ইতিকাফ সম্পর্কিত হাদিস – কদরের রাত ও শেষ দশকের ফযিলত
ইতিকাফ সম্পর্কিত হাদিস – কদরের রাত ও শেষ দশকের ফযিলত >> সুনানে ইবনে মাজাহ হাদিস এর মুল সুচিপত্র পড়ুন
পর্ব=৭, অধ্যায় (৫৬-৬৮)=১৩, হাদীস
৭/৫৬. অধ্যায়ঃ লায়লাতুল কদর [কদরের রাত] সম্পর্কে
৭/৫৭. অধ্যায়ঃ রমজান মাসের শেষ দশকের ফযিলত।
৭/৫৮. অধ্যায়ঃ ইতিকাফ সম্পর্কে।
৭/৫৯. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি ইতিকাফে বসলো এবং ইতিকাফের কাযা সম্পর্কে।
৭/৬০. অধ্যায়ঃ এক দিন অথবা এক রাত ইতিকাফ করা।
৭/৬১. অধ্যায়ঃ ইতিকাফকারী মাসজিদের একটি স্থান নির্ধারণ করে নিবে।
৭/৬২. অধ্যায়ঃ মাসজিদের অভ্যন্তরে তাঁবুতে ইতিকাফ করা।
৭/৬৩. অধ্যায়ঃ ইতিকাফকারির রোগীকে দেখিতে যাওয়া ও জানাযায় উপস্থিত হওয়া।
৭/৬৪. অধ্যায়ঃ যে ইতিকাফকারী তাহার মাথা ধোয় এবং চুল আঁচড়ায়।
৭/৬৫. অধ্যায়ঃ ইতিকাফকারির সাথে তাহার পরিবার-পরিজনের সাক্ষাত করা।
৭/৬৬. অধ্যায়ঃ রক্তপ্রদর রোগিনীর ইতিকাফ করা।
৭/৬৭. অধ্যায়ঃ ইতিকাফের সওয়াব।
৭/৬৮. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি দু ঈদের রাতে ইবাদাত করে।
৭/৫৬. অধ্যায়ঃ লায়লাতুল কদর [কদরের রাত] সম্পর্কে
১৭৬৬ আবু সাঈদ আল-খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
আমরা রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাথে রমজান মাসের মধ্যম দশকে ইতিকাফ করেছিলাম। তিনি বলেন, আমাকে লায়লাতুল কদর দেখানো হয়েছিল; পরে তা আমাকে ভুলিয়ে দেয়া হইয়াছে। অতএব তোমরা রমজান মাসের শেষ দশকের বেজোড় রাতসমূহে তা অনুসন্ধান করো। {১৭৬৬}
{১৭৬৬} সহিহুল বুখারি হাদিস নং ২০১৮, মুসলিম ১১৬৭, নাসাঈ ১৩৫৬, আবু দাউদ ১৩৮২, আহমাদ ১০৬৫০, ১০৮০২, ১১১৮৬, ১১৩০৭, মুয়াত্তা মালিক ৭০১, সহীহ আবু দাউদ ১২২১, তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ।হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৭/৫৭. অধ্যায়ঃ রমজান মাসের শেষ দশকের ফযিলত।
১৭৬৭ আয়িশা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নবী [সাঃআঃ] রমজান মাসের শেষ দশকে অন্যান্য সময়ের তুলনায় ইবাদাতে অধিক মশগুল থাকতেন। {১৭৬৭}
{১৭৬৭} সহিহুল বুখারি হাদিস নং ২০২৪,মুসলিম ১১৭৪, ১১৭৫, তিরমিজি ৭৯৬, নাসাঈ ১৬৩৯, আবু দাউদ ১৩৭৬, আহমাদ ২৩৬১১, ২৩৮৫৬,২৩৮৬৯, ২৪০০৭, ২৪৩৯২, ২৫৬৫৬, সহীহাহ ২১২৩, তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ।হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৭৬৮ আয়িশা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নবী [সাঃআঃ] রমজান মাসের শেষ দশকে রাত জাগতেন, তহবন্দ শক্ত করে বেঁধে নিতেন এবং তাহাঁর পরিবার-পরিজনকে [ইবাদাতে মশগুল হওয়ার জন্য] জাগিয়ে দিতেন। {১৭৬৮}
{১৭৬৮} সহিহুল বুখারি হাদিস নং ২০২৪,মুসলিম ১১৭৪, ১১৭৫, তিরমিজি ৭৯৬, নাসাঈ ১৬৩৯, আবু দাউদ ১৩৭৬, আহমাদ ২৩৬১১, ২৩৮৫৬,২৩৮৬৯, ২৪০০৭, ২৪৩৯২, ২৫৬৫৬, সহীহ আবু দাউদ ১২৪৬, তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ।হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৭/৫৮. অধ্যায়ঃ ইতিকাফ সম্পর্কে।
