নামাজের সানা এবং নিরবে ও সশব্দে বিসমিল্লাহ বলা প্রসঙ্গে

নামাজের সানা এবং নিরবে ও সশব্দে বিসমিল্লাহ বলা প্রসঙ্গে

নামাজের সানা এবং নিরবে ও সশব্দে বিসমিল্লাহ বলা প্রসঙ্গে >>আবুদ দাউদ শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন

অধ্যায়ঃ ২, অনুচ্ছেদঃ ১২১-১২৮ =৮টি

অনুচ্ছেদ-১২১ যে দুআ পড়ে নামায আরম্ভ করতে হয়
অনুচ্ছেদ-১২ যারা বলেন, সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা বলে নামায শুরু করতে হইবে
অনুচ্ছেদ-১২৩ নামাজের শুরুতে চুপ থাকা
অনুচ্ছেদ-১২৪ সশব্দে বিসমিল্লাহ না বলা প্রসঙ্গে
অনুচ্ছেদ-১২৫ সশব্দে বিসমিল্লাহ পাঠের বর্ণনা
অনুচ্ছেদ-১২৬ কোনো অনিবার্য কারনে নামায সংক্ষেপ করা
অনুচ্ছেদ-১২৭ নামায সংক্ষিপ্ত করা
অনুচ্ছেদ-১২৮ নামাজের জন্য ক্ষতিকর দিক

অনুচ্ছেদ১২১ যে দুআ পড়ে নামায আরম্ভ করতে হয়

৭৬০. আলী ইবনি আবু ত্বালিব (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) নামাজে দাঁড়িয়ে তাকবীর বলার পর নিম্নোক্ত দুআ পাঠ করতেনঃ

وَجَّهْتُ وَجْهِيَ لِلَّذِي فَطَرَ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضَ حَنِيفًا مُسْلِمًا وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِينَ إِنَّ صَلاَتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَاىَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ لاَ شَرِيكَ لَهُ وَبِذَلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا أَوَّلُ الْمُسْلِمِينَ اللَّهُمَّ أَنْتَ الْمَلِكُ لاَ إِلَهَ لِي إِلاَّ أَنْتَ أَنْتَ رَبِّي وَأَنَا عَبْدُكَ ظَلَمْتُ نَفْسِي وَاعْتَرَفْتُ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي ذُنُوبِي جَمِيعًا إِنَّهُ لاَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلاَّ أَنْتَ وَاهْدِنِي لأَحْسَنِ الأَخْلاَقِ لاَ يَهْدِي لأَحْسَنِهَا إِلاَّ أَنْتَ وَاصْرِفْ عَنِّي سَيِّئَهَا لاَ يَصْرِفُ سَيِّئَهَا إِلاَّ أَنْتَ لَبَّيْكَ وَسَعْدَيْكَ وَالْخَيْرُ كُلُّهُ فِي يَدَيْكَ وَالشَّرُّ لَيْسَ إِلَيْكَ أَنَا بِكَ وَإِلَيْكَ تَبَارَكْتَ وَتَعَالَيْتَ أَسْتَغْفِرُكَ وَأَتُوبُ إِلَيْكَ 

“ওয়াজ্জাহতু ওয়াজহিয়া লিল্লাযী ফাত্বারাস্‌ সামাওয়াতি ওয়াল আরদা হানীফাও ওয়ামা আনা মিনাল মুশরিকীন। ইন্না সলাতী ওয়া নুসুকী ওয়া মাহয়ায়া ওয়া মামাতী লিল্লাহী রাব্বিলআলামীন। লা শারীকা লাহু ওয়া বিযালিকা উমিরতু ওয়া আনা আওয়ালুল মুসলিমীন। আল্লহুম্মা আনতাল মালিকু লা ইলাহা লী ইল্লা আনতা, আনতা রাব্বি ওয়া আনাআবদুকা। যালামতু নাফসী ওয়াতারাফতু বিযামবী ফাগফিরলী যুনূবী জামীআন। লা ইয়াগফিরুয যুনুবা ইল্লা আনতা ওয়াহদিনী লি-আহসানীল আখলাক্ব। লা ইয়াহদিনী লি-আহসানিহা ইল্লা আনতা ওয়াসরিফআন্নী সাইয়্যিআহা, লা ইয়াসরিফু সাইয়্যিআহা ইল্লা আনতা। লাব্বাইকা ওয়া সাদাইকা ওয়াল- খায়রু কুল্লুহূ ফী ইয়াদাইকা, ওয়াশ শাররু লাইসা ইলাইকা আনাবিকা ওয়া ইলাইকা তাবারাকতা ওয়া তাআলাইতা আসতাগফিরুকা ওয়া আতূবু ইলাইকা।”

অতঃপর রুকুকালে তিনি এ দুআ পাঠ করতেনঃ

اللَّهُمَّ لَكَ رَكَعْتُ وَبِكَ آمَنْتُ وَلَكَ أَسْلَمْتُ خَشَعَ لَكَ سَمْعِي وَبَصَرِي وَمُخِّي وَعِظَامِي وَعَصَبِي ‏

“আল্লাহুম্মা লাকা রাকাতু ওয়া বিকা আমানতু ওয়া লাকা আসলামতু, খাসাআ লাকা সামঈ ওয়া বাসারী ওয়া মুখয়ী ওয়াইযামী ওয়াআসাবী।”

তারপর রুকু হইতে মাথা উঠিয়ে তিনি এ দুআ পাঠ করতেনঃ

 سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ مِلْءَ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ وَمِلْءَ مَا بَيْنَهُمَا وَمِلْءَ مَا شِئْتَ مِنْ شَىْءٍ بَعْدُ

“সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ্‌, রাব্বানা লাকাল হাম্‌দ মিলউস সামাওয়াতি ওয়াল আরদি ওয়া মিলউ মা বায়নাহুম ওয়া মিলউ মাশিতা মিন শাইয়ান বাদু।”

তারপর সাজদাহ্‌র সময় এ দুআ পাঠ করতেনঃ

 اللَّهُمَّ لَكَ سَجَدْتُ وَبِكَ آمَنْتُ وَلَكَ أَسْلَمْتُ سَجَدَ وَجْهِي لِلَّذِي خَلَقَهُ وَصَوَّرَهُ فَأَحْسَنَ صُورَتَهُ وَشَقَّ سَمْعَهُ وَبَصَرَهُ وَتَبَارَكَ اللَّهُ أَحْسَنُ الْخَالِقِينَ 

“আল্লাহুম্মা লাকা সাজাদতু ওয়া বিকা আমানতু ওয়া লাকা আসলামতু। সাজাদা ওয়াজহিয়া লিল্লাযী খালাকাহু ওয়া সাওয়ারাহু ফাআহ্‌সানা সূরাতাহু ওয়া শাক্বা সামআহু ওয়া বাসারাহু ওয়া তাবারাকাল্লাহু আহ্‌সানুল খালিক্বীন।”

তারপর নামায শেষে সালাম ফিরিয়ে তিনি এ দুআ পাঠ করতেনঃ

 اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي مَا قَدَّمْتُ وَمَا أَخَّرْتُ وَمَا أَسْرَرْتُ وَمَا أَعْلَنْتُ وَمَا أَسْرَفْتُ وَمَا أَنْتَ أَعْلَمُ بِهِ مِنِّي أَنْتَ الْمُقَدِّمُ وَالْمُؤَخِّرُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ

“আল্লাহুম্মাগফিরলী মা ক্বাদ্দামতু ওয়ামা আখ্‌খারতু, ওয়ামা আসসারতু ওয়ামা আলানতু ওয়ামা আসরাফতু ওয়ামা আনতা আলামু বিহী মিন্নী। আনতাল মুক্বাদ্দিমু ওয়াল মুআখখিরু লা-ইলাহা ইল্লা আনতা।”

সহীহঃ মুসলিম। নামাজের সানা – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৭৬১. আলী ইবনি আবু ত্বালিব (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) ফরয নামাজে দাঁড়িয়ে তাকবীরে তাহরীমা বলে দু হাত কাঁধ পর্যন্ত উঠাতেন। তিনি ক্বিরাআত পাঠ শেষে রুকুতে গমনকালে এবং রুকু হইতে উঠার সময়ও অনুরূপ করতেন। তবে তিনি বসা অবস্থায় হাত উত্তোলন করতেন না। তিনি দু সাজদাহ্‌র শেষে (অর্থাৎ দু রাকআত আদায় শেষে) উঠার সময়ও অনুরূপভাবে হাত উঠাতেন এবং তাকবীর বলে আবদুল আযীয বর্ণিত পূর্বোক্ত হাদীসে উল্লিখিত দুআ পাঠ করতেন। তবে এ বর্ণনায় দুআ কিছুটা কম-বেশী রহিয়াছে এবং

 وَالْخَيْرُ كُلُّهُ فِي يَدَيْكَ وَالشَّرُّ لَيْسَ إِلَيْكَ 

“ওয়াল খায়রু কুল্লুহু ফী ইয়াদাইকা ওয়াশ শাররু লাইসা ইলাইকা”

– বাক্যটির উল্লেখ নেই। বর্ণনাকারী এতে আরো উল্লেখ করেন যে, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) নামায শেষে বললেনঃ

اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي مَا قَدَّمْتُ وَأَخَّرْتُ وَمَا أَسْرَرْتُ وَأَعْلَنْتُ أَنْتَ إِلَهِي لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ

“আল্লাহুম্মাগফিরলী মা ক্বাদ্দামতু ওয়া আখখারতু ওয়া আসরারতু ওয়াআলানতু আনতা ইলাহী লা ইলাহা ইল্লা আনতা।”

নামাজের সানা – হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহিহ

৭৬২. শুআইব ইবনি আবু হামযাহ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, মুহাম্মাদ ইবনিল মুনকাদির, ইবনি আবু ফারওয়াহ এবং মাদীনাহ্‌র অন্যান্য ফাক্বীহ্‌গণ আমাকে বলেছেন, উপরোক্ত দুআ পাঠকালে তুমি

 وَأَنَا أَوَّلُ الْمُسْلِمِينَ

“ওয়া আনা আওয়ালুল মুসলিমীন”

এর স্থলে

‏ وَأَنَا مِنَ الْمُسْلِمِينَ

“ওয়া আনা মিনাল-মুসলিমীন”

বাক্যটি বলবে।

নামাজের সানা – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ মাকতু

৭৬৩. আনাস ইবনি মালিক (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, এক ব্যক্তি দ্রুত গতিতে ক্লান্ত অবস্থায় মাসজিদে (নামাজে) উপস্থিত হয়ে বলিল,

“আল্লাহু আকবার আলহামদু লিল্লাহি হামদান কাসীরান ত্বাইয়্যিবান মুবারাকান ফীহ।”

অতঃপর রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) নামায শেষে জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমাদের মধ্যকার কে এ দুআটি পড়েছে? সে তো মন্দ কিছু বলেনি। তখন লোকটি বলিল, আমি হে আল্লাহর রাসূল! আমি ক্লান্ত অবস্থায় মাসজিদে এসে এ দুআটি পড়েছি। রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেনঃ আমি দেখিতে পেলাম, বারজন মালায়িকাহ্‌ (ফেরেশতা) এজন্য প্রতিযোগীতায় ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েছে যে, কে সর্বাগ্রে দুআটি আল্লাহর দরবারে নিয়ে যাবেন। বর্ণনাকারী হুমায়িদের বর্ণনায় আরো রহিয়াছে, তোমাদের কেউ (মাসজিদে) এলে যেন স্বাভাবিক গতিতে আসে। অতঃপর ইমামের সাথে যেটুকু নামায পাবে আদায় করিবে এবং নামাজের ছুটে যাওয়া অংশ (ইমামের সালাম ফিরানোর পর) একাকী আদায় করে নিবে।

