নামাজে ভুল হলে করনীয় সাহু সাজদাহ, ওজু ছুটে গেলে
নামাজে ভুল হলে করনীয় সাহু সাজদাহ, ওজু ছুটে গেলে >> সুনানে ইবনে মাজাহ হাদিস এর মুল সুচিপত্র পড়ুন
পর্বঃ ৫, অধ্যায়ঃ (১২৯-১৩৬)=৮টি
- ৫/১২৯. অধ্যায়ঃ নামাজের মধ্যে ভুল হলে [সাহু সাজদাহ]।
- ৫/১৩০. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি ভুলবশত যোহরের নামাজ পাঁচ রাকআত পড়লো।
- ৫/১৩১. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি দ্বিতীয় রাকআতে [না বসে] ভুলে দাঁড়িয়ে গেলো।
- ৫/১৩২.অধ্যায়ঃ কোন ব্যক্তির সলাতে সন্দেহ হলে সে ধারণার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিবে।
- ৫/১৩৩.অধ্যায়ঃ নামাজের মধ্যে কোন ব্যক্তির সন্দেহ হলে সে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছতে চিন্তা করিবে।
- ৫/১৩৪. অধ্যায়ঃ ভুল করে কেউ দ্বিতীয় বা তৃতীয় রাকআতে সালাম ফিরালে।
- ৫/১৩৫. অধ্যায়ঃ সালাম ফিরানোর পূর্বে দুটি সাজদাহ সাহু সম্পর্কে
- ৫/১৩৬.অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি সালাম ফিরানোর পর দুটি সাহু সাজদাহ করে।
৫/১২৯. অধ্যায়ঃ নামাজের মধ্যে ভুল হলে [সাহু সাজদাহ]।
১২০৩. আবদুল্লাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] নামাজ পড়লেন এবং তাতে বেশী অথবা কম করিলেন [ইবরাহীম বলেন, সন্দেহ আমার হয়েছে]। তাঁকে বলা হলো, ইয়া রসূলাল্লাহ! সলাতে কি কিছু বাড়ানো হয়েছে? তিনি বলেন, আমি তো একজন মানুষই, আমিও বিস্মৃত হই, যেমন তোমরা বিস্মৃত হও। অতএব তোমাদের কেউ [সলাতে] বিস্মৃত হলে সে যেন বসা অবস্থায় দুটি সাজদাহ করে। অতঃপর নবী [সাঃআঃ] মোড় ঘুরে দুটি সাজদাহ করিলেন। {১২০৩}
{১২০৩} বোখারি ৪০১, ৪০৪, ১২২৬, ৬৬৭১, ৭২৪৯; মুসলিম ৫৭১-৭, তিরমিজি ৩৯২-৯৩, নাসায়ি ১২৪০-৪৬, ১২৫৪-৫৯; আবু দাউদ ১০১৯-২০, ১০২২; আহমাদ ৪১৫৯, দারিমি ১৪৯৮, ইবনি মাজাহ ১২০৫, ১২১১-১২, ১২১৮। তাহকিক আলবানিঃ সহিহ। তাখরিজ আলবানিঃ ইরওয়াহ ৩৩৯, সহিহ আবু দাউদ ৯৩৭। নামাজে ভুল হলে করনীয় – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১২০৪. আবু সাঈদ আল-খুদরী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
আবু সাঈদ আল-খুদরী [রাঃআঃ]-কে জিজ্ঞেস করে বলেন, আমাদের কেউ নামাজ পড়লো কিন্তু সে যে কত রাকআত পড়লো তা মনে করিতে পারছে না। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, তোমাদের কেউ নামাজ পড়লো কিন্তু সে যে কতো রাকআত পড়লো তা মনে করিতে না পারলে বসা অবস্থায় যেন দুটি সাজদাহ করে। {১২০৪}
