ইমামের দায়িত্ব ও কর্তব্য , নামাযের মধ্যে হাই তোলা মাকরূহ

ইমামের দায়িত্ব ও কর্তব্য , নামাযের মধ্যে হাই তোলা মাকরূহ

ইমামের দায়িত্ব ও কর্তব্য , নামাযের মধ্যে হাই তোলা মাকরূহ >> সুনান তিরমিজি শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন

অধ্যায়ঃ ২, অনুচ্ছেদঃ (১৫১-১৬১)=১১টি

১৫১. অনুচ্ছেদঃ তন্দ্রা অবস্থায় নামাজ আদায় করা উচিত নয়
১৫২. অনুচ্ছেদঃ কোন সম্প্রদায়ের সাথে দেখা-সাক্ষাত করিতে গিয়ে তাহাদের ঈমাম হওয়া উচিত নয়
১৫৩. অনুচ্ছেদঃ ইমামের কেবল নিজের জন্য দুআ করা মাকরূহ
১৫৪. অনুচ্ছেদঃ লোকদের অসন্তোষ সত্ত্বেও তাহাদের ঈমামতি করা
১৫৫. অনুচ্ছেদঃ ঈমাম যখন বসে নামাজ আদায় করে তখন তোমরাও বসে নামাজ আদায় কর
১৫৬. অনুচ্ছেদঃ একই বিষয় সম্পর্কে
১৫৭. অনুচ্ছেদঃ ঈমাম যদি দুরাকআত আদায় করে ভুলে দাঁড়িয়ে যায়
১৫৮. অনুচ্ছেদঃ প্রথম দুই রাকআতের পর বসার পরিমাণ
১৫৯. অনুচ্ছেদঃ নামাযের মধ্যে ইশারা করা
১৬০. অনুচ্ছেদঃ পুরুষদের সুবহানাল্লাহ বলা ও নারীদের হাততালি দেয়া
১৬১. অনুচ্ছেদঃ নামাযের মধ্যে হাই তোলা মাকরূহ

১৫১. অনুচ্ছেদঃ তন্দ্রা অবস্থায় নামাজ আদায় করা উচিত নয়

৩৫৫. আয়িশাহ্‌ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ নামাজরত অবস্থায় তোমাদের কারও ঘুম আসলে সে যেন প্রথমে ঘুমিয়ে নেয়। তাতে তার ঘুমের আবেশ কেটে যাবে। কেননা সে যদি তন্দ্রা অবস্থায় নামাজ আদায় করে তবে এরূপ হওয়া মোটেই অসম্ভব নয় যে, সে গুনাহের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করিতে গিয়ে নিজেকে গালি দিবে।

সহিহ। ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[১৩৭০], বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ। এ অনুচ্ছেদে আনাস ও আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেনঃ আয়েশা হাদীসটি হাসান সহিহ। এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৫২. অনুচ্ছেদঃ কোন সম্প্রদায়ের সাথে দেখা-সাক্ষাত করিতে গিয়ে তাহাদের ঈমাম হওয়া উচিত নয়

৩৫৬. আবু আতীয়া [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ

তাহাদের মধ্যকার এক ব্যক্তি বলিল, মালিক ইবনি হুয়াইরিস [রাদি.] আমাদের নামাযের জায়গায় [মসজিদে] এসে আমদের সাথে আলাপ-আলোচনা করিতেন। একদিন নামাযের ওয়াক্ত হয়ে গেল। আমরা তাঁকে বললাম সামনে যান, [ঈমামতি করুন]। তিনি বলিলেন, তোমাদের কেউ সামনে যাক। আমি সামনে না যাওয়ার কারন তোমাদের বলব। আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছিঃ কোন ব্যক্তি কোন কাওমের সাথে করিতে গিয়ে সে যেন ঈমামতি না করে, বরং তাহাদের মধ্যেরই কেউ যেন ঈমামতি করে।