সহীহঃ মুসলিমে অতিরিক্ত অংশ বাদে। নামাজের সানা – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৭৬৪. ইবনি জুবায়ির ইবনি মুত্বঈম হইতে তাহাঁর পিতার হইতে বর্ণিতঃ

তিনি রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ)-কে কোন এক নামায আদায় করতে দেখেছেন। বর্ণনাকারীআমর বলেন, সেটা কোন নামায ছিল (ফরয না নফল) তা আমার জানা নেই। তিনি (সাঃআঃ) (নামায আদায়কালে) বলেছেন,

اللَّهُ أَكْبَرُ كَبِيرًا اللَّهُ أَكْبَرُ كَبِيرًا اللَّهُ أَكْبَرُ كَبِيرًا وَالْحَمْدُ لِلَّهِ كَثِيرًا وَالْحَمْدُ لِلَّهِ كَثِيرًا وَالْحَمْدُ لِلَّهِ كَثِيرًا وَسُبْحَانَ اللَّهِ بُكْرَةً وَأَصِيلاً ‏

“আল্লাহু আকবার কাবীরান, আল্লাহু আকবার কাবীরান, আল্লাহু আকবার কাবীরান, আলহামদু লিল্লাহি কাসীরান, আলহাম দুলিল্লাহি কাসীরান, আলহাম দুলিল্লাহি কাসীরান, ওয়া সুবহানাল্লাহি বুকরাতাও ওয়া আসীলা”, (তিনবার)

 أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ مِنْ نَفْخِهِ وَنَفْثِهِ وَهَمْزِهِ 

“আউযু বিল্লাহি মিনাশ শাইত্বনির রাজীমি মিন নাফখিহী ওয়া নাফসিহী ওয়া হামযিহি।”

বর্ণনাকারী (আমর ইবনি মুররাহ) বলেন, নাফখিহী হচ্ছে শাইত্বানের কবিতা, নাফসিহী হচ্ছে শাইত্বানের অহঙ্কার এবং হামযিহি হচ্ছে শাইত্বানের কুমন্ত্রণা। {৭৬৩}

দূর্বলঃ মিশকাত ৮১৭, ইরওয়া ৩৪২। {৭৬৩} ইবনি মাজাহ (অধ্যায়ঃ নামায, অনুঃ নামাজে আশ্রয় প্রার্থণা করা, হাঃ ৮০৭), তায়ালিসি (৯৪৭), ইবনি জারুদ (৯৬), আহমাদ (৪/৮৫), ত্বাবারানীকাবীর এবং ইবনি হাজমমুহাল্লা (৩/২৪৮)। সানাদেরআসিম ইবনিআনাযীকে কেউ সিক্বাহ বলেননি। কেবল ইবনি হিব্বান তাকেসিক্বাত গ্রন্থে উল্লেখ করিয়াছেন। কিন্তু সেখানে তার নাম নিয়ে মতভেদ আছে। সম্ভবতঃ এ কারনে ঈমাম বোখারি বলেছেনঃ সহিহ নয়। তবে হাদিসটির এ সানাদ যদিও দূর্বল কিন্তু এর শাওয়াহিদ বর্ণনাবলীর কারনে হাদিসটি সহিহ। (বিস্তারিত দেখুন, ইরওয়াউল গালীল, ৩৪২ নং) নামাজের সানা – হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৭৬৫

নাফি ইবনি জুবায়ির (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে তাহাঁর পিতার হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি নাবী (সাঃআঃ)-কে নফল নামায আদায়কালে বলিতে শুনিয়াছি ….. পূর্বোক্ত হাদিসের অনুরূপ। {৭৬৪}

{৭৬৪} পূর্বের হাদীসে গত হয়েছে।

নামাজের সানা – হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৭৬৬. আসিম ইবনি হুমায়িদ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) রাতের নামায কিসের দ্বারা আরম্ভ করতেন সে সম্পর্কে আমি আয়েশা (রাঃআঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, তুমি আমাকে এমন একটি প্রশ্ন করেছ যা ইতোপূর্বে কেউ করেনি। অতঃপর তিনি বলেন, তিনি নামাজে দাঁড়িয়ে প্রথমে

দশবার আল্লাহু আকবার,

দশবার আলহামদুলিল্লাহ,

দশবার সুবহানাল্লাহ,

দশবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এবং

দশবার আস্তাগফিরুল্লাহ

বলিতেন। তারপর এ দুআ পড়তেনঃ

“আল্লাহুম্মাগফির লী ওয়াহদিনী ওয়ারযুকনী, ওয়াআফিনী।”

এছাড়া তিনি ক্বিয়ামাতের দিনের সংকীর্ণ স্থান হইতে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থণা করতেন। {৭৬৫}

হাসান সহিহ। ঈমাম আবু দাউদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, বর্ণনাকারী খালিদ ইবনি মাদান রবীআহ হইতেআয়িশা (রাঃআঃ) সূত্রেও অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন। নামাজের সানা – হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহিহ

৭৬৭. আবদুর রহমান ইবনিআওফ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমিআয়েশা (রাঃআঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) রাতের নামায কিসের দ্বারা আরাম্ভ করতেন? তিনি বলিলেন, তিনি রাতে দন্ডায়মান হয়ে এ দুআ দ্বারা নামায আরাম্ভ করতেনঃ

اللَّهُمَّ رَبَّ جِبْرِيلَ وَمِيكَائِيلَ وَإِسْرَافِيلَ فَاطِرَ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ عَالِمَ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ أَنْتَ تَحْكُمُ بَيْنَ عِبَادِكَ فِيمَا كَانُوا فِيهِ يَخْتَلِفُونَ اهْدِنِي لِمَا اخْتُلِفَ فِيهِ مِنَ الْحَقِّ بِإِذْنِكَ إِنَّكَ أَنْتَ تَهْدِي مَنْ تَشَاءُ إِلَى صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ 

“আল্লাহুম্মা রাব্বা জিবরীলা ওয়া মীকাঈলা ওয়া ইসরাফিলা ফাত্বিরাস্ সামাওয়াতি ওয়াল আরদা,আলিমুল গায়বি ওয়াশ শাহাদাতি, আনতা তাহকুমু বাইনাইবাদিকা ফীমা কানূ ফীহি ইয়াখতালিফূন। ইহ্দিনী লিমাখতুলিফা ফীহি মিনাল হাক্বক্বি বি-ইযনিকা, ইন্নাকা আনতা তাহদী মান তাশাউ ইলা সিরাত্বিম মুসতাক্বীম।”

হাসানঃ মুসলিম। নামাজের সানা – হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

৭৬৮. ইকরামাহ হইতে বর্ণিতঃ

ইকরামাহ একই সানাদে ভিন্ন শব্দে ও অর্থে হাদিসটি বর্ণনা করিয়াছেন। তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) রাতে (তাহাজ্জুদ) নামাজে দাঁড়িয়ে আল্লাহু আকবার উচ্চারণ করে বলিতেন … (হাদিস)।

নামাজের সানা – হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

৭৬৯. মালিক (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, ফারয ও নাফল যে কোন নামাজেই নামাজের প্রথমে, মাঝে বা শেষ দিকের যে কোন সময়ে দুআ পড়া যায়।

নামাজের সানা – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ মাকতু

৭৭০. রিফাআহ ইবনি রাফি আয-যুরাকী (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, কোন একদিন আমরা রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) -এর পিছনে নামায আদায় করছিলাম। সে সময় রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) রুকু হইতে মাথা উঠিয়ে

 سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ 

সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ্

বললে এক ব্যক্তি বলে উঠেন-

اللَّهُمَّ رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ حَمْدًا كَثِيرًا طَيِّبًا مُبَارَكًا فِيهِ

আল্লাহুম্মা রাব্বানা ওয়া লাকাল হামদ, হামদান কাসীরান ত্বাইয়্যিবান মুবারাকান ফীহ”।

নামায শেষে রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলিলেন, এ দুআ পাঠকারী কে? লোকটি বলিল, হে আল্লাহর রাসূল! আমি। রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলিলেন, আমি দেখলাম, তিরিশেরও অধিক মালিয়িকাহ্ (ফেরেশতা) তা সর্বাগ্রে লিপিবদ্ধ করার জন্য প্রতিযোগিতা করছে।

সহীহঃ বোখারি। নামাজের সানা – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৭৭১. ইবনি আব্বাস  (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) মধ্য রাতে (তাহাজ্জুদ) নামাজে দন্ডায়মান হয়ে বলিতেনঃ

“আল্লাহুম্মা লাকাল হামদু আনতা নূরুস-সামাওয়াতি ওয়াল-আরদি, ওয়া লাকাল-হামদু আনতা রব্বুস-সামাওয়াতি ওয়াল-আরদি, ওয়া মান ফীহিন্না, আনতাল হাক্কু, ওয়া ক্বাওলুকাল-হাক্কু, ওয়া ওয়াদুকাল-হাক্কু, ওয়া লিক্বাউকা হাক্কুন, ওয়াল জান্নাতু হাক্কুন, ওয়ান-নারু হাক্কুন, ওয়াস্-সাআতু হাক্কুন। আল্লাহুম্মা লাকা আসলামতু ওয়া বিকা আমানতু ওয়াআলাইকা তাওয়াক্কালতু ওয়া ইলাইকা আনাবতু ওয়া বিকা খাসমতু, ওয়া ইলাইকা হাকামতু ফাগফির লী মা ক্বাদ্দামতু ওয়া আখ্খারতু ওয়া আসরারতু ওয়া আলানতু, আনতা ইলাহী, লা ইলাহা ইল্লা আনতা।” {৭৭০}

সহীহঃ বোখারি ও মুসলিম। নামাজের সানা – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৭৭২. ইবনি আব্বাস  (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) রাতে তাহাজ্জুদ নামাজে আল্লাহু আকবার বলার পর বলিতেন…. পূর্ববর্তী হাদিসের অনুরূপ।

সহীহঃ মুসলিম। নামাজের সানা – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৭৭৩. মুআয ইবনি রিফাআহ ইবনি রাফি হইতে তাহাঁর পিতার হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একদা আমি রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) -এর পেছনে নামায আদায় করি। এমন সময় রিফাআহ হাঁচি দিয়ে বলেন,

 الْحَمْدُ لِلَّهِ حَمْدًا كَثِيرًا طَيِّبًا مُبَارَكًا فِيهِ مُبَارَكًا عَلَيْهِ كَمَا يُحِبُّ رَبُّنَا وَيَرْضَى 

আলহামদুলিল্লাহি হামদান কাসীরান তাইয়্যিবান মুবারাকান ফীহি মুবারাকান আলাইহি কামা ইউহিব্বু রব্বুনা ওয়া ইয়ারদা।”

নামায শেষে রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেনঃ নামাজের মধ্যে এ দুআটি কে পাঠ করেছে? অতঃপর অবশিষ্ট হাদিস মালিক বর্ণিত পূর্ববর্তী হাদিসের অনুরূপ।

নামাজের সানা – হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

৭৭৪. আবদুল্লা ইবনিআমির হইতে তাহাঁর পিতার হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একদা রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) -এর পেছনে নামায আদায়কালে আনসার গোত্রের জনৈক যুবক হাঁচি দিয়ে বলিল,

 الْحَمْدُ لِلَّهِ حَمْدًا كَثِيرًا طَيِّبًا مُبَارَكًا فِيهِ حَتَّى يَرْضَى رَبُّنَا وَبَعْدَ مَا يَرْضَى مِنْ أَمْرِ الدُّنْيَا وَالآخِرَةِ 

