রিয়া [লোক-প্রদর্শনমূলক কার্যকলাপ] হারাম
রিয়া [লোক-প্রদর্শনমূলক কার্যকলাপ] হারাম >> রিয়াদুস সালেহীন হাদিস শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন >> নিম্নে রিয়াদুস সালেহীন হাদিস শরীফ এর একটি পরিচ্ছেদের হাদিস পড়ুন
পরিচ্ছেদ – ২৮৮ : রিয়া [লোক-প্রদর্শনমূলক কার্যকলাপ] হারাম
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَمَآ أُمِرُوٓاْ إِلَّا لِيَعۡبُدُواْ ٱللَّهَ مُخۡلِصِينَ لَهُ ٱلدِّينَ﴾ [البينة: ٥]
অর্থাৎ তারা তো আদিষ্ট হয়েছিল আল্লাহর আনুগত্যে বিশুদ্ধচিত্ত হয়ে একনিষ্ঠ-ভাবে তাহাঁর ইবাদত করিতে। [সূরা বাইয়িনাহ ৫ আয়াত]
তিনি আরও বলেছেন,
﴿ لَا تُبۡطِلُواْ صَدَقَٰتِكُم بِٱلۡمَنِّ وَٱلۡأَذَىٰ كَٱلَّذِي يُنفِقُ مَالَهُۥ رِئَآءَ ٱلنَّاسِ ٢٦٤ ﴾ [البقرة: ٢٦٤]
অর্থাৎ হে ঈমানদারগণ! দানের কথা প্রচার করে এবং কষ্ট দিয়ে তোমরা তোমাদের দানকে নষ্ট করে দিয়ো না ঐ লোকের মত যে নিজের ধন লোক দেখানোর জন্য ব্যয় করে। [সূরা বাকারাহ ২৬৪ আয়াত]
তিনি অন্য জায়গায় বলেছেন,
﴿ إِنَّ ٱلۡمُنَٰفِقِينَ يُخَٰدِعُونَ ٱللَّهَ وَهُوَ خَٰدِعُهُمۡ وَإِذَا قَامُوٓاْ إِلَى ٱلصَّلَوٰةِ قَامُواْ كُسَالَىٰ يُرَآءُونَ ٱلنَّاسَ وَلَا يَذۡكُرُونَ ٱللَّهَ إِلَّا قَلِيلٗا ١٤٢ ﴾ [النساء : ١٤٢]
অর্থাৎ নিশ্চয় মুনাফিক [কপট] ব্যক্তিরা আল্লাহকে প্রতারিত করিতে চায়। বস্তুতঃ তিনিও তাহাদেরকে প্রতারিত করে থাকেন এবং যখন তারা নামাযে দাঁড়ায় তখন শৈথিল্যের সাথে নিছক লোক-দেখানোর জন্য দাঁড়ায় এবং আল্লাহকে তারা অল্পই স্মরণ করে থাকে। [সূরা নিসা ১৪২]
1/1624 وَعَنْ أَبِيْ هُرَيرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ : «قَالَ الله تَعَالَى : أَنَا أَغْنَى الشُّرَكَاءِ عَنِ الشِّرْكِ، مَنْ عَمِلَ عَمَلاً أَشْرَكَ فِيهِ مَعِي غَيْرِي تَرَكْتُهُ وَشِرْكَهُ» . رواه مسلم
১/১৬২৪। আবূ হুরায়রা রাঃআঃ হইতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ সাঃআঃ-কে বলিতে শুনিয়াছি, মহান আল্লাহ বলেন, ‘‘আমি সমস্ত অংশীদারদের চাইতে অংশীদারি [শির্ক] থেকে অধিক অমুখাপেক্ষী। কেউ যদি এমন কাজ করে, যাতে সে আমার সঙ্গে অন্য কাউকে অংশীদার স্থাপন করে, তাহলে আমি তাকে তার অংশীদারি [শির্ক] সহ বর্জন করি।’’ [অর্থাৎ তার আমলই নষ্ট করে দিই।] [মুসলিম] [1]
