রোজার মাকরুহ সমূহ ও ঋতুবতী মহিলার রোযা কাযা করা
রোজার মাকরুহ সমূহ ও ঋতুবতী মহিলার রোযা কাযা করা >> সুনান তিরমিজি শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন
অধ্যায়ঃ ৬, অনুচ্ছেদঃ (৫৮-৭০)=১৩টি
৫৮. অনুচ্ছেদঃ দুই ঈদের দিন রোযা পালন করা মাকরূহ্
৫৯. অনুচ্ছেদঃ আইয়্যামে তাশ্রীক-এ রোযা পালন করা মাকরূহ্
৬০. অনুচ্ছেদঃ রোযা থাকা অবস্থান রক্তক্ষরণ করানো
৬১. অনুচ্ছেদঃ এই বিষয়ে [রক্তক্ষরণের] অনুমতি প্রসঙ্গে
৬২. অনুচ্ছেদঃ সাওমে বিসাল মাকরূহ্
৬৩. অনুচ্ছেদঃ রোযা পালন করিতে ইচ্ছা পোষণকারীর নাপাক অবস্থায় ফজর হওয়া
৬৪. অনুচ্ছেদঃ রোযা থাকাবস্থায় দাওয়াত গ্রহণ করা
৬৫. অনুচ্ছেদঃ স্বামীর অনুমতি ছাড়া স্ত্রীর [নফল] রোযা আদায় করা মাকরূহ্
৬৬. অনুচ্ছেদঃ রমযানের রোযার কাযা আদায়ের ক্ষেত্রে বিলম্ব করা প্রসঙ্গে
৬৭. অনুচ্ছেদঃ রোযাদারের সামনে খাবার খেলে তার [রোযাদারের] ফাযীলাত
৬৮. অনুচ্ছেদঃ ঋতুবতী মহিলার রোযা কাযা করা ও নামাজ কাযা না করা প্রসঙ্গে
৬৯. অনুচ্ছেদঃ রোযাদারের নাকের ভিতরে পানি পৌঁছানো মাকরূহ্
৭০. অনুচ্ছেদঃ কোন ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের মেহমান হলে তাহাদের অনুমতি ব্যতীত [নফল] রোযা রাখবে না
৫৮. অনুচ্ছেদঃ দুই ঈদের দিন রোযা পালন করা মাকরূহ্
৭৭১. আবদুর রাহ্মা্ন ইবনি আওফ [রাদি.]-এর মুক্তদাস আবু উবাইদ [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি উমার ইবনিল খাত্তাব [রাদি.]-কে কুরবানীর দিন দেখিতে পেয়েছি যে, খুত্বা দেওয়ার আগে প্রথমে তিনি নামাজ আদায় করিলেন। এরপর তিনি বলিলেন, এই দুই ঈদের দিন রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে আমি রোযা পালন করিতে নিষেধ করিতে শুনিয়াছি। ঈদুল ফিত্রের দিন হল তোমাদের [সারা মাসের] রোযা ভঙ্গের দিন এবং মুসলিমদের ঈদের দিন। আর তোমরা ঈদুল আযহার দিন তোমাদের কুরবানীর গোশ্ত খাবে।
-সহীহ্, ইবনি মা-জাহ [১৭২২], বুখারী, মুসলিম।আবু ঈসা এই হাদীসটিকে হাসান সহিহ বলেছেন। আবদুর রাহমান ইবনি আওফ [রাদি.]-এর মুক্ত দাস আবু উবাইদের নাম সাদ। তাকে আবদুর রাহমান ইবনি আযহারের মাওলাও বলা হয়। আবদুর রাহমান ইবনি আযহার হলেন আবদুর রাহমান ইবনি আওফ [রাদি.]-এর চাচাত ভাই। রোজার হাদীস – রোজার মাকরুহ সমূহ -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৭৭২. আবু সাঈদ আল-খুদ্রী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] দুদিন রোযা পালন করিতে বারণ করেছেনঃ ঈদুল আয্হা এবং ঈদুল ফিত্রের দিন।
-সহীহ, ইবনি মা-জাহ [১৭২১], বুখারী, ইরওয়া [৯৬২], আর রাওয [৬৪৩], সহিহ আবু দাঊদ [২০৮৮], মুসলিম। উমার, আলী, আইশা, আবু হুরাইরা, উক্বা ইবনি আমির ও আনাস [রাদি.] হইতেও এই অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা আবু সাঈদ [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটিকে হাসান সহিহ বলেছেন। এ হাদীস অনুযায়ী বিশেষজ্ঞ আলিমগণ আমল করিয়াছেন। আবু ঈসা বলেন, আমর ইবনি ইয়াহ্ইয়া হলেন ইবনি উমারা ইবনি আবুল হাসান আল-মাযিনী আল-মাদানী। তিনি একজন বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারী। সুফিয়ান সাওরী, শুবা ও মালিক ইবনি আনাস তাহাঁর সূত্রে হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন।রোজার হাদীস – রোজার মাকরুহ সমূহ -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৫৯. অনুচ্ছেদঃ আইয়্যামে তাশ্রীক-এ রোযা পালন করা মাকরূহ্
