এলেম শিক্ষার গুরুত্ব , আলিমদের মর্যাদা , জ্ঞানের প্রচারক ইত্যাদি

এলেম শিক্ষার গুরুত্ব , আলিমদের মর্যাদা , জ্ঞানের প্রচারক ইত্যাদি

এলেম শিক্ষার গুরুত্ব , আলিমদের মর্যাদা , জ্ঞানের প্রচারক ইত্যাদি >> সুনানে ইবনে মাজাহ হাদিস এর মুল সুচিপত্র পড়ুন

পর্বঃ ০, অধ্যায় (৩৭-৪৫)= ৯ টি। হাদীস (২১১-২৬৬) =৫৬ টি

৩৭. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি কুরআন মাজীদ শিক্ষা করে এবং তা শিক্ষা দেয় তার সম্মান
৩৮. অধ্যায়ঃ আলিমদের মর্যাদা এবং জ্ঞানার্জনে উৎসাহিত করা ।
৩৯. অধ্যায়ঃ জ্ঞানের প্রচারক
৪০. অধ্যায়ঃ কল্যাণের চাবিকাঠি যেসব লোক
৪১. অধ্যায়ঃ লোকজনকে উত্তম বিষয় শিক্ষাদাতার সাওয়াব।
৪২. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি তার পেছনে পেছনে অন্যের চলাকে অপছন্দ করে।
৪৩. অধ্যায়ঃ জ্ঞানার্জনকারীদের নাসীহাত করা
৪৪. অধ্যায়ঃ জ্ঞান দ্বারা উপকৃত হওয়া এবং তদানুযায়ী আমাল করা
৪৫. অধ্যায়ঃ জ্ঞাত বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হয়ে যে ব্যক্তি তা গোপন করে

৩৭. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি কুরআন মাজীদ শিক্ষা করে এবং তা শিক্ষা দেয় তার সম্মান

২১১ – উসমান বিন আফ্‌ফান [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেন, যে ব্যক্তি নিজে কুরআন শিক্ষা করে এবং অপরকে তা শিক্ষা দেয়, তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তিই সর্বোত্তম ও অধিক মর্যাদাবান। {২০৯}

{২০৯} বোখারী ৫০২৭-২৮, তিরমিজি ২৯০৭-৮, আবু দাউদ ১৪৫২, আহমদ ৪০৭, ৪১৪, ৫০২; দারিমী ৩৩৩৮, ইবনি মাজাহ ২১২, সহীহাহ্ ১১৭৩, সহিহ আবু দাউদ ১৩০৬। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানি: সহিহ। এলেম শিক্ষার গুরুত্ব – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

সুনানে ইবনে মাজাহ নং ২১২ – উসমান বিন আফ্‌ফান [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেন, যে ব্যক্তি নিজে কুরআন শিক্ষা করে এবং তা অপরকে শিক্ষা দেয়, সেই তোমাদের মধ্যে অধিক মর্যাদাবান। {২১০}

{২১০} বোখারী ৫০২৭-২৮, তিরমিজি ২৯০৭-৮, আবু দাউদ ১৪৫২, আহমদ ৪০৭, ৪১৪, ৫০২; দারিমী ৩৩৩৮, ইবনি মাজাহ ২১১। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানি: সহিহ। এলেম শিক্ষার গুরুত্ব – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

২১৩ – সাদ বিন আবু ওয়াক্কাস [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেন, যে ব্যক্তি নিজে কুরআন শিক্ষা করে এবং তা অপরকে শিক্ষা দেয়, সেই তোমাদের মধ্যে উত্তম। রাবী বলেন, তিনি আমার হাত ধরে আমাকে এই স্থানে বসালেন এবং বলিলেন, ইনি সর্বাপেক্ষা বড় কারী। {২১১}

{২১১} দারিমী ৩৩৩৯ তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানি: হাসান সহিহ। উক্ত হাদিসের রাবী হারিস বিন নাবহান সম্পর্কে ইয়াহইয়া বিন মাঈন বলেন, তার থেকে হাদিস লিখা হয় না। আলী ইবনিল মাদীনী বলেন, তিনি দুর্বল। আহমদ বিন হাম্বল ও ইমাম বোখারী বলেন, মুনকারুল হাদিস। ইমাম নাসাই বলেন, তার হাদিস প্রত্যাখানযোগ্য। আবু দাউদ আস-সাজিসতানী বলেন, কোন সমস্যা নেই। উক্ত হাদিসটি শাহিদ এর ভিত্তিতে সহিহ।হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহিহ

সুনানে ইবনে মাজাহ নং ২১৪ – আবু মূসা আল-আশআরী [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

নবি [সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেন, কুরআন তিলাওয়াতকারী মুমিন ব্যক্তি কমলালেবু তুল্য, যা খেতে সুস্বাদু ও সুগন্ধিযুক্ত। যে মুমিন ব্যক্তি কুরআন তিলাওয়াত করে না, সে খেজুর তুল্য, যা খেতে সুস্বাদু কিন্তু সুগন্ধিবিহীন। কুরআন তিলাওয়াতকারী মুনাফিক ব্যক্তি সুগন্ধি গুল্মের সাথে তুলনীয়; যা খুব সুগন্ধিযুক্ত কিন্তু খেতে তিক্ত। যে মুনাফিক ব্যক্তি কুরআন তিলাওয়াত করে না, সে মাকাল ফল তুল্য, যা খেতেও বিস্বাদ এবং যার কোন সুগন্ধিও নেই। {২১২}

{২১২} বোখারী ৫০২০, ৫০৫৯, ৫৪২৭, ৭৫৬০; মুসলিম ৭৯৭, তিরমিজি ২৮৬৫, নাসায়ী ৫০৩৮, আবু দাউদ ৪৮২৯, আহমদ ১৯০৫৫, ২৯১৭৭, ১৯১৬৫; দারিমী ৩৩৬৩। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানি: সহিহ। এলেম শিক্ষার গুরুত্ব – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

২১৫ -আনাস বিন মালিক [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেন, কতক লোক আল্লাহ্‌র পরিজন। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করিলেন, হে আল্লাহ্‌র রসূল! তারা কারা? তিনি বলেন, কুরআন তিলাওয়াতকারীগণ আল্লাহ্‌র পরিজন এবং তাহাঁর বিশেষ বান্দা। {২১৩}

{২১৩} আহমদ ১১৮৭০, ১৩১৩০; দারিমী ৩৩২৬। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানি: সহিহ। তাখরিজ  নাসিরুদ্দিন আলবানি: যঈফাহ ১৫৮২। এলেম শিক্ষার গুরুত্ব – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

সুনানে ইবনে মাজাহ নং ২১৬ – আলী বিন আবু তালিব [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেন, যে ব্যক্তি কুরআন তিলাওয়াত করে এবং তা কন্ঠস্থ করে, আল্লাহ্‌ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন এবং তাকে তার পরিবারের এমন দশজন লোকের জন্য সুপারিশ করার অনুমতি দিবেন যাদের সকলের জন্য জাহান্নাম অবধারিত হয়ে গেছে। {২১৪}

{২১৪} তিরমিজি ২৯০৫, আহমদ ১২৭১। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানি: খুবই দুর্বল। তাখরিজ  নাসিরুদ্দিন আলবানি: মিশকাত ২১৪১, তালীকুল রগীব ২/২১০। উক্ত হাদিসের রাবী ১. আবু উমার সম্পর্কে ওয়াকী ইবনিল জাররাহ সিকাহ বললেও আহমদ বিন হাম্বল বলেন, তার হাদিস প্রত্যাখ্যানযোগ্য। ইয়াহইয়া বিন মাঈন বলেন তিনি মিথ্যুক। আলী ইবনিল মাদীনী তিনি হাদিস বর্ণনায় দুর্বল। ইমাম বোখারী তাকে প্রত্যাখ্যান করিয়াছেন। ২. কাসীর বিন যাযান সম্পর্কে ইয়াহইয়া বিন মাঈন বলেন আমি তাকে চিনি না। আবু হাতিম ও আবু যুরআহ আর-রাযী বলেন, তিনি মাজহুল বা অপরিচিত। আল আযদী বলেন, তার ব্যাপারে সমালোচনা রয়েছে। ইমাম যাহাবী বলেন তার থেকে দলীল গ্রহণযোগ্য নয়।হাদিসের তাহকিকঃ খুবই দুর্বল

২১৭ – হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেছেন, তোমরা কুরআন শিক্ষা করো, তা তিলাওয়াত করো এবং তা নিয়ে রাত জাগো। কেননা কুরআন এবং যে ব্যক্তি কুরআন শিক্ষা করে তার উপর প্রতিষ্ঠিত থাকে, সে হলো [মুখ খোলা] মৃগনাভিপূর্ণ থলেবৎ, যার সুবাস চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে। আর যে ব্যক্তি কুরআন শিক্ষা করে তা পেটে ভর্তি করে ঘুমিয়ে রাত কাটায়, সে হলো মুখ বাঁধা মৃগনাভিপূর্ণ থলের মত। {২১৫}

{২১৫} তিরমিজি ২৮৭৬ তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানি: জঈফ। তাখরিজ  নাসিরুদ্দিন আলবানি: তালীকুল রগীব ২/২০৬, তালাক, সহিহ ইবনি মুযাইমাহ ১৫০৯, মিশকাত ২১৪৩। উক্ত হাদিসের রাবী আবদুল হামীদ বিন জা’ফার সম্পর্কে ইমাম নাসাই বলেন, কোন সমস্যা নেই। মুহাম্মাদ বিন সা’দ তাকে সিকাহ বললেও ইবনি হিব্বান বলেন তিনি হাদিস বর্ণনায় কখনো কখনো ভুল করেন।হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

