রুগ্ন ব্যক্তির নামাজ – কুনুত ও বসা অবস্থায় নফল নামাজ পড়া
রুগ্ন ব্যক্তির নামাজ – কুনুত ও বসা অবস্থায় নফল নামাজ পড়া >> সুনানে ইবনে মাজাহ হাদিস এর মুল সুচিপত্র পড়ুন
পর্বঃ ৫, অধ্যায়ঃ (১৩৯-১৪৬)=৮টি
৫/১৩৯. অধ্যায়ঃ রুগ্ন ব্যক্তির নামাজ
৫/১৪০. অধ্যায়ঃ বসা অবস্থায় নফল নামাজ পড়া।
৫/১৪১. অধ্যায়ঃ বসা অবস্থায় পড়া নামাজের নেকী দাঁড়ানো অবস্থায় পড়া নামাজের অর্ধেক।
৫/১৪২. অধ্যায়ঃ রোগাক্রান্ত অবস্থায় রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নামাজ।
৫/১৪৩. অধ্যায়ঃ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাঁর উম্মাতেরই একজনের পিছনে নামাজ পড়েন।
৫/১৪৪. অধ্যায়ঃ ইমাম নিযুক্ত করা হয় তাকে অনুসরণ করার জন্য।
৫/১৪৫. অধ্যায়ঃ ফজরের সলাতে দুআ কুনুত পড়া প্রসঙ্গে।
৫/১৪৬. অধ্যায়ঃ নামাজের অবস্থায় সাপ ও বিছা হত্যা করা।
৫/১৩৯. অধ্যায়ঃ রুগ্ন ব্যক্তির নামাজ
১২২৩. ইমরান বিন হুসায়ন [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি ভগন্দর রোগে আক্রান্ত ছিলাম। আমি নবী [সাঃআঃ]-এর নিকট এ অবস্থায় নামাজ পড়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বলেন, তুমি দাঁড়ানো অবস্থায় নামাজ পড়ো,তাতে সমর্থ না হলে বসে পড়ো, তাতেও সমর্থ না হলে কাত হয়ে শুয়ে নামাজ পড়। {১২২৩}
{১২২৩} তিরমিজি ৩৭১, আহমাদ ১৯৩১৮। তাহকিক আলবানিঃ সহিহ। তাখরিজ আলবানিঃ ইরওয়াহ ২৯০, সহিহ আবু দাউদ ৮৭৮।রুগ্ন ব্যক্তির নামাজ – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১২২৪. ওয়ায়িল বিন হুজুর [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি নবী [সাঃআঃ]-কে তাহাঁর ডান পায়ের উপর বসে নামাজ আদায় করিতে দেখেছি। {১২২৪}
তাহকিক আলবানিঃ দঈফ জিদ্দান।{১২২৪} জইফ জিদ্দান। উক্ত হাদিসের রাবি ১. জাবির [বিন ইয়াযীদ ইবনিল হারিস] সম্পর্কে ওয়াকী ইবনিল জাররাহ সিকাহ বললেও আহমাদ বিন হাম্বল বলেন, তিনি মিথ্যা কথা বলেন। ইয়াহইয়া বিন মাঈন বলেন, তিনি মিথ্যুক। আবু দাউদ আস-সাজিসতানী বলেন, তিনি নির্ভরযোগ্য নন। আল জাওযুজানী তাকে মিথ্যুক বলেছেন। ২. আবু হারিস সম্পর্কে ইমাম যাহাবী বলেন, তিনি অপরিচিত।হাদিসের তাহকিকঃ খুবই দুর্বল
৫/১৪০. অধ্যায়ঃ বসা অবস্থায় নফল নামাজ পড়া।
১২২৫. উম্মু সালামাহ [হিন্দ বিনতু আবু উমায়্যাহ ইবনিল মুগীরাহ] [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, সেই মহান সত্তার শপথ যিনি তাহাঁর জান নিয়েছেন, তিনি [ [সাঃআঃ]] মৃত্যুর কাছাকাছি সময়ে তাহাঁর অধিকাংশ [নফল] নামাজ বসা অবস্থায় পড়তেন। তাহাঁর কাছে অধিক পছন্দনীয় আমল ছিল তাই যা বান্দা নিয়মিত করিতে পারে তা পরিমাণে কম করে হলেও। {১২২৫}
{১২২৫} নাসায়ি ১৬৫৩-৫৫, আহমাদ ২৬১৮৬, ইবনি মাজাহ ৪২৩৭। তাহকিক আলবানিঃ সহিহ। রুগ্ন ব্যক্তির নামাজ – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১২২৬. আয়িশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী [সাঃআঃ] নফল নামাজের কিরাআত বসা অবস্থায় পড়তেন। অতঃপর তিনি যখন রুকূ করার ইচ্ছা করিতেন তখন কোন লোকের চল্লিশ আয়াত পরিমাণ পড়ার মত সময় কিয়াম করিতেন [দাঁড়িয়ে থাকতেন]। {১২২৬}
