কিয়ামতের পরে কি হবে – পাপ, তওবা, পুনরুত্থান, শাফাআত

কিয়ামতের পরে কি হবে – পাপ, তওবা, পুনরুত্থান, শাফাআত

কিয়ামতের পরে কি হবে – পাপ, তওবা, পুনরুত্থান, শাফাআত >> সুনানে ইবনে মাজাহ হাদিস এর মুল সুচিপত্র পড়ুন

পর্বঃ ৩৭, অধ্যায়ঃ (২৯-৩৯)=১১টি

৩১/২৯. অধ্যায়ঃ পাপের স্মরণ
৩১/৩০. অধ্যায়ঃ তওবা সম্পর্কে আলোচনা
৩১/৩১. অধ্যায়ঃ মৃত্যুকে স্মরণ এবং তার প্রস্তুতি
৩১/৩২. অধ্যায়ঃ কবর ও তার বিপর্যয়কর পরিস্থিতি
৩১/৩৩. অধ্যায়ঃ পুনরুত্থানের আলোচনা
৩১/৩৪. অধ্যায়ঃ মু হাম্মাদ [সাঃআঃ] -এর উম্মাতের বৈশিষ্ট্য
৩১/৩৫. অধ্যায়ঃ কিয়ামতের দিন আল্লাহর রহমাত লাভের আশা করা যায়
৩১/৩৬. অধ্যায়ঃ হাওদ কাওসারের আলোচনা
৩১/৩৭. অধ্যায়ঃ শাফাআতের আলোচনা
৩১/৩৮. অধ্যায়ঃ জাহান্নামের বর্ণনা
৩১/৩৯. অধ্যায়ঃ জান্নাতের বর্ণনা

৩১/২৯. অধ্যায়ঃ পাপের স্মরণ

৪২৪২. আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

আমরা বলিলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা জাহিলী যুগে যা করেছি, সে সম্পর্কে কি আমাদের জবাবদিহি করিতে হইবে? রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেন, যারা ইসলাম গ্রহনের পর ভাল কাজ করেছে তাহাদেরকে জাহিলী যুগের কৃতকর্ম সম্পর্কে জবাবদিহি করিতে হইবে না। কিন্তু যে ব্যক্তি মন্দ কাজ করিবে, তাহাকে পূর্বাপর সকল কৃতকর্মের জন্য জবাবদিহি করিতে হইবে। {৩৫৭৪}

তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহিহ।{৩৫৭৪} সহীহুল বুখারী ৬৯২১, মুসলিম ১২০,আহ্‌মাদ ৩৫৮৫, ৩৮৭৬, ৪০৭৫, ৪০৯২, ৪৩৯৪, দারিমী ১। কিয়ামতের পরে কি হবে হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪২৪৩. আয়িশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাকে বলিলেনঃ হে আয়িশাহ! ক্ষুদ্র গুনাহ থেকেও সাবধান হও। কারণ সেগুলোর জন্যও আল্লাহর নিকট জবাবদিহি করিতে হইবে।{৩৫৭৫}

তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহিহ।{৩৫৭৫} আহ্মাদ ২৩৮৯৪, ২৪৬৫১, দারিমী ২৭২৬। সহিহাহ ৫১৩। কিয়ামতের পরে কি হবে হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪২৪৪. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেন, মুমিন ব্যক্তি যখন গুনাহ করে তখন তার কলবে একটি কালো দাগ পড়ে। অতঃপর সে তওবা করলে, পাপ কাজ ত্যাগ করলে এবং ক্ষমা প্রার্থনা করলে তার কলব পরিচ্ছন্ন হয়ে যায়। সে আরও গুনাহ করলে সেই কালো দাগ বেড়ে যায়। এই সেই মরিচা যা আল্লাহ তাহাঁর কিতাবে উল্লেখ করেছেন

كَلاَّ بَلْ رَانَ عَلَى قُلُوبِهِمْ مَا كَانُوا يَكْسِبُونَ

“কক্ষনো নয়, বরং তাহাদের কৃতকর্মই তাহাদের অন্তরে জং [মরিচা] ধরিয়েছে” [সূরা আল-মুতাফফিফীনঃ ১৪]।{৩৫৭৬}

তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ হাসান।{৩৫৭৬} তিরমিজি ৩৩৩৪, আহ্মাদ ৭৮৯২, আত তালীকুর রাগীব ২/২৬৮, ৪/৭৪। কিয়ামতের পরে কি হবে হাদিস এর তাহকিকঃ হাসান হাদিস

৪২৪৫. সাওবান [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ আমি আমার উম্মাতের কতক দল সম্পর্কে অবশ্যই জানি যারা কিয়ামতের দ্বীন তিহামার শুভ্র পর্বতমালার সমতুল্য নেক আমল সহ উপস্থিত হইবে। মহামহিম আল্লাহ সেগুলোকে বিক্ষিপ্ত ধূকিকণায় পরিণত করবেন। সাওবান [রাদি.] বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! তাহাদের পরিচয় পরিস্কারভাবে আমাদের নিকট বর্ণনা করুন, যাতে অজ্ঞাতসারে আমরা তাহাদের অন্তর্ভুক্ত না হই। তিনি বলেনঃ তারা তোমাদেরই ভ্রাতৃগোষ্ঠী এবং তোমাদের সম্প্রদায়ভুক্ত। তারা রাতের বেলা তোমাদের মতই ইবাদত করিবে। কিন্তু তারা এমন লোক যে, একান্ত গোপনে আল্লাহর হারামকৃত বিষয়ে লিপ্ত হইবে। {৩৫৭৭}

তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহিহ।. ৩৫৭৭} হাদিসটি ঈমাম ইবনি মাজাহ এককভাবে বর্ণনা করেছেন। রাওদুন নাদীর ১৮১, আত তালীকুর রাগীব ৩/১৭৮, সহিহাহ ৫০৫। কিয়ামতের পরে কি হবে হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪২৪৬. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] কে জিজ্ঞেস করা হলো, কোন্‌ জিনিসের বদৌলতে বেশিরভাগ লোক জান্নাতে প্রবেশ করিবে। তিনি বলেনঃ তাক্বওয়া ও সচ্চরিত্রের বদৌলতে। তাহাকে আরও জিজ্ঞেস করা হলো, কোন্‌ জিনিসের কারণে অধিকাংশ লোক জাহান্নামে যাবে? তিনি বলেনঃ দুটি অংগ- মুখ ও লজ্জাস্থান। {৩৫৭৮}

তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহিহ।{৩৫৭৮} আহ্মাদ ৭৮৪৭, ৮৮৫২, ৯৪০৩। সহিহাহ ৯৭৭। কিয়ামতের পরে কি হবে হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৩১/৩০. অধ্যায়ঃ তওবা সম্পর্কে আলোচনা

৪২৪৭. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ কোন ব্যক্তি তার হারানো উট প্রাপ্তিতে যতো আনন্দিত হয়, তোমাদের কারো তওবায় মহান আল্লাহ ততোধিক আনন্দিত হন। {৩৫৭৯}

তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহিহ। {৩৫৭৯} তিরমিজি ৩৫৩৮। কিয়ামতের পরে কি হবে হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪২৪৮. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ তোমরা যদি পাপাচার করিতে, এমনকি তোমাদের পাপ আকাশের সীমা পর্যন্ত পৌছে যেতো, অতঃপর তোমরা তওবা করিতে, তাহলে আল্লাহ অবশ্যই তোমাদের তওবা কবুল করিতেন। {৩৫৮০}

তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ হাসান সহিহ।{৩৫৮০} হাদিসটি ঈমাম ইবনি মাজাহ এককভাবে বর্ণনা করেছেন। সহিহাহ. ৯০৩, ১৯৫১। কিয়ামতের পরে কি হবে হাদিস এর তাহকিকঃ হাসান সহিহ

৪২৪৯. আবু সাইদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ কোন বান্দা বিজন প্রান্তরে তার বাহনের উট হারিয়ে ফেললো, অতঃপর তার অনুসন্ধান করিতে করিতে শেষে নিরাশ ও অবসন্ন হয়ে তার কাপড় মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়লো। এ অবস্থায় হঠাৎ সে তার হারিয়ে যাওয়া বাহনের আওয়াজ শুনতে পেয়ে নিজের মুখমণ্ডল থেকে তার কাপড় সরিয়ে তার উট তার সামনে উপস্থিত দেখিতে পেয়ে যতো আনন্দিত হয়, আল্লাহ তাহাঁর বান্দার তওবায় ততোধিক আনন্দিত হন। {৩৫৮১}

তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ দুর্বল।{৩৫৮১} আহ্মাদ ১১৩৮২, দঈফাহ ৪২৯৪, দঈফ আল-জামি ৪৬৩৪। কিয়ামতের পরে কি হবে হাদিস এর তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৪২৫০. [আবদুল্লাহ বিন মাসউদ] [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ গুনাহ থেকে তওবাকারী নিষ্পাপ ব্যক্তিতুল্য। {৩৫৮২}

তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ হাসান।{৩৫৮২} হাদিসটি ঈমাম ইবনি মাজাহ এককভাবে বর্ণনা করেছেন। কিয়ামতের পরে কি হবে হাদিস এর তাহকিকঃ হাসান হাদিস

৪২৫১আনাস [রাদি.] , হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ প্রত্যেক আদম সন্তানই গুনাহগার। আর গুনাহগারদের মধ্যে তওবাকারীগণ উত্তম। {৩৫৮৩}

তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ হাসান।{৩৫৮৩} তিরমিজি ২৪৯৯, আহ্মদ ১২৬৩৭। তাখরীযুল মিশকাত ২৩৪১০। কিয়ামতের পরে কি হবে হাদিস এর তাহকিকঃ হাসান হাদিস

৪২৫২. আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

আমি আমার পিতার সাথে আবদুল্লাহ [রাদি.] -এর নিকট উপস্থিত হলাম। আমি তাহাকে বলিতে শুনলাম, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ “অনুতপ্ত হওয়াই তওবা”। আমার পিতা তাহাকে জিজ্ঞেস করেন, আপনি নিজে কি নাবী [সাঃআঃ] কে বলিতে শুনেছেন যে, “অনুতপ্ত হওয়াই তওবা”? তিনি বলেন, হাঁ।{৩৫৮৪}

তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহিহ।{৩৫৮৪} আহ্মাদ ৩৫৫৮, ৪০০৪,৪১১৩। রাওদুন নাদীর ৬৪৪। কিয়ামতের পরে কি হবে হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪২৫৩. আবদুল্লাহ বিন উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ রূহ কণ্ঠাগত না হওয়া [মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত] পর্যন্ত মহামহিম আল্লাহ বান্দার তওবা কবুল করেন। {৩৫৮৫}

তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ হাসান।৩৫৮৫} তিরমিজি ৩৫৩৭। এত তালীকুর রাগীব ৪/৭৫,মিশকাত ২৩৪৩। কিয়ামতের পরে কি হবে হাদিস এর তাহকিকঃ হাসান হাদিস

৪২৫৪. ইবনি মাসউদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

এক ব্যক্তি নাবী [সাঃআঃ] -এর নিকট এসে বললো যে, সে এক বেগানা মহিলাকে চুমা দিয়েছে। সে এর কাফ্‌ফারা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করিতে থাকলো। কিন্তু তিনি তাহাকে কোন উত্তর দিলেন না। তখন মহামহিম আল্লাহ এ আয়াত নাযিল করিলেন

وَأَقِمِ الصَّلاَةَ طَرَفَىِ النَّهَارِ وَزُلَفًا مِنَ اللَّيْلِ إِنَّ الْحَسَنَاتِ يُذْهِبْنَ السَّيِّئَاتِ ذَلِكَ ذِكْرَى لِلذَّاكِرِينَ

“দিনের দু প্রান্তভাগে এবং রাতের প্রথমাংশে নামায কায়েম করো। নিশ্চয় সৎকাজ অসৎ কাজকে দূরীভূত করে দেয়। যারা উপদেশ গ্রহন করে, এটা তাহাদের জন্য উপদেশ” [সূরা হূদঃ ১১৪]।

লোকটি বললঃ হে আল্লাহর রাসূল! এ নির্দেশ কি কেবল আমার জন্য সীমিত? তিনি বলেনঃ আমার উম্মাতের যে কেউ এর উপর আমল করিবে, তার জন্যই। {৩৫৮৬}

তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহিহ।{৩৫৮৬} বুখারী ৫২৬, ৪৬৮৭, মুসলিম ৪৯৬৩, ৪৯৬৪, তিরমিজি ৩১১২, আবু দাউদ ৪৪৬৮, আহ্মাদ ৩৬৪৫, ৪০৮৩। কিয়ামতের পরে কি হবে হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪২৫৫. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ এক ব্যক্তি নিজের উপর যুলুম [পাপাচার] করলো। তার মৃত্যু উপস্থিত হলে সে তার পুত্রদের ওসিয়ত করে বললো, আমি মারা যাওয়ার পর তোমরা আমাকে আগুনে ভস্মীভূত করিবে, অতঃপর ছাই পিষে চূর্ণ-বিচূর্ণ করিবে, তারপর সমুদ্রে প্রবল বায়ুর মধ্যে সেগুলো নিক্ষেপ করিবে। আল্লাহর শপথ! যদি আমার রব আমাকে পাকড়াও করিতে পারেন তাহলে আমাকে এমন ভয়াবহ শাস্তি দিবেন যা অন্য কাউকে দেননি। নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ তার পুত্ররা তার ওসিয়ত মত কাজ করলো। আল্লাহ তাআলা জমীনকে বলেন, তুমি তার দেহ থেকে যা গ্রহন করেছো, তা ফেরত দাও। ফলে সে সোজা দাঁড়িয়ে গেল। আল্লাহ তাহাকে জিজ্ঞেস করিলেন, এ কাজ করিতে কিসে তোমাকে প্ররোচিত করেছে? সে বলিল, হে প্রভু! আপনার ভয়। এজন্য আল্লাহ তাহাকে ক্ষমা করে দেন।{৩৫৮৭}

তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহিহ।{৩৫৮৭} সহীহুল বুখারী ৩৪৮১, ৭৫০৬, মুসলিম ২৭৫৬,আহ্মাদ ৭৫৯১, ৭৯৮০, মুওয়াত্তা মালিক ৫৬৮। কিয়ামতের পরে কি হবে হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪২৫৬. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ এক নারী একটি বিড়ালের কারণে জাহান্নামে গেছে। সে বিড়ালটিকে বেঁধে রেখেছিল, এমতাবস্থায় তাহাকে আহারও করায়নি এবং একে ছেড়েও দেয়নি, যাতে সে কীট-পতঙ্গ খেতে পারতো। ফলে সেটি অনাহারে মারা গেলো। যুহরী [রাদি.] বলেন, মানুষকে [নিজের আমলের উপর] ভরসা করাও উচিত নয় এবং [আল্লাহর রহমাত থেকে] নিরাশ হওয়াও উচিত নয়। {৩৫৮৮}

তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহিহ।{৩৫৮৮} মুসলিম ২২৪৩, আহ্মাদ ৭৪৯৪, ২৭৮৭০, ৭৭৮৮, ২৭৪১৮, ২৭২৩৩, ২৭২৬২, ২৭৬০২, ১০১২৩, ১০২০৬, ১০৩৪৯। কিয়ামতের পরে কি হবে হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪২৫৭. আবু যার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ প্রাচুর্যময় মহান আল্লাহ বলেন, হে আমার বান্দাগণ! আমি যাদের ক্ষমা করেছি তারা ব্যতিত তোমাদের সকলেই গুনাহগার। অতএব তোমরা আমার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করো, আমি তোমাদের ক্ষমা করবো। তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি জানে যে, আমি ক্ষমা করার ক্ষমতা রাখি, অতঃপর সে আমার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করলে আমি তাহাকে ক্ষমা করে দেই। আমি যাদের হেদায়াত করেছি তারা ব্যতীত তোমরা সকলেই পথভ্রষ্ট। অতএব তোমরা আমার নিকট সৎপথ প্রার্থনা করো। আমি তোমাদের সৎপথ প্রদর্শন করবো। আমি যাদের ধনবান করেছি তারা ব্যতিত তোমরা সকলেই দরিদ্র। তোমরা আমার নিকট প্রার্থনা করো, আমি তোমাদের রিযিক দান করবো। তোমাদের জীবিত, মৃত, আগের ও পরের, সিক্ত ও শুষ্ক [সচ্ছল-অসচ্ছল] নির্বিশেষে সকলেই যদি আমার বান্দাদের মধ্যে সর্বাধিক তাক্বওয়ার অধিকারী ব্যক্তির হৃদয়ের মত হয়ে যায়, তাহলে একটি মশার পাখার সম-পরিমাণও আমার রাজত্বের শ্রীবৃদ্ধি ঘটবে না। পক্ষান্তরে তারা সকলে যদি একত্রে আমার বান্দাদের মধ্যে সবচেয়ে মারাত্নক পাপী বান্দার মত হয়ে যায়, তবুও তাতে একটি মশার পাখার সম-পরিমাণও আমার রাজত্বের সৌন্দর্যহানি ঘটবে না। তোমাদের জীবিত, মৃত, আগের ও পরের, সিক্ত ও শুষ্ক সকলে যদি একত্র হয়ে প্রত্যেকে তার পূর্ণ চাহিদামত আমার নিকট প্রার্থনা করে এবং আমি তাহাদের চাহিদা মত সবকিছু দান করি, তবুও আমার রাজত্বের কিছুই কমবে না, তবে এতটুকু পরিমাণ যে, তোমাদের কেউ সমুদ্রের মধ্য দিয়ে অতিক্রমকালে তাতে একটিঁ সুঁই ডুবিয়ে তা তুলে নিলে তাতে সমুদ্রের পানি যতটুকু হ্রাস পাবে। কারণ আমি হলাম দাতা, দয়ালু ও মহান। আমি যা চাই তাই করি। আমার দান হলো আমার কথা [এবং আমার আযাব হলো আমার নির্দেশ]। আমার ব্যাপার এই যে, আমি যখন কিছু ইচ্ছা করি তখন বলি, “হয়ে যাও”, অমনি তা হয়ে যায়।{৩৫৮৯}

তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ দুর্বল।{৩৫৮৯} মুসলিম ২৫৭৭,তিরমিজি ২৪৯৫,আহমাদ ২০৮৬০,২০৯১১।আত তালিকুর রাগীব ২/২৬৮,মিশকাত ২৩৫০। কিয়ামতের পরে কি হবে হাদিস এর তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৩১/৩১. অধ্যায়ঃ মৃত্যুকে স্মরণ এবং তার প্রস্তুতি

৪২৫৮. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ তোমরা অধিক পরিমাণে জীবনের স্বাদ হরণকারী অর্থাৎ মৃত্যুকে স্মরণ করো।{৩৫৯০}

তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ হাসান সহিহ। {৩৫৯} তিরমিজি ২৩০৭,নাসায়ী ১৮২৪,আহমাদ ৭৮৬৫।মিশকাত ১৬১০,ইরওয়া ৬৮২। কিয়ামতের পরে কি হবে হাদিস এর তাহকিকঃ হাসান সহিহ

৪২৫৯. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর সাথে ছিলাম। এমতাবস্থায় এক আনসারী নাবী [সাঃআঃ] -এর নিকট এসে তাহাকে সালাম দিলো। অতঃপর বললো, হে আল্লাহর রাসূল! মুমিনদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা উত্তম কে? তিনি বলেনঃ স্বভাব–চরিত্রে তাহাদের মধ্যে যে ব্যক্তি অধিক উত্তম। সে পুনরায় জিজ্ঞেস করলো, মুমিনদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বুদ্ধিমান কে? তিনি বলেনঃ তাহাদের মধ্যে যারা মৃত্যুকে অধিক স্মরণ করে এবং মৃত্যু পরবর্তী জীবনের জন্য উত্তমরূপে প্রস্তুতি গ্রহণ করে, তারাই সর্বাধিক বুদ্ধিমান।{৩৫৯১}

তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ হাসান।{৩৫৯১} হাদিসটি ঈমাম ইবনি মাজাহ এককভাবে বর্ণনা করেছেন।সহীহাহঃ১৩৮৪। কিয়ামতের পরে কি হবে হাদিস এর তাহকিকঃ হাসান হাদিস

৪২৬০. আবু ইয়ালা শাদ্দাদ বিন আওস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ বুদ্ধিমান সেই ব্যক্তি যে নিজের নফস কে নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং মৃত্যুর পরবর্তী জীবনের জন্য কাজ করে। আর নির্বোধ ও অকর্মন্য সেই ব্যক্তি যে তার নফসের দাবির অনুসরণ করে এবং আল্লাহর নিকট বৃথা আশা করে।{৩৫৯২}

তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ দুর্বল।{৩৫৯২} তিরমিজি ২৪৫৯।মিশকাত ৫২৮৯।রাওদুন নাদীর ৩৫৬,দঈফাহ ৫৩১৯।হাদিস এর তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৪২৬. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] এক মুমূর্ষু যুবকের নিকট উপস্থিত হয়ে জিজ্ঞেস করেনঃ তোমার কেমন লাগছে? সে বলিল, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আমার গুনাহ সম্পর্কে আল্লাহর কাছে [ক্ষমার] আশাবাদী ও ভীত-শংকিত। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ এ দুটি জিনিস [আশা ও শংকা] যে বান্দার অন্তরেই একত্র হয়, সে যা আশা করে, আল্লাহ তাহাকে তা দান করবেন এবং সে যা আশংকা করে তা থেকে তাহাকে নিরাপদ রাখবেন।{৩৫৯৩}

তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ হাসান।{৩৫৯৩} তিরমিজি ৭৮৩।আহকামুল জানাইয ৩,মিশকাত ১৬১২,সহিহাহ ১০৫১। কিয়ামতের পরে কি হবে হাদিস এর তাহকিকঃ হাসান হাদিস

৪২৬২. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ মৃত্যুর সময় মানুষের নিকট ফেরেশতা আগমন করেন। অতএব মুমূর্ষু ব্যক্তি উত্তম লোক হলে তারা বলেন, হে পবিত্র আত্মা! পবিত্র দেহ থেকে প্রশংসিত অবস্থায় বের হয়ে এসো এবং আল্লাহর রহমত ও সুঘ্রাণের সুসংবাদ গ্রহণ করো। তোমার রব তোমার প্রতি অসন্তুষ্ট নন। রূহ বের হয়ে আসা পর্যন্ত তারা এভাবে আহবান জানাতে থাকে। অতঃপর রূহ বের হয়ে আসলে তারা তা নিয়ে আসমানে আরোহণ করেন। এ রূহের জন্যে আসমানের দরজা খুলে দেয়া হয়। জিজ্ঞেস করা হয়, সে কে? ফেরেশতাগণ বলেন, অমুক ব্যক্তি। তখন বলা হয়, পবিত্র আত্মাকে স্বাগতম, যা ছিল পবিত্র দেহে। প্রশংসিত অবস্থায় তুমি প্রবেশ করো। আল্লাহর রহমাত ও সুঘ্রানের সুসংবাদ গ্রহণ করো। তোমার রব তোমার প্রতি অসন্তুষ্ট নন। তাহাকে অবিরতভাবে এ সংবাদ প্রদান করা হয় যাবত না তা মহামহিম আল্লাহ যে আসমানে অবস্থান করেন সেখানে পৌঁছে যায়। মুমূর্ষু ব্যক্তি পাপাচারী হলে ফেরেশতা বলেন, হে নিকৃষ্ট দেহের নিকৃষ্ট আত্মা! নিন্দিত অবস্থায় বের হয়ে আয় এবং উত্তপ্ত গরম পানি ও রক্ত-পুঁজের দুঃসংবাদ গ্রহণ কর এবং অনুরূপ বহু বিষাক্ত বস্তুর। রূহ বের হয়ে আসা পর্যন্ত তারা এভাবে আহবান জানাতে থাকেন। অতঃপর তারা রূহসহ উর্দ্ধাকাশে আরোহণ করেন। কিন্তু তার জন্য দরজা খোলা হয় না। জিজ্ঞেস করা হয়, এ ব্যক্তি কে? বলা হয়, অমুক। তখন বলা হয়, নিকৃষ্ট দেহের নিকৃষ্ট আত্মার জন্য নাই কোন সাদর সম্ভাষণ। তুই নিন্দিত অবস্থায় ফিরে যা। কারণ তোর জন্য আকাশের দ্বারসমূহ খোলা হইবে না। অতঃপর একে আসমান থেকে ফিরিয়ে দেয়া হয় এবং তা কবরে ফিরে আসে।{৩৫৯৪}

তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহিহ।{৩৫৯৪} আহমাদ ৮৫৫১।মিশকাত ১৬২৭,তাখরীজু মা দাল্লা আকায়হিল কুরআন ১৪৬ নং পৃষ্ঠা,আত তালীকুর রাগীব ৪/১৮৭। কিয়ামতের পরে কি হবে হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪২৬৩. আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ [রাদি. হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ যখন তোমাদের কারো মৃত্যু কোন এলাকায় নির্ধারিত হয়, তখন কোন প্রয়োজন তাহাকে সেখানে যেতে বাধ্য করে। সে যখন উক্ত এলাকায় নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে যায় তখন মহা আল্লাহ তার জান কবয করেন। কিয়ামতের দিন জমীন বলবে, হে প্রভু! এই তোমার আমানত যা আমার নিকট গচ্ছিত রেখেছিলে। {৩৫৯৫}

তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহিহ।{৩৫৯৫} হাদিসটি ঈমাম ইবনি আবু মাজাহ এককভাবে বর্ণনা করেছেন। সহীহা ১২২২। কিয়ামতের পরে কি হবে হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪২৬৪. আয়িশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে সাক্ষাত পছন্দ করে, আল্লাহও তার সাথে সাক্ষাত পছন্দ করেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে সাক্ষাত অপছন্দ করে, আল্লাহও তার সাথে সাক্ষাত অপছন্দ করেন। বলা হলো, ইয়া রসূলুল্লাহ! আল্লাহর সাথে সাক্ষাত অপছন্দ করা তো মৃত্যুকে অপছন্দ করা। অতএব আমাদের সকলেই তো মৃত্যুকে অপছন্দ করে। তিনি বলেনঃ তা নয়, এটা মৃত্যুর সময়ের ব্যাপার। যখন কোন বান্দাকে আল্লাহর রহমাত ও ক্ষমার সুসংবাদ দেয়া হয়, তখন সে আল্লাহর সাক্ষাত লাভকে পছন্দ করে এবং আল্লাহও তার সাক্ষাত পছন্দ করেন। আর যখন কোন বান্দাকে কঠিন শাস্তির দুঃসংবাদ দেয়া হয়, তখন সে আল্লাহর সাক্ষাত অপছন্দ করে এবং আল্লাহও তার সাক্ষাত অপছন্দ করেন।{৩৫৯৬}

তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহিহ।{৩৫৯৬} মুসলিম ১৫৭,২৬৮৪,২৬৮৫ তিরমিজি ১০৬৭,নাসায়ী ১৮৩৪,১৮৩৮,আহমাদ ২৩৬৫২ ,২৩৭৬৩,২৫২০০,২৫৪৫৮।কিয়ামতের পরে কি হবে হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪২৬৫. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ তোমাদের কেউ যেন তার উপর পতিত বিপদাপদের কারণে মৃত্যু কামনা না করে। অবশ্যই কেউ যদি মৃত্যু কামনা করিতেই চায়, তবে সে যেন বলে,

اللَّهُمَّ أَحْيِنِي مَا كَانَتِ الْحَيَاةُ خَيْرًا لِي وَتَوَفَّنِي إِذَا كَانَتِ الْوَفَاةُ خَيْرًا لِي

“হে আল্লাহ! যাবৎ জীবিত থাকা আমার জন্যে কল্যাণকর, তাবৎ আমাকে জীবিত রাখুন এবং যখন মৃত্যুই আমার জন্যে কল্যাণকর হইবে তখন আমাকে মৃত্যুদান করুন”।{৩৫৯৭}

তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহিহ।{৩৫৯৭} সহীহুল বুখারী ৫৬৭১,৬৩৫১,৭২৩৩,মুসলিম ২৬৮০,তিরমিজি ৯৭১,নাসায়ী ১৮২০,১৮২২,আবু দাউদ ৩১০৮,১১৫৬৮,১১৬০৪,১২২৫৩,১২৩৪৪,১২৬০৮,১২৭৫৩,১৩১৬৭,১৩২৯৭,১৩৫৮২। ইরওয়া ৬৮৩,রাওদুন নাদীর ১৪২,আল-আহকাম ৪। কিয়ামতের পরে কি হবে হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৩১/৩২. অধ্যায়ঃ কবর ও তার বিপর্যয়কর পরিস্থিতি

৪২৬৬. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ একটি হাড় ব্যতিত গোটা মানবদেহ ক্ষয়প্রাপ্ত হইবে। সেটা হলো পাছার হাড় এবং এই হাড় থেকেই কিয়ামতের দিন সৃষ্টির দৈহিক কাঠামো পুনর্গঠিত করা হইবে।{৩৫৯৮}

তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহিহ।{৩৫৯৮} সহীহুল বুখারী ৪৮১৪,৪৯৩৫,মুসলিম ২৯৫৫,নাসায়ী ২০৭৭,আবু দাউদ ৪৭৪৩ ,আহমাদ ৮০৮৪,৯২৪৪,১০০৯৯,মুওয়াত্তা মালিক ৫৬৫।আয যিলান ৮৯১,তাখরীজুত তাহাবীয়াহ ৫৪৫। কিয়ামতের পরে কি হবে হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪২৬৭. উসমান [রাদি.] এর মুক্তদাস হানী হইতে বর্ণীতঃ

উসমান বিন আফফান [রাদি.] যখন কোন কবরের পাশে দাঁড়াতেন তখন এতো কাঁদতেন যে, তার দাড়ি ভিজে যেত। তাহাকে বলা হলো, আপনি জান্নাত-জাহান্নামের কথা স্মরণ করেন তখন তো এভাবে কান্নাকাটি করেন না ,অথচ কবর দেখলেই কাঁদেন! তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ নিশ্চয় কবর হলো আখেরাতের মনযিলসমূহের মধ্যকার সর্বপ্রথম মনযিল। কেউ যদি এখান থেকে রেহাই পায়, তবে তার জন্য পরবর্তী মনযিল গুলো কবরের চেয়েও সহজতর হইবে। আর সে যদি এখান থেকে রেহাই না পায়, তবে তার জন্য পরবর্তী মনযিলগুলো আরো ভয়াভহ হইবে। রাবী বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ আমি কখনও এমন কোন দৃশ্য অবলোকন করিনি যার তুলনায় কবর অধিক ভয়ংকর নয়।{৩৫৯৯}

তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ হাসান।{৩৫৯৯} তিরমিজি ২৩০৮। মিশকাত ১৩২,তাকরীযুল মুখতার ১৬৬,১৬৭। কিয়ামতের পরে কি হবে হাদিস এর তাহকিকঃ হাসান হাদিস

৪২৬৮. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ মৃত ব্যক্তিকে কবরে রাখা হলে এবং সে সৎকর্মপরায়ণ লোক হলে তাহাকে ভীতিশূন্য ও দুশ্চিন্তামুক্ত অবস্থায় তার কবরে বসানো হয়। অতঃপর তাহাকে জিজ্ঞেস করা হয়, তুমি কিসের অনুসারী ছিলে? সে বলবে, আমি ইসলামের অনুসারী ছিলাম। তাহাকে জিজ্ঞেস করা হইবে, এই ব্যক্তি কে? সে বলবে, আল্লাহর রাসূল মুহাম্মদ [সাঃআঃ]। তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট দলীল-প্রমাণসহ আমাদের নিকট এসেছিলেন এবং আমরা তাহাকে সত্য নাবী বলে স্বীকার করেছি। অতঃপর তাহাকে জিজ্ঞেস করা হইবে, তুমি কি আল্লাহকে দেখেছিলে? সে বলবে, আল্লাহকে দেখা কারো পক্ষে সম্ভব নয়। অতঃপর তার জন্য জাহান্নামের দিকে একটি সুড়ঙ্গ পথ খুলে দেয়া হইবে। সে সেদিকে তাকিয়ে দেখিতে পাবে যে, তার এক অংশ অপর অংশকে গ্রাস করছে। তাহাকে বলা হইবে, দেখে নাও, যা থেকে আল্লাহ তোমাকে রক্ষা করেছেন। অতঃপর তার জন্য জান্নাতের দিকে একটি সুড়ঙ্গ পথ খুলে দেয়া হইবে। সে তথাকার পুষ্প উদ্যান ও অন্যান্য সবকিছু দেখিতে পাবে। তাহাকে বলা হইবে, এই হলো তোমার স্থায়ী বাসস্থান। তাহাকে আরো বলা হইবে, তুমি ঈমানের উপর দৃঢ় প্রতিষ্ঠিত ছিলে, ঈমানসহ মৃত্যুবরণ করেছ এবং ইনশাল্লাহ ঈমানসহ হাশরের ময়দানে উত্থিত হইবে।

পক্ষান্তরে দুষ্কর্মপরায়ণ লোককে ভীতিকর ও দুশ্চিন্তাগ্রস্থ অবস্থায় উঠিয়ে তার কবরে বসানো হইবে। তাহাকে জিজ্ঞেস করা হইবে, তুমি কিসের অনুসারী ছিলে? সে বলবে, আমি জানি না। তাহাকে জিজ্ঞেস করা হইবে, এই ব্যক্তি কে? সে বলবে, আমি লোকজনকে একটা কথা বলিতে শুনিয়াছি, আমিও তাই বলেছি। অতঃপর তার জন্য জান্নাতের দিকে একটি সুড়ঙ্গ পথ খুলে দেয়া হইবে। সে সেদিকে তাকিয়ে তথাকার পুষ্প উদ্যান ও অন্যান্য সবকিছু দেখিতে পাবে। তাহাকে বলা হইবে, দেখ যা থেকে আল্লাহ তোকে বঞ্চিত করেছেন। অতঃপর তার জন্য জাহান্নামের দিকে একটি সুড়ঙ্গ পথ খুলে দেয়া হইবে। সে সেদিকে তাকিয়ে দেখিতে পাবে যে, জাহান্নামের এক অংশ অপর অংশ কে গ্রাস করছে। অতঃপর তাহাকে বলা হইবে, এটা হলো তোর স্থায়ী আবাসস্থল। তুই সংশয়ের উপর প্রতিষ্ঠিত ছিলি, সংশয়ী অবস্থায় মরেছিস এবং আল্লাহর মর্জি সংশয়ী অবস্থায় তোকে উঠানো হইবে।{৩৬০০}

তাওকীক আলবানীঃ সহিহ।{৩৬০০} আহমাদ ৮৫৫১।মিশকাত ১৩৮ ,আত তালীকুর রাগীব ৪/১৮৭। কিয়ামতের পরে কি হবে হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪২৬৯. বারা বিন আযিব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেন,

يُثَبِّتُ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا بِالْقَوْلِ الثَّابِتِ 

“যারা শাশ্বত বাণীতে ঈমান এনেছে আল্লাহ তাহাদেরকে সুপ্রতিষ্ঠিত রাখবে” [সূরা ইবরাহীমঃ ২৭]। তিনি বলেন যে, এ আয়াত কবর আযাব সম্পর্কে নাযিল হয়েছে। কবরস্থ ব্যক্তিকে বলা হইবে, তোমার রব কে? সে বলবে, আমার রব আল্লাহ এবং আমার নাবী মুহাম্মাদ [সাঃআঃ]। এই হচ্ছে আল্লাহর নিম্নোক্ত আয়াতের তাৎপর্য

يُثَبِّتُ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا بِالْقَوْلِ الثَّابِتِ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَفِي الآخِرَةِ

“যারা শাশ্বত বাণীতে ঈমান এনেছে আল্লাহ তাহাদের পার্থিব জীবনে এবং আখেরাতে সুপ্রতিষ্ঠিত রাখবেন” [সূরা ইবরাহীমঃ ২৭]। {৩৬০১}

তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহিহ।{৩৬০১} মূসলিম ২৮৭১।রাওদুন নাদীর ১৬৪। কিয়ামতের পরে কি হবে হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪২৭০. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ তোমাদের যে কেউ মারা যাওয়ার পর তার সামনে সকাল-সন্ধ্যায় তার বসবাসের ঠিকানা তুলে ধরা হয়। সে জান্নাতি হয়ে থাকলে জান্নাতীদের অবস্থান দেখানো হয় এবং জাহান্নামী হলে জাহান্নামীদের অবস্থান দেখানো হয়। তাহাকে বলা হয়, কিয়ামতের দিন তোমাকে উঠানোর পর থেকে এটাই হইবে তোমার আবাস।{৩৬০২}

তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহিহ।{৩৬০২} সহীহুল বুখারী ১৩২,মুসলিম ২৭৬৬,তিরমিজি ১২৯০ ,নাসায়ী ১০৭২,১০৭০,২০৭১,আহমাদ ৪৬৪৪ ,৫০৯৮,৫৮৯০,৬০২৩,মুওয়াত্তা মালিক ৫৬৪।রাওদুন নাদীর ৭৯৫। কিয়ামতের পরে কি হবে হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪২৭১. কাব বিন মালিক আল-আনসারী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ মুমিন ব্যক্তির রূহ একটি পাখির আকৃতিতে জান্নাতের বৃক্ষে যুক্ত থাকিবে। শেষে উত্থিত হওয়ার দিন তার রূহ তার দেহে ফিরে আসবে।{৩৬০৩}

তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহিহ।{৩৬০৩} তিরমিজি ১৬৪১,নাসায়ী ২০৭৩ ,আহমাদ ১৫৩৪৯ ,১৫৩৬০,১৫৩৬৫,২৬৬২৫,মুওয়াত্তা মালিক ৫৬৬।সহিহাহ ৯৯৫,আত তালীকুর রাগীব ২/১৯২ ,তাখরীজুত তাহাবীয়াহ ৫৩৯। কিয়ামতের পরে কি হবে হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪২৭২. জাবির [রাদি.] , হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ মৃত ব্যক্তিকে কবরে রাখা হলে সে সূর্যকে অস্তমিত দেখিতে পায়। তখন সে উঠে বসে এবং তার চক্ষুদ্বয় মলতে মলতে বলে, আমাকে ছেড়ে দাও, আমি নামাজ পড়বো।{৩৬০৪}

তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ হাসান।{৩৬০৪} হাদিসটি ঈমাম ইবনি মাজাহ একক ভাবে বর্ণনা করেছেন। আয যিলাল ৮৯৭। কিয়ামতের পরে কি হবে হাদিস এর তাহকিকঃ হাসান হাদিস

৩১/৩৩. অধ্যায়ঃ পুনরুত্থানের আলোচনা

৪২৭৩. আবু সাঈদ আল-খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ শিংগাধারী দু ফেরেশতা তাহাদের দু হাতে দুটি শিংগা নিয়ে অপেক্ষায় আছেন, কখন তাহাদের প্রতি [ফুৎকারের] নির্দেশ আসে। {৩৬০৫}

তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ মুনকার তবে [আরবি] শব্দে মাহফূয।{৩৬০৫} হাদিসটি একক ভাবে ঈমাম ইবনি মাজাহ বর্ণনা করেছেন। সহিহাহ ১০৭৯।দঈফ আল-জামি ১৮৭২।উক্ত হাদিসের রাবী ১ হাজ্জাজ সম্পর্কে আবু আহমাদ আল-হাকিম বলেন,তিনি আহলে ইলমের কাছে নির্ভরযোগ্য নয়।আবু বাকর আল-বায়হাকী বলেন,তার হাদিস দলিল দ্বারা গ্রহনযোগ্য নয়।অন্যত্র তিনি তাহাকে দূর্বল বলিয়াছেন।আবু যুররাহ আর রাযী বলেন,তিনি সত্যবাদী তবে হাদিস বর্ণনায় তাদলীস করেন।মুহাম্মদ বিন সাদ তাহাকে দূর্বল বলিয়াছেন।আহমাদ বিন শুয়াওব আন নাসায়ী বলেন,তিনি দূর্বল,তার হাদিস দলিল দ্বারা গ্রহণযোগ্য নয়। [তাহযীবুল কামালঃ রাবী নং ১১১২,৫/৪২০ নং পৃষ্ঠা] ২.আতিয়্যাহ সম্পর্কে আবু বাকর আল-বায়হাকী বলেন,তিনি দূর্বল,তারা হাদিস গ্রহনযোগ্য নয়। আবু হাতিম আর-রাযী বলেন,তিনি দূর্বল। আবু যূরআহ আর-রাযী বলেন,তিনি যাচাই বাছাই ছাড়া হাদিস গ্রহণ করেন ও তা বর্ণনা করেন।আহমাদ বিন হাম্বল বলেন,তিনি হাদিস বর্ণনায় দূর্বল। আহমাদ বিন শুয়াওব আন নাসায়ী বলেন,তিনি দূর্বল। ইবনি হাজার আল-আসকালানী বলেন,তিনি সত্যবাদী তবে হাদিস বর্ণনায় অধিক ভূল করেন।ঈমাম যাহাবী ও ঈমাম দারাকুতনী বলেন,তিনি দূর্বল [তাহযীবুল কামাল ৩৯৫৬,২০/১৪৫ পৃষ্ঠা] কিয়ামতের পরে কি হবে হাদিস এর তাহকিকঃ অন্যান্য

৪২৭৪. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

মদীনার বাজারে এক ইহূদী বললো, সেই সত্তার শপথ যিনি মূসা [আঃ] কে সমগ্র মানবজাতির উপর মর্যাদা দান করেছেন। এক আনসারী তার হাত তুলে তাহাকে সজোরে চড় মেরে বললো, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাদের মাঝে থাকা অবস্থায় তুমি একথা বলছো! বিষয়টি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর নিকট পেশ করা হলে তিনি বলেনঃ মহান আল্লাহ বলিয়াছেনঃ

وَنُفِخَ فِي الصُّورِ فَصَعِقَ مَنْ فِي السَّمَوَاتِ وَمَنْ فِي الأَرْضِ إِلاَّ مَنْ شَاءَ اللَّهُ ثُمَّ نُفِخَ فِيهِ أُخْرَى فَإِذَا هُمْ قِيَامٌ يَنْظُرُونَ

“এবং শিংগায় ফুৎকার দেওয়া হইবে। ফলে যাদের আল্লাহ ইচ্ছা করবেন তারা ব্যতিত আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সকলে মুর্ছিত হয়ে পড়বে। অতঃপর পুনরায় শিংগায় ফুৎকার দেওয়া হইবে, তৎক্ষণাৎ তারা দন্ডায়মান হয়ে তাকাতে থাকিবে” [সূরা যুমারঃ ৬৮]। আমি হবো মাথা উত্তোলনকারী প্রথম ব্যক্তি। আমি মূসা আলাইহিস সালামকে আরশের একটি পায়া ধরে আঁকরে ধরা অবস্থায় দেখিতে পাবো। আমি জানি না, তিনি কি আমার আগে তাহাঁর মাথা তুলেছেন, না আল্লাহ তাআলা তাহাকে অজ্ঞান হওয়া থেকে রক্ষা করেছেন। আর যে ব্যক্তি বলে যে, আমি ইউনুস বিন মাত্তা আলাইহিস সালাম অপেক্ষা উত্তম, সে মিথ্যা বলে।{৩৬০৬}

তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ হাসান সহিহ।{৩৬০৬} মুসলিম ২৩৭৩। কিয়ামতের পরে কি হবে হাদিস এর তাহকিকঃ হাসান সহিহ

৪২৭৫. আবদুল্লাহ বিন উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে মিম্বারের উপর দাঁড়িয়ে বলিতে শুনেছিঃ মহাপ্রতাপশালী আল্লাহ তাহাঁর আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীকে তাহাঁর হাতের মুঠোয় পুরে নিয়ে তা মুষ্টিবদ্ধ করবেন, অতঃপর তা সংকুচিত ও প্রসারিত করিতে থাকিবেন, অতঃপর বলবেন, আমিই মহাপ্রতাপশালী, আমিই রাজাধিরাজ। প্রতাপশালী দাম্ভিকেরা কোথায়? রাবী বলেন, এ কথা বলিতে বলিতে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ডানে বামে ঝুঁকছিলেন। শেষে আমি লক্ষ্য করলাম যে, মিম্বারের নিম্নাংশ তাহাকে নিয়ে দুলছে, এমনকি আমি বলিতে লাগলাম, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] মিম্বার থেকে নিচে পড়ে যান কিনা।{৩৬০৭}

তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহিহ।{৩৬০৭} মুসলিম ২৭৮৮। আয যিলাল ৫৪৬। কিয়ামতের পরে কি হবে হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪২৭৬. আয়িশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

আমি বলিলাম, হে আল্লাহর রাসূল! কিয়ামতের দিন হাশরের ময়দানে মানবজাতিকে কী অবস্থায় সমবেত করা হইবে? তিনি বলেনঃ নগ্নপদে উলংগ বদনে। আমি বলিলাম, নারীরাও? তিনি বলেনঃ নারীরাও। আমি বলিলাম, হে আল্লাহর রাসূল! এতে কি আমরা লজ্জিত হবো না? তিনি বলেনঃ হে আয়িশাহ! তখনকার অবস্থা হইবে খুবই ভয়ংকর। কেউ কারো প্রতি দৃষ্টিপাত করার মত অবস্থায় থাকিবে না। {৩৬০৮}

তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহিহ।{৩৬০৮} সহীহুল বুখারী ৬৫২৭,মুসলিম ২৮৫৯,নাসায়ী ২০৮৩,২০৮৪,আহমাদ ২৩৭৪৪,২৪০৬৭। কিয়ামতের পরে কি হবে হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪২৭৭. আবু মূসা আল-আশআরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ কিয়ামতের দিন মানুষকে তিনবার পেশ করা হইবে। প্রথম দুবার বাক-বিতন্ডা ও ওজর-আপত্তি পেশের জন্য। তৃতীয়বারে প্রত্যেকের আমলনামা উড়ে এসে হাতের নাগালে পৌঁছবে এবং কেউ তা ডান হাতে, কেউ তা বাম হাতে গ্রহণ করিবে।{৩৬০৯}

তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ দুর্বল।{৩৬০৯} {আহমাদ ১৯২১৬। তাখরীজুত তাহাবীয়াহ ৫৫৬, মিশকাত ৫৫৫৭, ৫৫৫৮। কিয়ামতের পরে কি হবে হাদিস এর তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৪২৭৮. ইবনি উমার [রাদি.] , হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ]

يَوْمَ يَقُومُ النَّاسُ لِرَبِّ الْعَالَمِينَ

“যেদিন মানবজাতি জগতসমূহের প্রতিপালকের সম্মুখে দাঁড়াবে” [সূরা মুতাফফিফীনঃ ৬] শীর্ষক আয়াত সম্পর্কে বলেনঃ তাহাদের এক একজন নিজ দেহ নিঃসৃত ঘামের মধ্যে দু কান বরাবর ডুবন্ত অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকিবে।{৩৬১০}

তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহিহ।{৩৬১০}{সহীহুল বুখারী ৪৯৩৮, মুসলিম ২৮৬২, তিরমিজি ২৪২২, ৩৩৩৫, ৩৩৩৬, আহমাদ ৪৫৯৯, ৪৬৮৩, ৫২৯৬, ৫৩৬৫, ৫৭৮৯, ৫৮৭৬, ৬০৩৯, ৬০৫০। কিয়ামতের পরে কি হবে হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪২৭৯. আয়িশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর নিকট

يَوْمَ تُبَدَّلُ الأَرْضُ غَيْرَ الأَرْضِ وَالسَّمَوَاتُ 

“যেদিন এই পৃথিবী পরিবর্তিত হয়ে অন্য পৃথিবী হইবে এবং আকাশমন্ডলীও” [সূরা ইবরাহীমঃ ৪৮]

শীর্ষক আয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম, সেদিন মানুষ কোথায় থাকিবে? তিনি বলেনঃ পুলসিরাতের উপর।{৩৬১১}

তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহিহ।{৩৬১১} {মুসলিম ২৭৯১, তিরমিজি ৩১২১, আহমাদ ২৩৫৪৯, ২৪১৭৬, ২৪৫০২, ২৫৩০০, দারিমী ২৮০৯।} কিয়ামতের পরে কি হবে হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪২৮০. আবু সাঈদ আল-খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ পুলসিরাত জাহান্নামের দু তীরের সাথে যুক্ত থাকিবে। তাতে থাকিবে সাদান বৃক্ষের কাঁটা সদৃশ কাঁটাসমূহ। লোকজন তার উপর দিয়ে অতিক্রম করিবে। কতক মুসলমান নিরাপদে তার উপর দিয়ে অতিক্রম করিবে, কতক কাঁটার আঁচড় খেয়ে, কতক কাঁটায় বিদ্ধ হয়ে থাকার পর নাজাত পাবে এবং কতক মুখ থুবড়ে জাহান্নামের তলদেশে নিক্ষিপ্ত হইবে।{৩৬১২}

তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহিহ।{৩৬১২} {আহমাদ ১০৬৯৩। কিয়ামতের পরে কি হবে হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪২৮১. হাফসাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ আমি অবশ্যই আশা করি আল্লাহর মর্জি যারা বদর ও হুদায়বিয়ার প্রান্তরে উপস্থিত ছিল তাহাদের কেউ জাহান্নামে যাবে না। আমি বলিলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহ তাআলা কি বলেননিঃ

وَإِنْ مِنْكُمْ إِلاَّ وَارِدُهَا كَانَ عَلَى رَبِّكَ حَتْمًا مَقْضِيًّا

“এবং তোমাদের প্রত্যেকেই তা অতিক্রম করিবে, এটা তোমার প্রভুর অনিবার্য সিদ্ধান্ত” [সূরা মরিয়মঃ ৭১]?

নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ তুমি কি শোননি যে, আল্লাহ বলিয়াছেনঃ

ثُمَّ نُنَجِّي الَّذِينَ اتَّقَوْا وَنَذَرُ الظَّالِمِينَ فِيهَا جِثِيًّا

“পরে আমি মোত্তাকীদের উদ্ধার করবো এবং যালেমদের সেথায় নতজানু অবস্থায় রেখে দিবো” [সূরা মরিয়মঃ ৭২]।{৩৬১৩}

তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহিহ।{৩৬১৩} {হাদিসটি ঈমাম ইবনি মাজাহ এককভাবে বর্ণনা করেছেন। সহিহ আল-জামি ২৪৮২।} কিয়ামতের পরে কি হবে হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৩১/৩৪. অধ্যায়ঃ মু হাম্মাদ [সাঃআঃ] -এর উম্মাতের বৈশিষ্ট্য

৪২৮২. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ কিয়ামতের দিন তারা [আমার উম্মাত] শুভ্র হস্তপদ ও উজ্জ্বল চেহারায় আমার নিকট দিয়ে অতিক্রম করিবে। এটা হইবে আমার উম্মাতের নিদর্শন, অন্য কোন উম্মাতের নয়।{৩৬১৪}

তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহিহ।{৩৬১৪} {মুসলিম ২৪৭, আহমাদ ৮২০৮, ৮৫২৪, ৯০৩৭, ১০৩৯৯।} কিয়ামতের পরে কি হবে হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪২৮৩. আবদুল্লাহ বিন মাসউদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

আমরা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর সাথে একটি তাঁবুর মধ্যে ছিলাম। তিনি বলেনঃ তোমরা কি এ কথায় সন্তুষ্ট নও যে, তোমরা জান্নাতীদের সংখ্যার এক-চতুর্থাংশ হইবে? আমরা বলিলাম, হাঁ। তিনি আবার বলেনঃ তোমরা কি এ কথায় সন্তুষ্ট নও যে, তোমরা জান্নাতীদের সংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ হইবে? আমরা বলিলাম, হাঁ। তিনি বলেনঃ জান্নাতীদের অর্ধেক হইবে তোমরা। এজন্য যে, জান্নাতে কেবল মুসলিম ব্যক্তিই প্রবেশ করিবে। তোমরা মুশরিকদের তুলনায় কালো ষাঁড়ের চামড়ায় সাদা লোম সদৃশ অথবা লাল ষাঁড়ের চামড়ায় কালো লোম সদৃশ।{৩৬১৫}

তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহিহ।{৩৬১৫} {সহীহুল বুখারী ৬৫২৮, মুসলিম ২২১, তিরমিজি ২৫৪৭, আহমাদ ৩৬৫৩। রাওদুন নাদীর ৬০৮, ১৮৯, সহিহাহ ৮৪৯।} কিয়ামতের পরে কি হবে হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪২৮৪. আবু সাঈদ [রাদি.] , হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ [কিয়ামতের দিন] একজন নাবী আসবেন, তাহাঁর সাথে থাকিবে একজন মাত্র অনুসারী। আবার কোন নাবীর সাথে থাকিবে দুজন অনুসারী। আবার কোন নাবীর সাথে থাকিবে তিনজন বা তার কম-বেশী অনুসারী। তাঁকে বলা হইবে, তুমি কি তোমার জাতির নিকট আল্লাহর বাণী পৌঁছিয়েছিলে? তিনি বলবেনঃ হাঁ। তার জাতিকে ডাকা হইবে এবং বলা হইবে, তিনি কি তোমাদের নিকট আল্লাহর বাণী পৌঁছিয়েছিলেন? তারা বলবে, না। তাঁকে বলা হইবে, তোমার সাক্ষী কারা? তিনি বলবেনঃ মুহাম্মাদ [সাঃআঃ] ও তাহাঁর উম্মাত। তখন মুহাম্মাদ [সাঃআঃ] -এর উম্মাতকে ডাকা হইবে এবং জিজ্ঞেস করা হইবে, নাবী কি [তাহাঁর উম্মাতের নিকট আল্লাহর বাণী] পৌঁছিয়েছিলেন? তারা বলবে, হাঁ। তাহাদের আবার জিজ্ঞেস করা হইবে, তোমরা তা জানলে কিভাবে? তারা বলবে, আমাদের নাবী [সাঃআঃ] আমাদের অবহিত করেছিলেন যে, নিশ্চয় রাসূলগণ আল্লাহর বাণী পৌঁছে দিয়েছেন। আমরা তাহাঁর কথা সত্য বলে স্বীকার করেছি। তোমাদের জন্য এ কথার প্রমাণ হলো মহান আল্লাহর বাণী

وَكَذَلِكَ جَعَلْنَاكُمْ أُمَّةً وَسَطًا لِتَكُونُوا شُهَدَاءَ عَلَى النَّاسِ وَيَكُونَ الرَّسُولُ عَلَيْكُمْ شَهِيدًا

“এভাবে আমি তোমাদেরকে এক ন্যায়নিষ্ঠ জাতিরূপে প্রতিষ্ঠিত করেছি, যাতে তোমরা মানবজাতির জন্য সাক্ষীস্বরূপ এবং রাসূল তোমাদের সাক্ষীস্বরূপ হইতে পারে।” [সূরা বাকারাদি. ১৪৩]।{৩৬১৬}

তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহিহ।{৩৬১৬} {সহীহুল বুখারী ৩৩৩৯, তিরমিজি ২৯৬১, আহমাদ ১০৮৭৮। সহিহাহ ২৪৪৮।} কিয়ামতের পরে কি হবে হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪২৮৫. রিফাআহ আল-জুহানী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

আমরা [সফর থেকে] রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর সাথে ফিরে এলে তিনি বলেনঃ সেই মহান সত্তার শপথ, যাঁর হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ! এমন কোন বান্দা নেই যে ঈমান আনার পর তার উপর অবিচল থেকেও জান্নাতের দিকে পরিচালিত হইবে না। আমি আশা করি যে, তোমরা ও তোমাদের সৎ কর্মপরায়ণ সন্তানেরা জান্নাতে নিজ নিজ স্থানে না পৌঁছানো পর্যন্ত অন্য লোকেরা জান্নাতে প্রবেশ করিতে পারবে না। আমার মহান প্রভু আমাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, তিনি আমার উম্মাতের সত্তর হাজার লোককে বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।{৩৬১৭}

তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহিহ।{৩৬১৭} {আহমাদ ১৫৭৮২। সহিহাহ ২৪০৫। কিয়ামতের পরে কি হবে হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪২৮৬. আবু উমামাহ আল-বাহিলী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে বলিতে শুনেছিঃ আমার মহান প্রতিপালক আমাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, তিনি আমার উম্মাতের সত্তর হাজার লোককে বিনা হিসাবে জান্নাতে দাখিল করবেন এবং তাহাদের কোনরূপ শাস্তিও হইবেনা। প্রতি হাজারের সাথে থাকিবে আরও সত্তর হাজার করে এবং আরো থাকিবে আমার মহান প্রতিপালকের তিন মুঠো পরিমাণ।{৩৬১৮}

তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহিহ।{৩৬১৮} {তিরমিজি ২৪৩৭। সহিহাহ ২১৭৯। কিয়ামতের পরে কি হবে হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪২৮৭. মুআবিয়াহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ কিয়ামতের দিন আমার উম্মাত সত্তর সংখ্যা পূর্ণ করিবে। আমরা হবো এর সর্বশেষ ও সর্বোত্তম উম্মাত।{৩৬১৯}

তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ হাসান. {৩৬১৯} {তিরমিজি ৩০০১, আহমাদ ১৯৫০৯, ১৯৫২০, ১৯৫৪০ দারিমী ২৭৬০। মিশকাত ৬২৮৫। কিয়ামতের পরে কি হবে হাদিস এর তাহকিকঃ হাসান হাদিস

৪২৮৮. মুআবিয়াহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে বলিতে শুনেছিঃ নিশ্চয় তোমরা উম্মাতের সংখ্যা সত্তরে পূর্ণ করেছো। এদের মধ্যে তোমরাই আল্লাহর নিকট অধিক উত্তম ও মর্যাদাবান উম্মাত।{৩৬২০}

তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ হাসান।{৩৬২০} {তিরমিজি ৩০০১, আহমাদ ১৯৫০৯, ১৯৫২০, ১৯৫৪০, দারিমী ২৭৬০।হাদিস এর তাহকিকঃ হাসান হাদিস

৪২৮৯. বুরায়দাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ জান্নাতীদের একশত বিশটি কাতার হইবে। তন্মধ্যে এই উম্মাতের হইবে আশিটি কাতার এবং অন্যান্য উম্মাতের হইবে চল্লিশটি।{৩৬২১}

তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহিহ।{৩৬২১} {তিরপমিযী ২৫৪৬, আহমাদ ২২৪৩১, ২২৪৯৩, ২২৫৫২, দারিমী ২৮৩৫। মিশকাত ৫৬৪৪, রাওদুন নাদীর ৬০৮।} কিয়ামতের পরে কি হবে হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪২৯০. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ আমরা হলাম সর্বশেষ উম্মাত এবং সর্বপ্রথম আমাদের হিসাব গ্রহণ করা হইবে। বলা হইবে, উম্মী [নিরক্ষর] নাবীর উম্মাত এবং তাহাদের নাবী কোথায়? সুতরাং আমরা হলাম সর্বশেষ উম্মাত [দুনিয়াতে আগমনের দিক থেকে] এবং সর্বপ্রথম উম্মাত [জান্নাতে প্রবেশের দিক থেকে]।{৩৬২২}

তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহিহ।{৩৬২২} {হাদিসটি ইবনি মাজাহ এককভাবে বর্ণনা করেছেন। সহিহাহ ২৩৭৪।} কিয়ামতের পরে কি হবে হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪২৯১. আবু মূসা আল-আশআরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ আল্লাহ কিয়ামতের দিন সমগ্র সৃষ্টিকে একত্র করার পর মুহাম্মাদ [সাঃআঃ] এর উম্মাতকে সিজদারত হওয়ার নির্দেশ দেয়া হইবে। তারা দীর্ঘক্ষণ তাহাঁর উদ্দেশে সিজদারত থাকিবে। অতঃপর বলা হইবে, তোমরা মাথা উঠাও। আমি তোমাদের সমসংখ্যককে [কাফেরকে] জাহান্নামের ফিদয়া স্বরূপ দিয়েছি।{৩৬২৩}

তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ খুবই দুর্বল।{৩৬২৩}{মুসলিম ২৭৬৭, আহমাদ ১৯১০৩, ১৯১৬১। দঈফাহ ২৫৪৯। কিয়ামতের পরে কি হবে হাদিস এর তাহকিকঃ খুবই দুর্বল

৪২৯২আনাস বিন মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ এই উম্মাত হলো অনুগ্রহপ্রাপ্ত। এদের দ্বারাই এদের শাস্তি হইবে [পারষ্পরিক হানাহানির মাধ্যমে]। কিয়ামতের দিন প্রত্যেক মুসলমানকে একজন করে মুশরিক সোপর্দ করার হইবে এবং বলা হইবে, জাহান্নাম থেকে বাঁচার জন্য এই হলো তোমার ফিদ্‌য়া।{৩৬২৪}

তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহিহ।৩৬২৪}{হাদিসটি ঈমাম ইবনি মাজাহ এককভাবে বর্ণনা করেছেন। সহিহাহ ৯৫৯, ১৩৮১। কিয়ামতের পরে কি হবে হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৩১/৩৫. অধ্যায়ঃ কিয়ামতের দিন আল্লাহর রহমাত লাভের আশা করা যায়

৪২৯৩. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ আল্লাহ তাআলার একশত রহমাত রয়েছে। তন্মধ্যে একটি রহমাত তিনি সারা সৃষ্টির মধ্যে বণ্টন করেছেন। এই একটি রহমাতের কারণেই তারা একে অপরের প্রতি দয়াপরবশ হয়, পরষ্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়। এর দ্বারা জীব-জন্তু তার বাচ্চার প্রতি মমতায় উদ্বুদ্ধ হয়। তিনি অবশিষ্ট নিরানব্বইটি রহমত কিয়ামতের দিন তাহাঁর বান্দাদের প্রতি অনুকম্পা প্রদর্শনের জন্য রেখেছে।{৩৬২৫}

তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহিহ।{৩৬২৫} {সহীহুল বুখারী ৬০০০, ৬৪৩৯, মুসলিম ২৭৫২, তিরমিজি ৩৫৪১, আবু দাউদ ৩৪৮৪, আহমাদ ৮২১০, ৯৩২৬, ৯৯১০, ১০২৯২, ১০৪২৯, দারিমী ২৭৮৫। সহিহাহ ১৬৩৪।} কিয়ামতের পরে কি হবে হাদিস হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪২৯৪. আবু সাঈদ আল-খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ মহান আল্লাহ আসমানসমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন এক শত রহমাত সৃষ্টি করেছেন। তার মধ্যে থেকে তিনি মাত্র একটি রহমাত পৃথিবীতে বিতরণ করেছেন। এর দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয়ে মা তার সন্তানের প্রতি অনুকম্পা প্রদর্শন করে এবং জীবজন্তু, পক্ষীকুল ইত্যাদিও পরষ্পরের প্রতি সহানুভুতি প্রদর্শন করে। অবশিষ্ট নিরানব্বইটি রহমাত তিনি কিয়ামতের দিনের জন্য রেখে দিয়েছেন। যেদিন কিয়ামত হইবে সেদিন তিনি এটি দ্বারা একশত রহমাত পূর্ণ করবেন।{৩৬২৬}

তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহিহ।{৩৬২৬} {হাদিসটি ঈমাম ইবনি মাজাহ এককভাবে বর্ণনা করেছেন।} কিয়ামতের পরে কি হবে হাদিস হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪২৯৫. আবু হুরাইরা [রাদি.] , হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ আল্লাহ যখন সৃষ্টিকুলকে সৃষ্টি করেছেন তখন নিজ হাতে নিজের ব্যাপারে লিখেছেনঃ “আমার রহমাত আমার ক্রোধের উপর বিজয়ী থাকিবে”।{৩৬২৭}

তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহিহ।{৩৬২৭} {সহীহুল বুখারী ৪১৯৪, মুসলিম ২৭৫১, তিরমিজি ৩৫৪৩, আহমাদ ৭৪৪৮, ৭৪৭৬, ২৭৩৪৩, ৮৪৮৫, ৮৭৩৫, ৮৯১৪, ৯৩১৪। সহিহাহ ১৬২৯। কিয়ামতের পরে কি হবে হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪২৯৬. মুআয বিন জাবাল [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমার নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন। আমি তখন একটি গাধার পিঠে আরোহিত ছিলাম। তিনি বলেনঃ হে মুআয! তুমি কি জানো, বান্দার উপর আল্লাহর কী অধিকার রয়েছে এবং আল্লাহর উপর বান্দার কী অধিকার রয়েছে? আমি বলিলাম, আল্লাহ ও তাহাঁর রাসূলই অধিক অবগত। তিনি বলেনঃ বান্দার উপর আল্লাহর অধিকার এই যে, বান্দাহ তাহাঁরই ইবাদাত করিবে এবং তাহাঁর সাথে অন্য কিছু শরীক করিবে না। আর আল্লাহর উপর বান্দার অধিকার এই যে, তারা [বান্দা] তদনুযায়ী আচরণ করলে তিনি তাহাদেরকে শাস্তি দিবেন না।{৩৬২৮}

তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহিহ।{৩৬২৮} {সহীহুল বুখারী ২৮৫৬, মুসলিম ৩০, তিরমিজি ২৬৪৩, আবু দাউদ ২৫৫৯, আহমাদ ১৩৩৩১, ২১৪৮৬, ২১৪৯৯, ২১৫৩৪, ২১৫৫৩, ২১৫৯১।} কিয়ামতের পরে কি হবে হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪২৯৭. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমরা কোন এক জিহাদে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাথে ছিলাম। তিনি এক সম্প্রদায়ের নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি জিজ্ঞেস করিলেন, কারা এই সম্প্রদায়? তারা বলেন, আমরা মুসলমান। এক স্ত্রীলোক তার চুলার আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে উঠলে সে তার পুত্রকে সরিয়ে নিল। সে নাবী [সাঃআঃ] -এর নিকট এসে বললো, আপনি কি আল্লাহর রাসূল? তিনি বলেন, হাঁ। সে বললো, আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য উৎসর্গিত হোক। আল্লাহ তাআলা কি দয়ালুদের মধ্যে সর্বাধিক দয়ালু নন? তিনি বলেন, অবশ্যই। স্ত্রীলোকটি বললো, সন্তানের প্রতি মা যতোটা দয়াপরবশ, আল্লাহ কি তাহাঁর বান্দাদের প্রতি তার চেয়ে অধিক দয়াপরবশ নন? তিনি বলেন, অবশ্যই। সে বললো, নিশ্চয়ই মা তার সন্তানকে আগুনে নিক্ষেপ করে না। একথায় রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] মাথা অবনত করে কেঁদে দিলেন, অতঃপর মাথা তুলে তাহাকে বলেন, যে ব্যক্তি অবাধ্য, উদ্ধত, বিদ্রোহী, যে আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে এবং “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” বলিতে অস্বীকার করে, সে ব্যতীত আল্লাহ তার অপরাপর বান্দাদের শাস্তি দিবেন না।{৩৬২৯}

তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ বানোয়াট।৩৬২৯} [হাদিসটি ঈমাম ইবনি মাজাহ এককভাবে বর্ণনা করেছেন। মিশকাত ২৩৭৮, দঈফাহ ৩১০৯, দঈফ আল-জামী ১৬৭৬।উক্ত হাদিসের রাবী ১. ইবরাহীম বিন আয়ান সম্পর্কে আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় দূর্বল। আবু হাতিম বিন হিব্বান বলেন, তিনি অপরিচিত। ইবনি হাজার আল-আসকালানী বলেন, তিনি দূর্বল। [তাহযীবুল কামালঃরাবী নং ১৫৪, ২/৫৩ নং পৃষ্ঠা] ২. ইসমাঈল বিন ইয়াহইয়া আশ-শায়বানী সম্পর্কে আবু জাফার আল-উকায়লী বলেন, তার হাদিসের অনুসরণ করা যাবে না। ইবনি হাজার আল-আসকালানী বলেন, তার মিথ্যা বলার ব্যাপারে অভিযোগ আছে। ইয়াজিদ বিন হারুন আল-আয়লী বলেন, তিনি মিথ্যুক। [তাহযীবুল কামালঃরাবী নং ৪৯৩, ৩/২১৩ নং পৃষ্ঠা] ৩. আবদুল্লাহ বিন আমর বিন হাফস সম্পর্কে আবু আহমাদ আল-হাকীম বলেন, তিনি দূর্বল, তিনি নির্ভরযোগ্য নয়। আবু বাকর আল-বায়হাকী বলেন, তার হাদিস দ্বারা দলীল গ্রহনযোগ্য নয়। আহমাদ বিন শুয়ায়ব আন-নাসায়ী বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় দূর্বল। ইবনি হাজার আল-আসকালানী ও আলী ইবনিল মাদীনী বলেন, তিনি দূর্বল। ইয়াহইয়া বিন সাঈদ বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় দূর্বল ছিলেন। [তাহযীবুল কামালঃ রাবী নং ৩৪৪০, ১৫/৩২৭ নং পৃষ্ঠা] । কিয়ামতের পরে কি হবে হাদিস এর তাহকিকঃ জাল হাদিস

৪২৯৮. আবু হুরাইরা [রাদি.] , হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ দুর্ভাগা হতভাগা ব্যতীত কেউ জাহান্নামে যাবে না। জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রাসূল! হতভাগা কে? তিনি বলেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর আনুগত্যমূলক কাজ করেনি এবং তাহাঁর অবাধ্যচারিতা ত্যাগ করেনি।{৩৬৩০}

তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ দুর্বল।{৩৬৩০} [আহমাদ ৯৩৮৮। মিশকাত ৫৬৯৩, দঈফ আল-জামী ৬৩৪২। কিয়ামতের পরে কি হবে হাদিস এর তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৪২৯৯ আনাস বিন মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এই আয়াত পাঠ বা তিলাওয়াত করিলেন

هُوَ أَهْلُ التَّقْوَى وَأَهْلُ الْمَغْفِرَةِ

“একমাত্র তিনিই ভয়ের যোগ্য এবং তিনিই ক্ষমা করার অধিকারী” [সূরা মুদ্দাসসিরঃ ৫৬] ,

অতঃপর বলেনঃ মহান আল্লাহ বলিয়াছেন, আমিই উপযুক্ত যে, কেবল আমাকেই ভয় করিতে হইবে। অতএব আমার সাথে যেন অন্য ইলাহ যোগ না করা হয়। যে ব্যক্তি আমার সাথে অন্য কোন ইলাহ যোগ করা পরিহার করিবে, আমি তাহাকে ক্ষমা করার অধিকারী।

{উপরোক্ত হাদিসে মোট ২টি সনদের ১টি বর্ণিত হয়েছে, অপর সনদটি হলোঃ}

৮/৪২৯৯ [১] . আনাস [রাদি.] , “একমাত্র তিনিই ভয়ের যোগ্য এবং তিনিই ক্ষমা করার অধিকারী” [সূরা মুদ্দাসসির] শীর্ষক আয়াত সম্পর্কে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ তোমাদের প্রতিপালক বলিয়াছেন, আমিই উপযুক্ত যে, আমাকেই ভয় করিতে হইবে, আমার সাথে অন্যকে শরীক করা যাবে না। আর যে ব্যক্তি আমার সাথে শরীক করা পরিহার করেছে আমিই তাহাকে ক্ষমা করার অধিকারী। {৩৬৩১}

তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ দূর্বল।{৩৬৩১} [তিরমিজি ৩৩২৮, আহমাদ ১২০৩৪, দারিমী ২৭২৪। মিশকাত ২৩৫১।উক্ত হাদিসের রাবী ১. যায়দ ইবনিল হুবাব সম্পর্কে আহমাদ বিন হাম্বাল বলেন, তিনি সত্যবাদী কিন্তু হাদিস বর্ণনায় অধিক ভুল করেন। আলী ইবনিল মাদীনী ও উসমান বিন আবু শায়বাহ তাহাকে সিকাহ বলিয়াছেন। ইবনি হাজার আল-আসকালানী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে সাওরীর হাদিস বর্ণনায় ভুল করেছেন। [তাহযীবুল কামালঃরাবী নং ২০৯৫, ১০/৪০ নং পৃষ্ঠা] ২. সুহায়ল বিন আবদুল্লাহ সম্পর্কে আবু জাফার আল-উকায়লী বলেন, তার হাদিসের অনুসরণ করা যাবে না। আহমাদ বিন শুয়ায়ব আন-নাসায়ী বলেন, তিনি নির্ভরযোগ্য নয়। ইবনি হাজার আল-আসকালানী বলেন, তিনি দূর্বল, তার হাদিসের অনুসরণ করা যাবে না। ঈমাম বুখারী বলেন, তার হাদিসের অনুসরণ করা যাবে না, তার সমালোচনা রয়েছে। [তাহযীবুল কামালঃরাবী নং ২৬২৬, ১২/২১৭ নং পৃষ্ঠা] কিয়ামতের পরে কি হবে হাদিস এর তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৪৩০০. আবদুল্লাহ বিন আমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ কিয়ামতের দিন সমস্ত সৃষ্টির সামনে আমার এক উম্মাতকে ডাকা হইবে, অতঃপর তার সামনে নিরানব্বইটি দফতর পেশ করা হইবে। প্রতিটি দফতর দৃষ্টিসীমা পর্যন্ত দীর্ঘ হইবে। মহান আল্লাহ বলবেন, তুমি কি এর কোন কিছু অস্বীকার করো? সে বলবে, না, হে আমার প্রভু! আল্লাহ বলবেন, তোমার উপর আমলনামা লেখক আমার ফেরেশতাগণ কি জুলুম করেছে? অতঃপর তিনি জিজ্ঞেস করবেন, তোমার নিকট কি কোন নেকী আছে? সে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়বে এবং বলবে, না। তখন আল্লাহ বলবেন, হাঁ, আমার নিকট তোমার কিছু নেকী জমা আছে। আজ তোমার উপর জুলুম করা হইবে না। অতঃপর তার সামনে একটি চিরকুট তুলে ধরা হইবে, যাতে লিপিবদ্ধ থাকবেঃ

أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ

“আমি সাক্ষ্য দেই যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ [সাঃআঃ] তাহাঁর বান্দাহ ও রাসূল।”

তখন সে বলবে, হে আমার রব! এতো বৃহৎ দফতরসমূহের তুলনায় এই ক্ষুদ্র চিরকুট আর কি উপকারে আসবে! তিনি বলবেন, তোমার প্রতি অন্যায় করা হইবে না। অতঃপর সেই বৃহদাকার দফতরসমূহ এক পাল্লায় এবং সেই ক্ষুদ্র চিরকূটটি আরেক পাল্লায় রাখা হইবে। এতে বৃহদাকার দফতরসমূহের পাল্লা হালকা হয়ে উপরে উঠে যাবে এবং ক্ষুদ্র চিরকুটের পাল্লা ভারী হয়ে যাবে। মুহাম্মাদ বিন ইয়াহইয়া বলেন, বিতাকা [চিরকুট] অর্থ রুক্‌আ [টুকরা] , মিসরবাসী রুক্‌আকে বিতাকা বলে।{৩৬৩২}

তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃসহিহ।{৩৬৩২} [তিরমিজি ২৬৩৯। মিশকাত ৫৫৫৯, সহিহাহ ১৩৫, আত-তালীকুর রাগীব ২/২৪০, ২৪১।] কিয়ামতের পরে কি হবে হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৩১/৩৬. অধ্যায়ঃ হাওদ কাওসারের আলোচনা

৪৩০১. আবু সাঈদ আল-খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ আমার জন্য বায়তুল্লাহ থেকে বায়তুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত বিস্তৃত একটি ঝর্ণা আছে। এর পানি দুধের ন্যায় সাদা এবং এর পানপাত্র তারকাপুঞ্জের ন্যায় অসংখ্য। কিয়ামতের দিন অন্য সকল নাবী-রাসূলের অনুসারীর চেয়ে আমার অনুসারীর সংখ্যা হইবে অনেক বেশী।{৩৬৩৩}

তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহিহ।{৩৬৩৩} [হাদিসটি ঈমাম ইবনি মাজাহ এককভাবে বর্ণনা করেছেন। আয-যিলাল ৭২৩।] কিয়ামতের পরে কি হবে হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪৩০২. হুযায়ফাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ আমার হাওদে কাওসারের পরিধি আয়লা থেকে এডেন পর্যন্ত বিস্তৃত। সেই মহান সত্তার শপথ, যাঁর হাতে আমার প্রাণ! এই হাওযের পানপাত্রের সংখ্যা হইবে নক্ষত্ররাজির চেয়েও অধিক। এর পানি হইবে দুধের চেয়েও সাদা এবং মধুর চেয়েও মিষ্টি। সেই মহান সত্তার শপথ যাঁর হাতে আমার প্রাণ! নিশ্চয় আমি এই হাওযের তীর থেকে একদল লোককে তাড়িয়ে দিবো, যেমন কোন লোক অপরিচিত উটকে তার কূপ থেকে তাড়িয়ে দেয়। জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি আমাদের চিনতে পারবেন? তিনি বলেন, হাঁ, তোমরা উযু করার কারণে তোমাদের উযুর অঙ্গসমূহ উজ্জ্বল অবস্থায় আমার নিকট উপস্থিত হইবে। তোমাদের ব্যতীত অন্য কারো এরূপ হইবে না।{৩৬৩৪}

তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহিহ।{৩৬৩৪} [মুসলিম ২৪৮, আহমাদ ২২৮৩৫।] কিয়ামতের পরে কি হবে হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪৩০৩. সাওবান [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

[আবু সাল্লাম] বলেন, উমার বিন আবদুল আযীয [রাদি.] আমাকে ডেকে পাঠান। আমি একটি খচ্চরের পিঠে সাওয়ার হয়ে তার নিকট আসি। আমি তার নিকট পৌঁছলে তিনি বলেন, হে আবু সাল্লাম! আমি আপনার বাহনের ব্যাপারে আপনাকে কষ্ট দিয়েছি। তিনি বলেন, হাঁ, আল্লাহর শপথ! হে আমিরুল মুমিনীন। তিনি বলেন, আল্লাহর শপথ! আপনাকে কষ্ট দেওয়ার ইচ্ছা আমার ছিলো না। আমি জানতে পেরেছি যে, আপনি হাওয কাওসার সম্পর্কিত একটি হাদিস রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর মুক্তদাস সাওবান [রাদি.] -র সূত্রে বর্ণনা করেন। আমি সেই হাদিসখানি আপনার মুখে শুনতে আগ্রহী। আমি বলিলাম, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর মুক্তদাস সাওবান [রাদি.] আমার নিকট বর্ণনা করেছেন যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ আমার হাওয এডেন থেকে আয়লা পর্যন্ত বিস্তৃত হইবে। এর পানি দুধের চেয়েও সাদা এবং মধুর চেয়েও মিষ্টি। এর পাত্র সংখ্যা আকাশের তারকারাজির সমান। যে কেউ এই হাওয থেকে এক ঢোক পানি পান করিতে পারবে, সে আর কখনো তৃষ্ণার্ত হইবে না। দরিদ্র মুহাজিরগণ সর্বপ্রথম এর পানি পানের সৌভাগ্য লাভ করিবে, যাদের মাথার চুল উস্কখুষ্ক, পোষাক ধুলি মলিন, যারা ধনবান পরিবারের মেয়েদের বিবাহ করিতে পারেনি এবং যাদের আপ্যায়নের জন্য ঘরের দরজাসমূহ খোলা হয়নি। রাবী বলেন, [এ হাদিস শুনে] উমার [রাদি.] কেঁদে দিলেন, এমনকি তার দাড়ি অশ্রুসিক্ত হয়ে গেলো। তিনি বলেন, আমি তো ধনীর দুলালী বিবাহ করেছি এবং আমার জন্য সব দরজাই তো উন্মুক্ত। এখন থেকে আমি আমার পরিধেয় বস্ত্র ময়লাযুক্ত না হওয়া পর্যন্ত ধৌত করব না এবং মাথার চুল উষ্কখুষ্ক না হওয়া পর্যন্ত তৈল ব্যাবহার করবো না।{৩৬৩৫}

তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহিহ।{৩৬৩৫} [তিরমিজি ২৪৪৪। সহিহাহ ১০৮২, আস-সুন্নাহ লি ইবনি আবু আসিম ৭০৭, ৭০৮, মিশকাত ৫৫৯২।] কিয়ামতের পরে কি হবে হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪৩০৪. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ আমার হাওদের দু তীরের ব্যবধান [ইয়ামানের রাজধানী] সানআ ও মদীনার মধ্যকার দূরত্বের সমান অথবা মদীনা ও আম্মানের মধ্যকার দূরত্বের সমান।{৩৬৩৬}

তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহিহ।{৩৬৩৬} [সহীহুল বুখারী ৬৫৮০, মুসলিম ২৩০৩, আহমাদ ১১৯৫৪, ১২৮৪৯, ১২৮৮১, ১২৯৯২। আয-যিলাল ৭১৪।] কিয়ামতের পরে কি হবে হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪৩০৫. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

আল্লাহর নাবী [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ সেখানে [হাওয কাওসারের তীরে] আকাশের নক্ষত্রপুঞ্জের সমান সংখ্যক স্বর্ণ ও রৌপ্য নির্মিত পানপাত্রসমূহ দৃশ্যমান থাকিবে।{৩৬৩৭}

তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহিহ।{৩৬৩৭} [মুসলিম ২৩০৩, ২৩০৪।] কিয়ামতের পরে কি হবে হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪৩০৬. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] কবরস্থানে এসে কবরবাসীদের সালাম দিলেন এবং বলিলেন,

 السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ دَارَ قَوْمٍ مُؤْمِنِينَ وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللَّهُ تَعَالَى بِكُمْ لاَحِقُونَ

“আসসালামু আলায়কুম দারা কাওমীম মুমিনীন ওয়াইন্না ইনশাআল্লাহ তাআলা বিকুম লাহিকূন” [ঈমানদার কবরবাসীরা! তোমাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক। অচিরেই আল্লাহর মর্জি আমরা তোমাদের সাথে মিলিত হবো]।

অতঃপর তিনি বলেনঃ নিশ্চয় আমাদের আকাঙ্ক্ষা এই যে, আমরা আমাদের ভাইদের দেখিতে পাবো। তারা বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা কি আপনার ভাই নই? তিনি বলেনঃ তোমরা আমার সাহাবী। আর যারা আমাদের পরে আসবে তারা আমার ভাই। আমি তোমাদের আগেই হাওযের নিকট উপস্থিত হবো। তারা জিজ্ঞেস করেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি এমন লোকদের আপনার উম্মাতরূপে কিভাবে চিনবেন, যারা এখনো জন্মলাভ করেনি? তিনি বলেনঃ তোমরা কি দেখো না, যদি কোন ব্যক্তির একটি সাদা পা ও সাদা পেশানীযুক্ত ঘোড়া অপর ব্যক্তির কালো ঘোড়ার পালে মিশে যায়, তবে সে কি তার ঘোড়াটি চিনতে পারবে না? তারা বলেন, হাঁ, নিশ্চয় চিনতে পারবে। তিনি বলেনঃ তারা কিয়ামতের দিন উযুর বদৌলতে সাদা পেশানী ও সাদা হাত-পা বিশিষ্ট অবস্থায় আসবে। তিনি আরো বলেনঃ আমি তোমাদের আগেই হাওয কাওছারে উপস্থিত হবো। একদল লোক আমার হাওয থেকে বিতাড়িত হইবে, যেমন পথভোলা উট বিতাড়িত হয়। আমি তাহাদেরকে ডেকে বলবোঃ তোমরা এদিকে এসো তোমরা এদিকে এসো। তখন বলা হইবে, এসব লোক আপনার পর [দীনকে] পরিবর্তন করেছে এবং অবিরত তারা তাহাদের পশ্চাতে ফিরে গেছে। তখন আমি বলবোঃ সাবধান! দূর হও দূর হও।{৩৬৩৮}

তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহিহ।{৩৬৩৮} [আহমাদ ৯০৩৭। আল-আহকাম ১৯০, ইরওয়া ৭৭৬। কিয়ামতের পরে কি হবে হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৩১/৩৭. অধ্যায়ঃ শাফাআতের আলোচনা

৪৩০৭. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ প্রত্যেক নাবীর জন্য একটি করে দুআ আছে যা কবুল করা হয়। আর প্রত্যেক নাবী তাহাঁর দুআর ব্যাপারে তাড়াহুড়া করেছেন আর আমি আমার দুআ আমার উম্মাতের শাফাআতের জন্য জমা রেখেছি। অতএব আমার উম্মাতের মধ্যে যারা আল্লাহর সাথে শিরক না করে মারা যাবে তারা আমার শাফাআতপ্রাপ্ত হইবে।{৩৬৩৯}

তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহিহ।{৩৬৩৯} {সহীহুল বুখারী ৬৩০৪, মুসলিম ১৯৮, তিরমিজি ৩৬০২, আহমাদ ৭৬৫৭, ২৭৩৪৮, ৮৭৩৬, ৮৮৯৮, ৯০৪৮, ৯২২০, ৯২৬৮, ৯৯৩৮, মুওয়াত্তা মালিক ৪৯২, দারিমী ২৮০৫। কিয়ামতের পরে কি হবে হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪৩০৮. আবু সাঈদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ আমি আদম সন্তানদের সরদার, তাতে গর্বের কিছু নেই। কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম আমার জন্য জমীন বিদীর্ণ হইবে [কবর থেকে সর্বপ্রথম আমিই উঠবো] , এতে গর্বের কিছু নাই। আমিই হবো সর্বপ্রথম শাফাআতকারী এবং সর্বাগ্রে আমার শাফাআতকবুল করা হইবে। এতেও কোন গর্ব নেই। কিয়ামতের দিন আল্লাহর প্রশংসার পতাকা আমার হাতে থাকিবে। এতেও গর্বের কিছু নেই।{৩৬৪০}

তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহিহ।{৩৬৪০} { তিরমিজি ৩১৪৮, ৩৬১৫। তাখরীজুত তাহাবীয়াহ ১২৭, সহিহাহ ১৫৭১। কিয়ামতের পরে কি হবে হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪৩০৯. আবু সাঈদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ আহা দোযখবাসী, যারা জাহান্নামবাসী তারা সেখানে মরবেও না, বাঁচবেও না। তবে কতক লোক তাহাদের ভুলত্রুটি ও গুনাহের কারণে জাহান্নামে শাস্তি ভোগ করিবে। আগুন তাহাদের দগ্ধীভূত করিবে, ফলে তারা কয়লাবৎ হয়ে যাবে। তখন তাহাদের শাফাআতের অনুমতি দেয়া হইবে। তাহাদের দলে দলে জাহান্নাম থেকে বের করে আনা হইবে এবং জান্নাতের ঝরণার নিকট ছড়িয়ে রাখা হইবে। তখন বলা হইবে, হে জান্নাতবাসীরা! তোমরা তাহাদের উপর পানি ছিটিয়ে দাও। ফলে তারা প্লাবনের পর উর্বর মাটিতে চারাগাছ গজানোর মত গজিয়ে উঠবে। রাবী বলেন, উপস্থিত এক ব্যক্তি বললো, মনে হয় রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যেন বন-বাদাড়ে বসবাস করিতেন।{৩৬৪১}

তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহিহ।{৩৬৪১} {মুসলিম ১৮৪, ১৮৫। সহিহাহ ১৫৫১। কিয়ামতের পরে কি হবে হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪৩১০. জাবির [রাদি.] , হইতে বর্ণীতঃ

আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে বলিতে শুনেছিঃ কিয়ামতের দিন আমার শাফাআত হইবে আমার উম্মাতের কবীরা গুনাহগারদের জন্যই।{৩৬৪২}

তাহকী আলবানীঃ সহিহ।{৩৬৪১} {তিরমিজি ২৪৩৬। মিশকাত ৫৫৯৯, রাওদুন নাদীর ৪৫।হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪৩১১. আবু মূসা আল-আশআরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ আমাকে শাফাআত করার অথবা আমার উম্মাতের অর্ধেক জান্নাতী হওয়ার মধ্যে যে কোন একটি গ্রহণ করার অবকাশ দেয়া হয়েছিলো। আমি শাফাআতকে গ্রহণ করেছি। কেননা তা ব্যাপক বিস্তৃত এবং অধিক ফলপ্রসূ। তোমরা কি মনে করো যে, শাফাআত মুত্তাকীদের জন্য? না, বরং তা গুনাহগার, অপরাধে অভিযুক্ত এবং সত্য-মিথ্যার মধ্যে মিশ্রণকারীদের জন্য।{৩৬৪৩}

তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ “لأ نها …” বাক্যটি ব্যতীত সহিহ।{৩৬৪২} হাদিসটি ঈমাম ইবনি মাজাহ এককভাবে বর্ণনা করেছেন। দঈফাহ ৩৫৮৫, দঈফ আল-জামি ২৯৩২।উক্ত হাদিসের রাবী আবু বাদর সম্পর্কে আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, তিনি নির্ভরযোগ্য নয়, তার হাদিস দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়। আহমাদ বিন হাম্বল বলেন, আমি আশা করি তিনি সত্যবাদী। ইবনি হাজার আল-আসকালানী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে হাদিস বর্ণনায় সন্দেহ করেন। [তাহযীবুল কামাল ঃ রাবী নং ২৭০২, ১২/৩৮২ নং পৃষ্ঠা] কিয়ামতের পরে কি হবে হাদিস এর তাহকিকঃ অন্যান্য

৪৩১২. আনাস বিন মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ কিয়ামতের দিন ঈমানদার বান্দারা সমবেত হইবে। তখন তাহাদের অন্তরে ইলহাম করা হইবে এবং তারা বলবে, কেউ যদি আমাদের প্রভুর নিকট আমাদের জন্য শাফাআত করতো তাহলে তিনি আমাদেরকে এ অবস্থা থেকে শান্তি দিতে পারতেন। অতএব তারা আদাম [আঃ] এর নিকট এসে বলবে, আপনি আদম, মানবজাতির পিতা। আল্লাহ নিজ হাতে আপনাকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাহাঁর ফেরেশতাহাদের দ্বারা আপনাকে সিজদা করিয়েছেন। আপনি আমাদের এ অবস্থা থেকে নাজাতের জন্য আপনার প্রতিপালকের নিকট শাফাআত করুন। তিনি বলবেনঃ আমি তোমাদের এ কাজের উপযুক্ত নই। তিনি তাহাদের নিকট নিজের কৃত গুনাহের কথা উল্লেখ করে আক্ষেপ করবেন এবং এতে লজ্জিত হইবেন। বরং তোমরা নূহ আলাইহিস সালামের নিকট যাও। কেননা তিনি ছিলেন পৃথিবীবাসীর প্রতি আল্লাহর প্রেরিত প্রথম রাসূল। অতএব তারা তাহাঁর নিকট উপস্থিত হইবে। তিনি বলবেনঃ আমি তোমাদের এ কাজের উপযুক্ত নই। তিনি অজ্ঞাতে আল্লাহর নিকট যে নিবেদন করেছিলেন, তা স্মরণ করে লজ্জিত হইবেন। বরং তোমরা দয়াময় রহমানের প্রিয় বান্দা ইবরাহীম আলাইহিস সালামের নিকট যাও। অতএব তারা তাহাঁর নিকট আসলে তিনি বলবেনঃ আমি তোমাদের এ কাজের যোগ্য নই। বরং তোমরা মূসা আলাইহিস সালামের নিকট যাও। তিনি ছিলের আল্লাহর প্রিয় বান্দা, তাহাঁর সাথে আল্লাহ বাক্যালাপ করেছেন এবং তাঁকে তাওরাত কিতাব দান করেছেন। অতএব তারা তাহাঁর নিকট উপস্থিত হইবে। তিনি বলবেনঃ আমি তোমাদের এ কাজের যোগ্য নই। তিনি একটি অন্যায় হত্যাকাণ্ডের কথা স্মরণ করবেন। তোমরা বরং আল্লাহর বান্দা ও রাসূল, তাহাঁর বাক্য, তাহাঁর দেয়া রূহ ঈসা আলাইহিস সালামের নিকট যাও। অতএব লোকেরা তাহাঁর নিকট এসে উপস্থিত হইবে। তিনি বলবেনঃ আমি তোমাদের এ কাজের যোগ্য নই। বরং তোমরা মুহাম্মাদ [সাঃআঃ] -এর নিকট যাও, যাঁর পূর্বাপর সমস্ত গুনাহ আল্লাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন। নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ তখন তারা আমার নিকট আসবে এবং আমি রওয়ানা হবো। রাবী বলেন, হাসান [রাদি.] -এর সনদে এই শব্দাবলী বর্ণিত আছেঃ তিনি বলেন, আমি মুমিনদের দুটি সারির মাঝখান দিয়ে অগ্রসর হইতে থাকবো। কাতাদা [রাদি.] বলেনঃ তারপর রাবী আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীত হাদিসের শব্দাবলীতে বর্ণনা করেছেন। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ আমি আমার প্রভুর নিকট [শাফাআতের] অনুমতি প্রার্থনা করবো এবং আমাকে অনুমতি দেয়া হইবে। আমি তাঁকে দেখামাত্র সিজদায় লুটিয়ে পড়বো। আল্লাহ যতক্ষণ চাইবেন আমাকে সিজদাবনত অবস্থায় রাখবেন। অতঃপর নির্দেশ দেওয়া হইবে, হে মুহাম্মাদ! মাথা উঠাও, বলো, শোনা হইবে এবং চাও, দেয়া হইবে, শাফাআত করো, কবুল করা হইবে। অতএব তিনি যা আমাকে শিখিয়ে দিবেন সেই বাক্যে আমি তাহাঁর প্রশংসা করবো। অতঃপর আমি শাফাআত করবো। তবে আমার জন্য শাফাআতের একটি সীমা বেঁধে দেয়া হইবে। আল্লাহ শাফাআত প্রাপ্তদের জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। আমি পুনরায় আমার প্রভুর নিকট ফিরে আসবো এবং তাঁকে দেখামাত্র সিজদায় লুটিয়ে পড়বো। আল্লাহ যতক্ষণ চাইবেন আমাকে সিজদাবনত রাখবেন। অতঃপর আমাকে বলা হইবে, হে মুহাম্মাদ! মাথা উঠাও, বলো, শোনা হইবে; চাও, দেয়া হইবে; শাফাআত করো, কবুল করা হইবে। তিনি আমাকে যে বাক্য শিখিয়ে দিবেন, আমি সেই বাক্যে তাহাঁর প্রশংসা করবো, অতঃপর শাফাআত করবো। আমাকে একটি সীমা নির্দিষ্ট করে দেয়া হইবে। আল্লাহ শাফাআত প্রাপ্তদের জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। আমি তৃতীয় বারের মত ফিরে যাবো এবং আমার প্রভুকে দেখামাত্র সিজদায় পতিত হবো। আল্লাহ যতক্ষণ চাইবেন আমাকে সিজদাবনত রাখবেন। অতঃপর বলা হইবে, হে মুহাম্মাদ! মাথা উঠাও; বলো, শোনা হইবে; প্রার্থনা করো, কবুল করা হইবে; শাফাআত করো, মঞ্জুর করা হইবে। আমি আমার মাথা উঠাবো এবং তাহাঁর শিখানো বাক্যে তাহাঁর প্রশংসা করবো এবং তারপর আমি শাফাআত করবো এবং আমাকে একটা সীমা বেঁধে দেয়া হইবে। আল্লাহ শাফাআত কৃতদের জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। আমি চতুর্থবার গিয়ে বলবো, হে প্রভু! কুরআন যাদের আটক করে রেখেছে তারা ব্যতীত আর কেউ অবশিষ্ট নেই। রাবী বলেন, কাতাদা [রাদি.] এই হাদিস বর্ণনা করে বলিয়াছেন, আনাস বিন মালিক [রাদি.] আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ শেষে এমন ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে বের করা হইবে যে শুধু বলেছে,

“লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” [আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই] এবং যার অন্তরে একটি গমের দানা পরিমাণ নেক আমল থাকিবে। আর এমন ব্যক্তিকেও জাহান্নাম থেকে বের করে আনা হইবে যে বলেছে, “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” এবং যার অন্তরে থাকিবে বার্লির দানা পরিমাণ নেক আমল [ঈমান]। এমন ব্যক্তিকেও জাহান্নাম থেকে বের করা হইবে যে বলেছেঃ “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” এবং যার অন্তরে অণু পরিমাণ নেক আমল থাকিবে।{৩৬৪৪}

তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহিহ।{৩৬৪৩} {সহীহুল বুখারী ৪৪৭৬, মুসলিম ১৯৩, আহমাদ ১১৭৪৩,। আয যিলাল ৮০৪, ৮১০, ৮৪৯।} কিয়ামতের পরে কি হবে হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪৩১৩. উসমান বিন আফফান [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ কিয়ামতের দিন তিন শ্রেণির লোক শাফাআত করিবে। নাবীগণ, অতঃপর আলিমগণ, অতঃপর শহীদগণ।{৩৬৪৫}

তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ বানোয়াট।{৩৬৪৪} {হাদিসটি ঈমাম ইবনি মাজাহ এককভাবে বর্ণনা করেছেন। মিশকাত ৫৬১১, তাখরীজুত তাহাবীয়াহ ২০৮, দঈফাহ ১৯৭৮।উক্ত হাদিসের রাবী ১। আম্বাসাহ বিন আব্দুর রহমান সম্পর্কে ঈমাম বুখারী বলেন, হাদিস বিশারদগণ তাহাকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। ঈমাম তিরমিজি ও আবু দাউদ আস-সাজিসতানী তাহাকে দুর্বল বলিয়াছেন। আবু যুরআহ আর-রাযী বলেন, তিনি বানিয়ে হাদিস বর্ণনা করেন, তার হাদিস প্রত্যাখ্যানযোগ্য। [তাহযীবুল কামাল ঃ রাবী নং ৪৫৩৬, ২২/৪১৬ নং পৃষ্ঠা] ২। আল্লাক বিন আবু মুসলিম সম্পর্কে আবু হাতিম বিন হিব্বান বলেন, তিনি এককভাবে হাদিস বর্ণনা করলে তার ঐ হাদিস দ্বারা দলীল গ্রহণযোগ্য হইবে না। ইবনি হাজার আল-আসকালানী বলেন, তিনি মাজহুল বা অপরিচিত। ঈমাম যাহাবী বলেন, তিনি দুর্বল। [তাহযীবুল কামাল ঃ রাবী নং ৪৫৯৬, ২২/৫৪৯ নং পৃষ্ঠা] } কিয়ামতের পরে কি হবে হাদিস এর তাহকিকঃ জাল হাদিস

৪৩১৪. উবায় বিন কব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ কিয়ামাতের দিন আমি হবো নাবীগণের ঈমাম, তাহাদের পক্ষ থেকে বক্তব্য পেশকারী এবং তাহাদের প্রধান সুপারিশকারী, তাতে কোন গর্ব নেই। {৩৬৪৬}

তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ হাসান।{৩৬৪৫} {তিরমিজি ৩৬১৩। আয যিলাল ৭৮৭, তাখরীজুল মিশকাত ৫৭৬৮। কিয়ামতের পরে কি হবে হাদিস এর তাহকিকঃ হাসান হাদিস

৪৩১৫. ইমরান ইবনিল হুসায়ন [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ আমার শাফাআতের বদৌলতে “জাহান্নামী” নামের একদল জাহান্নাম থেকে নাজাত পাবে।{৩৬৪৭}

তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহিহ।{৩৬৪৫} {সহীহুল বুখারী ৬৫৬৬, তিরমিজি ২৬০০, আবু দাউদ ৪৭৪০, আহমাদ ১৯৩৯৬,। কিয়ামতের পরে কি হবে হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪৩১৬. আবদুল্লাহ বিন আবুল জাদআ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি নাবী [সাঃআঃ] কে বলিতে শুনেছেনঃ আমার উম্মাতের এক ব্যক্তির শাফাআতে তামীম গোত্রের জনসংখ্যার চেয়েও অধিক লোক জান্নাতে যাবে। তারা জিজ্ঞাসা করিলেন, হে আল্লাহর রাসূল! সেই ব্যক্তি কি আপনি ব্যতীত অন্য কেউ? তিনি বলেনঃ আমি ব্যতীত। আমি [আবদুল্লাহ বিন আবুল জাদআ] জিজ্ঞাসা করলাম, আপনি কি এটা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর নিকট শুনেছেন? তিনি বলেন, আমি তাহাঁর নিকট শুনিয়াছি। {৩৬৪৮}

{৩৬৪৬} তিরমিজি ২৪৩৮, আহমাদ ১৫৪৩০, ১৫৪৩১, দারিমী ২৮০৮। মিশকাত ৫৬০১, সহিহাহ ২১৭৮। কিয়ামতের পরে কি হবে হাদিস এর তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

৪৩১৭. আওফ বিন মালিক আল-আশজাঈ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ তোমরা কি জানো, আমার প্রভু আজ রাতে আমাকে কোন্‌ বিষয়ে অবকাশ দিয়েছেন? আমরা বলিলাম, আল্লাহ ও তাহাঁর রাসূল অধিক অবগত। তিনি বলেনঃ তিনি [আল্লাহ] আমাকে এই অবকাশ দিয়েছেন যে, আমার উম্মাতের অর্ধেক সংখ্যক জান্নাতে প্রবেশ করিবে অথবা তাহাদের নাজাতের জন্য শাফাআতের অনুমতি থাকিবে। আমি শাফাআতের অবকাশ গ্রহণ করলাম। আমরা বলিলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আল্লাহর কাছে দুআ করুন যেন তিনি আমাদেরকে শাফাআত লাভের যোগ্য বানান। তিনি বলেনঃ এই শাফাআত প্রত্যেক মুসলমানের জন্য।{৩৬৪৯}

তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহিহ।{৩৬৪৭} {তিরমিজি ২৪৪১। আয যিলাল ৮১৮-৮২০, আত তালীকুর রাগীব ৪/২১৫৮।} কিয়ামতের পরে কি হবে হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৩১/৩৮. অধ্যায়ঃ জাহান্নামের বর্ণনা

৪৩১৮. আনাস বিন মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ তোমাদের দুনিয়ার এ আগুন জাহান্নামের আগুনের সত্তর ভাগের একভাগ [উত্তাপের দিক থেকে]। যদি সেই আগুনকে দুবার পানি দ্বারা ঠাণ্ডা করা না হতো তবে তোমরা এর দ্বারা উপকৃত হইতে পারতে না। এ আগুন মহামহিম আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করছে যে আবার তাহাকে জাহান্নামে ফেরত না নেয়া হয়। {৩৬৫০}

তাহকিক আলবানী ঃ এ বাক্য গুলো খুবই দুর্বল তবে وانها لتدعو “ …… বাক্যটি বাদে সহিহ।{৩৬৪৮} {হাদিসটি ঈমাম ইবনি মাজাহ এককভাবে বর্ণনা করেছেন। আত তালীকুর রাগীব ৪/২৬৬, দঈফাহ ৩২০৮, দঈফ আল-জামি ২০১৮।উক্ত হাদিসের রাবী নুফায় আবু দাউদ সম্পর্কে আবু বিশর আদ দাওলাবী বলেন তিনি প্রত্যাখ্যানযোগ্য। ঈমাম তিরমিজি বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় দুর্বল ছিলেন। আহমাদ বিন শুআয়ব আন নাসায়ী বলেন, তিনি মিথ্যার সাথে অভিযুক্ত, তার থেকে কোন হাদিস গ্রহণ করা যাবে না। ঈমাম দারাকুতনী বলেন, তিনি প্রত্যাখ্যানযোগ্য। ঈমাম বুখারী বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় দুর্বল, তার ব্যাপারে সমালোচনা রয়েছে। [তাহযীবুল কামাল ঃ রাবী নং ৬৪৬৬, ৩০/১০ নং পৃষ্ঠা] কিয়ামতের পরে কি হবে হাদিস এর তাহকিকঃ অন্যান্য

৪৩১৯. আবু হুরাইরা [রাদি.] , হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ জাহান্নাম তার প্রভুর নিকট অভিযোগ করে বললো, হে আমার রব! আমার একাংশ অপরাংশকে গ্রাস করেছে। তখন আল্লাহ তাহাকে দুবার নিঃশ্বাস নেয়ার অনুমতি দিলেনঃ একটি শীতকালে অপরটি গ্রীষ্মকালে। তোমরা দুনিয়াতে যে ঠাণ্ডা অনুভব করো তা হলো জাহান্নামের হিম শীতলতা থেকে এবং যে গরম অনুভব করো তা হলো জাহান্নামের আগুনের উষ্ণতা থেকে।{৩৬৫১}

কিয়ামতের পরে কি হবে তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহিহ।{৩৬৪৯} {সহীহুল বুখারী ৫৩৭, ৩২৬০, মুসলিম ৬১৫, তিরমিজি ১৫৭, ২৫৯২, নাসায়ী ৫০০, আবু দাউদ ৪০২, আহমাদ ৭০৯০, ৭২০৫, ৭৪২৪, ৭৫৫৮, ৭৬৬৫, ৭৭৭০, ২৭৪৪৩, ৮৩৭৮, ৮৬৮৩, ৮৮৬১, ৮৮৮১, ৮৯৩৯, ২৭৪৯৪, ৯৬৩৯, ১০১২৮, ১০১৬০, ১০২১৪, ১১১০৪, মুয়াত্তা মালিক ২৮২৯, দারিমী ১২০৭, ২৮৪৫। সহিহাহ ১৪৫৭।}হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪৩২০. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ জাহান্নামের আগুন হাজার বছর ধরে উত্তপ্ত করার পর তা সাদা রং ধারণ করে আবার তা হাজার বছর ধরে উত্তপ্ত করার পর লাল রং ধারণ করে। আবার হাজার বছর ধরে উত্তপ্ত করার পর তা কালো বর্ণ ধারণ করে। এখন তা গভীর অন্ধকার রাতের মতো অন্ধকার অবস্থায় আছে।{৩৬৫২}

কিয়ামতের পরে কি হবে তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ দুর্বল।{৩৬৫০} {তিরমিজি ২৫৯১। দঈফাহ ১৩০৫৮,দঈফ আল-জামি ২১২৫।হাদিস এর তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৪৩২১. আনাস বিন মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ কিয়ামতের দিন কাফেরদের মধ্য থেকে এমন এক ব্যক্তিকে হাযির করা হইবে, যে দুনিয়াতে আরাম-আয়েশে দিন কাটিয়েছে। বলা হইবে, তোমরা [ফেরেশতারা] একে জাহান্নামে একটি চুবান দাও। অতএব তাহাকে জাহান্নামে একটি চুবান দেয়া হইবে। অতঃপর তাহাকে জিজ্ঞেস করা হইবে, হে অমুক! তুমি কি কখনো সুখের ছোঁয়া পেয়েছো? সে বলবে, না, আমি কখনো সুখের ছোঁয়া পাইনি। অতঃপর [কিয়ামতের দিন] ঈমানদারদের মধ্য হইতে এমন এক ব্যক্তিকে হাযির করা হইবে, যে দুনিয়াতে দুঃখ-কষ্ট ও বিপদাপদে জীবন কাটিয়েছে। বলা হইবে, একে একটু জান্নাত দেখাও। অতঃপর তাহাকে জান্নাত দেখানো হইবে। এরপর তাহাকে বলা হইবে, হে অমুক! তোমাকে কি কখনো দুঃখ-কষ্ট ও বিপদাপদ স্পর্শ করেছে? সে বলবে, আমি কখনো দুঃখ-কষ্টে পতিত হইনি।{৩৬৫৩}

কিয়ামতের পরে কি হবে তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহিহ।{৩৬৫১} {মুসলিম ২৮০৭, আহমাদ ১২৬৯৯। সহিহাহ ১১৬৭।হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪৩২২. আবু সাঈদ আল-খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ কাফেরদের দেহ হইবে অস্বাভাবিক মোটা, এমনকি তার এক একটি দাঁত হইবে উহুদ পাহাড়ের চেয়েও বড়। আর তার দেহ হইবে তার দাঁতের তুলনায় এতো বিরাট, যেমন তোমাদের কারো দাঁতের তুলনায় তার দেহ অনেক বড় হয়ে থাকে। {৩৬৫৪}

কিয়ামতের পরে কি হবে তাহকিক আলবানী ঃ “ و فضـىلة …” বাক্য ব্যতীত সহিহ; কারণ এ শব্দগুলো দুর্বল।{৩৬৫২} {আহমাদ ১০৮৪৮।উক্ত হাদিসের রাবী ১। মুহাম্মাদ বিন আবু লায়লা সম্পর্কে ইয়াকূব বিন সুফইয়ান বলেন, তিনি স্বিকাহ। শুবাহ ইবনিল হাজ্জাজ বলেন, আমি তার চেয়ে দুর্বল স্মৃতিশক্তি সম্পন্ন ব্যক্তি আর কাউকে দেখিনি। ইয়াহইয়া বিন সাঈদ আল-কাত্তান বলেন, তিনি দঈফ বা দুর্বল। আহমাদ বিন হাম্বাল বলেন, তার স্মৃতিশক্তি খুবই দুর্বল। ইবনি মাঈন বলেন, সমস্যা নেই। [তাহযীবুল কামালঃ রাবী নং ৫৪০৬, ২৫/৬২২ নং পৃষ্ঠা] ২। উক্ত হাদিসের রাবী আতিয়্যাহ আল-আওফী সম্পর্কে আবু বাক্‌র আল-বায়হাকী বলেন, তিনি দুর্বল, তার হাদিস দলীলযোগ্য নয়। আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, তিনি দুর্বল। আবু যুরআহ আর -রাযী বলেন, তিনি যাচাই বাছাই ছাড়া হাদিস গ্রহণ করেন ও তা বর্ণনা করেন। আহমাদ বিন হাম্বাল বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় দুর্বল। আহমাদ বিন শুআয়ব আন-নাসায়ী বলেন, তিনি দুর্বল। ইবনি হাজার আল-আসকালানী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে হাদিস বর্ণনায় অধিক ভুল করেন। ঈমাম যাহাবী বলেন, তিনি দুর্বল। [তাহযীবুল কামাল ঃ রাবী নং ৩৯৫৬, ২০/১৪৫ নং পৃষ্ঠা]হাদিস এর তাহকিকঃ অন্যান্য

৪৩২৩. হারিস বিন উকায়স [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

[আবদুল্লাহ] বলেন, এক রাতে আমি আবু বুরদাহ [রাদি.] এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। ইত্যবসরে হারিস বিন উকায়স [রাদি.] আমাদের নিকট প্রবেশ করিলেন। হারিস [রাদি.] সে রাতে আমাদের নিকট হাদিস বর্ণনা করেন যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ আমার উম্মাতের মধ্যে এমন ব্যক্তিও হইবে যার শাফাআতে মুদার গোত্রের লোকসংখ্যার চেয়ে অধিক সংখ্যক লোক জান্নাতে প্রবেশ করিবে। আবার আমার উম্মাতের মধ্যে এমন ব্যক্তিও হইবে, যে জাহান্নামের জন্য এতো হৃষ্টপুষ্ট হইবে যে, এমনকি তার এক কোণা ভরে যাবে।{৩৬৫৫}

কিয়ামতের পরে কি হবে তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহিহ।{৩৬৫৩} {আহমাদ ২২১৫৭।হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪৩২৪. আনাস বিন মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ জাহান্নামীদের জন্য পাঠানো হইবে কেবল কান্নাকাটি। তারা কাঁদতে কাঁদতে তাহাদের চোখের পানি শেষ হয়ে যাবে। অতঃপর তাহাদের চোখ দিয়ে ঝরতে থাকিবে রক্তাশ্রু। ফলে তাহাদের মুখমণ্ডলে বিরাটকায় গর্ত সদৃশ গর্ত সৃষ্টি হইবে। তাতে নৌযান ছেড়ে দিলে অবশ্যি তা অনায়াসে চলতে পারবে। {৩৬৫৬}

তাহকিক আলবানী ঃ [আরবি] বাক্যগুলো ব্যতীত সহিহ; কারণ বাক্যগুলো দুর্বল।{৩৬৫৪} {হাদিসটি ঈমাম ইবনি মাজাহ এককভাবে বর্ণনা করেছেন। সহিহাহ ১৬৭৯.উক্ত হাদিসের রাবী ইয়াযীদ আর-রাকাশী সম্পর্কে আবু আহমাদ আল-হাকিব বলেন, তিনি মিথ্যার সাথে অভিযুক্ত। আবু বাক্‌র আল-বুরকানী বলেন, তিনি দুর্বল। আবু বাক্‌র আল-বায়হাকী বলেন, তার হাদিস দলীলযোগ্য নয়, তা প্রত্যাখ্যানযোগ্য। ঈমাম যাহাবী বলেন, তিনি দুর্বল। ইয়াকূব বিন সুফইয়ান বলেন, তার মাঝে দুর্বলতা রয়েছে। [তাহযীবুল কামাল ঃ রাবী নং ৬৯৫৮, ৩২/৬৪ নং পৃষ্ঠা] কিয়ামতের পরে কি হবে হাদিস এর তাহকিকঃ অন্যান্য

৪৩২৫. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এ আয়াত পড়লেন

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ حَقَّ تُقَاتِهِ وَلاَ تَمُوتُنَّ إِلاَّ وَأَنْتُمْ مُسْلِمُونَ

“হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে যথার্থভাবে ভয় করো এবং তোমরা আত্মসমর্পণকারী না হয়ে কোন অবস্থায় মরো না” [সূরা আল ইমরানঃ ১০২]।

যাককূমের একটি বিন্দুও যদি পৃথিবীতে পতিত হতো তাহলে দুনিয়াবাসীর জীবন দুর্বিসহ হয়ে যেতো। আর এটাই যাদের খাদ্য হইবে তাহাদের কী অবস্থা হইবে।{৩৬৫৭}

তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ দুর্বল{৩৬৫৫} {তিরমিজি ২৫৮৫। আত তালীকুর রাগীব ৪/২৩৬, রাওদুন নাদীর ৪৫১।} কিয়ামতের পরে কি হবে হাদিস এর তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৪৩২৬. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ জাহান্নামের আগুন সিজদার চিহ্নসম্বলিত স্থান ব্যতীত আদম সন্তানের সমস্ত দেহ খেয়ে ফেলবে। আল্লাহ তাআলা সিজদার চিহ্নসমূহ গ্রাস করা জাহান্নামের আগুনের জন্য হারাম করেছেন। {৩৬৫৮}

তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহিহ।{৩৬৫৮} সহীহুল বুখারী ৮০৬, ৬৫৭৪, ৭৪৩৮, মুসলিম ১৮২, নাসায়ী ১১৪০, আহমাদ ৭৬৬০। কিয়ামতের পরে কি হবে হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪৩২৭. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ “মৃত্যু” নামক সৃষ্টিকে এনে কিয়ামতের দিন পুলসিরাতের উপর স্থাপন করা হইবে। অতঃপর ডাকা হইবে, হে জান্নাতবাসীগণ! তারা ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে আবির্ভূত হইবে, না জানি তাহাদের বর্তমান অবস্থান থেকে তাহাদেরকে বহিষ্কার করা হয়। অতঃপর বলা হইবে, হে জাহান্নামবাসীরা! তারা আনন্দিত ও উৎফুল্ল হয়ে আত্নপ্রকাশ করিবে, হয়তো তাহাদের বর্তমান অবস্থান থেকে তাহাদেরকে মুক্তি দেয়া হইবে। অতঃপর বলা হইবে, তোমরা কি একে চিনো? তারা বলবে, হাঁ, এ হলো “মৃত্যু”। নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ অতঃপর তার সম্পর্কে নির্দেশ দেয়া হলে তাহাকে পুলসিরাতের উপর যবেহ করা হইবে। অতঃপর জান্নাতবাসী ও জাহান্নামবাসীদের বলা হইবে, তোমরা উভয় দল স্ব স্ব স্থানে স্থায়ীভাবে অবস্থান করো। এখানে কখনো মৃত্যু নেই। {৩৬৫৯}

তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ হাসান সহিহ।রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ “মৃত্যু” নামক সৃষ্টিকে এনে কিয়ামতের দিন পুলসিরাতের উপর স্থাপন করা হইবে। অতঃপর ডাকা হইবে, হে জান্নাতবাসীগণ! তারা ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে আবির্ভূত হইবে, না জানি তাহাদের বর্তমান অবস্থান থেকে তাহাদেরকে বহিষ্কার করা হয়। অতঃপর বলা হইবে, হে জাহান্নামবাসীরা! তারা আনন্দিত ও উৎফুল্ল হয়ে আত্নপ্রকাশ করিবে, হয়তো তাহাদের বর্তমান অবস্থান থেকে তাহাদেরকে মুক্তি দেয়া হইবে। অতঃপর বলা হইবে, তোমরা কি একে চিনো? তারা বলবে, হাঁ, এ হলো “মৃত্যু”। নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ অতঃপর তার সম্পর্কে নির্দেশ দেয়া হলে তাহাকে পুলসিরাতের উপর যবেহ করা হইবে। অতঃপর জান্নাতবাসী ও জাহান্নামবাসীদের বলা হইবে, তোমরা উভয় দল স্ব স্ব স্থানে স্থায়ীভাবে অবস্থান করো। এখানে কখনো মৃত্যু নেই। {৩৬৫৯}তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ হাসান সহিহ। কিয়ামতের পরে কি হবে হাদিস এর তাহকিকঃ হাসান সহিহ

৩১/৩৯. অধ্যায়ঃ জান্নাতের বর্ণনা

৪৩২৮. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ মহান আল্লাহ বলেন, আমি আমার সৎকর্মপরায়ণ বান্দাদের জন্য এমন কিছু তৈরী করে রেখেছি, যা কোন চোখ কখনও দেখেনি, কোন কান কখনো শুনেনি এবং কোন মানুষের অন্তরের কল্পনা তার ধারণাও করিতে পারেনি। আবু হুরাইরা [রাদি.] বলেন, যেসব উপকরণাদির কথা আল্লাহ তাআলা তোমাদের বলিয়াছেন সেগুলোর কথা বাদ দিয়েও বরং তোমরা ইচ্ছা করলে পড়তে পারোঃ

فَلاَ تَعْلَمُ نَفْسٌ مَا أُخْفِيَ لَهُمْ مِنْ قُرَّةِ أَعْيُنٍ جَزَاءً بِمَا كَانُوا يَعْمَلُونَ

“কেউ জানে না তাহাদের জন্য নয়ন প্রীতিকর কী লুকিয়ে রাখা হয়েছে তাহাদের কৃতকর্মের পুরস্কার স্বরূপ” [সূরা আস-সাজদাঃ ১৭]। আবু হুরাইরা [রাদি.] এর স্থলে [আরবী] পড়তেন। {৩৬৬০}

তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহিহ।{৩৬৬০} সহীহুল বুখারী ৩২৪৪, মুসলিম ২৮২৪, তিরমিজি ৩১৯৭, দারিমী ২৭০৭। সহিহাহ ১৯৭৮। কিয়ামতের পরে কি হবে হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪৩২৯. আবু সাঈদ আল-খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ জান্নাতের এক বিঘত পরিমাণ স্থান সমগ্র পৃথিবী ও তার মধ্যকার সব কিছু থেকে উত্তম। {৩৬৬১}

তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ দুর্বল। {৩৬৬১} হাদিসটি ঈমাম ইবনি মাজাহ এককভাবে বর্ণনা করেছেন। দঈফাহ ৪৩০৮, দঈফ আল-জামি ৪৬৭৮। কিয়ামতের পরে কি হবে হাদিস এর তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৪৩৩০. সাহল বিন সাদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ জান্নাতের এক চাবুক পরিমাণ জায়গা, পৃথিবী ও তার মধ্যকার সবকিছু থেকে উত্তম। {৩৬৬২}

তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহিহ।{৩৬৬২} সহীহুল বুখারী ২৮৯২, ৩২৫০, তিরমিজি ১৬৪৮। আত তালীকুর রাগীব ৪/২৭৭। কিয়ামতের পরে কি হবে হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪৩৩১. মুআয বিন জাবাল [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে বলিতে শুনেছিঃ জান্নাতের একশ তলা রয়েছে। এক তলা থেকে অপর তলার ব্যবধান আসমান-জমীনের মধ্যকার দূরত্বের সমান। নিশ্চয় এর শীর্ষ স্তরে রয়েছে ফিরদাওস এবং মধ্যবর্তী স্তরও ফিরদাওস। আল্লাহর আরশ ফিরদাওসের উপরে অবস্থিত। এখান থেকে জান্নাতের ঝরণাসমূহ প্রবাহিত। তোমরা যখন আল্লাহর কাছে চাইবে তখন তাহাঁর নিকট ফিরদাওস নামক জান্নাত প্রার্থনা করিবে। {৩৬৬৩}

তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহিহ।{৩৬৬৩} তিরমিজি ২৫৩০। সহিহাহ ৯২২। কিয়ামতের পরে কি হবে হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪৩৩২. উসামাহ বিন যায়দ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

