মসজিদ নির্মাণ সম্পর্কে হাদিস – মসজিদে বাতি জ্বালানো
মসজিদ নির্মাণ সম্পর্কে হাদিস – মসজিদে বাতি জ্বালানো >>আবুদ দাউদ শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন
অধ্যায়ঃ ২, অনুচ্ছেদঃ ১২-১৬ =৫টি
অনুচ্ছেদ-১২ মসজিদ নির্মাণ সম্পর্কে
অনুচ্ছেদ-১৩ পাড়ায় পাড়ায় মসজিদ নির্মাণ করা
অনুচ্ছেদ-১৪ মসজিদে বাতি জ্বালানো
অনুচ্ছেদ-১৫ মসজিদের কঙ্কর প্রসঙ্গে
অনুচ্ছেদ-১৬ মসজিদ ঝাড়ু দেয়া
অনুচ্ছেদ-১২ মসজিদ নির্মাণ সম্পর্কে
৪৪৮. ইবনি আব্বাস (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ আমাকে উঁচু করে মাসাজিদ বানানোর নির্দেশ দেয়া হয়নি। ইবনি আব্বাস বলেন, তোমরা (অচিরেই) মাসাজিদ সমূহকে এমনভাবে সুসজ্জিত ও কারুকার্যময় করিবে যেরূপ ইয়াহূদী ও খৃষ্টানরা (তাহাঁদের উপাসনালয়) সুসজ্জিত করে থাকে।
মসজিদ নির্মাণ সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৪৯. আনাস (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ লোকেরা মসজিদ নিয়ে পরস্পর গৌরব ও অহঙ্কারে মেতে উঠা না পর্যন্ত ক্বিয়ামাত সংঘটিত হইবে না।
মসজিদ নির্মাণ সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৫০. উসমান ইবনি আবুলআস (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) তাকে তায়িফের ঐ স্থানে মসজিদ নির্মাণের নির্দেশ দিলেন যেখানে মুশরিকদের মূর্তিসমূহ স্থাপিত ছিল।
হাদিস থেকে শিক্ষাঃ কাফিরদের উপাসনালয়ের স্থানসমূহ মুসলমানদের করতলে এসে গেলে সেখানে আল্লাহ্র ইবাদাতের উদ্দেশ্যে মসজিদ নির্মাণ করা জায়িয আছে। মসজিদ নির্মাণ সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
৪৫১.আবদুল্লা ইবনি উমার (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) -এর যুগে মসজিদে নাববী নির্মাণ করা হয়েছিল ইট ও খেজুর পাতা দ্বারা। তার খুঁটি ছিল খেজুর কাঠের। আবু বকর (রাঃআঃ) (স্বীয় শাসনামলে) মসজিদকে সম্প্রসারণ করেননি। তবেউমার (রাঃআঃ) সম্প্রসারন করিয়াছেন, কিন্তু রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) -এর যুগের ভিত্তির উপরই তিনি ইট ও খেজুর পাতা দিয়ে তা নির্মাণ করান এবং নতুন কিছু স্তম্ভ স্থাপন করেন। তার স্তম্ভ ছিল খেজুর কাঠের। পরেউসমান (রাঃআঃ) তা পরিবর্তন করে মসজিদকে অনেক সম্প্রসারিত করেন। তিনি নকশাযুক্ত পাথর ও চুনা দিয়ে তার দেয়াল তৈরি করেন, নকশাযুক্ত পাথর খচিত খুঁটি নির্মাণ করেন এবং ছাদ নির্মাণ করেন সেগুন কাঠ দ্বারা। মুজাহিদ বলেন, তার ছাদ ছিল সেগুন কাঠের। ঈমাম আবু দাউদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আলক্বচ্ছতু হলো চুন বা প্লাস্টার।
সহীহঃ বোখারি ও মুসলিম। মসজিদ নির্মাণ সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৫২. ইবনি উমার (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) -এর যুগে মসজিদে নাববী এর খুঁটি ছিল খেজুর গাছের কাণ্ডের। তার উপরিভাগ ছিল খেজুর পাতা দ্বারা আচ্ছাদিত। আবু বকর (রাঃআঃ) এর খেলাফতকালে তা ভেঙ্গে পড়ে গেলে তিনি খেজুর গাছ ও খেজুর পাতা দিয়ে তা পূননির্মাণ করেন। অতঃপরউসমান (রাঃআঃ) এর খিলাফতকালে ঐগুলো বিনষ্ট হয়ে গেলে তিনি তা পাকা ইট দিয়ে নির্মাণ করেন। আজও তা বিদ্যমান আছে (অর্থাৎ এ হাদিস সংকলনের সময় পর্যন্ত)।{৪৫২}
আবু দাউদ এটি এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন। এর সানাদেআত্বিয়্যাহ আল-আওফী দুর্বল। মসজিদ নির্মাণ সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