২১৮ – উমার [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

নাফি বিন আবদুল হারিস, তিনি উস্‌ফান নামক স্থানে উমার ইবনিল খাত্তাব [রাঃআ:] এর সাথে সাক্ষাৎ করেন। উমার [রাঃআ:] তাকে মক্কার গভর্নর নিয়োগ করেছিলেন। উমার [রাঃআ:] বলেন, গ্রামবাসী বেদুঈনদের জন্য তুমি কাকে প্রশাসক নিয়োগ করেছ? তিনি বলেন, আমি বিন আবযা [রাঃআ:]-কে তাহাদের প্রশাসক নিয়োগ করেছি। উমার [রাঃআ:] বলেন, বিন আবযা কে? তিনি বলেন, সে আমাদের একজন মুক্তদাস। উমার [রাঃআ:] বলেন, তুমি একজন মুক্তদাসকে কেন জনগণের প্রশাসক নিয়োগ করলে? তিনি বলেন, সে তো মহান আল্লাহ্‌র কিতাবের বিশেষজ্ঞ আলিম, ফারায়িয সম্পর্কে অভিজ্ঞ এবং উত্তম ফয়সালাকারী। উমার [রাঃআ:] বলেন, শোন! তোমাদের নবি [সাঃআ:] বলেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ্‌ তাআলা এই কিতাবের দ্বারা কতক লোককে উচ্চ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেন এবং কতককে অবনমিত করেন। {২১৬}

{২১৬} মুসলিম ৮১৭, আহমদ ২৩৩, দারিমী ৩৩৬৫। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানি: সহিহ। তাখরিজ  নাসিরুদ্দিন আলবানি: সহীহাহ ২২৩৯। এলেম শিক্ষার গুরুত্ব – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

সুনানে ইবনে মাজাহ নং ২১৯ – আবু যার [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] আমাকে বলেনঃ হে আবু যার! সকালবেলা কুরআনের একটি আয়াত শিক্ষা করা তোমার জন্য একশত রাকআত [নফল] সলাত আদায়ের চেয়ে উত্তম। সকালবেলা জ্ঞানের কিছু অংশ শিক্ষা করা তোমার জন্য এক হাজার রাকআত সলাত আদায়ের চেয়ে উত্তম, তদানুযায়ী কাজ করা হোক বা না হোক। {২১৭}

{২১৭} জঈফ। তাখরিজ  নাসিরুদ্দিন আলবানি: জামি সগীর ৬৩৭৩ জঈফ, তারগীব ৫৪, ৮৬৯ জঈফ, তালাকুল রগীব [১/৫৬] [২/২১১]। উক্ত হাদিসের রাবী ১. আবদুল্লাহ বিন গালিব আল-আব্বাদনী সম্পর্কে ইমাম যাহাবী বলেন, তিনি দুর্বল নয়। ২. আবদুল্লাহ বিন যিয়াদ আল-বহরানী সম্পর্কে ইমাম যাহাবী বলেন, সে কে? এ সম্পর্কে কুছুই জানা যায় নি। ৩. আলী বিন যায়দ সম্পর্কে ইমাম তিরমিযি বলেন, তিনি সত্যবাদী কিন্তু যে বিষয়ে নিরবতা রয়েছে, সেগুলোয় তিনি অতিরিক্ত করিয়াছেন। আল আজালী বলেন কোন সমস্যা নেই। ইয়াহইয়া বিন সাঈদ আল কাত্তান বলেন, তার হাদিস প্রত্যাখ্যানযোগ্য। আহমদ বিন হাম্বল বলেন, তিনি নির্ভরযোগ্য নয়। ইয়াহইয়া বিন মাঈন বলেন তিনি হাদিস বর্ণনায় নির্ভরযোগ্য নয়। বুসায়রী তাকে দুর্বল বলে আখ্যায়িত করিয়াছেন।হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৩৮. অধ্যায়ঃ আলিমদের মর্যাদা এবং জ্ঞানার্জনে উৎসাহিত করা ।

২২০ – আবু হুরাইরা [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেছেন, আল্লাহ্‌ তা’আলা যার কল্যাণ সাধন করিতে চান, তাকে দ্বীনের জ্ঞান দান করেন। {২১৮}

সহিহ। তাখরিজ  নাসিরুদ্দিন আলবানি: সহীহাহ ১১৯৪, ১১৯৫। এলেম শিক্ষার গুরুত্ব – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

সুনানে ইবনে মাজাহ নং ২২১ – মুআবিয়াহ বিন আবু সুফ্‌য়ান [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেন, কল্যান হলো সুস্বভাব এবং মন্দ হলো প্রবৃত্তির তাড়না থেকে উদ্ভূত। আল্লাহ্‌ যার কল্যাণ সাধন করিতে চান, তাকে দ্বীনের জ্ঞান দান করেন। {২১৯}

{২১৯} বোখারী ৭১, ৩১১৬, ৭৩১২; মুসলিম ১০৩৭, আহমদ ১৬৩৯২, ১৬৪০০, ১৬৪১৮, ১৬৪৩২, ১৬৪৩৮, ১৬৪৫১, ১৬৭৬৭, ২৭৫৮০; মুওয়াত্ত্বা মালিক ১৬৬৭। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানি: হাসান। তাখরিজ  নাসিরুদ্দিন আলবানি: সহীহাহ ৬৫১৩।হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

২২২ – ইবনি আব্বাস [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেছেন, একজন ফকীহ [শারীআতের বিধানে অভিজ্ঞ ব্যক্তি] শয়তানের জন্য এক হাজার ইবাদাতকারীর চেয়ে অধিক শক্ত। {২২০}

{২২০} তিরমিজি ২৬৮১ তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানি: মউযূ। তাখরিজ  নাসিরুদ্দিন আলবানি: জামি সগীর ৩৯৮৭ মাওযু, মিশকাত ২১৭ মাওযু, তারগীব ৬৬ জঈফ জিদ্দান, মিশকাত, ২১৭, তালীকুতা, রগীয় ১/৬১, তামামুল মিন্নাহ, ১১৫। উক্ত হাদিসের রাবী রাওহ বিন জানাহ সম্পর্কে আবু যুরআহ আর-রাযী বলেন, তিনি নির্ভরযোগ্য রাবী নয় এবং তার থেকে দলীল গ্রহণযোগ্য নয়। ইমাম নাসাই বলেন, তিনি নির্ভরযোগ্য রাবী নয়। ইবনি আদী বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় ভুল করেন। আল-উকাইলি তাকে দুর্বল করিয়াছেন। আবু আহমদ আল-হাকিম বলেন, তার হাদিস বাছাইকৃত নয়।হাদিসের তাহকিকঃ জাল হাদিস

২২৩ – কাসীর বিন কায়স [দঈফ] হইতে বর্ণিতঃ

আমি দামিশকের মাসজিদে আবুদ দারদা [রাঃআ:]-এর কাছে বসা ছিলাম। তখন এক ব্যক্তি তার নিকট উপস্থিত হয়ে বললো, হে আবুদ-দারদা! আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআ:]-এর শহর মাদীনাহ থেকে আপনার নিকট একটি হাদীস শোনার জন্য এসেছি। আমি জানতে পেরেছি যে, আপনি নবি [সাঃআ:] থেকে তা বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, তুমি কোন ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে আসোনি তো? সে বললো, না। তিনি বলেন, অন্য কোন উদ্দেশ্যেও তুমি আসোনি? সে বললো, না। তিনি বলেন, আমি অবশ্যই রসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআ:]-কে বলিতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি জ্ঞানার্জনের কোন পথ অবলম্বন করে, আল্লাহ্‌ তার জন্য জান্নাতের দিকে একটি পথ সুগম করে দেন। ফেরেশ্‌তাগন জ্ঞান অন্বেষীর সন্তুষ্টির জন্য তাহাদের পাখাসমুহ অবনমিত করেন। আর জ্ঞান অন্বেষীর জন্য আসমান ও যমীনবাসী আল্লাহ্‌র নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে, এমনকি পানির মধ্যের মাছও। নিশ্চয় ইবাদাতকারীর উপর আলিমের মর্যাদা তারকারাজির উপর চাঁদের মর্যাদার সমতুল্য। আলিমগণ নবিগণের ওয়ারিস। আর নবিগণ দীনার ও দিরহাম [নগদ অর্থ] ওয়ারিসী স্বত্ব হিসাবে রেখে যাননি, বরং তাঁরা ওয়ারিসী স্বত্বরূপে রেখে গেছেন ইলম [জ্ঞান]। যে ব্যক্তি তা গ্রহণ করলো, সে যেন একটি পূর্ণ অংশ লাভ করলো। {২২১}

{২২১} তিরমিজি ২৬৮২ তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানি: সহিহ। তাখরিজ  নাসিরুদ্দিন আলবানি: সহিহ তারগীব ১/৩৩/৬৮। উক্ত হাদিসের রাবী দাউদ বিন জামীল সম্পর্কে ইবনি হিব্বান সিকাহ বললেও ইমাম দারাকুতনী তাকে দুর্বল বলেছেন এবং অন্যত্র মাজহুল বা অপরিচিত বলেছেন। আল-আবাদী তাকে দুর্বল ও অপরিচিত বলেছেন। ২. কাসীর বিন কায়স সম্পর্কে ইবনি হিব্বান তাকে সমর্থন করলেও ইমাম দারাকুতনী তাকে দুর্বল বলেছেন। দুহায়ম তার থেকে হাদিস বর্ণনা করেন নি। উক্ত হাদিসটি শাহিদ এর ভিত্তিতে সহিহ। এলেম শিক্ষার গুরুত্ব – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

সুনানে ইবনে মাজাহ নং ২২৪ – আনাস বিন মালিক [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেছেন জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক মুসলিমের উপর ফরয। অপাত্রে জ্ঞান দানকারী শুকরের গলায় মণিমুক্তা ও সোনার হার পরানো ব্যক্তির সমতুল্য। {২২২}