১৭৬৯ আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নবী [সাঃআঃ] প্রতি বছর দশ দিন ইতিকাফ করিতেন। তবে তিনি ইনতিকালের বছর বিশ দিন ইতিকাফ করেন। প্রতি বছর [রমজান মাসে] তাহাঁর কাছে একবার কুরআন পেশ করা হতো। তবে তাহাঁর ইনতিকালের বছর তাহাঁর কাছে তা দুবার পেশ করা হয়। {১৭৬৯}
{১৭৬৯} সহিহুল বুখারি হাদিস নং ২০৪৪, ৪৯৯৮, তিরমিজি ৭৯০, আবু দাউদ ২৪৬৬, আহমাদ ৭৭২৬, ৮২৩০, ৮৪৪৮, ৮৯৫৯, ২৪৮৩০, দারেমী ১৭৭৯, সহীহ আবু দাউদ ২১২৬, ২১৩০, তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ। হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৭৭০ উবাই বিন কাব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নবী [সাঃআঃ] রমাদানের শেষ দশ দিন ইতিকাফ করিতেন। তবে তিনি কোন এক বছর এ সময় সফরে অতিবাহিত করেন। এরপর পরবর্তী বছর তিনি বিশ দিন ইতিকাফ করেন। {১৭৭০}
{১৭৭০} আবু দাউদ ২৪৬৩, আহমাদ ২০৭৭০, তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ্। হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৭/৫৯. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি ইতিকাফে বসলো এবং ইতিকাফের কাযা সম্পর্কে।
১৭৭১ আয়িশা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নবী [সাঃআঃ] ইতিকাফ করার ইচ্ছা করিলে ফজরের সলাত পড়ার পর ইতিকাফের উদ্দেশ্যে নির্ধারিত স্থানে প্রবেশ করিতেন। তিনি রমাদানের শেষ দশদিন ইতিকাফ করার ইচ্ছা করিলেন এবং তাহাঁর জন্য একটি বেষ্টনী তৈরি করার নির্দেশ দিলেন। আয়িশা [রাদি.]-ও তাহাঁর জন্য একটি বেষ্টনী তৈরির নির্দেশ দেন। অতএব তাহার জন্যও বেষ্টনী তৈরি করা হলো। হাফসা [রাদি.]-ও একটি বেষ্টনী তৈরির নির্দেশ দিলে তাহাঁর জন্যও তা তৈরি করা হলো। যয়নাব [রাদি.] তাহাদের দুজনের বেষ্টনী দেখে আরেকটি বেষ্টনী তৈরির নির্দেশ দেন এবং তাহাঁর জন্যও তা তৈরি করা হলো। রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এ অবস্থা প্রত্যক্ষ করে বলেন, তোমরা কি পুণ্য লাভের উদ্দেশ্যে এমনটি করছো! এরপর তিনি আর রমজান মাসে ইতিকাফ করিলেন না, পরে শাওয়াল মাসের দশ দিন ইতিকাফ করেন। {১৭৭১}
{১৭৭১} সহিহুল বুখারি হাদিস নং ২০৩৩, ২০৩৪, ২০৪১, ২০৪৫, মুসলিম ১১৭২, ১১৭৩, তিরমিজি ৭৯১, নাসাঈ ৭০৯, আবু দাউদ ২৪৬৪, আহমাদ ২৪০২৩, ২৫৩৬৯, মুয়াত্তা মালিক ৬৯৯, তালীক ইবনি খুযাইমাহ ২২২৪, সহীহ আবু দাউদ ২১২৭, ২১২৮, তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ।হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৭/৬০. অধ্যায়ঃ এক দিন অথবা এক রাত ইতিকাফ করা।
১৭৭২ উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
উমার [রাদি.], জাহিলী যুগে তাহার এক রাত ইতিকাফ করার মানত ছিল। তিনি এ সম্পর্কে নবী [সাঃআঃ]-কে জিজ্ঞেস করিলে তিনি তাহাকে ইতিকাফ করার নির্দেশ দেন। {১৭৭২}
