ক্রয় বিক্রয় সম্পর্কে ইসলামের বিধি বিধান ও হাদীস
ক্রয় বিক্রয় সম্পর্কে ইসলামের বিধি বিধান ও হাদীস >> সুনানে ইবনে মাজাহ হাদিস এর মুল সুচিপত্র পড়ুন
পর্বঃ ১২, অধ্যায়ঃ (২২-৩৯)=১৮টি
১২/২২. অধ্যায়ঃ উরবান ধরণের ক্রয়-বিক্রয়।
১২/২৩. অধ্যায়ঃ পাথর নিক্ষেপ বেচা-কেনা এবং প্রতারণামূলক ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ।
১২/২৪. অধ্যায়ঃ গবাদি পশুর পেটের বাচ্চা ক্রয়বিক্রয়য়, পশুর স্তনে থাকা অবস্থায় দুধ বিক্রয় এবং ডুবুরীর বাজি নির্ভর ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ।
১২/২৫. অধ্যায়ঃ নিলামে ক্রয়-বিক্রয়।
১২/২৬. অধ্যায়ঃ ইকালা [ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি রদকরণ]।
১২/২৭. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি মূল্য বেঁধে দেয়া অপছন্দ করে।
১২/২৮. অধ্যায়ঃ ক্রয়-বিক্রয়ে উদারতা প্রদর্শন।
১২/২৯. অধ্যায়ঃ দরদাম করে ক্রয়-বিক্রয় করা।
১২/৩০. অধ্যায়ঃ ক্রয়-বিক্রয়কালে শপথ করা নিষেধ।
১২/৩১ .অধ্যায়ঃ তাবীরকৃত খেজুর বাগান ও মালদার গোলাম বিক্রয় করা।
১২/৩২. অধ্যায়ঃ পুষ্ট হওয়ার আগে ফল বিক্রয় করা নিষিদ্ধ।
১২/৩৩. অধ্যায়ঃ কয়েক বছরের মেয়াদে ফল বিক্রয় করা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ সম্পর্কে।
১২/৩৪. অধ্যায়ঃ ওজনে একটু বেশি দেয়া।
১২/৩৫. অধ্যায়ঃ পুরাপুরি ওজন ও পরিমাপ করা।
১২/৩৬. অধ্যায়ঃ ধোঁকা দেয়া নিষিদ্ধ।
১২/৩৭. অধ্যায়ঃ হস্তগত করার পূর্বে খাদ্যশস্য বিক্রয় করা নিষিদ্ধ।
১২/৩৮. অধ্যায়ঃ খাদ্যশস্যের স্তুপ বিক্রয় করা।
১২/৩৯. অধ্যায়ঃ খাদ্যশস্য ওজন করলে তাতে বরকত হওয়ার আশা করা যায়।
১২/২২. অধ্যায়ঃ উরবান ধরণের ক্রয়-বিক্রয়।
২১৯২. আবদুল্লাহ বিন আমর ইবনিল আস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] উরবান ধরনের ক্রয়-বিক্রয় করিতে নিষেধ করেছেন। {২১৯২}
{২১৯২} ইবনি মাজাহ ২১৯৩, আবু দাউদ ৩৫০২, মিশকাত ২৮৬৪। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ যইফ। উক্ত হাদিসের রাবী মালিক বিন আনাস ও আমর বিন শুআয়ব এর মাঝে ইনকিতা সংগঠিত হয়েছে।হাদিস এর তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
২১৯৩. আবদুল্লাহ বিন আমর ইবনিল আস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] উরবান ধরনের ক্রয়-বিক্রয় করিতে নিষেধ করেছেন। আবু আবদুল্লাহ [ঈমাম ইবনি মাজাহ] বলেন, উরবান ধরনের ক্রয়-বিক্রয় এই যে, যেমন কোন ব্যক্তি একশত দীনারে একটি পশু ক্রয় করে বিক্রেতাহাকে বায়নাস্বরূপ দুদীনার দিয়ে বললো, আমি পশুটি ক্রয় না করলে দীনার দুটি তোমারই থাকিবে। আরো বলা হয়েছে যে, ক্রেতা কোন জিনিস ক্রয় করে বিক্রেতাহাকে এক দিরহাম অথবা তার কম বা বেশি দিয়ে বললো, আমি তা রেখে দিলে তো ঠিক আছে, অন্যথায় দিরহামটি তোমারই। আল্লাহই ভাল জানেন। {২১৯৩}
{২১৯৩} ইবনি মাজাহ ২১৯২, আবু দাউদ ৩৫০২। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ যইফ। উক্ত হাদিসের রাবী হাবিব বিন আবু হাবিব [উপনাম] আবু মুহাম্মাদ সম্পর্কে আবু আহমাদ আল হাকিম বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় দুর্বল। আবুল ফাতহ আল-আযদী বলেন, তিনি মিথ্যার সাথে অভিযুক্ত। আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, তিনি সিকাহ নয়, তিনি প্রত্যাখ্যানযোগ্য। আবু যুরআহ আর-রাযী বলেন, তিনি জাল [বানিয়ে] হাদিস বর্ণনা করেন। ঈমাম দারাকুতনী বলেন, তিনি প্রত্যাখ্যানযোগ্য। [তাহযীবুল কামালঃ রাবী নং ১০৮২, ৫/৩৬৬ নং পৃষ্ঠা] ২. আবদুল্লাহ বিন আমির আল-আসলামী সম্পর্কে আবু আহমাদ আল-হাকিম বলেন, তিনি আহলে ইলমের নিকট নির্ভরযোগ্য নয়। আবু বকর আল-বায়হাকী ও আবু দাউদ আস-সাজিসতানী বলেন, তিনি দুর্বল। আবু যুরআহ আর-রাযী বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় দুর্বল। ঈমাম বুখারী বলেন, তার হিফযের বিষয় নিয়ে সমালোচনা রয়েছে। [তাহযীবুল কামালঃ রাবী নং ৩৩৫৫, ১৫/১৫০ নং পৃষ্ঠা]হাদিস এর তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
১২/২৩. অধ্যায়ঃ পাথর নিক্ষেপ বেচা-কেনা এবং প্রতারণামূলক ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ।
২১৯৪. আবু হুরায়রা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] প্রতারণামূলক ক্রয়-বিক্রয় এবং পাথর নিক্ষেপে নির্ধারিত ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ করেছেন। {২১৯৪}
{২১৯৪} মুসলিম ১৫১৩, তিরমিজি ১২৩০, নাসায়ী ৪৫১৮, আবু দাউদ ৩৩৭৬, আহমাদ ৭৩৬৩, ৮৬৬৭, ৯৩৪৫, ৯৩৭৫, ১০০৬২, দারেমী ২৫৬৩, ২৫৫৪, ইরওয়া ১২৯৪। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহিহ। উক্ত হাদিসের রাবী আবদুল আযীয বিন মুহাম্মাদ সম্পর্কে মুহাম্মাদ বিন সাদ বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় সংমিশ্রণ করেন। ইবনি হিব্বান বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় ভুল করেন। মালিক বিন আনাস তাহাকে সিকাহ বলিয়াছেন। আহমাদ বিন শুআয়ব আন নাসায়ী বলেন, তিনি নির্ভরযোগ্য নয়। ইবনি হাজার আল-আসকালানী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে নিজ কিতাব ছাড়া অন্যত্র থেকে হাদিস বর্ণনায় ভুল করেন। [তাহযীবুল কামালঃ রাবী নং ৩৪৭০, ১৮/১৮৭ নং পৃষ্ঠা]হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
২১৯৫. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] প্রতারণামূলক ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ করেছেন। {২১৯৫}