তাহকীক আলবানীঃ [আরবি] কথাটি ছাড়া সহিহ, কেননা উক্ত কথাগুলো খুবই দুর্বল।{২২২} নাই তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানি: وَوَاضِعُ الْعِلْمِ عِنْدَ غَيْرِ أَهْلِهِ كَمُقَلِّدِ الْخَنَازِيرِ الْجَوْهَرَ وَاللُّؤْلُؤَ وَالذَّهَبَ কথাটি ছাড়া হাদীসটি সহিহ, কেননা উক্ত কথাগুলো খুবই দুর্বল। তাখরিজ  নাসিরুদ্দিন আলবানি: মিশকাত ২১৮, তালীকুল রগীব ১/৫৪ যঈফাহ ৪১৬; সহিহ- মুশকিলাতুল ফিকার ৮৬, ফিকহুস, সীরাহ ৭। উক্ত হাদিসের রাবী হাফয বিন সুলায়মান সম্পর্কে আহমদ বিন হাম্বল বলেন, তার হাদিস প্রত্যাখ্যানযোগ্য। ইয়াহইয়া বিন মাঈন তাকে মিথ্যুক বলেছেন। আলী ইবনিল মাদীনী বলেন, তার হাদিস দুর্বল। ইমাম বোখারী তাকে প্রত্যাখ্যান করিয়াছেন। উক্ত হাদিসের মাতান প্রসিদ্ধ কিন্তু সানাদ দুর্বল। এ হাদিসটি একাধিক সনদে বর্ণিত হয়েছে যার সবগুলোই দুর্বল।হাদিসের তাহকিকঃ অন্যান্য

২২৫ – আবু হুরাইরা [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেছেন, যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের পার্থিব বিপদসমূহ থেকে একটি বিপদ দূর করলো, আল্লাহ্‌ কিয়ামাতের দিন তার পারলৌকিক বিপদসমূহ থেকে একটি বিপদ দূর করবেন। কোন ব্যক্তি অপর মুসলিমের দোষ গোপন রাখলে, আল্লাহ্‌ দুনিয়া ও আখিরাতে তার দোষ গোপন রাখবেন। যে ব্যক্তি অপর ব্যক্তির কষ্ট-কাঠিন্য সহজ করে দেয়, আল্লাহ্‌ দুনিয়া ও আখিরাতে তার কষ্ট সহজ করে দিবেন। বান্দা যতক্ষণ তার ভাইয়ের সাহায্য-সহযোগিতায় রত থাকে, আল্লাহ্‌ ততক্ষণ তার সাহায্য-সহায়তায় রত থাকেন। কোন ব্যক্তি জ্ঞানার্জনের জন্য কোন পথ অবলম্বন করলে, আল্লাহ্‌ এই উসীলায় তার জন্য জান্নাতের একটি পথ সুগম করে দেন। যখন কোন লোকসমষ্টি আল্লাহ্‌র ঘরসমূহের মধ্যকার কোন ঘরে সমবেত হয়ে আল্লাহ্‌র কিতাব তিলাওয়াত করে এবং পরস্পর তা শিক্ষা করে, তখন মালায়িকাহ তাহাদেরকে পরিবেষ্টন করে রাখেন, তাহাদের উপর প্রশান্তি নাযিল হয়, দয়া ও অনুগ্রহ তাহাদের আবৃত করে নেয় এবং আল্লাহ্‌ তাহাঁর নিকটে অবস্থানকারীদের [মালায়িকাহ্‌র] সাথে তাহাদের বিষয়ে আলোচনা করেন। [পৃথিবীতে] যার সৎকর্ম কম হইবে [আখিরাতে] তার বংশমর্যাদা কোন উপকারে আসবে না। {২২৩}

{২২৩} মুসলিম ২৬৯৯, তিরমিজি ১৪২৫, ১৯৩০, ২৬৪৬, ২৯৪৫; আবু দাউদ ১৪৫৫, ৩৬৪৩, ৪৯৪৬; আহমদ ৭৩৭৯, ৭৮৮২, ৮১১৭, ১০১১৮, ১০২৯৮; দারিমী ৩৪৪, সহীহ্ তারগীব ১/৩১/৬৭ তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানি: সহিহ। এলেম শিক্ষার গুরুত্ব – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

২২৬ – যির বিন হুবায়শ হইতে বর্ণিতঃ

আমি সাফওয়ান বিন আসসাল আল-মুরাদী [রাঃআ:]-এর নিকট উপস্থিত হলে তিনি বলেন, তোমাকে কিসে নিয়ে এসেছে? আমি বললাম, জ্ঞানার্জনের জন্য। তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআ:]-কে বলিতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তিই জ্ঞানার্জনের জন্য তার ঘর থেকে রওনা হয়, তার এই মহৎ উদ্যোগের জন্য মালায়িকাহ তাহাদের পাখা বিস্তার করেন। {২২৪}

{২২৪} আহমদ ১৭৬২৩, ১৭৬২৮, ১৭৬৩৪; দারিমী ৩৫৭। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানি: সহিহ। উক্ত হাদিসের রাবী আসিম বিন আবুন নাজুদ সম্পর্কে মুহাম্মাদ বিন সা’দ বলেন, তিনি সিকাহ তবে অধিক ভুল করেন। ইয়াকুব বিন সুফইয়ান তাকে সিকাহ বলেছেন। ইয়াহইয়া বিন মাঈন বলেন, কোন সমস্যা নেই। এলেম শিক্ষার গুরুত্ব – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

২২৭ – আবু হুরাইরা [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআ:]-কে বলিতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি আমার এই মাসজিদে কোন উত্তম বিষয় শিক্ষা দানের জন্য বা শিক্ষা লাভের জন্য আসে, সে আল্লাহ্‌র রাস্তায় জিহাদরত ব্যক্তির মর্যাদাসম্পন্ন স্থানীয়। আর যে ব্যক্তি ভিন্নতর উদ্দেশ্যে আসে, সে অপরের সম্পদের প্রতি লোলুপ দৃষ্টি নিক্ষেপকারীর তুল্য। {২২৫}

{২২৫} আহমদ ৯১৩৮ তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানি: সহিহ। তাখরিজ  নাসিরুদ্দিন আলবানি: সহিহ তারগীব ৮৩। উক্ত হাদিসের রাবী হুমায়দ বিন সখর সম্পর্কে দারাকুতনী সিকাহ বললেও ইয়াহইয়া বিন মাঈন তাকে দুর্বল বলেছেন। ইবনি হিব্বান তাকে সিকাহ বলেছেন। ইবনি আদী বলেন, তিনি একাধিক হাদিসের ব্যাপারে ইনকার করিয়াছেন। আহমদ বিন হাম্বল বলেন, কোন সমস্যা নেই। এলেম শিক্ষার গুরুত্ব – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

২২৮ – আবু উমামাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেছেন, এই জ্ঞান জব্দ করে নেয়ার পূর্বেই তোমরা তা ধারণ করো। তা জব্দ করার অর্থ তুলে নেয়া। অতঃপর তিনি তাহাঁর শাহাদাত ও মধ্যমা আঙ্গুল একত্র করে বলিলেন, এভাবে। অতঃপর তিনি বলেন, শিক্ষক ও শিক্ষার্থী প্রতিদানে সমান অংশীদার। অবশিষ্ট লোকের মধ্যে কোন সৌন্দর্য ও কল্যাণ নেই। {২২৬}

{২২৬} দারিমী ২৪০ তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানি: জঈফ। তাখরিজ  নাসিরুদ্দিন আলবানি: জামি সগীর ৩৭৯২ জঈফ, তারগীব ৫৯ জঈফ, তালীকুল রগীব ১/৫৯, ইরওয়াহ ২/১৪৩, মিশকাত ২৭৮। উক্ত হাদিসের রাবী ১. উসমান বিন আতিকাহ সম্পর্কে দুহায়ম বলেন, তিনি সত্যবাদী। ইয়াহইয়া বিন মাঈন বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় নির্ভরযোগ্য নয়। ২. আলী বিন ইয়াযীদ সম্পর্কে ইমাম বোখারী বলেন, মুনকারুল হাদিস ও দুর্বল। আহমদ বিন হাম্বল তাকে দুর্বল বলেছেন। ইয়াহইয়া বিন মাঈন বলেন, তিনি দুর্বল। আবু যুরআহ বলেন, তিনি নির্ভরযোগ্য নয়। আবু হাতিম আর-রাযী বলেন তিনি হাদিস বর্ণনায় দুর্বল। ইমাম নাসাঈ বলেন তার হাদিস প্রত্যাখ্যানযোগ্য।হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

২২৯ – আবদুল্লাহ্‌ বিন আমর ইবনিল আস [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

একদিন রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] তাহাঁর কোন এক হুজরা থেকে বের হয়ে এসে মাসজিদে প্রবেশ করেন। তখন সেখানে দুটি সমাবেশ চলছিল। একটি সমাবেশে লোকজন কুরআন তিলাওয়াত ও আল্লাহ্‌র যিকরে মশগুল ছিল এবং অপর সমাবেশে লোকজন শিক্ষাগ্রহণ ও শিক্ষাদানে রত ছিল। নবি [সাঃআ:] বলেন, সকলেই কল্যাণকর তৎপরতায় রত আছে। এই সমাবেশের লোকজন কুরআন তিলাওয়াত করছে এবং আল্লাহ্‌র নিকট দুআ করছে। তিনি চাইলে তাহাদের দান করিতেও পারেন আবার চাইলে নাও দিতে পারেন। অন্যদিকে এই সমাবেশের লোকেরা শিক্ষাগ্রহণ এবং শিক্ষাদানে রত আছে। আর আমি শিক্ষক হিসাবেই প্রেরিত হয়েছি। অতঃপর তিনি এদের সমাবেশে বসলেন। {২২৭}

