সুন্নত রোজা -শাবান, মুহার্রাম, জুমুআ, আরাফা, আশূরা, যুলহিজ্জ
সুন্নত রোজা -শাবান, মুহার্রাম, জুমুআ, আরাফা, আশূরা, যুলহিজ্জ >> সুনান তিরমিজি শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন
অধ্যায়ঃ ৬, অনুচ্ছেদঃ (৩৭-৫৭)=২১টি
৩৭. অনুচ্ছেদঃ শাবানকে রমযানের সাথে মিলানো
৩৮. অনুচ্ছেদঃ রমযান মাসের সম্মানার্থে শাবান মাসের শেষ অর্ধেকে রোযা পালন করা মাকরূহ
৩৯. অনুচ্ছেদঃ মধ্য শাবান রাতের ফযীলত
৪০. অনুচ্ছেদঃ মুহার্রামের রোযা
৪১. অনুচ্ছেদঃ জুমুআর দিন রোযা পালন প্রসঙ্গে
৪২. অনুচ্ছেদঃ শুধুমাত্র জুমুআর দিন রোযা পালন করা মাকরূহ্
৪৩. অনুচ্ছেদঃ শনিবারের রোযা পালন প্রসঙ্গে
৪৪. অনুচ্ছেদঃ সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোযা পালন প্রসঙ্গে
৪৫. অনুচ্ছেদঃ বুধবার ও বৃহস্পতিবারের রোযা রাখা প্রসঙ্গে
৪৬. অনুচ্ছেদঃ আরাফার দিন রোযা পালনের ফাযীলাত
৪৭. অনুচ্ছেদঃ আরাফাতে অবস্থানকালে সে দিনের রোযা পালন করা মাকরূহ্
৪৮. অনুচ্ছেদঃ আশূরার দিন রোযা পালনের উৎসাহ প্রদান করা
৪৯. অনুচ্ছেদঃ আশূরার দিন রোযা পালন না করার সুযোগ
৫০. অনুচ্ছেদঃ কোন্টি আশূরার দিন?
৫১. অনুচ্ছেদঃ যুলহিজ্জা মাসের [প্রথম] দশ দিন রোযা পালন প্রসঙ্গে
৫২. অনুচ্ছেদঃ যুলহিজ্জা মাসের দশ দিনের সৎকাজের ফাযীলাত
৫৩. অনুচ্ছেদঃ শাওয়াল মাসের ছয় দিন রোযা পালন করা
৫৪. অনুচ্ছেদঃ প্রতি মাসে তিন দিন রোযা পালন করা
৫৫. অনুচ্ছেদঃ রোযা পালনের ফাযীলাত
৫৬. অনুচ্ছেদঃ সারা বছর রোযা পালন করা প্রসঙ্গে
৫৭. অনুচ্ছেদঃ অব্যাহতভাবে রোযা পালন করা
৩৭. অনুচ্ছেদঃ শাবানকে রমযানের সাথে মিলানো
৭৩৬. উম্মু সালামা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি শাবান ও রমযান ছাড়া রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে একটানা দুমাসের রোযা পালন করিতে দেখিনি।
-সহীহ ইবনি মা-জাহ [১৩৪৮]। আইশা [রাদি.]-এর সূত্রেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা উম্মু সালামা [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটিকে হাসান বলেছেন। সুন্নত রোজা -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৭৩৭. আইশা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
আবু সালামার সূত্রে আইশা [রাদি.] হইতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে শাবান মাসের অনুরূপ অন্য কোন মাসে এত বেশি [নফল] রোযা পালন করিতে দেখিনি। কিছু অংশ ছাড়া এ মাসের পুরো মাসটাই, বলিতে কি সারা মাসটাই তিনি [নফল] রোযা রাখতেন।
-হাসান সহীহ, প্রাগুক্ত। এ হাদীস প্রসঙ্গে ইবনিল মুবারাক বলেছেন, যদি কোন লোক মাসের বেশিরভাগ দিন রোযা পালন করে তবে আরবী বাগধারা অনুযায়ী বলা যায় সে লোক সারা মাসই রোযা পালন করেছে। যেমন আরবরা বলে থাকে, অমুক লোক সম্পূর্ণ রাত [নামাযে] দাঁড়িয়েছিল। অথচ সে লোক রাতের খাবারে এবং অন্যান্য প্রয়োজনে কিছু সময় ব্যয় করেছে। ইবনিল মুবারাক এর প্রেক্ষিতে মনে করেন, হাদীস দুটির তাৎপর্য একই। হাদীসটির তাৎপর্য হচ্ছে, সংশ্লিষ্ট মাসের বেশিরভাগ দিন রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] রোযা পালন করিতেন। আবু ঈসা বলেন, সালিম আবু নাযর এবং আরও অনেকে আবু সালামার সূত্রে আইশা হইতে মুহাম্মাদ ইবনি আমরের মতই হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান সহীহ
৩৮. অনুচ্ছেদঃ রমযান মাসের সম্মানার্থে শাবান মাসের শেষ অর্ধেকে রোযা পালন করা মাকরূহ
৭৩৮. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ শাবান মাসের অর্ধেক বাকী থাকতে তোমরা আর রোযা পালন করো না।
-সহীহ, ইবনি মা-জাহ [১৬৫১]। আবু ঈসা আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটিকে হাসান সহীহ্ বলেছেন। এই শব্দে এ সূত্র ছাড়া আর কোন বর্ণনা আছে কি না তা আমাদের জানা নেই। কোন কোন আলিমদের মতানুযায়ী এই হাদীসটি সে সব লোকের জন্য প্রযোজ্য যে সাধারণতঃ [শাবানের] রোযা পালন করে না, কিন্তু শাবান মাসের কিছু দিন বাকী থাকতেই রমযানের সম্মানার্থে রোযা পালন শুরু করে দেয়। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর উক্ত অভিমতের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ একটি হাদীস আবু হুরাইরা [রাদি.]-এর মারফতেও বর্ণিত আছে। তা এই যে, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ [শাবানের] রোযা রেখে তোমরা রমযানকে স্বাগত জানাবে না। তবে কারো নির্ধারিত দিনগুলোর রোযার সাথে এই দিনের রোযার মিল পড়ে গেলে ভিন্ন কথা। এ হাদীস হইতে জানা গেল যে, কোন ব্যক্তির রমযানকে স্বাগত জানানোর জন্য [শাবানের] রোযা রাখা মাকরূহ। সুন্নত রোজা -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩৯. অনুচ্ছেদঃ মধ্য শাবান রাতের ফযীলত