{২১৯৫} আহমাদ ২৭৪৭, বায়হাকী ৬/১২৬। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহিহ। উক্ত হাদিসের রাবী আয়্যুব বিন উতবাহ সম্পর্কে আবু আহমাদ আল-হাকিম বলেন, তিনি আহলে ইলমের নিকট নির্ভরযোগ্য নয়। আবু বকর আল-বায়হাকী বলেন, তিনি দুর্বল। আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, তার মাঝে দুর্বলতা রয়েছে, তিনি বাগদাদে আসার পর তার নিকট কোন কিতাব না থাকায় তার মুখস্ত হাদিস বর্ণনায় তিনি সন্দেহ করিতেন। আবু হাতিম বিন হিব্বান বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় অধিক ভুল করিতেন। আহমাদ বিন হাম্বল বলেন, তিনি দুর্বল। [তাহযীবুল কামালঃ রাবী নং ৬২০, ৩/৪৮৪ নং পৃষ্ঠা] উক্ত হাদিসটি সহিহ কিন্তু আয়্যুব বিন উতবাহ এর কারণে সনদটি দুর্বল। হাদিসটির ১২৫ টি শাহিদ হাদিস রয়েছে। তন্মধ্যে ২৭ টি খুবই দুর্বল, ৪৮ টি দুর্বল, ১৭ টি হাসান, ৩৩ টি সহিহ হাদিস পাওয়া যায়, তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলঃ মুসলিম ১৪১২, তিরমিযি ১২৩০, আবু দাউদ ৩৩৭৬, দারিমী ২৫৫৪, ২৫৬৩, আহমাদ ২৭৪৭, ৬২৭১, ৬৪০১, ৭৩৬৩, ৮৬৬৭, ৯৩৪৫, ৯৩৭৫, দারিমী ২৫৫৪, ২৫৬৩, দারাকুতনী ২৮১৭, ২৮১৮, মুসান্নাফ আব্দুর রাযযাক ১৪৫০৬, ১৪৫০৭, ১৪৫০৮, মুজামুল আওসাত ৩০৪, ৩০৫, ২৩৩১, ৫৫১৫, ৫৬২২, ৮০৮৭, আল-ফাওয়াইদ ৯৪১, শারহুস সুন্নাহ ২১০২, ২১০৩।হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১২/২৪. অধ্যায়ঃ গবাদি পশুর পেটের বাচ্চা ক্রয়বিক্রয়য়, পশুর স্তনে থাকা অবস্থায় দুধ বিক্রয় এবং ডুবুরীর বাজি নির্ভর ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ।
২১৯৬. আবু সাঈদ আল খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] গবাদি পশুর গর্ভস্থ বাচ্চা প্রসবের পূর্বে, পশুর স্তনের দুধ পরিমাণ না করে, পলাতক গোলাম, গনিমতের মাল বন্টনের পূর্বে, দান-খয়রাত হস্তগত করার পূর্বে এবং ডুবুরীর বাজির ভিত্তিতে ক্রয়-বিক্রয় করিতে নিষেধ করেছেন। {২১৯৬}
{২১৯৬} আহমাদ ১০৯৮৪, ইরওয়াহ ১২৯৩। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ যইফ। উক্ত হাদিসের রাবী ১. মুহাম্মাদ বিন ইবরাহীম আল-বাহিলী সম্পর্কে আবু হাতিম আর-রাযী ও ইবনি হাজার আল-আসকালানী বলেন, তিনি মাজহুল বা অপরিচিত। [তাহযীবুল কামালঃ রাবী নং ৫০৩৫, ২৪/৩৩৫ নং পৃষ্ঠা] ২. শাহর বিন হাওশাব সম্পর্কে ইয়াহইয়া বিন মাঈন ও ইয়াকুব বিন সুফইয়ান এবং আল-আজালী বলেন, তিনি সিকাহ। শুবাহ ইবনিল হাজ্জাজ তাহাকে বর্জন করেছেন। আহমাদ বিন হাম্বল ও আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, কোন সমস্যা নেই। [তাহযীবুল কামালঃ রাবী নং ২৭৮১, ১২/৫৭৮ নং পৃষ্ঠা]হাদিস এর তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
২১৯৭. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] পশুর গর্ভস্থ ভ্রুণের বাচ্চা ক্রয়-বিক্রয় করিতে নিষেধ করেছেন। {২১৯৭}
{২১৯৭} সহীহুল বুখারী ২১৪৩, ২২৫৬, ৩৮৪৩, মুসলিম ১৫১৪, তিরমিজি ১২২৯, নাসায়ী ৪৬২৩, ৪৬২৪, ৪৬২৫, আবু দাউদ ৩৩৮০,আহমাদ ৩৯৬, ৪৪৭৭, ৪৫৬৮, ৪৬২৬, ৫২৮২, ৫৪৪৩, ৫৪৮৬, ৫৮২৮, ৬২৭১, ৬৪০১, মুয়াত্তা মালেক ১৩৫৭। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহিহ।হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১২/২৫. অধ্যায়ঃ নিলামে ক্রয়-বিক্রয়।
২১৯৮. আনাস বিন মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
এক আনসারী ব্যক্তি নাবী [সাঃআঃ] এর নিকট উপস্থিত হয়ে কিছু চাইলে তিনি বলেনঃ তোমার ঘরে কি কিছু আছে? সে বললো, হ্যাঁ, একটি কম্বল আছে, যার একাংশ আমরা গায়ে দেই এবং অপরাংশ [বিছানা হিসেবে] বিছাই। আর আছে একটি পানপাত্র যাতে করে আমরা পানি পান করি। নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ জিনিস দুটি আমার নিকট নিয়ে এসো।রাবী বলেন, সে এগুলো তাহাঁর নিকট নিয়ে আসলে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] জিনিস দুটি নিজ হাতে নিয়ে বলেনঃ এই জিনিস দুটি কে কিনবে? এক ব্যক্তি বললো, আমি এক দিরহামে তা ক্রয় করিতে পারি। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ এর বেশী মূল্য কে দিবে? তিনি কথাটি দুবার অথবা তিনবার বলেন। তখন এক লোক বললো, আমি দু দিরহামে তা কিনতে পারি। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] জিনিস দুটি তাহাকে দিয়ে দিরহাম দুটি গ্রহণ করিলেন। তিনি তা আনসারী লোকটিকে দিয়ে বলিলেনঃ এর একটি দিরহাম দিয়ে খাদ্য কিনে তোমার পরিবার-পরিজনকে দিয়ে আসো এবং অবশিষ্ট দিরহামটি দিয়ে কুঠার কিনে আমার নিকট নিয়ে আসো।লোকটি তাই করলো। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] সেটি নিয়ে তাতে নিজ হাতে কাঠের হাতল লাগিয়ে দিলেন এবং বলিলেনঃ যাও, জংগল থেকে কাঠ সংগ্রহ করো।আমি যেন পনের দিনের মধ্যে তোমাকে না দেখি। সে কাঠ সংগ্রহ করে বিক্রয় করিতে লাগলো।অতঃপর সে যখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর নিকট আসলো, তখন তার নিকট দশ দিরহাম সঞ্চিত হয়েছে। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ এর কিছু দিয়ে খাদ্য কিনে নাও এবং কিছু দিয়ে কপড়-চোপড় কিনে নাও। তিনি আরও বলেনঃ ভিক্ষার কারণে কিয়ামতের দিন তোমার মুখমণ্ডলে অপমানের চিহ্ন থাকার চেয়ে এটি তোমার জন্য অধিক উত্তম। চরম দরিদ্রতা, কঠিন ঋণের বোঝা অথবা রক্তপণ আদায়ের মত প্রয়োজন ব্যতীত যাচ্ঞা করা সংগত নয়। {২১৯৮}
