আমাকে নিয়ে নবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর কাছে গেলেন এবং বলিলেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! আমার এ বোনপুত্র রোগাক্রান্ত। তখন রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] আমার মাথায় হাত বুলালেন, আমার জন্য বারাকাত ও কল্যাণের দুআ করিলেন এবং তিনি উযূ করলে আমি তাহাঁর উযূর বাকি পানিটুকু পান করলাম। তারপর আমি তাহাঁর পেছনে গিয়ে দাঁড়ালে, তাহাঁর দুই কাঁধের মধ্যবর্তী জায়গায় মোহরে নবুওয়াত প্রত্যক্ষ করি। তা ছিল তিতির পাখির ডিমের মতো।

সহীহঃ মুখতাসার শামায়িল [১৪], বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ। আবু ঈসা বলেনঃ যির বলা হয় তিতির পাখির ডিমকে। এ অনুচ্ছেদে সালমান, কুররা ইবনি ইয়াস আল-মুযানী, জাবির ইবনি সামুরাহ্‌, আবু রিমসাহ্‌, বুরাইদা আল-আসলামী, আবদুল্লাহ ইবনি সারজিস, আম্‌র ইবনি আখত্বাব ও আবু সাঈদ আল-খুদরী [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, উক্ত সনদে এ হাদীসটি হাসান সহীহ গারীব। নবীর জীবনী – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৬৪৪. জাবির ইবনি সামুরাহ্‌ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর দুই কাঁধের মাঝামাঝি স্থানে কবুতরের ডিমের ন্যায় লাল মাংসপিণ্ড আকারে মোহরে নবূওয়াত ছিল।

সহীহঃ মুখতাসার শামায়িল [১৫], মুসলিম।আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। নবীর জীবনী – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১২. অনুচ্ছেদঃ রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর মুখ, চোখ ও পায়ের আকৃতি

৩৬৪৫. জাবির ইবনি সামুরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেনঃ রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর পায়ের জঙ্ঘাদ্বয় ছিল হাল্কা-পাতলা। তিনি মুচকি হাসিই দিতেন। আমি তাহাঁর দিকে তাকালে মনে হত তিনি উভয় চোখে সুরমা লাগিয়েছেন। অথচ রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর চোখে সুরমা লাগানো থাকত না।

যঈফ, প্রাগুক্ত আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান, এই সূত্রে গারীব। এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

৩৬৪৬. জাবির ইবনি সামুরাহ্‌ [রাঃ] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, নবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর মুখ ছিল বেশ দীর্ঘ, চোখ দুটি ছিল লাল এবং পায়ের জঙ্ঘা ছিল শীর্ণকায়।

সহীহঃ মুখতাসার শামায়িল [৭], মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। নবীর জীবনী – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৬৪৭. জাবির ইবনি সামুরাহ্‌ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] ছিলেন দীর্ঘ মুখের অধিকারী, তাহাঁর চোখ দুটি ছিল লাল জঙ্ঘা ছিল শীর্ণকায়। শুবাহ্‌ [রঃ] বলেন, আমি সিমাক [রঃ]-কে বললাম, “যালীউল ফাম” অর্থ কি? তিনি বলিলেন, দীর্ঘ মুখ। আমি পুনরায় বললাম, “আশকালুল আয়নাইন” অর্থ কি? তিনি বলিলেন, লম্বা লাল রেখাযুক্ত দুটি চোখ। আমি পুনরায় বললাম, “মানহূসুল আক্বিব” অর্থ কি? তিনি বলেন, শীর্ণকায়।

সহীহঃ প্রাগুক্ত [৭], মুসলিম।আবু ঈসা বলেন, হাদীসটি হাসান সহীহ।নবীর জীবনী – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৬৪৮. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর চাইতে বেশি সুন্দর কোন জিনিষ দেখিনি। যেন সূর্য তাহাঁর চেহারায় [মুখমণ্ডলে] বিচরণ করছে। আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর চেয়ে দৃঢ় পদক্ষেপ দ্রুত চলতেও আর কোন ব্যাক্তিকে দেখিনি। যেন তাহাঁর জন্য যমিনকে গুটানো হত। তাহাঁর সাথে পথ চলতে আমাদের প্রাণান্তকর অবস্থা হত, আর তিনি অনায়াসে চলে যেতেন।

