মিসওয়াক পেশাব বায়ু নির্গত ও ঘুম বিষয়ক ওজুর হাদিস

মিসওয়াক পেশাব বায়ু নির্গত ও ঘুম বিষয়ক ওজুর হাদিস

মিসওয়াক পেশাব বায়ু নির্গত ও ঘুম বিষয়ক ওজুর হাদিস >> সুনান তিরমিজি শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন

অধ্যায়ঃ ১, অনুচ্ছেদঃ (১৮-৬৬)=৪৯টি

১৮. অনুচ্ছেদঃ মিসওয়াক করা বা দাঁত মাজা
১৯. অনুচ্ছেদঃ তোমাদের কেউ ঘুম হতে জেগে হাত না ধোয়া পযর্ন্ত যেন তা পানির পাত্রে না ডুবায়
২০. অনুচ্ছেদঃ ওযূর শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা
২১. অনুচ্ছেদঃ কুলি করা ও নাকে পানি দেওয়া
২২. অনুচ্ছেদঃ এক আঁজলা পানি দিয়ে কুলি করা নাক পরিষ্কার করা
২৩. অনুচ্ছেদঃ দাড়ি খিলাল করা
২৪. অনুচ্ছেদঃ মাথা মাসিহ করার নিয়মঃ সামনের দিক হতে শুরু করে পিছনের দিকে নিতে হইবে
২৫. অনুচ্ছেদঃ মাথার পেছন দিক হতে সামনের দিকে মাসিহ করা
২৬. অনুচ্ছেদঃ একবার মাথা মাসিহ করা
২৭. অনুচ্ছেদঃ মাথা মাসিহ করার জন্য পৃথকভাবে পানি নেয়া
২৮. অনুচ্ছেদঃ কানের ভেতরে ও বাইরে মাসিহ করা
২৯. অনুচ্ছেদঃ দুই কান মাথার অন্তর্ভূক্ত
৩০. অনুচ্ছেদঃ আঙ্গুল খিলাল করা
৩১. অনুচ্ছেদঃ পায়ের গোড়ালি ধোয়ার ব্যাপারে যারা সতর্কতা অবলম্বন করে না তাহাদেরকে আগুনের ভীতি প্রদর্শন করা সম্পর্কে
৩২. অনুচ্ছেদঃ ওযূর সময় প্রত্যেক অংশ একবার করে ধোয়া
৩৩. অনুচ্ছেদঃ ওযূর সময় প্রত্যেক অঙ্গ দুইবার করে ধোয়া
৩৪. অনুচ্ছেদঃ ওযূর সময় প্রত্যেক অঙ্গ তিনবার করে ধোয়া
৩৫. অনুচ্ছেদঃ ওযূর অঙ্গগুলো এক, দুই অথবা তিনবার ধোয়া সম্পর্কে
৩৬. অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি কোন অঙ্গ দুবার এবং কোন অঙ্গ তিনবার ধোয়
৩৭. অনুচ্ছেদঃ নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওযূ কেমন ছিল
৩৮. অনুচ্ছেদঃ ওযূর শেষে পরিধানের কাপড়ে পানি ছিটানো
৩৯. অনুচ্ছেদঃ সুন্দরভাবে ওযূ করা
৪০. অনুচ্ছেদঃ ওযূর পর রুমাল ব্যবহার করা
৪১. অনুচ্ছেদঃ ওযূর পর যা বলিতে হইবে
৪২. অনুচ্ছেদঃ এক মুদ্দ পানি দিয়ে ওযূ করা
৪৩. অনুচ্ছেদঃ ওযূর মধ্যে পানির অপচয় মাকরূহ
৪৪. অনুচ্ছেদঃ প্রত্যেক ওয়াক্তের নামাজের জন্য নতুনভাবে ওযূ করা
৪৫. অনুচ্ছেদঃ রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] একই ওযূতে সকল নামায আদায় করিয়াছেন
৪৬. অনুচ্ছেদঃ একই পাত্রের পানি দিয়ে পুরুষ ও স্ত্রীলোকের ওযূ করা
৪৭. অনুচ্ছেদঃ মহিলাদের পবিত্রতা অর্জনের পর বেঁচে যাওয়া পানির ব্যবহার মাকরুহ
৪৮. অনুচ্ছেদঃ মহিলাদের ঝুটা পানি ব্যবহারের অনুমতি প্রসঙ্গে
৪৯. অনুচ্ছেদঃ পানিকে কোন জিনিস নাপাক করিতে পারে না
৫০. অনুচ্ছেদঃ ঐ সম্পর্কেই
৫১. অনুচ্ছেদঃ বদ্ধ পানিতে পেশাব করা মাকরূহ
৫২. অনুচ্ছেদঃ সমুদ্রের পানি পবিত্র
৫৩. অনুচ্ছেদঃ পেশাবের ব্যাপারে কঠোরতা ও সতর্কতা
৫৪. অনুচ্ছেদঃ দুগ্ধপোষ্য শিশুর পেশাবে পানি ছিটানো
৫৫. অনুচ্ছেদঃ হালাল জীবের পেশাব সম্পর্কে
৫৬. অনুচ্ছেদঃ বায়ু নির্গত হলে ওযূ করা সম্পর্কে
৫৭. অনুচ্ছেদঃ ঘুমালে ওযূ ভেঙ্গে যায় বা নতুন করে ওযূ করা ফরয হয়ে যায়
৫৮. অনুচ্ছেদঃ আগুন যে জিনিসের মধ্যে পরিবর্তন এনেছে তার সংস্পর্শে আসলে পুনরায় ওযূ করা সম্পর্কে
৫৯. অনুচ্ছেদঃ আগুনের তাপ দ্বারা পরিবর্তিত জিনিস ব্যবহারে ওযূর প্রয়োজন নেই
৬০. অনুচ্ছেদঃ উটের গোশত খেলে ওযূ নষ্ট হওয়া সম্পর্কে
৬১. অনুচ্ছেদঃ যৌনাংগ স্পর্শ করলে ওযূ থাকিবে কিনা
৬২. অনুচ্ছেদঃ যৌনাংগ স্পর্শ করলে ওযূ নষ্ট হইবে না
৬৩. অনুচ্ছেদঃ চুমু দিলে ওযূ করিতে হইবে না
৬৪. অনুচ্ছেদঃ বমি করলে বা নাক দিয়ে রক্ত বের হলে ওযু নষ্ট হওয়া সম্পর্কে
৬৫. অনুচ্ছেদঃ নবিয দিয়ে ওযূ করা
৬৬. অনুচ্ছেদঃ দুধ পান করে কুলি করা

১৮. অনুচ্ছেদঃ মিসওয়াক করা বা দাঁত মাজা

২২. আবু হুরাইরা [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেছেনঃ আমি আমার উম্মাতের জন্য কষ্টদায়ক হইবে মনে না করলে তাহাদেরকে প্রত্যেক নামাযের সময় মিসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম।

সহিহ। ইবনি মাজাহ- [২৮৭], বোখারী ও মুসলিম।আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি মুহাম্মদ ইবনি ইসহাক, তিনি মুহাম্মদ ইবনি ইবরাহীম হতে তিনি আবু সালামহ, হতে তিনি যাইদ ইবনি খালিদ হতে তিনি নবি [সাঃআ:] হতে বর্ণনা করিয়াছেন।আবু ঈসা বলেনঃ আবু হুরাইরা ও যাইদ ইবনি খালিদ [রাঃআ:]-এর নিকট হতে আবু সালাম হতে বর্ণিত উভয় হাদীসই সহিহ। কেননা এ হাদীসটি একাধিক সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। মতে যাইদ ইবনি খালিদের নিকট হতে আবু সালাম হতে বর্ণিত হাদীসটি বেশি সহিহ। এ অনুচ্ছেদে আবু বাকার সিদ্দীক, আলী, আয়িশাহ্‌, ইবনি আব্বাস, হুযাইফা, যায়িদ ইবনি খালিদ, আনাস, আবদুল্লাহ ইবনি আমর, উম্মি হাবীবা, ইবনি উমার, আবু উমামা, আবু আইয়ূব, তাম্মাম ইবনি আব্বাস, আবদুল্লাহ ইবনি হানযালা, উম্মি সালামা, ওয়াসিলা ও আবু মূসা [রাঃআ:] হতে বর্ণিত হাদীসও রয়েছে। ওজুর হাদিস -এই ওজুর হাদিস -এই হাদিসের তাহকিকঃ

২৩. যাইদ ইবনি খালিদ আল-জুহানী [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] কে বলিতে শুনেছিঃ আমি আমার উম্মাতের জন্য কষ্টদায়ক হইবে মনে না করলে তাহাদেরকে সকল নামাযের সময় দাঁত মাজার নির্দেশ দিতাম এবং এশার নামাযের জামাআত এক-তৃতীয়াংশ রাত পর্যন্ত দেরি করতাম।

অধঃস্তন রাবী আবু সালামা বলেন, যাইদ ইবনি খালিদ [রাঃআ:] নামাযে আসতেন আর তাহাঁর কানের গোড়ার ঠিক সেখানে মিসওয়াক থাকত যেখানে লেখকের কলম থাকে। যখনই তিনি নামাযে দাঁড়াতেন মিসওয়াক করিতেন, অতঃপর তা আবার সেখানে রাখতেন। সহিহ। সহীহ্‌ আবু দাঊদ- [৩৭]। আবু ঈসা বলেনঃ হাদীসটি হাসান সহিহ। ওজুর হাদিস -এই ওজুর হাদিস -এই হাদিসের তাহকিকঃ

১৯. অনুচ্ছেদঃ তোমাদের কেউ ঘুম হতে জেগে হাত না ধোয়া পযর্ন্ত যেন তা পানির পাত্রে না ডুবায়

২৪. আবু হুরাইরা [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

নবি [সাঃআ:] বলেনঃ তোমাদের কেউ রাতের ঘুম হতে জেগে তার হাত দুই অথবা তিনবার না ধোয়া পর্যন্ত যেন তা পানির পাত্রে প্রবেশ না করায়। কেননা তার জানা নেই, রাতে তার হাত কোথায় ছিলো [ঘুমে থাকাবস্থায় লজ্জাস্থানে যেতে পারে]।

সহিহ। ইবনি মাজাহ- [৩৯৩], বোখারী ও মুসলিম, বোখারীতে সংখ্যার উল্লেখ নেই। এ অনুচ্ছেদে ইবনি উমার, জাবির ও আয়িশাহ্‌ [রাঃআ:]-এর হাদীসও রয়েছে। আবু ঈসা বলেন, হাদীসটি হাসান সহিহ। ইমাম শাফিঈ বলেন, দিনে অথবা রাতে ঘুম থেকে জেগে হাত না ধুয়ে তা ওযূর পানিতে ঢুকানোটা আমি মাকরূহ মনে করি। অবশ্য হাতে নাপাক না থাকা অবস্থায় যদি পাত্রে হাত ঢুকায় তবে পানি নাপাক হইবে না। ইমাম আহমদ ইবনি হাম্বল বলেন, যদি কেউ রাতের ঘুম থেকে জেগে হাত না ধুয়ে পানির পাত্রে ঢুকায় তাহলে এ পানি ফেলে দিতে হইবে। ইমাম ইসহাক বলেন, কেউ যে রাতে অথবা দিনে ঘুম থেকে জেগে হাত ধোয়ার পূর্বে তা পানির পাত্রে না ঢুকায়। ওজুর হাদিস -এই ওজুর হাদিস -এই হাদিসের তাহকিকঃ

২০. অনুচ্ছেদঃ ওযূর শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা

২৫. রাবাহ ইবনি আবদির রহমান ইবনি আবী সুফিয়ান ইবনি হুআইত্বিব হতে তাহাঁর দাদী হইতে বর্ণিতঃ

তিনি তাহাঁর পিতার [সাঈদ ইবনি যায়িদ] সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি [সাঈদ] বলেন, আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] কে বলিতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি ওযূর শুরুতে বিলমিল্লাহ বলেনি তার ওযূ হয়নি।