সহিহ। সহিহ আবু দাঊদ হাদীস নং-[৬০৯], মালিকের ঘটনা উল্লেখ ব্যতীত। আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান সহিহ। নাবী [সাঃআঃ]-এর বেশিরভাগ সাহাবা ও অন্যান্যরা এ হাদীস অনুযায়ী আমল করিয়াছেন। তাঁরা বলেছেন, ঈমামতি করার ব্যাপারে বাড়ীওয়ালাই সাক্ষাতপ্রার্থীর চেয়ে বেশী হকদার। কিছু মনীষী বলেছেন, বাড়ির মালিকের অনুমতি সাপেক্ষে মেহমানের ঈমামতি হওয়াতে কোন অপরাধ নেই। ঈমাম ইসহাক কঠোরতার সাথে বলেছেন, বাড়িওয়ালা অনুমতি দিলেও মেহমানের ঈমামতি করা উচিত নয়। ঠিক তেমনি ভাবে মসজিদেও ঈমামতি করিবে না, বরং তাহাদেরই কেউ ঈমামতি করা উচিত। ইমামের দায়িত্ব ও কর্তব্য -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৫৩. অনুচ্ছেদঃ ইমামের কেবল নিজের জন্য দুআ করা মাকরূহ

৩৫৭. সাওবান [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ বাড়ির মালিকের অনুমতি ছাড়া কোন ব্যক্তির পক্ষেই তার ঘরের মধ্যে তাকানো জায়িয নয়। যদি সে তাকায়, তবে সে যেন বিনা অনুমতিতেই তার ঘরে ঢুকলো। কোন ব্যক্তির পক্ষেই এটা শোভনীয় নয় যে, সে লোকদের ঈমামতি করে এবং তাহাদেরকে বাদ দিয়ে শুধু নিজের জন্য দুআ করে। যদি সে এমনটি করে তবে সে যেন শঠতা [বিশ্বাসভংগ] করিল। প্রাকৃতিক প্রয়োজনের বেগ নিয়েও কেউ যেন নামাযে না দাঁড়ায়।

-প্রাকৃতিক প্রয়োজনের বেগ নিয়ে কেউ যেন নামাযে না দাঁড়ায়। হাদীসের এই অংশটুকু বাদে হাদীসটি যঈফ। যঈফ আবু দাঊদ–[১১-১২]। হাদীসের শেষ অংশ “প্রাকৃতিক প্রয়োজনের বেগ নিয়েও কেউ যেন নামাযে না দাঁড়ায়।” – এই বাক্যটি সহিহ। ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[৬১৭] এ অনুচ্ছেদে আবু হুরাইরা ও আবু উমামা [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেনঃ সাওবানের হাদীসটি হাসান। উল্লেখিত হাদীসটি আলাদা আলাদাভাবে আবু উমামা ও আবু হুরাইরা [রাদি.]-ও রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট হইতে বর্ণনা করিয়াছেন। তবে সাওবানের বর্ণনাসূত্রটি খুব বেশি মজবুত এবং বিখ্যাত। ইমামের দায়িত্ব ও কর্তব্য -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

১৫৪. অনুচ্ছেদঃ লোকদের অসন্তোষ সত্ত্বেও তাহাদের ঈমামতি করা

৩৫৮. হাসান [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি আনাস [রাদি.]-কে বলিতে শুনিয়াছি, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] তিন ব্যক্তিকে অভিশাপ দিয়েছেন। তারা হলঃ যে ব্যক্তি মুক্তাদীদের অপছন্দ সত্ত্বেও তাহাদের ঈমামতি করে; যে নারী স্বামীর বিরাগ নিয়ে রাত কাটায় এবং যে ব্যক্তি হাইয়্যা আলাল ফালাহ শুনেও তাতে সাড়া দেয় না [জামাআতে উপস্থিত হয় না]।

সনদ খুবই দুর্বল। এ অনুচ্ছেদে ইবনি আব্বাস, তালহা, আবদুল্লাহ ইবনি আমর ও আবু উমামা [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেনঃ আনাসের হাদীসটি সহীহ নয়। কেননা এটি হাসানের সূত্রে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট হইতে মুরসাল হিসাবেও বর্ণিত হয়েছে। তাছাড়া ঈমাম আহমাদ এ হাদীসের অধঃস্তন রাবী মুহাম্মাদ ইবনিল কাসিমের সমালোচনা করিয়াছেন এবং বলেছেন, তিনি হাদীস শাস্ত্রে যঈফ এবং তাহাঁর স্মরণ শক্তি মোটেই ধারালো নয়। একদল বিশেষজ্ঞ বলেছেন, লোকেরা যদি ঈমামকে খারাপ জানে তবে তাহাদের ঈমামতি করা তার জন্য মাকরূহ। কিন্তু ঈমাম যদি যালিম না হয় তবে যারা তাকে খারাপ জানে তারা গুনাহগার হইবে। এ প্রসঙ্গে ঈমাম আহমাদ ও ইসহাক বলেছেন, যদি এক, দুই অথবা তিনজন লোক তাকে খারাপ জানে তবে তার ঈমামতি করাতে কোন অপরাধ নেই। হ্যাঁ যদি বেশীর ভাগ মুক্তাদী তাকে খারাপ জানে তবে তাহাদের ঈমামতি করা তাহাঁর জন্য শ্রেয় হইবে না। ইমামের দায়িত্ব ও কর্তব্য -এই হাদীসটির তাহকিকঃ খুবই দুর্বল