{২২৭} দারিমী ৩৪৯ তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানি: জঈফ। তাখরিজ  নাসিরুদ্দিন আলবানি: যঈফাহ ১১। উক্ত হাদিসের রাবী দাউদ বিন যিবরিকান সম্পর্কে আহমদ বিন হাম্বল বলেন, তার কথাবার্তা ভাল। ইয়াহইয়া বিন মাঈন বলেন, কোন সমস্যা নেই। আলী ইবনিল মাদীনী বলেন, তিনি খুবই দুর্বল। আবু যুরআহ আর-রাযী বলেন, তিনি প্রত্যাখ্যানযোগ্য। আবু দাউদ আস-সাজিসতানী বলেন, তার হাদিস বর্ণনায় কোন সমস্যা নেই। ২. আব্দুর রহমান বিব যিয়াদ সম্পর্কে ইয়াহইয়া বিন সাঈদ আল কাত্তান বলেন, তার থেকে হাদিস প্রত্যাখ্যানযোগ্য। আলী ইবনিল মাদীনী বলেন, তার থেকে হাদিস বর্ণনা করা উচিত নয়। আহমদ বিন হাম্বল বলেন, আমি তার থেকে কোন হাদিস বর্ণনা করি নি।হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৩৯. অধ্যায়ঃ জ্ঞানের প্রচারক

২৩০ – যায়দ বিন সাবিত [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার বক্তব্য শুনেছে, অতঃপর তার প্রচার করেছে, আল্লাহ্‌ তাকে হাস্যোজ্জ্বল ও সতেজ করুন। এমন কতক জ্ঞানের বাহক আছে যারা নিজেরাই জ্ঞানী নয়। আবার এমন কতক জ্ঞানের বাহক আছে, তারা যাদের নিকট তা বয়ে নিয়ে যায় তারা এই বাহকদের চেয়ে অধিক সমঝদার। আলী বিন মুহাম্মাদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর বর্ণনায় আরো আছেঃ তিনটি বিষয়ে কোন মুসলিম ব্যক্তির অন্তর যেন প্রতারিত না হয়ঃ নিষ্ঠার সাথে আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টির জন্য কাজ করা, মুসলিম নেতৃবৃন্দকে সদুপদেশ দেয়া এবং তাহাদের [নেক কাজের] সাথে সম্পৃক্ত থাকা। {২২৮}

{২২৮} তিরমিজি ২৬৫৬, আবু দাউদ ৩৬৬০, আহমদ ২১০৮০, দারিমী ২২৯। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানি: সহিহ। তাখরিজ  নাসিরুদ্দিন আলবানি: সহীহাহ ৪০৩। উক্ত হাদিসের রাবী ১. মুহাম্মাদ ইবনিল ফুদাইল সম্পর্কে ইবনি মাঈন বলেন, তিনি সিকাহ। আবু যুরআহ বলেন, তিনি সত্যবাদী। ইমাম নাসাঈ বলেন, কোন সমস্যা নেই। লায়স বিন আবু সুলায়ম সম্পর্কে ইমাম বোখারী বলেন, তিনি সত্যবাদী কিন্তু হাদিস বর্ণনায় সন্দেহ করেন। আহমাওদ বিন হাম্বল বলেন, মুদতারাবুল হাদিস। ইয়াহইয়া বিন মাঈন, আবু যুরআহ ও আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, তিনি দুর্বল। এলেম শিক্ষার গুরুত্ব – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

২৩১ – জুবায়র বিন মুতঈম [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] মিনার আল-খায়ফ নামক উচ্চ ভুমিতে দাঁড়িয়ে বলেছেন, আল্লাহ্‌ এমন ব্যক্তিকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করুন যে আমার বক্তব্য শোনার পর তা প্রচার করলো [বা অপরের নিকট পৌঁছে দিল]। জ্ঞানের অনেক বাহক নিজেরাই জ্ঞানী নয়। জ্ঞানের এমন বাহকও আছে যে, তারা যাদের নিকট তা বয়ে নিয়ে যায় তারা তাহাদের চেয়ে অধিক জ্ঞানী। {২২৯}

{২২৯} আহমদ ১৬২৯৬, ১৬৩১২; দারিমী ২১৭। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানি: সহিহ। উক্ত হাদিসের রাবী আব্দুস সালাম [বিন আবুল জুনুব] সম্পর্কে আলী ইবনিল মাদীনী বলেন, মাতরুকুল হাদিস। আবু যুরআহ আর-রাযী বলেন, তিনি দুর্বল। আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, তিনি প্রত্যাখ্যানযোগ্য। ইবনি হিব্বান তাকে দুর্বল উল্লেখ করিয়াছেন। দারাকুতনী বলেন, মুনকারুল হাদিস। উক্ত হাদিসটি শাহিদ এর ভিত্তিতে সহিহ। এলেম শিক্ষার গুরুত্ব – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

২৩২ – আবদুল্লাহ বিন মাসুদ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

নবি [সাঃআ:] বলেন, যে ব্যক্তি আমার নিকট হতে একটি হাদীস শুনে তা অন্যদের নিকট পৌঁছিয়ে দেয়, আল্লাহ্‌ তাকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করেন। কখনো শ্রোতার চেয়ে প্রচারক অধিকতর স্মৃতিধর হয়ে থাকে। {২৩০}

{২৩০} তিরমিজি ২৬৫৭ তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানি: সহিহ। তাখরিজ  নাসিরুদ্দিন আলবানি: মিশকাত ৩২৩০। এলেম শিক্ষার গুরুত্ব – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

২৩৩ – আবু বাক্‌রাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

নবি [সাঃআ:] কুরবানীর দিন তাহাঁর ভাষণে বলেন, উপস্থিত ব্যক্তিরা যেন অনুপস্থিতদের নিকট [আমার বাণী] পৌঁছে দেয়। এমনও হতে পারে যে, যাদের নিকট জ্ঞানের কথা পৌঁছানো হয় তারা শ্রোতাহাদের চাইতে অধিক স্মৃতিধর। {২৩১}

তাহকীক আলবানীঃ [আরবি] শব্দটি ব্যতীত সহিহ।{২৩১} বোখারী ৫৫৫০, মুসলিম ১৬৭৯, আহমদ ১৯৮৮৩, ১৯৮৯৪, ১৯৯০৬, ১৯৯৮৫; দারিমী ১৯১৬। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানি: فَإِنَّهُ শব্দটি ব্যাতিত সহিহ। তাখরিজ  নাসিরুদ্দিন আলবানি: ইরওয়াহ ৫/২৭৮/১৪৫৮।হাদিসের তাহকিকঃ অন্যান্য

২৩৪ – মুআবিযাহ আল-কুশাইরী [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেছেন, শোন! উপস্থিতরা যেন অনুপস্থিতদের নিকট [আমার কথা] পৌঁছিয়ে দেয়। {২৩২}

{২৩২} আহমদ ১৯৫৩৩ তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানি: সহিহ। এলেম শিক্ষার গুরুত্ব – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

২৩৫ – ইবনি উমার [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেন, তোমাদের উপস্থিতরা যেন তোমাদের অনুপস্থিতদের নিকট [আমার বানী] পৌঁছে দেয়। {২৩৩}

{২৩৩} আবু দাউদ ১২৭৮, আহমদ ৫৭৭৭। উক্ত হাদিসের রাবী মুহাম্মাদ ইবনিল হায়সান আত-তামীমী সম্পর্কে ইবনি হিব্বান সিকাহ বললেও ইমাম দারাকুতনী বলেন তিনি মাজহুল বা অপরিচিত। উক্ত হাদিসটি শাহিদ এর ভিত্তিতে সহিহ। এলেম শিক্ষার গুরুত্ব – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

২৩৬ – আনাস বিন মালিক [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেছেন, আল্লাহ্‌ সেই বান্দাকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করুন যে আমার বক্তব্য শুনে তা স্মৃতিতে ধারণ করেছে, অতঃপর আমার পক্ষ থেকে তা [অন্যদের নিকট] প্রচার করেছে। কতক জ্ঞানের বাহক নিজেরাই জ্ঞানী নয় এবং কতক জ্ঞানের বাহক যাদের নিকট তা পৌঁছে দেয় তারা তাহাদের চেয়ে অধিক সমঝদার হতে পারে। {২৩৪}

{২৩৪} আহমদ ১২৯৩৭ তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানি: সহিহ। উক্ত হাদিসের রাবী মুহাম্মাদ বিন ইবরাহীম আদ-দিমাশকী সম্পর্কে ইবনি আদী বলেন, মুনকারুল হাদিস ও তার নিকট হাদিস সংরক্ষিত নয়। ইবনি হিব্বান বলেন তিনি বানিয়ে হাদিস বর্ণনা করেন। ইমাম দারাকুতনী বলেন, তিনি মিথ্যুক। হাকিম বলেন তিনি একাধিক হাদিস বানিয়ে বর্ণনা করিয়াছেন। ২. মু’আয বিন রিফআহ সম্পর্কে আলী ইবনিল মাদীনী সিকাহ বললেও ইয়াহইয়া বিন মাঈন তাকে দুর্বল বলেছেন। মুহাম্মাদ বিন আউফ ও আবু দাউদ আস-সাজিসতানী বলেন, কোন সমস্যা নেই। উক্ত হাদিসটি শাহিদ এর ভিত্তিতে সহিহ। এলেম শিক্ষার গুরুত্ব – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪০. অধ্যায়ঃ কল্যাণের চাবিকাঠি যেসব লোক

২৩৭ – আনাস বিন মালিক [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেছেন, নিশ্চয় কতক লোক আছে, যারা কল্যাণের চাবিকাঠি এবং অকল্যাণের দ্বার রুদ্ধকারী। পক্ষান্তরে এমন কতক লোকও আছে যারা অকল্যাণের দ্বার উন্মোচনকারী এবং কল্যাণের পথ রুদ্ধকারী। সেই লোকের জন্য সুসংবাদ যার দু হাতে আল্লাহ্‌ কল্যাণের চাবি রেখেছেন এবং সেই লোকের জন্য ধ্বংস যার দু হাতে আল্লাহ্‌ অকল্যাণের চাবি রেখেছেন। {২৩৫}