হাসান। ইবনি মাজাহ- [৩৯৯]। এ অনুচ্ছেদে আয়িশাহ্‌, আবু হুরাইরা, আবু সাঈদ খুদরী, সাহল ইবনি সাদ ও আনাস [রাঃআ:] হতে বর্ণিত হাদীসও রয়েছে। আবু ঈসা বলেনঃ আহমদ ইবনি হাম্বল বলেছেন, এ অনুচ্ছেদে এমন কোন হাদীস আমার জানা নেই যার সনদ শক্তিশালী। ইসহাক বলেন, যদি ইচ্ছাকৃতভাবে বিসমিল্লাহ না বলে তবে আবার ওযূ করিতে হইবে। আর যদি ভুলে অথবা হাদীসের ভিন্ন ব্যাখ্যা করে বিসমিল্লাহ না বলে তাহলে প্রথম ওযূই যথেষ্ট। মুহাম্মদ ইবনি ইসমাঈল [বোখারী] বলেন, এ অনুচ্ছেদে রাবাহ ইবনি আবদির রহমানের বর্ণিত হাদীস সবচেয়ে উত্তম। আবু ঈসা বলেনঃ রাবাহ ইবনি আব্দির রহমান তার দাদী হতে, তিনি তার পিতা হতে বর্ণনা করিয়াছেন, তার পিতার নাম সাঈদ ইবনি যাইদ ইবনি আমর ইবনি নুফাইল। আবু সিফাল মুররী এর নাম সুমামাহ ইবনি হুসাইন। আর রাহবাহ বিনু আব্দির রহমান হলেন আবু বাকার ইবনি হুআইত্বিব। কেউ কেউ এই হাদীস বর্ণনা করিতে যেয়ে বলেছেন, আবু বাকার ইবুন হুআইত্বিব হতে অর্থাৎ হাদীসটির সম্পর্ক তার দাদার সাথে জুড়ে দিয়েছেন। ওজুর হাদিস -এই হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

২৬. বর্ণনাকারী হইতে বর্ণিতঃ

পূর্বের হাদীসের অনুরূপ।ওজুর হাদিস -এই হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণয় করা হয়নি

২১. অনুচ্ছেদঃ কুলি করা ও নাকে পানি দেওয়া

২৭. সালামা ইবনি ক্বাইস [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেছেনঃ যখন তুমি ওযূ কর নাকে পানি দিয়ে ঝেড়ে ফেল এবং যখন [পায়খানায়] ঢিলা ব্যবহার কর বেজোড় সংখ্যায় ব্যবহার কর।

সহিহ। ইবনি মাজাহ- [৪০৬]।এ অনুচ্ছেদে উসমান, লাকীত ইবনি সাবিরাহ, ইবনি আব্বাস, মিকদাম ইবনি মাদিকারিব, ওয়াইল ইবনি হুজর ও আবু হুরাইরা [রাঃআ:] হতে বর্ণিত হাদীসও রয়েছে। আবু ঈসা বলেনঃ সালামা ইবুন কাইসের হাদীস হাসান সহিহ।

যে ব্যক্তি কুলি করেনি ও নাকে পানি দেয়নি তার ওযূর পূর্ণতা সম্পর্কে মনীষীদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। তাহাদের মধ্যে এক দলের বক্তব্য হল, যে ব্যক্তি ওযূর সময় কুলি করেনি ও নাকে পানি দেয়নি এ অবস্থায় সে নামায আদায় করলে তাকে দ্বিতীয়বার তা আদায় করিতে হইবে। তাঁরা ওযূ এবং [ওয়াযিব] গোসলের সময় কুলি করা ও নাকে পানি দেয়া অত্যাবশ্যকীয় মনে করিয়াছেন। এ দলে রয়েছেন ইবনি আবী লাইলা, আবদুল্লাহ ইবনিল মুবারক, ইমাম আহমদ ইবনি হাম্বল ও ইসহাক। ইমাম আহমদ আরো বলেছেন, নাক পরিষ্কার করা কুলি করার চেয়ে বেশি জরুরী। আবু ঈসা বলেনঃ অন্য এক দল বলেছেন, যদি নাপাকির গোসলে কুলি করা ও নাকে পানি দেওয়া না হয় তবে আবার নামায আদায় করিতে হইবে; আর যদি ওযূর সময় এটা ছাড়া হয় তাহলে নতুন করে নামায আদায় করিতে হইবে না। এটা সুফিয়ান সাওরী ও কুফার কিছু লোকের [ইমাম আবু হানীফা ও তাহাঁর মতানুসারী] বক্তব্য। অপর এক দলের মতে, গোসল অথবা ওযূর সময় এ দুটি কাজ বাদ দিলে নামায নতুন করে আদায় করিতে হইবে না। কেননা এটা নবি রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাত। অতএব কেউ যদি ফরয গোসরে বা ওযূর সময় কুলি না করে এবং নাকে পানি না দেয় আর এই ওযূ দিয়ে নামায আদায় করে নেয় তাহলে পুনরায় নামায আদায় করিতে হইবে না। ইমাম মালিক ও শাফিঈ সর্বশেষ এই অভিমত প্রকাশ করিয়াছেন। ওজুর হাদিস -এই ওজুর হাদিস -এই হাদিসের তাহকিকঃ

২২. অনুচ্ছেদঃ এক আঁজলা পানি দিয়ে কুলি করা নাক পরিষ্কার করা

২৮. আবদুল্লাহ ইবনি যাইদ [রাঃআ:] হত হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি নবি রাসুলুল্লাহ [সাঃআ:]কে এক আঁজলা পানি দিয়ে কুলি করিতে ও নাক পরিষ্কার করিতে দেখেছি। তিনি তিনবার এরকম করিয়াছেন।

সহিহ। সহীহ্‌ আবু দাউদ-[১১০], বোখারী ও মুসলিম। আবু ঈসা বলেনঃ এ অনুচ্ছেদ আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাঃআ:]-এর সূত্রে বর্ণিত হাদীসও রয়েছে। আবু ঈসা বলেনঃ আবদুল্লাহ ইবনি যাইদের সূত্রে বর্ণিত হাদীস হাসান এবং গারীব। মালিক, ইবনি উআইনা ও অন্যরাও আমর ইবনি ইয়াহইয়ার সূত্রে এ হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন। কিন্তু তাঁরা রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] এক আঁজলা পনি দিয়ে কুলি করিয়াছেন ও নাকে দিয়েছেন এ কথা উল্লেখ করেননি। খালিদ ইবনি আবদুল্লাহই একথা বর্ণনা করিয়াছেন। হাদীস রিজালশাস্ত্র বিচারে তিনি সিকাহ রাবী এবং হাফিয। কিছু বিদ্বান বলেছেন, এক আঁজলা পানির কিছুটা দিয়ে কুলি করলে ও কিছুটা নাকে দিলে তাতে যথেষ্ট হইবে। কেউ কেউ বলেছেন, মুখে এবং নাকে দেওয়ার জন্য পৃথকভাবে পানি নেয়াই উত্তম। ইমাম শাফিঊ বলেছেন, যদিও এক আঁজলা পানি দিয়ে উভয় কাজ করা জায়িয তবুও আমার মতে মুখ ও নাকের জন্য পৃথকভাবে পানি লওয়াই উত্তম। ওজুর হাদিস -এই ওজুর হাদিস -এই হাদিসের তাহকিকঃ

২৩. অনুচ্ছেদঃ দাড়ি খিলাল করা

২৯. আবদুল কারীম ইবনি আবুল মুখারিক আবু উমাইয়া হতে হাসসান ইবনি বিলালের হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আম্মার ইবনি ইয়াসির [রাঃআ:]-কে ওযূ করার সময় দাড়ি খিলাল করিতে দেখলাম। তাঁকে বলা হল, অথবা তিনি [হাসসান] বলেছেন, আমি তাঁকে বললাম, আপনি দাড়ি খিলাল করছেন? তিনি [আম্মার] বললেনঃ [এ কাজে] কে আমাকে বাঁধা দিবে আমি রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তাহাঁর দাড়ি খিলাল করিতে দেখেছি।

সহিহ। ইবনি মাজাহ-[৪২৯]। ওজুর হাদিস -এই ওজুর হাদিস -এই হাদিসের তাহকিকঃ

৩০. আম্মার [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

আম্মার [রাঃআ:] রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন……….. এ সূত্রেও উপরের হাদীসের মতই বর্ণিত হয়েছে।

আবু ঈসা বলেনঃ এ অনুচ্ছেদে আয়িশাহ্‌, উম্মি সালাম, আনাস, ইবনি আবী আওফা ও আবু আইয়ূব [রাঃআ:] হতে বর্ণিত হাদীসও রয়েছে। আবু ঈসা বলেন, আমি ইসহাক ইবনি মানসূরকে বলিতে শুনিয়াছি, তিনি বলেনঃ আমি আহমদ ইবনি হাম্বলকে বলিতে শুনেছিঃ ইবনি উআইনা বলেছেন, আবদুল কারীম দাড়ি খিলাল করা সম্পর্কিত হাদীস হাসসান ইবনি বিলালের নিকট হতে শুনেননি। মুহাম্মদ ইবনি ইসমাঈল [বোখারী] বলেছেন, এ অনুচ্ছেদ আমির ইবনি শাকীক হতে তিনি আবু ওয়াইল হতে তিনি উসমান হতে বর্ণিত হাদীসটি সবচাইতে সহিহ। সাহাবাই কিরাম ও পরবর্তী পর্যায়ের বেশিভাগ মনীষীর মতে দাড়ি খিলাল করা উচিৎ। ইমামা শাখিঈরও এই মত। ইমাম আহমদ বলেন, যে ব্যক্তি দাড়ি খিলাল করিতে ভুলে গেছে তাতে তার ওযূর কোন লোকসান হয়নি। ইসহাক বলেন, যদি ইচ্ছাকৃতভাবে দাড়ি খিলাল না করা হয় এবং এই ওযূ দিযে নামায আদায় করে থাকে তাহলে আবার নামায আদায় করিতে হইবে। আর যদি ভুলবশত অথবা হাদীসের ভিন্ন ব্যাখ্যা করে দাড়ি খিলাল করা ছেড়ে দেয় তবে নামায নতুন করে আদায় করিতে হইবে না। হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণয় করা হয়নি

৩১. উসমান ইবনি আফফান [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

নবি [সাঃআ:] দাড়ি খিলাল করিতেন।

সহিহ। ইবনি মাজাহ-[৪৩০]।আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান সহিহ। ওজুর হাদিস -এই হাদিসের তাহকিকঃ

২৪. অনুচ্ছেদঃ মাথা মাসিহ করার নিয়মঃ সামনের দিক হতে শুরু করে পিছনের দিকে নিতে হইবে

৩২. আবুদল্লাহ ইবনি যাইদ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] দুহাতে মাথা মাসিহ করিতেন। তিনি হাত দুটি সামনে আনতে এবং পিছনে নিতেন। তিনি মাথার সামনের দিক হতে শুরু করে উভয় হাত ঘাড়ের দিকে নিতেন; অতঃপর পেছন দিক হতে আবার সামনের দিকে এনে শুরু করার জায়গায় পৌঁছাতেন। অতঃপর তিনি উভয় পা ধুতেন।

সহিহ। ইবনি মাজাহ-[৪৩৪], বোখারী ও মুসলিম। আবু ঈসা বলেনঃ এ অনুচ্ছেদে মুআবিয়া, মিকদাম ইবনি মাদিকারিব ও আয়িশাহ্‌ [রাঃআ:] হতে বর্ণিত হাদীসও রয়েছে। আবু ঈসা বলেনঃ এ অনুচ্ছেদ আবুদলত্মাহ ইবনি যাইদের হাদীস সবচাইতে সহিহ এবং সর্বাধিক উত্তম। ইমাম শাফিঈ, আহমদ ও ইসহাক এভাবেই মাথা মাসিহ করার পক্ষে মত ব্যক্ত করিয়াছেন। ওজুর হাদিস -এই হাদিসের তাহকিকঃ

২৫. অনুচ্ছেদঃ মাথার পেছন দিক হতে সামনের দিকে মাসিহ করা

৩৩. রুবাই বিনতু মুআব্বিয ইবনি আফরাআ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

নবি রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] নিজের মাথা দুবার মাসিহ করিলেন। তিনি প্রথমবার ঘাড়ের দিক হতে মাসেহ শুরু করিলেন এবং দ্বিতীয়বার মাথার সামনের দিক হতে শুরু করিলেন। তিনি উভয় কানের ভেতর ও বাহিরও মাসিহ করিলেন।

হাসান ইবনি মাজাহ-[৩৯০]। আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান। তবে আবদুল্লাহ ইবনি যাইদের হাদীস এ হাদীসের তুলনায় অধিকতর সহিহ ও নির্ভরযোগ্য। কুফার বিভিন্ন আলিম এ হাদীসের উপর আমল করেছেন্‌ তাহাদের মধ্যে ওয়াকী ইবনিল জাররাহ অন্যতম। হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