৩৫৯. আমর ইবনিল হারিস ইবনি মুস্তালিক [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, কথিত আছে, দুই ব্যক্তির উপর সবচেয়ে ভয়াবহ শাস্তি হবেঃ যে নারী তার স্বামীর অবাধ্যাচরণ করে এবং কোন গোত্রের ঈমাম যাকে তারা অপছন্দ করে।

সনদ সহিহ।হান্নাদ বলেন, জারীর বলেন যে, মানসূর বলেছেন, আমরা ঈমাম প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলাম। আমাদেরকে বলা হল, এটা যালিম ঈমাম সম্পর্কে বলা হয়েছে। যে ঈমাম সুন্নাত [ইসলামী বিধান] কায়িম করে, তাকে অপছন্দকারী গুনাহগার বলে গণ্য হইবে। ইমামের দায়িত্ব ও কর্তব্য -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৬০. আবু উমামা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তিন ব্যক্তির নামাজ তাহাদের কান ডিঙ্গায় না [কবূল হয় না]। পলায়নকারী দাস যে পর্যন্ত তার মালিকের নিকটে ফিরে না আসে; যে মহিলা তার স্বামীর বিরাগ নিয়ে রাত কাটায় এবং যে ঈমামকে তার সম্প্রদায়ের লোকেরা পছন্দ করে না।

হাসান। মিশকাত–[১১২২]। আবু ঈসা বলেনঃ এ সূত্রে হাদীসটি হাসান গারীব। আবু গালিবের নাম হাযাওয়ার। ইমামের দায়িত্ব ও কর্তব্য -এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান হাদীস

১৫৫. অনুচ্ছেদঃ ঈমাম যখন বসে নামাজ আদায় করে তখন তোমরাও বসে নামাজ আদায় কর

৩৬১. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, কোন এক সময়ে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] ঘোড়ার পিঠ হইতে পড়ে গিয়ে আহত হলেন। তিনি বসে বসে আমাদের নামাজ আদায় করালেন, আমরাও তাহাঁর সাথে বসে বসে নামাজ আদায় করলাম। নামাজ হইতে ফিরে তিনি বললেনঃ ঈমাম এজন্যই নিযুক্ত করা হয় যাতে তার অনুসরণ করা হয়। যখন সে আল্লাহু আকবার বলবে তখন তোমরাও তাকবীর বলবে, যখন সে রুকূতে যাবে তোমরাও রুকূতে যাবে; যখন সে মাথা তুলবে তোমরাও মাথা তুলবে; যখন সে

سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ

সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ বলে তোমরা তখন

رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ

রাব্বানা ওয়া লাকাল হামদ বল; যখন তিনি সাজদাহ্‌তে যান তোমরাও সিজদায় যাও; যখন তিনি বসে নামাজ আদায় করেন তোমরাও সবাই বসে নামাজ আদায় কর।

সহীহ। ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[১২৩৮], বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ। এ অনুচ্ছেদে আয়িশাহ্‌, আবু হুরাইরা, জাবির, ইবনি উমার ও মুআবিয়া [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেনঃ আনাসের হাদীসটি হাসান সহিহ। নাবী [সাঃআঃ]-এর কিছু সাহাবী এ হাদীস অনুযায়ী আমল করিয়াছেন। তাহাদের মধ্যে জাবির ইবনি আবদুল্লাহ, উসাইদ ইবনি হুযাইর, আবু হুরাইরা [রাদি.] ও অন্যান্যরা রয়েছেন। ঈমাম আহমাদ ও ইসহাক একই রকম কথা বলেছেন। অপর একদল বিদ্বান বলেছেন, ঈমাম বসে নামাজ আদায় করলেও মুক্তাদীগণ দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করিবে। যদি তারা বসে নামাজ আদায় করে তবে তাহাদের নামাজ হইবে না। ঈমাম সুফিয়ান সাওরী, মালিক ইবনি আনাস, ইবনিল মুবারাক ও শাফিঈ একথা বলেছেন। ইমামের দায়িত্ব ও কর্তব্য -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৫৬. অনুচ্ছেদঃ একই বিষয় সম্পর্কে

