মক্কা ও মদিনার ফজিলত – পদব্রজে হাজ্জ করা

মক্কা ও মদিনার ফজিলত – পদব্রজে হাজ্জ করা

মক্কা ও মদিনার ফজিলত – পদব্রজে হাজ্জ করা >> সুনানে ইবনে মাজাহ হাদিস এর মুল সুচিপত্র পড়ুন

পর্বঃ ২৫, অধ্যায়ঃ (১০২-১০৮)=৭টি

১৯/১০২. অধ্যায়ঃ মক্কা শরীফের বাড়িঘর ভাড়া দেয়া
১৯/১০৩. অধ্যায়ঃ মক্কার ফাদীলাত
১৯/১০৪. অধ্যায়ঃ মদীনার ফাদীলাত
১৯/১০৫. অধ্যায়ঃ কাবা ঘরের অভন্তরের সম্পদ
১৯/১০৬. অধ্যায়ঃ মক্কায় রমাদান মাসের রোযা রাখা
১৯/১০৭. অধ্যায়ঃ বৃষ্টির মধ্যে [বাইতুল্লাহ] তাওয়াফ করা
১৯/১০৮ অধ্যায়ঃ পদব্রজে হাজ্জ করা

১৯/১০২. অধ্যায়ঃ মক্কা শরীফের বাড়িঘর ভাড়া দেয়া

৩১০৭. আলকামা বিন নাদলাহ [মাকবূল] [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] , আবু বকর ও উমার [রাদি.] ইন্তিকাল করেন এবং ঐ সময় পর্যন্ত মক্কার বাড়িঘর আস-সাওয়াইব নামে পরিচিত ছিল। কোন ব্যক্তির প্রয়োজন হলে সে তাতে [তিন ঘরে] বসবাস করতো এবং কারো [নিজের জন্য] প্রয়োজন না হলে সে তা অন্যকে বসবাসের জন্য খালি করে দিতো। {৩১০৭}

তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ দুর্বল।{৩১০৭} হাদিসটি ঈমাম ইবনি মাজাহ এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ জইফ। আলকামাহ বিন নাদলাহ এর জাহালাতের কারণে হাদিসটি দুর্বল। তাহার হাদিস মুরসাল।হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

১৯/১০৩. অধ্যায়ঃ মক্কার ফাদীলাত

৩১০৮. আবু সালামাহ বিন আবদুর রহমান বিন আওফ হইতে বর্ণীতঃ

আবদুল্লাহ বিন আদী ইবনিল হামরা [রাদি.] তাহাকে বলেন, আমি দেখেছি যে, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাঁর উষ্ট্রীর পিঠে আরোহিত অবস্থায় আল-জাযওয়ারা নামক স্থানে বলেনঃ আল্লাহর শপথ! তুমি [মক্কা] আল্লাহর গোটা যমীনের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ এবং দুনিয়ার সমস্ত যমীনের মধ্যে তুমি আমার নিকট সর্বাধিক প্রিয়। আল্লাহর শপথ! তোমার থেকে আমাকে উচ্ছেদ না করা হলে আমি [তোমায় ত্যাগ করে] চলে যেতাম না। {৩১০৮}

{৩১০৮} তিরমিজি ২৯২৫, আহমাদ ১৮২৪০, দারেমী ২৫১০, মিশকাত ২৭২৫। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ।মক্কা ও মদিনার ফজিলত -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৩১০৯. সাফিয়্যা বিনতু শায়বাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

আমি মক্বা বিজয়ের বছর মহানবী [সাঃআঃ] কে তাহাঁর ভাষণে বলিতে শুনেছিঃ হে জনগণ! আল্লাহ তাআলা আসমান ও যমীন সৃষ্টির দিন থেকে মক্কাকে হারাম [সম্মানিত] করিয়াছেন। অতএব তা কিয়ামত পর্যন্ত হারাম থাকিবে। তাহার বৃক্ষরাজি কাটা যাবে না, এখানকার শিকারের পিছু ধাওয়া করা যাবে না, এখানে পড়ে থাকা কোন জিনিস তুলে নেয়া যাবে না, কেবল সেই ব্যক্তি তা তুলতে পারবে যে তাহার ঘোষণা দিবে। আব্বাস [রাদি.] বলেন, কিন্তু ইযখির ঘাস [বৈধ করা হোক]। কারণ তা ঘরবাড়ি তৈরিী ও কবরে রাখার জন্য [প্রয়োজন হয়]। তখন রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ ইযখির ঘাস ব্যতীত। {৩১০৯}

তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ হাসান।{৩১০৯} হাদিসটি ঈমাম ইবনি মাজাহ এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন। ইরওয়া ৪/২৪৯, মুখতাসারুল বুখারী ১/৩১৭। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ হাসান। উক্ত হাদিসের রাবি ১. ইউনুস বিন বুকায়র সম্পর্কে আবু বকর বিন আবু শায়বাহ বলেন, তিনি যাচাই-বাচাই ছাড়া হাদিস গ্রহন করেন ও তা বর্ণনা করেন। আবু হাতিম বিন হিব্বান তাহার সিকাহ গ্রন্থে তাহার নাম উল্লেখ করিয়াছেন। আহমাদ বিন শুআয়ব আন-নাসাঈ বলেন, তিনি নির্ভরযোগ্য নয়। ইবনি হাজার আল-আসকালনী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে হাদিস বর্ণনায় ভুল করেন। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৭১৭১, ৩২/৪৯৩ নং পৃষ্ঠা] ২. মুহাম্মাদ বিন ইসহাক সম্পর্কে ইয়াহইয়া বিন মাঈন ও আজালী বলেন, তিনি সিকাহ। আহমাদ বিন হাম্বল বলেন, তিনি হাসানুল হাদিস। আলী ইবনিল মাদানী বলেন, তিনি সালিহ। সুলায়মান বিন তাহারখান ও সুলায়মান বিন মিহরান বলেন, তিনি মিথ্যুক। আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, তিনি আমার নিকট হাদিস বর্ণনায় নির্ভরযোগ্য নয়, তিনি হাদিস বর্ণনায় দুর্বল। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৫০৫৭, ২৪/৪০৫ নং পৃষ্ঠা]হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

৩১১০. আয়্যাশ বিন আবু রবীআহ আল-মাখযূমী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ এই উম্মাত যত দিন এই হারাম শরীফের যথাযোগ্য সম্মান প্রদর্শন করিবে, ততো দিন তাহারা কল্যাণের মধ্যে থাকিবে। কিন্তু যখন তাহারা তা বিনষ্ট করিবে, তখন ধ্বংস হইবে। {৩১১০}

তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ দুর্বল।{৩১১০} আহমাদ ১৮৫৭০, মিশকাত ২৭২৭, জইফ আল-জামি ৬২১৩। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ জইফ। উক্ত হাদিসের রাবি ১. মুহাম্মাদ বিন ফুদায়ল সম্পর্কে ইবনি মাঈন তাহাকে সিকাহ বলেছেন। আবু যুরআহ আর-রাযী বলেন, তিনি সত্যবাদী। ঈমাম নাসাঈ বলেন, কোন সমস্যা নেই। আহমাদ বিন হাম্বল বলেন, তিনি শীয়া মতাবলম্বী। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৫৫৪৮, ২৬/২৯৩ নং পৃষ্ঠা] ২. ইয়াযীদ বিন আবু যিয়াদ সম্পর্কে আবু আহমাদ আল-হাকিম বলেন, তিনি আহলে ইলমের নিকট নির্ভরযোগ্য নয়। আবু আহমাদ বিন আদী বলেন, তিনি কুফার শীয়াদের একজন। আবু বাকর আল-বায়হাকী ও আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, তিনি নির্ভরযোগ্য নয়। আবু দাউদ আস-সাজিসতানী বলেন, তাহার হাদিস কেউ বর্জন করিয়াছেন এমর্মে আমার জানা নেই। আবু যুরআহ আর-রাযী বলেন, তিনি দুর্বল, তাহার থেকে হাদিস গ্রহন করা যায় তবে তা দলীলযোগ্য নয়। ঈমাম তিরমিজি বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে হাদিস বর্ণনায় ভুল করেন। আহমাদ বিন হাম্বল বলেন, তাহার স্মৃতিশক্তি ভালো ছিল না। ইবরাহীম বিন ইয়াকুব আল-জাওযুজানী বলেন, আমি আহলে ইলমদের বলিতে শুনিয়াছি, তাহারা তাহাকে দুর্বল বলিতেন। ঈমাম দারাকুতনী বলেন, তিনি দুর্বল, তিনি হাদিস বর্ণনায় অধিক ভুল করেন। আবদুল বাকী ইবনিল কানি বলেন, তিনি দুর্বল। ইয়াহইয়া বিন মাঈন বলেন, তাহার হাদিস দ্বারা দলীল গ্রহনযোগ্য নয়। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৬৯৯১, ৩২/১৩৫ নং পৃষ্ঠা]হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