যঈফ, প্রাগুক্ত। আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি গারীব। এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

৩৬৪৯. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেনঃ [মিরাজের রাতে] আমার সম্মুখে নবীগণকে হাযির করা হয়। সে সময় মূসা [আঃ]-কে আমি দেখলাম, তিনি যেন শানুআহ্‌ গোত্রের একজন পুরুষ। আমি ঈসা ইবনি মারইয়াম [আঃ]-কেও লক্ষ্য করেছি, আমার দেখা লোকদের মাঝে তিনি উরওয়াহ্‌ ইবনি মাসউদ-এর মত। আমি ইবরাহীম [আঃ]-কেও লক্ষ্য করেছি, আমার দেখা লোকের মাঝে তিনি তোমাদের বন্ধুর অর্থাৎ আমার মতো। জিবরাঈল [আঃ]-কেও আমি লক্ষ্য করেছি, তিনি আমার দেখা লোকেদের মাঝে দিহ্‌য়া ইবনি খালীফাহ্‌ আল-ক্বালবীর মতো।

সহীহঃ সহীহাহ্‌ [১১০০], মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ গারীব।নবীর জীবনী – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৩. অনুচ্ছেদঃ রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর মৃত্যুর সময়কালীন বয়স

৩৬৫০ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] পঁয়ষট্টি বছর বয়সে মারা যান [জন্ম ও মৃত্যুর বছর দুটিকে আলাদা দুটি বছর ধরে]।

শাজ, [৩৪৫৬] নং হাদীসে উল্লেখিত হয়েছে। এই হাদীসটির তাহকিকঃ শায

৩৬৫১. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] পঁয়ষট্টি বছর বয়সে মারা যান।

শাজ, দেখুন পূর্বের হাদীস আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান সহীহ। এই হাদীসটির তাহকিকঃ শায

৩৬৫২. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] নবূওয়াত লাভের পর মক্কায় তের বছর বসবাস করেন এবং তেষট্টি বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।

সহীহঃ বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ। ৩৬২১ নং হাদীসে পূর্বে বর্ণিত হয়েছে। এ অনুচ্ছেদে আয়িশাহ্‌, আনাস ইবনি মালিক ও দাগফাল ইবনি হানযালাহ্‌ [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে। তবে দাগফালের প্রত্যক্ষভাবে রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-কে দেখা ও তাহাঁর নিকট হইতে হাদীস শোনার কথাটি যথার্থ নয়। আবু ঈসা বলেন, ইবনি আব্বাস [রাদি.] বর্ণিত হাদীসটি হাসান এবং আম্‌র ইবনি দীনারের বর্ণনার পরিপ্রেক্ষিতে গারীব।নবীর জীবনী – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৬৫৩. জারীর ইবনি আবদুল্লাহ আল-বাজালী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি মুআবিয়াহ্‌ ইবনি আবী সুফ্‌ইয়ান [রাদি.]-কে খুত্‌বাহ্‌ দানকালে বলিতে শুনিয়াছি, রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] তেষট্টি বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন এবং আবু বাক্‌র ও উমার [রাদি.]-ও। আর এখন আমার বয়সও তেষট্টি বছর।

সহীহঃ মুখতাসার শামায়িল [৩১৮], মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। নবীর জীবনী – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৬৫৪. আয়িশাহ্‌ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তেষট্টি বছর বয়সে নবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] মৃত্যুবরণ করেন।

সহীহঃ প্রাগুক্ত [৩১৯], বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। যুহরীর ভাইয়ের ছেলে-যুহরী হইতে, তিনি উরওয়াহ্‌ হইতে, তিনি আয়িশাহ্‌ [রাদি.] হইতে এই সনদে উপর্যুক্ত হাদীসের মতই বর্ণনা করিয়াছেন।নবীর জীবনী – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

Comments

Leave a Reply