{২১৯৮} আবু দাউদ ১৬৪১, বায়হাকী ১/৩৮৯, ইরওয়া ১২৮৯, মিশকাত ২৮৭৩। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ যইফ। উক্ত হাদিসের রাবী আবু বকর আল-হানাফী সম্পর্কে আবুল হাসান ইবনিল কাত্তান বলেন, তার আদালাত সম্পর্কে কিছু জানা যায়না, তার অবস্থা অজ্ঞাত। ইবনি হাজার আল-আসকালানী বলেন, তার অবস্থা সম্পর্কে কিছু জানা যায়না। ইবনি আবদুল বার আল-আন্দালাসী বলেন, তিনি মাজহুল বা অপরিচিত ও তার সংবাদ মুনকার। [তাহযীবুল কামালঃ রাবী নং ৩৬৭৫, ১৬/৩৩৮ নং পৃষ্ঠা]হাদিস এর তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
১২/২৬. অধ্যায়ঃ ইকালা [ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি রদকরণ]।
২১৯৯. আবু হুরায়রা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ যে ব্যক্তি কোন মুসলমানের [বা অনুতপ্ত ব্যক্তির অনুরোধে] চুক্তি ভঙ্গের সুযোগ দিলো, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার ত্রুটি-বিচ্যুতি মাফ করবেন। {২১৯৯}
{২১৯৯} আবু দাউদ ৩৪৬০, আহমাদ ৭৩৮৩, বায়হাকী ৪/১৯১, ইরওয়া ১৩৩৪, মিশকাত ২৮৮১, সহিহাহ ২৬১৪। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহিহ।হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১২/২৭. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি মূল্য বেঁধে দেয়া অপছন্দ করে।
২২০০. আনাস বিন মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর যুগে একবার জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেলো। লোকজন বললো, হে আল্লাহর রাসূল! জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেছে। অতএব আপনি আমাদের জন্য মূল্য বেঁধে দিন। তিনি বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ মূল্য নিয়ন্ত্রণকারী, সংকোচনকারী, সম্প্রসারণকারী এবং রিযিক দানকারী। আমি আমার রবের সাথে এমন অবস্থায় সাক্ষাত করিতে চাই যে, কেউ যেন আমার বিরুদ্ধে রক্তের ও সম্পদের কোনরূপ অভিযোগ উত্থাপন করিতে না পারে। {২২০০}
{২২০০} তিরমিজি ১৩১৪, আবু দাউদ ৩৪৫১, আহমাদ ১২১৮১, ১৩৬৪৩, দারেমী ২৫৪৫, ইবনি হিব্বান ৪৯৩, ৪৯৩৫, আল বায়হাকী ফিশ-শুআব ২৯১৬, ১৭৩১৮। গায়াতুল মারাম ৩২৩, রাওদুন নাদীর ৪০৫। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহিহ।হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
২২০১. আবু সাঈদ আল-খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর যুগে একবার জিনিসপত্রের মূল্য বৃদ্ধি পেলে লোকেরা বললো, ইয়া রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]! আপনি যদি মূল্য বেঁধে দিতেন। তিনি বলেনঃ আমি তোমাদের নিকট থেকে এমন অবস্থায় বিদায় নিতে ইচ্ছুক যে, তোমাদের কেউ আমার বিরুদ্ধে তার উপর কৃত যুলুমের দাবি না উঠাতে পারে। {২২০১}
{২২০১} আহমাদ ১১৪০০, রাওদুন নাদীর ৪০৫। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহিহ। উক্ত হাদিসের রাবী মুহাম্মাদ বিন যিয়াদ সম্পর্কে ইবনি হিব্বান সিকাহ বললেও অন্যত্র বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় কখনো কখনো ভুল করেন। ঈমাম যাহাবী বলেন, তিনি সত্যবাদী। ইবনি মিনদাল বলেন, তিনি দুর্বল। [তাহযীবুল কামালঃ রাবী নং ৫২২১, ২৫/১২৫ নং পৃষ্ঠা]হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১২/২৮. অধ্যায়ঃ ক্রয়-বিক্রয়ে উদারতা প্রদর্শন।
২২০২. উসমান বিন আফ্ফান [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেন, ক্রয়-বিক্রয়ের সময় যে ব্যক্তি সহজতা প্রদর্শন করে আল্লাহ তাহাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। {২২০২}
{২২০২} আহমাদ ৪১২, ৪৮৭, ৫১০, তাখরিজুল মুখতার ৩৫৪, ৩৫৫, সহিহাহ ১১৮১। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ হাসান।হাদিস এর তাহকিকঃ হাসান হাদিস
২২০৩. জাবির বিন আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেন, যে ব্যক্তি বিক্রয়কালে উদারচিত্ত, ক্রয়কালেও উদারচিত্ত এবং পাওনা আদায়ের তাগাদায়ও উদারচিত্ত আল্লাহ সেই বান্দার প্রতি দয়া করুন। {২২০৩}
{২২০৩} সহীহুল বুখারী ২০৭৬, তিরমিজি ১৩২০, আত-তালীকুর রাগীব ৩/১৮, রাওদুন নাদীর ২১১। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহিহ।হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১২/২৯. অধ্যায়ঃ দরদাম করে ক্রয়-বিক্রয় করা।
২২০৪. বানী আনমারের মাতা কায়লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর কোন উমরা আদায়কালে মারওয়া পাহাড়ের পাদদেশে আমি তাহাঁর নিকট উপস্থিত হয়ে বলিলাম, ইয়া রসূলুল্লাহ! আমি একজন ব্যবসায়ী নারী।আমি কোন জিনিস কিনতে চাইলে আমার ইপ্সিত মূল্যের চেয়ে কম দাম বলি। এরপর দাম বাড়িয়ে বলিতে বলিতে আমার ইপ্সিত মূল্যে গিয়ে পৌঁছি। আবার আমি কোন জিনিস বিক্রয় করিতে চাইলে ইপ্সিত মূল্যের চাইতে বেশি মূল্য চাই। এরপর দাম কমাতে কমাতে অবশেষে আমার ইপ্সিত মূল্যে নেমে আসি। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেন, হে কাইলা! এরূপ করো না। তুমি কিছু কিনতে চাইলে তোমার ইপ্সিত মূল্যই বলো, হয় তোমাকে দেয়া হইবে নয় দেয়া হইবে না। তিনি আরো বলেনঃ তুমি কোন কিছু বিক্রয় করিতে চাইলে তোমার ইপ্সিত দামই চাও, হয় তুমি দিলে অথবা না দিলে। {২২০৪}