{১২২৬} বোখারি ১১১৮-১৯, ১১১৪৮; মুসলিম ৭৩০/১-৪, ৭৩১-৪, ৭৩১-৩; তিরমিজি ৩৭৪-৭৫, নাসায়ি ১৬৪৬-৫০, ১৬৫২, ১৬৫৬-৫৭; আবু দাউদ ৯৫৩-৫৬, আহমাদ ২৪৪৪০, ২৪৯২০, ২৫১৬০, ২৫৪০৯; মুওয়াত্ত্বা মালিক ৩১২-১৩; ইবনি মাজাহ ১২২৭-২৮। তাহকিক আলবানিঃ সহিহ। তাখরিজ আলবানিঃ সহিহ আবু দাউদ ৮৮০। রুগ্ন ব্যক্তির নামাজ – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১২২৭. আয়িশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর বয়স ভারী না হওয়া পর্যন্ত তিনি রাতের নামাজ দাঁড়িয়েই পড়তেন। অতঃপর তিনি বসা অবস্থায় নামাজ আদায় করিতে থাকেন। শেষে যখন তাহাঁর চল্লিশ বা তিরিশ আয়াত পরিমাণ বাকি থাকতো তখন তিনি দাঁড়িয়ে যেতেন, অতঃপর তা পড়া শেষ করে সাজদাহয় যেতেন। {১২২৭}
{১২২৭} বোখারি ১১১৮-১৯, ১১১৪৮; মুসলিম ৭৩০/১-৪, ৭৩১-৪, ৭৩১-৩; তিরমিজি ৩৭৪-৭৫, নাসায়ি ১৬৪৬-৫০, ১৬৫২, ১৬৫৬-৫৭; আবু দাউদ ৯৫৩-৫৬, আহমাদ ২৪৪৪০, ২৪৯২০, ২৫১৬০, ২৫৪০৯; মুওয়াত্ত্বা মালিক ৩১২-১৩; ইবনি মাজাহ ১২২৬, ১২২৮। তাহকিক আলবানিঃ সহিহ। তাখরিজ আলবানিঃ সহিহ আবু দাউদ ৮৭৯। রুগ্ন ব্যক্তির নামাজ – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১২২৮. আয়িশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
[আবদুল্লাহ্] বলেন, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর রাতের নামাজ সম্পর্কে আয়িশা [রাঃআঃ]-কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বলেন, তিনি কখনও দীর্ঘ রাত ধরে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করতো, আবার কখনও দীর্ঘ রাত ধরে বসে নামাজ আদায় করতো। তিনি দাঁড়ানো অবস্থায় কিরাআত পাঠ করলে রুকূ ও দাঁড়ানো অবস্থায় করিতেন এবং বসা অবস্থায় কিরাআত পড়লে রুকূও বসা অবস্থায় করিতেন। {১২২৮}
{১২২৮} বোখারি ১১১৮-১৯, ১১১৪৮; মুসলিম ৭৩০/১-৪, ৭৩১-৪, ৭৩১-৩; তিরমিজি ৩৭৪-৭৫, নাসায়ি ১৬৪৬-৫০, ১৬৫২, ১৬৫৬-৫৭; আবু দাউদ ৯৫৩-৫৬, আহমাদ ২৪৪৪০, ২৪৯২০, ২৫১৬০, ২৫৪০৯; মুওয়াত্ত্বা মালিক ৩১২-১৩; ইবনি মাজাহ ১২২৬, ১২২৭। তাহকিক আলবানিঃ সহিহ। তাখরিজ আলবানিঃ সহিহ আবু দাউদ ৮৮০, ১১৩৭। রুগ্ন ব্যক্তির নামাজ – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৫/১৪১. অধ্যায়ঃ বসা অবস্থায় পড়া নামাজের নেকী দাঁড়ানো অবস্থায় পড়া নামাজের অর্ধেক।
১২২৯. আবদুল্লাহ বিন আম্র [ইবনিল আস] [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
নবী [সাঃআঃ] তাকে অতিক্রম করে যাওয়ার সময় তিনি বসা অবস্থায় নামাজ পড়ছিলেন। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি বসে নামাজ পড়ে তার নেকী, যে ব্যক্তি দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ে তার অর্ধেক। {১২২৯}
{১২২৯} মুসলিম ৭৩৫, নাসায়ি ১৬৫৯, আবু দাউদ ৯৫০, আহমাদ ৬৪৭৬, ৬৭৬৪, ৬৮৪৪, ৬৮৫৫; মুওয়াত্ত্বা মালিক ৩০৯-১০, দারিমি ১৩৮৪। তাহকিক আলবানিঃ সহিহ। তাখরিজ আলবানিঃ ইরওয়াহ ২০৬, সহিহ আবু দাউদ ৮৭৬। রুগ্ন ব্যক্তির নামাজ – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১২৩০. আনাস বিন মালিক [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বের হয়ে এসে কিছু সংখ্যক লোককে বসা অবস্থায় নামাজ আদায় করিতে দেখেন। তিনি বলেন, বসে নামাজ আদায়কারির নামাজের নেকী দাঁড়িয়ে নামাজ আদায়কারীর নামাজের অর্ধেক। {১২৩০}
{১২৩০} আহমাদ ১২৮২৪, ১৩১০৫। তাহকিক আলবানিঃ সহিহ। রুগ্ন ব্যক্তির নামাজ – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১২৩১. ইমরান বিন হুসায়ন [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