{১২০৪} মুসলিম ৫৭১, তিরমিজি ৩৯৬, নাসায়ি ১২৩৮-৩৯, আবু দাউদ ১০২৪, ১০২৬, ১০২৯; আহমাদ ১০৬৯৮, ১০৯২৭, ১০৯৯০, ১১০৭৬, ১১০৮৬, ১১১০৭, ১১২৯২, ১১৩৭৩, ১১৩৮৫, ২৭৭৩৫; মুওয়াত্ত্বা মালিক ২১৪, দারিমি ১৪৯৫, ইবনি মাজাহ ১২১০। তাহকিক আলবানিঃ সহিহ। তাখরিজ আলবানিঃ সহিহা ১৩৯২, সহিহ আবু দাউদ ৯৩৯। উক্ত হাদিসের রাবি ইয়াদ [বিন হিলাল] সম্পর্কে ইমামগণ বলেন, তিনি মাজহুল বা অপরিচিত। উক্ত হাদিসটি শাহিদ এর ভিত্তিতে সহিহ। নামাজে ভুল হলে করনীয় – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৫/১৩০. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি ভুলবশত যোহরের নামাজ পাঁচ রাকআত পড়লো।
১২০৫. আবদুল্লাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী [সাঃআঃ] যোহরের নামাজ পাঁচ রাকআত পড়লেন। তাঁকে বলা হলো, সলাতে কি বাড়ানো হয়েছে? তিনি বলেন, তা কিভাবে? অতএব তাঁকে [বুঝিয়ে] বলা হলে তিনি পা ঘুরিয়ে নিয়ে দুটি সাজদাহ করেন। {১২০৫}
{১২০৫} বোখারি ৪০১, ৪০৪, ১২২৬, ৬৬৭১, ৭২৪৯; মুসলিম ৫৭১-৭, তিরমিজি ৩৯২-৯৩, নাসায়ি ১২৪০-৪৬, ১২৫৪-৫৯; আবু দাউদ ১০১৯-২০, ১০২২; আহমাদ ৪১৫৯, দারিমি ১৪৯৮, ইবনি মাজাহ ১২০৩, ১২১১-১২, ১২১৮। তাহকিক আলবানিঃ সহিহ। তাখরিজ আলবানিঃ সহিহ আবু দাউদ ৯৩৪। নামাজে ভুল হলে করনীয় – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৫/১৩১. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি দ্বিতীয় রাকআতে [না বসে] ভুলে দাঁড়িয়ে গেলো।
১২০৬. বিন বুহায়নাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
নবী [সাঃআঃ] নামাজ পড়লেন। [রাবি বলেন] আমার মনে হয় তা ছিল যোহরের [বা আসরের] নামাজ। দ্বিতীয় রাকআতে না বসে তিনি দাঁড়িয়ে গেলেন। শেষে তিনি সালাম ফিরানোর পূর্বে দুটি সাজদাহ করিলেন। {১২০৬}
{১২০৬} বোখারি ৮২৯, মুসলিম ৫৭০/১-৩, তিরমিজি ৩৯১, নাসায়ি ১১৭৭-৭৮, ১২২২-২৩, ১২৬১; আহমাদ ২২৪১২, ২২৪২৩; মুওয়াত্ত্বা মালিক ২১৮-১৯, দারিমি ১৪৯৯, ১৫০০; ইবনি মাজাহ ১২০৭। তাহকিক আলবানিঃ সহিহ। তাখরিজ আলবানিঃ ইরওয়াহ ৩৩৮, সহিহ আবু দাউদ ৯৪৬। নামাজে ভুল হলে করনীয় – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১২০৭. ইবনি বুহায়নাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
নবী [সাঃআঃ] যোহরের দ্বিতীয় রাকআতে বসতে ভুলে গিয়ে দাঁড়িয়ে যান। নামাজ শেষে তিনি সালাম ফিরানোর আগে দুটি সাহু সাজদাহ করেন এবং সালাম ফিরান। {১২০৭}