৩৬২. আয়িশাহ্‌ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] যে রোগে অসুস্থ হয়ে মারা গেলেন ঐ রোগে তিনি আবু বাকার [রাদি.]–এর পিছনে বসে বসে নামাজ আদায় করিয়াছেন।

সহিহ। ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[১২৩২], বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ। আবু ঈসা বলেনঃ আয়েশা হাদীসটি হাসান, সহীহ্‌ গারীব।আয়িশাহ্‌ [রাদি.] হইতে আরো বর্ণিত আছে, নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ “ঈমাম যখন বসে নামাজ আদায় করে, তখন তোমরাও বসে নামাজ আদায় কর।”আয়িশাহ্‌ [রাদি.] হইতে আরো বর্ণিত আছে, “নাবী [সাঃআঃ] রোগাক্রান্ত অবস্থায় মসজিদে আসলেন। আবু বাকার [রাদি.] তখন লোকদের নামাজ পড়াচ্ছিলেন। তিনি আবু বাকারের পাশে বসে নামাজ আদায় করিলেন। লোকেরা আবু বাকারের অনুসরণে নামাজ আদায় করিলেন” আর আবু বাকার [রাদি.] রাসূলের অনুসরণ করলেনঃ আয়িশাহ্‌ [রাদি.] হইতে আরো বর্ণিত আছে, নাবী [সাঃআঃ] আবু বাকারের পিছনে বসে বসে নামাজ আদায় করিয়াছেন। একইভাবে আনাস [রাদি.] হইতেও বর্ণিত আছে, নাবী [সাঃআঃ] আবু বাকার [রাদি.]-এর পিছনে বসে বসে নামাজ আদায় করিয়াছেন। ইমামের দায়িত্ব ও কর্তব্য -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৬৩. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] রোগাক্রান্ত অবস্থায় এক কাপড় পরে আবু বাকার [রাদি.]-এর পিছনে বসে বসে নামাজ আদায় করিয়াছেন।

সহীহ। তালীকাত হাস্‌সান-[৩/২৮৩/২১২২]। আবু ঈসা বলেনঃ হাদীসটি হাসান সহিহ। অনুরূপভাবে ইয়াহইয়া ইবনি আইয়ূব বর্ণনা করিয়াছেন হুমাইদ হইতে, তিনি সাবিত হইতে তিনি আনাস হইতে। আরো কয়েকটি সুত্রে এ হাদীসটি আনাস [রাদি.]-এর নিকট হইতে বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু সেসব বর্ণনায় সাবিতের নাম উল্লেখ করা হয়নি। যেসব বর্ণনাকারী সাবিতের মাধ্যমে বর্ণনা করিয়াছেন, তাহাদের সুত্রটিই সবচাইতে সহিহ। ইমামের দায়িত্ব ও কর্তব্য -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৫৭. অনুচ্ছেদঃ ঈমাম যদি দুরাকআত আদায় করে ভুলে দাঁড়িয়ে যায়

৩৬৪. শাবী [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, একদা মুগীরা ইবনি শুবা [রাদি.] আমাদের নামাজ আদায় করালেন। তিনি দ্বিতীয় রাকআতে [ভুলে] দাঁড়িয়ে গেলেন। মুক্তাদীগণ তাঁকে শুনিয়ে সুবহানাল্লাহ বলিল। তিনিও তাহাদের সাথে সুবহানাল্লাহ বলিলেন। নামাজ শেষ করে তিনি সালাম ফিরালেন তারপর তিনি বসা অবস্থায় সাহু [ভুলের] সাজদাহ্‌ করিলেন। অতঃপর তাহাদেরকে বলিলেন, [নামাযে ভুল হওয়ায়] তিনি [মুগীরা] যেরূপ করিলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাদেরকে নিয়ে ঠিক এরূপই করিয়াছেন।