৭৭৩. উক্বা ইবনি আমির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আমাদের মুসলিম জনগণের ঈদের দিন হচ্ছে আরাফার দিন, কুরবানীর দিন ও তাশ্রীকের দিন। এ দিনগুলো হচ্ছে পানাহারের দিন।
-সহিহ, সহিহ আবু দাঊদ [২০৯০], ইরওয়া [৪/১৩০] আলী, সাদ, আবু হুরাইরা, জাবির, নুবাইশা, বিশ্র ইবনি সুহাইম, আবদুল্লাহ ইবনি হুযাফা, আনাস, হামযা ইবনি আমর আল-আসলামী, কাব ইবনি মালিক, আইশা, আমর ইবনিল আস ও আবদুল্লাহ ইবনি আমর [রাদি.] হইতেও এই অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা উকবা ইবনি আমির হইতে বর্ণিত হাদীসটিকে হাসান সহিহ বলেছেন। এ হাদীস অনুযায়ী বিশেষজ্ঞ আলিমগণ আমল করিয়াছেন। তাশ্রীকের দিনগুলোতে রোযা পালন করাকে তারা মাকরূহ্ [হারাম] মনে করেন। কিন্তু তামাত্তু হাজ্জ পালনকারীর জন্য রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর একদল বিশেষজ্ঞ সাহাবী ও অন্যান্য আলিম এই দিনগুলোতে রোযা পালনের সুযোগ দিয়েছেন- যদি তারা কুরবানীর জানোয়ার না পায় এবং প্রথম দশ দিনের মধ্যে রোযা পালন করিতে না পেরে থাকে। এরকম মতই প্রকাশ করিয়াছেন ঈমাম মালিক, শাফিঈ, আহ্মাদ ও ইসহাক [রঃ]। আবু ঈসা বলেন, ইরাকবাসী মুহাদ্দিসগণ বলেন, [বর্ণানাকারী নাম] মূসা ইবনি আলী ইবনি রাবাহ্। মিসরবাসীগণ বলেন, মূসা ইবনি উলাই। আবু ঈসা আরও বলেন, কুতাইবাকে আমি বলিতে শুনিয়াছি, তিনি বলিতে শুনেছেন যে, মূসা ইবনি আলী বলেছেন,আমার পিতার নাম তাসগীররূপে [উলাই] উচ্চারণ কারো জন্য হালাল মনে করি না। রোজার হাদীস – রোজার মাকরুহ সমূহ -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৬০. অনুচ্ছেদঃ রোযা থাকা অবস্থান রক্তক্ষরণ করানো
৭৭৪. রাফি ইবনি খাদীজ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে লোক রক্তক্ষরণ করে এবং যাহার রক্তক্ষরণ করানো হয় তাহাদের দুজনের রোযাই নষ্ট হয়ে যায়।
-সহীহ্, ইবনি মা-জাহ [১৬৭৯-১৬৮১]।আলী, সাদ, শাদ্দাদ ইবনি আওস, সাওবান, উসামা ইবনি যাইদ, আইশা, মাকিল ইবনি সিনান [বলা হয় ইনি মালিক ইবনি ইয়াসার], আবু হুরাইরা, ইবনি আব্বাস, আবু মূসা ও বিলাল [রাদি.] হইতেও এই অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা রাফি ইবনি খাদীজ হইতে বর্ণিত হাদীসটিকে হাসান সহিহ বলেছেন। আহ্মাদ ইবনি হাম্বাল [রঃ] বলেন, রাফি ইবনি খাদীজ [রাদি.]-এর বর্ণিত হাদীসই এ বিষয়ে সবচেয়ে সহিহ হাদীস এবং আলী ইবনি আবদুল্লাহ [রঃ] বলেন, সাওবান শাদ্দাদ ইবনি আউস হইতে বর্ণিত হাদীসই হচ্ছে এ বিষয়ে সবচেয়ে সহিহ হাদীস। ইয়াহ্ইয়া ইবনি আবু কাসীর [রঃ] আবু কিলাবা [রাদি.] হইতে সাওবান ও শাদ্দাদ ইবনি আওমের দুটি হাদীসই বর্ণনা করিয়াছেন। রোযা অবস্থায় রক্তক্ষরণ করানোকে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]–এর একদল বিশেষজ্ঞ সাহাবী ও অপারাপর আলিমের একটি দল মাকরূহ্ মনে করেন। এমনকি অনেক সাহাবী [রমযানের] রাতে তা করাতেন যেমন আবু মূসা আল-আশাআরী ও ইবনি উমার [রাদি.]