{২৩৫} হাসান। তাখরিজ  নাসিরুদ্দিন আলবানি: সহীহাহ ১৩৩২। উক্ত হাদিসের রাবী মুহাম্মাদ বিন আবু হুমায়দ সম্পর্কে আহমদ বিন হাম্বল বলেন, তার থেকে একাধিক মুনকার হাদিস বর্ণিত হয়েছে। ইয়াহইয়া বিন মাঈন ও আবু দাউদ আস-সাজিসতানী বলেন, তিনি দুর্বল। ইমাম বোখারী বলেন, মুনকারুল হাদিস। আবু যুরআহ আর-রাযী বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় দুর্বল। হাদিসটির ২৯ টি শাহিদ হাদিস রয়েছে। তন্মধ্যে ইবনি মাজাহ ২ টি, ইবনি আবু আসিম এর আস সুন্নাহ কিতাবে ৩ টি, শুআবুল ঈমানে ২ ও বাকিগুলো অন্যান্য কিতাবে রয়েছে।হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

২৩৮ – সাহল বিন সাদ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেন, নিশ্চয় এই কল্যাণ কোষাগারস্বরূপ এবং এই কোষাগারের রয়েছে কিছু সংখ্যক চাবি। সুসংবাদ সেই বান্দার জন্য যাকে আল্লাহ্‌ কল্যাণের দ্বার উন্মোচনকারী ও অকল্যাণের পথ রুদ্ধকারী বানিয়েছেন। ধ্বংস সেই ব্যক্তির জন্য যাকে আল্লাহ্‌ অকল্যাণের দ্বার উন্মোচনকারী এবং কল্যাণের পথ রুদ্ধকারী বানিয়েছেন। {২৩৬}

{২৩৬} খুবই দুর্বল। তাখরিজ  নাসিরুদ্দিন আলবানি: সহিহ তারগীব ৬৬, যিলালু জান্নাহ ২৮৮, ২৮৯। উক্ত হাদিসের রাবী আব্দুর রহামান বিন যায়দ বিন আসলাম সম্পর্কে আহমদ বিন হাম্বল বলেন, তিনি দুর্বল। ইয়াহইয়া বিন মাঈন বলেন, তার থেকে কোন হাদিস গ্রহনযোগ্য নয়। আলী ইবনিল মাদীনী ও মুহাম্মাদ বিন সা’দ বলেন, তিনি খুবই দুর্বল। আবু দাউদ আস-সাজিসতানী ও আবু যুরআহ আর-রাযী বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় দুর্বল।হাদিসের তাহকিকঃ খুবই দুর্বল

৪১. অধ্যায়ঃ লোকজনকে উত্তম বিষয় শিক্ষাদাতার সাওয়াব।

২৩৯ – আবুদ-দারদা [উয়াইমির বিন মালিক] [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআ:]-কে বলিতে শুনেছিঃ নিশ্চয় আসমান ও যমীনের অধিবাসীগণ জ্ঞানীর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে, এমনকি সমুদ্রের মাছরা পর্যন্ত। {২৩৭}

{২৩৭} আহমদ ২১২০৮ তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানি: সহিহ। উক্ত হাদিসের রাবী ১. হাফয বিন আমর সম্পর্কে ইমাম যাহাবী ও আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, তিনি অপরিচিত। ২. উসমান বিন আতা সম্পর্কে ইয়াহইয়া বিন মাঈন বলেন, তিনি দুর্বল। আমর বিন ফাল্লাস বলেন তার হাদিস প্রত্যাখ্যানযোগ্য। আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, তার থেকে হাদিস গ্রহন করা যায় কিন্তু দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়। আলজাযুজানী বলেন, হাদিস বর্ণনায় তিনি নির্ভরযোগ্য নয়। ইবনিল জুনায়দ বলেন, তিনি প্রত্যাখ্যানযোগ্য। উক্ত হাদিসটি শাহিদ এর ভিত্তিতে সহিহ। এলেম শিক্ষার গুরুত্ব – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

২৪০ – মুআয বিন আনাস [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

নবি [সাঃআ:] বলেন, যে ব্যক্তি জ্ঞানের কথা শিক্ষা দেয়, সে তদনুসারে কর্ম সম্পাদনকারীর সমান পুরস্কার পাবে, এতে কর্ম সম্পাদনকারীর পুরস্কারে কোনরূপ ঘাটতি হইবে না।

হাসান।হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

২৪১ – আবু কাতাদাহ হারিস বিন রিবঈ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেছেন, মানুষ তার [মৃত্যুর] পরে যা কিছু রেখে যায়, তার মধ্যে তিনটি জিনিস কল্যাণকরঃ সৎকর্মপরায়ণ সন্তান, যে তার জন্য দুআ করে, সদাকায়ে জারিয়া যার সাওয়াব তার কাছে পৌঁছে এবং এমন জ্ঞান যা তার মৃত্যুর পরও কাজে লাগানো যায়।

সহিহ। এলেম শিক্ষার গুরুত্ব – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

২৪২ – আবু হুরাইরা [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেছেন, ঈমানদার ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার যেসব কাজ ও তার যেসব পুণ্য তার সাথে যুক্ত হয় তা হলোঃ যে জ্ঞান সে অন্যকে শিক্ষা দিয়েছে এবং তার প্রচার করেছে, তার রেখে যাওয়া সৎকর্মপরায়ণ সন্তান, কুরআন যা সে ওয়ারিসী সূত্রে রেখে গেছে অথবা মাসজিদ যা সে নির্মাণ করিয়েছে অথবা পথিক-মুসাফিরদের জন্য যে সরাইখানা নির্মাণ করেছে অথবা পানির নহর যা সে খনন করেছে অথবা তার জীবদ্দশায় ও সুস্থাবস্থায় তার মাল থেকে যে দান-খয়রাত করেছে তা তার মৃত্যুর পরও তার সাথে [তার আমলনামায়] যুক্ত হইবে। {২৪০}

{২৪০} মুসলিম ১৬৩১, তিরমিজি ১৩৭৬, নাসায়ী ৩৬৫১, আবু দাউদ ২৮৮০, আহমদ ৮৬২৭, দারিমী ৫৫৯। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানি: হাসান। তাখরিজ  নাসিরুদ্দিন আলবানি: ইরওয়াহ ৬/২৯। উক্ত হাদিসের রাবী মারযুক বিন আবু হুযায়ল সম্পর্কে ইমাম বোখারী তাকে তা’রিফ ও তানকির বলেছেন। ইবনি আবু খায়সামাহ তাকে সিকাহ বলেছেন। আল উকায়লী তাকে দুর্বল বলে আখ্যায়িত করিয়াছেন। উক্ত হাদিসটি শাহিদ এর ভিত্তিতে সহিহ।হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

২৪৩ – আবু হুরাইরা [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

নবি [সাঃআ:] বলেন, কোন মুসলিমের ইল্‌ম শিক্ষা করা, অতঃপর তা তার মুসলিম ভাইকে শিক্ষা দেয়া সর্বোত্তম দানরূপে গণ্য। {২৪১}

{২৪১} জঈফ। তাখরিজ  নাসিরুদ্দিন আলবানি: জামি সগীর ১০১৬ জঈফ, জঈফ তারগীব ৫৭, তালীকুররগীব ১/৫৭, ইরওয়াহ ৬/২৯। উক্ত হাদিসের রাবী ১. ইয়াকুব বিন হুমায়দ সম্পর্কে মাসলামাহ বিন বিন কাসিম তাকে সিকাহ বলেছেন। ইয়াহইয়া বিন মাঈন বলেন, কোন সমস্যা নেই। ইবনি আদী বলেন তার বর্ণনায় কোন সমস্যা নেই। ২. ইসহাক বিন ইবরাহীম সম্পর্কে ইবনি হিব্বান তাকে সিকাহ বললেও আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, তার মাঝে দুর্বলতা রয়েছে। আবু যুরআহ আর-রাযী বলেন, মুনকারুল হাদিস। আবু বকর আল বাগিন্দী বলেন, তার থেকে একাধিক মুনকার হাদিস বর্ণিত রয়েছে।হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৪২. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি তার পেছনে পেছনে অন্যের চলাকে অপছন্দ করে।

২৪৪ – আবদুল্লাহ বিন আমর [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআ:]-কে কখনো গদিতে হেলান দিয়ে আহার করিতে দেখা যায়নি এবং দুজন লোকও তাহাঁর পেছনে চলতো না। {২৪২}

{২৪২} আবু দাউদ ৩৭৭০ তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানি: সহিহ। তাখরিজ  নাসিরুদ্দিন আলবানি: সহীহাহ ১২৩৯। এলেম শিক্ষার গুরুত্ব – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

২৪৫ – আবু উমামাহ [সাদী বিন ঈজলান] [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

নবি [সাঃআ:] এক প্রচন্ড গরমের দিনে বাকীউল গারকাদ নামক স্থানের দিকে বের হলেন। লোকেরা তাহাঁর পেছনে হেঁটে যাচ্ছিল। তিনি জুতার আওয়াজ শুনতে পেলে বিষয়টি তাহাঁর মনে অপ্রিয় লাগলো। তিনি বসে পড়লেন, যাতে লোকেরা তাহাঁর আগে চলে যায়, যাতে তাহাঁর অন্তরে বিন্দুমাত্র অহমিকা জাগ্রত না হয়। {২৪৩}