{১২০৭} বোখারি ৮২৯, মুসলিম ৫৭০/১-৩, তিরমিজি ৩৯১, নাসায়ি ১১৭৭-৭৮, ১২২২-২৩, ১২৬১; আহমাদ ২২৪১২, ২২৪২৩; মুওয়াত্ত্বা মালিক ২১৮-১৯, দারিমি ১৪৯৯, ১৫০০; ইবনি মাজাহ ১২০৬। তাহকিক আলবানিঃ সহিহ। নামাজে ভুল হলে করনীয় – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১২০৮. মুগীরাহ বিন শুবাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, তোমাদের কেউ দ্বিতীয় রাকাতের পর ভুলে দাঁড়িয়ে গেলে এবং তখনও যদি তার দাঁড়ানো সম্পূর্ণ না হয়, তবে সে যেন বসে যায়। আর যদি সে পূর্ণরূপে দাঁড়িয়ে যায় তবে সে যেন না বসে এবং [শেষে] দুটি সাহু সাজদাহ করে। {১২০৮}
{১২০৮} তিরমিজি ৩৬৪-৬৫, আবু দাউদ ১০৩৬-৩৭, আহমাদ ১৭৬৯৮, ১৭৭০৮, ১৭৭৫১, ১৭৭৬৭; দারিমি ১৫০১। তাহকিক আলবানিঃ সহিহ। তাখরিজ আলবানিঃ ইরওয়াহ ১০৯-১১০, মিশকাত ১০২০, সহিহা ৩২১, সহিহ আবু দাউদ ৯৪৯-৯৫০। উক্ত হাদিসের রাবি জাবির [বিন ইয়াযীদ ইবনিল হারিস] সম্পর্কে ওয়াকী ইবনিল জাররাহ সিকাহ বললেও আহমাদ বিন হাম্বল বলেন, তিনি মিথ্যা কথা বলেন। ইয়াহইয়া বিন মাঈন বলেন, তিনি মিথ্যুক। আবু দাউদ আস-সাজিসতানী বলেন, তিনি নির্ভরযোগ্য নন। আল জাওযুজানী তাকে মিথ্যুক বলেছেন। উক্ত হাদিসটি শাহিদ এর ভিত্তিতে সহিহ। নামাজে ভুল হলে করনীয় – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৫/১৩২.অধ্যায়ঃ কোন ব্যক্তির সলাতে সন্দেহ হলে সে ধারণার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিবে।
১২০৯. আবদুর রহমান বিন আওফ [রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনিয়াছিঃ তোমাদের কারো নামাজের এক ও দু রাকআতের মধ্যে সন্দেহ হলে সে যেন তাকে এক রাকআত গণ্য করে। তার দু ও তিন রাকআতের মধ্যে সন্দেহ হলে সে যেন তাকে দু রাকআত গণ্য করে। আর তিন ও চার রাকআতের মধ্যে সন্দেহ হলে সে যেন তাকে তিন রাকআত গণ্য করে, তারপর অবশিষ্ট নামাজ পূর্ণ করে, যাতে সন্দেহটা অতিরিক্ত সলাতে হয়। অতঃপর সে যেন সালাম ফিরানোর পূর্বে, বসা অবস্থায় দুটি সাজদাহ করে। {১২০৯}
{১২০৯} তিরমিজি ৩৯৮, আহমাদ ১৬৫৯। তাহকিক আলবানিঃ সহিহ। তাখরিজ আলবানিঃ সহিহা ১৩৫৬। নামাজে ভুল হলে করনীয় – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১২১০. আবু সাঈদ আল-খুদরী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, তোমাদের কারো নামাজের মধ্যে তার সন্দেহ হলে সে যেন সন্দেহ পরিহার করে প্রবল ধারণার উপর ভিত্তি করে। প্রবল ধারণার ভিত্তিতে নামাজ শেষ করার পর দুটি [সাহু] সাজদাহ করিবে। এই অবস্থায় যদি তার নামাজ আগেই পূর্ণ হয়ে থাকে, তাহলে [ধারণার ভিত্তিতে পড়া] অতিরিক্ত রাকআতটি হইবে নফল। আর যদি নামাজ [আগেই] অপূর্ণ থেকে থাকে তাহলে ঐ রাকআতটি হইবে তার নামাজ পূর্ণ করার সহায়ক এবং সাজদাহ দুটি হইবে শয়তানের জন্য নাকে খত দেয়ার মত অপ্রীতিকর। {১২১০}
{১২১০} মুসলিম ৫৭১, তিরমিজি ৩৯৬, নাসায়ি ১২৩৮-৩৯, আবু দাউদ ১০২৪, ১০২৬, ১০২৯; আহমাদ ১০৬৯৮, ১০৯২৭, ১০৯৯০, ১১০৭৬, ১১০৮৬, ১১১০৭, ১১২৯২, ১১৩৭৩, ১১৩৮৫, ২৭৭৩৫; মুওয়াত্ত্বা মালিক ২১৪, দারিমি ১৪৯৫, ইবনি মাজাহ ১২০৪। তাহকিক আলবানিঃ হাসান সহিহ। তাখরিজ আলবানিঃ সহিহ ইরওয়াহ ৪১১, সহিহ আবু দাউদ ৯৩৯। উক্ত হাদিসের রাবি আবু খালিদ আল আহমার সম্পর্কে ইয়াহইয়া বিন মাঈন বলেন, তিনি সত্যবাদী কিন্তু তার হাদিস দলীলযোগ্য নয়। আলী ইবনিল মাদীনী বলেন, তিনি সিকাহ। আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, তিনি সত্যবাদী। ইমাম নাসাঈ বলেন, কোন সমস্যা নেই। ইবনি আদী বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় সালেহ কিন্তু হাদিস বর্ণনায় সংমিশ্রণ ও ভুল করেন।হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহিহ
৫/১৩৩.অধ্যায়ঃ নামাজের মধ্যে কোন ব্যক্তির সন্দেহ হলে সে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছতে চিন্তা করিবে।
১২১১. আবদুল্লাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কোন এক ওয়াক্তের নামাজ পড়লেন। আমরা বুঝতে পারলাম না যে, তিনি বেশি পড়লেন নাকি কম পড়লেন। তিনি আমাদের জিজ্ঞেস করলে আমরা তাঁকে [অনুমানে] বললাম। তিনি তাহাঁর পা ঘুরিয়ে কিবলামুখী হয়ে দুটি সাজ়দাহ করেন, অতঃপর সালাম ফিরান। অতঃপর তিনি আমাদের দিকে মুখ ঘুরিয়ে [বসে] বলেন, সলাতে নতুন কিছু ঘটলে অবশ্যই আমি তা তোমাদের অবহিত করতাম। অবশ্যই আমি একজন মানুষ; আমিও বিস্মৃত হই, যেমন তোমরা বিস্মৃত হও। অতএব আমি বিস্মৃত হলে তোমরা আমাকে স্মরণ করিয়ে দিবে। তোমাদের কারো নামাজের মধ্যে সন্দেহ সৃষ্টি হলে সে যেন চিন্তা করে। আর এটাই যথার্থতার অধিক নিকটবর্তী। সে তার ভিত্তিতে নামাজ পূর্ণ করিবে, সালাম ফিরাবে এবং দুটি সাজদাহ করিবে। {১২১১}
{১২১১} বোখারি ৪০১, ৪০৪, ১২২৬, ৬৬৭১, ৭২৪৯; মুসলিম ৫৭১-৭, তিরমিজি ৩৯২-৯৩, নাসায়ি ১২৪০-৪৬, ১২৫৪-৫৯; আবু দাউদ ১০১৯-২০, ১০২২; আহমাদ ৪১৫৯, দারিমি ১৪৯৮, ইবনি মাজাহ ১২০৩, ১২০৫, ১২১২, ১২১৮। তাহকিক আলবানিঃ সহিহ। তাখরিজ আলবানিঃ ইরওয়াহ ৪০২, সহিহ আবু দাউদ ৯৩৫। নামাজে ভুল হলে করনীয় – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১২১২. আবদুল্লাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলিতেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, তোমাদের কারো নামাজের মধ্যে সন্দেহ হলে সে যেন সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছতে চিন্তা করে [ভেবে দেখে], অতঃপর দুটি সাজদাহ করে। আত-তানাফিসী [রহঃ] বলেন, এটি একটি মূলনীতি যা প্রত্যাখ্যান করার অধিকার কেউ রাখে না। {১২১২}
{১২১২} বোখারি ৪০১, ৪০৪, ১২২৬, ৬৬৭১, ৭২৪৯; মুসলিম ৫৭১-৭, তিরমিজি ৩৯২-৯৩, নাসায়ি ১২৪০-৪৬, ১২৫৪-৫৯; আবু দাউদ ১০১৯-২০, ১০২২; আহমাদ ৪১৫৯, দারিমি ১৪৯৮, ইবনি মাজাহ ১২০৩, ১২০৫, ১২১১, ১২১৮। তাহকিক আলবানিঃ সহিহ। নামাজে ভুল হলে করনীয় – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৫/১৩৪. অধ্যায়ঃ ভুল করে কেউ দ্বিতীয় বা তৃতীয় রাকআতে সালাম ফিরালে।
১২১৩. ইবনি উমার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ভুলবশত দ্বিতীয় রাকআতে সালাম ফিরালে যুল-ইয়াদাইন [রাঃআঃ] নামক এক ব্যক্তি তাঁকে বলেন,হে আল্লাহর রসূল! নামাজ কি কমানো হয়েছে, না আপনি ভুলে গেছেন? তিনি বলেন, কমানোও হয়নি এবং আমি ভুলেও যাইনি। তিনি [যুল-ইয়াদাইন] বলেন, তাহলে আপনি দু রাকআত পড়েছেন। তিনি জিজ্ঞেস করেনঃ যুল-ইয়াদায়ন যা বলেছে ঘটনা কি তাই? সাহাবীগণ বলেন, হাঁ। অতএব তিনি অগ্রসর হয়ে দু রাকআত নামাজ পড়ে সালাম ফিরালেন, অতঃপর দুটি সাহু সাজদাহ করিলেন। {১২১৩}
{১২১৩} আবু দাউদ ১০১৫ তাহকিক আলবানিঃ সহিহ। তাখরিজ আলবানিঃ সহিহ আবু দাউদ ৯৩২। নামাজে ভুল হলে করনীয় – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১২১৪. আবু হুরাইরাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাদেরকে নিয়ে রাতের কোন এক ওয়াক্তের নামাজ দু রাকআত পড়লেন, অতঃপর সালাম ফিরালেন, অতঃপর উঠে গিয়ে মাসজিদের একটি কাঠের সাথে ঠেস দিয়ে দাঁড়ালেন। লোকেরা এই বলিতে বলিতে দ্রুত বেরিয়ে গেলো যে, নামাজ হ্রাসপ্রাপ্ত হয়েছে। লোকেদের মধ্যে আবু বকর ও উমার [রাঃআঃ]-ও ছিলেন। কিন্তু তারা এ বিষয়ে তাঁকে কিছু জিজ্ঞেস করিতে সংকোচবোধ করেন। লোকেদের মধ্যে যুল-ইয়াদাইন নামে লম্বা হাতবিশিষ্ট এক ব্যক্তি ছিলেন। তিনি বলেন, হে আল্লাহ্র রসূল! নামাজ কি হ্রাসপ্রাপ্ত হয়েছে, না আপনি বিস্মৃত হয়েছেন? তিনি বলেন, নামাজ হ্রাসপ্রাপ্তও হয়নি এবং আমি ভুল করিনি। যুল-ইয়াদাইন বলেন, আপনি যে দু রাকআত পড়েছেন! তিনি জিজ্ঞেস করেনঃ যুল-ইয়াদাইন যা বলেছে তা কি ঠিক? তারা বলেন, হাঁ, রাবি বলেন, নবী [সাঃআঃ] দাঁড়িয়ে দু; রাকআত নামাজ পড়ে সালাম ফিরালেন, অতঃপর দুতি সাজদাহ করিলেন এবং পুনরায় সালাম ফিরালেন। {১২১৪}
{১২১৪} বোখারি ৪৮২, ৭১৪-১৫, ১২২৭-২৯, ৬০৫১, ৭২৫০; মুসলিম ৫৭১-২, তিরমিজি ৩৯৪, ৩৯৯; নাসায়ি ১২২৪-৩০, ১২৩৩, ১২৩৫; আবু দাউদ ১০০৮, ১০১৪-১৫; আহমাদ ৭১৬০, ৭৩২৭, ৭৭৬১, ৮৭৮৩, ৯১৮১, ৯৬০৯; দারিমি ২১০-১১, দারিমি ১৪৯৬-৯৭। তাহকিক আলবানিঃ সহিহ। তাখরিজ আলবানিঃ ইরওয়াহ ১৩০, সহিহ আবু দাউদ ৯২৩। নামাজে ভুল হলে করনীয় – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১২১৫. ইমরান ইবনিল হুসায়ন [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আসরের নামাজ তিন রাকআত পড়ার পর সালাম ফিরান, অতঃপর উঠে গিয়ে হুজরায় প্রবেশ করেন। খিরবাক নামক লম্বা হাতবিশিষ্ট এক ব্যক্তি উঠে দাঁড়িয়ে জোর গলায় বলেন, হে আল্লাহর রসূল! নামাজ কি কমানো হয়েছে? তিনি বিসন্ন অবস্থায় তাহাঁর পরিধেয় হেঁচড়াতে হেঁচড়াতে বেরিয়ে এসে [বিষয়টি সম্পর্কে] জিজ্ঞেস করেন। তাঁকে অবহিত করা হলে তিনি [ভুলে] পরিত্যক্ত রাকআতটি পড়েন, অতঃপর সালাম ফিরান, অতঃপর দুটি সাজদাহ করে পুনরায় সালাম ফিরান। {১২১৫}
{১২১৫} মুসলিম ৫৭১-২, তিরমিজি ৩৯৫, নাসায়ি ১২৩৬-৩৭, ১৩৩১; আবু দাউদ ১০১৮, ১০৩৯; আহমাদ ১৯৩২৭, ১৯৩৬৭, ১৯৪৫৮। তাহকিক আলবানিঃ সহিহ। তাখরিজ আলবানিঃ ইরওয়াহ ৪০০, সহিহ আবু দাউদ ৯৩৩। নামাজে ভুল হলে করনীয় – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৫/১৩৫. অধ্যায়ঃ সালাম ফিরানোর পূর্বে দুটি সাজদাহ সাহু সম্পর্কে
১২১৬. আবু হুরাইরাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
নবী [সাঃআঃ] বলেন, তোমাদের কারো সলাতে রত থাকা অবস্থায় তার নিকট নিশ্চই শয়তান আসে, অতঃপর তার ও তার অন্তরের মধ্যখানে প্রবেশ করে। অবশেষে সে স্মরণ করিতে পারে না যে, সে [নামাজ] বেশি পড়েছে না কম পড়েছে। এরূপ অবস্থা হলে সে যেন সালাম ফিরানোর পূর্বে দুটি সাজ়দাহ করে অতঃপর সালাম ফিরায়। {১২১৬}
{১২১৬} বোখারি ৬০৮, ১২২২, ১২৩১-৩২, ৩২৮৫; মুসলিম ৩৮১-৩, তিরমিজি ৩৯৭, নাসায়ি ৬৭০, ১২৫২-৫৩; আবু দাউদ ৫১৬, ১০৩০; আহমাদ ৭৬৩৭, ৭৭৪৪, ৭৭৬৩, ৯৬১৫, ৯৮৯৩, ১০১৬৫, ১০৪৯০, ২৭৩৫৬; মুওয়াত্ত্বা মালিক ১৫৪, ২২৪; দারিমি ১২০৪, ১৪৯৪; ইবনি মাজাহ ১২১৭। তাহকিক আলবানিঃ হাসান সহিহ। তাখরিজ আলবানিঃ সহিহ আবু দাউদ ৯৪৩। উক্ত হাদিসের রাবি সুফইয়ান বিন ওয়াকী সম্পর্কে ইমাম বোখারি মন্তব্য করিয়াছেন। ইমাম নাসাঈ বলেন, তিনি সিকাহ নন। ইবনি হিব্বান বলেন, তিনি সত্যবাদী। হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহিহ
১২১৭. আবু হুরাইরাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
নবী বলেন, নিশ্চয় শয়তান আদম সন্তান ও তার অন্তরের মধ্যখানে প্রবেশ করে। ফলে সে স্মরণ করিতে পারে না যে, সে কত রাকআত পড়েছে। তার এরূপ অবস্থা হলে সে যেন সালাম ফিরানোর পূর্বে দুটি সাজদাহ করে। {১২১৭}
{১২১৭} বোখারি ৬০৮, ১২২২, ১২৩১-৩২, ৩২৮৫; মুসলিম ৩৮১-৩, তিরমিজি ৩৯৭, নাসায়ি ৬৭০, ১২৫২-৫৩; আবু দাউদ ৫১৬, ১০৩০; আহমাদ ৭৬৩৭, ৭৭৪৪, ৭৭৬৩, ৯৬১৫, ৯৮৯৩, ১০১৬৫, ১০৪৯০, ২৭৩৫৬; মুওয়াত্ত্বা মালিক ১৫৪, ২২৪; দারিমি ১২০৪, ১৪৯৪; ইবনি মাজাহ ১২১৬। তাহকিক আলবানিঃ হাসান সহিহ। হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহিহ
৫/১৩৬.অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি সালাম ফিরানোর পর দুটি সাহু সাজদাহ করে।
১২১৮. ইবনি মাসাঊদ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
সালাম ফিরানোর পর দুটি সাহু সাজদাহ করিয়াছেন এবং তিনি বর্ণনা করিয়াছেন যে, নবী [সাঃআঃ] তাই করিয়াছেন।{১২১৮}
{১২১৮} বোখারি ৪০১, ৪০৪, ১২২৬, ৬৬৭১, ৭২৪৯; মুসলিম ৫৭১-৭, তিরমিজি ৩৯২-৯৩, নাসায়ি ১২৪০-৪৬, ১২৫৪-৫৯; আবু দাউদ ১০১৯-২০, ১০২২; আহমাদ ৪১৫৯, দারিমি ১৪৯৮, ইবনি মাজাহ ১২০৩, ১২০৫, ১২১১-১২। তাহকিক আলবানিঃ সহিহ। নামাজে ভুল হলে করনীয় – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১২১৯. সাওবান [বিন বুজাদ্দাদ আল-হাশিমী] [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনিয়াছিঃ প্রতিটি ভুলের জন্য সালাম ফিরানোর পর দুটি সাজদাহ করিতে হইবে।{১২১৯}
{১২১৯} আবু দাউদ ১০৩৮, আহমাদ ২১৯১১। তাহকিক আলবানিঃ হাসান। তাখরিজ আলবানিঃ ইরওয়াহ ৪৭, সহিহ আবু দাউদ ৯৫৪। উক্ত হাদিসের রাবি ইসমাঈল বিন আয়্যাশ সম্পর্কে ইয়াহইয়া বিন মাঈন বলেন, আহলে শাম থেকে হাদিস বর্ণনায় কোন সমস্যা নেই। আলী ইবনিল মাদীনী, ইবনি আবু শায়বাহ, আমর ইবনিল ফাল্লাস ও দুহায়ম বলেন, শাম শহর থেকে হাদিস বর্ণনায় তিনি সিকাহ কিন্তু অন্য শহর থেকে হাদিস বর্ণনায় দুর্বল। ২. যুহায়র বিন সালিম আল আনসারী সম্পর্কে ইমাম দারাকুতনী বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় মুনকার। তিনি সাওবান থেকে হাদিস শ্রবন না করেও হাদিস বর্ণনা করিয়াছেন।হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
৫/১৩৭. অধ্যায়ঃ শুরু করা নামাজের ভিত্তি ঠিক রাখা।
১২২০. আবু হুরাইরাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী [সাঃআঃ] নামাজ আদায় করিতে বের হয়ে এসে তাকবীরে তাহরীমা করার পর তাহাদের প্রতি ইশারা করলে তারা স্বঅবস্থায় অপেক্ষা করেন। অতঃপর তিনি চলে গিয়ে গোসল করেন। তিনি তাহাঁর মাথা থেকে পানি টপকানো অবস্থায় ফিরে এসে তাহাদের সাথে নামাজ পড়েন। নামাজশেষে তিনি বলেন, আমি তোমাদের নিকট নাপাক অবস্থায় বের হয়ে এসেছিলাম, আমি তা ভুলে গিয়েছিলাম, এমনকি সলাতে দাঁড়িয়ে গিয়েছিলাম। {১২২০}
{১২২০} বোখারি ৬৩৯-৪০, মুসলিম ৬০১-২, নাসায়ি ৭৯২, ৮০৯; আবু দাউদ ২৩৩, ২৩৫; আহমাদ ৮২৬১, ১০৩৪১। তাহকিক আলবানিঃ হাসান সহিহ। তাখরিজ আলবানিঃ মিশকাত ১০০৯, সহিহ আবু দাউদ ২২৭-২৩১। উক্ত হাদিসের রাবি ইয়াকুব বিন হুমায়দ সম্পর্কে মাসলামাহ বিন কাসিম তাকে সিকাহ বলেছেন। ইয়াহইয়া বিন মাঈন বলেন, কোন সমস্যা নেই। ইবনি আদী বলেন, তার বর্ণনায় কোন সমস্যা নেই। ২. আবদুল্লাহ বিন মুসা আত-তায়মী সম্পর্কে ইয়াহইয়া বিন মাঈন বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে হাদিস বর্ণনায় অধিক ইরসাল করেন। আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, তার বর্ণিত হাদিসে আমি কোন সমস্যা দেখিনি। ৩. উসামাহ বিন যায়দ সম্পর্কে ইবনি হিব্বান তাকে সিকাহ উল্লেখ করে বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় ভুল করেন। আল আজালী তাকে সিকাহ বলেছেন। আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, তার থেকে হাদিস গ্রহন করা যায় তবে দলীল হিসেবে নয়। ইমাম নাসাঈ বলেন, তিনি নির্ভরযোগ্য নয়।হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহিহ
১২২১. আয়িশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, নামাজরত অবস্থায় কারো বমি হলে, নাক দিয়ে রক্ত বের হলে, খাদ্য বা পানীয় পেট থেকে মুখে চলে এলে অথবা বীর্যরস নির্গত হলে, সে যেন বাইরে এসে ওজু করে, অতঃপর পূর্বোক্ত নামাজের অবশিষ্টাংশ পূর্ণ করে, উক্ত অবস্থায় যদি সে কথা না বলে থাকে। {১২২১}
জইফ।হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
৫/১৩৮. অধ্যায়ঃ নামাজরত অবস্থায় কারো ওজু ছুটে গেলে সে কিভাবে বের হয়ে যাবে।
১২২২. আয়িশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
নবী [সাঃআঃ] বলেন, তোমাদের কারো নামাজরত অবস্থায় ওজু ছুটে গেলে সে যেন তার নাক ধরে বের হয়ে যায়। {১২২২}
১/১২২২ [১]. আয়িশা [রাঃআঃ] নবী [সাঃআঃ] সূত্রে পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। {১২২২}
তাহকিক আলবানিঃ সহিহ।{১২২২} আবু দাউদ ১১১৪ তাহকিক আলবানিঃ সহিহ। তাখরিজ আলবানিঃ সহিহ আবু দাউদ ১০২০, মিশকাত ১০০৭, সহিহা ২৯৭৬। উক্ত হাদিসের রাবি উমার বিন কায়স সম্পর্কে মালিক বিন আনাস মিথ্যুক বলেছেন। আহমাদ বিন হাম্বল বলেন, তার হাদিস প্রত্যাখ্যানযোগ্য ও বাতীল। ইয়াহইয়া বিন মাঈন বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় দুর্বল। আমর বিন ফাল্লাস বলেন, তিনি প্রত্যাখ্যানযোগ্য। ইমাম বোখারি বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় মুনকার। আবু দাউদ আস-সাজিসতানী বলেন, তিনি প্রত্যাখ্যানযোগ্য। উক্ত হাদিসটি শাহিদ এর ভিত্তিতে সহিহ।নামাজে ভুল হলে করনীয় – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
Leave a Reply