{১৭৭২} সহিহুল বুখারি হাদিস নং ২০৩২, ২০৪২, ২০৪৩, ৩১৪৪, ৪৩২০, ৬৬৯৭, মুসলিম ১৬৫৬, তিরমিজি ১৫৩৯, নাসাঈ ৩৮২০, ৩৮২১, ৩৮২২, আবু দাউদ ৩৩২৫, আহমাদ ২৫৭, ৪৬৯১, ৫৫১৪, ৬৩৮২, দারেমী ২৩৩৩, তালীক ইবনি খুযাইমাহ ২২২৯, সহীহ আবু দাউদ ২১৩৬, ২১৩৭, তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ।হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৭/৬১. অধ্যায়ঃ ইতিকাফকারী মাসজিদের একটি স্থান নির্ধারণ করে নিবে।
১৭৭৩ আবদুল্লাহ্ বিন উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] রমজান মাসের শেষ দশকে ইতিকাফ করিতেন। নাফি [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, আবদুল্লাহ বিন উমার [রাদি.] আমাকে রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর ইতিকাফের স্থানটি দেখিয়েছেন। {১৭৭৩}
{১৭৭৩} সহিহুল বুখারি হাদিস নং ২০২৫, মুসলিম ১১৭১, আবু দাউদ ২৪৬৫, আহমাদ ৬১৩৭, সহীহ আবু দাউদ ২১২০, বুখারীতে নাফিবলেছেন এ কথা নেই। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ।হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৭৭৪ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
ইবনি উমার [রাদি.] ইতিকাফের ইচ্ছা করিলে তাহার জন্য “উসতুওয়ানায়ে তাওবা”-এর পেছনে তাহাঁর বিছানা দেয়া হতো অথবা তাহাঁর খাট রাখা হতো। {১৭৭৪}
{১৭৭৪} তালীক সহীহ ইবনি খুযাইমাহ ২২৩৬। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ জইফ। উক্ত হাদিসের রাবি নুআয়ম বিন হাম্মাদ সম্পর্কে আল-আজলী সিকাহ বলেছেন। ইবনি হিব্বান বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় কখনো কখনো সন্দেহ ও ভুল করেন। মুসলিম বিন কাসিম বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে হাদিস বর্ণনায় অধিক ভুল করেন। আবু আহমাদ আল-হাকিম বলেন, তিনি কিছু হাদিসের ব্যাপারে বিপরীত হাদিস বর্ণনা করিয়াছেন। আবু বিশর আদ দাওলানী বলেন, তিনি দুর্বল। আবু দাউদ আস-সাজিসতানী বলেন, তিনি হাদিস গ্রহনের ব্যাপারে শিথিল। আহমাদ বিন সালিহ আল-জায়লী বলেন, তিনি সিকাহ। ইবনি হাজার আল-আসকালনী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে হাদিস বর্ণনায়অধিক ভুল করেন।[তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৬৪৫১, ২৯/৪৬৬ নং পৃষ্ঠা]হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
৭/৬২. অধ্যায়ঃ মাসজিদের অভ্যন্তরে তাঁবুতে ইতিকাফ করা।
১৭৭৫ আবু সাঈদ আল-খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] একটি তুর্কী তাঁবুর মধ্যে ইতিকাফে বসেন, যাহার জানালায় টাঙ্গানো ছিলো চাটাইয়ের টুকরা। রাবী বলেন, তিনি তাহাঁর হাত দিয়ে চাটাইটি সরিয়ে বেষ্টনীর পাশে রাখেন, অতঃপর মাথা বের করে লোকদের সাথে কথা বলেন। {১৭৭৫}
{১৭৭৫} হাদিসটি ঈমাম ইবনি মাজাহ এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন। বায়হাকী ৪/১৮২। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ।হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৭/৬৩. অধ্যায়ঃ ইতিকাফকারির রোগীকে দেখিতে যাওয়া ও জানাযায় উপস্থিত হওয়া।