{২২০৪} হাদিসটি ঈমাম ইবনি মাজাহ এককভাবে বর্ণনা করেছেন। যইফাহ ২১৫৬, যইফ আল-জামি৬২৫০। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ যইফ। উক্ত হাদিসের রাবী ১. ইয়াকুব বিন হুমায়দ বিন কাসিব সম্পর্কে আবু জাফার আল-উকায়লী বলেন, তার হাদিসের অনুসরণ করা যাবে না। আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় দুর্বল। ইবনি হাজার আল-আসকালানী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে হাদিস বর্ণনায় ভুল করেন। [তাহযীবুল কামালঃ রাবী নং ৭০৮৬, ৩২/৩১৮ নং পৃষ্ঠা] ২. ইয়ালা বিন শাবীব সম্পর্কে ঈমাম যাহাবী বলেন, তিনি সিকাহ। ইবনি হাজার আল-আসকালানী বলেন, তিনি যাচাই-বাচাই ছাড়া হাদিস গ্রহন করেন ও তা বর্ণনা করেন। [তাহযীবুল কামালঃ রাবী নং ৭১১৩, ৩২/৩৮৫ নং পৃষ্ঠা]হাদিস এর তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
২২০৫. জাবির বিন আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি এক যুদ্ধে নাবী [সাঃআঃ] এর সাথে ছিলাম। তিনি আমাকে বলেনঃ তোমার এই উটটি কি এক দীনারে বিক্রয় করিবে? আল্লাহ তোমাকে ক্ষমা করুন। আমি বলিলাম, ইয়া রসূলুল্লাহ! আমি যখন মদীনায় পৌঁছাবো, তখন এটি আপনাদের উট হইবে। তিনি বলেনঃ তাহলে এটি কি দু দীনারে বিক্রয় করিবে? আল্লাহ তোমাকে ক্ষমা করুন। জাবির [রাদি.] বলেন, এভাবে তিনি প্রতিবার এক দীনার করে বাড়িয়ে বলিতে থাকেন এবং প্রতিবারই বলেনঃ আল্লাহ তোমাকে ক্ষমা করুন। অবশেষে তিনি বিশ দীনার পর্যন্ত পৌঁছলেন। এরপর আমি মদীনায় পৌঁছে উটটির মাথা ধরে এটিকে নিয়ে নাবী [সাঃআঃ] এর কাছে গিয়ে হাযীর হলাম। তিনি বলেনঃ হে বিলাল! গনীমাতের মাল থেকে একে বিশটি দীনার দাও। তিনি আমাকে বলেনঃ তুমি তোমার উট নিয়ে রওয়ানা হও এবং তা তোমার বাড়িতে নিয়ে যাও। {২২০৫}
{২২০৫} তিরমিজি ১২৫৩, তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহিহ।হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
২২০৬. আলী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] সূর্য উঠার আগে দরদাম করিতে এবং দুগ্ধবতী পশু যবহ করিতে নিষেধ করেছেন। {২২০৬}
{২২০৬} হাদিসটি ঈমাম ইবনি মাজাহ এককভাবে বর্ণনা করেছেন। যইফাহ ৪৭১৯। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ যইফ। উক্ত হাদিসের রাবী বিন হাবীব সম্পর্কে আবু আহমাদ আল-হাকিম বলেন, রাবী নাওফাল থেকে মুনকার সুত্রে হাদিস বর্ণনা করেছেন। আবু হাতিম আর-রাযীকে জিজ্ঞেস করা হল আপনি কি তার থেকে হাদিস গ্রহন করেছেন? তিনি উত্তরে বলিলেন, যার ইচ্ছা সে তার থেকে হাদিস গ্রহন করিতে পারে তবে তিনি দুর্বল। [তাহযীবুল কামালঃ রাবী নং ১৮৫৬, ৯/৬৭ নং পৃষ্ঠা] ২. নাওফাল বিন আবদুল মালিক সম্পর্কে আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, তিনি মাজহুল বা অপরিচিত। ইবনি হাজার আল-আসকালানী বলেন, তার কিছু বিষয় অজ্ঞাত। তাহরীরু তাকরীবুত তাহযীব এর লেখক বলেন, তিনি দুর্বল। [তাহযীবুল কামালঃ রাবী নং ৬৫০০, ৩০/৬৭ নং পৃষ্ঠা]হাদিস এর তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
১২/৩০. অধ্যায়ঃ ক্রয়-বিক্রয়কালে শপথ করা নিষেধ।
২২০৭. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ তিন শ্রেণীর লোকের সাথে কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ কথা বলবেন না, তাহাদের প্রতি দৃষ্টিপাত করবেন না, তাহাদেরকে পবিত্র করবেন না এবং তাহাদের জন্য রয়েছে মর্মন্তদ শাস্তি। [১] যার নিকট নির্জন প্রান্তরে অতিরিক্ত পানি আছে, সে তা পথিক মুসাফিরকে পান করিতে বাধা দেয়। [২] যে বিক্রেতা আসরের পর তার পণ্য ক্রেতার নিকট বিক্রয় করে আর আল্লাহর নামে শপথ করে বলে যে, সে এতো এতো মূল্যে তা ক্রয় করেছে এবং ক্রেতা তার কথা বিশ্বাস করেছে, অথচ আসল ব্যাপার তার বিপরীত।[৩] যে ব্যক্তি কেবল পার্থিব স্বার্থ লাভের অভিপ্রায়ে শাসকের আনুগত্য করার শপথ করে, শাসক তাহাকে কিছু দিলে শপথ পূর্ণ করে এবং না দিলে শপথ ভঙ্গ করে। {২২০৭}
{২২০৭} ইবনি মাজাহ ২৮৭০, সহীহুল বুখারী ২৩৫৮, ২৩৬৯, ২৬৭২, ৭২১২, ৭৪৪৬, মুসলিম ১০৮, তিরমিজি ১৫৯৫, নাসায়ী ৪৪৬২, আবু দাউদ ৩৪৭৪, আহমাদ ৭৩৯৩, ৯৮৬৬, বায়হাকী ফিস সুনান ১০/১৭৭, বায়হাকী ফিশ শুআব ৩৪৪৪, আল-হাকিম ফিল-মুসতাদরাক ২/৬, মুসান্নাফ আব্দুর রাযযাক ২০৯৯৯, সহিহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব ৯৫৫। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহিহ।. হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
২২০৮. আবু যার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] বলেন, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তিন শ্রেণীর লোকের সাথে কথা বলবেন না, তাহাদের প্রতি দৃষ্টি দিবেন না, তাহাদেরকে পবিত্রও করবেন না এবং তাহাদের জন্য রয়েছে কষ্টদায়ক শাস্তি। আমি বলিলাম, ইয়া রসূলুল্লাহ! তারা কারা? তারা তো বিফল হয়েছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি বলেন, [১] যে ব্যক্তি পায়ের গোছার নিচে পরিধেয় ঝুলিয়ে পরে, [২] যে ব্যক্তি দান করার পর খোঁটা দেয় এবং [৩] যে ব্যক্তি মিথ্যা শপথ করে নিজের মাল বিক্রয় করে। {২২০৮}
{২২০৮} মুসলিম ১০৬, তিরমিজি ১২১১, নাসায়ী ২৫৬৩, ২৫৬৪, ৪৪৫৮, ৪৪৫৯, ৫৩৩৩, আবু দাউদ ৪০৮৭, আহমাদ ২০৮১১, ২০৮৯৫, ২০৯২৫, ২০৯৭০, ২১০৩৪, দারেমী ২৬০৫, গায়াতুম নারাম ১৭০, ইরওয়া ৯০০। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহিহ। উক্ত হাদিসের রাবী [আব্দুর রহমান বিন আবদুল্লাহ বিন উতবাহ বিন আবদুল্লাহ বিন মাসউদ] আল-মাসউদী সম্পর্কে ইয়াহইয়া বিন মাঈন বলেন, তিনি সিকাহ। ইবনি নুমায়র বলেন, তিনি সিকাহ তবে শেষ বয়সে হাদিস সংমিশ্রণ করেছেন। আহমাদ বিন হাম্বল বলেন, তিনি সিকাহ তবে বাগদাদে হাদিস বর্ণনায় সংমিশ্রণ করেছেন। মুহাম্মদ বিন সাদ বলেন, তিনি সিকাহ তবে মৃত্যুর পূর্বে হাদিস বর্ণনায় সংমিশ্রণ করেছেন। আলী ইবনিল মাদীনী তাহাকে সিকাহ বলিয়াছেন। [তাহযীবুল কামালঃ রাবী নং ৩৮৭২, ১৭/২১৯ নং পৃষ্ঠা]হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
২২০৯. আবু কাতাদাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুলাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেন, তোমরা ক্রয়-বিক্রয় করাকালে শপথ করা থেকে বিরত থাকো। কেননা মিথ্যা শপথের ফলে পণ্য বিক্রয় হলেও তার বরকত নষ্ট হয়ে যায়। {২২০৯}
{২২০৯} মুসলিম ১৬০৭, নাসায়ী ৪৪৬০, আহমাদ ২২০৩৮, ২২০৬৫, আত-তালীকুর রাগীব ৩/৩১ তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহিহ। উক্ত হাদিসের রাবী ১. ইসমাঈল বিন আয়্যাশ সম্পর্কে ইয়াহইয়া বিন মাঈন বলেন, আহলে শাম থেকে হাদিস বর্ণনায় কোন সমস্যা নেই। আলী ইবনিল মাদীনী, ইবনি আবু শায়বাহ, আমর ইবনিল ফাল্লাস ও দুহায়ম বলেন, শাম শহর থেকে হাদিস বর্ণনায় তিনি সিকাহ কিন্তু অন্য শহর থেকে হাদিস বর্ণনায় দুর্বল। [তাহযীবুল কামালঃ রাবী নং ৪৭২, ৩/১৬৩ নং পৃষ্ঠা] ২. মুহাম্মাদ বিন ইসহাক সম্পর্কে ইয়াহইয়া বিন মাঈন ও আজালী বলেন, তিনি সিকাহ। আহমাদ বিন হাম্বল বলেন, তিনি হাসানুল হাদিস। আলী ইবনিল মাদীনী বলেন, তিনি সালিহ। সুলায়মান বিন তারখান ও সুলায়মান বিন মিহরান বলেন, তিনি মিথ্যুক। আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, তিনি আমার নিকট হাদিস বর্ণনায় নির্ভরযোগ্য নয়, তিনি হাদিস বর্ণনায় দুর্বল। [তাহযীবুল কামালঃ রাবী নং ৫০৫৭, ২৪/৪০৫ নং পৃষ্ঠা]হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১২/৩১ .অধ্যায়ঃ তাবীরকৃত খেজুর বাগান ও মালদার গোলাম বিক্রয় করা।
২২১০. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] বলেন, কোন ব্যক্তি তাবীরকৃত খেজুর বাগান ক্রয় করলে তার ফল বিক্রেতার, তবে ক্রেতা শর্ত করে নিলে তা তার।
{উপরোক্ত হাদিসে মোট ২টি সনদের ১টি বর্ণিত হয়েছে, অপর সনদটি হলোঃ}
২/২২১০[১] মুহাম্মাদ বিন রুমহ, লায়স বিন সাদ, নাফি, ইবনি উমার [রাদি.], নাবী [সাঃআঃ] সূত্রে অনুরূপ বর্ণিত আছে। {২২১০}
তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহিহ।{২২১০} ইবনি মাজাহ ২২১১, সহীহুল বুখারী ২২০৩, ২২০৪, ২২০৬, ২৩৭৯, ২৭১৬, মুসলিম ১৫৪৩, তিরমিজি ১২৪৪, নাসায়ী ৪৬৩৫, ৪৬৩৬, আবু দাউদ ৩৪৩৩, আহমাদ ৪৪৮৮, ৪৫৩৮, ৫১৪০, ৫২৮৪, ৫৪৬৩, ৫৫১৫, ৫৭৫৪, মুয়াত্তা মালেক ১৩০২, দারেমী ২৫৬১, ইবনি হিব্বান ৪৯২২, ৪৯২৪, বায়হাকী ফিস সুনান ৪/১০৮, ৪/৩২৪। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহিহ।হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
২২১১. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেন, কোন ব্যক্তি তাবীরকৃত খেজুর বাগান বিক্রয় করলে তার ফল বিক্রেতাই পাবে, তবে ক্রেতা পূর্বেই শর্ত আরোপ করে থাকলে সে পাবে। কোন ব্যক্তি মালদার গোলাম খরিদ করলে তার মাল বিক্রেতা পাবে। তবে ক্রেতা পূর্বেই শর্ত আরোপ করে থাকলে তা সে পাবে। {২২১১}
{২২১১} ইবনি মাজাহ ২২১০, সহীহুল বুখারী ২২০৩, ২২০৪, ২২০৬, ২৩৭৯, ২৭১৬, মুসলিম ১৫৪৩, তিরমিজি ১২৪৪, নাসায়ী ৪৬৩৫, ৪৬৩৬, আবু দাউদ ৩৪৩৩, আহমাদ ৪৪৮৮, ৪৫৩৮, ৫১৪০, ৫২৮৪, ৫৪৬৩, ৫৫১৫, ৫৭৫৪, মুয়াত্তা মালেক ১৩০২, দারেমী ২৫৬১, ইরওয়া ১৩১৪। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহিহ।হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
২২১২. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ কোন ব্যক্তি খেজুর বাগান ও গোলাম বিক্রয় করলে তা অবশ্য একত্রেও বিক্রয় করিতে পারে। {২২১২}
{২২১২} হাদিসটি ঈমাম ইবনি মাজাহ এককভাবে বর্ণনা করেছেন। বায়হাকী ফিস সুনান ৬/৩৩, তাখরীজুল মুখতার ২১০। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহিহ।হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
২২১৩. উবাদা ইবনিস সামিত [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ফয়সালা করেছেন যে, খেজুর গাছের ফল তাবীরকারী পাবে, তবে ক্রেতা পূর্বেই শর্ত আরোপ করে থাকলে সে পাবে। আর ক্রীতদাসের মালও বিক্রেতার থাকিবে। তবে ক্রেতা পূর্বেই শর্ত আরোপ করে থাকলে সে পাবে। {২২১৩}
{২২১৩} হাদিসটি ঈমাম ইবনি মাজাহ এককভাবে বর্ণনা করেছেন। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহিহ। উক্ত হাদিসের রাবী ফুদায়ল বিন সুলায়মান সম্পর্কে আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, তার থেকে হাদিস গ্রহন করা যায় তবে তিনি নির্ভরযোগ্য নয়। আবু হাতিম বিন হিব্বান তার সিকাহ গ্রন্থে তার নাম উল্লেখ করেছেন। আবু যুরআহ আর-রাযী বলেন, তিনি যাচাই-বাচাই ছাড়া হাদিস গ্রহন করেন ও তা বর্ণনা করেন। আহমাদ বিন শুআয়ব আন-নাসায়ী বলেন, তিনি নির্ভরযোগ্য নয়। ইবনি হাজার আল-আসকালানী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে হাদিস বর্ণনায় অধিক ভুল করেন। [তাহযীবুল কামালঃ রাবী নং ৪৭৫৯, ২৩/২৭১ নং পৃষ্ঠা] ২. ইসহাক বিন ইয়াহইয়া ইবনিল ওয়ালীদ সম্পর্কে ইবনি হাজার আল-আসকালানী বলেন, তার অবস্থা সম্পর্কে অজ্ঞাত। ঈমাম দারাকুতনী বলেন, তিনি তার পিতা থেকে হাদিস শ্রবন করেননি। আবু আহমাদ বিন আদী আল-জুরজানী বলেন, তার একাধিক হাদিস অরক্ষিত। [তাহযীবুল কামালঃ রাবী নং ৩৯১, ২/৪৯৩ নং পৃষ্ঠা] উক্ত হাদিসটি সহিহ কিন্তু ফুদায়ল বিন সুলায়মান এর দুর্বলতা এবং ইসহাক বিন ইয়াহইয়া ইবনিল ওয়ালীদ এর জাহালাতের কারণে সনদটি দুর্বল। হাদিসটির শতাধিক শাহিদ হাদিস রয়েছে। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলঃ বুখারী ২২০৩, ২২০৪, ২২০৬, ২৩৭৯, ২৭১৬ মুসলিম ১৫৩৬, ১৫৪৩, তিরমিযি ১২৪৪, আবু দাউদ ৩৪৩৩, ৩৪৩৫, দারিমী ২৫৬১, আহমাদ ৪৮৩৭, ৫১৪০, ৫২৮৪, ৫৪৬৩, ৫৪৬৭, ৫৫১৫, ৫৭৫৭, ৬৩৪৪।হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১২/৩২. অধ্যায়ঃ পুষ্ট হওয়ার আগে ফল বিক্রয় করা নিষিদ্ধ।
২২১৪. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ পুষ্ট হওয়ার আগে তোমরা ফল বিক্রয় করো না। তিনি ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়কেই নিষেধ করেছেন। {২২১৪}
{২২১৪} সহীহুল বুখারী ১৪৮৬, ২১৮৪, ২১৯৪, মুসলিম ১৫৩৪, ১৫৩৫, তিরমিজি ১২২৬, ১২২৭, নাসায়ী ৩৯২১, ৪৫১৯, ৪৫২০, ৪৫২১, ৪৫২২, ৪৫৫১, আবু দাউদ ৩৩৬৭, ৩৩৬৮, আহমাদ ৪৪৭৯, ৪৫১১, ৪৮৫৪, ৪৯২৪, ৪৯৭৮, ৫০৪০, ৫০৮৬, ৫১১৩, ৫১৬২, ৫২১৪, ৫২৫১, ৫২৭০, ৫৪২২, ৫৪৫০, ৫৪৭৫, ৫৪৯৬, ৬০২২, ৬৩৪০, মুয়াত্তা মালেক ১৩০৩, দারেমী ২৫৫৫, বায়হাকী ফিস সুনান ৫/৩৪৬, দারাকুতনী ফিস সুনান ৩/৭৫, ইরওয়া ১৩৫৫। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহিহ।হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
২২১৫. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ তোমরা ফল পুষ্ট হওয়ার আগে বিক্রয় করো না। {২২১৫}
{২২১৫} মুসলিম ১৫৩৮, তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহিহ।হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
২২১৬. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] ফল পুষ্ট হওয়ার আগে বিক্রয় করিতে নিষেধ করেছেন। {২২১৬}
{২২১৬} সহীহুল বুখারী ১৪৮৭, ২১৮৯, মুসলিম ১৫৩৬, নাসায়ী ৪৫২৩, ৪৫২৪, ৪৫২৫, ৪৫৫০, আবু দাউদ ৩৩৭০, ৩৩৭৩, আহমাদ ১৩৯৪০, ১৪৪৫৪, ১৪৫৭৬, ১৪৭৯৩, ইরওয়া ৫/২১১। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহিহ।হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
২২১৭. আনাস বিন মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] পুষ্ট হওয়ার আগে ফল বিক্রয় করিতে, কালো হওয়ার পূর্বে আঙ্গুর বিক্রয় করিতে এবং শক্ত না হওয়া পর্যন্ত শস্য ইত্যাদি বিক্রয় করিতে নিষেধ করেছেন। {২২১৭}
{২২১৭} সহীহুল বুখারী ১৪৮৮, ২১৯৫, ২১৯৭, ২১৯৯, ২২০৮, মুসলিম ১৫৫৫, তিরমিজি ১২২৮, নাসায়ী ৪৫২৬, আবু দাউদ ৩৩৭১, আহমাদ ১১৭২৮, ১২২২৭, ১২৯০১, ১৩২০১, মুয়াত্তা মালেক ১৩০৪, ইবনি হিব্বান ৪৯৯০, ইরওয়া ৫/২০৯, ১৩৬৬, মিশকাত ২৮৬২। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহিহ।হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১২/৩৩. অধ্যায়ঃ কয়েক বছরের মেয়াদে ফল বিক্রয় করা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ সম্পর্কে।
২২১৮. জাবির বিন আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কয়েক বছরের মেয়াদে [ফলের বাগান] বিক্রয় করিতে নিষেধ করেছেন। {২২১৮}
{২২১৮} মুসলিম ১৫৩৬, নাসায়ী ৪৫৩১, ৪৬২৬, ৪৬২৭,আবু দাউদ ৩৩৭৪, আহমাদ ১৩৯০৮, ইরওয়া ৫/২১২। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহিহ।হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
২২১৯. জাবির বিন আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ কোন ব্যক্তি ফলের বাগান বিক্রয় করার পর প্রাকৃতিক দুর্যোগে তা বিনষ্ট হলে, সে যেন তার ভাই [ক্রেতা] থেকে কিছু গ্রহণ না করে। তোমাদের কেউ কিসের বিনিময়ে তার মুসলিম ভাইয়ের মাল গ্রহণ করিবে? {২২১৯}
{২২১৯} মুসলিম ১৫৫৪, নাসায়ী ৪৫২৭, ৪৫২৮, ৪৫২৯, আবু দাউদ ৩৪৭০, আহমাদ ১৩৯০৮, দারেমী ২৫৫৬, ইরওয়া ৫/১১৩। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহিহ।হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১২/৩৪. অধ্যায়ঃ ওজনে একটু বেশি দেয়া।
২২২০. সুওয়ায়দ বিন কায়স [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি ও মাখরাফা আল-আবদী হাজার এলাকা থেকে কাপড় নিয়ে এলাম। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাদের কাছে আসেন এবং একটি পাজামার দর করেন। আমাদের নিকটেই ছিল একজন কয়েল, যে পারিশ্রমিকের বিনিময়ে ওজন করে দিতো। নাবী [সাঃআঃ] তাহাকে বলেনঃ কয়েল! ওজন করো এবং কিছু বেশী দাও। {২২২০}
{২২২০} তিরমিজি ১৩০৫, নাসায়ী ৪৫৯২, আবু দাউদ ৪৫৯২, আবু দাউদ ৩৩৩৬, আহমাদ ১৮৬১৯, দারেমী ২৫৮৫, ইবনি হিব্বান ৫১৪৭, বায়হাকী ফিস সুনান ৬/৩২,৩৩। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহিহ।হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
২২২১. মালিক আবু সফওয়ান বিন উমায়রাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর হিজরতের পূর্বে আমি তাহাঁর নিকট একটি পাজামা বিক্রয় করেছিলাম। তিনি ওজন করে দিলেন এবং আমাকে কিছু বেশীই দিলেন। {২২২১}
{২২২১} নাসায়ী ৪৫৯৩। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহিহ। উক্ত হাদিসের রাবী সিমাক বিন হারব সম্পর্কে ইয়াহইয়া বিন মাঈন বলেন, তিনি সিকাহ। ইয়াকুব বিন শায়বাহ বলেন, তার পূর্বে বর্ণিত হাদিস যারা শ্রবন করেছেন তা সহিহ। ইবনি হিব্বান বলেন, তিনি সিকাহ তবে হাদিস বর্ণনায় অধিক ভুল করেন। আবদুল্লাহ ইবনিল মুবারাক বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় দুর্বল। [তাহযীবুল কামালঃ রাবী নং ২৫৭৯, ১২/১১৫ নং পৃষ্ঠা]হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
২২২২. জাবির বিন আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ তোমরা যখন ওজন করে দিবে, তখন একটু বেশীই দিবে। {২২২২}