৭৩৯. আইশা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, এক রাতে আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] -কে হারিয়ে ফেললাম [বিছানায় পেলাম না]। আমি [তাহাঁর সন্ধানে] বের হলাম। এসে দেখলাম তিনি বাকী কবরস্তানে আছেন। তিনি বলেনঃ তুমি কি ভয় করছ আল্লাহ ও তাহাঁর রাসূল তোমার প্রতি কোন অবিচার করবেন? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি অনুমান করলাম আপনি আপনার অন্য কোন বিবির নিকটে গিয়েছেন। তিনি বললেনঃ আল্লাহ্ তাআলা মধ্য শাবানে [১৫ তারিখের রাতে] দুনিয়ার কাছের আকাশে অবতীর্ণ হন। তারপর কালব গোত্রের বকরী পালের লোমের চেয়েও বেশী সংখ্যক লোককে তিনি মাফ করে দেন।
যঈফ, ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[১৩৮৯]। এই অনুচ্ছেদে আবু বাকর সিদীক [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, হাজ্জাজের বরাতে এই সূত্রটি ব্যতীত অন্য কোন সূত্রে আইশা [রাদি.]-এর হাদীসটি প্রসঙ্গে আমরা কিছুই অবগত নই। আমি মুহাম্মাদ আল-বুখারীকে উল্লেখিত হাদীসকে দুর্বল বলিতে শুনিয়াছি। তিনি বলেছেন, রাবী ইয়াহইয়া ইবনি আবু কাসীর উরওয়া [রঃ] হইতে কোন হাদীস শুনেননি। মুহাম্মাদ আল-বুখারী আরও বলেন, এমনিভাবে হাজ্জাজও ইয়াহইয়া ইবনি আবু কাসীরের নিকট হইতে কিছুই শুনেননি। এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস
৪০. অনুচ্ছেদঃ মুহার্রামের রোযা
৭৪০. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ রমযান মাসের রোযার পরে আল্লাহ্ তাআলার মাস মুহার্রামের রোযাই সবচেয়ে ফাযীলাতপূর্ণ।
-সহীহ, ইবনি মা-জাহ [১৭৪২], মুসলিম। আবু ঈসা আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটিকে হাসান বলেছেন। সুন্নত রোজা -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৭৪১. আলী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেছেন, এক ব্যক্তি তাকে প্রশ্ন করিল, রামাযান মাসের পর কোন মাসের রোযা রাখতে আপনি আমাকে আদেশ করেন? তিনি তাকে বলিলেন, এই বিষয়ে আমি কাউকে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর নিকট প্রশ্ন করিতে শুনিনি। তবে হ্যাঁ এক সময় আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর নিকটে বসা ছিলাম। এই সময় এক ব্যক্তি এসে তাঁকে বলিল, হে আল্লাহর রাসূল! রামাযান মাসের পর আর কোন মাসের রোযা পালনে আপনি আমাকে আদেশ করেন? রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ রামাযান মাসের পর তুমি যদি আরো রোযা রাখতে ইচ্ছুক হও তবে মুহাররামের রোযা রাখ। যেহেতু এটা আল্লাহ তাআলার মাস। এই মাসে এমন একটি দিবস আছে যেদিন আল্লাহ তাআলা এক গোত্রের তাওবা ক্ববুল করেছিলেন এবং তিনি আরোও অনেক গোত্রের তাওবাও এই দিনে কুবুল করবেন।
যঈফ, তালীকুর রাগীব [২/৭৭]। আবু ঈসা বলেন, হাদীসটি হাসান গারীব। এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস
৪১. অনুচ্ছেদঃ জুমুআর দিন রোযা পালন প্রসঙ্গে
৭৪২. আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, প্রত্যেক মাসের শুরুতে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] তিন দিন রোযা পালন করিতেন এবং জুমুআর দিনের রোযা খুব কমই ভাঙ্গতেন।
-হাসান, তাখরীজুল মিশকাত [২০৫৮] তালীক আলা ইবনি খুযাইমা [২১৪৯], সহীহ্ আবু দাঊদ [২১১৬]। ইবনি উমার ও আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতেও এই অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটিকে হাসান গারীব বলেছেন। জুমুআর দিন রোযা পালন করাকে বিশেষজ্ঞ আলিমগণের একদল মুস্তাহাব বলেছেন, জুমুআর আগের বা পরের দিন রোযা পালন না করে শুধু জুমুআর দিন রোযা পালন করাকে মাকরূহ বলেছেন। আসিম [রঃ]-এর বরাতে শুবাও এ হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন। তবে এটিকে তিনি মারফূভাবে বর্ণনা করেননি [মাওকুফভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]। এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান হাদীস
৪২. অনুচ্ছেদঃ শুধুমাত্র জুমুআর দিন রোযা পালন করা মাকরূহ্
৭৪৩. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমাদের মাঝে কোন ব্যক্তি যেন শুধুমাত্র জুমুআর দিনে রোযা না রাখে জুমুআর আগের দিন বা পরের দিন রোযা না রেখে।
-সহীহ্ ইবনি মা-জাহ [১৭২৩], বুখারী, মুসলিম। আলী, জাবির, জুনাদা আল-আয্দী, জুওয়াইরিয়া, আনাস এবং আবদুল্লাহ ইবনি আমর [রাদি.] হইতেও এই অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে।আবু ঈসা আবু হুরাইরা [রাদি.]-এর বর্ণিত হাদীসটিকে হাসান সহীহ্ বলেছেন। এ হাদীস অনুযায়ী বিশেষজ্ঞ আলিমগণ মত প্রকাশ করিয়াছেন। তারা আগের বা পরের দিনের সাথে না মিলিয়ে শুধুমাত্র জুমুআর দিনে রোযা পালন করাকে মাকরূহ্ বলেছেন। ঈমাম আহ্মাদ ও ইসহাকও এই কথা বলেছেন। সুন্নত রোজা -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৩. অনুচ্ছেদঃ শনিবারের রোযা পালন প্রসঙ্গে