২৬. অনুচ্ছেদঃ একবার মাথা মাসিহ করা

৩৪. রুবাই বিনতু মুআব্বিয ইবনি আফরাআ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] কে ওযূ করিতে দেখলেন। তিনি বলেন, তিনি [নবি] মাথার সামনের দিক, পেছনের দিক [সমুদয় মাথা] এবং দুই কানের ভেতর ও বাহির একবার করে মাসিহ করিলেন।

এ অনুচ্ছেদে আলী [রাঃআ:] ও তালহা ইবনি মুসাররিফ ইবনি আমরের দাদার সূত্রে বর্ণিত হাদীসও রয়েছে। আবু ঈসা বলেনঃ রুবাই হতে বর্ণিত হাদীস হাসান সহিহ । একাধিক বর্ণনায় আছে, নবি রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] একবার মাথা মাসিহ করিয়াছেন।

বেশিরভাগ সাহাবা ও তাবিঈন একবারই মাথা মাসিহ করার পক্ষে মত দিয়েছেন। বেশিরভাগ ইমামের ও এই মত। যেমন জাফর ইবনি মুহাম্মদ, সুফিয়ান সাওরী, ইবনিল মুবারাক, শাফিঈ, আহমদ ইবনি হাম্বল ও ইসহাক একবার মাথা মাসিহ করার কথা বলেছেন। মুহাম্মদ ইবনি মানসূর মাক্কী বলেন, আমি সুফিয়ান ইবনি উআইনাকে বলিতে শুনেছিঃ আমি জাফর ইবনি মুহাম্মদকে প্রশ্ন করলাম, একবার মাথা মাসিহ করা যথেষ্ট কিনা? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, আল্লাহ তাআলার শপথ! একবারই যথেষ্ট। হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

২৭. অনুচ্ছেদঃ মাথা মাসিহ করার জন্য পৃথকভাবে পানি নেয়া

৩৫. আবদুল্লাহ ইবনি যাইদ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি নবি রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] কে ওযূ করিতে দেখলেন। তিনি হাতে লেগে থাকা অতিরিক্ত পানি বাদে নতুন পানি নিয়ে মাথা মাসিহ করিলেন।

সহিহ। সহীহ্‌ আবু দাউদ-[১১১], মুসলিম। আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান সহিহ। এ হাদীসটি ইবনি লাহীআ হাব্‌বানের সূত্রে, তিনি ওয়াসের সূত্রে, তিনি আবুদল্লাহ ইবনি যাইদ [রাঃআ:]-এর সূত্রে বর্ণনা করিয়াছেন যে, “ রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] হাতের পানি ছাড়া নতুন পানি নিয়ে মাথা মাসিহ করিয়াছেন। ” হাব্বানের সূত্রে বর্ণিত আমর ইবনি হারিসের হাদীসটি অধিকতর সহিহ। কেননা তিনি বিভিন্ন সূত্রে আবদুল্লাহ ইবনি যাইদ [রাঃআ:] ও অন্য সাহাবীদের নিকট হতে বর্ণনা করেছেনঃ “ রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] মাথা মাসিহ করার জন্য নতুন করে পানি নিয়েছেন। ” বেশিরভাগ বিদ্বানের মতে, নতুনকরে পানি নিয়ে মাথা মাসিহ করিবে। ওজুর হাদিস -এই হাদিসের তাহকিকঃ

২৮. অনুচ্ছেদঃ কানের ভেতরে ও বাইরে মাসিহ করা

৩৬. ইবনি আব্বাস [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

নবি রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] মাথা মাসিহ করিলেন এবং দুই কানের ভেতরে ও বাহিরে মাসিহ করিলেন।

হাসান সহিহ। ইবনি মাজাহ-[৪৩৯]. এ অনুচ্ছেদে রুবাইর সূত্রে বর্ণিত হাদিসও রয়েছে। আবু ঈসা বলেনঃ ইবনি আব্বাস [রাঃআ:]- এর হাদীস হাসান সহিহ। বেশিভাগ বিদ্বান কানের ভেতর ও বাহিরে মাসিহ করার পক্ষে মত দিয়েছেন। হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহিহ

২৯. অনুচ্ছেদঃ দুই কান মাথার অন্তর্ভূক্ত

৩৭. আবু উমামা [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নবি রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] ওযূ করিলেন। তিনি মুখমন্ডল ও উভয় হাত তিনবার করে ধুলেন এবং মাথা মাসিহ করিলেন আর বললেনঃ উভয় কান মাথারই অংশ।

সহিহ। ইবনি মাজাহ- [৪৪৪]. আবু ঈসা বলেনঃ কুতাইবা বলেন, হাম্মদ বলেছেন, কানদুটো মাথারই অংশ কথাটা কি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের না আবু উসামার- তা আমি জানি না। এ অনুচ্ছেদে আনাস [রাঃআ:]-এর সূত্রে বর্ণিত হাদীসও রয়েছে। আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসের সনদ খুব একটা মজবুত নয়। বেশিরভাগ সাহাবা ও মনীষীর মতে, কান মাথারই অংশ। সুফিয়ান সাওরী, ইবনিল মুবারাক, শাফিয়ী আহমদ ও ইসহাকের এটাই মত। কিছু মনীষী বলেছেন, কানের অগ্রভাগ মুখমন্ডলের অন্তর্ভুক্ত এবং গোড়ার দিক মাথার অন্তর্ভুক্ত। ইসহাক বলেন, আমি কানের অগ্রভাগ মুখমন্ডলের সাথে এবং গোড়ার ভাগ মাথার সাথে মাসিহ করা পছন্দ করি। ইমাম শাফিঈ বলেন, কানের অবস্থান অনুসারে এটা আলাদা সুন্নাত। নতুন করে পানি নিয়ে দুই কান মাসিহ করিবে। ওজুর হাদিস -এই হাদিসের তাহকিকঃ

৩০. অনুচ্ছেদঃ আঙ্গুল খিলাল করা

৩৮. আসিম ইবনি লাকীত ইবনি সাবিরা হতে তাহাঁর পিতার সূত্রে হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেছেনঃ যখন তুমি ওযূ করিবে, আঙ্গুলও খিলাল করিবে।

সহিহ। ইবনি মাজাহ- [৪৪৮]।এ অনুচ্ছেদে ইবনি আব্বাস, মুসতাওরিদ ও আবু আইয়ুব [রাঃআ:]-এর হাদীসও রয়েছে।আবু ঈসা বলেনঃ হাদীসটি হাসান সহিহ। মনীষীদের মতে ওযূর সময় পায়ের আঙ্গুল খিলাল করিতে হইবে। ইমাম আহমদ এবং ইসহাক এ মতের পক্ষপাতি। ইসহাক বলেন, হাত এবং পায়ের আঙ্গুল খিলাল করা উচিৎ। আবু হাশিমের নাম ইসমাঈল ইবনি কাসীর আল-মাক্কী। ওজুর হাদিস -এই হাদিসের তাহকিকঃ

৩৯. ইবনি আব্বাস [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেনঃ যখন তুমি ওযূ করিবে তখন দুই হাত ও দুই পায়ের আঙ্গুল খিলাল করিবে।

হাসান সহিহ। ইবনি মাজাহ- [৪৪৭]।আবু ঈসা বলেনঃ হাদীসটি হাসান গারীব। হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহিহ

৪০. মুসতাওরিদ ইবনি শাদ্দাদ আল-ফিহরী [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি দেখেছি, নবি রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] যখন ওযূ করিতেন, [বাঁ হাতের] ছোট আঙ্গুল দিয়ে দুপায়ের আঙ্গুলগুলো মলতেন।

সহিহ। ইবনি মাজাহ- [৪৪৬]। আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি গারীব। আমি ইবনি লাহীআ ছাড়া আর কোন রাবীর নিকট এ হাদীসটি শুনিনি। ওজুর হাদিস -এই হাদিসের তাহকিকঃ

৩১. অনুচ্ছেদঃ পায়ের গোড়ালি ধোয়ার ব্যাপারে যারা সতর্কতা অবলম্বন করে না তাহাদেরকে আগুনের ভীতি প্রদর্শন করা সম্পর্কে

৪১. আবু হুরাইরা [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

নবি রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেন, পায়ের গোড়ালির জন্য আগুনের শাস্তি।

সহিহ, বোখারী ও মুসলিম।এ অনুচ্ছেদে আবদুল্লাহ ইবনি আমর, আয়িশাহ্‌, জাবির ইবনি আবদিল্লাহ, আবদুল্লাহ ইবনিল হারিস, মুআইকীব, খালিদ ইবনি ওয়ালীদ, শুরাহবীল ইবনি হাসানা, আমর ইবনিল আস ও ইয়াযীদ ইবনি আবী সুফিয়অনের সূত্রে বর্ণিত হাদীসও রয়েছে। আবু ঈসা বলেনঃ আবু হুরাইরার হাদীসটি হাসান সহিহ।

নবি রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ“পায়ের গোড়ালি ও পায়ের পাতার জন্য ধ্বংস রয়েছে ”। ইমাম তিরমিজি বলেন, এ হাদীসের সার কথা হল, পায়ে যদি মোজা না থাকে তবে [ধোয়ার পরিবর্তে] পা মাসিহ করা জায়িয নেই। ওজুর হাদিস -এই হাদিসের তাহকিকঃ

৩২. অনুচ্ছেদঃ ওযূর সময় প্রত্যেক অংশ একবার করে ধোয়া

৪২. ইবনি আব্বাস [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

নবি রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] ওযূর প্রতিটি অংগ একবার করে ধুয়েছেন।

সহিহ। ইবনি মাজাহ-[৪১১], বোখারী। আবু ঈসা বলেনঃ এ অনুচ্ছেদে উমার, জাবির, বুরাইদা, আবু রাফি ও ইবনিল ফাকিহি [রাঃআ:] হতে বর্ণিত হাদীসও রয়েছে। আবু ঈসা বলেনঃ এ অনুচ্ছেদে উমার, জাবির, বুরাইদা, আবু রাফি ও ইবনিল ফাকিহি [রাঃআ:] হতে বর্ণিত হাদীসও রয়েছে। আবু ঈসা বলেনঃ এ অনুচ্ছেদে ইবনি আব্বাসের হাদীস বেশি সহিহ ও উত্তম। ইমাম তিরমিজি রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ হাদীসটি অপর একটি সূত্রে উমার [রাঃআ:]-এর নিকট হতে বর্ণনা করিয়াছেন। তিনি বলেছেন, এ বর্ণনা সূত্রটি তেমন সহিহ নয়। বরং ইবনি আজলান, হিশাম ইবনি সাদ, সুফিয়ান সাওরী এবং আবদুল আযীয ইবনি মুহাম্মদ প্রমূখ যাইদ ইবনি আসলামের সূত্রে, তিনি আতা ইবনি ইয়াসারের সূত্রে, তিনি ইবনি আব্বাস [রাঃআ:]-এর সূত্রে নবি রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যে হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন তা-ই বেশি সহিহ। ওজুর হাদিস -এই হাদিসের তাহকিকঃ

৩৩. অনুচ্ছেদঃ ওযূর সময় প্রত্যেক অঙ্গ দুইবার করে ধোয়া

৪৩. আবু হুরাইরা [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

নবি রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] [ওযূর সময়] প্রতিটি অঙ্গ দুবার করে ধুয়েছেন।

হাসান সহিহ। সহীহ্‌ আবু দাউদ- [১২৫]। আবু ঈসা বলেন, হাদীসটি হাসান গারীব। আমি এটা শুধু ইবনি সাওবানের নিকট হতে জেনেছি, তিনি আবদুল্লাহ ইবনি ফাযলের সূত্রে বর্ণনা করিয়াছেন। এ সনদটি হাসান সহিহ।আবু ঈসা বলেনঃ এ অনুচ্ছেদে জাবির [রাঃআ:]-এর হাদীসও রয়েছে। আবু ঈসা বলেনঃ হাম্মাম, আমির আল-আহওয়াল হতে, তিনি আতা হতে, তিনি আবু হুরাইরা হতে বর্ণনা করেনঃ “নবি রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] ওযূর প্রতিটি অঙ্গ তিনবার করে ধুয়েছেন। ” হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহিহ

৩৪. অনুচ্ছেদঃ ওযূর সময় প্রত্যেক অঙ্গ তিনবার করে ধোয়া

৪৪. আলী [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

নবি রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] ওযূর প্রত্যেক অঙ্গ তিনবার করে ধুয়েছেন।