একদিন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাঁর সাহাবীদের বলিলেনঃ আছে না কি কেউ জান্নাতের জন্য কোমর বেঁধে কর্ম সম্পাদনকারী? কেননা জান্নাতের বিকল্প বা সমতুল্য কিছু নেই। কাবার প্রভুর শপথ! তার আলো ঝলমল করে বিচ্ছুরিত হয়। পুস্পরাজি ঘ্রাণ ছড়ায়। সুরম্য অট্টালিকাসমূহ, বহমান স্রোতস্বিনী, সুমিষ্ট ফলের প্রাচুর্য, অলংকারে সজ্জিতা পরমা সুন্দরী স্ত্রী, চিরস্থায়ী বাসস্থান সবুজ শ্যামলিমায় নিয়ামতে ভরপুর, গগনচুম্বী নিরাপদ ও মনোরম বাড়িঘর। তারা বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা এ জান্নাতের জন্য কোমর বাঁধলাম। তিনি বলেনঃ তোমরা “ইনশাআল্লাহ” বলো। অতঃপর তিনি জিহাদ সম্পর্কে আলোচনা করেন এবং তাতে যোগদানে উৎসাহিত করেন। {৩৬৬৪}

তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ দুর্বল।{৩৬৬৪} হাদিসটি ঈমাম ইবনি মাজাহ এককভাবে বর্ণনা করেছেন। আত তালীকুর রাগীব ৪/২৫৩, দঈফাহ ৩৩৫৮। কিয়ামতের পরে কি হবে হাদিস এর তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৪৩৩৩. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ জান্নাতে প্রবেশকারী সর্বপ্রথম দলের লোকেদের চেহারা হইবে পূর্নিমা রাতের পূর্ণ চাঁদের ন্যায় উজ্জ্বল। তাহাদের পরবর্তী দলের চেহারা হইবে আকাশের উজ্জ্বল তারকারাজির মত। জান্নাতবাসীগণ পেশাব করিবে না, পায়খানাও করিবে না। তাহাদের নাকে শ্লেষ্মা হইবে না এবং থুথুও ফেলবে না। তাহাদের চিরুনী হইবে সোনার তৈরী। তাহাদের শরীর থেকে নির্গত ঘাম মিশকের ন্যায় সুগন্ধময় হইবে। তাহাদের জন্য চন্দন কাঠ ও আগরবাতি জ্বালানো থাকিবে। তাহাদের স্ত্রীগণ হইবে আয়তলোচনা হূর। তাহাদের চরিত্র… বৈশিষ্ট হইবে একই ব্যক্তির ন্যায়। তারা তাহাদের পিতা আদম আলাইহিস সালামের অবয়বে ষাট হাত লম্বা হইবে।

{উপরোক্ত হাদিসে মোট ২টি সনদের ১টি বর্ণিত হয়েছে, অপর সনদটি হলোঃ}৭/৪৩৩৩ [১] . আবু বাক্‌র বিন আবু শায়বাহ, মুহাম্মাদ বিন ফুদায়ল [তিনি সত্যবাদী তবে তার ব্যাপারে শীয়া মতাবলম্বী হওয়ার অভিযোগ রয়েছে] , উমারাহ ইবনিল কাকা, আবু সালিহ, আবু হুরাইরা [রাদি.]। {৩৬৬৫}

তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহিহ।{৩৬৬৫} সহীহুল বুখারী ৩২৪৫, মুসলিম ২৮৩৪, তিরমিজি ২৫৩৭।উক্ত হাদিসের রাবী মুহাম্মাদ বিন ফুদায়ল সম্পর্কে ইবনি মাঈন তাহাকে সিকাহ বলিয়াছেন। আবু যুরআহ আর-রাযী বলেন, তিনি সত্যবাদী। ঈমাম নাসায়ী বলেন, কোণ সমস্যা নেই। আহমাদ বিন হাম্বাল বলেন, তিনি শীয়া মতাবলম্বী। [তাহযীবুল কামালঃ রাবী নং ৫৫৪৮, ২৬/২৯৩ নং পৃষ্ঠা] কিয়ামতের পরে কি হবে হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪৩৩৪. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ কাওসার হলো জান্নাতের একটি ঝরণা। এর উভয় তীর স্বর্ণপাতে মোড়ানো। এর পানি প্রবাহিত হইবে নীলকান্ত মণি ও মুক্তার উপর দিয়ে। তার মাটি কস্তুরীর চেয়েও সুগন্ধযুক্ত, পানি মধুর চেয়েও সুমিষ্ট এবং বরফের চেয়েও অধিক সাদা। {৩৬৬৬}

তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহিহ।৩৬৬৬} তিরমিজি ৩৩৬১। মিশকাত ৫৬৪১। কিয়ামতের পরে কি হবে হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪৩৩৫. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ জান্নাতে একটি প্রকাণ্ড গাছ আছে। এর ছায়া যে কোন আরোহী শত বছর ধরে অতিক্রম করিতে থাকিবে, কিন্তু তা অতিক্রম করিতে পারবে না। তোমরা চাইলে এ আয়াত পড়তে পারো [অর্থ] ঃ “সম্প্রসারিত ছায়া” [সূরা ওয়াকিয়াঃ ৩০]। {৩৬৬৭}

তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহিহ।{৩৬৬৭} সহীহুল বুখারী ৪৮৮১, মুসলিম ২৮২৬, তিরমিজি ২৫২৩, দারিমী ২৭১৬, ২৭১৭। কিয়ামতের পরে কি হবে হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪৩৩৬. সাঈদ ইবনিল মুসায়্যাব হইতে বর্ণীতঃ

তিনি আবু হুরাইরা [রাদি.] এর সাথে সাক্ষাত করলে তিনি বলেন, আমি আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করছি যে, তিনি যেন আমাকে ও তোমাকে জান্নাতের বাজারে একত্র করেন। সাঈদ [রাদি.] বলেন, জান্নাতে কি বাজারও আছে? তিনি বলিলেন, হাঁ। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাকে অবহিত করেছেন যে, জান্নাতবাসীরা জান্নাতে প্রবেশ করে নিজ নিজ মর্যাদা অনুসারে সেখানে স্থান পাবে। অতঃপর দুনিয়ার সময় অনুসারে এক জুমুআর দিনে তাহাদেরকে [তাহাদের প্রভুকে দেখার] অনুমতি দেয়া হইবে এবং তারা তাহাদের মহামহিম আল্লাহর দর্শন লাভ করিবে। তাহাদের জন্য তাহাঁর আরশ প্রকাশিত হইবে। জান্নাতের কোন এক উদ্যানে তাহাদের সামনে তাহাদের প্রভুর [তাজাল্লীর] প্রকাশ ঘটবে। তাহাদের জন্য নূর, মণি-মুক্তা, পদ্মরাগমণি, যমরূদ ও সোনা-রূপা ইত্যাদির মিম্বার স্থাপন করা হইবে। তাহাদের মধ্যকার সবচেয়ে নিম্নস্তরের জান্নাতবাসীও কস্তুরী ও কর্পূরের স্তুপের উপর আসন গ্রহণ করিবে। তবে সেখানে কেউ হীন বা নীচ হইবে না। মিম্বারে আসীন ব্যক্তিগণকে তারা তাহাদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ বা উৎকৃষ্ট ভাববে না।

আবু হুরাইরা [রাদি.] বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ইয়া রসূলুল্লাহ! আমরা কি আমাদের প্রভুর দর্শন লাভ করবো? তিনি বলেনঃ হাঁ। সূর্য বা পূর্নিমার চাঁদ দেখিতে তোমাদের কি কোন সন্দেহ হয়? আমরা বলিলাম, না। তিনি বলেনঃ ঠিক সেরূপ তোমরা তোমাদের মহামহিম প্রভুর দর্শন লাভেও তোমাদের কোন সন্দেহ থাকিবে না। সেই মজলিসে উপস্থিত এমন কোন লোক থাকিবে না যার সামনে মহামহিম আল্লাহ উদ্ভাসিত না হইবেন। এমনকি তিনি একে একে তাহাদের নাম ধরে ডেকে বলবেন, হে অমুকের পুত্র অমুক! তুমি অমুক দিন এরূপ এরূপ কাজ করেছ, তা তোমার স্মরণ আছে কি? এভাবে তিনি তাহাকে দুনিয়ার কতক নাফরমানী ও বিদ্রোহের কথা স্মরণ করিয়ে দিবেন। সে তখন বলবে, হে আমার প্রভু! আপনি কি আমাকে ক্ষমা করেননি। এ অবস্থায় হঠাৎ তাহাদের উপর এক খণ্ড মেঘ এসে তাহাদেরকে ছেয়ে ফেলবে এবং তা থেকে তাহাদের উপর সুঘ্রাণ [বৃষ্টি] বর্ষিত হইবে, যেরূপ সুঘ্রাণ তারা ইতোপূর্বে কখনো কিছুতে পায়নি। অতঃপর তিনি বলবেন, ওঠো! আমি তোমাদের সম্মানে মেহমানদারির আয়োজন করেছি, সেদিকে অগ্রসর হও এবং যা কিছু পছন্দ হয় গ্রহণ করো। তখন আমরা একটি বাজারে এসে উপস্থিত হবো যা ফেরেশতাগণ পরিবেষ্টন করে রাখবেন। সেখানে এমন সব পণ্যসামগ্রী থাকিবে যা না কোন চোখ দেখেছে, না কোন কান শুনেছে এবং কখনো অন্তরের কল্পনা জগতে ভেসেছে। আমরা সেখানে যা চাইবো তাই তুলে দেয়া হইবে। তবে ক্রয়-বিক্রয় হইবে না। সেই বাজারে জান্নাতবাসীগণ পরস্পরের সাথে সাক্ষত করিবে। উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন জান্নাতবাসী সামনে অগ্রসর হয়ে তার চেয়ে অল্প মর্যাদাসম্পন্ন বেহেশতবাসীর সাথে সাক্ষাত করিবে। তবে সেখানে তাহাদের মধ্যে উঁচু-নীচু বোধ থাকিবে না। তিনি তার পোশাক দেখে পেরেশান হয়ে যাবেন। একথা শেষ হইতে না হইতেই তিনি মনে করিতে থাকিবেন যে, তার পরনেও পূর্বাপেক্ষা উত্তম পোশাক শোভা পাচ্ছে। আর এরূপ এজন্যই হইবে যে, সেখানে কাউকে দুঃখ-কষ্ট বা দুশ্চিন্তা স্পর্শ করিবে না।

অতঃপর আমরা নিজেদের জায়গায় ফিরে আসবো এবং স্ব স্ব স্ত্রীর সাথে সাক্ষাত পাবো। তারা বলবে, মারহাবা স্বাগতম। কী ব্যাপার! যে আকর্ষণীয় রূপ-সৌন্দর্য নিয়ে বিচ্ছিন্ন হয়েছিলে, তদপেক্ষা উত্তম সৌন্দর্য নিয়ে ফিরে এসেছো। আমরা বলবো, আজ আমরা আমাদের মহাপ্রতাপশালী মহিমাময় প্রভুর সাথে মজলিশে বসেছিলাম। তাই আমাদের এই পরিবর্তন ঘটেছে এবং এরূপ ঘটাই ছিলো স্বাভাবিক। {৩৬৬৮}

তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ দুর্বল।{৩৬৬৮} সহীহুল বুখারী ৮০৬, মুসলিম ১২৭, ১২৮, আবু দাউদ ১২৯, ১৩৫, তিরমিজি ২৪৩৪, ২৫৪৯, ৩১৪৮, নাসায়ী ১১৪০, দারিমী ২৮০১, ২৮১৭। মিশকাত ৫৬৪৭, দঈফাহ ১৭২২। কিয়ামতের পরে কি হবে হাদিস এর তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৪৩৩৭. আবু উমামাহ [রাদি.] , হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ মহান আল্লাহ যাদের জান্নাতে প্রবেশ করাবেন তাহাদের প্রত্যেককেই বাহাত্তরজন স্ত্রীর সাথে বিবাহ দিবেন। তাহাদের মধ্যে দুজন হইবে আয়তলোচনা হূর এবং সত্তরজন হইবে জাহান্নামীদের থেকে ওয়ারিসী সূত্রে প্রাপ্ত। তাহাদের প্রত্যেকের স্ত্রী অঙ্গ হইবে অত্যন্ত কামাতুর এবং পুরুষের অঙ্গ হইবে অত্যন্ত সুদৃঢ় অটল। হিশাম বিন খালিদ [রাদি.] বলেন, জাহান্নামীদের থেকে প্রাপ্ত স্ত্রী বুঝতে সেইসব পবিত্রা নারীদের বুঝানো হয়েছে যাদের স্বামীরা জাহান্নামী হয়েছে। কিন্তু স্ত্রীরা ঈমানদার হওয়ার কারণে জান্নাতে প্রবেশ করেছে। যেমন ফেরাউনের স্ত্রী জান্নাতী। {৩৬৬৯}

তহাকীক আলবানীঃ খুবই দুর্বল।{৩৬৬৯} হাদিসটি ঈমাম ইবনি মাজাহ এককভাবে বর্ণনা করেছেন। দঈফাহ ৪৪৭৩। কিয়ামতের পরে কি হবে হাদিস এর তাহকিকঃ খুবই দুর্বল

৪৩৩৮. আবু সাঈদ আল-খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ কোন মুমিন ব্যক্তি জান্নাতে সন্তান কামনা করলে তার স্ত্রী গর্ভধারণ করিবে এবং সন্তান প্রসব করিবে এবং সন্তানটি হইবে বয়সে যুবক [আবু দাউদ ও তিরমিযি] ; এসবকিছু মুহূর্তের মধ্যে সম্পন্ন হইবে। {৩৬৭০}

তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহিহ।{৩৬৭০} তিরমিজি ২৫৬৩, দারিমী ২৭১২। মিশকাত ৪/৫৬৪৮। কিয়ামতের পরে কি হবে হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪৩৩৯. আবদুল্লাহ বিন মাসউদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ যে ব্যক্তি সবশেষে জাহান্নাম থেকে বের হয়ে আসবে এবং সবশেষে জান্নাতে প্রবেশ করিবে আমি তাহাকে অবশ্যই চিনি। এক ব্যক্তি হামাগুড়ি দিয়ে জাহান্নাম থেকে বের হয়ে আসবে। তাহাকে বলা হইবে, তুমি যাও এবং জান্নাতে প্রবেশ করো। অতএব সে তথায় পৌঁছার পর তার মনে হইবে ইতোপূর্বেই তা ভরপুর হয়ে গেছে। সে ফিরে এসে বলবে, হে প্রভু! আমি তা ভরপুর পেলাম। মহান আল্লাহ বলবেন, যাও এবং জান্নাতে প্রবেশ করো। সে পুনরায় তথায় ফিরে যাবে এবং তার মনে হইবে যে, জান্নাত ইতোপূর্বেই ভরপুর হয়ে গেছে। সে ফিরে এসে বলবে, হে প্রভু! তা পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। মহিমাময় আল্লাহ বলবেন, তুমি যাও এবং জান্নাতে প্রবেশ করো। কেননা, তোমাকে দেয়া হলো পৃথিবী পরিমাণ স্থান এবং তার দশ গুণ অথবা তোমার জন্য রয়েছে পৃথিবীর দশ গুণ। তখন সে বলবে, আপনি মালিক হয়ে আমার সাথে হাসি-ঠাট্টা করছেন। রাবী বলেন, একথা বলার পর আমি নাবী [সাঃআঃ] কে হাসতে দেখলাম। এমনকি তাহাঁর মাড়ির দাঁত প্রকাশিত হলো। অতঃপর বলা হতো, এ ব্যক্তিই হইবে মর্যাদায় সর্বনিম্ন স্তরের জান্নাতী। {৩৬৭১}

তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহিহ।{৩৬৭১} সহীহুল বুখারী ৬৫৭১, ৭৫১১, মুসলিম ১৬৩, ১৮৬, তিরমিজি ২৫৯৫, আহমাদ ৩৫৮৪, ৪৩৭৭। মুখতাসরুশ শামাইল ১৯৭। কিয়ামতের পরে কি হবে হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪৩৪০. আনাস বিন মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ কোন ব্যক্তি তিনবার জান্নাত প্রার্থনা করলে জান্নাত বলে, “হে আল্লাহ! তাহাকে জান্নাতে প্রবেশ করাও”। আবার কোন ব্যক্তি তিনবার জাহান্নাম থেকে নিষ্কৃতি লাভের প্রার্থনা করলে জাহান্নাম বলে, “হে আল্লাহ! তাহাকে জাহান্নাম থেকে নিষ্কৃতি দাও”। {৩৬৭২}

তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহিহ।{৩৬৭২} তিরমিজি ২৫৭২। মুখতাসরুশ শামাইল ৪/২২২। কিয়ামতের পরে কি হবে হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪৩৪১. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ তোমাদের প্রত্যেকের জন্য দুটি করে আবাস রয়েছে। একটি আবাস জান্নাতে এবং একটি জাহান্নামে। অতএব কোন ব্যক্তি মারা যাওয়ার পর জাহান্নামে প্রবেশ করলে তার জান্নাতের আবাস জান্নাতীরা ওয়ারিসী সূত্রে লাভ করিবে। এটাই হলো আল্লাহ্‌র নিম্নোক্ত বাণীর তাৎপর্য

أُولَئِكَ هُمُ الْوَارِثُونَ 

“তারাই হইবে ওয়ারিস” [সূরা মুমিনূনঃ ১০]। {৩৬৭৩}

{৩৬৭৩} হাদিসটি ঈমাম ইবনি মাজাহ এককভাবে বর্ণনা করেছেন। সহিহাহ ২২৭৯। কিয়ামতের পরে কি হবে হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

Comments

Leave a Reply