মিসওয়াক করার হাদিস – রাত্রি জাগরণকারীর মিসওয়াক করা
মিসওয়াক করার হাদিস – রাত্রি জাগরণকারীর মিসওয়াক করা >>আবুদ দাউদ শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন
অধ্যায়ঃ ১, অনুচ্ছেদঃ ২৫-৩০ =৬টি
অনুচ্ছেদ-২৫ঃ মিসওয়াক করা
অনুচ্ছেদ-২৬ঃ মিসওয়াক করার নিয়ম
অনুচ্ছেদ-২৭ঃ একজনের মিসওয়াক অন্যজনে ব্যবহার করা
অনুচ্ছেদ- ২৮ঃ মিসওয়াক ধৌত করা
অনুচ্ছেদ-২৯ঃ মিসওয়াক করা স্বভাবসুলভ কাজ [ফিত্বরাত]
অনুচ্ছেদ- ৩০ঃ রাত্রি জাগরণকারীর মিসওয়াক করা
অনুচ্ছেদ-২৫ঃ মিসওয়াক করা
৪৬. আবু হুরাইরাহ্ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেনঃ যদি না আমি মুমিনদের জন্য কষ্টকর মনে করতাম, তবে তাহাদের অবশ্যই ইশার সলাত বিলম্বে আদায় করার এবং প্রত্যেক সলাতের সময় মিসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম।
সহীহঃ ইশার বাক্যটি বাদে বোখারী ও মুসলিম। মিসওয়াক করার হাদিস -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৭. যায়িদ ইবনি খালিদ আল-জুহানী [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] কে বলিতে শুনেছিঃ আমার উম্মাতের উপর কষ্টকর না হলে অবশ্যই আমি তাহাদেরকে প্রত্যেক সলাতের প্রাক্কালে মিসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম। আবু সালামাহ [রাঃআ:] বলেন, আমি যায়িদ [রাঃআ:]- কে দেখেছি, তিনি মাসজিদে বসে থাকতেন, আর মিসওয়াক তার কানের ঐ স্থানে লেগে থাকত, যেখানে লিখকের কলম থাকে। অতঃপর যখনই তিনি সলাতের জন্য যেতেন, মিসওয়াক করে নিতেন।
মিসওয়াক করার হাদিস -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৮. আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, মুহাম্মাদ ইবনি ইয়াহইয়া ইবনি হাব্বান তার নিকট জিজ্ঞেস করেছিলেন, উযু থাকুক বা না থাকুক প্রত্যেক সলাতের পূর্বেই যে আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাঃআ:] উযু করে থাকেন তার কারণ কী? জবাবে আবদুল্লাহ [রাঃআ:] বলিলেন, যায়িদ ইবনিল খাত্তাবের কন্যা আসমা এ মর্মে হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন যে, আবদুল্লাহ ইবনি হানযালাহ তাঁকে বলেছেনঃ রসুলুল্লাহ [সাঃআ:]- কে প্রত্যেক সলাতের পূর্বে উযু করার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল– তাহাঁর উযু থাকুক বা না থাকুক। তাহাঁর জন্য যখন এটা কষ্টকর হয়ে পড়ল, তখন তাঁকে সলাতের পূর্বে কেবল মিসওয়াক করিতে নির্দেশ দেয়া হয়। আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাঃআ:] নিজের সক্ষমতা অনুভব করে কোন সলাতের জন্যই উযু ত্যাগ করিতেন না।
এ অনুচ্ছেদের হাদীস থেকে শিক্ষাঃ ১। প্রত্যেক সলাতের জন্য নতুনভাবে উযু করা মুস্তাহাব। ২। মিসওয়াক করার প্রতি গুরুত্বদান।বিশেষ করে সলাতের প্রাক্কালে। ৩। আল্লাহ স্বীয় ইচ্ছা মোতাবেক যেকোন হুকুম রহিত করেন এবং যেকোন হুকুম প্রতিষ্ঠা করেন ৪। নবি [সাঃআ:] স্বীয় উম্মাতের প্রতি দয়াশীল। ৫। ইশার সলাত বিলম্বে আদায় করা মুস্তাহাব। ৬। কলমের ন্যায় কানের নীচে মিসওয়াক রাখা যাবে। হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
অনুচ্ছেদ-২৬ঃ মিসওয়াক করার নিয়ম
৪৯. আবু বুরদাহ হতে তাহাঁর পিতার সূত্রে হইতে বর্ণিতঃ
মুসাদ্দাদ বলেন, আমরা রসুলুল্লাহ [সাঃআ:]- এর নিকট [যুদ্ধের] বাহন চাইতে গেলাম। তখন তাঁকে দেখলাম, তিনি জিহ্বার উপর মিসওয়াক করছেন। আর সুলাইমান বর্ণনা করেন, আমি নবি [সাঃআ:]- এর নিকট গেলাম। তিনি তখন মিসওয়াক করছিলেন। তিনি তাহাঁর জিহ্বার এক পাশে মিসওয়াক রেখে উহ! উহ! বলেছিলেন, অর্থাৎ বমির ভাব করেছিলেন।
ইমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, মুসাদ্দাদ বলেন, হাদীসটি দীর্ঘ, আমি তা সংক্ষেপে বর্ণনা করেছি। সহীহঃ বোখারী ও মুসলিম। মিসওয়াক করার হাদিস -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-২৭ঃ একজনের মিসওয়াক অন্যজনে ব্যবহার করা
৫০. আয়িশাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] মিসওয়াক করছিলেন। তখন তাহাঁর নিকট এমন দু ব্যাক্তি ছিল যাদের একজন অপরজনের অপেক্ষা বয়োজ্যেষ্ঠ। এমন সময় তাহাঁর নিকট মিসওয়াক করার ফাযীলাত সম্পর্কে ওয়াহী নাযিল হলোঃ দুজনের মধ্যে যে বড় তাকে মিসওয়াক দিন।
হাদীস থেকে শিক্ষাঃ অন্যের মিসওয়াক ব্যবহার করা জায়িয। তবে এক্ষেত্রে আদব হচ্ছে উপস্থিত লোকদের মধ্যকার যিনি বয়সে বেশি বড় তিনি সর্বপ্রথম তা ব্যবহারের হাক্বদার। তারপর পর্যায়ক্রমে তার চেয়ে বয়সে ছোট ব্যক্তির ব্যবহার করবেন। সালাম, পবিত্রতা অর্জন, সুগন্ধি ব্যবহার এবং অনুরূপ অন্যান্য কাজের এটাই সুন্নাতী পদ্ধতি। মিসওয়াক করার হাদিস -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৫১. মিক্বদাম ইবনি শুরাইহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] থেকে তাহাঁর পিতার সূত্রে হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি আয়িশাহ [রাঃআ:] কে জিজ্ঞেস করলাম, রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] ঘরে এসে সর্বপ্রথম কোন কাজ করিতেন? তিনি বললেনঃ তিনি সর্বপ্রথম মিসওয়াক করিতেন।
সহীহঃ মুসলিম। মিসওয়াক করার হাদিস -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ- ২৮ঃ মিসওয়াক ধৌত করা
৫২. আয়িশাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] মিসওয়াক করে তা ধোয়ার জন্য আমাকে দিতেন। আমি নিজে প্রথমে তা দিয়ে মিসওয়াক করতাম, অতঃপর সেটা ধুয়ে তাঁকে দিতাম।
হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
অনুচ্ছেদ-২৯ঃ মিসওয়াক করা স্বভাবসুলভ কাজ [ফিত্বরাত]
৫৩. আয়িশাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেছেনঃ দশটি কাজ মানুষের ফিত্বরাত বা স্বভাবসুলভঃ [১] গোঁফ কাটা, [২] দাড়ি ছেড়ে দেয়া, [৩] মিসওয়াক করা, [৪] পানি দিয়ে নাক পরিষ্কার করা, [৫] নখ কাটা, [৬] আঙ্গুলের জোড়াসমূহ ধোয়া, [৭] বগলের পশম তুলে ফেলা, [৮] নাভির নিচের পশম চেঁছে ফেলা, [৯] পানি দিয়ে ইস্তিনজা করা। মুসআব বলেন, দশম কাজটি আমি ভুলে গেছি। সম্ভবতঃ সেটি হলো-কুলি করা। {৫৩}
হাসানঃ মুসলিম। হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
৫৪. আম্মার ইবনি ইয়াসীর [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেন, কুলি করা ও নাকে পানি দেয়া [মানুষের] ফিত্বরাতের অন্তর্গত। অতঃপর পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন। তবে দাড়ি ছেড়ে দেয়া –কথাটি উল্লেখ করেননি, উল্লেখ করিয়াছেন খাতনা করা– এর কথা। ইস্তিনজার পর লিঙ্গে অল্প পরিমাণ পানি ছিটানোর কথাও উল্লেখ করিয়াছেন, তবে ইস্তিনজার উল্লেখ করেননি।
হাসান। ইমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, ইবনি আব্বাস [রাঃআ:] সূত্রেও অনুরূপ বর্ণনা উল্লেখ আছে। তিনি পাঁচটি ফিত্বরাতের কথা বলেছেন, তার সবগুলোই মাথার মধ্যে। তিনি সিঁথি কাটার কথাও বলেছেন। তবে দাড়ি রাখা কথাটি উল্লেখ নেই। সহিহ মাওকুফ।ইমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, ত্বালক্ব ইবনি হাবীব, মুজাহিদ ও বাক্র ইবনি আবদুল্লাহ আল-মুযানী সূত্রে হাম্মাদের হাদীসের অনুরূপ হাদীস বর্ণিত আছে। তারা দাড়ি ছেড়ে দেয়ার বিষয় উল্লেখ করেননি। সহীহঃ ত্বালক্ব সূত্রে মাওকুফভাবে। আবু হুরাইরা [রাঃআ:] হতে নবি [সাঃআ:] বর্ণিত আরেকটি হাদীসে দাড়ি ছেড়ে দেয়ার কথা উল্লেখ আছে। সহিহ। ইবরাহীম নাখঈ হতেও অনুরূপ বর্ণনা আছে। তাতে দাড়ি ছেড়ে দেয়া এবং খাতনা করার কথা রয়েছে। সহিহ মাওকুফ। হাদিসের তাহকিকঃ অন্যান্য
অনুচ্ছেদ- ৩০ঃ রাত্রি জাগরণকারীর মিসওয়াক করা
৫৫. হুযাইফাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] যখন রাতে জাগতেন, তখন মিসওয়াক দিয়ে মুখ পরিষ্কার করিতেন।
সহীহঃ বোখারী ও মুসলিম। মিসওয়াক করার হাদিস -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৫৬. আয়িশাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
নবি [সাঃআ:] এর জন্য উযুর পানি ও মিসওয়াক রেখে দেয়া হতো। তিনি রাতে ঘুম থেকে প্রথমে ইস্তিনজা করিতেন, এরপর মিসওয়াক করিতেন।
সহীহঃ মুসলিম। মিসওয়াক করার হাদিস -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৫৭. আয়িশাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
নবি [সাঃআ:] রাতে বা দিনে যখনই ঘুম থেকে জাগতেন, উযুর পূর্বে মিসওয়াক করিতেন। {৫৭}
হাসান, [আরবী] “দিনে” কথাটি বাদে। {৫৭} আহমদ [৬/১৬০], বাগাভী শারহুস সুন্নাহ [১/২৯৬], বায়হাক্বী সুনানুল কুবরা [১/৩৯]। হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
৫৮. আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি নবি [সাঃআ:] এর নিকট কোন এক রাত কাটালাম। [তখন দেখলাম] তিনি ঘুম থেকে জেগে উযুর পানি নিয়ে মিসওয়াক করিলেন। অতঃপর তিনি নিন্মোক্ত আয়াতগুলো তিলাওয়াত করলেনঃ “নিশ্চয় আসমান ও যমীন সৃষ্টিতে, রাত ও দিনের পরিবর্তনে বুদ্ধিমান লোকদের জন্য অসংখ্য নিদর্শন রয়েছে।” – [সূরাহ আল ইমরান, আয়াত ১৯০]। তিনি সূরাটি প্রায় শেষ পর্যন্ত পড়লেন অথবা শেষ করিলেন। এরপর তিনি উযু করে জায়নামাযে গিয়ে দু রাকআত সলাত আদায় করে বিছানায় গেলেন এবং আল্লাহ যতক্ষণ চাইলেন ততক্ষণ ঘুমিয়ে পুনরায় জাগলেন। এরপর পূর্বের ন্যায় ঐ কাজগুলো করে আবারো বিছানায় গিয়ে ঘুমালেন। অতঃপর জেগে উঠে আবার আগের মত করিলেন। তারপর বিছানায় গিয়ে ঘুমিয়ে আবার জাগলেন ও আগের মত করিলেন। প্রত্যেকবারই তিনি [ঘুম থেকে জেগে] মিসওয়াক ও দু রাকআত সলাত আদায় করিলেন। অতঃপর [সর্বশেষে] বিতর সলাত পড়লেন। ইমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, হুসাইন ইবনি আব্দুর রহমান থেকে ইবনি ফুদাইল উপরের হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন এভাবেঃ তিনি [সাঃআ:] মিসওয়াক এবং উযু করার সময় এ আয়াতটি পাঠ করিতে থাকেনঃ [আরবী] – এভাবে তিনি সূরাহটি শেষ পর্যন্ত পাঠ করিলেন।
সহিহ : মুসলিম। মিসওয়াক করার হাদিস -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
Leave a Reply