৪৫৩. আনাস ইবনি মালিক (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) মদিনায় আগমন করে মদীনার বনুআমর ইবনিআওফ নামক উচ্চভূমির একটি এলাকায় অবতরণ করিলেন। সেখানে তিনি চৌদ্দ দিন অবস্থান করেন। অতঃপর তিনি বনু নাজ্জারের নিকট লোক পাঠালেন। তারা তাহাঁর (সম্মানার্থে) গলায় তরবারী ঝুলিয়ে অস্ত্রে সুসজ্জিত অবস্থায় এলো আনাস (রাঃআঃ) বলেন, আমি যেন রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) -কে উটের উপর দেখে পাচ্ছি এবং তাহাঁর পেছনে আবু বকর (রাঃআঃ) আরোহিত ছিলেন। আর বনু নাজ্জারের লোকেরা ছিল তাহাঁর চারপাশে। অবশেষে তিনি আবু আইউব আনসারী (রাঃআঃ) এর আঙ্গিনায় অবতরণ করিলেন। যেখানেই নামাজের ওয়াক্ত হত রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) নামায আদায় করে নিতেন। তিনি বকরী রাখার স্থানেও নামায আদায় করতেন। অতঃপর তিনি মসজিদ নির্মাণের আদেশ দিলেন। তিন বনু নাজ্জারের নিকট সংবাদ পাঠিয়ে ডাকালেন এবং বলিলেন, হে বনু নাজ্জার! তোমরা এ বাগানের মূল্য নিয়ে নাও। তারা বলিল, আল্লাহ্র শপথ! আমরা এর বিনিময় একমাত্র আল্লাহ্র নিকটেই চাই। আনাস (রাঃআঃ) বলেন বাগানটিতে যা যা ছিল আমি তোমাদেরকে তা বলছিঃ তাতে ছিল মুশরিকদের কিছু ক্ববর, পুরাতন ধ্বংসস্তুপ এবং কিছু খেজুর গাছ। রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) -এর নির্দেশক্রমে মুশরিকদের ক্ববরগুলো খুঁড়ে হাড়গোড় ইত্যাদি বেছে অন্যত্র ফেলে দেয়া হলো। কর্তিত খেজুর গাছের কাণ্ড মসজিদের সামনে সারিবদ্ধভাবে গেড়ে দেওয়া হলো। দরজার চৌকাঠ নির্মাণ করা হলো পাথর দ্বারা। সাহাবীদণ পাথরগুলো স্থানান্তরের সময় কবিতা আবৃত্তি করেছিলেন। নাবী (সাঃআঃ) -ও তাহাঁদের সাথেই ছিলেন। তিনি বলেছিলেনঃ হে আল্লাহ্! আখিরাতের কল্যাণই প্রকৃত কল্যাণ। আপনি আনসার ও মুহাজিরের সাহায্য করুন।
সহীহঃ বোখারি ও মুসলিম। মসজিদ নির্মাণ সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৫৪. আনাস ইবনি মালিক (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিন বলেন, মসজিদে নাববীর জায়গাটিতে বনু নাজ্জারের একটি বাগান ছিল। তাতে ক্ষেত, খেজুর গাছ ও মুশরিকদের কিছু ক্ববর ছিল। রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) তাহাঁদের বললেনঃ আমার কাছ থেকে তোমরা এ বাগানের মূল্য নিয়ে নাও। তারা বলিল, আমরা এই মূল্য চাই না (বরং দান করতে চাই)। অতঃপর খেজুর গাছ কাটা হলো, শষ্যক্ষেত্র সমতল করে দেয়া হলো এবং মুশরিকদের ক্ববরগুলো খুঁড়ে হাড়গোড় বেছে ফেলে দেয়া হলো। …… অতঃপর বর্ণনাকারী পূর্ণ হাদিস বর্ণনা করেন। তবে বর্ণনাকারী এ হাদীসেঃ (হে আল্লাহ্)আপনি সাহায্য করুন- এর স্থলেঃআপনি ক্ষমা করুন উল্লেখ করিয়াছেন। বর্ণনাকারী মূসা বলেন,আবদুল ওয়ারিসও অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন।আবদুল ওয়ারিস এ হাদিস হাম্মাদের কাছে বর্ণনা করছেন।
সহীহঃ মুসলিম।মসজিদ নির্মাণ সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-১৩ পাড়ায় পাড়ায় মসজিদ নির্মাণ করা
৪৫৫. আয়েশা (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) পাড়ায় পাড়ায় মসজিদ নির্মাণ করার এবং তা পরিচ্ছন্ন ও সুগন্ধিময় রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
মসজিদ নির্মাণ সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৫৬. সামুরাহ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি তার সন্তানদের উদ্দেশ্যে এ মর্মে পত্র লিখেন যেঃ অতঃপর জেনে রাখ! রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন আমরা যেন এলাকায় এলাকায় মসজিদ নির্মাণ করি এবং তা ঠিকঠাক ও পরিচ্ছন্ন রাখি।
মসজিদ নির্মাণ সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-১৪ মসজিদে বাতি জ্বালানো
৪৫৭. নাবী (সাঃআঃ) -এর মুক্ত দাসী মায়মূনাহ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, হে আল্লাহর রসূল! বায়তুল মাক্বদিস ( মসজিদুল আক্বসা) সম্পর্কে আমাদের জন্য আপনার অভিমত কি? রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেনঃ তোমরা সেখানে গিয়ে নামায আদায় করতে পার। ঐ সময় শহরটি শত্রুদের দখলে ছিল। (সেজন্য রসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলিলেন,) তোমরা সেখানে গিয়ে নামায আদায় করতে না পারলে সেখানে বাতি জ্বালানোর জন্য তেল পাঠিয়ে দিও। {৪৫৭}
{৪৫৭} ইবনি মাজাহ (অধ্যায়ঃ নামায ক্বায়িম, অনুঃ বায়তুল মুকাদ্দাস মসজিদে নামায আদায় সম্পর্কে, হাঃ ১৪০৭) যিয়াদ ইবনি সাওদাহ সূত্রে তার ভাইউসমান ইবনি আবু সমাদাহ হইতে মায়মুনাহ সূত্রে। যাওয়ায়িদ গ্রন্থে রহিয়াছে,আবু দাউদ এর অংশ বিশেষ বর্ণনা করিয়াছেন, ইবনি মাজাহর সানাদ সহিহ, রিজাল নির্ভরযোগ্য এবং আবু দাউদের সানাদের চেয়ে বিশুদ্ধ। এবং আহমাদ (৬/৪৬৩) যিয়াদ সূত্রে তার ভাই হইতে। এটি দুর্বল। হাদিস থেকে শিক্ষাঃ ১।বায়তুল মাক্বদিস একটি ফযীলতপূর্ন মসজিদ। ২।নামায আদায়ের উদ্দেশ্যে সেখানে ভ্রমণ জায়িয। মসজিদ নির্মাণ সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
অনুচ্ছেদ-১৫ মসজিদের কঙ্কর প্রসঙ্গে
৪৫৮. আবুল ওয়ালীদ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি ইবনি উমার (রাঃআঃ)–কে মসজিদের কঙ্কর সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলিলেন, এক রাতে বৃষ্টি হওয়ার মাটি কর্দমাক্ত হয়ে যায়। তখন এক ব্যক্তি তার কাপড়ে করে ছোট ছোট পাথর টুকরা এনে মাটিতে বিছিয়ে দিল। রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) নামায আদায় শেষে বললেনঃ এটা কতই না উত্তম কাজ। {৪৫৮}
{৪৫৮} ইবনি খুজাইমাহ (১২৯৮), এর সানাদের আবুল ওয়ালীদ সম্পর্কে হাফিযআত-তাক্বরীব গ্রন্থে বলেন, মাকবূল। মসজিদ নির্মাণ সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
৪৫৯. আবু সালিহ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, কথিত আছে, কোন ব্যক্তি যখন মসজিদ থেকে পাথর কুচি বাইরে নিয়ে যায়, তখন সেগুলো তাকে শপথ দিতে থাকে (এবং বলিতে থাকে, আমাদের কে মসজিদ থেকে বের করো না)।
মসজিদ নির্মাণ সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ মাকতু
৪৬০. আবু হুরাইরাহ্ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
আবু বাদ্র(রাঃআঃ) বলেন, আমার মতে হাদিসটি তিনি নাবী (সাঃআঃ) পর্যন্ত সানাদ পৌঁছিয়ে মারফু ভাবেই বর্ণনা করিয়াছেন। অর্থাৎ নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ পাথর কুচি তার অপসারণকারীকে এ মর্মে শপথ দেয় যে-তাকে যেন মসজিদ থেকে বের করা না হয়। {৪৬০}
{৪৬০} বাগাভীসুন্নাহ(২/১২১), বায়হাক্বীসুনানুল কুবরা (৫/১২৮) এর সামনে শারীক ইবনিআবদুল্লা কাযী রহিয়াছে। হাফীযআত-তাক্বারীব গ্রন্থে বলেন, সত্যবাদী, তবে প্রচুর ভুল করতেন। তার স্মরণশক্তি বিকৃত হয়ে গিয়েছিল। মসজিদ নির্মাণ সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
অনুচ্ছেদ-১৬ মসজিদ ঝাড়ু দেয়া
৪৬১. আনাস ইবনি মালিক (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ আমার উম্মাতের সাওয়াবসমূহ (কাজের বিনিময়গুলো) আমার সামনে পেশ করা হয়েছে, এমনকি কোন ব্যক্তি কর্তৃক মসজিদ থেকে ময়লা-আবর্জনা দূর করার সাওয়াবও। অপর দিকে আমার উম্মাতের পাপারাশিও আমাকে দেখানো হয়েছে। আমি তাতে কুরআনের কোন সূরাহ বা আয়াত শেখার পর তা ভুলে যাওয়ার চাইতে বড় গুনাহ আর দেখিনি। {৪৬১}
দুর্বলঃ মিশকাত {৪৬১} তিরমিযী (অধ্যায়ঃ ফাযায়িলে কুরআন; হাঃ ১৯৭৬, ঈমাম তিরমিযী বলেন, হাদিসটি গরীব, এ সূত্র ছাড়া হাদিসটির অন্য কোন সূত্র আমরা অবহিত নই), ইবনি খুযাইমাহ(১৯১৬) মসজিদ নির্মাণ সম্পর্কে হাদিস এর তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
Leave a Reply