সহিহ। সহীহ্‌ আবু দাউদ- [১০০]। আবু ঈসা বলেনঃ এ অনুচ্ছেদে উসমান, রুবাঈ, ইবনি উমার, আয়িশাহ্‌, আবু উমামা, আবু রাফি,আবদুল্লাহ ইবনি আমর, মুআবিয়া, আবু হুরাইরা, জাবির, আবদুল্লাহ ইবনি যাইদ ও উবাই ইবনি কাব [রাঃআ:]-এর হাদীসটি বেশি সহিহ ও অধিক উত্তম। কেননা হাদীসটি আলী [রাঃআ:] হতে একাধিক সূত্রে বর্ণিত হযেছে। মনীষীদের মতামত হল, ওযূর অঙ্গগুলো একবার ধুলেও ওযূ হইবে, কিন্তু দুবার করে ধোয়া ভাল এবং তিনবার করে ধোয়া অধিকতর উত্তম। এর বেশি ধোয়াতে কোন উপকার নেই। ইবনিল মুবারাক বলেনঃ যে ব্যক্তি তিনবারের বেশি ধোয়, আমার ধারণামতে তার গুনাহ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আহমদ ও ইসহাক বলেনঃ যে ব্যক্তি অনিশ্চয়তার পরে যায় সে তিনবারের বেশি ধুতে পারে। ওজুর হাদিস -এই হাদিসের তাহকিকঃ

৩৫. অনুচ্ছেদঃ ওযূর অঙ্গগুলো এক, দুই অথবা তিনবার ধোয়া সম্পর্কে

৪৫. সাবিত ইবনি আবু সাফিয়্যা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

আমি আবু জাফরকে বললাম, জাবির [রাঃআ:] কি আপনাকে বলেছেন যে, রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] ওযূর অঙ্গগুলো একবার, দুইবার বা তিনবার করে ধুয়েছেন? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ।

জঈফ, ইবনি মাজাহ [৪১০]. হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৪৬. সাবিত ইবনি আবু সাফিয়্যা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

আমি আবু জাফরকে বললাম, জাবির [রাঃআ:] কি আপনাকে বলেছেন যে, রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] ওযূর অঙ্গগুলো একবার করে ধুয়েছেন? তিনি বলেন, হ্যাঁ। হাদীসটি হান্নাদ ও কুতাইবা বর্ণনা করিয়াছেন। তারা উভয়েই বলেন, ওয়াকী সাবিত ইবনি সাফিয়্যা হতে বর্ণনা করিয়াছেন।

সহিহ। এই হাদীসটি ইবনি আব্বাস কর্তৃক বর্ণিত ৪২ নং এর অনুরূপ তাই সহীহ্‌। আবু ঈসা বলেনঃ এ বর্ণনাটি শরীকের বর্ণনাটির চেয়ে বেশি সহিহ। কেননা এটি বিভিন্ন সূত্রে সাবিত হতে বর্ণিত হয়েছে। আর শরীক অনেক ক্রটির শিকার হন। সাবিত আবী সাফিয়্যা তিনি হলেন, আবু হামযা আস-সুমালী। ওজুর হাদিস -এই হাদিসের তাহকিকঃ

৩৬. অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি কোন অঙ্গ দুবার এবং কোন অঙ্গ তিনবার ধোয়

৪৭. আবদুল্লাহ ইবনি যাইদ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

নবি [সাঃআ:] একবার ওযূ করিলেন। তিনি তিনবার মুখমন্ডল ধুলেন, দুই হাত দুবার করে ধুলেন, মাথা মাসিহ করিলেন এবং উভয় পা দুবার ধুলেন। সহিহ, তবে দুবার ধুলেন, অংশটি শাজ।

সহীহ্‌। আবু দাউদ- [১০৯]। আবু ঈসা বলেনঃ হাদীসটি হাসান সহিহ। এ ছাড়াও কায়েকটি হাদীসে উল্লেখ আছেঃ “রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] কোন অঙ্গ একবার এবং কোন অঙ্গ তিনবার ধুয়েছেন। ” এর পরিপ্রেক্ষিতে কিছু আলিম অনুমতি দিয়েছেন যে, কেউ যদি ওযূর সময় কোন অঙ্গ দুবার, কোন অঙ্গ তিনবার এবং কোন অঙ্গ একবার ধোয় তবে তাতে কোন অপরাধ নেই। ওজুর হাদিস -এই হাদিসের তাহকিকঃ

৩৭. অনুচ্ছেদঃ নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওযূ কেমন ছিল

৪৮. আবু হাইআ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আলী [রাঃআ:] কে ওযূ করিতে দেখেছি। তিনি উভয় হাতের কব্জি পর্যন্ত ধুলেন এবং ভাল ভাবে পরিষ্কার করিলেন; তিনবার কুলি করিলেন, তিনবার নাকে পানি দিলেন, তিনিবার মুখমন্ডল ধুলেন, তিনবার করে উভয় হাত কনুই পর্যন্ত ধুলেন, একবার মাথা মাসিহ করিলেন এবং উভয় পা গোছা পর্যন্ত ধুলেন। এরপর তিনি দাঁড়ালেন এবং ওযূর অবশিষ্ট পানি তুলে নিয়ে তা দাঁড়ানো অবস্থায় পান করিলেন। অতঃপর তিনি বলিলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওযূ কিরূপ ছিল তা তোমাদের দেখানোর জন্যই আমি এরূপ করা পছন্দ করলাম।

সহিহ। সহীহ্‌ আবু দাউদ- [১০১-১০৫], বোখারী সংক্ষেপিত। আবু ঈসা বলেনঃ এ অনুচ্ছেদে উসমান, আবদুল্লাহ ইবনি যাইদ ইবনি আব্বাস, আবদুল্লাহ ইবনি আমর, আয়িশাহ্‌, রুবাই ও আবদুল্লাহ ইবনি উনাইস [রাঃআ:]-এর হাদীসও রয়েছে। ওজুর হাদিস -এই হাদিসের তাহকিকঃ

৪৯. আবদি খাইর আলী [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

আবদি খাইর আলী [রাঃআ:]-এর সূত্রে আবু হাইআ হতে বর্ণিত হাদীসের মত হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। কিন্তু আবদি খাইরের বর্ণিত হাদীসের শেষের অংশ নিম্নরূপঃ তিনি যখন ওযূ শেষ করিতেন তখন অবশিষ্ট পানি হাতের আঁজলে নিয়ে পান করিতেন।

সহিহ। দেখুন পূর্ববর্তী হাদীস।আবু ঈসা বলেনঃ আলী [রাঃআ:]-এর হাদীসটি আবু ইসহাক হামদানী বর্ণনা করিয়াছেন আবু হাইআ হতে, তিনি আবদু খাইর ও হারিস হতে, তিনি আলী হতে।যায়িদাহ ইবনি কুদামাহ এবং অন্যরা বর্ণনা করিয়াছেন খালিদ ইবনি আলক্বামাহ হতে, তিনি আবদুখাইর হতে, তিনি আলী [রাঃআ:] হতে ওযূর হাদীস বিস্তারিতভাবে। এই হাদীসটি হাসান সহীহ্‌। শুবা এই হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন খালিদ ইবনি আলক্বামা হতে, তিনি ভুলক্রমে তার নাম ও তার পিতার নাম বলেছেন এভাবে মালিক ইবনি উরফুতাহ তিনি আবদু খাইর হতে, তিনি আলী [রা] হতে। আবু আওয়ানাহ হতে বর্ণিত হয়েছে খালিদ ইবনি আল-ক্বামাহ হতে, তিনি আবদু খাইর হতে। তিনি আলী [রাঃআ:] হতে। এবং তার কাছ থেকে এবাবেও বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি মালিক ইবনি উরফুতাহ হতে শুবার বর্ণনার মতো। অথচ সঠিক হচ্ছে খালিদ ইবনি আলক্বামাহ।ওজুর হাদিস -এই হাদিসের তাহকিকঃ

৩৮. অনুচ্ছেদঃ ওযূর শেষে পরিধানের কাপড়ে পানি ছিটানো

৫০. আবু হুরাইরা [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

নবি রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেন, জিবরীল [আ:] আমার কাছে এসে বলিলেন, হে মুহাম্মদ! যখন আপনি ওযূ করেন, [পরিধেয় বস্ত্রে] পানি ছিটিয়ে দেন।

জঈফ, ইবনি মাজাহ [৪৬৩]। আবু ঈসা বলেন এটা গারীব হাদীস। আমি মুহাম্মাদকে বলিতে শুনিয়াছি, হাসান ইবনি আলী একজন প্রত্যাখ্যাত [মুনকার] রাবী। এ অনুচ্ছেদে আবুল হাকাম ইবনি সুফিয়ান, ইবনি আব্বাস, যাইদ ইবনি হারিছা ও আবু সাঈদ খুদরী [রাঃআ:] কর্তৃক বর্ণিত হাদীসও আছে। কিছু হাদীস বিশারদ বলেছেন, সুফিয়ান ইবনি হাকাম অথবা হাকাম ইবনি সুফিয়ান এ হাদীসের সনদে গরমিল [ইযতিবার] করিয়াছেন। হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৩৯. অনুচ্ছেদঃ সুন্দরভাবে ওযূ করা

৫১. আবু হুরাইরা [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেন, আমি কি তোমাদের বলব না, আল্লাহ তাআলা কি দিয়ে গুনাহ মুছে দেন এবং মর্যাদা বাড়িয়ে দেন? সাহাবাগণ বলিলেন, হে আল্লাহর রাসূল! হ্যাঁ [বলে দিন]। তিনি বললেনঃ কষ্ট থাকার পরেও ভালভাবে ওযূ করা, মাসজিদের দিকে বেশি বেশি যাতায়াত করা এবং এক নামায শেষ করে পরবর্তী নামাযের জন্য অপেক্ষায় থাকা। আর এটাই হল রিবাত [প্রস্তুতি]।

সহীহ্‌। ইবনি মাজাহ-[৪২৮], মুসলিম। ওজুর হাদিস -এই হাদিসের তাহকিকঃ

৫২. আলা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

আলা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হতে এই সনদসূত্রে উপরের হাদীসের মতই বর্ণিত হয়েছে, কুতাইবা তাহাঁর সনদে বর্ণিত হাদীসে [রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথাটা এভাবে] উল্লেখ করেছেনঃ এটাই তোমাদের জন্য রিবাত, এটাই তোমাদের জন্য রিবাত, এটাই তোমাদের জন্য রিবাত।  এ কথাটা [এ বর্ণনায়] তিনবার উল্লেখিত হয়েছে। সহীহ্‌। দেখুন পূর্ববর্ণিত হাদীস।

আবু ঈসা বলেনঃ এ অনুচ্ছেদ আলী আবদুল্লাহ ইবনি আমর ইবনি আব্বাস, উবাইদা [ইবনি আমর], আয়িশাহ্‌, আবদুর রহমান ইবনি আয়িশাহ্‌ ও আনাস [রাঃআ:] হতে বর্ণিত হাদীসও রয়েছে। আবু ঈসা বলেনঃ আবু হুরাইরার হাদীস হাসান সহিহ। আলা ইবনি আবদুর রহমান, ইনি ইয়াকুব আল-জুহানীর পুত্র এবং হাদীস বিশারদদের মতে সিকাহ রাবী। ওজুর হাদিস -এই হাদিসের তাহকিকঃ

৪০. অনুচ্ছেদঃ ওযূর পর রুমাল ব্যবহার করা

৫৩. আইশা [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআ:]-এর জন্য একটি বস্ত্রখণ্ড ছিল। ওযূ করার পর এটা দিয়ে তিনি [ওযূর অঙ্গসমূহ] মুছে নিতেন।

সনদ দুর্বল।

আবু ঈসা বলেনঃ আইশা [রাঃআ:] হতে বর্ণিত হাদীসটি শক্তিশালী নয়। এ অনুচ্ছেদে রসুলুল্লাহ [সাঃআ:]-এর কোন হাদীস সহিহ সনদে বর্ণিত হয়নি। কেননা এ হাদীসের এক রাবী আবু মুআয সম্পর্কে লোকেরা বলেন, ইনি হলেন সুলাইমান ইবনি আরকাম। ইনি মুহাদ্দিসদের বিচারে দুর্বল রাবী। এ অনুচ্ছেদে মুআয ইবনি জাবাল [রাঃআ:] হতে বর্ণিত হাদীসও রয়েছে।হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৫৪. মুআয ইবনি জাবাল [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি [সাঃআ:]-কে দেখেছি- তিনি ওযূ করে তাহাঁর কাপড়ের কিনারা দিয়ে মুখমন্ডল মুছে ফেলতেন।

সনদ দুর্বল। আবু ঈসা বলেন, এটা গারীব হাদীস এবং এর সনদ দুর্বল। এ হাদীসের রাবী রিশদীন ইবনি সাদ ও আবদুর রহমান ইবনি যিয়াদ ইবনি আনউম হাদীস শাস্ত্রে দুর্বল। কিছু সাহাবী ও তাহাদের পরবর্তী কালের একদল বিদ্বান ওযূর পরে রুমাল ব্যবহার করার অনুমতি দিয়েছেন। যারা ওযূর অঙ্গ মোছা মাকরূহ মনে করেন তাহাদের মতে ওযূর পানি ওজন দেওয়া হয়। অতএব এটা মুছে ফেলা ঠিক নয়। সাঈদ ইবনিল মুসায়্যাব ও যুহরী হতে এ মত বর্ণিত হয়েছে। ইমাম যুহরী বলেন, ওযূর পর রুমাল ব্যবহার করা মাকরূহ। কেননা ওযূর পানিকেও ওজন করা হইবে। হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৪১. অনুচ্ছেদঃ ওযূর পর যা বলিতে হইবে

৫৫. উমার ইবনি খাত্তাব [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সুন্দরভাবে ওযূ করার পর বলেঃ “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ তাআলা ব্যতিত আর কোন ইলাহ নেই, তিনি এক, তাহাঁর কোন শারীক নেই; আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি নবি [সাঃআ:] তাহাঁর বান্দাহ ও তাহাঁরই রাসূল; হে আল্লাহ! আমাকে তাওবাকারীদের অন্তর্ভুক্ত কর এবং আমাকে পবিত্রতা অর্জনকারীদের অন্তর্ভুক্ত কর”, তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজাই খুলে দেওয়া হইবে। সে নিজ ইচ্ছামত যে কোন দরজা দিয়েই তাতে যেতে পারবে।

সহীহ্‌। ইবনি মাজাহ-[৪৭০]। আবু ঈসা বলেনঃ এ অনুচ্ছেদে আনাস ও উক্ববা ইবনি আমির [রাঃআ:] হতে বর্ণিত হাদীসও রয়েছে। আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসে যাইদ ইবনি হুবাবের কারণে মতভেদ সৃষ্টি হয়েছে। তিনি আরো বলেনঃ আব্দুল্লাহ ইবনি সালিহ এবং অন্যরা মুয়াবিয়াহ ইবনি সালিহ হতে তিনি রাবিয়াহ্‌ ইবনি ইয়াযিদ হতে, তিনি আবু ইদরিস হতে তিনি উক্ববা ইবনি আমির হতে তিনি উমার হতে হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন এবং অন্য সূত্রে রাবিয়হ্‌ হতে তিনি আবু উসমান হতে তিনি জুবাইর ইবনি নুফাইর হতে তিনি উমার হতে বর্ণনা করিয়াছেন। এই হাদীসের সনদে অসংলগ্নতা রয়েছে। এ অনুচ্ছেদে নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট হতে কোন সূত্রেই খুব একটা সহিহ হাদীস বর্ণিত নেই। মুহাম্মদ [বোখারী] বলেন, আবু ইদরীস উমারের কাছে কোন কিছুই শুনেননি। ওজুর হাদিস -এই হাদিসের তাহকিকঃ

৪২. অনুচ্ছেদঃ এক মুদ্দ পানি দিয়ে ওযূ করা

৫৬. সাফীনাহ্‌ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

নবি [সাঃআ:] এক মুদ্দ পানি দিয়ে ওযূ করিতেন এবং এক সা পানি দিয়ে গোসল করিতেন।

সহীহ্‌। ইবনি মাজাহ- [২৬৭]। এ অনুচ্ছেদে আয়িশাহ্‌, জাবির ও আনাস ইবনি মালিক [রাঃআ:] হতে বর্ণিত হাদীসও রয়েছে। আবু ঈসা বলেনঃ সাফীনার হাদীসটি হাসান সহিহ। আবু রায়হানার নাম আব্দুল্লাহ ইবনি মাতার। একদল বিশেষজ্ঞ আলিম বলেছেন, ওযূ এক মুদ্দ এবং এক সা পানি দিয়েই করিতে হইবে। কিন্তু ইমম শাফিঈ, আহমদ ও ইসহাক বলেছেন, হাদীসের তাৎপর্য এটা নয় যে, এক মুদ্দ বা এক সা-এর বেশি বা কম পানি ব্যবহার করা যাবে না, বরং এটা একটা পরিমাণ যা ওযূ ও গোসলের জন্য যথেষ্ট। ওজুর হাদিস -এই হাদিসের তাহকিকঃ

৪৩. অনুচ্ছেদঃ ওযূর মধ্যে পানির অপচয় মাকরূহ

৫৭. উবাই ইবনি কাব [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

নবি [সাঃআ:] বলেনঃ ওযূর সময় [সন্দেহপ্রবণতা সৃষ্টি করার জন্যই] একটি শাইতান রয়েছে। তার নাম ওয়ালাহান বলে কথিত। অতএব ওযূর সময় পানি ব্যবহারে ওয়াসওয়াসা হতে সতর্ক থাক।

সনদ দুর্বল, ইবনি মাজাহ [৪২১]। এ অনুচ্ছেদে আবদুল্লাহ ইবনি আমর ও আবদুল্লাহ ইবনি মুগাফফাল [রাঃআ:]-এর হাদীসও রয়েছে। আবু ঈসা বলেন, উবাই ইবনি কাব [রাঃআ:] হতে বর্ণিত হাদীসটি গারীব। হাদীস বিশারদদের মতে এর সনদ মজবুত নয়। কেননা খারিজাহ ছাড়া আর কেউ এ হাদীসকে মারফূ সূত্রে বর্ণনা করিয়াছেন বলে আমাদের জানা নেই। কিছু সূত্রে এটাকে [হাদীসটিকে] হাসান বাসরীর কথা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এ অনুচ্ছেদে নবি [সাঃআ:]-এর নিকট হতে কোন সহিহ হাদীস বর্ণিত হয়নি। হাদীস বিশারদদের নিকট খারিজাহ তত সবল রাবী নন। ইবনিল মুবারাক তাঁকে দুর্বল রাবী মনে করিয়াছেন। হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৪৪. অনুচ্ছেদঃ প্রত্যেক ওয়াক্তের নামাজের জন্য নতুনভাবে ওযূ করা

৫৮. আনাস [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

নবি [সাঃআ:] প্রত্যেক ওয়াক্তের নামাজের জন্য নতুন ওযূ করিতেন, তিনি পবিত্র [ওযূ] থাকলেও করিতেন এবং অপবিত্র [ওযূহীন] থাকলেও করিতেন। হুমাইদ বলেন, আমি আনাস [রাঃআ:]-কে প্রশ্ন করলাম, আপনারা কি করেন? তিনি বলিলেন, আমরা একই ওযূতে কাজ সারি।

যইফ, সহিহ আবু দাউদ [১৬৩]। আবু ঈসা বলেন, এই সূত্রে আনাসের বর্ণিত হাদীস হাসান গারীব। এ পর্যায়ে আমর ইবনি আমির হতে আনাসের সূত্রে বর্ণিত হাদীসটি হাদীস বিশারদদের নিকট অতিপরিচিত। কিছু মনীষীর মতে, প্রত্যেক নামাজের জন্য নতুন করে ওযূ করা মুস্তাহাব, তবে ওয়াজিব নয়।হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৫৯. ইবনি উমার [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

নবি [সাঃআ:] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ওযূ থাকা সত্বেও ওযূ করিবে আল্লাহ তাআলা তার জন্য ১০টি নেকি লিখবেন।

জঈফ, ইবনি মাজাহ [৫১২]

হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৬০. আমর ইবনি আমির আনসারী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আনাস ইবনি মালিক [রাঃআ:]-কে বলিতে শুনিয়াছি: নবি [সাঃআ:] প্রত্যেক নামাযের ওয়াক্তে নতুন করে ওযূ করিতেন। আমি আনাসকে প্রশ্ন করলাম, আপনারা কি করেন? তিনি বলেন, আমাদের ওযূ নষ্ট না হলে একই ওযূতে আমরা সব ওয়াক্তের নামায আদায় করে করে নেই।

সহীহ্‌। ইবনি মাজাহ – [৫০৯], বোখারী। আবু ঈসা বলেনঃ হাদীসটি হাসান সহিহ। হুমাইদের সূত্রে আনাস হইতে বর্ণিত আরেকটি উত্তম সনদের হাদীস রয়েছে। হাদীসটি হাসান গারীব।ওজুর হাদিস -এই হাদিসের তাহকিকঃ

৪৫. অনুচ্ছেদঃ রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] একই ওযূতে সকল নামায আদায় করিয়াছেন

৬১. সুলাইমান ইবনি বুরাইদা [রাঃআ:] হতে তাহাঁর পিতার সূত্রে হইতে বর্ণিতঃ

তিনি [বুরাইদা] বলেন, নবি [সাঃআ:] প্রতি ওয়াক্তের নামাযের জন্য নতুনভাবে ওযূ করিতেন। তিনি মক্কা বিজয়ের দিন একই ওযূ দিয়ে সব ওয়াক্তের নামায আদায় করিলেন এবং মোজার উপর মাসিহ করিলেন। উমার [রাঃআ:] বললেনঃ আপনি এমন একটি কাজ করিলেন যা ইতোপূর্বে কখনও করেননি। তিনি রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেন, আমি ইচ্ছা করেই এটা করলাম।

সহিহ। ইবনি মাজাহ – [৫১০], মুসলিম। আবু ঈসা বলেন : হাদীসটি হাসান সহিহ । এ হাদীসটি আলী ইবনি কাদিম – সুফিয়ান সাওরীর সূত্রে বর্ণনা করিয়াছেন । তাতে এ কথাটুকুও আছে, “তিনি একবার একবার ওযূ করিয়াছেন । ” সুফিয়ান সাওরী তাহাঁর সনদ পরম্পরায় বুরাইদার সূত্রে বর্ণনা করিয়াছেন, নবি [সাঃআ:] প্রত্যেক ওয়াক্তের নামাযের জন্যই নতুনভাবে ওযূ করিতেন । ওয়াকীও তাহাঁর সনদ পরম্পরায় বুরাইদার এ হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন । আবদুর রহমান ইবনিল মাহদী ও অন্যরা অপর এক সনদ পরম্পরায় এ হাদীসটি মুরসাল হিসেবে বর্ণনা করিয়াছেন । এ বর্ণনাটি ওয়াকীর বর্ণনার তুলনায় বেশি সহিহ । বিদ্বানদের মতামত হল ওযূ যে পর্যন্ত নষ্ট না হইবে, সে পর্যন্ত একই ওযূতে একাধিক ওয়াক্তের নামায আদায় করা যাবে । তাহাদের কেউ কেউ ফযিলত লাভের আশায় প্রত্যেক নামাযের জন্য নতুনভাবে ওযূ করাটা মুস্তাহাব মনে করিয়াছেন । আফরীকী হতে বর্ণিত আছে, তিনি গুতাইফ হতে তিনি ইবনি উমার হতে তিনি রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] হতে বর্ণনা করেন, নবি [সাঃআ:] বলেন : “যে ব্যক্তি ওযূ থাকা অবস্থায় ওযূ করে আল্লাহ তার জন্য দশটি সাওয়াব লিখেন । ” –এর সনদ জঈফ । এ অনুচ্ছেদে জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাঃআ:] হতে বর্ণিত একটি হাদীস রয়েছে : “নবি [সাঃআ:] একই ওযূতে যুহর এবং আসরের নামায আদায় করিয়াছেন । ” ওজুর হাদিস -এই হাদিসের তাহকিকঃ

৪৬. অনুচ্ছেদঃ একই পাত্রের পানি দিয়ে পুরুষ ও স্ত্রীলোকের ওযূ করা

৬২. ইবনি আব্বাস [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমাকে মাইমূনা [রাঃআ:] জানিয়েছেন, তিনি বলেছেন, আমি এবং রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] একই পাত্র হতে পানি দিয়ে নাপাকির [ফরজ] গোসল করেছি।

সহিহ। বোখারী ও মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, হাদীসটি হাসান সহিহ । সকল ফিক্‌হবিদের এটাই অভিমত, পুরুষ ও স্ত্রীলোক [স্বামী-স্ত্রী] একই পাত্র হতে পানি নিয়ে গোসল করাতে কোন অপরাধ নেই । এ অনুচ্ছেদে আলী, আয়িশাহ্‌, আনাস, উম্মু হানী, উম্মু সুবাইয়া, উম্মু সালামা, ইবনি উমার ও আবু শাসা [রাঃআ:] হতে বর্ণিত হাদীসও রয়েছে । আবু শাসার নাম জাবির ইবনি যাইদ । ওজুর হাদিস -এই হাদিসের তাহকিকঃ

৪৭. অনুচ্ছেদঃ মহিলাদের পবিত্রতা অর্জনের পর বেঁচে যাওয়া পানির ব্যবহার মাকরুহ

৬৩. বানী গিফার গোত্রের এক ব্যক্তির হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, মহিলাদের [ওযূ বা গোসল হতে] বেঁচে যাওয়া পানি ব্যবহার করিতে রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] [পুরুষদেরকে] মানা করিয়াছেন।

সহিহ। ইবনি মাজাহ-[৩৭৩] এ অনুচ্ছেদে আবদুল্লাহ ইবনি সারজিস [রাঃআ:] হতে বর্ণিত হাদীসও রয়েছে । আবু ঈসা বলেন : কোন কোন ফিক্‌হবিদ মহিলাদের ওযূ-গোসলের পর বেঁচে যাওয়া পানি ব্যবহার করাকে মাকরূহ বলেছেন । ইমাম আহমদ ও ইসহাকের এই মত । কিন্তু তাঁরা মহিলাদের ঝুটা খাদ্য-পানীয়ের ব্যবহারে কোনরূপ দোষ ধরেননি । ওজুর হাদিস -এই হাদিসের তাহকিকঃ

৬৪. হাকাম ইবনি আমর আল-গিফারী [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

নবি [সাঃআ:] পুরুষদেরকে স্ত্রীলোকদের ওযূ-গোসলের অবশিষ্ট পানি দিয়ে ওযূ করিতে নিষেধ করিয়াছেন। অথবা [রাবীর সন্দেহ] তিনি স্ত্রীলোকদের অবশিষ্ট পানি ব্যবহার করিতে নিষেধ করিয়াছেন।সহীহ্‌। দেখুন পূর্বোক্ত হাদীস।

আবু ঈসা বলেন, এটা হাসান হাদীস । বর্ণনাকারী আবু হাজিবের নাম সাওয়াদা ইবনি আসিম । মুহাম্মাদ ইবনি বাশশার তাহাঁর হাদীসে বলেছেন : রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] স্ত্রীলোকদের ওযূ-গোসলের অবশিষ্ট পানি দিয়ে পুরুষদের ওযূ করিতে নিষেধ করিয়াছেন । এ বর্ণনায় বাশশার সন্দেহ প্রকাশ করেননি।ওজুর হাদিস -এই হাদিসের তাহকিকঃ

৪৮. অনুচ্ছেদঃ মহিলাদের ঝুটা পানি ব্যবহারের অনুমতি প্রসঙ্গে

৬৫. ইবনি আব্বাস [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কোন এক স্ত্রী একটি গামলাতে গোসল করিলেন। রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] তা থেকে ওযূ করিতে চাইলেন। তিনি [স্ত্রী] বলিলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি নাপাক ছিলাম। তিনি বললেনঃ [নাপাক ব্যক্তির ছোঁয়ায়] পানি নাপাক হয় না [যদি তার হাতে ময়লা না থাকে]।

সহিহ। ইবনি মাজাহ-[৩৭০] আবু ঈসা বলেন, হাদীসটি হাসান সহিহ । সুফিয়ান সাওরী, মালিক ও শাফিঈর এটাই মত [স্ত্রীলোকদের ওযূর অবশিষ্ট পানি দিয়ে পুরুষেরা ওযূ করিতে পারে] । ওজুর হাদিস -এই হাদিসের তাহকিকঃ

৪৯. অনুচ্ছেদঃ পানিকে কোন জিনিস নাপাক করিতে পারে না

৬৬. আবু সাঈদ খুদরী [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, প্রশ্ন করা হল, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা কি বীরে বুযাআহ্‌ নামক কূপের পানি দিয়ে ওযূ করিতে পারি? এটা এমন একটি কূপ যাতে হায়েবের ন্যাকড়া, [মরা কুকুর] ও আবর্জনা ফেলা হয়। রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বললেনঃ “পানি পাক, কোন জিনিসই তাকে নাপাক করিতে পারে না। ”

সহিহ। মিশকাত- [৪৭৮], সহিহ আবু দাউদ- [৫৯] আবু ঈসা বলেন, এটা হাসান হাদীস । আবু উসামা এটাকে উত্তম সনদে উল্লেখ করিয়াছেন । কেউ এটাকে তার চেয়ে উত্তম সনদে বর্ণনা করেননি । হাদীসটি একাধিক সনদে আবু সাঈদ [রাঃআ:] হতে বর্ণিত হয়েছে । এ অনুচ্ছেদে ইবনি আব্বাস ও আয়িশাহ্‌ [রাঃআ:] হতে বর্ণিত হাদীসও রয়েছে । ওজুর হাদিস -এই হাদিসের তাহকিকঃ

৫০. অনুচ্ছেদঃ ঐ সম্পর্কেই

৬৭. ইবনি উমার [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এমন পানির বিধান সম্পর্কে প্রশ্ন করিতে শুনিয়াছি , যা জঙ্গল ও জনশূন্য এলাকায় জমা হয়ে থাকে এবং যা পান করার জন্য বিভিন্ন ধরনের হিংস্র জীব ও বন্য জন্তু এসে থাকে। তিনি বললেনঃ পানি যখন দুই কুল্লা পরিমাণ হয় তখন তা নাপাক হয়না।

সহিহ। ইবনি মাজাহ-[৫১৭] মুহাম্মাদ ইবনি ইসহাক বলেন, পানির কলসী বাঁ মটকাকে কুল্লা বলা হয়। যাতে পানি রেখে তা পান করা হয়। আবু ঈসা বলেনঃ ইমাম শাফিই, আহমদ ও ইসহাকের এটাই মত, পানি দুই কুল্লা পরিমাণ হলে তা নাপাক হয় না, যে পর্যন্ত তার গন্ধ অথবা স্বাদ পরিবর্তন না হয়। তারা এ কথাও বলেছেন, দুই মটকার অর্থ কম-বেশি পাঁচ মশকের সমান।ওজুর হাদিস -এই হাদিসের তাহকিকঃ

৫১. অনুচ্ছেদঃ বদ্ধ পানিতে পেশাব করা মাকরূহ

৬৮. আবু হুরাইরা [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

নবি [সাঃআ:] বলেন, এমন যেন না হয় যে, তোমাদের কেউ বদ্ধ পানিতে [কূপ, পুকুর, জলাশয়] পেশাব করে, অতঃপর তা দিয়েই ওযূ করে। –

সহিহ। ইবনি মাজাহ-[৩৩৪] আবু ঈসা বলেনঃ হাদীসটি হাসান সহিহ । এ অনুচ্ছেদে জাবির [রাঃআ:] – এর সূত্রে বর্ণিত হাদিসও রয়েছে। ওজুর হাদিস -এই হাদিসের তাহকিকঃ

৫২. অনুচ্ছেদঃ সমুদ্রের পানি পবিত্র

৬৯. মুগীরা ইবনি আবী বুরদা হইতে বর্ণিতঃ

তিনি আবু হুরাইরা [রাঃআ:]-কে বলিতে শুনেছেন, এক ব্যক্তি রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট প্রশ্ন করিল , হে আল্লাহর রাসূল! আমরা সমুদ্র পথে আসা-যাওয়া করি এবং সাথে করে সামান্য মিঠা পানি নেই। যদি আমরা তা দ্বারা ওযূ করি তাহলে পিপাসার্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এ ক্ষেত্রে আমরা কি সমুদ্রের পানি দিয়ে ওযূ করিতে পারি? রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বললেনঃ “তার পানি পবিত্র এবং তার মৃত জীব হালাল”।

সহিহ। ইবনি মাজাহ [৩৮৬-৩৮৮] ওজুর হাদিস -এই হাদিসের তাহকিকঃ

৫৩. অনুচ্ছেদঃ পেশাবের ব্যাপারে কঠোরতা ও সতর্কতা

৭০. ইবনি আব্বাস [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

নবি [সাঃআ:] দুটি কবরের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বললেনঃ এদের উভয়কে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। , কিন্তু বড় কোন অপরাধের জন্য শাস্তি দেওয়া হচ্ছে না। এদের একজন পেশাবের সময় আড়াল [পর্দা] করত না, আর অপরজন একের কথা অন্যের নিকট বলে বেড়াত [চোগলখুরী করত]।

সহিহ। ইবনি মাজাহ-[৩৪৭], বোখারী ও মুসলিম হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৫৪. অনুচ্ছেদঃ দুগ্ধপোষ্য শিশুর পেশাবে পানি ছিটানো

৭১. উম্মু ক্বাইস বিনতু মিহসান [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আমার দুগ্ধপোষ্য শিশুকে নিয়ে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট গেলাম। সে তখনও শক্ত খাবার ধরেনি। বাচ্চাটি তার কোলে পেশাব করে দিল। তিনি পানি নিয়ে আসতে বলিলেন, অতঃপর তা পেশাবের জায়গায় ছিটিয়ে দিলেন।

সহিহ। ইবনি মাজাহ-[৫২৪], বোখারী ও মুসলিম ।হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৫৫. অনুচ্ছেদঃ হালাল জীবের পেশাব সম্পর্কে

৭২. আনাস [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

উরাইনা গোত্রের লোকেরা মদীনায় আসল। কিন্তু এখানকার আবহাওয়া তাহাদের অনুকূল হল না। রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] তাহাদেরকে সাদকার উটের নিকট পাঠিয়ে দিলেন এবং বললেনঃ “তোমরা এর দুধ ও পেশাব পান কর”। তারা রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রাখালকে হত্যা করে উটগুলো লুন্ঠন করে নিয়ে গেল এবং ইসলাম ত্যাগ করিল [মুরতাদ হয়ে গেল] তাহাদেরকে গ্রেফতার করে নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আনা হল। তিনি তাহাদের এক দিকের হাত ও অন্যদিকের পা কাটলেন [কাটালেন], চোখ উপড়ে ফেললেন [ফেলালেন] এবং রোদের মধ্যে কাঁকরময় জমীনে ফেলে রাখলেন। আনাস [রাঃআ:] বলেনঃ আমি তাহাদের মধ্যে এক ব্যক্তিকে মুখ দিয়ে মাটি খুঁড়তে দেখলাম। অতঃপর সে মারা গেল। [অধঃস্তন রাবী] হাম্মাদ কখনো কখনো বলিতেন, সে তার মুখ দিয়ে মাটি কামড়াচ্ছিল। পরিশেষে তারা মারা গেল।

সহিহ। ইরওয়া- [১৭৭],রাওয- [৪৩], বোখারী ও মুসলিমের অনুরূপ। আবু ঈসা বলেনঃ হাদীসটি হাসান সহিহ। হাদীসটি আরো কয়েকটি সূত্রে আনাস [রাঃআ:] হতে বর্ণিত হয়েছে। বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞের বক্তব্য হল, যে জীবের গোশত খাওয়া হালাল তার পেশাব নাপাক নয়। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৭৩. আনাস ইবনি মালিক [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নবি সাঃআ: তাহাদের চোখ উপড়ে ফেললেন [ফেলালেন]। কেননা তারা রাখালদের চোখ উপড়ে ফেলেছিল।

সহিহ, প্রাগুক্ত, মুসলিম। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৫৬. অনুচ্ছেদঃ বায়ু নির্গত হলে ওযূ করা সম্পর্কে

৭৪. আবু হুরাইরা [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ সাঃআ: বলেন, [বায়ুর] শব্দ অথবা গন্ধ না পাওয়া পর্যন্ত পুনরায় ওযূ ফরজ নয়।

সহিহ। ইবনি মাজাহ- [৫১৫], মুসলিম। আবু ঈসা বলেনঃ হাদিসটি হাসান সহিহ।হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৭৫. আবু হুরাইরা [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ সাঃআ: বলেনঃ তোমাদের কেউ মাসজিদে থাকা অবস্থায় যদি তার নিতম্বের মাঝখান হতে বায়ুর আভাস পায়, তাহলে সে যেন শব্দ অথবা গন্ধ না পাওয়া পর্যন্ত [মাসজিদ হতে] বের না হয়।

সহিহ। সহিহ আবু দাউদ-[১৬৯], মুসলিম। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৭৬. আবু হুরাইরা [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

নবি সাঃআ: বলেনঃ তোমাদের কোন ব্যক্তির ওযূ নষ্ট হয়ে গেলে পুনরায় ওযূ না করা পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা তার নামায কবুল করেন না।

সহিহ। আবু দাউদ- [৫৪], বোখারী ও মুসলিম। আবু ঈসা বলেনঃ হাদিসটি হাসান সহিহ। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৫৭. অনুচ্ছেদঃ ঘুমালে ওযূ ভেঙ্গে যায় বা নতুন করে ওযূ করা ফরয হয়ে যায়

৭৭. ইবনি আব্বাস [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি নবি [সাঃআ:]-কে সিজদারত অবস্থায় ঘুমাতে দেখলেন। এমনকি তিনি নাক ডাকলেন, তারপর তিনি নামাযরত অবস্থায়ই দাঁড়ালেন। [নামায শেষে] আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি যে ঘুমালেন? তিনি বললেনঃ যে ব্যক্তি শুয়ে ঘুমায় শুধু তার জন্যই ওযূ করা ওয়াজিব। কেননা যখন কেউ শুয়ে ঘুমায় তখন তার শরীরের বন্ধনসমূহ শিথিল হয়ে যায়।

জঈফ, জঈফ আবু দাঊদ [২৫], মিশকাত [৩১৮। আবু ঈসা বলেনঃ আবু খালিদের নাম ইয়াযিদ ইবনি আব্দুর রহমান। এ অনুচ্ছেদে আইশা, ইবনি মাসউদ ও আবু হুরাইরা [রাঃআ:] হতে বর্ণিত হাদীসও আছে। হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৭৮. আনাস ইবনি মালিক [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবাগণ [বসে বসে] ঘুমাতেন, অতঃপর দাঁড়াতেন এবং নামায আদায় করিতেন, কিন্তু ওযূ করিতেন না।

সহীহ্‌। ইরওয়া- [১১৪], সহীহ্‌ আবু দাউদ- [১৯৪], মিশকাত- [৩১৭]। আবু ঈসা বলেনঃ হাদীসটি হাসান সহিহ। আমি সালিহ ইবনি আবদুল্লাহকে বলিতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি নিজ পাছায় ভর দিয়ে বসে বসে ঘুমায় আমি [সালিহ] তার সম্পর্কে ইবনিল মুবারাককে প্রশ্ন করলাম। তিনি বললেনঃ তাকে পুনরায় ওযূ করিতে হইবে না।

আবু ঈসা বলেনঃ সাঈদ ইবনি আবু আরুবা কাতাদার সূত্রে ইবনি আব্বাসের আভিমত রিওয়ায়াত করিয়াছেন। কিন্তু তিনি সনদের মধ্যে আবুল আলিয়ার নামও উল্লেখ করেননি এবং ইবনি আব্বাস [রাঃআ:]-এর বক্তব্যও মারফূ হিসাবে বর্ণনা করনেনি।

ঘুমের দ্বারা ওযূ নষ্ট হওয়া সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে মতের অমিল রয়েছে। বেশিরভাগ মত হল, যদি বসে বসে অথবা দাঁড়িয়ে ঘুমানো হয় তবে ওযূ নষ্ট হইবে না; কিন্তু শুয়ে ঘুমালে পুনরায় ওযূ করিতে হইবে। সুফিয়ান সাওরী, ইবনিল মুবারাক ও আহমদ এ মত ব্যক্ত করিয়াছেন। ইসহাক বলেন, ঘুমানোর ফলে যদি বোধশক্তি লোপ পায় তবে আবার ওযূ করিতে হইবে। শাফিঈ বলেন, যে ব্যক্তি বসে বসে ঘুমাল এবং স্বপ্ন দেখল অথবা ঘুমের ঘোরে তার ঊরু স্থানচ্যুত হল, তাকে ওযূ করিতে হইবে। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৫৮. অনুচ্ছেদঃ আগুন যে জিনিসের মধ্যে পরিবর্তন এনেছে তার সংস্পর্শে আসলে পুনরায় ওযূ করা সম্পর্কে

৭৯. আবু হুরাইরা [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেছেনঃ “আগুনে রান্না করা খাদ্য খেলে ওযূ করিতে হইবে; তা পনিরের একটা টুকরাই হোক না কেন। ” [আবু হুরাইরাকে এ কথা বর্ণনা করিতে শুনে] ইবনি আব্বাস [রাঃআ:] তাঁকে প্রশ্ন করিলেন, আমরা কি তৈল ব্যবহার করলেও ওযূ করব, আমরা কি গরম পানি পান করলেও ওযূ করব? আবু হুরাইরা [রাঃআ:] বলিলেন, হে ভাইয়ের ছেলে! যখন তুমি রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কোন হাদীস শুনতে পাও তার সামনে উদাহরণ পেশ কর না।

হাসান। ইবনি মাজাহ-[৪৮৫]। এ অনুচ্ছেদে উম্মু হাবীবা, উম্মু সালামা, যাইদ ইবনি সাবিত, আবু তালহা, আবু আইউব ও আবু মূসা [রাঃআ:] হতেও বর্ণনা করা হাদীস রয়েছে। আবু ঈসা বলেনঃ কিছু বিশেষজ্ঞের মতে, আগুন যে জিনিসের মধ্যে পরিবর্তন এনেছে তা ব্যবহার করলে ওযূ করিতে হইবে। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বেশিরভাগ সাহাবা, তাবিঈন ও তাহাদের পরবর্তীদের মতে, আগুনে স্পর্শ করা জিনিসের ব্যবহার ও পানাহারে ওযূ করার প্রয়োজন নেই। এই হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

৫৯. অনুচ্ছেদঃ আগুনের তাপ দ্বারা পরিবর্তিত জিনিস ব্যবহারে ওযূর প্রয়োজন নেই

৮০. জাবির [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] [কোথাও যাবার উদ্দেশ্যে] বের হলেন। আমিও তাহাঁর সাথে ছিলাম। তিনি এক আনসার মহিলার বাড়ীতে গেলেন। সে তাহাঁর জন্য একটি বকরী যাবাহ করিল। তিনি তা খেলেন। অতঃপর সে তাহাঁর জন্য পাত্রে করে তাজা খেজুর আনলো। তিনি তা হতে খেলেন, অতঃপর যুহরের নামাযের ওযূ করিলেন এবং নামায আদায় করিলেন। মহিলাটি বকরীর অবশিষ্ট গোশত হতে কিছু গোশ্‌ত তাঁকে দিলেন। তিনি তা খেলেন এবং আসরের নামায আদায় করিলেন, কিন্তু ওযূ করেননি।

হাসান সহীহ্‌। সহীহ্‌ আবু দাউদ- [১৮৫]। এ অনুচ্ছেদে আবু বক্‌র সিদ্দীক, ইবনি আব্বাস, ইবনি মাসুদ, আবু রাফি, উম্মুল হাকাম, আমর ইবনি উমাইয়া, উম্মু আমির, সুআঈদ ইবনি নুমান ও উম্মু সালামা [রাঃআ:] হতে বর্ণিত হাদীসও রয়েছে। কিন্তু সনদের বাছবিচারে তা সহিহ নয়, বরং ইবনি আব্বাস [রাঃআ:] যে হাদীসটি  রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট হতে বর্ণনা করিয়াছেন, সেটিই সহিহ। এ হাদিসটি একাধিক সূত্রে ইবনি আব্বাসের নিকট হতে বর্ণিত হয়েছে। সনদের দিক হতে এটা বেশি সহিহ। এ হাদীসটি আতা ইবনি ইয়াসার, ইকরিমা, মুহাম্মাদ ইবনি আমর ইবনি আতা, আলী ইবনি আব্দিল্লাহ ইবনি আব্বাস আরো অনেকে ইবনি আব্বাস হতে বর্ণনা করিয়াছেন। তারা আবু বাক্‌রের কথা উল্লেখ করেননি। আর এটিই অধিক সহীহ্‌।

আবু ঈসা বলেনঃ বেশিরভাগ সাহাবা, তাবিঈ ও তার পরবর্তী বিদ্বানগণ এ হাদীস অনুযায়ী আমল করেন। অর্থাৎ আগুনে রান্না করা জিনিস খেলে পুনরায় ওযূর দরকার নেই। তাহাদের মধ্যে রয়েছেন সুফিয়ান সাওরী, ইবনিল মুবারাক, শাফিঈ, আহমদ ও ইসহাক। তাহাদের মতে, এ হাদীসটির মাধ্যমে পূর্ববর্তী হাদীসের কার্যকারীতা বাতিল হয়ে গেছে। এই হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহিহ

৬০. অনুচ্ছেদঃ উটের গোশত খেলে ওযূ নষ্ট হওয়া সম্পর্কে

৮১. বারাআ ইবনি আযিব [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, উটের গোশত খেলে আবার ওযূ করিতে হইবে কি না এ সম্পর্কে রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] কে প্রশ্ন করা হল। তিনি বললেনঃ উটের গোশত খাওয়ার পর ওযূ কর। তাঁকে আবার বকরীর গোশত খেলে ওযূ করিতে হইবে কি না এ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হল। তিনি বলিলেন এতে [বকরীর গোশত খেলে] তোমরা ওযূ করো না।

সহীহ্‌। ইবনি মাজাহ-[৪৯৪]। এ অনুচ্ছেদে জাবির ইবনি সামুরা ও উসাইদ ইবনি হুযাইর [রাঃআ:] হতে বর্ণনা করা হাদীসও রয়েছে। আবু ঈসা বলেনঃ হাজ্জাজ ইবনি আরতাত তাহাঁর সনদ পরম্পরায় এ হাদীসটি উসাইদ ইবনি হুযাইর [রাঃআ:]-এর সূত্রে বর্ণনা করিয়াছেন। তবে বারাআ ইবনি আযিব [রাঃআ:]-এর সূত্রে বর্ণনাকৃত হাদীসটি সহিহ। এ হাদীসটি উবাইদাহ যাব্বী বর্ণনা করিয়াছেন আব্দুল্লাহ ইবনি আব্দিল্লাহ আলরাজী হতে তিনি আব্দুর রহমান ইবনি আবী লাইলা হতে, তিনি জিল গুররাহ্‌ জুহানী হতে। আর হাম্মাদ ইবনি সালামা হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন হাজ্জাজ ইবনি আরতাহ হতে। তিনি ভুলবশতঃ বলেছেন, আব্দুল্লাহ ইবনি আব্দুর রহমান ইবনি আবী লাইলা হতে তিনি তার পিতা হতে তিনি উসাইদ ইবনি হুদাইর হতে। সঠিক কথা হলো- আব্দুল্লাহ ইবনি আব্দিল্লাহ আলরাজী হতে তিনি আব্দুর রহমান ইবনি আবী লাইলা হতে তিনি বারাআ ইবনি আযিব হতে বর্ণনা করিয়াছেন।

ইসহাক বলেন, এ অনুচ্ছেদে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট হতে বর্ণনা করা দুটি সর্বাধিক সহিহ হাদীস রয়েছে। একটির রাবী বারাআ ইবনি আযিব [রাঃআ:] এবং অপরটির রাবী জাবির ইবনি সামুরা [রাঃআ:]। ইমাম ইসহাক ও আহমাদের মতে, উটের গোশত খেলে ওযূ করিতে হইবে কিন্তু কিছু তাবেয়ী বিদ্বান, সুফিয়ান সাওরী ও কূফাবাসী আলিমদের মতে ওযূ করিতে হইবে না। এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৬১. অনুচ্ছেদঃ যৌনাংগ স্পর্শ করলে ওযূ থাকিবে কিনা

৮২. বুসরা বিনতু সাফওয়ান [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

নবি [সাঃআ:] বলেনঃ যে ব্যক্তি [ওযূ করার পর] নিজের যৌনাংগ স্পর্শ করেছে, সে যেন আবার ওযূ না করা পর্যন্ত নামায না আদায় করে।