যে ব্যক্তি বসে নামাজ পড়ে তার সম্পর্কে তিনি [সাঃআঃ]-কে জিজ্ঞাস করেন। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ে সে অধিক উত্তম। আর যে ব্যক্তি বসে নামাজ পড়ে তার নেকী দাঁড়িয়ে নামাজ আদায়কারীর অর্ধেক। আর যে ব্যক্তি শোয়া অবস্থায় নামাজ পড়ে তার নেকী বসা অবস্থায় নামাজ আদায়কারীর অর্ধেক। {১২৩১}
{১২৩১} বোখারি ১১১৫-১৬, তিরমিজি ৩৭১, নাসায়ি ১৬৬০, আবু দাউদ ৯৫১-৫২, আহমাদ ১৯৩৮৬, ১৯৩৯৮, ১৯৪৭২, ১৯৪৮১। তাহকিক আলবানিঃ সহিহ। তাখরিজ আলবানিঃ ইরওয়াহ ৪৫৫ সহিহ, আবু দাউদ ৮৭৭। রুগ্ন ব্যক্তির নামাজ – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৫/১৪২. অধ্যায়ঃ রোগাক্রান্ত অবস্থায় রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নামাজ।
১২৩২. আয়িশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাঁর মৃত্যুব্যাধিতে আক্রান্ত অবস্থায় বিলাল [রাঃআঃ] এসে তাঁকে নামাজের কথা অবহিত করেন। তিনি বলেন, তোমরা আবু বাক্রকে নির্দেশ দাও তিনি যেন লোকদের নামাজ পড়ান। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আবু বাকর [রাঃআঃ] নরম দিলের লোক। যখনই তিনি আপনার স্থানে দাঁড়াবেন তখনই কেঁদে ফেলবেন এবং [নামাজ পড়াতে] সক্ষম হইবেন না। অতএব আপনি যদি উমার [রাঃআঃ]-কে নির্দেশ দিতেন তাহলে তিনি লোকেদের নামাজ পড়াতেন। তিনি বলেন, তোমরা আবু বাক্রকে নির্দেশ দাও তিনি যেন লোকেদের নামাজ পড়ান। তোমরা [মুমিন জননীগণ] যেন ইউসুফ [আঃ]-এর সঙ্গিনীগনের অনুরূপ। আয়িশা [রাঃআঃ] বলেন, আমরা আবু বকর [রাঃআঃ]-এর নিকট লোক পাঠালে তিনি লোকেদের নিয়ে নামাজ পড়া শুরু করেন। ইত্যবসরে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] নিজেকে একটু হালকা [সুস্থ] বোধ করলে দু ব্যক্তির কাঁধে ভর করে মাটিতে তাহাঁর পদদ্বয় হেঁচড়াতে হেঁচড়াতে নামাজ আদায় করিতে রওয়ানা হন। আবু বকর [রাঃআঃ] তাহাঁর আগমন টের পেয়ে পেছনে সরে যেতে উদ্যোগী হন। নবী [সাঃআঃ] ইশারা করে তাকে স্বস্থানে স্থির থাকতে বলেন। রাবি বলেন, তিনি [মাসজিদে] এসে পৌঁছলে সাহায্যকারীদ্বয় তাঁকে আবু বাকর [রাঃআঃ] এর পাশে বসিয়ে দেন। আবু বকর [রাঃআঃ] নবী [সাঃআঃ]-এর ইকতিদা করিলেন এবং লোকেরা আবু বকর [রাঃআঃ]-এর ইকতিদা করে। {১২৩২}
{১২৩২} বোখারি ১৯৮, ৬৬৪-৬৫, ৬৭৯, ৬৮২-৮৩, ৬৮৭, ৭১২-১৩, ৭১৬, ২৫৮৮, ৩০৯৯, ৩৩৮৪, ৪৪৪২, ৫৭১৪, ৭৩০৩; মুসলিম ৪১৮, তিরমিজি ৩৬৭২, নাসায়ি ৮৩৩-৩৪, আবু দাউদ ২১৩৭, আহমাদ ২৩৫৪১, ২৫৩৪৮, ২৫৩৮৬, ২৫৬০৬; মুওয়াত্ত্বা মালিক ৪১৪, দারিমি ৮২, ১২৫৭; ইবনি মাজাহ ১২৩৩, ১৬১৮। তাহকিক আলবানিঃ সহিহ। তাখরিজ আলবানিঃ ইরওয়াহ ৫৪৮। রুগ্ন ব্যক্তির নামাজ – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১২৩৩. আয়িশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাঁর রোগগ্রস্ত অবস্থায় আবু বকর [রাঃআঃ]-কে নির্দেশ দেন যে, তিনি যেন লোকেদের নামাজ পড়ান। অতএব তিনি তাহাদের নামাজ পড়াচ্ছিলেন। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কিছুটা হালকা [সুস্থতা] বোধ করিলেন। অতএব তিনি বের হলেন, তখন আবু বকর [রাঃআঃ] লোকেদের ইমামতি করছিলেন। তিনি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে দেখে পেছনে হটতে উদ্যোগী হন। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাকে ইশারা করে স্বস্থানে থাকতে বলেন। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আবু বকর [রাঃআঃ]-এর ঠিক বামে বসলেন। আবু বকর [রাঃআঃ] তাহাঁর ইমামতিতে নামাজ পড়েন এবং লোকেরা আবু বকর [রাঃআঃ]-এর ইমামতিতে নামাজ পড়ে। {১২৩৩}
{১২৩৩} বোখারি ১৯৮, ৬৬৪-৬৫, ৬৭৯, ৬৮২-৮৩, ৬৮৭, ৭১২-১৩, ৭১৬, ২৫৮৮, ৩০৯৯, ৩৩৮৪, ৪৪৪২, ৫৭১৪, ৭৩০৩; মুসলিম ৪১৮, তিরমিজি ৩৬৭২, নাসায়ি ৮৩৩-৩৪, আবু দাউদ ২১৩৭, আহমাদ ২৩৫৪১, ২৫৩৪৮, ২৫৩৮৬, ২৫৬০৬; মুওয়াত্ত্বা মালিক ৪১৪, দারিমি ৮২, ১২৫৭; ইবনি মাজাহ ১২৩২, ১৬১৮। তাহকিক আলবানিঃ সহিহ। রুগ্ন ব্যক্তির নামাজ – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১২৩৪. সালিম বিন উবায়দ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাঁর অসুস্থ অবস্থায় বেহুঁশ হয়ে পড়লেন, অতঃপর হুঁশ ফিরে পেলে তিনি জিজ্ঞেস করেন ঃ নামাজের ওয়াক্ত হয়েছে কি? তারা বলিলেন, হাঁ। তিনি বলেন, বিলালকে আযান দিতে নির্দেশ দাও এবং আবু বাক্রকে লোকেদের নিয়ে নামাজ আদায় করিতে নির্দেশ দাও। তিনি আবার সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলেন, অতঃপর সংজ্ঞা ফিরে পেলে তিনি জিজ্ঞেস করেন ঃ নামাজের ওয়াক্ত হয়েছে কি? লোকেরা বললো, হাঁ। তিনি বলেন, বিলালকে আযান দিতে এবং আবু বাক্রকে লোকেদের নিয়ে নামাজ আদায় করিতে নির্দেশ দাও। তিনি পুনরায় সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলেন। তিনি সংজ্ঞা ফিরে পেলে জিজ্ঞেস করেন ঃ নামাজের ওয়াক্ত হয়েছে কি? লোকেরা বললো, হাঁ। তিনি বলেন, বিলালকে আযান দিতে এবং আবু বাক্রকে লোকেদের নিয়ে নামাজ আদায় করিতে নির্দেশ দাও। আয়িশা [রাঃআঃ] বলেন, আমার পিতা নরম দিলের মানুষ। তিনি যখন ঐ স্থানে দাঁড়াবেন তখন কেঁদে দিবেন এবং [কিরাআত পড়তে] সক্ষম হইবেন না। অতএব আপনি যদি অপর কাউকে নির্দেশ দিতেন। তিনি পুনরায় সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলেন। অতঃপর সংজ্ঞা ফিরে পেলে তিনি বলেন, বিলালকে আযান দিতে এবং আবু বাক্রকে লোকেদের নিয়ে নামাজ আদায় করিতে নির্দেশ দাও। তোমরা হলে ইউসুফ [আঃ]-এর সঙ্গী বা সঙ্গিনী। রাবি বলেন, বিলাল [রাঃআঃ]-কে নির্দেশ দেয়া হলে তিনি আযান দেন এবং আবু বাকর [রাঃআঃ]-কে নির্দেশ দেয়া হলে তিনি লোকেদের নিয়ে নামাজ পড়েন। ইত্যবসরে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কিছুটা হালকা বোধ করলে বলেন, দেখো তো আমার ভর দিয়ে যাওয়ার মত কাউকে পাওয়া যায় কিনা। বারীরা [রাঃআঃ] ও অপর এক ব্যক্তি এলে তিনি তাহাদের উপর ভর করে [মাসজিদে যান]। আবু বকর [রাঃআঃ] তাঁকে দেখিতে পেয়ে পিছনে সরতে যাচ্ছিলেন। তিনি তাঁকে ইশারায় স্বস্থানে স্থির থাকতে বলেন। অতঃপর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এসে আবু বকর [রাঃআঃ]-এর পাশে বসেন। আবু বাকর [রাঃআঃ] তার নামাজ শেষ করেন। অতঃপর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ইনতিকাল করেন। আবু আবদুল্লাহ্ [ইমাম ইবনি মাজাহ] বলেন, এ হাদীসটি গরীব। নাস্র বিন আলী ব্যতীত আর কেউ এটি বর্ণনা করেননি।
সহিহ। রুগ্ন ব্যক্তির নামাজ – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১২৩৫. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাঁর মরণ ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার পর আয়িশা [রাঃআঃ]-এর ঘরে ছিলেন। তিনি বলেন, তোমরা আলীকে আমার নিকট ডেকে আনো। আয়িশা [রাঃআঃ] বলেন, হে আল্লাহর রসূল! আমরা আবু বাক্রকেও আপনার নিকট ডেকে আনি? তিনি বলেন, তাকেও ডেকে আনো। হাফসা [রাঃআঃ] বলেন, হে আল্লাহর রসূল! আমরা উমারকেও আপনার নিকট ডেকে আনি? তিনি বলেন, তাকেও ডাকো। উম্মুল ফাদল [রাঃআঃ] বলেন, হে আল্লাহর রসূল! আব্বাস [রাঃআঃ]-কেও আপনার নিকট ডেকে আনি? তিনি বলেন, হাঁ। তারা একত্র হলে নবী [সাঃআঃ] মাথা উত্তোলন করে তাকান এবং নিশ্চুপ থাকেন উমার [রাঃআঃ] বলেন, তোমরা নবী [সাঃআঃ]-এর নিকট থেকে উঠে যাও। অতঃপর বিলাল [রাঃআঃ] এসে তাঁকে নামাজ সম্পর্কে অবহিত করেন। তিনি বলেন, আবু বাক্রকে নির্দেশ দাও তিনি যেন লোকদের নিয়ে নামাজ পড়েন। আয়িশা [রাঃআঃ] বলেন, হে আল্লাহর রসূল! আবু বকর [রাঃআঃ] নরম দিলের লোক, তিনি কিরাআত পড়তে সক্ষম হইবেন না, তিনি আপনাকে দেখিতে না পেলেই কেঁদে ফেলবেন এবং লোকেরাও কেঁদে ফেলবে। অতএব আপনি যদি উমার [রাঃআঃ]-কে লোকেদের নামাজ পড়াবার নির্দেশ দিতেন! আবু বকর [রাঃআঃ] বেরিয়ে এসে লোকেদের সাথে নিয়ে নামাজ শুরু করিলেন। ইত্যবসরে নবী [সাঃআঃ] হালকা বোধ করিলেন এবং দুজন লোকের উপর ভর করে তাহাঁর দু পা মাটিতে হেঁচড়াতে হেঁচড়াতে বের হলেন। লোকেরা তাকে দেখিতে পেয়ে সুবহানাল্লাহ বলে আবু বকর [রাঃআঃ]-কে সতর্ক করলো। তিনি পেছনে সরে যেতে উদ্যোগী হলে নবী [সাঃআঃ] তাকে ইশারা করে স্বস্থানে থাকতে বলেন। নবী [সাঃআঃ] এসে তার ডান পাশে বসলেন এবং আবু বকর [রাঃআঃ] দাঁড়ালেন। আবু বাকর [রাঃআঃ] নবী [সাঃআঃ]-এর ইকতিদা করিলেন এবং লোকেরা আবু বাকর [রাঃআঃ]-এর ইকতিদা করলো। ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] বলেন, আবু বকর [রাঃআঃ] যে পর্যন্ত কিরাআত পড়েছিলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তারপর থেকে কিরাআত শুরু করেন। ওয়াকী [রাঃআঃ] বলেন, এটাই সুন্নাত। রাবি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাঁর এই রোগেই ইনতিকাল করেন। {১২৩৫}
{১২৩৫} আহমাদ ৩৩৪৫ তাহকিক আলবানিঃ হাসান। হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
৫/১৪৩. অধ্যায়ঃ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাঁর উম্মাতেরই একজনের পিছনে নামাজ পড়েন।
১২৩৬. মুগীরাহ বিন শুবাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী [সাঃআঃ] অনুপস্থিত ছিলেন। আমরা সম্প্রদায়ের নিকট যখন পৌঁছলাম তখন আবদুর রহমান বিন আওফ [রাঃআঃ] লোকেদের এক রাকআত পড়ানো শেষ করিয়াছেন মাত্র। নবী [সাঃআঃ] উপস্থিত অনুভব করে তিনি পেছনে সরে যেতে উদ্যোগী হলেন। নবী [সাঃআঃ] তাকে নামাজ পড়ে শেষ করিতে ইশারা করেন। [নামাজ শেষে] তিনি বলেন, তুমি উত্তম কাজ করেছো। তুমি এমনটিই করিবে। {১২৩৬}
{১২৩৬} মুসলিম ২৭১-২, নাসায়ি ১০৯, আহমাদ ১৭৭০৫, ১৭৭১০। তাহকিক আলবানিঃ সহিহ। রুগ্ন ব্যক্তির নামাজ – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৫/১৪৪. অধ্যায়ঃ ইমাম নিযুক্ত করা হয় তাকে অনুসরণ করার জন্য।
১২৩৭. আয়িশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] রোগাক্রান্ত হলে তাহাঁর কতক সহাবী তাঁকে দেখিতে এলেন। নবী [সাঃআঃ] বসা অবস্থায় নামাজ পড়লেন, কিন্তু তারা তাহাঁর সাথে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়লেন। তিনি তাহাদেরকে ইশারা করে বসতে বলেন। তিনি নামাজ শেষে বলেন, ইমাম নিযুক্ত করা হয় তাকে অনুসরন করার জন্য। অতএব তিনি রুকূতে গেলে তোমরাও রুকূতে যাও, তিনি মাথা তুললে তোমরাও মাথা তোল এবং তিনি বসে নামাজ পড়লে তোমরাও বসে নামাজ পড়ো [বোখারি, নং ৩৫৪]। {১২৩৭}
{১২৩৭} বোখারি ৬৮৮, ১১১৩, ১২৩৬, ৫৬৫৮; মুসলিম ৪১২, আবু দাউদ ৬০৫, আহমাদ ২৩৭২৯, ২৩৭৮২, ২৩৮৭৫, ২৪৬২৫, ২৫০৯০; মুওয়াত্ত্বা মালিক ৩০৭। তাহকিক আলবানিঃ সহিহ। তাখরিজ আলবানিঃ সহিহ আবু দাউদ ৬১৮। রুগ্ন ব্যক্তির নামাজ – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১২৩৮. আনাস বিন মালিক [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
নবী [সাঃআঃ] ঘোড়ার পিঠ থেকে নিক্ষিপ্ত হলে তাহাঁর ডান পার্শ্বদেশ আহত হয়। আমরা তাঁকে দেখিতে গেলাম। নামাজের ওয়াক্ত হয়ে গেলে তিনি বসা অবস্থায় আমাদের নামাজ পড়ান এবং আমরাও তাহাঁর পেছনে বসা অবস্থায় নামাজ পড়ি। তিনি নামাজ শেষ করে বলেন, ইমাম নিযুক্ত করা হয় তাকে অনুসরণ করার জন্য। তিনি যখন তাকবীর বলেন, তোমরাও তাকবীর বলো, তিনি যখন রুকূ করেন, তোমরাও রুকূ করো, তিনি যখন
سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ
সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ বলেন, তোমরা বলো,
رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ
রাব্বানা ওয়া লাকাল হাম্দ।
তিনি যখন সাজদাহ করেন, তোমরাও সাজদাহ করো এবং তিনি যখন বসা অবস্থায় নামাজ পড়েন, তোমরাও সকলে বসা অবস্থায় নামাজ পড়ো। {১২৩৮}
{১২৩৮} বোখারি ৬৮৯, ৭৩২-৩৩, ৮০৫, ১১১৪; মুসলিম ৪১১, তিরমিজি ৩৬১, নাসায়ি ৭৯৪, ৮৩২, ১০৬১; আবু দাউদ ৬০১, আহমাদ ১১৬৬৪, ১২২৪১; মুওয়াত্ত্বা মালিক ৩০৬, দারিমি ১২৫৬, ইবনি মাজাহ ৮৭৬। তাহকিক আলবানিঃ সহিহ। তাখরিজ আলবানিঃ ইরওয়াহ ৩৯৪, সহিহ আবু দাউদ ৬১৪। রুগ্ন ব্যক্তির নামাজ – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১২৩৯. আবু হুরায়রা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, ইমাম নিযুক্ত করা হয় তাকে অনুসরণ করার জন্য। অতএব তিনি যখন তাকবীর বলেন, তোমরাও তাকবীর বলো, তিনি যখন রুকূতে যান, তোমরাও রুকূতে যাও, তিনি যখন
سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ
সামিআল্লাহু লিমান হামিদা
বলেন, তোমরা তখন
رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ
রাব্বানা ওয়ালাকাল হাম্দ
বলো, তিনি দাঁড়ানো অবস্থায় নামাজ পড়লে তোমরাও দাঁড়ানো অবস্থায় নামাজ পড়ো এবং তিনি বসা অবস্থায় নামাজ পড়লে তোমরাও বসা অবস্থায় নামাজ পড়ো। {১২৩৯}
{১২৩৯} বোখারি ৭২২, ৭৩৪; মুসলিম ৪১৪-১৭, নাসায়ি ৯২১-২২, আবু দাউদ ৬০৩, আহমাদ ৭১০৪, ৮২৯৭, ৮৬৭২, ৯০৭৪, ৯১৫১, ২৭২০৯, ২৭২১৫, ২৭২৭৩, ২৭৩৮৩; দারিমি ১৩১১, ইবনি মাজাহ ৮৪৬, ৯৬০। তাহকিক আলবানিঃ সহিহ। তাখরিজ আলবানিঃ ইরওয়াহ ১২১-১২২, সহিহ, আবু দাউদ ৬১৬, ৬১৯। রুগ্ন ব্যক্তির নামাজ – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১২৪০. জাবির [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] অসুস্থ হয়ে পড়লেন। তিনি বসা অবস্থায় [ইমামতি করেন], আমরা তাহাঁর পিছনে নামাজ পড়লাম, আবু বকর [রাঃআঃ] লোকদের শুনানোর জন্য উচ্চকন্ঠে তাহাঁর তাকবীরের পুনরাবৃত্তি করেন। তিনি আমাদের দিকে লক্ষ্য করে আমাদেরকে দাঁড়ানো অবস্থায় দেখলেন। তিনি ইশারা করলে আমরা বসে পড়লাম এবং বসা অবস্থায় তাহাঁর সাথে নামাজ পড়লাম। তিনি সালাম ফিরিয়ে বললেনঃ তোমরা প্রায় পারস্য ও রোমবাসীদের মত কাজ করে ফেলেছিলে। তাহাদের নেতারা বসা থাকতো এবং তারা তাহাদের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতো, কিন্তু তোমরা তা করো না। তোমরা তোমাদের ইমামদের অনুসরণ করো। তিনি দাঁড়িয়ে নামাজ পড়লে তোমরাও দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ো এবং তিনি বসে নামাজ পড়লে তোমরাও বসে নামাজ পড়ো। {১২৪০}
{১২৪০} মুসলিম ৪১৩, নাসায়ি ৭৯৮, ১২০০; আবু দাউদ ৬০৫, আহমাদ ১৪১৮০। তাহকিক আলবানিঃ সহিহ। তাখরিজ আলবানিঃ সহিহ আবু দাউদ ৬১৫, ৬১৯। রুগ্ন ব্যক্তির নামাজ – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৫/১৪৫. অধ্যায়ঃ ফজরের সলাতে দুআ কুনুত পড়া প্রসঙ্গে।
১২৪১. আবু মালিক আল-আশজাঈ সাদ বিন তারিক হইতে বর্ণিতঃ
আমি আমার পিতা তারিক বিন আশইয়াম বিন মাস্ঊদ [রাঃআঃ] কে বললাম, হে পিতা! আপনি অবশ্যই রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ], আবু বকর [রাঃআঃ], উমার [রাঃআঃ] ও উসমান [রাঃআঃ]-এর পিছনে নামাজ আদায় করিয়াছেন। তাঁরা কি ফজরের সলাতে দুআ কুনূত পড়তেন? তিনি বলিলেন, হে বৎস! এটা তো বিদয়াত। {১২৪১}
{১২৪১} তিরমিজি ৪০২, নাসায়ি ১০৮০, আহমাদ ১৫৪৪৯, ২৬৬৬৮। তাহকিক আলবানিঃ সহিহ। তাখরিজ আলবানিঃ ইরওয়াহ ৪৩৫, মিশকাত ১২৯২। রুগ্ন ব্যক্তির নামাজ – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১২৪২. উম্মু সালামাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ফজরের সলাতে দুআ কুনূত পড়তে নিষেধ করিয়াছেন। {১২৪২}
{১২৪২} নাই তাহকিক আলবানিঃ মাওযু। তাখরিজ আলবানিঃ ইরওয়া ৪৩৬ জইফ, তিরমিজি ৪০১, ৪০২ সহিহ, ইবনি খুযাইমাহ ১০৯৪ জইফ। উক্ত হাদিসের রাবি ১. মুহাম্মাদ বিন ইয়ালা যুনবুর সম্পর্কে ইবনি হিব্বান সিকাহ বললেও তিনি বলেন, তার মাধ্যমে দলীল গ্রহণযোগ্য হইবে না। ইমাম বোখারি বলেন, তার ব্যাপারে সমালোচনা রয়েছে। আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, তার হাদিস প্রত্যাখ্যানযোগ্য। আহমাদ বিন হাম্বল বলেন, তিনি জাহমিয়া দলের অন্তর্ভুক্ত। ইমাম নাসাঈ বলেন, তিনি সিকাহ নন। আস-সাজী বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় মুনকার। ২. আম্বাসা বিন আব্দুর রহমান সম্পর্কে ইমাম বোখারি বলেন, হাদিস বিশারদগণ তাকে প্রত্যাখ্যান করিয়াছেন। আবু দাউদ আস-সাজিসতানী তাকে দুর্বল বলে আখ্যায়িত করিয়াছেন। ইমাম তিরমিযি তাকে দুর্বল বলেছেন। আবু যুরআহ আর-রাযী বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় মুনকার। আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, তিনি বানিয়ে হাদিস বর্ণনা করেন, তার হাদিস প্রত্যাখ্যানযোগ্য। ৩. আবদুল্লাহ বিন নাফি সম্পর্কে ইয়াহইয়া বিন মাঈন বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় দুর্বল। আলী ইবনিল মাদীনী বলেন, তিনি একাধিক মুনকার হাদিস বর্ণনা করিয়াছেন। ইমাম বোখারি বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় মুনকার। মুহাম্মাদ বিন সাদ তাকে দুর্বল হিসেবে আখ্যায়িত করিয়াছেন। আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় মুনকার ও অধিক দুর্বল। ইমাম নাসাঈ বলেন, তার হাদিস প্রত্যাখ্যানযোগ্য।হাদিসের তাহকিকঃ জাল হাদিস
১২৪৩. আনাস বিন মালিক [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ফজরের সলাতে দুআ কুনূত পড়তেন। এতে তিনি আরবের কতক গোত্রকে এক মাস ধরে অভিসম্পাত করেছিলেন, অতঃপর তা ত্যাগ করেন। {১২৪৩}
{১২৪৩} বোখারি ৭৯৮, ১০০১-২, ৩১৭০, ৪০৮৮, ৪০৯০-৯২, ৪০৯৪-৯৬, ৬৩৯৪; মুসলিম ৬৭১-৪, নাসায়ি ১০৭০-৭১, ১০৭৭, ১০৭৯; আবু দাউদ ১৪৪৪-৪৫, আহমাদ ১২২৯৪, ১২৪৩৮, ১২৭০৭, ১৩৫৩৯; দারিমি ১৫৯৬, ১৫৯৯; ইবনি মাজাহ ১১৮৩-৮৪। তাহকিক আলবানিঃ সহিহ। তাখরিজ আলবানিঃ ইরওয়াহ ১৬১। রুগ্ন ব্যক্তির নামাজ – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১২৪৪. আবু হুরাইরাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ফাজরের সলাতে [রুকূ থেকে] মাথা তুলে বললেনঃ “হে আল্লাহ! ওয়ালীদ ইবনিল ওয়ালীদ, সালামাহ বিন হিশাম, আইয়াশ বিন আবু রবীআ ও মাক্কাহর অসহায় মুসলিমদের নাজাত দিন। হে আল্লাহ! মুদার গোত্রের উপর আপনার নিপীড়ন জোরদার করুন এবং তাহাদের উপর ইউসুফ [আঃ]-এর সময়কার দুর্ভিক্ষের মত কয়েক বছরের দুর্ভিক্ষ কার্যকর করুন”। {১২৪৪}
{১২৪৪} বোখারি ৮০৪, ১০০৬, ২৯৩২, ৩৩৮৬, ৪৫৬০, ৪৫৯৮, ৬২০০, ৬৩৯৩, ৬৯২৪; মুসলিম ৬৭১-২, নাসায়ি ১০৭৩-৭৪, আবু দাউদ ১৪৪২, আহমাদ ৭২১৯, ৭৪১৫, ৯৭২২, ১৫৯৫। তাহকিক আলবানিঃ সহিহ।রুগ্ন ব্যক্তির নামাজ – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৫/১৪৬. অধ্যায়ঃ নামাজের অবস্থায় সাপ ও বিছা হত্যা করা।
১২৪৫. আবু হুরাইরাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
নবী [সাঃআঃ] নামাজরত অবস্থায় ও দুটি কালো প্রানী হত্যার নির্দেশ দিয়েছেনঃ বিছা ও সাপ। {১২৪৫}
{১২৪৫} তিরমিজি ৩৯০, নাসায়ি ১২০২-৩, আবু দাউদ ৯২১, আহমাদ ৭১৩৮, ৭৩৩২, ৭৪২০, ৭৭৫৮, ৯৭৬৬, ৯৭৯৮, ৯৯৮৪; দারিমি ১৫০৪। তাহকিক আলবানিঃ সহিহ। তাখরিজ আলবানিঃ সহিহ আবু দাউদ ৮৫৪, মিশকাত ১০০৪।রুগ্ন ব্যক্তির নামাজ – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১২৪৬. আয়িশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
নবী [সাঃআঃ]-কে তাহাঁর নামাজরত অবস্থায় একটি বিছা দংশন করে। তিনি বলেন, আল্লাহ বিছাকে অভিশপ্ত করুন, সে সলাতী ও অসলাতী কাউকেই ছাড়ে না। তোমরা একে হারাম শরীফে ও তার বাইরে সর্বত্র হত্যা করো। {১২৪৬}
{১২৪৬} আহমাদ ২৫৬০১ তাহকিক আলবানিঃ সহিহ। তাখরিজ আলবানিঃ সহিহা ৫৪৭। উক্ত হাদিসের রাবি হাকাম বিন আবদুল মালিক সম্পর্কে ইয়াহইয়া বিন মাঈন বলেন, তিনি সিকাহ নন বরং দুর্বল। ইবনি খিরাশ বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় দুর্বল। আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় নির্ভরযোগ্য নন বরং তিনি হাদিস বর্ণনায় ইদতিরাব করেন। আবু দাউদ আস-সাজিসতানী বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় মুনকার। ইমাম নাসাঈ বলেন, তিনি নির্ভরযোগ্য নন। উক্ত হাদিসটি শাহিদ এর ভিত্তিতে সহিহ।রুগ্ন ব্যক্তির নামাজ – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১২৪৭. আবু রাফি [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
নবী [সাঃআঃ] নামাজ অবস্থায় একটি বিছা হত্যা করেন। {১২৪৭}
জইফ। উক্ত হাদিসের রাবি মিনদাল বিন আলী সম্পর্কে আহমাদ বিন হাম্বল বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় দুর্বল। ইয়াহইয়া বিন মাঈন বলেন, কোন সমস্যা নেই তবে অন্যত্রে বলেন, তিনি দুর্বল। ইয়াকুব বিন শায়বাহ বলেন, তিনি সত্যবাদী কিন্তু হাদিস বর্ণনায় দুর্বল। ইবনি নুমায়র বলেন, তিনি কিছু হাদিসের মাঝে সংমিশ্রণ করিয়াছেন। আবু যুরআহ আর-রাযী বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় দুর্বল। ২. [মুহাম্মাদ বিন উবায়দুল্লাহ] ইবনি আবু রাফি সম্পর্কে ইমাম বোখারি বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় দুর্বল। আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় দুর্বল ও অধিক মুনকার। ইমাম দারাকুতনী বলেন, তিনি প্রত্যাখ্যানযোগ্য।হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
Leave a Reply