। এরকম মতপ্রকাশ করিয়াছেন ইবনিল মুবারাকও। আবদুর রাহমান ইবনি মাহদী বলেছেন, কেউ যদি রোযা থাকা অবস্থায় রক্তক্ষরণ করায় তাহলে তাকে এর কাযা আদায় করিতে হইবে। এরকম মত দিয়েছেন আহ্মাদ ইবনি হাম্বাল ও ইসহাকও। ঈমাম শাফি [রঃ] বলেছেন, রোযা পালনরত অবস্থায়ও রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] রক্তক্ষরণ করিয়েছেন। আবার এটাও রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেছেনঃ রক্তক্ষরণকারী এবং যে লোকের রক্তক্ষরণ করা হয় তাহাদের উভয়ের রোযাই বাতিল হয়ে গেল। আমার এ দুটি হাদীসের মধ্যে একটিও সঠিক বলে জানা নেই। কোন ব্যক্তি যদি রোযা থাকাবস্থায় রক্তক্ষরণ করানো হইতে দূরে থাকে তাহলে সেটাই আমার মতে বেশী পছন্দনীয়। আর যদি কোন লোক তার রোযা থাকাবস্থায় রক্তক্ষরণ করায় সেক্ষেত্রে আমি মনে অরি না এতে তার রোযা বাতিল হয়। আবু ঈসা বলেন, বাগদাদে থাকা অবস্থায় ঈমাম শাফির মত ছিল এটাই। কিন্তু এই বিষয়ে তিনি মিসরে যাওয়ার পর রক্তক্ষরণের অনুমতির পক্ষপাতী ছিলেন এবং কোন রকম সমস্যা আছে বলে মনে করেননি রোযা থাকাবস্থায় রক্তমোক্ষণ করানোতে। তার এই মতের সমর্থনে তিনি দলীল হিসেবে বলেন যে, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] রোযা ও ইহ্রাম অবস্থায় বিদায় হাজ্জে রক্তক্ষরণ করিয়েছেন। রোজার হাদীস – রোজার মাকরুহ সমূহ -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৬১. অনুচ্ছেদঃ এই বিষয়ে [রক্তক্ষরণের] অনুমতি প্রসঙ্গে
৭৭৫. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রোযা পালন ও ইহরাম অবস্থায় রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] রক্তক্ষরণ করিয়েছেন।
-সহিহ, এই অর্থে “রোযা থাকাবস্থায় তিনি রক্তক্ষরণ করিয়েছেন”, বুখারী, ইবনি মা-জাহ [১৬৮২]। এই হাদীসটিকে আবু ঈসা সহিহ বলেছেন। আবদুল ওয়ারিসের বর্ণনার ন্যায় ওহাইবও বর্ণনা করিয়াছেন। ইসমাঈল ইবনি ইবারাহীম আইয়্যূব হইতে তিনি ইকরিমা হইতে মুর্সাল রূপে বর্ণনা করিয়াছেন ইবনি আব্বাসের উল্লেখ না করে। রোজার হাদীস – রোজার মাকরুহ সমূহ -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৭৭৬. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] রোযা থাকাবস্থায় রক্তক্ষরণ করিয়েছেন।
-সহীহ্, প্রাগুক্ত। আবু ঈসা বলেন, উপরোক্ত সূত্রে হাদীসটি হাসান গারীব। রোজার হাদীস – রোজার মাকরুহ সমূহ -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৭৭৭. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] মক্কা ও মদীনার মাঝখানে ইহ্রাম ও রোযা অবস্থায় রক্তক্ষরণ করিয়েছেন।
এই শব্দের হাদীসটি মুনকার। প্রাগুক্ত।এই অনুচ্ছেদে আবু সাঈদ, জাবির ও আনাস [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, ইবনি আব্বাস [রাদি.] বর্ণিত হাদীসটি হাসান সহিহ। নাবী [সাঃআঃ] -এর এক দল সাহাবী ও তাবিঈ এই হাদীস অনুসারে অভিমত দিয়েছেন যে, রোযাব্রত অবস্থায় রক্তক্ষরণ [শিঙ্গা লাগানো] করানোতে কোন সমস্যা নেই। সুফিয়ান সাওরী, মালিক ইবনি আনাস ও শাফিঈ [রঃ]-এর একই মত। রোজার হাদীস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ মুনকার
৬২. অনুচ্ছেদঃ সাওমে বিসাল মাকরূহ্