৭৪৪. আবদুল্লাহ ইবনি বুসর [রঃ] হইতে তার বোন হইতে বর্ণীতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমাদের উপর ফরযকৃত রোযা ছাড়া তোমরা শনিবারে আর অন্য কোন রোযা পালন করো না। আঙ্গুরের লতার বাকল বা গাছের ডাল ছাড়া তোমাদের কেউ যদি আর কিছু না পায় [সেদিনের আহারের জন্য] তবে সে যেন তাই চিবিয়ে নেয় [রোযা ভাঙ্গার জন্য]। -সহীহ, ইবনি মা-জাহ [১৭২৬]
আবু ঈসা এই হাদীসটিকে হাসান বলেছেন। শুধুমাত্র শনিবারের দিনকে রোযা পালনের জন্য নির্দিষ্ট করে নেয়াই মাকরূহ হওয়ার কারণ। কেননা, শনিবারের প্রতি ইয়াহূদীরা বিশেষ মর্যাদা প্রদর্শন করে থাকে। সুন্নত রোজা -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৪. অনুচ্ছেদঃ সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোযা পালন প্রসঙ্গে
৭৪৫. আইশা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] সোমবার ও বৃহস্পতিবারের রোযার প্রতি বেশি খেয়াল রাখতেন।
-সহীহ, ইবনি মা-জাহ [১৭৩৯]।হাফসা, আবু কাতাদা, আবু হুরাইরা ও উসামা ইবনি যাইদ [রাদি.] হইতেও এই অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা এই সূত্রে আইশা [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটিকে হাসান গারীব বলেছেন। সুন্নত রোজা -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৭৪৬. আইশা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেছেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এক মাসের শনি, রবি ও সোমবার রোযা রাখতেন এবং অপর মাসের মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার রোযা রাখতেন।
যঈফ, তাখরীজুল মিশকাত, তাহকীক ছানী [২০৫৯],। আবু ঈসা বলেন, এই হাদীসটি হাসান। আবদুর রহমান ইবনি মাহ্দী এই হাদীসটি সুফিয়ান [রঃ] হইতে [মাওকূফ হিসেবে] বর্ণনা করিয়াছেন, তবে মারফূ করেননি। এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস
৭৪৭. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ প্রতি সোমবার ও বৃহস্পতিবার [আল্লাহ তাআলার দরবারে] আমল পেশ করা হয়। সুতরাং আমার আমলসমূহ যেন রোযা পালনরত অবস্থায় পেশ করা হোক এটাই আমার পছন্দনীয়।
-সহীহ্, তাখরীজুল মিশকাত [২০৫৬], তালীকুর রাগীব [৮৪/২], ইরওয়া [৯৪৯]। এই অনুচ্ছেদে আবু হুরাইরা [রাদি.] বর্ণিত দীসটিকে আবু ঈসা হাসান গারীব বলেছেন। সুন্নত রোজা -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৫. অনুচ্ছেদঃ বুধবার ও বৃহস্পতিবারের রোযা রাখা প্রসঙ্গে
৭৪৮. উবাইদুল্লাহ্ ইবনি মুসলিম আল-কুরাশী [রঃ] হইতে তার পিতা হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেছেন, আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] -কে পুরো বছর রোযা রাখা প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলাম বা তাঁকে প্রশ্ন করা হল। তিনি বলেনঃ তোমার উপর অবশ্যই তোমার পরিবারের অধিকার আছে। অতএব তুমি রামাযান ও এর পরের মাস [শাওয়ালের ছয়টি নফল রোযা] এবং প্রতি বুধ ও বৃহস্পতিবার রোযা রাখ। এই পদ্ধতি মানলে তুমি যেন পুরো বছরই রোযা রাখলে এবং রোযা ভেঙে ফেলার সুযোগ পেলে।
যঈফ, যঈফ আবু দাঊদ [৪২০]। এ অনুচ্ছেদে আইশা [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, মুসলিম আল-কুরাশীর হাদীসটি গারীব। কেউ কেউ এটিকে হারূন ইবনি সালমান হইতে তিনি মুসলিম ইবনি উবাইদুল্লাহ্ হইতে তিনি তার পিতা উবাইদুল্লাহ্ [রঃ]-এর সূত্রে বর্ণনা করিয়াছেন। এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস
৪৬. অনুচ্ছেদঃ আরাফার দিন রোযা পালনের ফাযীলাত
৭৪৯. আবু কাতাদা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ আমি আল্লাহ্ তাআলার নিকট আরাফাতের দিনের রোযা সম্পর্কে আশা করি যে, তিনি এর মাধ্যমে পূর্ববর্তী এক বছর এবং পরবর্তী এক বছরের গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দিবেন।
-সহীহ্, ইবনি মা-জাহ [১৭৩০], মুসলিম। আবু সাঈদ [রাদি.] হইতেও এই অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা আবু কাতাদা [রাদি.]-এর বর্ণিত হাদীসটিকে হাসান বলেছেন। আরাফাতে অবস্থানরত ব্যক্তিদের ছাড়া অন্যদের জন্য এই দিনে রোযা পালন করাকে বিশেষজ্ঞ আলিমগণ মুস্তাহাব বলেছেন। সুন্নত রোজা -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৭. অনুচ্ছেদঃ আরাফাতে অবস্থানকালে সে দিনের রোযা পালন করা মাকরূহ্
৭৫০. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আরাফাতে রোযা ভেঙ্গে ফেলেন। সেদিন তাহাঁর জন্য উম্মুল ফাদল [রাদি.] কিছু দুধ পাঠিয়েছিলেন। তিনি তা পান করেন।
-সহীহ, সহীহ আবু দাঊদ [২১০৯], তালীক আলা ইবনি খুযাইমা [২১০২], উম্মুল ফাযল হইতে [বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ ]।আবু হুরাইরা, ইবনি উমার ও উম্মুল ফাযল [রাদি.] হইতেও এই অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা ইবনি আব্বাস [রাদি.]-এর বর্ণিত হাদীসটিকে হাসান সহীহ্ বলেছেন। ইবনি উমার [রাদি.] বলেনঃ রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাথে আমি হাজ্জ করেছি কিন্তু আরাফার দিন তিনি রোযা পালন করেননি; আবু বাক্র [রাদি.]-এর সাথেও হাজ্জ করেছি, তিনিও সেদিন রোযা পালন করেননি; উমার [রাদি.]-এর সাথেও হাজ্জ করেছি, তিনিও সেদিন রোযা পালন করেননি এবং উসমান [রাদি.]-এর সাথেও হাজ্জ করেছি কিন্তু তিনিও রোযা পালন করেননি। এ হাদীস অনুযায়ী বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞ আলিম আমলের কথা বলেছেন। তাঁরা আরাফার দিন দুআর ক্ষেত্রে শক্তিলাভের জন্য রোযা পালন না করাকে মুস্তাহাব বলেছেন। অবশ্য আরাফাতে অবস্থানকালে কোন কোন আলিম সে দিনের রোযা পালন করিয়াছেন। সুন্নত রোজা -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৭৫১. ইবনি আবু নাজীহ্ [রঃ] হইতে তার পিতা হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আরাফাতের দিন রোযা পালন প্রসঙ্গে ইবনি উমার [রাদি.]-কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাথে হাজ্জ করেছি, তিনি সেদিন রোযা পালন করেননি। আবু বাক্র [রাদি.]-এর সাথেও হাজ্জ করেছি, ঐ দিন তিনিও রোযা পালন করেননি। উমার [রাদি.]-এর সাথেও হাজ্জ করেছি, ঐ দিন তিনিও রোযা পালন করেননি। উসমান [রাদি.]-এর সাথেও হাজ্জ করেছি, ঐ দিন তিনিও রোযা পালন করেননি। এ দিন আমি নিজেও রোযা পালন করিনা, কাউকে রোযা রাখতেও বলি না এবং নিষেধও করি না। -সনদ সহীহ্
আবু ঈসা এই হাদীসটিকে হাসান বলেছেন। এই হাদীসটি ইবনি আবু নাজীহ্, তার পিতা আবু নাজীহ্ হইতে, তিনি জনৈক ব্যক্তি হইতে, তিনি ইবনি উমার [রাদি.]-এর সূত্রেও বর্ণিত হয়েছে। আবু নাজীহ্-এর নাম ইয়াসার। সুন্নত রোজা -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৮. অনুচ্ছেদঃ আশূরার দিন রোযা পালনের উৎসাহ প্রদান করা
৭৫২. আবু কাতাদা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আল্লাহ্ তাআলার নিকট আমি আশাপোষণ করি যে, তিনি আশূরার রোযার মাধ্যমে পূর্ববর্তী এক বছরের [গুনাহ্] ক্ষমা করে দিবেন।
-সহীহ্, ইবনি মা-জাহ [১৭৩৮], মুসলিম। এই অনুচ্ছেদে আলী, মুহাম্মাদ ইবনি সাইফী, সালামা ইবনিল আকওয়া, হিন্দ ইবনি আসমা, ইবনি আব্বাস, রুবাই বিনতু মুআওবিয ইবনি আফ্রা, আবদুর রাহমান ইবনি সালামা আল-খুযাঈ, তার চাচার বরাতে এবং আবদুল্লাহ্ ইবনিয যুবাইর [রাদি.] প্রমুখ বর্ণনা করেনঃ রাসূল [সাঃআঃ] লোকদেরকে আশূরার দিন রোযা পালন করিতে উৎসাহিত করিয়াছেন। আবু ঈসা বলেন, আবু কাতাদা [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটি ছাড়া আর অন্য কোন বর্ণনায় “আশূরার দিনের রোযা এক বছরের [গুনাহের] কাফ্ফারা স্বরূপ” এই কথা উল্লেখ আছে বলে আমাদের জানা নেই। ঈমাম আহ্মাদ ও ইসহাক [রঃ] আবু কাতাদা [রাদি.]-এর হাদীস অনুযায়ীই অভিমত ব্যক্ত করিয়াছেন। সুন্নত রোজা -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪৯. অনুচ্ছেদঃ আশূরার দিন রোযা পালন না করার সুযোগ
৭৫৩. আইশা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, কুরাইশরা জাহিলী যুগে এমন একটি দিনে রোযা রাখত যে দিনটি ছিল আশূরা। সেদিন রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]ও রোযা পালন করিতেন। তিনি মাদীনায় আসার পরও ঐ রোযা পালন করিয়াছেন এবং রোযা পালনের জন্য লোকদেরকেও আদেশ করিয়াছেন। রমযান মাসের রোযা ফরয হওয়ার পর এটাই ফরয হিসাবে রয়ে গেল এবং তিনি আশূরার রোযা ছেড়ে দিলেন। ফলে এই দিনে যে লোক ইচ্ছা করে সে রোযা পালন করিতে পারে আর যে ইচ্ছা না করে সে তা ছেড়েও দিতে পারে।
-সহীহ, সহীহ্ আবু দাঊদ [২১১০], বুখারী, মুসলিম।ইবনি মাসউদ, কাইস ইবনি সাদ, জাবির ইবনি সামুরা, ইবনি উমার ও মুআবিয়া [রাদি.] হইতেও এই অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীস অনুযায়ী আলিমগণ আমল করার মত ব্যক্ত করিয়াছেন। এই হাদীস সহিহ। আশূরার রোযাকে তারা ওয়াজিব মনে করেন না। কিন্তু কোন ব্যক্তির এই দিনে রোযা রাখার আগ্রহ হলে সে তা রাখতে পারে। কারণ, বিভিন্ন হাদীসে এই দিনের রোযা প্রসঙ্গে অনেক ফাযীলাতের কথা উল্লেখ আছে।সুন্নত রোজা -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৫০. অনুচ্ছেদঃ কোন্টি আশূরার দিন?
৭৫৪. হাকাম ইবনিল আরাজ [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি ইবনি আব্বাস [রাদি.]-এর নিকট গেলাম। তখন তিনি যমযম কূপের সামনে তার চাদরকে বালিশের মত করে হেলান দেওয়া অবস্থায় ছিলেন। আমি বললাম, আমাকে আশূরা প্রসঙ্গে কিছু বলে দিন তো, কোন দিনটিতে আমি রোযা রাখব? তিনি বলিলেন, যখন মুহার্রামের চাঁদ দেখিতে পাবে তখন হইতেই তুমি দিন গুনতে থাকিবে। আর রোযা শুরু করিবে নয় তারিখ ভোর হইতে। আমি বললাম, এভাবেই কি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] রোযা পালন করিতেন? তিনি বলিলেন হ্যাঁ।
-সহীহ্, সহীহ্ আবু দাঊদ [২১১৪], মুসলিম। সুন্নত রোজা -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৭৫৫. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, [মুহার্রামের] দশম তারিখে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আশূরার রোযা পালন করিতে আদেশ করিয়াছেন।
-সহীহ, সহীহ্ আবু দাঊদ [২১১৩], মুসলিম আরও পূর্ণাঙ্গ রূপে।আবু ঈসা ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটিকে হাসান সহীহ্ বলেছেন। আলিমগণের মধ্যে আশূরার দিন প্রসঙ্গে দ্বিমত রয়েছে। কেউ কেউ [মুহার্রামের] নয় তারিখের কথা বলেন, আবার অন্য একদল দশ তারিখের কথা বলেছেন। ইবনি আব্বাস [রাদি.] বলেন, তোমরা নয় ও দশ [এই দুই দিন] রোযা পালন কর এবং [এই ক্ষেত্রে] ইয়াহূদীদের বিপরীত কর। এই হাদীস অনুযায়ী মত প্রকাশ করিয়াছেন ঈমাম শাফি, আহ্মাদ ও ইসহাক।সুন্নত রোজা -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৫১. অনুচ্ছেদঃ যুলহিজ্জা মাসের [প্রথম] দশ দিন রোযা পালন প্রসঙ্গে
৭৫৬. আইশা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি কখনও রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে [যুলহিজ্জা মাসের] দশ দিন রোযা পালন করিতে দেখিনি।
-সহীহ্, ইবনি মা-জাহ [১৭২৯], মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এই হাদীসটি একাধিক বর্ণনাকারী আমাশ হইতে, তিনি ইব্রাহীম হইতে, তিনি আসওয়াদ হইতে, তিনি আইশা [রাদি.]-এর সূত্রে এভাবেই বর্ণনা করিয়াছেন। এই হাদীসটিকে সাওরী প্রমুখ বর্ণনাকারী মানসূর হইতে, তিনি ইবরাহীম… সূত্রে বর্ণনা করিয়াছেন যে, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে এই দশ দিন কখনও রোযা অবস্থায় দেখা যায়নি। এই হাদীসটিকে আবুল আহওয়াস মানসূর হইতে, তিনি ইবরাহীম হইতে, তিনি আইশা [রাদি.]-এর সূত্রে বর্ণনা করিয়াছেন। তিনি বর্ণনাকারী আসওয়াদের উল্লেখ করেননি। এই হাদীসের সনদে মানসূরের পরবর্তী বর্ণনাকারীগণ উক্ত মতবিরোধ করিয়াছেন। আমাশের বর্ণনাটিই এই সনদগুলোর মধ্যে অধিক সহীহ্ এবং মুত্তাসিল। ওয়াকী বলেন, মানসূরের নিকট হইতে বর্ণনার ক্ষেত্রে ইবরাহীম অপেক্ষা আমাশ বেশি বিশ্বস্ত সংরক্ষক। সুন্নত রোজা -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৫২. অনুচ্ছেদঃ যুলহিজ্জা মাসের দশ দিনের সৎকাজের ফাযীলাত
৭৫৭. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ এমন কোন দিন নেই যে দিনসমূহের সৎকাজ আল্লাহ্ তাআলার নিকট যুলহিজ্জা মাসের এই দশ দিনের সৎকাজ অপেক্ষা বেশি প্রিয়। সাহাবীগণ বলিলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহ্ তাআলার পথে জিহাদ করাও কি [এত প্রিয়] নয়? রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ আল্লাহ তাআলার পথে জিহাদও তার চেয়ে বেশি প্রিয় নয়। তবে জান-মাল নিয়ে যদি কোন লোক আল্লাহ তাআলার পথে জিহাদে বের হয় এবং এ দুটির কোনটিই নিয়ে যদি সে আর ফিরে না আসতে পারে তার কথা [অর্থাৎ সেই শহীদের মর্যাদা] আলাদা।
-সহীহ, ইবনি মা-জাহ [১৭২৭], বুখারী। ইবনি উমার, আবু হুরাইরা, আবদুল্লাহ ইবনি আমর ও জাবির [রাদি.] হইতেও এই অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা ইবনি আব্বাস [রাদি.]-এর বর্ণিত হাদীসটিকে হাসান সহীহ্ গারীব বলেছেন। সুন্নত রোজা -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৭৫৮. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ এমন কোন দিন নেই যে দিনগুলোর [নফল] ইবাদাত আল্লাহ্ তাআলার নিকট যিলহাজ্জ মাসের দশ দিনের ইবাদাত হইতে বেশী প্রিয়। এই দশ দিনের প্রতিটি রোযা এক বছরের রোযার সমকক্ষ এবং এর প্রতিটি রাতের ইবাদাত কাদ্রের রাতের ইবাদাতের সমকক্ষ।