{২২২২} মুসলিম ৭১৫। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহিহ।হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১২/৩৫. অধ্যায়ঃ পুরাপুরি ওজন ও পরিমাপ করা।
২২২৩. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] যখন মদীনায় আসেন তখন লোকেরা মাপে কারচুপি করতো। অতএব মহান আল্লাহ এ আয়াত নাযিল করেন
وَيْلٌ لِلْمُطَفِّفِينَ
“মন্দ পরিণাম তাহাদের জন্য যারা মাপে কম দেয়” [৮৩ঃ১]। এরপর থেকে তারা ঠিকভাবে ওজন করে। {২২২৩}
{২২২৩} হাদিসটি ঈমাম ইবনি মাজাহ এককভাবে বর্ণনা করেছেন। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহিহ। উক্ত হাদিসের রাবী ১. আব্দুর রহমান বিন বিশর ইবনিল হাকাম সম্পর্কে আবু জাফার আত তাহাবী বলেন, তিনি নায়সাবুর এর উলামাদের মাঝে একজন, তারা তাহাকে সিকাহ বলিয়াছেন। ইবনি আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, তিনি সত্যবাদী ও সিকাহ। মুহাম্মাদ বিন সালিহ বলেন, তিনি সত্যবাদী। [তাহযীবুল কামালঃ রাবী নং ৩৭৬৫, ১৬/৫৪৫ নং পৃষ্ঠা] ২. আলী ইবনিল হুসায়ন বিন ওয়াকিদ সম্পর্কে আবু জাফার আল-উকায়লী বলেন, তার হাদিসের অনুসরণ করা যাবে না। আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় দুর্বল। ইবনি হাজার আল-আসকালানী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে হাদিস বর্ণনায় সন্দেহ করেন। [তাহযীবুল কামালঃ রাবী নং ৪০৫২, ২০/৪০৬ নং পৃষ্ঠা]হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১২/৩৬. অধ্যায়ঃ ধোঁকা দেয়া নিষিদ্ধ।
২২২৪. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এক ব্যক্তির পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন, তখন সে খাদ্যশস্য বিক্রয় করছিল। তিনি খাদ্যশস্যের স্তুপের মধ্যে তার হাত ঢুকালেন এবং আদ্রতা অনুভব করিলেন। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেন, যে ব্যক্তি ধোঁকা দেয় সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়। {২২২৪}
{২২২৪} মুসলিম ১০২, তিরমিজি ১৩১৫, আবু দাউদ ৩৪৫২, আহমাদ ৭২৫০, ২৭৫০০, ইবনি হিব্বান ৪৯০৫, ৫৫৫৫৯, বায়হাকী ফিস সুনান ৫/৩২০, ইরওয়া ১৩১৯, ইবনিস সালাম এর তাখরীজুল ঈমান ৭১। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহিহ। উক্ত হাদিসের রাবী আলা বিন আব্দুর রহমান সম্পর্কে আহমাদ বিন হাম্বল বলেন, তিনি সিকাহ তার খারাফি সম্পর্কে কারো থেকে কিছু শুনিনি। ঈমাম তিরমিযি বলেন, হাদিস বিশারদদের নিকট তিনি সিকাহ। ঈমাম নাসাঈ বলেন, কোন সমস্যা নেই। ইবনি আদী বলেন, আমি কোন সমস্যা দেখি না। ইবনি হিব্বান তাহাকে সিকাহ বলিয়াছেন। [তাহযীবুল কামালঃ রাবী নং ৪৫৭৭, ২২/৫২০ নং পৃষ্ঠা]হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
২২২৫. আবুল হামরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে এক ব্যক্তির পাশ দিয়ে যেতে দেখলাম, যার কাছে একটি পাত্রে খাদ্যশস্য ছিল। তিনি এর মধ্যে তাহাঁর হাত ঢুকালেন এবং বলিলেনঃ সম্ভবত তুমি ধোঁকা দিচ্ছো। যে আমাদের সাথে ধোঁকাবাজি করে, সে আমাদের নয়। {২২২৫}
{২২২৫} হাদিসটি ঈমাম ইবনি মাজাহ এককভাবে বর্ণনা করেছেন। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ খুবই দুর্বল। উক্ত হাদিসের রাবী ইউনুস বিন আবু ইসহাক সম্পর্কে আবু আহমাদ আল-হাকিম বলেন, তিনি তার রিয়ায়াতে হাদিস বর্ণনায় সন্দেহ করেন। আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে তার হাদিস দ্বারা দলীল গ্রহণযোগ্য নয়। আবু হাতিম বিন হিব্বান তার সিকাহ গ্রন্থে তার নাম উল্লেখ করেছেন। ইবনি হাজার আল-আসকালানী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে হাদিস বর্ণনায় কিছু সন্দেহ করেন। যাকারিয়্যা বিন ইয়াহইয়া আস-সাজী বলেন, তিনি সত্যবাদী। [তাহযীবুল কামালঃ রাবী নং ৭১৭০, ৩২/৪৮৮ নং পৃষ্ঠা] ২. আবু দাউদ ইবনিল হারিস সম্পর্কে আবু বিশর আদ-দাওলাবী বলেন, তিনি প্রত্যাখ্যানযোগ্য। ঈমাম তিরমিযি বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় দুর্বল ছিলেন। আহমাদ বিন শুআয়ব আন-নাসায়ী বলেন, তিনি মিথ্যার সাথে অভিযুক্ত, তার থেকে কোন হাদিস গ্রহন করা যাবে না। ঈমাম দারাকুতনী বলেন, তিনি প্রত্যাখ্যানযোগ্য। ঈমাম বুখারী বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় দুর্বল, তার ব্যাপারে সমালোচনা রয়েছে। [তাহযীবুল কামালঃ রাবী নং ৬৪৬৬, ৩০/১০ নং পৃষ্ঠা]হাদিস এর তাহকিকঃ খুবই দুর্বল
১২/৩৭. অধ্যায়ঃ হস্তগত করার পূর্বে খাদ্যশস্য বিক্রয় করা নিষিদ্ধ।
২২২৬. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] বলেন, কোন ব্যক্তি খাদ্যশস্য ক্রয় করলে, সে যেন তা হস্তগত করার পূর্বে বিক্রয় না করে। {২২২৬}
{২২২৬} ইবনি মাজাহ ২২২৯,সহীহুল বুখারী ২১২৪, ২১২৬, ২১৩৩, ২১৩৬, ২১৩৭,২১৬৬, ২১৬৭, ৬৮৫২, মুসলিম ১৫২৭, ১৫২৬, ১৫২৭, নাসায়ী ৪৫৯৫, ৪৫৯৬, ৪৬০৪, ৪৬০৪, ৪৬০৫, ৪৬০৬, ৪৬০৭, ৪৬০৮, আবু দাউদ ৩৪৯২, ৩৪৯৩, ৩৪৯৪, ৩৪৯৫, ৩৪৯৮, ৩৪৯৯, আহমাদ ৩৯৭, ৪৬২৫, ৪৭০২, ৫২১৩, ৫২৮২, ৩৪০৩, ৫৪৭৬, ৫৮২৭, ৫৮৮৮, ৬২৩৯, ৬৪৩৬, মুয়াত্তা মালেক ১৩৩৫, ১৩৩৬, ১৩৩৭, দারেমী ২৫৫৯, ইরওয়া ১৩২৮। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহিহ।হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
২২২৭. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলছেন, যে ব্যক্তি খাদ্যশস্য ক্রয় করে সে যেন তা হস্তগত করার পূর্বে বিক্রয় না করে। আবু আওয়ানা [রাদি.] তার হাদিসে বলেন, ইবনি আব্বাস [রাদি.] বলিয়াছেন, আমি অন্যান্য সকল বস্তুকে খাদ্যশস্যের বিধানের অন্তর্ভুক্ত মনে করি। {২২২৭}
{২২২৭} সহীহুল বুখারী ৩১৩২, ২১৩৫, মুসলিম ১৫২৫, তিরমিজি ১২৯১, নাসায়ী ৪৫৯৭, ৪৫৯৯, ৪৬০০, আবু দাউদ ৩৪৯৬, ৩৪৯৭, ২৫৮০, ইরওয়া ৫/১৭৬। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহিহ।হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
২২২৮. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] খাদ্যশস্য দুবার ওজন না দেয়া পর্যন্ত তা বিক্রয় করিতে নিষেধ করেছেন। একটি হলো বিক্রেতার ওজন, অপরটি হলো ক্রেতার ওজন। {২২২৮}
{২২২৮} হাদিসটি ঈমাম ইবনি মাজাহ এককভাবে বর্ণনা করেছেন। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ হাসান। উক্ত হাদিসের রাবী আবু লায়লা সম্পর্কে ইয়াকুব বিন সুফইয়ান বলেন, তিনি সিকাহ। শুবাহ ইবনিল হাজ্জাজ বলেন, আমি তার চেয়ে দুর্বল স্মৃতিশক্তি সম্পন্ন ব্যাক্তি আর কাউকে দেখিনি। ইয়াহইয়া বিন সাঈদ আল-কাত্তান বলেন, তিনি যইফ বা দুর্বল। আহমাদ বিন হাম্বল বলেন, তার স্মৃতিশক্তি খুবই দুর্বল। ইবনি মাঈন বলেন, সমস্যা নেই। [তাহযীবুল কামালঃ রাবী নং ৫৪০৬, ২৫/৬২২ নং পৃষ্ঠা]হাদিস এর তাহকিকঃ হাসান হাদিস
১২/৩৮. অধ্যায়ঃ খাদ্যশস্যের স্তুপ বিক্রয় করা।
২২২৯. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমরা বিভিন্ন কাফেলা থেকে অনুমানের ভিত্তিতে খাদ্যশস্য ক্রয় করতাম। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এই খাদ্যশস্য স্থানান্তর করার পূর্বে পুনরায় বিক্রয় করিতে আমাদের নিষেধ করেছেন। {২২২৯}
{২২২৯} ইবনি মাজাহ ২২২৯, সহীহুল বুখারী ২১২৪, ২১২৬, ২১৩৩, ২১৩৬, ২১৩৭,২১৬৬, ২১৬৭, ৬৮৫২, মুসলিম ১৫২৭, ১৫২৬, ১৫২৭, নাসায়ী ৪৫৯৫, ৪৫৯৬, ৪৬০৪, ৪৬০৪, ৪৬০৫, ৪৬০৬, ৪৬০৭, ৪৬০৮, আবু দাউদ ৩৪৯২, ৩৪৯৩, ৩৪৯৪, ৩৪৯৫, ৩৪৯৮, ৩৪৯৯, আহমাদ ৩৯৭, ৪৬২৫, ৪৭০২, ৫২১৩, ৫২৮২, ৩৪০৩, ৫৪৭৬, ৫৮২৭, ৫৮৮৮, ৬২৩৯, ৬৪৩৬, মুয়াত্তা মালেক ১৩৩৫, ১৩৩৬, ১৩৩৭, দারেমী ২৫৫৯, বায়হাকী ফিস সুনান ৯/১৫১। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহিহ।হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
২২৩০. উসমান বিন আফ্ফান [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি বাজারে খেজুরের স্তুপ বিক্রয় করতাম। আমি বলতাম, আমার এই স্তুপ থেকে এই পরিমাণ খেজুর মেপে নাও। সে [ক্রেতা] নির্দিষ্ট পরিমাণ খেজুর ওজন করে নেয়ার পর আমি অবশিষ্ট অংশ রেখে দিতাম। এতে আমার মনে খটকার সৃষ্টি হলে আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বলেন, যেহেতু তুমি একটি নির্দিষ্ট পরিমাণের উল্লেখ করেছো, তাই তাহাকে মেপে দাও। {২২৩০}
{২২৩০} আহমাদ ৪৪৬, ৫৬১, ইরওয়া ১৩৩১। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহিহ। উক্ত হাদিসের রাবী ইবনি লাহীআহ সম্পর্কে ইয়াহইয়া বিন মাঈন বলেন, তার হাদিসের ব্যাপারে কোন সমস্যা নেই। আমর বিন ফাল্লাস বলেন, তার কিতাব সমূহ পুড়ে যাওয়ায় হাদিস বর্ণনায় সংমিশ্রণ করেন। কিতাব সমূহ পুড়ে যাওয়ায় যে হাদিস বর্ণনা করেছেন তা দুর্বল। আবু কাসিম বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় সংমিশ্রণ করেন। আবু বকর আল-বায়হাকী বলেন, তার হাদিস দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়। আবু হাতিম আর-রাযী তাহাকে দুর্বল বলিয়াছেন। ইবনি হাজার আল-আসকালানী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে তার কিতাব সমূহ পুড়ে যাওয়ার পর হাদিস বর্ণনায় সংমিশ্রণ করেন। বিশর ইবনিস সারী বলেন, যদি তার সাথে আমার সাক্ষাৎ হত তবে আমি তার থেকে কোন হাদিস গ্রহন করতাম না। [তাহযীবুল কামালঃ রাবী নং ৩৫১৩, ১৫/৪৮৭ নং পৃষ্ঠা] ২. মুসা বিন ওয়ারদান সম্পর্কে আবু বাকর আল-বাযযার বলেন, তিনি সালিহ। আবু দাউদ আস-সাজিসতানী বলেন, তিনি সিকাহ। আহমাদ বিন হাম্বল বলেন, তার সম্পর্কে ভালো ছাড়া অন্যকিছু আমার জানা নেই। ইবনি হাজার আল-আসকালানী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে হাদিস বর্ণনায় ভুল করেন। ঈমাম যাহাবী বলেন, তিনি সত্যবাদী। [তাহযীবুল কামালঃ রাবী নং ৬৩১২, ২৯/১৬৩ নং পৃষ্ঠা]হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১২/৩৯. অধ্যায়ঃ খাদ্যশস্য ওজন করলে তাতে বরকত হওয়ার আশা করা যায়।
২২৩১. আবদুল্লাহ বিন বুসর আল-মাযিনী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে বলিতে শুনেছিঃ তোমরা তোমাদের খাদ্যশস্য ওজন করো, তার মধ্যে তোমাদেরকে বরকত দেয়া হইবে। {২২৩১}
{২২৩১} হাদিসটি ঈমাম ইবনি মাজাহ এককভাবে বর্ণনা করেছেন। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহিহ। উক্ত হাদিসের রাবী ইসমাঈল বিন আয়্যাশ সম্পর্কে ইয়াহইয়া বিন মাঈন বলেন, আহলে শাম থেকে হাদিস বর্ণনায় কোন সমস্যা নেই। আলী ইবনিল মাদীনী, ইবনি আবু শায়বাহ, আমর ইবনিল ফাল্লাস ও দুহায়ম বলেন, শাম শহর থেকে হাদিস বর্ণনায় তিনি সিকাহ কিন্তু অন্য শহর থেকে হাদিস বর্ণনায় দুর্বল। [তাহযীবুল কামালঃ রাবী নং ৪৭২, ৩/১৬৩ নং পৃষ্ঠা]হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
২২৩২আবু আয়্যূব [খালিদ বিন যায়দ বিন কুলায়ব][রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] বলেন, তোমরা তোমাদের খাদ্যশস্য ওজন করো, তার মধ্যে তোমাদেরকে বরকত দেয়া হইবে। {২২৩২}
{২২৩২} আহমাদ ২২৯৯৭, বায়হাকী ফিস সুনান ৩/৩৩৬। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহিহ।হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
Leave a Reply