সহীহ্‌। ইবনি মাজাহ-[৪৭৯]। এ অনুচ্ছেদে উম্মু হাবীবা, আবু আইউব, আবু হুরাইরা, আরওয়া বিনতু উনাইস, আয়িশাহ্‌, জাবির, যাইদ ইবনি খালিদ ও আবদুল্লাহ ইবনি আমর [রাঃআ:] হতে বর্ণনা করা হাদীসও রয়েছে। আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান সহিহ। তিনি আরো বলেন, আরো অনেকেই এভাবে হিশাম ইবনি উরওয়া হতে, তিনি তার পিতা হতে, তিনি বুসরা হতে বর্ণনা করিয়াছেন। এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৮৩. হিশাম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

এ হাদীসটি একাধিক সূত্রে হিশাম, আবু উসামা, আবুল যিনাদ ও অন্য রাবীগণ হতে বর্ণনা করিয়াছেন।

সহীহ্‌। দেখুন পূর্বোক্ত হাদীস। এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৮৪. আবুল যিনাদ ওরওয়ার সূত্রে হইতে বর্ণিতঃ

আবুল যিনাদ ওরওয়ার সূত্রে বুসরা হতে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করছেন।

সহীহ্‌। দেখুন পূর্বের হাদীস। রসুলুল্লাহ [সাঃআ:]-এর একাধিক সাহাবী ও তাবিঈন এই মত দিয়েছেন যে, যৌনাংগ স্পর্শ করলে ওযূ নষ্ট হইবে। ইমাম আওযাঈ, শাফিঈ, আহমদ এবং ইসহাকও এ কথাই বলেছেন। মুহাম্মাদ [ইমাম বোখারী] বলেন, এ অনুচ্ছেদে বুসরা [রাঃআ:] হতে বর্ণনা করা হাদীসই বেশি সহিহ। আবু যুরআহ্‌ বলেনঃ এ অনুচ্ছেদে উম্মু হাবীবা [রাঃআ:] হতে বর্ণনা করা হাদীসটি বেশি সহিহ। এর সনদসূত্রটি এরূপঃ আলা ইবনি হারিস-মাকহূল হতে, তিনি আনবাসা ইবনি আবু সুফিয়ান হতে, তিনি উম্মু হাবীবা [রাঃআ:] হতে বর্ণনা করিয়াছেন। ইমাম বোখারী বলেন, আনবাসা ইবনি আবু সুফিয়ান হতে মাকহূল কখনও কিছু অবগত হননি। মাকহূল এক ব্যক্তির সূত্রে আনবাসা হতে এটা ছাড়া অন্য হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। তিনি [বোখারী] উম্মু হাবীবা [রাঃআ:] হতে বর্ণনা করা হাদীসটি সহিহ মনে করেন না। এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৬২. অনুচ্ছেদঃ যৌনাংগ স্পর্শ করলে ওযূ নষ্ট হইবে না

৮৫. কাইস ইবনি তালক্ব ইবনি আলী আল-হানাফী হতে তাহাঁর পিতার [তালকের] সূত্রে হইতে বর্ণিতঃ

কাইস ইবনি তালক্ব ইবনি আলী আল-হানাফী হতে তাহাঁর পিতার [তালকের] সূত্রে বর্ণনা করা হয়েছে, নবি [সাঃআ:] বলেনঃ এটা [যৌনাংগ] তাহাঁর দেহের একটা অংশ ছাড়া আর কিছুই নয়।  [অথবা রাবীর সন্দেহ] তিনি বুয্‌আহ [টুকরা, অংশ] শব্দ বলেছেন।

সহীহ্‌। ইবনি মাজাহ-[৪৮৩]। এ অনুচ্ছেদে আবু উমামা [রাঃআ:] হতে বর্ণিত হাদীসও রয়েছে, আবু ঈসা বলেনঃ রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একাধিক সাহাবী ও কিছু সংখ্যক তাবিঈ যৌনাংগ স্পর্শ করলে আবার ওযূ করা দরকার আছে বলে মনে করেন না। ইবনিল মুবারাক ও কূফাবাসীদের এটাই উপস্থাপিত মত।

এ অনুচ্ছেদে এ হাদীসটি বেশি সহিহ। এ হাদীসটি অপর এক সূত্রেও বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু এ সূত্রে দুজন রাবী- মুহাম্মাদ ইবনি জাবির ও আইউব ইবনি উতবা সম্পর্কে কিছু হাদীস পারদর্শী ব্যক্তি বিভিন্ন কথা বলেছেন। অতএব মুলাযিম ইবনি আমরের বর্ণনাটিই বেশি সহিহ এবং উত্তম। এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৬৩. অনুচ্ছেদঃ চুমু দিলে ওযূ করিতে হইবে না

৮৬. আয়িশাহ্‌ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] তাহাঁর কোন এক স্ত্রীকে চুমু খেলেন, অতঃপর নামায আদায় করিতে গেলেন, কিন্তু তিনি [নতুন করে] ওযূ করেননি। উরওয়া বলেন, আমি বললাম, তা আপনি [আয়িশাহ্‌] ছাড়া আর কেউ নয়। এতে তিনি হেসে দিলেন।

সহীহ্‌। ইবনি মাজাহ- [৫০২]। আবু ঈসা বলেনঃ একইভাবে একাধিক সাহাবা ও তাবিঈ এ ধরনের হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। সুফিয়ান সাওরী ও কূফাবাসীগণ [ইমাম আবু হানীফা ও তাহাঁর মতানুসারীগণ] বলেন, চুমু দিলে ওযূ নষ্ট হয় না। মালিক ইবনি আনাস,আওযাঈ, শাফিঈ, আহমদ ও ইসহাকের মতে চুমু দিলে ওযূ নষ্ট হয়। এটা একাধিক ফিক্‌হবিদ সাহাবা ও তাবিঈর মত। তিরমিজি বলেন, আমাদের সাথীরা এ প্রসঙ্গে আয়িশাহ্‌ [রাঃআ:] হতে বর্ণিত হাদীসটি বাদ দিয়েছেন। কেননা সনদের দিক হতে হাদীসটি সহিহ নয়। ইয়াহইয়া ইবনি সাঈদ আল-কাত্তান হাদীসটিকে জঈফ বলেছেন। তিনি আরো বলেছেন, এ হাদীস বিশ্বাস যোগ্য নয়। মুহাম্মাদ ইবনি ইসমাঈলও [বোখারী] এ হাদীসটিকে দুর্বল বলেছেন। কেননা হাবীব ইবনি আবু সাবিত উরওয়ার নিকট হতে কিছুই শুনেননি। ইবরাহীম তাইমী হতেও আয়িশাহ্‌ [রাঃআ:]-এর এ হাদীসটি বর্ণিত হয়েছেঃ “রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] তাঁকে চুমু খেলেন কিন্তু ওযূ করিলেন নয়া। ” এ বর্ণনাটিও সহিহ নয়, কেননা ইবরাহীম তাইমী আয়িশাহ্‌ [রাঃআ:]-এর নিকট হতে কিছু শুনার সুযোগ পেয়েছেন বলে আমাদের কোন তথ্য জানা নেই। মোটকথা, এ অনুচ্ছেদে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কোন সহিহ হাদীস বর্ণিত হয়নি। এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৬৪. অনুচ্ছেদঃ বমি করলে বা নাক দিয়ে রক্ত বের হলে ওযু নষ্ট হওয়া সম্পর্কে

৮৭ আবু দারদা [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বমি করিলেন, ফলে তিনি ইফতার করিলেন। অতঃপর ওযূ করিলেন। মাদান বলেন, আমি দামিশকের মাসজিদে সাওবান [রাঃআ:]-এর সাথে দেখা করে তাঁকে এ কথা বললাম। তিনি বলিলেন, আবু দারদা [রাঃআ:] ঠিকই বলেছেন, এ সময় আমি তাহাঁর [রসুলুল্লাহ [সাঃআ:]] ওযূর পানি ঢেলেছিলাম।

-সহিহ। ইরওয়া- [১১১] আবু ঈসা বলেনঃ একাধিক বিশেষজ্ঞ সাহাবা ও তাবিঈর মতে বমি করলে বা নাক দিয়ে খুন বের হলে ওযূ নষ্ট হইবে এবং নতুন করে ওযূ করিতে হইবে। সুফিয়ান সাওরী, ইবনিল মুবারাক, আহমদ ও ইসহাক এ মত পোষণ করিয়াছেন। কিছু বিশেষজ্ঞ বলেছেন, বমি হলে অথবা নাক দিয়ে রক্ত বের হলে পুনরায় ওযূ করিতে হইবে না। ইমাম মালিক ও শাফিঈ এ মত দিয়েছেন।

হুসাইন আল-মুআল্লিম এ হাদীসটিকে নির্ভরযোগ্য ও শক্তিশালী বলেছেন। এ অনুচ্ছেদে হুসাইনের হাদীসটি অধিকতর সহিহ। অপর একটি সূত্রেও হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে। এ হাদীসটি মামার ইয়াহ্ইয়া ইবনি আবী কাসীর হতে বর্ণনা করিয়াছেন। কিন্তু তিনি ভুল করে বলেছেন, ইয়াঈশ ইবনিল ওয়ালীদ খালিদ ইবনি মাদান হতে তিনি আবুদ দারদা হতে। তিনি এতে আওযাঈর উল্লেখ করেননি। আর তিনি বলেছেন, খালিদ ইবনি মাদান। প্রকৃতপক্ষে তিনি হলেন, মাদান ইবনি আবী ত্বালহা। এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৬৫. অনুচ্ছেদঃ নবিয দিয়ে ওযূ করা

৮৮. আবদুল্লাহ ইবনি মাসউদ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নবি [সাঃআ:] আমাকে প্রশ্ন করলেনঃ তোমার পাত্রে কি আছে? আমি বললাম, নবিয [খেজুর দ্বারা তৈরী শরবত]। তিনি বললেনঃ খেজুর পবিত্র এবং পানিও পবিত্র। ইবনি মাসউদ [রাঃআ:] বলেন, তারপর তিনি [রসুলুল্লাহ সাঃআ:] তা দিয়ে ওযূ করিলেন।

জঈফ, ইবনি মাজাহ [৩৮৪]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি শুধু আবু যাইদ হতে আবদুল্লাহ ইবনি মাসউদ [রাঃআ:]-এর সূত্রে নবি [সাঃআ:] হতে বর্ণিত আছে। অথচ আবু যাইদ হাদীস বিশারদদের নিকট অপরিচিত ব্যক্তি। এ বর্ণনাটি ছাড়া আর কোথাও তাহাঁর বর্ণনা জানা যায়নি। কিছু বিদ্বান বলেন, খেজুর ভিজানো পানি [নবিয] দিয়ে ওযূ করা জায়িয। সুফিয়ান সাওরী ও অন্যরা এ মত দিয়েছেন। শাফিঈ, আহমদ ও ইসহাকের মতে খেজুর ভিজানো পানি দিয়ে ওযূ হইবে না। ইসহাক বলেন, যদি পানি পাওয়া না যায় তাহলে নবিয দিয়ে ওযূ করিবে, তারপর তায়াম্মুম করে নেয়াই আমার নিকট পছন্দনীয়। আবু ঈসা বলেন, যারা বলেন নবিয দিয়ে ওযূ না করা উচিৎ, তাহাদের এ মত কুরআনের বাণীর সাথে সামঞ্জস্যশীল কেননা আল্লাহ তাআলা বলেছেনঃ “যদি তোমরা পানি না পাও তাহলে পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম কর” – সূরা নিসাঃ ৪৩। আর নবিয তো পানি নয়, অতএব এটা দ্বারা ওযূ করা জায়িয নয়। এই হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৬৬. অনুচ্ছেদঃ দুধ পান করে কুলি করা

৮৯. ইবনি আব্বাস [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

নবি [সাঃআ:] দুধ পান করে পানি আনতে বলিলেন, অতঃপর কুলি করিলেন এবং বললেনঃ দুধে তৈলাক্ত পদার্থ [চর্বি] আছে।

সহিহ। ইবনি মাজাহ [৪৯৮] এ অনুচ্ছেদে সাহল ইবনি সাদ ও উম্মু সালামা [রাঃআ:] হতে বর্ণনাকৃত হাদীসও রয়েছে। আবু ঈসা বলেনঃ হাদীসটি হাসান সহিহ। কেউ কেউ দুধ পান করার পর কুলি করা মুস্তাহাব মনে করেন, আমাদের অভিমতও তাই। আবার কেউ কুলি করা দরকার মনে করেন না। এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস


by

Comments

Leave a Reply