নামাজে খুশু – নামাযে থাকা অবস্থায় সাপ, বিছা হত্যা করা

নামাজে খুশু – নামাযে থাকা অবস্থায় সাপ, বিছা হত্যা করা

নামাজে খুশু – নামাযে থাকা অবস্থায় সাপ, বিছা হত্যা করা >> সুনান তিরমিজি শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন

অধ্যায়ঃ ২, অনুচ্ছেদঃ (১৭১-১৭৫)=৫টি

১৭১. অনুচ্ছেদঃ নামাযে বিনয় হওয়া
১৭২. অনুচ্ছেদঃ নামাযের মধ্যে উভয় হাতের আঙ্গুলসমূহ পরস্পরের মধ্যে ঢোকানো মাকরূহ
১৭৩. অনুচ্ছেদঃ নামাযে দীর্ঘ কিয়াম করা [দাঁড়ানো]
১৭৪. অনুচ্ছেদঃ অধিক পরিমাণে রুকু-সাজদাহ্‌ করার [নামাজ আদায় করা] ফাযিলাত
১৭৫. অনুচ্ছেদঃ নামাযে থাকা অবস্থায় সাপ, বিছা হত্যা করা

১৭১. অনুচ্ছেদঃ নামাযে বিনয় হওয়া

৩৮৫. ফযল ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেনঃ রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ নামাজ দুই দুই রাকআত; প্রতি দুই রাকআত পর তাশাহ্‌হুদ পাঠ করিতে হইবে; নামাযী কে বিনয়ী হইতে হইবে, মিনতির সাথে প্রার্থনা করিতে হইবে; কপর্দকহীন হইতে হইবে। কোন কিছুকে ওয়াসীলা করে চাইতে হইবে। এ অবস্থায় তোমার প্রতিপালকের দরবারে নিজের দুহাত তুলবে, হাতের তালু তোমার চেহারার দিকে থাকিবে, তারপর বলবে, হে প্রভু, হে প্রতিপালক। যে ব্যক্তি এমনটি না করিবে তার নামাজ এরূপ এবং এরূপ হইবে।

যঈফ, ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[১৩২৫]।আবু ঈসা বলেনঃ ইবনিল মুবারাক ছাড়া অন্যান্য রাবীগণ হাদীসের শেষের অংশ এরূপ বর্ণনা করেছেনঃ যে ব্যক্তি এরূপ [বিনয়-নম্রতা অবলম্বন] করিল না তার নামাজ পূর্ণাঙ্গ হল না। আবু ঈসা বলেন, আমি মুহাম্মাদ ইবনি ইসমাঈল বুখারী কে বলিতে শুনিয়াছি, শুবা এ হাদীসটি আবদে রব্বিহি ইবনি সাঈদের সূত্রে বর্ণনা করিয়াছেন। কিন্তু তিনি কয়েকটি জায়াগায় ভুল করিয়াছেন। তিনি বলেছেন, আনাস ইবনি আবী আনাস হইতে প্রকৃতপক্ষে তা হইবে ইমরান ইবনি আবী আনাস, তিনি বলেছেন আব্দুল্লাহ ইবনিল হারিস হইতে প্রকৃতপক্ষে তা হইবে আব্দুল্লাহ ইবনিল নাফি হইতে তিনি রাবীয়া ইবনিল হারিস হইতে। শুবা বলেছেন আব্দুল্লাহ ইবনিল হারিস হইতে তিনি মুত্তালিব হইতে তিনি নাবী [সাঃআঃ] হইতে। প্রকৃতপক্ষে তা হইবে রাবীয়া ইবনিল হারিস ইবনি আব্দুল মুত্তালিব হইতে, তিনি ফাযল ইবনিল আব্বাস হইতে তিনি নাবী [সাঃআঃ] হইতে। মুহাম্মাদ [বুখারী] বলেছেন, শুবার বর্ণিত হাদীসের চেয়ে লাইসের বর্ণনাটি বেশি সহীহ। এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

১৭২. অনুচ্ছেদঃ নামাযের মধ্যে উভয় হাতের আঙ্গুলসমূহ পরস্পরের মধ্যে ঢোকানো মাকরূহ

৩৮৬. কাব ইবনি উযরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ যখন তোমাদের কেউ ভালভাবে ওযূ করে নামাজ আদায়ের নিয়্যাতে মসজিদের দিকে যেতে থাকে তখন সে যেন নিজের হাতের আঙ্গুলগুলো পরস্পরের মধ্যে প্রবেশ না করায়। কেননা সে তখন নামাযের মধ্যেই আছে।

সহিহ। ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[৯৭৬]।আবু ঈসা বলেনঃ কাব ইবনি উযরার হাদীসটি একাধিক সূত্রে ইবনি আজলান হইতে লাইসের হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত আছে। শারীক তাহাঁর সনদ পরস্পরায় এ হাদীসটি আবু হুরাইরার নিকট হইতে বর্ণনা করিয়াছেন। কিন্তু তাহাঁর বর্ণনাসূত্রটি সঠিকভাবে রক্ষিত হয়নি। নামাজে খুশু -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৭৩. অনুচ্ছেদঃ নামাযে দীর্ঘ কিয়াম করা [দাঁড়ানো]

৩৮৭. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, নাবী সাঃআঃকে প্রশ্ন করা হল, কোন্‌ ধরনের নামাজ উত্তম? তিনি বললেনঃ যে নামাযে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়ানো হয়।

সহিহ। ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[১৪২১], মুসলিম। এ অনুচ্ছেদে আবদুল্লাহ ইবনি হুবশী ও আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেনঃ জাবির ইবনি আব্দুল্লাহর হাদীসটি হাসান সহিহ। উল্লেখিত হাদীসটি জাবিরের নিকট হইতে বিভিন্ন সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। নামাজে খুশু -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৭৪. অনুচ্ছেদঃ অধিক পরিমাণে রুকু-সাজদাহ্‌ করার [নামাজ আদায় করা] ফাযিলাত

৩৮৮. মাদান ইবনি আবু তালহা আল-ইয়ামারী [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর আযাদকৃত দাস সাওবান [রাদি.]-এর সাথে দেখা করলাম। আমি তাঁকে বললাম, আমাকে এমন একটি কাজের কথা বলে দিন যার বিনিময়ে আল্লাহ তাআলা আমাকে উপকৃত করবেন এবং জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। আমার প্রশ্নে তিনি কিছুক্ষণ চুপ থাকলেন। তারপর তিনি আমার দিকে তাকিয়ে বলিলেন, তুমি অবশ্যই বেশি বেশি সাজদাহ্‌ করিবে। কেননা আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছিঃ যে কোন বান্দাহ আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে তাহাঁর জন্য একটি সাজদাহ্‌ করে, আল্লাহ তাআলা তার একটি মর্যাদা বাড়িয়ে দেন এবং তার একটি গুনাহ ক্ষমা করে দেন।

সহিহ। ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[১৪২৩], মুসলিম। নামাজে খুশু -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৮৯. মাদান হইতে বর্ণীতঃ

অতঃপর আমি আবু দারদা [রাদি.]-এর সাথে দেখা করে তাঁকেও সাওবানের নিকট যে প্রশ্ন করেছিলাম তাই করলাম। তিনি বলিলেন, তুমি অবশ্যই সাজদাহ্‌ করিতে থাক। কেননা আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছিঃ যে কোন ব্যক্তিই আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে তাঁকে একটি সাজদাহ্‌ করে, আল্লাহ তাআলা তার মর্যাদা বাড়িয়ে দেন এবং তার একটি গুনাহ ক্ষমা করে দেন।

সহিহ। দেখুন পূর্বের হাদীস।মাদান ইবনি ইয়ামারীকে ইবনি আবী তালহাও বলা হয়। এ অনুচ্ছেদে আবু হুরাইরা, আবু উমামা ও আবু ফাতিমা [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেনঃ অধিক রুকু সাজদাহ্‌ সম্পর্কিত সাওবান ও আবু দারদা [রাদি.]-এর হাদীস দুটো হাসান সহিহ। হাদীসে বর্ণিত বিষয়ে বিদ্বানগণের মতের অমিল রয়েছে। একদল আলিম বলেছেন, নামাযে দীর্ঘ কিয়াম করা বেশি রুকু সাজদাহ্‌ করা হইতেও উত্তম। অপর দল বলেছেন, দীর্ঘ কিয়ামের তুলনায় বেশি রুকু-সাজদাহ্‌ করা উত্তম। ঈমাম আহমাদ বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর হাদীস দুটি হইতে উভয় মতেরই সমর্থন পাওয়া যায়, তাতে কোন সমাধান নাই। ইসহাক বলেন, দিনের বেলা বেশি রুকু-সাজদাহ্‌ এবং রাতের বেলা দীর্ঘ কিয়াম করা উত্তম। হ্যাঁ যদি কোন ব্যক্তি রাতের কিয়ামের জন্য সময় নির্দিষ্ট করে নেয় তবে বেশি রুকূ সাজদাহ্‌ করাই উত্তম। কেননা সে তার নির্দিষ্ট সময়ও পূর্ণ করিবে আর বেশি রুকূ সাজদাহ্‌রও সাওয়াব পাবে এবং কল্যানের মধ্যে থাকিবে। আবু ঈসা বলেনঃ ঈমাম ইসহাকের এ মতের সমর্থনে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর আমল বিদ্যমান রয়েছে। তিনি রাতে দীর্ঘ কিয়াম করিতেন এবং দিনে বেশি রুকু-সাজদাহ্‌ করিতেন [অনেক রাকআত নামাজ আদায় করিতেন]। তিনি দিনের নামাযে রাতের নামাযের মতো দীর্ঘ কিয়াম করিতেন না। নামাজে খুশু -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৭৫. অনুচ্ছেদঃ নামাযে থাকা অবস্থায় সাপ, বিছা হত্যা করা

৩৯০. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] নামাযে থাকা অবস্থায়ও দুটি কালো প্রাণী অর্থাৎ সাপ এবং বিছা হত্যা করার আদেশ দিয়েছেন।

সহিহ। ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[১২৪৫]। এ অনুচ্ছেদে ইবনি আব্বাস ও আবু রাফি [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেনঃ আবু হুরাইরার হাদীসটি হাসান সহিহ। নাবী [সাঃআঃ]-এর একদল সাহাবা ও অন্যান্যরা এ হাদীস অনুসারে আমল করিয়াছেন। ঈমাম আহমাদ এবং ইসহাকও একইরকম কথা বলেছেন। কিছু বিদ্বান নামাযে থাকা অবস্থায় সাপ-বিছা মারা মাকরূহ বলেছেন। ইবরাহীম বলেছেন, নামাযের মধ্যে একটা ব্যস্ততা রয়েছে। [তিরমিযী বলেন] প্রথম কথাটাই বেশি সহিহ। নামাজে খুশু -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস


by

Comments

Leave a Reply