যঈফ, ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[১৭২৮],আবু ঈসা বলেন, এই হাদীসটি গারীব। শুধু উল্লেখিত সূত্রেই আমরা হাদীসটি জেনেছি। আমি মুহাম্মাদ আল-বুখারীকে এই হাদীস প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলে তিনিও এই সূত্র ব্যতীত অনুরূপ কিছু বলিতে পারেননি। তিনি বলেন, কাতাদা হইতে সাঈদ ইব্নুল মুসায়্যিব [রঃ]-এর সূত্রে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে উল্লিখিত হাদীসের কিছু অংশ মুরসাল হিসেবে বর্ণিত আছে। ইয়াহ্ইয়া ইব্নু সাঈদ [রঃ] নাহ্হাস ইবনি কাহ্ম-এর স্মরণশক্তির সমালোচনা করিয়াছেন।এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস
৫৩. অনুচ্ছেদঃ শাওয়াল মাসের ছয় দিন রোযা পালন করা
৭৫৯. আবু আইয়ূব আনসারী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে লোক রমযান মাসে রোযা পালন করলো, তারপর শাওয়াল মাসের ছয় দিন রোযা পালন করলো, সে লোক যেন সম্পূর্ণ বছরই রোযা পালন করলো।
-হাসান সহীহ, ইবনি মা-জাহ [১৭১৬], মুসলিম। জাবির, আবু হুরাইরা ও সাওবান [রাদি.] হইতেও এই অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা আবু আইয়ূব [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটিকে হাসান সহীহ্ বলেছেন। একদল বিশেষজ্ঞ আলিম এই হাদীসের ভিত্তিতে শাওয়াল মাসের ছয় দিন রোযা পালন করাকে মুস্তাহাব মনে করেন। ইবনিল মুবারাক বলেন, প্রতি মাসে তিন দিন রোযা পালনের মত এটিও মুস্তাহাব। এ রোযা রমযানের রোযার পরপরই পালনের কথা কোন কোন হাদীসে উল্লেখ আছে। তাই তিনি এই ছয়টি রোযা শাওয়াল মাসের শুরুর দিকে পালন করাকে বেশি পছন্দীয় মনে করিয়াছেন তিনি আরও বলেছেনঃ শাওয়াল মাসের ভিন্ন ভিন্ন দিনের রোযা পালন করাও জায়িয আছে। আবু ঈসা বলেন, বর্ণনাকারী আবদুল আযীয ইবনি মুহাম্মাদ এই হাদীসটি সাফওয়ান ইবনি সুলাইম ও সাদ ইবনি সাঈদের সূত্রে উমার ইবনি সাবিত হইতে আবু আইয়ূব [রাদি.]-এর সনদে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে বর্ণনা করিয়াছেন। শুবা [রাদি.] এই হাদীস ওয়ার্কা ইবনি উমার হইতে সাদ ইবনি সাঈদ [রঃ]-এর সূত্রে বর্ণনা করিয়াছেন। এই সাদ ইবনি সাঈদ হলেন ইয়াহ্ইয়া ইবনি সাঈদ আল-আনসারীর ভাই। একদল হাদীস বিশেষজ্ঞ তার স্মৃতিশক্তির সমালোচনা করিয়াছেন।হাসান বাসরী হইতে বর্ণিত আছে যে, তার নিকট শাওয়ালের ছয়টি রোযার উল্লেখ করা হলে তিনি বলিলেন, আল্লাহর শপথ তিনি পূর্ণ বৎসরের পরিবর্তে এই মাসের রোযার প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করিয়াছেন। সনদ সহীহ্, মাকতু। এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান সহীহ
৫৪. অনুচ্ছেদঃ প্রতি মাসে তিন দিন রোযা পালন করা
৭৬০. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] তিনটি বিষয়ে আমার নিকট হইতে প্রতিশ্রুতি নেন। আমি যেন বিত্র আদায়ের পূর্বে না ঘুমাই, প্রত্যেক মাসে তিন দিন রোযা আদায় করি এবং চাশ্তের নামাজ নিয়মিত আদায় করি।
-সহীহ্, ইরওয়া [৯৪৬], সহীহ আবু দাঊদ [১২৮৬], বুখারী, মুসলিম। সুন্নত রোজা -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৭৬১. আবু যার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাকে বলেছেনঃ হে আবু যার! তুমি প্রতি মাসে তিন দিন রোযা পালন করিতে চাইলে তের, চৌদ্দ ও পনের তারিখে তা পালন কর।
-হাসান সহীহ্, ইরওয়া [৯৪৭], মিশকাত তাহকীক ছানী [২০৫৭]আবু কাতাদা, আবদুল্লাহ ইবনি আমর, কুররা ইবনি ইয়াস আল-মুযানী, আবদুল্লাহ্ ইবনি মাসউদ, আবু আকরাব, ইবনি আব্বাস, আইশা, কাতাদা ইবনি মিলহান, উসমান ইবনি আবুল আস ও জারীর [রাদি.] হইতেও এই অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা আবু যার [রাদি.]-এর বর্ণিত হাদীসটিকে হাসান বলেছেন। কোন কোন হাদীসে বর্ণিত আছেঃ প্রতি মাসে যে লোক তিন দিন রোযা পালন করলো সে যেন সারা বছর রোযা পালন করলো। এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান সহীহ
৭৬২. আবু যার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ প্রতি মাসে যে লোক তিন দিন রোযা পালন করে তা যেন সারা বছরই রোযা পালনের সমান। আল্লাহ্ তাআলা এর সমর্থনে তার কিতাবে আয়াত অবতীর্ণ করেছেনঃ
مَنْ جَاءَ بِالْحَسَنَةِ فَلَهُ عَشْرُ أَمْثَالِهَا
“কোন লোক যদি একটি সাওয়াবের কাজ করে তাহলে তার প্রতিদান হচ্ছে এর দশ গুণ” [সূরাদি. আনআম- ১৬০]। সুতরাং এক দিন দশ দিনের সমান।
-সহীহ্, ইরওয়া আবু ঈসা এই হাদীসটিকে হাসান বলেছেন। শুবা এই হাদীসটি আবু শিম্র হইতে ও আবুত তাইয়্যাহ হইতে, তারা উভয়ে উসমান হইতে, তিনি আবু হুরাইরা হইতে, তিনি নাবী [সাঃআঃ] হইতে এই সূত্রে বর্ণনা করিয়াছেন। সুন্নত রোজা -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৭৬৩. মুআযাহ [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ
আমি আইশা [রাদি.]-কে বললাম, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] কি প্রতি মাসে তিন দিন রোযা রাখতেন? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ। আমি আবার বললাম, কোন্ কোন্ তারিখে তিনি এই রোযা রাখতেন? তিনি বলিলেন, তিনি যে কোন দিন এই রোযা রাখতেন, এই বিষয়ে তিনি কোন সংকোচ করিতেন না।
-সহীহ্, ইবনি মা-জাহ [১৭০৮], মুসলিম । আবু ঈসা বলেন, এই হাদীসটি হাসান সহীহ। বর্ণনাকারী ইয়াযীদ আর-রিশ্ক হলেন ইয়াযীদ আয-যুবাঈ এবং ইনিই ইয়াযীদ ইবনিল কাসিম। ইনি ছিলেন বণ্টনকারী। বসরাবাসীদের ভাষায় রিশ্ক অর্থ বণ্টনকারী।সুন্নত রোজা -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৫৫. অনুচ্ছেদঃ রোযা পালনের ফাযীলাত
৭৬৪. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমাদের প্রতিপালক বলেন, “প্রতিটি সৎ কাজের প্রতিদান হলো দশ গুণ হইতে সাত শত গুণ পর্যন্ত। কিন্তু রোযা শুধুমাত্র আমার জন্যই এবং এর প্রতিদান আমি নিজেই দিব।” রোযা জাহান্নাম হইতে [বাঁচার] ঢালস্বরূপ। আল্লাহ্ তাআলার নিকট রোযা পালনকারীর মুখের গন্ধ কন্তুরী ও মিশ্ক আম্বরের গন্ধের চেয়েও অধিক পছন্দনীয়। তোমাদের কোন রোযা পালনকারীর সাথে যদি কোন জাহিল মূৰ্খতা সুলভ আচরণ করে তবে সে যেন বলে, আমি রোযাদার।
-সহীহ, তালীকুর রাগীব [২/৫৭-৫৮], সহীহ আবু দাঊদ [২০৪৬] মুআয ইবনি জাবাল, সাহ্ল ইবনি সাদ, কাব ইবনি উজরা, সালামা ইবনি কাইসার ও বাশীর ইবনিল খাসাসিয়্যা [রাদি.] হইতেও এই অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। বাশীর [রাদি.]-এর নাম যাহ্ম ইবনি মাবাদ, খাসাসিয়্যা হলেন তাহাঁর মাতা। আবু ঈসা এই সূত্রে আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটিকে হাসান গারীব বলেছেন।সুন্নত রোজা -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৭৬৫. সাহ্ল ইবনি সাদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ “রাইয়্যান” নামে জান্নাতে একটি দরজা আছে। রোযা পালনকারীকে এই দরজা দিয়ে প্রবেশের জন্য ডাকা হইবে। যে সব লোক রোযা পালন করে তারা এই দরজা দিয়ে [জান্নাতে] প্রবেশ করিবে। আর তাতে যে লোক প্রবেশ করিবে সে আর কখনও পিপাসার্ত হইবে না।
-সহীহ, ইবনি মা-জাহ [১৬৪০], “পিপাসার্ত হইবে না” বাক্যাংশ ব্যতীত – বুখারী, মুসলিম আবু ঈসা এই হাদীসটিকে হাসান, সহীহ্ গারীব বলেছেন। সুন্নত রোজা -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৭৬৬. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ রোযা পালনকারীর জন্য দুটি আনন্দ আছে- একটি আনন্দ যখন সে ইফ্তার করে এবং আরেকটি আনন্দ যখন সে তার প্রতিপালকের সাথে সাক্ষাৎ করিবে।
-সহীহ, ইবনি মা-জাহ [১৬৩৮], মুসলিম। আবু ঈসা এ হাদীসটিকে হাসান সহীহ্ বলেছেন। সুন্নত রোজা -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৫৬. অনুচ্ছেদঃ সারা বছর রোযা পালন করা প্রসঙ্গে
৭৬৭. আবু কাতাদা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, প্রশ্ন করা হলো, হে আল্লাহর রাসূল! সে সব লোকের কাজগুলো কেমন যে সব লোক সারা বছর রোযা পালন করে? তিনি বললেনঃ তার রোযা পালনও হল না, ইফতারও হলো না।
-সহীহ্, ইরওয়া [৯৫২], মুসলিম। আবদুল্লাহ ইবনি আমর, আবদুল্লাহ ইবনি শিখ্খীর, ইমরান ইবনি হুসাইন ও আবু মূসা [রাদি.] হইতেও এই অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা আবু কাতাদা [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটিকে হাসান বলেছেন। সারা বছর রোযা পালন করাকে আলিমগণের একদল মাকরূহ্ মনে করেন। আরেক দল আলিম সারা বছর রোযা পালন করা জায়িয মনে করেন। তারা বলেন, ঈদুল ফিতর, ঈদুল আযহা ও আইয়্যামে তাশ্রীকের দিনও [কুরবানীর দিনের পরবর্তী তিন দিন] যদি কোন লোক রোযা পালন করে তবে সেটা হইবে সারা বছর রোযা [যা মাকরূহ্]। যেসব লোক এই দিনগুলোতে রোযা পালন করিবে না সে উপরোক্ত মাকরূহ-এর মধ্যে পড়বে না এবং সে সারা বছর রোযাদার হইবে না। একইরকম অভিমত ঈমাম মালিক ইবনি আনাস [রঃ] হইতেও বর্ণিত আছে। ঈমাম শাফি, আহ্মাদ ও ইসহাক [রঃ]-এর বক্তব্যও এটাই। তারা বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] ঈদুল ফিতর, ঈদুল আযহা, আইয়্যামে তাশ্রীক এই পাঁচ দিন রোযা পালন করিতে নিষেধ করিয়াছেন। সেই পাঁচটি দিন ছাড়া অন্য কোন দিনের রোযা ত্যাগ করা ওয়াজিব নয়। সুন্নত রোজা -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৫৭. অনুচ্ছেদঃ অব্যাহতভাবে রোযা পালন করা
৭৬৮. আবদুল্লাহ ইবনি শাকীক [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর রোযা পালন প্রসঙ্গে আইশা [রাদি.]-কে প্রশ্ন করলাম। তিনি বলিলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] রোযা পালন করেই যেতেন, এমনকি আমরা বলতাম, তিনি তো রোযা পালন করেই যাচ্ছেন। আবার রোযা পালন হইতে তিনি বিরত থাকতেন, এমনকি আমরা বলতাম, তিনি বুঝি আর রোযা পালন করবেন না। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] কখনও রমযান মাস ব্যতীত সম্পূর্ণ মাস রোযা পালন করেননি।
-সহীহ, ইবনি মা-জাহ [১৭১০], বুখারী, মুসলিম। আনাস ও ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতেও এই অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা আইশা [রাদি.] হইতে বর্ণিত এই হাদীসটিকে হাসান সহীহ্ বলেছেন। সুন্নত রোজা -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৭৬৯. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]–এর রোযা প্রসঙ্গে তাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, কোন মাসে তিনি রোযা পালন করিতে শুরু করলে মনে হত যে, তাহাঁর হয়তো আর রোযা ত্যাগের ইচ্ছা নেই। আবার যখন তিনি রোযা পালন করা ছেড়ে দিতেন তখন মনে হত তিনি হয়তো আর রোযা পালন করবেন না। তুমি যদি তাঁকে রাতে নামাজ রত অবস্থায় দেখিতে ইচ্ছা করিতে তবে সে অবস্থায়ই দেখিতে পেতে। আর তুমি যদি তাঁকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখিতে ইচ্ছা করিতে তবে সে অবস্থায়ই দেখিতে পেতে।
-সহীহ, বুখারী [১৯৭২], মুসলিম [৩/১৬২] নামাযের বাক্যাংশ বাদে সংক্ষিপ্তভাবে। আবু ঈসা এই হাদীসটিকে হাসান সহিহ বলেছেন। সুন্নত রোজা -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৭৭০. আবদুল্লাহ ইবনি আমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আমার ভাই দাঊদ [আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর রোযা হল সবচেয়ে উত্তম রোযা। তিনি একদিন রোযা পালন করিতেন এবং একদিন পালন করিতেন না। আর যুদ্ধের ময়দানে শত্রুর মুখোমুখী হলে তিনি পালাতেন না।
-সহীহ্, বুখারী, মুসলিম। আবু ঈসা এই হাদীসটিকে হাসান সহিহ বলেছেন। বর্ণনাকারী আবুল আব্বাস একজন মক্কার কবি ছিলেন এবং তিনি একজন অন্ধ ব্যক্তি। তার নাম সাইব ইবনি ফার্রূখ। কিছু বিশেষজ্ঞ আলিম বলেন, সবচেয়ে উত্তম [নফল] রোযা হচ্ছে সেই রোযা যা একদিন পরপর পালন করা হয়। বলা হয় যে, এই নিয়মে রোযা রাখা কঠিন। সুন্নত রোজা -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
Leave a Reply