১৭৭৬ আয়িশা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
আমি ইতিকাফরত অবস্থায় কেবলমাত্র প্রাকৃতিক প্রয়োজনে ঘরে যেতাম এবং ঘরে রোগী থাকলে হাঁটতে হাঁটতে তাহাকে দেখিতে যেতাম। তিনি আরো বলেন, রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] ইতিকাফকালে প্রাকৃতিক প্রয়োজন ছাড়া ঘরে যেতেন না। {১৭৭৬}
{১৭৭৬} আহমাদ ২৪২১০, ২৪৯৫৬, ইরওয়াহ ৯৭৪, ৯৭৮, তালীক ইবনি খুযাইমাহ ২২৩০, সহীহ আবু দাউদ ২১৩১, বুখারিতে মারফুভাবে। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ।হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
১৭৭৭আনাস বিন মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ ইতিকাফকারী জানাযায় শরীক হইতে পারে এবং রোগীকেও দেখিতে যেতে পারে। {১৭৭৭}
তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ বানোয়াট। {১৭৭৭} হাদিসটি ঈমাম ইবনি মাজাহ এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন। যঈফাহ ৪৬৭৯। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ বানোয়াট। উক্ত হাদিসের রাবি ১. হায়্যাজ [বিন বিসতাম] আল-খুরাসানী সম্পর্কে আহমাদ বিন হাম্বল বলেন, তাহার হাদিস প্রত্যাখ্যানযোগ্য। ইয়াহইয়া বিন মাঈন ও ইয়াকুব বিন সুফইয়ান তাহাকে দুর্বল বলেছেন। আবু দাউদ আস-সাজিসতানী বলেন, হাদিস বিশারদগণ তাহার হাদিস বর্জন করিয়াছেন। আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, তাহার থেকে হাদিস গ্রহন করা যায় তবে তা দলীলযোগ্য নয়। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৬৬৩৭, ৩০/৩৫৭ নং পৃষ্ঠা] ২. আম্বাসাহ বিন আব্দুর রহমান সম্পর্কে ঈমাম বুখারী বলেন, হাদিস বিশারদগণ তাহার হাদিস প্রত্যাখ্যান করিয়াছেন। ঈমাম তিরমিজি ও আবু দাউদ আস-সাজিসতানী তাহাকে দুর্বল বলেছেন। আবু যুরআহ আর-রাযী বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় মুনকার। আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, তিনি বানিয়ে হাদিস বর্ণনা করেন, তাহার হাদিস প্রত্যাখ্যানযোগ্য। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৪৫৩৬, ২২/৪১৬ নং পৃষ্ঠা] ৩. আবদুল খালিক সম্পর্কে ঈমাম যাহাবী বলেন, তিনি অত্যান্ত দুর্বল। ইবনি হাজার আল-আসকালনী বলেন, তিনি মাজহুল বা অপরিচিত। এছাড়াও এ হাদিসটি সহীহ হাদিসের বিপরীত। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৩৭৩২, ১৬/৪৬৬ নং পৃষ্ঠা]হাদিসের তাহকিকঃ জাল হাদিস
৭/৬৪. অধ্যায়ঃ যে ইতিকাফকারী তাহার মাথা ধোয় এবং চুল আঁচড়ায়।
১৭৭৮আয়িশা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] ইতিকাফরত অবস্থায় তাহাঁর মাথা আমার দিকে এগিয়ে দিতেন। আমি তা ধৌত করে দিতাম এবং আঁচড়িয়ে দিতাম। তখন আমি হায়িয অবস্থায় আমার ঘরে থাকতাম এবং তিনি মাসজিদে থাকতেন। {১৭৭৮}
{১৭৭৮} সহিহুল বুখারি হাদিস নং ২৯৫, ২৯৬, ৩০১, ২০২৮, ২০২৯, ২০৩১, ২০৪৬, ৫৯২৫, মুসলিম ২৯৭, তিরমিজি ৮০৪, নাসাঈ ২৭৫, ২৭৬, ২৭৭, ৩৮৬, ৩৮৭, ৩৮৮, ৩৮৯, আবু দাউদ ২৪৬৭, ২৪৬৯, আহমাদ ২৩৭১৮, ২৩৭৫৯, ২৪০০০, ২৪১৬২, ২৪২১০, ২৪৮৪১, ২৪৯৫৬, ২৫০৩৫, ২৫১৫৪, ২৫৩৯৪, ২৫৪১০, ২৫৪৪২, ২৫৪৪৯, ২৫৫৭১, ২৫৭২৯, মুয়াত্তা মালিক ১৩৫, ৬৯৩, দারেমী ১০৫৮, ১০৫৯, ১০৬৬, ১০৬৮, ১০৬৯, বায়হাকী ৪/৮৪, তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ্।হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৭/৬৫. অধ্যায়ঃ ইতিকাফকারির সাথে তাহার পরিবার-পরিজনের সাক্ষাত করা।
১৭৭৯ নবী [সাঃআঃ]-এর স্ত্রী সাফিয়্যাহ বিনতু হুইয়ায় [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রমজান মাসের শেষ দশকে রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] মাসজিদে ইতিকাফ করেছিলেন। তখন সাফিয়্যা [রাদি.] তাহাঁর সাথে দেখা করিতে আসেন এবং রাতের কিছুক্ষণ তাহাঁর সাথে কথাবার্তা বলেন। অতঃপর তিনি চলে যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়ালে রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-ও তাহাকে বিদায় দেয়ার জন্য দাঁড়ান। সাফিয়্যা [রাদি.] নবী [সাঃআঃ]-এর অপর স্ত্রী উম্মু সালামাহ [রাদি.]-এর ঘরের নিকটবর্তী মাসজিদের দরজার কাছাকাছি পৌঁছলে দুজন আনসারী তাহাদেরকে অতিক্রম করে গেলেন এবং রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে সালাম দিয়ে তাড়াতাড়ি চলে যেতে লাগলেন। রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাদেরকে বলেন, থামো! এ হচ্ছে সাফিয়্যা বিনতু হুইয়ায়। তাহারা বলেন, সুবহানাল্লাহ, হে আল্লাহ্র রসূল! বিষয়টি তাহাদের জন্য কঠিন মনে হলো। রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেন, শয়তান আদম-সন্তানের শিরা-উপশিরায় রক্ত প্রবাহের মত ধাবিত হয়। আমি আশঙ্কা করছিলাম, শয়তান তোমাদের অন্তরে কোনরূপ কুধারণার সৃষ্টি করে কিনা? {১৭৭৯}
{১৭৭৯} সহিহুল বুখারি হাদিস নং ২০৩৫, ২০৩৮, ২০৩৯, ৩১০১, ৩২৮১, ৬২১৯, ৭১৭১, মুসলিম ২১৭৫, আবু দাউদ ২৪৭০, ৪৯৯৪, আহমাদ ২৬৩২২, দারেমী ১৭৮০, সহীহ আবু দাউদ ২১৩৩-২১৩৪, তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ।হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৭/৬৬. অধ্যায়ঃ রক্তপ্রদর রোগিনীর ইতিকাফ করা।
১৭৮০ ইকরামাহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
আয়িশা [রাদি.] বলেছেন, রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর এক স্ত্রী তাহাঁর সাথে ইতিকাফ করেন। তিনি লাল ও হলদে বর্ণের রক্ত দেখিতে পেতেন। তাই অধিকাংশ সময় তিনি তাহার নিচে একটি ছোট প্লেট পেতে রাখতেন। {১৭৮০}
{১৭৮০} সহিহুল বুখারি হাদিস নং ৩০৯, ৩১০, ৩১১, আবু দাউদ ২৪৭৬, আহমাদ ২৪৪৭৭, দারেমী ৮৭৭, সহীহ আবু দাউদ ২১৩৮, তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ।হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৭/৬৭. অধ্যায়ঃ ইতিকাফের সওয়াব।
১৭৮১ ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] ইতিকাফকারী সম্পর্কে বলেন, সে নিজেকে গুনাহ থেকে বিরত রাখে এবং নেককারদের সকল নেকী তাহার জন্য লেখা হয়। {১৭৮১}
{১৭৮১} হাদিসটি ঈমাম ইবনি মাজাহ এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন। মিশকাত ২১০৮, দ্বিতীয় তাহকীক। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ জইফ। উক্ত হাদিসের রাবি ১. ঈসা বিন মুসা আল-বুখারী সম্পর্কে মুসলিম বিন কাসিম বলেন, তিনি সিকাহ। ইবনি হিব্বান বলেন, তিনি কখনো কখনো হাদিস বর্ণনায় সিকাহ রাবীর বিপরীত বর্ণনা করেন। হাকিম বলেন, তিনি সত্যবাদী। ঈমাম যাহাবী বলেন, তিনি সত্যবাদী কিনতি ১০০ জন অপরিচিত ব্যাক্তির নিকট থেকে হাদিস বর্ণনা করিয়াছেন। ২. উবায়দাহ আল-আম্মী সম্পর্কে ইবনি হাজার আল-আসকালনী বলেন, তাহার অবস্থা সম্পর্কে অজ্ঞাত। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৩৭৫১, ১৯/২৫৬ নং পৃষ্ঠা] ৩. ফারকাদ আস-সাবাখী সম্পর্কে আহমাদ বিন হাম্বল বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় নির্ভরযোগ্য নয়। আল-আজালী বলেন, কোন সমস্যা নেই। আবু আহমাদ আল-হাকিম, আহমাদ বিন শুআয়ব আন-নাসাঈ ও আবু যুরআহ আর-রাযী তাহারা বলেন, তিনি দুর্বল। ইবনি হাজার আল-আসকালনী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে তিনি যাচাই বাছাই ছাড়া হাদিস গ্রহন করেন ও তা বর্ণনা করেন। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৪৭১৫, ২৩/১৬৪ নং পৃষ্ঠা]হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
৭/৬৮. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি দু ঈদের রাতে ইবাদাত করে।
১৭৮২ আবু উমামাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নবী [সাঃআঃ] বলেন, যে ব্যক্তি দু ঈদের রাতে আল্লাহ্র সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে ইবাদাত করিবে তাহার অন্তর ঐ দিন মরবে না, যে দিন অন্তরসমূহ মরে যাবে। {১৭৮২}
তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ বানোয়াট।{১৭৮২} হাদিসটি ঈমাম ইবনি মাজাহ এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন। বায়হাকী ৪/১০৩। যঈফাহ ৫২১, ৫১৩৬, তালীকুর রগীব ২/১০০। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ বানোয়াট। উক্ত হাদিসের রাবি ১. মুহাম্মাদ ইবনিল মুসাফফা আল-হিমসী সম্পর্কে আবু হাতিম আর-রাযী ও ঈমাম নাসাঈ বলেন, তিনি সত্যবাদী। ইবনি হিব্বান তাহাকে সিকাহ বললেও অন্যত্র বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় ভুল করেন। ইবনি হাজার আল-আসকালনী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে হাদিস বর্ণনায় সন্দেহ ও তাদলীস করেন। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৫৬১৩, ২৬/৪৬৫ নং পৃষ্ঠা] ২. বাকিইয়্যাহ সম্পর্কে আবু যুরআহ আর-রাযী বলেন, যখন তিনি সিকাহ রাবী থেকে হাদিস বর্ণনা করেন তখন তাহাকে সিকাহ হিসেবে গন্য করা হইবে। ঈমাম নাসাঈ বলেন, যখন তিনি হাদ্দাসানা বা আখবারনা শব্দদয় দ্বারা হাদিস বর্ণনা করেন তখন তিনি সিকাহ হিসেবে গন্য হইবেন। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৭৩৮, ৪/১৯২ নং পৃষ্ঠা]হাদিসের তাহকিকঃ জাল হাদিস
Leave a Reply