“আলহামদু লিল্লাহে হামদান কাসীরান তাইয়্যিবান মুবারাকান ফীহি হাত্তা ইয়ারদা রব্বুনা ওয়া বাদু মা ইয়ারদা মিন আমরিদ্-দুনয়া ওয়াল-আখিরাহ।”

নামায শেষে রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলিলেন, এ কথাগুলো কে বলেছে? যুবকটি এ সময় নিরব থাকল। তিনি পুনরায় বলিলেন, এ কথাগুলো কে বলেছে? সে তো মন্দ কিছু বলেনি। তখন যুবকটি বলিল, হে আল্লাহর রাসূল! এগুলো আমিই বলেছি এবং আমি ভাল উদ্দেশ্যই বলেছি। তিনি বললেনঃ এ উক্তিগুলো কোথাও অপেক্ষা করেনি, বরং মহীয়ান রহমানের আরশে পৌঁছে গেছে। {৭৭৩}

নামাজের সানা – হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

অনুচ্ছেদ-১২২ যারা বলেন, সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা বলে নামায শুরু করতে হইবে

৭৭৫. আবু সাঈদ আল-খুদরী (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) রাতে নামাজের জন্য দন্ডায়মান হলে তাকবীরে তাহরীমা বলার পর এ দুআ পড়তেনঃ

“সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা ওয়া তাবারাকাসমুকা ওয়া তাআলা জাদ্দুকা ওয়া লা ইলাহা গায়রুকা।”

অতঃপর তিনবার

 لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ

“লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু”

‏ اللَّهُ أَكْبَرُ كَبِيرًا 

তিনবার “আল্লাহু আকবার কাবীরান”

বলার পর

 أَعُوذُ بِاللَّهِ السَّمِيعِ الْعَلِيمِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ مِنْ هَمْزِهِ وَنَفْخِهِ وَنَفْثِهِ 

“আউযু বিল্লাহিস সামিইল-আলীমি মিনাশ-শাইত্বানির রজীম মিন হামযিহি ওয়া নাফখিহি ওয়া নাফসিহি”

বলিতেন। তারপর ক্বিরাআত পাঠ করতেন।

নামাজের সানা – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৭৭৬. আয়েশা (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) নামায আরম্ভকালে এ দুআ পড়তেনঃ

‏ سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ وَتَبَارَكَ اسْمُكَ وَتَعَالَى جَدُّكَ وَلاَ إِلَهَ غَيْرُكَ

“সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা ওয়া তাবারাকাসমুকা ওয়া তাআলা জাদ্দুকা ওয়া লা ইলাহা গায়রুকা।”

নামাজের সানা – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ১২৩ নামাজের শুরুতে চুপ থাকা

৭৭৭. আল-হাসান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, সামুরাহ (রাঃআঃ) বলেন, নামাজে নিশ্চুপ থাকার দুটি স্থান (দু সাকতা) আমি স্মরণ রেখেছি। প্রথম সাকতা হলো ইমামের তাকবীরে তাহরীমা বলা থেকে ক্বিরাআত আরাম্ভ করা পর্যন্ত। আর দ্বিতীয় সাকতা হলো ইমামের সূরাহ ফাতিহা ও অন্য সূরাহ পড়ার পর রুকুতে যাওয়ার পূর্বে। কিন্তু ইমরান ইবনি হুসায়িন (রাঃআঃ) একথা মেনে নিতে অস্বীকার করেন। ফলে তারা এ বিষয়ে জানার জন্য মাদীনাহইতে উবাই ইবনি কাব (রাঃআঃ)-এর নিকট পত্র লিখে পাঠালে তিনি সামুরাহ (রাঃআঃ)-এর বর্ণনাকে সত্যায়িত করেন। {৭৭৬}

দুর্বল। ঈমাম আবু দাউদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, এ হাদীসে হুমায়িদও অনুরূপভাবে বলেছেন যে, ক্বিরাআত শেষে একটি সাকতা রহিয়াছে। হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৭৭৮. সামুরাহ ইবনি জুনদুব (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) নামাজে দুজায়গায় চুপ থাকতেন। নামায আরাম্ভকালে (অর্থাৎ তাকবীরে তাহরীমা বলার পর) এবং ক্বিরাআত শেষ করার পর …. অতঃপর ইউনুস সূত্রে বর্ণিত হাদিসের অনুরূপ। {৭৭৭}

হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৭৭৯. আল-হাসান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

একদা সামুরাহ ইবনি জুনদুব ওইমরান ইবনি হুসায়িন (রাঃআঃ) পরস্পরে আলোচনাকালে প্রসঙ্গক্রমে সামুরাহ (রাঃআঃ) বর্ণনা করেন যে, তিনি রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) থেকে নামাজের দু স্থানে চুপ থাকা (দু সাকতা) সম্পর্কিত জ্ঞান হিফয করিয়াছেন। প্রথম সাকতা হচ্ছে তাকবীরে তাহরীমা বলার পর এবং দ্বিতীয় সাকতা হচ্ছে, “গাইরিল মাগযূবিআলাইহিম ওয়ালায্যলীন” পাঠের পর। সামুরাহ ইবনি জুনদুব (রাঃআঃ) বিষয়টি স্মরণ রাখলেওইমরান ইবনি হুসায়িন (রাঃআঃ) তা অস্বীকার করেন বসেন। ফলে তাঁরা দুজনেই এ বিষয়ে জানার জন্য উবাই ইবনি কাব-এর নিকট পত্র লিখেন। তিনি তাঁদের পত্রের জবাবে লিখেন যে, সামুরাহ (রাঃআঃ) বিষয়টি যথাযথ স্মরণ রেখেছেন। {৭৭৮}

দুর্বলঃ মিশকাত ৮১৮। হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৭৮০. সামুরাহ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নামাজে দুস্থানে চুপ থাকা সম্পর্কিত জ্ঞান আমি রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) -এর কাছে হিফয করেছি। বর্ণনাকারী সাঈদ বলেন, আমরা ক্বাতাদাহ্ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-কে দুস্থানে চুপ থাকা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, যখন কেউ নামায আরাম্ভ করিবে এবং যখন ক্বিরাআত শেষ করিবে (তখন চুপ থাকিবে)। পরে তিনি বলেন, (ক্বিরাআত শেষ করা অর্থ হচ্ছে) যখন কেউ গাইরিল মাগযূবিআলাইহিম ওয়ালায্যলীন বলবে। {৭৭৯}

হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৭৮১. আবু হুরাইরাহ্ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) তাকবীরে তাহরীমা বলার পর তাকবীর ও কিরাআতের মধ্যবর্তী সময়ে চুপ থাকতেন। ফলে আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য কুরবান হোক, আপনি তাকবীরে তাহরীমা ও কিরাআতের মধ্যবর্তী সময়ে কেন চুপ থাকেন তা আমাকে অবহিত করুন। তিনি বলিলেন, (এ সময় আমি নিশ্চুপে এ দুআ পড়ে থাকি)ঃ

 اللَّهُمَّ بَاعِدْ بَيْنِي وَبَيْنَ خَطَايَاىَ كَمَا بَاعَدْتَ بَيْنَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ اللَّهُمَّ أَنْقِنِي مِنْ خَطَايَاىَ كَالثَّوْبِ الأَبْيَضِ مِنَ الدَّنَسِ اللَّهُمَّ اغْسِلْنِي بِالثَّلْجِ وَالْمَاءِ وَالْبَرَدِ

“আল্লাহুম্মা বাঈদ বাইনী ওয়া বাইনা খত্বা ইয়া ইয়া কামা বাআদতা বাইনাল মাশরিক্বি ওয়াল মাগরিব। আল্লাহুম্মা আনকিনী মিন খত্বা ইয়া ইয়া কাসাওবিল আবয়াযি মিনাদ দানাস। আল্লাহুম্মা মাগসিলনী বিস সালজি ওয়াল মায়ি ওয়াল বারদ।”

সহীহঃ বোখারি ও মুসলিম। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ১২৪ সশব্দে বিসমিল্লাহ না বলা প্রসঙ্গে

৭৮২. আনাস (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) আবু বকর (রাঃআঃ),উমার (রাঃআঃ) ওউসমান (রাঃআঃ) “আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিলআলামিন” হইতে ক্বিরাআত আরাম্ভ করতেন।

সহীহঃ বোখারি ও মুসলিম। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৭৮৩. আয়েশা (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) নামায শুরু করতেন তাকবীরে তাহরীমার দ্বারা আর ক্বিরাআত শুরু করতেন আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিলআলামীন দ্বারা। তিনি রুকুতে স্বীয় মাথা উঁচুও করতেন না আবার নীচুও করতেন না বরং পিঠের সাথে সমান্তরাল করে রাখতেন। তিনি রুকু হইতে সোজা হয়ে দাঁড়ানোর পূর্বে সিজদায় যেতেন না এবং এক সাজদাহর পর সোজা হয়ে বসার পূর্বে দ্বিতীয় সাজদাহ্ করতেন না। তিনি প্রত্যেক দু রাকআত নামায শেষে আত্তাহিয়্যাতু (তাশাহুদ) পড়তেন। অতঃপর বসার সময় বাম পা বিছিয়ে দিয়ে ডান পা খাড়া করে রাখতেন। তিনি শাইত্বানের ন্যায় (দু গোড়লির উপর পাছা রেখে) বসতে এবং চতুষ্পদ জন্তুর ন্যায় (মাটিতে দু হাত বিছিয়ে) সাজদাহ্ করতে নিষেধ করতেন। তিনি সালামের দ্বারা নামায সমাপ্ত করতেন।

সহীহঃ মুসলিম। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৭৮৪. আনাস ইবনি মালিক (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেনঃ এইমাত্র আমার উপর একটি সূরাহ অবতীর্ণ হয়েছে। অতঃপর তিনি পড়লেনঃ “বিসমিল্লা-হির রহমা-নির রহীম, ইন্না আত্বায়না কাল-কাওসার….” সূরাটি শেষ পর্যন্ত। তিনি বলিলেন, তোমরা কি জান! কাওসার কী? তাঁরা বলিলেন, এ বিষয়ে আল্লাহ এবং তাহাঁর রসূল (সাঃআঃ) -ই সর্বাধিক অবগত। তিনি বলিলেন, তা হচ্ছে একটি নাহর, আমার রব্ব আমাকে জান্নাতে তা দান করবেন বলে অঙ্গীকার করিয়াছেন।

হাসানঃ মুসলিম। হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

৭৮৫. উরওয়াহ হইতেআয়েশা (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি ইফকের ঘটনা উল্লেখ পূর্বক বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বসা ছিলেন। (অতঃপর ওয়াহী হওয়া শেষে) তিনি মুখ খুলে বলিলেন,

 أَعُوذُ بِالسَّمِيعِ الْعَلِيمِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ

আউযু বিস্ সামিইলআলীম মিনাশ শাইত্বনির রজীম,

 إِنَّ الَّذِينَ جَاءُوا بِالإِفْكِ عُصْبَةٌ مِنْكُمْ

ইন্নাল্লাযীনা জাউ বিল-ইফকিউসবাতুম মিনকুম…”

আয়াতের শেষ পর্যন্ত। অর্থঃ “যারা মিথ্যা অপপ্রচার করেছে তারা তোমাদের মধ্যেরই লোক….।” {৭৮৪}

দুর্বল। ঈমাম আবু দাউদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, এ হাদিসটি মুনকার। কারণ একদল এ হাদিসটি ঈমাম যুহরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) সূত্রে বর্ণনা করিয়াছেন। তাহাঁদের বর্ণনায় উক্ত আয়াতের সাথে আউযু বিল্লাহ্-এর উল্লেখ নেই। আমরা আশঙ্কা হচ্ছে আউযু বাক্যটি বর্ণনাকারী হুমায়িদের উক্তি। হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

অনুচ্ছেদ১২৫ সশব্দে বিসমিল্লাহ পাঠের বর্ণনা

৭৮৬. ইবনি আব্বাস  (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমিউসমান(রাঃআঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনারা কিভাবে সূরাহ বারাআতকে সূরাহ আল-আনফালের অন্তর্ভুক্ত করে আল-কুরআনের সাবউল মাসানী (সাতটি দীর্ঘ সূরাহ)-এর মধ্যে গণ্য করেন এবং উভয় সূরার মধ্যস্থলে বিসমিল্লা-হির রহমা-নির রহীম কেন লিখেন না? অথচ সূরাহ্ বারাআত মিআতাইন (তথা ১০০-এর অধিক আয়াত সম্বলিত সূরাহ্)-এর অন্তর্ভুক্ত (কারণ সূরাহ্ বারাআতে ১২৯টি আয়াত আছে)। পক্ষান্তরে সূরাহ আল-আনফাল মাসানীর অন্তর্ভুক্ত (কারণ তাতে আয়াতের সংখ্যা ১০০-এর কম অর্থাৎ ৭৫ টি)।উসমান (রাঃআঃ) বলেন, নাবী (সাঃআঃ) -এর উপর কোন আয়াত অবতীর্ণ হওয়া মাত্রই তিনি ওয়াহী লিখক সাহাবীদের ডেকে বলিতেনঃ এ আয়াত অমুক সূরাহর অমুক স্থানে সন্নিবেশিত কর যেখানে এই এই বিষয় আলোচিত হয়েছে। তাহাঁর উপর একটি অথবা দুটি আয়াত অবতীর্ণ হলেও তিনি ঐরুপ বলিতেন। সূরাহ আল-আনফাল হচ্ছে মাদীনাহইতে আগমণের পরপরই নাবী (সাঃআঃ) -এর উপর অবতীর্ণ সূরাহ সমূহের অন্যতম সূরাহ। আর সূরাহ বারাআত হচ্ছে কুরআন অবতীর্ণের শেষ পর্যায়ে নাযিলকৃত সূরাহ সমূহের অন্যতম। তথাপি সূরাহ আল-আনফালের ঘটনাবলীর সাথে সূরাহ বারাআতে বর্ণিত ঘটনাবলীর সাদৃশ্য আছে। সেজন্য আমার মনে হলো, এটি সূরাহ্ আল-আনফালের অন্তর্ভুক্ত। তাই আমি সূরাহ দুটি একত্রে সাবউ-তিওয়াল-এর অন্তর্ভুক্ত করি এবং এ উভয় সূরাহ মধ্যস্থলে বিসমিল্লাহ-হির রহমা-নির রহীম লিখি নাই। {৭৮৫}

হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৭৮৭. ইবনি আববাস (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

এ সানাদে পূর্বোক্ত হাদিসের অনুরূপ বর্নিত আছে।তিনি বলেছেন রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) ইন্তেকাল করিয়াছেন। কিন্তু সূরা্হ আনফালের অন্তর্ভুক্ত কিনা এ ব্যাপারে তিনি পরিস্কারভাবে কিছুই বলেননি। ঈমাম দাউদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন,শাবী, আবু মালিক, ক্বাতাদা্হ ও সাবিতইবনি উমারা্হ বলেন, নাবী (সাঃআঃ) এর উপর সূরা্হ আন-নামল অবতীর্ন না হওয়া পর্যন্ত তিনি (কোনো সূরাহর শুরুতে) বিসমিল্লাহ লিখেননি।

দুর্বল। হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৭৮৮. ইবনি আব্বাস  (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) এর উপর বিসমিল্লাহ-হির রহমানির রহীম অবতীর্ন না হওয়া পর্যন্ত তিনি কোনো সুরা্র শুরুতে দিক চিহ্নিত করতে পারতেন না।

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ১২৬ কোনো অনিবার্য কারনে নামায সংক্ষেপ করা

৭৮৯. আবদুল্লা ইবনি আবু ক্বাতাদা্হ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে তার পিতার হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেন, আমি কখনো নামায দীর্ঘায়িত করতে চাই, কিন্তু শিশুর কান্নার আওয়াজ শুনে তার মায়ের কষ্টের কথা চিন্তা করে নামায সংক্ষেপ করি।

সহীহঃ বোখারি। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ১২৭ নামায সংক্ষিপ্ত করা

৭৯০. জাবির (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

মুআয (রাঃআঃ) নাবী (সাঃআঃ) এর সাথে নামায আদায়ের পর ফিরে এসে আমাদের নামায ঈমামতি করতেন। বর্ননাকারী পুনরায় বলেন, তিনি ফিরে এসে স্বীয় সম্প্রদায়ের লোকদের নামায ঈমামতি করতেন। এক রাতে নাবী (সাঃআঃ)ইশার নামায আদায়ে বিলম্ব করেন। সেদিনও মুআয (রাঃআঃ) নাবী (সাঃআঃ) এর সাথেইশার নামায আদায়ের পর স্বীয় সম্প্রদায়ের লোকদের নিকট গিয়ে তাহাঁদের ঈমামতি করেন। এবং উক্ত নামাজে তিনি সূরাহ আল-বাক্বারা্হ পাঠ করলে এক ব্যাক্তি জামাআত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে একাকী নামায আদায় করে নেয়। ফলে বলা হলো, হে অমুক! তুমি কি মুনাফিক্ব হয়ে গেলে নাকি? লোকটি বললোঃ আমি মুনাফিক্ব হই নাই। পরে লোকটি নাবী (সাঃআঃ) এর নিকট এসে বলিল, হে আল্লাহর রাসুল! মুআয (রাঃআঃ) আপনার সাথে নামায আদায় শেষে ফিরে গিয়ে আমাদের নামাজের ঈমামতি করেন। আমরা মেহনতি মজদুর লোক এবং নিজেরাই ক্ষেতের কাজ-কর্ম করে থাকি। অথচ মুআয (রাঃআঃ) আমাদের নামায ঈমামতিকালে সূরাহ বাক্বারাহ পড়েন (অর্থাৎ দীর্ঘ সূরাহ পাঠ করে থাকেন)। হে কথা শুনে নাবী (সাঃআঃ) (মুআযকে সম্বোধন করে) বললেনঃ হে মুআয! তুমি কি ফিতনাহ সৃষ্টিকারী? তুমি কি লোকদের ফিতনাহয় ফেলতে চাও? তুমি নামায অমুক অমুক (ছোট) সূরাহ পাঠ করিবে। আবুয যুবায়ির বলেন, সূরাহ আল-আলা, ওয়াল লাইলি, ইযা ইয়াগশা এ ধরনের (ছোট) সুরা্ পাঠ করিবে। অতঃপর আমরা তা (বর্ননাকারী)আমরের নিকট উল্লেখ করলে তিনি বলেন, আমার ধারনা, তিনি সেটাও উল্লেখ করিয়াছেন।

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৭৯১. হাযম ইবনি উবাই ইবনি কাব (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি মুআয ইবনি জাবাল (রাঃআঃ) এর নিকট এমন সময় এলেন যখন তিনি মাগরিব এর নামাজের ঈমামতি করছিলেন। বর্ননাকারী এ হাদীসে বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) মুআয (রাঃআঃ) কে ডেকে বললেনঃ হে মুআয! তুমি ফিতনাহ সৃষ্টিকারী হয়ো না। কেননা তোমার পেছনে বৃদ্ধ, রোগগ্রস্হ, কর্মব্যস্ত, এবং মুসাফির লোকেরা নামায আদায় করে। {৭৯০}

মুসাফিরের উল্লেখের দ্বারা মুনকার। {৭৯০} বায়হাক্বীসুনানুল কুবরা (৩/১১৭) আবু দাউদের সূত্রে। হাদিসের তাহকিকঃ মুনকার

৭৯২. আবু সালি্হ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে নাবী (সাঃআঃ) এর জনৈক সহাবীর হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) এক ব্যাক্তিকে বলিলেন, তুমি নামাজে কি দুআ পাঠ করো? লোকটি বললো, আমি তাশাহহুদ (তথা আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি--) পাঠ করি এবং বলি

 اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْجَنَّةَ وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ النَّارِ

আল্লাহুম্মা ইন্নী আসআলুকাল জান্নাতা ওয়া আউযুবিকা মিনান নার।

কিন্তু আমি আপনার ও মুআযের অস্পস্ট শব্দগুলো বুঝতে পারিনা।

(অর্থাৎ আপনি ও মুআয কি দুআ পড়েন তা বুঝতে সক্ষম হই না)। নাবী (সাঃআঃ) বলেনঃ আমরাও তার আশে পাশে ঘুরে থাকি (অর্থাৎ জান্নাত পার্থনা করি)।

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৭৯৩. জাবির (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি মুআয (রাঃআঃ) এর ঘটনা বর্ননা করে বলেন, নাবী (সাঃআঃ) জনৈক যুবককে বলিলেন, হে ভ্রাতুস্পুত্র! তুমি নামাজে কী পড়? সে বললো ,আমি সুরা্ ফাতিহা পড়ি এবং আল্লাহর কাছে জান্নাতের প্রত্যাশা ও জাহান্নাম হইতে আশ্রয় চাই। আমি আপনার ও মুআয এর অস্পস্ট শব্দগুলো বুঝিনা। (অর্থাৎ আপনি এবং আমাদের ঈমাম মুআয নামায নিরবে কোন কোন শব্দযোগে দুআ ও মুনাজাত করেন তা আমি অবহিত নই)। নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, আমি এবং মুআয উভয়েই আশে-পাশেই ঘুরে থাকি (অর্থাৎ আমরাও জান্নাতের প্রত্যাশা এবং জাহান্নাম হইতে আশ্রয় প্রত্যাশা করি) অথবা অনুরুপ কিছু বলেছেন।

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৭৯৪. আবু হুরাইরা্হ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ নামায ঈমামতিকালে যেন নামায সংক্ষেপ করে। কেননা, মুক্তাদীদের মধ্যে দুর্বল, রুগ্ন, এবং বৃদ্ধ লোকও থাকে। অবশ্য কেও একাকী নামায আদায় করলে সে তার ইচ্ছানুযায়ী নামায দীর্ঘায়িত করতে পারে।

সহিহঃ বোখারি ও মুসলিম। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৭৯৫. আবু হুরাইরা্হ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেন তোমাদের কেও নামাজে ঈমামতি করলে যেনো নামায সংক্ষেপ করে। কারন মুক্তাদীদের মধ্যে দুর্বল ,বৃদ্ধ ও কর্মব্যস্ত লোকেরাও থাকে।

সহিহঃ বোখারি ও মুসলিম। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-১২৮ নামাজের জন্য ক্ষতিকর দিক

৭৯৬. আম্মার ইবনি ইয়াসির (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ)-কে বলিতে শুনেছিঃ এমন লোকও আছে (যারা নামায আদায় করা সত্ত্বেও নামাজের রুকুন ও শর্তগুলো সঠিকভাবে আদায় না করায় এবং নামাজে পরিপূর্ণ একাগ্রতা ও খুশু-খুযু না থাকায় তারা নামাজের পরিপূর্ন সাওয়াব পায় না)। বরং তারা দশ ভাগের এক ভাগ, নয় ভাগের এক ভাগ, আট ভাগের এক ভাগ, সাত ভাগের এক ভাগ, ছয় ভাগের এক ভাগ, পাঁচ্ ভাগের এক ভাগ, চার ভাগের এক ভাগ, তিন ভাগের এক ভাগ, বা অর্ধাংশ সাওয়াব প্রাপ্ত হয়।

হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস


Posted

in

by

Tags:

Comments

Leave a Reply