১৯/১০৪. অধ্যায়ঃ মদীনার ফাদীলাত

৩১১১. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ ঈমান মাদীনার দিকে গুটিয়ে আসবে, যেমন সাপ তাহার গর্তের দিকে গুটিয়ে আসে। {৩১১১}

তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ।{৩১১১} সহিহুল বুখারি হাদিস নং ১৮৭৬, মুসলিম ১৪৭, আহমাদ ৭৭৮৭, ৯১৭৫, ১০০৬৩। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ।মক্কা ও মদিনার ফজিলত -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৩১১২. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে কেউ যদি মদীনায় মৃত্যুবরণ করিতে পারে, সে যেন তাই করে। কারণ যে ব্যক্তি এখানে মারা যাবে, আমি তাহার পক্ষে সাক্ষী হবো। {৩১১২}

তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ।

{৩১১২} তিরমিজি ৩৯১৭, আত-তালীকুর রাগীব ২/১৪২, দিফা আনিল হাদিস ১০৭। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ। উক্ত হাদিসের রাবি মুআয বিন হিশাম সম্পর্কে আহমাদ বিন হাম্বল বলেন, আমি তাহার একটি মজলিসে ১৭ টি হাদিস ব্যাতিত তাহার থেকে কোন হাদিস গ্রহন করিনি। ইবনি হাজার আল-আসকালনী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে হাদিস বর্ণনায় কখনো কখনো সন্দেহ করেন। ইয়াহইয়া বিন মাঈন বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে হুজ্জাহ নয়। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৬০৩৮, ২৮/১৩৯ নং পৃষ্ঠা]মক্কা ও মদিনার ফজিলত -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৩১১৩. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নবী [সাঃআঃ] বলেনঃ হে আল্লাহ! ইবরাহীম [আ.] তোমার বন্ধু ও নবী। তুমি মক্কাকে ইবরাহীম [আ.]-এর যবানীতে হারাম [সম্মানিত] ঘোষণা করেছো। হে আল্লাহ! আমিও তোমার বান্দা ও নবী। অতএব আমি মদীনাকে, তাহার দু প্রস্তরময় জমীনের মধ্যস্থল হারাম ঘোষণা করছি। আবু মারওয়ান [রাদি.] বলেন, লাবাতাইহা শব্দের অর্থ মদীনার দুপ্রান্তের প্রস্তরময় ভূমি। {৩১১৩}

তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ।{৩১১৩} মুসলিম ১৩৭৩, তিরমিজি ৩৪৫৪, আহমাদ ৮১৭৩, মুয়াত্তা মালিক ১৬৩৭। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ। উক্ত হাদিসের রাবি আবু মারওয়ান মুহাম্মাদ বিন উসমান আল-উসমানী সম্পর্কে আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, তিনি সিকাহ। আবু হাতিম বিন হিব্বান বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় ভুল করেন ও সিকাহ রাবীর বিপরীত হাদিস বর্ণনা করেন। ইবনি হাজার আল-আসকালনী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে হাদিস বর্ণনায় ভুল করেন। ঈমাম বুখারী তাহাকে সত্যবাদী বলেছেন। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৫৪৫৪, ২৬/৮১ নং পৃষ্ঠা] ২. আলা বিন আব্দুর রহমান সম্পর্কে আহমাদ বিন হাম্বল বলেন, তিনি সিকাহ তাহার খারাফি সম্পর্কে কারো থেকে কিছু শুনিনি। ঈমাম তিরমিজি বলেন, হাদিস বিশারদদের নিকট তিনি সিকাহ। ঈমাম নাসাঈ বলেন, কোন সমস্যা নেই। ইবনি আদী বলেন, আমি কোন সমস্যা দেখি না। ইবনি হিব্বান তাহাকে সিকাহ বলেছেন। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৪৫৭৭, ২২/৫২০ নং পৃষ্ঠা]মক্কা ও মদিনার ফজিলত -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৩১১৪. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রাসূলু্ল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি মদীনার অধিবাসীদের ক্ষতিসাধনের ইচ্ছা করিবে, তাহাকে আল্লাহ তাআলা এমনভাবে গলিয়ে দিবে, যেভাব লবণ পানিতে গলে যায়। {৩১১৪}

তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ।{৩১১৪} মুসলিম ১৩৮৬, ১৩৮৭, আহমাদ ৭৬৯৭, ৮০২৮, ৮১৭৩, ৮৪৭২। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ। উক্ত হাদিসের রাবি মুহাম্মাদ বিন আমর বিন হুরায়স সম্পর্কে ইবনি হিব্বান বলেন, তিনি সিকাহ তবে ঈমাম যাহাবী বলেন তাহার পরিচয় সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি। আবু হাতিম বিন হিব্বান বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় ভুল করেন। ইবরাহীম বিন ইয়াকুব আল-জাওযুজানী বলেন, তিনি হাদিসের ক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য নয়। ইবনি হাজার আল-আসকালনী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে হাদিস বর্ণনায় সন্দেহ করেন। ঈমাম দারাকুতনী তাহাকে দুর্বল বলেছেন। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৫৫১৩, ২৬/২১২ নং পৃষ্ঠা]মক্কা ও মদিনার ফজিলত -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৩১১৫. আবদুল্লাহ বিন মিকনাফ [মাজহুল বা অপরিচিত] হইতে বর্ণীতঃ

আমি আনাস বিন মালিক [রাদি.]-কে বলিতে শুনিয়াছি, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ উহুদ একটি পাহাড়, সে আমাদের ভালোবাসে এবং আমরাও তাহাকে ভালোবাসি। তা জান্নাতের টিলাসমূহের একটির উপর অবস্থিত। আর আইর পাহাড় দোযখের টিলাসমূহের একটির উপর অবস্থিত। {৩১১৫}

{৩১১৫} সহিহুল বুখারি হাদিস নং ২৮৮৯, ২৮৯৩, ৩৩৬৭, মুসলিম ১৩৯৩, তিরমিজি ৩৯২২, আহমাদ ১২০১৩, ১২১০১, ১৩১১৩, ১৩১৩৩, মুয়াত্তা মালিক ১৬৪৫, যইফাহ ১৮২০, জইফ আল-জামি ১৩৬৮। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ খুবই দুর্বল। উক্ত হাদিসের রাবি আবদুল্লাহ বিন মিকনাফ সম্পর্কে আবু হাতিম বিন হিব্বান বলেন, তাহার হাদিস দ্বারা দলীল পেশ করা সঠিক নয়। ইবনি হাজার আল-আসকালনী বলেন, তিনি মাজহুল বা অপরিচিত। ঈমাম যাহাবী বলেন, তিনি দুর্বল। তাহরীরু তাকরীবুত তাহযীব এর লেখক বলেন, তিনি দুর্বল। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৩৫৯১, ১৬/১৭৬ নং পৃষ্ঠা]হাদিসের তাহকিকঃ খুবই দুর্বল

১৯/১০৫. অধ্যায়ঃ কাবা ঘরের অভন্তরের সম্পদ

৩১১৬. শায়বাহ বিন উসমান [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

এক ব্যক্তি আমার মাধ্যমে বাইতুল্লাহয় হাদিয়াস্বরূপ কতকগুলি দিরহাম পাঠায়। আমি বাইতুল্লাহর অভ্যন্তরে প্রবেশ করে শাইবাকে একটি কুরসীর উপর উপবিষ্ট দেখিতে পেলম। আমি দিরহামগুলো তাহাকে দিলাম। সে তাহাকে জিজ্ঞেসা করিল, এগুলো কি তোমার দিরহাম? আমি বললাম, না। এগুলো আমার হলে তা নিয়ে তোমার নিকট আসতাম না। সে বলরো, যদি তুমি এ কথা বলো তবে শোনো, তুমি যে স্থানে বসে আছো, উমার ইবনিল খাত্তাব [রাদি.] এখানে বসেছেন, অতঃপর বলেছেন, আমি কাবার সম্পদ দরিদ্র মুসলমানদের মধ্যে বণ্টন না করা পর্যন্ত বের হবো না। আমি বললাম, আপনি তা করিবে না। তিনি বলিলেন, আমি অবশ্যই তা করিব। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলৈন, তুমি একথা কেন বললে? আমি বললাম, কারণ রাসূলূল্লাহ [সাঃআঃ] এ সম্পদের স্থান দেখেছেন এবং আবু বকর [রাদি.] ও। তাঁদের উভয়ের আপনার চেয়ে মালের অধিক প্রয়োজন ছিল। কিন্তু তাঁরা এ সম্পদ স্থানচ্যুত করেননি। একথা শুনে উমার [রাদি.] উঠে দাঁড়ান এবং বের হয়ে চলে যান। {৩১১৬}

তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ।{৩১১৬} সহিহুল বুখারি হাদিস নং ১৫৯৪, ৭২৭৫, আবু দাউদ ২০৩১, আহমাদ ১৪৯৫৮, সহীহ আবু দাউদ ১৭৭১। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ।মক্কা ও মদিনার ফজিলত -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

১৯/১০৬. অধ্যায়ঃ মক্কায় রমাদান মাসের রোযা রাখা

৩১১৭. সাঈদ বিন জুবায়র হইতে বর্ণীতঃ

ইবনি আব্বাস [রাদি.] তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি মক্কায় রমাদান মাস পেলো, রোযা রাখলো এবং যথাসাধ্য [রাতে] ইবাদত করিল, আল্লাহ তাআলা তাহাকে অন্য স্থানের তুলনায় এক লক্ষ রমাদান মাসের সওয়াব দান করবেন এবং প্রতিটি দিনের পরিবর্তে একটি গোলাম এবং প্রতিটি রাতের পরিবর্তে একটি গোলাম আযাদ করার সওয়াব [তাহার আমলনামায়] লিখে দিবেন, প্রতিটি দিনের পরিবর্তে আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধের জন্য একটি ঘোড়া দানের সমপরিমাণ সওয়াব, প্রতি দিনের জন্য একটি নেকী [পূণ্য] এবং প্রতিটি রাতের জন্য একটি পূণ্য দান করবেন। {৩১১৭}

তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ বানোয়াট।{৩১১৭} হাদিসটি ঈমাম ইবনি মাজাহ এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন। আত তালীকুর রাগীব ২/৬৫, দঈফাহ ২৩৭, ক্ত হাদিসের রাবি আবদুর রহীম বিন যায়দ আল-আম্মী সম্পর্কে আবু বাক্র আল-বায়হাকী বলেন, তিনি দুর্বল। আবু হাতিম আল-রাযী তাহার হাদিস বর্জর করিয়াছেন। আবু দাঊদ আস সাজিসতানী বলেন, তিনি দুর্বল ইবনি হাজার আল-আসকালনী বলেন, তিনি মিথ্যার অভিযোগে অভিযুক্ত। ইমমি যাহাবী তাহাকে বর্জন করিয়াছেন। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৩৪০৬, ১৮/৩৪ নং পৃষ্ঠা] ২. যায়দ আল-আম্মী সম্পর্কে আবুল ফারাজ ইবনিল জাওযী তাহার মাওদুআত গ্রন্থে তাহাকে উল্লেখ করিয়াছেন। আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, তাহার থেকে হাদিস গ্রহণ করা যায় তবে তা দলীলযোগ্য হইবে না, তিনি হাদিস বর্ণনায় দুর্বল। আবু নুআয়ম আল-আসবাহানী বলেন, তাহার মাঝে দুর্বলতা রয়েছে। আহমাদ বিন সালিহ আল-জায়লী বলেন, তিনি দুর্বল। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ২১০২, ১০/৫৬ নং পৃষ্ঠা]হাদিসের তাহকিকঃ জাল হাদিস

১৯/১০৭. অধ্যায়ঃ বৃষ্টির মধ্যে [বাইতুল্লাহ] তাওয়াফ করা

৩১১৮. আনাস বিন মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

আমরা আবু ইকালের সাথে বৃষ্টির মধ্যে [বাইতুল্লাহ] তাওয়াফ করলাম এবং তাওয়াফ শেষে মাকামে ইবরাহীমের পেছনে এলাম। তখন আবু ইকাল বলেন, আম আনাস বিন মালিক [রাদি.]-র সাথে বৃষ্টির মধ্যে বাইতুল্লাহ তাওয়াফ করেছি। আমরা তাওয়াফ শেষে মাকামে [ইবরাহীম] এসে দু রাকআত নামায পড়েছি। অতঃপর আনাস [রাদি.] আমাদের বলেন, এখন নতুনভাবে নিজেদের আমলের হিসাব রাখো। তোমাদের পূর্বের গুনাহ মাফ করে দেয়া হইয়াছে। রাসূলূল্লাহ [সাঃআঃ] আমাদের এরূপই বলেছেন এবং আমরা তাহাঁর সাথে বৃষ্টির মধ্যে তাওয়াফ করেছি। {৩১১৮}

তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সানাদটি খুবই দুর্বল।{৩১১৮} হাদিসটি ঈমাম ইবনি মাজাহ এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ জইফ। উক্ত হাদিসের রাবি দাউদ বিন আজলান সম্পর্কে আবু আহমাদ বিন আদী বলেন, তিনি দুর্বল। আবু জাফার আল-উকায়লী বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনা করিয়াছেন কিন্তু তাহার হাদিসের অনুসরণ করা যাবে না। আবু সাঈদ বিন আমর ও আবু আবদুল্লাহ আল-হাকিম আন-নায়সাবুরী বলেন, তিনি আবু ইকাল থেকে একাধিক জাল হাদিস বর্ণনা করিয়াছেন। ইবনি হাজার আল-আসকালনী ও ঈমাম যাহাবী বলেন, তিনি দুর্বল। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ১৭৭৪, ৮/৪১৭ নং পৃষ্ঠা] ২. আবু ইকাল সম্পর্কে আহমাদ আল-হাকিম বলেন, তাহার হাদিস নির্ভরযোগ্য নয়। আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, তিনি কুফুরী নয় এমন কওলী বা আমালী কোন ফিসক এর সাথে জড়িত। ইবনি হাজার আল-আসকালনী বলেন, তিনি মিথ্যা বলার অভিযোগে অভিযুক্ত। ঈমাম যাহাবী বলেন, তিনি জাল [বানোয়াট] হাদিস বর্ণনার অভিযোগে অভিযুক্ত। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৬৬১৮, ৩০/৩৩৪ নং পৃষ্ঠা]হাদিসের তাহকিকঃ খুবই দুর্বল

১৯/১০৮ অধ্যায়ঃ পদব্রজে হাজ্জ করা

৩১১৯. আবু সাঈদ খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নবী [সাঃআঃ] ও তাহাঁর সাহাবীগণ মদীনা থেকে মক্কায় পদব্রজে গিয়ে হাজ্জ করেন এবং তিনি বলেনঃ নিজেদের কোমরে পরিধেয় বস্ত্র বেঁধে নাও”। তিনি কিছুটা দ্রুত গতিতে পথ অতিক্রম করেন। {৩১১৯}

তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ দূর্বল।{৩১১৯} হাদিসটি ঈমাম ইবনি মাজাহ এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন। আত-তালীক আলা ইবনি খুযায়মাহ ২৫৩৫, যইফাহ ২৭৩৪। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ জইফ। উক্ত হাদিসের রাবি ১. ইয়াহইয়া বিন ইয়ামান সম্পর্কে আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় ইদতিরাব করেন। আবু হাতিম বিন হিব্বান বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় কখনো কখনো ভুল করেন। আবু দাউদ আস-সাজিসতানী বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় ভুল করেন। আহমাদ বিন হাম্বল বলেন, তিনি হুজ্জাহ ছিলেন না তিনি দুর্বল। আহমাদ বিন শুআয়ব আন-নাসাঈ বলেন, তাহার হাদিস দ্বারা দলীল গ্রহণযোগ্য হইবে না। ইবনি হাজার আল-আসকালনী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে হাদিস বর্ণনায় অধিক ভুল করেন। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৬৯৫৩, ৩২৫৫ নং পৃষ্ঠা] ২. হামযাহ বিন হাবীব আয-যায়্যাত সম্পর্কে আবুল ফাতহ আল-আযদী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে তাহার স্মৃতিশক্তি দুর্বল। আহমাদ বিন হাম্বল বলেন, তিনি সিকাহ। ইবনি হাজার আল-আসকালনী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে হাদিস বর্ণনায় কখনো কখনো সন্দেহ করেন। যাকারিয়্যা বিন ইয়াহইয়া আস-সাজী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে তাহার স্মৃতিশক্তি দুর্বল। ইয়াহইয়া বিন মাঈন তাহাকে সিকাহ বলেছেন। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ১৫০১, ৭/৩১৪ নং পৃষ্ঠা] ৩. হুমরান বিন আইয়ান সম্পর্কে আবু হাতিম আর-রাযী তাহাকে শায়খ হিসেবে উল্লেখ করিয়াছেন। আবু দাউদ আস-সাজিসতানী বলেন, তিনি রাফিদী মতাবলম্বী। আহমাদ বিন হাম্বল বলেন, তিনি শীয়া মতাবলম্বী। আহমাদ বিন শায়বাহ আন-নাসাঈ বলেন, তিনি সিকাহ নন। ইবনি হাজার আল-আসকালনী বলেন, তিনি দুর্বল ও রাফিদী মতাবলম্বী। ইয়াহইয়া বিন মাঈন তাহাকে দুর্বল বলেছেন। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ১৪৯৭, ৭/৩০৬ নং পৃষ্ঠা]হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply