সম্পর্কচ্ছেদ , মিথ্যা, উৎপাত, আপোষ, শত্রুতা, মুসলমানকে গালি দেয়া জঘন্য পাপ
সম্পর্কচ্ছেদ , মিথ্যা, উৎপাত, আপোষ, শত্রুতা, মুসলমানকে গালি দেয়া জঘন্য পাপ << আদাবুল মুফরাদ হাদীস কিতাবের মুল সুচিপত্র দেখুন
অধ্যায়ঃ৬, দান্যতা, কৃপণতা ও দোষ
১৮০. অনুচ্ছেদঃ মিথ্যা কথন বর্জনীয়।
১৮১. অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি জনগণের উৎপাতে ধৈর্য ধারণ করে।
১৮২. অনুচ্ছেদঃ উৎপাত সহ্য করা।
১৮৩. অনুচ্ছেদঃ মানুষের মধ্যে আপোষ-রফা করা।
১৮৪. অনুচ্ছেদঃ তুমি কোন ব্যক্তিকে মিথ্যা কথা বললে, অথচ সে তাকে সত্য মনে করলো।
১৮৫. অনুচ্ছেদঃ তুমি তোমার ভাইয়ের সাথে ওয়াদা করলে তার খেলাপ করো না।
১৮৬. অনুচ্ছেদঃ বংশের খোঁটা দেয়া।
১৮৭. অনুচ্ছেদঃ মানুষের নিজ সম্প্রদায়ের প্রতি ভালোবাসা।
১৮৮. অনুচ্ছেদঃ কারো সম্পর্কচ্ছেদ করা।
১৮৯. অনুচ্ছেদঃ মুসলমানের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ নিষিদ্ধ।
১৯০. অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি বছরব্যাপী তার ভাইয়ের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করে থাকে।
১৯১. অনুচ্ছেদঃ দুই সম্পর্কচ্ছেদকারী।
১৯২. অনুচ্ছেদঃ শত্রুতা।
১৯৩. অনুচ্ছেদঃ সালাম সম্পর্কচ্ছেদের কাফফারাস্বরূপ।
১৯৪. অনুচ্ছেদঃ উঠতি বয়সের যুবকদের পৃথক পৃথক রাখা।
১৯৫. অনুচ্ছেদঃ পরামর্শ না চাইতেই কেউ তার ভাইকে পরামর্শ দিলে।
১৯৬. অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি অবাঞ্ছিত দৃষ্টান্ত অপছন্দ করে।
১৯৭. অনুচ্ছেদঃ ধোঁকাবাজ ও প্রতারক সম্পর্কে
১৯৮. অনুচ্ছেদঃ গালমন্দ করা।
১৯৯. অনুচ্ছেদঃ পানি পান করানো।
২০০. অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি গালি-গালাজ শুরু করে উভয়ের পাপ তার উপর বর্তায়।
২০১. অনুচ্ছেদঃ গালিগালাজকারী পক্ষদ্বয় দুই শয়তান এবং তারা মিথ্যা দাবিদার ও মিথ্যাবাদী।
২০২. অনুচ্ছেদঃ মুসলমানকে গালি দেয়া জঘন্য পাপ।
২০৩. অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি কাউকে মুখের উপর কিছু বলে না।
২০৪. অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি ব্যাখ্যা সাপেক্ষে অপরকে বললো, হে মুনাফিক।
২০৫. অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি তার [মুসলমান] ভাইকে বলে, হে কাফের !
২০৬. অনুচ্ছেদঃ শত্রুর আনন্দ-উল্লাস।
১৮০. অনুচ্ছেদঃ মিথ্যা কথন বর্জনীয়।
৩৮৭
আবদুল্লাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ তোমরা অবশ্যই সত্যের ধারক হইবে। কেননা সত্যবাদিতা কল্যাণের দিকে পথ দেখায় এবং কল্যাণ জান্নাতের দিকে পথ দেখায়। কোন ব্যক্তি সত্যবাদিতা অবলম্বন করে শেষ পর্যন্ত আল্লাহর দরবারে পরম সত্যাশ্রয়ী বলে তালিকাভুক্ত হয়। সাবধান! তোমরা মিথ্যা পরিহার করিবে। কেননা মিথ্যা পাপাচারের দিকে চালিত করে এবং
পাপাচার জাহান্নামের দিকে নিয়ে যায়। কোন ব্যক্তি মিথ্যাচার অবলম্বন করে এবং শেষ পর্যন্ত আল্লাহর দরবারে চরম মিথ্যাবাদীর তালিকাভুক্ত হয় [বোখারী, মুসলিম, দারিমি, তিরমিজী]।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৩৮৮
আবদুল্লাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
মিথ্যা বাস্তবিকপক্ষেও নয় এবং ঠাট্টাচ্ছলেও সংগত নয়। তোমাদের কেউ তার সন্তানকে কিছু দেয়ার ওয়াদা করে তা তাকে না দেয়ার বিষয়টিও সংগত নয়।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৮১. অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি জনগণের উৎপাতে ধৈর্য ধারণ করে।
৩৮৯
ইবনি উমার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ যে ঈমানদার ব্যক্তি জনগণের সাথে মেলামেশা করে এবং তাহাদের উৎপাত সহ্য করে সে—যে ব্যক্তি মানুষের সাথে মেলামেশাও করে না এবং তাহাদের উৎপাতও সহ্য করে নাসায়ী, তার চেয়ে উত্তম [তিরমিজী, নাসায়ী, ইবনি মাজাহ, আহমাদ] ।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৮২. অনুচ্ছেদঃ উৎপাত সহ্য করা।
৩৯০
আবু মূসা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ কষ্টদায়ক কিছু শোনার পরও ধৈর্য ধারণের ব্যাপারে মহামহিম আল্লাহর চেয়ে অধিক ধৈর্যশীল আর কেউ বা কিছু নাই। লোকে তাহাঁর
সন্তান আছে বলে দাবি করে। এতদসত্ত্বেও তিনি তাহাদেরকে নিরাপদ রাখেন এবং রিযিক দান করেন [বোখারী, মুসলিম, নাসায়ী, ইবনি মাজাহ] ।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৩৯১
আবদুল্লাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] কিছু মাল বণ্টন করিলেন, সাধারণত যেভাবে তিনি বণ্টন করিতেন। আনসার সম্প্রদায়ের এক ব্যক্তি বললো, আল্লাহর শপথ! এটা এমন বণ্টন যাতে মহামহিম আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের অভিপ্রায় অনুপস্থিত। আমি মনে মনে বললাম, আমি অবশ্যই নাবী [সাঃআঃ]-কে বলবো। আমি তার নিকট আসলাম। তিনি তখন তার সাহাবী পরিবেষ্টিত ছিলেন। আমি তাহাঁকে নীরবে তা বললাম। এতে তাহাঁর মনোকষ্ট হলো এবং তাহাঁর চেহারা পরিবর্তিত হয়ে গেলো। তিনি এতো অসন্তুষ্ট হলেন যে, আমি মনে মনে বললাম, যদি আমি তা তাকে অবগত না করতাম। অতঃপর তিনি বলেনঃ মূসা [আবু দাউদ]-কে এর চেয়েও অধিক কষ্ট দেয়া হয়েছে, কিন্তু তিনি ধৈর্য ধারণ করিয়াছেন [বোখারী, মুসলিম, মুসনাদ আহমাদ]।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৮৩. অনুচ্ছেদঃ মানুষের মধ্যে আপোষ-রফা করা।
৩৯২
আবু দারদা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ আমি কি তোমাদেরকে নামায, রোযা ও দান-খয়রাতের চেয়ে উত্তম কাজ সম্পর্কে অবহিত করবো না। সাহাবীগণ বলেন, নিশ্চয়। তিনি বলেনঃ জনগণের মধ্যে [বিবাদের] আপোষ-রফা। আর জনগণের মধ্যকার বিবাদ-বিসম্বাদ হলো ধ্বংসকারী [দারিমি, তিরমিজী]।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৩৯৩
ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
“অতএব তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং নিজেদের অবস্থা সংশোধন করো” [সূরা আনফালঃ ১]। উক্ত আয়াতের তাফসীর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এর দ্বারা আল্লাহ বান্দার উপর বাধ্যবাধকতা আরোপ করিয়াছেন যে, তারা যেন আল্লাহকে ভয় করে এবং তাহাদের পারস্পরিক অবস্থার সংশোধন করে [তাবারানি]।
হাদিসের তাহকিকঃ অন্যান্য
১৮৪. অনুচ্ছেদঃ তুমি কোন ব্যক্তিকে মিথ্যা কথা বললে, অথচ সে তাকে সত্য মনে করলো।
৩৯৪
সুফিয়ান ইবনি উসাইদ আল-হাদৱামী [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত
তিনি নাবী [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছেনঃ সবচাইতে মারাত্মক বিশ্বাসভঙ্গ এই যে, তুমি তোমার কোন ভাইকে কোন কথা বললে, সে তো তোমাকে বিশ্বাস করেছে, অথচ তুমি তাকে মিথ্যা কথাই বলেছে [আবু দাউদ]।
হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
১৮৫. অনুচ্ছেদঃ তুমি তোমার ভাইয়ের সাথে ওয়াদা করলে তার খেলাপ করো না।
৩৯৫
ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তুমি তোমার ভাইয়ের সাথে ঝগড়া করো নাসায়ী, তাকে উপহাস করো না এবং তার সাথে এমন ওয়াদা করো না তুমি যার খেলাপ করিবে [তিরমিজী]।
হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
১৮৬. অনুচ্ছেদঃ বংশের খোঁটা দেয়া।
৩৯৬
আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ দুইটি [মন্দ] কর্ম যা আমার উম্মাত ত্যাগ করিবে না : মৃতের জন্য বিলাপ করে কান্নাকাটি করা এবং বংশ তুলে খোটা দেয়া [মুসলিম, তিরমিজী, ইবনুল জারূদ]।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৮৭. অনুচ্ছেদঃ মানুষের নিজ সম্প্রদায়ের প্রতি ভালোবাসা।
৩৯৭
ফুসায়লা [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত
আমি আমার পিতাকে বলিতে শুনেছিঃ আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ! অন্যায় কাজে কোন ব্যক্তির নিজ সম্প্রদায়কে সাহায্য করা কি জাহিলী গোত্রপ্রীতির অন্তর্ভুক্ত? তিনি বলেনঃ হাঁ।-[ইবনি মাজাহ, আহমাদ]
হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
১৮৮. অনুচ্ছেদঃ কারো সম্পর্কচ্ছেদ করা।
৩৯৮
আওফ ইবনুল হারিস [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত
আয়েশা [রাঃআঃ] বর্ণনা করেন যে, তার কোন একটি জিনিস বিক্রয় বা দান করার ব্যাপারে আবদুল্লাহ ইবনুয যুবাইর [রাঃআঃ] বলিলেন, আল্লাহর কসম! হয় আয়েশা [রাঃআঃ] এ কাজ থেকে বিরত থাকিবেন, নয়তো আমি তাকে সম্পদ দানের অযোগ্য ঘোষণা করবো। আয়েশা [রাঃআঃ] জিজ্ঞেস করিলেন, সত্যিই কি সে এ ধরনের কথা বলেছে? লোকেরা বললো, হাঁ। আয়েশা [রাঃআঃ] বলেন, আল্লাহর নামে শপথ করছি যে, আমি ইবনুয যুবাইরের সাথে কখনো কথা বলবো না। এ বিচ্ছেদকাল দীর্ঘায়িত হলে ইবনুয যুবাইর [রাঃআঃ] আয়েশা [রাঃআঃ]-এর নিকট মধ্যস্থতাকারী পাঠান। কিন্তু আয়েশা [রাঃআঃ] বলেন, আল্লাহর কসম! আমি কখনো কারো সুপারিশ গ্রহণ করবো না এবং আমি আমার শপথও ভঙ্গ করবো না। ব্যাপারটি ইবনুয যুবাইর [রাঃআঃ]-এর জন্য দীর্ঘায়িত হলে তিনি মিসওয়ার ইবনি মাখরামা ও আবদুর রহমান ইবনুল আসওয়াদ ইবনি আবদে ইয়াগূসের সাথে কথা বলেন। তারা দু’জন বনু যোহরার লোক ছিলেন। ইবনুয যুবাইর [রাঃআঃ] তাহাদেরকে বলেন, তোমাদের দু’জনকে আল্লাহর দোহাই দিচ্ছি, আমাকে তোমরা আয়েশা [রাঃআঃ]-এর সামনে পৌছিয়ে দাও। কেননা আমার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার মানত মানা তার জন্য জায়েয হয়নি। অতএব মিসওয়ার ও আবদুর রহমান [রাঃআঃ] চাদর গায়ে জড়িয়ে ইবনুয যুবাইর [রাঃআঃ]-কে সাথে নিয়ে চললেন। শেষ পর্যন্ত দু’জনে আয়েশা [রাঃআঃ]-এর কাছে প্রবেশের অনুমতি চাইলেন। দু’জন বলেন, আসসালামু আলাইকে ওয়া রাহমাতুল্লাহ ওয়া বারাকাতুহু! আমরা কি ভেতরে আসতে পারি? তিনি বলেন, হাঁ, আসো। তারা বলেন, হে উম্মুল মুমিনীন। আমরা সবাই কি ভেতরে আসতে পারি? আয়েশা বলেন, হাঁ, সবাই আসো। আয়েশা [রাঃআঃ] জানতেন না যে, তাহাদের সাথে ইবনুয যুবাইর [রাঃআঃ]-ও আছেন। তারা ভেতরে প্রবেশ করলে ইবনুয যুবাইর [রাঃআঃ] পর্দার ভেতর গিয়ে আয়েশা [রাঃআঃ]-কে জড়িয়ে ধরে আল্লাহর দোহাই দিতে লাগলেন এবং কাঁদতে শুরু করিলেন। মিসওয়ার ও আবদুর রহমানও তাহাঁকে আল্লাহর দোহাই দিয়ে ইবনুয যুবাইর [রাঃআঃ]-এর সাথে কথা বলিতে এবং তার ওজর ও অনুশোচনা গ্রহণ করিতে বলেন। তারা দু’জন বলেন, আপনি তো জানেন, নাবী [সাঃআঃ] সালাম-কালাম ও দেখা-সাক্ষাত বন্ধ করে দিতে নিষেধ করিয়াছেন। তিনি বলেছেনঃ “কোন মুসলমানের জন্য তার মুসলমান ভাইয়ের সাথে তিন দিনের বেশী দেখা-সাক্ষাত ও সালাম-কালাম বন্ধ রাখা জায়েয নয়”। তারা দু’জন যখন এভাবে আয়েশা [রাঃআঃ]-কে বুঝালেন এবং বারবার এর ক্ষতিকর দিক স্মরণ করিয়ে দিলেন তখন তিনিও কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমি [কথা না বলার] মানত ও শপথ করে ফেলেছি এবং অনেক কঠিন মানত। কিন্তু তারা দু’জন বরাবর তাকে বুঝাতে থাকেন, যতক্ষণ না তিনি ইবনুয যুবাইরের সাথে কথা বলেন। অতঃপর আয়েশা [রাঃআঃ] তার শপথ ভঙ্গের কাফফারা হিসেবে চল্লিশজন গোলাম আযাদ করেন। এরপর যখনই এ মানতের কথা তার স্মরণ হতো তখনই তিনি কাঁদতেন, এমনকি তার চোখের পানিতে তার ওড়না ভিজে যেতো [বোখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, আহমাদ]।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৮৯. অনুচ্ছেদঃ মুসলমানের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ নিষিদ্ধ।
৩৯৯
আনাস ইবনি মালেক [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ তোমরা পরস্পরের প্রতি ঘৃণা-বিদ্বেষ পোষণ করো নাসায়ী, পরস্পর গোপনে শত্রুতা করো না এবং আল্লাহর বান্দাগণ পরম্পর
ভাই ভাই হয়ে যাও। কোন মুসলমানের জন্য তার অপর মুসলমান ভাইয়ের সাথে তিন রাতের অধিক সম্পর্কচ্ছেদ করে থাকা জায়েয নয় [বোখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিজী, মুওয়াত্ত্বা মালিক]।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৪০০
আতা ইবনি ইয়ামীদ আল-লাইসী আল-জুনদাই [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ কোন ব্যক্তির জন্য তার অপর ভাইয়ের সাথে তিন রাতের অধিক সম্পর্কচ্ছেদ করে থাকা হালাল নয়। [অবস্থা এই যে,] তাহাদের দেখা-সাক্ষাত হলে একজন এদিকে এবং অপরজন ওদিকে মুখ ঘুরিয়ে নেয়। তাহাদের দু’জনের মধ্যে যে প্রথমে সালাম দেয় সে অপরের চেয়ে উত্তম [বোখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিজী, তাবারানি]।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৪০১
আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ তোমরা পরম্পর ঘৃণা-বিদ্বেষ পোষণ করো নাসায়ী, ঝগড়া-বিবাদ করো না এবং আল্লাহর বান্দাগণ! তোমরা ভাই ভাই হয়ে যাও [বোখারী, মুসলিম]।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৪০২
আনাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ দুই ব্যক্তি মহামহিম আল্লাহর জন্য অথবা ইসলামের সৌজন্যে পরস্পর ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পর তাহাদের মধ্যকার কোন একজনের প্রথম অপরাধ তাহাদের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটায় [আবু দাউদ]।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৪০৩