৭৭৮. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমরা সাওমে বিসাল কর না। সাহাবীগণ বলিলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি তো সাওমে বিসাল করেন। তিনি বললেনঃ আমি তো তোমাদের কারো মত নই। আমাকে আমার প্রতিপালক পানাহার করান।
সহীহ্, বুখারী। আলী, আবু হুরাইরা, আইশা, ইবনি উমার, জাবির, আবু সাঈদ ও বাশীর ইবনিল খাসাসিয়্যা [রাদি.] হইতেও এই অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা আনাস [রাদি.]-এর হাদীসটিকে হাসান সহীহ্ বলেছেন। এ হাদীস অনুযায়ী আলিমগণ আমল করিয়াছেন। সাওমে বিসালকে তারা মাকরূহ্ বলে মত দিয়েছেন। আবদুল্লাহ ইবনিয যুবাইর [রাদি.] হইতে বর্ণিত আছে যে, তিনি একাধিক দিন সাওমে বিসাল করিতেন এবং ইফ্তার করিতেন না। রোজার হাদীস – রোজার মাকরুহ সমূহ -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৬৩. অনুচ্ছেদঃ রোযা পালন করিতে ইচ্ছা পোষণকারীর নাপাক অবস্থায় ফজর হওয়া
৭৭৯. আবু বাক্র ইবনি আবদুর রাহমান ইবনি হারিস ইবনি হিশাম [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমাকে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর স্ত্রী আইশা ও উম্মু সালামা [রাদি.] জানিয়েছেনঃ রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর [কোন কোন সময়] কোন স্ত্রীর [সাথে সহবাসের] কারণে নাপাক অবস্থায় ফজর হয়ে যেত। এরপর তিনি গোসল করিতেন এবং রোযা পালন করিতেন।
-সহীহ, ইবনি মা-জাহ [১৭০৩], বুখারী, মুসলিম। আইশা ও উম্মু সালামা হইতে বর্ণিত হাদীসকে আবু ঈসা হাসান সহীহ্ বলেছেন। এ হাদীস অনুযায়ী রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর বেশিরভাগ সাহাবী ও তাবিঈ আমল করিয়াছেন। এ মত দিয়েছেন সুফিয়ান, শাফিঈ, আহ্মাদ ও ইসহাক [রঃ]। তাবিঈগণের একটি দল বলেন, সহবাসজনিত কারণে নাপাক অবস্থায় কোন লোকের ফজর হয়ে গেলে সে লোককে এই দিনের রোযার কাযা করিতে হইবে। তবে প্রথমে বর্ণিত মতটিই অধিক সহীহ। রোজার হাদীস – রোজার মাকরুহ সমূহ -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৬৪. অনুচ্ছেদঃ রোযা থাকাবস্থায় দাওয়াত গ্রহণ করা
৭৮০. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমাদের কাউকে খাবারের দাওয়াত দেওয়া হলে সে লোক যেন তা গ্রহণ করে। সে রোযাদার হলে [দাওয়াতকারীর জন্য] যেন দুআ করে।
-সহীহ্, ইবনি মা-জাহ [১৭৫০], মুসলিম। রোজার হাদীস – রোজার মাকরুহ সমূহ -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৭৮১. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমাদের কোন রোযাদারকে যদি খাবারের দাওয়াত দেওয়া হয় তাহলে সে যেন বলে, আমি রোযা আছি।
-সহীহ, প্রাগুক্ত। আবু ঈসা আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণিত উভয় হাদীসকেই হাসান সহীহ্ বলেছেন। রোজার হাদীস – রোজার মাকরুহ সমূহ -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৬৫. অনুচ্ছেদঃ স্বামীর অনুমতি ছাড়া স্ত্রীর [নফল] রোযা আদায় করা মাকরূহ্
৭৮২. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কোন মহিলা যেন স্বামীর উপস্থিতিতে তার অনুমতি ছাড়া রমযান মাসের রোযা ব্যতীত একদিনও অন্য কোন [নফল] রোযা পালন না করে।
-সহীহ্, ইবনি মা-জাহ [১৭৬১], নাসা-ঈ- রমযানের উল্লেখ ব্যতীত। ইবনি আব্বাস ও আবু সাঈদ [রাদি.] হইতেও এই অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটিকে হাসান সহীহ্ বলেছেন। এ হাদীসটি আবুয যানাদ হইতে, তিনি মূসা ইবনি আবু উসমান হইতে, তিনি তার পিতা হইতে, তিনি আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে তিনি নাবী [সাঃআঃ] হইতে এই সূত্রেও বর্ণিত আছে। রোজার হাদীস – রোজার মাকরুহ সমূহ -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৬৬. অনুচ্ছেদঃ রমযানের রোযার কাযা আদায়ের ক্ষেত্রে বিলম্ব করা প্রসঙ্গে
৭৮৩. আইশা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি শাবান মাস ব্যতীত আমার রমযান মাসের কাযা রোযা আদায় করিতে পারতাম না [কোন সংগত ওজরবশত], রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর ইন্তিকাল পর্যন্ত এই অবস্থা ছিল।
-সহীহ্, ইরওয়া [৯৪৪], রাওযুন নাযীর [৭৬৩], সহীহ্ আবু দাঊদ [২০৭৬], তামামুল মিন্নাহ, বুখারী, মুসলিম। আবু ঈসা এ হাদীসটিকে হাসান সহীহ্ বলেছেন। হাদীসটিকে ইয়াহ্ইয়া ইবনি সাইদ আনসারী [রঃ] আবু সালামা হইতে আইশা [রাদি.]-এর সূত্রে অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন। রোজার হাদীস – রোজার মাকরুহ সমূহ -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৬৭. অনুচ্ছেদঃ রোযাদারের সামনে খাবার খেলে তার [রোযাদারের] ফাযীলাত
৭৮৪. লাইলা [রঃ] হইতে তাহাঁর আযাদকারিনী মহিলা [উম্মু উমারা] হইতে বর্ণীতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ রোযাদার ব্যক্তির সামনে বেরোযদার লোকেরা যদি খাবার খায় তাহলে ফেরেশতাগণ তার [রোযাদারের] জন্য দুআ করেন।
যঈফ, ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[১৭৪৮],। আবু ঈসা বলেন, শুবা এই হাদীসটি হাবীব ইবনি যাইদ….. তাহাঁর পিতামহী উম্মু উমারা [রাদি.]-এর সূত্রে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে বর্ণনা করিয়াছেন। রোজার হাদীস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস
৭৮৫. হাবীব ইবনি যাইদ [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমাদের আযাদকৃত দাসী লায়লাকে উম্মু উমারা বিনতু কাব আল-আনসারিয়্যা [রাদি.]-এর সূত্রে বর্ণনা করিতে শুনিয়াছি যে, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এক সময় তার বাড়িতে আসেন। তখন তিনি তাহাঁর সামনে খাবার আনলেন। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাকে বললেনঃ তুমিও খাও। তিনি বলেন, আমি [নফল] রোযা রেখেছি। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ রোযাদার ব্যক্তির সামনে বেরোযদার লোকেরা যদি খায় তাহলে ফেরেশতাগণ তার [রোযাদারের] জন্য দুআ করেন। রাবী কোন কোন সময় “হাত্তা ইয়াফরুগূ” [খাওয়া শেষ না করা পর্যন্ত]-এর জায়গায় “হাত্তা ইয়াশবাউ” [পরিতৃপ্ত না হওয়া পর্যন্ত] শব্দ বর্ণনা করিয়াছেন।
যঈফ, প্রাগুক্ত। আবু ঈসা বলেন, এই হাদীসটি হাসান সহীহ। এই হাদীসটি শারীকের হাদীসের চাইতে অধিক সহীহ। রোজার হাদীস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস
৭৮৬. উম্মু উমারা বিনতি কাব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
উম্মু উমারা বিনতি কাব [রাদি.]-এর সূত্রে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর একই রকম হাদীস বর্ণিত আছে। তবে এই বর্ণনায় “হাত্তা ইয়াফরুগূ আও ইয়াশবাঊ” শব্দাবলীর উল্লেখ নেই। [পূর্বের হাদীসের ন্যায়]।