2/1625. وَعَنْه، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ : «إِنَّ أَوَّلَ النَّاسِ يُقْضَى يَومَ القِيَامَةِ عَلَيْهِ رَجُلٌ اسْتُشْهِدَ، فَأُتِيَ بِهِ، فَعَرَّفَهُ نِعْمَتَهُ، فَعَرَفَهَا، قَالَ: فَمَا عَمِلْتَ فِيهَا ؟ قَالَ: قَاتَلْتُ فِيكَ حَتَّى اسْتُشْهِدْتُ . قَالَ: كَذَبْتَ، وَلَكِنَّكَ قَاتَلْتَ لأَنْ يُقَالَ: جَرِيءٌ ! فَقَدْ قِيلَ، ثُمَّ أُمِرَ بِهِ فَسُحِبَ عَلَى وَجْهِهِ حَتَّى أُلْقِيَ فِي النَّارِ. وَرَجُلٌ تَعَلَّمَ العِلْمَ وَعَلَّمَهُ، وَقَرَأَ القُرآنَ، فَأُتِيَ بِهِ فَعَرَّفَهُ نِعَمَهُ فَعَرَفَهَا . قَالَ: فَمَا عَمِلْتَ فِيهَا ؟ قَالَ: تَعَلَّمْتُ العِلْمَ وَعَلَّمْتُهُ، وَقَرَأتُ فِيكَ القُرآنَ، قَالَ: كَذَبْتَ، وَلكِنَّكَ تَعَلَّمْتَ لِيُقَالَ: عَالِمٌ ! وَقَرَأتَ القُرْآنَ لِيُقَالَ: هُوَ قَارِئٌ ؛ فَقَدْ قِيلَ، ثُمَّ أُمِرَ بِهِ فَسُحِبَ عَلَى وَجْهِهِ حَتَّى أُلْقِيَ فِي النَّارِ . وَرَجُلٌ وَسَّعَ اللهُ عَلَيْهِ، وَأَعْطَاهُ مِنْ أَصْنَافِ المَالِ، فَأُتِيَ بِهِ فَعَرَّفَهُ نِعَمَهُ، فَعَرَفَهَا . قَالَ: فَمَا عَمِلْتَ فِيهَا ؟ قَالَ: مَا تَرَكْتُ مِنْ سَبيلٍ تُحِبُّ أَنْ يُنْفَقَ فِيهَا إِلاَّ أَنْفَقْتُ فِيهَا لَكَ. قَالَ: كَذَبْتَ، وَلَكِنَّكَ فَعَلْتَ لِيُقَالَ: جَوَادٌ ! فَقَدْ قِيلَ، ثُمَّ أُمِرَ بِهِ فَسُحِبَ عَلَى وَجْهِهِ حَتَّى أُلْقِيَ في النَّارِ» . رواه مسلم
২/১৬২৫। উক্ত রাবী রাঃআঃ হইতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি শুনিয়াছি, আল্লাহর রসূল সাঃআঃ বলেছেন যে, ‘‘কিয়ামতের দিন অন্যান্য লোকদের পূর্বে যে ব্যক্তির প্রথম বিচার হইবে সে হচ্ছে একজন শহীদ। তাকে আল্লাহর দরবারে হাজির করা হইবে। আল্লাহ তাকে তাহাঁর দেওয়া নেয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে দেবেন। সুতরাং সে তা স্মরণ করিবে। অতঃপর আল্লাহ বলবেন, ‘ঐ নেয়ামতের বিনিময়ে তুমি কি আমল করে এসেছ?’ সে বলবে ‘আমি তোমার সন্তুষ্টি লাভের জন্য জিহাদ করেছি এবং অবশেষে শহীদ হয়ে গেছি।’ আল্লাহ বলবেন, ‘তুমি মিথ্যা বলছ। বরং তুমি এই উদ্দেশ্যে জিহাদ করেছ, যাতে লোকেরা তোমাকে বলে, অমুক একজন বীর পুরুষ। সুতরাং তা-ই বলা হয়েছে।’ অতঃপর [ফিরিশ্তাদেরকে] আদেশ করা হইবে এবং তাকে উবুড় করে টেনে নিয়ে গিয়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হইবে।
দ্বিতীয় হচ্ছে এমন ব্যক্তি, যে ইলম শিক্ষা করেছে, অপরকে শিক্ষা দিয়েছে এবং কুরআন পাঠ করেছে। তাকে আল্লাহর দরবারে উপস্থিত করা হইবে। আল্লাহ তাকে [পৃথিবীতে প্রদত্ত] তাহাঁর সকল নেয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে দেবেন। সেও সব কিছু স্মরণ করিবে। অতঃপর আল্লাহ বলবেন, ‘এই সকল নেয়ামতের বিনিময়ে তুমি কি আমল করে এসেছ?’ সে বলবে, ‘আমি ইলম শিখেছি, অপরকে শিখিয়েছি এবং তোমার সন্তুষ্টি-লাভের জন্য কুরআন পাঠ করেছি।’ আল্লাহ বলবেন, ‘মিথ্যা বলছ তুমি। বরং তুমি এই উদ্দেশ্যে ইলম শিখেছ, যাতে লোকেরা তোমাকে আলেম বলে এবং এই উদ্দেশ্যে কুরআন পড়েছ, যাতে লোকেরা তোমাকে ক্বারী বলে। আর [দুনিয়াতে] তা বলা হয়েছে।’ অতঃপর [ফিরিশ্তাদেরকে] নির্দেশ দেওয়া হইবে এবং তাকে উবুড় করে টেনে নিয়ে গিয়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হইবে।
তৃতীয় হচ্ছে সেই ব্যক্তি, যার রুযীকে আল্লাহ প্রশস্ত করেছিলেন এবং সকল প্রকার ধন-দৌলত যাকে প্রদান করেছিলেন। তাকে আল্লাহর দরবারে হাজির করা হইবে। আল্লাহ তাকে তাহাঁর দেওয়া সমস্ত নেয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে দেবেন। সেও সব কিছু স্মরণ করিবে। অতঃপর আল্লাহ প্রশ্ন করবেন, ‘তুমি ঐ সকল নেয়ামতের বিনিময়ে কি আমল করে এসেছ?’ সে বলবে, ‘যে সকল রাস্তায় দান করলে তুমি খুশী হও সে সকল রাস্তার মধ্যে কোনটিতেও তোমার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে খরচ করিতে ছাড়িনি।’ তখন আল্লাহ বলবেন, ‘মিথ্যা বলছ তুমি। বরং তুমি এ জন্যই দান করেছিলে; যাতে লোকে তোমাকে দানবীর বলে। আর তা বলা হয়েছে।’ অতঃপর [ফিরিশ্তাবর্গকে] হুকুম করা হইবে এবং তাকে উবুড় করে টেনে নিয়ে গিয়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হইবে। [মুসলিম ১৯০৫ নং] [2]
3/1626 وَعَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا : أَنَّ نَاساً قَالُوا لَهُ : إِنَّا نَدْخُلُ عَلَى سَلاَطِيننَا فَنَقُولُ لَهُمْ بِخِلاَفِ مَا نَتَكَلَّمُ إِذَا خَرَجْنَا مِنْ عِندِْهِمْ ؟ قَالَ ابنُ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا : كُنَّا نَعُدُّ هَذَا نِفاقاً عَلَى عَهْدِ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم . رواه البخاري
৩/১৬২৬। ইবনি উমার রাঃআঃ হইতে বর্ণিত, কিছু লোক তাহাঁর নিকট নিবেদন করিল যে, ‘আমরা আমাদের শাসকদের নিকট যাই এবং তাহাদেরকে ঐ সব কথা বলি, যার বিপরীত বলি তাহাদের নিকট থেকে বাইরে আসার পর। [সে সম্বন্ধে আপনার অভিমত কি?]’ ইবনি উমার রাঃআঃ উত্তর দিলেন, ‘রসুলুল্লাহ সাঃআঃ-এর যামানায় এরূপ আচরণকে আমরা ‘মুনাফিক্বী’ আচরণ বলে গণ্য করতাম।’ [বুখারী] [3]
4/1627 وَعَنْ جُندُبِ بنِ عَبدِ اللهِ بنِ سُفيَان رضي الله عنه قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم: «مَنْ سَمَّعَ سَمَّعَ اللهُ بِهِ، وَمَنْ يُرَائِي يُرَائِي اللهُ بِهِ» . متفق عَلَيْهِ . ورواه مسلم أَيضاً من رواية ابن عباس رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا .
৪/১৬২৭। জুন্দুব ইবনি আব্দুল্লাহ ইবনি সুফয়ান রাঃআঃ হইতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি শোনাবে, আল্লাহ তা শুনিয়ে দিবেন। আর যে ব্যক্তি দেখাবে, আল্লাহ তা দেখিয়ে দিবেন।’’ [বুখারী ও মুসলিম, মুসলিম ইবনি আব্বাস থেকেও বর্ণনা করিয়াছেন।] [4]
** ‘যে ব্যক্তি শোনাবে’ অর্থাৎ যে তার আমলকে মানুষের সামনে প্রদর্শনের জন্য প্রকাশ করিবে। ‘আল্লাহ তা শুনিয়ে দিবেন’ অর্থাৎ কিয়ামতের দিনে [সৃষ্টির সামনে সে কথা জানিয়ে] তাকে লাঞ্ছিত করবেন। ‘যে ব্যক্তি দেখাবে’ অর্থাৎ যে ব্যক্তি মানুষের সামনে স্বকৃত নেক আমল প্রকাশ করিবে যাতে সে তাহাদের নিকট সম্মানার্হ হয়। ‘আল্লাহ তা দেখিয়ে দিবেন’ অর্থাৎ সৃষ্টির সম্মুখে তার গুপ্ত উদ্দেশ্যের কথা ব্যক্ত [করে অপমানিত] করবেন।
5/1628 وَعَنْ أَبِيْ هُرَيرَةَ رضي الله عنه قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «مَنْ تَعَلَّمَ عِلْماً مِمَّا يُبْتَغَى بِهِ وَجْهُ اللهِ – عَزَّ وَجَلَّ – لاَ يَتَعَلَّمُهُ إِلاَّ لِيُصِيبَ بِهِ عَرَضاً مِنَ الدُّنْيَا، لَمْ يَجِدْ عَرْفَ الجَنَّةِ يَوْمَ القِيَامَةِ» يَعْنِي : رِيحَهَا. رواه أَبُو داود بإسنادٍ صحيحٍ والأحاديث في الباب كثيرةٌ مشهورةٌ
৫/১৬২৮। আবূ হুরায়রা রাঃআঃ হইতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘যে বিদ্যা দ্বারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করা যায়, তা যদি একমাত্র সামান্য পার্থিব স্বার্থ লাভের উদ্দেশ্যে কেউ শিক্ষা করে, তাহলে সে কিয়ামতের দিনে জান্নাতের সুগন্ধটুকুও পাবে না।’’ [আবূ দাঊদ-বিশুদ্ধ সূত্রে] [5]
আর এ মর্মে আরও প্রসিদ্ধ হাদিস বিদ্যমান রয়েছে।
[1] সহীহুল বুখারী ২৯৮৫, ইবনু মাজাহ ৪২০২, আহমাদ ৭৯৩৯, ৯৩৩৬
[2] মুসলিম ১৯০৫, তিরমিযী ২৩৮২, নাসায়ী ৩১৩৭, আহমাদ ৮০৮৭
[3] সহীহুল বুখারী ৭১৭৮, ইবনু মাজাহ ৩৯৭৫, আহমাদ ৫৭৯৫
[4] সহীহুল বুখারী ৭১৫২, ৬৪৯৯, মুসলিম ২৯৮৭, ইবনু মাজাহ ৪২০৭, আহমাদ ১৮৩৩০
[5] ইবনু মাজাহ ২৫২, আবূ দাউদ ২৬৬৪, আহমাদ ৮২৫২
Leave a Reply