আনাস ইবনি মালেক [রাঃআঃ]-র চাচাতো ভাই হিশাম ইবনি আমের আল-আনসারী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তার পিতা উহুদের যুদ্ধের দিন শহীদ হন। তিনি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছেনঃ কোন মুসলমানের জন্য অপর মুসলমানের সাথে তিন দিনের অধিক সম্পর্কচ্ছেদ করে থাকা জায়েয নয়। তারা যাবত সম্পর্কচ্ছেদ করে থাকিবে, তাবৎ তারা সত্য বিমুখ বলে গণ্য হইবে। তাহাদের মধ্যে যে ব্যক্তি প্রথম কথা বলার উদ্যোগ নিবে তার সেই উদ্যোগ তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহের কাফফারাস্বরূপ হইবে। আর যদি তারা এরূপ সম্পর্কচ্ছেদ অবস্থায় মারা যায় তবে তারা কখনও একত্রে বেহেশতে যেতে পারবে না। যদি তাহাদের একজন অপরজনকে সালাম করে, আর সে তা গ্রহণ করিতে রাজী না হয়, তবে একজন ফেরেশতা তার সালামের জবাব দেন, আর অপরজনকে দেয় শয়তান।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৪০৪
আয়েশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ আমি তোমার সন্তুষ্টি ও অসন্তুষ্টি অবশ্যই বুঝতে পারি। আমি বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ! আপনি কেমন করে তা বুঝেন? তিনি বলেনঃ যখন তুমি সন্তুষ্ট থাকো তখন বলো, হাঁ, মুহাম্মাদের প্রভুর শপথ। আর যখন তুমি অসন্তুষ্ট থাকো তখন বলো, নাসায়ী, ইবরাহীমের প্রভুর শপথ। আমি বললাম, হাঁ, আমি তখন আপনার নামটাই কেবল পরিহার করি।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৯০. অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি বছরব্যাপী তার ভাইয়ের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করে থাকে।
৪০৫
আবু খিরাশ আস-সুলামী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছেনঃ যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের সাথে এক বছর ধরে সম্পর্কচ্ছেদ করে থাকে, সে যেন তাকে হত্যা করলো [আবু দাউদ, আহমাদ, হাকিম]।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৪০৬
ইমরান ইবনি আবু আনাস [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত
আসলাম গোত্রীয় মহানাবী [সাঃআঃ]-এর জনৈক সাহাবী তার নিকট বর্ণনা করিয়াছেন যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ “কোন ঈমানদার ব্যক্তির সাথে এক বছর ধরে সম্পর্কচ্ছেদ করে থাকা তাকে হত্যা করার সমতুল্য”। সেই মজলিসে মুহাম্মাদ ইবনুল মুনকাদির এবং আবদুল্লাহ ইবনি আবু ইতাবও উপস্থিত ছিলেন। তারা বলেন, আমরাও সেই সাহাবীর নিকট এ হাদিস শুনিয়াছি [আবু দাউদ, আহমাদ, হাকিম]।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৯১. অনুচ্ছেদঃ দুই সম্পর্কচ্ছেদকারী।
৪০৭
আবু আইউব আনসারী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ কোন লোকের জন্য তার [মুসলমান] ভাইকে এভাবে পরিত্যাগ করা [কথাবার্তা না বলা] বৈধ নয় যে, উভয়ের সাক্ষাত হলে একে অপরের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে। তাহাদের দু’জনের মধ্যে উত্তম সেইজন যে সালাম দ্বারা [কথাবার্তার] সূচনা করে।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৪০৮
হিশাম ইবনি আমের আল-আনসারী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছিঃ কোন মুসলমানের জন্য অপর মুসলমানের সাথে তিন দিনের অধিক সম্পর্কচ্ছেদ করে থাকা জায়েয নয়। তারা যাবত সম্পর্কচ্ছেদ করে থাকিবে তাবৎ তারা সত্য বিমুখ বলে গণ্য হইবে। তাহাদের মধ্যে যে ব্যক্তি প্রথম কথা বলার উদ্যোগ নিবে, তার সেই উদ্যোগ তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহের কাফফারাস্বরূপ হইবে। আর যদি তারা এইরূপ সম্পর্কচ্ছেদ অবস্থায় মারা যায় তবে তারা কখনও
একত্রে বেহেশতে যেতে পারবে না [আহমাদ, ইবনি হিব্বান]।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৯২. অনুচ্ছেদঃ শত্রুতা।
৪০৯
আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমরা পরস্পর ঘৃণা-বিদ্বেষ পোষণ করো না এবং আল্লাহর বান্দাগণ! তোমরা ভাই ভাই হয়ে যাও [বোখারী, মুসলিম]।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৪১০
আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ কিয়ামতের দিন তুমি দ্বিমুখী চরিত্রের লোককে আল্লাহর নিকট নিকৃষ্টরূপে দেখিতে পাবে, যে এদের কাছে এক চেহারা নিয়ে আসে এবং অন্যদের কাছে ভিন্ন চেহারা [চরিত্র] নিয়ে আসে [বোখারী, মুসলিম, দারিমি, তিরমিজী]।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৪১১
আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ সাবধান! তোমরা কুধারণা পোষণ করা থেকে বিরত থাকিবে। কেননা কুধারণা হলো ডাহা মিথ্যা। তোমরা নকল ক্রেতা সেজে আসল ক্রেতাকে প্রতারিত করার উদ্দেশ্যে পণ্যের দরদাম করো নাসায়ী, ঘৃণা-বিদ্বেষ পোষণ করো নাসায়ী, ঝগড়াঝাটি করো না এবং গোপনে শত্রুতা করো না। আল্লাহর বান্দাগণ! তোমরা পরস্পর ভাই হয়ে যাও [বোখারী, মুসলিম, ইবনি মাজাহ]।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৪১২
আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ প্রতি সোমবার ও বৃহস্পতিবার জান্নাতের দরজাসমূহ উন্মুক্ত করা হয়। এরপর এমন সব বান্দাকে ক্ষমা করে দেওয়া হয় যারা আল্লাহর সাথে শরীক করে না। তবে সে ব্যক্তিকে নয় যার ভাই ও তার মধ্যে শত্রুতা বিদ্যমান। বলা হয়, এই দু’জনকে আপোষ-রক্ষা করার জন্য অবকাশ দাও। এই দু’জনকে আপোষ-রফা করার জন্য অবকাশ দাও; এই দু’জনকে আপোষ-রফার জন্য অবকাশ দাও [মুসলিম, তিরমিজী, ইবনি মাজাহ, মুওয়াত্ত্বা মালিক, ইবনি হিব্বান]।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৪১৩
আবু দারদা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
আমি কি তোমাদেরকে এমন কথা বলবো না যা দান-খয়রাত ও রোযার তুলনায় উত্তম? তা হলো মানুষের মধ্যে আপোষ-মীমাংসা করে দেয়া। সাবধান! ঘৃণা-বিদ্বেষ ধ্বংসাত্মক।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৪১৪
ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ কোন ব্যক্তির মধ্যে তিনটি পাপাচার না থাকলে যাকে ইচ্ছা তার অন্য গুনাহসমূহ ক্ষমা করা হইবে। [১] যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কিছু শরীক না করে মারা গেলো, [২] সে যাদু চর্চাকারী ছিলো না এবং [৩] সে তার কোন [মুসলমান] ভাইয়ের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করেনি।
হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
১৯৩. অনুচ্ছেদঃ সালাম সম্পর্কচ্ছেদের কাফফারাস্বরূপ।
৪১৫
আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
আমি নাবী [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছিঃ কোন ব্যক্তির জন্য কোন ঈমানদার ব্যক্তির সাথে তিন দিনের অধিক সম্পর্কচ্ছেদ করে থাকা জায়েয নয়। তিন দিন অতিবাহিত হওয়ার পর সে যেন তার সাথে সাক্ষাত করে তাকে সালাম দেয়। মুমিন ব্যক্তি তার সালামের জবাব দিলে তারা দু’জনই সওয়াবে অংশীদার হইবে। আর তার সালামের উত্তর না দেয়া হলে সালামদাতা মুসলমান ব্যক্তি সম্পর্কচ্ছেদের গুনাহ থেকে মুক্ত হয়ে যাবে [আবু দাউদ]।
হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
১৯৪. অনুচ্ছেদঃ উঠতি বয়সের যুবকদের পৃথক পৃথক রাখা।
৪১৬
সালিম ইবনি আবদুল্লাহ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত
উমার [রাঃআঃ] তার পুত্রদেরকে বলিতেন, ভোর হলেই তোমরা পৃথক পৃথক হয়ে যাবে এবং এক ঘরে একত্র হইবে না। কেননা আমার আশংকা হয়, না জানি তোমাদের মধ্যে সম্পর্কচ্ছেদ বা কোন অঘটন ঘটে যায়।
হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
১৯৫. অনুচ্ছেদঃ পরামর্শ না চাইতেই কেউ তার ভাইকে পরামর্শ দিলে।
৪১৭
ইবনি উমার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
ইবনি উমার [রাঃআঃ] এক রাখালকে তার ছাগলসহ একটি তৃণলতাহীন স্থানে দেখিতে পেলেন। তিনি তার চাইতে উত্তম একটি স্থানও দেখিতে পেলেন। তিনি তাকে বলেন, হে রাখাল! তোমার জন্য দুঃখ হয়। এগুলো অন্যত্র নিয়ে যাও। কেননা আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছিঃ “প্রত্যেক রাখালকে তার রাখালী সম্পর্কে জবাবদিহি করিতে হইবে”[বোখারী, মুসলিম, আহমাদ]।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৯৬. অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি অবাঞ্ছিত দৃষ্টান্ত অপছন্দ করে।
৪১৮
ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ আমাদের জন্য মন্দ দৃষ্টান্ত শোভনীয় নয়। যে ব্যক্তি দান করে তা ফেরত নেয় সে কুকুরতুল্য—যে বমি করে পুনরায় তা গলাধকরণ
করে।- [বোখারী, মুসলিম, তিরমিজী, নাসায়ী]
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৯৭. অনুচ্ছেদঃ ধোঁকাবাজ ও প্রতারক সম্পর্কে
৪১৯
আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলছেনঃ মুমিন ব্যক্তি চিন্তাশীল, গম্ভীর ও ভদ্র প্রকৃতির হয়ে থাকে। আর পাপিষ্ঠ ব্যক্তি প্রতারক, ধোঁকাবাজ, কৃপণ, নীচ ও অসভ্য হয়ে থাকে [আবু দাউদ, হাকিম, তাহাবী]।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৯৮. অনুচ্ছেদঃ গালমন্দ করা।
৪২০
ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর যুগে দুই ব্যক্তি পরস্পরকে গালি দিলো। তাহাদের একজন গালি দিলে অপরজন নীরব থাকলো। নাবী [সাঃআঃ] বসা অবস্থায় ছিলেন। অতঃপর অপরজনও তার প্রতিপক্ষকে গালি দিলো। নাবী [সাঃআঃ] উঠে দাঁড়ান। তাহাঁকে বলা হলো, আপনি উঠে গেলেন কেন? তিনি বলেনঃ ফেরেশতারা উঠে যাওয়ায় আমিও উঠে গেলাম। ঐ ব্যক্তি যতক্ষণ নীরব ছিল, ততক্ষণ ফেরেশতারা তার পক্ষ থেকে যে গালি দিচ্ছিল, তার উত্তর দিচ্ছিলেন। যখন সে প্রতিশোধস্বরূপ গালি দিলো তখন ফেরেশতারা উঠে চলে গেলেন [আবু দাউদ]।
হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
৪২১
উম্মু দারদা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
এক ব্যক্তি তার নিকট এসে বললো, এক ব্যক্তি আবদুল মালেকের নিকট আপনার দুর্নাম করেছে। তিনি বলেন, আমাদের মধ্যে যে দোষ নাই তা কেউ বলে থাকলে, কখনো আমরা এমন গুণের জন্যও প্রশংসিত হয়েছি যা আমাদের মধ্যে নেই।
হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
৪২২
কায়েস [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত
আবদুল্লাহ [রাঃআঃ] বলেছেন, কোন ব্যক্তি তার সাথীকে বললো, তুমি আমার দুশমন অথবা বললো, সে তার বন্ধুত্ব থেকে দায়মুক্ত, তাহাদের একজন ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে গেলো। কায়েস [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, পরে আবু জুহাইফা [রাঃআঃ] আমাকে অবহিত করেন যে, তারপর আবদুল্লাহ [রাঃআঃ] বলেছেন, তবে যে তওবা করে সে ব্যতীত।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৯৯. অনুচ্ছেদঃ পানি পান করানো।
৪২৩
ইবনি আব্বাস [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত
আদম সন্তানের দেহে তিনশত ষাটটি সংযোগ অস্থি বা গ্রন্থি আছে। প্রতিদিন সেগুলোর প্রতিটির জন্য একটি সদাকা ধার্য আছে। প্রতিটি উত্তম কথা একটি সদাকা। কোন ব্যক্তির তার ভাইকে সাহায্য করাও একটি সদাকা। কেউ কাউকে পানি পান করালে তাও একটি সদাকা এবং রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরানোও একটি সদাকা [বাযযার, ইবনি হিব্বান]।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২০০. অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি গালি-গালাজ শুরু করে উভয়ের পাপ তার উপর বর্তায়।
৪২৪
আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ দুই পরস্পর গালিদাতার পাপ সূচনাকারীর উপর বর্তায়, প্রথমে যাকে গালি দেয়া হয়েছে সে সীমা লংঘন না করলে [মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিজী, ইবনি হিব্বান]।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৪২৫
আনাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ দুই পরস্পর গালিদাতার পাপ সূচনাকারীর উপর বর্তায়, প্রথমে যাকে গালি দেয়া হয়েছে সে সীমা লংঘন না করলে।– [মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিজী, ইবনি হিব্বান]
হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহীহ
৪২৬
মহানাবী [সাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তোমরা কি জানো চোগলখোর কে? সকলে বলেন, আল্লাহ ও তাহাঁর রাসূলই সর্বাধিক জ্ঞাত। তিনি বলেনঃ যে ব্যক্তি লোকজনের মধ্যে বিবাদ ও হানাহানি সৃষ্টির উদ্দেশ্যে তাহাদের একের কথা অপরের কানে লাগায়।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৪২৭
মহানাবী [সাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
মহামহিম আল্লাহ আমার নিকট ওহী পাঠিয়েছেন, তোমরা বিনয়ী হও এবং একে অপরের প্রতি বাড়াবাড়ি করো না।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২০১. অনুচ্ছেদঃ গালিগালাজকারী পক্ষদ্বয় দুই শয়তান এবং তারা মিথ্যা দাবিদার ও মিথ্যাবাদী।
৪২৮
ইয়াদ ইবনি হিমার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
আমি বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ! এক ব্যক্তি আমাকে গালাগালি করে। নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ যারা একে অপরকে গালি দেয় তারা দুইটি শয়তান, তারা বাজে কথা বলে এবং তারা মিথ্যুক [ইবনি হিব্বান]।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৪২৯
ইয়াদ ইবনি হিমার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ নিশ্চয় আল্লাহ আমার নিকট ওহী পাঠিয়েছেনঃ তোমরা পরস্পর বিনয়ী হও, এমনকি একে অপরের সাথে বাড়াবাড়ি করিবে নাসায়ী, একে অপরের সামনে অহংকার করিবে না। আমি বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ। আপনার কি মত, কেউ যদি আমাকে আমার চেয়ে কম মর্যাদাসম্পন্ন লোকদের মজলিসে গালি দেয় এবং আমিও তার প্রতিউত্তর করি, তবে তাতে আমার গুনাহ হইবে? তিনি বলেনঃ যারা একে অপরকে গালি দেয় তারা দুইটি শয়তান, উভয়ে বাজে কথা বলে এবং উভয়ে মিথ্যুক [মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিজী, ইবনি মাজাহ]।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৪৩০
ইয়াদ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
আমি ছিলাম রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর শত্রু। ইসলাম গ্রহণের পূর্বে আমি তাহাঁকে একটি উল্লী হাদিয়া দিতে চাইলাম, কিন্তু তিনি তা গ্রহণ করেননি। তিনি বলেনঃ মুশরিকদের উপহারাদি গ্রহণ আমার পছন্দনীয় নয় [আবু দাউদ, তিরমিজী]।
হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
২০২. অনুচ্ছেদঃ মুসলমানকে গালি দেয়া জঘন্য পাপ।
৪৩১
সাদ ইবনি মালক [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
মহানাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ মুসলমানকে গালি দেয়া জঘন্য পাপ [নাসায়ী, ইবনি মাজাহ]।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৪৩২
আনাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কখনো অশ্লীলভাষী, অভিশাপকারী বা গালি বর্ষণকারী ছিলেন না। অসন্তুষ্ট হলে তিনি বলিতেনঃ তার কি হলো? তার কপাল ধূলিমলিন হোক [বোখারী]।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৪৩৩
আবদুল্লাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ মুসলমানকে গালি দেয়া জঘন্য পাপ এবং তাকে হত্যা করা কুফরী কাজ [বোখারী, মুসলিম, তিরমিজী, নাসায়ী, ইবনি মাজাহ, আহমাদ]।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৪৩৪
আবু যার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
আমি নাবী [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছিঃ এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে যেন পাপাচারী বা কাফের বলে অভিহিত না করে। বাস্তবে সেই ব্যক্তি তদ্রুপ না হলে উক্ত অপবাদ অপবাদ দানকারীর উপর পতিত হয় [বোখারী, মুসলিম, আহমাদ]।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৪৩৫
আবু যার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
আবু যার [রাঃআঃ] নাবী [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছেনঃ যে ব্যক্তি সজ্ঞানে নিজ পিতা ব্যতীত অপর কাউকে তার পিতা বলে পরিচয় দেয় এবং যে ব্যক্তি নিজেকে এমন কোন বংশের লোক বলে পরিচয় দেয়, যে বংশে তার জন্ম হয়নি, সে যেন দোযখকে তার বাসস্থান বানালো। আর যে ব্যক্তি কাউকে কাফের বা আল্লাহর দুশমন বলে অথচ সে তা নয়, তা তার উপর পতিত হয় [বোখারী, মুসলিম]।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৪৩৬
নাবী [সাঃআঃ]-এর সাহাবী সুলাইমান ইবনি সুরাদ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেনঃ নাবী [সাঃআঃ]-এর সামনে দুই লোক পরস্পরকে গালি দিলো। তাহাদের একজন অতিমাত্রায় রাগান্বিত হয়ে গেলো, এমনকি তার চেহারা ফুলে বিকৃত হয়ে গেলো। তখন নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ আমি এমন একটি কথা জানি যা সে বললে তার ক্রোধ তিরোহিত হতো। একথা শুনে এক ব্যক্তি লোকটির কাছে গিয়ে নাবী [সাঃআঃ]-এর এ উক্তিটি তাকে অবহিত করলো এবং বললো, তুমি শয়তান থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাও অর্থাৎ আউযু বিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজীম পড়ো। প্রত্যুত্তরে সে বললো, আমার মধ্যে কি তুমি কোন খারাপ কিছু দেখিতে পাচ্ছো? আমি কি পাগল? তুমি চলে যাও -[বোখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, নাসায়ী]।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৪৩৭
আবদুল্লাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
প্রতি দু’জন মুসলমান যাদের মধ্যে মহামহিম আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি আচ্ছাদন বিদ্যমান আছে। কোন ব্যক্তি তার অপর সাথীকে অশ্লীল কথা বললে সে আল্লাহর সেই আচ্ছাদন ছিন্ন করলো এবং একজন অপরজনকে তুমি কাফের বললে তাহাদের মধ্যকার একজন তো কাফের হয়েই যায়।
হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
২০৩. অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি কাউকে মুখের উপর কিছু বলে না।
৪৩৮
আয়েশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] একটা কিছু করিলেন এবং লোকদেরকেও তা করার অনুমতি দিলেন। কিন্তু লোকেরা তা করা থেকে বিরত থাকলো। এ খবর নাবী [সাঃআঃ]-এর কাছে পৌছলে তিনি লোকদের উদ্দেশ্যে কিছু বক্তব্য পেশ করিলেন। বক্তৃতায় তিনি প্রথমে আল্লাহর প্রশংসা করিলেন এবং তারপর বলেনঃ লোকদের কি হয়েছে যে, এমন কাজ থেকে তারা বিরত থাকছে যা আমি করেছি? আল্লাহর কসম! আমি আল্লাহকে তাহাদের চেয়ে বেশী জানি এবং তাহাদের চেয়ে বেশী ভয়ও করি [বোখারী, মুসলিম, নাসায়ী]।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৪৩৯
আনাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
কারো কোন আচরণ অপছন্দ হলে মহানাবী [সাঃআঃ] তাকে কাদাচিৎ মুখের উপর কিছু বলেছেন। একদিন তাহাঁর নিকট এক ব্যক্তি উপস্থিত হলো যার পরিধেয় বস্ত্রে হলুদ রং-এর ছাপ ছিল। সে চলে গেলে তিনি তার সাহাবীদের বলেনঃ কতই না উত্তম হতো যদি এই ব্যক্তি এই রংটি পরিবর্তন করতো বা তা তুলে ফেলতো [আবু দাউদ, আহমাদ, তিরমিজী]।
হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
২০৪. অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি ব্যাখ্যা সাপেক্ষে অপরকে বললো, হে মুনাফিক।
৪৪০
আলী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
মহানাবী [সাঃআঃ] আমাকে ও যুবাইর ইবনুল আওয়ামকে পাঠালেন। আমরা দুজনই ছিলাম ঘোড়সওয়ার। তিনি বলেনঃ “তোমরা রওয়ানা হয়ে অমুক অমুক রওদায় [বাগানে] গিয়ে পৌছবে। সেখানে এক নারীকে পাবে। তার সাথে একটি চিঠি আছে যা হাতেব মুশরিকদের লিখেছে। তোমরা সেই পত্র উদ্ধার করে আমার নিকট নিয়ে আসবে”। আমরা পথ চলতে লাগলাম এবং নাবী [সাঃআঃ]-এর দেয়া তথ্য মোতাবেক সেই নারীকে পেয়ে গেলাম। সে তার উটে করে যাচ্ছিল। আমরা বললাম, তোমার সাথের চিঠি কোথায়? সে বললো, আমার সাথে কোন চিঠি নাই। আমরা তাকে এবং তার উট তল্লাশী করলাম। আমার সাথী বললো, আমি তো [চিঠি] দেখি না। আমি বললাম, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] মিথ্যা বলেননি। আল্লাহর শপথ! হয় তুমি পত্র বের করে দিবে, নতুবা আমি তোমাকে উলঙ্গ করবো। তখন সে তার কোমরের দিকে তার হাত বাড়ালো। সে একটি পশমী কাপড় পরিহিত ছিল। সে চিঠি বের করলো। আমি তা নিয়ে নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট ফিরে এলাম। উমার [রাঃআঃ] বলিলেন, এই ব্যক্তি [হাতিব] আল্লাহ, তার রাসূল এবং মুসলিম জাতির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। আমাকে তাকে হত্যা করার অনুমতি দিন। নাবী [সাঃআঃ] জিজ্ঞেস করলেনঃ তুমি কেন এটা করলে? হাতিব বলিলেন, আল্লাহর উপর আমার ঈমান ঠিক আছে। আমি ইচ্ছা করলাম যে তাহাদের উপর আমার একটু অনুগ্রহ থাকুক। নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ সে ঠিক বলেছে। হে উমার! সে কি বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেনি। এজন্যই হয়তো আল্লাহ তাহাদের সম্পর্কে বলেছেন, “তোমরা যা ইচ্ছা তাই করো, তোমাদের জন্য জান্নাত অবধারিত হয়ে গেছে”। এ কথায় উমার [রাঃআঃ]-এর চক্ষুদ্বয় অশ্রুসজল হয়ে গেলো এবং তিনি বলেন, আল্লাহ এবং তার রাসূলই অধিক জ্ঞাত [বোখারী, মুসলিম, আবু দাউদ]
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২০৫. অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি তার [মুসলমান] ভাইকে বলে, হে কাফের !
৪৪১
আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ কোন লোক তার কোন ভাইকে ‘হে কাফের’ বলে সম্বোধন করলে তাহাদের একজন কুফরীর শিকার হলো [বোখারী, মুসলিম, তিরমিজী, মুওয়াত্ত্বা মালিক]।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৪৪২
আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ কোন ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে কাফের বললে তাহাদের দুইজনের মধ্যে একজন কাফের হয়ে যায়। সেই ব্যক্তি যাকে কাফের বলেছে, সে যদি সত্যিই কাফের হয়ে থাকে তাহলে সে যথার্থই বলেছে। আর সে যদি তার মন্তব্য অনুযায়ী কাফের না হয়ে থাকে, তবে যে তাকে কাফের বললো সে কাফের হয়ে যায় [বোখারী, আহমাদ]।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
২০৬. অনুচ্ছেদঃ শত্রুর আনন্দ-উল্লাস।
৪৪৩
আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] দুর্ভাগ্য এবং শক্রর আনন্দ-উল্লাস থেকে [আল্লাহর] আশ্রয় প্রার্থনা করিতেন [বোখারী, মুসলিম, তিরমিজী]।
হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
Leave a Reply