এটিও যঈফ,আবু ঈসা বলেন, উম্মু উমারা [রাদি.] হলেন হাবীব ইবনি যাইদ আল-আনসারী [রঃ]-এর পিতামহী। রোজার হাদীস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস
৬৮. অনুচ্ছেদঃ ঋতুবতী মহিলার রোযা কাযা করা ও নামাজ কাযা না করা প্রসঙ্গে
৭৮৭. আইশা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর যুগে আমরা মাসিক ঋতুর পর পবিত্র হলে তখন আমাদেরকে তিনি রোযার কাযা আদায়ের হুকুম করিতেন কিন্তু নামাজ কাযা আদায়ের কথা বলিতেন না।
-সহীহ্, ইবনি মা-জাহ [৬৩১] মুসলিম, বুখারীতে নামাযের কথা উল্লেখ নেই।আবু ঈসা এ হাদীসটিকে হাসান বলেছেন। মুআযা হইতে আইশা [রাদি.]-এর সূত্রেও এ হাদীসটি বর্ণিত আছে। এ হাদীস অনুযায়ী আলিমগণ আমল করার কথা বলেছেন। এই বিষয়ে তাহাদের মাঝে কোন মতভেদ আছে বলে আমাদের জানা নেই অর্থাৎ ঋতুবতী মহিলাকে তার বাদপড়ে যাওয়া রোযার কাযা আদায় করিতে হইবে কিন্তু নামাযের কাযা করিতে হইবে না। আবু ঈসা বলেন, বর্ণনাকারী উবাইদা হলেন ইবনি মুআত্তিব আয যাব্বী আল-কূফী তাহাঁর উপনাম আবু আবদুল কারীম।রোজার হাদীস – রোজার মাকরুহ সমূহ -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৬৯. অনুচ্ছেদঃ রোযাদারের নাকের ভিতরে পানি পৌঁছানো মাকরূহ্
৭৮৮. লাকীত ইবনি সাবিরা [রঃ] হইতে তাহাঁর পিতা হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! ওযূ প্রসঙ্গে আমাকে জানিয়ে দিন। তিনি বললেনঃ ভালোভাবে ওযূ কর, আঙ্গুলগুলোর মাঝে খিলাল কর এবং রোযা পালনকারী নাহলে নাকের গভীরে পানি পৌঁছাও।
-সহীহ, ইবনি মা-জাহ [৪০৭]আবু ঈসা এ হাদীসটিকে হাসান সহীহ্ বলেছেন। রোযা পালনকারীর জন্য নাক দিয়ে ঔষধ গ্রহণ করাকে আলিমগণ মাকরূহ্ বলেছেন। এরফলে রোযা ভেঙ্গে যায় বলে তারা মনে করেন। এই মতের পক্ষে উল্লেখিত হাদীস হইতে জোরালো সমর্থন পাওয়া যায়।রোজার হাদীস – রোজার মাকরুহ সমূহ -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৭০. অনুচ্ছেদঃ কোন ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের মেহমান হলে তাহাদের অনুমতি ব্যতীত [নফল] রোযা রাখবে না
৭৮৯. আইশা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কেউ কোন সম্প্রদায়ের অতিথি হলে সে যেন তাহাদের সম্মতি ছাড়া নফল রোযা না রাখে।
খুবই দুর্বল, ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[১৭৬৩],আবু ঈসা বলেন, এই হাদীসটি মুনকার। কোন নির্ভরযোগ্য রাবী হিশাম ইবনি উরওয়া হইতে এই হাদীসটি রিওয়াত করিয়াছেন বলে আমরা অবগত নই। মূসা ইবনি দাঊদ, আবু বাকর মাদানী হইতে তিনি হিশাম ইবনি উরওয়া-তৎপিতা উরওয়া হইতে তিনি আইশা [রাদি.] সূত্রে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে একই রকম এক হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। এই রিওয়াতটিও যঈফ। আবু বাক্র বিশেষজ্ঞদের মতে দুর্বল। জাবির ইবনি আবদুল্লাহ্ [রাদি.] হইতে আবু বাক্র আল মাদানী উপনামের যে রাবী হাদীস রিওয়াত করিয়াছেন তার নাম আল-ফাযল ইবনি মুবাশশির। তিনি এই আবু বাক্র আল মাদানী হইতে বেশী বিশ্বস্ত ও অগ্রগণ্য।রোজার হাদীস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ খুবই দুর্বল
Leave a Reply