সম্পদের অপব্যবহার, অপচয় , সুউচ্চ প্রাসাদ নির্মাণ ও কারুকার্য করা

সম্পদের অপব্যবহার, অপচয় , সুউচ্চ প্রাসাদ নির্মাণ ও কারুকার্য করা

সম্পদের অপব্যবহার, অপচয় , সুউচ্চ প্রাসাদ নির্মাণ ও কারুকার্য করা << আদাবুল মুফরাদ হাদীস কিতাবের মুল সুচিপত্র দেখুন

অধ্যায়ঃ৬, দান্যতা, কৃপণতা ও দোষ

২০৭. অনুচ্ছেদঃ সম্পদের অপব্যবহার ও অপচয়।
২০৮. অনুচ্ছেদঃ অপচয়কারীগণ।
২০৯. অনুচ্ছেদঃ বাসস্থান সংস্কার করা।
২১০. অনুচ্ছেদঃ ঘর-বাড়ি নির্মাণের খরচ।
২১১. অনুচ্ছেদঃ কর্মচারীদের কাজে নিয়োগকর্তার সহযোগিতা।
২১২. অনুচ্ছেদঃ সুউচ্চ প্রাসাদ নির্মাণ ।
২১৩. অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি বাড়িঘর নির্মাণ করে
২১৪. অনুচ্ছেদঃ প্রশস্ত বসতবাড়ি।
২১৫. অনুচ্ছেদঃ স্বতন্ত্র কোঠায় অবস্থান।
২১৬. অনুচ্ছেদঃ দালান-কোঠা কারুকার্য করা।

২০৭. অনুচ্ছেদঃ সম্পদের অপব্যবহার ও অপচয়।

৪৪৪

আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের তিনটি কাজে সন্তুষ্ট হন এবং তোমাদের তিনটি কাজে অসন্তুষ্ট হন। যে তিনটি কাজে তিনি সন্তুষ্ট হন তা হলো, তোমরা তাহাঁর ইবাদত করিবে, তাহাঁর সাথে অন্য কিছু শরীক করিবে না। তোমরা একতাবদ্ধ হয়ে আল্লাহর রশিকে মজবুতভাবে আকড়ে ধরবে। আল্লাহ যাকে তোমাদের শাসক বানিয়েছেন তোমরা তার কল্যাণ কামনা করিবে বা তাকে সদুপদেশ দিবে। তিনি তোমাদের যে তিনটি কাজ অপছন্দ করেন তা হলো, আসার কথা [গুজব], অধিক যাঞ্চা ও সম্পদের অপচয় [বোখারী,মা,ইবনি হিব্বান]।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৪৪৫

ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] থেকে আল্লাহর বাণীঃ “তোমরা যা কিছু খরচ করো আল্লাহ তার বিনিময় দেন, তিনি উত্তম রিযিকদাতা” [৩৪:৩৯] সম্পর্কে বর্ণিত। তিনি এর তাফসীর প্রসঙ্গে বলেন, আল্লাহর এই ওয়াদা তখনই প্রযোজ্য হইবে, যখন তোমরা অপচয় করিবে না এবং কার্পণ্যও করিবে না।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

২০৮. অনুচ্ছেদঃ অপচয়কারীগণ।

৪৪৬

আবু উবায়দায়ন [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত

আমি আবদুল্লাহ [রাঃআঃ]-কে মুবাযযিরীন [অপব্যয়কারী] সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বলেন, যারা অন্যায় পথে সম্পদ খরচ করে তারাই অপব্যয়কারী [বাযযার]।

অপচয় হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৪৪৭

ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

যারা অন্যায় পন্থায় সম্পদ খরচ করে তারাই অপচয়কারী।

অপচয় হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

২০৯. অনুচ্ছেদঃ বাসস্থান সংস্কার করা।

৪৪৮

যায়েদ ইবনি আসলাম [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত

উমার [রাঃআঃ] মিম্বারে দাড়িয়ে বলিতেন, হে লোকসকল! তোমরা তোমাদের বাসস্থানসমূহ সংস্কার করো এবং এই জিনেরা তোমাদেরকে ভীতি প্রদর্শনের পূর্বেই তোমরা তাহাদের ভীতি প্রদর্শন করো। এদের মধ্যকার মুসলমানরা তোমাদের সামনে আবির্ভূত হইবে না। আল্লাহর শপথ! যখন থেকে তাহাদের সাথে আমার শত্রুতা হয়েছে তারপর আর কোন দিন তাহাদের সাথে আমি আপোষ করিনি।

হাদিসের তাহকিকঃ অন্যান্য

২১০. অনুচ্ছেদঃ ঘর-বাড়ি নির্মাণের খরচ।

৪৪৯

খাব্বাব [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

আদম সন্তানকে প্রতিটি ব্যাপারেই সওয়াব দেয়া হইবে, ঘরবাড়ি নির্মাণ ব্যয় ব্যতীত [তিরমিজী] ।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

২১১. অনুচ্ছেদঃ কর্মচারীদের কাজে নিয়োগকর্তার সহযোগিতা।

৪৫০

আবদুল্লাহ ইবনি আমর [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

আবদুল্লাহ ইবনি আমর [রাঃআঃ] ওয়াহত নামক স্থান থেকে আগত তার এক ভ্রাতুষ্পুত্রকে বলেন, তোমার কর্মচারীরা কি কাজ করে? সে বললো, আমি জানি না। তিনি বলেন, যদি তুমি সাকাফী গোত্রের লোক হইতে তবে তোমার কর্মচারীরা কি কাজ করে তা তুমি অবশ্যই জানতে। অতঃপর তিনি আমাদের লক্ষ্য করে বলেন, কোন ব্যক্তি নিজের ঘরে বা সম্পদে তার কর্মচারীদের সাথে কাজ করলে সে হয় মহামহিম আল্লাহর কর্মচারী।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

২১২. অনুচ্ছেদঃ সুউচ্চ প্রাসাদ নির্মাণ ।

৪৫১

আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ মানুষ সুউচ্চ দালানকোঠা নিয়ে গর্বে মত্ত না হওয়া পর্যন্ত কিয়ামত হইবে না [বোখারী]।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৪৫২

হাসান [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত

আমি উসমান ইবনি আফফান [রাঃআঃ]-এর খেলাফতকালে নাবী [সাঃআঃ]-এর স্ত্রীগণের ঘরসমূহে যাতায়াত করতাম। আমি তাহাদের ঘরসমূহের ছাদসমূহ আমার দুই হাতে নাগাল পেতাম [মারাসীলে আবু দাউদ]।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৪৫৩

দাউদ ইবনি কায়েস [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত

খেজুরের ডাল দ্বারা নির্মিত মুমিন জননীদের ঘরসমূহ আমি দেখেছি। এসব ঘরের বহির্দিকে [দেয়ালে] ছিল ঘাসের পলেস্তারা। আমার মনে হয় ঘরের প্রস্থ ছিল ঘরের দরজা থেকে বাড়ির ফটক পর্যন্ত প্রায় ছয়-সাত হাত, ভিতরের অংশ দশ হাত এবং উচ্চতা মনে হয় সাত-আট হাত হইবে। আমি আয়েশা [রাঃআঃ]-এর ঘরের দরজায় দাঁড়িয়েছি। তা ছিল পশ্চিমমুখী [আবু দাউদের মারাসীল]।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৪৫৪

আবদুল্লাহ রুমী [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত

আমি উম্মে তালক [রাঃআঃ]-এর বাড়িতে গেলাম। আমি তাকে বললাম, আপনার এই ঘরের ছাদ কতো নিচু। তিনি বলেন, হে ব্যৎস! আমীরুল মুমিনীন উমার ইবনুল খাত্তাব [রাঃআঃ] তার কর্মচারীদেরকে লিখে পাঠান, তোমাদের ঘর-বাড়িগুলো সুউচ্চ করে বানাবে না। কেননা তা তোমাদের দুর্দিনের ইঙ্গিতবহ ।

হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

২১৩. অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি বাড়িঘর নির্মাণ করে।

৪৫৫

বর্ণনাকারী হইতে বর্ণীত

হাব্বা ইবনি খালিদ এবং সাওয়া ইবনি খালিদ [রাঃআঃ] নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট এলেন। তখন তিনি ঘরের দেয়াল মেরামত করছিলেন। তারা উভয়ে তাহাঁর সেই কাজে তাকে সহায়তা করেন।-[ইবনি মাজাহ, আহমাদ, ইবনি হিব্বান]

হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৪৫৬

কায়েস ইবনি আবু হাযেম [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত

আমরা অসুস্থ খাবাব [রাঃআঃ]-কে দেখিতে গেলাম। তিনি তার দেহে [গরম লোহার] সাতটি দাগ নিলেন। তিনি বলেন, আমাদের যে সকল সাথী অতীত হয়েছেন, দুনিয়া তাহাদের কোন ক্ষতি করিতে পারেনি। এখন আমরা এমন বস্তুর অধিকারী হয়েছি যা রাখার জন্য মাটি ছাড়া আর কিছু পাচ্ছি না। নাবী [সাঃআঃ] যদি আমাদেরকে মৃত্যু কামনা করিতে নিষেধ না করিতেন তবে আমি অবশ্যই মৃত্যু কামনা করতাম [বোখারী, মুসলিম, তিরমিজী, নাসায়ী, ইবনি মাজাহ]।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৪৫৭

কায়েস ইবনি আবু হাযেম [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত

অতঃপর আর একদিন আমরা তার নিকট আসলাম। তখন তিনি তার একটি দেয়াল নির্মাণে ব্যস্ত ছিলেন। তিনি বলেন, মুসলমানকে তার প্রতিটি খরচের জন্য সওয়াব দেয়া হয়, কিন্তু যা সে মাটিতে খরচ করে [ঘরবাড়ি নির্মাণ করে] তাতে নয় [বোখারী, মুসলিম]।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৪৫৮

আবদুল্লাহ ইবনি আমর [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

নাবী [সাঃআঃ] যাচ্ছিলেন, তখন আমি আমার কুড়ে ঘর মেরামত করছিলাম। তিনি বলেনঃ এটা কি? আমি বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ! আমার কুড়ে ঘর মেরামত করছি। তিনি বলেনঃ ব্যাপারটি [মৃত্যু বা কিয়ামত] এর চেয়েও দ্রুত ধেয়ে আসছে। [আবু দাউদ, তিরমিজী, ইবনি মাজাহ, আহমাদ, ইবেন হিব্বান]

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

২১৪. অনুচ্ছেদঃ প্রশস্ত বসতবাড়ি।

৪৫৯

নাফে ইবনি আবদুল হারিস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ কোন ব্যক্তির সৌভাগ্যের নিদর্শন হলো প্রশস্ত বসতবাড়ি, উত্তম প্রতিবেশী এবং মনোপূত বা আরামদায়ক বাহন -[আহমাদ, তাহাবী]।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

২১৫. অনুচ্ছেদঃ স্বতন্ত্র কোঠায় অবস্থান।

৪৬০

সাবিত [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত

তিনি আনাস [রাঃআঃ]-এর সাথে তার ঘরে উপরের মাচানে ছিলেন। তিনি আযান শুনে নিচে নামলে আমিও তার সাথে নিচে নামলাম। তিনি ঘন ঘন পা ফেলে [মসজিদে] যেতে লাগলেন। তিনি বলেন, একদা আমি যায়েদ ইবনি সাবিত [রাঃআঃ]-এর সাথে ছিলাম। তিনি এভাবে আমাকে সাথে নিয়ে হটলেন এবং বলিলেন, তুমি কি জানো, আমি তোমার সাথে এভাবে কেন হাঁটছি? কেননা নাবী [সাঃআঃ] আমাকে সাথে নিয়ে এভাবে [ঘন কদমে] হেঁটেছিলেন এবং বলেছিলেনঃ তুমি কি জানো, আমি কেন তোমার সাথে এভাবে হাঁটছি? আমি বললাম, আল্লাহ এবং তাহাঁর রাসূলই অধিক জ্ঞাত। তিনি বলেনঃ যাতে নামাযের উদ্দেশ্যে আমাদের পদচারণার সংখ্যা অধিক হয় [ইবনি আবু শায় বাযযার]।

হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

২১৬. অনুচ্ছেদঃ দালান-কোঠা কারুকার্য করা।

৪৬১

আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ লোকে নকশি কাঁথার মত কারুকার্যময় বাড়িঘর নির্মাণ না করা পর্যন্ত কিয়ামত হইবে না। ইবরাহীম [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, ‘মারাজিল’ অর্থ কারুকার্য মণ্ডিত কাপড়।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৪৬২

মুগীরা [রাঃআঃ]-এর সচিব ওয়াররাদ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত

মুয়াবিয়া [রাঃআঃ] মুগীরা [রাঃআঃ]-কে লিখে পাঠান, আপনি নাবী [সাঃআঃ]-এর কাছে যা শুনেছেন তা আমাকে লিখে পাঠান। মুগীরা [রাঃআঃ] তাকে লিখলেন, আল্লাহর নাবী [সাঃআঃ] প্রতি নামাযের পর বলিতেনঃ “আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ্ নাই, তিনি এক, তাহাঁর কোন শরীক নাই। তাহাঁরই রাজত্ব, তাহাঁর জন্যই সব প্রশংসা। তিনি সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান। হে আল্লাহ! তুমি যা দান করো তা কেউ রোধ করিতে পারে না এবং যা প্রতিরোধ করো তা কেউ দান করিতে পারে না। কোন সম্পদশালীর সম্পদ তোমার অসন্তুষ্টির মোকাবিলায় কোন উপকারে আসে না”। তিনি তাকে পত্রে আরো লিখেনঃ তিনি অযথা অধিক কথাবার্তা বলিতে, যাঞ্চা করিতে এবং সম্পদের অপচয় করিতে নিষেধ করিতেন। তিনি আরো নিষেধ করিতেন, মায়েদের অবাধ্য হইতে, কন্যা সন্তানদের জীবন্ত প্রোথিত করিতে এবং কার্পণ্য করিতে ও অপরের প্রাপ্য রুখে রাখতে। [বোখারী, মুসলিম, দারিমি, আহমাদ, ইবনি হিব্বান, ইবনি খুজাইমাহ, আবু আওয়া নাসায়ী]

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৪৬৩

আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমাদের কোন ব্যক্তিকেই তার আমল মুক্তি দিতে পারবে না। সাহাবীগণ বলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! আপনিও নন কি? তিনি বলেনঃ আমিও নই, যদি না আল্লাহ তাহাঁর রহমাত দ্বারা আমাকে আবৃত করে নেন। অতএব তোমরা সরল পথে চলো, তাহাঁর নৈকট্য লাভে সচেষ্ট হও, সকাল-সন্ধ্যায় ইবাদত করো, রাতের অন্ধকারেও কিছু ইবাদত করো এবং সর্বাবস্থায় ভারসাম্যপূৰ্ণপন্থা অবলম্বন করো -[বোখারী, মুসলিম, ইবনি মাজাহ]।

হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

Comments

Leave a Reply