{২৪৩} জঈফ। তাখরিজ  নাসিরুদ্দিন আলবানি: জঈফ তারগীব ১২১, ১৬৭৩; তালীকুর রগীব ১/৮৭ ও ৩/২৯৪। উক্ত হাদিসের রাবী ১. মুআন বিন রিফাআহ সম্পর্কে আলী বিন মাদীনী তাকে সিকাহ বললেও ইয়াহইয়া বিন মাঈন তাকে দুর্বল বলেছেন। মুহাম্মাদ বিন আওফ ও আবু দাউদ আস-সাজিসতানী বলেন, তার হাদিস বর্ণনায় কোন সমস্যা নেই। ২. আলী বিন ইয়াযিদ সম্পর্কে ইমাম বোখারী বলেন, মুনকারুল হাদিস ও দুর্বল। আহমদ বিন হাম্বল তাকে দুর্বল বলেছেন। ইয়াহইয়া বিন মাঈন বলেন, তিনি দুর্বল। আবু যুরআহ বলেন, তিনি নির্ভরযোগ্য নয়। আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় দুর্বল। ইমাম নাসাঈ বলেন তার হাদিস প্রত্যাখ্যানযোগ্য।হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

২৪৬ – জাবির বিন আবদুল্লাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

নবি [সাঃআ:] যখন হাঁটতেন তখন তাহাঁর সাহাবীগণ তাহাঁর আগে আগে চলতেন এবং তাহাঁর পেছনের দিকে মালায়িকার জন্য ছেড়ে দিতেন। {২৪৪}

{২৪৪} আহমদ ১৩৮২৪ তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানি: সহিহ। তাখরিজ  নাসিরুদ্দিন আলবানি: সহীহাহ ৩৪৭, ১৫৫৭, ২০৮৭। এলেম শিক্ষার গুরুত্ব – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪৩. অধ্যায়ঃ জ্ঞানার্জনকারীদের নাসীহাত করা

২৪৭ – আবু সাঈদ আল-খুদরী [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেন, অচিরেই তোমাদের নিকট ইলম শিক্ষার জন্য দলে দলে লোক আসবে। তোমরা তাহাদের দেখলেই রসুলুল্লাহ [সাঃআ:]-এর উপদেশের সুসংবাদ জানাবে এবং তাহাদের তালকীন দিবে [জ্ঞানদান করিবে]। আমি হাকাম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-কে বললাম, আমরা তাহাদের কী তালকীন দিব? তিনি বলেন, তাহাদের ইলম শিক্ষা দিবে। {২৪৫}

{২৪৫} তিরমিজি ২৬৫০-৫১, মুওয়াত্ত্বা মালিক ২৪৯। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানি: হাসান। তাখরিজ  নাসিরুদ্দিন আলবানি: সহীহাহ ২৮০। উক্ত হাদিসের রাবী ১. হাকাম বিন আবদাহ সম্পর্কে আল আযাদী তাকে দুর্বল বলেছেন। ২. আবু হারুন আল আবদী সম্পর্কে শু’বাহ ইবনি হাজ্জাজ তাকে দুর্বল বলেছেন। হাম্মাদ বিন যায়দ তাকে মিথ্যুক বলেছেন। আহমদ বিন হাম্বল বলেন, তার হাদিস বর্ণনায় কোন সমস্যা নেই। ইয়াহইয়া বিন মাঈন বলেন, তিনি সিকাহ নন বরং মিথ্যুক। আবু যুরআহ আর-রাযী বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় দুর্বল। আবু হাতিম বলেন, তিনি দুর্বল।হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

২৪৮ – আবু হুরাইরা [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

[ইসমাইল] বলেন, আমরা অসুস্থ হাসান [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] কে দেখিতে গেলাম, এমনকি আমাদের উপস্থিতিতে ঘর ভর্তি হয়ে গেল। তিনি তার পদদ্বয় গুটিয়ে নিলেন, অতঃপর বলিলেন, আমরা অসুস্থ আবু হুরাইরা [রাঃআ:]-কে দেখিতে গেলাম। এমনকি আমাদের উপস্থিতিতে ঘর ভর্তি হয়ে গেল। তখন তিনি তার পদদ্বয় গুটিয়ে নিলেন, অতঃপর বলিলেন, আমরা রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] এর নিকট প্রবেশ করলাম এবং আমাদের উপস্থিতিতে ঘর ভর্তি হয়ে গেল। তিনি তখন কাত হয়ে শায়িত ছিলেন। তিনি আমাদের দেখে তাহাঁর পদদ্বয় গুটিয়ে নিলেন, অতঃপর বলেন, অচিরেই আমার পরে তোমাদের নিকট দলে দলে লোক আসবে জ্ঞানার্জনের জন্য। তোমরা তাহাদের স্বাগত জানাবে, তাহাদের সালাম দিবে এবং ইল্‌ম শিক্ষা দিবে। অধস্তন রাবী হাসান [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, আমরা তাহাদের সাক্ষাৎ পেয়েছি। আল্লাহ্‌র শপথ! আমরা তাহাদের নিকট গেলে তারা আমাদের স্বাগত জানায়নি, আমাদের সালাম দেয়নি, আমাদের ইলম শিক্ষা দেয়নি, বরং আমরা তাহাদের কাছে পৌঁছলে তারা আমাদের উপর যুলম করেছে। {২৪৬}

{২৪৬} মউযূ। তাখরিজ  নাসিরুদ্দিন আলবানি: যঈফাহ ৩৩৪৯। উক্ত হাদিসের রাবী ১. মুআল্লা বিন হিলাল সম্পর্কে সুফইয়ান আস-সাওরী তার ব্যাপারে মিথ্যার অভিযোগ করিয়াছেন। সুফইয়ান বিন উয়াইনাহ বলেন, তিনি মিথ্যুকদের একজন। ইয়াহইয়া বিন সাঈদ আল কাত্তান, তিনি পরিষ্কার মিথ্যুক। আহমদ বিন হাম্বল বলেন, তার হাদিস প্রত্যাখ্যানযোগ্য ও তিনি মিথ্যুক। ইয়াহইয়া বিন মাঈন বলেন, তিনি সিকাহ নন বরং মিথ্যুক। ইমাম বোখারী বলেন, তাকে সকলে প্রত্যাখ্যান করিয়াছেন। ২. ইসমাইল [বিন মুসলিম] সম্পর্কে ইয়াহইয়া বিন সাঈদ আল কাত্তান বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় সংমিশ্রণ করেন। সুফইয়ান বিন উয়াইনাহ বলেন, তিনি হাদীস বর্ণনায় ভুল করেন। আহমদ বিন হাম্বল বলেন, মুনকারুল হাদিস। আলী ইবনিল মাদীনী বলেন, তার থেকে হাদিস গ্রহন করা যায় না। আমর ইবনিল ফাল্লাস বলেন, তিনি সত্যবাদী হাদিস বর্ণনায় দুর্বল।হাদিসের তাহকিকঃ জাল হাদিস

২৪৯ – আবু হারূন আল-আবদী [মাতরূক বা প্রত্যাখ্যানযোগ্য] হইতে বর্ণিতঃ

আমরা আবু সাঈদ আল খুদরী [রাঃআ:]-এর কাছে এলেই তিনি বলিতেনঃ তোমাদের জন্য রসুলুল্লাহ [সাঃআ:]-এর ওসিয়াত অনুযায়ী স্বাগতম। রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] আমাদের বলেন, লোকেরা অবশ্যই তোমাদের অনুগামী। অচিরেই পৃথিবীর আনাচে-কানাচে থেকে লোকেরা তোমাদের নিকট দ্বীন শিক্ষার জন্য আসবে। তারা তোমাদের নিকট আসলে তোমরা তাহাদের ভালো কাজের উপদেশ দিবে। {২৪৭}

{২৪৭} তিরমিজি ২৬৫০-৫১, মুওয়াত্ত্বা মালিক ২৪৭। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানি: জঈফ। তাখরিজ  নাসিরুদ্দিন আলবানি: মিশকাত ২১৫। উক্ত হাদিসের রাবী আবু হারুন আল আবদী সম্পর্কে শু’বাহ ইবনি হাজ্জাজ তাকে দুর্বল বলেছেন। হাম্মাদ বিন যায়দ তাকে মিথ্যুক বলেছেন। আহমদ বিন হাম্বল বলেন, তার হাদিস বর্ণনায় কোন সমস্যা নেই। ইয়াহইয়া বিন মাঈন বলেন, তিনি সিকাহ নন বরং তিনি মিথ্যুক। আবু যুরআহ আর-রাযী বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় দুর্বল। আবু হাতিম বলেন, তিনি দুর্বল।হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৪৪. অধ্যায়ঃ জ্ঞান দ্বারা উপকৃত হওয়া এবং তদানুযায়ী আমাল করা

২৫০ – আবু হুরাইরা [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

নবি [সাঃআ:]-এর একটি দুআ এই যে, “হে আল্লাহ্‌! আমি সেই জ্ঞান থেকে তোমার নিকট আশ্রয় চাই যা কোন উপকারে আসে না, এমন দুআ থেকে যা শোনা হয় না, সেই অন্তর থেকে যা ভীত হয় না এবং সেই দেহ থেকে যা তৃপ্ত হয় না।” {২৪৮}

{২৪৮} নাসায়ী ৫৫৩৬-৩৭, আবু দাউদ ১৫৪৮। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানি: সহিহ। উক্ত হাদিসের রাবী আবু খালিদ আল-আহমার সম্পর্কে ইয়াহইয়া বিন মাঈন বলেন, তিনি সত্যবাদী কিন্তু কিন্তু তার হাদিস দলীলযোগ্য নয়। আলী বিন মাদীনী বলেন, তিনি সিকাহ। আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, তিনি সত্যবাদী। ইমাম নাসাঈ বলেন, কোন সমস্যা নেই। ইবনি আদী বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় সালেহ কিন্তু হাদিস বর্ণনায় সংমিশ্রণ ও ভুল করেন। এলেম শিক্ষার গুরুত্ব – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