সহিহ। ইবনি মাজাহ–[১২০৮]। এ অনুচ্ছেদে উকবাহ্‌ ইবনি আমির, সাদ ও আবদুল্লাহ ইবনি বুহাইনা [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেনঃ মুগীরা [রাদি.]–এর হাদীসটি আরো কয়েকটি সূত্রে বর্ণনা হয়েছে। কিছু বিশেষজ্ঞ আবদুল্লাহ ইবনি আবী লাইলার স্মরণশক্তির সমালোচনা করিয়াছেন। ঈমাম আহমাদ বলেছেন, ইবনি আবী লাইলার হাদীস দলীল হিসাবে গ্রহণ করা যায় না। মুহাম্মাদ ইবনি ইসমাঈল [বুখারী] বলেছেন, ইবনি আবী লাইলা একজন সত্যবাদী লোক। কিন্তু আমি তাহাঁর নিকট হইতে হাদীস বর্ণনা করি না। কেননা তিনি সহীহ্‌ এবং যঈফ হাদীসের মধ্যে কোন ভেদাভেদ করেন না। এ ধরনের যে কোন ব্যক্তির নিকট হইতে আমি হাদীস বর্ণনা করি না। সুফিয়ান সাওরীও তাহাঁর সনদ পরম্পরায় মুগীরার হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন। কিন্তু এ সুত্রের একজন রাবী জাবির আল-জুফীকে কিছু হাদীস বিশারদ জঈফ বলেছেন। ইয়াহ্‌ইয়া ইবনি সাঈদ ও আবদুর রহমান ইবনি মাহদী তাকে বাদ দিয়েছেন । আলিমগণ বলেছেন, যদি কোন ব্যক্তি [ভুলে] দ্বিতীয় রাকআতে না বসেই দাঁড়িয়ে যায় তবে সে বাকী নামাজ আদায় করিতে থাকিবে এবং পরে দুটো সাজদাহ্‌ করে নিবে। একদল বলেছেন, সালাম ফিরানোর আগে সাজদাহ্‌ করিবে। অন্য দল বলেছেন, সালাম ফিরানোর পর সাজদাহ্‌ করিবে। যারা সালাম ফিরানোর আগে সাজদাহ্‌ করার মত দিয়েছেন তাহাদের হাদীস বেশি সহিহ। তাহাদের পক্ষের হাদীসটি যুহরী ও ইয়াহ্‌ইয়া ইবনি সাঈদ আল-আনসারী-আবদুর রহমানের সূত্রে, তিনি আবদুল্লাহ ইবনি বুহাইনা [রাদি.]-এর সূত্রে বর্ণনা করিয়াছেন। ইমামের দায়িত্ব ও কর্তব্য -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৬৫. যিয়াদ ইবনি ইলাক্বা [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, একদা মুগীরা ইবনি শুবা [রাদি.] আমাদের নামাজ আদায় করালেন। তিনি দুই রাকআত আদায় করে না বসে দাঁড়িয়ে গেলেন। তাহাঁর পিছনের লোকেরা তাঁকে শুনিয়ে সুবহানাল্লাহ বলিল। তিনি তাহাদেরকে ইশারায় বলিলেন, দাঁড়িয়ে যাও। নামাজ শেষ করে তিনি সালাম ফিরালেন, তারপর দুটি ভুলের সাজদাহ্‌ করিলেন এবং আবার সালাম ফিরালেন। তিনি বলিলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এমনটিই করিয়াছেন।

সহীহ। দেখুন পূর্বের হাদীস। আবু ঈসা বলেনঃ হাদীসটি হাসান সহিহ। আরো কয়েকটি সূত্রে এ হাদীসটি মুগীরা ইবনি শুবা হইতে বর্ণিত হয়েছে। ইমামের দায়িত্ব ও কর্তব্য -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৫৮. অনুচ্ছেদঃ প্রথম দুই রাকআতের পর বসার পরিমাণ

৩৬৬. আবদুল্লাহ ইবনি মাসউদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] যখন প্রথম দুই রাকআত আদায় করার পর বসতেন, তখন মনে হত যেন গরম পাথরের উপর বসেছেন [অল্প সময় বসতেন]। শুবা বলেন, সাদ কিছু বলে ঠোঁট নাড়ছিলেন {অর্থাৎ রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] কিছু পাঠ করিতেন}। আমি তখন বললাম, তারপর তিনি উঠে যেতেন? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ তিনি তারপর উঠে যেতেন।

যঈফ, মিশকাত [৯১৫], যঈফ আবু দাঊদ [১৭৭] আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান। কিন্তু আবু উবায়দাহ তার পিতার নিকট হাদীস শুনেন নাই। আলিমগণ এ হাদীস অনুযায়ী আমল করিয়াছেন। তাঁরা এই পদ্ধতি অনুসরণ করিয়াছেন, কোন লোক প্রথম দুই রাকআতের পরের বৈঠক যেন লম্বা না করে এবং তাশাহ্‌হুদের পর অন্য কিছু না পড়ে। তাঁরা আরো বলেছেন, তাশাহ্‌হুদের পর বেশী কিছু পড়লে দুটি সাহু সিজদা করা ওয়াজিব হইবে। শাবী ও অন্যান্যরা এমনই বলেছেন। এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

১৫৯. অনুচ্ছেদঃ নামাযের মধ্যে ইশারা করা

৩৬৭. সুহাইব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি একবার রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট দিয়ে যাচ্ছিলাম। তিনি তখন নামাযে ছিলেন। আমি তাকে সালাম করলাম। তিনি ইশারায় আমার সালামের জবাব দিলেন।

সহীহ। সহীহ আবু দাউদ-[৮৫৮]। ইবনি উমর [রাদি.] বলেন, আমি এটাই জানি যে, তিনি [সুহাইব] বলেছেন, তিনি আঙ্গুল দিয়ে ইঙ্গিত করিয়াছেন।এ অনুচ্ছেদে বিলাল, আবু হুরাইরা, আনাস ও আয়িশাহ্‌ [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে। আমরা এ হাদীসটি বুকাইরের সূত্রে লাইছ হইতে জেনেছি। এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৬৮. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, বিলালকে প্রশ্ন করলাম, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] যখন নামাযে থাকতেন তখন তাকে সাহাবাগণ সালাম দিলে তিনি কিভাবে জবাব দিতেন? তিনি বলেন, তিনি হাত দিয়ে ইশারা করিতেন।

সহীহ। ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[১০১৭]। এ হাদীসটি হাসান সহীহ। যাইদ ইবনি আসলাম ইবনি উমার হইতে বর্ণনা করিয়াছেন। তিনি বলেছেনঃ “আমি বিলালকে প্রশ্ন করলাম, লোকেরা যখন আমর ইবনি আওফ গোত্রের মসজিদে রসুলুল্লাহ সাঃআঃকে সালাম করত তখন তিনি কিভাবে তাহাদের সালামের জবাব দিতেন? তিনি বলিলেন, তিনি ইশারায় জবাব দিতেন।” এ দুটি হাদীসই আমার নিকট সহীহ। কেননা সুহাইবের হাদীসের ঘটনা বিলালের হাদীসের ঘটনা হইতে ভিন্ন। যদিও ইবনি উমর [রাদি.] উভয়ের সূত্রে বর্ণনা করিয়াছেন। হইতে পারে তিনি দুজনের নিকটই শুনেছেন। এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৬০. অনুচ্ছেদঃ পুরুষদের সুবহানাল্লাহ বলা ও নারীদের হাততালি দেয়া

৩৬৯. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেনঃ [ঈমাম যখন নামাযে ভুল করে তাকে সতর্ক করার জন্য] পুরুষ মুক্তাদীগণ সুবহানাল্লাহ বলবে এবং স্ত্রীলোকেরা হাততালি দিবে।

সহীহ। ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[১০৩৪-১০৩৬], বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ। এ অনুচ্ছেদে আলী, সাহল ইবনি সাদ, জাবির, আবু সাঈদ ও ইবনি উমার [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে। আলী [রাদি.] বলেন, আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট সম্মতি চাইলে তিনি নামাযের মধ্যে থাকলে সুবহানাল্লাহ বলিতেন। আবু ঈসা বলেনঃ আবু হুরাইরা [রাদি.]র হাদীসটি হাসান সহীহ। আলিমগণ এ হাদীস অনুযায়ী আমল করেন। ঈমাম আহমাদ এবং ইসহাকও একই রকম কথা বলেছেন। এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৬১. অনুচ্ছেদঃ নামাযের মধ্যে হাই তোলা মাকরূহ

৩৭০. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেনঃ নামাযের মধ্যে হাই তোলা শাইতানের তরফ হইতে হয়ে থাকে। তোমাদের কারো হাই আসলে সে যেন তা ফিরাতে যথাসাধ্য চেষ্টা করে।

সহীহ। যঈফা-[২৪২০], মুসলিম। এ অনুচ্ছেদে আবু সাঈদ আল-খুদরী এবং আদী ইবনি সাবিতের দাদা হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেনঃ আবু হুরাইরা [রাদি.]র হাদীসটি হাসান সহীহ। আলিমদের একটি দল নামাযের মধ্যে হাই তোলা মাকরূহ মনে করেন। ইবরাহীম নাখঈ বলেন, আমি কাশি দিয়ে হাই তোলা নিবারণ করি। এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস


by

Comments

Leave a Reply