২৫১ – আবু হুরাইরা [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলিতেনঃ “হে আল্লাহ্‌! তুমি যে জ্ঞান আমাকে শিখিয়েছো তার দ্বারা আমাকে উপকৃত করো, আমাকে এমন জ্ঞান দান করো যা আমার উপকারে আসে, আমার জ্ঞানের পরিধি বাড়িয়ে দাও এবং সর্বাবস্থায় সকল প্রশংসা আল্লাহ্‌র জন্য।” {২৪৯}

তাহকীক আলবানীঃ হাম্‌দ ছাড়া সহিহ।{২৪৯} তিরমিজি ৩৫৯৯ তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানি: হামদ ছাড়া সহিহ। তাখরিজ  নাসিরুদ্দিন আলবানি: মিশকাত ৩৪৯৩। উক্ত হাদিসের রাবী মুসা বিন উবায়দা সম্পর্কে মুহাম্মাদ বিন সা’দ বলেন, তিনি সিকাহ তবে হুজ্জাহ নয়। আহমদ বিন হাম্বল বলেন, তার থেকে হাদিস বর্ণনা করা উচিত নয়। আলী ইবনিল মাদীনী বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় দুর্বল। আবু যুরআহ আর-রাযী বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় নির্ভরযোগ্য নন। আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, মুনকারুল হাদিস। এলেম শিক্ষার গুরুত্ব – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

২৫২ – আবু হুরাইরা [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেছেন, যে জ্ঞান দ্বারা আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি অন্বেষণ করা হয়, যদি কেউ সেই জ্ঞান পার্থিব স্বার্থ সিদ্ধির জন্য শিক্ষা করে, তবে সে কিয়ামাতের দিন জান্নাতের সুবাসও পাবে না। {২৫০}

{২৫০} আবু দাউদ ৩৬৬৪, আহমদ ৮২৫২। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানি: সহিহ। উক্ত হাদিসের রাবী ফুদায়লাহ বিন সুলায়মান সম্পর্কে ইবনি হিব্বান বলেন, তিনি সিকাহ। ইবনি আদী ও ইমাম দারাকুতনী বলেন, তার হাদিস বর্ণনায় সমস্যা নেই। আস-সাজী বলেন, তিনি সত্যবাদী কিন্তু হাদিস বর্ণনায় সন্দেহ করেন। ইয়াহইয়া বিন মাঈন বলেন, তিনি দুর্বল। আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় নির্ভরযোগ্য নয়। এলেম শিক্ষার গুরুত্ব – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

২৫৩ – ইবনি উমার [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

নবি [সাঃআ:] বলেন, যে ব্যক্তি নির্বোধের সাথে ঝগড়া করার জন্য অথবা আলিমদের উপর বাহাদুরি প্রকাশের জন্য অথবা তার প্রতি জনসাধারণের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য জ্ঞানার্জন করে, সে জাহান্নামী। {২৫১}

{২৫১} তিরমিজি ২৬৫৫ তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানি: হাসান। উক্ত হাদিসের রাবী ১. হাম্মাদ বিন আব্দুর রহমান সম্পর্কে আবু যুরআহ আর-রাযী বলেন, মুনকারুল হাদিস। আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, দুর্বল। ২. আবু কুরায়ব আল-আমদী সম্পর্কে আবু হাতিম ও ইমাম যাহাবী বলেন, তিনি মাজহুল বা অপরিচিত।হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

২৫৪ – জাবির বিন আবদুল্লাহ্‌ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

নবি [সাঃআ:] বলেন, তোমরা আলিমদের উপর বাহাদুরি প্রকাশের জন্য, নির্বোধদের সাথে ঝগড়া করার জন্য এবং জনসভার উপর বড়ত্ব প্রকাশ করার জন্য ধর্মীয় জ্ঞান শিক্ষা করো না। যে ব্যক্তি এরূপ করিবে, তার জন্য রয়েছে আগুন আর আগুন। {২৫২}

{২৫২} সহিহ। তাখরিজ  নাসিরুদ্দিন আলবানি: সহিহ তারগীব ১০২। এলেম শিক্ষার গুরুত্ব – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

২৫৫- ইবনি আব্বাস [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

নবি [সাঃআ:] বলেন, আমার উম্মাতের কতক লোক ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন করিবে, তারা কুরআন পড়বে এবং বলবে, আমরা শাসকদের নিকট যাবো তাহাদের নিকট থেকে পার্থিব স্বার্থ প্রাপ্ত হবো এবং আমাদের দ্বীন থেকে তাহাদের সরিয়ে রাখবো। এরূপ কখনো হতে পারে না। যেমন কাঁটাদার গাছ থেকে ফল আহরণের সময় হাতে কাঁটা ফুটবেই, তদ্রূপ তারা তাহাদের কাছে গিয়ে গুনাহ থেকে বাঁচতে পারে না। মুহাম্মাদ ইবনিস সাব্বাহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, অর্থাৎ গুনাহ ব্যতীত তারা কিছুই লাভ করিতে পারে না। {২৫৩}

{২৫৩} নাই তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানি: জঈফ। তাখরিজ  নাসিরুদ্দিন আলবানি: মিশকাত ২৬২ জঈফ, যঈফা ৩/১২৫০ জঈফ, তালীফুর গীব ১/৬৯। উক্ত হাদিসের রাবী উবায়দুল্লাহ বিন আবু বুরদাহ সম্পর্কে ইমাম যাহাবী বলেন, তার সম্পর্কে কিছুই জানা যায় নি।হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

২৫৬ – আবু হুরাইরা [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেছেন, তোমরা জুব্বুল হুযন থেকে আল্লাহ্‌র নিকট আশ্রয় প্রার্থনা কর। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করিলেন, হে আল্লাহ্‌র রসূল! জুব্বুল হুযন কী? তিনি বলেন, জাহান্নামের একটি উপত্যকা, যা থেকে বাঁচার জন্য জাহান্নাম দৈনিক চার শতবার আশ্রয় প্রার্থনা করে। তারা বলেন, হে আল্লাহ্‌র রসূল! তাতে কারা প্রবেশ করিবে? তিনি বলেন, যারা প্রদর্শনেচ্ছার বশবর্তী হয়ে কাজ করে সেসব কুরআন পাঠকের জন্য তা তৈরি করা হয়েছে। যে সকল কুরআন পাঠক [বিশেষজ্ঞ] শাসক গোষ্ঠীর সাথে দেখা-সাক্ষাত করে তারা আল্লাহ্‌র কাছে সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্ট ক্বারী। মুহারিবী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, এর দ্বারা যালিম ও অত্যাচারী শাসকদের বুঝানো হয়েছে। {২৫৪}

{২৫৪} তিরমিজি ২৩৮৩ তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানি: জঈফ। তাখরিজ  নাসিরুদ্দিন আলবানি: তিরমিজি ৪/২৩৮৩, মিশকাত ২৭৫, জঈফ তারগীব ১৬, ২১৪১; যঈফা ১১/৫১৫৫ জঈফ জিদ্দান, মলাকুর রগীব ১/৩৩, যঈফাহ ৫০২৩। উক্ত হাদিসের রাবী ১. আম্মার বিন সায়ফ সম্পর্কে ইয়াহইয়া বিন মাঈন সিকাহ বললেও আবু যুরআহ ও আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, তিনি দুর্বল। ইমাম বোখারী বলেন, মুনকারুল হাদিস তার হাদিসের ব্যাপারে অনুসরণ করা যাবে না। ২. আবু মুআয সম্পর্কে আমর বিন ফাল্লাস বলেন, তিনি সিকাহ নন বরং মুনকারুল হাদিস। ইমাম বোখারী বলেন, তাকে সকলে প্রত্যাখ্যান করিয়াছেন। মুসলিম ইবনিল হাজ্জাজ বলেন, মুনকারুল হাদিস। আবু দাউদ আস-সাজিসতানী বলেন, তার হাদিস প্রত্যাখ্যানযোগ্য।হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

২৫৭ – আবদুল্লাহ বিন মাসুদ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

আলিমরা যদি জ্ঞানার্জনের পর তা সংরক্ষণ করে এবং তা যোগ্য আলিমদের সামনে রেখে দেয়, তাহলে অবশ্যই তারা নিজ যুগের জনগণের নেতৃত্ব দিবে। কিন্তু তারা তা দুনিয়াদারদের নিকট পেশ করেছে পার্থিব স্বার্থ লাভের জন্য। ফলে তারা তাহাদের নিকট হেয় প্রতিপন্ন হয়েছে। আবদুল্লাহ বিন মাসুদ [রাঃআ:] হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি তোমাদের নবি [সাঃআ:]-কে বলিতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি তার সমস্ত চিন্তাকে একই চিন্তায় অর্থাৎ আখিরাতের চিন্তায় কেন্দ্রীভূত করেছে, আল্লাহ্‌ তার দুনিয়ার চিন্তার জন্য যথেষ্ট। অপর দিকে যে ব্যক্তি যাবতীয় পার্থিব চিন্তায় নিমগ্ন থাকিবে সে যে কোন উন্মুক্ত মাঠে ধংস হোক, তাতে আল্লাহ্‌র কিছু আসে যায় না।

হাসান। তাখরিজ  নাসিরুদ্দিন আলবানি: হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

২৫৮ – ইবনি উমার [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

নবি [সাঃআ:] বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌ ব্যতীত অন্যের [সন্তুষ্টি লাভের] জন্য জ্ঞানার্জন করে অথবা জ্ঞানার্জনের দ্বারা আল্লাহ্‌ ব্যতীত অন্য কিছু লাভের ইচ্ছা করে, সে যেন জাহান্নামে তার বাসস্থান বানিয়ে নিল। {২৫৬}

{২৫৬} তিরমিজি ২৬৫৫ তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানি: জঈফ। তাখরিজ  নাসিরুদ্দিন আলবানি: জামি সগীর ৫৬৮৭ জঈফ, যঈফাহ ৫০১৭।হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

২৫৯ – হুযায়ফাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআ:]-কে বলিতে শুনেছিঃ তোমরা আলিমগণের উপর বাহাদুরি জাহির করার জন্য অথবা নির্বোধদের সাথে ঝগড়া করার জন্য অথবা সাধারণ মানুষের মনোযোগ তোমাদের দিকে আকৃষ্ট করার জন্য জ্ঞানার্জন করো না। যে তা করিবে সে জাহান্নামী।

নাই তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানি: হাসান। উক্ত হাদিসের রাবী বাশীর বিন মায়মুন সম্পর্কে আলী ইবনিল মাদীনী ও আমর ইবনিল ফাল্লাস বলেন, তিনি দুর্বল। আহমদ বিন হাম্বল বলেন, তার হাদিস বর্ণনায় কোন সমস্যা নেই। ইমাম বোখারী বলেন, মুনকারুল হাদিস ও তার ব্যাপারে হাদিস বানিয়ে বর্ণনার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আবু যুরআহ আর-রাযী বলেন, তিনি দুর্বল। ২. আশআস বিন সাওওয়ার সম্পর্কে ইয়াহইয়া বিন মাঈন সিকাহ বললেও ইয়াহইয়া বিন মাঈন ও আবু যুরআহ আর-রাযী বলেন, তিনি দুর্বল। উসমান বিন আবু শায়বা বলেন, তিনি সত্যবাদী কিন্তু তার হাদিস দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য নায়। আহমদ বিন হাম্বল বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় দুর্বল। ইমাম যাহাবী বলেন, সালিহুল হাদিস।হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

সুনানে ইবনে মাজাহ নং ২৬০ – আবু হুরাইরা [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেছেন, যে ব্যক্তি আলিমদের উপর বাহাদুরি জাহির করার জন্য, নির্বোধদের সাথে ঝগড়া করার জন্য এবং নিজের দিকে সাধারণ মানুষের মনোযোগ আকৃষ্ট করার জন্য জ্ঞানার্জন করে, আল্লাহ্‌ তাকে জাহান্নামে দাখিল করবেন। {২৫৮}

{২৫৮} আহমদ ৮২৫২ তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানি: হাসান। উক্ত হাদিসের রাবী আবদুল্লাহ বিন সাঈদ [বিন আবু সাঈদ] আল মাকবুরী সম্পর্কে ইয়াহইয়া বিন সাঈদ আল কাত্তান বলেন, আমি তার মাজলিসে বসে জানতে পেরেছি যে, তার মাঝে মিথ্যাবাদিতা রয়েছে। আহমদ বিন হাম্বল বলেন, তার হাদিস প্রত্যাখ্যানযোগ্য। ইবনি মাঈন বলেন তিনি সিকাহ নন। ইমাম বোখারী তাকে প্রত্যাখ্যান করিয়াছেন। আবু যুরআহ তাকে দুর্বল সাব্যস্ত করিয়াছেন। আমর ইবনিল ফাল্লাস তাকে প্রত্যাখ্যান করিয়াছেন। হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

৪৫. অধ্যায়ঃ জ্ঞাত বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হয়ে যে ব্যক্তি তা গোপন করে

২৬১ – আবু হুরাইরা [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

নবি [সাঃআ:] বলেন, কোন ব্যক্তি [দ্বীনের] জ্ঞানের কথা শিক্ষা করার পর তা গোপন করে রাখলে, কিয়ামাতের দিন তাকে আগুনের লাগাম পরানো অবস্থায় উপস্থিত করা হইবে।

হাসান। উক্ত হাদিসের রাবী ইমারাহ ইবনি যাযান সম্পর্কে আবু যুরআহ আর-রাযী বলেন, তার থেকে হাদিস বর্ণনায় কোন সমস্যা নেই। ইয়াকুব বিন সুফইয়ান তাকে সিকাহ বলেছেন।হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

সুনানে ইবনে মাজাহ নং ২৬২ – আবদুর রহমান বিন হুরমুয আল-আরাজ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি আবু হুরাইরা [রাঃআ:]-কে বলিতে শুনেছেন, আল্লাহ্‌র শপথ! যদি মহান আল্লাহ্‌র কিতাবে [কুরআন মাজীদ] দুটি আয়াত না থাকতো, তাহলে আমি কখনো নবি [সাঃআ:] থেকে কোন হাদীস বর্ণনা করতাম না। যদি আল্লাহ্‌র এই বাণী না থাকতো [অর্থ]: “আল্লাহ্‌ যে কিতাব নাযিল করিয়াছেন যারা তা গোপন রাখে এবং বিনিময়ে তুচ্ছ মূল্য গ্রহণ করে, তারা নিজেদের পেটে আগুন ছাড়া আর কিছুই ভরে না। কিয়ামাতের দিন আল্লাহ্‌ তাহাদের সাথে কথা বলবেন না, তাহাদের পবিত্র করবেন না এবং তাহাদের জন্য রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তি। এরাই সৎপথের বিনিময়ে ভ্রান্ত পথ এবং ক্ষমার পরিবর্তে শাস্তি ক্রয় করেছে। আগুন সহ্য করিতে এরা কতই না ধৈর্যশীল।” [সূরা বাকারাঃআ: ১৭৪-১৭৫]। {২৬০}

{২৬০} বোখারী ১১৮, ২৩৫০; আহমদ ৭২৩৩, ৭৬৪৮। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানি: সহিহ। এলেম শিক্ষার গুরুত্ব – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

২৬৩ – জাবির [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেছেন, এই উম্মাতের পরবর্তীকালের লোকেরা যখন তাহাদের পূর্ববর্তীকালের লোকেদের অভিশাপ দিবে, তখন কেউ একটি হাদীস গোপন করলে, সে যেন আল্লাহ্‌ কর্তৃক নাযিলকৃত কিতাবকেই গোপন করলো। {২৬১}

{২৬১} খুবই দুর্বল। তাখরিজ  নাসিরুদ্দিন আলবানি: জামি সগীর ৬৮৭ জঈফ জিদ্দান, জঈফ তারগীব ৯৬, যঈফা ৪/১৫০৭; যঈফাহ ১৫০৭ তালীকুল রগীব ১/৭৪। উক্ত হাদিসের রাবী হুসায়ন বিন আবু সারিয়্যী আল আসকালানী সম্পর্কে আবু দাউদ আস-সাজিসতানী বলেন, তিনি দুর্বল। ইবনি হিব্বান তাকে সিকাহ বললেও অন্যত্রে তিনি বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় ভুল করেন।হাদিসের তাহকিকঃ খুবই দুর্বল

সুনানে ইবনে মাজাহ নং ২৬৪ – আনাস বিন মালিক [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআ:]-কে বলিতে শুনেছিঃ কোন ব্যক্তি [তার জানা] জ্ঞানের কথা জিজ্ঞাসিত হয়ে সে তা গোপন করলে কিয়ামাতের দিন তাকে আগুনের লাগাম পরানো হইবে। {২৬২}

{২৬২} সহিহ। তাখরিজ  নাসিরুদ্দিন আলবানি: মিশকাত ২২৩-২২৪। উক্ত হাদিসের রাবী ১. উমার বিন সুলায়ম সম্পর্কে আবু যুরআহ আর-রাযী বলেন, তিনি সত্যবাদী। ইবনি হিব্বান বলেন, তিনি সিকাহ। আল উকায়লী বলেন, তিনি প্রসিদ্ধ নয়। ২. ইউসুফ বিন ইবরাহীম সম্পর্কে আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় দুর্বল, মুনকারুল হাদিস ও তার থেকে আশ্চর্য ধরনের হাদিস শুনা যায়। ইবনি হিব্বান বলেন, তার থেকে হাদিস বর্ণনা করা বৈধ হইবে না। আল উকায়লী তাকে দুর্বল আখ্যায়িত করিয়াছেন। আবু আহমদ আল হাকিম বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় নির্ভরযোগ্য নয়। উক্ত হাদিসটি শাহিদ এর ভিত্তিতে সহিহ। এলেম শিক্ষার গুরুত্ব – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

সুনানে ইবনে মাজাহ নং ২৬৫ – আবু সাঈদ আল-খুদরী [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেছেন, যে ব্যক্তি দ্বীনের এমন জ্ঞান গোপন করে, যার দ্বারা আল্লাহ্‌ মানুষের কাজে, দ্বীনের কাজে উপকৃত করে থাকেন, আল্লাহ্‌ তাকে কিয়ামাতের দিন আগুনের লাগাম পরাবেন। {২৬৩}

{২৬৩} খুবই দুর্বল। তাখরিজ  নাসিরুদ্দিন আলবানি: জামি সগীর ৫৮১৪ জঈফ, জঈফ তারগীব ৯৬, যঈফা ৪/১৫০৭। উক্ত হাদিসের রাবী মুহাম্মাদ বিন দাব সম্পর্কে আবু যুরআহ আর-রাযী বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় দুর্বল এবং মিথ্যুক।হাদিসের তাহকিকঃ খুবই দুর্বল

সুনানে ইবনে মাজাহ নং ২৬৬ – আবু হুরাইরা [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেছেন, কোন ব্যক্তি তার জানা জ্ঞানের কথা জিজ্ঞাসিত হয়ে তা গোপন করলে, কিয়ামাতের দিন তাকে আগুনের লাগাম পরানো হইবে।

সহিহ। উক্ত হাদিসের রাবী আবু ইবরাহীম ইসমাইল বিন ইবরাহীম আল কারাবিসী সম্পর্কে ইমাম যাহাবী ও ইবনি হিব্বান তাকে সিকাহ বলেছেন। সুনানে ইবনে মাজাহ এলেম শিক্ষার গুরুত্ব – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply